চক্ষু গোলক (Eye Ball)
আমাদের খুলির উপরিভাগে (Skull) নাকের উভয় পার্শ্বে যে অক্ষি কোটর (Orbit) আছে, তাতে চক্ষুগোলক দ্বয় (Eyeballs) মাংসপেশি দিয়ে আটকানো থাকে। মাংসপেশি সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন দিকে নাড়ানো যায়। পিছন দিকে অপটিক স্নায়ুর (Optic Nerve) মাধ্যমে ইহা সরাসরি মস্তিষ্কের (Brain) সাথে সংযুক্ত থাকে। চক্ষু কোটরের উপরি ভাগে অশ্রু গ্রন্থি (Lacrimal Gland) থাকে, যা থেকে সব সময় অল্প অশ্রু নির্গত (Tear) হয়ে চক্ষুকে ভিজিয়ে পরিষ্কার ও ধুলাবালি মুক্ত রাখে। আবেগ, আনন্দ দুঃখ-শোকে অতিরিক্ত অশ্রু ক্ষরণ হলে তা গালে চলে আসে। স্বাভাবিক অবস্থায় অল্প পরিমাণ নির্গত অশ্রু নাকের ভিতরে চলে যায়। চক্ষু গোলকের উপরিভাগ ও নীচে চক্ষু পল্লব (Eye lids) থাকে। মূলত বাহিরের অংশ চামড়া (Skin) দিয়ে গঠিত, তবে ভিতরের দিকে কনজাংটিভার আবরণ থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় ও আঘাত থেকে রক্ষার জন্য চক্ষু পল্লব দ্বয় চক্ষু গোলককে আবৃত করে রাখে। এর প্রান্তে চুল (Eye lash) থাকে।
চোখের অংশ সমূহ :
- ১) চক্ষু গোলক (Eye ball),
- ২) চোখের বহিঃ মাংসপেশি (Extra Ocular Muscle),
- ৩) অশ্রু গ্ল্যান্ড ও নালী (Lacrimal Gland & Ducts),
- ৪) চক্ষু পল্লব (Eye lids)
সফল রোগীর ভিডিও প্রমাণ
চক্ষু গোলক:
চক্ষু গোলকে নিন্মে বর্ণিত অংশ সমূহ রয়েছে। যা দিয়ে চক্ষু গোলক গঠিত।
- ১) স্ক্লেরা (Sclera)
- ২) কর্নিয়া (Cornia)
- ৩) করয়েড (Choroid)
- ৪) সিলিয়ারী বডি (Cilliary Body)
- ৫) আইরিশ (Iris)
- ৬) একুয়াস হিউমার (Aquous Humor)
- ৭) লেন্স (Lens)
- 8) ভিট্রিয়াস হিউমার (Viterous Humor)
- ৯) রেটিনা (Retina)
স্ক্লেরা (Sclera): চোখের বাহিরের সাদা আবরণীর নাম স্ক্লেরা। এটি কনজাংটিভা (Conjunctiva) নামে স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে।
কর্নিয়া (Cornia): অক্ষি গোলকের সম্মুখের কালচে অংশ যাতে স্বচ্ছ পর্দা থাকে। আলো এর মাধ্যমে চোকের ভিতর প্রবেশ করে রেটিনায় প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে। এটা নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়, তবে কর্নিয়া পরিবর্তন করে (Transplant) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া যায়। মৃত ব্যক্তির চোখ থেকে মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া নিয়ে চক্ষু ব্যাংকে সংরক্ষণ (Eye bank) করা যায়। যে কেউ মরণোত্তর চক্ষু দান করতে পারেন।
করয়েড (Choroid): মধ্যস্তরের আবরণ। রক্তনালী দিয়ে গঠিত।
সিলিয়ারী বডি (Cilliary Body): কোরয়েডের সম্মুখ ভাগ অবস্থিত মাংসপেশি। সিলিয়ারী বডি থেকে লিগামেন্ট বের হয়ে লেন্সকে ঝুলিয়ে রাখে। এই পেশীর সংকোচন প্রসারণে লেন্স মোটা ও সরু হয়।
আইরিশ (Iris): বিভিন্ন রংয়ের মাংসপেশি দিয়ে গঠিত। এর রং দিয়ে চক্ষু কালো, বাদামী বা নীল হয়। এর মধ্যস্থিত ছিদ্রকে চোখের মনি (Pupil) বলে, যার মধ্যে দিয়ে আলো প্রবেশ করে, রেটিনায় পৌঁছে। আইরিশের পেশী সংকুচিত, প্রসারিত হয়ে, ছিদ্রপথ বড় ও ছোট করে আলোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
একুয়াস হিউমার (Aquous Humor): তরল স্বচ্ছ পদার্থ যা, কর্নিয়া ও আইরিশের মধ্যে (Anterior) এবং আইরিশ ও লেন্সের মধ্যবর্তী (Posterior Chamber) স্থানে থাকে। ইহা পুষ্টি বহন করে।
লেন্স (Lens) : দুইটি লিগামেন্ট দিয়ে ঝুলন্ত থাকে, একটি উভত্তোল (Convex) লেন্স। আলো এর উপর পরলে ইহা যে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে তা রেটিনার উপর পড়ে। সিলিয়ারী বডি লেন্সকে প্রয়োজন অনুসারে সরু ও মোটা করে। বয়স কালে এই লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে যায়। এটাকে ছানি পড়া (Cataract) রোগ বলে।
ভিট্রিয়াস হিউমার (Viterous Humor): জেলির ন্যায় স্বচ্ছ পদার্থ যা লেন্সের পিছনে অক্ষিগোলকের ফাঁপা অংশকে ভরাট করে রাখে।
রেটিনা (Retina): সবচেয়ে পিছনের আবরণ। এর মধ্যে অসংখ্য স্নায়ু কোষ আছে রড (Rod) নামক কোষ কম আলোতে ও কোন (Cone) নামক কোষ উজ্জ্বল আলোতে অধিক উজ্জীবিত হয়। রেটিনার উপর কোন বস্তুও প্রতিবিম্ব পড়লে তার যাবতীয় তথ্য অপটিক স্নায়ু দিয়ে-মস্তিষ্কের পশ্চাৎ অংশে (Cerebrum) চলে যায়। মস্তিষ্ক কিসের প্রতিবিম্ব তা নির্ণয় করে । সুতরাং চোখ প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্ক দিয়ে আমরা দেখি।
[PGPP id=1214]