Brom | দুর্বল ও সহজেই শরীর গরম হয়ে ঘাম হয়, ঠান্ডা বাতাস সহ্য হয় না। |
Brom | পানির স্রোত বা বেগে পানি যেতে দেখলে মাথাঘোরে, এমনকি রোগীর পাশ দিয়ে কেউ দ্রুতবেগে চলে গেলেও মাথা ঘোরে। |
Brom | রোগীর ভয় যেন কিছু লাফ দিয়ে উঠবে অথবা তার পাশে কেউ যেন রয়েছে। |
Brom | বমিভাব, মাথা ব্যথা ও নানারুপ অস্বাভাবিক উত্তেজনার সাথে হ্রদকম্পন। |
Brom | দীর্ঘনিশ্বাস নিতে চায় কিন্তু তাতে কাশি হয়, শ্বাস নেয়ার সময় শ্বাসনালীতে ঠাণ্ডা অনুভূতি। |
Brom | থাইরয়েড, অন্ডোকোষ, নিচের চোয়াল ও গলার গ্রন্থী ফোলা ও পাথরের মত শক্ত। |
নীল চোখ, হালকা পাতলা চুল, চোখের ভ্রূ পাতলা, ফরসা, নরম গায়ের চামড়া, সুন্দরী, গালে লাল আভা, গালগলায় গ্লান্ডের অসুখে ভোগে যারা তাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী হলেও অন্যদের ক্ষেত্রেও অপ্রযোজ্য নয় ।
মুখের ওপর যেন মাকড়সার জাল জড়িয়ে আছে এই রকম মনে হয় (ব্যারা-কার্ব, বোরাক্স, গ্রাফাই)।
নাকের পাখনা ওঠানামা করে (এ-টার্ট, লাইকো)।
সমুদ্রতীরে ফিরে আসলে নাবিকদের হাঁপানি শুরু হয় ।
গ্ল্যান্ড বিশেষতঃ নীচের চোয়ালের ও গলার (থাইরয়েড, সাব-ম্যাক্সিলারী, প্যারোটিড ও অন্ডকোষে দুটি) গলায় গ্ল্যান্ডফোলা রোগেও টিউবারকুলার দোষে শক্ত হয় ও ফুলে যায় ।
ডিপথেরিয়া রোগে যেখানে ফ্যারিংক্স-এর কৃত্রিমঝিল্লী তৈরী হয় ও শ্বাসনালী কণ্ঠনালী বা স্বরযন্ত্রে শুরু হয়ে উপরদিকে বাড়তে থাকে; বুকের ব্যথা ওপরদিকে ঠেলে ওঠে।
ঝিল্লীযুক্ত ডিপথেরিয়া রোগে এরূপ কাশি—কাশির সময় অত্যন্ত ঘড়ঘড়ে শব্দ কিন্তু গলা ভাঙা থাকে না (যেমনটি হিপারে হয়); [কাশি তরল অথচ কাশলে শ্লেষ্মা ওঠে না—এ-টার্ট] ।
হুপিং কাশিতে গলাভাঙা সহ ক্রুপ কাশির লক্ষণ থাকে। রোগী শ্বাস নেবার জন্য হাঁপাতে থাকে।
শ্বাস নিতে কষ্ট : গভীরভাবে শ্বাস নিতে পারে না মনে হয় স্পঞ্জের মধ্য দিয়ে শ্বাস নিতে হচ্ছে, বা শ্বাসনালী ধোঁয়ায় বা গন্ধকের গন্ধে ভরে আছে। গলায় ঘড়ঘড় শব্দ, করাত চেরার মত শব্দ, স্বরযন্ত্রে শ্লেম্মা জমে শ্বাস বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা হয় (বায়ুনলীতে ঐরূপ হলে—এ-টার্ট)।
বাড়ন্ত বাচ্চাদের ব্যায়াম করে হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যায় (যুবতী মেয়েদের হাল্কা ব্যায়াম করে ঐরূপ হলে কষ্টি)।
ফাইসোমেট্রা—যোনিপথ দিয়ে জোর শব্দে হাওয়া বার হয় (লাইকো), ছেড়া ছেড়া পর্দার মত স্রাবযুক্ত কষ্টরজঃ (ল্যাক-কা)।
শ্বাস নিলে স্বর যন্ত্রের মধ্যে ঠান্ডা অনুভব হয় ।(রাস, সালফ) এইভাব দাড়ি গোঁফ কামালে কমে। (দাড়ি গোঁফ কামালে বাড়ে-কার্ব-এনি) ।
সম্বন্ধ – কুপ বা ক্রুপের মত রোগে ক্লোরাল, হিপার, আওডি, স্পঞ্জিয়ার সমগুণ।
শক্ত গলগন্ড রোগে আয়োডিনাম ব্যর্থ হয়েও এ ওষুধে আরোগ্য হয়েছে। ক্রুপরোগে আয়ডি, ফস, হিপার, স্পঞ্জিয়া ব্যর্থ হয়ে বিশেষতঃ আয়োডামে রোগ বেড়ে গেলে ব্রোমিয়া আরোগ্য করেছে।
ব্রোমিয়ম ও আয়োডামের প্রধান পার্থক্য হল নীল চোখ যাদের তাদের ক্ষেত্রে ব্রোমিন ও কাল চোখ যাদের তাদের আয়োডাম আরোগ্য করে (হেরিং)।
শক্তি – ৬, ৩০, ২০০।
ডিপথেরিয়া – তরুণ ছোঁয়াচে রোগ। উৎপত্তি – করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে। যা শরীরে বিষাক্ততা আনে, গলায় শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে কৃত্রিম পর্দা সৃষ্টি করে বা প্রথমে ধূসর রঙ ও পরে রোগ বাড়লে বাদামী রঙের হয়। আক্রান্ত অংশের চারপাশে তীব্র রক্তাধিক্য হয়। এই অবস্থাকে বাক্কাল ডিপথেরিয়াও বলা হয় ।
এই বিষে হৃৎপিন্ড ও নার্ভের টিস্যু বা তন্তুগুলি নষ্ট করে দেয়। খেতে, পান করতে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয় । অচিকিৎসায় হার্ট ও কিডনীর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। এই রোগে নাড়ী ধীরে চললে হৃৎপিন্ডের নির্জিবতা বা প্যারালিসিস হতে যাচ্ছে বুঝতে হবে।
[ফলিকিউলার টানসিলাইটিস ও ডিপথেরিয়ার পার্থক্য-]
(১) হলদে ধূসর রঙের ছোপা। ছোপ গর্ত গর্ত দাগ হয় ।
(২) সহজেই উঠিয়ে ফেলা যায় । (৩) শুধু টনসিল আক্রান্ত হয় । (৪) ষ্ট্রেপটোকক্কাস্ সংক্রমনে । |
(১) ধূসর ছাইরঙের একটিই চাপ, ছোপ। ছোপ থাকে না।
(২) উঠানো কষ্ট, জোর করলে রক্ত বার হয়। (৩) টনসিল আক্রান্ত হয় ও চারপাশেও ছড়াতে পারে । (৪) করিনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন হয়ে । |
শ্বাস-প্রশ্বাস সম্বন্ধীয় লক্ষণাবলীর উপর এই ঔষধের সুস্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়, বিশেষ করে কণ্ঠনলী ও বায়ুনলীর লক্ষণের উপর। গণ্ডমালা ধাতুগ্রস্ত শিশু, বিশেষ করে যাদের গ্রন্থিগুলি স্ফীত, তাদের উপর এই ঔষধের প্রভাব বেশি দেখা যায়। সুন্দর দেখতে। কর্ণশূল গ্রন্থির ও গলগণ্ড। আক্ষেপিক উপসর্গের দ্বারা আক্রান্ত হবার প্রবণতাযুক্ত। বামদিকের মাম্পস্ বা কর্ণমূল গ্রন্থির প্রদাহ। শ্বাসরোধের মত অনুভূতি, হাজাকর স্রাব, প্রচুর ঘাম ও প্রচণ্ড দুর্বলতা। অতিরিক্ত গরম লাগার ফলে গোলযোগসমূহ। গ্রন্থিগুলির ভিতর প্রবেশকার প্রবণতা এই ঔষধের আছে, গ্রন্থিগুলি শক্ত হয়ে উঠে কিন্তু সাধারণতঃ পাকে না।
মন — মানসিক ভ্রান্তি, রোগীর মনে হয় অপরিচিত ব্যক্তির তার কাঁদের উপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে এবং রোগীর (স্ত্রী) মনে হয় সে ঘাড় ফেরালেই তাদের একজনকে দেখতে পাবে। ঝগড়াটে।
মাথা — আধকপালে, মাথার বামদিক আক্রান্ত হয়, সামনের দিকে ঝুঁকলে, বিশেষ করে দুধ পানের পর যন্ত্রণার বৃদ্ধি। মাথায় যন্ত্রণা, সূর্যের উত্তাপে ও দ্রুত চলাফেরায় বৃদ্ধি। চোখের ভিতর দিয়ে কেটে ফেলার মত বেদনা। জলস্রোতের উপর দিয়ে পার হবার সময় মাথা ঘোরে।
নাক – সর্দি, তৎসহ নাকে হাজাকর টাটানি ব্যথা। ডানদিকের নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। নাকের গোড়ায় চাপবোধ। সুড়সুড়ি, বিরক্তি বোধ, যেন নাকে মাকড়সার জাল আটকিয়ে আছে। নাকের পাতাগুলি পাখার মত নড়াচড়া করে (লাইকোপোডিয়াম)। নাক থেকে রক্তস্রাব, এতে বুকের কষ্টের উপশম হয়।
গলা – গলার ভিতর ক্ষতবৎ অনুভূতি, বিশেষতঃ সন্ধ্যায়, তৎসহ স্বরভঙ্গ। ঢোক গেলার সময় টনসিলের বেদনা, টনসিল গাঢ় লাল, তৎসহ টনসিল দুটি প্রসারিত রক্তবহানলী দ্বারা জালের মত করে ঢাকা রয়েছে। শ্বাস নেবার সময় শ্বাসনলীর ভিতর সুড়সুড়ি। শরীর খুব বেশি গরম হলে স্বরভঙ্গের উদ্ভব হয়।
পাকস্থলী ও উদর – জিহ্বা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত তীব্র জ্বালাকর বেদনা। পাকস্থলীতে পাথরের মত ভারবোধ। পাকাশয়িক শূল, আহারে উপশম। বায়ুসঞ্চয়জনিত কারণে উদরের প্রসারণ। যন্ত্রনাদায়ক অর্শ, তৎসহ কালো মল।
শ্বাস-প্রশ্বাস — হুপিং কাফ (প্রায় দশদিন ধরে এই ঔষধ ব্যবহার করা হবে)। শুষ্ক কাশি তৎসহ স্বরভঙ্গ এবং বুক্কাস্থির পিছনে জ্বালাকর যন্ত্রণা। কণ্ঠনলীর ভিতর আক্ষেপিক কাশি তৎসহ শ্লেষ্মার ঘড়ঘড়ানি। শ্বাসরোধক অবস্থা। স্বরভঙ্গ। জ্বর সম্বন্ধীয় লক্ষণগুলি উপশমিত হলে ঘুংড়ীকাশিতে উপকারী। কষ্টকর ও বেদনাদায়ক শ্বাস-প্রশ্বাস। বুকের ভিতর প্রচণ্ড খিলধরা ভাব। বুকের বেদনা উপরের দিকে উঠে। শ্বাস নেবার সময় ঠাণ্ডা অনুভূতি। প্রতিবার শ্বাস নেবার সময় কাশি। কণ্ঠনলীর ডিফথিরিয়া, কৃত্রিম ঝিল্লী কণ্ঠনলী থেকে শুরু হয়ে উপরের দিকে প্রসারিত হয়। আক্ষেপিক সঙ্কোচন। হাঁপানী, ফুসফুসের ভিতর বাতাস ঢোকানো কষ্টকর। (ক্লোরাম, বাতাস ছাড়তে)। সমুদ্রে থাকাকালীন অবস্থায় উপশম, কিন্তু নাবিকদের স্থলে পৌঁছলেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। জিমনাষ্টিক বা ব্যায়ামের কুফলে হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি। ফিব্রিনাল ব্রঙ্কাইটিস, তীব্র শ্বাসকষ্ট। মনে হয় যেন বায়ুনলী ধোঁয়ায় পূর্ণ রয়েছে।
পুরুষের রোগ – অণ্ডদ্বয়ের স্ফীতি। শক্ত, তৎসহ বেদনা সামান্য ঝাঁকুনিতে বৃদ্ধি।
স্ত্রীরোগ – ডিম্বাশয়ের স্ফীতি। মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে, পরিমানে অত্যন্ত প্রচুর, তৎসহ স্রাবের সঙ্গে ঝিল্লীর টুকরো থাকে। ঋতুস্রাবের পূবের্ব বিষন্নতা। স্তনগ্রন্থির অর্বুদ, তৎসহ সূঁচফোটার মত বেদনা, বামদিকে বৃদ্ধি। স্তনগ্রন্থি থেকে বগল পর্যন্ত সূঁচফোটার মত বেদনা। বামদিকের স্তনে তীরবিদ্ধবৎ তীব্র বেদনা, চাপে বৃদ্ধি।
ঘুম — স্বপ্ন ও মানসিক দুঃখে পূর্ণ, ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি ও চামকানো, নানা প্রকার কল্পনা। মানসিক ভ্রান্তি পূর্ণ, রাত্রে ঘুমাতে যেতে কষ্ট হয়, সকালে খুব বেশী ঘুমাতে পারে না, জেগে ওঠার পর দুর্বলতা ও কম্পন।
চামড়া – ব্রণ, ফুস্কুড়ি ও পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ। বাহু ও মুখমণ্ডলে ছোট ফোঁড়া। গ্রন্থিসমুহ পাথরের মত, শক্ত, বিশেষ করে নিম্নচোয়ালের ও গলার। কঠিন গলগণ্ড (স্পঞ্জিয়া)। গ্যাংগ্রীন।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত এবং যখন উষ্ণ ঘরে বসে থাকে, উষ্ণ-আদ্র জলবায়ু, বিশ্রামকালে ও বামদিক চেপে শুলে।
উপশম – যে কোন প্রকার নড়াচড়া, ব্যায়াম, সমুদ্রে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন, এমন কার্ব, ক্যাম্ফর, লবন ব্রোমিয়ামের কাজে বাধা দেয়।
তুলনীয় — কোনিয়াম, স্পঞ্জিয়া, আয়োডিনাম, এষ্টার, আর্জেনটাম নাইট্রিকাম। ব্রোমিয়াম যখন চলবে তখন দুধ বর্জন করতে হবে।
হাইড্রোব্রোমিক অ্যাসিড (গলা শুষ্ক ও কোঁচকানো, বুক ও গলবিলে সঙ্কোচনের অনুভূতি, মুখমণ্ডল ও ঘাড়ের উপর দিয়ে গরম হল্কা বয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি, কানের ভিতর স্পন্দন যুক্ত শব্দ তৎসহ প্রচণ্ড স্নায়বিক উত্তেজনা (হাউগটন), মাথাঘোরা, হৃদকম্প, বাহুতে ভারীবোধ, শারীরিক অঙ্গগুলি যেন তার নয় এই জাতীয় অনুভূতি হয় রোগীর। ইনফিরিয়র সার্ভাইক্যাল গ্যাংলিয়নের উপর একটি নির্দিষ্ট কাজ আছে, সংবেদনশীল স্নায়ুর নিবর্ধক হিসাবে কাজ করে, এর ফলে রক্তবহানলীর সংকোচন বৃদ্ধি পায়। মাথার যন্ত্রণা, কানের ভিতর হওয়া শব্দও মাথাঘোরা উপশমিত হয়, বিশেষ করে ভ্যাসোমোটর স্নায়ুর গোলযোগের দরুন পাকস্থলীর উপসর্গ উপশমিত হয়। মাত্রা ২০ ফেঁটা।
শক্তি – ১ম থেকে ৩য় শক্তি। তাজা অবস্থায় ঔষধ প্রস্তুত করা হয়, কারণ এটি খুব সহজেই বিকৃত হয়ে থাকে।
ব্রোমিয়াম একটি বাঁধা নিয়মে দিবার ঔষধ। নবশিক্ষার্থী ডাক্তার ডিপথেরিয়া, ক্রুপ এবং কণ্ঠনলী-প্রদাহের যে রোগী পাইবেন, তাহার প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যে ঔষধগুলি ব্যবহার করিবেন ইহা তাহাদের অন্যতম, আর যদি ইহা দ্বারা কাজ না হয়, তাহা হইলে বলিবেন, “আর একটি ঔষধ দেওয়া হউক।” যাহারা রোগের নাম ধরিয়া ঔষধ ব্যবস্থা করেন, তাহারা ব্রোমিয়ামকে বাঁধা নিয়মে চিকিৎসার ঔষধগুলির অন্যতম বলিয়া মনে করেন, কিন্তু ব্রোমিয়াম এত ক্কচিৎ প্রযুক্ত হয় যে, অধিকাংশ হোমিওপ্যাথই ইহাকে সম্পূর্ণ অনাবশ্যক ঔষধ বলিয়া পরিত্যাগ করিয়া থাকেন।
ইহার কারণ এই যে, তাঁহারা রোগীর লক্ষণগুলি গ্রহণ করেন না ও স্বতন্ত্রীকরণ প্রণালী অনুসারে ঔষধ ব্যবস্থা করেন না। তাহারা ঔষধ ব্যবস্থা করেন রোগের জন্য, কিন্তু রোগীর জন্য নহে। তোমরা ব্রোমিয়াম ব্যবহার উপযোগী খুব কম ডিপথেরিয়া রোগী পাইবে। কিন্তু তুমি যখন ব্রোমিয়ামের রোগী দেখিতে পাইবে, তখন তোমার ব্রোমিয়ামকে জানা উচিত। ব্রোমিয়াম অবস্থার একটি অন্তর্নিহিত লক্ষণ আছে, উহা যে-সকল লোক উত্তপ্ত হওয়ায় পীড়িত হয়, তাহাদের মধ্যেই বিশেষভাবে দেখা যায়। যদি ডিপথেরিয়ার মহামারি চলিতে থাকে, আর যদি কোন মাতা তাহার শিশুকে গরম হইয়া না উঠা পর্যন্ত কাপড় চোপড়ে জড়াইয়া রাখেন এবং তাহাকে গরম ঘরে রাখেন, আর যদি এমন হয় যে, শিশুটি কাপড় জড়াইয়া রাখিলে অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে এবং তাহার রোগগুলি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তাহা হইলে বিশেষভাবে লক্ষ্য কর, তুমি ব্রোমিয়ামের ডিপথেরিয়া পাইতে চলিয়াছ। গ্রীষ্মকালের খুব গরম দিনের পর রাত্রে যে-সকল রোগ উপস্থিত তাহাতেও এই ঔষধটি উপযোগী।
এক্ষণে ইহা তোমাদের ক্রুপরোগে ও ডিপথেরিয়ায় বাঁধা নিয়মে ঔষধ ব্যবস্থা করার কাছাকাছি হইল। তোমরা জান যে, যদি মাতা তাহার শিশুকে লইয়া ভীষণভাবে ঠান্ডা শুষ্ক দিনে বাহির হন, আর যদি শিশুটি মধ্যরাত্রির দিকে আক্ষেপিক কুপের সহিত জাগিয়া উঠে, তাহা হইলে খুব সম্ভবতঃ অন্য ঔষধ অপেক্ষা একোনাইট’ই অধিক প্রয়োজন হইবে। কিন্তু যদি মাতা শিশুকে গ্রীষ্মকালের খুব উত্তপ্ত দিনে বাহিরে লইয়া গিয়া থাকেন, আর ঐ শিশুটি যদি অতিরিক্ত কাপড় চোপড় পরানর জন্য উত্তপ্ত হইয়া থাকে এবং যদি সে রক্তপ্রধান ধাতু হয়, তাহা হইলে মধ্যরাত্রির দিকে তোমার হয়ত ডাক পড়িবে ও তুমি দেখিবে যে, শিশুর মুখ লাল হইয়া পড়িয়াছে। এবং পরীক্ষা দ্বারা তাহার গলার কৃত্রিম ঝিল্লী দেখা যাইবে,—এই ঔষধটি অধ্যয়নকালে আমার দেখিতে পাইব যে, উহা ব্রোমিয়ামের রোগ হইতে পারে।
“অতি উত্তপ্ত হওয়ার ফলে স্বরভঙ্গ উপস্থিত হয়। অতিরিক্ত উত্তাপের ফলে স্বরনাশ উপস্থিত হয়।” অতি উত্তপ্ত হওয়ার ফলে শিরঃপীড়ার সহিত সমগ্র শারীরবিধানে গোলযোগ সুরু হয় এই অবস্থা ব্রোমিয়ামে আছে। গরম আবহাওয়ায় গরম ঘরে আবদ্ধ থাকায় এবং ঠান্ডা হইতে গরমে যাওয়ার পর এইরূপ হয়। কিন্তু রোগ উপস্থিত হওয়ার পর, যে-রোগই হউক না কেন, সে ঠান্ডায় এত অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে যে, ঠান্ডা হাওয়ার সামান্য প্রবাহে সে যেন জমিয়া যাইতে থাকে, আবার অতি উত্তপ্ত হইলেও তাহার কষ্ট হয়।
ব্রোমিয়ামের মধ্যে গ্রন্থিসমূহে রসপ্রসেকের প্রবণতা আছে। গ্রন্থিগুলি কঠিন হইয়া উঠে, কিন্তু কদাচিৎ পুঁজ সঞ্চয় হয়। উহারা সাধারণতঃ শক্তই থাকিয়া যায়। গ্রীবাগ্রন্থি, কর্ণমূলগ্রন্থি, জিহ্বানিম্নস্থ গ্রন্থি ও চোয়ালনিম্নস্থ গ্রন্থিগুলি অত্যন্ত বর্ধিত ও কঠিন হইয়া থাকে। প্রদাহের গতি ধীর, আমরা ‘বেল’ ও ‘মার্কে’ যেরূপ ভীষণ দ্রুত প্রদাহ দেখি সেরূপ নহে। “অঙ্গগুলি প্রদাহিত হইয়া রসপ্রসেকযুক্ত হয় এবং কঠিন থাকে। এখানে কঠিনতার সহিত দাহ বুঝান হইতেছে। ইহা এইরূপ রসপ্রসেকযুক্ত ক্ষতে অত্যন্ত উপযোগী হইয়াছে, পুঁজ হইবার সম্ভাবনাবিহীন অত্যন্ত কঠিনতাযুক্ত বর্ধিত গ্রন্থিতে বিশেষ উপযোগী হইয়াছে। গ্রন্থিগুলিতে গুটিকারোগ জন্মে, তন্তুগুলি গুটিকারোগগ্রস্ত হয়। গ্রন্থিগুলি কিছুদিনের জন্য প্রদাহিত হইবার পর দুষ্ট প্রকৃতির অপকর্ষ এবং দুষ্ট প্রকৃতির তন্তু নির্মাণ দেখা দেয়। আমরা ঘাড়ে যেরূপ বর্ধিত, কঠিন, গন্ডমালাদোষযুক্ত গ্রন্থি দেখি, ইহা বিশেষভাবে তাহার অনুরূপ কর্ণমূলগ্রন্থি ও চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিসমূহ। ইহা থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধি ও অতি কঠিনতা আরোগ্য করিয়াছে।
তারপর, আমরা শীর্ণতা দেখিতে পাই; এবং যখন আমরা রসপ্রসেক দেখিতে পাইতেছি, তখন ইহা আশ্চর্য নহে যে, উহা ক্যান্সার ও গুটিকা রোগে আরোগ্যকর হইয়াছে। এই ঔষধে দুর্বলতা আছে। পদদ্বয় দুর্বল হয়। কম্পমান অঙ্গাদির সহিত বর্ধনশীল দুর্বলতা। পেশী সঙ্কোচন, কম্পনশীল দুর্বলতা, মূৰ্ছাভাব। সর্দিজ অবস্থায় অল্পবিস্তর কৃত্রিম ঝিল্লী উৎপাদন থাকে। ঝিল্লীযুক্ত স্রাব একটি সাধারণ লক্ষণ। রসপ্রসেক শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি সম্বন্ধে একটি সাধারণ লক্ষণ, ফলে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে একটু একটু সাদাটে ধূসরবর্ণ মাংসাঙ্কুর নির্গত হয় এবং উহাদের তলায় কঠিনতা থাকে ইহা ক্ষত সম্বন্ধে ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী সম্বন্ধে সত্য। ক্ষতগুলি শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপর উৎপন্ন হয় এবং খাইয়া গৰ্ত হইতে থাকে, উহার নীচে টিসুসমূহের শক্ত স্তর জন্মিতে থাকে। এইরূপ সর্দিজ অবস্থার সহিত জ্বর থাকে। অত্যন্ত স্নায়বিক উত্তেজনা। “হাত-পায়ে বরফবৎ শীতলতা।” “মস্তকে উত্তাপ।” “অত্যন্ত ঘৰ্ম্মের সহিত শ্বাসকৃচ্ছ্বতা।” ক্রুপরোগের ন্যায় অবস্থা।
এই ঔষধে অধিকাংশ রোগেই হৃৎস্পন্দন থাকে। বমনেচ্ছার সহিত হৃৎস্পন্দন, শির পীড়ার সহিত হৃৎস্পন্দন, নানাপ্রকার স্নায়বিক উত্তেজনার সহিত হৃৎস্পন্দন। সে ক্রমশঃ এতই দুর্বল হইতে থাকে যে, তাহার “প্রত্যেক রকমের কাৰ্য্যে অপ্রবৃত্তি পাঠে অপ্রবৃত্তি জন্মে। গৃহকর্মে উৎসাহ থাকে না।” উদাসীন হইয়া পড়ে। অত্যন্ত শ্রান্ত হয়। “অত্যন্ত মানসিক অবসাদ, ভগ্নমন, বিষন্ন ও নিরুৎসাহ।” অধিকাংশ রোগের সহিত উৎকণ্ঠা। অতি উত্তপ্ত হইলে শিরঃপীড়া। “কর্ণের মধ্যে বেদনা, কর্ণের মধ্যে দপদপানি ও জ্বালা।” ঐ সঙ্গে কর্ণের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত গ্রন্থিসমূহের উপদ্রব। কর্ণের উপদ্রবের সহিত গ্রন্থিসমূহের বৃদ্ধি কর্ণমূলগ্রন্থি বৰ্দ্ধিত ও কঠিন হয়। আরক্ত জ্বরের পর কর্ণের উপদ্রব, তৎসহ কর্ণ হইতে পুঁজস্রাব বেদনা এবং কামড়ানি দাহ কর্ণের ফোঁড়া। কখন কখন কর্ণমূলগ্রন্থি পাকিয়া উঠে, কিন্তু উহা একটি ব্যতিক্রম। “বাম কর্ণমূলগ্রন্থির স্ফীতি ও কঠিনতা।” ডিম্বকোষ প্রভৃতিও ব্রোমিয়াম কর্তৃক আক্রান্ত হয়।
নাসিকা হইতে রক্তপাত। নাসিকায় ক্ষত। নাসিকার সর্দিজ অবস্থা। অত্যন্ত হাঁচি, প্রবল তরুণ সর্দি, তৎসহ নাসিকার মধ্যে জ্বালা এবং তৎসহ একপ্রকার শীতলতার অনুভূতি, যেন ঠান্ডা হাওয়ায় নিঃশ্বাস লওয়া জন্য নাসিকার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি ঠান্ডা হইয়া গিয়াছে। জুন মাসে প্রথম গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া উপস্থিত হয় অথবা, যদি প্রথম গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া জুলাই মাসে আসে। প্রতি বৎসর গরমকালে একবার প্রবল সর্দি লাগা। শিরঃপীড়ার সহিত তরল সর্দি। “নাসিকায় ক্ষতবৎ বেদনা, নাসিকার পক্ষদ্বয় ফুলিয়া উঠে।” উহার উপড়ে মামড়ী তুলিয়া ফেলিতে গেলে রক্ত পড়ে। নাসারন্ধ্রের চারিদিকে হাজা। ব্রোমিয়াম রোগীর মুখ আরক্তিম হওয়াই সম্ভব, বিশেষতঃ যদি রোগীটি তরুণ ও ব্রোমিয়াম-জ্ঞাপক হয়। “আরক্তিম মুখ।” সে সহজেই উত্তপ্ত হয়। কিন্তু ইহা ব্রোমিয়ামের তরুণ ধাতুগত অবস্থার ঠিক বিপরীত। এই কথা বহু ঔষধের পক্ষেই সত্য, বিশেষতঃ ঔষধটি যদি সোরা-দোষনাশক হয়। পুরাতন, রুগ্ন, ভগ্নস্বাস্থ্য লোক, যাহাদের পুরাতন ধরনের গ্রন্থি-বৃদ্ধি জন্য গলগন্ডের জন্য, কর্কটরোগের জন্য, ব্রোমিয়াম প্রয়োজন হয়, তাহাদের মুখমন্ডল ধূসরবর্ণ, মাটির রঙ হইয়া থাকে; বৃদ্ধবৎ চেহারা হয়।” উহা রুগ্ন মুখ ছাইবর্ণ মুখ। “মুখমন্ডল ছাইয়ের মত ধূসরবর্ণ।” তারপর আমরা এমন শিশু পাই যাহারা রক্তপ্রধান, আরক্ত মুখবিশিষ্ট, সহজেই উত্তপ্ত হইয়া উঠে। অবশ্য, যখন তরুণ অবস্থা চলিতে থাকে, এবং শ্বাসক্রিয়া কয়েকঘন্টা বা কয়েকদিন যাবৎ কষ্টকর হয়, তখন রোগী নীলরোগগ্রস্তবৎ হইয়া পড়ে, নিঃশ্বাসের জন্য খাবি খায়, শ্বাসরোধবৎ হয় মুখ ছাইয়ের মত বিবর্ণ হইয়া পড়ে; আর এই রূপটি আমরা দেখিতে পাই ডিপথেরিয়ায়, ক্রুপরোগে, এবং কণ্ঠনলী প্রদাহ।
“গ্রন্থিগুলি, বিশেষতঃ নিম্নচোয়ালের ও গলার গ্রন্থিগুলি ফুলিয়া পাথরের মত হয়।” আমরা দেখিতে পাই যে, এই লক্ষণটি রোগীদেহের বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে পুনঃ পুনঃ কথিত হইয়াছে। ব্রোমিয়ামে যে-সকল গলরোগের কথা বলা হইয়াছে, তাহা কণ্ঠনলীতে আরম্ভ হইয়া ক্ৰমশঃ গলার দিকে উঠে। আবার কতকগুলি রোগ গলায় আরম্ভ হইয়া কণ্ঠনলীতে নামে কিন্তু ঐ দুইটি যন্ত্রই ব্রোমিয়ামের সহিত এত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত যে, দুইটিই আক্রান্ত হওয়া সম্ভব; সেইজন্য ডিপথেরিয়া রোগও একটি হইতে অপরটিতে বিস্তৃত হয়। ডিপথেরিয়া গলায় আরম্ভ হইয়া কণ্ঠনলীতে প্রবেশ করে। ব্রোমিয়াম অতিশয় দুষ্টজাতীয় ডিপথেরিয়ায় উপযোগী কৃত্রিম ঝিল্লীটি আগাছার ন্যায় বাড়িয়া উঠে, শ্বাসরোধ ঘটায়, কণ্ঠনলীকে বন্ধ করিয়া ফেলে। রোগটি এতই গুরুতর হয় যে, রোগী মাত্র দুই তিনদিন পীড়িত হইলেও, এমন কি ব্রোমিয়াম প্রয়োগে রোগটি আয়ত্তাধীনে আসিলেও, সে অত্যন্ত অবসন্ন হইয়া পড়ে। ব্রোমিয়াম সম্বন্ধে সবকিছুই এই প্রকৃতির। অত্যন্ত তীব্রতা, অত্যন্ত অবসন্নতা। সে অত্যন্ত পীড়িত, তত্সহ মৃত্যুবৎ দুর্বলতা। এই ঔষধের দ্বারা যে-সকল ডিপথেরিয়া রোগ আরোগ্য হইয়াছে, তাহার অনেকগুলিই বামপার্শ্বিক, তথাপি এই উভয়পার্শ্বিক আক্রমণই আরোগ্য করিয়াছে। তোমরা ঠান্ডা শুষ্ক আবহাওয়ায় কদাচিৎ ব্রোমিয়াম-জ্ঞাপক আক্রমণ দেখিতে পাইবে, কিন্তু গরম-ভিজা আবহাওয়াতেই ব্রোমিয়ামের রোগ দেখা দেয়, বসন্তকালের, বর্ষার এবং গ্রীষ্মের রোগ।
যে-সকল পুরাতন রোগে ব্রোমিয়াম আবশ্যক হয়, তাহারা এরূপ যে পাকস্থলীতে ক্ষত থাকিতে পারে। কফি-চূর্ণের ন্যায় বমন, এবং ক্ষত-লক্ষণযুক্ত বমন। আহারের পর অথবা অদ্রব্য খাওয়ার পর, উদরাময় অথবা কাশির বৃদ্ধি। ঝিনুক খাওয়ার পর উদরাময় এবং পাকস্থলীর গোলযোগ। সামান্যমাত্র তামাকের গন্ধে বৃদ্ধি। রক্তাক্ত শ্লেষ্মা বমন। উদার।” বিকৃত পাকস্থলী। গরম জিনিষ, গরম চা, গরম পানীয়ে পাকস্থলীতে বেদনা। পাকস্থলীতে ক্ষত থাকিলে অথবা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ক্ষত হইবার উপক্রম হইলে, গরম পানীয় অসহ্য বোধ হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। “গরম খাদ্য খাইলে বেদনা।”
মল ও সরলান্ত্র সম্বন্ধীয় লক্ষণ পাঠকালে আমরা নিঃস্রাব দেখিতে পাই। মলের মধ্যে ঝিল্লীবৎ গঠন নির্গত হয়। উদরাময়ের মলের সহিত ঝিল্লী নির্গত হয়। “কাল অজীর্ণ পদার্থবিশিষ্ট মল।” উদরাময়, আহারের পরই মলত্যাগ করিতে হয়।
এই ঔষধে আমরা বর্ধিত শিরা পাই। ঐগুলোকে গুহ্যদ্বারেও দেখিতে পাওয়া যায়। অর্শবলি গুহ্যদ্বারপথে নির্গত হইয়া আসে, জ্বালা করে। দিবারাত্র যন্ত্রণা করে। “যন্ত্রণাদায়ক অন্ধবলি, শিরাস্ফীতির সহিত কাল বর্ণ তরল মল, যন্ত্রণাদায়ক অন্ধবলি। ঐ অন্ধবলি বাহির হইয়া আসে। “মলত্যাগকালে ও পরে অর্শবলি নির্গমন।” মলত্যাগকালে অর্শবলি বাহির হইয়া পড়ার জন্য সরলান্ত্রে বেদনা।
বাম অন্ডকোষের স্ফীতি ও কঠিনতা। এই ঔষধের বাম অঙ্গের প্রতি আক্রমণ-প্রবণতা লক্ষ্য কর, গলার বামপার্শ্বে, বাম অন্ডকোষ। তারপর বাম ডিম্বকোষে অবিরাম মৃদু যন্ত্রণা। “অবিরাম মদু বেদনার সহিত স্ফীতি ও কঠিনতা। আবার সেই বাম ডিম্বকোষের কঠিনতা। ইহা একটি আশ্চর্যের বিষয় যে, কতকগুলি ঔষধ বামপার্শ্বের অঙ্গগুলিকেই বাছিয়া লয়, দেহের বামপার্শ্ব বাছিয়া লয়। ল্যাকেসিসে’র ন্যায় অনেক ক্ষেত্রেই ইহা দেহের বামপার্শ্ব বাছিয়া লয়। অনেকগুলি ঔষধ দেহের একটি পার্শ্বই বাছিয়া লয়; এই পার্শ্বের গ্রন্থিগুলি অপেক্ষা অধিক আক্রান্ত হয়। ঔষধে দেহের বামপার্শ্বের গ্রন্থিগুলিই, দক্ষিণ “ঋতুর পূর্বে ও সময়ে ডিম্বকোষ প্রদেশের স্ফীতি।” ঋতুনাশ। যোনিপথ দিয়া উচ্চশব্দে বায়ু নির্গত হয়।
শরীরের যে কোন অঙ্গ অপেক্ষা, কণ্ঠনলী সম্বন্ধে ইহা অধিক লক্ষণ উৎপাদন করিয়াছে। “গৃহীত শ্বাসবায়ুতে ইহা কণ্ঠনলীতে হাজাবৎ, ক্ষতবৎ অনুভূতি উৎপাদন করে।” “কণ্ঠনালীতে হাজিয়া যাওয়ার অনুভূতি, স্বরনাশ, অতি উত্তপ্ত হওয়ার ফলে স্বরভঙ্গ। গরম দিনে অতিরিক্ত পোষাক পরিয়া, অথবা গরম ঘরে ওভারকোট পরিয়া থাকার পর বাহিরে আসিয়া শরীর ঠান্ডা করিলে, তাহার কণ্ঠনলীপ্রদাহ দেখা দেয়। কণ্ঠনলীতে সুড়সুড় করে।” সে অবিরাম কাশিতে থাকে। কণ্ঠনলীতে চাঁচার ন্যায় ও হাজিয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। কণ্ঠনলী হইতে খোঁকারি দিয়া গয়ের তুলে, খেকারি দেয় ও কাশে। ইহা খকখক করিয়া কাশা নহে, কারণ তাহাতে গলা পরিষ্কার হয়। প্রত্যেক চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার্থী অপরে যে সব শব্দ করে তাহা মনোযোগ দিয়া শুনিবেন, এবং বুঝিতে চেষ্টা করিবেন যে ঐরূপ শব্দের সঙ্গে রোগীর কিরূপ মনোভাব থাকে, তাহা হইলে তিনি রোগীর স্থানে নিজেকে বসাইয়া ব্যাপারটি বুঝিতে পারিবেন। প্রত্যেক রোগীরই স্বতন্ত্র প্রকার শব্দ থাকে এবং (পূর্বোক্তরূপ চেষ্টা করিলে) যে মুহূর্তে তুমি উহা শুনিবে, সেই মুহূর্তেই তুমি বুঝিতে পারিবে যে, ঠিক কোন স্থান হইতে সে শ্লেষ্মা টানিতেছে, এবং ঠিক কোথায় তাহার উপদাহ আছে। তুমি রোগীকে বর্ণনা করিতে দিলে, সে সবসময়েই ভুল কথা বলিবে। রোগী তাহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা খুব কমই জানে; সে জানে যে, উহা গলা, সুতরাং যদি সে গলা হইতে শ্লেষ্মা টানে, তাহা হইলে সে গলা বলিবে, কিন্তু সে যদি কণ্ঠনলী হইতে শ্লেম্মা টানে, তাহা হইলেও, সে সবসময়ে গলাই বলিবে। কিন্তু চিকিৎসক ঐসব কথা গ্রাহ্য না করিয়া, শব্দটি লক্ষ্য করিবেন। সুতরাং প্রত্যেকেই আপন মনে চলুক এবং যে যেরূপ পারে সেইরূপ শব্দ করুক, কিন্তু চিকিৎসক ঐসব শব্দ শুনিয়া নিজের মনে উপলব্ধি করিয়া লইবেন যে, ঠিক কোন স্থান হইতে সে শ্লেষ্মা তুলিতেছে। ইহা হয়ত হাস্যকর মনে হইবে, কিন্তু আর কোন উপায়ে তুমি কি উহা শিক্ষা করিতে পার? এই সকল শব্দের পার্থক্য নির্ণয় করা যেরূপ প্রয়োজন, শিশুর অঙ্গভঙ্গি ও শব্দ হইতেও তেমনি বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন যে, সে কি চায়। শিশুর ভাবভঙ্গির ব্যাখ্যা করিতে না পারিলে তাহার লক্ষণসমূহ এবং সে যে কি চায় তাহা বুঝা অসম্ভব। শিশুর প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গিই কিছু-না-কিছু নির্দেশ করে। একজন তীক্ষ্ণবুদ্ধি পৰ্যবেক্ষক, যিনি বহুবৎসর যাবৎ শিশুদিগকে দেখিয়া আসিতেছেন, তিনি নিজেই শিশুকে বুঝিতে পারিবেন, এবং কদাচিৎ তাঁহাকে শিশুর মাতাকে কোন প্রশ্ন করিতে হইবে। তিনি শিশুর ক্রিয়াকলাপ হইতে তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারিবেন যে, শিশুর পীড়াটি কোথায়। শিশুও জীবজন্তুর ন্যায়। তুমি কোন ঘোড়া বা কুকুরকে কখনই জিজ্ঞাসা কর না যে, সে কোথায় ব্যথা অনুভব করিতেছে, কারণ সে তাহার ভাবভঙ্গি দিয়াই সবকিছুই প্রকাশ করে। শিশুও ঠিক ঐরূপই করে।
অতিরিক্ত উত্তপ্ত হওয়ার পর স্বরভঙ্গ দেখা দেয়। মনে রাখিও সেই “কর্কশ, শুষ্ক কাশি, কণ্ঠনালীতে বেদনা।” শ্বাস লইতে না পারিয়া লাফাইয়া উঠে। “কণ্ঠনলীতে সাইসাই ও ঘড়ঘড় শব্দের সহিত শ্বাসের জন্য খাবি খায় ও কষ্ট পায়। বায়ুপথগুলি ধূমে পূর্ণ রহিয়াছে—এরূপ অনুভূতি। এখন, আমরা নানারূপ কর্কশ শব্দ পাই–কর্কশ শ্বাসক্রিয়া, ক্রুপ কাশির ন্যায়। শ্বাসক্রিয়া, উখাঘষার ন্যায় শব্দযুক্ত শ্বাসক্রিয়া—এইগুলি ক্রুপ কাশির বর্ণনার বিভিন্ন ধরণ মাত্র। ইহা দ্বারা তোমরা কোন ঔষধকে বাছিয়া লইতে পারিবে না; কারণ এক শিশু একএকার শব্দ করিয়া কাশিবে, এবং আর এক শিশু আর একপ্রকার শব্দ করিবে; কিন্তু তোমরা শিশুর ধাতুগত অবস্থা গ্রহণ করিবে এবং মাতার অবস্থাও একটি মূল্যবান বিষয়। স্বর প্রায় শুনা যায় না।” “গলকোষে আক্ষেপ।” ক্রুপরোগে, প্রদাহিত স্থানের উপরে যদি কৃত্রিম ঝিল্লী জন্মে, তাহা হইলে প্রায়ই উহা কণ্ঠনলীর মধ্য দিয়া নীচের দিকে বায়ুনলীতে বিস্তৃত হয় এবং কুপার নিউমোনিয়ার সৃষ্টি করে। ব্রোমিয়ামের প্রকৃতিতে এই অবস্থা আছে। কিন্তু আদৌ কোন ঝিল্লী গঠন না করিয়াও ব্রোমিয়াম কণ্ঠনলীকে সঙ্কুচিত করে। ইহাতে কণ্ঠনলীর সঙ্কোচন আছে, উহা ঠিক গলা চাপিয়া। ধরার মত, আক্ষেপজনক। “কণ্ঠনালীতে সুড়সুড়ির সহিত, কাশিজনক উপদাহ।” কণ্ঠনালীতে চাঁচিয়া ফেলার ন্যায়, হাজার ন্যায় অনুভূতি। “কণ্ঠনলীতে শীতলতার অনুভূতি।” ব্রোমিয়ামে ইহা একটি অদ্ভুত লক্ষণ। কণ্ঠনলী-প্রদাহে রোগী বলে যে, তাহার মনে হয়, কণ্ঠনলীটি কোমল লোম দ্বারা ঢাকিয়া রাখিয়াছে। আমি তাহাদিগকে বলিতে শুনিয়াছি, উহা যেন ভেলভেট দিয়া ঢাকা দিয়া রহিয়াছে, এবং উহা অত্যন্ত ঠান্ডা বোধ হয়। গৃহীত শ্বাসবায়ু তুষার বা বরফ হইতে প্রবাহিত বায়ুর ন্যায় ঠান্ডা বোধ হয়। কণ্ঠনলীতে শীতলতার অনুভূতি। “কণ্ঠমলীতে অবিরত ক্ষতবৎ বেদনা।” ইহার অর্থ কণ্ঠনলী স্পর্শ করিলে বেদনা বোধ হয়। ফস’, ‘বেল’, ও রুমেক্স। কণ্ঠনালীতে ক্ষতবৎ বেদনা আছে, কণ্ঠনলী স্পর্শ করিলে বেদনা দেখা যায়, কিন্তু ব্রোমিয়ামের ক্ষততা সাধারণতঃ কণ্ঠনালীর নিম্নে, এবং গলগহ্বরে দেখা দেয়। “যেন বায়ুনলীগুলি ধূমে পূর্ণ রহিয়াছে—এরূপ অনুভূতি।” কোন রোগী, উহাকে গন্ধকের ধূম অথবা আলকাতরার ধূম বলিয়া বর্ণনা করিবে। প্রথম কয়েক ঘন্টার পরে গলগহ্বরে ও কণ্ঠনলীতে শ্লেষ্মা জমিতে থাকে এবং অবিরত সাদাটে ঘন শ্লেষ্মাযুক্ত গয়ের উঠিতে থাকে; সে অবিরত কাশিতে ও গলা খেঁকারি দিতে থাকে, কোনরূপ শান্তি পায় না। কোনরূপ কৃত্রিম ঝিল্লী না জন্মিয়াই কণ্ঠনলী-প্রদাহে এরূপ অবস্থা বর্তমান থাকে। স্বরহীনতায়, কণ্ঠনলীর প্রদাহে, কণ্ঠনলীর হাজাবৎ অবস্থায় ব্রোমিয়াম যত বেশী প্রযোজ্য হয়, তত বেশী ব্যবহৃত হয় না, কারণ লোকের অতি উত্তপ্ত হওয়ার ফলে কণ্ঠনলী প্রদাহ ও স্বরভঙ্গ দেখা দেওয়া একটি অসাধারণ ব্যাপার। ঐ সকল রোগের অনেকগুলি ব্রোমিয়াম দ্বারা দ্রুত আরোগ্য হইবে। এইজন্য বাঁধাধরা নিয়মে চিকিৎসাকারীরা ক্রুপ বা ডিপথেরিয়া দেখিলেই ইহার কথা চিন্তা করেন। হ্যানিম্যান কখনও এরূপ শিক্ষা দেন নাই। “কণ্ঠনলীতে অত্যন্ত শ্লেষ্মার ঘড়ঘড়ানি।” “শ্বাসক্রিয়া অত্যন্ত কষ্টকর, কণ্ঠনলী নিম্নদিকে আকৃষ্ট হয়। ক্রুপরোগে কৃত্রিম ঝিল্লী নির্মিত হওয়ার পর এরূপ হয়। “কাশি কর্কশ, কুক্কুট রবের ন্যায়, শ্বাসাবরোধ; শ্বাসক্রিয়া করাতটানার ন্যায়, বাঁশীর ন্যায়। কণ্ঠনলীর আক্ষেপ, শ্বাসরোধকর কাশি, কণ্ঠনলী ও গলকোষে কৃত্রিম ঝিল্লী, জন্মান। ছত্রকসমূহের অতি বৃদ্ধিজনিত ক্রুপসূচক প্রদাহ।” “নাবিকদিগের তীরভূমিতে উঠিবার পর হাঁপানি, এই হাঁপানি আবার সমুদ্রে গেলেই উপশমিত হয়।” সমস্ত বুকে ঘড়ঘড়ানির সহিত কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া। ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়া। বসন্তকালে, গরম আবহাওয়া পড়িলে, যদি হুপিংকাশ দেখা দেয়, তাহা হইলে ব্রোমিয়ামই ঔষধ, ঐসঙ্গে কণ্ঠনলীতে ঝিল্লী জন্মে। ধুলা লাগিলে, সঙ্গে সঙ্গেই কাশি বাড়িয়া উঠে। তাক হইতে পুরাতন বইপত্র নাড়িতে গেলে কাশির বৃদ্ধি হয়। ধূলামাখা জিনিষপত্র তুলিলে ও নাড়াচাড়া করিলে হাঁচি, স্বরভঙ্গ ও শ্বাসযন্ত্রের উপদাহ উপস্থিত হয়। “গিলিতে গেলে শ্বাসযন্ত্র সম্বন্ধীয় সর্দিতে পূর্ণ। ইহাতে ফুসফুসের যকৃৎবৎ কঠিনতা প্রাপ্তি আছে; রসপ্রসেক একটি অতি সাধারণ ব্যাপার।
অপর নাম – ব্রোমিয়াম (Bromium)
ব্রোমিয়াম বিশুদ্ধ রূঢ়পদার্থ। পরিশ্রুত জল সহযোগে দ্রবাকারে ইহা ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়। তৃতীয় দশমিক ও তদূর্ধ্ব ক্রম অ্যালকোহল সহকারেও প্রস্তুত হয়ে থাকে। কিন্তু এর জলীয় দ্রবণই প্রশস্ত। অ্যালকোহল সহযোগে ব্রোমিয়াম শীঘ্র ব্রোমিক অ্যাসিড হয়ে যায়।
১। ব্রোমিন একটি মৌলিক পদার্থ এবং ডাঃ হেরিং কর্তৃক পরীক্ষিত ও সুষ্ঠভাবে বর্ণিত। ইহা স্বরযন্ত্রের রোগের একটি প্রয়োজনীয় ঔষধ। গণ্ডমালাদোষ ও গুটিকাদোষ (tuberculosis) জাত গ্রন্থির রোগেও ইহা ফলপ্রদ। ঈষৎ নীলবর্ণের চক্ষু, শণের মত চুল, পাতলা ভ্রূ, সুন্দর সুকোমল ত্বক, আরক্ত গণ্ড, গণ্ডমালাদুষ্ট বালিকাদের পক্ষেই এই ঔষধ বিশেষভাবে উপযোগী। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে। আইওডিন গণ্ডমালা দোষনাশক ঔষধ, কিন্তু আইওডিনের রোগীর ধাতু ও প্রকৃতি, ব্রোমিনের প্রায় বিপরীত।
* তিনটি ঔষধকেই বোধহয় গ্রন্থি সম্বন্ধীয় রোগে যেরকম সৰ্ব্বদা মনে করা উচিত, তা করা হয় না। এই তিনটি হল -কার্ব এনিমেলিস, কোনিয়াম ও ব্রোমিন। তিনটি ঔষধেই ক্যানসারের সম্ভাবনা সহ গ্রন্থিগুলি পাথরের মত শক্ত হয়। ব্রোমিনে বেদনার কোন বিশেষত্ব নেই, কিন্তু কোনায়াম ও কার্বো-এনিমেলিসের বেদনা অনেকটা ক্যানসারের বেদনার ন্যায় ধারাল, বর্শা বিদ্ধবৎ কৰ্ত্তনবৎ বা জ্বালাকর।
২। ডিপথিরিয়া রোগে ব্রোমিন কখন কখন আশ্চর্যজনক কাজ করে। প্রথমতঃ বায়ুনালীতে (bronchi), কণ্ঠনালীতে (trachea) অথবা স্বরযন্ত্রে কৃত্রিম ঝিল্লীর উৎপত্তি হয়ে উপরদিকে উঠতে থাকে। ইহা লাইকোপোডিয়ামের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ উহাতে ঝিল্লী প্রথমে নাকে গঠিত হয়ে নীচের দিকে যায়।
৩। কৃত্রিম ঝিল্লীবিশিষ্ট ক্রুপরোগে ব্রোমিনে হিপারের ন্যায় শ্লেম্মার অতিশয় ঘড়ঘড় শব্দ থাকে, কিন্তু শ্লেষ্মা উঠে না। স্বরযন্ত্রে ও বায়ুনালীতে অতিরিক্ত শ্লেষ্মাসঞ্চয় হেতু শ্বাসরোধের যথেষ্ট সম্ভাবনা জন্মে (বাযুনালীতে শ্লেষ্মা সঞ্চয়ে এন্টিম টার্ট উপযোগী)।
৪। মুখমণ্ডলে মাকড়সার জাল থাকার ন্যায় অনুভূতি (ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব, গ্রাফাইটিস, বোরাক্স)।
৫। নাকের পাতার পাখার ন্যায় উঠা নামা।
৬। অতিশয় ব্যায়ামের ফলে হৃৎপিণ্ডের বিবৃদ্ধি (কষ্টিকাম)।
৭। ঝিল্লী বিশিষ্ট ঋতুশূল বেদনা (ল্যাক ক্যানাইনাম)।