Cact | উৎকন্ঠা, মৃত্যুভয় ও সহজে ভয় পাবার প্রবনতা। |
Cact | শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংকোচন ও আড়ষ্টতা, কষে বাঁধা আছে এরূপ অনুভূতি। |
Cact | মাথার তালুতে কোন ভারী জিনিস আছে এরূপ ব্যথা। |
Cact | মাথায় রক্তের চাপ বৃদ্ধির ফলে ব্যথা, মাথার শিরগুলি ফোলা ও মাথা কষে বাঁধা আছে এরূপ অনুভূতি। |
Cact | হৃৎপিন্ডটি যেন লোহার সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে আছে এরূপ অনুভূতি। |
Cact | হৃৎপিন্ডে ধড়ফড়ানি, বিশেষত বাম পাশে শুলে। |
Cact | বাম বাহু ফোলা ও অসাড় অনুভূতি। |
রক্তপ্রধান স্বাস্থ্যবান যারা, তাদের রক্ত সঞ্চয় হওয়ার প্রবণতা (একোন) তা থেকে প্রায়ই রক্তপাত হয়; রক্তাধিক্য হয়ে সন্ন্যাস রোগ (Apoplexy) ।
Apoplexy = সন্ন্যাস রোগ, দু’ধরেনর হয় যেমন (১) শরীরের ভেতর কোন যন্ত্রের অত্যধিক রক্ত জমা হয়ে যথা পেটের বা ফুসফুসের সন্ন্যাস রোগ ।
(২) হঠাৎ জ্ঞান হারায়, অঙ্গ অচল হয়ে পড়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে, রক্তের ডেলা জমে (Emobolus বা Thrombus) আর্টারীর রক্তচলাচল থামিয়ে দেয় বা মস্তিষ্কের কোন রক্তবাহী আর্টারী ফাটিয়ে দেয়। একে সেরেব্রোভাসকুলার এ্যাক্সিডেন্ট বা স্ট্রোকও বলে ।
লক্ষণ – হঠাৎ আক্রমণ, জ্ঞান হারায়, মুখের তালুর নরম অংশে প্যারালিসিস্ হয়ে কষ্টকর শ্বাস প্রশ্বাস—নাক ডাকার মত শব্দ হয়, গালে ও মুখ ঘামে ভরে যায়। মস্তিস্কে যে দিকে রক্তক্ষরণ হয় সেদিকের চোখের তারা বড় হয়। সাধারণতঃ এক অঙ্গ পড়ে যায়। গা দিয়ে চটচটে ঘাম বার হতে থাকে। গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম থাকে। কথা আড়ষ্ট হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। এই রকম ভাব যদি ধীরে ধীরে হয় তবে (Thrombosis) থ্রম্বোসিস থেকে হয়েছে ধরা যায় ।
যদি চেতনা থাকে তবে রোগীকে খুব ধীরস্থিরভাবে মাথা ও কাঁধ সামান্য। উঁচুতে রেখে বসিয়ে বা শুইয়ে দিতে হয়। নড়াচড়া একদম নয়। জামা-কাপড় ঢিলে করে দিতে হয় বিশেষ করে গলার কাছে। মাথায় ও ঘাড়ে ঠান্ডা জল দিয়ে মুছতে হয়। হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা অবশ্যই দরকার ।
রোগী মরতে ভয় পায়-মনে করে এ রোগ সারবে না (আর্স) ।
রক্তপাত – নাক, ফুসফুস, পাকস্থলী, রেক্টাম, মূত্রথলী থেকে বার হয় (ক্রোটেলাস, মিলিফোলিয়াম, ফস)।
মাথাযন্ত্রণা — মাথার উপর ভাগে (vertex) যেন ভারী কিছু চাপান আছে এই রকম মনে হয় (এইভাব চাপে উপশম = মেনিয়াস্থিস) রজোনিবৃত্তির বয়সে মাথায় যন্ত্রণা (গ্লোন, ল্যাকে)।
রক্তসঞ্চয় হয়ে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে, ডানদিকে, ভয়ানক দপদপ লাফানোমত যন্ত্রণা মাথার যন্ত্রণা ও স্নায়ুশূলে এই রকম হয় ।
সারা শরীর যেন তারের খাঁচায় বন্দী, যেন খাঁচার প্রতিটি তার তাকে আস্তে আস্তে জোরে জোরে চেপে ধরছে।
গলায়, বুকে, হৃৎপিন্ডে, মূত্রথলী, রেক্টাম, জরায়ু, যোনি যেন কুঁচকে আছে এই অনুভূতি—সামান্য ছোঁয়াতেই অনুভব হয় বা উৎপত্তি হয়। বুকে ভারবোধ মনে হয় যেন ভারী বোঝা চাপান আছে, যেন লোহার শেকলে বাধা আছে যা থেকে স্বাভাবিক নড়াচড়ায় বাধা আসে।
মনে হয় বুকের নীচের দিকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাধা আছে তাতে ডায়াফ্রাম অঞ্চল টেনে ধরছে। (ডায়াফ্রাম = ফুসফুস ও পেটের মধ্যবর্তী আবেষ্টনী বা একটি অপরটি থেকে আলাদা করে রাখে।)
মনে হয় একটা লোহার হাত বারে বারে হৃৎপিন্ড চেপে ধরছে আবার ছেড়ে দিচ্ছি- যেন হৃৎপিন্ড বাধা আছে সেই কারণে হৃৎপিন্ডের স্পন্দন হবার মত জায়গা নেই। শরীরে সর্বত্র বর্শাবেধার মত, বিদ্যুৎ তরঙ্গের মত লাফানো, সাড়াঁশি দিয়ে চেপে ধরার মত বেদনা। তীব্র যন্ত্রণা হয়ে শেষ হয় আবার যন্ত্রণা শুরু হয় ।
শুয়ে থাকলে ঋতুস্রাব বন্ধ থাকে (বোভিষ্টা, কষ্টি)।
বুক ধড়ফড়ানি সারা দিনরাত, হাঁটাচলায় ও বাঁদিক চেপে শুলে বেড়ে যায় (ল্যাকে); ঋতুস্রাব হওয়ার শুরুতে ঐভাবে বাড়ে। জ্বর বেলা ১১টা ও রাত ১১টায় ঘুরে ঘুরে আসে।
সম্বন্ধ — একোন ডিজি, জেলস, ক্যালমিয়া, ল্যাকে, টেবেকাম-তুলনীয়।
শক্তি – ৬, ৩০, ২০০।
এই ঔষধ গোলাকৃতি পেশী তন্তুর উপর কাজ করে, এবং এই কারণে সঙ্কোচন দেখ দেয়। হৃদপিণ্ড ও ধমনীসমূহ ক্যাকটাসের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকরী হতে উঠে এবং ক্যাক্টাসের বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লক্ষণ সঙ্কুচিত অবস্থা, যাতে মনে হৃদপিণ্ডটি একটি লোহার বন্ধনী দিয়ে কষে বাধা রয়েছে, তা প্রকাশিত হয়। এই জাতীয় অনুভূতি শরীরে বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, যেমন, অন্ননলী, প্রস্রাবথলি প্রভৃতি। এই ঔষধ হৃদপিণ্ডের রোগে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুসিক লক্ষণ উৎপন্ন করে যেমন দুঃখিতভাব ও বিষন্নতা। রক্তস্রাব, সঙ্কোচন নির্দিষ্ট সময় পর পর লক্ষণের প্রকাশ ও আক্ষেপিক বেদনা। রোগীর মনে হয় সমস্ত শরীরটা একটা খাঁচার মধ্যে রয়েছে এবং খাঁচার প্রতিটি তার কষে বাঁধা রয়েছে। মেদযুক্ত ধমনী ও দুর্বল হৃদপিণ্ডে রক্তাধিক্য, রক্তের অনিয়মিত বন্টন। রক্ত খুব দ্রুত জমাট বাঁধে এই ঔষধের দ্বারা। নির্দিষ্ট সময় পর পর রোগ লক্ষণের প্রকাশ, এটি এই ঔষধের একটি উচ্চ স্তরের বৈশিষ্ট্য। বিষদুষ্ট গলগণ্ড তৎসহ হৃদপিণ্ডের উপসর্গ সমূহ। ক্যাক্টাস নাড়ী বিহীন, রোগী যেন ধুকছে ও ক্লান্ত।
মন – বিষন্ন, অল্পভাষী, দুঃখিত অভদ্র। মৃত্যু ভয়। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠে। মানসিক আতঙ্ক।
মাথা — রাত্রিকালীন খাবার সময় পেরিয়ে গেলে মাথার যন্ত্রণা। (আর্সেনিক, ল্যাকেসিস, লাইকো- পোডিয়াম)। মাথার তালুতে ভার চাপানোর মত অনুভূতি। ডানদিকের দপদপকর বেদনা। রক্তসঞ্চয়জনিত কারণে মাথার যন্ত্রনা, নির্দিষ্ট সময় পর পর দেখা দেয়, যেন সন্ন্যাস রোগ হবে এই জাতীয় আশঙ্কা। মাথার রক্তবহা নলীগুলির প্রসারণ। মনে হয় যেন মাথাটি একটি সাঁড়াশীর ভিতর কষে রয়েছে। কানের ভিতর দপদপানি। দৃষ্টি ঝাপসা। মুখমণ্ডলের ডানদিকের স্নায়ুশূল, সঙ্কোচনবৎ বেদনা, দৈনিক একই সময়ে বেদনা দেখা দেয়। (সিড্রন)।
নাক – নাক থেকে প্রচুর রক্তপাত হয়। তরল সর্দি।
গলা — অন্ননলীর সঙ্কোচন। জিহাবার শুষ্কতা, যেন আগুনে পোড়ানো হয়েছে, খাদ্যবস্তু গেলার জন্য অনেকখানি তরলের প্রয়োজন হয়। হৃদ্শূল বা অ্যাঞ্জাইমা পেক্টোরিসে গলার ভিতর শ্বাস বন্ধকের সঙ্কোচন তৎসহ রগের ধমনী সকলে পূর্ণতা ও দপদপকর অনুভূতি।
পাকস্থলী – সঙ্কোচন, দপদপানি, অথবা পাকস্থলীতে ভারীবোধ। রক্তবমন।
মল – শক্ত, কালো মল। সকালের দিকে উদরাময়। অর্শ স্ফীত ও বেদনাযুক্ত। মলদ্বারে প্রচণ্ড ভারবোধ। ম্যালেরিয়া জ্বরে অন্ত্র থেকে রক্তস্রাব তৎসহ হৃদপিণ্ডের উপসর্গ সমূহ।
প্রস্রাব – প্রস্রাব থলির গ্রীবা দেশে সঙ্কোচন, ফলে বাধাপ্রাপ্ত প্রস্রাব। প্রস্রাব থলি থেকে রক্তপ্রস্রাব। প্রস্রাবনলীর ভিতর জমাট বাঁধা রক্তের ঢেলা। বারে বারে প্রস্রাব।
স্ত্রীরোগ – জরায়ু ও ডিম্বাশয় স্থানে সঙ্কোচনবোধ। যন্ত্রণাদায়ক ধাতুস্রাব, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ে দপদপকর বেদনা। যোনিপথে যন্ত্রণাদায়ক আক্ষেপ, যা সঙ্গমে বাধা দেয়। মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের আগে, কালোবর্ণের, অনেকটা পিচের মত দেখতে। (কক্কিউলাস, ম্যাগ কার্ব)। শুয়ে পড়লে স্রাব বন্ধ হয়ে যায় তৎসহ হৃদপিণ্ডের উপসর্গ সমূহ।
বুক – কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস, যেন বুকের উপর ভার চাপানো আছে। বুকের ভিতর সঙ্কোচন, শ্বাস-প্রশ্বাস জোর করে থামানোর ন্যায়। মধ্যচ্ছদার প্রদাহ। হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন, যেন শক্ত লোহার বন্ধনী দিয়ে কষে বাঁধা আছে এই রূপ অনুভূতি। হৃদশূল। হৃদকম্প,
তীর বেঁধার মত যন্ত্রণা, বাম বাহু পর্যন্ত প্রসারিত হয়। কাশির সঙ্গে রক্ত উঠে, তৎসহ আক্ষেপিক কাশি। মধ্যচ্ছদার প্রদাহ, তৎসহ অত্যন্ত কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস।
হৃদপিণ্ড — একই সঙ্গে এন্ডোকার্ডাইটিস সহ মাইট্রাল ভ্যালভের অক্ষমতায়, এই ঔষধ অত্যন্ত মারাত্মকভাবে ও দ্রুত কাজ করে। খুব ভালো কাজ করে, হৃদপিণ্ডে কোন রোগ সবে শুরু হচ্ছে এই জাতীয় অবস্থায়। আর্টারিয়োস্কেলেরোসিসের দরুণ হৃদপিণ্ডের দুর্বলতা। মারাত্মক হৃদকম্প, বামদিক চেপে শুলে, ঋতুস্রাব শুরু হবার মুখে বৃদ্ধি। হৃদশূলসহ শ্বাসরোধক অবস্থা, ঠাণ্ডা ঘাম ও লোহার বন্ধনী দিয়ে কষে বাঁধার মত অনুভূতি। হৃদপিণ্ডের এপেক্স স্থানে বেদনা, বেদনা তীরের গতিতে বামদিকের বাহু পর্যন্ত প্রসারিত হয়। হৃদকম্প, তৎসহ মাথাঘোরা, শ্বাসকষ্ট, পেটফঁপা। সঙ্কোচন, হৃদপিণ্ডে সূঁচফোটার মত তীব্র বেদনা। নাড়ীদুর্বল, অনিয়মিত, দ্রুত, শক্তিহীন। এভোকার্ডিয়াল মারমার, প্রিকর্ডিয়্যাল ডাললেসের আয়তনের বৃদ্ধি, নিলয় বা ভেন্ট্রিকেলের বিবৃদ্ধি। রক্তচাপ কম।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – হাত ও পায়ের শোথ হাত কোমল, পায়ের পাতার বিবৃদ্ধি। বামবাহুর অবসাদ। হাত দুটি বরফের মত ঠাণ্ডা। পায়ের অস্থিরতা।
ঘুম — শরীরের বিভিন্ন অংশে দপদপানির জন্য অনিদ্রা। ভয়পূর্ণ ঘুম।
জ্বর – জ্বর দৈনিক একই সময়ে আসে। পিঠ শীতল ও হাতদুটি বরফের মত ঠাণ্ডা। সবিরাম জ্বর, রোগাক্রমনের সময় দুপুরের দিকে (সকাল ১১টা), অসম্পূর্ণ দশা, তৎসহ রক্তস্রাব। ঠাণ্ডাভাব প্রাধাণ্য লাভ করে, ঘাম ঠাণ্ডা তৎসহ প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা। গাত্ৰতাপ দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের থেকে নীচে থাকে।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, দুপুরের দিকে, বামদিক চেপে শুলে, হাঁটা-চলায়, উপরের দিকে উঠলে, সকাল ও রাত্রি ১১টায়।
উপশম – মুক্ত বাতাসে।
সম্বন্ধ – দোষগ্ন-একোনাইট, ক্যাম্ফর, চায়না।
তুলনীয় – ডিজিট্যালিস, স্পাইজিলিয়া, কনভ্যাল্যার, ক্যালমিয়া, ন্যাজা, ম্যাগনল।
শক্তি – অরিষ্ট (তাজা ফুল থেকে তৈরী করা হবে) থেকে ৩য় শক্তি। উচ্চতর শক্তি স্নায়বিক হৃদকম্পের ক্ষেত্রে।
ক্যাক্টাসের সর্বত্রই আকুঞ্চন, সঙ্কোচন এবং রক্তসঞ্চয়। মস্তকে রক্তের প্রধাবন এবং হস্তপদাদির শীতলতা। অথবা কোন যন্ত্রে, বুকে বা হৃৎপিন্ডে রক্তের প্রধাবন। শরীরে কখন সমানভাবে রক্তসঞ্চালন হয় না, আক্ষেপিক ও অনিয়মিত ভাবে হয়। সকল স্থানের গোলাকার তন্তুগুলির আকুঞ্চনে, রক্তসঞ্চালনের বিশৃঙ্খলা ঘটে। যে-স্থানে উহা অনুভব করা যায় এবং ইন্দ্রিয়শক্তি দ্বারা উপলব্ধি করা যায়, সেই স্থানেই আকুঞ্চন অনুভূত হয়, উহা যেন তারের খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ থাকার ন্যায় অনুভূতি এবং ঐ অনুভূতিই ক্যাক্টাসের পরিচালক লক্ষণ। যে-স্থানে আকুঞ্চন অনুভূত হয় না, যে স্থানে অনুভূতিজ্ঞান থাকে না, আমরা জানি যে, সেই স্থানে গোলাকার তন্তুসমূহের আক্ষেপিক অবস্থা উপস্থিত হয়, কিন্তু যে-সঙ্কোচনটি অনুভূত হয়, তাহা অধিক অনুভূত হয় শরীরের উপরিভাগে এবং গোলাকার তন্তুবিশিষ্ট যন্ত্রে নল ও নালীগুলিতে। তাহারা আকুঞ্চিত হইয়া পড়ে এবং ঐ আকুঞ্চন আক্ষেপের ন্যায় বোধ হয়। ইহাতে মাথার চারিদিকে, বুকের চারিদিকে, বক্ষব্যবধায়ক পেশীর বন্ধনীসমূহে ও উদরের সর্বত্র একপ্রকার কষিয়া ধরা ও আকুঞ্চন অনুভূত হয়। হৃৎপিন্ডের চারিদিকের আকুঞ্চন বলবৎ প্রকৃতির, হাত দিয়া মুঠা করিয়া ধরার মত সঙ্কোচন। “হৃৎপিন্ডের চারিদিকে সঙ্কোচন অনুভূত হয়। এই সঙ্কোচন গলায় এবং গলকোষে উৎপন্ন হইয়া আক্ষেপ জন্মে, যোনিতে উৎপন্ন হইয়া যোনির আক্ষেপ সৃষ্টি করে এবং তাহাতে সঙ্গমকাৰ্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। জরায়ুতে ইহা প্রবল খালধরা উৎপাদন করে। সাঁড়াশি দিয়া চাপিয়া ধরার ন্যায় এবং সঙ্কোচন, যেন জরায়ুটি কেহ মুঠা করিয়া ধরিয়াছে, আক্ষেপের সময় যেরূপ হয়, তদ্রূপভাবে চাপিয়া ধরিয়াছে। কিন্তু যখন এইপ্রকার সঙ্কোচন হয়, তখন রক্তসঞ্চয় থাকে। “সঙ্কোচনগ্রস্ত অঙ্গে রক্তের প্রধাবন।” “জরায়ুতে সঙ্কোচনের সহিত প্রবল রক্তসঞ্চয়।” “সঙ্কোচনের সহিত বক্ষে প্রবল রক্তের প্রধাবন, মনে হয়, যেন বুকটি উষ্ণ রক্তের উচ্ছ্বাসে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে।” অন্য ঔষধ অপেক্ষা ক্যাক্টাসে এই বিশেষ লক্ষণটি অধিকভাবে পরিস্ফুট থাকে। অনেক ঔষধে অনুরূপ অবস্থা মাঝে মাঝে দেখা দেয়, কিন্তু ক্যাক্টাসে ইহা সব সময়েই থাকে, ক্যাক্টাসের প্রকৃতিই হইল সঙ্কোচন সৃষ্টি করা, যে-সকল স্থানে পূর্বে সঙ্কোচন অনুভূত হয় নাই অথবা সঙ্কোচনের কথা চিন্তা করাও হয় নাই, সেই সকল স্থানে সঙ্কোচন সৃষ্টি করা। সর্বাঙ্গে সঙ্কোচন, যেন তাহার দেহকে তারের খাঁচায় আবদ্ধ করিয়া রাখা হইয়াছে। মস্তকত্বকে সঙ্কোচনবোধ, যেন উহা ক্রমশঃই কষিয়া ধরা হইতেছে। অত্যন্ত সঙ্কোচন এবং উহা হঠাৎ উপস্থিত হয়। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, তৎসহ মস্তক উত্তপ্ত এবং রক্তাভ মুখমন্ডল। রোগের প্রারম্ভে, নিউমোনিয়ার প্রারম্ভে রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া এবং উত্তপ্ত মস্তক ও দেহ শীতল (আর্নিকা সদৃশ), তৎসহ অত্যন্ত আকুঞ্চন ও টানটানভাব, যেন মাথাটি চাপিয়া ধরা হইতেছে, যেন মস্তিষ্কের ঝিল্লী টানটান হইয়া পড়িয়াছে, যেন মস্তিষ্কটি কাপড় দিয়া কষিয়া ধরা হইয়াছে, যেন উহা স্ক্রুদ্বারা ক্রমশঃ কষিয়া বাঁধা হইতেছে। কিন্তু নলাকার ও প্রণালীবৎ যন্ত্রসমূহে উহা একটি বিশেষ অংশের সঙ্কোচন, অনেক সময়েই দড়ি দিয়া বাঁধিয়া রাখার ন্যায়। জরায়ুতে বালিঘড়ির সঙ্কোচনের ন্যায় থাকিয়া থাকিয়া সঙ্কোচন। ইহাতে প্রদাহ, রক্তসঞ্চয় রক্তের প্রধান আছে, প্রদাহ ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে ও রসসঞ্চয় হয়। বিভিন্ন অঙ্গের প্রদাহ।
ইহাতে বাত আছে। এই ঔষধটি গেঁটেবাত প্রদান ধাতুতে অত্যন্ত উপযোগী, ইহা তরুণ প্রাদাহিক বাতে উপকারী এবং এস্থলে আক্রান্ত সন্ধিগুলিতে রক্তসঞ্চয় হয়। তারপর আবার সেই সঙ্কোচন যেন ফিতা দিয়া বাধিয়া রাখা হইয়াছে, ব্যান্ডেজ করিয়া রাখা হইয়াছে। ঐ চিন্তার সহিত আঁটভাব, টানভাব, চাপবোধও বর্তমান থাকে। ইহাতে হৃৎপিন্ডে এরূপ দীর্ঘকালস্থায়ী রক্তের প্রধাবন হয় যে, পরিশেষে হৃৎপিন্ডের ক্রিয়ার বিশৃঙ্খলা এবং তন্তুসমূহের বিকার ঘটে। আর, ইহাতে হৃৎপিন্ডের উপর এরূপ গভীর আরোগ্যকর ক্রিয়া আছে যে, ইহা দ্বারা হৃৎপিন্ডের যান্ত্রিক রোগ আরোগ্য হয়, যদি ঐ অবস্থা পূর্বোক্ত কারণে রক্তসঞ্চয় হইতে দেখা দিয়া থাকে, অথবা বাতরোগ সন্ধিস্থানগুলিকে আংশিকভাবে পরিত্যাগ করার পর, বাতজনিত রক্তসঞ্চয় হইতে আকুঞ্চনের ফলে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হইয়া হৃৎপিন্ডের সঙ্কোচনের ফলে দেখা দিয়া থাকে। পরীক্ষাকারীগণ এবং রোগীরা নানাভাবে এই হৃৎপিন্ডের আকুঞ্চনের বর্ণনা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। কখন কখন বলা হইয়াছে, “যেন লোহার হাত দিয়া চাপিয়া ধরিয়াছে।” ইহা দ্বারা আকুঞ্চনের কঠোরতা প্রকাশ করা হইতেছে। এই প্রকার বাতরোগে সন্ধিস্থলের বাতজ উপদ্রব নিবৃত্ত হইলে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়, তৎসহ পুরাতন প্রকৃতির রক্তসঞ্চয় ও বিবৃদ্ধি দেখা দেয়; তখন আমরা হৃৎকপাটের বৃদ্ধি দেখিতে পাই, সুতরাং ঘড়ঘড় শব্দ শ্রুত হয়, মাথা গরম থাকে এবং রোগী ক্রমশঃ শীর্ণ হয়। মূত্রপিন্ডের উপদ্রব উপস্থিত হয়, হৃৎপিন্ড দুর্বল হইতে থাকে এবং তারপর শোথ অবস্থা আরম্ভ হয়; ক্যাক্টাসের গতি এইরূপ শেষের দিকে, হৃৎপিন্ডের রোগ, তৎসহ মূত্রপিন্ডরোগ, শীর্ণতা এবং হাত-পায়ের স্ফীতি দেখা দেয়। ক্যাক্টাসের প্রকৃতি এইরূপ এবং তোমরা সমগ্র মেটিরিয়া মেডিকা পড়িয়াও এরূপ অন্য কোন ঔষধ পাইবে না। লক্ষণগুলির প্রাবল্যের দিক হইতে ইহার সহিত তুলনা করিবার মত আর কোন ঔষধ নাই। এতক্ষণ ধরিয়া আমি যাহা বর্ণনা করিলাম তাহার সারমর্ম এই তিনটি কথা রক্তসঞ্চয়, সঙ্কোচন ও আকুঞ্চন।
যেখানেই হউক না কেন, ক্যাক্টাসের বেদনা অত্যন্ত তীব্র হয়। উহাতে রোগী চিৎকার করিতে বাধ্য হয়, যন্ত্রণা মুঠা করিয়া ধরার মত, সঙ্কোচনবৎ; কখন কখন উহা ছিন্নকর যন্ত্রণার ন্যায় বোধ হয়, কিন্তু সবসময়েই সেই চাপিয়া ধরার অনুভূতি থাকে। মনে কর, তুমি কোন ভীষণভাবে রক্তসঞ্চয়বিশিষ্ট যন্ত্রের উপর একটি ফিতা বাঁধিয়াছ এবং উহাকে ক্রমেই কষিতেছ। আমার মনে হয়, ইহাই বোধ হয় কোন রক্তসঞ্চবিশিষ্ট যন্ত্রের উপর সঙ্কোচন হইতে রোগীর যেরূপ যন্ত্রণা হয়, তাহারই বর্ণনা। রক্তসঞ্চয়যুক্ত যন্ত্রে বেদনা, ব্যথিত আগে যাতনা। অন্ত্রে আকুঞ্চনবৎ বেদনা হইলে, উহা ছিন্নকর, সঙ্কোচনবৎ খালধরার মত হয় কিন্তু যন্ত্রণা যদি দীর্ঘ পেশীগুলিতে হয়, তাহা হইলে তাহা সঙ্কোচক প্রকৃতির হয় না, কারণ উহা গোলাকার তন্তুগুলিতে নয়, কিন্তু দীর্ঘাকার তন্তুগুলিতে এবং উহাকে আমরা খালধরা বলি। ক্যাক্টাস দীর্ঘপেশীগুলিতে কিছুটা আক্ষেপ উৎপাদন করে, কিন্তু উহা তত বেশী নয়। আরও অনেক ঔষধে বিশেষতঃ বেলে’ এই প্রকৃতির খালধরা ও সঙ্কোচন এবং গোলাকার তন্তুগুলির আকুঞ্চন আছে, এবং ঐগুলিতে আক্ষেপ প্রবণতাও দেখা যায়। বেলে’র ভীষণ মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয়ের সহিত সচরাচর, হস্ত-পদাদিতে খালধরা এবং সর্বাঙ্গে ও স্থানে স্থানে পেশীসমূহের আক্ষেপ কিন্তু ক্যাক্টাসে ঐরূপ হয় না। ভীষণ রক্তসঞ্চয় এবং তাহাতে সে বিমূঢ় হইয়া পড়ে। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে প্রথমে মুখ অত্যন্ত লাল থাকে, তারপর শৈরিক রক্তাবরোধহেতু কৃষ্ণাভ হয়, এবং শেষে অচৈতন্যতা উপস্থিত হয়। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে সে অলস হইয়া পড়ে।
মনের অবস্থা যন্ত্রণার আধিক্যের জন্য ভয় ও দুঃখপূর্ণ থাকে। রোগী কখনও এরূপ কষ্ট অনুভব করে নাই এবং বুঝিতে পারে নাই এই সকলের অর্থ কি! অত্যধিক যন্ত্রণা, অতি ভীষণ যন্ত্রণা, সহসা ভীষণ যাতনা, অত্যন্ত খালধরা, অত্যন্ত ছিন্নকর বেদনা, অত্যন্ত সঙ্কোচন। যখন হৃৎপিন্ডে এবং বক্ষের চারিদিকে এরূপ সঙ্কোচন দেখা দেয়, তখন রোগীর মনে হয়, যেন সে মরিবার উপক্রম হইয়াছে, এবং তৎক্ষণাৎ সে ভয়ে অভিভূত হইয়া পড়ে এবং ঐ ভয় তাহার মুখে অঙ্কিত হয়। সে মরণকে ভয় করে, এবং তাহার যাতনা এত তীব্র হয় যে, সে মনে করে যে, সে মরিতে চলিয়াছে। কিন্তু একোনাইটে’ আমরা যেরূপ উৎকণ্ঠা দেখি, তাহার সহিত ইহার সম্বন্ধ নাই, যদিও ‘একোনাইটে’ও এইরূপ বক্ষের সঙ্কোচন এবং ঘাড়ের সঙ্কোচন আছে। ‘একোনাইটে’ ভয়ানক শ্বাসরোধভাব থাকে। উহাতে তাহার ভয় হয় যে, সে শ্বাসরোধ হইয়া মরিবে এবং তাহার অত্যন্ত উদ্বেগ দেখা দেয়। ইহা ক্যাক্টাসের ন্যায় তত প্রবল হয় না। যন্ত্রণায় তীব্র চিৎকার করা ক্যাক্টাসের একটি সাধারণ ব্যাপার। “একগুঁয়ে একটিও কথা কহিতে বা উত্তর দিতে অনিচ্ছুক।” এই অবস্থা প্রায়ই ক্যাক্টাসে থাকে, কিন্তু ইহা যে সকল ঔষধে অত্যন্ত যন্ত্রণা থাকে, তাহার অধিকাংশেরই ঠিক বিপরীত। “দুঃখভাব, একগুঁয়েভাব এবং কাঁদিবার অদম্য স্পৃহা। মৃত্যুভয়।” অর্থাৎ সে মনে করে যে, যন্ত্রণা ভীষণতার জন্য তাহাকে মরিতে হইবে। “সে মনে করে, তাহার রোগ আরোগ্য হইবার নহে।” তাহার মনে হয় এরূপ তীব্র যন্ত্রণা নিশ্চয়ই মৃত্যুতে পরিসমাপ্ত হইবে। রক্তসঞ্চালন অত্যন্ত অনিয়মিত এবং অত্যন্ত আক্ষেপিক প্রকৃতির বলিয়া হৃৎপিন্ডের ভয়ানক অনিয়মিত ক্রিয়া রক্তবহা নাড়ীগুলির মধ্যেও পরিব্যাপ্ত হয়। তাহার দেহের একস্থান গরম, অন্যস্থান ঠান্ডা। মাথায় উত্তাপ অথবা বক্ষে উত্তাপ। রক্তসঞ্চালন এরূপ যে, বিশেষ কোন অঙ্গে রক্তের প্রধাবন ঘটে। হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত সকল ঔষধেই আমরা ভীষণ স্বপ্ন, নিদ্রার মধ্যে মস্তিষ্কের অত্যন্ত উত্তেজনা, চমকিয়া ও ভয় পাইয়া জাগিয়া উঠা এবং তৎসহ সচরাচর পড়িয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি লক্ষণ পাই। পড়িয়া যাওয়ার স্বপ্ন। উত্তেজনাপূর্ণ স্বপ্ন। ক্যাক্টাসে, হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত লক্ষণের সহিত এইরূপ অবস্থা থাকে।
রক্তসঞ্চয়জনিত শিরোঘূর্ণন, মুখ—লাল, ফুলা ফুলা, মস্তিষ্কের মধ্যে দপদপানি; মনে করে, সে যেন পাগল হইয়া যাইবে, শিরোঘূর্ণন শারীরিক পরিশ্রমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অধিকাংশ হৃৎপিন্ডের ঔষধে, অথবা যে-সকল ঔষধে রক্তসঞ্চালন ও হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয়, তাহাতে আমরা স্পষ্ট শিরোঘূর্ণন পাই। “শিরোঘূর্ণন, শারীরিক পরিশ্রমে উহার বৃদ্ধি, বিছানায় পাশ ফিরিলে, হেঁটে হইলে, অর্ধশায়িত অবস্থা হইতে উঠিলে এবং গভীর নিঃশ্বাস লইলে বৃদ্ধি।” ক্যাক্টাসের অনেক রোগীই শ্বাস-প্রশ্বাসের বিশৃঙ্খলায় কষ্ট পায়। সেইজন্যই আমরা গভীর নিঃশ্বাস লইলে বৃদ্ধি লক্ষণটি পাই। যদি সে শ্বাস বন্ধ করিয়া রাখে, হৃৎপিন্ড এত দ্রুত চলিতে থাকিবে যে, মনে হইবে উহা টুকরা টুকরা হইয়া যাইবে। শ্বাস বন্ধ করিলে শরীরের সর্বত্র বর্ধিত স্পন্দন অনুভূত হইবে। ,
শিরঃপীড়া আকুঞ্চনবৎ, চাপনবৎ। উহা রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির বলিয়া, অত্যন্ত তীব্র এবং তৎসহ মস্তক উত্তপ্ত থাকে। মস্তক-শীর্ষে চাপবোধ, যেন মাথার চাঁদিটি ভিতর দিকে ঢুকিয়া যাইবে, কিন্তু বেদনার উপর জোরে চাপ দিলে এই ভাবের উপশম যায়।“মস্তক-শীর্ষে ভারি জিনিষ চাপানর ন্যায় বেদনা, চাপে উহার উপশম।” অনেক সময়েই রোগী তাহার মস্তকে যে চাপ বোধ হয়, তৎসম্বন্ধে ভুল ধারণা করে। অনেক সময়ে অত্যন্ত স্পষ্ট রক্তসঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও তাহারা বলে যে, মাথাটি চাপ দিয়া ভিতর হইতে বাহির দিকে চাপের সৃষ্টি হয়; এই সময়ে আমরা মনে করি যে, বাহির হইতে কোন ঠেস দিলে তাহারা হয়ত উপশম পাইবে, কিন্তু তথাপি তাহারা অত্যন্ত ক্ষতবৎ বেদনা অনুভব করে এবং মনে কর, যেন মাথাটি ভিতর দিকে ঢুকিয়া যাইতেছে। অপর রোগীরা কিন্তু শিরঃপীড়ার সময় মনে করে, যেন মাথাটি বাহির দিকে ঠেলিয়া বাহির হইতেছে। মস্তক-শীর্ষে ভার চাপানোর ন্যায় বেদনা, চাপে উপশম, কিন্তু শব্দে, কথা শুনিলে, কথা বলিলে অথবা উজ্জ্বল আলোকে বৃদ্ধি।” শিরঃপীড়ার সহিত এই ভাব থাকে। কাহারও স্বর শুনিলে সে অত্যন্ত বৃদ্ধিযুক্ত হয়। শব্দ যেন মাথার মধ্যে প্রবেশ করে। মস্তিষ্কটি অনুভূতি-প্রবণ হয় যেন শব্দ একটি জড় পদার্থ, উহা মস্তিষ্কের উপর হুঁড়িয়া মারা হইতেছে। ডানপার্শ্বের শিরঃপীড়া দপদপকর শিরঃপীড়া মাথার ভিতরে, ভারি দপদপকর বেদনা। মস্তকে টানিয়া ধরার ন্যায় বেদনা, মস্তকশীর্ষে টানিয়া ধরার ন্যায় বেদনা। মাথার উপর দিয়া কষিয়া বাঁধার ন্যায় বেদনা, যেন মস্তকত্বককে মাথার খুলির উপর ক্রমশঃই টানিয়া বাধা হইতেছে। এই সকল লক্ষণ হইতে মস্তকে রক্তসঞ্চয় সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না। উহা চক্ষু হইতে বুঝা যায়, মুখ হইতে বুঝা যায়, মস্তকের উত্তাপ হইতে বুঝা যায়। ইহাকে সন্ন্যাসরোগে ব্যবহার করা চলিতে পারে, যদি রক্তসঞ্চয় অত্যন্ত প্রবল হয়, মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ ও চর্চকে হইয়া উঠে এবং রোগী, মস্তিষ্কে ও দেহের সর্বত্র দপদপকর যাতনা অনুভব করিতে থাকে।
এই ঔষধেও বেলের ন্যায় মস্তকে প্রবল রক্তসঞ্চয় আছে, কিন্তু বেলে আমরা শরীরের প্রবল উত্তাপ, জ্বরের উত্তাপ পাই, উহা ক্যাক্টাসে দেখা যায় না। ক্যাক্টাসে সামান্য জ্বর থাকে। উত্তাপ দেহের উপরিভাগে মাথার এবং ঘাড়ে থাকে। ঘাড়ে পূর্ণতাবোধে, ঘাড়ের স্ফীতি থাকে। রোগী মনে করে যে, মাথায় রক্তের চাপে মাথাটি বড় হইয়া উঠিতেছে, কিছু ঐসঙ্গে সেরূপ বেশী গাত্রতাপের বৃদ্ধি থাকে না। ইহাতে জ্বর আছে, কিন্তু জ্বর ব্যতীতও এইসব লক্ষণ দেখা যায়। কিন্তু বেলে যখন এইরূপ দপদপানি লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন রোগীর প্রবল উত্তাপ থাকে, তাহার সর্বাঙ্গ উত্তাপে পুড়িতে থাকে। মানসিক পরিশ্রমে মস্তকে উত্তাপ ক্যাক্টাসের একটি প্রবল লক্ষণ। যে-সকল লোক কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়িয়া দেয়, তাহাদের মধ্যেও এরূপ লক্ষণ পাওয়া যায়, সুতরাং ঐরূপ ক্ষেত্রে সাধারণতঃ ক্যাক্টাসই ঔষধ।
কষা কলার পরার ন্যায় গলায় চাপিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি। সঙ্কোচন, চর্মের ও পেশীসমূহের উপর সর্বত্র টানপড়া ভাব। হৃৎপিন্ডে সঙ্কোচনবোধের সহিত গলায় চাপিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি। হিষ্টিরিয়া, গ্লোবাস, হিষ্টিরিয়া রোগে গলায় চাপিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি, মনে হয়, একটি ঢেলা বা বল গলায় উঠিয়া আসিতেছে, সে ক্রমাগত উহা গিলিতে থাকে, কিন্তু দম বন্ধ হইয়া পড়ে এবং বামবাহুর অসাড়তার সহিত তাহার খাল ধরিতে থাকে।
বিশেষভাবে বামবাহুর খালধরা। বাতের ও হিষ্টিরিয়ার ইতিহাসে, হৃৎপিন্ড-লক্ষণের সহিত বামবাহুর সম্পূর্ণ অসাড়তা। বাতের ইতিহাস ক্যাক্টাস রোগীকে পূর্ণতা দিয়া থাকে। মুখ প্রদীপ্ত, উজ্জ্বল লাল, ক্রমশঃ নীল হইতে থাকে। হৃৎপিন্ডের দুর্বলতা থাকিলে উহা নীল হয়, ওষ্ঠ নীল হয়। যে রোগীর গলায় সঙ্কোচনবোধ, তৎসহ মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, নীলবর্ণ মুখ ও বিচিত্র ওষ্ঠ, বামবাহুর অসাড়তা এবং হৃৎপিন্ডে আকুঞ্চনবোধ থাকে, তাহার জন্য আমাদের ক্যাক্টাস প্রয়োজন হয়। বামবাহু আশ্চৰ্য্যরূপে দুর্বল বা অসাড় হয়, উহাতে ঝিনঝিন করা; পোকা হাঁটার ন্যায় সড়সড়ানি।
এই ঔষধের আগাগোড়া আর একটি ব্যাপার আছে, উহা রক্তস্রাব। ইহা বিস্ময়কর নহে। যে ঔষধে এরূপ হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত অবস্থা এবং রক্তবহা নাড়ীসমূহের অবস্থা থাকে, তাহাতে সময়ে সময়ে অল্পাধিক রক্তবহা নাড়ীর শিথিলতা আসিবেই এবং ঐরূপ ক্ষেত্রে রক্তপাত স্বাভাবিক। ইহাতে দুই প্রকার রক্তস্রাব আছে। হৃৎপিন্ড ও রক্তবহা নাড়ীসমূহের অবস্থার আনুষঙ্গিক রক্তবহা নাড়ীর শিথিলতা হইতে রক্তস্রাব, এবং কোন যন্ত্রে ভীষণ রক্তসঞ্চয়জনিত রক্তস্রাব। সাধারণভাবে রক্তপ্রধান রোগীর মাথায় রক্তের প্রবল প্রধাবন হইলে তাহার নাক দিয়া রক্তস্রাব হয়, সে খকখক করিয়া গলা দিয়া রক্ত তুলে। বক্ষে প্রবল রক্তসঞ্চয় হইলে তাহার বক্ষ হইতে রক্ত উঠে। ইহা রক্তসঞ্চয় হইতে রক্তপাত যক্ষ্মারোগ সংক্রান্ত রক্তপাত নহে। জরায়ুতে রক্তসঞ্চয় হইয়া মূত্রের সহিত থাকা রক্তসঞ্চয় প্রবল হইলে মূত্রপথ দিয়া রক্তস্রাব। পুরাতন হৃদপিণ্ড রোগে খুব স্পষ্টভাবে শিথিলতা বর্তমান থাকিলে, শিথিলতাজনিত রক্তস্রাব।
অদ্ভুত অদ্ভুত স্থানে, যথা- পাকস্থলীতে, অন্ত্রে, কখন কখন হস্ত-পদাদিতে, পায়ের পাতায়, হাতের তালুতে, এবং মাথায়ও প্রবল স্পন্দনের অনুভূতি। সর্ব্বাঙ্গে দপদপ করা। বক্ষ ব্যবধায়ক পেশীর বন্ধনীর চারিদিকে, যেন একগাছি দড়ি দিয়া ক্রমাগত কষিয়া বাঁধা হইতেছে এরূপ অনুভূতি। ইহা একটি অদ্ভুত লক্ষণ, তাহার কোমরের চারিদিকে এত কষিয়া আঁকড়াইয়া ধরে যে, তাহার দম বন্ধ হয়, সে শ্বাস লইবার জন্য ছটফট করে এবং কোন কিছু করিতে চায়। ইহাতে তাহার ক্রমশঃ বেশি করিয়া কষিতে থাকে, ক্যাক্টাস অন্ত্রে রক্তসঞ্চয় করে, জরায়ুর প্রদাহ উৎপন্ন করে। পাকাশয়-প্রদাহ, তৎসহ ঐরূপ কষিয়া ধরার অনুভূতি।
ইহা অর্শরোগ আরোগ্য করিবার একটি ঔষধ। বৃহৎ যকৃৎশিরাসমূহ সরলান্ত্রের নিম্নশিরাসমূহ এবং অর্শসংক্রান্ত শিরাসমূহের শিথিলতা। এই শিরাগুলি এরূপ শিথিল অবস্থায় থাকে যে,তাহাতে অর্বুত উৎপন্ন হয়। এবং প্রচুর রক্তপাত হইতে থাকে। রকাতস্রাবী অর্শবলি। গুহ্যদ্বারের সঙ্কোচন। ইহাতে অত্যন্ত কষ্টদায়ক কোষ্ঠবদ্ধতা আছে, অর্শরোগের সহিত কোষ্ঠবদ্ধতা। ইহাতে মূত্রাধারের পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা আছে। ইহাতে মূত্রাবরোধ আছে। মূত্রাধার-গ্রীবার এরূপ আকুঞ্চন হয় যে, বহুক্ষণ ধরিয়া মূত্র নির্গত হইতে পারে না এবং মূত্র অবরুদ্ধ হইয়া থাকে। মূত্রপিন্ডে এরূপ রক্তসঞ্চয় হয় যে, তাহার মূত্রানাশের অনুকূল হয়। রক্তাক্ত মূত্র, চাপচাপ রক্ত। এই ঔষধ দ্রুত রক্তচাপ সৃষ্টির অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। স্রাবিত রক্ত এত দ্রুত চাপ বাধেঁ ও এত ঘন থাকে যে উহা মূত্রপথ বন্ধ করিয়া দেয়। মূত্রাধারের মধ্যে রক্তস্রাব মূত্রপথকে বন্ধ করিয়া দেয়। যোনির মধ্যে রক্তস্রাবে এরূপ রক্তচাপ উৎপন্ন হয় যে, তাহা বাহির করা দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে এবং স্ত্রীলোকের মূত্রনলীর উপর উহা এরূপ চাপের সৃষ্টি করে যে, তাহার পক্ষে মূত্রত্যাগ করা অসম্ভব হইয়া উঠে। উহা একটি প্রকান্ড গোঁজের মত হইয়া উঠে। এইজন্যই পাঠ্যপুস্তকে লেখা আছে রক্তচাপের জন্য মূত্রপাত বাধঅপ্রাপ্ত হয়। ঐ রক্তচাপ যোনির মধ্যেও হইতে পারে, মূত্রাধারেও হইতে পারে। ডিম্বকোষদ্বয়ের প্রদাহ, জরায়ুর প্রদাহ। যুবতী রক্তপ্রধানা বলিষ্ঠ স্ত্রীলোক ঋতুকালে জরায়ুর রক্তসঞ্চয়ের জন্য শয্যাগত হইয়া জরায়ুতে তীব্র আঁকড়াইয়া ধরা ও খালধরার ন্যায় বেদনায় চিৎকার করিতে থাকলে তোমাদের যে ঔষধটির প্রয়োজন হইবে, ইহাই তাহা। ঋতুপ্রদাহ আরম্ভ হইবার পূর্বে বা ঠিক প্রারম্ভে ভীষণ আক্ষেপ হয়।
গোলাকার তন্তুগুলি সঙ্কুচিত হয় এবং রোগিণী ঠিকই বলেন। যেন একগাছি ফিতা দিয়া বেদনা ও রক্তসঞ্চয়যুক্ত জরায়ুটিকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। জমাট রক্তে জরায়ু পূর্ণ হইয়া যায় এবং ঐ রক্ত নির্গত করিবার জন্য প্রসববেদনার ন্যায় আক্ষেপ দেখা দেয় এবং রোগিণী আবার চিৎকার করিতে থাকে এবং কিছুক্ষণ এইরূপ চলিবার পর রক্তস্রাব সরল হইয়া উপশম আনয়ন করে। এই অবস্থার সহিত যদি বাতধাতু অর্থাৎ সন্ধিস্থানে অল্পাধিক বাতব্যথা, এবং অন্যান্য স্থানে আঁকড়াইয়া ধরা ও সঙ্কোচনবৎ অনুভূতি থাকে, তাহা হইলে ক্যাক্টাস আমাদের একটি ঔষধ হইবে। রোগিণীর উত্তেজনা ও তীব্র চিৎকার প্রতিবেশীগণও শুনিতে পায়। এই সকল বেদনার সহিত শ্বাসরোধের ন্যায় আক্রমণ দেখা যায়, কারণ হৃদপিণ্ডে যন্ত্রনা থাকে এবং জরায়ুর সঙ্কোচনের সহিত হৃদপিণ্ডের সঙ্কোচন ও চলিতে থাকে। হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত অবস্থায় মনে হয়, যেন সে শ্বাসের অভাবে মারা যাইবে। বক্ষের সঙ্কোচন। সঙ্কোচন ও রক্তসঞ্চয় এত বেশি হয় যে, মনে হয়, যেন তাহার বুকের উপর একটা বড় বোঝা চাপান রহিয়াছে এবং ঐ বোঝার চাপ যেন তাহার প্রাণ বাহির করিয়া দিতেছে। অনেক ক্ষেত্রে হঠাৎ রক্তসঞ্চয় হয়, প্রদাহ ব্যতীতই দেখা দেয় এবং চলিয়া যায়। বক্ষে রক্তের প্রবল প্রধাবন, তৎসহ অত্যন্ত শ্বাসকৃচ্ছ্রতা ও হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচন, কিন্তু উহা প্রদাহ ব্যতীতই চলিয়া যায়। অন্য সময়ে ক্যাক্টাসে নিউমোনিয়া, ফুসফুসের প্রদাহ, রক্তসঞ্চের পরবর্তী প্রদাহ দেখা দেয় এবং উহার প্রকৃতিগত রক্তাক্ত বা রক্তরেখাঙ্কিত শ্লেষ্মা নির্গত হয়। ক্যাক্টাস ফুসফুসের অধঃপাতিত রক্তসঞ্চয়েরও ঔষধ। সে শুইতে পারে না, শয্যার উপর বসিয়া থাকিতে বাধ্য হয়, প্রত্যেক ফুসফুসের নিম্নাংশেরই নিরেট ভাব থাকে এবং ক্রমশঃ ফুসফুসের নিম্নাংশেরই রক্তাম্বু সঞ্চিত হইয়া ঐ ভাব বাড়িতে আরম্ভ করে। এই অধঃপাতিত রক্তসঞ্চয়, হৃৎপিন্ডের দুর্বলতাহেতু উপস্থিত হয়। পুরাতন ভগ্নস্বাস্থ্য রোগীর ব্রাইটাখ্য পীড়ার শেষ অবস্থায় এরূপ লক্ষণ দেখা দিলে ক্যাক্টাস তাহা আরোগ্য করে এইরূপ অবস্থার শেষে শোথ ও হৃৎপিন্ডের উপদ্রব দেখা দিয়া থাকে। ক্যাক্টাস দ্বারা মৃত্যু স্থগিত হইবে। “কাঁধ দুইটি উঁচু করিয়া চিৎ হইয়া শুইলেই, কেবলমাত্র নিঃশ্বাস লইতে পারে।” পিঠে হেলান দিয়া থাকে অথবা সম্পূর্ণ সোজা হইয়া বসিয়া থাকে। “নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে শ্বাসরোধের আক্রমণ, মূর্খা ও শীতল ঘর্ম দেখা দেয়।”
“মনে হয় যেন হাত দিয়া হৃৎপিন্ডকে চাপিয়া ধরা ও মোচড়ান হইতেছে। হৃৎপিন্ডের বাত। মনে হয়, যেন হৃৎপিন্ড বহুঘন্টা ধরিয়া লোহার হাত দিয়া চাপিয়া ধরিতেছে। হৃৎপিন্ডস্থানে বেদনা। হৃৎপিন্ডে প্রবল চাপবোধ, উহা বাম বগলের নিম্ন দিয়া পৃষ্ঠে প্রসারিত হয়।” সময়ে সময়ে এই বেদনা তীরবেগে বাম হাতের উপর দিয়া প্রধাবিত হয় এবং উহার সহিত অসাড়তা থাকে, কখন কখন স্ফীতিও দেখা দেয়। অসাড়তা, ঝিঁঝিঁধরা, স্ফীতি।“হৃৎপিন্ডের মধ্যে মৃদু বেদনা। হৃৎপিন্ডের মধ্যে গুরু বেদনা, চাপে বর্ধিত হয়। হৃৎপিন্ডস্থানে সঙ্কোচনশীল বেদনা, বাম উদর পর্যন্ত নামিয়া যায়। সময়ে সময়ে মনে হয়, যেন কেহ হৃৎপিন্ডকে হস্তদ্বারা দৃঢ়ভাবে চাপিয়া ধরিয়াছে। হৃৎপিন্ডে পৰ্য্যায়শীল বেদনা।” অর্থাৎ বেদনার তীব্র আবেশকালে এইরূপ সঙ্কোচন অনুভূত হয়। “হৃৎপিন্ডের তরুণ প্রদাহ। হৃৎপিন্ডের পুরাতন প্রদাহ। হৃৎপিন্ডের দপদপানি, দিবারাত্রি, চলিবার সময়, রাত্রিকালে বাম পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে।
এই ঔষধের আর একটি লক্ষণ এই যে, ইহার বক্ষ-লক্ষণ প্রায়ই ১১টার সময় উপস্থিত হয় বা বর্ধিত হয়। প্রাতে ১১টায় এবং রাত্রে ১১টায়। ইহার রোগাক্রমণ প্রাতে ১১টায় ও রাত্রি ১১টায় অথবা কখন কখন প্রাতে ১১টায় এবং কখন কখন রাত্রি ১১টায়। প্রত্যহ প্রাতে ১১টায় শীত। যেখানে সেখানে, বিশেষতঃ মস্তকে সঙ্কোচন, রক্তসঞ্চয় ও আকুঞ্চনসহ রক্তসঞ্চয় থাকিলে ইহা রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির সবিরাম জ্বর আরোগ্য করিয়াছে।
অপরনাম – মিডনাইট ব্লমিং সিরিয়স
(Mid Night Blooming Cereus)
ক্যাক্টেলী জাতীয় এই উদ্ভিদ মেক্সিকো ও ওয়েস্ট ইণ্ডিয়ান দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায়। এর কোমল শাখা ও ফুল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী হয়।
ক্যাকটাসের মূলকথা –
১। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন বা আকুঞ্চন (constriction) মনে হয় যেন একটি লোহার বেড় দিয়ে হৃৎপিণ্ড আবদ্ধ থাকায় উহার স্বাভাবিক গতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে; বাঁ পাশে শুলে উহা বাড়ে।
২। সৰ্ব্বাঙ্গীন সঙ্কোচন, — হৃৎপিণ্ড, বক্ষঃস্থল, মূত্রাশয়, সরলান্ত্র, গর্ভাশয়, জরায়ুতে ও যোনিপথ প্রভৃতিতে সঙ্কোচন বোধ।
৩। হৃৎপিণ্ডের উপদ্রব সংক্রান্ত রক্তস্রাব – নাসিকা, ফুসফুস, পাকস্থলী, সরলান্ত্র ও মূত্রাশয় থেকে রক্তস্রাব।
৪। বুক ধড়ফড় করা – দিনে বা রাতে, হাঁটবার সময় বাড়ে, বাঁ পাশে শুলে বাড়ে; ঋতুস্রাব হওয়ার সময়েও বৃদ্ধি।
৫। মৃত্যুভয় ; রোগী মনে করে তার রোগ আর সারবে না।
ক্যাকটাস – একটি আলোচনা
১। ক্যাকটাস গ্র্যাণ্ডিফ্লোরাস হৃৎপিণ্ডের একটি প্রধান ঔষধ ; কিন্তু এর প্রধান প্রকৃতিগত লক্ষণ আদৌ ডিজিটেলিসের মত নয়। হৃৎপিণ্ডের আকুঞ্চন (constriction) অনুভব- যেন একটি লোহার বেড় দিয়ে উহার স্বাভাবিক গতিকে রোধ করা হচ্ছে- ক্যাকটাসের প্রধান ও বিশেষ লক্ষণ।
তুলনা –
আয়োডিনে যে অনুভূতি আছে তা হল – হৃৎপিণ্ডকে যেন চেপে ধরে নিষ্পেশন করা হচ্ছে।
লিলিয়াম টিগে আছে— পৰ্য্যায়ক্রমে হৃৎপিণ্ডকে একবার চেপে ধরছে ও ছেড়ে দিচ্ছে।
ল্যাকেসিসে— ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর হৃৎপিণ্ডের সংকোচন বোধ হয় ও রোগী গায়ের কাপড় খুলে ফেলে দেয়। আর্সেনিক রোগী হাঁটলে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন বোধ হয়।
২। ক্যাকটিসের এই সংকোচন বোধ কেবলমাত্র হৃৎপিণ্ডেই নিবদ্ধ থাকে তা নয়; ইহা বক্ষস্থলে, মূত্রাশয়ে, সরলান্ত্রে, জরায়ুতে ও যোনিদ্বারেও দেখা যায়।
সংক্ষেপে— মনে হয় ইহাই এই ঔষধটির সর্বাঙ্গীন প্রকৃতিগত লক্ষণ; পূর্ণতা (fullness) যেমন এসকিউলাসের সর্বাঙ্গীন বিশেষ লক্ষণ।
ক্যাকটাসের এই হৃৎপিণ্ডের রোগ সাধারণতঃ প্রায়ই প্রাদাহিক বাত রোগ থেকে হয়ে থাকে এবং এই ক্ষেত্রে ইহাই আমাদের সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ঔষধ ক্যাকটাস নির্দেশিত হৃৎরোগে যে সকল লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি হলঃ
ক) মাথার চাঁদিতে গুরু ভারের ন্যায় কেনা [(গ্লোনয়েন); রজোনিবৃত্তিকালে—ল্যাকেসিস]।
খ) হৃৎপিণ্ডের উপদ্রবে যারা ভুগে, তাদের পক্ষে সচরাচর যে লক্ষণগুলি দেখা যায় তা হল – মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয়, নাসাপথে প্রকৃত রক্তপাত, রক্তবমন সরলান্ত্র থেকে রক্তস্রাব, রক্তমূত্র অথবা মুখ দিয়ে রক্ত ওঠা। সাধারণতঃ হৃৎপিণ্ডে রোগের সঙ্গে সহানুভূতিযুক্ত রক্তস্রাবে ক্যাকটাস বিবেচ্য।
৩) ক্যাকটাসে হৃদরোগের উপরোক্ত প্রধান পরিচালক লক্ষণগুলি ছাড়াও আরো কতকগুলি অতি প্রয়োজনীয় বক্ষঃ ও হৃৎপিণ্ড লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলি হল –
ক) বক্ষস্থলে চাপ বোধ (oppression) বা কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া ; বোধ হয় যেন বক্ষস্থল প্রসারিত করা যাচ্ছে না, তার সঙ্গে পূৰ্ব্ব বর্ণিত বন্ধনবং আকুঞ্চনের অনুভূতি।
খ) সময়ে সময়ে শ্বাসরোধ সঙ্গে মূর্খ, মুখমণ্ডলে শীতল ঘৰ্ম ও নাড়ীর বিলোপ বর্তমান থাকে।
গ) হৃৎপিণ্ডের ধড়ফড়ানি ও হৃৎস্পন্দন (fluttering and palpitation); হাঁটলে বা বাঁ পাশে শুলে বৃদ্ধি।
ঘ) হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ক্রিয়া, সবিরাম নাড়ী, হৃৎপিণ্ডের যান্ত্রিক রোগে হৃৎকপাটিকার মার মার শব্দ (valvular murmurs)।
ঙ) বুক ধড়ফড়ানি বাঁ পাশে শুলে বাড়ে (নেট্রাম মিউর)।
চ) বাঁ হাত, বাঁ পায়ের পাতা ও বাঁ পায়ের শোথ (ইডিমা)।
ছ) সকল প্রকার সন্ধির বাত, উর্দ্ধাঙ্গে আরম্ভ (নিন্মাঙ্গে আরম্ভ – লিডাম)।
জ) বাঁ হাতের অবশতা (একোনাইট, অবিরাম বেদনা – রাসটাক্স)।
মন্তব্য-
ক্যাকটাস খুব বিস্তৃত অধিকারের ঔষধ নহে। কিন্তু এর নিজের অধিকারের মধ্যে অতিশয় মূল্যবান।