Canth | সর্বদা প্রস্রাবের বেগ, কয়েক ফোঁটা প্রস্রাব হয় ও তাতে রক্ত মিশ্রিত থাকে। |
Canth | প্রস্রাব করবার সময় মূত্রনালীতে জ্বালা যন্ত্রনা হয়। |
Canth | রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে ও মুখমণ্ডল আরক্তিম দেখায়। |
Canth | মাথা, চোখ, গলা, পাকস্থলী, অন্ডকোষ ও ওভরীতে জ্বালা। |
Canth | প্রস্রাব করবার সময়ে পায়খানার বেগ হয়। |
Canth | জ্বালা ও কোঁথানিসহ রক্তাক্ত মল এবং মলত্যাগের পরে কম্পন। |
দেহের সকল অংশ অধিক অনুভূতি সম্পন্ন। নাক, মুখ, অন্ত্র, জননেন্দ্রিয়ে ও মূত্রযন্ত্র হতে রক্ত বার হতে থাকে।
ব্যথা — ক্ষতবৎ, হেজে যাওয়ার মত, সারা দেহে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক ভাবে ব্যথা জ্বালা হয়-সাথে ভীষণ দুর্বলতা। খাদ্য, পানীয়, তামাক সব কিছুতেই অরুচি। সামান্য মাত্র জলপানে মূত্রথলীতে ব্যথা বেদনা।
সর্বদা প্রস্রাবের বেগ কিন্তু প্রতিবারে কয়েক ফোঁটা রক্ত মেশানো প্রস্রাব বার হয়। (হঠাৎ প্রস্রাবের বেগ ও মূত্র পথে ভীষণ চুলকানি পেট্রোসেলিনাম)। প্রস্রাবের আগে, সময়ে ও পরে অসহ্য, কোঁথানি, মূত্র থলীতে ভীষণ যন্ত্রণা থাকে।
প্রস্রাবের সময় মূত্রনালীতে জ্বালা করে, কেটে ফেলার মত যন্ত্রণা হয়। প্রবল কোঁথানি থাকে ও প্রস্রাব অল্প ও ধীরে ধীরে হয়।
মল—যেন অন্ত্র চেঁছে ফেলেছে তা সাদা বা ফ্যাকাসে রক্তের লাল আঁঠাল শ্লেষ্মা বার হয় তাতে রক্তের ছিটা থাকে (কার্ব-এনি, কলচি)।
স্বপ্নদোষে রক্তমেশানো বীর্য বার হয়; (লিডাম, মার্ক, পেট্রল)। সঙ্গমেচ্ছা স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই বাড়ে—তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, সেই সাথে ভীষণ যন্ত্রণাসহ লিঙ্গ উত্থিত হয় এসিড পিক্রিক)।
বায়ুনালীতে চটচটে আঠার মত শ্লেষ্মা জমে (বোভিষ্টা, কেলি-বাই) যদি মূত্রথলীর মত লক্ষণ দেখা দেয় তবে ক্যান্থারিস-এর সাথে তুলনীয়।
চর্ম – ফোস্কা ফোস্কা মত বিসর্পরাগ, সারা দেহে জলভরা ফোস্কা তাতে ব্যথা থাকে ও পুঁজ হয়।
সূর্যের তাপ গায়ে লেগে চামড়ায় লাল চর্মরোগ (Erythema)। সবরকম প্রদাহযুক্ত রোগে জ্বালা ও অসহ্য প্রস্রাবের বেগ হওয়া ক্যান্থারিস-এর নির্দেশক লক্ষণ।
সম্বন্ধ — এপিস, আর্স, ইকুইজেটাম ও মার্ক-এর সমগুণ।
পুড়ে গেলে ফোস্কা হওয়ার আগে বা ফোস্কা হলে এ ওষুধে ব্যবহার্য। যদি ফোস্কা ফেটে না যায় তবে যে কোন শক্তির ওষুধ বাহ্যিক প্রয়োগ করে স্থানটি ঢেকে রাখতে হবে, এতে সাথে সাথে যন্ত্রণার উপশম হবে ও ফোস্কা পড়বে না। যদি ফোস্কা ফেটে গিয়ে থাকে, তবে ফোটান বা পরিশ্রুত (Distilled) জলের সাথে ব্যবহার্য ও ঐ অবস্থায় শক্তিকৃত ওষুধ আভ্যন্তরিক ভাবে প্রযোজ্য।
শক্তি — ৩x, ৬, ৩০।
এই শক্তিশালী ঔষধটি প্রাণীর দেহে মারাত্মক গোলযোগের সৃষ্টি করে থাকে, বিশেষ করে প্রস্রাব ও জননেন্দ্রিয় সংক্রান্ত যন্ত্রগুলি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ঔষধের দ্বারা আক্রান্ত হবার ফলে যন্ত্রগুলির কাজের মধ্যে বিকৃতি দেখা দেয় এবং মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে পাগলের মত প্রলাপ বকা দেখা দেয়, যার সঙ্গে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণাবলীর যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। (এনাগেলিস)। প্রসবান্তিক আক্ষেপ। সমগ্র পাকাশয়িক নলীতে মারাত্মক ধরনের প্রদাহ উৎপন্ন করে থাকে, বিশেষ করে ক্ষুদ্রান্ত্রে। শরীরের সর্বাঙ্গ অতি অনুভূতি প্রবল। উত্তেজনা। হেজে যাওয়ার ন্যায়, জ্বালাকর বেদনা। রক্তস্রাব। অসহনীয় প্রতিনিয়ত প্রস্রাবের বেগ। এটি একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লক্ষণ। পাকাশয়িক যকৃৎ সম্বন্ধীয় ও উদর সম্বন্ধীয় গোলযোগ, এই গোলযোগ কফি পানের পর বৃদ্ধি। গর্ভকালে পাকাশয়িক উপসর্গ। যন্ত্রনাদায়ক প্রস্রাব তৎসহ অন্যান্য উপসর্গ সমূহ। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর রসক্ষরনের পরিমানের বৃদ্ধি, শ্লেষ্মা চটচটে। ক্যান্থারিস যে প্রদাহিক অবস্থা তৈরী করে (প্রস্রাব থলি, বৃক্ক, ডিম্বাশয়, মস্তিষ্ক আবরক ঝিল্লী, ফুসফুস আবরক ঝিল্লী ও হৃদাবরক ঝিল্লী প্রদাহ), তার সঙ্গে সাধারণতঃ প্রস্রাব থলির প্রদাহ বর্তমান থাকে।
মন – প্রচন্ড প্রলাপ। উদ্বেগ সহ অস্থিরতা, পরিশেষে দুর্বার ক্রোধ। কান্না, কুকুরের মত শব্দ করে চিৎকার করে; কণ্ঠনলী স্পর্শ করলে অথবা জলপানে বৃদ্ধি। রোগী সর্বদা কিছু করার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই করতে পারে না। তরুন উন্মাদনা, সাধারন কামোত্তেজনা সম্বন্ধীয়; প্রণয় সম্পর্কিত ক্রোধোন্মত্ততা; প্রচন্ড কামোত্তেজনা। ক্রোধ, কান্না, কুকুরের মত চিৎকার করা কিছু সময় পর পর দেখা দেয়। হঠাৎ করে চেতনার লোপ তৎসহ মুখমন্ডল লালবর্ণ যুক্ত।
মাথা – মস্তিষ্কের বেদনা। রোগীর মনে হয়, মস্তিষ্কের ভিতর জল ফুটছে। মাথাঘোরা মুক্ত বাতাসে বৃদ্ধি।
চোখ – হলদেটে দৃষ্টি (স্যান্টোনাইন)। চোখের দৃষ্টি উত্তেজনাপূর্ণ, উজ্জ্বল ও স্থির দৃষ্টি। চোখের ভিতর জ্বালা।
কান – রোগীর মনে হয় কানের ভিতর দিয়ে বাতাস অথবা গরম বাতাস বেরিয়ে আসছে। কানের চারিপাশের অস্থির বেদনাদায়ক (ক্যাপসিকাম)।
মুখমণ্ডল – ফ্যাকাশে, জঘন্য, মৃতের মত ভাবযুক্ত। মুখমন্ডলে চুলকানি সহ রসযুক্ত ফুস্কুড়ি, স্পর্শকরার সময় জ্বালা। মুখমন্ডলে ইরিসিপেলাস তৎসহ জ্বালা, উত্তাপ ও প্রস্রাব সংক্রান্ত লক্ষনাবলী। উত্তাপ ও লালবর্ণ।
গলা — জিহ্বা রসযুক্ত ফুস্কুড়িতে পূর্ণ; গভীরভাবে ফাটা; জিহ্বার কিনারাগুলি লালবর্ণ। মুখগহ্বরে, গলবিলে ও গলায় জ্বালা; মুখগহ্বরে রসযুক্ত ফুস্কুড়ি। তরল বস্তু গেলা খুবই কষ্টকর। প্রচন্ড চটচটে শ্লেষ্মা। (ক্যালিবাই)। কণ্ঠনলী স্পর্শ হলেই প্রচন্ড আক্ষেপের পুনরাবৃত্তি মনে হয়। সঙ্কোচন, গলায় সাদাক্ষত (হাইড্রোমিউর; নাইট্রিক অ্যাসিড)। ঝলসে যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়ার ফলে গলায় জ্বালা।
বুক — প্লুরিসি, ঠিক যে সময়ে জল জমতে শুরু করে। তীব্র শ্বাসকষ্ট, হৃদকম্প, বারে বারে শুষ্ক কাশি। মূর্চ্ছা যাওয়ার প্রবণতা। ছোট-ছোট, খুকখুকে কাশি, রক্তের ছিটযুক্ত, চটচটে শ্লেষ্মা। বুকের ভিতর জ্বালাকর বেদনা।
পাকস্থলী – খাদ্যনালী ও পাকস্থলীতে জ্বালাকর অনুভূতি। (কার্বো)। খাদ্যবস্তু, পানীয়, ধূমপান সকল কিছুতেই বিরক্ত। জ্বালাকর পিপাসা, তৎসহ সকল প্রকার তরল বস্তুতে বিতৃষ্ণা। অত্যন্ত অনুভূতি প্রবণ, তীব্র জ্বালা। বমি সঙ্গে রক্তের ছিট যুক্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী অংশ উঠে আসে এবং তীব্র ওয়াক তোলা। কফি পানের পর বৃদ্ধি; সামান্য পরিমানে কফি পান করলে প্রস্রাব থলির বেদনা বেড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তা বমি হয়ে উঠে যায় অতৃপ্তিকর পিপাসা।
মল – থরথর করে কাঁপুনি, তৎসহ জ্বালা। আমাশয়; শ্লেষ্মাযুক্ত মল, অনেকটা অন্ত্রের ঝিল্লী চেঁচে বার করলে যেমন দেখায় সেইরকম দেখতে। রক্তযুক্ত, তৎসহ জ্বালা ও কোঁথ এবং মলত্যাগের পর ঠকঠক্ করে কাঁপুনি।
প্রস্রাব – অদম্য বেগ এবং কোঁথ। নেফ্রাইটিস তৎসহ রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব। সমগ্র বৃক্ক স্থানে থেকে থেকে কেটে ফেলার মতও জ্বালাকর বেদনা এবং তৎসহ বেদনাযুক্ত প্রস্রাবের বেগ; রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব, ফোটা ফোটা করে বেরোয়। অসহ্য কোঁথ; প্রস্রাবের আগে, প্রস্রাবের সময় ও প্রস্রাবের পরে কেটে ফেলারমত বেদনা। প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবলীতে ঝলসে যাওয়ার মত অনুভূতি এবং প্রস্রাব ফোটা ফোটা করে বেরিয়ে থাকে। সর্বদা প্রস্রাবের বেগ আঁশের মত ঝিল্লীর টুকরো প্রস্রাবে ভাসে, দেখতে অনেকটা জলের ভিতর ভুষি ভাসার মত। প্রস্রাব জেলির মত, ছোট – ছোট টুকরো যুক্ত।
পুরুষের রোগ – প্রবল ইচ্ছা; যন্ত্রনাদায়ক লিঙ্গোদ্রেক। লিঙ্গমুন্ডে বেদনা। (প্রুণাস্; প্যারিয়েরা)। গণোরিয়া রোগে স্থায়ী লিঙ্গোদ্রেক।
স্ত্রীরোগ – প্রস্রাবের পর গর্ভফুল আটকিয়ে থাকে (সিপিয়া), তৎসহ যন্ত্রণাদায়ক প্রস্রাব। জরায়ুতে থাকা মৃত ভ্রুনের টুকরো, ঝিল্লীর টুকরো প্রভৃতি বার করে দেয়। স্ত্রীলোকের কামোন্মত্ততা। (প্ল্যাটিনা; হায়োসায়ামাস; ল্যাকেসিস; স্ট্রামোনিয়াম)। প্রসবান্তিক জরায়ু প্রদাহ, তৎসহ প্রস্রাব থলির প্রদাহ। মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে ও পরিমানে প্রচুর হয় ;যোনিকপাটে কালো রঙের স্ফীতি তৎসহ উত্তেজনা। জরায়ু থেকে অবিরাম-স্রাব; ভুল করে পা ফেললে বৃদ্ধি। ডিম্বাশয়ে জ্বালাকর বেদনা; অতিরিক্ত অনুভূতি প্রবন। কক্সিসে বেদনা, কেটে ফেলার ও ছিঁড়ে ফেলার মত।
শ্বাস-প্রশ্বাস — ক্ষীণ স্বর; দুর্বলতাবোধ। বুকের ভিতর সূঁচ ফেঁটার মত অনুভূতি (ব্রায়ো; ক্যালিকার্ব; স্কুইল্যা)। প্লুরিসি, তৎসহ রসক্ষরণ।
হৃদপিন্ড – হৃদকম্প, নাড়ীদুর্বল, অনিয়মিত, মূর্চ্ছা যাওয়ার প্রবণতাযুক্ত। হৃদাবরক ঝিল্লীর প্রদাহ, তৎসহ রসক্ষরন।
পেঠ — কোমরে বেদনা, তৎসহ অবিরাম প্রস্রাবের বেগ।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। পায়ের তলায় ক্ষতবৎ বেদনা। কিছুতেই পা ফেলতে পারে না।
চামড়া — ডার্মাটাইটিস্ ভেনিন্যাটা তৎসহ ফোস্কা। অন্ডকোষ ও যৌনাঙ্গের চারিপাশে প্রচুর ঘামের পর আনুষঙ্গিক একজিমা। গ্যাংগ্রীণ হবার প্রবণতাযুক্ত। উদ্ভেদ, তৎসহ শস্যের গুঁড়োমত আঁশ। ভার্সিকিউলার উদ্ভেদ, তৎসহ জ্বালা ও চুলকানি। প্রখর সূর্যের তাপে ঝলসিয়ে যাওয়া। পুড়ে যাওয়া, ঝলসে যাওয়া, তৎসহ হেজে যাওয়ার মত ও হুলফোটার মত বেদনা, ঠান্ডা প্রয়োগে উপশম, এরপরে তীব্র প্রদাহ। ঈরিসিপেলাস, ফোসকাজাতীয়, তৎসহ প্রচন্ড অস্থিরতা। রাত্রিতে পায়ের তলায় জ্বালা।
জ্বর — হাত-পা ঠান্ডা; ঠান্ডা ঘাম। পায়ের তলায় জ্বালা। শীতবোধ, যেন রোগীর শরীরের উপর জল ঢালা হচ্ছে।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, স্পর্শে, কেউ রোগীর দিকে গেলে, প্রস্রাব করার সময়, ঠান্ডা জল পান করলে অথবা কফি পান করলে।
উপশম – টিপে দিলে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন একোনাইট; ক্যাম্ফর; পালসেটিলা।
তুলনীয় – ক্যান্থারাইডিন – (গ্লোমেরূল্যার নেফ্রাইটিস)। ঔষধতত্ত্বানুসারে এই ঔষধের যে কাজ সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পায় তাহলে, এই ঔষধ কৈশিকনলীর উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং এর ফলে পুষ্টিকর তরল পদার্থ এইনলীর ভিতর দিয়ে যেতে বাধা বিশেষ পায়। এই লক্ষণটি সুস্পষ্টভাবে বৃক্কের কৈশিকনলীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
ভেসিকেরিয়া – (প্রস্রাব ও বৃক্ক সংক্রান্ত ঔষধ। প্রস্রাবনলী এবং প্রস্রাব থলিতে জলফোটার মত, জ্বালাকর অনুভূতি, তৎসহ বারে বারে প্রস্রাব ত্যাগের বেগ, তৎসহ প্রায়ই কষ্টকর প্রস্রাব লক্ষণটি থাকে। প্রস্রাব থলির প্রদাহ। আরষ্ট ৫-১০ ফোঁটা)।
ফাসচায়না – মদ রঙ করার জন্য এটি ভেজাল দেবার কাজে ব্যবহার হয়। কেমিক্যাল নেফ্রাইটি তৎসহ প্রস্রাবে অ্যালবিউমিনের উপস্থিতি, ষষ্ট থেকে ৩০ শক্তি। কান, মুখগহ্বর লালবর্ণ, মাঢ়ীস্ফীত, গাঢ়, লালরঙের প্রস্রাব; লালবর্ণের প্রচুর, উদরাময় তৎসহ তীব্র পেটের যন্ত্রণা। এন্ড্রোসাসি ল্যাকটিয়া (প্রস্রাব উপসর্গ, প্রস্রাব বৃদ্ধিকারক; শোথ)। এপিস আর্সেনিক মার্ককর।
পরিপূরক – ক্যাম্ফর।
শক্তি – ষষ্ট থেকে ৩০ শক্তি। ঔষধটি বারে বারে প্রয়োগ করা যায়। পোড়া স্থানে ও একজিমা স্থানিক ব্যবহার চলে। ১x অথবা ২x হলে অথবা সিরেট হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
এই ঔষধের সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় লক্ষণ প্রদাহ, আর ঐ প্রদাহের চরিত্রগত প্রকৃতি এই যে, উহা অতি দ্রুত পচনশীল অবস্থায় চলিয়া যায়। প্রাদাহিক অবস্থা নির্দিষ্টভাবে কয়েকদিন চলিতে থাকে, কিন্তু যদি এই ঔষধ উহার উপরে লাগান হয়, অথবা আভ্যন্তরিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহা হইলে ঐ প্রদাহিক অবস্থা ঐ অঙ্গের অবশতার সহিত অতি দ্রুত শেষ হইয়া যায়। আভ্যন্তরিকভাবে প্রয়োগ করিলে উহা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মূত্রযন্ত্র আক্রমণ করে এবং মূত্রবিকার অবস্থার সৃষ্টির ফলে তাহাতে মানসিক লক্ষণগুলি উপস্থিত হয়; স্থানীয় প্রাদাহিক অবস্থা অতিদ্রুত উপস্থিত হয়; রোগীকে খুব শীঘ্র প্রবলভাবে শয্যাশায়ী করিয়া ফেলে। বেশী মাত্রায় বিষক্রিয়ায় আমরা রোগী চমকাইয়া উঠা এবং ভীতিজনক লক্ষণসমূহ পাই; সমগ্র শারীরবিধান বিকৃত হইয়া পড়ে, সাধারণতঃ মূত্রযন্ত্র সংক্রান্ত ভয়ঙ্কর লক্ষণসমূহ উপস্থিত হয়। আক্রান্ত অংশগুলি প্রথম হইতেই পচা ক্ষতের আকৃতি গ্রহণ করে।
মানসিক লক্ষণগুলি মূল্যবান। উহাদের মধ্যে যেগুলি পরিচালক,—তাহা মুখের রক্তিমাভার সহিত হঠাৎ অচৈতন্যতা। অকস্মাৎ সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়ে। মনের গোলমাল। অদ্ভুত ধারণায় মগ্ন থাকে। চিন্তাগুলি জড়াইয়া যায় এবং চিন্তা যেরূপ ইচ্ছা সেরূপভাবে চলিতে থাকে, যেন তাহারা বাহিরের কেনা শক্তির অধীন হইয়া পড়িয়াছে।
মাথা উত্তপ্ত, উন্মত্ততা, প্রলাপ, তৎসহ অত্যন্ত উত্তেজনা ও ক্রোধ; উজ্জ্বল চকচকে জিনিষ দেখিলে অথবা কণ্ঠনলী স্পর্শ করিলে অথবা ক্ষিপ্ত জন্তুর মত জলপান করিতে চেষ্টা করিলে নূতন করিয়া উত্তেজনা ও ক্রোধের আবেশ উপস্থিত হয়। ভয় ও ধারণাসমূহের বিশৃঙ্খলা । প্রদাহিত অঙ্গের নির্দেশে মন সেই সকল বিষয়ের দিকেই চলিয়া যায়। মূত্রস্থলী এবং জননেন্দ্রিয় প্রদাহিত হয় এবং ঐ অঙ্গের উত্তেজনা ও রক্তসঞ্চয়ের জন্য প্রায়ই কামভাব জাগিয়া উঠে, সুতরাং সঙ্গমচিন্তা ও কামোন্মত্ততা দেখা যায়। প্রবল কামোন্মাদনা, তৎসহ প্রদাহের আনুষঙ্গিক উত্তেজনা এবং অনুরূপ কামচিন্তা বর্তমান থাকে। সঙ্গমপ্রবৃত্তি তাহাকে পাগল করিয়া তুলে। পুরুষের লিঙ্গোত্থান যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর হয়। লিঙ্গ প্রদাহিত এবং বেদনাযুক্ত এবং সঙ্গমক্রিয়া যন্ত্রণাদায়ক হয়, কিন্তু তবুও সঙ্গমোন্মাদনা বর্তমানে থাকে। উদ্ধৃত হইয়া উঠে, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। অস্থিরতা ক্রোধে পর্যবসিত হয়। অস্থিরতার জন্য সর্বদা নড়াচড়া করে; ক্রোধ এবং কামোন্মদনার সহিত সংমিশ্রিত প্রলাপ। ক্যান্থারিসের এই মানসিক অবস্থা ‘হায়স, ফস ও ‘সিকেলি’ যেরূপ দেখা যায় তাহার অনুরূপ, ভীষণ প্রলাপ অবস্থা, তৎসহ কামচিন্তা ও ঐ বিষয়ক কথা বলা। কোন কোন ক্ষেত্রে সে প্রলাপে কামবিষয়ক গান করে, মানুষের জননেন্দ্রিয়, মলমূত্র সম্বন্ধে জল্পনা কল্পনা করে, পাগল ব্যতীত সুস্থ অবস্থায় মানুষ যে সকল কথা বলিতে পারে না, সেই সকল বিষয়ে চিৎকার করিতে থাকে। কিন্তু রোগ অবস্থায় সচ্চরিত্র ও ভদ্র ব্যক্তিরা, কুমারীও এরূপ কথা বলিতে থাকে যে, ভাবিয়া বিস্মিত হইতে হয়, ঐরূপ কথা তাহারা কোথায় পাইল। এইরূপ অবস্থায় ডাক্তার ও শুশ্রুষাকারিণী ব্যতীত অন্য সকল লোককে ঘর হইতে বাহির করিয়া দেওয়া উচিত। আমি একজন স্নেহশীলা বৃদ্ধা জননীকে হাত মোচড়াইতে ও কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে শুনিয়াছি, “আমার মেয়ে ওরূপ ভাষা কোথায় শিখিল?” কিন্তু কন্যাকে দোষ দিয়া লাভ নাই, উহা কেবলমাত্র মূত্রযন্ত্র বা ঋতুস্রাব সংক্রান্ত ব্যাপার। উহা ঠান্ডা লাগিয়া বা খোলা বাতাসে থাকার ফলে উপস্থিত হইয়াছে অথবা কন্যার যাহা জানান উচিত ছিল, তৎসম্বন্ধে মাতার অবহেলার ফলে উপস্থিত হইয়াছে। মাতার কন্যাকে বলা উচিত ছিল কেমন করিয়া ঋতু-প্রবাহ উপস্থিত হয়, কেমন করিয়া ডিম্বকোষ বা জরায়ুর বা বাহ্যিক যন্ত্রসমূহের প্রদাহ উপস্থিত হয় এবং মূত্র জ্বালাকর হইয়া বাহ্য ইন্দ্রিয়ের প্রদাহ সৃষ্টি করে অথবা মূত্র অবরুদ্ধ হইয়া উন্মাদকর অবস্থার সৃষ্টি করে। ক্যান্থারিসের অবস্থা এইরূপ।
ভয়ঙ্কর, ফাটিয়া যাওয়ার মত, বর্শা বিদ্ধ করার মত শিরঃপীড়া, যেন ছোরা দিয়া আঘাত করিতেছে; এমন প্রাদাহিক অবস্থা যে, মনকে ভীষণভাবে আক্রমণ করে।
এই ঔষধের আগাগোড়া জ্বালা আছে। মাথায় জ্বালা, দপদপানি, ছুরিকাঘাতবৎ যন্ত্রণা। মানসিক অবস্থায় অজ্ঞানতা ও প্রলাপ। মাথার পার্শ্বে জ্বালা। মাথার পার্শ্বে ও পিছনে সূঁচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। মস্তিষ্কের গভীর অংশে বর্শাবিদ্ধৎ যন্ত্রণা। চুল উঠিয়া যায়।
মস্তক ও মণোলক্ষণ না থাকিলে ইহা কদাচিৎ চক্ষের উপদ্রবে প্রযোজ্য হয়। মুখের উপর বড় ফোস্কাবিশিষ্ট বিসর্প। চক্ষুর মধ্যে জ্বালা এবং সমগ্র বায়ুমন্ডল হলদে দেখায়। চক্ষুর মধ্যে জ্বালা ও চিড়িকমারা। চক্ষুর বিসর্প, উহাতে পচা ক্ষত জন্মানর প্রবণতা। চক্ষু উত্তপ্ত—দাহকর অশ্রু। মুখের বিসর্প, নাসাপৃষ্ঠের বিসর্প—চক্ষুর পাতা পর্যন্ত আক্রমণ করে। রাস টক্স’ই সাধারণতঃ এইরূপ অবস্থায় ব্যবহৃত হয়, কিন্তু আক্রমণ ভীষণ হইলে ‘রাসের পরিবর্তে ক্যান্থারিস প্রযোজ্য। রাস টক্সে’ ফোস্কা ও জ্বালা আছে, কিন্তু ক্যান্থারিসে তুমি রোগীকে দুইবার দেখিতে যাওয়ার মধ্যে বিসৰ্প কাল হইয়া যাইবে, উহা কৃষ্ণাভ হইবে, পচা ক্ষত দেখা দিবার উপক্রম হইয়াছে। বিসর্পযুক্ত স্থানে জ্বালা এবং বিসর্পের চতুর্দিস্থ স্থান স্পর্শ করিলে জ্বালা। রাস টক্সে’ এরূপ হয় না। ক্যান্থারিসে ছোট ছোট ফুস্কুড়িগুলিও স্পর্শ করিলে আগুনের ন্যায় জ্বালা করে। উদ্ভেদগুলি স্পর্শ করিলে, এমনকি অত্যন্ত হাল্কাভাবে স্পর্শ করিলেও জ্বালা করে অর্থাৎ এই ঔষধে সেইরূপ উদ্ভেদই উৎপন্ন হয়।
রোগী অবসন্ন অবস্থায় উপনীত হয়, বিবর্ণ হয়, মুখের চেহারা বিকৃত দেখায় এবং তাহার মৃত্যু হয়। ইহার উপযোগিতা অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির রোগে, এমনকি গলিত ক্ষতে এবং অন্ত্র, মূত্রস্থলী, মস্তিষ্কে, মেরুদন্ড ও ফুসফুসের তীব্র প্রদাহে, অবসন্নতা ও রোগীর বিকৃত মুখভাবে ফুসফুসের প্রদাহ–গলিত ক্ষতের প্রকৃতির অবসন্নতা এবং আক্রান্ত ফুসফুসে আগুনের মত জ্বালা; রোগী অতিশীঘ্রই মড়ার মত গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মা তুলে, উহা পাতলা, রক্তাক্ত, জলবৎ; উহা আশ্চৰ্যজনক দ্রুততার সহিত উপস্থিত হয় এবং অল্পকাল মধ্যে রোগী মারা যায়; নাক অকুঞ্চিত হয়, মুখভাব বিকৃত হয়, মূত্রনাশ হয়। আমার একটি রোগীর কথা মনে পড়ে যে সবেমাত্র দীর্ঘক্ষণ মদ্যপানের পর সুস্থ হইয়াছিল। আমি তাহাকে যেরূপ অবস্থা বর্ণনা করিলাম, সেইরূপ অবস্থায় রাখিয়া আসিলাম। তাহার মুখ হইতে রক্তাক্ত লালা পড়িতেছিল এবং সে মরিতে চলিয়াছিল। তাহার এই অবস্থা মাতাল হইয়া, প্রায় জমিয়া যাওয়ার মত হইবার ফলে দেখা দিয়াছিল। এইরূপ অবস্থায় হয় প্রাতঃকালের পূর্বেই ক্যান্থারিসে ক্রিয়া করিবে অথবা রোগীর মৃত্যু হইবে, কিন্তু প্রাতঃকালে সে লোহার মরিচার ন্যায় গয়ের তুলিয়াছিল এবং ভালভাবে আরোগ্যের দিকে গিয়াছিল। আর্সেনিকে’ ফুসফুসে জ্বালা আছে এবং রোগী কাল গয়ের তুলে, নিউমোনিয়ার লক্ষণ বর্তমান থাকে এবং আর্সেনিক তৎক্ষণাৎ উহা নিবারণ করে। যে-সকল রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা, তাহাদের এই সকল শক্তিশালী ঔষধের দরকার হয়।
গলার মধ্যে জ্বালা। গলার মধ্যে ও পাকস্থলীতে জ্বালার সহিত অত্যন্ত তৃষ্ণা। তৃষ্ণা কিন্তু তাহার সহিত সকল প্রকার তরল দ্রব্যের বিতৃষ্ণা অর্থাৎ মুখের ও গলার আকাক্ষা মানসিক অবস্থা দ্বারা প্রতিরুদ্ধ হয়। গলার মধ্যে জলপানের তৃষ্ণা এবং মনের মধ্যে জলে অপ্রবৃত্তি। পাকস্থলীতে, অন্তদ্বারী ও উদরে তীব্র জ্বালা। উদর স্ফীত ও বায়ুপূর্ণ। উহাতে বর্শাবিদ্ধবৎ-কাজিয়া ফেলার ন্যায়, ছুরিমারার ন্যায় যন্ত্রণা। যে-স্থলেই অন্ত্রের দ্রুত প্রদাহ হয়, সেইস্থলেই অন্ত্রাদি ও পাকস্থলী হইতে রক্তাক্ত আম অথবা রক্তাম্বু, জলবৎ, রক্তাক্ত, তরল মলযুক্ত উদরাময় থাকে। চক্ষু হইতে ঐরূপ জলবৎ রক্তাক্ত তরল পদার্থ নির্গত হয়। আর, যেস্থলেই ঐ তরল পদার্থ চর্মের সংস্পর্শে আসে, সেইখানেই জ্বালা করে ও হাজা জন্মে। রক্তাক্ত মূত্র।
মূত্রত্যাগকালে মলপ্রবৃত্তি। রোগী মলত্যাগপাত্রের উপর বসিয়া মল ও মূত্র ত্যাগের জন্য অত্যন্ত কোঁথানি দিতে থাকিবে, মনে করিবে যদি সে আর কয়েক ফোঁটা মূত্র বা আর কিছু রক্তাক্ত মল ত্যাগ করিতে পারে, তাহা হইলে উপশম পাইবে, কিন্তু কোন উপশমই হয় না। সমস্ত অঙ্গই প্রদাহিত হয় এবং জুলিতে থাকে। যখন মূত্রস্থলী খালি থাকে, তখনই সে বেগ ও প্রবৃত্তি দেখা দেয়, এরূপ নহে, মূত্রস্থলী পূর্ণ থাকিলেও ঐরূপ হয়। মূত্ররোধ। মূত্রপাত হয় না বা মাত্র দুই এক ফোটা হয়। মূত্রস্থলীতে ভীষণ কোঁথানি। কাটিয়া ফেলার মত যাতনা ও কুন্থন। মূত্রস্থলীর গ্রীবায় বর্শাবিদ্ধবৎ, ছুরি দিয়া আঘাত করার ন্যায় যাতনা। যাতনা চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে। তীব্র যাতনার সহিত পুনঃ পুনঃ মূত্রবেগ। অবিরত কুন্থন। একপ্রকার উক্তষ্ঠিত অবস্থা ও উন্মত্ততা দেখা দেয়, অত্যন্ত তীব্র যাতনা এবং মল-মূত্রত্যাগের বেগসহ জননেন্দ্রিয়ের উত্তেজনা, উহা অত্যন্ত কষ্টকর। সমগ্র মূত্রযন্ত্র ও জননেন্দ্রিয়ে প্রাদাহিক অবস্থায় এবং গলিত ক্ষতের অবস্থায় থাকে। মূত্রত্যাগকালে জ্বালা। রক্তাক্ত মূত্র, মূত্রস্থলী ও জননেন্দ্রিয়ের চারিদিকে আগুনের মত জ্বালা করে। মূত্রাবরোধ বা মূত্রনাশ। কোন লোক গণোরিয়ায় ভুগিতে থাকিলে কদাচিৎ তাহার এরূপ তীব্র প্রদাহ এবং তৎসহ মূত্রস্থলীতে এবং সরলান্ত্রে এরূপ জ্বালা ও কোঁথানি দেখা দেয়, কিন্তু ঐরূপ ক্ষেত্রেও এই ঔষধ প্রযোজ্য। ইহাতে যেরূপ যাতনা ও উত্তেজনা আনে, সেরূপ আর কোন ঔষধেই দেখা যায় না। ইহার নীচেই ‘মার্ককর’-জ্ঞাপক অবস্থা।
স্ত্রীলোকের সকল অঙ্গেই অনুভূতি থাকে। জরায়ু ও ডিম্বকোষের প্রদাহ। যোনিপথে জ্বালা। ঝিল্লীযুক্ত বাধক বেদনা। ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র প্রচুর ও কালো। প্রসবান্তিক আক্ষেপ। ফুল পড়িতে বিলম্ব। জ্বালাকর যন্ত্রণা। প্রসবান্তিক স্রাব নির্গত করিবার মত যথেষ্ট ঠেলামারা বেদনা থাকিলে এবং এই ঔষধজ্ঞাপক লক্ষণ থাকলে, এই ঔষধ প্রয়োগে জরায়ুর স্বাভাবিক সঙ্কোচন উৎপন্ন হয় এবং ঝিল্লীসমূহ নির্গত হয়।
মূত্রপিন্ড ও পৃষ্ঠের মধ্য দিয়া তীব্র বর্শাবিদ্ধবৎ যাতনা। কোমরে, মূত্রপিন্ডে ও উদরে বেদনা। মূত্রত্যাগকালে যন্ত্রণা, সেইজন্য সে এক ফোটা মূত্র ত্যাগ করিতেও কাতর শব্দ ও চিৎকার করে।
অপর নাম – ব্রিষ্টারিং ফ্লাই (Blistering fly)
স্প্যানিশ ফ্লাই নামক একপ্রকার মাছি থেকে এর মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
সারকথা–
১। কুন্থন, কৰ্ত্তনবৎ ও জ্বালাকর বেদনাসহ পুনঃপুনঃ মূত্রের বেগ।
২। প্রত্যেকবার অল্প অল্প অথবা রক্তাক্ত মূত্রপাত (প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত থাকে)।
৩। নিদারুনজালাকর বেদনা বিশেষ করে চোখে, মুখ গহ্বরে, গলায়, পাকস্থলীতে, অন্ত্রনালীতে, সমগ্র শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপরিভাগে ও চর্মে।
৪। শ্লৈষ্মিকঝিল্লী থেকে দড়ির মত ও আঠাল চটচটে স্রাব।
৫। ক্যান্থারিসের প্রায় সকল রোগেইএর চরিত্রগত প্রস্রাবের লক্ষণ বর্তমান থাকে।
৬। বড় বড় জল পূর্ণ ফোস্কা ও জ্বালাকর বেদনাসহ বিসর্প। ৷
৭। কোন স্থানের উপরিভাগ পুড়ে গেলেও ক্যান্থারিস উপযোগী (বাহ্য প্রয়োগ)।
৮।• স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই অদম্য মনো কেনা, প্রচন্ড ক্রোধ পাগলের মত প্রলাপ ও
ভীষণ সঙ্গম ইচ্ছা (ইন্দ্রিয় লালসা)।
৯। সব কিছুতেই অরুচি বিশেষ করে পান, আহার ও তামাকে বিতৃষ্ণা।
১০। মূত্রাশয় ও মলদ্বারে কোঁথানি সহ রক্তামাশয়ের মল, রক্তাক্ত এবং অন্ত্র চাছার
মত খণ্ড মল।
ক্যান্থারিস—একটি আলোচনা
১। মূত্রযন্ত্র
ক্যান্থারিসের মত কোন ঔষধই এত সুনিশ্চিতেও প্রবল ভাবে মূত্র যন্ত্রের
উপদাহ (irritation) সত্বর আরোগ্য করে না। তাই যদি কোন একটি ঔষধের দ্বারা হোমিওপ্যাথির মূল সূত্র প্রমান করতে হয় তবে ক্যান্থারিস দ্বারা উহা অনায়াসেই করা যায়।
এইচ এন গারেন্সী লিখেছেন ‘ইহা একটি অদ্ভুত ঘটনা, যদিও ইহা অধিকাংশ চিকিৎসকই জানেন যদি কোন ক্ষেত্রে বার বার মূত্র ত্যাগ বা প্রস্রাবের সঙ্গে জ্বালা ও কৰ্ত্তনবৎ বেদনা থাকে, বা প্রস্রাব বার বার না হয়েও যদি মূত্র স্রাবে কৰ্ত্তনবৎ ও জ্বালাকর বেদনা থাকে তবে অন্যান্য রোগেও এমনকি মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের প্রদাহেও সৰ্ব্বদাই ক্যান্থারিস ব্যবস্থায়”।
* এছাড়া তিনি আরো যোগ করতে পারতেন গলার মধ্যে, অন্ননালীর সমস্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে, সরলান্ত্রে ও মলদ্বারে এমনকি প্লুরা বা চর্ম রোগেও উপরোক্ত মূত্র লক্ষণ বর্তমান থাকলে ক্যান্থারিস ব্যবস্থায়।
২। শ্বাসযন্ত্র
তবে বায়ু পথের (এয়ার প্যাসেজ) বোগে যখন শ্লেষ্মা আঠলো ও দুশ্ছেদ্য হয় তখন ক্যান্থারিস ব্যবহৃত হয় (হাইড্রাসটিস, কেলিবাইক্রম, কক্কাস ক্যাক্টাই)।
রোগী বিবরণী–
একজন রমণী অনেক দিন ধরে ব্রঙ্কাইটিস রোগে ভুগছিলেন। তাঁর প্রভূত দুশ্ছেদ্য দড়ির মত শ্লেষ্মা গয়ের নিসৃত হয়। এই দেখে আমি কেলিবাইক্রোম ব্যবস্থা করি। কিন্তু ওতে কোন উপকার হয়নি বরং রোগ বেড়ে গিয়েছিল। তারপর একদিন রোগিণী বলেন যে তার ঘনঘন প্রস্রাব হয় ও প্রস্রাবের পর অতিশয় কর্তনবৎ ও জ্বালাকর বেদনা জন্মে।
এই মূত্র লক্ষণের উপর নির্ভর করে আমি তাকে ক্যান্থারিস দিই এবং উহা মন্ত্রের মত কাজ করে। তিনি খুব তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে তার ব্রঙ্কাইটিস রোগ থেকে স্থায়ীভাবে আরোগ্য প্রাপ্ত হন। এর আগে কিন্তু আমি শ্বাসযন্ত্রে ক্যান্থারিসের আরোগ্য শক্তির কথা জানতাম না। তাই এরকম ভাবে আরোগ্য হওয়ায় চিকিৎসক হিসেবে এবং রোগী ও এত তাড়াতাড়ি সেরে যাওয়ার যে আনন্দ হয়েছিল এক্ষেত্রে তার বর্ণনা
নিস্প্রয়োজন কারন ইহা এত বিস্ময়কর ও দ্রুততার সঙ্গে আরোগ্য হয়েছিল যে তা উভয়ের কাছেই বিস্ময়কর।
(ন্যাশ)
বিঃ দ্রঃ– মূত্রযন্ত্র:
এখন আমরা মূত্রযন্ত্রের উপর ক্যান্থারিসের ক্রিয়া সম্বন্ধে আরো কতকগুলি লক্ষণের দিকে দৃষ্টিদেব বিশেষ করে যেগুলি ঔষধ পরীক্ষাকালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও রোগারোগ্য করেছে। আমি এই লক্ষণগুলিকে উচ্চতম মূল্য দিতে শিখেছি। তাছাড়া আমাদের ভৈষজ্যতত্তে বহু লক্ষণ আছে যা রুগ্ন দেহ থেকে পাওয়া গেছে এবং তা আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু স্বল্প পরিচয় হেতু ঐ ঔষধগুলিকে পরীক্ষাকালে প্রাপ্ত ও রোগী ক্ষেত্রে প্রমানিত লক্ষণ গুলির মত আমরা নিরঙ্কুশ বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারি না।
তবুও এদের মধ্যে কতকগুলি হল—
১) মূত্রাশয়ের প্রবল বেদনা সহ পুনঃপুনঃ মূত্র বেগ ও অসহ্য কুন্থন।
২) মূত্রাশয়ের গ্রীবায় (neck of bladder) প্রবল জ্বালাকর কর্তনবৎ বেদনা।
৩) মূত্র ত্যাগের পূৰ্ব্বে, মূত্র ত্যাগকালে ও মূত্র ত্যাগের পরে মূত্র মার্গে ভয়ঙ্কর কৰ্ত্তনবৎ বেদনা।
৪) অবিরত মূত্রবেগ, অত্যন্ত যন্ত্রনাসহ ফোটা ফোটা করে মূত্রপাত।
৫) প্রসাবের পর মূত্রদ্বার যেন ঝলসে যায়, মূত্র ফোটা ফোটা করে পড়ে।
এই লক্ষণগুলি ক্যান্থারিসের মূত্রযন্ত্রের প্রধান লক্ষণ। তাই কোন রোগে এই সকল লক্ষণ দেখলে কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের ক্যান্থারিসের কথা ভুলে যাওয়া উচিত না। রোগের অন্য কষ্ট যাই হোক না কেন এই সকল মূত্রলক্ষণ সংযুক্ত বিভিন্ন প্রকারের রোগকে ক্যান্থারিস আরোগ্য করছে।
তাই কোন চিকিৎসা তন্ত্রের কোন চিকিৎসক এইরকম সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যে সমঃ সমং সময়তি নীতির সত্যতা অস্বীকার করতে পারেন তার কৈফিয়ৎ নির্দ্দেশিত হতে পারে কেবল যে দেখবে না তার চেয়ে কানা আর নেই এই নীতি অনুসারে।
৩। চম্মের উপর ও ক্যান্থারিসের সুনিশ্চিত ক্রিয়া প্রকাশ পায়। ইরিসিপিলাস বা বিসর্প রোগেও কখন কখন ক্যান্থারিস সর্বোৎকৃষ্ট কাযকরী ঔষধ। এই ক্ষেত্রে অবশ্য এপিসের সঙ্গে ক্যান্থারিসের কতকটা সাদৃশ্য আছে। কারণ এই ক্ষেত্রে কখন কখনও এপিসেও মূত্রযন্ত্রের অত্যন্ত উপদাহ থাকে।
* পার্থক্য- তবে এপিসের রোগীর থাকে অতিকতর শোথ বা ফুলা আর ক্যান্থারিসের রোগীর থাকে অত্যন্ত ফোস্কা।
ক্যান্থারিসের জ্বালা এপিসের জ্বালার চেয়ে আরো বেশী তীব্র কিন্তু এপিসের থাকে হুল ফোটানো মত অনুভূতি। আবার মূত্র লক্ষণ বর্তমান থাকলে ক্যান্থারিসে জ্বালাও বেশী উগ্রভাগে বর্তমান থাকে।
তবে এই দুটি ঔষধের মানসিক লক্ষণ সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা। এপিসের ক্ষেত্রে হুলফুটান বেদনার জন্য রোগী সময় সময় চিৎকার করে উঠে, এবং উদ্ভেদ বসে যাওয়ায় প্রবণতা থাকে ও মস্তিষ্ক ঝিল্লীর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া এপিসের রোগীর বেশী অস্থিরতা দেখা যায় না।
ক্যান্থারিসের রোগী অত্যন্ত অস্থির, অসন্তুষ্ট, ও পীড়িত, সময়ে সময়ে কোঁকায় বা কাতরোক্তি করে, অথবা প্রচন্ড ভাবে চীৎকার করে উঠে, অবিরত নড়াচড়া করতে চায়।
ক্যান্থারিসের মানসিক লক্ষণ দেখে এক্ষেত্রে আর্সেনিকের কথা মনে পড়ে এবং দারুণ জ্বালা লক্ষণে আর্সেনিকেরই অনেকটা সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। সুতরাং এস্থলে ক্যান্থারিস ও এপিসের মত ক্যান্থারিস ও আর্সেনিকের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ঐ সকল লক্ষণের সঙ্গে যদি অতিশয় পিপাসা বর্তমান থাকে তাহলে আর্সেনিকই নির্দেশিত হবে।
৪। ক্যান্থারিস আগুনে পোড়ার একটি প্রধান ঔষধ। একে তরুন অবস্থায় বাহ্য প্রয়োগে ও পুরাতন অবস্থায় ও পরিনামের ফলেও আভ্যন্তরিক ভাবে প্রয়োগ করা যায়।
আগুনে পুড়ে গেলে, বিশেষ করে যদি বড় বড় জলপূর্ণ ফোস্কা জন্মে ও শুতে জ্বালা ও চুলকানি থাকে অথবা উহা স্পর্শ করলে জ্বালা ও চিন চিন করে তাহলে ক্যান্থারিস প্রযোজ্য। তবে একে ব্যবহার করার জন্য অন্যান্য লক্ষণ গুলিও খুজে দেখা দরকার। তবে যারা হোমিওপ্যাথতে বিশ্বাসী নন তাদের আঙ্গুল পুড়ে গেলে ক্যান্থারিস মিশ্রিত জলে উহা ডুবিয়া রাখলে কিভাবে উপকার হয়, তা দেখার জন্যও হোমিওপ্যাথির সত্যতা বুঝবার জন্য ডা. হেরিং তাদেরকে তাদের পোড়া আঙ্গুল ক্যান্থারিস মিশ্রিত জলে ডুবিয়ে রাখতে বলেছে।
৫। জ্বালা ক্যারিসের একটি প্রধান লক্ষণ। তবে ক্যান্থারিসের এই অনুভূতি সংক্রান্ত লক্ষণটির চিকিৎসাক্ষেত্রে ঠিকমত মূল্যায়ন হয়নি।
তবে জ্বালার জন্য যদি কোন ঔষধ আর্সেনিকের পাশে দাঁড়াবার উপযুক্ত হয়। তবে তাহল ক্যান্থারিস। জ্বালা লক্ষণে ক্যান্থারিস আর্সেনিকের সমকক্ষ।
এখন কতকগুলি লক্ষণের কথা বলা হচ্ছে যা ক্যান্থারিসের জ্বালা লক্ষণটিকে আমাদের মনে গেঁথে দিতে পারে –
১) চোখের প্রদাহে জ্বালা বিশেষ করে যখন উহা আগুনে পোড়া বশতঃ হয়ে থাকে তখন ক্যান্থারিস প্রযোজ্য।
২) মুখ, গলা ও পাকস্থলীর জ্বালা।
৩) গলা ও পাকস্থলীতে জ্বালাকর বেদনা সহ অতিশয় পিপাসা।
৪) পাকস্থলীর নিম্নমুখে প্রবল জ্বালাকর বেদনা।
৫) সমগ্র অন্ত্রনালীর ভিতর দিয়ে দারুণ জ্বালাকর বেদনা ও উত্তাপ বোধ। মলের সঙ্গে সাদা বা ফিকেলাল অন্ত্রের চাচুনির ন্যায় রক্তের রেখাযুক্ত শ্লেষ্মা নির্গমন, বাহ্যের পর পেটের বেদনার উপশম। মলদ্বারে জ্বালা,কামড়াণো বা হুলফুটান বেদনা।
৭) ডিম্বাশয় প্রদেশে অতিশয় জ্বালাকর বেদনা।
৮) জ্বালাকর বেদনা সহ অন্ত্র-বেষ্ঠপ্রদাহ বা পেরিটোনাইটিস।
৯) উদরের অতিরিক্ত অনুভূতি ও মূত্রাশয়ের কুন্থন।
১০) স্বরযন্ত্রে বিশেষ করে দুচ্ছেদ্য শ্রেষ্মা; কেশে তুলবার চেষ্টা করলে জ্বালা ও
হুলফুটানি বেদনা।
১১) বক্ষস্থলে জ্বালা।
এণ্ডলি ঘড়া পূর্বোক্ত মূত্রযন্ত্রের, বিসর্পে ও চর্মরোগের উদ্ভেদের জ্বালাও ক্যান্থারিসে লক্ষণ।
আমার মনে হয় ক্যান্থারিসের উপরোক্ত লক্ষণগুলিই ঔষধটির উপযোগিতা সম্বন্ধে পাঠককের ধারণাকে দৃঢ় করবে। তবে মিউকাস মেমব্রেন বা ঝিল্লীপর্দার উপর এর কাজ উল্লেখ করেই আমি ক্যান্থারিস এর প্রসঙ্গ শেষ করব। ক্যান্থারিস প্রয়োগে ঝিল্লীসমূহের নিঃসরণ (secrtion) বৃদ্ধি পায়। ইহাই এর নিশ্চিত ক্রিয়া, ও একে ব্যবহারের একটি মূল্য লক্ষণ।
Canth : Cantharis Vesicatoria, Meloe Vesicatorius
|