একা থাকতে ভয়, আবার লোকজনের নিকট যেতেও ভয়। |
রাসটক্সের মত শরীরের নানাস্থানে ফুস্কুড়ি উঠে, চুলকায় ও হুলফোটার মত ব্যথা হয় এবং উহার ভিতর সুড়সুড় করে। |
কুঁচকির গ্রন্থি ফোলে ও প্রদাহযুক্ত। |
মূত্রথলী হতে সমস্ত মূত্র বের করতে পারে না। |
ঠান্ডা বাতাস নিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে কিছুক্ষণের জন্য দাঁতের ব্যথা উপসম হয়। |
গন্ডমালা দোষ যুক্ত, বাতরোগ যুক্ত, গণোরিয়া ও সিফিলিস রোগ যুক্ত রোগী। বিশেষকরে চামড়া, গ্রন্থিসমূহও জননেন্দ্রিয় ও প্রস্রাব সম্বন্ধীয় যন্ত্র, বিশেষ করে অন্ডদ্বয়ের উপর কাজ করে। বাধাপ্রাপ্ত ঘুম ও শরীরের বিভিন্ন অংশের স্নায়শূলের উপর ভালো কাজ দায়ক একটি ঔষধ বিশেষ। এই ঔষধের বেশির ভাগ যন্ত্রণা ঘামে উপশম হয়। পেশী শিথিল অথবা পেশীর নর্তন। অত্যধিক শীর্ণ। প্রচন্ড ঝিমুনিভাব। সমগ্র শরীরের স্পন্দন অনুভূত হয়।
মাথা – রগের উপর যেন ছিদ্র করা হচ্ছে এই জাতীয় যন্ত্রণা। বিভ্রাভি কর অনুভূতি; মুক্ত বাতাসে উপশম। মাথার পিছনের অংশে, চুলের গোড়ায় উদ্ভেদ, উদ্ভেদ পুঁজযুক্ত, অনুভূতি প্রবণ ও চুলকায়।
চোখ – চোখের ভিতর উত্তাপ এবং বাতাসে অনুভূতি প্রবণ; চোখ বন্ধকরে থাকতে বাধ্য হয়। পুরাতন অক্ষিপত্র প্রদাহ, তৎসহ মিবোমিয়ান গ্রন্থি সমূহের টাটানি ও স্ফীতি। আইরাইটিস, তৎসহ ঠান্ডা কিছুতেই সহ্য হয় না। চোখের সামনে ঝিলিক দিয়ে উঠে। পুঁজযুক্ত কনজাইটিভাইটি, তৎসহ দাদ। চোখ প্রদাহিত ও ঠেলে বেরিয়ে আসার ন্যায়।
মুখমন্ডল – মুখমন্ডল ও নাকের উপর সাদা রঙের ফোস্কা সমূহ, যেন সূর্যের তাপে ঝলসে গেছে। চোয়ালের নিম্নাস্থ গ্রন্থিসমূহের স্ফীতি, তৎসহশক্ত গুটি সমূহ; দপদপানি, স্পর্শে বৃদ্ধি। ডান দিকের মুখমন্ডল থেকে চোখ, কান ও রগ পর্যন্ত বেদনা; মুখের ভিন্ন ঠান্ডা জল ধরে রাখলে উপশম। দাঁত কনকনানি; রাত্রে ও তামাকে বৃদ্ধি। দাঁত গুলি মনে হয় আয়তনে বড়ো হয়ে যাচ্ছে।
পাকস্থলী – আহারের পরে সকল অঙ্গের দুর্বলতা ও ধমনীর স্পন্দন।
পুরুষের রোগ – বস্তিকোটর ও অন্ডকোষ সম্বন্ধী স্নায়ুশূল বেদনা। অন্ডদ্বয়ের কঠিনতা তৎসহ থেঁৎলিয়ে যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। অন্তকোষের স্ফীতি (অকাইটিস) কেবলমাত্র ডানদিকের অংশ। গণোরিয়া রোগ চাপা পড়ার কুফল। তীর লিঙ্গোঁদ্রেক তৎসহ প্রস্রাব নলীতে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। অন্ডদ্বয় ভারী হয়ে ঝুলতে থাকে অথবা ভিতরের দিকে ঢুকে থাকে, তৎসহ রেতঃ রজ্জু বরাবর বেদনা, ডানদিকে বেশী হয়।
প্রস্রাব – সম্পর্কিত যন্ত্রনা প্রস্রাব করার পরে কিছু সময় ধরে প্রস্রাব নলীর ভিতর সুড় সুড় করে। বারে বারে, অল্প অল্প প্রস্রাব, প্রস্রাব নলীর মুখের দিকে জ্বালা। প্রস্রাবের ধারা বাধাপ্রাপ্ত। প্রস্রাবনলীতে সঙ্কোচনের অনুভূতি। ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব হয়। সম্পূর্ণ প্রস্রাব ত্যাগে অসমর্থ। প্রস্রাব করার পরে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব হয়। যন্ত্রনা রাত্রে বৃদ্ধি পায়। রেত রজ্জু বরাবর বেদনা। মূত্ৰনলীর সঙ্কোচনের প্রাথমিক অবস্থা।
চামড়া – লাল, জ্বালাকর, ফোস্কাযুক্ত, আঁশযুক্ত ও মামড়িযুক্ত। প্রচণ্ড চুলকায়, ঠান্ডা জলে ধুলে বৃদ্ধি। হাতে ও মুখমন্ডলে বেশী হয় এবং মাথার পিছনের অংশের চামড়া বেশী আক্রান্ত হয়। গ্রন্থিসমূহ উষ্ণ, যন্ত্রনাদায়ক ও স্ফীত; কুঁচকির গ্রন্থিবেশী আক্রান্ত হয়। গ্রন্থিসমূহের কঠিণতা ও গঠন গ্রন্থির অর্বুদ। শিরাস্ফীতির জন্য ক্ষত সমূহ।
কমা–বাড়া—উপশম – শুদ্ধবাতাস।
বৃদ্ধি – রাত্রে ও বিছানার গরমে ঠাণ্ডা জলে ধুলে, অমাবস্যায় (মাসিক বৃদ্ধি)।
সম্বন্ধ– তুলনীয়-ক্লিমেটিস ভিটাক (শিরাস্ফীতি ও অন্যান্য ক্ষত); সাইলেশিয়া; ষ্টাফিস্যাগ্রিয়া, পেট্রোলিয়াম; ওলিয়েন্ডার; সার্সাপ্যাংলা; ক্যান্থারিস, ফসফেরিক অ্যাসিড; পালসেটিলা, দোষঘ্ন, ব্রায়োনিয়া, ক্যাম্ফার।
শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি।
ক্লিমেটিস কেবলমাত্র আংশিকভাবে পরীক্ষিত হইয়াছে। সুতরাং ইহা মাত্র কয়েকটি অবস্থায় প্রযোজ্য হয়, কিন্তু ঐগুলি বিশেষ প্রয়োজনীয় এবং সেইজন্য ইহাকে বাদ দেওয়া যায় না। ইহাতে প্রায় বিসর্প রোগে প্রকৃতির ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ আছে। তাহার সর্বক্ষণস্থায়ী একটি মানসিক লক্ষণ এই যে, সে একা থাকিতে ভয় পায় অথচ লোকসঙ্গকেও ভয় করে। সে লোকসঙ্গে থাকার প্রয়োজনীয়তাকে ভয় করে এবং মনে করে, যেন তাহাকে উত্যক্ত করিবার জন্য সমগ্র বায়ুমন্ডলটি ভীতিপূর্ণ ও কষ্টদায়ক জিনিষে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। ইহাতে যে বিষন্ন হইয়া পড়ে। এই ঔষধটি মানসিক অবস্থা ও সাধারণ লক্ষণের দিক হইতে সাইকোসিস ধাতুর উপযোগী বলিয়া বোধ হয়। যাহাদের গণোরিয়া রোগ অল্পদিন পূর্বে চাপা পড়িয়াছে ইহা তাহাদের পক্ষে উপযোগী বলিয়া মনে হয়, কারণ ঐরূপ চাপা পড়ার পর এবং বিবিধ মানসিক লক্ষণ এবং তৎসহ গ্রন্থিসমূহের প্রদাহ উপস্থিত হইয়া থাকে।
উদ্ভেদ সম্বন্ধে ইহা অদ্বিতীয়। কেহই মনে করিতে পারে না এত নির্দোষ এই ক্ষুদ গুটি হইতে এত বেশী উপদ্রবের সৃষ্টি হইতে পারে, কিন্তু এমন কতকগুলি লোক আছে যাহারা এই লতায় ঠিক ‘রাসে’র অনুভূতির ন্যায় অনুভূতি-বিশিষ্ট হইয়া পড়ে এবং ইহা লক্ষণ বিকাশের দিক হইতে অনেকটা রাসে’র সদৃশ। ইহা ঠিক রাসে’র ন্যায় বিষাক্ত অবস্থা উৎপাদন করে। এস্থলে যে-কয়েকটি ঔষধ ‘রাস’ বিষের সহিত সম্বন্ধযুক্ত, আমি তাহাদের কথা বলিতে চাই। অনেক ফোস্কা উৎপাদক ঔষধ আছে, তাহারা সকলেই ‘রাসে’র সদৃশ, এবং তাহাদের পরস্পরের মধ্যে প্রতিবিষ সম্বন্ধের জন্য তোমাদিগকে তাহাদের সবগুলিকেই অল্পাধিক ব্যবহার করিতে হইবে, সুতরাং একটি বিশেষ রোগীক্ষেত্রে উহাদের কোনটির দ্বারা বিষাক্ততা উৎপন্ন হইয়াছে, তাহা নিশ্চিতভাবে জানা উচিত। ক্রোটন টিগ’, ‘রাস’, ‘র্যানানকুলাস’, ‘এনকার্ডিয়াম এবং ক্লিমেটিস সময়ে সময়ে এত বেশী সদৃশ দেখায় যে, আমি মাত্র উদ্ভেদ ধরিয়াই উহাদের পার্থক্য নির্ণয় করিতে পারি না। উহারা সকলে পরস্পর এতই সদৃশ যে, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের প্রতিবিষ হইতে পারে। রাস’ অপেক্ষা অপর সবগুলি ঔষধই অধিক গভীরক্রিয়। বাটার কাপ নামক ক্ষুদ্রলতাটি অর্থাৎ র্যানানকুলাস’ চক্ষুর পাতা অন্তঃত্বকের অর্বুদ আরোগ্য করিয়াছে। উহা ক্যান্সার জাতীয় রোগ আরোগ্য করিয়াছে, সুতরাং আমরা বলি যে, উহা টিসুসমূহের গভীরে প্রবেশ করে।
মাথার বহির্ভাগে আমরা ক্লিমেটিসের রোগ বিকাশের এক অংশ দেখিতে পাই অত্যন্ত চুলকানি, হুলবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা এবং সুড়সুড়ির সহিত ফোস্কাকার উদ্ভেদ। এক্ষণে, মাথার উদ্ভেদ সম্বন্ধে যাহা সত্য, তাহাই ক্লিমেটিসের অন্যান্য স্থানের উদ্ভেদের পক্ষেও সত্য হইবে। উহা ধুইলে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। ইহার সহিত ঔষধটির আভ্যন্তরিক লক্ষণসমূহের তুলনা কর । দাতে ও চোয়ালের ভীষণ যন্ত্রণা হয়, কিন্তু উদ্ভেদসমূহ বাহ্যিক ঠান্ডা লাগাইলে বৃদ্ধিযুক্ত হইলেও, চোয়ালের ভিতর দিকের এবং দাতের যন্ত্রণা মুখে ঠান্ডা জল রাখিলে উপশমিত হয় এবং উত্তাপে ও শয্যার গরমে ভীষণভাবে বর্ধিত হইয়া উঠে। উদ্ভেদ শয্যার গরমে ও ঠান্ডা জলে ধুইলে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। উদ্ভেদটি রাস’জ্ঞাপক, কি ক্লিমেটিস বা অন্য কোন ঔষধজ্ঞাপক, তাহা বুঝিবার জন্য আমাদিগকে একটু বিস্তৃত আলোচনা করিতে হইবে। ফুস্কুড়িগুলি একপ্রকার হলদে তরল পদার্থে পূর্ণ থাকে, এবং ফুস্কুড়িগুলির তলা কঠিনতা প্রাপ্ত হয়। ইহার উদ্ভেদগুলি ইন্দ্রবিদ্ধা এবং একজিমার সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত এবং ঐগুলি বিস্তৃত হইতে থাকে। চক্ষুর চারিদিকেও আমরা ফুস্কুড়ির ন্যায় উদ্ভেদ পাই। উহাকে এক অবস্থায় দেখিলে উহা ফুস্কুড়ির ন্যায় দেখাইবে, কিন্তু পরে উহাকে ক্ষত বলিয়া মনে হইবে। সাধারণ ও গুরুতর প্রকৃতির ইন্দ্রবিদ্ধা। শরীরের চারিদিকে ইন্দ্রবিদ্ধা। “চক্ষে জ্বালা ও চিড়িকমারিয়া উঠা, চক্ষু মুদ্রিত করিলে বৃদ্ধি। উপতারাপ্রদাহ। চক্ষু প্রদাহিত, বহির্নির্গত, জ্যোতিহীন। চক্ষুপাতার পুরাতন কঠিনতা প্রাপ্তি।”
দন্তসংক্রান্ত যন্ত্রণা, শয্যার উত্তাপে বর্ধিত হয়, ইহা সাধারণ লক্ষণ; উহা রাত্রে উপস্থিত হয়, মুখে কিছু গরম জিনিষ লইলে বাড়িয়া উঠে এবং মুখে ঠান্ডা জল লইলে উপশমিত হয়। দাঁতে সূচীবিদ্ধবৎ এবং টানিয়া ধরার ন্যায় বেদনা, রাত্রে বৃদ্ধি, মুখে ঠান্ডা জল লইলে কিছুক্ষণের জন্য উপশমিত হয়, মুখ দিয়া শীতল বায়ু আকর্ষণ করিলে উপশমিত হয়, শয্যার উত্তাপে বর্ধিত হয়। দন্তশূল দিনের বেলায় সহনীয় কিন্তু যেই সে বিছানায় শোয় এবং ভূমির সহিত সমান্তরাল অবস্থায় থাকে, উহা অসহ্য মাত্রায় বাড়িয়া উঠে। পোকা-খাওয়া দাঁতে যন্ত্রণা, শীতল জলে উপশমিত হয়, রোগী মুখ দিয়া শীতল বায়ু আকর্ষণ করিলে ভাল থাকে।
কুঁচকির গ্রন্থির স্ফীতি, কঠিন অর্বুদের সহিত সম্বন্ধযুক্ত হইলেও ইহা একটি বিশিষ্ট লক্ষণ। উহা আবার লুপ্ত গণোরিয়ার সহিত এবং সন্ধিস্থলের বাতের সহিতও সম্বন্ধযুক্ত থাকিতে পারে। ডানপার্শ্বের রেতঃরজ্জুর যাতনা ও স্ফীতি, উহা চলিতে গেলে এবং শয্যা গরমে বর্ধিত হয়। যদিও উহা দেহের উভয় পার্শ্বই আক্রমণ করে, তথাপি আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ডানপার্শ্বস্থ গ্রন্থিগুলি বামপার্শ্বস্থ গ্রন্থিগুলি অপেক্ষা অধিক যন্ত্রণাযুক্ত হইয়া থাকে। ইহা মূত্রস্থলীর বহু উপসর্গ সৃষ্টি করিয়াছে। অবিরত মূত্রপ্রবৃত্তি, অত্যন্ত কষ্টকর মূত্রবেগ। মূত্র-প্রবাহ একবার বন্ধ হইতে ও আর একবার আরম্ভ হইতে থাকে। মূত্ৰনলীতে চাপ দিলে যন্ত্রণা করে। মূত্রপ্রবাহ সুস্পষ্টভাবে ক্ষীণ হইয়া পড়ে, মূত্রনলী সরু হইয়া যাওয়ায়, কেবল মাত্র সরু ধারে মূত্র নির্গত হয়।
এই ঔষধের প্রকৃতিগত লক্ষণ টিসুসমূহকে দূষিত ও প্রদাহিত করা, এবং সেইজন্য, যেসকল গণোরিয়া রোগীর রোগ-লক্ষণ ধীরে ধীরে অপসৃত হয় এবং যাহারা ইঞ্জেকশন দ্বারা চিকিৎসিত হইয়াছে, ইহা তাহাদের পক্ষে উপযোগী হইয়া থাকে। মূত্রনলীর ধীরগতি প্রদাহ মূত্রনলীকে রসপ্রসেকযুক্ত করে এবং উহা একগাছি বড় চাবুকের দড়ির ন্যায় অনুভূত হয়; উহাতে চাপ দিলে বেদনা করে, এইরূপ চলিতে চলিতে মূত্ৰনলীটি প্রায় বন্ধ হইয়া আসে। ক্লিমেটিস প্রযোজ্য হইলে, তোমরা আশ্চর্য হইয়া দেখিবে যে, ঔষধটি দেওয়ার পর, গণোরিয়া স্রাবটি পুনঃস্থাপিত হইবে এবং শীঘ্রই ঐ পুরাতন মূত্রনলীর অবরোধ চলিয়া যাইবে। দুই তিন মাস পরে, সে আর উহার কিছুই অনুভব করিবে না।
মূত্র, মূত্রস্থলী প্রভৃতি সম্বন্ধে একটি বিশেষ লক্ষণ এই যে, রোগী কখনও মূত্রস্থলীকে খালি, করিতে পারে না। সর্বদাই অনুভব করে যে, কিছুটা মূত্র রহিয়া গেল, এবং যখন সে মূত্রক্রিয়া শেষ করিয়াছে বলিয়া মনে করে, ঐ মূত্র ফোঁটা ফোঁটা করিয়া গড়াইতে থাকে। ইহা মূত্রনলীর সঙ্কোচনের একটি সাধারণ লক্ষণ। “এককালে সমস্ত মূত্র ত্যাগ করিতে অক্ষমতা। মূত্রত্যাগ আরম্ভ হইবার কালে অত্যন্ত তীব্র জ্বালা হয়, মূত্রস্রাব চলিবার কালে মূত্ৰনলীর মধ্যে কাঠি ফোটার ন্যায় যাতনা হয় এবং মূত্রক্রিয়া শেষ হইবার পরও জ্বালা করিতে থাকে। মূত্ৰনলী হইতে ঘন পুঁজস্রাব।” গণোরিয়ার প্রাথমিক অবস্থায়, অত্যধিক প্রদাহকালে কদাচিৎ ইহার ব্যবহার হয়, কিন্তু যে-সকল ক্ষেত্রে রোগটির থাকিয়া থাকিয়া প্রবণতা থাকে সেইখানেই ইহার সমধিক ব্যবহার। এই সময়ে গণোরিয়া চাপা পড়িলে, তাহার কুফল উপস্থিত হয়। অন্ডকোষের প্রদাহ একটি সাধারণ অবস্থা এবং উহাতে ইহা একটি উপযোগী ঔষধ। বিস্ময়ের বিষয় ইহাতে সাধারণতঃ দেহের বামপার্শ্ব অপেক্ষা দক্ষিণপার্শ্বই অধিক আক্রান্ত হয়। থামিয়া থামিয়া মূত্রপাত। মূত্র একবার থামে, একবার নির্গত হয়, তৎসহ শেষ পর্যন্ত কষ্টকর লিঙ্গোদ্রেক থাকে। ডানপার্শ্বের রেতঃরজুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়। অন্ডে যন্ত্রণা, টানিয়া ধরা। বেদনাযুক্ত, প্রদাহিত ও স্ফীত অন্ড। অত্যন্ত কষ্টকর স্ফীতি ও কঠিনতাযুক্ত একশিরা। তারপর, ফোলা যখন কমিয়া আসিয়াছিল, তখন সম্ভবতঃ তুমি ‘পালস’ দিয়াছিলে; ঐ সময়ে ‘পালস’ই ঔষধ ছিল, কিন্তু ‘পালস’ রোগটি শেষ করিতে পারিল না—ঐ অঙ্গের কঠিনতাটি থাকিয়া গেল, এরূপ অবস্থা। অন্ডকোষের দক্ষিণ অর্ধেকের স্ফীতি, তৎসহ পুরু হইয়া উঠা এবং ঝুলিয়া পড়া।
স্ত্রীলোকদিগের সাহায্যে এই ঔষধের তেমন কিছু পরীক্ষা হয় নাই; সেইজন্য দুঃখ করিতে হয়, কারণ তাহা হইলে আমরা জানিতে পারিতাম যে, ইহা পুরুষের অন্ডকোষকে যেরূপ আক্রমণ করে, স্ত্রীলোকের ডিম্বকোষকেও সেইভাবে আক্রমণ করে কিনা। ইহা রোগীদেহেই ব্যবহৃত হইয়াছে এবং ইহা দ্বারা স্ত্রীলোকের বহু রোগ আরোগ্য হইয়াছে, বিশেষতঃ স্তনগ্রন্থির প্রদাহ। “স্তনগ্রন্থির ক্ষত ও কঠিনতা। স্তনের কঠিনতা ও ক্ষতযুক্ত কঠিন অর্বুদ। বামস্তনের কঠিন অর্বুদ, তৎসহ স্কন্ধে সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা।” ইহা রোগীদেহে পরীক্ষিত লক্ষণ। “রাত্রিকালে বৃদ্ধি।” রোগিণী অনাবৃত থাকা সহ্য করিতে পারেন না।
ইহাতে গণোরিয়া লুপ্ত হওয়ার ফলে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাত অবস্থা আছে। অত্যন্ত স্নায়বিক দুর্বলতা ও পেশীসমূহের উৎক্ষেপ। শয়ন করিলে এবং নিদ্রার উপক্রম হইলে যন্ত্রণা। বিদ্যুতাঘাতের ন্যায় যন্ত্রণা। যেন ফ্যারাডে আবিষ্কৃত বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালাইয়া দেওয়া হইতেছে, এরূপ ঝাকি দিয়া উঠা ও উৎক্ষেপ। ইহাতে আরও সাধারণ ভাবের জ্বর অবস্থা আছে, কিন্তু উহা বিশেষ কিছু নহে।
দেহের উপর ফোস্কাকার উদ্ভেদ। এখানে-সেখানে ইন্দ্রবিদ্ধার ন্যায় উদ্ভেদ, ইহাতে ইন্দ্রবিদ্ধা উৎপাদক ধাতু আছে। “ফোস্কাকার ও পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ, প্রথমটি হইতে একরূপ পরিষ্কার জলের ন্যায় রস নির্গত হয়, পরের প্রকার উদ্ভেদ হইতে পুঁজবৎ স্রাব নির্গত হয়।” হরিদ্রাবর্ণ ফুস্কুড়ি, হরিদ্রাবর্ণ পুঁজবটী। এই ঔষধে দুইই দেখা যায়। “অত্যন্ত চুলকানিযুক্ত কৃষ্ণাভ জ্বালাকর উদ্ভেদ। পোড়া নারাঙ্গা হইতে ক্ষত জন্মে। রসানিবিশিষ্ট বিস্তারশীল ক্ষত।”
অপর নাম – আপরাইট ভার্জিনস বাওয়ার (Upright Virgini’s bower)
ক্লিমেটিস রেনানকিউলের্সী জাতীয় উদ্ভিদ। পাতা ও কাণ্ড থেকে মূল অরিষ্ট তৈর করা হয়।
১। গণোরিয়ার পরে যখন ধীরে ধীরে অথবা থেকে থেকে মূত্র নির্গত হয় ও স্ট্রিকচার (stricture urethra) বা মুত্র পথে অবরোধের প্রকাশ পায়; তখন ক্লিমেটিস উপকারী। এক্ষেত্রে যদি সকাল সকাল অর্থাৎ প্রাথমিক অবস্থায়। উচ্চক্রমের ক্লিমেটিস ব্যবহার করা হয় তাহলে প্রথমেই স্ট্রিকচার্য নিবারিত হয়। তাছাড়া নিদারুণ বেদনা ও যন্ত্রণা থেকে শান্তি পাওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার বিবেচিত হলেও সযত্নে রোগীকে উহা থেকে নিবৃত্ত করতে হয় কারণ কটারাইজেশন (cauterization) বা পুড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি যা প্রচলিত বা প্রথমত যে বাহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে তা সবক্ষেত্রে না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ট্রিকচার তৈরীর জন্য দায়ী। তাছাড়া এরূপ চিকিৎসা বৈজ্ঞানিক বা প্রকৃত আরোগ্যকারী পদ্ধতিও নহে। পক্ষান্তরে একমাত্র ধাতু-প্রকৃতি বিচার করে চিকিৎসা করলে রোগের গতি যে কেবল সাময়িক প্রতিরুদ্ধ হয় তা নহে, এতদুরারোগ্য ব্যাধিও স্থায়ী ভাবে আরোগ্য লাভ করে।
২। গণোরিয়ার স্রাব, অবরুদ্ধ হয়ে অণ্ডকোষের যে প্রদাহ (orchitis) জন্মে, অথবা স্রাব বিলুপ্ত না হয়েও কখন কখন যে অণ্ড-প্রদাহের উৎপত্তি হয় তাতে অতিশয় ব্যবহার হয়ে থাকে। এই প্রদাহে অণ্ডকোষ অতিশয় ফুলে উঠে এবং অবিলম্বে অতিশয় প্রশমিত না হলে পাথরের মত শক্ত হয়ে পড়ে। আমি ক্লিমেটিস দ্বারা এই রোগ অতি সত্বর আরোগ্য করেছি।
* প্রমেহের স্রাব বিলুপ্তির পরে যে অণ্ডকোষ প্রদাহ জন্মে তাতে সাধারণতঃ পালসেটিলারহ লক্ষণ প্রকাশ পায়, কিন্তু পালসেটিলা প্রয়োগে বেদনার উপশম ও স্রাব প্রত্যাবৃত্ত হলেও যদি ফুলার ও কঠিনর কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে ক্রিমেটিস ব্যবহারে উহা দূরীভূত হয়। তাছাড়া এতে কখনও আমি নিরাশ হয়নি।
৩। মুখের মধ্যে ঠাণ্ডা জল রাখলে দাঁতের বেদনার উপশম কফিয়ার ন্যায় ক্লিমেটিসের একটি লক্ষণ।