মন ও ইন্দ্রিয় সকলের প্রখরতা ও উত্তেজিত অবস্থা, দৃষ্টিশক্তির উন্নতি, খুব ছোট লেখাও পড়তে পারে, শ্রবণশক্তি প্রখর, সেজন্য সামান্য শব্দ অসহ্য, ঘ্রানশক্তি প্রবল। |
সামান্য বেদনা এত অসহ্য অনুভূত হয় যে রোগী বেদনায় হতাশ হয়ে পড়ে ও ক্রন্দন করে। |
অত্যধিক মানসিক ও শারীরিক উত্তেজনার জন্য রোগী ঘুমাতে পারে না। |
লম্বা, রোগা, সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটে, রঙ কাল, রক্ত ও পিত্তপ্রধান এমন লোকেদের অসুখে উপযোগী। অতি উত্তেজনা প্রবণতা = দর্শন, শ্রবণ, আস্বাদ, অঘ্রান ও ছোঁয়া সব ইন্দ্রিয় শক্তি প্রখর হয়ে ওঠে (বেল, ক্যামো, ওপি) দেহ ও মন অস্বাভাবিক অত্যধিক কর্মচঞ্চল।
নানারকম চিন্তা, চিন্তা করা মাত্র তা শেষ করে উঠতে চায়—এজন্য ঘুম হয় না।
আকস্মিক উত্তেজনা বা আনন্দদায়ক বিস্ময়পূর্ণ কোন ঘটনা বশতঃ রোগ এর সৃষ্টি (কষ্টি), উত্তেজনাপূর্ণ বা খারাপ সংবাদে—জেল আনন্দে কাঁদতে থাকে, একবার হাসে একবার কাঁদে ।
সব ব্যথাই বেশী বলে মনে হয়, বেদনা অসহ্য তাকে প্রায় পাগল করে তোলে, হতাশ হয়ে পড়ে (একোন, ক্যামো); যন্ত্রণায় এপাশ ওপাশ করতে থাকে।
ঘুম হয় না, জেগেই থাকে, চোখ বন্ধ করা অসম্ভব; তা থেকে মানসিক ও শারীরিক উত্তেজনা (জরায়ু বার হয়ে পড়া, জরায়ুর প্রদাহ ও ঋতুনিবৃত্তি কালে নিদ্রাহীনতায় সিনিসিও-এর সাথে তুলনীয়)।
মাথাযন্ত্রণা – বেশী মানসিক পরিশ্রমে, বেশী চিন্তা করা বা বেশী কথা বলা হতে, মাথার একদিকে যন্ত্রণা। অনুভূতি—যেন পেরেক বেধানো হচ্ছে (ইগ্নে, নাক্স-ভ), মস্তিষ্ক যেন ছিড়ে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে, খোলা হাওয়ায় মাথাযন্ত্রণা বাড়ে।
খুব তাড়াতাড়ি খায় ও জল পান করে (বেল, হিপার) ।
দাঁত ব্যথা – থেমে থেমে হয়, শরীর যেন ব্যথায় ঝাঁকি মারে। মুখে ঠান্ডা জল রাখলে উপশম কিন্তু জল গরম হলেই আবার ব্যথা হতে থাকে (বিসমাথ, ব্রায়ো, পালস্, কষ্টি, সিপিয়া, ন্যাট-সা)।
সম্বন্ধ-তুলনীয়— একোন, ক্যামো, ইগ্নে, সালফ।
শত্রু সম্বন্ধ — ক্যান্থা, কষ্টি, কক্কু, ইগ্নে।
বৃদ্ধি – হঠাৎ মানসিক উত্তেজনায়, অত্যধিক আনন্দে, খোলা ঠান্ডা বাতাসে, মাদক জাতীয় ওষুধে ।
শক্তি — ৬, ৩০, ২০০।
এই ঔষধটি শরীরের সকল যন্ত্রের কার্যপদ্ধতিকে সতেজ করে তোলে, স্নায়ু ও রক্তবহনালীর কার্যক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটায়। বৃদ্ধ বয়েসে কফিপানে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমানের বৃদ্ধি ঘটে। এবং এল ফলে বৃক্কের গোলযোগ দেখা দেয়। পেশী ও সন্ধির বেদনা। এবং তৎসহ বৃদ্ধ ব্যক্তিদের কফি ও চা পানের ফলে ঔ ব্যক্তিরা কফিও চায়ের উত্তেজক ক্রিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং অকারণে এই বয়সে কফি ও চা পানের পরিমান কমিয়ে দেওয়া অবশ্য প্রয়োজন অথবা ঐ গুলি শরীরের উপর যে ক্রিয়া করে তা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। প্রচন্ড স্নায়বিক উত্তেজনা এবং অস্থিরতা, অতিরিক্ত মাত্রায় অনুভূতি প্রবণ হয়ে পড়া এই ঔষধের একটি বৈশিষ্ট্য বিশেষ। শরীরের বিভিন্ন অংশে স্নায়ুশূল; সর্বদা প্রবল স্নায়বিক উত্তেজনা এবং বেদনা সহ্য করতে পারে না। এবং রাগী হতাস হয়ে পড়ে। মন ও শরীরের অস্বাভাবিক কার্যতৎপরতা দেখা যায়। আকস্মিক ভাবাবেগ, বিস্ময়, আনন্দ প্রভৃতির কুফল। স্নায়বিক হৃদকম্প। গনরিয়া খুব কালো খাটো দীর্ঘকায়, রোগা, সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা দেহবিশিষ্ট তৎসহ কালো রঙ ও পিত্ত ও রক্তপ্রধান ধাতুবিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। চামড়া অতিরিক্ত অনুভূতি প্রবণ।
মন — হাসিখুশি, সহজ বোধগম্য, খিটখিটে, উত্তেজনা, তীক্ষ্ণ অনুভূতি। মন খুব সহজেই আকৃষ্ট হয়, বিশেষকরে আনন্দদায়ক ব্যাপারে। কল্পনায় পরিপূর্ণ মন, দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে। শারীরিক যন্ত্রনার কারণে মন ছট ফট করে (একোনাইট)
মাথা – কষে ধরার ন্যায় বেদনা, শব্দ, গন্ধে ও মাদক দ্রব্যে বৃদ্ধি। রোগীর মনে হয় মস্তিষ্কটি টুকরো টুকরো হয়ে ছিড়ে যাবে, যেন মস্তিষ্কের ভিতর একটি পেরেক ঠুকে ঠুকে প্রবেশ করানো হচ্ছে। মুক্ত বাতাসে বৃদ্ধি। শ্রবনশক্তির তীক্ষ্মতা।
মুখমন্ডল – শুষ্ক উত্তাপ, তৎসহ গালদুটি লালবর্ণ। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল, বেদনা, চর্বনদন্ত, দুটি কান, কপাল ও মাথার খুলির চর্ম পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
মুখগহ্বর – দাঁতের যন্ত্রনা, মুখের ভিতর বরফ জল ধরে রাখলে, সাময়িক উপশম হয় (ম্যাঙ্গেনাম এসেটিকাম-বিপরীত)।
পাকস্থলী — প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। কসে থাকা জামা কাপড় অসহ্য। মদ ও সুরাপানের কুফল।।
স্ত্রীরোগ — মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দীর্ঘস্থায়ী। বাধক বেদনা। বড়ো বড়ো কালো জমাট বাঁধা রক্তের ঢেলা। যোনিকপাট ও যোনিনলী অত্যাধিক মাত্রায় অনুভূতিপ্রবন। কমোদ্দীপক চুলকানি।
ঘুম — সজাগ নিদ্রা; অবিরাম স্থান পরিবর্তন করে। রাত্রি ৩টে পর্যন্ত ঘুম হয় এবং তার পরে কেবল ঝিমিয়ে থাকে বা সামান্য তন্দ্রাভাব থাকে। চমকে জেগে উঠে, স্বপ্ন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। মানসিক কাজের জন্য, অনিদ্রা, মনের ভিতর কল্পনার প্রবাহ তৎসহ স্নায়বিক উত্তেজনা। গুহ্যদ্বারের চুলকানি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
শ্বাস–প্রশ্বাস — স্নায়বিক, দুর্বল প্রকৃতির শিশুদের হাম থেকে উৎপন্ন ক্ষনস্থায়ী শুষ্ক কাশি।
হৃদপিন্ড — তীব্র, অনিয়মিত হৃদকম্প বিশেষ করে অতিরিক্ত আনন্দ বা আকস্মিক বিস্ময়ের পরে। দ্রুতগতিশীল নাড়ী তৎসহ প্রস্রাব রোধ।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – পায়ের স্নায়ুশূল। চলাফেলায়, বিকালের দিকে ও রাত্রিতে বৃদ্ধি, চাপে উপশম।
কমা-বাড়া–বৃদ্ধি – অত্যাধিক ভাবাবেগ, মাদক দ্রব্য। ঝাঁঝাল গন্ধ, শব্দ, মুক্তবাতাস, ঠাণ্ডা ও রাত্রি।
উপশম — উষ্ণতা, শুয়ে পড়লে, মুখের ভিতর বরফ রাখলে।
সম্বন্ধে – প্রতিবন্ধক, ক্যাম্ফর, ককিউলাস, পরিপূরক, একোনাইট।
তুলনীয় – কফিয়া টোষ্টা (কফি ভাজা হলে তাতে কয়েক প্রকার ভিটামিন জাতীয় বস্তুর উদ্ভব হয় (পি. টি. ম্যাটী)। যে সকল পায়রা, মসৃন করা চাল খেত, দেখা গেছে তাদের শরীরের অপুষ্টিজনিত কারণে এক প্রকার স্নায়ুশূল ও পক্ষাঘাত সদৃশ লক্ষণের সৃষ্টি হয়েছিল। এই সকল পায়রাগুলিকে কফিয়াটোষ্টার, ৫%। কাথ ৮ সি. সি. পরিমানে খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানোর পরে দেখা গেছে যে ঐ সকল লক্ষণসমূহ ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আনরোস্টেড কফির দ্বারা কোন সুফল পাওয়া যায় না।
ক্যাফিন- কফির একটি উপক্ষার সরাসরি হৃদপিন্ড উত্তেজক ও প্রস্রাব বৃদ্ধিকারক ঔষধ বিশেষ। হৃদপিন্ডের গোলযোগের কারণে সর্বাঙ্গীন শোথ। হৃদপেশীর ক্ষয়। নিউমোনিয়া ও অন্যান্য প্রকারের সংক্রামক রোগে হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতার হ্রাস। এই ঔষধ ঐ সময় রক্তের চাপ বৃদ্ধিকরে, নাড়ীর গতি বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদপেশীকে উত্তেজিত করে ফলে হঠাৎ করে পতনাবস্থার উন্নতি ঘটায়। শ্বাস-প্রশ্বাস কেন্দ্র, স্নায়ুকেন্দ্রকে সতেজ করে এবং প্রস্রাবের বৃদ্ধি ঘটায়। ভেসো-মোটর কেন্দ্রের উজ্জীবিত করার একটি মোখ্য ঔষধ বিশেষ। ফুসফুসের তরুন শোথ। বাহুর স্নায়ুশূল, এবং অন্যান্য স্নায়ুর শূল বেদনা, রাত্রিকালীন বৃদ্ধি, এই ঔষধের একটি বৈশিষ্ট্য বিশেষ, হাউসেট সমপরিমান ক্যাফিন ও স্যাক্যাম ল্যাকটিস ব্যবহার করতেন। তিন গ্রেন, পরিমাণ ঔষধ সমান ভাগে-ভাগ করে প্রতি একদিন অন্তর প্রযোজ্য। চামড়ার নীচে ১/৪ গ্রেন প্রযোজ্য। ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁত থেকে, মুখমন্ডলীয় স্নায়ুর তীব্রশূল বেদনার প্রযোজ্য।
একোনাইট, ক্যামোমিলা, নাক্স, সাইপ্রিপেভিয়াম, ক্যাফিন এবং যে সকল উদ্ভিদের ভিতর এটি পাওয়া যায় যেমন কোলা, থিয়া প্রভৃতি। কড়া, কালো কফি, যতদূর সম্ভব গরম পান করা যায়, ঐ অবস্থায় পান করলে তা বহু প্রকার বিষক্রিয়ার, বিশেষ করে সংজ্ঞাবাহক বা নারকোটিকস্ পয়জনের ক্রিয়ানাশক রূপে কাজ করে। মারাত্মক জাতীয় পতনাবস্থায় গরমকফি সরলাস্ত্র দিয়ে প্রয়োগ করা হলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
দোষঘ্ন – নাক্স, ট্যাকোম।
শক্তি – ৩য় থেকে ২০০ শক্তি।
অত্যনুভূতি প্রবণতাই এই ঔষধটির বিশেষ প্রকৃতি। দৃষ্টিশক্তির, শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তির,
স্পর্শের অত্যন্ত অনুভূতি; বেদনায় অত্যনুভূতি। এই অত্যনুভূতির ব্যাপার সময়ে সময়ে বিস্ময়কর হইয়া উঠে। গোলমালে বাড়িয়া যায়। শ্রবণশক্তির এত বেশী অনুভূতি থাকে যে, শব্দ যন্ত্রণাদায়ক হয়। মুখে যন্ত্রণা, দন্তশূল, শিরঃপীড়া, নিম্নাঙ্গগুলিতে যাতনা, সবকিছুই শব্দে বৃদ্ধি হয়। যতপ্রকার স্নায়বিক উপদ্রব হওয়া সম্ভব, তাহার সবকিছুই ঔষধে আছে এবং ঐগুলি সবই শব্দে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। এমনকি দরজা খোলার শব্দ এবং দরজার ঘন্টার শব্দে অত্যন্ত কষ্ট হয়। এইরূপ রোগীদের এত অত্যনুভূতি থাকে যে, সুস্থ ব্যক্তিরা যে শব্দ শুনিতে পায় না, তাহারা তাহা শুনিতে পায়। নাক্স ভমিকা’কে না ধরিলে মেটিরিয়া মেডিকায় বোধ হয় এমন কোন ঔষধ নাই, যাহা এই ঔষধের শ্রবণেন্দ্রিয়ের এইরূপ অত্যনুভূতি ও তদানুষঙ্গিক যাতনার কাছে যাইতে পারে। যে-সকল চিকিৎসক ইহা জানেন না, তাহারা শিশুদিগের অন্য ঘর হইতে গোলমাল বা শব্দ শুনিলে বৃদ্ধি-লক্ষণে নাক্স ভমিকা’র আশ্রয় লন। অনেক ঔষধেই শব্দে স্নায়বিকতার বৃদ্ধি আছে, শিরঃপীড়ার ও মাথার যাতনার বৃদ্ধি আছে, এবং কোন কোন ব্যক্তি শব্দেই স্নায়বিক হইয়া উঠেন। কিন্তু হস্ত-পদাদির যন্ত্রণা যে শব্দে বৃদ্ধি হয়, ইহা অদ্ভুত। মনে হয় যে, শব্দ তাহাকে উত্যক্ত করিয়া তুলে এবং সেইজন্যই সে যন্ত্রণা সহ্য করিতে পারে না।
মনের আবেগ বা তীব্র মানসিক উত্তেজনায়, আনন্দ অথবা “অপ্রত্যাশিত আনন্দ সংবাদে। কফিয়া জ্ঞাপক অবস্থা উপস্থিত হয়। তাহার পরিণাম নিদ্রাহীনতা, স্নায়বিক উত্তেজনা, স্নায়ুশূল, পেশীসঙ্কোচন, দন্তশূল, মুখমন্ডলের যন্ত্রণা, মুখের আরক্ততা এবং মস্তকে উত্তাপ।
কোন বড় কারণে কষ্টভোগ করিতেছেন, এরূপ কোন স্ত্রীলোকের শয্যাপার্শ্বে তুমি হয়ত আহত হইয়াছ। তিনি ক্রমাগত পরিশ্রম করিয়াছেন, কৃতকার্য হইয়াছেন, কিন্তু ক্রন্দন, প্রলাপ, স্নায়ুশূল, নিদ্রাহীনতা বিশিষ্ট হইয়া শয্যা গ্রহণ করিয়াছেন। তাহার হৃৎস্পন্দন হইতেছে, নাড়ী অনিয়মিত হইয়া পড়িয়াছে, তাহার মূর্চ্ছার আক্রমণ হইতেছে, কফিয়া না দিতে পারিলে তিনি হয়ত মারাই যাইবেন। যে সকল কফিয়া পান কারীরা কোন শ্রমসাধ্য কাৰ্য্য সম্পাদন করে এবং তারপর ভগ্নস্বাস্থ্য হইয়া পড়ে, তাহারা এইরূপ রোগগ্রস্ত হইয়া থাকে।
কফিয়া রোগী মদে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়। সামান্য পরিমাণে মদে, তাহার স্নায়বিকতার বৃদ্ধি করে, নিদ্রাহীনতা জন্মায়, মুখ ছলছল করে, জ্বরভাব হয় এবং অত্যন্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করে। বাস্তবিক ইহা মাদকতা নহে, কিন্তু অত্যন্ত স্নায়বিক উত্তেজনা। কফিয়ায় গাত্রচর্মের যন্ত্রণাদায়ক অত্যনুভূতি এত বেশী যে, তাহা অনুমান করা যায় না। আমার একটি বিশেষ রোগীর কথা মনে পড়ে। একজন স্ত্রীলোক তাহার নিম্নাঙ্গ শয্যার বাহিরে রাখিয়াছিলেন এবং একদিকের নিম্নাংশ আগুনের মত লাল ছিল। আমি উহার দিকে গিয়া আমার হাত দিলাম। কিন্তু তিনি বলিলেন “উঃ, উহা স্পর্শ করিবেন না, আমি উহা স্পর্শ করা সহ্য করিতে পারিতেছি না। আমি নিজেও উহা স্পর্শ করিতে পারি না।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, কতদিন ধরিয়া উহা চলিতেছে। তিনি বলিলেন “ও, এ সমস্তই একঘণ্টার মধ্যে উপস্থিত হইয়াছে।” কফি পানকারীদের মধ্যে এরূপ লক্ষণ একটি সাধারণ ব্যাপার। কোনরূপ জ্বর থাকে না। চর্মে অত্যন্ত হুল ফোটার ন্যায়, জ্বালাকর যাতনা, তৎসহ আরক্ততা ও উত্তাপ, এবং উহার উপর অকস্মাৎ খসখসে উদ্ভেদ জন্মে আবার তাহা অকস্মাৎ মিলাইয়া যায়। অত্যনুভূতিযুক্ত অঙ্গের শীতল বাতাসে বৃদ্ধি, কোনরূপ বাতাসে, বা পাখার বাতাসে, সঞ্চালনে বৃদ্ধি, কিন্তু তথাপি উত্তাপেও হয়। মেঝের উপর দিয়া কেহ হটিতে থাকিলে বৃদ্ধি। আমি যে স্ত্রীলোকটির বিষয় উল্লেখ করিলাম, আমি তাহার বিছানার দিকে গেলে, তাহার মুখে রুষ্টভাব দেখিয়াছিলাম। বহুবার আমি এরূপ ব্যাপার কফিয়া দ্বারা কয়েক মিনিটের মধ্যে উপশম হইতে দেখিয়াছি।
হঠাৎ মনের আবেগ হইতে মূৰ্ছা। হিষ্টিরিয়া, স্নায়বিকতা, ক্রন্দন। বেদনায় কাতর ক্রন্দন, মনে আঘাত লাগায়, সামান্য অবহেলায় কম্পন ও ক্রন্দন। অত্যন্ত মানসিক ও শারীরিক অবসন্নতা, অত্যন্ত অস্থিরতা, রাতের অধিকাংশ সময়ই জাগিয়া শুইয়া থাকা। কফি দ্বারা উৎপন্ন নিদ্রাহীনতার বিষয়, সাধারণ লোকদেরও সুবিদিত। শুশ্রুষাকারীরা রোগী লইয়া জাগিয়া থাকিবার জন্য কফি পান করিয়া থাকেন। কফিয়া রোগী দ্রুত চিন্তা ও কার্য করিতে পারে। কফিয়ার রোগী। নানা ধারণায় এত পূর্ণ থাকেন যে, তিনি মতলব আঁটিতে আঁটিতে, হাজার জিনিষের কথা চিন্তা করিতে করিতে জাগিয়া শুইয়া থাকেন, মনে যে-সব চিন্তা জন্মে, তাহা দূর করিতে পারেন না। ওপিয়াম, চায়না’ ও নাক্স ভমিকার’ ন্যায় জাগিয়া দূরের ঘড়ির ঘন্টা শব্দ শুনিতে পান। কুকুরে ডাক শুনিতে পান। তাঁহার মস্তিষ্কের কাৰ্য্যশক্তি, তাহার মানসিক উত্তেজনা এত বাড়িয়া যায় যে, তিনি যে-সকল শব্দ সম্পূর্ণ কাল্পনিক, তাহাও শুনিতে পান। স্মৃতিশক্তি সক্রিয়, বোধশক্তি প্রখর, কল্পনায় পূর্ণ, চিন্তাশক্তি ও বাদানুবাদের শক্তি বর্ধিত হয়। কফিয়া মনের শক্তিকে বাড়াইয়া দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই প্রতিক্রিয়া হইতে থাকে, সে নির্বোধ ও নিদ্রালু হইয়া পড়ে। কল্পনা এবং অলীক দর্শনের শেষ থাকে না। বহুবৎসর ধরিয়া যাহার কথা ভাবে নাই, তাহার কথা মনে পড়িয়া যায়, বাল্যকালে যে-কবিতা আবৃত্তি করিয়াছিল তাহা মনে পড়িয়া যায়। উজ্জ্বল চক্ষু, তারকাদ্বয় প্রসারিত, মুখমন্ডল আরক্তিম, মস্তক উত্তপ্ত।
এই সকল স্নায়বিক অবস্থার সহিত রোগীর নির্মল বায়ুতে ভয় থাকে। সে ঠান্ডায় অত্যনুভূতিবিশিষ্ট, বাতাসে ও শীতল আবহাওয়ায় স্পর্শকাতর থাকে। শীতল আবহাওয়ায় এবং শীতল বাতাসে রোগ উপস্থিত হয়। মুখের ও মাড়ির যন্ত্রণায় মুখে বরফের ন্যায় শীতল জল রাখিলে উপশম হয়। দন্তশূল ও মুখমন্ডলের শূল বেদনায়, বেদনাটি চোয়ালের গভীর প্রদেশে থাকিলে এইকথা খাটে। মস্তক উত্তপ্ত এবং মাড়ি প্রদাহিত। দাঁতে যন্ত্রণা, দাঁতে বিদীর্ণকর, ছিন্নকর যন্ত্রণা, ঠান্ডায় উন্মুক্ত থাকায়, মনের আবেগবশতঃ, উত্তেজনায়, আনন্দে উহা উপস্থিত হয়। সঞ্চালনে বাড়ে, বরফ বা বরফের ন্যায় ঠান্ডা জিনিষে উপশম হয়, উষ্ণ খাদ্যে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। গরম চায়ের কথা চিন্তা করিতে পারে না, উহাতে যন্ত্রণা অত্যন্ত বাড়িয়া উঠে। ইহা একটি বিশেষ লক্ষণ। এখানে সাধারণ লক্ষণ বিশেষ লক্ষণের বিপরীত হইতেছে। একস্থানে তুমি বড় বড় অক্ষরে ঠান্ডায় উপশম” দেখিবে, কিন্তু মাত্র উহা মুখ ও চোয়াল সম্বন্ধে খাটিবে। ‘ঠান্ডায় বৃদ্ধি”ই ইহার সাধারণ লক্ষণ। যদি দিনটি খুব গরম ও গুমোট না হয়, তাহা হইলে ঠান্ডা বাতাসে ও খোলা বাতাসেই অপ্রবৃত্তি থাকে। বাতাসে বিতৃষ্ণা। “স্নায়বিক প্রকৃতির দন্তশূল, মুখে ঠান্ডা জল রাখিলে সম্পূর্ণ উপশম হয়। কিন্তু ঐ জল গরম হইয়া উঠিলে বেদনার পুনরাবির্ভাব ঘটে। ঋতুকালে দন্তবেদনা। দাঁত উঠার সময় রক্তশূন্য শিশুদের রোগ। যেসকল স্নায়বিক, উত্তেজনাপ্রবণ শিশু, উজ্জ্বল চক্ষু ও লাল মুখবিশিষ্ট হইয়া, ধাত্রী ও মাতার সহিত খুব তাড়াতাড়ি কথা বলে এবং ঘুমাইতে চায় না। ইহা রোগীকে ঠান্ডা করিবে এবং প্রকৃত পক্ষে বেদনাশূন্য দন্তোদামের সহায় হইবে। অনেক প্রকার স্নায়বিক, মস্তিষ্ক ও মনের রোগ বিশিষ্ট শিশুদের ইহাই বর্ণনা। শিশু অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্ট, উহার সর্দি লাগে। যে শিশুর মস্তক উত্তপ্ত, মুখমন্ডল উত্তপ্ত শঙ্খস্থানের শিরায় উল্লম্ফনযুক্ত, বাধা নিয়মে চিকিৎসা কারীরা তাহাকে “বেলেডোনা” দেন, উহাতে উপকার হইলে আরও বেলেডোনা’ দেন এবং ঔষধের মাত্রা বাড়াইতে থাকেন, ফলে শিশুটির মধ্য দিয়াই ‘বেলেডোনার একটি পরীক্ষা হইয়া যায়। তিনি উহাকে ‘বেলেডোনা’র রোগী বানাইয়া ছাড়েন। কিন্তু কফিয়া দিলে উহার সহজ আরোগ্য হইত। যে-সকল ক্ষেত্রে বেলেডোনা’ প্রযুক্ত হয়, তাহার অধিকাংশেই শিশুর মন্থর ও মূঢ়ের মত ভাব থাকে এবং ঘুমাইতে চায়। কফিয়া থাকে উত্তেজনা। যে-সকল কথা মাতা শুনিতে পান না, শিশু তাহা শুনিতে পায়, সে অনেক কিছু দেখে, অনেক কিছু কল্পনা করে। ভয় পাইয়া জাগিয়া উঠে । ঘরের মধ্যে এটা-সেটা ও অন্যান্য জিনিষ দেখিতে থাকে। স্বপ্ন দেখার ন্যায় উত্তেজিত হইয়া জাগিয়া উঠে। অনেক কিছু খোজে এবং অবশেষে দেখে যে, সেগুলি সেখানে নাই। এইগুলি কফিয়ার প্রবল লক্ষণ।
এই এক সময়ে মাথা এত উত্তপ্ত হয়, মুখমন্ডল এত আরক্তিম হয়, চক্ষু এত উজ্জ্বল হয়। যে, সন্ন্যাসরোগের ভয় হইতে থাকে। রোগীরা প্রায়ই বলে যে, তাহার মাথার মধ্যে একপ্রকার শব্দ, মাথার পশ্চাদ্ভাগে ঘন্টাবাদন ও গর্জন ধ্বনি শুনিতে পাইতেছে। কর্ণ আমাদের শব্দ সম্বন্ধীয়। উপলব্ধির যন্ত্র। কিন্তু ইহা একটি অদ্ভুত ব্যাপার যে, উহা সময়ে সময়ে রোগীকে প্রতারিত করে। কর্ণের মধ্যে গর্জন শব্দ, বোধহয় যেন মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে হইতেছে। সময়ে সময়ে উহার সহিত মস্তকে ঝিনঝিনি অথবা বুদ্বুদ উঠার ন্যায় অনুভূতি থাকে। রোগী যখন বলে “আমার মাথায় একপ্রকার গর্জনবৎ শব্দ হইতেছে” তোমরা বুঝিবে যে, উহার অর্থ শব্দটি কর্ণে আছে, অনেক সময়ে কর্ণে গর্জনধ্বনি, ভনভন শব্দের সহিত মস্তকে একপ্রকার পরিস্পন্দনের অনুভূতি থাকে এবং রোগী উহাকেই শব্দ বলিয়া ভুল করে। আমি একথার উল্লেখ করিলাম, কারণ, কফিয়ার রোগী মাথার পশ্চাদ্দিকে একপ্রকার খড়খড় শব্দ বা বুদ্বুদ উঠার শব্দ অনুভব করে। মাথা খুব খারাপ বোধ হয়, উহা খুব ছোট বোধ হয়। শিরঃপীড়া, যেন মস্তিষ্কের উপর কোন ভারি জিনিষের জোর চাপ পড়িতেছে। তোমাদের স্বভাবতঃই মনে হইবে যে, এই চাপবোধের কারণ পূর্বে যেরূপ বর্ণনা করা হইয়াছে তদ্রুপ রক্তসঞ্চয়। “শিরঃপীড়া, যেন সমুদয় মস্তিষ্কটি ছিড়িয়া ও থেঁৎলাইয়া অথবা খন্ডখন্ড হইয়া ভাঙ্গিয়া যাইতেছে। সঞ্চালন, শব্দ ও আলোকে বৃদ্ধি।” চক্ষু ও মস্তক লক্ষণগুলি শব্দে ও আলোকে খারাপ হয়। “শিরঃপীড়া অসহ্য, মাথা ছোট মনে হয় এবং তরল পদার্থে পূর্ণ মনে হয়। স্নায়বিক হিষ্টিরিয়া জনিত শিরঃপীড়া। একপার্শ্বিক শিরঃপীড়া।” আর একটি মস্তক-লক্ষণ আছে, উহা সম্পূর্ণ সাধারণ। মনে হয়, যেন একটি পেরেক মাথার মধ্যে পোতা হইতেছে। কফিয়ার শিরঃপীড়া, হটিলে, সঞ্চালনে, কেবলমাত্র মেঝের উপর দিয়া হাঁটিলেও খারাপ হয়; সে বলে যেন মাথার উপর দিয়া একটি বায়ুপ্রবাহ বহিতেছে। এবং শরীরের যে-কোন অংশের যন্ত্রণা সম্বন্ধেও একথা খাটিবে। যদি কোন কফিয়া রোগীর হাতে যন্ত্রণা হইতে থাকে, বায়ুর মধ্যে হাত দোলাইলে উহা বৰ্দ্ধিত হইবে। উহা সঞ্চালন ও বায়ু—দুইয়েতেই বৃদ্ধিযুক্ত হয়। সে বাতাসে এবং বিশেষভাবে যন্ত্রণাযুক্ত অঙ্গে ঠান্ডা বাতাস লাগিলে কত খারাপ বোধ করে, তাহা বুঝাইবার জন্য এই উদাহরণটি দিলাম যখন সে বায়ুর বিপরীত দিকে এমনকি স্থির বায়ুর বিপরীত দিকে চলিতে থাকে, তখনও ঐরূপ অনুভব করে। কিন্তু ঠান্ডায় দন্তবেদনার উপশম একটি ব্যতিক্রম, একটি বিশেষ লক্ষণ।
পুরাতন কফিপায়ীদের মুখের স্নায়ুশূল একটি সাধারণ ব্যাপার। অনুভূতিপ্রবণ ব্যক্তিরা কফি খায় এবং শেষে উহাতে অভ্যস্ত হইয়া পড়ে। তাহারা বলে যে, উহা না হইলে তাহাদের চলে না। এরূপ লোকের কফি পান বন্ধ করা উচিত। কফি যখন পঙ্গুর যষ্ঠির মত হইয়া উঠে, তখন উহা একটি নিশ্চিত লক্ষণ যে, তাহার কফি পান ত্যাগ করা উচিত। চা এবং অন্যান্য উত্তেজক দ্রব্যের পক্ষেও ঐ একই কথা। কখন কখন এইরূপ লোকেরা কফিতে অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে এবং আরও বেশী করিয়া কফি খাইতে থাকে। তাহাদের মুখ লাল হইয়া উঠে, শিরঃপীড়া ও কফিয়ার অন্যান্য লক্ষণ উপস্থিত হয়। কফি ত্যাগ করিলে, উহার পরীক্ষার অনুরূপ লক্ষণসমূহ প্রকাশ পাইতে থাকে এবং প্রতিবিষ পাইবার জন্য তোমাদিগকে ‘ক্যামোমিলা’ ও নাক্স’ পাঠ করিতে হয়। ইহাদের সবগুলিতেই তোমরা বিপরীত ক্রিয়া পাইবে ‘ওপিয়াম’কে একটি উদাহরণ বলিয়া গ্রহণ করা হউক। ওপিয়ামের প্রাথমিক ক্রিয়া কোষ্ঠবদ্ধতা সৃষ্টি করা। মনে কর উহার কয়েকটি মাত্রা দেওয়া হইল, তখন ‘ওপিয়ামের প্রাথমিক ক্রিয়া চলিয়া গিয়া উদরাময় সৃষ্টি করিবে। আফিমসেবীরা উহা খাওয়া বন্ধ করিতে পারে না, কারণ তাহা হইলেই উদরাময় দেখা দেয়। যদি তুমি কখনও ‘ওপিয়ামে’র রোগী পাও এবং তাহার উদরাময় উপস্থিত হয়, তাহা হইলে প্রায় সর্বদাই ‘পালস’ উহা দমন করিবে। কিন্তু কতকগুলি লোক আছে যাহাদের বিপরীত ক্রিয়া হয়। সময়ে সময়ে সামান্য এই ক্ষুদ্র মাত্রা ‘ওপিয়ামেই তাহাদের আমাশয় দেখা দিবে এবং যদি ‘ওপিয়ামের মাত্রা বাড়াইয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলে রক্ত আমাশয় এবং অন্ত্রাদির প্রদাহ দেখা দিবে। অবশ্য, উল্লিখিত দুই অবস্থার একটি ক্রিয়া এবং অপরটি প্রতিক্রিয়া।
যে-স্ত্রীলোক পাকা কফিসেবী, তাহার খুব শীঘ্র শীঘ্র ঋতু হইবে এবং উহা দীর্ঘকাল থাকিয়া যাইবে। জরায়ুর রক্তস্রাব অসাধারণ নহে। কফিয়ার আর একটি লক্ষণ এই যে, স্ত্রীলোক ঋতুকালে ন্যাকড়া গ্রহণ করিতে পারে না (প্ল্যাটিনাম’)। স্ত্রী-অঙ্গ অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে। যোনিদ্বার উত্তপ্ত ও স্পর্শকাতর থাকে, সঙ্গমক্রিয়ায় বাধা দেয়। পাঠ্যপুস্তকে লেখে ‘স্ত্রীলোকের সৰ্বাঙ্গীণ উত্তেজনার সহিত জননেন্দ্রিয়ে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা। তিনি পরমানন্দ অবস্থায় থাকেন। স্ত্রী-যন্ত্রের অত্যনুভূতির সহিত জরায়ুর রক্তস্রাব এবং কামোদ্দীপক চুলকানি। অতিরজঃ বড় বড়, কাল কাল রক্তচাপ।” সময়ে সময়ে বড় বড় উজ্জ্বল লাল চাপ রক্ত। “প্রত্যেক প্রকার সঞ্চালনেই বৃদ্ধি, তৎসহ কুঁচকিস্থানে ভীষণ যন্ত্রণা ও মৃত্যুভয়।” সুখদায়ক চুলকানির সহিত যোনিকপাটের চারিদিকে অত্যন্ত স্পর্শদ্বেষ কফিয়ার একটি প্রবল লক্ষণ এবং তোমরা প্রায়ই কফিসেবীদিগের মধ্যে এই লক্ষণ দেখিতে পাইবে।
প্রসব বেদনার সময়ে ও পরে আমরা এই অত্যুত্তেজনা ও স্নায়বিক লক্ষণের বিকাশ দেখিতে পাই। স্নায়ুমন্ডল উত্তেজিত থাকে এবং যেরূপ মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করা হইয়াছে, ভ্যাদাল-ব্যথার সহিত তাহা উপস্থিত হয়; সে বেদনায় অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে, চীৎকার করে, কল্পিত বস্তুসকল দেখে এবং নানাপ্রকার শব্দ শুনিতে পায়। বেদনা নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায় শব্দে বৃদ্ধি পায়। সে চায় যে, বাড়ীর সকলেই চুপ করিয়া থাকুক।
শিশুদের আক্ষেপ। “প্রসবান্তিক আক্ষেপ, অত্যন্ত উত্তেজনা প্রবণতা।”“হৃৎস্পন্দন, অনিয়মিত নাড়ী।” “আশাতীত সৌভাগ্যের সুসংবাদে উৎপন্ন অত্যন্ত স্নায়বিকতা, নিদ্রাহীনতা ও মস্তিষ্কের উত্তেজনার সহিত প্রবল হৃৎস্পন্দন।” মনে কর, কোন স্ত্রীলোকের আঁতুড়ে যাইবার সময় হইয়াছে, এরূপ সময়ে তিনি একটি অসাধারণ সুসংবাদ পাইলেন এবং আনন্দিত হইয়া উঠিলেন, তাহা হইলে পূর্বোক্ত লক্ষণগুলি তাহার আঁতুড় অবস্থায় আগাগোড়া থাকিয়া যাইবে। শিশু অবস্থার আগাগোড়া থাকিয়া যাইবে। শিশু আক্রান্ত হইবে, দুধ আক্রান্ত হইবে। দুধ গড়াইয়া পড়িতে থাকিবে। সম্ভবতঃ রক্তস্রাব দেখা ভয় বর্তমান থাকিবে।
অপর নাম-র-কফি (Unroasted Coffee-Bean) কাওয়া।
রুবিয়েসী ফ্যামিলির কফিয়া এরোবিকা নামক গাছের অপরিপকক ফল থেকে ঔষধার্থে মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়। কফির বীর্যকে ক্যাফিন বলে। ইহা সৰ্ব্বপ্রকারের চায়ের বীর্য থেইনের সমতুল্য।
কফিয়ার মূলকথা
১। ইন্দ্রিয় সমূহের অতিশয় প্রখরতা, ছোটছোট অক্ষরও অনায়াসে পড়তে পারে, ঘ্রান, স্বাদ ও স্পর্শের তীক্ষ্মতা, দেহও মনের অতিশয় তৎপরতা, ভাবপূর্ণতা বা নানা রকম কল্পনায় পরিপূর্ণ, কাজ করতে অতিশয় তৎপর ফলে তার ঘুম হয় না।
২। অত্যন্ত ভাবপ্রবণতা,আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা, বিশেষ করে আনন্দদায়ক অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে পীড়া।
৩। অসহ্য বেদনা, বেদনায় রোগী হতাশ হয়ে পড়ে বা মরিয়া হয়ে উঠে, রেগে যায়, কাদে, যন্ত্রণায় ছটফট করে, নিরতিশয় নিদ্রাহীনতা।
৪। অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমে, চিন্তায় বা কথা বলায় শিরঃপীড়া, মাথায় এক পাশের বেদনা, মনে হয় যেন পেরেক ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে, (ইগ্নেসিয়া, নাক্স) বা মাথা যেন ছিড়ে যাবে বা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। খোলা বাতাসে বেদনার বৃদ্ধি।
৫। চিড়িক মাড়ার মত দাঁতের বেদনা, মুখে বরফের মত ঠান্ডা জল রাখলে এই বেদনার উপশম হয়। মুখে রাখতে রাখতে জল গরম হয়ে উঠলেই আবার এই বেদনা উপস্থিত হয়।
কফিয়া ক্রুড়া একটি আলোচনা
১। ক্যামোমিলার মত কফিয়া ক্রুডাও স্নায়ুমণ্ডলের উপর প্রবল ক্রিয়া প্রকাশ করে। স্নায়বিক উপদ্রবে যেখানে রোগী কফি পানে অভ্যস্থ নয় সেখানে কফিয়াই শ্রেষ্ঠ ঔষধ, আর যদি রোগী কফি পানে অভ্যস্থ হন তাহলে সেক্ষেত্রে ক্যামোমিলাই হবে প্রকৃত ঔষধ। প্যারিসের ডা. টেস্টি, বলেন যে কফি সেবনই ফ্রান্সের অধিকাংশ স্নায়ুশূল রোগের (নিউরালজিয়ার) কারণ। কফিয়া নির্দেশিত রোগী প্রখর অনুভবশক্তি থাকে।
হেরিং তার ক্যারেকটারেস্টিক কার্ডস-এ যে পরিচালক স্নায়বিক লক্ষণগুলির কথা বলেছেন সেগুলি হল:
সকল ইন্দ্রিয়েরই অতিশয় প্রখরতা, দৃষ্টি, ঘ্রান, স্বাদ, স্পর্শের তাক্ষ্মতা, ছোট ছোট অক্ষর অনায়াসের পড়তে পারে, অতি সামান্য নড়াচড়াও খুব বেশী বলে বোধ হয় বিশেষ করে নৌকাদি যানের। শরীর ও মনের অসাধারণ তৎপরতা। নানারকম কল্পনায় পরিপূর্ণতা, অতি কর্মতৎপরতা ফলে তার ঘুম হয় না।
আনন্দজনক কল্পনা, ভবিষ্যত সম্বন্ধে নানা প্ল্যান বা মতলব আঁটে।
মন্তব্য–
এইসব লক্ষণ দেখে ক্যামোমিলার কথা মনে পড়ে বটে, কিন্তু এদের মধ্যে ক্যামিলার কোন মানসিক লক্ষণ নেই। আবার একোনাইটের বিষয়ও মনে আসতে পারে, কিন্তু কফিয়াতে একোনাইটের মত মৃত্যু ভয় নেই। তবে বেদনা বিশিষ্ট প্রাদাহিক রোগে একোনাইটের জ্বর ও কফিয়ায় স্নায়বিক অনুভূতি একসঙ্গে বর্তমান থাকলে ডা. হেরিং এই দুটি ঔষধকে পৰ্য্যায়ক্রমে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে ডা. ন্যাশ বলেন যে পৰ্য্যায়ক্রমে এই দুটি ঔষধ যেমন উত্তমভাবে উপযোগী, অন্য কোন দুটি ঔষধের সেরকম উপযোগীতা দেখা যায় না, তাছাড়া তিনি পৰ্যায়ক্রমে ঔষধও ব্যবহারে করেন না, বিশেষ করে যেই থেকে তিনি বোগীর ও ঔষধের বিশেষত্বের ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য নিরূপণ করতে শিখেছে সেই থেকে তিনি কেবল এক একটি সময়ে একটি ঔষধই ব্যবহার করে থাকেন।
কফিয়া বিশেষভাবে উপযোগী হয় মানসিক সংঘাতে, যেমন—আকষ্মিক আবেগে, আনন্দে, চিত্তবিকারে, অত্যাধিক হাসি ও খেলা, বিফল প্রেম, গোলমাল। উগ্রগন্ধ প্রভৃতি কারনে মানসিক উত্তেজনায়। তাছড়া ইহা মনের পরিবর্তনশীল অবস্থাতেও উপযোগী, যেমন প্রথমে কান্না পরে হাসি তারপর আবার কান্নায় ইহা অব্যর্থ।
২। বেদনা।
বেদনার ঔষধ হিসেবে কফি, ক্যামোমিলাও একোনাইটের প্রতিযেগিতা দেখা যায়। অসহ্য বেদনাবশতঃ অতিশয় ছটফট করা—এই সকল লক্ষণের যারা কফি পায়ী তাদের ক্ষেত্রেকফিয়া ব্যবহৃত হয়না,ক্যামোমিলাই প্রযুক্ত হয়। প্রায়শঃই এই না মাথার একপাশে উৎপন্ন হতে দেখা যায় এবং বোধ হয় যেন একটি পেরেক ঢোকান হচ্ছে।
ইগ্নেসিয়াতেও এরূপমাথা যন্ত্রণা আছে, কিন্তু সাধারণতঃ হিস্টিরিয়া রোগেই এইরকম মাথা যন্ত্রণা হতে দেখা যায়।
তখন ইগ্নেসিয়া ও কফিয়ার তুলনা করেই ঔষধটিকে ব্যবহার করতে হয়।
* সাধারণত মুখমণ্ডলে বেদনা কারণ মানেই খারাপ দাঁত।
এক্ষেত্রে কফিয়াকে ব্যবহার করা যায়। তবে এর বেদনার বিশেষ লক্ষণ হল যতক্ষণ মুখে ঠান্ডা জল রাখা যায় ততক্ষণ বেদনা থাকে না। তবে মনে রাখতে হবে ক্যামোমিলার দাঁতের বেদনা মুখেঠান্ডা কিছু নিলে কমে না আবার গরম রাখলেও কষ্ট বাড়ে।
** আবার অতিশয় যন্ত্রনাদায়ক পেটের বেদনা বিশেষ করে রজঃগুল বেদনায় (ডিসমেনোরিয়া) যদি বড় বড় কাল রক্তের চাপ থাকে এবং কফিয়াতে তার উপশম হয় তাহলে ক্যামোমিলা প্রযোজ্য। গর্ভপাতে আশঙ্কাজনক বেদনা বা প্রসবান্তিক বেদনা অথবা অত্যন্ত অসহনীয় প্রসব বেদনাও এই ঔষধে প্রায়ই প্রশমিত হয়।
সংক্ষেপে – বেদনা যেখানেই হোক না কেন উহা অসহ্য হলে এবং কোন বিশেষ পরিচারক লক্ষণ না থাকলে কফিয়ার কথা স্মরন করতে হবে।
৩। অতিরিক্ত উত্তেজনার সৃষ্টি করা কফিয়ায় একটি বিশেষ ধৰ্ম্ম, আরতা থেকেই এতে অতিশয় নিদ্রাহীনতা জন্মায়। আর এই জন্যই কফিয়া ঘুমের ঔষধ বলে খ্যাতি লাভ করেছে। আমার (ডা. ন্যাশ) অভিজ্ঞতায় ও পর্যবেক্ষণে উহা এক্ষেত্রে ২০০ শক্তিতে অত্যুতকৃষ্ট। সুতরাং সমঃ সমং সময়তি নীতির সত্যতা প্রমাণের জন্য এ অপেক্ষা আর কোন সুন্দর উদাহরণ নেই। কারণ যারা অত্যাধিক কফি পান করে তাদের অতিশয় নিদ্রাহীনতা জন্মায়।
* হামের পরে সাধারণতঃ যে কাশি ও নিদ্রাহীনতা জন্মে তাতে এর দ্বারা আশ্চৰ্য্য ফলদর্শে। তাছাড়াও ওপিয়াম বা আফিমের ঔষধের মত মাদকতা বা সুপ্তি উৎপন্ন করে রোগীর ক্ষতি করে না বা বমি ভাব জমায় না,কফিয়ায় প্রকৃত পক্ষে সুনিদ্রা জন্মায়।