কোষ্ঠবদ্ধতা, মলদ্বারের ভিতরে যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঠি পোরা আছে এরূপ মনে হয়। |
যখন অর্শের রক্তস্রাব হয় তখন হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা থাকে না, আবার যখন রক্তস্রাব বন্ধ থাকে তখন হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা বাড়ে। |
অর্শ, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বেদনা যুক্ত ঋতুস্রাবের কারণে পেলভিক অর্গানে রক্তাধিক্য। |
(পেলভিক) বস্তিদেশে ও যকৃৎ-এ রক্তবাহী শিরাতে রক্ত জমে গিয়ে রজঃকষ্ট ও অর্শরোগ হলে প্রযোজ্য ।
বস্তিদেশের যন্ত্র সমূহে (জরায়ু, ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ন টিউব, মূত্রনালী) রক্তজমা হয়ে অর্শরোগ বিশেষতঃ গর্ভাবস্থার শেষ মাসে দেখা দিলে এ ওষুধ প্রযোজ্য ।
হৃদরোগ হয়ে শোথ হলে উপযোগী।
বুক ধড়ফড় করা—বিশেষতঃ যারা অর্শ ও অজীর্ণরোগে ভোগে, হৃৎপিন্ডের গতি দ্রুত কিন্তু দুর্বল ।
* হৃৎরোগ কমলে পুরান অর্শরোগ ফিরে আসে বা ঋতু বন্ধ হয়। পুরান, যন্ত্রণাদায়ক রক্তস্রাবী অর্শরোগ মনে হয় রেক্টামে কাঠি বা বালি বা কাকর ঢোকানো আছে (ইস্কুলাস) অর্শরোগ সাথে আমাশয় ও কোঁথানি থাকে। একবার কোষ্ঠবদ্ধতা আরেকবার উদরাময়, রক্ত জমা হয়ে ডিসেন্ডিং কোলন বা রেকটামের কার্যক্ষমতা (পেরিষ্টালটিক মোশন) লোপ পায়—মল বার হতে চায় না, শক্ত মল কষ্টে বার হয় ঐসাথে রেকটামে যন্ত্রণা ও পেটে প্রচুর বায়ু জমে ।
গর্ভাবস্থায় অর্শরোগ ও সেখানে চুলকায় শুতে পারে না।
সম্বন্ধ – হৃদরোগে যেখানে অর্শরোগও থাকে সেক্ষেত্রে ক্যাকটাস, ডিজিটা ও অন্য ওষুধ বিফল হলে এ ওষুধ চিন্তা করা উচিৎ। শূলব্যথায় কলোসি, নাক্স বিফল হলে এ ওষুধ সারিয়েছে।
তুলনীয় – ইস্কুলাস, এলোজ, ক্যামো, নাক্স-ভ, সালফ।
বৃদ্ধি – সামান্য মানসিক আবেগ ও উত্তেজনায় বেড়ে যায় (আর্জ-নাই)।
শক্তি — (ɵ), ৩x, ৩, ২০০।
অস্তিকোটর ও যকৃত শিরার রক্তাধিক্য, যার ফলে অর্শ ও কোষ্ঠকাঠিণ্য দেখা দেয়, বিশেষ করে স্ত্রীলোকদের। ধমনীর টানভাব কমে যায়, পেশীতন্তুর দুর্বলতা। নাক, পাকস্থলী ও গলবিলের পুরাতন প্রদাহ, কারণ যকৃৎ শিরায় রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টির থেকে এই অবস্থার উদ্ভব হয়। হৃদরোগ থেকে শোথ। গর্ভাবস্থায় চুলকানি, তৎসহ-অর্শ। অন্ত্রের পেশীয় ক্রিয়াহীনতার কারণে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিণ্য। সরলান্ত্রের রোগে অস্ত্রোপচারের আগে এই ঔষধ ব্যবহার করা হলে ভাল ফল পাওয়া যায়, এরূপ বলা হয়ে থাকে। ভারী ও সঙ্কোচনের অনুভূতি। শিরাস্ফীতি।
মাথা — কপালাস্থি স্থানে মৃদু বেদনা। অর্শ চাপা পড়ার কুফল থাকে। পুরাতন সর্দি, হলুদ লেপাবৃত জিহ্বা। মুখের আস্বাদ তিতো কলচিকাম, ব্রায়োনিয়া।
সরলান্ত্র — সরলান্ত্রে তীক্ষ্ণকাঠি রয়েছে, এই জাতীয় অনুভূতি। সঙ্কোচনের অনুভূতি। সরলান্তের রক্তবহানলীর স্ফীতি। মলশুষ্ক। অত্যন্ত কঠিন প্রকারের কোষ্ঠকাঠিণ্য, ঠেলে বাইরে আসার ন্যায় বাগিযুক্ত অর্শ। গুহ্যদ্বারেও তলপেটে কণি। গর্ভাবস্থায় কোষ্টকাঠিণ্য, প্রস্রাবের পরে, বাধক বেদনা তৎসহ জরায়ু ঝিল্লী থেকে স্রাবের সঙ্গে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর ফালিসমূহ নির্গত হয়। (নাক্স)। যন্ত্রনাদায়ক ও রক্তস্রাবযুক্ত অর্শ। আমাশয়, তৎসহ কোঁথ, পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠকাঠিণ্য ও উদরাময় এবং পেটে প্রচুর বায়ু জমা হয়। গুহ্যদ্বারে চুলকানি (টিউক্রিয়াম, রাটানহিয়া)।
স্ত্রীরোগ — বাধক বেদনা; যোনিকপাটের চুলকানি; জরায়ুর স্থানচ্যুতি; যৌনাঙ্গ স্ফীত ও কালচে লালবর্ণ যুক্ত বসে থাকলে বেদনা। বাধক বেদনার সঙ্গে স্রাবের মধ্যে জরায়ু ঝিল্লীর ফালি-ফালি টুকরো থাকে। তৎসহ কোষ্ঠকাঠিণ্য। চুলকানি। মাসিক ঋতুস্রাবের পরে ঊরুস্থানে ঠাণ্ডা অনুভূতি। ভগৌষ্ট ও ভাগাঙ্কুরে স্ফীতির অনুভূতি।
শ্বাস-প্রশ্বাস – অতিরিক্ত কথা বলার জন্যে কাশি; অতিরিক্ত বক্তৃতা দেবার জন্য মন্ত্রীদের গলায় টাটানি ব্যথা। কণ্ঠনলীতে তীক্ষ বেদনা। স্বরভঙ্গ। কষ্টদায়ক, শুষ্ক কাশি।
হৃদপিন্ড – হৃদকম্প, হৃদস্পন্দন দ্রুত কিন্তু দুর্বল। শোথ। হৃদপিন্ডের লক্ষণ সমূহের উপশমের পরে, অর্শ বা ঋতুস্রাব ফিরে আসে। পর্যায় ক্রমে বুক ব্যথা তৎসহ অর্শ। শ্বাসরোধ, মূর্চ্ছা ও শ্বাসকষ্ট। (একোনাইট ফেরস্ক)।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – সামান্য মানসিক আবেগ অথবা উত্তেজনা, ঠাণ্ডায়।
উপশম — গরমে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন নাক্স তুলনীয় ইস্কিউলাস; এলো; হ্যামামেনিস; লাইকোপাস; নিগান্ডাে; সালফার;নাক্স।
শক্তি—অরিষ্ট থেকে ৩য় শক্তি। যেখানে হৃদপিন্ডের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকে, সেক্ষেত্রে উচ্চতর শক্তি প্রযোজ্য।
অপর নাম – স্টোন রূট (stone Root)
হর্স উইড (Horse Weed)
ইহা ল্যাবিয়েটী জাতীয় উদ্ভিদ। এর সরস মূল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
যদিও কলিনসোনিয়া সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষিত হয়নি, তবুও ইহা আমাদের কাছে একটি মূল্যবান ঔষধ। একে আমরা সাধারণত রোগী দেহে, যা পরীক্ষিত অভিজ্ঞতা, তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা করি। ইহা অর্শে ও সরলান্ত্রের রোগের একটি মূল্যবান ঔষধ। এক্ষেত্রে এটি ইস্কিউলাস হিপোক্যাষ্টেন্যামের সঙ্গে তুলনীয়।
* উভয় ঔষধের মলদ্বারে যেন ছোট ছোট কাঠিতে পূর্ণ এরূপ অনুভূতি আছে।
পার্থক্য –
তাই এই একটিমাত্র লক্ষণ থেকে আমরা বুঝতে পারি না কোন ঔষধটির ব্যবস্থা করব। কিন্তু এদের প্রধান প্রধান পার্থক্যগুলি হল –
ক) ইস্কিউলাসের সরলান্ত্রে সুস্পষ্ট পূর্ণতা বোধ থাকে, কিন্তু কলিনসোনিয়াতে তা নেই।
খ) ইস্কিউলাসে সাধারণতঃ অর্শ থেকে রক্ত পড়ে না। কলিনসোনিয়ায় বরাবরই রক্ত পড়ে।
গ) ইস্কিউলাসে পিঠে অত্যন্ত কামড়ানি ব্যথা, টাটানি ও ক্ষততা বোধ থাকে। কলিনসোনিয়ায় এ পর্যন্ত এরূপ কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় নি।
ঘ) ইস্কিউলাসে কখন কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে, কখনও থাকে না; কলিনসোনিয়ায় অত্যন্ত কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে এবং সেজন্য উদরশূল বেদনা হতে দেখা যায়।
মন্তব্য —
সুতরাং তুলনা করে দেখা গেল যে, দুটি ঔষধের মধ্য একটি নিৰ্বাচন করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
রোগী বিবরণী – ১
আমি একজন মহিলার কয়েক বছরের পুরাতন অত্যন্ত তীব্র শূলে বেদনা এই ঔষধে আরোগ্য করেছিলাম। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় রোগিণীর কোন উপকার হয়নি। এক্ষেত্রে দুর্দম্য কোষ্ঠবদ্ধতা; অতিশয় উদর বায়ু (flatulence) এবং অর্শ বর্তমান ছিল।
রোগী বিবরণী – ২
আমি আরো একটি অত্যন্ত দুরারোগ্য কোষ্ঠবদ্ধতার রোগীকেও আরোগ্য করেছি। তার গত দুবছর ধরে পনের দিন অন্তর পায়খানা হত; তাও আবার খুব শক্তিশালী বিরোচক খাওয়ার পর তবে হত। এইরূপ পায়খানার পর তিনি প্রায়ই আবার দু-তিন দিন বিছনায় শুয়ে থাকতেন।
কলিনসোনিয়া একমাসের মধ্যে তাকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে, তার পায়খানা প্রতিদিন স্বাভাবিক হয় ও পরে বহুবছরের মধ্যে (যতদিন জানি) আর ঐ উপদ্রব ঘুরে আসেনি।