কলোসিন্থিস COLOCYNTHIS [Coloc]

ভয়ানক শূল বেদনা, খামচান, কেটে ফেলার মত বেদনা, বেদনায় রোগী দ্বিভাঁজ হয়ে যায়, যন্ত্রণায় রোগীর মুখ পাংশু হয়ে যায়।
শরীরের বাহিরে ও ভিতরে আকুঞ্চন ও সঙ্কোচন অনুভূতি।
উরুদেশে বেদনা, হাঁটার সময় মনে হয় নিতম্বের পেশী ছোট হয়ে গেছে।
ব্যথার প্রথম অবস্থায় চাপ দিলে উপশম, কিন্তু ব্যথা অনেক দিন থাকার পর সামান্য চাপ দিলে অসহ্য লাগে।

তলপেটে যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট পায়, যন্ত্রণায় শরীর ভাঁজ করে ফেলে সাথে অস্থিরতা, মোচড়ানি, উপশমের জন্য বিছনায় এপাশ ওপাশ করতে থাকে। ঐ ব্যথা জোরে চাপলে কমে (গরম সেঁক দিলে কমে—ম্যাগ-ফ) আহার ও পান করলে ব্যথা বেড়ে যায় রোগী সামনে কুঁকড়ে যেতে বাধ্য হয় (ম্যাগ-ফ), কুঁকড়ে ভাঁজ হলে বাড়ে—ডায়স্কোরিয়া মানসিক দুঃখে ঋতুস্রাব বন্ধ সাথে শূলব্যথা। মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে, অধৈৰ্য্য প্রশ্ন করলে রেগে যায় বা অপমানিত হয় ।

মেজাজ ক্রুদ্ধ, হাত থেকে জিনিষপত্র ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অপমান বোধ সহ রাগ হতে অসুখ-বিসুখ—শূলব্যথা, বমি, উদরাময় ও ঋতু বন্ধ হওয়া (ক্যামো, ষ্ট্যাফি)।

মাথাঘোরা তাড়াতাড়ি মাথা একদিক থেকে অন্যদিকে ঘুরালে।

বিশেষতঃ- বাঁদিকে, যেন পড়ে যাবে, উত্তেজক কিছু খেলে মাথাঘোরাতে থাকে। সায়টিকা—নিতম্বে খিচে ধরার মত ব্যথা যেন নিতম্ব সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরা আছে। আক্রান্ত দিক চেপে শোয়। বিদ্যুতের মত চিড়িকমার ব্যথা, ঐ ব্যথা সারা অঙ্গে, বা নিতম্ব, বা উরু বা হাঁটু, হাঁটুর পেছনে পেশী অবধি ছড়িয়ে পড়ে ।

সম্বন্ধ অত্যন্ত কোঁথানিযুক্ত আমাশয়ে মার্কারির অনুপূরক।

তুলনীয় ডান সায়াটিক নার্ভ দিয়ে, বর্শা বেঁধানো মত, কেটে ফেলা মত ব্যথা ডান নিতম্ব সন্ধি হতে পা অবধি যায় এই লক্ষণে ন্যাফেলিয়ামের তুল্য।

রাগ করা থেকে, অপমান চেপে রেখে, শোক দুঃখ চাপা রাখার কুফলে ডিম্বকোষ সংক্রান্ত বা অন্য অসুখে ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়ার সাথে তুলনীয়।

বৃদ্ধি ক্রোধে, অপমানে, অপরের দোষে বিরক্তিতে (ষ্ট্যাফিস, লাইকো), পনির খেলে শূলব্যথা বাড়ে ।

উপশম শরীর কুঁকড়ে দুভাজ করলে, জোরে চাপ দিলে ।

শক্তি ৬, ৩০, ২০০।

Sciatica = সায়েটিকা – সায়েটিকা নার্ভ-এর ব্যথা বা যন্ত্রণা। যন্ত্রণা অসহ্য, ব্যথা কোমর হতে শুরু হয় উরুর পেছন দিয়ে হাঁটুর নীচে পায়ের মাঝ দিয়ে পায়ের গোড়ালী অবধি নামে। হঠাৎ বা ধীরে ধীরে এক রকম তীব্র চিড়িক মারা ব্যথা প্রচন্ডভাবে বেড়ে যায় ব্যথা সমানভাবে হয় কখনও কোন বিশেষ অংশে বেশী অনুভব করা যায়। অসাড়ভাব ও চিনচিন করা ব্যথা থাকে। ছোঁয়া লাগান যায় না।

কারণ A) সায়াটিক নার্ভ বা ঐ গোড়াতে চাপ বা আঘাত লেগে হতে পারে, মেরুদন্ডের হাড়ের সন্ধি স্থান ক্ষয়ে গিয়ে ঐ নার্ভ-এর চাপ লেগে। (B) শরীর বিষাক্ত হয়ে, সংক্রামক রোগ হতে সায়াটিক নার্ভ-এর প্রদাহ হয়ে। (C) অন্য কোন অঙ্গের ব্যথা সায়াটিক নার্ভ অবধি ছড়িয়ে পড়লে হতে পারে।

সুচিকিৎসায় এ রোগ সারে ।

এই ঔষধটি প্রায়ই ঋতু পরিবর্তনকালে বেশি ব্যবহার হয়, যখন বাতাস ঠাণ্ডা থাকে কিন্তু সূর্য তখনও রক্তকে যথেষ্ট উত্তপ্ত করতে সক্ষম।

এই ঔষধের অধিকাংশ লক্ষণগুলিই উদর ও মাথাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয়ে থাকে, এই কারণে তীব্র, স্নায়ুশূল দেখা দেয়। ঔষধটি বিশেষভাবে উপযোগী খিটখিটে ব্যক্তি যারা সহজেই রেগে যায় এবং এর কুফল জনিত কারণে উপসর্গ সমূহে ভালো কাজ করে। যে সকল স্ত্রীলোকের প্রচুর ঋতুস্রাব হয় এরা যারা বসে বসে সময় কাটায়। যে সকল ব্যক্তিদের ভিতর মোটা হবার প্রবণতা দেখা যায়। স্নায়ুশূল-প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাপে কম পড়ে। পেশীর খিলধরা, পেশীর নর্তন ও পেশীগুলি খর্ব হয়ে যায়। সঙ্কোচন ও সেঁটেধরার মত অনুভূতি। কোন যন্ত্রের মুখের অস্ত্রোপচারের পরে, প্রস্রাবথলির আক্ষেপ। (হাইপেরিকাম)। ঘামে প্রস্রাবের গন্ধ (বাবোরিস, নাইট্রিক অ্যাসিড)। পেটের ভিতর মোচড় দেবার মত বেদনা। যার ফলে রোগী দ্বিভাঁজ অবস্থায় থাকতে বাধ্য হয়, এটি একটি চরিত্রগত লক্ষণ। অনুভূতিসমূহ, কেটে ফেলার মত,মোচড়ানোর মত, পিষে ফেলার মত, সঙ্কোচনের মত এবং থেঁৎলিয়ে যাওয়ার মত; যেন লোহার বন্ধনী দ্বারা চেপে ধরা হয়েছে।

মন অত্যন্ত খিটখিটে। কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার সময় রেগে যায়। খারাপ কাজের জন্য মতস্তাপ। রাগ, তৎসহ রাগ না হওয়া।

মাথা মাথা বামদিকে ফেরাবার সময় মাথাঘোরা। মাথার এক পাশে কেটে ফেলার মত বেদনা, তৎসহ বমিবমিভাব, বমি। যন্ত্রনা (উপশম চাপে ও গরমে), তৎসহ মাথায় চামড়ায় টাটানি জ্বালাকর যন্ত্রনা, গর্ত করার মত, ফেটে যাওয়ার মত ও ছিড়ে ফেলার মত। মাথার সামনের অংশে বা কপালাস্থি স্থানে বেদনা; বৃদ্ধি, সামনের দিকে ঝুঁকলে, চিৎ হয়ে শুলে এবং চোখের পাতা ঘোরালে।

চোখ যন্ত্র তীক্ষ্ণ, ছিদ্র করার মত, চাপে উপশম। সামনের দিকে ঝুকলে মনে হয়ে চোখ যেন ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসবে। চোখের বাতজ উপসর্গ সমূহ। চোখের তারায় তীব্র বেদনা, যা গ্লকোমা রোগের প্রথমাবস্থায় দেখা দেয়।

মুখমন্ডল ছিঁড়ে ফেলার ন্যায়, তীরবিদ্ধবৎ বেদনাও স্ফীতি; বাম দিকে প্রচন্ড টাটানি, চাপে আরাম পায়। (চায়না) স্নায়ুশূল, তৎসহ শীতভাব; দাঁতগুলি যেন আকারে বড়ো হয়ে যাচ্ছে এই জাতীয় অনুভূতি। শব্দ কানের ভিতরে প্রতিধ্বনিত হয়। পাকস্থলীতে বেদনা, দাঁতে ও মাথায় সর্বদা বেদনা।

পাকস্থলী অত্যন্ত তিতো আস্বাদ। জিয়া খসখসে, যেন বালি দিয়ে ঘষা হয়েছে এবং ঝলসে যাওয়ার মত অনুভূতি। কুকুরের ক্ষুধার মত ক্ষুধা। পাকস্থলীর ভিতর এরূপ অনুভূতি, যাতে মনে হয় কোন কিছু পথ আটকিয়ে রয়েছে; টেনে ধরার মত বেদনা।

উদর উদরে কেটে ফেলার মত বেদনা, বেদনার জন্য রোগী দ্বিভোজ অবস্থায় থাকতে বাধ্য হয় এবং পেটের উপর চাপ দেয়। মনে হয় যেন পেটের ভিতর পাথর ভাঙ্গা হচ্ছে এবং পেট যে কোন সময়ে ফেটে যেতে পারে। অন্ত্রে থেঁৎলিয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি। পায়ের ডিমে খিলধরা তৎসহ শূলবেদনা। পেটের ভিতর কেটে ফেলার মত বেদনা, বিশেষ করে রেগে যাওয়ার পরে। থেকে থেকে শূল বেদনা যখন দেখা দেয়, তখন সর্বাঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তলপেটের নিম্নাংশ থেকে শুরু হয়ে একটি ঠাণ্ডাভাব সারা গালে ছড়িয়ে পড়ে। নাভির নীচে সামান্য একটু অংশে বেদনা। আমাশয়ের মল, প্রতিবার সামান্য পরিমানে খাবার খেলে বা পানীয় পান করলে বেগ ফিরে আসে। জেলির মত মল। ছাতা পড়ার মত গন্ধ। স্ফীতি।

স্ত্রীরোগ ডিম্বাশয়ে ছিদ্র করার মত বেদনা। রোগী শরীরটি দ্বিভাঁজ করে ফেলতে বাধ্য হয়, তৎসহ প্রচন্ড অস্থিরতা। ডিম্বাশয়ে ছোট, গোলাকার অবুদসমূহ পেট কোনকিছু দিয়ে চেপে বেঁধে রাখার ইচ্ছা। যোনিপথের ভিতরে খিলধরা, যার ফলে রোগীনী দ্বিভাঁজ হয়ে থাকতে বাধ্য হয়।

* প্রস্রাব – মলত্যাগের সময় প্রস্রাব নলী বরাবর তীব্র জ্বালা, প্রস্রাব থলির প্রদাহ, তাজা ডিমের সাদা অংশে ক্ষত স্রাব। চটচটে। (ফসফোরিক অ্যাসিড)। দূর্গন্ধযুক্ত; অল্প অল্প প্রস্রাব, তৎসহ বারে বারে বেগ। মূত্রনলীর ছিদ্রের মুখে চুলকানি। লালচে, শক্তদানা সমূহ, যা প্রস্রাব করার পাত্রের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকিয়ে থাকে। প্রস্রাব থলির কোঁথ। প্রস্রাব করার সময় সারা পেটে বেদনা।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – পেশীর সঙ্কোচন। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে টানভাব। ডানদিকের ডেল্টয়েড পেশীতেবেদনা। (গুইয়েকাম)। নিতম্ব বা হিপ স্থানে খিল ধরার মত বেদনা; রোগাজনিত দিক রোগী চেপে শুয়ে থাকে; নিতম্ব স্থান থেকে হাঁটু পর্যন্ত যন্ত্রনা। হিপ-জয়েন্টের আপনা-আপনি স্থানচ্যুতি। বামদিকের সাইয়েটিকার বেদনা, টেনে ধরার ন্যায়, ছিঁড়ে ফেলার ন্যায়; উপশম, চাপে এবং গরমে; বৃদ্ধি সামান্য স্পর্শে পেশীরসঙ্কোচন। ডানদিকের উরুস্থান থেকে বেদনা নীচের দিকে যায়; পেশী ও কন্ডরাগুলি অত্যন্ত ছোট বলে মনে হয়; অসাড়তা তৎসহ বেদনা (ন্যাফেলিয়াম)। বাম দিকের হাঁটুতে বেদনা।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি — রাগে।

উপশম দ্বিভাঁজ হয়ে থাকলে, জোরে চাপদিলে, উষ্ণতায়, মাথা সামনের দিকে ঝাঁকিয়ে শুলে।

সম্বন্ধ দোষঘ্ন কফিয়া, ষ্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া, ক্যামোমিলা, কলোসিন্থ হলো সীসা বিষ নষ্ট করার সব থেকে ভালো ঔষধ।

তুলনীয় ‍লোবেলিয়া এরিনাস পেটে ভ্রু দিয়ে ছিদ্র করার মত তীব্র বেদনা।

ডাইপোডিয়াম পাঙটেটাম (অঙ্গের মোচড় দেওয়া।)

মৃত সাপের মত দেহ পাকিয়ে রাখে। অনিদ্রা। ডায়াস্কোরিয়া; ক্যামোমিলা; ককিউলাস; মাটিউরিয়াম; প্লাম্বাম; ম্যাগ ফস।

শক্তি ৬ষ্ঠ থেকে ৩০ শক্তি।

কলোসিন্থের প্রধান লক্ষণ তীব্র, ছিন্নকর, স্নায়ুশূলের যন্ত্রণা। যন্ত্রণা এতই গুরুতর যে, রোগী স্থির থাকিতে পারে না। সময়ে সময়ে সঞ্চালনে উহার উপশম হয়, অন্ততঃ মনে হয় যে, বিশ্রামকালে উহা বাড়িয়া উঠে,—চাপ দিলে উপশম এবং সময়ে সময়ে উত্তাপে উপশম হয়। বেদনা মুখমন্ডলে, উদরে, স্নায়ুপথে দেখা দেয়।

এই সকল বেদনা সময়ে সময়ে একটি অদ্ভুত কারণে উপস্থিত হয়—কারণটি বিরক্তির সহিত ক্রোধ। সুতরাং যে-সকল লোকের উদ্ধত স্বভাব, সহজেই অপমানিত বোধ করে এবং বিরক্ত হয়, তাহাদেরই কলোসিন্থের রোগ হয়। ক্রোধের পর মাথায়, চক্ষে, মেরুদন্ড দিয়া নীচের দিকে এবং অন্ত্রাদিতে তীব্র স্নায়ুশূল দেখা দেয়।

অত্যন্ত অস্থিরতা সত্ত্বেও যন্ত্রণার সহিত যথেষ্ট দুর্বলতা থাকে। গুরুতর উদরশূলের সহিত পুরাতন উদরাময়ের রোগী সময়ে সময়ে এত দুর্বল হইয়া পড়ে যে, সে অতিকষ্টে কথা বলিতে পারে। মূৰ্ছাভাব, এমনকি মূৰ্ছা এরূপ যন্ত্রণার আনুষঙ্গিক লক্ষণ হওয়া অসম্ভব নহে। স্নায়ুপথের উপর দিয়া চাপিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রান্ত অঙ্গে পিপড়া হাঁটার ন্যায় অনুভূতির সহিত অসাড়তা ও ঝিনঝিন করা বর্তমান থাকে।

অনেক ডাক্তারের নিকট কলোসিন্থ সায়েটিকা রোগে বাধা নিয়মে প্রয়োগের ঔষধ এবং যখন উহা বিফল হয়, কেবলমাত্র তখনই তাঁহারা রোগলক্ষণ সংগ্রহ করিয়া প্রযোজ্য ঔষধটি বাহির করিবার চেষ্টা করেন। এরূপ চিকিৎসার কোন কৈফিয়ৎ থাকিতে পারে না। যে-স্থলে রোগীর বেদনা জোরে চাপ দিলে এবং উত্তাপে উপশম হয়, যে স্থলে উহা বিশ্রামে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। এবং রোগীকে হতাশ করিয়া তুলে, সেই স্থলেই সাধারণতঃ কলোসিন্থ আরোগ্য করে। কিন্তু ইহা সকল রোগীতেই প্রযোজ্য নহে। কতকগুলি ঔষধ পেশী ও কন্ডরাগুলিকে বাছিয়া নয়, কতকগুলি অস্থি ও অস্থিবেষ্টকে বাছিয়া লয়, আবার অপর কতকগুলি ঔষধ বড় বড় স্নায়ুগুচ্ছগুলিকে বাছিয়া লয় এবং সেইখানেই তাহাদের লক্ষণসমূহ প্রকাশ করে। কলোসিন্থের যন্ত্রণা সব সময়েই বড় বড় স্নায়তেই প্রকাশিত হইয়া থাকে।

মানসিক লক্ষণগুলি খুব লক্ষণীয় নহে। যেমনই কলোসিন্থের পরীক্ষাকারীরা স্নায়ুপথের উপর যন্ত্রণা হইতে আরম্ভ হয়, অমনি সে উত্তেজিত হইয়া উঠে, সবকিছুতেই বিরক্ত হয়, এবং বিরক্তি হইতে আরও খারাপ হইয়া পড়ে।

বেদনায় চিৎকার করে। ঘরের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতে থাকে, আর বেদনা যতই চলিতে থাকে, ততই উল্কণ্ঠিত হইয়া পড়ে। কথা বলিতে চায় না, প্রশ্নের উত্তর দেয় না, বন্ধুদের সহিত দেখা করিতে চায় না।

বন্ধুদের নিকটে থাকিলে সে উত্তেজিত হইয়া পড়ে এবং একাকী থাকিতে চায়। ঐ ভীষণ যন্ত্রণা সহ্য করিবার জন্য সে যাহা কিছু করিতে পারে, তাহাই করে। যন্ত্রণার সহিত প্রায়ই বমন ও উদরাময় দেখা দেয়, বিশেষতঃ বেদনাটি যদি উদরে হয়। বেদনাটি আবেশে আবেশে উপস্থিত হয় এবং উহার উগ্রতা ক্রমেই বাড়িতে থাকে।

রোগী ক্রমেই অধিকতর বমনেচ্ছাবিশিষ্ট হয় এবং অবশেষে বমি করিতে থাকে; পাকস্থলী খালি হইয়া গেলেও সে ওয়াক তুলিতে থাকে।

যে-সকল লোক বহু বৎসর যাবৎ বিরক্তি ও জ্বালা-যন্ত্রণার মধ্যে বাস করিতেছে, কলোসিন্থ তাহাদের অনুরূপ স্নায়বিক সৃষ্টি করে। যে লোকের বিষয়কৰ্ম্ম খারাপের দিকে চলিতেছে, সে উত্তেজনাপ্রবণ হইয়া পড়ে এবং তারপর স্নায়বিক অবসন্নতা দেখা দেয়। যে-স্ত্রীলোক তাহার অবিশ্বাসী স্বামীকে অন্য স্ত্রীলোক হইতে তফাৎ রাখিবার জন্য, সৰ্ব্বদা তাহাকে চোখে চোখে রাখিতে বাধ্য হন, তিনি ক্রমেই মনের অনুভূতিবিশিষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হন এবং সামান্যমাত্র উত্তেজনাতেই বিচলিত হইয়া পড়েন। কলোসিন্থের পরীক্ষাকারীর অবস্থাও এইরূপ হয়।

যে-সকল স্বাস্থ্যবান, বলশালী ও তেজস্বী ব্যক্তি হঠাৎ পীড়িত হইয়া পড়েন, তাহাদের মধ্যে তোমরা কদাচিৎ এই ঔষধ প্রযোজ্য হইতে দেখিবে। যেরূপ ধাতুর কথা এইমাত্র বলা হইল এবং যাহারা অতিভোজনে অভ্যস্ত, তাহাদের মধ্যেই ইহার ব্যবহার সম্ভব।

আমরা ক্রোধ এবং অবসন্নতার ফলস্বরূপ মস্তক-ত্বকে ছিন্নকর যন্ত্রণা দেখিতে পাই, ঐ যন্ত্রণা চাপে ও উত্তাপে ভাল থাকে, এবং সঞ্চলন না হইলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

মস্তকে সর্বদা চিবানর ন্যায় যন্ত্রণা।

সমুদয় মস্তিষ্কের মধ্যে যন্ত্রণদায়ক, ছিন্নকর, খনন করার ন্যায় যাতনা, চক্ষুর পাতা নাড়াইলে উহা অসহ্য হইয়া উঠে।

সমুদয় মাথার মধ্যে তীব্র যাতনা, চক্ষু নাড়াইলে বাড়িয়া উঠে।

তীব্র, চাপনবৎ, ছিন্নকর শিরঃপীড়া, উহাতে রোগী চিৎকার করিয়া উঠে।

বাত, গেঁটেবাত অথবা স্নায়বিক ধাতু ব্যক্তিগণের সবিরাম শিরঃপীড়া।

যন্ত্রণা ছিন্নকর এবং স্কু দিয়া কষিয়া ধরার ন্যায়।

নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে এবং সবিরাম তীব্র শিরঃপীড়া।

পাঠ্যপুস্তক ব্যবহৃত বাক্যগুলির মধ্যে কতকগুলি এইরূপ। কিন্তু যে সে অবস্থায় বেদনাটি উপস্থিত হয় এবং যেরূপ অবস্থার মধ্যে রোগী বাস করিতেছেন, তাহার তুলনায় বেদনার প্রকৃতিটি তত বেশী মূল্যবান নহে। রোগীর জীবনযাত্রার কথা জানিতে পারিলে, মানুষটির সম্বন্ধেও অনেক কিছু জানা হয়।

চক্ষেও ঐ একইরূপ স্নায়ুশূল দেখিতে পাওয়া যায়।

বাতজনিত উপতারা-প্রদাহ, সন্ধ্যায় ও রাত্রে বৃদ্ধিযুক্ত হয়।

চক্ষে তীব্র জ্বালাকর, কাটিয়া ফেলার ন্যায়, সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা।

মস্তক ও মুখমন্ডলের অন্য অংশ অপেক্ষা চক্ষের যন্ত্রণার পক্ষে জ্বালা একটি বিশেষ চরিত্রগত লক্ষণ।

তীব্র, কাটিয়া ফেলার ন্যায়, ছুরিকাঘাতের ন্যায়, চাপনবৎ যন্ত্রণা।

মুখমন্ডলের যন্ত্রণা—বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়, কারণ এই স্থানের স্নায়ুশূলের জন্য সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধগুলির মধ্যে কলোসিন্থ অন্যতম। তিনটি ঔষধ আছে, যাহারা মুখমন্ডলের যন্ত্রণায় অন্যান্য ঔষধ অপেক্ষা বেশী সচরাচর ব্যবহৃত হয় উহারা ‘বেলেডোনা’, ম্যাগনেশিয়া ফস’ এবং কলোসিন্থ।

‘বেলেডোনা’র যন্ত্রণা যে কোন ঔষধের ন্যায় তীব্র, আর তাহার সহিত লাল মুখমন্ডল, প্রদীপ্ত চক্ষু। উত্তপ্ত মস্তক এবং আক্রান্ত অংশে অত্যন্ত স্পর্শকাতরা থাকে।

কলোসিন্থের যন্ত্রণা ঢেউয়ের মত আসে, উত্তাপে এবং চাপ দিলে উপশমিত হয়, “বিশ্রামকালে যেরূপই হউক বাড়ে, এবং রোগটি উত্তেজনা বা রিক্তির ফলে উপস্থিত হয়। বেদনা প্রায়ই বামপার্শ্বে থাকে, কিন্তু ‘বেলেডোনা’য় উহা ডানদিকে থাকে এবং রোগটি ঠান্ডা হইতে উপস্থিত হয়।

ম্যাগনেশিয়া ফসফরিকা’র বেদনা ছিন্নকর এবং উহা বিদ্যুতের মত স্নায়ুপথের উপর দিয়া সঞ্চরণ করে এবং উত্তাপে ও চাপে উপশমিত হয়।

কলোসিন্থের মুখভাব বেদনার তীব্রতার জন্য উৎকন্ঠাপূর্ণ থাকে। বেদনা যেখানেই হউক না কেন, বিকৃত হইয়া পড়ে। অবশেষে উহা বিবর্ণ হইয়া পড়ে এবং গন্ডদ্বয় নীল হইয়া যায়।

গালের হাড়ে অথবা আরও ঠিক করিয়া বলিলে যেখান হইতে সূক্ষ্ম রন্ধ্রপথে চক্ষুকোটরের অভ্যন্তরস্থ স্নায়ুগুলি নির্গত হইয়াছে, সেইখানেই স্নায়ুসমূহে ছিন্নকর বেদনা। সময়ে সময়ে এই যন্ত্রণা উত্তপ্ত তারের মত বোধ হয়, কখন কখন ঠান্ডা পেরেকের মত বোধ হয় আবার সময়ে সময়ে ছিন্নকরার মত, জ্বালাকর ও সূচীবিদ্ধবৎ মনে হয়। সচরাচর উহা মুখের উপর, বিশেষতঃ বামদিকে, স্নায়ুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখার উপর দিয়া ছড়াইয়া পড়ে। রোগী চিৎকার করিয়া উঠে এবং অত্যন্ত অস্থির হয়।

ছিন্নকর বা জ্বালাকর যন্ত্রণা কর্ণ ও মস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

সকল যন্ত্রণাই চাপে উপশমিত হয়, কিন্তু উহা কেবলমাত্র প্রথম দিকেই হয়। কয়েকদিন ধরিয়া, ক্রমশঃ বাড়িতে বাড়িতে, বেদনাটি চলিতে থাকিলে, আক্রান্ত অংশটি অত্যন্ত স্পর্শদ্বেষযুক্ত হইয়া পড়ে এবং চাপ সহ্য হয় না।

খাদ্যে অপ্রবৃত্তি।

প্রবল তৃষ্ণা।

অত্যুত্তপ্ত থাকা কালে জল পান করার ফলে, অপাচ্য দ্রব্য খাওয়ার ফলে, আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রার ফলে শুলব্যথা, গোল আলু খাওয়ার ফলে শূলব্যথা।

কলোসিন্থ রোগীর ‘এলুমিনা’র ন্যায় গোল আলু ও শ্বেতসারযুক্ত খাদ্য সহ্য হয় না।

অন্যান্য অধিকাংশ ঔষধের বমন হইতে কলোসিন্থের বমন পৃথক। প্রথমে বমনেচ্ছা থাকে না, কিন্তু যন্ত্রণা যখন বেশ বাড়িয়া উঠে, তখন বমনেচ্ছা ও বমন আরম্ভ হয়, পাকস্থলীর আধেয় নির্গত হইয়া যায় এবং যে পর্যন্ত না যন্ত্রণার তীব্রতা কমিয়া আসে, সেই পর্যন্ত রোগী ক্রমাগত ওয়াক তুলিতে থাকে।

পাকস্থলীর যন্ত্রণা, আঙ্গুল দিয়া চাপিয়া ধরার ন্যায়, খালধরার ন্যায়, খনন করার ন্যায়, যেন কেহ মুঠা করিয়া ধরিতেছে এইরূপ।

উদরের নিম্নদিকেও এই একই রকমের যন্ত্রণা হয়, কিন্তু তাহা জোরে চাপ দিলে, দ্বিভাজ হইলে—(উহাও একপ্রকার চাপ)—উপশমিত হয়, আবেশে আবেশে উপস্থিত হইয়া ক্রমেই বাড়িতে থাকে, অবশেষে রোগী বমি বমিভাবযুক্ত হয় এবং বমি করিতে থাকে। উহার সহিত রোগীর অত্যন্ত অস্থিরতা, মূৰ্ছাকল্পতা এবং পাকস্থলী গহ্বরের নিমগ্নতা বোধ বর্তমান থাকে। রোগী যদি বিছানা হইতে নামিতে না পারে, তাহা হইলে চেয়ারের পিঠের উপর, বা পাদানির উপর ঝুঁকিয়া থাকে।

“গাইডিং সিম্পটমস” পুস্তকে আমরা কয়েক পাতা ধরিয়া পুনরুক্তি দেখিতে পাই, উহা দ্বারা দেখান হইতেছে যে, পূর্বোক্ত লক্ষণগুলি বর্তমান থাকিলে ইহা উদরসংক্রান্ত রোগে কিরূপ বিস্তৃতভাবে প্রযোজ্য হইতে পারে। ঐগুলি পড়িয়া রাখা ভাল।

উদরের নিম্নাংশের যন্ত্রণা পা গুটাইলে এবং হাত মুষ্টিবদ্ধ করিয়া চাপিয়া ধরিলে উপশমিত হয়। কলোসিন্থ-জ্ঞাপক তীব্র ডিম্বকোষ সংক্রান্ত স্নায়ুশূলে, রোগিণী যন্ত্রণাযুক্ত পার্শ্বের পাটি উদরের উপর জোরে সঙ্কুচিত করিয়া রাখিবে এবং উহাকে ঐস্থানে রাখিয়া দিবে।

চিকিৎসক জিজ্ঞাসা করিবেন “কি হইয়াছে যে, তোমার এরূপ যন্ত্রণা হইতেছে?” সম্ভবতঃ তিনি উত্তর দিবেন, “আমার চাকরটির একখানি সুন্দর তোয়ালের উপর খানিকটা ময়লা জল ফেলিয়াছিল, এবং তাই লইয়া আমাদের মধ্যে একটু বচসা হইয়াছিল, আর তারই ফল এই।”

বিরক্তির সহিত ক্রোধ হইতে শূলব্যথা, দ্বিভাজ হইলে উপশম, সোজা হইয়া বসিলে, দাড়াইলে বা পিছন দিকে হেলিলে বৃদ্ধি।

শিশুদের উদরশূল উপুড় হইয়া শুইলে উপশম। যেই অবস্থানটি পরিবর্তিত করা হয়, অমনি শিশু আবার চিৎকার করিতে থাকে।

উদরাময় ও আমাশয়ের সহিত ঐ একই লক্ষণ থাকে। মল সাদা আমযুক্ত, ঘন, দড়ির ন্যায়, জেলির ন্যায়, সময়ে সময়ে রক্তাক্ত। প্রথমে উহা প্রচুর, তীব্রগন্ধ ও থকথকে থাকে, পরে জলবৎ, হরিদ্রাবর্ণ, স্বল্প ও প্রায় গন্ধহীন হয়।

বিরক্তির সহিত ক্রোধের ফলে উদরাময় ও আমাশয়। মলত্যাগকালে অত্যন্ত কোঁথানি, শুলব্যথার সহিত মলপ্রবৃত্তি।

সামান্য কিছু খাইলেও তাহার পর শূলব্যথা ও মলবেগ উপস্থিত হইবে। দিন, আহারের পর জলবৎ মল।

এই প্রকারের রোগীর অনেকেই উত্তাপ এবং বিছানার উত্তাপে উপশম পায়।

অপর নাম – বিটার কিউকাম্বার, (Bitter Cucumber)

বাংলায় – রাখাল শসা, ইন্দ্ৰবারুণী।

কিউকারবিটেসী জাতীয় সাইট্রলিস কলোসিন্থিস (Citroles colocynthis) নামক লতা আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। প্রাচীনকাল থেকেই এটি ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাধারণত এর বীজ ও বীজকে ঘিরে যে স্নেহবৎ পদার্থ থাকে, তা থেকেই হােমিওপ্যাথিতে এর মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়।

কলোসিন্থের – মূলকথা

১। কথা বলতে চায় না, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চায় না, অধৈৰ্য্য, সহজেই রাগ করে বা অল্প কারণেই মনক্ষুন্ন হয়, বিরক্তি সহ ক্রোধ; ক্রোধের আনুষঙ্গিক ফলস্বরূপ উদরশূল বা অন্য রোগের উপস্থিতি।

২। তীব্র উদরশূল বেদনা, দ্বিভাজ হলে (bending double) বা পেট কোন শক্ত কিছু দিয়ে চেপে থাকলে উপশম।

৩। রক্তামাশয়ের ন্যায় উদরাম, সামান্য কিছু আহারে বা পানের পর বেগ উপস্থিত হয় ও প্রায়ই কলোসিন্থের চরিত্রগত শূলবেদনা বর্তমান থাকে।

৪। পুনঃ পুনঃ মূত্রবেগ, অল্প অল্প মূত্রস্রাব; কখন কখন গাঢ় দুর্গন্ধ, আঠাল ‘ বা চটচটে জেলির মত মূত্র স্রাব।

৫। সায়েটিকা নার্ভে খাল ধরার ন্যায় বেদনা, কুঁচকীতে আরম্ভ হয়ে ঊরুর পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত এই বেদনা সম্প্রসারিত হয়; কঠিন চাপে ও তাপে উপশম, বিশ্রামে বৃদ্ধি, বিশ্রামে এত কষ্ট বাড়ে যে রোগী তীব্র যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়ে।

৬। কলোসিন্থ জ্ঞাপক সমস্ত বেদনাতেই দুঃসহ খাল ধরার প্রবণতা থাকে।

৭। উপচয় ও উপশম –

সন্ধ্যায়, ক্রোধে ও আহারের পরে বৃদ্ধি ; কফি পানে ও দ্বিভাজ হওয়ায় ও প্রবল চাপে উপশম।

কলোসিন্থ — পরিক্রমা

উদরশূল বেদনা

কলোসিন্থের ন্যায় কোন ঔষধেই এত তীব্র উদরশূল বেদনা (abdominal-colic) জন্মায় না ও কোন ঔষধেই এত সত্বর আরোগ্য হয় না।

ডাঃ টি. এল, ব্রাউন এক সময়ে আমাকে যা বলেছিলেন, তার সারমর্ম হল-

যদি আমি ঔষধের সূক্ষ্মমাত্রার আরোগ্যকর শক্তি সম্বন্ধে সন্দেহযুক্ত হই, তাহলে কলোসিন্থই আমার সে সন্দেহ দূর করবে। আমি বহুক্ষেত্রে শিশু থেকে বয়স্কদের এমনকি ঘোড়ারও তীব্র উদরশূল বেদনা এর দ্বারা দ্রুত আরোগ্য করেছি। আর প্রত্যেক প্রকৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকই এই কথায় সায় দেবেন।

কলোসিন্থের উদরশূল বেদনা বড়ই ভয়ঙ্কর। রোগী কেবলমাত্র দ্বিভাজ হয়ে থাকলে (bending double) অথবা পেটে কোন কঠিন বস্তু চেপে ধরে থাকলে উপশম পায়। তাই রোগী চেয়ার বা টেবিলের বা খাটের পায়ার উপর ভর দিয়ে উপশম পাওয়া চেষ্টা করে। এই শুলব্যথা স্নায়বিক প্রকৃতির ও কখন কখন ওর সঙ্গে বমন ও উদরাময় কৰ্তমান থাকে। উহা পাকস্থলী বা অন্ত্রের কোন বিশেষ প্রকার বিশৃঙ্খলা অপেক্ষা প্ৰবল কেনার জন্যই দেখা দেয় বলে মনে হয়। আমার কখনও কখনও একে রক্তামাশয়ের সঙ্গেও পেতে পারি।

আমার অভিজ্ঞতায় এই শূলবেদনা সাধারণতঃ রোগের প্রথমাবস্থায় দেখা দেয় না। কিন্তু একোনাইট, নাক্স ভমিকা, মারকিউরিয়াস প্রভৃতি ঔষধ দ্বারা রোগ সম্যকরূপে প্রশমিত না হওয়ায় উহা উপরের দিকে সম্প্রসারিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র আক্রমণ করার পরে ঐ রোগের প্রবর্ধিত অবস্থায় দেখা দেয়। তখন বেদনাটি খালধবা প্রকৃতির (cramping) হয়। উদশূল বেদনায় বিশেষতঃ বালক বালিকাদেব বা শিশুদের উদরশূল বেদনায় ম্যাগ্নেসিয়া ফসফরিকা, কলোসিন্থের সদৃশ্য; কিন্তু ম্যাগফসের উদরে – বেদনা আর্সেনিকের ন্যায় গরম বাহ্য প্রয়োগে অতিশয় উপশমিত হয়। তবে কলোসি ও ম্যাগ ফস উভয়েই অন্যান্য স্থানের স্নায়বিক প্রকৃতির রোগে সমভাবে উপযোগী। যেমন – সায়েটিকা, মুখমণ্ডলের স্নায়ুশূল (প্রোমোপ্যালজিয়া); এমনকি মায়বীয় প্রকৃতির জরায়ুর বেদনায়ও এই দুটি ঔষধ. সমানভাবে উপযোগী (কিন্তু শেষোক্ত রোগে ম্যাগসহ অধিকতর উপযোগী)। তবে এক্ষেত্রে এদের উপচয় ও উপশমের কথা মনে রাখতে হবে কারণ উপচয় ও উপশম দেখে এদের স্বতন্ত্রতা নিরূপণ করতে হয়।

উদরশূল বেদনার ঔষধসমূহ –

ক) ক্যামোমিলা ও কলোসি পরস্পরের সাদৃশ্য, উভয়েরই ক্রোধের আবেশবশতঃ উদরশূল বেদনা বা অন্যান্য মায়বীয় পীড়ার উৎপত্তি হয়।

কামোমিলা শিশুদের উদর বেদনায় উপযোগী হয়, বিশেষ করে পেটে অত্যধিক বায়ুসঞ্চয় বশত উদর স্ফীতিতে, বেদনায় গড়াগড়ি দেয়; কিন্তু কলোসিন্থের ন্যায় দ্বিভাজ হয় না। অন্যান্য লক্ষণও প্রায়ই উপস্থিত থাকে ও ওদের নির্বাচনে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে যদি দুটি ঔষধই বিফল হয়, তাহলে আমি ম্যাগ্নেসিয়া ফসে সফল হই।

খ) স্ট্যাফিসাগ্রিয়াও কলোসিন্থ ও ক্যামোমিলার মত প্রকৃতিবিশিষ্ট শিশুদের উদশূলের একটি ঔষধ। এরূপ শিশুদের দাঁত কাল হয় ও তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়। আবার স্ট্যাফিসাগ্রিয়া জ্ঞাপক শিশুদের চোখের পাতায় প্রায়ই ক্ষত জন্মে। এরূপ ক্ষেত্রে পুরাতন উদশূল বেদনা জন্মাবার প্রবণতা থাকে এবং তখন স্ট্যাফিসাগ্রিয়াহ একমাত্র ঔষধ।

গ) ভেরেট্রাম অ্যালবামেও উদরশূল বেদনা আছে। উহাতে রোগী কলোসিন্থের মত ভাজ হয়ে পড়ে কিন্তু রোগী উপশমের জন্য হেঁটে বেড়ায় অথবা যদি একান্ত অবসন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে শীতল ঘৰ্ম দেখা দেয়, বিশেষতঃ কপালে।

ঘ) খাওয়ার পরে রোভিষ্টাতেও উদরশূল জন্মে। তবে খাওয়ার পরে দ্বিভাজ হলে উপশমিত হয়।

ঙ) ডায়াস্কোরিয়া বায়ুজনিত উদরশূল বেদনার একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। ইহা ঠিক নাভিস্থলে আরম্ভ হয় ও সমস্ত পেটে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হাতে পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় (প্লাম্বামে উদর প্রাচীর ভিতরের দিকে আকৃষ্ট হয়) ও ইহা কলোসিন্থের বিপরীত, অর্থাৎ বেদনা সামনের দিকে হেঁট হলে বা ঝুঁকলে কষ্ট বাড়ে এবং পিছনের দিকে শরীর সোজা করলে বা বাঁকালে কষ্ট কমে।

চ) স্ট্যানামও উদরশূল বেদনার আর একটি ঔষধ। এক্ষেত্রে কেবল মায়ের কাধের উপর পেট রেখে শিশুকে নিয়ে মা চলে বেড়ালে শান্তি পায়। আমি এরূপ রোগীকে আরোগ্য করেছি! বোগটি ছিল দুর্দম্য ও দীর্ঘকাল স্থায়ী একটি শিশুর উদরবেদনা। যাতে প্রচলিত সমস্ত ঔষধই বিফল হয়েছি।

ছ) জ্যালাপা সেবনেও একটি দীর্ঘকাল স্থায়ী দুরারোগ্য রোগীকে আরোগ্য করেছিলাম। এই শিশুটি প্রায়ই দিনরাত কাদত। তার উদরাময়ও ছিল। এই ঔষধে তার পেটের শূলবেদনা ও উদরাময় উভয়ই দ্রুত আরোগ্য হয়।

মন্তব্য

আমি কলোসিন্থ সম্পর্কে উদরশূলের ঔষধগুলিৰ প্ৰয়োগ লক্ষণ খুব বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছি, কারণ সদৃশ্য ঔষধ খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন;

তাছাড়া বেদনানাশক উপশমকর সিরাপ দেওয়ার প্রবণতা তরুণ চিকিৎসকের এত বেশী থাকে যে, তা দূর করার জন্য আমি বিস্তৃতভাবে একে আলোচনা করেছি। তবে এই রোগে আরো অনেক ঔষধ আছে এবং সেগুলির বিশেষ বিশেষ পরিচালক লক্ষণও আছে।

২। সায়েটিকা – কলোসি যে কেবলমাত্র উদর প্রদেশে উৎপন্ন স্নায়ুশূল জাতীয় পীড়াই আরোগ্য করে, তা নয়। ইহা মুখমণ্ডলের স্নায়ুশূল ও সায়েটিকা নার্ভের বেদনাতেও উপযোগী। উদরের ন্যায় সকলস্থানের বেদনাতেই সুস্পষ্ট খালধবা (crampe) থাকে। এক্ষেত্রে ম্যাগফস প্রায়ই কলোসিন্থের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। উহারও একই প্রকারের প্রকৃতিযুক্ত বেদনা আছে এবং উভয় ঔষধেই উত্তাপে উপশম হয়। কিন্তু ম্যাগফসে উহা অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

সায়েটিকায় কলোসিন্থের বেদনা কুঁচকি থেকে প্রসারিত হয়ে ঊরুর পিছভাগ দিয়ে হাঁটুর পিছনের গর্ত পর্যন্ত যায়।

ব্যথিত পার্শ্বে চেপে শুলে উপশম – ব্রায়োনিয়া।

ফাইটোলাক্কার বেদনা ঊরুর বাইরের দিক দিয়ে নীচের দিকে যায়।

এই দুটি ঔষধ ও ন্যাফালিয়াম এই অতিশয় যন্ত্রণাদায়ক পীড়া চিকিৎসার প্রধান ঔষধ। কিন্তু অন্যান্য ঔষধও সময়ে সময়ে দিতে হয় এবং অন্যান্য পীড়ার ন্যায় এক্ষেত্রেও নির্দেশক লক্ষণগুলি কখন কখন স্থানীয় উপদ্রবের বাইরে থাকে।

রোগী বিবরণী

সায়োটিকার যেসব রোগী আমি দেখেছি, তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মন্দাবস্থাযুক্ত একটি রোগিণী আর্সেনিক অ্যালবাম দ্বারা আরোগ্য হয়েছিল। তার সূচক লক্ষণগুলি ছিল মধ্যরাত্রিতে বৃদ্ধি, বিশেষতঃ রাত্রি ১টা থেকে ৩টেয় কষ্ট বাড়ত, জ্বালাকর বেদনা এবং বেদনায় আক্রমণের সময় কেবল ব্যথারস্থানে গরম নুনের পুঁটলি দিয়ে তাপ দিলে কষ্ট স্পল্পকালের জন্য কমত।

মহিলাটি ছিলেন নিউইয়র্কে স্কুল বিভাগের প্রখ্যাত লেখক চার্লস স্যাণ্ডাসের বোন। সণ্ডার্স নিজেও অ্যালোপ্যাথিক মতে সায়েটিকার চিকিৎসায় খোড়া হয়ে গিয়েছিলেন।

এই রোগিণীও সপ্তাহকাল অসহ্য যন্ত্রণা ভোগের পর জেনিকেনের ৮এম শক্তির একমাত্রা আর্সেনিক অ্যালবাম দ্বারা দ্রুত স্থায়ীভাবে আরোগ্য লাভ করেন।

সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে, কোন বিশেষ ঔষধ বা বিশেষ শ্রেণীর ঔষধের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায় না। কিন্তু নির্দেশিত ঔষধটির উপরে নির্ভর করা যায়।

Coloc : Citrullus Colocynthis
Easily angered and ill effects therefrom.Intense neuralgias, with chilliness > pressure.Agonising pain in abdomen, causing patient to bend double.

Cramps, contractions, twitching, shortening of muscles.

Sensations-Cutting, twisting, grinding, contracting, bruised, as if clamped with iron bands.


COMMON NAME:

Bitter Cucumber


A/F:

-Anger

-Indignation

-Chagrin

-Vexation

-Mortification

-Grief

-Overheated


MODALITIES:

< From anger and indignation

< Lying on painless side

< Night

< In bed

< Drafts

< Taking cold

< After eating, cheese

< Before and after urination potato, starchy food (flatus)

< After eating, drinking least amount

< 4-9 p.m.

< Rest

> HARD PRESSURE on edge

> Heat

> Gentle motion

> After stool

> Doubling up


MIND:

-Ailments after anger and silent grief.

-Greatly affected by the misfortunes of others.

-Anger easily, vexed during pain.

-Want of religious feeling.

-Screams with pain; wants to walk about, disinclined to talk, to answer.

-Impatient.

-Does not want to meet the friend.

-Morose; becomes offended at everything.

-Irritable; throws things out of his hand.

-Mortification, caused by offense.

-Confusion trom beer; after wine.

-Restlessness before menses.


GUIDING INDICATIONS:

-It is left sided drug, except sciatica which is on right side. All symptoms are 4-9 p.m.

-Suited to easily angered, irritable persons, with tendency to corpulency, to women of sedentary habits, with copious menstruation.

-It is useful in acute affections of digestive tract and intestines but it has a long lasting action on nerves, especially trigeminal, facial, sciatica, spinal nerves.

-Different types of pain > PRESSURE > WARMTH.

-Colicky pain.

-Pains come suddenly, go suddenly.

-Spasmodic.

-Crampy, tearing part.

-Neuralgic pains, cutting, pinching, clamping, gnawing or boring.

-Pains with numbness.

-Pains like electric shocks.

-Throbbing throughout the whole body.

-Constrictions, cramps and twitchings.

-Vertigo-When quickly turning head, especially to the left, as if he would fall.

-Vertigo from stimulants.

-Head-Lateral cutting headache with nausea, vomiting.

-Pains with soreness of scalp.

-Pain < stooping, lying on back and moving eyelids.

-Eyes -On stooping feeling as if eyes would fall out.

-Violent pain before development of glaucoma.

-Ears-Sounds re-echo in ears.

-Face-Left side affection of face.

-Trigeminal neuralgia.

-Tearing shooting and swelling of face > from pressure.

-Neuralgia with chilliness, teeth seems too long.

-Prosopalgia with eye symptoms and chilliness.

-Face distorted, cheeks cold.

-G.I.T.-Bitter taste in mouth.

-Agonizing, violent, cutting, cramping, griping, tearing, clutching, or radiating pain, comes in waves. Pain compels patient to cry out and wriggle for relief, or double up and particularly press something hard against abdomen.

-< Least food or drink, except coffee and tobacco smoking.

-Intestines feel squeezed between stones.

-Sensation as of being encircled with an iron band.

-Colic with cramps in calves. Pains are accompanied by nausea vomiting and diuresis.

-Each paroxysm is attended with general agitation and a chill over the cheeks, ascending from the hypogastrium.

-Pressure ameliorates pain in abdomen in acute stage, but when pain remains for a long time, parts become tender, then the pressure aggravates the pain.

-Stools-frothy, watery, shreddy, yellow or gelatinous with flatulence and pain.

-Slippery bubbles escape from anus.

-Dysenteric stool, renewed each time by the least food or drink.

-Jelly-like stool, musty odour.

-During colic, infant lies on abdomen and screams when he is moved slightly.

-Urinary system-Pain on urinating over the whole abdomen.

-Cysto-spasm after operation on the orifices.

-Burning along urethra during stool.

-Urine-viscid, foetid, small quantities with frequent urging.

-Red, hard crystals adhering to the vessel.

-Urine milky white coagulates on standing, diabetes.

-Female genitalia-Boring pain in ovary, must draw up double, with great restlessness.

-Ovarian cyst with pain > flexing thigh on pelvis.

-Suppression of menses or lochia from indignation.

-Dysmenorrhoea < eating.

-Menses copious in women with sedentary habits.

-Extremities-Contradiction of muscles. All the limbs are drawn together.

-Sciatica, cramps like, shooting electric-like pain in hip, lies on affected side. Pain from hip to knee.

-Pain < gentle motion > pressure and heat.

-Pain down right thigh, muscles and tendons feel too short, with numbness.

-Stiffness of joints, with shortening of tendons.

-Spontaneous subluxation of the hip joint.

-Perspiration-Urinous odour of perspiration.


KEYNOTES:

1. Cystospasm after operation of orifices.

2. Urinous odour of perspiration.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Useful in irritable persons, easily angered and ill effects therefore.

-Not only is it useful in acute affection of digestive tract and intestines, but it has a long lasting action on nerves especially trifacial, sciatica and spinal.

-In abdomen, produces sudden, atrocious, cramping, griping, tearing pain which makes the patient twist and turn, cry out and bend double.

-Pains are accompanied by nausea and vomiting from intensity of pain.

-Neuralgic pains are cutting, pinching, cramping, gnawing or boring, followed by numbness > pressure.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Left sided affection.

2. Pain in abdomen < least food < anger, vexation > hard pressure > doubling up.

3. Neuralgia pains- cutting, shooting, electric shock-like, followed by numbness.

4. Trigeminal neuralgia alternates with chilliness and colicky pain in abdomen.

5. Sciatica pain with contraction of muscles, shortning of muscles and tendens < gentle motion > pressure.


CLINICAL:

-In menstrual colic, Causticum will cure after the failure of Colocynth.

-In the beginning cases of paraphimosis, you may give Colocynth which will sometime relieve the spasm- Dr.Farrington.

-Best antidote to lead poisoning- Boericke.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Complementary : Merc.

Compare : Ars, Bell, Bry, Caust, Cham, Chel, Cocc, Coff, Dios, Lyc, Merc, Nux-v, Puls, Stann.

Antidoted By : Camph, Caust, Cham, Coff, Op, Staph.

It Antidotes : Caust, Mag.

Duration Of Action : 1-7 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *