অস্থির প্রকৃতির, একগুঁয়ে সহজে বিশ্বাস করতে পারেনা এমন ব্যক্তি। |
টিউবারকুলার মায়াজম ও ফ্যামিলি টিউবারকুলার। |
আক্ষেপযুক্ত কাশি, দুপুরের পর কাশি বাড়ে, বায়ুনালী, বুক ও হাইপোকন্ড্রিয়াতে সঙ্কোচন অনুভূতি, পানি বা কোন তরল পদার্থ পান করলে কাশি বৃদ্ধি। কাশতে কাশতে ভুক্তদ্রব্য বমি হয়ে যায়, বমির সহিত শ্লেষ্মা থাকে। |
গায়ের কাপড় খুললে চুলকানি বাড়ে, চুলকালে উপশম হয়। |
হুপিং কাশি—কাশির ধমক একটার পর আরেকটা হতেই থাকে, শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে (সকাল 6-7 টায় জেগে উঠে কাশতে থাকে— যতক্ষণ না অনেকটা পরিমাণে চটচটে শ্লেষ্মা কেশে তুলতে পারে ততক্ষণ কাশি হতেই থাকে (কক্কাস-ক্যাক)।
[প্রতিবার কাশির ধমকে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে = ইন্ডিগো, দিনের বেলায় কামানের তোপধ্বনির মত মিনিটে মিনিটে কাশি, রাতে হুপ হুপ শব্দে হুপিং কাশি = কোরালরুবা]।
যেন ফুসফুসের অনেক ভিতর হতে কাশি, গলাভাঙ্গা থাকে ও উঁচু শব্দে : কাশি (ভারবাঙ্কাম); ঐ কাশি মাঝরাতের পর হামরোগ হলেও তার পরে দেখা দেয়—শরীরে ঝাঁকানি দেয়, ওয়াক পাড়ে, যেন বমি হয়ে নাড়িভূড়ি বার হয়ে যাবে এমন বমির বেগ ও বমিসহ কাশি (ব্রায়ো, কেলি-কা)।
রাতে বালিশে মাথা ছোয়ানো মাত্র বাচ্চাদের গলা খুসখুস করে অনবরত কাশি হতে থাকে (বেল, হায়োসা, রুমেক্স)।
অল্পবয়সী যুবকদের ক্ষয়রোগে রাতে কাশি—রক্ত পুঁয় মেশানো শ্লেষ্মা ওঠে ।
কাশি — গরমে বাড়ে, কিছু পান করলে, গান করলে, হাসলে, কাঁদলে, বিছানায় শুলে ও মাঝরাতের পর বাড়ে। কাশতে কাশতে জল ও শ্লেষ্মা বমি করে ও প্রায়ই নাক মুখ দিয়ে রক্ত বার হতে থাকে (কুপ্রাম)।
মনে হয় গলায় পাখীর পালক গোজা আছে—এতে কাশি হতে থাকে।
এপিডেমিক হুপিং কাশির সময় এই রকম কাশির আক্রমণ।
ধর্মপ্রচারক, পুরোহিত এদের গলায় ঘা—তাতে গলায় ভিতর থেকে কর্কশ, যেন চেঁচে গেছে, শুকিয়ে গেছে এইরূপ অনুভূতি, গলা ভেঙ্গে যায়, যেন স্বরযন্ত্রের অনেক ভিতর হতে আওয়াজ বার হয়, স্বর বিকৃত হয়, যেন গলা ফেলে গেছে, অনেক চেষ্টা করে কথা বলতে হয় (অরাম-ট্রি)।
স্বরযন্ত্রের সঙ্কোচন বোধ ও যেন পোকা হেঁটে বেড়াচ্ছে—চুলকায়, গলা বসে যায় ও হলদে বা সবজে শ্লেষ্মা ওঠে ।
হুপিং কাশির পর স্বরযন্ত্রের ক্ষয়রোগ (সর্দির পরে বায়ুনালীতে ক্ষয়রোগ = কক্কাস্-ক্যাক)।
সম্বন্ধ — নাক্স-ভ-এর অনুপূরক।
স্যাম্বু, সালফ, ভার্বাস্কাম এর পর ভাল খাটে ।
এরপর ক্যাল্কে-কা, পালস, সালফ ভাল কাজ দেয় ।
তুলনীয় — কাশিতে দেহ ঝেঁকে ওঠে এই লক্ষণে সিনা, কোরাল, কুপ্রাম, ইপি, স্যাম্বুর সাথে তুলনীয় ।
অনেক সময় ক্ষয়রোগের অবিরাম, কষ্টকর রাত্রিকালীন কাশিতে এ ওষুধ উপশম দেয়।
হ্যানিম্যান মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা গ্রন্থে বলেছেন, “এপিডেমিক হুপিং কাশি আরোগ্য করার জন্য একমাত্র 30 শক্তিই যথেষ্ট। 7/৪ দিনেই আরোগ্যকারী ক্রিয়া দেখা যায়। প্রথম মাত্রায় পরেপরেই দ্বিতীয় মাত্রা দিতে নাই, এতে কেবলমাত্র প্রথম মাত্রার সুফল নষ্ট করবে না, বরং ক্ষতি করবে ।
whooping Cough-হুপিং কাশিতরুণ সংক্রামক রোগ । Bordetella Pertussis জীবাণুর সংক্রমণে হয় । অনবরত একনাগাড়ে আক্ষেপজনক কাশি, কাশি দিলে শেষে “হুপ হুপ” এই আওয়াজ বার হয়। পারটুসিস ও হুপিং কাশি সমার্থক। Whoop = হুপ’ = কাশিতে শরীর কেপে ওঠে কাশির পর শ্বাস নেওয়ার সময় (Inspiratory) সুনাদ বা পোঁ, (Sonorous) শব্দ। প্রাথমিক অবস্থায় ধীরে ধীরে আক্রমণ বাড়তে থাকে, রাত্রে সুস্পষ্টভাবে বাড়ে, দীর্ঘ খাউ খাউ শব্দে কাশি হয়।
সুস্পষ্টভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের উপর এই ঔষধের প্রভাব আছে এবং হ্যানিম্যান বলেছেন যে, এটি হুপিং কাশির প্রধান ঔষধ। যক্ষ্মার জীবানুকে প্রতিহত করার শক্তি এই ঔষধনাশ করে এবং এই কারণে ঐ শক্তি বাড়াবার ক্ষমতাও এই ঔষধের আছে (ডাঃ ফাইলার)। কণ্ঠনলীর ক্ষয়রোগে এই ঔষধের দ্বারা উপকার পাওয়া যায়। ফুসফুসের ক্ষয়রোগ, কাশির সঙ্গে ভুক্তখাদ্যবস্তু বমি হয়ে উঠে যায় তৎসহ পাকাশয়িক-গোলযোগ ও প্রচুর শ্লেষ্মা উঠে। হিপ জয়েন্টের চারিধারে বেদনা। টিউবার কিউলার দোষযুক্ত। গ্রন্থিসমূহ।
মাথা — মুক্ত বাতাসে বেড়াবার সময় মাথা ঘোরা, তৎসহ বামদিকে পড়ে যাবার প্রবনতা যুক্ত। মুখমন্ডলের বাম অর্ধ শীতল তৎসহ হুল ফোটার মত বেদনা এবং ডানদিকের অর্ধে শুষ্ক উত্তাপ।
পাকস্থলী – বমি বমি ভাব। অম্ল অনিচ্ছা এবং অম্লজাতীয় বস্তু খাবার কুফল সমূহ।
শ্বাস–প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ – আক্ষেপিক, শুষ্ক, উত্তেজনা, সৃষ্টিকারক কাশি, অনেকটা হুপিং কাশির মত, কাশির ধমকরূপ আক্রমন গুলি পর পর খুব দ্রুত সংঘটিত হয়; খুব কষ্টকর শ্বাস নিতে হয়; শ্বাসরোধক অবস্থা। কাশি অত্যন্ত গভীর ও স্বরভঙ্গযুক্ত; মধ্যরাত্রির পরে বৃদ্ধি। শ্লেষ্ম হলুদবর্ণ, তৎসহ নাক ও মুখগহ্বর থেকে রক্তস্রাব, ওয়াক তোলা। গভীর ও স্বরভঙ্গযুক্ত গলার স্বর; স্বরভঙ্গ, কণ্ঠনলীর প্রদাহ। গলকোষের ভিতরে খসখসে, চেঁচে ফেলার মত অনুভূতি এবং তালুর কোমল অংশে। গলার ভিতর রুটির টুকরো থাকার মত অনুভূতি, কণ্ঠনলীর ভিতর পালক থাকার মত অনুভূতি। কণ্ঠনলীর ক্ষয়রোগ, তৎসহ দ্রুত শীর্ণাবস্থা। শিশুদের বিরক্তিকর ও খুসখুসে কাশি কিন্তু সারাদিন ধরে এই কাশি থাকে না, কিন্তু রাত্রে যেই বালিশে মাথা রেখে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশি শুরু হয়। ধর্ম প্রচারকের গলক্ষত, তৎসহ খসখসে, ছিড়ে যাওয়ার মত, শুষ্ক অনুভূতি গোলকোষের ভিতরে। গলার স্বরভাঙ্গা, স্বর গভীর, সুর বিহীন চিরে যাওয়ার মত স্বর এবং কথা বলতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়। কথা বলার সময় হাঁপানী তৎসহ প্রতিটি কথা উচ্চারণের সময় গলা সঙ্কুচিত হয়ে আসে।
অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ – কোমর ও ঊরুর নিকটবর্তী সন্ধি ও ঊরুস্থানে পক্ষাঘাতের ন্যায় বেদনা। পায়ের সন্ধিস্থানের আড়ষ্টতা। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে খঞ্জতার অনুভূতি। বিছানা অত্যন্ত শক্ত বলে মনে হয়।
জ্বর — শরীরে অভ্যন্তরে শীতভাব, কম্পন, তৎসহ মুখমন্ডল উত্তপ্ত, হাতগুলি ঠান্ডা, তৃষ্ণাহীন। সর্বদা অত্যন্ত শীতল, এমনকি বিছানাতে থাকার সময়েও।
কমা–বাড়া–বৃদ্ধি, মধ্যরাত্রির পরে, শুয়ে পড়লে, বিছানার গরমে, পান করলে, গান করলে হাসলে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন-ক্যাম্ফর।
তুলনীয় — ফ্লুরোফর্ম (২% জলের মিশ্রন, ২-৪ ফোঁটা রোগাক্রমণ কালের পরে, নির্দিষ্টভাবে হুপিং কাশির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।
উয়াবেইন – আরো পয়জন (শ্বাস-প্রশ্বাস পথের আক্ষেপ হুপিং কাশির প্রাথমিক অবস্থায় রোগাক্রমন কালের সময় কমিয়ে দেয় এবং আক্রমণ কালের প্রত্যাবর্তনের সময় কমায় এবং দ্রুত আরোগ্য করে)।
চেলিডোনিয়াম; কোরালিয়াম; কিউপ্রাম, ক্যাটেনিয়া, আর্জেন্টাম, ম্যানিয়্যানন্থেস।
শক্তি — ১ম থেকে ১২ শক্তি।
এই ঔষধটির ব্যবহার প্রধানতঃ হুপিং কাশিতেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু ইহার আরও বিস্তৃত ব্যবহারও আছে। যখন আমরা বিবিধ রোগের মধ্যে প্রাপ্তব্য ইহার আক্ষেপিক প্রকৃতি, ইহার অবসন্নতা, ইহার খালধরা পরীক্ষা করি, তখন উপলব্ধি করি যে, ইহা আরও বিস্তৃতভাবে ব্যবহার হইবার মত ঔষধ। অপরবৎ আক্ষেপ, দীর্ঘকাল স্থায়ী অনিদ্রা, নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিলে প্রচুর ঘৰ্ম্ম; অস্থিরতা এবং উৎকণ্ঠা। সে ভাবে, যেন সে সর্বদাই নির্যাতিত হইতেছে। উত্তাপের ঝলক উঠে; রাত্রির ভয়। রাত্রে অনেক উপসর্গ দেখা দেয়। উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা এবং ভূতের ভয়। আক্ষেপিক কাশি। মানসিক গোলযোগ ও অত্যন্ত শিরোঘূর্ণন। দেহের বিভিন্ন অংশে, বিশেষতঃ মাথায় বর্শাবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, হাত দিয়া মাথা ধরিয়া থাকিতে হয়। কাশিবার সময় বুক চাপিয়া ধরিতে হয়। উদরের উপর চাপ দিতে হয়। চাপিয়া ধরার ন্যায় রক্তসঞ্চয়জাত শিরঃপীড়া। দেহের বিভিন্ন অংশে ক্ষতকর চুলকানি, তৎসহ হামের ন্যায় উদ্ভেদ। হামের সময় এবং আক্ষেপকালে কাশিতে চক্ষুগোলক দুইটি উদ্গত ও রক্তসঞ্চয়যুক্ত হইয়া পড়ে। চক্ষুতে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। কর্ণে শব্দ, গর্জনবৎ, গুনগুন করার ন্যায়, ঢাকপেটার ন্যায়। শিশুদের কর্ণশূল। কর্ণে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। আক্ষেপিক কাশির সহিত, কাশিবার সময় শরীরের নানা দ্বার হইতে বিশেষতঃ নাক, গলা, কণ্ঠনলী ও বক্ষ হইতে রক্তপাত। সাধারণতঃ মুখমন্ডলের উত্তাপের সহিত, মুখ বিবর্ণ ও বসা থাকে এবং হস্ত-পদাদি শীতল থাকে, কিন্তু কাশির সময় মুখমন্ডল ‘বেল’ ও ‘কুপ্রামে’র ন্যায় লাল, রক্তসঞ্চয়যুক্ত, অথবা বেগুনিবর্ণ হইয়া পড়ে। অনেক রোগেই সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা থাকে। মুখে পচা স্বাদ একটি সাধারণ লক্ষণ, উহা ফুসফুস ও কণ্ঠনলীর ক্ষয়রোগ অবস্থায় এবং হুপিং কাশিতে দেখা যায়। মুখ হইতে রক্তাক্ত লালা এবং রক্তস্রাব হয়। শক্ত খাদ্য গিলিতে কষ্ট। গলার ও কণ্ঠনলীর আকুঞ্চন এবং গলকোষের আকুঞ্চন গিলিতে বাধা দেয়। এই ঔষধটির আগাগোড়া খালধরার ন্যায় আকুঞ্চন আছে। কোনকিছু ধরিয়া থাকিলে হাতে খাল ধরে। ঝাটার বাট ধরিয়া থাকিলে খাল ধরে। গলার মধ্যে জ্বালা ও চাচার ন্যায় অনুভূতি। গলায় সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। গলা ঘোর লাল বা বেগুনিবর্ণ থাকে। আমার মনে হয় ড্রসেরার রোগীর ক্ষেত্রে প্রাপ্ত একটি লক্ষণ বিশেষ মূল্যবান। আহারের পর গলায় চাচার ন্যায় অনুভূতি ও কাশি। পরীক্ষার সময় ইহাতে জলপানের পর কাশি পাওয়া গিয়াছিল। ইহাতে বিশেষভাবে শীতল জিনিষ ভোজন ও পানের পর কাশি আছে। কণ্ঠনলীতে সুড়সুড়ি ও কণ্ঠনলীর আকুঞ্চন হইতে কাশি উপস্থিত হয়। বমনেচ্ছা ও বমন। প্রাতঃকালে রক্ত ও পিত্ত বমন এবং কাশিবার সময় শ্লেষ্মা ও খাদ্য বমন। যতক্ষণ না ওয়াক ওঠা ও বমন দেখা দেয়, ততক্ষণ কাশি চলিতে থাকে। পাকস্থলীগহ্বরে আকুঞ্চনবৎ যন্ত্রণা। উদরের উভয় পার্শ্বে আকুঞ্চনবৎ যন্ত্রণা। টক খাদ্য খাওয়ার পর উদরশূল। এই ঔষধে যে সর্বাপেক্ষা কষ্টদায়ক উপদাহ দেখা যায়, তাহা হয়ত কণ্ঠনলীতেই থাকে, ঐস্থলে মুঠা করিয়া ধরার মত, খালধরার মত, আকুঞ্চনের ন্যায়, জ্বালাকর যন্ত্রণা। স্বরভঙ্গ এবং ক্রমাগত উত্তেজনা, উহাতে কাশি এবং কণ্ঠনালীতে সৰ্ব্বক্ষণ স্থায়ী উপদাহ ও খসখসে ভাব। কণ্ঠনলীতে শ্লেষ্মা সঞ্চয়, কণ্ঠনলীতে শুষ্কতা, উপজিহ্বার আক্ষেপ। কণ্ঠনালীর সুড়সুড়ি, ইহাতে ভীষণ আক্ষেপিক কাশি। কণ্ঠনলীতে যেন একটি পালক রহিয়াছে— এরূপ অনুভূতি। কণ্ঠনলীতে আক্ষেপ। কাশিবার সময় হস্ত-পদাদিতে আক্ষেপ, কাশি কণ্ঠনলীতে সুড়সুড়ি হইতে, কণ্ঠনলীতে শ্লেষ্মা সঞ্চয় হইতে উপস্থিত হয়। এরূপ অবস্থা কণ্ঠনলীর ক্ষয়রোগে, হুপিং কাশিতে, কণ্ঠনলীর প্রদাহে এবং কণ্ঠনলীর সর্দিতে দেখা যায়।
বক্ষে ও কণ্ঠনলীতে আক্ষেপিক কষ্ট হইতে শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসরোধ ভাব দেখা দেয়। কথা বলিবার বা কাশিবার সময়, যেন বুকে কিছু রহিয়াছে, এরূপ অনুভূতি হইতে শ্বাসক্রিয়ায় বাধা জন্মে। মধ্য রাত্রির পর শ্বাসকষ্ট এবং কাশি উপস্থিত হয়। জাগিয়া উঠিলেই শ্বাসকষ্ট বিশেষভাবে দেখা দেয়। একটি শব্দও উচ্চারণ করিতে পারে না। কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া ও শ্বাসরোধের অনুভূতি। কণ্ঠনলীর আক্ষেপ বশতঃ মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ হইয়া যায়। বুকের মধ্যে চাপধরা। এই সকল শ্বাসরোধের আক্রমণ কাশির সহিত উপস্থিত হয় অথবা শুইলে উপস্থিত হয়। কথা কহিলে হাঁপানির ন্যায় শ্বাসক্রিয়া ও কণ্ঠনলীর আকুঞ্চন। গভীর শব্দকারী, স্বরভঙ্গযুক্ত কাশি, কর্কশ চাচার ন্যায় কাশি, উচ্চ শব্দবিশিষ্ট হুপিং কাশি, আক্ষেপিক হুপিং কাশি। হুপিং কাশির সহিত বুকের, গলা ও কণ্ঠনলীর পেশীগুলির ভয়ানক আকুঞ্চন। দুই বা তিন ঘন্টা অন্তর হুপিং কাশির আবেশ উপস্থিত হয়, কিন্তু রাত্রে শুইলে এবং ভোর ৩টার দিকে অত্যন্ত বৃদ্ধিযুক্ত হয়। আক্ষেপিক কাশি, মেরুদন্ডের উপদাহের আনুষঙ্গিক কাশি। যক্ষ্মারোগের দিকে অগ্রসর হইতেছে, এরূপ যুবতীদিগের ভীষণ আক্ষেপিক কাশি। উজ্জ্বল লালবর্ণ বা চাপচাপ কাল রক্তময় গয়েরবিশিষ্ট কাশি। হামের সময় অথবা হামের আক্রমণের পরে এই প্রকার আক্ষেপিক কাশি উপস্থিত হয়। কণ্ঠনলীতে একপ্রকার উপদহিতা থাকিয়া যায়। ইহা হামরোগে খুব সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধগুলির অন্যতম। ইহা কার্বোভেজ সদৃশ। হাঁচিবার বা কাশিবার সময় বুকের মধ্যে ভয়ঙ্কর সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণার আক্রমণ। উপশমের জন্য সে বুক চাপিয়া ধরিতে বাধ্য হয়। কাশি এত ভীষণ হয় যে, কাশিবার সময় তাহাকে হাত দিয়া বুক চাপিয়া ধরিবার চেষ্টা করিতে হয়। আক্ষেপিক কাশি বিশিষ্ট পুরাতন ব্রঙ্কাইটিসরোগে ইহা একটি বিশেষ উপযোগী ঔষধ। ক্ষয়রোগে এবং ফুসফুসের যক্ষ্মারোগের অবস্থায়, বরাবর, যেরূপ আক্ষেপিক কাশি হইতে দেখা যায়, তাহাতে ইহা একটি বিশেষ উপশমদায়ক ঔষধ। কাশিবার সময় এই প্রকৃতির রোগে দুই স্কন্ধের মধ্যস্থলে বেদনা, এবং পৃষ্ঠে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা দেখা দেয়। হস্ত ও পদের শীতলতা এবং হস্ত-পদাদির নীল আভা। কাশির সহিত হস্ত-পদাদিতে খালধরা। কাশি এত ভীষণ হয় যে, রোগীর আক্ষেপ দেখা দেয়। এই সকল আক্ষেপিক কাশির সঙ্গে, বিশেষতঃ ক্ষয়রোগ অবস্থায় জ্বরের আক্রমণ হয়। শীত, শীত ভাব এবং একপার্শ্বিক শীত। হুপিং কাশির সহিত শীত ও জ্বর। কণ্ঠনলীর প্রদাহের সহিত শীত ও জ্বর। জ্বরের উত্তাপ ও কাশি মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধিযুক্ত হয়। কপালে ও হস্ত-পদাতিতে শীতল ঘৰ্ম্ম। জ্বরের পর সর্বাঙ্গে শীতল ঘৰ্ম্ম। কাশির সহিত শরীরের সর্বত্র প্রচুর ঘৰ্ম্ম। কাশির পরে অত্যন্ত অবসন্নতা। জ্বরের সহিত হুপিং কাশি।
[Drosera – dosos, dew, juice]
অপর নাম – সানডিউ (Sundew), মুর গ্রাস (Moorgrass) .
বাংলায় – সূৰ্য্যশিশির।
ইহা শৈবালময় জলাশয়ের একপ্রকার পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। পুষ্পোদগম সময়ে সমগ্র বৃক্ষ থেকে ঔষধার্থে এর মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
* এতে গভীর শব্দবিশিষ্ট, স্বরভঙ্গযুক্ত, কুকুরের ডাকার ন্যায় বা কাসরঘণ্টা বাজার ন্যায় (sound of trumpet) শব্দবিশিষ্ট কাশি আছে। ভাৰ্ব্বাসকামের কাশির সঙ্গে এর কতকটা সাদৃশ্য থাকলেও ড্রসেরায় স্বরযন্ত্রের অধিক উপদ্রব থাকে এবং রোগী কথা বলার সময় একপ্রকার গভীর চাপা সুরে (base sound) কথা বলে। ইহাও আমাদের আক্ষেপিক কাশির ও হুপিং কাশির প্রধান ঔষধ। কাশির সঙ্গে বুকের ও উদরের পেশীর অকুঞ্চন (constriction) হয়। এজন্য রোগী হাত দিয়ে ঐস্থান চেপে ধরে। কাশি মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধি পায়।