ভেইন সমূহে রক্ত সঞ্চয়, আভ্যন্তরিক ভাবে চাপছে এমন বেদনা। |
অসারে রক্তস্রাব- আঘাতের পরে, ঋতুস্রাবের সময়, নাক দিয়ে রক্তস্রাব। |
আঘাত লাগার মত ব্যথা, স্পর্শে বৃদ্ধি। |
সার্জারির পর ক্ষতে ব্যথা থাকলে ও অতিরিক্ত রক্তস্রাব হেতু দুর্বলতা হলে এটি উপকারী। |
শিরাসমূহে রক্তাধিক্য, রক্তস্রাব, শিরাস্ফীতি এবং অর্শ, তৎসহ আক্রান্ত অংশে থেঁৎলিয়ে যাবার মত টাটানি ব্যথা। এইগুলিই এই ঔষধের প্রধান কার্যক্ষেত্র বলে মনে করা হয়। এই ঔষধটি শিরার আচ্ছাদনের উপর কাজ করে। এর ফলে শিরার শিথিলতা দেখা দেয় এবং তৎসহ শিরায় রক্তাধিক্য ঘটে। শরীরের যে কোন অংশ থেকে নিষ্ক্রিয় শৈরিক রক্ত স্রাব। মুক্ত, বেদনাদায়ক ক্ষতে খুব ভালো কাজ করে, তৎসহ রক্তস্রাবজনিত কারণে দুর্বলতা। অস্ত্রোপচারের পরে মর্ফিয়ার থেকে এই ঔষধ বেশি ভাল কাজ করে। (হেলমিউথ)।
মাথা – রোগী তার প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রত্যাশা করে। মাথার একদিকের রগ থেকে অপর দিকের রগ পর্যন্ত একটি অর্গল রয়েছে এই জাতীয় অনুভূতি। মাথায় পূর্ণতার অনুভূতি, এর পরেই নাক থেকে রক্তস্রাব। কপালাস্থির অসাড়তা।
চোখ – বেদনাদায়ক দুর্বলতা; চোখে টাটানিব্যথা; রক্তচক্ষু, প্রদাহযুক্ত রক্তবহানলীতে অতিরিক্ত রক্তাধিক্য। চোখের ভিতর রক্তস্রাব হলে, এই ঔষধ ঐ রক্তস্রাব শোষন দ্রুততর করে। মনে হয় চোখ ভিতর দিক থেকে বাইরের দিকে ঠেলে আসছে।
নাক – নাক থেকে প্রচুর রক্তস্রাব; স্রাব অপ্রচল, জমাট বাঁধে না, তৎসহ নাকের অস্থির উপর কষাভাব। নাক থেকে দূর্গন্ধ বের হয়।
গলা — শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রসারণ ও নীলবর্ণ,গলার শিরার স্ফীতাবস্থা।
পাকস্থলী — জিহ্বায় জ্বালাকর অনুভূতি। পিপাসা। উভয় দিকের কিনারায় ফোস্কা। বমির সঙ্গে কালো বর্ণের রক্ত উঠে। পাকস্থলীর ভিতর দপদপানি ও বেদনা।
মল – মলদ্বার টাটানি ব্যথা ও হেজে যাবার মত অনুভূতি। অর্শ, প্রচুর রক্তস্রাব হয়, তৎসহ টাটানি ব্যথা। আমাশয় সরলান্ত্রে দপদপানি।
প্রস্রাব — প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত, তৎসহ রোগের বৃদ্ধি।
স্ত্রীরোগ – ডিম্বাশয়ের রক্তাধিক্য ও স্নায়ুশূল, তীব্র টাটানি ব্যথা। ঋতুস্রাব বন্ধ হেতু অন্যত্র রক্তস্রাব। জরায়ু থেকে রক্তস্রাব, তৎসহ, পিঠের দিক থেকে কিছু ঠেলে নেমে আসছে এই জাতীয় বেদনা। ঋতুস্রাব কালো, প্রচুর, তৎসহ তলপেটে টাটানিব্যথা। দুটি ঋতুকালের মধ্যবর্তী সময়ে জরায়ু থেকে রক্তস্রাব। দুটি ঋতুকালের মাঝের সময়ে বেদনা (জে. ডব্লিউ ওয়ার্ড)। যোনিপথ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রচুর প্রদরস্রাব। যোনিকপাটে চুলকানি। প্রস্রাবের পরে মিল্ক লেগ (ফিমোর্যাল শিরার প্রদাহ, সাধারণতঃ এক্ষেত্রে লালচে ভাব দেখা যায় না), অর্শ ও স্তনের বোঁটায় টাটানি ব্যথা। জরায়ু থেকে রক্তস্রাব; অপ্রবল স্রাব। যোনিপথের প্রদাহ, ডিম্বাশয়ের প্রদাহ, সমগ্র পেটে টাটানি ব্যথা। পায়ের শিরা স্ফীতি তৎসহ লালচে ভাব থাকে না।
পুরুষের রোগ — রেতো রজুতে বেদনা, বেদনা অন্ডগুলিতে প্রসারিত হয়। অন্ডকোষপ্রদাহ। অন্ডদ্বয়ে বেদনা। অন্ডদ্বয়ের প্রদাহ। অন্ডদ্বয়ের বিবৃদ্ধি, উত্তপ্ত এবং বেদনাদায়ক। ইপিডিডাইমসের প্রদাহ।
শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ – কাশির সঙ্গে ফুসফুস থেকে রক্ত উঠে; সুড় সুড় কর কাশি। বুকের ভিতর টাটানি ও সঙ্কোচনের অনুভূতি।
পিঠ – গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা থেকে ক্ষতবৎ বেদনা, নীচের দিকে নামে। কোমর প্রদেশে ও পাকস্থলীর নিম্নাংশের উপর তীব্র বেদনা, বেদনা নীচের দিকে পা পর্যন্ত নামে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ — বাহু ও পা গুলিতে ক্লান্তিভাব। পেশীসমূহ ও সন্ধিগুলি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। শিরা স্ফীতি। পিঠ ও হিপ জয়েন্টস্থানে শীতবোধ, পা পর্যন্ত প্রসারিত হয়। স্নায়ুশূল।
চামড়া — নীলবর্ণের শীত স্ফোটক। শিরার প্রদাহ। পোড়ানারাঙ্গা। শিরা স্ফীতি ও ক্ষত সমূহ: অত্যন্ত টাটানি। পুড়ে যাবার মত অবস্থা কালশিরা। আঘাতজনিত প্রদাহ।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – উষ্ণতা, আর্দ্র আবহাওয়া।
সম্বন্ধ – অর্শে তুলনীয় ক্যাল্কেরিয়া ফ্লোর; এলো; মিউরিয়েটিক অ্যাসিড, শিরার স্ফীতাবস্থায়। ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা।
তুলনীয় — আর্নিকা, ক্যালেন্ডুলা, ট্রিলিয়াম; বেলিস; সালফিউরিক অ্যাসিড; পালমেটিনা।
দোষঘ্ন – আর্নিকা।
পরিপূরক – ফেরাম।
শক্তি – অরিষ্ট থেকে ৬ষ্ঠ শক্তি। পরিশ্রুত অরিষ্টের বাহ্যিক প্রয়োগ।
[Hammamelis hama, like to, melis, an apple tree.]
অপর নাম – উইচ হিজল (Witch-Hazel)
ইহা হেমামেলিসী জাতীয় এক প্রকার উদ্ভিদ। এর শাখাপ্রশাখার সরস ছল ও মূল থেকে অরিষ্ট তৈরী করা হয়। এর উপক্ষারকে হেমামেলিন বলে।
হেমামেলিসের – মূলকথা
১। শৈরিক রক্তস্রাব, উক্ত কালচে ও চাপ বাধা (clotted); শিরাগুলি পূর্ণ, বিবর্দ্ধিত ও স্পর্শাদ্বেষ বিশিষ্ট (sore)।
হেমামেলিস – পর্যালোচনা
হেমামেলিস ভার্জিনিকা আর একটি ঔষধ যাতে থেঁৎলে যাওয়ার মত টাটানি ব্যথা খুব স্পষ্টভাবে বর্তমান। কিন্তু আর্নিকার সম্বন্ধে আলোচনা করার সময় এর উল্লেখ করা হয়নি। তবে এই টাটানি ব্যথা কখন কখন বাতরোগে দেখা যায় এক আর্নিকা ব্যর্থ হলেই হেমামেলিস আরোগ্য করে। কিন্তু দুটি ঔষধের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল “আনিকা কৈশিক নাড়ীর বা ক্যাপিলারীর উপর অধিক ক্রিয়া প্রকাশ করে এবং সেজন্য উহাদের শিথিলতা জন্মে ও কাল দাগ বা কালশিরে প্রকাশ পায়। আর হেমামেলিশের ক্রিয়া জন্মে শিরার উপরে; তাই শিরা-অতিশয় পূর্ণ, বিবর্জিত ও ব্যথা যুক্ত (স্পর্শাদ্বিষ্ট)।
*একজন গ্রন্থাকার বলেন “হেমামেলিস শিরার একোনাইট”।
রোগীদেহে ব্যবহার থেকে আমরা এই ঔষধ সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারি। ইহা প্রায় সকলপ্রকার শিরাস্ফীতি রোগেই উপযোগী (ফ্লোরিক অ্যাসিড)। এক্ষেত্রে পালসেটিলা এর প্রবল সমকক্ষ ঔষধ; কিন্তু শিরার টাটানি ব্যথা বা স্পর্শাদ্বেষ ছাড়া একে ব্যবহারের অন্য নির্দেশক লক্ষণ আমার আর জানা নেই।
পরীক্ষায় এর দ্বারা উৎকট ধরনের রক্তস্রাবের উৎপত্তি হয় এবং অত্যন্ত কালচে ধরনের চাপচাপ (clotted) শৈরিক রক্তের (venous blood) চিকিৎসায় ইহা ব্যবহৃত হয়। নাক থেকেই হোক, অন্ত্র থেকেই হোক বা ফুসফুস বা মূত্রাশয় থেকেই হোক, নিঃসন্দেহে এর রক্তস্রাব দমনের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। আমি যেখানেই একে ব্যবহার করছি, সেখানেই সন্তোষজনক ফল পেয়েছি। তাছাড়া ইহা কোন তীব্র বিষ নয়, তাই কুফল ছাড়াই ইহা সন্তোষজনকভাবে নিম্নক্রমেই কাজ করে।
এর একটি প্রধান ব্যবহার স্থূল অণ্ডকোষ প্রদাহ বা অরকাইটিস (orchitis), শুক্ৰবাহী শিরার (spermatic veins) প্রদাহে। এর পরীক্ষা লক্ষণেও ইহা পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
অর্শই হোক বা টাইফয়েড জ্বরই হোক, মলদ্বার থেকে রক্তপাতে রক্তের পূর্ববর্ণিত প্রকৃতিতে হেমামেলিস সুন্দর কাজ করে।
আর্নিকা ও ক্যালেন্ডুলার মত হেমামেলিসও বাহ্যিকভাবে প্রয়োগে ভাল কাজ করে। তবে আমি বাহ উপঘাত ব্যতীত অন্যত্র অর্থাৎ অন্য রোগে একে বাহ্য প্রয়োগের পক্ষপাতী নই।