হেলেবোরাস নাইগার HELLEBORUS NIGER [Hell]

সংঙ্গাশূন্য বা অনুভূতিশক্তি রহিত, ঠোঁট ও কাপড় খোঁটে, গভির মনোযোগ দিলে উপশম।
সংজ্ঞাহীন কিন্ত মুখে পানি দিলে অতিশয় আগ্রহের সহিত পান করে, চামচ অথবা যে পাত্রে পানি দেয়া হয় তা কামড়ে ধরে।
মনোযোগ না দিলে পেশির কাজ বন্ধ হয়ে যায়, যখন অন্যমনস্ক ভাবে চলে তখন মাতালের মত টলে।
এক হাত ও এক পা আপনা আপনি নড়তে থাকে।
বিকাল ৪ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত বৃদ্ধি।

উপযোগিতা — দুর্বল, নরমপ্রকৃতি, সোরাদোষযুক্ত শিশু, যারা মাথার অসুখে ভোগে যাতে মস্তিষ্কে সৈহিক (serous) রস জমে (বেল, ক্যাল্ক-কা, টিউবার); তাদের পক্ষে উপযোগী। বিষণ্ন, দুঃখিত, হতাশ, বিরক্ত অথচ চুপ করে থাকে টাইফয়েড হবার পর, বালিকাদের বয়োসন্ধি কালে বা ঋতুস্রাব একবার শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে উপরোক্ত মনের ভাব। খিটখিটে—সহজেই বিরক্ত হয় সান্ত্বনা দিলে বেড়ে যায় (ইগ্নে, নেট-মি, সিপি, সাইলি)–কেউ বিরক্ত করুক তা চায় না (জেল, নেট-মি)।

জ্ঞান থাকে না, বোকার মত মুখের ভাব প্রশ্ন করলে ধীরে ধীরে উত্তর দেয় জড়ভাবের তরুণ অবস্থার প্রতিচ্ছবি (পুরান জড়ভাব-ব্যারা কা)।

শিশুদের দাঁত ওঠার সময় মাথার অসুখ (বেল, পডো); মস্তিষ্কে ভয়ানক সৈহিক রস জমার আশঙ্কা (এপিস, টিউবার)।

মেনিনজাইটিস্-তরুণ মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড স্নায়ুর প্রদাহ হয়ে তাতে রস : জমে সম্পূর্ণ বা আংশিক পক্ষাঘাত, সাথে মস্তিষ্ক প্রদাহ হয়ে, থেকে থেকে জোরে চিৎকার (Cry-Encephalique) করে ওঠে।

চিন্তাশূন্য শূন্যদৃষ্টি, একদৃষ্টি চেয়ে থাকে। চোখ বড় হয়ে যায়—চোখে আলো পড়লেও চোখ বন্ধ হয় না, চোখের তারা বড় যায় বা একবার বড় হয়ে যায় বা একবার বড় আরেকবার ছোট হতে থাকে ।

যেন ঘুমিয়ে আছে ঘুমের মাঝে-গোঙানি, চিৎকার করে ওঠে ।

স্কারলেট জ্বর এর পরে বা টিউবারকুলার দোষজনিত মস্তিষ্কে দ্রুত জলজমা রোগ (Hydro Cephalus। Hydro= জল, Cephale = মাথার খুলি, En-Cephalo = খুলির মধ্যে) হয় (এপিস, সালফ, টিউবার) ঐ রোগে এক হাত পা আপনা হতে নড়তে থাকে। এই লক্ষণে উপযোগী।

তড়কা বা মৃগী — ঐ সাথে সারা দেহ প্রচন্ড ঠান্ডা শুধুমাত্র মাথা বা পেছনটা গরমভাব থাকতে পারে (আনিকা)। আগ্রহের সাথে ঠান্ডা জলপান করে, চামচ কামড়ে ধরে কিন্তু চেতনা থাকে না।

যেন কিছু চিবাচ্ছে এই রকম মুখের ভাব, মুখের কোন কাটা ও ঘা হয়— নাকে কালো ঝুলের মত শুকনো ময়লা বা মামড়ি জমে।

অবিরত, ঠোঁট, কাপড় চোপড় খুটতে থাকে, অবিরত নাকের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে খুটতে থাকে। (সম্পূর্ণ সজ্ঞান অবস্থায় এইরূপ খুটলে = অরাম-ট্রিফ) ।

বালিশে মাথা এপাশ ওপাশ করে, হাত দিয়ে মাথা চাবড়ায়।

উদরাময় – তরুণ হাইড্রোসেফেলাস রোগে, দাঁত ওঠার সময়, গর্ভাবস্থায়, জলের মত পরিষ্কার চটচটে বর্ণহীন শ্লেষ্মা, ব্যাঙের ডিমের মত মলবেগ ছাড়াই আপনা হতে মলত্যাগ ।

প্রস্রাব — লাল, কাল, অন্ন, কফি গুড়ার মত তলানি পড়ে ।মস্তিষ্কের রোগ ও শোথ রোগ মূত্রবন্ধ, প্রস্রাবে এলবুমেন থাকে।

শোথ – মস্তিষ্কে, বুকে, পেটে স্কারলেট জ্বর বা সবিরাম জ্বর এরপর শোথ-সাথে জ্বর, দুর্বলতা, মূত্রবন্ধ, উদ্ভেদ বসে গিয়ে শোথ (এপিস, জিঙ্কাম) ।

সম্বন্ধ — মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্ক ঝিল্লীর রোগে এপিস, এপোসাই, আর্স, বেল, ব্রায়ো, ডিজি, ল্যাকে, সালফ, টিউবার, জিঙ্কামের সাথে তুলনীয় ।

শক্তি – θ, ৩x, ৬x ৩০ ।

[Cry-Encephalique-মস্তিষ্ক প্রদাহ রোগে চিৎকার করে ওঠা মস্তিষ্কের অসুখে হঠাৎ জোরে চিৎকার করে ওঠে—সাধারণতঃ মাথার অসুখ নির্দেশ করে। মস্তিষ্কে Serous Fluid জমে ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে। প্রচন্ড যন্ত্রণা হয় কোন রকম নড়াচড়ায় যন্ত্রণা বেড়ে গেলে ঐরূপ চিৎকার করে ওঠে, অথচ চোখে জল আসে।]

এই ঔষধটি ইন্দ্রিয়গুলির অবসন্নতা উৎপন্ন করে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবনশক্তি, আস্বাদ ক্রিয়া অসম্পূর্ণ, এবং এই প্রকার সার্বিক পেশীসমূহের দুর্বলতা, যা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতে পরিণত হয়, এবং তৎসহ শোথাবস্থাজনিত কারণে তরল পদার্থের জমা হওয়া। এই কারণে এই ঔষধটি জীবনীশক্তির দুর্বলতাবস্থা ও সাংঘাতিক রোগসমূহে কার্যকরী হয়। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বৃদ্ধি বিকাল ৪টা থেকে রাত্রি ৮টা (লাইকোপোডিয়াম)। ক্রমশঃ অবসন্ন হয়ে পড়ার মত অনুভূতি। মস্তিষ্কের শোথাবস্থায় রসসঞ্চয়। বিষাদগ্রস্তভাবের উন্মাদ অবস্থা।

মন – কোন কিছুর উত্তর করে ধীরে ধীরে। চিন্তাশক্তিহীণ; একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনৈচ্ছিকভাবে দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ। সম্পূর্ণ অচৈতন্য অবস্থা। ঠোঁট ও জামাকাপড় খুঁটতে থাকে।

মাথা — কপালের চামড়া ভাঁজ হয়ে কুঁচকিয়ে থাকে, ঠান্ডা ঘাম। হত চেতনকারক মাথার বেদনা। দিনে এবং রাত্রে মাথা এদিক-ওদিক নাড়তে থাকে; করুনসুরে কাঁদে, হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠে। বালিশের উপর মাথা গুজে রাখে; মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করে। মাথার পিছনের অংশে মৃদু বেদনা, তৎসহ মাথায় ভিতরে জলোচ্ছাসের অনুভূতি। মাথার বেদনার শেষে বমি।

চোখ – চোখের তারাগুলি উপর দিকে উঠে যায়; ট্যারা দৃষ্টি, উদ্দেশ্যহীনভাবে চেয়ে থাকে। চোখের তারা বিস্ফারিত। চোখদুটি বিস্তৃতভাবে খোলা, চক্ষু কোটর গত। ঘ্রান। শক্তি কমে যায়। নাকের অগ্রভাগ সূঁচালো।

মুখমন্ডল — ফ্যাকাশে, বসে যাওয়া।ঠান্ডা ঘাম। কুঁচকালো। বামদিকের মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল, আক্রান্ত এত বেশী স্পর্শকাতর যে, রোগী এমনকি চিবাতে পর্যন্ত পারে না।

মুখগহ্বর – মুখ থেকে তীব্র দূর্গন্ধ বেরিয়ে থাকে। ঠোঁট শুষ্ক ও ফাটা। জিহ্বা লালচে ও শুষ্ক। নীচের চোয়াল ঝুলে পড়ে। অর্থহীনভাবে ঠোঁট খোঁটা। দাঁত কড়মড় করা। চিবানোর মত নড়াচড়া। লোভের বশবর্তী হয়ে ঠান্ডা জল গিলতে থাকে, যদিও এই অবস্থায় রোগী অচৈতন্য থাকে। শিশু অতিরিক্ত ইচ্ছার সঙ্গে স্তনদুগ্ধ পান করে, তৎসহ খাবারে বিতৃষ্ণা। লালাস্রাব, মুখের কোনগুলিতে ক্ষত।

উদর – পেটের ভিতর গলগল শব্দ হয়। যেন মনে হয় অন্ত্র জলে পূর্ণ। স্ফীত, স্পর্শে বেদনা।

মল – জেলির মত সাদা শ্লেষ্মা; অসাড়ে মলত্যাগ।

প্রস্রাব – মূত্ররোধ, অল্প, কালচে, কফির মত তলানিযুক্ত, বারে বারে বেগ। শিশু কিছুতেই প্রস্রাব করতে পারে না। প্রস্রাব থলির অতিরিক্ত স্ফীতাবস্থা।

শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ – বারে বারে দীর্ঘশ্বাস। শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত। বুকের ভিতর সঙ্কোচন; শ্বাস নেবার জন্য হাঁপাতে থাকে। বুকের ভিতর জল জমা। (মার্কসালফ)।

 অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – একদিকের বাহু ও পায়ের স্বয়ংক্রিয় নড়াচড়া। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভারবোধ ও বেদনাপূর্ণ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টানটান করে রাখে। হাতের ‍বুড়ো আঙ্গুল হতের মধ্যে টেনে রাখে (কিউপ্রাম) হাতের আঙ্গুলে ও পায়ের আঙ্গুলের মধ্যবর্তী অংশে ফোস্কা জাতীয় উদ্ভেদ।

ঘুম – ঘুমের ভিতর হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠে। গাঢ় ঘুম। কিছুতেই ঘুম থেকে সম্পূর্ণভাবে জাগানো যায় না।

চামড়া – ফ্যাকাশে, শোথযুক্ত, চুলকায়। চামড়ার উপর কালোবর্ণের ছোপ। চামড়ায় হঠাৎ করে জলপূর্ণ স্ফীতি। মাথার চুল ও হাতের নখ পড়ে যায়। অ্যানজিও নিউরোটিক ঈডিমা।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – সন্ধ্যা থেকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত, গায়ে চাপা না রাখলে।

সম্বন্ধ – হেলেবোরাস ফেটিডাম – (বিশেষ করে প্লীহার কাজ করে। সিয়েনোথাম), এছাড়াও সরলান্ত্র ও সাইয়েটিক নার্ভের উপর কাজ করে। প্লীহার বেদনা স্কন্ধাস্থি, ঘাড় ও মাথা পর্যন্ত প্রসারিত হয়। সন্ধ্যায় ও বামদিকে বৃদ্ধি; প্লীহার পুরাতন বিবৃদ্ধি; জরায়ুর অতিবৃদ্ধি; গ্রন্থিজ বিবৃদ্ধি; নখ ও চুল পড়ে যায়। চামড়ার খোলা উঠে।

হেলেবোরাস ওরিয়েন্ট্যালিস- (লালস্রাব)

দোষঘ্ন – ক্যাম্ফর, সিঙ্কোনা।

তুলনীয় – রস সঞ্চয় হবার আশঙ্কা, টিউবারকিউলিয়াম, এপিস মেল, জিঙ্কাম, ওপিয়াম, সিঙ্কোনা, সিকিউটা, আয়োডোফর্ম।

শক্তি – অরিষ্ট, থেকে ৩য় শক্তি।

হেলিবোরাসের সকল রোগেই অল্লাধিক পরিমাণে সংজ্ঞাহীনতা বর্তমান থাকে। কখন কখন উহা সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীনতা, কখন কখন আংশিক সংজ্ঞাহীনতা, কিন্তু সংজ্ঞাহীনতা এবং মন্থরতা থাকিবেই।

হেলিবোর মস্তিষ্ক রোগে, মেরুমজ্জা রোগে, সাধারণভাবে স্নায়ুপ্রণালী ও মনের রোগে উপযোগী, কিন্তু প্রধানতঃ মস্তিষ্ক ও মেরুমজ্জা এবং উহাদের ঝিল্লীর তরুণ প্রদাহে এবং উন্মাদের কাছাকাছি যায়, এরূপ রোগে উপযোগী। শরীর ও মনের এক অদ্ভুত প্রকারের জড়তা অথবা বিমূঢ় অবস্থা বর্তমান থাকে। চূড়ান্ত প্রকারের সংজ্ঞাহীনতা থাকে। মস্তকোদক অবস্থায় পরিণত হইতেছে, এরূপ মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয় বা প্রদাহের সহিত সংশ্লিষ্ট সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীনতা, অচৈতন্যতার সহিত মস্তিষ্ক-মেরুমজ্জা-প্রদাহ বা মস্তিষ্কপ্রদাহ। স্ট্র্যামোনিয়াম অথবা ‘বেলেডোনা’য় যেরূপ প্রচন্ডতা ও তীব্র প্রলাপ দেখা যায়, হেলিবোরে তাহার অভাব থাকে। উহা মৃদুতাবিশিষ্ট। আবার প্রলাপের তীব্রতা চলিয়া গেলে, রোগী যখন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্থিত হয়, তখনও ইহা উপযোগী। রোগী চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে, চক্ষু আংশিকভাবে খোলা থাকে, সে মাথা চালিতে থাকে, মুখ খোলা থাকে, জিহ্বা শুষ্ক, চক্ষু ঔজ্জ্বল্যরহিত, এবং শূন্যদৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। কথা বলিতেছে, এরূপ লোকের দিকে একদৃষ্টে তাকাইয়া থাকে। বহুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া, তারপর কথার উত্তর দেয় অথবা আদৌ উত্তর দেয় না।

মস্তিষ্ক রোগের প্রবল আক্রমণ সহসাই শেষ পরিণতি লইয়া আসে, কিন্তু যে-আক্রমণগুলি অপেক্ষাকৃত মৃদু, তাহারাই দীর্ঘকালস্থায়ী হয় এবং ঐরূপ ক্ষেত্রেই হেলিবার প্রয়োজন হয়। হেলিবোর রোগী সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং কখন কখন মাসের পর মাস এইরূপ জড় অবস্থায় থাকিয়া যায় এবং ক্রমশঃ শীর্ণ হইতে থাকে। সে হাত-পা গুটাইয়া চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে, তাহাকে বিবর্ণ ও শীর্ণ দেখায়। প্রশ্ন করিলে সে ধীরে ধীরে উত্তর দেয়। পাঠ্যপুস্তকে বলে “চৈতন্যহীনতার কাছাকাছি যায়, এরূপ বিমূঢ়তা” আর একটি সাধারণ ভাষা, শরীরের ও মনের প্রভাবের ন্যূনতা।” পেশীসমূহ ক্রিয়া করে না, তাহারা ইচ্ছাশক্তির অনুগামী হয় না। ইহা এক প্রকার পক্ষাঘাতিক অবস্থা, কিন্তু “মূঢ়ভাব” কথাটি দ্বারাই উহাকে প্রকাশ করা হইয়া থাকে। কোনরূপ কল্পনা করিতে পারে না, মনোযোগ সন্নিবিষ্ট করিতে পারে না, মনকে কেন্দ্রীভূত করিতে পারে না। রোগীকে কতকটা জড়ের মত দেখায়।

প্রলাপ সব সময়ে থাকে না, আর যদি থাকে, তাহা হইলেও উহা বিড়বিড় করা প্রকৃতির। ক্রমেই বিমূঢ়ভাব বাড়িতে থাকে, ক্রমেই প্রলাপের পরিবর্তে “কর্মশক্তিরাহিত্য” এবং “বাকশক্তি-রাহিত্য” উপস্থিত হইতে থাকে। মনের সুস্পষ্ট বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, সে চিন্তা করিতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে, রোগাবস্থার শেষের দিক, রোগীকে জাগাইয়া তোলা যায় এবং সে এরূপ ব্যবহার করে, যেন সে চিন্তা করিতে চেষ্টা করিতেছে, নড়িতে চেষ্টা করিতেছে; কিন্তু বাস্তবিক সে কেবলমাত্র অর্ধ উন্মীলিত চক্ষে ডাক্তারের দিকে চাহিয়া থাকে, তাহার মুখভাব হতবুদ্ধির মত থাকে এবং সে হস্তাঙ্গুলির ডগা খুঁটিতে থাকে।

হেলিবোরের রোগীকে খুব বেশী করিয়া জাগাইয়া না তুলিলে এবং উত্তেজিত না করিলে সে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে তাহার মনের কথা বলিতে পারে না। কিন্তু ঐরূপভাবে জাগাইলেও সে ভূত-প্রেতের কথা বলিতে থাকে অথবা ভূত-প্রেত দেখিতে থাকে। সে শিং ও লেজবিশিষ্ট যেসব প্রেতের চিত্র দেখিয়াছে বা যে-সকল মূর্তির কথা শুনিয়াছে, সে কল্পনায় তাহাদিগকেই দেখিতে থাকে। যে-যুবক কখনও ভূতপ্রেতের কথা শুনে নাই, তাহার প্রলাপে ঐরূপ অবাস্তব দর্শন থাকিবে না। সে যেরূপভাবে কল্পনা করিতে শিক্ষা পাইয়াছে, তাহার অলীক দর্শনও তদনুরূপ আকার লাভ করিবে।

হেলিবোরে একপ্রকার অদ্ভুত অৰ্দ্ধ-হিষ্টিরিয়া সদৃশ অবস্থা একপ্রকার উন্মাদ লক্ষণ আছে। সে (স্ত্রী) কল্পনা করে যে, পাপের ফলে সে তাহার করুণা পাইবার দিনটি হারাইয়াছে। অরমে’র ন্যায় তাহার মনে হয়, যেন সে অন্যায় করিতেছে, সে ক্ষমার অযোগ্য পাপ কাজ করিতেছে। এইভাবে ঔষধটি উন্মাদনার কাছাকাছি যাইতে থাকে।

“একজন বৃদ্ধা স্ত্রীলোককে চারিদিকের স্ত্রীলোকেরা চোর অপবাদ দিলে, সে উহাতে এতই মর্মপীড়া পাইয়াছিল, সে গলায় দড়ি দিয়াছিল। এই আত্মহত্যা ঐ গ্রামের স্ত্রীলোকদের মনে এরূপভাবে কার্য্য করিয়াছিল যে, একজনের পর একজন নিজেকে ঐ বৃদ্ধার মৃত্যুর জন্য অপরাধিনী বলিয়া মনে করিয়াছিল।”

হেলিবোরের রোগগ্রস্ত শিশু একটি অত্যাশ্চর্য্য চিত্র। এই অবস্থা বিশেষভাবে দুই হইতে দশ বৎসরের শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। একদৃষ্টে চাহিয়া থাকা চিৎ হইয়া শুইয়া থাকা, অর্দ্ধনিমীলিত চক্ষে একদৃষ্টে চাহিয়া থাকা এই ঔষধের প্রকৃতিগত লক্ষণ। সময়ে সময়ে ওষ্ঠ দুইটি কোনরূপ শব্দ না করিয়া নড়িতে থাকে। শিশু যেন কিছু বলিতে চাহিতেছে, এরূপভাবে ওষ্ঠ দুইটি নড়ে, কিন্তু তারপর প্রশ্ন করিলে সে যে কথাগুলি বলিতে চাহিয়াছিল তাহা হারাইয়া যায়, ভুলিয়া যায়।

হাইড্রোসিফেলাস (মস্তকোদক) রোগে তীব্র চিৎকার, মস্তিষ্করোগসূচক চিৎকার। শিশু নিদ্রার মধ্যেই চিৎকার করিয়া উঠে। সে ‘এপিসে’র ন্যায় মাথার নিকটে হাত লইয়া যায় এবং বিকট চিৎকার করিয়া উঠে। কিন্তু এপিসে’র হাইড্রোসিফেলাস অনেক বেশী প্রবল ও তীব্র। ‘এপিসের রোগী লাথি মারিয়া আচ্ছাদনবস্ত্র ফেলিয়া দেয়, কিন্তু এই ঔষধের রোগী আচ্ছাদনবস্ত্রের বিষয় গ্রাহ্য করে না, কোন কিছুই গ্রাহ্য করে না। সে সহজে বিরক্ত হয় না। সে হাত-পা গুটাইয়া চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে, সময়ে সময়ে তাহার হাত-পা আপনা আপনি নড়িতে থাকে। কখন কখন একপার্শ্ব পক্ষাঘাতিক হয় এবং অপর পার্শ্ব আপনা আপনি নড়িতে থাকে।

“অনুভূতিহীন টাইফয়েড” বলিয়া খ্যাত, একপ্রকার দুষ্ট প্রকৃতির রোগে হেলিবোর উপযোগী। নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি অনুসারে ঔষধটি ব্যবহৃত হয়। সর্বপ্রকারের বাহ্যিক ব্যাপারে ঔদাসিন্য। স্পর্শ করিলে অথবা অতিরিক্ত গরম কাপড়ে আচ্ছাদিত করিলে অথবা একেবারেই আচ্ছাদিত না করিলেও সে বিচলিত হয় না। সে উত্তাপে বা ঠান্ডায় বা কাঁটা ফোটানতে বা নাড়াচাড়া করায় বা চিমটি কাটায় অনুভূতিযুক্ত থাকে না। ঔদাসিন্য। পাঠ্যপুস্তকে যাহাকে “দুর্দম্য নীরবতা” বলা হয় তাহার বেশীর ভাগই এইরূপ অনুভূতিহীন নীরবতা, কথা বলিতে অক্ষমতা। মনে হয়, যেন সে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করিল, কিন্তু বাস্তবিক সে তাহা করে না, সে বুঝিতে পারে না কেমন করিয়া কথা কহিবে, সে চিন্তা করিতে পারে না।

যে-সকল লোক কেবল একটুমাত্র “সামঞ্জস্যচ্যুত হইয়া পড়িয়াছে, একটুখানি অপ্রকৃতিস্থ হইয়া পড়িয়াছে, তাহার কোন বিষয়ে বদ্ধমূল ধারণা। ঐ বদ্ধমূল ধারণা থাকিয়া যায়, তাহার সহিত আলাপ আলোচনা করিয়া তাঁহাকে ঐ ধারণার বহির্ভূত করা অসম্ভব হইয়া পড়ে। কোন স্ত্রীলোকের হয়ত বদ্ধমূল ধারণা জন্মিল যে, তিনি অমুক দিনে মরিবেন, কিছুতেই তাঁহার মাথা হইতে সে ধারণা দুর করিতে পারিবে না। ইহা একোনাইটে’র সদৃশ নহে, কারণ এখানে মৃত্যুভয় নাই। একোনাইটে’ মৃত্যুভয় আছে এবং সে মৃত্যুর সময়টি নির্ধারিত করিয়া দেয়। বদ্ধমূল ধারণা যে, তিনি কোন পাপ করিয়াছেন, সময়ে সময়ে তিনি ঐ পাপের নাম করিবেন। এবং উহার বর্ণনা করিবেন যেন উহা তাহার নিকট খুবই প্রকৃত। রোগিণী সক্ষম থাকিলে, তাঁহাকে দুঃখিত দেখাইবে, কারণ তিনি বসিয়া থাকিবেন এবং কিছুই বলিবেন না, মনে হয় যেন তিনি বিপদভারেই নিমজ্জিত রহিয়াছেন। কিন্তু আমরা অরমে যেরূপ মেঝের উপর হাঁটিতে হাঁটিতে এবং হাত মোচড়াইতে মোচড়াইতে বিলাপ করিতে দেখি, ইহাতে সেরূপ বিলাপভাব নাই। ইহা একপ্রকার অনুভূতিশূন্য অবস্থা, তিনি বিষন্ন এবং বিমর্ষ, কিন্তু সম্ভবতঃ কোন চিন্তাই করেন না। রোগিণী যতদিন চিন্তা করিতে সমর্থ থাকেন, ততদিন সান্ত্বনা দিবার কোনরূপ চেষ্টা করিলে, তাহার যন্ত্রণা বাড়িয়াই উঠে। নেট্রাম মিউরিয়েটিকামে’র ন্যায় সান্ত্বনা দিলে রোগলক্ষণ বাড়িয়া যায়, কিন্তু ‘নেট্রাম মিউরিয়েটিকামে’র রোগগুলি আদৌ এই ঔষধের রোগগুলির ন্যায় নহে। যদি হেলিবোরের রোগিণী তাহার লক্ষণগুলি সম্বন্ধে চিন্তা করিতে সমর্থন থাকেন, তাহা হইলে উহাতে তাহার লক্ষণগুলি উপশমিত হয়।

সময়ে সময়ে এই ঔষধটিতে আক্ষেপের ন্যায় অঙ্গসঞ্চালন থাকে, কিন্তু ঐগুলি প্রায়ই আপনা আপনি হইতে থাকে। ঐরূপ সঞ্চালনের সহিত ইচ্ছাশক্তির কোন সংযোগ থাকে না। অন্যমনস্কভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াইলে যেরূপ হয়, তিনি ঠিক সেইরূপভাবে অঙ্গ সঞ্চালন করেন।

হেলিবোরাসে রোগীর সর্বপ্রকার অসাড়ভাব থাকে। সমুদয় সংবৃত্তি অসাড় অবস্থায়, জড় অবস্থায় থাকে, একপ্রকার বিমূঢ়তা, সাধারণ অনুভূতিজ্ঞানের অপকর্ষ। পাঠ্যপুস্তকে বলে, “দৃষ্টিশক্তি অবিকৃত থাকে। কিন্তু তাহা হইলেও সে অসম্পূর্ণভাবে দেখে, যে দ্রব্যে তাহার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে, সে তাহা গ্রাহ্য করে না, অর্থাৎ তাহার দৃষ্টিপথটি নির্ভুলই থাকে, কিন্তু যদি তাহাকে প্রশ্ন করা যায় যে, সে কি দেখিল, তাহা হইলে সে কিছুই স্মরণ করিতে পারে না, উহাতে তাহার স্মৃতিশক্তি বা মনের উপরে কোনরূপ ছাপ পড়ে না।

বমনেচ্ছা বা বমনসহ শিরোঘূর্ণন। অবনত হইলে শিরোঘূর্ণন। সৰ্ব্বাঙ্গীন জড়তার সহিত সে মাথা চালিতে ও উৎক্ষিপ্ত হইতে থাকে। শিশু চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে এবং এপাশে-ওপাশে মাথা চালিতে থাকে। চক্ষু দুইটি অর্ধ-উন্মীলিত থাকে, সে বালিশের মধ্যে তাহার মাথার পশ্চাদ্দিক প্রবেশ করাইতে থাকে। ইহা আংশিকভাবে অজ্ঞানতা এবং আংশিকভাবে ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকের পেশীগুলির আকর্ষণ উপশমের চেষ্টা। রোগ যত বাড়িতে থাকে এই পেশীগুলিও ততই হ্রস্বতাপ্রাপ্ত হইতে থাকে; মস্তিষ্ক-মেরুমজ্জাপ্রদাহে ঠিক এইরূপটিই হয়, এবং শেষে মাথাটি পশ্চাদ্দিকে যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট হইয়া পড়ে।

মাথায় জ্বালাকর উত্তাপ, তীরবিদ্ধবৎ যাতনা, রক্তসঞ্চয়জনিত চাপনবৎ বেদনা থাকে। মস্তকের পশ্চাদ্দিকে ভীষণ শিরঃপীড়া। মস্তকের পশ্চাদ্দিকে মৃদু কামড়ানি; মস্তকের পশ্চাদ্দিকে অসাড়তাবোধ। মাথা কাঠের ন্যায় হইয়া যাওয়ার অনুভূতি, পূর্ণতা, রক্তসঞ্চয় ও চাপবোধ। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে যেরূপ হয়, তদ্রুপ শিরঃপীড়া, মস্তকসঞ্চালন এবং মুখমন্ডলের বিকৃতি। মোটামুটিভাবে তরুণ, কিন্তু মৃদু প্রকৃতির প্রাথমিক অবস্থা অতিক্রম করিয়া যাওয়ার পর, আমি শিশুদিগকে বিমূঢ় অবস্থায় শুইয়া থাকিতে দেখিয়াছি এবং হেলিবোর প্রয়োগের অনুরূপ অবস্থায় তাহারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঐভাবে পড়িয়া থাকিয়াছে। যখন ঔষধটি দেওয়া হইয়াছিল, তখন সঙ্গে সঙ্গে নহে, কিন্তু ক্রমে ক্রমে জীর্ণসংস্কার আরম্ভ হইয়াছিল। ঔষধটি ঐরূপ মন্থর, দুর্দম্য, মূঢ়ভাবাপন্ন মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড সংক্রান্ত রোগে ধীরে ধীরে কাজ করে। সময়ে সময়ে ঔষধ দেওয়ার পরদিন পর্যন্ত অথবা তার পরের রাত্রি পর্যন্ত কোনরূপ স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায় না, তারপর ঘৰ্ম্ম, উদরাময় বা বমন—ঐরূপ কোন প্রতিক্রিয়া উপস্থিত হয়। এই সময়ে কোন ঔষধ দিয়া বাধার সৃষ্টি করা উচিত নয়। ঐগুলি প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ। যদি শিশুর আরোগ্য হইবার মত জীবনীশক্তি থাকে, তাহা হইলে সে এখন আরোগ্য হইবে। যদি কোন ঔষধ দিয়া বমিটি থামান হয়, তাহা হইলে বমিটি থামিবে, কিন্তু হেলিবোরের ক্রিয়া নষ্ট হইয়া যাইবে। বমন বা ঘাম বা উদরাময় ঐভাবেই থাকিতে দাও এবং উহা ঐ দিনের মধ্যেই চলিয়া যাইবে। শিশু গরম হইয়া উঠিবে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই সজ্ঞান অবস্থায় ফিরিয়া আসিবে—আর তারপর কি হইবে? একবার ঐ অসাড়তাপ্রাপ্ত অঙ্গুলিগুলির এবং হস্ত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এবং দেহের সর্বত্র চৰ্ম্মের অসাড়তা প্রাপ্তির কথা মনে কর। ঐ জড়ত্বপ্রাপ্ত শিশুর প্রবুদ্ধ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ সর্বাপেক্ষা সাধারণ কি ব্যাপার উপস্থিত হওয়া উচিত? তোমাদিগের পক্ষে ইহা জানিয়া রাখা আবশ্যক। ইহা বাস্তবিক হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা শিক্ষাদানের অঙ্গীভূত নহে, কিন্তু এই ঔষধটি দেওয়ার পর তোমরা কি আশা করিতে পার, তাহা জানা থাকা চাই। ইহা রোগশয্যায় দেখা ব্যাপার, হেলিবোরাসের রোগী অথবা ‘জিঙ্কামে’র রোগী দেখিলে, তোমরা ইহা দেখিতে পাইবে। ভীতিপ্রদ বিমূঢ় অবস্থা সম্বন্ধে ‘জিঙ্কাম’ হেলিবোর অপেক্ষাও সম্ভবতঃ গভীরতর। মার্ক, এখন শিশুটির হস্তাঙ্গুলিগুলি ঝিনঝিন করিতে আরম্ভ করিবে। যেই তাহার স্নায়ুমন্ডলী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আসিতে থাকে, অমনি তাহার আঙ্গুলগুলিতে ঝিনঝিন করা আরম্ভ হয়, নাক ও কর্ণদ্বয় ঝিনঝিন করিতে থাকে এবং শিশু বিকট চীৎকার করিতে, একবার উপুর হইতে, একবার চিৎ হইতে এবং বিছানার চারিদিকে গাড়গড়ি দিতে আরম্ভ করে। প্রতিবেশীরা আসিয়া বলিবে, “যদি ডাক্তার শিশুকে রক্ষা করিবার জন্য কিছু না দিতে পারেন, আমি তাহাকে ছাড়াইয়া দিতে চাই।” কিন্তু ঐরূপ কিছু করিলে, নিশ্চয় জানিবে যে, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই তুমি শিশুটিকে মৃত অবস্থায় দেখিবে। শিশুটি এখন সুস্থতা লাভ করিতেছে, উহাকে অমনি রাখিয়া দাও। তুমি যদি শিশুর পিতাকে একাকী একটি ঘরে লইয়া গিয়া, পরে রোগী কিরূপ ব্যবহার করিবে তাহা না বুঝাইয়া দাও, তাহা হইলে ঐরূপ কোন রোগীকেই আরোগ্য করিতে পারিবে না। মাতাকে সঙ্গে লইও না, যদি তিনি অসাধারণ বুদ্ধিমতী না হয়; তাহাকে একটি কথাও বলিও না, কারণ শিশুটি তাঁহার সন্তান, তিনি তাহার প্রতি সহানুভূতিপরায়ণ, আর শিশুটিকে কাঁদিতে শুনিলে তিনিও কাঁদিতে আরম্ভ করিবেন, তিনি মাথা খারাপ করিয়া ফেলিবেন এবং তোমাকে বিদায় করিয়া দিবার জন্য শিশুর পিতার উপরে জিদ করিতে আরম্ভ করিবেন। কিন্তু তুমি শিশুর পিতাকে পূর্বেই একধারে লইয়া যাইবে এবং তাঁহাকে বলিবে যে, কিরূপ ঘটিতে চলিয়াছে, এবং তিনি নিজে যাহাতে সামলাইতে পারেন সেইজন্য তাহাকে জানাইবে যে, ঐরূপ চলিতে দেওয়া না হইলে, অর্থাৎ ঔষধটির ক্রিয়ায় বাধা পড়িলে, তিনি সন্তানটিকে হারাইবেন।

তাই উহা খুব ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা নহে, কিন্তু উহা এমন একপ্রকার চুলকানি, ঝিনঝিন এবং পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি যে, তাহাতে অত্যন্ত শারীরিক ও মানসিক ক্লেশ উপস্থিত হয়। সময়ে সময়ে শিশুর শরীরের প্রত্যেক অংশ হইতে ঐ লক্ষণগুলি চলিয়া যাইতে এক সপ্তাহ মত সময় লাগে, কিন্তু উহাদিগকে অমনি ছাড়িয়া দিলে, উহারা আপনা আপনিই চলিয়া যাইবে।

এই সমস্ত ব্যাপারে তুমি বিচলিত হইয়া পড়িবে। সেইজন্য বেশীক্ষণ রোগীর পার্শ্বে থাকিয়া, তাহাকে পর্যবেক্ষণ করিবে না, কারণ তুমি যদি ঐরূপ কর, তাহা হইলে, তুমিই ঔষধটিকে বদলাইয়া ফেলিবে। এলোপ্যাথি মতের কোন ডাক্তারের হাতে এরূপ রোগীর একটিও যে আরোগ্য হইয়াছে, এমন কথা আমি শুনি নাই।

মুখের অত্যন্ত রুগ্ন আকৃতি-নিমগ্ন, ক্রমশঃ শীর্ণতাপ্রাপ্ত। ইহাতে ভুসা জমার ন্যায় আকৃতি আছে, মনে হইবে ঠিক যেন নাসারন্ধ্রের মধ্যে এবং চক্ষুর কোণে খানিকটা ভুসা আটকাইয়া আছে। তোমরা বলিবে যে, রোগীটি মরিতে যাইতেছে। হেলিবোর না পাইলে, খুব সম্ভবতঃ তাহাই হইবে। এই ঔষধটি এরূপ রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োজন, যাহার সম্বন্ধে এলোপ্যাথরা কিছুই বুঝেন না এবং যাহার সম্বন্ধে তাহাদের কোন ঔষধও নাই। এরূপ রোগীর পরিণাম সম্বন্ধে অনুমান সৰ্ব্বদাই অশুভ। মুখমন্ডল অবশ্যই মানসিক লক্ষণগুলি প্রকাশ করে। কুঞ্চিত ললাট, ঠান্ডা ঘৰ্ম্মে আবৃত মুখের বিবর্ণতা এবং মস্তকে উত্তাপ। মুখমন্ডলের পেশীগুলির কুঞ্চন। আমরা ঠিক এই প্রকার মস্তিষ্করোগে ভ্রুকুটি ও কপাল কোঁচকান দেখিতে পাই। আমরা ‘লাইকোপোডিয়ামেও এইরূপ কপাল কোঁচকান পাইয়া থাকি, কিন্তু ‘লাইকো’র রোগ ফুসফুসে থাকে। এই ঔষধে নাসারন্ধদ্বয় বিস্তৃত এবং ভুসা জমিয়া থাকার ন্যায় হয়। নাসাপক্ষ বিশেষ সঞ্চালিত হয় না, কিন্তু অত্যন্ত বিস্তৃত থাকে। চক্ষুগোলকদ্বয় কাচপ্রভ এবং চক্ষুর তাওণি চটচটে থাকে।

এইরূপ জ্বরে অত্যন্ত তৃষ্ণা থাকে, রাক্ষুসে ক্ষুধা থাকে। বর্ণনাতীত বমনেচ্ছা ও বমন থাকে। ঔষধ পরীক্ষার প্রথম দিকে উদরাময় এবং আমাশয় হয়, তৎসহ প্রচুর সাদা আঠার ন্যায় মল থাকে, মল কেবলমাত্র বিবর্ণ, দুচ্ছেদ্য আমে পূর্ণ থাকে এবং তারপর পক্ষাঘাতিক কোষ্ঠবদ্ধতা আসে, আর পূর্ব বর্ণিতরূপ অবসন্ন, শীর্ণ মস্তিষ্কপীড়াগ্রস্ত রোগী দিনের পর দিন মলত্যাগ করে না, অথবা অন্ত্রের কোনরূপ ক্রিয়াই হয় না। দুই-একদিন পরে, পিচকারি দেওয়াতেও কোন ফল হয় না। সামান্য মাত্র কঠিন শুষ্ক মল। আবার, যখন প্রতিক্রিয়া উপস্থিত হয়, তখন উহার সহিত উদরাময়, ঘর্ম অথবা বমন থাকে, সম্ভবতঃ ঐ তিনটিই একসঙ্গে উপস্থিত হয়।

মূত্র অবরুদ্ধ বা মূত্রনাশ; সময়ে সময়ে উহা ফোটা ফোটা করিয়া গড়াইতে থাকে, অজ্ঞাতসারে নির্গত হয়। মূত্র ক্ষীণধারায় নির্গত হয়। রক্তাক্ত মূত্র।

রোগী চিৎ হইয়া হাত-পা গুটাইয়া শুইয়া থাকে এবং শয্যার নিম্নদিকে গড়াইতে থাকে। অত্যন্ত দুৰ্ব্বলতা, অত্যন্ত শিথিলতা, পেশীসমূহ কাৰ্য্য করে না। স্তন্যপায়ী শিশুদের আক্ষেপ। অজ্ঞানতার সহিত অপস্মার। আঘাতজনিত ধনুষ্টঙ্কার। অবিরত স্বপ্নসঞ্চরণ, তাহাকে সম্পূর্ণভাবে জাগাইয়া তোলা যায় না। প্রগাঢ় নিদ্রা।

অপর নাম — ব্ল্যাক হেলিবোর (Black Hellebore)

ভেরেট্রাম নাইগ্রাম (Veretrum Nigrum)

ক্রিস্টমাস রোজ (Christmas Rose)

রেনানকিউলেসী জাতীয় এই উক্তি ইউরোপে জন্মে। এর সরস ও শুষ্ক মূল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী হয়।

হেলিবোরাস নাইগ্রা — পরিক্রমা

ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ, বিশেষ করে উৎকট মস্তিষ্ক রোগের প্রবদ্ধিত অবস্থায় অথবা মস্তিষ্কের অপর কোন রোগে যখন ইফিউশান বা রসস্রাব হয় বা রসস্রাবের আশঙ্কা হয় তখন ইহা উপযোগী।

এক্ষেত্রে লক্ষণগুলি হল –

চীৎকার সহকারে মাথা বালিশের উপর এপাশ-ওপাশ করে; অতিশয় মূঢ় ভাব (stupidity) বা আচ্ছন্ন নিদ্রা; জল পানের প্রবল ইচ্ছা; কুঞ্চিত কপালে শীতল ঘৰ্ম্ম; কোন কিছু চিবানোর ন্যায় চোয়াল নাড়তে থাকে; চক্ষুতারকা প্রসারিত, প্রায়ই কোন কিছু দেখতে বা অনুভব করতে পারে না; সকল বিষয়েই ইন্দ্রিয় জ্ঞানের অসদ্ভাব। যদি কোন মতে একটু জাগানো যায় তাহলে রোগীর এক হাত ও এক পা অবিরত নাড়তে থাকে; কিন্তু অপর হাত পা যেন সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতিক, মূত্রস্বল্প বা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ, কখন কখন উহাতে কফি চূর্ণের মত তলানি থাকে।

এই সকল লক্ষণ দৃষ্টে রোগীর একেবারে সঙ্গীন অবস্থা বুঝায় এবং এক্ষেত্রে উপযুক্ত ঔষধ খুঁজে না পেলে শীঘ্রই কোমা বা আক্ষেপে তার মৃত্যু হয়। হেলিবোরাস নাইগ্রা প্রায়ই এরূপ রোগীকে আরোগ্য করে। আমি ইহা কেবল নিজের চিকিৎসাতেই নয় অপরের চিকিৎসাতেও ইহা দেখেছি। এরূপ ক্ষেত্রে মূত্রের পরিমান্তে বৃদ্ধিই সর্বপ্রথম শুভ লক্ষণ এবং তারপর অন্যান্য দুর্লক্ষণও ধীরে ধীরে অপসৃত হয়। আমি এর ১০০০শক্তি (বি টি)ও ফিঙ্ককর ৩৩ এম শক্তি ব্যবহার করে দ্রুত ও সন্তোষজনক ফল পেয়েছি।

২। হেলিবোরাস স্কার্লেটিনার পরবর্তী শোথ রোগেরও একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। ঐরূপ শোথ দ্রুত উপস্থিত হয়। এক্ষেত্রে মুত্রে কফি চূর্ণের ন্যায় তলানি থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। এই রোগে কখন কখন হেলিবোরাস ও এপিস মেলিফিকার মধ্যে সহজে প্রভেদ করা যায় না।

Hell : Helleborus Niger
Stupefaction with all complaints, memory and concentration as if paralyzed.Answers slowly and with great effort due to weak memory and slow MIND.Blank MIND. Awkwardness, especially if he takes his MIND off from what he is doing, even to talk.

Wrinkled forehead with furrowed brow.

Aversion to apples.


COMMON NAME:

-Christmas Rose


FAMILY:

Ranunculaceae


PREPARATION:

Tincture is prepared from the dry root, coarsely powdered, mixed with 5 parts by its weight of alcohol.


A/F:

-Checked exanthemata

-Blows

-Disappointment in love


MODALITIES:

< Cold air

< Suppressions

< When thinking of it

< Puberty

< Dentition

< Exertion

< Evening(4-8 p.m.) [Lyc]

< Touch

< Stooping

< During sleep

< Uncovering

> Attention is diverted

> Open air

> Warm air

> Wrapping up


MIND:

– Ailments from disappointment in love.

– Indifference to loved ones, pleasures, to relations, to everything, to sufferings.

– Involuntary sighing.

– Complete unconsciousness.

– Picks clothes, lips, ends of fingers, etc. or boring into nose with his finger [with perfect consciousnes – Arum-t]

– Dull, stupid, slow of perception, apathetic.

– Answers confusedly, as though thinking of something else.

– Must strongly concentrate the MIND on what he is doing or the muscles don’t act properly.

– Memory weak, can hardly remember what was said to him.

– Anguished state, cannot comprehend what is happening, begs for help.

– Guilty feelings and remorse, even suicidal feeling.

– Gloomy, despair, blank.

– Sadness before puberty in girls, sadness during first menses or when menses fail to return after appearing.

– Hysterical mania from self accusation.

– Irritable < consolation [ Ign, Nat-m, Sep, Sil], does not want to be disturbed [Nat-m, Gels].

– Aversion to company > when alone.

– Believes she is doing wrong, thinks she is going to die on a certain day, just sits and says nothing, does nothing.

– Delusion; sees devils, sees images in the dark, pursued by enemies, fancies at talking with dead people. Feels he could do great deeds.

– Occupation >.

– Sensitive to noise.


GUIDING INDICATIONS:

-Convulsions with extreme coldness of body except head or occiput which maybe hot. Convulsions arrested by sudden noise.

-Produces a condition of sensorial depression, senses become blunt and responses are sluggish.

-Onset of disease is gradual and progressive weakness.

-General muscular weakness which may go on to complete paralysis and dropsical effusion.

-Want of reaction in paralytic weakness.

-Sudden dropsical swelling of brain, chest, abdomen, after intermittents, with fever, debility, suppressed urine, from suppressed exanthemata [Apis, Zinc].

-Pains of a stinging, pressing or tearing character often run across the affected part, pains usually TRANSVERSE in their direction.

-Generally aggravated between 4 and 8 p.m.

-Patient’s face, lips, hands become DARK, nostrils SOOTY hence it is a DARK and DUSKY REMEDY.

-Head-Wrinkled forehead when trying to think.

-Head is covered with cold sweat.

-In hydrocephalus, rolls head day and night, moaning, sudden screams (from shooting pains in head).

-In meningitis, bores head into pillow, beats it with hands. Head drawn backwards.

-Pain in occiput > closing eyes.

-Eyes-Eyes half open and eyeballs rolled upwards.

-Stupid staring or tried look.

-Mouth-Falling of lower jaw.

-Chewing motion [Bell, Bry, Calc, Nat-m], corners of mouth sore, cracked.

-Horrible smell from mouth.

-Tongue- red, dry, numb, trembling or covered with yellow ulcers.

-Greedily swallows cold water, bites the spoon, though unconscious.

-G.I.T.-Aversion to vegetables, meat, sauerkraut, APPLES.

-Diarrhoea-during hydrocephalus, dentition, pregnancy.

-white, watery, clear, tenacious, colourless mucus, jelly like, like frog spawn, involuntary, with tenesmus.

-Urinary system-Urine suppressed, scanty dark (red or black), albuminous with coffee ground sediments, during pregnancy, in brain troubles and dropsy.

-Chest-Constricted, gasps for breath with open mouth, propped up in bed.

-Gasps for breath but cannot inhale.

-Slow, small, soft pulse.

-C.N.S.-Automatic motion of one arm and leg except when asleep.

-Thumbs drawn into palms [Cupr].

-Extremities-Awkwardness of hands when diverting or talking.

-Sleep-Soporous sleep, shrieks and shouts. Cri encephali.

-Lies on back with knees drawn up or with legs spread apart.


KEYNOTES:

1. Dull, stupid, slow of perception, apathetic.

2. Thinking of complaints aggravates or ameliorates.

3. Rolls head day and night, moaning, sudden screams.

6. Bores head into pillow, beats it with hands.

7. Chewing motion.

8. Urine suppressed, scanty, dark, coffee ground sediments albuminous, during pregnancy, in brain troubles and dropsy.

9. Automatic motion of one arm and leg.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Brain symptoms with serous effusion- Unconscious, rolling head, from side to side, involuntary movement of one arm and leg.

2. Tongue- red, dry, numb, trembling or covered with yellow ulcers.

3. Greedily swallows cold water, bites the spoon.

4. Urine, red, black, scanty, coffee ground sediment.


NUCLEUS OF REMEDY:

1. Dull, stupid, slowness of perception apathetic, general lack of reaction.

2. Sensorial depression, senses blunt and responses sluggish.

3. “BLACK” – Patient’s lips, face and hands become dark, nostrils become sooty hence it is a DARK and DUSKY remedy.

4. General muscular weakness which may go on to complete paralysis and dropsical effusion.

5. Sudden dropsical swellings.


CLINICAL:

-Alzheimer’s disease, Ataxia, Coma, Dementia, Encephalitis, Head injury, Meningitis, Migraine.

-In concussion of brain from blow to head, after Arnica has failed.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Follows Well : Bell, Bry, Chin, Lyc, Nux-v, Phos, Puls, Sulph, Zinc.

Compare : Apis, Cic, Cinch, Iodof, Op, Tub, Zinc.

Antidoted By : Camph, Chin.

Duration Of Action : 20-30 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *