সামান্য পরিশ্রমকে অনেক ভারী বা কঠিন মনে হয়। |
স্নায়বিক দূর্বলতা জনিত ভয়, লোকজনের সাথে দেখা করতে অনিচ্ছা, খিটখিটে মেজাজ, সহজে ভয় পেয়ে চমকে ওঠে, শিশুরা নিদ্রার মধ্যে ভয় পেয়ে তীব্র চিৎকার করে জেগে উঠে। |
শ্বাস – প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ, জিহ্বায় সরিষা বাটার মত হলদে ময়লা। |
প্রচুর পরিমাণে সোনালী হলদে বর্ণের স্রাব ও প্রস্রাব হয়। |
ঋতুস্রাবের পরে তীব্র যৌন আকাঙ্ক্ষা। |
মাথাঘোরার সহিত মাথার পিছনে ব্যথা। |
স্নায়ু রোগের একটি বিশিষ্ট ঔষধ বিশেষ। দুর্বলতা। দুর্বল ও ক্লান্তি। বিশেষভাবে যুবকদের উপর ভালো কাজ করে। সুস্পষ্টভাবে সংবেদশীল স্নায়ুতন্ত্রের গোলযোগ, এই ঔষধে দেখতে পাওয়া যায়। অবস্থাসমূহ, স্নায়ুর ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন এইরূপ অবস্থা থেকে উৎপন্ন হয়, স্নায়বিক দৌর্বল্য, মানসিক ও শারীরিক অবসাদগ্রস্ততা এই ঔষধের সাহায্যে চমৎকার উন্নতি লাভ করে। এই জাতীয় অবস্থা উদ্ভবের কারণ হল, উত্তেজনা, অতিরিক্ত বিশ্রাম ও উদ্বেগ। পাশাপাশি এটি উদ্যমহীণতা ও পচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, গ্যাংগ্রীন জাতীয় অবস্থা। এই দুই নির্দেশের দ্বারা, ঔষধটি বহু রোগজ অবস্থা সম্মানের সঙ্গে পেরিয়ে গেছে। স্মরনে রাখা প্রয়োজন যে, এই ঔষধটি সন্দেহজনক উৎকট জাতীয় অর্বুদসমূহ বা ম্যালিগন্যান্টটিউমারের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে। ক্যান্সার রোগ কমে আসার মুখে, যে সময় ক্ষতস্থান শুষ্কতে শুরু করে এবং যখন ক্ষতস্থানের চারিপাশের চামড়ায় কষে টানার মত অনুভূতি দেখা দেয়। বিলম্বিত প্রস্রাব।
মন — উদ্বেগ, স্নায়বিকভীতি, অলসভাব। লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাতে অনিচ্ছা, তীব্র অবসাদ ও হতাশ। তীব্র স্নায়বিক, সহজেই চমকিয়ে উঠে, খিটখিটে, মস্তিষ্কের ভিতরে শূন্যবোধরাত্রিতে ভয়। ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়ান। স্মৃতি শক্তির লোপ পাওয়া। সামান্য শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর পরিশ্রম বলে মনে হয়। ব্যবসা, সম্পর্কিত তীব্র হতাশা। লাজুক, বিতর্ক অপচ্ছন্দ।
মাথা – মাথার পিছনের অংশে বেদনা; বিছানা থেকে উঠার পরে উপশম। মাথা ঘোরা, শুয়ে থাকলে, দাঁড়ালে, বসে থাকলে, এবং উপরের দিকে তাকালে। (গ্র্যান্ট)। মস্তিষ্কের রক্তাল্পতা। ছাত্রদের মাথার যন্ত্রনা এবং অত্যধিক ক্লান্ত ব্যক্তিদের। মাথার যন্ত্রনা আস্তে আস্তে নড়াচড়ায় উপশম। মাথার যন্ত্রনা, তৎসহ পরিশ্রান্ত, পাকস্থলীর ভিতরে শুন্যবোধ। (ইগ্নেশিয়া; সিপিয়া)।
চোখ – দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা; কোন কিছু দেখে বুঝতে পারার ক্ষমতার হ্রাসডিফথিরিয়ার পরে; অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে। চোখের পাতা ঝুলে পড়া (কষ্টিকাম)।
কান – কানের ভিতরে ভোঁ ভোঁ শব্দ।
নাক – নাকের রোগসমূহ, তৎসহ দূর্গন্ধ; দূর্গন্ধযুক্তস্রাব।
মুখমন্ডল — কালচে বর্ণযুক্ত ও কোটরগত তৎসহ চোখদুটি ভিতরের দিকে ঢুকে থাকে। ডানদিকে স্নায়ুশূল, ঠান্ডা প্রয়োগে উপশম।
মুখগহ্বর — শ্বাস-প্রশ্বাস দূর্গন্ধযুক্ত। জিহ্বা বাদামি লেপযুক্ত, অনেকটা সর্ষের মত দেখতে। সকালের দিকে জিহ্বা অত্যন্ত শুষ্ক থাকে। দাঁতের বেদনা, তৎসহ মাঢ়ী থেকে খুব সহজেই রক্তপাত হয়ে থাকে; মাঢ়ী ফোঁপরা বা স্পঞ্জের মত।
গলা — গলায়, গ্যাংগ্রীণের মত ক্ষত। স্বরযন্ত্রের পক্ষাঘাত।
পাকস্থলী – পাকস্থলীর ভিতর একপ্রকার স্নায়বিক শূন্যতার অনুভূতি। (ইগ্নেশিয়া, সিপিয়া, সালফার)। সামুদ্রিক অসুস্থতা, যদিও বমিবমিভাব থাকে না।
উদর – উদরাময়, পচা, দুর্গন্ধযুক্ত, ভয় পেয়ে উদরাময়, তৎসহ বিষাদ ও ক্লান্তি। আহারের সময় উদরাময়। আমাশয়, মল তাজা রক্তযুক্ত; রোগী প্রলাপ বকে; উদরস্ফীত, কলেরা; মল চাল ধোওয়া জলের মত। (ভিরেট্রাম; আর্সেনিক; জ্যাট্রপা)। সরলান্ত্রেরস্থানচ্যুতি। (ইয়েশিয়া, পডোফাইলাম)।
স্ত্রীরোগ — মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে অথবা অত্যন্ত অল্প, সাধারণত ফ্যাকাশে, খিটখিটে, অনুভূতি প্রবন এবং ক্রন্দন প্রবন স্ত্রীলোক। স্রাব প্রচুর। গাঢ় লাল, অথবা কালচে লাল বর্ণযুক্ত, পাতলা এবং জমাট বাঁধে না; কোন সময়ে দূর্গন্ধ বেরিয়ে থাকে। দুর্বল এবং নিষ্ফল প্রসব বেদনা।
পুরুষের রোগ – রাত্রিকালীন বীর্যপাত, যৌনক্ষমতা কমে যায়; সঙ্গমের পরে অত্যন্ত দুর্বলতা। (ক্যালিকার্ব)।
প্রস্রাব যন্ত্রসমূহ — অসাড়ে মূত্রত্যাগ। প্রস্রাব ধরে রাখতে পরে না। প্রস্রাবলী থেকে রক্তস্রাব। অত্যন্ত হলুদবর্ণের প্রস্রাব।
শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ — হাঁপানী, সামান্য খাদ্যে বৃদ্ধি। উপরে উঠার সময় ছোট-ছোট শ্বাস-প্রশ্বাস। কাশি; শ্লেষ্মা হলুদ বর্ণের।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – পিঠ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পক্ষাঘাতের ন্যায় খঞ্জতা। পরিশ্রমে বৃদ্ধি। তৎসহ অবসাদ এবং এর পরে ক্লান্তি।
জ্বর – গায়ের তাপ স্বাভাবিকের থেকে কম।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি, উত্তেজনা, উদ্বেগ, মানসিকও শারীরিক পরিশ্রমে; আহারে ঠান্ডায়, খুব সকালে।
উপশম — উষ্ণতা, বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্যে।
সম্বন্ধ – তুলনীয় ক্যালি হাইপো ফসফরাস (দুর্বলতা তৎসহ পেশীসমূহের ক্ষয়। প্রস্রাবে ফসফেটের উপস্থিতি তৎসহ রক্তাল্পতা অথবা রক্তে শ্বেতকণিকার বৃদ্ধি। অতিরিক্ত চা পানের কুফল। পুরাতন ব্রঙ্কাইরোগ যেক্ষেত্রে শ্লেষ্মা গাঢ় ও দূর্গন্ধযুক্ত, কোন-কোন ক্ষেত্রে অল্প ও চটচটে। শক্তি মূল ঔষধের ৩x বিচূর্ণ পাঁচ গ্রেন মাত্রায়)
জেনিক্টা – (মাথার কপাল অংশে বেদনা এবং মাথাঘোরা, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি, মুক্তবাতাসে ও আহারে উপশম। গলাশুষ্ক, ঘুম থেকে জেগে উঠে তৎসহ মুখ দিয়ে জল উঠে। কনুই, হাঁটুও গোড়ালি সন্ধিস্থানে চুলকানিযুক্ত উদ্ভেদ সমূহ। শোথযুক্ত অবস্থায় প্রস্রাব বর্ধকের কাজ করে)।
ম্যাক্রোজেমিয়া ম্পাইরেলিস — (বড়ো কোন রোগের পরে প্রচন্ড দুর্বলতা, পতনাবস্থা। কোন প্রকার সঙ্গত কারণ ছাড়াই ক্লান্তি, বেদনা থাকে না। মাথার তালুতে ছিদ্র করার মত বেদনা; সারা রাত্রি বমি ও ওয়াক তোলা; চোখ গোলা এক প্রকার অসম্ভব, মাথাঘোরা এবং ঠান্ডা)।
জিঙ্কাম; জেলস; সিমিসিফিউগা, ল্যাকেসিস; মিউরিয়েটিক অ্যাসিড।
শক্তি – ৩য় থেকে ১২শক্তি। কয়েকটি ক্ষেত্রে মনে করা হয় উচ্চতর শক্তি নির্দেশিত হয়।
এই ঔষধের লক্ষণগুলি প্রাতে, সন্ধ্যায় ও রাত্রিকালে খারাপ হয়। অত্যনুভূতিযুক্ত, স্নায়বিক, ক্ষীণদেহ রোগী; দীর্ঘকাল রোগ ভোগ করিয়া অত্যন্ত দুঃখে ও বিরক্তিতে এবং দীর্ঘকাল যাবৎ মানসিক পরিশ্রম করিয়া জীর্ণশীর্ণ হইয়া পড়িয়াছেন, আরও অতিরিক্ত স্ত্রী-সঙ্গমে এবং হস্তমৈথুনে ভগ্নস্বাস্থ্য হইয়াছেন,এরূপ ব্যক্তি। ইহা একটি দীর্ঘক্রিয় এন্টি-সোরিক ঔষধ। রক্তশূন্য ও হরিৎ পান্ডুরোগগ্রস্ত রোগী। অধিকাংশ রোগই বিশ্রামকালে বৃদ্ধিযুক্ত হয় এবং মৃদু সঞ্চালনে এবং ধীরে ধীরে হাঁটায় উপশমিত হয়। সাধারণতঃ রোগী ও তাহার সকল যন্ত্রণা শীতল বায়ুতে, শীতল হওয়ায়, শীতল হওয়ার পরে, শীতল স্থানে প্রবেশ করিলে এবং শীতল আবহাওয়ায় বর্ধিত হয়। তাহার সহজেই সর্দি লাগে। খোলা বাতাসে অপ্রবৃত্তি। বায়ুপ্রবাহে বৃদ্ধি এবং খোলা বাতাসে বৃদ্ধি। হস্ত-পদাদির অসাড়তা। অত্যন্ত অবসন্নতা। সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে গেলে এবং শারীরিক পরিশ্রমে বৃদ্ধি। গ্রন্থিগুলি শীর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। কোরিয়া রোগের ন্যায় অঙ্গসঞ্চালনে। স্ত্রীসঙ্গমের পর রোগগুলি বাড়ে। দুর্বলতা, শীর্ণতা, রক্তশূন্যতা এবং যক্ষ্মারোগ প্রবণতা এই আশ্চর্য্য সোরাদোষনাশক ঔষধটির প্রবল লক্ষণ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্ফীতি এবং সৌত্রিক কোষগুলির শোথ। আহারের পর রোগ-লক্ষণগুলি বর্ধিত হয়। শীর্ণতা এবং ক্ষয়প্রবণ রোগের সহিত পচা গন্ধ নিঃস্রাব এবং দুর্গন্ধ মল। মূৰ্ছার আবেশ। উপবাসে উপশম হয়। পেশীগুলি ও অঙ্গগুলির চর্বিযুক্ত হওয়ার প্রবণতা। ঠান্ডা পানীয় ও দুগ্ধপানের পর বৃদ্ধি। ইহা গ্যাংগ্রিন সদৃশ অবস্থায় ব্যবহৃত হইয়াছে। আক্রান্ত অঙ্গ কাল হইয়া যায়। রক্তদুষ্টিজনিত, পচা গন্ধযুক্ত রক্তস্রার এবং অত্যন্ত অবসন্নতা। সকল প্রকার স্নায়বিক দুর্বলতা। বিষাদবায়ু এবং হিষ্টিরিয়া রোগ। গ্রন্থিগুলির প্রদাহ। শরীরের তরল বিধানের ক্ষয়হেতু পীড়া। রক্তের উচ্ছ্বাস। বেদনাগুলি কামড়ানির ন্যায়, চাপনবৎ, সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর, নিম্নাভিমুখে ছিঁড়িতে থাকার ন্যায় ও পক্ষাঘাতিক। পুরাতন স্নায়ুশূল, ধীর সঞ্চালনে উপশমিত হয়, ঠান্ডায় বর্ধিত হয়। ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা হইতে একপার্শ্বিক পক্ষাঘাত। যন্ত্রণার আবেশের পর দুর্বলতা। দেহে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে স্পন্দন অনুভূত হয়। লক্ষণগুলি প্রায়ই একপার্শ্বিক। অনেক লক্ষণ নিদ্রার সময়ে ও পরে উপস্থিত হয়। পেশীসমূহের অস্বাভাবিক সঙ্কোচন ও অঙ্গগুলির উৎক্ষেপ। পচা গন্ধ স্রাববিশিষ্ট ক্ষত। দ্রুত হাঁটিলে বৃদ্ধি, খোলা বাতাসে হাঁটিলে বৃদ্ধি। শয্যায় উত্তাপে উপশম। রোগগুলি শীতকালে বাড়ে। সুসলারের শিষ্যগণ এই ঔষধ দ্বারা এত অধিক সংখ্যক রোগী আরোগ্য করিয়াছেন যে, ইহার। আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। আমাদের সাহিত্যে ইহার উৎকৃষ্ট পরীক্ষাফল দেখিতে পাওয়া যাইবে। উচ্চ এবং অত্যুচ্চ শক্তিগুলিই সর্বাপেক্ষা ভাল কাজ করে এবং ইহার একটিমাত্র মাত্রাই ব্যবহৃত হওয়া উচিত।
চটিয়া গেলে আর শব্দোচ্চারণ করিতে পারে না। প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না। সন্ধ্যাকালে শয্যায় এবং রাত্রিকালে আশঙ্কাযুক্ত উৎকণ্ঠা, আহারের পর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে, তাহার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে এবং আত্মার মুক্তি সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা, আহারের পর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা। যখনই সে নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠে, তখনই এই উৎকণ্ঠা তাহাকে পীড়িত করে এবং সে অবসাদবায়ুগ্রস্ত হয়। স্ত্রী তাঁহার স্বামীর প্রতি বিদ্বেষভাবযুক্ত হন তিনি তাহার শিশু ও স্বামীর প্রতি নিষ্ঠুর হইয়া পড়েন। স্নেহ, ভালবাসা প্রভৃতি বৃত্তিগুলি বিকৃত হয়। তাঁহার নিজের অবস্থা সম্বন্ধে চিন্তা করেন। লোকসঙ্গ, পছন্দ করেন না। দুঃসংবাদ হইতে তাঁহার রোগগুলি উপস্থিত হয়। প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে মানসিক গোলযোগ। পরস্পর বিরুদ্ধ প্রকৃতির মানসিক আবেগ। টাইফয়েড ও সেপ্টিক জ্বরে মৃদু প্রকৃতির প্রলাপ। মদত্যয়। নানাপ্রকার কল্পনা। মৃত ব্যক্তিদিগকে দেখে। নানারূপ মূর্তি ও ভীতিপ্রদ আকৃতিসকল দেখে অসন্তুষ্ট ও বিমর্ষ। প্রাতঃকালে মনের জড়তা। নিরুৎসাহিতা। তাহার খাইবার ইচ্ছা থাকে না। দুঃসংবাদে অত্যন্ত উত্তেজিত ও অত্যন্ত অবসন্ন হইয়া পড়ে, তারপর হৃৎস্পন্দন ও অনেক স্নায়বিক লক্ষণ আসে। মানসিক পরিশ্রমের পর অবসন্নতা। সে যথেষ্ট পরিমাণে কল্পনারাজ্যে বাস করে। সন্ধ্যাকালে ভয়। জনাকীর্ণ স্থানের, মৃত্যুর, রোগের, বিপদের, লোকবিশেষের, নির্জনতার ভয়। সে সহজেই ভয় পায় এবং উহাতে তাহার স্নায়বিক ও মানসিক লক্ষণগুলি বাড়াইয়া দেয়। স্মৃতিশক্তি দুর্বল। বিস্মৃতিপরায়ণ। ঠিক কথাটি মনে করিতে পারে না। স্বগৃহকাতরতা। শোক ও দীর্ঘকালস্থায়ী দুঃখের ফল। কার্য্যে ও বাক্যে একপ্রকার স্নায়বিক সত্ত্বরতা লক্ষিত হয়। হিষ্টিরিয়া সদৃশ অবস্থা উপস্থিত না হওয়া পৰ্য্যন্ত স্নায়বিক উত্তেজনা বাড়িতে থাকে। ইহা জড়ত্বপ্রাপ্তির একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। তিনি অধীর ও উগ্র হইয়া পড়েন। পারিপার্শ্বিক আনন্দ এবং পরিজনের প্রতি ঔদাসীন্য দেখা দেয়। বিষয়কার্যে ঔদাসীন্য এবং তারপর নিরুৎসাহিত ও অবসাদ আসে। উন্মাদনা, বিমর্ষচিত্ততা, তিনি মনে করেন যে, পাপ করিয়া তাহার করুণা পাওয়ার দিনটি হারাইয়াছেন এবং খাইতে অস্বীকার করেন। তিনি পারিপার্শ্বিক বস্তুগুলিকে চিনিতে পারেন না। চিৎকার করিয়া উঠেন এবং উন্মাদের ন্যায় ব্যবহার করেন। পরিজনদিগের সহিত ঝগড়া করেন। এই উত্তেজনাপ্রবণতা প্রাতে জাগিয়া উঠিলে, সন্ধ্যায় স্ত্রী-সহবাসের পর, শিরঃপীড়ার সময়, ঋতুকালে, তাহাকে কিছু বলা হইলে, যেকোন সময় ঘুম ভাঙ্গিলে, উদরাময়ে অবসন্ন হইয়া পড়িলে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। তিনি হাস্য করিতে, ক্রন্দন করিতে, বিলাপ করিতে, হাত মোচড়াইতে থাকেন। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা দেখা দেয়, নিদ্রার মধ্যে করুণভাবে ক্রন্দন করেন। ইন্দ্রিয়শক্তিগুলি দুর্বল হইয়া পড়ে। স্মৃতিশক্তির অভাবের জন্য ঠিক কথাটি খুঁজিয়া পান না এবং মন অত্যন্ত অবসন্ন থাকে। প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গে, সন্ধ্যাকালে এবং দিবারাত্রি বিষন্নতা। একগুঁয়ে, বিমর্ষ ও ক্ষণে ক্ষণে। মতির পরিবর্তন হয়। কথা বলিতে ও লিখিতে ভুল করেন আরোগ্যপ্রাপ্ত অনেকগুলি রোগীর মধ্যে মনের নম্র অবস্থাও লক্ষিত হইয়াছিল। সাধারণভাবে এবং শব্দে অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণতা। ঋতুকালে অস্থির হইয়া পড়েন। মানসিক কাৰ্য, দীর্ঘকালস্থায়ী উৎকণ্ঠা, অত্যন্ত দুঃখ, অতিরিক্ত স্ত্রী-সঙ্গম, হস্তমৈথুনহেতু স্নায়বিক অবসন্নতার বহুসংখ্যক, রোগীর এই ঔষধটি প্রয়োজন হয়। অসংলগ্ন ভাবে কথা বলে। ভয় পাইয়া, ঘুমের মধ্যে, কেহ স্পর্শ করিলে, কোনরূপ শব্দ। হইলে সহজেই চমকিয়া উঠে। হতবুদ্ধিভাব এবং সন্দেহ বাতিক। সে নিজে কথা বলিতে চায় না, চায় না যে, কেহ তাহার সহিত কথা বলুক। ঘুমের মধ্যে কথা বলে। চিন্তা লোপ পাইয়া যায়। ভীরু ও লজ্জিত হইয়া পড়ে। বিরক্ত হইলে নানা রোগ উপস্থিত হয়। সে ক্রন্দন করে এবং জীবনে শ্রান্ত হইয়া পড়ে।
বৈকালে ও সন্ধ্যাকালে শিরোঘূর্ণন, খোলা বাতাসে উপশমিত হয়, আহারান্তে বাড়ে, মনে হয় যেন সম্মুখদিকে পড়িয়া যাইবে; উপরদিকে চাহিলে বাড়ে, সে শুইয়া থাকিতে বাধ্য হয়, উহার সহিত বমি বমিভাব ও শিরঃপীড়া থাকে। উঠিয়া বসিলে, দাঁড়াইলে, অবনত হইলে, মাথা ঘুরাইলে, খোলা বাতাসে ঘুরিলে, সবকিছুই যেন বৃত্তাকারে ঘুরিতে থাকে।
মাথা শীতল এবং শীতল বাতাসে অনুভূতিযুক্ত। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, কাশিতে গেলে মাথায় পূর্ণতাবোধ। সন্ধ্যাকালে মাথায় উত্তাপবোধ, কপালে উত্তাপের ঝলক। মাথা সম্মুখদিকে পড়িয়া যাইবার মত হয়। মস্তকত্বকে টানবোধ। প্রাতে উঠিলে, মাথায়, কপালে এবং মস্তকের পশ্চাদ্দেশে ভারবোধ। পচা গন্ধ উদরাময়ের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকিলে, ইহা মস্তকোদক রোগে ও অন্যান্য মস্তিষ্করোগে উপযোগী হইয়াছে। প্রাতঃকালে চলাফেরা করিলে, রাত্রিকালে শুইলে, ভোর ৩টা হইতে ৫টা পর্যন্ত বৃদ্ধিযুক্ত মস্তক-ত্বকের চুলকানি। মাথার মধ্যে যেন কিছু নড়িতেছে, এরূপ বোধ হয়। ইহাতে মাথায় যথেষ্ট যন্ত্রণা থাকে। প্রাতে শয্যায় থাকাকালে, উঠিলে এবং জাগিলে যন্ত্রণা, চলাফেরা করিলে চলিয়া যায়। বৈকালে সন্ধ্যাকালে এবং রাত্রে যন্ত্রণা। অত্যন্ত ঠান্ডা বাতাসে বৃদ্ধি, কিন্তু খোলা নির্মল বাতাসে উপশম হয়। রোগিণীকে চুল ঝুলাইয়া রাখিতে হয়। সর্দির সহিত এবং ঠান্ডা লাগিলে শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। কাশিলে যন্ত্রণা বাড়ে, আহারে উপশমিত হয়, অত্যুত্তপ্ত হইলে, পেটের গোলমাল হইলে, উত্তেজনায় এবং দৈহিক পরিশ্রমে বাড়ে। অবসন্নতার সহিত মাথার পশ্চাতে ভরবোধ। সে শুইয়া থাকিতে বাধ্য হয়, অন্ধকারে থাকিতে চায়, চিৎ হইয়া শয়ন করিলে উপশম হয়, ঝাঁকি লাগিলে, পা ফেলিলে বাড়ে, ঋতুর পূর্বে ও ঋতুকালে বাড়ে। ছাত্রদিগের মানসিক পরিশ্রমের জন্য শিরঃপীড়া, অতিশ্রমজনিত মস্তিষ্ক-দৌর্বল্য, লক্ষণ মিলিলে, এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য হয়। ঋতুকালে স্নায়বিক শিরঃপীড়া। আবেশে আবেশে আগত শিরঃপীড়া। মাথার যন্ত্রণা ধীর সঞ্চালনে উপশমিত হয়; শব্দে, গাড়ী চড়িলে, নিদ্রার পর, হাঁচিলে, পা ফেলিলে, হেঁট হইলে, স্পর্শে, চাপে, হাঁটিলে, লিখিলে, বর্ধিত হয়। অতিরিক্ত চোখের কাজ করার জন্য শিরঃপীড়া, এবং উহা মাথা জড়াইয়া বাঁধিলে উপশমিত হয়। তীব্র দপদপকর যাতনা। ঋতুর পূর্বে কপালে, মাথার পশ্চাদ্দেশ পৰ্য্যন্ত বিস্তারশীল, চক্ষের উপর, কপালের আড়াআড়ি—উভয় শঙ্খস্থান পর্যন্ত যাতনা। মস্তকের পশ্চাদ্দেশের বেদনা সারারাত্রি থাকিয়া যায়, সে পুনঃ পুনঃ জাগিয়া উঠে, উঠিলে বেদনা করে, মাথার পশ্চাদ্দিকের এবং কোমরের যন্ত্রণায় জাগিয়া উঠে, চিৎ হইয়া শুইলে উপশম পায়, উঠিয়া পড়িলে বেদনা ছাড়িয়া যায়। মস্তকের পশ্চাদ্দেশে চুল ধরিয়া টানার ন্যায় যাতনা, সে চুল ঝুলাইয়া রাখিতে বাধ্য হয়। মাথার উভয় পার্শ্বে তীব্র শিরঃপীড়া। বাম শঙ্খস্থিতে স্নায়ুশূলসঞ্চালনে ও খোলা বাতাসে বৃদ্ধি। শঙ্খস্থানদ্বয়ে যাতনা। যাতনা কামড়ানির ন্যায়, রন্ধ্র করার ন্যায়, জ্বালাকর। মলত্যাগকালে কপালে জ্বালা। কপালে ফাটিয়া যাওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা। কপালে, মাথার উভয় পার্শ্বে ও মস্তকশিখরে আকর্ষণের ন্যায় যন্ত্রণা ঝাঁকিমারার ন্যায়, চাপ দেওয়ার ন্যায়। কপালে ছিদ্রকরার ন্যায় যন্ত্রণা, আহারে উপশম। কপালে, চক্ষুর উপরে, মস্তিষ্ক যেন প্রসারিত হইতেছে এরূপ, বাহিরদিকে চাপ দেওয়া বেদনা। মাথার পশ্চাদ্দিকে চাপনবৎ বেদনা, আহারে উপশমিত হয়। শঙ্খদ্বয়ে ও মস্তকশীর্ষে চাপনবৎ বেদনা। মস্তকের পশ্চাদ্দিকে ক্ষততাবোধ। মাথায়, কপালে, চক্ষের উপরে, মস্তকের পশ্চাদ্দেশে, মাথার উভয় পার্শ্বে, কপালের উন্নত স্থানের ডান পার্শ্বে, শঙ্খদ্বয়ে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। বিহ্বলকর বেদনা। ঋতুর পূর্বে মাথায়, কপালে ছিন্নকর বেদনা, শুইয়া থাকিলে ও ঋতু দেখা দিলে উপশম। মাথার পশ্চাদ্দিকে, মাথার উভয় পার্শ্বে, শঙ্খস্থানে, এবং মস্তক শিখরে ছিন্নকর যন্ত্রণা। মানসিক পরিশ্রমে কপালে ঘৰ্ম্ম, ঘর্ম শীতল। কপালে ও শঙ্খস্থানে দপদপ করে। মস্তিষ্কে ঝাঁকি লাগে এবং শব্দে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়। মাথায় সঙ্ঘাত অনুভূত হয়। মস্তিষ্কের কোমলতা। মাথা অনাবৃত রাখিলে রোগ উপস্থিত হয়।
চক্ষুস্নায়ুর নীরক্ততা। প্রাতঃকালে চক্ষের পাতা জুড়িয়া যায় এবং শ্লৈষ্মিক স্রাব হয়, সন্ধ্যাকালে বৃদ্ধি। চক্ষুর শুষ্কতা এবং ঔজ্জ্বল্যহীনতা। চক্ষুপাতা ঝুলিয়া পড়ে। চক্ষুর শ্বেতমন্ডলের প্রদাহ, রক্তবহা নাড়ীগুলির পূর্ণতা এবং অশ্রুস্রাব। চক্ষের স্নায়ুসমূহের পক্ষাঘাত। আলোকাতঙ্ক। চক্ষুর আরক্ততা। একদৃষ্টে চাহিয়া থাকে, অস্থির, উত্তেজনাপূর্ণ দৃষ্টি। মস্তিষ্ক রোগের পরবর্তী টেরা দৃষ্টি। কোটরাগত চক্ষু। চক্ষুর পাতার শোথের ন্যায় স্ফীতি। চক্ষুর ও চক্ষুর পাতার উৎক্ষেপ। চক্ষুর দুর্বলতা। চক্ষু নাড়াইলে, পড়িলে, জাগিয়া উঠিলে চক্ষে যন্ত্রণা, সূর্যালোকে বৃদ্ধি। কনকনানি। চক্ষে ও চক্ষের পাতার প্রান্তগুলিতে চড়চড় করে। টানিয়া ধরে, চাপিয়া ধরে। চক্ষুগোলক দুইটি স্পর্শে ক্ষততাযুক্ত বোধ হয়। প্রাতঃকালে চক্ষু হইতে শঙ্খস্থান পৰ্য্যন্ত তীব্র যন্ত্রণা। যেন সূঁচ দিয়া, বা কাঠি দিয়া খোঁচান হইতেছে, এরূপ যন্ত্রণা। চক্ষে বালি পড়ার ন্যায় অনুভূতি। ছিন্নকর বেদনা। অস্পষ্ট দৃষ্টি। চক্ষুর সম্মুখে নানা বর্ণ দেখে, কাল কাল বিন্দু সকলকে ভাসিয়া যাইতে দেখে, কৃষ্ণবর্ণ দেখে, আলোকের চারিদিকে জ্যোতির্মন্ডল দেখে। স্ত্রী-সঙ্গমের পর অস্পষ্ট দৃষ্টি। দৃষ্টি কুয়াসাছন্নর মত হয়। চক্ষুর কাজ করার জন্য চক্ষুরোগ এবং শিরঃপীড়া। দুর্বল দৃষ্টি।
* কর্ণ হইতে রক্তাক্ত, পচাগন্ধ, দুর্গন্ধ পুঁজের ন্যায় স্রাব। কানের উপর উদ্ভেদ। কর্ণনলীতে ব্রণ। কানের পূর্ণতাবোধ। কর্ণদ্বয় গরম বোধ হয়। কানের মধ্যে চুলকায়, শয়নে বৃদ্ধি। স্নায়বিক অবসন্নতা এবং মস্তকের রক্তশূন্যতাহেতু শিরোঘূর্ণনসহ কর্ণনাদ। ভনভন, পতপত্, গুন্ গুন, ঠংঠং, গর্জনবৎ, শোঁশোঁ, সঙ্গীতবৎ, সাঁইসাঁই শব্দ। কর্ণের গভীর স্থানে যন্ত্রণা। খালধরার ন্যায়, টানিয়া ধরার ন্যায়, চাপ দেওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা। বামকৰ্ণ হইতে নিম্নে গন্ডস্থল পর্যন্ত এবং কর্ণের পশ্চাতে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। কানে হুল ফুটানর ন্যায় যন্ত্রণা, শুইলে বৃদ্ধি। কর্ণে ছিন্নকর যন্ত্রণা। কর্ণের মধ্যে দপদপ করে। কান যেন বুজিয়া আছে, এরূপ অনুভূতি। কানের মধ্যে হুল ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা। কান স্ফীত। কানের মধ্যে ঝাঁকিয়া দিয়া উঠে। শব্দ ও স্বর সম্বন্ধে শ্রবণশক্তির তীক্ষ্ণতা, কিন্তু মানুষের কণ্ঠস্বর ভাল শুনিতে পায় না। বধিরতা।
সর্দি গড়ান বা শুষ্ক, তৎসহ কাশি; শিরঃপীড়া। অত্যন্ত স্নায়বিক দুর্বলতার সহিত প্রতিশ্যায়লক্ষণ জ্বর (Hay fever)। দুর্দম্য সর্দি । স্রাব-রক্তাক্ত, হাজাকর, দুর্গন্ধ, সবজেটে, পুঁজের ন্যায়, দড়ির ন্যায়, ঘন, জলের ন্যায়, সাদা, হলদে, প্রাতঃকালে বৃদ্ধিযুক্ত। নাসারন্ধে হলদে মামড়ি, ডান নাসারন্ধ্রে অধিক। সে নাকের শুষ্কতা জন্য কষ্ট পায়। দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরে প্রাতঃকালে নাক ঝাঁড়িবার সময় রক্তপাত। নাক বুজিয়া যায়। নাকের মধ্যে চুলকানি ও জ্বালা। নাকের গোড়ায় চাপনবৎ বেদনা। নাকের মধ্যে অত্যন্ত ক্ষততাবোধ, তৎসহ হলদে মামড়ি এবং কাল রক্ত। ঘ্রাণশক্তি প্রথমে খুব তীব্র থাকে, পরে ঘ্রাণশক্তির অভাব। পুনঃ পুনঃ হাঁচি, ভোর দুইটার সময় ও সামান্য উন্মুক্ত থাকায় তীব্র হইয়া উঠে। নাকের মধ্যে ক্ষত। নাক ফুলিয়া উঠে।
কপালের ধার হইতে ভ্রু পর্যন্ত তিন ইঞ্চি চওড়া, এবং তিনমাস স্থায়ী তালির ন্যায়। বাদামিবর্ণ দাগ। হরিৎপাণ্ডু রোগের ন্যায় মুখমন্ডল। চক্ষুর নীচে কাল বেষ্টনী। ওষ্ঠদ্বয় ফাটা। মুখমন্ডল—বিবর্ণ, রুগ্ন এবং মলিন। গন্ডস্থলে সীমাবদ্ধ লাল দাগ। ন্যাবাগ্রস্ত মুখমন্ডল। ওষ্ঠের উপর ইন্দ্রবিদ্ধা। ওষ্ঠের উপর বেদনাযুক্ত মামড়ি। ওষ্ঠের উপর ফুস্কুড়ি। মুখশ্রী মলিন, রুগ্ন এবং কষ্টব্যঞ্জক। মুখে উত্তাপের ঝলক। কর্ণমূলগ্রন্থির প্রদাহ ও স্ফীতি। মুখে, গোফের মধ্যে, দক্ষিণ গন্ডস্থলে এবং শঙ্খদেশে চুলকানি। মুখমন্ডলে টানিয়া ধরার ন্যায়, সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর বেদনা ঠান্ডা বাতাসে বৃদ্ধি। মুখমন্ডলের ডান পার্শ্বের পোকায় খাওয়া দাঁতের যন্ত্রণা শীতল বাহ্য প্রয়োগে উপশমিত হয়। চোয়ালের হাড়গুলিতে যন্ত্রণা,—আহারের পর, কথা বলিলে, জাগিয়া থাকিলে, এবং স্পর্শে উপশমিত হয়। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল, তৎপর অত্যন্ত দুর্বলতা। ঠান্ডা বাতাসে, গাড়ী, ঘোড়া চড়ায় সূচীবিদ্ধবৎ স্নায়ুশূল, হাতের উত্তাপে উপশমিত হয়। মুখের একপার্শ্বিক পক্ষাঘাত (কষ্টিকাম’)। মুখমন্ডলে ঘাম হয়। ওষ্ঠ, কর্ণমূলগ্রন্থি ও চোয়ালের গ্রন্থিগুলি স্ফীত। মুখে টান টানভাব। ওষ্ঠের উপর ক্ষত।
জিহ্বা কৃষ্ণলেপাবৃত এবং রক্তপাতযুক্ত। মাড়ি হইতে রক্ত পড়ে এবং উহা ক্ষতে আবৃত থাকে। টাইফয়েড জ্বরে যেরূপ হয়, তদ্রুপ মুখগহ্বর, জিহ্বা ও দন্ত; পুঁজ জ্বরে যেরূপ হয়, তদ্রূপ পচা গন্ধ। মাড়ি ও জিহ্বার কিনারাগুলির আরক্ততা। জিহ্বা সাদা, পিচ্ছিল এবং সবুজাভ হলদে। প্রাতঃকালে মুখগহ্বর ও জিহ্বা শুষ্ক। মুখগহ্বর ও মাড়ি প্রদাহিত। দুর্গন্ধ, প্রাতঃকালে। পচা গন্ধ, পচা পনিরের ন্যায় গন্ধ। মুখগহ্বর ও জিহ্বা জ্বালাকর, ক্ষততাযুক্ত। মাড়ি ছাড়িয়া যায়। ঘন লবণাক্ত লালা। স্কার্ভিরোগগ্রস্তের ন্যায় স্পঞ্জের মত মাড়ি। টাকরায় ডোরা ডোরা স্ফীতি, যেন উহা চর্বিমাখান বলিয়া অনুভব করে। স্বাদ—বিশ্রী, তিক্ত, বিস্বাদ, পচা, টক, প্রাতঃকালে তিক্ত। নিদ্রার মধ্যে দাঁত কড়মড় করে। স্নায়বিকতার জন্য দাঁত ঠকঠক করে। ঠান্ডা লাগায় দাঁতে যন্ত্রণা, ঠান্ডা জিনিষে বৃদ্ধি, চর্বণ করিলে বৃদ্ধি, নিদ্রার পর বৃদ্ধি। দপদপ করে, কনকন করে, ঝাঁকি দিয়া উঠে, চাপনবৎ, ক্ষতবৎ, সূচীবিদ্ধবৎ ছিন্নকর যন্ত্রণা।
এই ঔষধটি পচা গন্ধবিশিষ্ট ডিপথেরিয়ায় কিছুটা সাফল্যের সহিত ব্যবহৃত হইয়াছে। সন্ধ্যাকালে গলার শুষ্কতা। গলার পূর্ণতা ও আকুঞ্চন। গলা খেঁকারি দিয়া গলা পরিষ্কার করিবার চেষ্টা করে। প্রাতঃকালে গলায় শ্লেষ্মা জমে, উহা স্বাদ সময়ে সময়ে লবণাক্ত হয়। গলার মধ্যে ডেলা থাকার অনুভূতি। গিলিতে গেলে গলায় বেদনা। দক্ষিণ টনসিলে বেদনা। জ্বালা, হাজাবোধ, ক্ষততা, গিলিতে গেলে সূঁচ ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা। পূর্বাহ্নে গাড়ী-ঘোড়া চালাইবার সময় বাম টনসিল হইতে কান পৰ্য্যন্ত সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। গলার ও টনসিল গ্রন্থির প্রদাহ, তৎসহ পর্দার ন্যায় সাদা পদার্থ সঞ্চয়।
ক্ষুধা বাড়িয়া যায় এবং সময়ে সময়ে রাক্ষুসে ক্ষুধা হয়, কিন্তু খাদ্য দেখিলেই ক্ষুধা চলিয়া যায়। স্নায়ুদৌর্বল্যহেতু আহারের পরক্ষণই ক্ষুধা। ঋতুকালে ক্ষুধা। খাদ্যে, রুটিতে এবং মাংসে অরুচি। পাকস্থলীতে শীতলতাবোধ। ঠান্ডা পানীয় চায়, টক জিনিষ, মিষ্টান্ন চায়। পাকস্থলী সাধারণতঃ বিশৃঙ্খল থাকে। পূর্ণবোধ এবং বিস্তৃতি। শূন্যতাবোধের সহিত ঋতুকালে, আহারের পর, বমি বমিভাব। আহারের পর শূন্য উদ্গার, পিত্ত, তিক্ত, শূন্য, খাদ্যগন্ধ, টক, উদ্গার; মুখে জল উঠা, বুকজ্বালা। আহারের পর পাকস্থলীতে ভারবোধ। খাদ্যে অপ্রবৃত্তি। কাশিলে, আহারের পর, শিরঃপীড়ার সময়, ঋতুকালে, গর্ভাবস্থায় বমি বমিভাব, উদ্গার, উঠিয়া দাঁড়াইলে উপশম। উকি উঠা। আহারের পর, ঋতুকালে পাকস্থলীতে যন্ত্রণা। জ্বালা, খালধরা, কাটিয়া ফেলার ন্যায় যন্ত্রণা, ক্ষততা। সুঁচ ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা। প্রাতে ৫টায় জাগরিত হইতে খামচান ব্যথা। আহারের পর চাপবোধ। পাকস্থলীতে যেন একখানি পাথর রহিয়াছে এরূপ অনুভূতি। শীতল জলের অত্যন্ত তৃষ্ণা। জ্বরের উত্তাপের সময় তৃষ্ণা। সময়ে সময়ে তৃষ্ণাশূন্যতা। প্রাতঃকালে, কাশিলে, আহারের পর, শিরঃপীড়ার সময়, ঋতুকালে, গর্ভকাল বমন। পিত্ত, রক্ত, খাদ্য, শ্লেষ্মা, টক বমন।
উদর শীতল বোধ হয় এবং অনাবৃত করিলে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়। ঋতুকালে, আহারের পর উদরস্ফীতি। টাইফয়েড জ্বরে বায়ুস্ফীতির সহিত অত্যন্ত বেদনা। শোথজনিত স্ফীতি। শূন্যতার অনুভূতি। হৃৎপিন্ডস্থানে যাতনার সহিত পেটের মধ্যে গাজিয়া উঠা। অবরুদ্ধ উদরবায়ু, গড়গড় করে। আহারের পর পূর্ণতাবোধ। উদরে উত্তাপ ও ভারবোধ। অন্ত্র, অন্ত্রাবরক ঝিল্লী এবং যকৃতের প্রদাহ। উদরবেদনা রাত্রিকালে বাড়ে, বেদনা উদরের আড়াআড়ি বামদিক হইতে দক্ষিণ দিকে, দ্বিভাজ হইলে উপশমিত হয়, বেদনা কাশির সময়, উদরাময়ের সময়, আহারের পূর্বে ও পরে, ঋতুকালে, আবেশে আবেশে দেখা দেয়, মলত্যাগের পূর্বে যকৃৎস্থানে বেদনা। নিম্নদিকে ঠেলামারা বেদনা, বসিলে উপশম, বাম পার্শ্বে শুইলে বৃদ্ধি, কিছু পান করার পর বৃদ্ধি। হাঁচিবার সময় মনে হয়, যেন উদরে পার্শ্বগুলি ফাটিয়া যাইবে। জ্বালা। আহারের পর খালধরা। কাটিতে থাকার ন্যায় যন্ত্রণা। কুক্ষিদেশে নিস্ফল মলপ্রবৃত্তির সহিত কামড়ানি ব্যথা। উদরে ও যকৃতে ক্ষততা। যকৃতে ও উদরে সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা। প্লীহাতে সূচীবিদ্ধবৎ, মুঠা করিয়া ধরার মত যাতনা, সঞ্চালনে বৃদ্ধি। গড়গড় করা ও টানভাব।”
অত্যন্ত কষ্টকর, কঠিন, বড়, গাঁটগাঁট মলযুক্ত কোষ্ঠবদ্ধতা। উদরাময়—প্রাতে ৬টায় সন্ধ্যাকালে, রাত্রে, আহারকালে ও আহারের পর; বেগযুক্ত, ভয় হইতে, উত্তেজনা হইতে, ঋতুকালে, বেদনাশূন্য, বমন ও খালধরাযুক্ত, তৎসহ টাইফয়েড জ্বরের মধ্যে অত্যন্ত অবসন্নকর। আমাশয়। দুর্গন্ধ অধোবায়ু, উহাতে উপশম পায়। মলদ্বারে পোকা হাঁটার ন্যায়। অনুভূতি। টাইফয়েড জ্বরে অন্ত্র হইতে রক্তস্রাব। অর্শ-বহির্বলি ও অন্তর্বলি, উহাতে চুলকানি, জ্বালা, বেদনা এবং স্ফীতি। প্ৰদাহিত অর্শবলি হইতে দুর্গন্ধ রস বাহির হয়। মলদ্বারে ক্রিয়াহীনতা। অসাড়ে মলত্যাগ। মলত্যাগকালে ও মলত্যাগের পর মলদ্বারে যন্ত্রণা। মলত্যাগকালে ও পরে জ্বালা। ক্ষততা ও চাপনবৎ বেদনা। মলদ্বারের পক্ষাঘাত। মলদ্বারের শিথিলতা। নিস্ফল মলপ্রবৃত্তি। মল ক্ষতকর, রক্তাক্ত আমযুক্ত, অথবা তাজা রক্ত, বাদামিবর্ণ, মাটিবর্ণ, জলবৎ মল, প্রাতভোজনের পর কোঁথ দিলে পচা গন্ধ অধোবায়ু নির্গমন। মল—প্রচুর, কালবর্ণ, পুনঃ পুনঃ বৃহদাকার, হালকা বর্ণের। অজীর্ণ ভুক্তদ্রব্যমিশ্রিত মল। মলদুর্গন্ধ, পচা গন্ধ, পুঁজের মত, জলবৎ চালধোয়া জলের মত, হলদে অথবা হরিদ্রাভ সবুজ আমযুক্ত।
বৃদ্ধগণের স্বায়দৌর্বল্যবিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্ত্রস্থলীর পুরাতন সন্ধি মিত্রস্থলীতে চাপনবৎ ও সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। মূত্রবেগ শীঘ্র শীঘ্র, নিষ্ফল এবং রাত্রিকালে বৃদ্ধিযুক্ত। মূত্র, ফোঁটা ফোঁটা করিয়া গড়াইয়া পড়ে। মূত্রত্যাগের পর মূত্র ফোঁটা ফোঁটা করিয়া পড়ে; ক্ষীণ ধারা; পুনঃ পুনঃ রাত্রিকালে প্রচুর। মূত্রধারা একবার থামে, আবার আরম্ভ হয়। বৃদ্ধদের, টাইফয়েড জ্বরে এবং স্নায়বিক অবসন্নতায় রাত্রিকালে অসাড়ে মূত্র। উত্তেজনাপ্রবণ, স্নায়বিক শিশুদের দুর্দম্য শয্যামূত্ররোগ। মূত্রক্রিয়ায় তৃপ্তি হয় না। মূত্রপিন্ডের প্রদাহ ও সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। মূত্রক্রিয়াকালে ও পরে মূত্রনলীতে জ্বালা। মূত্রনলীতে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। মূত্র অন্ডলালাময়, জ্বালাকর, ধূম্রবর্ণ, প্রচুর, দুর্গন্ধ, স্বল্প, জলবৎ, জাফরানের ন্যায় হলদে। মূত্রের তলানি পশমের মত আঁশ আঁশ, শ্লেষ্মাযুক্ত, লাল, বালির মত। মূত্রের আপেক্ষিক গুরুত্ব বর্ধিত। মূত্রে শর্করা।
প্রাতঃকালে এবং রাত্রে সঙ্গমপ্রবৃত্তি ব্যতীত কষ্টকর লিঙ্গোদ্রেক, প্রাতঃকালেই ভীষণ হয়। ধ্বজভঙ্গ। লিঙ্গোদ্রেকের সহিত প্রায়ই শুক্রপাত হয়। লিঙ্গমুন্ডের প্রদাহ। সঙ্গমপ্রবৃত্তি বিলুপ্ত হয়।
যে-সকল শীর্ণা স্নায়বিক স্ত্রীলোকদিগের গর্ভস্রাবপ্রবণতা থাকে, তাহাদের পক্ষে উপযোগী। সহবাসে অপ্রবৃত্তি। ঋতুর পরে চার পাঁচ দিন প্রবৃত্তি বাড়িয়া যায়। জরায়ুর প্রদাহ। প্রদরস্রাব লাগিয়া চুলকানি। যোনি ও সরলান্ত্রের মধ্য দিয়া, নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে কমলা লেবুর বর্ণের স্রাবশীল একটি ফোড়া ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছিল। প্রদরস্রাব ক্ষতকর, জ্বালাকর, প্রচুর, সবুজাভ, হরিদ্রাবর্ণ, দুর্গন্ধ, পচাগন্ধ, ঋতুর পরে এবং অল্পবয়স্কা বালিকাদিগের। ঋতুস্রাব অনুপস্থিত, কাল, প্রচুর, ঘোরালবর্ণ, বিলম্বিত, পুনঃ পুনঃ অনিয়মিত, নিয়মিত সময়ের পরে, দুর্গন্ধ এবং যন্ত্রণাদায়ক, বিবর্ণ দীর্ঘস্থায়ী, স্বল্প অল্পস্থায়ী, অবরুদ্ধ, ঘন। জরায়ুর হইতে রক্তস্রাব। ডিম্বকোষে যন্ত্রণা, বামটিতে চিৎ হইয়া শুইলে এবং দ্বিভাজ হইলে উপশমিত হয়, ঋতুকালে উপশমিত হয়। নিদ্রা যাইবার সময়ে যন্ত্রণা। ডিম্বকোষদ্বয়ে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। গর্ভাবস্থায় রাত্রিকালে জরায়ু এবং ডিম্বকোষদ্বয়ে বেদনা। প্রসববেদনার ন্যায় যন্ত্রণা। জরায়ুর । বাহিনিগমন।
ঠান্ডা বাতাসে কণ্ঠনালীর এবং কণ্ঠের উপদাহ। বায়ুপথগুলির সর্দি, তৎসহ ঘন, হরিদ্রাভ সাদা শ্লেষ্মাস্রাব। কণ্ঠনলীতে ক্ষততা ও খেঁকারি দেওয়া। কণ্ঠনলী ও কণ্ঠে সুড়সুড়ি। স্বররজ্জুর পক্ষাঘাতের জন্য স্বরভঙ্গ, স্বরলোপ। স্বররজ্জুর অতি পরিশ্রমজনিত স্বরভঙ্গ।
শ্বাসক্রিয়া রাত্রে কষ্টদায়ক, ঘড়ঘড়ে, হ্রস্ব, সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিতে গেলে বৃদ্ধি। স্নায়বিক হাঁপানি, আহারের পর বৃদ্ধি ।
দিবাভাগে, প্রাতে, সন্ধ্যায় শুইলে এবং রাত্রিকালে কাশি। জ্বরের সময় রাত্রে শুষ্ক কাশি। খকখকে কাশি। কণ্ঠনলী ও কণ্ঠের উপদাহ হইতে কাশি। সরল কাশি। আবেশে আবেশে কাশি। যন্ত্রণাদায়ক কাশি। ঘড়ঘড়ে কাশি হ্রস্ব আক্ষেপিক কাশি। ঠান্ডা বাতাসে গভীর শ্বাস লইলে, জ্বরের শীত ও উত্তাপকালে, শয়নে বর্ধনশীল কাশি। হাঁপানির ন্যায় কাশি। কণ্ঠনলীতে ও কণ্ঠে সুড়সুড়িযুক্ত কাশি। বাঁশির ন্যায় শব্দযুক্ত কাশি। অত্যন্ত স্নায়বিক অবসন্নতার সহিত হুপিং কাশি।
গয়ের উঠা প্রাতে, রক্তময়, ফেনা ফেনা, সবজেটে, শ্লেষ্মাময়, দুর্গন্ধ, পুঁজের ন্যায়, পচা গন্ধ, লবণাক্ত, ঘন, ঈষৎ মিষ্ট, চটচটে, হরিদ্রাভ, সাদা।
হৃৎশূলরোগে এই ঔষধটির কথা অনুকুলভাবে বলা হইয়াছে। প্রাতঃকালে বুকের মধ্যে উৎকণ্ঠা। বুকের সর্দি। আক্ষেপিক আকুঞ্চন। হৃৎপিন্ডস্থানে আকুঞ্চনবোধ। হৃৎপিন্ডের মেদাপবর্ষ। ফুসফুস হইতে রক্তস্রাব। ফুসফুসের যকৃত্বৎ কঠিনতাপ্রাপ্তি। বায়ুনলীসমূহের, ফুসফুসের এবং বক্ষাবরক ঝিল্লীর প্রদাহ। বক্ষে চাপবোধ। চর্মের উপর চুলকানি। কাশির সময় অথবা শ্বাস লইলে, সঞ্চালনে, শ্বাসক্রিয়ায় বক্ষে বেদনা। কাশিলে বক্ষের নিম্নাংশে, বুকের মধ্যে, হৃৎপিন্ডে বেদনা। বক্ষের বামপার্শ্বে স্কন্ধাস্থি পৰ্য্যন্ত কনকনানি। বুকের মধ্যে জ্বালা। বুকের ডানদিকে কাটিতে থাকার ন্যায় যন্ত্রণা। বুকে ক্ষততা। বক্ষে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, কাশিলে, প্রশ্বাস ফেলিলে, স্তনে, বক্ষের পার্শ্ব দুইটিতে, হৃৎপিন্ডে। বুকে ছিন্নকর বেদনা।
হৃৎস্পন্দন, উৎকন্ঠাপূর্ণ, সিঁড়ি দিয়া উঠিতে গেলে, সঞ্চালনে বৃদ্ধিযুক্ত। প্রবল হৃৎস্পন্দন। বগলে, পেঁয়াজের ন্যায় গন্ধযুক্ত ঘর্ম। সর্দিযুক্ত যক্ষ্মারোগে ইহা একটি অত্যন্ত উপকারী ঔষধ। ফুসফুসে শ্বাসরোধবৎ অনুভূতি। বগলে স্ফীতি, ফোড়া। বক্ষের দুর্বলতা। দুর্বল হৃৎপিন্ড। সবিরাম ও অনিয়মিত নাড়ী, ক্ষীণ রক্তসঞ্চালন।
পৃষ্ঠ শীতল বোধ হয়। পৃষ্ঠে উদ্ভেদ, ব্রণ। কটিদেশে ভারবোধ। মাথার পশ্চাদ্ভাগ ও পৃষ্ঠে খঞ্জতাবোধ। চুলকানি। বিশ্রামকালে পৃষ্ঠে বেদনা, সঞ্চালনে উপশমিত হয়, শ্বাসক্রিয়ায়, ঋতুকালে বৰ্দ্ধিত হয়। প্রাতে জাগিয়া উঠিলে মাথার পশ্চাদ্দিকে ও কোমরে যন্ত্রণা, চিৎ হইয়া শুইলে উপশমিত হয়, উঠিয়া পড়িলে চলিয়া যায়। ঘাড়ের পশ্চাতে যন্ত্রণা। পৃষ্ঠদেশে বেদনা। প্রাতে জাগিয়া উঠিলে স্কন্ধাস্থিতে,—উঠিয়া বসিয়া পাশ ফিরিতে হয়। বেদনা প্রথমে ডান স্কন্ধাস্থিতে, পরে বামটিতে। স্কন্ধাস্থিদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে বেদনা। ঋতুকালে, বসিয়া থাকিলে কটিদেশে, বেদনা, সঞ্চালনে উপশমিত হয়। ঋতুকালে ত্রিকাস্থিতে বেদনা। মেরুদন্ডের উপর দিয়া তীব্র বেদনা। পিকচঞ্চু অস্থিতে বেদনা। দুই স্কন্ধাস্থির মধ্যবর্তী স্থানে বেদনা। মেরুদন্ডে ক্ষততা ও থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা। পৃষ্ঠে ও কটিদেশে জ্বালা। পৃষ্ঠে, কটিদেশে টানিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা। সমগ্র পৃষ্ঠের খঞ্জতা ও আড়ষ্টতা। ধীর সঞ্চালনে উপশমিত হয়, পৃষ্ঠে, দুই স্কন্ধাস্থির মধ্যবর্তী মেরুদন্ড স্থানে এবং কটিদেশে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। বুকের সম্মুখদিকে, শ্বাসকৃচ্ছ্রতাযুক্ত, সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, চেয়ারের পশ্চাদ্দিকে হেলিয়া পড়িলে, বসিয়া থাকিলে, চলিলে বৰ্দ্ধিত হয়। পৃষ্ঠে ও কটিদেশে ছিন্নকর বেদনা। মেরুমজ্জার কোমলতাপ্রাপ্তি। দুর্বলতার সহিত হাঁটিবার সময় হোঁচট লাগা। গ্রীবাগ্রন্থিগুলির স্ফীতি। পৃষ্ঠের দুর্বলতা। ঠেস দিবার মত পৃষ্ঠযুক্ত চেয়ার ব্যতীত সোজা হইয়া বসিতে পারে না। এই ঔষধটি অনেক প্রকার অনিরূপিত মেরুদন্ডরোগ আরোগ্য করে।
হাত ও পায়ের পাতা শীতল। পায়ের পাতা শীতল ও ভিজা। ঊরুতে, পায়ের ডিমে এবং পায়ের তলায় খালধরা। হস্তপদাদির উপর উদ্ভেদ ও ব্রণ। হাত দুইটি উত্তপ্ত থাকে। অঙ্গগুলির, নিম্নাঙ্গগুলির ও পায়ের পাতার ভারবোধ। ইহা ঊরুসন্ধিরোগে অত্যন্ত উপযোগী হইয়াছে। অঙ্গাদির, হাতের চেটোয় ও পায়ের তলায় চুলকানি। ঊর্ধ্ব ও নিম্ন অঙ্গগুলির অসাড়তা, হাত ও আঙ্গুলের ডগাগুলির, পায়ের পাতার ও পায়ের অসাড়তা। অঙ্গাদিতে ও সন্ধিগুলিতে বাতজনিত বা গেঁটেবাতজনিত যন্ত্রণা, সঞ্চালনে ও উত্তাপে উপশমিত হয়। পৃষ্ঠে ও অন্যান্য অঙ্গে যন্ত্রণা, সঞ্চালনে উপশমিত হয়। স্কন্ধ ও বাহুদ্বয়ে বেদনা, বাহু তুলিতে গেলে যন্ত্রণা। সায়েটিকাবাত, ধীর সঞ্চালনে উপশমিত হয়। নিতম্বদেশে এবং ঊরুতে বেদনা। প্রাতে ৫টায় জাগিয়া উঠিলে, পা দুইটিতে যন্ত্রণা, ধীর সঞ্চালনে উপশমিত হয়। হাঁটু ও পায়ে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা। পায়ের পাতা, পায়ের তলা ও পায়ের আঙ্গুলগুলিতে জ্বালা। অঙ্গগুলিতে পক্ষাঘাত, প্রকৃতির আকুঞ্চন, উত্তাপে ও মৃদু সঞ্চালনে উপশমিত হয়। পদতলে টানিয়া ধরার ন্যায়, খোঁড়া করিয়া দেওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা। স্কন্ধে ও ঊরুতে চাপনবৎ বেদনা। পদতলে হুল ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা। সন্ধিগুলিতে, স্কন্ধে এবং ঊরুতে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, স্কন্ধে, ঊর্ধ্ববাহুতে, কনুইতে, সম্মুখ-বাহুতে, হাতে, আঙ্গুলে ছিন্নকর যন্ত্রণা। নিম্নাঙ্গে, নিতম্বে, হাঁটুতে, পায়ে, পায়ের পাতায় ছিন্নকর যন্ত্রণা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পক্ষাঘাতের ন্যায় ছিন্নকর যন্ত্রণা, সঞ্চালনে উপশমিত হয়। কোন বিশেষ অঙ্গের পক্ষাঘাত। একাঙ্গিক পক্ষাঘাত। পায়ের পাতায় ঘাম হয়। নিম্নাঙ্গগুলি ও পায়ের পাতার অস্থিরতা। বিশ্রামের পর বাতজনিত আড়ষ্টতা। হাতের ও পায়ের শোথজনিত স্ফীতি। হাত দুইটি কম্পনশীল। অঙ্গগুলি উৎক্ষিপ্ত হয়। সকল অঙ্গের, বিশেষতঃ নিম্নাঙ্গের দুর্বলতা।
গভীর নিদ্রা। স্বপ্ন—উৎকণ্ঠাপূর্ণ, রতিবিষয়ক, পড়িয়া যাওয়ার, ভীতিপূর্ণ, উলঙ্গ থাকার; বুকচাপা স্বপ্ন; স্পষ্ট স্বপ্ন; শিশুদিগের রাত্রিকালীন ভয় (বোরাক্স’)। নিদ্রার মধ্যে অস্থির, স্নায়বিক ও উত্তপ্ত থাকে। চিৎ হইয়া নিদ্রা যায়। সন্ধ্যার প্রথমভাগে, আহারের পর নিদ্রালুতা। মধ্যরাত্রির পর, মানসিক শ্রমের পর, উত্তেজনার পর ও বিরক্তির পর, নিদ্রাহীনতা। ঘুম ঘুমভাবের সহিত নিদ্রাহীনতা। নিদ্রার মধ্যে ঘুরিয়া বেড়ায়। অত্যন্ত কষ্টকর হাই-উঠা।
শীত- প্রাতে, পূর্বাহ্নে, মধ্যাহ্নে, অপরাহ্নে, সন্ধ্যায়। খোলা বাতাসে, শয্যায় শুইলে শীতবোধ। শয্যায় গরম বোধ করে না। সন্ধ্যাকালে শীত মেরুদন্ড দিয়া উঠিতে থাকে। সারাদিন শীতল থাকে। আহারের পর শীতার্ততা। বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক শীত। স্নায়বিক কম্প ও থরথর করা। শীতে তাহাকে আছড়াইতে থাকে। একপার্শ্বিক শীতলতা।
অপরাহ্নে ও সন্ধ্যায় জ্বর। সারারাত্রি উত্তাপ, তৎসহ ক্ষুধা। শীতের সহিত পৰ্য্যায়ক্রমে জ্বর। রাত্রে শুইলে জ্বর। টাইফয়েড জ্বর দুষ্ট প্রকৃতির ও পচনশীল। শুষ্ক উত্তাপ। উত্তাপের ঝলক উঠে। ইহা বিলেপী জ্বরে পচা গন্ধ ঘৰ্ম্ম এবং পচা গন্ধ গয়ের এবং অত্যন্ত স্নায়বিকতা এবং উত্তেজনা থাকিলে বিশেষ উপযোগী হইয়াছে। আভ্যন্তরিক উত্তাপ। ঘর্মব্যতীত জ্বর। আরক্তজ্বরে কৃষ্ণাভ গাত্রচর্ম এবং পচাগন্ধ ও ঘোর লাল গলাভ্যন্তর। ঘৰ্ম্ম-প্রাতে ও রাত্রে, আহারকালে, পান করার সময় এবং সামান্য পরিশ্রমে, নিদ্রিত অবস্থায়, দুর্গন্ধ; প্রচুর নিশা-ঘৰ্ম্ম।
পায়ের ডিমের উপর কালবর্ণ দাগ। চুলকাইবার পর জ্বালা। চর্ম শীতল, ন্যাবারোগগ্রস্তের ন্যায়, শুষ্ক। উদ্ভেদসকল আর্দ্র এবং উহার রসানি দুর্গন্ধ। ইন্দ্রবিদ্ধা। উদ্ভেদ, চুলকানি, ব্রণ, সোরিয়াসিস, খোস, আমবাত; রক্তাক্ত, রসানিযুক্ত, ফোস্কা। ইহা পচা গন্ধবিশিষ্ট এবং গ্যাংগ্রিনসদৃশ ইরিসিপ্লাস আরোগ্য করিয়াছে। চর্মের ক্রিয়াশূন্যতা। চর্মে চুলকানি, পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি, হুল ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা। চৰ্ম্ম-অত্যনুভূতিযুক্ত। চর্মে কাঠি দিয়া খোঁচানর ন্যায় যন্ত্রণা ক্ষত জ্বালাকর, দুর্গন্ধ, এমনকি পচা গন্ধ, হলদে নিঃস্রাববিশিষ্ট।