ল্যাকেসিস LACHESIS [Lach]

অত্যন্ত বাচাল, আনন্দ প্রিয়, ঠাট্রা প্রিয়, মহান ব্যাক্তি হওয়ার অনুভূতি, ঈর্ষাপরায়ণ, সন্দেহবাতিক, ক্রমাগত কথা বলে, গান গায় ও শীষ দেয়, অপকার করার ইচ্ছা, প্রতিহিংসাপ্রবণ, থুথু দেয়, উপহাস করে, তার উপর কর্তৃত্ব সহ্য করতে পারেনা।
মানসিক ও শারীরিক সকল সমস্যা নিদ্রার সময় ও পরে বৃদ্ধি, ঋতুস্রাব শুরু হলে উপশম।
চামড়ায় অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা, সামান্য স্পর্শও অসহ্য, বিশেষ করে গলায়।
রোগ বাম দিকে আরম্ভ হয়ে  ডান দিকে যায়।
সময়ের গোলমাল অনুভূত হয়, সকালকে বিকাল মনে হয়।
কঠিন জিনিসের চেয়ে তরল পদার্থ গিলতে কষ্ট, শুধু ঢোক গিলতে আরও বেশী কষ্ট।

উপযোগিতামুখে চোখে বিষন্নতার ছাপ অল্প হলেও আছে, চোখ কাল, উৎসাহশূন্য ও আলসে প্রকৃতির রোগীর ক্ষেত্রে উপযোগী ।

পিত্তপ্রধান মহিলাদের দেহে তিল ও আঁচিল থাকে, চুল লাল (ফস) এমন ক্ষেত্রে উপযোগী ।

মোটাসোটা লোক অপেক্ষা যারা রোগা, দেহ শুকিয়ে গেছে তাদের বেশী প্রয়োজন হয়, যারা রোগে ভুগে দৈহিক ও মানসিক উভয়দিকেই পাল্টে গেছে তাদের পক্ষে উপযোগী।

রজোনিবৃত্তি সময়ে বিভিন্ন অসুখ হয়—অর্শ, রক্তস্রাব, চোখ মুখে যেন আগুনের হল্কা লাগার মত ও গরম ঘাম বার হয় । মাথার ঠিক ওপরে জ্বালা, মাথা যন্ত্রণা বিশেষতঃ রজোনিবৃত্তি সময়ে বা তারপরে দেখা দিলে ব্যবহার্য (স্যাঙ্গুইনে, সালফ)।

দীর্ঘদিনের শোক, দুঃখ, ভয়, রাগ, ঈর্ষা বা প্রেমে হতাশা এসব থেকে রোগ হলে প্রযোজ্য (অরাম, ইগ্নে, এসি-ফস)।

রজোনিবৃত্তি কালের রোগ থেকে আর সেরে ওঠেন নি—“সেই সময় থেকে আর কখনও ভাল বোধ করেন নাই এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে উপযোগী ।

প্রধানতঃ দেহের বাঁদিকে আক্রান্ত হয় রোগ লক্ষণ বাঁদিকে শুরু হয়ে ডানদিকে আক্রান্ত হয়, বা ডিম্বকোষ, বা অন্ডকোষ, বুকের বাঁ দিকে অসুখ হলে প্রযোজ্য ।

গলায়, পাকস্থলীতে, তলপেটে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা। গলায় বা পেটে বিছানায় চাদর বা ডেপোষাকের ছোঁয়াও সহ্য করতে পারে না। এপিস ও বেলাডোনাতে যেরূপ ব্যথা যন্ত্রণায় অত্যনুভূতি থাকে সেরূপ এতে নাই তবে কাপড়ের ছোঁয়ায় সে অস্বাচ্ছন্দ বোধ করে, তাকে স্নায়বিক করে তোলে ।

ঘাড়ে বা কোমরে কোন আটোসাটো বাধন সহ্য করতে পারে না ।

অতিরিক্ত শীত বা অতিরিক্ত গরমে অত্যন্ত দুর্বলতা বোধ করে ।

মাতালদের মাথায় রক্ত সঞ্চয়জনিত মাথাযন্ত্রণা ও অর্শরোগে ও চর্মে ইরিসিপেলাস হলে ও সন্ন্যাস রোগ হলে প্রযোজ্য।

মাথাযন্ত্রণা দুইকানের পাশে (Temple) চেপে আছে এমন, ফেটে যাচ্ছে এমন যন্ত্রণা হয়-নড়াচড়ায়, চাপ দিলে, সামনে ঝুঁকলে, শুয়ে থাকলে ও ঘুমের পরে ঐ যন্ত্রণা বাড়ে। ভয়ে ঘুমাতে যায় না কারণ ঘুম ভাঙ্গলেই মাথাযন্ত্রণা শুরু হবে ।

মাথায় রক্ত যেন ঠেলে ওঠে, মদ খেলে মানসিক আবেগে, ঋতুস্রাব চাপা পড়ে বা অনিয়মিত হয়ে, রজোনিবৃত্তি সময়ে ঐরূপ মাথাযন্ত্রণা হয়। বাঁদিকের সন্যাস রোগ হলে ব্যবহার্য।

মাথার ওপরে চাপ ও ভারবোধ (সিপিয়া), মাথার পিছনে সীষার মত ভারবোধ । এ সব লক্ষণ বিশেষতঃ মানসিক লক্ষণ ঘুমের পর বাড়ে বা ঘুমের মধ্যেই বেড়ে গিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে, বৃদ্ধি অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ে । অসুখী যেন যাতণা গ্রস্ত, উদ্বিগ্ন, দুঃখিত—ঘুম থেকে জেগে উঠলে ঐ অবস্থা বেড়ে যায়।

মানসিক উত্তেজনা, উল্লাস করে ঐ সাথে ভবিষ্যৎ বক্তার মত ভবিষ্যদ্বাণী করে, কল্পনাশক্তি প্রবল, অত্যন্ত বকবক করে (এগারি,), সবসময়ই কথা বলা চাই, এক বিষয়ে কথা বলতে বলতে অন্য বিষয়ে চলে যায়। একটা কথা বলেই অন্য বিষয়ের গল্প করতে থাকে।

কোষ্ঠবদ্ধতা অন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা-রেকটামে মল জমে থাকে, কোন বেগ হয় না, মলদ্বার পেশীতে যেন সঙ্কোচন বোধ (কষ্টি, এসিড-নাই)।

ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়েই হয় । পরিমাণে খুবই অল্প, কম সময় থাকে। ঋতুস্রাব হলে সব কষ্টের অবসান হয় । ঋতুকালে সবসময়ই অপেক্ষাকৃত ভালবোধ করে (জিঙ্কাম)।

অর্শরোগ সাথে স্বল্প ঋতুস্রাব রজোনিবৃত্তি সময়ে অর্শরোগ। যেন আটকে আছে এই অনুভূতি সাথে ছুঁচ ফোটানো ব্যথা যেন উপরদিকে ঠেলে উঠছে (এসিড-নাই)।

মুখ বা নাকের কাছে কোন বস্তু থাকলেই শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয় দূর হতে ও ধীরে ধীরে পাখার বাতাস খেতে চায় (দ্রুত পাখার বাতাস চায় = কার্বভে) ।

ঘুম আসলেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এমন-কা, গ্রিন্ডেলিয়া, ল্যাক-ক্যা, ওপি)।

দেহ ও মনে অত্যন্ত দুর্বলতা—সর্বাঙ্গে কাঁপুনি, দুর্বলতার জন্য সর্বদা : অবসন্নভাব—এ সব সকালে বেড়ে যায় (সালফ, টিউবার) ।

মৃগী রোগ ঘুমের মধ্যে হয় (বিউফো) জৈব পদার্থের অপচয়, হস্তমৈথুন করে, ঈর্ষার কারণে মৃগী হলে ব্যবহার্য।

রক্তস্রাব প্রবণতা, অল্প একটু কেটে গেলেও সহজেই প্রচুর পরিমাণে রক্ত বার হতে থাকে (ক্রোটেল, ক্রিয়ো, ফস) কালচে রক্ত ও জমাট বাধে না (ক্রোটেল, সিকেলি)। ফোড়া কার্বাঙ্কল, ঘা এতে ভীষণ যন্ত্রণা (টেরান্টুলা), সাংঘাতিক ফোঁড়া—তাতে পুঁজ হয় । শয্যাক্ষত-ঐগুলো কালচে, নীলাভ ।

বেগুনী বর্ণ ও সাংঘাতিক হবার প্রবণতা থাকে। বিষাক্ত ঘা ও শব কাটাছেড়া করে অসুখ হলে ব্যবহার্য (পাইরো)। মূত্রথলীতে যেন একটি গোলাকার বস্তু গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে এই অনুভূতি হয় ।

জ্বর প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে, প্রতি শরৎকালের কুইনাইন চাপা জ্বর প্রতি বসন্তকালে ফিরে আসে (কার্বভে, সালফ) ।

জ্বর টাইফয়েড, টাইফাস জ্বরে নিদ্রাচ্ছন্নভাব, বিড়বিড় করে প্রলাপ বকে, চোখ গাল চুপসে যায়, নিচের চোয়াল ঝুলে পড়ে। জিব শুকিয়ে যায়, কালচে জিব, জিব কাপে-অতিকষ্টে জিভ বার করে-জিব দাতে আটকে যায়, চোখের সাদা অংশ হলদে বা কমলা রঙ হয়ে যায়, ঠান্ডা ঘাম, কাপড়ে হলদে দাগ পড়ে । ঘামের সাথে রক্ত বার হয় (লাইকো)।

ডিপথেরিয়া ও টনসিল প্রদাহ-বাঁদিকে শুরু হয়ে ডানদিকে বেড়ে যায় (ল্যাক-ক্যা, স্যাবাডি)—তা ঘন বেগুনি বর্ণ হয়ে যায় (ন্যাজা)। গরম পান করলে ও ঘুমের পর যন্ত্রণা বাড়ে । শক্ত অপেক্ষা তরল গিলতে বেশী কষ্টবোধ হয় । (বেল, ব্রায়ো, ইগ্নে) গলার অবস্থা দেখে যা মনে হয় সেই তুলনায় অবসন্নতা বেশী ।

সম্বন্ধ অনুপূরক হিপার, লাইকো, এসি-নাই,

শত্রু সম্বন্ধ এসে-এসিড, কার্ব-এসি ।

সবিরাম জ্বরের প্রকৃতি পাল্টে গিয়ে ল্যাকেসিসের পর নেট-মি-র প্রয়োজন হয় ।

বৃদ্ধি ঘুমের পরে, ছোঁয়া লাগলে, ঠান্ডা বা গরম বেশী হলে, অদ্রব্য, মদ খেলে, চায়না ও পারদের অপব্যবহারে, চাপে বা পিষে গেলে, সূর্যের কিরণে, বসন্তকালে, গ্রীষ্মকালে রোগলক্ষণ বাড়ে ।

শক্তি ৩০, ২০০, ০/১ হতে ০/০৩ শক্তি ।

সকল সাপের বিষের মত, ল্যাকসিনও রক্তের পচন ঘটায়, এবং রক্তকে আরো বেশি তরল করে ফেলে এই কারনে এই ঔষধে, রক্তস্রাব প্রবণতা সুস্পষ্টভাবে থাকে। পারপিউরা, সেপ্টিকজনিত অবস্থা, ডিথিরিয়া এবং অন্যান্য প্রকারের নাতিপ্রবণ রোগসমূহ, যখন সমগ্র শরীর বিষাক্ত হয়ে যায় এবং সুস্পষ্টভাবে অবসন্নতা থাকে। এই ঔষধের নির্বাচনে কমাবাড়া লক্ষণগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কম্পসহ প্রলাপ তৎসহ প্রচন্ড কাঁপুনি এবং বিভ্রান্তি। রজোনিবৃত্তিকালে এই ঔষধটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং বিষন্নচিত্ত রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী হয়। স্রাব চাপা পড়ার কুফল সমূহ। ডিথিরিয়াজনিত পক্ষাঘাত (বোটুলিনাম)। ডিথিরিয়া রোগের বাহক। শরীরের বিভিন্ন অংশে টানভাব। শরীরের কোন অংশে, কোন কিছু কষে থাকা সহ্য হয় না।

মন প্রচন্ড বাচালতা। প্রনয় প্রবন বা কাম প্রবন। সকালের দিকে দুঃঘিত; পার্থিব জগতের সঙ্গে মেশার কোন ইচ্ছা থাকে না। অস্থিরতা ও অস্বস্তি নিজের কাজ কর্মেযোগ দেবার ইচ্ছা থাকে না; সব-সময়ে কোথাও পালিয়ে থাকার ইচ্ছা। হিংসুটে (হায়োস)। রাত্রে মানসিক কাজ খুব ভালোভাবে করতে পারে। সহজ মৃত্যু। সন্ধিগ্ধ; রাত্রে আগুন সম্পর্কে বিভ্রান্তি। ধর্মীয় উন্মাদনা। (ভিরেট্রাম; ষ্ট্রমোনিয়াম)। সময় সংক্রান্ত জ্ঞানের লোপ।

মাথা ঘুম থেকে জাগার পরে মাথার ভিতর দিয়ে বেদনা। নাকের গোড়ায় বেদনা। মাথার তালুতে চাপবোধ ও জ্বালা। তরঙ্গায়িত বেদনা; নড়াচড়ায় বেদনার বৃদ্ধি। সূর্যের উত্তাপ লেগে মাথার বেদনা। মাথার বেদনার সঙ্গে, সামনে কম্পিত শিখাসমূহ দেখে, দৃষ্টি ঝাপসা, মুখ মন্ডল অত্যন্ত ফ্যাকাশে। মাথাঘোরা। স্রাব শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে বেদনার উপশম (মাসিক ঋতুস্রাব বা নাকের সর্দিজ স্রাব)।

চোখ ডিফথিরিয়া রোগের পরে দৃষ্টি সম্পর্কিত গোলযোগ, চোখের বাহ্য পেশীসমূহ এতই দুর্বল যে, দৃষ্টবস্তুকে চোখের কেন্দ্রস্থলে স্থির রাখতে পারে না। মনে হয় যেন চোখ গুলি দড়ি দিয়ে টেনে রাখা আছে এবং ঐ দড়িগুলি নাকের গোড়ায় গিট দিয়ে কষে বাঁধা রয়েছে।

কান জাইগোম্যাটিক প্রসেস থেকে কান পর্যন্ত বেদনা; এছাড়াও তৎসহ গলায়। টাটানি ব্যথা। কানের খোল শক্ত, শুষ্ক।

নাক রক্তপাত, নাসারন্ধ অনুভূতি প্রবণ। সর্দি, এর পরে মাথার যন্ত্রনা। ঔষধি গন্ধজ হাঁপানি থেকে থেকে হাঁচির আক্রমন (সিলিকা; স্যাবাডিনা)।

মুখমন্ডল ফ্যাকাশে। মুখমন্ডলীয় স্নায়ুরশূলবেদনা, বামদিকের রোগাক্রমন, উত্তাপ মাথায় ছুটে যায়। (ফসফরাস)। চোয়ালের অস্থিতে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা।

(অ্যামফিবিন; ফসফরাস), বেগুনি বর্ণ, নানাবর্ণের দাগযুক্ত, (ফোলাভাব; দেখতে স্ফীত, থমথমে ভাব, জন্ডিসগ্রস্ত, রক্তহীণতা।

মুখগহ্বর মাঢ়ী স্ফীত, ফোঁপরা, সহজেই রক্তপাত হয়। জিহ্বা স্ফীত, জ্বালাকর, কম্পযুক্ত, লালবর্ণ, শুষ্ক এবং অগ্রভাগ ফাটাযুক্ত, দাঁতের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। সাদা ঘা ও ছাল উঠা ছোট-ছোট স্থানসমূহ, তৎসহ জ্বালা ও কাঁচাভাব। মুখের আস্বাদে বমি-বমিভাব উৎপন্ন করে। দাঁতের যন্ত্রনা, বেদনা কান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মুখমন্ডলীয় অস্থিতে বেদনা।

গলা ক্ষতবৎ, বামদিক বেশি আক্রান্ত হয়, তরল পদার্থ গেলার সময় বেশি হয়। টনসিলের প্রদাহ। দূষিত কর্ণমূল প্রদাহ। শুষ্ক, মারাত্মক ধরনের স্ফীতি, বাইরের দিকে এবং ভিতরের দিকে। ডিফথিরিয়া, ঝিল্লী সামান্য কালোবর্ণের, কালো; বেদনা গরম পানীয়ে বৃদ্ধি, পুরাতন গলক্ষত, তৎসহ বারে বারে গলা খাঁকার দিতে হয়; শ্লেষ্মা চটচটে এবং তা জোর করে উপর বা নীচের দিকে উঠা-নামা করা যায় না। অত্যন্ত বেদনাপূর্ণ; সামান্য চাপে বৃদ্ধি, স্পর্শ তদপেক্ষা কষ্টকর। ডিথিরিয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে কষ্ট শুরু হয়। বামদিক থেকে টনসিল দুটি বেগুনি বর্ণের। গলা বেগুনি, কালোবর্ণের। মনে হয় যেন কোন কিছু গলাধঃকরণ করা হয়েছে, যা অবশ্যই পুরোপুরি ভাবে গিলে ফেলতে হবে এই জাতীয় অনুভূতি; লালা অথবা তরল বস্তু গেলার সময় বৃদ্ধি। কালো বেদনা। গলবন্ধনী অবশ্যই হাল্কা করে বাঁধতে হয়।

পাকস্থলী সুরাপানের ও ঝিনুক খাবার জন্য তীব্র। আকাঙ্খ। যে কোন প্রকার খাবারে কষ্ট বৃদ্ধি পায়। পাকস্থলীর উপরের অংশ স্পর্শ করলে বেদনা হয়। ক্ষুধার্ত, খাবারের জন্য কিছুতেই অপেক্ষা করতে পারে না। পেটের ভিতরে দংশন করার মত চাপ, আহারের উপশম হয় কিন্তু কয়েক ঘন্টা পরে পুনরায় শুরু হয়। পেটের উপরের অংশে বুঝতে পারা যায় এই জাতীয় কম্পন। শক্তবস্তু গেলার থেকে ঢোক গেলা খুবই কষ্টকর।

উদর যকৃৎস্থান অনুভূতি প্রবণ, কোমরের চারিপাশে কোন কিছুই সহ্য করতে পারে না। মাতালদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে। উদর ফাঁপা, স্পর্শকাতর, বেদনাপূর্ণ, বেলেডোনা)।

মল — কোষ্ঠকাঠিণ্য, দূর্গন্ধযুক্তমল। মলদ্বারে কষে থাকার মত অনুভূতি, মনে হয় যেন এর ভিতর দিয়ে কোন কিছু প্রবেশ করবে না। প্রতিবার কাশি অথবা হাঁচির সময়ে বেদনা সরলান্ত্রদিয়ে তীর বেগে ঠেলে উঠে। অন্ত্র থেকে হওয়া রক্তস্রাব দেখতে ঝলসে যাওয়া খড়ের মত, স্রাবের ভিতর কালো কালো বস্তু থাকে। অর্শ বাইরে বেরিয়ে আসে, সঙ্কুচিত, বেগুনিবর্ণ। কাশি বা হাঁচির সময় সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। সর্বদাই সরলান্ত্রে বেগ, অথচ মনের জন্য নয়।

স্ত্রীরোগ রজোনিবৃত্তিকালের উপসর্গসমূহ, হৃম্প, চোখমুখ দিয়ে আগুনের হল্কা বেরিয়ে থাকে, রক্তস্রাব, মাথার তালুতে বেদনা, মাঝে-মাঝে মূচ্ছাভাব, জামা কাপড়ের চাপে বৃদ্ধি। মাসিক ঋতুস্রাব অল্পদিন স্থায়ী হয়, অত্যন্ত ক্ষীণ; স্রাব শুরু হওয়া মাত্র, সকল বেদনার উপশম (ইউপিয়ন)। বামদিকের ডিম্বাশয় অত্যন্ত বেদনাপূর্ণও স্ফীত, শক্ত। স্তন্যগ্রন্থি প্রদাহিত, নীলবর্ণ। চঞ্চু অস্থি ও ত্রিকাস্থিস্থানে বেদনা, বিশেষ করে বসে থাকা অবস্থান থেকে উঠার সময়। বিশেষভাবে ভালো কাজ করে, ঋতুস্রাবের আরম্ভ ও বন্ধের সময়।

পুরুষের রোগ— যৌনাঙ্গের তীব্র উত্তেজনা।।

শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র সমূহ – শ্বাসনলীর উপরের অংশ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। শুয়ে থাকার সময় শ্বাসরোধ ও গলা টিপে ধরার মত অনুভূতি, বিশেষ করে, যখন গলার চারিপাশে কিছু থাকে; এই অনুভূতির জন্যে রোগী বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে ও খোলা জানালার দিকে ছুটে যায়। শ্বাসলনীর দ্বারে আক্ষেপ; ঘাড় থেকে কণ্ঠনালী পর্যন্ত যেন কোন কিছু ছুটে যাচ্ছে এই জাতীয় অনুভূতি। তাকে একটা গভীর শ্বাস নিতে হবে, এই জাতীয় অনুভূতি। হৃদপিন্ডস্থানে খিলধরার মত কষ্টের অনুভূতি। কাশি; শুষ্ক, থেকে-থেকে শ্বাসরোধের মত, সুড়সুড়ি। সামান্য শ্লেষ্মা উঠে ও অত্যন্ত অনুভূতি প্রবন; কণ্ঠনলীর উপর চাপে, ঘুমের পরে, মুক্ত বাতাসে বৃদ্ধি। ঘুম আসলে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। (গ্রিন্ডোলিয়া)। কণ্ঠনলী স্পর্শ করলে বেদনা হয়। মনে হয় যেন গলার ভিতরে একটি গোঁজ রয়েছে (এনাকার্ডিয়াম), যা উপর-নীচে উঠানামা করে, তৎসহ অল্পকাল স্থায়ী কাশি।

হৃদপিন্ড হৃদকম্প, তৎসহ মাঝে মাঝে মূচ্ছা, বিশেষ করে রজোনিবৃত্তিকালে।। সঙ্কোচনের অনুভূতি যার ফলে হৃদকম্প ও উদ্বেগ দেখা দেয়। সায়্যানোসিস। হৃদস্পন্দন অনিয়মিত।

পিঠ চঞ্চু অস্থি স্থানে স্নায়ুশূল, বসে থাকা অবস্থান থেকে উঠার সময়ে বৃদ্ধি; বাধ্য হয় স্থিরভাবে বসে থাকতে। ঘাড়ের বেদনা, গ্রীবাদেশে বেশি হয়। পিঠ থেকে বাহু, পা, চোখ প্রভৃতিস্থানে সূতা দিয়ে টেনে থাকার মত অনুভূতি।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সায়েটিকা, ডানদিকের, শুয়ে থাকলে উপশম। পায়ের দীর্ঘাস্থিতে বেদনা। পেশী বন্ধনীসমূহের ছোট হওয়া।

ঘুম রোগীর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কষ্টের বৃদ্ধি হয়। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ করে চমকিয়ে উঠে। নিদ্রালুভাব, তথাপি ঘুমাতে পারে না (বেলেডোনা, ওপিয়াম)। সন্ধ্যার দিকে সম্পূর্ণভাবে জেগে থাকে।

জ্বর পিঠের দিকে শীতভাব; পাদুটি বরফের মত ঠান্ডা; উত্তাপের হল্কা ও উত্তপ্ত ঘাম। অম্লজাতীয় বস্তু খাবার পরে জ্বরের কষ্টকর অবস্থা ফিরে আসে, প্রতিবার বসন্তকালে, সবিরাম জ্বর।

চামড়া উষ্ণ ঘাম, গায়ের চামড়া নীলচে, বেগুনিবর্ণ। ফোঁড়া, কাবাঙ্কল, ক্ষতসমূহ, তৎসহ চারিধার নীলচে, বেগুনিবর্ণ দেখতে হয়। কালো ফোস্কা সমূহ। শয্যা-ক্ষত, তৎসহ ক্ষতের কিনারা কালোবর্ণের। নীলচে কালো স্ফীতিসমূহ। বিষাক্ত পুঁজযুক্ত ফোঁড়া; শব ব্যবচ্ছেদ কালে কেটে যাবার ফলে উৎপন্ন ক্ষত। পাপিউরা তৎসহ প্রচন্ড অবসন্নতা।

বার্ধক্যজনিত ইরিসিপেলাস। গোলাকার অবুদবিশেষ সেলুলাইটিস বা তন্তুসমূহের প্রদাহ। শিরাস্ফীতি জনিত কারনে ক্ষত।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – ঘুমের পরে (ক্যালিবাই) ল্যাকেসিসের রোগীর ঘুমের ভিতরে কষ্টের বৃদ্ধি হয়; যে সকল উপসর্গ ঘুমের সময়ে উপস্থিত হয় (ক্যাঙ্কেরিয়া); বামদিক, বসন্তকাল, উষ্ণস্থান, চাপ অথবা সঙ্কোচন, উষ্ণ পানীয়ে। চোখ দুটি বন্ধ করলে।

উপশম স্রাব দেখা দেওয়া মাত্র, নরম প্রলেপ।

সম্বন্ধদোষঘ্ন আর্সেনিক; মার্কিউরিয়াস; উত্তাপ; সুরাসার; লবন।

পুরিপূরক প্রায়ই ল্যাকেসিসের অসমাপ্ত, কাজ, ক্রোটেলাস সমাপ্ত করে; লাইকোপোডিয়াম; হিপার স্যালাম্যান্ড্রা।

প্রতিবন্ধক অ্যাসেটিক অ্যাসিড; কার্বোলিক অ্যাসিড।

তুলনীয় কোটিলিডন (রজোনিবৃত্তিকালীন উপসর্গসমূহ); নেট্রাম মিউর, নাইট্রিক অ্যাসিড; ক্রোটেলাস;

এম্ফিসবিনা সাপের মত গিরগিটি (ডানদিকের চোয়াল স্ফীত ও বেদনাপূর্ণ, ছুরি দিয়ে কাটার মত বেদনা; মাথার যন্ত্রনা, ছুরি দিয়ে কাটার মত বেদনা। ফোস্কা ও ফুস্কুড়ির মত উদ্ভেদ সমূহ: ন্যাজা; লিপিডিয়াম।

শক্তি ৮ম থেকে ২০০ শক্তি। এই ঔষধের মাত্রা পুনঃ পুনঃ প্রয়োগ করা উচিত নয়। যে ক্ষেত্রে ঔষধটি যথাযথভাবে নির্দেশিত হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে একটি মাত্র, মাত্রার কাজ যে পর্যন্ত শেষ না হচ্ছে, সেই সময় পর্যন্ত ঐ মাত্রাটিকে কাজ করতে দেওয়া · প্রয়োজন।

ল্যাকেসিস একটি সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধ এবং ইহার ব্যবহার জানিবার জন্য তোমাদিগকেও ইহার বিষয় ভালভাবে আলোচনা করিতে হইবে। ল্যাকেসিস সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই উপযোগী কারণ মানবজাতি প্রবৃত্তি ও চরিত্রের দিক হইতে যথেষ্ট পরিমাণে সর্পসদৃশ এবং এই সর্পবিষটি মানুষের মধ্যে যে বৃত্তিগুলি আছে, কেবলমাত্র তাহাদিগকেই প্রকাশিত করে।

আমরা প্রথমে সৰ্বাঙ্গীণ লক্ষণগুলি, যে লক্ষণগুলি এই ঔষধটির চরিত্রগত এবং সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সেইগুলির আলোচনা করিব এবং দেখাইবে যে-কিরূপ অবস্থায় ঐ লক্ষণগুলি প্রকাশিত এবং বৃদ্ধিযুক্ত হয়।

যে ব্যক্তি ধাতুগতভাবে ল্যাকেসিসের রোগী সে বসন্তকালে তাহার লক্ষণগুলি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইতে দেখে; অর্থাৎ যখন সে শীতল আবহাওয়া হইতে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় যায় এবং বিশেষভাবে ঐ আবহাওয়া যদি নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিযুক্ত ও মেঘাচ্ছন্ন হয়, অথবা সে যদি শীতল আবহাওয়া হইতে উষ্ণতর আবহাওয়ায় যায়, তাহা হইলে ল্যাকেসিসের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। দক্ষিণের গরম বাতাসে ল্যাকেসিসের লক্ষণগুলি উদ্ৰিক্ত হয়।

ল্যাকেসিসের লক্ষণগুলি নিদ্রাগত হইলেই বাড়িয়া উঠে। জাগিয়া থাকার সময় সে হয়ত তাহার লক্ষণগুলির কিছুই অনুভব করিবে না, কিন্তু যখনই নিদ্রা আসে, তখনই ঐগুলি প্রকাশিত হইয়া পড়ে এবং নিদ্রা যতই দীর্ঘস্থায়ী হয় লক্ষণগুলিও ততই বর্ধিত হয়, ফলে খুব দীর্ঘকাল স্থায়ী নিদ্রার পর ল্যাকেসিস রোগীর সকল অবস্থা ও লক্ষণের বৃদ্ধি হয়, এবং জাগিয়া উঠিয়া সে ঐ নিদ্রার কথা ভাবিয়া কষ্ট বোধ করে। শ্বাসরোধের আক্রমণে এবং ভীতিপ্রদ স্বপ্নে তাহার ঘুমের ব্যাঘাত হয়, এবং তারপর দীর্ঘ নিদ্রার পর সে জাগিয়া উঠিয়া ভয়ঙ্কর শিরঃপীড়া, হৃদস্পন্দন, বিমর্ষতা ও আপাদ-মস্তক ক্লেশযুক্ত হইয়া পড়ে। তাহার শরীর যন্ত্রণায় পূর্ণ থাকে এবং মন কোন জিনিষেরই ভাল দিকটি দেখিতে পায় না। মনের অপরিচ্ছন্নতা, বিমর্ষতা, বিষাদ, অপ্রকৃত ধারণা, খেয়াল, ঈর্ষা ও সন্দেহবাতিক বর্তমান থাকে। গরম জলে স্নান করিলে অথবা প্রদাহিত স্থানে উষ্ণ জল লাগাইলে তাহার মানসিক লক্ষণগুলি বৰ্দ্ধিত হয়। গরম জলে স্নানের পর অথবা উত্তপ্ত হওয়ার পর, কিম্বা ঠান্ডার দিনে বাহিরে গিয়া শীতার্ত হওয়ার পর গরম ঘরে প্রবেশ করিলে, তাহার লক্ষণগুলি উপস্থিত হয়। গরম জলে স্নানের পর, তাহার বুক ধড়ফড় করে, মনে হয় যেন মাথাটি ফাটিয়া যাইবে, পায়ের পাতা শীতল হইয়া পড়ে, এবং তাহার সর্বাঙ্গে বিদ্যুতের মত সঘাত বোধ করিতে থাকে, সর্বাঙ্গে দপদপ করে কিম্বা হৃদপিন্ড দুর্বল হইয়া পড়ে। গরম জলে স্নানে সে মূৰ্ছা যাইতে পারে। বালিকারা সময়ে সময়ে গরম জলে স্নান করিলে মূৰ্ছাগ্রস্ত হয়। রোগী শীতল ও শীতার্ত থাকিতে পারে, কিন্তু তথাপি গরম ঘরে তাহার লক্ষণগুলি বর্ধিত হয়। অথবা প্রকাশিত হয়।

রোগীর সাধারণ অবস্থা এবং রোগাক্রমণের স্থান সময়ে সময়ে ল্যাকেসিস নির্দেশ করে। মুখমন্ডলে উকণ্ঠা, অস্বস্তি ও ক্লেশের ভাব পরিস্ফুট থাকে। মুখমন্ডল চিত্র-বিচিত্র অথবা বেগুনিবর্ণ থাকে, এবং চক্ষুদ্বয় রক্তপূর্ণ থাকে। চক্ষু দুইটি সন্দিগ্ধ দেখায়। যদি কোন প্রাহিত স্থান থাকে, উহা বেগুনিবর্ণ দেখায়। যদি কোন প্রাহিত গ্রন্থি থাকে, ল্যাকেসিস গ্রন্থি ও কৌষিক তন্তুর প্রদাহে পূর্ণ, তাহা হইলে উহা বেগুনিবর্ণ অথবা চিত্র-বিচিত্র হয়। যদি কোন ক্ষত থাকে, ঐ ক্ষত হইতে কালবর্ণ রক্তপাত হয়। ঐ রক্ত শীঘ্রই জমাট বাঁধে এবং পোড়া খড়ের ন্যায় দেখায়। ক্ষত হইতে যথেষ্ট রক্তপাত হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত হইতে ফসফরাস’ ও ক্রিয়োজোটে’র ন্যায় অধিক রক্তপাত হয়। একটি আলপিনের খোচা লাগিলে অনেক ফোটা রক্ত পড়ে। ক্ষতগুলি খাইয়া যায়, কৃত্রিম দানাযুক্ত হইয়া উঠে এবং দুর্গন্ধ হয়, সহজেই রক্তপাত হয়, ঐ রক্ত কাল থাকে, এবং ক্ষতটির চারিদিক বিচিত্র, বেগুনিবর্ণ আকৃতিবিশিষ্ট হয়, দেখিলে মনে হয় যে, উহা গ্যাংগ্রিনে পরিণত হইতে চলিয়াছে। সময়ে সময়ে গ্যাংগ্রিনও দেখা দেয়, যে-অঙ্গগুলি আহত হয়, তাহাদের গ্যাংগ্রিন। অতি দুর্গন্ধ পচলা উঠে। স্থানটি কাল হইয়া যায় এবং খোলস উঠে। শিরাগুলি অতিবৃদ্ধিযুক্ত হয়। ঐ বৃদ্ধিযুক্ত শিরাগুলি অঙ্গের উপর দেখিতে পাওয়া যায়, গর্ভকালে যেরূপ বৰ্দ্ধিত শিরা দেখা যায়, তদ্রুপ অবস্থা হয়। ল্যাকেসিসে শিরাগুলির স্ফীতি একটি বিশিষ্ট লক্ষণ।

সামান্য মানসিক পরিশ্রমে অথবা সামান্যমাত্র মনোবেগে হস্তপদাদি শীতল হইয়া যায়, হৃদপিন্ড অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ে, গাত্রচর্ম ঘর্মাবৃত হয়, এবং মাথা গরম হইয়া উঠে। উত্তাপে পায়ের পাতা ও হাতের শীতলতার উপশম হয় না, উহারা অত্যন্ত শীতল থাকে। উহাদিগকে ফ্লানেলে জড়ান যাইতে পারে, কিন্তু উহারা শীতলই থাকিয়া যায়, অধিকন্তু রোগীর শ্বাসরোধভাব উপস্থিত হয়। সে নিঃশ্বাস লইতে পারে না এবং জানালা খোলা চায়। ইহা হৃদপিন্ডের দুর্বলতা, সময়ে সময়ে এত দুর্বলতা দেখা দেয় যে, হৃদশব্দ প্রায় শোনা যায় না, নাড়ী দুর্বল ও সবিরাম হইয়া পড়ে। অন্য সময়ে হৃদস্পন্দন বেশ শোনা যায়।

যখন আমরা পাঠ্যপুস্তকের লক্ষণগুলি আলোচনা করিব, তখন ইহার রোগগুলি সম্বন্ধে একটি অদ্ভুত ব্যাপার অর্থাৎ ইহার বামপার্শ্ব আক্রমণ করিবার প্রবণতা, রোগলক্ষণ বামপার্শ্বে উপস্থিত হইয়া ডানদিকে প্রসারিত হওয়া, লক্ষ্য করিতে পারিব। বামপার্শ্বে দুর্বলতা দেখা দিয়া উহা বাড়িতে বাড়িতে পক্ষাঘাত উপস্থিত হয় এবং উহা ডানপার্শ্ব পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয়। ইহার ডিম্বকোষের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে এবং এ ক্ষেত্রেও দেখা যাইবে যে, বাম ডিম্বকোষটি প্রথমে আক্রান্ত হয়। ডিম্বকোষের প্রদাহ সম্বন্ধেও ঐ একই কথা, বাম ডিম্বকোষটি আক্রান্ত হয়। প্রদাহ প্রথমে গলার বামপার্শ্বে আরম্ভ হয় এবং ক্রমশঃ ডানপার্শ্বে বিস্তৃত হয়। মাথার বামপার্শ্বই সাধারণতঃ বেশী আক্রান্ত হয়। বাম চক্ষুতে যন্ত্রণা উপস্থিত হইয়া উহা ডান চক্ষে বিস্তৃত হয়। মাথার পশ্চাদ্ভাগের শিরঃপীড়ায় বামপার্শ্ব দক্ষিণপার্শ্ব অপেক্ষা অধিক পীড়িত হয়। সর্বদাই ঠিক এইরূপ হয় না, যদি ইহার বিপরীত (ডানপার্শ্বে আক্রমণ) অবস্থা দেখা যায়, তাহা হইলেও ল্যাকেসিস প্রয়োগ ব্যর্থ হয় না, কিন্তু পূর্বে যাহা বলা হইল, তাহাই ইহার সাধারণ প্রকৃতি। বামদিকের ঊধ্বভাগ এবং দক্ষিণদিকের নিম্নভাগ আক্রান্ত হইতে দেখা গিয়াছে।

ল্যাকেসিসের অনেক লক্ষণে প্রাতঃকালীন বৃদ্ধি আছে। ইহাই সুপরিচিত ল্যাকেসিসের নিদ্রার পর বৃদ্ধি; রোগী বৃদ্ধির মধ্যেই নিদ্রা যায়। মৃদুতর লক্ষণের মধ্যেও এইরূপ মৃদুবৃদ্ধি থাকে এবং যে-পৰ্য্যন্ত না রোগী দীর্ঘ নিদ্রার পর জাগিয়া উঠে, সে-পৰ্য্যন্ত উহা অনুভূত হয় না, কিন্তু ঐ বৃদ্ধি যদি যথেষ্ট প্রবল হয়, তাহা হইলে রোগী উহা ঘুমাইতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনুভব করে এবং উহাতে তাহাকে জাগাইয়া তুলে উদাহরণ, যথা-হৃদপিন্ডের লক্ষণগুলি। যেমনই সে ঘুমাইয়া পড়ে, অমনি সে হৃদস্পন্দন শ্বাসকৃচ্ছতা, শ্বাসরোধভাব, অবসন্নতার সহিত এবং শিরোঘূর্ণনযুক্ত মাথার পশ্চাদ্দিকে যাতনা এবং রক্তসঞ্চালন সম্বন্ধীয় নানা উদ্ৰবযুক্ত হইয়া জাগিয়া উঠে।

অতঃপর আমাদিগের পাঠ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়টি উহার মানসিক অবস্থা। তাহার আত্মম্ভরিতা, অহংজ্ঞান, হিংসা, ঘৃণা, প্রতিহিংসা এবং মানুষের প্রতি নিষ্ঠুরতা ব্যতীত কোন বৃত্তিই অধিকতরভাবে প্রকাশিত থাকে না। এই সবকিছুই তাহার অহংজ্ঞান ও অন্যায় আত্মভালবাসার অংশ। উন্মাদনার পরিণতিবিশিষ্ট মানসিক গোলযোগ। বহুপ্রকার আবেগযুক্ত উন্মাদনা। মনটি শ্রান্ত থাকে। রোগীর চেহারা বিচারমূঢ় মাতালের ন্যায় হয়, পুরু ওষ্ঠ ও পুরুজিহ্বাবিশিষ্ট লোকের ন্যায় কথা বলে, ভুল করে এবং হোঁচট খায়, কথাগুলি আংশিক বলিয়াই শেষ করে, মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ এবং মাথা উত্তপ্ত হয়। গলরোধের ভাব থাকে, জামার কলারে, ঘাড়ের চারিদিকে অস্বস্তির সৃষ্টি করে, উহাতে ঘাড়ের চারিদিকে অস্বস্তি বাড়িয়া যায়, মনের গোলযোগের ভাব বাড়িয়া যায়, চেহারাটি আরও বেশী মাতালের ন্যায় হইয়া পড়ে। যেলোক হুইস্কি পান করিয়া মাতাল হইয়াছে, যদি তাহার সহিত তোমরা কথা বল, তাহা হইলে ল্যাকেসিস সদৃশ লক্ষণগুলি দেখিতে পাইবে। সে হোঁচট খাইতে খাইতে চলে, যাহা বলে তাহার বিশেষ কিছু বুঝে না, তাহার কথা ও শব্দগুলি অর্ধসমাপ্ত থাকে, করিয়া” “খাইয়া” প্রভৃতি শব্দের শেষের “যা” কথাটি ছাড়িয়া যায়, সে কথা বলিতে বলিতে থামিয়া যায় এবং ভুল করে, সে বিড়বিড় করিয়া বকিয়া চলে, প্রথমে এক বিষয়, পরক্ষণেই বিষয়ান্তরে কথা বলিতে থাকে। এই লক্ষণগুলিও আবার বসন্তকালে যেরূপ অবস্থার কথা বলা হইয়াছে, সেইরূপ সময়ে, ঠান্ডার আবেশের পরবর্তী ঊষ্ণ আবহাওয়ায়, বর্ষার আবহাওয়ায়, গরম জলে স্নানে এবং নিদ্রার পরে বাড়িয়া উঠে। মানসিক অবস্থাটি বিস্তৃত। বিনা কারণে ঈর্ষা। অন্যায়রূপে ঈর্ষা ও সন্দেহ। এই ঔষধ বহুক্ষেত্রে বালিকাদের সন্দেহ দূর করিয়াছে, তখন তাহারা তাহাদের বালিকা বন্ধুদিগের উপরে অকারণে সন্দেহযুক্ত ছিল। কাহাকেও চুপে চুপে কথা বলিতে দেখিলে,ই তাহার মনে হয় যেন তাহারা তাহার সম্বন্ধেই কথা বলিতেছে, তাহার অপকারের সম্বন্ধে পরামর্শ করিতেছে। সে সন্দেহ করে যে, তাহারা তাহার অনিষ্ট করিবার চেষ্টা করিতেছে এবং তাহারা তাহার অপকার করিবার জন্য পরামর্শ করিতেছে কি-না, তাহা দেখিবার জন্য নানারূপ ফন্দির আশ্রয় লয়। কোন স্ত্রীলোক। কল্পনা করেন যে, তাঁহার বন্ধুরা, স্বামী এবং সন্তানগণ তাহার অনিষ্ট করিতে চেষ্টা করিতেছে এবং তাঁহার বন্ধুরা তাহাকে কোন পাগলা গারদে পাঠাইবার উপক্রম করিতেছে। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশঙ্কা। মনে করেন যে, তাঁহার হৃদপিন্ড সংক্রান্ত রোগ হইবার উপক্রম হইতেছে এবং তিনি উন্মাদ হইয়া যাইতেছেন এবং লোকেরা তাহাকে কোন বাতুলাশ্রমে পাঠাইবার মতলব করিতেছে। কল্পনা করেন যে, তাঁহার আত্মীয়গণ তাহাকে বিষ খাওয়াইতে চেষ্টা করিতেছেন এবং সেইজন্য খাইতে অস্বীকার করেন। সময়ে সময়ে মনে হয় যে, উহা কেবল স্বপ্নমাত্র, তিনি ঠিক বলিতে পারেন না যে, উহা স্বপ্নে দেখিয়াছেন অথবা চিন্তা করিয়া লইয়াছেন। তিনি মনে করেন, যেন তাহার মৃত্যু হইয়াছে অথবা চিন্তা করিয়া লইয়াছেন। তিনি মনে করেন যেন তাহার মৃত্যু হইয়াছে অথবা স্বপ্নে দেখেন যে তাঁহার যে মৃত্যু হইয়াছে এবং যেন তাহার শবদেহকে বাহিরে লইয়া যাওয়ার চেষ্টা করা হইতেছে অথবা তাহার মৃত্যুকাল উপস্থিত হইয়াছে।

তিনি মনে করেন, যেন তিনি অন্য এক ব্যক্তি এবং যেন কোন প্রবল শক্তির হাতে রহিয়াছেন। তিনি মনে করেন, যেন তাহার উপর বেতার ভর হইয়াছে। যেন ভূতদিগের দ্বারা তিনি কাৰ্য্য করিতে বাধ্য হইতেছেন। তিনি আংশিকভাবে স্বপ্নের মধ্যে আদেশ পান এবং সেই আদেশ পালন করিতে বাধ্য হন। কখন কখন উহা কণ্ঠস্বরের রূপ ধারণ করিয়া তাহাকে চুরি করিতে, হত্যা করিতে, তিনি যাহা করেন নাই, তাহা স্বীকার করিতে আদেশ করে এবং তিনি কখনও যাহা করেন নাই তাহার সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি না করা পর্যন্ত কোনরূপ মানসিক শান্তি পান না। তিনি যাহা করেন নাই, তাহা স্বীকার না করা পর্যন্ত তাঁহার অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণা চলিতে থাকে। তিনি কল্পনা করেন, যেন কেহ তাঁহাকে অনুসরণ করিতেছে। তাহার মনে হয় তিনি যেন কিছু চুরি করিয়াছেন অথবা লোকে মনে করিতেছে যে, তিনি কিছু চুরি করিয়াছেন এবং সেইজন্য আইনের ভয়ে ভীত হইয়া পড়েন। তিনি অলৌকিক স্বর এবং সাবধানবাণী শুনিতে পান এবং রাত্রে ঐ বিষয়ে স্বপ্ন দেখেন। তাঁহার মানসিক যন্ত্রণা ভয়াবহ হয় এবং উহা ক্রমে বিড়বিড় করা প্রলাপে পরিণত হয়। লোকে মদ খাইয়া যেরূপ বিড়বিড় করে, তাহার প্রলাপও সেইরূপ হয়। এই অবস্থা বাড়িতে বাড়িতে অচৈতন্যতা দেখা দেয় এবং রোগী এরূপ সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়েন যে, তাহাকে জাগান যায় না। রোগী আবার সময়ে সময়ে প্রচন্ড হইয়া উঠেন এবং তাহার প্রলাপও প্রচন্ড হয়।

এই ঔষধটি ধর্মবিষয়ক উন্মাদনায় পূর্ণ। তোমরা হয়ত একজন স্নেহশীলা, মধুরভাষিণী বৃদ্ধা : মহিলাকে দেখিবে, তিনি যেরূপ জীবনযাপন করিয়াছেন তাহাকে সাধু ও ধার্মিক জীবন বলা যাইতে পারে, কিন্তু তথাপি তিনি ভগবানের প্রতিশ্রুতিগুলিকে নিজের সম্বন্ধে প্রয়োগ করিতে পারেন না, তাহার মনে হয় ঐ কথাগুলি অন্যের জন্য বলা হইয়াছে, কিন্তু তাঁহার সম্বন্ধে নহে। তিনি যেন দুষ্কাৰ্যে পূর্ণ এবং অমার্জনীয় পাপ করিয়াছেন তিনি এইসকল কথা বলিতে বাধ্য হন; এইসকল ব্যাপারে অভিভূত হইয়া পড়েন, মনে করেন যেন তিনি মরিতে চলিয়াছেন এবং মরিয়া এরূপ ভীষণ নরকে যাইতেছেন, যাহার কথা তিনি পূর্বে পড়িয়াছেন। চিকিৎসককে এইসব কথা মনোযোগ দিয়া শুনিতে হইবে। চিকিৎসক যদি এরূপ ক্ষেত্রে ঐসব কথা হাল্কাভাবে লইতে যান, তাহা হইলে তিনি ভুল করিবেন। যদি তিনি ঐরূপ করেন, তাহা হইলে তাহার রোগী সারিবেন না এবং তিনি তাঁহার আরোগ্য করার সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন। তাঁহার খেয়াল যেরূপই হউক না কেন, তাহার ধর্মসম্বন্ধে মতামত যেরূপ হউক না কেন, তাঁহার মানসিক অবস্থাকে সম্ভ্রমের সহিত দেখিতে হইবে। এরূপ ব্যবহার করিতে হইবে, যেন ঐগুলি প্রকৃতই সত্য।

তাঁহাকে সহানুভূতি ও দয়া দেখাইতে হইবে। ধার্মিক লোকেদের মধ্যে অসজ্জন বলিয়া পরিচিত হওয়া ডাক্তারের পক্ষে দুর্ভাগ্যের বিষয় এবং ইহাতে তিনি এইসব লোকেদের যথেষ্ট উপকার করার সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন। তিনি পৃথিবীতে যত লোককে দেখিবেন, তাহাদের সকলেরই খেয়াল ও ধারণা সম্বন্ধে উদার মনোভাবযুক্ত থাকিবেন। তাঁহাকে সকলেরই বন্ধু হইতে হইবে এবং যদি তিনি অকপট ও ন্যায়বান হন, তাহা হইলে কোনরূপ ভন্ডামি না, করিয়াও ঐরূপ হইতে পারিবেন।

ধর্মসম্বন্ধীয় উন্মাদনার সংশ্লিষ্ট ধর্মসংক্রান্ত বিষাদভাব প্রায়ই অতিভাষিতার সহিত সংযুক্ত থাকে, সে অত্যন্ত বাচালতা প্রকাশ করে এবং ল্যাকেসিস ঐরূপ লক্ষণে পূর্ণ। সাধারণতঃ স্ত্রীলোকদের মধ্যে এবং কদাচিৎ পুরুষদিগের মধ্যে আমরা ধর্মবিষয়ক বিষাদভাব দেখিতে পাইব। তারপর এইরূপ স্ত্রীলোক যখন ঐসব কথা বলিতে বাধ্য হন, তখন তাহার অন্তরঙ্গ বন্ধুগণও দিবারাত্র তাঁহার আত্মার নরকগমনের কথা, তাহার দুষ্কাৰ্য্যের কথা, তিনি যেসব ভয়াবহ কাজ করিয়াছেন, তাহার কথা শুনিতে শুনিতে বিরক্ত হইয়া পড়েন। যদি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা কর যে, তিনি কি কি পাপ কাজ করিয়াছেন, তাহা হইলে তিনি অনেক কিছুই বলিয়া যাইবেন, কিন্তু তিনি যে কাহাকেও খুন করিয়াছেন, এরূপ কথা কখনও তাঁহাকে বিশ্বাস করাইতে পারিবে না। যদি তুমি তাহাকে তাঁহার সকল কাহিনী বলিতে দাও, তাহা হইলে তিনি পুঁথিলিখিত সব রকম পাপই করিয়াছেন বলিয়া গল্প করিতে থাকিবেন, কিন্তু বাস্তবিক তিনি জীবনে সদাচারী ও সুমতিযুক্তই ছিলেন। ল্যাকেসিসে আর একপ্রকার বাচালতা আছে। রোগী ক্রমাগত কথা বলিয়া চলে। আর এক অবস্থায় দেখা যায় যে, রোগী যাহা কিছু করে তাহাতেই তাড়াতাড়ি করে এবং সকলকেও তাড়াতাড়ি করাইতে চায়। এইরূপ তাড়াতাড়ির সহিত বাচালতার যোগ হয় এবং এমন অবস্থা ঘটে যে, তুমি একবার নিজে না শুনিলে তাহার ধারণা করিতে পারিবে না। উহার বর্ণনার চেষ্টা করিয়া লাভ নাই, বাচালতা অতি তাড়াতাড়ি চলে, বিষয়ের পর বিষয় পরিবর্তিত হয়। বাক্যগুলি প্রায়ই অর্ধসমাপ্ত থাকে, তিনি ধরিয়া লন যে, অবশিষ্ট অংশটি তুমি বুঝিয়া লইয়াছ এবং তাড়াতাড়ি আর একটি বাক্য বলিতে আরম্ভ করেন। দিবারাত্র তিনি সম্পূর্ণ জাগরিত থাকেন এবং ঐ সময়ে পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে তাঁহার এতই অত্যনুভূতি থাকে যে, তিনি যাহা যাহা শুনিতে পান এবং শব্দে যেরূপ বিচলিত হন, তাহা হইতে তোমরা অনায়াসেই মনে করিতে পারিবে যে, তিনি দেওয়ালের উপর দিয়া মাছি হাঁটার শব্দ এবং দূরবর্তী গির্জার ঘণ্টাধ্বনিও শুনিতে পান। এই সকল কথা তোমরা পাঠ্যপুস্তকে পাইবে না, ইহা তোমাদিগকে ঔষধ ব্যবহার করিয়া শিখিতে হইবে। এই যে ব্যাপারগুলি আমি বলিলাম, তাহা রোগশয্যায় পাওয়া গিয়াছে; ঐগুলি শয্যাগত পীড়িত রোগীকে ঔষধটি প্রয়োগ করিবার পর প্রাপ্ত লক্ষণ। “অত্যন্ত অসাধারণ প্রকৃতির বাচালতা, কয়েকটি বাছা বাছা বাক্যাংশ সাহায্যে কথা বলিয়া চলে এবং অসংলগ্নভাবে বিষয় হইতে বিষয়ান্তরে চলিয়া যায়।” “এক কথা বলিতে বলিতেই অন্য বিষয়ের মাঝখানে আসিয়া পড়ে।” এইরূপ অবস্থা টাইফয়েডের ন্যায় তরুণ রোগে উপস্থিত হইতে পারে, তখন উহা টাইফয়েড জ্বরের স্বাভাবিক প্রলাপ, আবার উহা ডিপথেরিয়ার ন্যায় অবস্থায় অথবা রক্তবিষাক্ততা প্রকৃতির রোগে উপস্থিত হইতে পারে, উহা সূতিকাজুৱের সময়েও উপস্থিত হইতে পারে অথবা প্রকৃত উন্মাদ রোগের আকারও ধারণ করিতে পারে। ইহা একটি দীর্ঘক্রিয় ঔষধ এবং ইহার অপব্যবহার হইলে কুফল সারাজীবন থাকিয়া যায়।

অনেক ক্ষেত্রে মানসিক লক্ষণের সহিত হৃৎপিন্ডলক্ষণের ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকে; ইহা বিশেষভাবে দেখা যায় সেই সব রমণী ও বালিকাদিগের ক্ষেত্রে, যাহারা প্রেমে হতাশ হইয়াছে, যাহারা ভালবাসায় বঞ্চিত হইয়া, হতাশ হইয়া, আশাভঙ্গ হইয়া অথবা দুঃখে রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া কাটাইয়াছে। দীর্ঘকাল স্থায়ী বিষাদ, মানসিক ভগ্নোদ্যম হিষ্টিরিয়াসদৃশ লক্ষণ, ক্রন্দন, মানসিক অবসন্নতা এবং হতাশা, তৎসহ হৃদপিন্ডস্থানে যন্ত্রণা, হৃদপিন্ডস্থানে শূন্যতা ও দুর্বলতাবোধ এবং কষ্টকৃত শ্বাসক্রিয়া। তিনি আত্মহত্যা সম্বন্ধে চিন্তা করিতে থাকেন এবং অবশেষে একরূপ উদাসীন অবস্থায় স্থিত হন। ঐ সময়ে তাঁহার সবকিছুতেই, কাজকর্মে, এমনকি চিন্তা করিতেও অপ্রবৃত্তি দেখা-দেয়।,

তোমরা পুস্তকে যেরূপ দেখিতে পাইবে একজন স্ত্রীলোক সম্ভবতঃ তাহার অপেক্ষাও ভালভাবে তাহার মস্তক-লক্ষণগুলি বর্ণনা করিয়াছিলেন, আমি তাহার কথাগুলি দিয়া তোমাদিগকে মস্তক-লক্ষণগুলি বুঝাইতে চেষ্টা করি। তিনি বিছানার উপর বসিয়াছিলেন এবং শুইতে অক্ষম ছিলেন। শুইলে তাহার লক্ষণগুলি আরও খারাপ হইত; তাঁহার মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ ছিল, তাহার চক্ষুদ্বয় রক্তস্ফীত ছিল, মুখমন্ডল স্ফীত ও ভারি ছিল। চক্ষুর পাতা দুইটি ফুলা ছিল। তিনি শয্যায় সম্পূর্ণ স্থির হইয়া বসিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন যে, তাঁহার যন্ত্রণাটি প্রবল তরঙ্গের ন্যায় ঘাড়ের পশ্চাদ্দিক হইতে উঠিয়া মাথার উপর স্থিত হয়। উহাই ল্যাকেসিসের আদর্শ লক্ষণ। ঢেউয়ে ঢেউয়ে উঠিতে থাকা। ঢেউয়ের ন্যায় যন্ত্রণা, কিন্তু উহাও সবসময়ে নাড়ীর গতির সহিত সমতালিক নহে। উহার সহিত রক্তপ্রবাহের কোন সম্বন্ধই না থাকিতে পারে। ঐ তরঙ্গের ন্যায় উচ্ছ্বাস সঞ্চালনে বাড়ে, ঠিক সঞ্চালনের সময় তত নয়, কিন্তু সঞ্চালনের পরেই বেশী বাড়ে। উহা সময়ে সময়ে চলাফেরার পর, অথবা এক স্থান হইতে আর এক স্থানে গিয়া বসিবার পর অনুভূত হয়, অর্থাৎ সঞ্চালনক্রিয়া শেষ হইবার কয়েক সেকেন্ড পরে যন্ত্রণার আরম্ভ হয়, উহা সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল হইয়া উঠে এবং তারপর ক্রমশঃ কমিয়া একঘেয়ে উচ্ছ্বাসে অথবা একঘেয়ে যন্ত্রণায় পরিণত হয়। মাথায় অবিরত একঘেয়ে প্রকৃতির যন্ত্রণা হইতে থাকে এবং উহা বর্ধিত হইয়া বা উদ্বুদ্ধ হইয়া এরূপ প্রবল ঢেউয়ের ন্যায় উচ্ছ্বাসে পরিণত হয় যে, রোগীর জীবন বাহির হইয়া যাওয়ার মত হইতে থাকে।

শিরঃপীড়া প্রাতঃকালে জাগিয়া উঠিবার পর আরম্ভ হয়। ল্যাকেসিস-জ্ঞাপক মৃদু প্রকৃতির শিরঃপীড়া প্রাতে জাগিয়া উঠিলে আরম্ভ হয় এবং কিছুক্ষণ চলাফেরা করিবার পর কমিয়া যায়। শিরঃপীড়া এবং সাধারণভাবে রোগগুলির সহিত ক্ষণিক চিন্তালোপ ঘটে; নানারূপ শিরোঘূর্ণন দেখা দেয়। শিরোঘূর্ণনের সহিত বমি বমিভাব ও বমন। শিরোঘূর্ণনে রোগী বামদিকে পড়িয়া যাইবার মত হয়।

ল্যাকেসিসে মাথায় ফাটিয়া যাওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা আছে ইহা রক্তসঞ্চয়জনিত যন্ত্রণা, যেন সমস্ত রক্ত মাথায় উঠিয়া গিয়াছে, এরূপ যন্ত্রণা; কারণ উহার সহিত হস্ত-পদাদি অত্যন্ত শীতল থাকে এবং মাথার মধ্যে দপদপ করে, হাতুড়ি মারে। এই দপদপকর শিরঃপীড়া, মাথা হইতে পা পর্যন্ত সর্বাঙ্গীণ দপদপানির অংশ। সমস্ত রক্তবহা নাড়ী এবং প্রদাহিত অঙ্গে দপদপ করে। প্রদাহিত ডিম্বকোষ দপদপ করে এবং সময়ে সময়ে মনে হয়, যেন ধমনীর প্রতিটি স্পন্দনের সহিত প্রদাহিত অঙ্গের উপর ছোট একটি হাতুড়ির আঘাত পড়িতেছে। ল্যাকেসিস বহুবার ভগন্দররোগ আরোগ্য করিয়াছে, যখন উহার সহিত ঐ ছোট নালীঘায়ের ছিদ্রটির উপর ক্রমাগত একটি হাতুড়ি মারার ন্যায় অনুভূতি বর্তমান ছিল। ইহা দ্বারা বহুদিনস্থায়ী মলদ্বারের ফাটা আরোগ্য হইয়াছে, যখন ঐ প্রদাহিত অঙ্গের উপর হাতুড়ির ন্যায় আঘাত পড়িতেছে, এরূপ অনুভূতি বর্তমান ছিল। ঐরূপ হাতুড়ি মারার অনুভূতি থাকায় অর্শরোগও আরোগ্য হইয়াছে। সুতরাং আমরা দেখিতেছি যে, মাথার ঐ দপদপকর যন্ত্রণা একটি বিশেষ লক্ষণ নহে, কিন্তু উহা একটি সাধারণ লক্ষণ, মাথার সংস্রবে প্রকাশিত হইয়াছে মাত্র।

কতকগুলি লক্ষণ উহাদের অন্যান্য লক্ষণের সহিত সংযোগ থাকার জন্য মূল্যবান হয় এবং ঐরূপ ক্ষেত্রে উভয় লক্ষণের সহাবস্থানসম্বন্ধই প্রয়োজনীয় হইয়া থাকে। ল্যাকেসিসে হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত লক্ষণগুলি প্রায়ই শিরঃপীড়া লক্ষণের সহিত সংযুক্ত থাকে। তোমরা ল্যাকেসিস-জ্ঞাপক শিরঃপীড়ার সহিত হৃদপ্রদেশের যাতনা নাই, এরূপ অবস্থা কদাচিৎ দেখিতে পাইবে। ল্যাকেসিসের প্রবল শিরঃপীড়ার সহিত দুর্বল নাড়ী ও সর্বাঙ্গে দপদপানির অনুভূতি প্রায়ই সংযুক্ত থাকে।

আমরা পাঠ্যপুস্তকে দেখিতে পাই যে, “ভারবোধ ও চাপবোধ” ল্যাকেসিসের মস্তকলক্ষণগুলির একটি বিশিষ্ট অংশ। প্রায়ই যেকোন প্রকার দৈহিক রোগে, টাইফয়েড জ্বরে ঋতুকালে, রক্তসঞ্চয়জনিত শীতের সময়, দেহ শীতল হয়, হস্তপদাদি শীতল হয়, হাঁটু দুইটি শীতল, পায়ের পাতা দুইটি শীতল বলিয়া বোধ হয় এবং উহাদিগকে গরম রাখা অসম্ভব হইয়া পড়ে আর মুখমন্ডল বেগুনি ও বিচিত্র বর্ণ হইয়া পড়ে, চক্ষু দুইটি বহিনিগত ও রক্তপূর্ণ হয় এবং মাথায় এরূপ ভীষণ যন্ত্রণা থাকে যে, সে অজ্ঞান হইয়া পড়িবার মত হয়, কথা অসংলগ্ন হইয়া পড়ে, শব্দোচ্চারণ কষ্টকর হয় এবং অবশেষে সে বাস্তবিকই অচৈতন্য হইয়া পড়ে।

মস্তক-লক্ষণ, মনোলক্ষণ এবং সাধারণভাবে জ্ঞানকেন্দ্রের সংস্রবে ল্যাকেসিসে যে অত্যনুভূতিপ্রবণতা দেখা যায়, তাহার উল্লেখ করা উচিত। তাহার লক্ষণগুলি অত্যন্ত প্রবল হয়। দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর হয়, শ্রবণশক্তি প্রখর হয়, স্পর্শজ্ঞানই বিশেষভাবে তীক্ষ হইয়া উঠে। কাপড়ের স্পর্শ অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়, কিন্তু কঠিন চাপ আরামদায়ক হইয়া থাকে। মাথার তুক এত স্পর্শকাতর হয় যে, স্পর্শ করিলেই বেদনা লাগে, কিন্তু কষিয়া বাধার চাপে আরাম হয়। শব্দে অত্যনুভূতিযুক্ত, ঘরের ভিতর কিছু নাড়াচড়া করিলে অত্যনুভূতি, কেহ কথাবার্তা বলিলে, মেঝের উপর চলিলে বেড়াইলে অত্যনুভূতি—এইরূপ কিছু হইলে যন্ত্রণা বাড়িয়া উঠে। রোগীদেহের সকল অংশ, সব ইন্দ্রিয় অত্যন্ত অত্যনুভুতিযুক্ত হইয়া পড়ে। চর্মে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা, সম্ভবতঃ ইহার কারণ জোর চাপ দিলে প্রায়ই উপশম বোধ করে। অন্ত্রবারক ঝিল্লী-প্রদাহ, ডিম্বকোষ, জরায়ু অথবা যে, কোন উদরাভ্যন্তরের যন্ত্রের প্রদাহ হইতে ভুগিতেছেন, এরূপ রোগীর চর্ম কাপড়ের স্পর্শে এত অনুভূতিযুক্ত থাকে যে, শয্যাবস্ত্রের স্পর্শজনিত কষ্টের উপশম জন্য তাহাকে নানা উপায় অবলম্বন করিতে হয়। হয়ত বিছানার মধ্যে ঠেকনার মত কোন জিনিষ দেখা যাইবে, অথবা হয়ত রোগী পা গুটাইয়া রাখিবে অথবা কাপড় যাহাতে দেহ স্পর্শ না করে এরূপভাবে হাত দুইটি উঁচু করিয়া রাখিবে। উদরে যে ক্ষততাবোধ থাকে, তাহা হাতের সাধারণ ভারে জাগিয়া উঠিতে পারে; কিন্তু উহা সম্পূর্ণ পৃথক ভাবের ক্ষততাবোধ, কারণ উদরের উপর কাপড়ের স্পর্শে কেবলমাত্র অত্যনুভূতি প্রবণতাই প্রকাশিত হয়। হস্তাঙ্গুলি বা হাত দিয়া কেবলমাত্র গাত্র স্পর্শ করাও অসহ্য মনে হয়।

চক্ষুর অনেক প্রকার প্রাদাহিক ও রক্তসঞ্চয়জনিত অবস্থা আছে। চক্ষু-লক্ষণগুলি নিদ্রার পরে খারাপ হয় এবং চক্ষু দুইটি স্পর্শে এবং আলোকে অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকে। আমরা চক্ষুলক্ষণের সহিত শিরঃপীড়াও পাইব, কারণ মস্তিষ্ক ও চক্ষু অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত। গলক্ষতে যদি স্প্যাচুলা বা জিহ্বা চাপিয়া ধরার যন্ত্র দৈবাৎ গলার দেওয়ালে বা টনসিলে বা জিহ্বামূলে ঠেকিয়া যায়, তাহা হইলে মনে হয় যেন চক্ষু দুইটি ঠেলিয়া বাহির হইয়া আসিবে। গলা স্পর্শ করিলে চক্ষে ভীষণ যন্ত্রণা। ল্যাকেসিস ন্যাবারোগের একটি বড় ঔষধ, কারণ ইহা যকৃতের নানা উপদ্রব সৃষ্টি করে। গায়ের ও চক্ষের শ্বেতাংশের হলদেভাব এবং চক্ষের টিসুগুলির পুরু হইয়া যাওয়া। “নেত্রনালী”, উহার সহিত মুখমন্ডলের উপর দীর্ঘস্থায়ী উদ্ভেদসকল।

কর্ণমার্গের অত্যনুভূতি। কানের মধ্যে কোন কিছু প্রবেশ করাইলে ভীষণ আক্ষেপিক কাশি ও গলায় সুড়সুড়ি উৎপন্ন হইবে। কানের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে যে, উহাতে কোনরূপ ছোঁওয়া লাগিলেই হুপিং কাশির ন্যায় ভীষণ কাশি উপস্থিত হয়। ইহাতে কেবলমাত্র প্রতিক্ষেপণ সম্বন্ধীয় অত্যনুভূতিপ্রবণতা এবং সাধারণভাবে অত্যনুভূতিপ্রবণতা দেখাইতেছে। শ্রবণশক্তি সম্বন্ধেও আমরা অন্যান্য স্থান সম্বন্ধে যেরূপ অত্যনুভূতির কথা বলিয়াছি, তদ্রুপ অত্যনুভূতি-প্রবণতা থাকে। সর্দি পুরু হইয়া ইউষ্টেচিয়ান নলটি রুদ্ধ হইয়া যায়, ইউষ্টেচিয়ান নলের আকুঞ্চন।

নাকের সর্দি অবস্থা সুস্পষ্ট থাকে। দেহ ও নাক হইতে প্রায়ই রক্তপাত হয়, নাক হইতে জলের ন্যায় স্রাব। তাহার সর্বদাই নাকে সর্দি লাগে। নাক সাটিয়া গিয়া ঘ্রাণশক্তির ব্যতিক্রম হয়। ঘ্রাণ সম্বন্ধে অত্যনুভূতি, গন্ধ সম্বন্ধে অত্যনুভূতি, অবশেষে ঘ্রাণলোপ। ল্যাকেসিসে নাকে মামড়ী সৃষ্টি, হাঁচি, নাক হইতে জলের মত স্রাব ও সর্দিজনিত শিরঃপীড়ার সহিত খুব পুরাতন প্রকৃতির প্রাদাহিক অবস্থা আছে। সময়ে সময়ে সর্দিজ স্রাব উপস্থিত হইলে শিরঃপীড়া চলিয়া যায় এবং যখন সর্দিজ স্রাব থামিয়া যায়, তখন শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। স্রাবের সহিত, হাঁচির সহিত, সর্দির সহিত তীব্র শিরঃপীড়া। সর্দির সহিত রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া। এইরূপ সর্দিজ অবস্থা সিফিলিস রোগে ল্যাকেসিস ব্যবহার করিতে পরিচালিত করিয়াছে। ইহা গুরুতর প্রকৃতির নাকের সিফিলিসরোগের পক্ষে উপযোগী, এরূপ সিফিলিস যে, মামড়ী উৎপন্ন করিয়া শ্লৈষ্মিক, ঝিল্লীচয়কে আক্রমণ করে এবং অবশেষে অস্থিগুলিকে পীড়িত করে। দুর্গন্ধযুক্ত পুতিনস্য রোগ। নাক হইতে ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ স্রাব। নাক হইতে রক্তপাত দেখিয়া তোমাদের বিস্মিত হওয়ার প্রয়োজন নাই, কারণ ল্যাকেসিস একটি রক্তস্রাবকারী ঔষধ। নাক বা অন্য যে-কোন অঙ্গ হইতে নির্গত রক্ত, শুষ্ক বা চাপ হইয়া গেলে, কাল হইয়া পোড়া খড়ের ন্যায় দেখায়। অঙ্গাদি হইতে সহজেই রক্তপাত হয়। জরায়ু হইতে প্রচুর ও দীর্ঘকালস্থায়ী রক্তস্রাব, প্রচুর ও দীর্ঘস্থায়ী ঋতুস্রাব, নাসাপথে রক্তস্রাব, রক্তবমন, টাইফয়েডরোগে অন্ত্র হইতে রক্তস্রাব। নাসারন্ধ্রের ও ওষ্ঠের অত্যনুভূতিপ্রবণতা, ওষ্ঠদ্বয়ের স্ফীতি, পুরাতন সিফিলিস রোগীদিগের নাকের অত্যন্ত স্ফীতি ও ফাঁপা ফাপাভাব। নাক স্ফীত হইয়া উঠে এবং বেগুনিবর্ণ হয়। নাসিকার অস্থিগুলি অত্যন্ত ক্ষততাযুক্ত হয়, নাসিকার উভয় পার্শ্বে ক্ষততাবোধ। যে-সকল পুরাতন মাতালদের নাক লাল থাকে, এবং হৃদরোগে নাক যেরূপ লাল হইয়া যায়, তাহাতে ল্যাকেসিস বিশেষ উপযোগী। নাকের ডগায় একটি গুটির মত স্ফীতি, ইহাকে ষ্ট্রবেরী নাক বলে।

মুখমন্ডল বেগুনি ও চিত্র-বিচিত্র হয়, চক্ষুর পাতা দুইটি স্ফীত, অত্যন্ত ফুলা দেখায়, শোথগ্রস্ত লোকদিগের ন্যায় স্ফীত নহে, কিন্তু ফুলা ফুলাভাববিশিষ্ট। শোথরোগে চাপ দিলে যেরূপ গর্ত হইয়া যায় ইহাতে সেরূপ হয় না, অবশ্য ল্যাকেসিসে উহাও আছে, কিন্তু এক্ষেত্রে ল্যাকেসিস-জ্ঞাপক এক প্রকার অদ্ভুত ফুলাভাব, মুখমন্ডল স্ফীত এবং প্রদাহিতবৎ দেখায়, উহা শৈরিক অবরোধ হইতে ঘটে, সুতরাং মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ ও চিত্রবিচিত্র হইয়া পড়ে। নাকটি ফুলাভাববিশিষ্ট হয়, কিন্তু চাপ দিলে গর্ত হয় না। ওষ্ঠ দুইটি প্রদাহিত হওয়ার ন্যায় দেখায়, কিন্তু প্রদাহিত থাকে না। শুধু চাপে অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে। হৃদপিন্ড সংক্রান্ত রোগে এবং ব্রাইটাখ্য পীড়ায় মুখমন্ডলও শোথের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট হয় এবং চাপ দিলে গর্ত হইয়া যায়। অন্য অবস্থায় মুখমন্ডল বিবর্ণ, বিবর্ণ ও শীতল থাকে এবং চৰ্ম্ম আঁইশের ন্যায় উদ্ভেদে আবৃত থাকে। উদ্ভেদগুলি মামড়ীযুক্ত, উদ্ভেদগুলি ফুস্কুড়ির ন্যায়, উদ্ভেদগুলি হইতে সহজেই রক্তপাত হয়। উদ্ভেদগুলি রক্তপূর্ণ থাকে, রক্তপূর্ণ ফুস্কুড়ি, ছোট ছোট রক্তময় ফোস্কা যেরূপ সময়ে সময়ে পুড়িয়া গেলে জ্বালাযুক্ত অবস্থায় দেখা যায়। মুখমন্ডল ন্যাবাগ্রস্ত ও অত্যন্ত বিবর্ণ হয়। সময়ে সময়ে উহা হরিৎ পাড়ুরোগের মূর্তি ধারণ করে। যদি তোমরা হরিৎ পাড়ুরোগের বর্ণ একবার দেখিয়া থাক, তাহা হইলে উহা আর বর্ণনা করিবার প্রয়োজন নাই। উহা এক প্রকার নীরক্ত অবস্থা, তৎসহ। হরিদ্রাভ বিবর্ণতা, ছাইবর্ণ অথবা ধূসরবর্ণ, কিন্তু তাহার সহিত সবুজাভা সংমিশ্রিত থাকে; এইজন্যই প্রাচীনেরা অনেক সময়ে ইহাকে হরিৎ রোগ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। আবার মুখমন্ডল মাতালদের মুখের ফুলা ভাবের ন্যায় নীলকৃষ্ণ এবং ফুলা ফুলা হইতে পারে; যে মদ্যপায়ীরা অনেক বৎসর যাবৎ মদ্যপান করিতেছে, তাহাদের চিত্র-বিচিত্র বেগুনিবর্ণ মুখভাব অবশেষে যেরূপ স্ফীত, ক্লিষ্ট এবং করুণ হইয়া পড়ে, তদ্রুপ অবস্থা। তোমরা ল্যাকেসিসে এইরূপ দেখিতে পাইবে।

ল্যাকেসিসের মধ্যে আমরা একটি ইরিসিপ্লাস এবং গ্যাংগ্রিন রোগের ঔষধ পাই এবং আক্রান্ত অঙ্গের চারিদিকে ল্যাকেসিস-জ্ঞাপক চেহারা বর্তমান থাকে অর্থাৎ সেই চিত্র-বিচিত্র বৈগুনিবর্ণ আকৃতি বর্তমান থাকে। ল্যাকেসিস রোগাদেহে ব্যবহার হইতে ইরিসিপ্লাস ও গ্যাংগ্রিন রোগের একটি সুস্পষ্ট ঔষধ হইয়াছে পরীক্ষাকারীরা এইরূপ রোগসকল উৎপন্ন হওয়া পর্যন্ত ঔষধটি সেবন করিয়া চলেন নাই, সেইজন্য শয্যাগত রোগীদিগের অবস্থা হইতেই আমাদিগকে এই বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলি সংগ্রহ করিতে হইয়াছে।

ল্যাকেসিসে দাঁত ও দন্তমাড়ি হইতে সহজেই রক্তপাত আছে। অন্তরুৎসেক্য রোগে দাঁতের উপর শুষ্ক মামড়ী জন্মে, সময়ে সময়ে কৃষ্ণবর্ণ স্তর, দন্তমল দেখা দেয় এবং জিহ্বা ও মুখের ঐ আকৃতির সহিত যোগ দিয়া শিথিল হইয়া পড়ে। টাইফয়েড অবস্থায় এরূপটি দেখিতে পাওয়া যায়, তখন খাদ্য আদৌ সমীকৃত হয় না, ক্ষুধা একেবারে লোপ পায়, পাকস্থলী খাদ্য গ্রহণ করে না এবং খাদ্য পাকস্থলীতে গেলেও উহা পরিত্যক্ত হয়। এই সময় জিহ্বারও আংশিক পক্ষাঘাত হয়। মনে হয় জিহাটি মুখের মধ্যে একখন্ড শুষ্ক চৰ্ম্মের মত হইয়া পড়িয়াছে, উহা অতিকষ্টে নাড়ান যায়। কথা মদে অৰ্ধোন্মত্ত ব্যক্তির মত হইয়া পড়ে, সে শব্দ উচ্চারণ করিতে অক্ষম হইয়া পড়ে। জিহ্বা স্ফীত হয় এবং অতি ধীরে ধীরে নির্গত হয়। উহা শুষ্ক থাকে এবং দাতে আটকাইয়া যায় এবং মনে হয়, যেন উহার দৃঢ়তা নষ্ট হইয়া গিয়াছে। মনে হয় উহা যেন একখানি ন্যাকড়া, যেন পেশীগুলি আর উহার উপর ক্রিয়া করিতেছে না, সেইজন্য উহা বাহির করা যায় না অথবা যদি বাহির করা যায়, তাহা হইলে উহা কাঁপিতে থাকে, থরথর করে, উৎক্ষিপ্ত হয়, এবং দাঁতে আটকাইয়া যায়। তারপর, উহা স্ফীত থাকে, জিহাকন্টকগুলি উঠিয়া যায় এবং বার্ণিশ করার ন্যায় মসৃণ, চকচকে এবং কাচপ্রভ হইয়া পড়ে। মুখের মধ্যস্থ লালা সাবানের ফেনার মত দেখায়। মুখ হইতে প্রচুর লালা গড়াইতে থাকে এবং রোগী সচরাচর এক পার্শ্বে মাথা রাখিয়া শুইয়া থাকে এবং লালা ফোঁটা ফোঁটা করিয়া কোন পিকদানি বা পাত্রে পড়িতে থাকে। লালা দড়ির ন্যায় হয় এবং উহাকে মুখের মধ্য হইতে টানিয়া দড়ির ন্যায় বাহির করা যায়; সাদা শ্লেষ্মা বা লালা। ডিপথেরিয়া, গলক্ষত, জিহ্বার, মুখের এবং দন্তমাড়ির প্রদাহে আরক্ত, লালাস্রাবী গ্রন্থিগুলির প্রদাহে ইহা কোন অসাধারণ ব্যাপার নহে। যখন ঐ শ্লেষ্ম ঘন, শক্ত, দড়ির মত অথবা মোটা দড়ির মত হয়, তখন উহা ক্যালি বাইক্ৰমিকামে’র সদৃশ হইয়া পড়ে। গুরুতর গলক্ষত রোগে তোমরা দেখিবে যে, রোগী শুইয়া মুখরোধবিশিষ্ট হইতেছে, কাশিতেছে এবং মুখ হইতে লালা নির্গত করিবার জন্য অতিকষ্টে জিহ্বা বাহির করিবার চেষ্টা করিতেছে। অনেক সময়ে জিহ্বামূলে এত গুরুতর বেদনা থাকে যে, সে জিহ্বা দ্বারা লালা নির্গত করিতে পারে না, এবং ঐ ঘন দড়ির মত লালা পড়িবার জন্য কোন পাত্রের উপর অথবা বিছানার উপর একখানি কাপড় রাখিয়া তাহার উপর মুখ উন্মুক্ত রাখিয়া শুইয়া থাকে। এইরূপ অবস্থায়, গলক্ষত, বিশেষতঃ যখন রোগটি বামদিকে আরম্ভ হইয়া ডানদিকে প্রসারিত হয়, তখন আর তোমাদিগের প্রশ্ন করিবার মত কিছু থাকে না, কারণ ইহা ল্যাকেসিস-জ্ঞাপক অবস্থা। অবস্থাটি এইরূপ হইলে জিহ্বার সাধারণ প্রদাহে এবং জিহ্বার ক্যান্সার রোগে ল্যাকেসিস প্রযোজ্য হইবে। ল্যাকেসিসের প্রকৃতিতে দুষ্ট প্রকৃতির মামড়ী ও দুষ্ট প্রকৃতির ক্ষত উৎপন্ন করিবার প্রবণতা আছে, এবং অন্তঃত্বকের অর্বুদেও আমরা তাহাই দেখিতে পাই। ইহা বহু অন্তঃত্বকের অৰ্ব্বুদ বিশিষ্ট রোগীকে আরোগ্য করিয়াছে। ইহা বৃক্‌রোগে একটি অত্যন্ত উপকারী ঔষধ। ইহা এইপ্রকার প্রচুর দড়া দড়া লালাযুক্ত, সিফিলিসজাত গলক্ষতে, জিহ্বা ও টাকরার সিফিলিসজাত ক্ষতে একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় ঔষধ।

গলনালীর পেশীগুলি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইয়া পড়ে, কাৰ্য্য করে না, এই খাদ্য গলনলীতে জমা হয়, অর্থাৎ খাদ্যবস্তুর ডেলা গলনলী পর্যন্ত গিয়া থামিয়া থাকে, তারপর গিলিবার জন্য চেষ্টা করিলে, মুখরোধ কাশি ও বুকের আক্ষেপিক ক্রিয়ার সহিত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে ভীষণ কষ্ট হইতে থাকে এবং সে আর পুনরায় ঐরূপ চেষ্টা করে না। এইরূপ অবস্থা প্রায়ই ডিপথেরিয়া রোগে ঘটিয়া থাকে। আমি বহুবার চিকিৎসকগণকে এইরূপ অবস্থা ঘটাইতে দেখিয়াছি। তাহারা ঠিক উপযুক্তভাবে, উপযুক্ত উচ্চশক্তিতে এবং রোগারোগ্যের পক্ষে যথেষ্ট সদৃশ অবস্থায় ল্যাকেসিস না দিয়া, হাতের কাছে যাহা পাইয়াছিলেন তদ্রুপ নিম্নশক্তিতে, ৮ম অথবা ১০ম শক্তিতে জলে গুলিয়া উহা প্রয়োগ করিয়াছিলেন এবং ডিপৃথিরিয়া অবস্থার আগাগোড়া ঐরূপভাবে ঔষধটি খাওয়াইয়া চলিয়াছিলেন। যখন তোমরা এইরূপ ভাবে চিকিৎসিত রোগীদিগকে দেখিবে, তখন ডিপথেরিয়ার পরবর্তী পক্ষাঘাত উপস্থিত হইলে বিস্মিত হইবে না, কারণ উহা ল্যাকেসিস দ্বারাই উৎপন্ন হইয়াছে। এরূপ ব্যবস্থা ডিপথেরিয়াকে আরোগ্য করিতে পারে, কিন্তু ইহার ফলে সে বিষক্রিয়াটি রহিয়া যাইবে, তাহা রোগীর জীবিতকাল পর্যন্ত থাকিয়া যাইবে। প্রত্যেকবার বসন্তকালে তাহার ল্যাকেসিস-জ্ঞাপক লক্ষণগুলি প্রকাশ পাইতে থাকিবে। যদি সে একবার ল্যাকেসিস দ্বারা বিষাক্ত হইয়া থাকে, তাহা হইলে পূর্ববর্ণিত প্রত্যেকটি বৃদ্ধির উপযুক্ত অবস্থা উপস্থিত হইলে তাহার ল্যাকেসিস লক্ষণসকল প্রকাশ পাইবে।

গলক্ষত রোগে আমরা কতকগুলি লক্ষণের সমন্বয় দেখিতে পাই। ল্যাকেসিস ঐরূপ অবস্থা উৎপাদন করিয়াছে, রোগ বামদিক হইতে ডানদিকে প্রসারিত হইয়াছে, কিন্তু গলক্ষতের সহিত গলায় ও ঘাড়ে একপ্রকার পূর্ণতাবোধ থাকিবে, শ্বাসকষ্ট থাকিবে, মুখমন্ডলের বিবর্ণতা বা কৃত্রিম রক্তপূর্ণতার ভাব থাকিবে, নিদ্রা যাইবার উপক্রমে গলরোধভাব দেখা দিবে, ঐ বিশেষ প্রকারের লালাস্রাব উৎপন্ন হইবে এবং গরম পানীয়ে গল-লক্ষণগুলির বৃদ্ধি হইবে। সব সময়েই গরম পানীয়েই ঠিক যাতনাটিরই বৃদ্ধি হয় না, কিন্তু রোগী প্রায়ই উষ্ণ পানীয় গলাধঃকরণ করিতে পারে গরম তরল পদার্থ গিলিতে গেলে গলরোধ জন্মে, এক ঢোক গরম চা পান করিলে রোগী হাত দিয়া গলা চাপিয়া ধরিবে এবং মনে হইবে, যেন তাহার শ্বাসরোধ হইতেছে। সে বলিবে “ওঃ! আমাকে আর গরম পানীয় দিও না।” শীতল কিছুতে উপশম হইবে। শ্বাসকষ্ট এবং গলার কষ্ট গরম কিছু গিলিলে বাড়িয়া যায়। আবার লাইকোপোডিয়ামে’র গলক্ষতে উত্তাপেই উপশম হয়, কিন্তু লাইকোপোডিয়ামে’র গলক্ষতের কতকগুলি রোগীর সম্বন্ধে ইহাও সত্য যে, তাহারা শীতল পানীয় চায় এবং ঠান্ডা জিনিষ গলায় ভাল লাগে।

ল্যাকেসিসের খুব তরুণ লক্ষণগুলি থাকিলে প্রায়ই উষ্ণ পানীয় পাকস্থলীর পক্ষে অনিষ্টকর হয় এবং উহাতে বমনেচ্ছা ও শ্বাসরোধভাব জন্মায় এবং গলরোধভাব ও হৃদস্পন্দন এবং মাথার পূর্ণতাবোধ বাড়াইয়া দেয়; কিন্তু ল্যাকেসিসের পুরাতন রোগীদিগের, যাহারা কয়েক বৎসর পূর্বে বিষাক্ত হইয়াছে, তাহাদের শীতল জল পান করায় এবং তারপর শুইয়া পড়ায় বমনেচ্ছা এবং বমি করিবার ঝোক দেখা দেয়। বমি বমিভাব শুইয়া পড়ার পর উপস্থিত হয়, অর্থাৎ রোগী খানিকটা বরফের ন্যায় ঠান্ডা জল পান করিল এবং শুইয়া পড়িল, এইবার বমিবমিভাব দেখা দিবে। ইহা ল্যাকেসিসের একটি অদ্ভুত লক্ষণ। যাহারা বহুদিন পূর্বে ল্যাকেসিসের পরীক্ষা করিয়াছিলেন, তাহারা পরবর্তীকালে ইহা প্রকাশ করিয়াছেন। সময়ে সময়ে ল্যাকেসিসের লক্ষণ বহু বৎসর পরেও সংগ্রহ করিতে হয়।

ল্যাকেসিসে গলার মধ্যে ক্ষত আছে। ইহাতে তালির মত উপক্ষত আছে, ইহাতে লাল ও ধূসরবর্ণ ক্ষত আছে, ইহাতে গভীর ক্ষত আছে। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর কিনারাগুলির উপর ক্ষত সৃষ্টির প্রবণতা ল্যাকেসিসের একটি বিশেষ লক্ষণ। আবার চর্মের উপর যে-স্থানে রক্তসঞ্চালন ক্ষীণ, সে স্থানেও ক্ষত উৎপন্ন হয়। মনে হয়, যেন গলার যন্ত্রণা দুইবার গলাধঃকরণ কার্য্যের মধ্যবর্তী সময়েই বেশী থাকে এবং প্রদাহিত টনসিলের উপর দিয়া যাইবার সময় খাদ্যের গোলাটির চাপে উপশমবোধ হয় । গিলিবার সময় সর্বদাই গলরোধ হইতে থাকে,—গলরোধ ও মুখরোধ। কাশি দমবন্ধকারী এবং উহাতে একরূপ সুড়সুড়ির অনুভূতি জন্মে। ইহা ‘বেলে’র কাশির সদৃশ। ‘বেল’ ল্যাকেসিসের কাশির প্রতিষেধ করে, উহার কাশি ল্যাকেসিসের কাশির এতই সদৃশ যে, কেহই ঐ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করিতে পারে না। তারপর ল্যাকেসিসে গলা অত্যন্ত শুষ্ক হইয়া যায়, ঐ শুষ্কতার সহিত তৃষ্ণা থাকে না, জলের উপর বিতৃষ্ণা সহিত শুষ্কতা। ঢোক গিলিবার অত্যন্ত ঝোক, সর্বদাই ঢোক গিলিতে চেষ্টা করে, অথচ উহা যন্ত্রণাদায়ক হয়। শক্ত জিনিষ গেলা অপেক্ষা শূন্যগলাধঃকরণ অধিক যন্ত্রণাদায়ক হয়। কতকগুলি হৃদরোগগ্রস্ত ল্যাকেসিসের রোগী কোন গরম জিনিষ গিলিবার সময় গলায় সঙ্কোচনবোধের জন্য বিরক্তি বোধ করে, গরম কিছু গিলিতে গেলেই তাহাদের গলরোধ হয়, কখন কখন গরম ঘরে গেলে ঐরূপ হয়; গলরোধ এবং হৃদস্পন্দন। পুরাতন গলবেদনা, পুনঃপুনঃ গলবেদনা, পুনঃ পুনঃ আগত গলবেদনার সহিত ক্ষত উৎপন্ন হওয়া। অবশ্য তোমরা দেখিতেছ যে, তরল পদার্থ গলাধঃকরণ করা ও শূন্যগলাধঃকরণ কতকটা একই প্রকার ব্যাপার; কিন্তু খাদ্যের ডেলা গিলিবার সময় যখন গলার ক্ষতের উপর চাপ পড়ে তখন উহা হইতে শূন্যগলাধঃকরণ একটি মৃদুস্পর্শের মত ব্যাপার। মৃদুস্পর্শে গলার ক্ষততা ও যাতনায় বৃদ্ধি হয়। জামার কলারের মৃদুস্পর্শে গলার যাতনার বৃদ্ধি হয়।

গলক্ষতের সহিত ঘাড়ের চারিদিকের গ্রন্থি ও পেশীগুলি যন্ত্রণাযুক্ত, প্রদাহিত এবং স্ফীত হয় এবং উহারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হইয়া পড়ে। প্রায়ই গলক্ষতের সহিত মস্তিষ্কের তলদেশে বা মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে যন্ত্রণা থাকে এবং ঘাড়ের পশ্চাদ্ভাগের পেশীগুলিতে ক্ষততা বোধ থাকে, উহা অনেক সময়ে চিৎ হইয়া শুইলে উপশমিত হয় এবং যে-কোন পার্শ্বে শুইলে বর্ধিত হয়। যদি তুমি গলার মধ্যে দেখ, তাহা হইলে উহা চিত্র-বিচিত্র, বেগুনিবর্ণ দেখাইবে। প্রচুর, দুচ্ছেদ্য লালাস্রাবের সহিত এই সমস্ত লক্ষণ যোগ কর, তাহা হইলেই যে ডিপথেরিয়া বামদিকে আরম্ভ হইয়া ডানদিকে বিস্তৃত হয়, তাহাতে কৃত্রিম ঝিল্লী কম থাকুক বা বেশী থাকুক, তুমি ঐ রোগীকে আরোগ্য করিতে পারিবে । পুঁজোৎপত্তিযুক্ত টনসিল প্রদাহ, উহাতে বাম টনসিলটি প্রথমে প্রদাহিত  হয়, দুই তিনদিন পরে ডান টনসিলটিও প্রদাহিত ও স্ফীত হইয়া পড়ে, তারপর দুইটিতেই পুঁজোৎপত্তি হয় অথবা যখন একটি ফুলিয়া ও পাকিয়া উঠে, তখন অপরটিও ফুলে ও পাকে। গলার ডিপথেরিয়া সদৃশ চেহারা, বামদিক হইতে ডানদিকে বিস্তৃত হয়। প্রাতে গলনলী সাদা, দড়ির ন্যায় শ্লেষ্মায় পূর্ণ থাকে, প্রাতঃকালে খস্থ করিয়া একমুখ শ্লেষ্মা তুলিয়া ফেলিতে বাধ্য হয়।

উদরটি বায়ুতে স্ফীত থাকে। টাইফয়েড জ্বরে পেটটি ঢাকের মত ফুলিয়া থাকে, স্ফীত পেটের মধ্যে অত্যন্ত গড়গড় করে। কাপড় সহ্য হয় না, কাপড়ের সামান্যমাত্র স্পর্শও সহ্য হয়না। কিন্তু তথাপি জোরে চাপ না দিলে পেটের মধ্যে যে ক্ষততা থাকে তাহাও প্রকাশিত হয় না। অন্ত্রাদির, ডিম্বকোষদ্বয়ের এবং জরায়ুর প্রদাহেও এইরূপ অবস্থা হয়, রোগিণী পোষাক উঁচু করিয়া তুলিয়া ধরিয়া চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে। টাইফয়েড জ্বরে, সূতিকা জ্বরে, দূষিত প্রকৃতির আরক্ত জ্বরে, এবং একজ্বরের দুষ্ট প্রকৃতির অন্তরুৎসেক্য অবস্থায়, ভীষণ প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা, রজঃশূলের ন্যায় যন্ত্রণা বর্তমান থাকে।

ল্যাকেসিসে ন্যাবারোগবিশিষ্ট যকৃৎ পীড়া আছে; যকৃতে রক্তসঞ্চয়, যকৃতের প্রদাহ, যকৃবৃদ্ধি, যকৃতের গুটি গুটি মত হইয়া যাওয়া যকৃৎস্থানে ছুরি দিয়া কাটার ন্যায় যন্ত্রণা। পিত্তবমন, পাকস্থলীতে যাহা কিছু যায়, তাহাই বমিত হইয়া যাওয়া। অত্যন্ত বমি বমিভাব, ন্যাবার সহিত ক্রমাগত বমি বমিভাব সাদা মল । ইহা পিত্তপাথুরিবিশিষ্ট রোগীদিগকে আরোগ্য করিয়াছে। “কুক্ষিপ্রদেশের চারিদিকে কোনরূপ চাপ সহ্য করতে পারে না।” পুরাতন অবস্থায় উদরের, কোমরের নিতম্বদেশের চর্ম এত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে যে, পোষাক পরায় যন্ত্রণা, অত্যন্ত অস্থিরতা ও অস্বচ্ছন্দতা, উৎপন্ন হয়, রোগী আরও বেশী স্নায়বিক হইয়া পড়ে এবং পরিশেষে হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত হয়। নিম্ন উদরের উপরে অত্যনুভূতি, ঐস্থানে পোষাকের স্পর্শ সহ্য করিতে পারে না।

ল্যাকেসিস স্ত্রীলোকদিগের ঋতুকালে এত এত সাধারণ ঔষধ হইতে পারে যে, প্রথমবার পড়িবার সময় উহা আশ্চর্য্য বলিয়া বোধ হইবে। ইহাকে ঋতুললাপকালেরও একটি ঔষধ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। তোমরা যদি অনেকগুলি ঋতুললাপ অবস্থার স্ত্রীলোককে পরীক্ষা কর, তাহা হইলে দেখিবে যে, উহাদের অনেকেরই ল্যাকেসিসে যেরূপ দেখা যায়, তদ্রুপ উত্তাপের উচ্ছ্বাস, মাথায় রক্ত উঠা এবং যথেষ্ট রক্তসঞ্চালনের গোলযোগ আছে। ঋতুলোপকালে এবং ঋতুকালে স্ত্রীলোকদিগের শিরঃপীড়া প্রভৃতি উপদ্রব সম্বন্ধে এই ঔষধটি প্রযোজ্য। স্ত্রীলোকদিগের ঋতুকালে ল্যাকেসিসজ্ঞাপক লক্ষণগুলি প্রবল হইয়া থাকে। ঋতুকালে তীব্র শিরঃপীড়া, মস্তক-শীর্ষে রন্ধ্রকরণবৎ যন্ত্রণা, বমি বমিভাব ও বমন।

স্ত্রীলোকদিগের স্রাব, ঋতু-প্রবাহই হউক, আর রক্তস্রাবই হউক, ইহা কাল রক্ত বিশিষ্ট হয়। বাম ডিম্বপ্রদেশে বেদনা অথবা বেদনা বামদিক হইতে ডানদিকে যায়। এক বা দুই ডিম্বকোষের কঠিনতাপ্রাপ্তি। ইহা ডিম্বকোষের পুঁজোৎপত্তি আরোগ্য করিয়াছে। জরায়ুপ্রদেশ অত্যন্ত স্পর্শকাতর থাকে, সামান্য বস্ত্রাদির স্পর্শে অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া উঠে; ডিম্বকোষের প্রদাহে ডিম্বকোষ ও জরায়ুর যন্ত্রণা বামদিক হইতে ডানদিকে যাইতে থাকে। বস্তিদেশের যন্ত্রণা উপরে বুকের দিকে যাইতে থাকে, সময়ে সময়ে উহা একপ্রকার ঢেউয়ের ন্যায় যন্ত্রণা, উপরদিকে উঠিয়া গলা চাপিয়া ধরে। প্রসববেদনা ঢেউয়ের মত উপরদিকে উঠে, তাহার সহিত গলা চাপিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি থাকে অথবা প্রসববেদনা থামিয়া গিয়া গলায় চাপিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা হয়। ঋতুস্রাব সংক্রান্ত যন্ত্রণা প্রবলভাবে বাড়িয়া উঠে এবং স্রাব উপস্থিত হইলে উহার উপশম হয়। ঋতুকালীন যন্ত্রণা ঋতুস্রাবের পূর্বে ও পরে, কিন্তু ঋতুস্রাবকালে উপশমিত থাকে। ঋতু-প্রবাহ একদিন থামিয়া থাকে এবং তারপর দিন আবার চলিতে থাকে, এবং সম্ভবতঃ থামিয়া থাকার দিন যন্ত্রণা ও শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। অতিরজঃস্রাবের সহিত রাত্রিকালে শীতবোধ ও দিবাভাগে উত্তাপের ঝলক উঠা। ঋতুস্রাবকালে ভীষণ শিরঃপীড়া, বিশেষতঃ যে-সময়ে স্রাবটি মন্দীভূত থাকে। স্রাব হইলেই উপশম ল্যাকেসিসের একটি সাধারণ লক্ষণ। ঋতুরক্ত প্রতিদিন এক ঘন্টা মাত্র স্রাবিত হয় এবং থামিয়া গিয়া, বাম ডিম্বকোষস্থানে তীব্র যন্ত্রণা উপস্থিত হয়, তৎসহ পৰ্য্যায়ক্রমে মুখরোধ ও বমন দেখা দেয়।

ইহা বিশেষভাবে স্ত্রীলোকদিগের ঋতুললাপকালে উত্তাপের ঝলকা উঠার জন্য উপযোগী। জরায়ু হইতে রক্তস্রাব, মূৰ্ছার আবেশ, গরম ঘরে শ্বাসরোধভাব, এবং রক্তের উচ্ছ্বাস অত্যন্ত প্রবল হয়। গর্ভকালীন উপসর্গসমূহ। পায়ের শিরাগুলির প্রদাহ। স্থায়ীভাবে বিস্তৃত শিরাসকল, নীল বা বেগুনিবর্ণ, শিরাপথে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা, চাপে উপশম হইলেও মৃদুস্পর্শে অত্যনুভূতি।

ল্যাকেসিসের এই আলোচনা উহার কতকগুলি প্রয়োজনীয় অংশের ভাষ্য মাত্র।

 

অপর নাম ল্যাকেসিস মিউটুস (Lachesis Mutus)

ল্যাকেসিস দক্ষিণ আমেরিকাস্থ ওফিডিয়া জাতীয় একপ্রকার সাপের বিষ। বহুদিন আগে হলেও (১৮৩৫) ডাঃ হেরিংই প্রথমে একে পরীক্ষা করেছিলেন। ইহা ৩০ শক্তি ক্রমেই পরীক্ষিত হয়েছিল। সাপের বিষ বিচুর্ণ করে বা গ্লিসারিনের সঙ্গে দ্রবীভূত করে ঔষধস্বরূপ ব্যবহার করা হয়। ছয় দশমিক ক্ৰমের নিচে একে পাওয়া যায় না।

ল্যাকেসিসের মূলকথা

১। রোগী অত্যন্ত বিষযণ্ন ও হতাশবোধ করে; ঘুম থেকে উঠার পর বা প্রাতঃকালে বৃদ্ধি।

২। ল্যাকেসিসের রোগী কোন রকমের চাপ সহ্য করতে পারে না, তাকে ঘাড় বুক, গলা, পেট প্রভৃতির আবরণ ঢিলে করে দিতে হয়।৩ ৩৩

৩।রোগ প্রধানতঃবাঁদিকে শুরু হয়, বিশেষ করে বাঁদিকের গলা,বুকও ডিম্বাশয় আক্রান্ত হয়।

৪। প্রদাহিত স্থান অত্যন্ত স্পর্শকাতর অর্থাৎ প্ৰদাহিত স্থানে স্পর্শ সহ্য হয় না, এবং সেই স্থান ঈষৎ নীলাভ বা মলিন বর্ণের হয়।

৫। অত্যন্ত দুৰ্ব্বলতা ও কম্পন, জিভ কাপে, জিভ বের করতে গেলে নীচের পাটির দাঁতের নীচে আটকে যায়।

৬। রক্ত বিশিষ্ট হয় বা ভেঙ্গে যায়, রক্ত জমাট বাঁধে না, এমনকি সামান্য আঘাত বা ক্ষত থেকে ও প্রবল রক্ত পড়ে।

৭। হ্রাসবৃদ্ধি বৃদ্ধি রজোনিবৃত্তিকালে,স্পর্শে, সংকোচনে (আকুঞ্চনে) বা চাপে, সূর্যের উত্তাপে, ঘুমের পরে বা ঘুম থেকে জেগে উঠার পর রোগলক্ষণের বৃদ্ধি হয়।

উপশম—যে কোন প্রকার অবরুদ্ধ বা বিলম্বিত স্রাবের পর।

৮। রজোনিবৃত্তিজনিত নানাবিধ রোগ—উত্তাপাবেশ বা আকস্মিক উত্তাপের ঝলকা, গরম ঘাম, মাথার উপরে জ্বালা, শিরঃপীড়া, অর্শ ও রক্তস্রাব।

৯। অতিশয় শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, সমগ্র শরীরের কম্পন বোধ, দুৰ্ব্বলতার জন্য রোগী সৰ্ব্বদা অবসন্ন হয়ে পড়ে।

ল্যাকেসিস একটি আলোচনা

সূচনা

এই সর্পবিষটি আশ্চর্য্য রোগনাশক শক্তি পরিস্ফুট করা ও ব্যবহারে আনার মৰ্য্যাদা ডা. কনস্ট্যানটাইন হেরিংয়ের। যদি তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য এছাড়া আর কিছু নাও করতেন, তবুও মানবজাতি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ থাকত। একমাত্র ইহইতাকে চিরস্মরণীয়কবুত।এইসবও আরও অনেক কিছু সত্ত্বেও চার্লস হ্যাম্পেল তার মেটেরিয়া মেডিকার প্রথম খণ্ডে লিখেছে বিপরীত উদ্দেশ্যে যথেষ্ট চেষ্টা করা সত্ত্বেও এইদৃঢ়বিশ্বস ক্রমশঃ আমার মনে জন্মেছে যে,ল্যাকেসিসের যে পরীক্ষা লক্ষণগুলি ডাঃ হেরিংয়ের কাছ থেকে পাওয়া গেছে, তা অন্যভাবে উৎকৃষ্ট ও অত্যন্ত প্রশংসনীয় চেষ্টার ফল হলেও বস্তুতঃ একটি প্রকাণ্ড প্রতারণা এবং এই প্রকাশিত বিষয়ের অন্তর্গত বিষক্রিয়ার ফলগুলি ছাড়া বাকি সব লক্ষণগুলি অবিশ্বাস যোগ্য।

আমার মনে হয় হ্যোম্পল পরবর্তী সংস্করণে তার মতের কতকটা পরিবর্তন করেছিলেন।

এখন লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, অ্যালেনের এন সাইক্লোপিডিয়া অফ পিওর মেটেরিয়া মেডিকায় সত্য বলে প্রতিপন্ন এবং বিশেষতঃ দৃষ্টি আকর্ষক অক্ষরে ছাপা লক্ষণের প্রায় সবগুলিই ৩০ পোটেন্সি দ্বারা ঔষধ পরীক্ষায় পাওয়া। আরও লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, হ্যানিমানের বহুবরাগ আরোগ্যকারী বা পলিক্রেস্ট ঔষধগুলির অধিকাংশও এই পোটেলি দ্বারাই হয়েছিল এবং উহারাই আজ সৰ্ব্বাপেক্ষা কাৰ্য্যকর ও নির্ভরযোগ্য ঔষধ। কেউ কেউ ৩০ ও তদূর্দ্ধ  পোটেন্সির দ্বারা যে সব ঔষধ পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাদের পরীক্ষার উপর সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এমনকি ঔষধগুলির আরোগ্যশক্তির উপরও তাদের বিশ্বাস নেই।

এমনকি যাদের পরীক্ষা আরও নিম্ন পোটেন্সী দ্বারা হয়েছিল, তাদের উপরও বিশ্বাস নেই।

কিন্তু আমাদের কাছে, বিশেষ করে যারা এই সব পোটেন্সির মূল্য বুঝি, তাদের কাছে ইহা করুণার বস্তু। কারণ যারা জানেন না বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, তারা কখনও নিজেরা পরীক্ষা করে দেখেননি বা দেখার মত সাহস নেই। তাই তাঁদের কাছে অনুরোধ, কারো কথা না শুনে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখুন ও যা সত্য তা আঁকড়ে ধরে থাকুন।

১। ল্যাকেসিসের অধিকার অতিশয় বিস্তীর্ণ। এর ক্রিয়া মন ও মস্তিষ্কের উপর। পৰ্য্যায়ক্রমে উত্তেজনা ও অবসাদ সৃষ্টি করে।

প্রথম অবস্থায় উত্তেজনা জন্মালে যে লক্ষণগুলি পাওয়া যায়, তাহল— দ্রুত অনুভবশক্তি, চিত্তের অস্বাভাবিক অবস্থা, ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার মত কথাবার্তা, ভবিষ্যত বাণী করে, উদীপ্ত কল্পনা, পরমানন্দ, একপ্রকার সম্মোহ, অতিশয় বাচালতা, সবসময় কথা বলে, বক্তব্য বিষয়ের দ্রুত পরিবর্তন, এক বিষয় থেকে সহসা অন্য বিষয়ের কথা বলতে আরম্ভ করে। এই সকল লক্ষণ তরুণ বা পুরাতন রোগে, জ্বরের প্রলাপে অথবা স্থায়ী উন্মাদরোগেও দেখতে পাওয়া যায়।

অবসাদ জন্মালে স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা, লিখতে পড়তে ভুল করে, সময় সম্বন্ধে গণ্ডগোল হয়, রাত্রিতে প্রলাপ বকে, বিড় বিড় করে বকে, তন্দ্রালুতা, লাল মুখমণ্ডল, ধীরে, কষ্ট করে কথা বলে ও চোয়াল ঝুলে পড়ে। রোগী অতিশয় বিষন্ন, অবসাদিত, মানসিকভাবে কাতর এবং এই অবস্থা প্রাতে ঘুম ভাঙ্গার পরে বাড়ে। বিশেষ করে দিনে বা রাতে যেকোন সময়ই ঘুমের কষ্ট বাড়ে।

সাধারণতঃ দীর্ঘকাল স্থায়ী মানসিক যন্ত্রণা বা দুঃখের ন্যায় অবসাদ জনক কারণে যে সমস্ত পুরাতন রোগ হয় সেখানেই এই লক্ষণগুলি দেখা যায় তবে কি তরুণ বা কি পুরাতন উভয়প্রকার রোগেই ল্যাকেসিসের এই লক্ষণগুলি থাকে। তাছাড়া এইরকম পরস্পর বিরোধী অবস্থাও পর্যায়ক্রমে একই ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পৰ্য্যায়গুলি যখন আসে, তখন উহারা চরম সীমায় উপস্থিত হয়।

বিভিন্ন কারণেই মনের ও মস্তিষ্কের এইরূপ অবস্থা উৎপত্তি হতে পারে তবে সচরাচর ই দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে, বিশেষ করে ভগ্নস্বাস্থ্য বৃদ্ধা রোগিণীদের মধ্যে ও বজোঃনিবৃত্তিকালীন উপদ্রবে এইসকল রোগীদের সহসা দুৰ্বলতার আবেশ, মূচ্ছ, মস্তকে রক্ত সঞ্চয়জনিত মাথাঘোরা ও তার ফলে সন্ন্যাস রোগের আক্রমণ হয়, অথবা মস্তিষ্কের রক্ত স্বল্পতার জন্য এদের বিপরীত লক্ষণও দেখা যায়।

সংক্ষেপে-ল্যাকেসিসের রোগীর রক্তসঞ্চালন অত্যন্ত অনিশ্চিত, তাই রজোনিবৃত্তিকালীন আকস্মিক তাপাবেশে ল্যাকেসিস এত উপকারী।

২। ল্যাকেসিসের কয়েকটি সুপ্রকাশিত মস্তকলক্ষণ আছে। যাদের ক্ষেত্রে ল্যাকেসিস ঘড়া অন্য কোন ঔষধই ব্যবহৃত হয় না।

সূর্যের রোদ লাগার ফলে মাথা বেদনায় ইহা একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। সানস্ট্রোকে বা সর্দি গর্মির অব্যবহিত পরেই গ্লোয়েনের সঙ্গে অবশ্য এটি তুলনীয়। বিশেষ করে গ্লোনয়েন দ্বারা উহার মূখ্যফল নিবারিত হলেও ল্যাকেসিস তারপরে সুন্দরভাবে উপযোগী। যখনই সূর্যের তাপ লাগে, তখনই যদি রোগীর মাথা ধরে এবং উহা পুরাতন রূপ ধারণ করে, তবে ল্যাকেসিস বিশেষ উপকারী (ন্যাটাম কার্ব্ব)।

৩। মাথার চাঁদিতে ভাববোধ আর একটি বিশেষ লক্ষণ (ক্যাকটাস গ্লোনয়েন, মিনিয়েস্থিস)।

এই লক্ষণটি প্রায়ই রজোনিবৃত্তিকালে দেখা যায়। মাথার চাঁদিতে জ্বালা ও ল্যাকেসিসের একটি প্রধান লক্ষণ, তবে সালফারেও এই লক্ষণটি আছে।

তবে যদি উহা বজোনিবৃত্তিকালে উপস্থিত হয় এবং তার সঙ্গে সুস্পষ্ট সোরা দোষজনিত কোন জটিলতা না থাকে, তবেই ল্যাকেসিস উপযোগী।

৪। ল্যাকেসিসে নানারকমের মাথা বেদনা জন্মে, কিন্তু আমি মাত্র দুটি প্রকৃতিগত লক্ষণ জানি, যার দ্বারা ঐ রোগে ল্যাকেসিসকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। যেমন- ১)মাথাধরার সঙ্গে অত্যন্ত ফ্যাকাশে মুখমণ্ডল, ২) মাথাবেদনা রোগীর ঘুমের মধ্যে আরম্ভ হয়। সে ঘুমতে চায়, কারণ জাগলেই তার এরকমের যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা শুরু হবে এই ভেবে।

এই দুটিই ল্যাকেসিসের মূল্যবান নির্দেশক লক্ষণ। তবে যদি এরা বর্তমান থাকে, তাহলে অন্য পরিচায়ক লক্ষণগুলিকে খোঁজ করতে হবে, সেক্ষেত্রে যে লক্ষণ পাওয়া যায়, তারা হল-

নাক পর্যন্ত প্রসারিত মাথা ধরা, আর ইহা প্রায়ই তরুণ সর্দিতে উপস্থিত হয়। বিশেষ করে স্রাব বিলুপ্ত হলে বা ঘুমাবার পরষাব অবরুদ্ধ বা বন্ধ হলেই মাথা বেদনা, ল্যাকেসিসের লক্ষণ। সাধারণতঃ এই দ্বিতীয় প্রকারের লক্ষণগুলি হেফিভারে দেখা যায় এর সঙ্গে ঘন ঘন প্রবল হাঁচি আরম্ভ হয়। তবে যদি হাঁচির আবেশ রাত্রে বা দিনে যখনই ঘুমের পরে বাড়ে, তখনই ল্যাকেসিসের ২০০ শক্তির ব্যবস্থা করবেন তাহলেই হেফিভার সম্পূর্ণভাবে চলে যাবে। আমি (ডা. ন্যাশ) নিজে হে ফিভারের পুরাতন রোগী, তাই এই উক্তি সম্বন্ধে আমি নিঃসন্দহে অথরিটি।

৫। অন্ননালী পথেও ল্যাকেসিসের ক্রিয়াদর্শে। প্রথমতঃ দাঁতের মাড়ি প্রায়ই ফুলে ও ফোপরা হয়, সহজেই রক্তপড়ে। এইরকম অবস্থায় প্রথমে মারকিউরিয়াস ওপরে ল্যাকেসিস ব্যবহার্য। যদি মাড়ির রং বেগুনি হয়, তবে ল্যাকেসিস নির্দেশিত হয়। টাইফয়েড প্রকৃতির রোগে ল্যাকেসিসের একটি বিশেষ প্রকৃতিগত লক্ষণ জিভে পাওয়া যায়। তাহল-রোগী অতিকষ্টেজিভ বের করে, জিভ শুকনো,কাঁপে ও নীচের দাঁতে আটকে যায়।

  • তুলনা – জেলসিমিয়ামেও জিভ কাপে এবং জিভ কষ্ট করে বের করে, কিন্তু ল্যাকেসিসের মত শুকনো নয়। জিভ কাঁপা রোগীর অতিশয় দুৰ্বলতার লক্ষণ কিন্তু জেলসিমিয়ামে ইহা জ্বরের একেবারে প্রথম দিকে দেখা যায় আর ল্যাকেসিসে ইহা জ্বরের একেবারে শেষভাগে ঘটে।

ল্যাকেসিসে রোগীর মুখেদুর্গন্ধ থাকে এবং জ্বরের ভোগকাল পর্যন্ত মুখবিবর অত্যন্ত শুকনো থাকতে পারে বা মুখে প্রচুর পরিমাণে আটা আটা শ্লেষ্মা সঞ্চিত হয়। (এক্ষেত্রে আবার মারকিউরিয়াসের সঙ্গে ল্যাকেসিসের সাদৃশ্য দেখা যায়।)

৬। ক্ষয়রোগের শেষ অবস্থায় মুখে যে ঘা হয়, তাতে ল্যাকেসিস একটি পরমোপকারী ঔষধ। এই উপসর্গটি বড়ই যন্ত্রণাদায়ক এবং সচরাচর এর উপশম সহজে জন্মায় না। তবে যদি ল্যাকেসিসের দ্বারা এই উপসর্গ উপশম হয়, তবে এর দ্বারা রোগীর অন্যান্য উপদ্রবেরও অনেকটা উপশম হয় এবং এক্ষেত্রে এতই উপশম হয় যে রোগী মনে করে যে, অবশেষে সে ভাল হচ্ছে।

এখানে একটা কথা অবশ্যই বলা দরকার যে, যখন আর রোগ আরগ্যের কোন সম্ভবনা থাকে না, তখন সাময়িকভাবে উপশম করা সম্ভব হলেও তা অবশ্যই করা উচিৎ। আর এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সদৃশভাবে প্রযুক্ত হলে যে উপশম হয়, তা অন্য কোন ঔষধে সম্ভব নয়। তাছাড়া মাদক,অবসাদক, প্রত্যুপদাহজনক (counter-irritants), তথাকথিত বলকারক, উত্তেজক প্রভৃতি অ্যালোপ্যাথিক ঔষধগুলি এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির প্রকৃত সদৃশ ঔষধের মত হতে পারে না। তাই যথোপযুক্তভাবে প্রযুক্ত হলে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা অনিবাৰ্য মৃত্যুপথের যাত্রীরও শান্তিতে মৃত্যু ঘটে।

৭। গলনালীর রোগে ল্যাকেসিসের সর্বাপেক্ষা উপকারী। অতি সামান্য স্পর্শে বা বাহ্যিক চাপে গলা ও ঘাড়ের অত্যাধিক অনুভূতি (সিপিয়া), গলায় কিছু থাকলে, এমনকি শোয়ার সময় গায়ের কাপড়ের ভারে বা চাপেও তার কষ্ট হয়। ইহা ল্যাকেসিসের বিশেষ লক্ষণ। এছাড়া ল্যাকেসিসের বিশেষত্ব এই যে শক্ত বস্তু গলাধঃকরণ (গলা) অপেক্ষা খালি ঢোক গেলা বা লালা বা তরল পদার্থ গেলা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। গলার বেদনা কানের ভিতর পর্যন্ত যায়। গলকোষে বা গলগহ্বরে যথেষ্ট শ্লেম্মা থাকে সেইজন্য রোগী গলা খেঁকারি দেয়। টনসিলাইটিস ও এডিপথিরিয়ায় বাঁদিকে টনসিল ফুলে বেদনা আরম্ভ হয়ে ডান দিকে ছড়িয়ে পড়ে (স্যাবাডিলা)। গরম পানীয়ে বেদনার বৃদ্ধি হয় (বিপরীত স্যাবাডিলা)। এইসব বেদনা লক্ষণ ল্যাকেসিসের বিশেষত্ব। উহারা আবার ঘুমের পর বেশী বাড়ে।

পুরাতন টনসিলাইটিসের কষ্ট সবসময় বাঁ পাশে হলে আমি যে কেবল আক্রমণের সূচনাতেই একে ভাল করেছি, তা নয়, রোগীর রোগ প্রবণতাও চিরতরে দূর হয়ে গেছে।

কখন কখন গলনালী গ্যাংগ্রিনের আকার ধারণ করে। এক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণ বর্তমান থাকলে গলার রোগে ল্যাকেসিস প্রয়োগের এটিও একটি অতিরিক্ত লক্ষণ। যদি কোন রোগে, যেমন টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, স্কার্লেটিনা প্রভৃতিতে রোগের প্রধান প্রভাব গলার ভিতরে দেখা গেলে ল্যাকেসিসই সৰ্ব্বপ্রথম বিবেচিত হবে। ৮। উপদংশজ গলক্ষত-

চর্মের বর্ণ বেগুনী নীলাভ হলে এবং পচে যাওয়ার উপক্রম হলে ল্যাকেসিসহ প্রযোজ্য কারণ এই অবস্থায় এর মত আর কোন ঔষধই নেই। ল্যাকেসিস যে কেবল এইসব তরুণ গলার বোগে অতিশয় উপকারী, তা নয়; উপদংশ জাত গলার উপদ্রবেও ফলপ্রদ।

৯। স্পর্শ ও চাপে অতিশয় অনুভূতি ল্যাকেসিসের একটি বিশেষ লক্ষশ। কিন্তু ইহাই শেষ কথা নয়। ডা. লিলিয়েনথাল বলেন যে ল্যাকেসিস সর্বপ্রকার  (আকুঞ্চনের) সংকোচনে (constriction) পরম শত্রু। অর্থাৎ ল্যাকেসিসের রোগীর কোন সংকোচন বা আঞ্চনই সহ্য হয় না। স্পর্শে এমনকি কাপড়ের চাপেও পাকস্থলী গহূরে বেদনা অনুভূত হয়। কুঁকিতেও চাপসহ্য হয় না। কষ্টকর স্ফীততা ও বিরক্তিকর আধান বা পেটে গ্যাস জমে এবং পেটের উপরিভাগে স্নায়ুগুলির অতিরিক্ত অনুভূতি বশতঃ ওতে কোনপ্রকার চাপ সহ্য হয় না। বিশেষ করে পেটের কাপড় আলগা করে পরতে হয় কারণ পাকস্থলীর উপর চাপ পড়লে তার অস্বস্তি হয়। তাই শোয়ার সময় পাছে তার কাপড়ের চাপ লাগে, তাই সে পেট থেকে কাপড় সরিয়ে বা কাপড় আলগা করে দেয়। এমনকি চাপ লাগার ভয়ে পেটের উপর হাত রাখতেও সাহস পায় না। জরায়ুতেও স্পর্শ সহ্য হয় না, তাই বার বার পরিধেয় বস্ত্র উপরে তুলতে হয়। স্পর্শাদ্বেষ না থাকলেও পেটের উপর কাপড় থাকার ফলে অস্বস্তি জন্মায়।

স্বরযন্ত্রে অতি সামান্য স্পর্শেও শ্বাসরোধের অনুভূতি জন্মায় এবং গলার ভিতরে একটি পিণ্ড বা ঢেলা থাকার মত অনুভূতি জন্মে’ উত্তাপকালে, যথা রক্তের অস্বাভাবিক উত্তেজনায় ঘাড়ের কাপড় শিথিল করে দিতে হয়, বোধ হয় যেন ওতে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত জন্মে ও একপ্রকার শ্বাসরোধ উৎপন্ন করে। আঁটা গলাবন্ধ সহ্য হয় না।

গাইডিং সিম্পটম থেকে উপরোক্ত লক্ষণগুলি উদ্ধৃত না করলে, চাপে বা সঙ্কোচনে বৃদ্ধি ল্যাকেসিসের এই বিশেষ লক্ষণটির উপযোগিতা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারতাম না। তাছাড়া বহুবার চিকিৎসাকালে এইসকল লক্ষণের সার্থকতা প্রমাণিত হয়েছে, তাই যেকোন চিকিৎসকের স্মৃতি ও বিশ্বাসে একে দেওয়ার জন্য আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে কেন যে ল্যাকেসিসের কষ্ট চাপে বাড়ে এবং ব্রায়োনিয়ার কষ্ট চাপে উপশম হয় তার কৈফিয়ৎ দেওয়ার ভার তাদের উপর দিলাম, যাঁরা এর উত্তর দিতে পারেন বলে ভাব করেন। তবে আর যা হোক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ইহা উপশম ও বৃদ্ধির তালিকার একটি মূল্যবান প্রমাণ।

১০। ল্যাকেসিসে মল ও মলদ্বার সম্বন্ধে কতকগুলি বিশেষ ধরনের লক্ষণ আছে। সরলান্ত্রের এক প্রকার বেগ বা নীচের দিকে চাপ দেওয়ার অনুভূতি থাকে, মলত্যাগের চেষ্টায় উহা বাড়ে এমন কষ্ট হয় যে, মল ত্যাগ করার চেষ্টা থেকে রোগীকে নিরস্ত হতে হয়। এক্ষেত্রে মনে হয় যেন মলদ্বারটি রুদ্ধ হয়ে গেছে। ইহা কতকটা নাক্স ভমিকার বার বার নিস্ফল মলত্যাগের প্রবৃত্তি অথবা লাইকোপোডিয়ামের কষ্টদায়ক’ আকুঞ্চনের (সংকোচনের) মত; যাতে হয় বাহ্যে আটকে যায়, নচেৎ অসন্তোষজনক বা অসম্পূর্ণ মলত্যাগের পর যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। আর একটি বিশেষ লক্ষণ এই যে, খাদ্যদ্রব্য ঠিকমত রেচিত হয়ে মল তৈরি হোক বা নাই হোক, উহাতে অতিশয় দুর্গন্ধ থাকে।

১১। ল্যাকেসিসের অন্ত্র থেকে আমরা প্রায়ই বিশ্লিষ্ট রক্তস্রাব (decomposed) হতে দেখতে পাই উহা সাধারণতঃ টাইফয়েডের ন্যায় অবসাদক তরুণ রোগে ঘটে থাকে।

গ্যারেন্সী উহা এইভাবে বর্ণনা করেছেন “বিশ্লিষ্ট রক্তের কণিকা সকল সম্পূর্ণ পোড়া খড়ের মত বড় বড় বা ছোট , চ্যাপ্টা টুকরোর মত এবং কতকগুলি অংশ প্রায় চুর্ণ প্রকৃতির বা গুড়ো করা।” আমি এরূপ রোগী দেখেছি এবং ল্যাকেসিস যে কেবল মনের প্রকৃতি বদলে দেয় তা নয়, ইহা রোগীর সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধন করে রোগীকে আরোগ্য করে।

১২। অর্শ রোগেও ল্যাকেসিস উপকারী। অর্শের বলি বাহ্যিক হোক বা আভ্যন্তরিক হোক ওতে যদি পূর্বোক্ত সংকোচন বোধের অনুভূতি থাকে এবং কখন কখন যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাতুড়ি দিয়ে মলাধারে আঘাত করছে এরূপ অনুভূতি থাকে বা দপদপকর অনুভূতি থাকে তাহলে ল্যাকেসিস প্রযোজ্য। এই লক্ষণগুলি অবশ্য সরোন্ত্র মলঙ্কার ও অন্ত্রনালীর উপরও এর কার্যকারিতা প্রমাণ করে।

১৩। ল্যাকেসিস স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের রোগেও একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। ইহা ডিম্বকোষের ক্ষেত্রের একটি প্রধান ঔষধ, এবং বা ডিম্বকোষের উপর এর প্রধান অধিকার আছে। এতে ডিম্বকোষের সামান্য স্নায়বিক যন্ত্রণা থেকে শুরু করে বা ডিম্বকোষের প্রকৃত অর্বুদ, এমনকি বা ডিম্বকোষের ক্যানসারেও কাজে লাগে।

এছাড়া রোগটি বা ডিম্বকোষে আরম্ভ হয়ে ডান ডিম্বকোষ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে (বিপরীত লাইকোপোডিয়াম)। তবে আমরা ল্যাকেসিসে একটি বা উভয় ডিম্বাশয়ের স্নায়ুশূল, স্ফীতি, কঠিনতা, পুঁজোৎপতি, টিউমার বা ক্যানসার ও পাই। জরায়ুর উপর এর ক্রিয়া অবশ্য অত্যন্ত প্রকট।

** গাইডিং সিম্পটমসে বর্ণিত এই ধরনের অবস্থা, বিশেষ করে রজোনিবৃত্তি কালে বার বার প্রমাণিত হয়েছে। জরায়ু প্রদেশের বেদনা মধ্যে মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকে, বিশেষ করে যে পর্যন্ত না যোনিদ্বার থেকে রক্তস্রাব হয়ে উহা প্রশমিত হয় ততক্ষণ বাড়ে। তবে কয়েকঘন্টা বা কয়েকদিনও আবার ঐ রকম অবস্থা চলে বা ক্রমাগত এই অবস্থা চলতে থাকে।

এইসব রোগিণীদের জরায়ুপ্রদেশে অতি সামান্য স্পর্শ বা চাপাও অসহ্য, এই চরিত্রগত লক্ষণটি দেখতে পাওয়া যায়। জরায়ুর স্থানচ্যুতি, মাঝে মাঝে বা সর্বদা ওতে রক্তসঞ্চয় হতে থাকে, এবং বার বার দুর্নিবার রক্তস্রাব হয়। গরমের আবেশ, মাথার তালু উত্তপ্ত, মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে, মূৰ্ছা, জরায়ুর বিভিন্ন ধরনের স্থানচ্যুতি, কৈশিক নাড়ীর বিশৃঙ্খল রক্ত সঞ্চালন প্রভৃতি রজোনিবৃত্তিকালের সাধারণ উপসর্গ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় রক্তস্রাব (ক্রাটেলাস ও ক্রিয়োজোট দ্রষ্টব্য)।

ল্যাকেসিসের এই অবস্থায় নির্দেশিত তিনটি ঔষধ সম্ভবত সমগ্ৰ মেটেরিয়া মেডিকায় নেই।

(ক্রিয়োজোট রজোনিবৃত্তির পরবর্তী অবস্থার রোগে ব্যবহার্য)।

* স্তনের বা জরায়ুর ক্যানসারে ইহা সৰ্ব্বদাই খুব কাজে লাগে। উভয় অবস্থায় ক্যানসারে ইষৎ নীল বা ইষৎ বেগুনী বর্ণ ধারণ করে, এবং যদি ভালো থাকে বা স্পঞ্জের মত সচ্ছিদ্র হয় তাহলে সহজেই একরকম বিশ্লিষ্টকালো রক্তপাত হয়। রক্তপাত হলে বেদনা বা যন্ত্রণার ক্ষনস্থায়ী উপকার হয়, যেমন জরায়ুর রক্তস্রাব হয়ে থাকে। ল্যাকেসিস না থাকলে ডিম্বাশয় বা জরায়ুর এইরকম নানা ধরনের উপসর্গের চিকিৎসায় আমরা সম্পূর্ণ পঙ্গু হয়ে পড়তাম।

১৪। শ্বাসযন্ত্র ও বুকের রোগেও ল্যাকেসিসের অধিকার আছে। শ্বাসযন্ত্রের পক্ষাঘাত থেকে স্বরভঙ্গে, লারিক্সের সামান্য স্পর্শেও স্পর্শাদেশে, স্বাসরোধের ভাবে, কুপরোগের মারাত্মক অবস্থায় যেখানে শিশু ঘুমের পর তার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়, সেখানে ল্যাকেসিস সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ।

গ্লটিসের আক্ষেপে মনে হয় যেন কোন কিছু ঘাড় থেকে কণ্ঠ নালী পৰ্য্যন্ত ধাবিত হচ্ছে এবং দমবন্ধ করে দিচ্ছে। এর আর একটি লক্ষণ হাঁটার সময় শ্বাসের অতিশয় হ্রাস, বিশেষত পুরাতন মাতালদের বা হৃদরোগে,আর এই লক্ষণটিই সৰ্ব্বদা পরিচালক লক্ষণরূপে ল্যাকেসিসকে ব্যবহারের কথা মনে করিয়ে দেয়। মুখের বা নাকের কাছে অতি সামান্য কিছু আনলেই শ্বাসবোধের ভাব জম্মায়, তাছাড়া রোগীকে মারকলার বা ঘাড়ের দিকে যা থাকে, তাও ছিড়ে ফেলতে দেখা যায় কারণ এতে দমবন্ধ হয়ে আশার ভাব জন্মায়।

তবে উপরে লক্ষণযুক্ত হাঁপানিতে যদি রোগীর আকস্মিক তাপের আবেশ বা রক্তের উচ্ছ্বাস জন্মে,দমবন্ধ ভাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কাপড় আলগা করে দেয়, হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের পক্ষঘাতের আশঙ্কা জন্মে, শুকনো ধরনের কাশি থাকে এবং ওতে গলা বা ল্যারিংস স্পর্শ করলে কষ্ট বাড়ে বা নিদ্রিত অবস্থায় কাশি হয়, রোগীর তাতে ঘুমও ভাঙ্গে না বা রোগী জানতে ও পারে না—এরূপ অবস্থায় ক্যামোমিলার বিফলে ল্যাকেসিস উপকারী এবং এই দুর্নিবার কাশি ল্যাকেসিস রোগ্য করে।

ক্যামোমিলাতেও এই লক্ষণটি আছে। তবে রোগের সহানুভূতিক হ্রাস শুষ্ক শিতে ল্যাকেসিস বিশেষভাবে কার্যকারী। মলদ্বারে বেদনা বা অর্শের বৃদ্ধিতে সূঁচ কাটানো ব্যথাসহ কাশিতেও ল্যাকেসিস উপকারী। টাইফয়েড নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের দোষযুক্ত টাইফয়েড জ্বরে ল্যাকেসিস একটি সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ।

তবে এইসব ক্ষেত্রে জিহ্বা ল্যাকেসিসের কিনা তা লক্ষ্য করতে হবে। তরুন ও পুরাতন হৃদরোগে ও যদি উপরোক্ত স্বতন্ত্র ধরনের শ্বাস রোগের ভাবসহ কাশি ও সংকোচনে বা চাপে বৃদ্ধি লক্ষণগুলি থাকে তাহলে ল্যাকেসিসই সৰ্ব্বাপেক্ষা উপযোগী ঔষধ।

১৫। স্নায়ুমণ্ডলের উপর ল্যাকেসিস অপেক্ষা গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ আর নেই। প্রাথমিক অবস্থায় কম্পন থাকে, তবে তা ভয় বা উত্তেজনার জন্য নয় বরং অত্যন্ত দুৰ্বলতার জন্য দেখা যায়। এই অবস্থায় ইহা জেলসিমিয়ামের সঙ্গে তুলনীয়।

তুলনা-

উভয়ক্ষেত্রেই জিভ বের করতে গেলে জিভ ভীষণভাবে কাপে। উভয়ক্ষেত্রেই সমস্ত দেহকাঁপতে থাকে কিন্তু ল্যাকেসিসের ক্ষেত্রে রোগিণীর অজ্ঞানভাব উপস্থিত হয়। এখনই সব কিছু একেবারে ভেঙ্গে পড়বে, এরূপ ভাব। এই অবসন্নতা দেহ ও মনে উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায় এবং উহা বিশ্রামে বা নিদ্রায় কমে না, বরং প্রাতঃকালে ঘুম ভাঙার পর কষ্ট বাড়ে। এই অবসন্নতার সঙ্গে হৃৎপিণ্ডে বেদনা। অন্যান্য উপসর্গ, গা-বমিভাব; ফ্যাকাশে মুখমন্ডল এবং মাথাঘোরা বর্তমান থাকে তবে এই অবস্থা যদি বরাবর চলতে থাকে তাহলে পরবর্তী অবস্থা এসে উপস্থিত হয় এবং পক্ষাঘাত দেখা দেয় শেষ পরিণতি পক্ষাঘাত)।

১৬। পক্ষাঘাত–পক্ষাঘাত-সাধারণতঃ বাঁ পাশের কারণ ল্যাকেসিসে রোগী বেশীর ভাগ লক্ষণগুলিও বাঁ দিকের, এবং ল্যাকেসিস বাঁ দিকের ঔষধ। এই পক্ষ সাধারনতঃ সন্ন্যাসরোগ জনিত বা মস্তিষ্কের অবসন্নতাজনিত কারণে হয়ে থাকে,পক্ষাঘাত যদি শেষের কারণে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সুবিবেচনার সঙ্গে ল্যাকেসিস প্রয়োগ করলে রোগী সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য লাভ করে। আর যদি সন্ন্যাসরোগের খুব বেশী হয় এবং যদি রক্তস্রাব খুব বেশী হয়, সেক্ষেত্রে এ আশা দেখা যায়। কিন্তু দৃশ্যতঃ অনেক আশাহীন রোগীও আরোগ্য লাভ করেছে (তবে ল্যাকেসিসকে এপিলেন্সি ও লোকোমোটর এটাক্সিয়ায় প্রশংসা করা হয় কিন্তু আমি কখনও শুভফল পাইনি-ন্যাশ)।

আর একটি ক্ষেত্রে আমি ল্যাকেসিসকে বিশেষ উপকারী হিসেবে দেখেছি গ্রীষ্মকালীন অবসাদে অর্থাৎ সূর্যের তাপে ক্লান্তিতে ইহা বিশেষ উপকারী। এক্ষেত্রে সূর্যের তাপে রোগীর শুধু মাথাবেদনা হয় না, এতে সমস্ত শরীরেও অবসন্নতা বোধ হয় (এন্টিম ক্রুড, জেলসিমিয়াম, গ্লোনইন, নেট্রামকাৰ্ব্ব, নেট্রাম মিউর) ১৭। ঘুমের পর বাড়ে বা ভাল করে বলতে গেলে রোগের বৃদ্ধির মধ্যে ঘুমায়—ইহা ল্যাকেসিসের একটি প্রধান চরিত্রগত লক্ষণ। এ ব্যাপারে ল্যাকেসিসের শত্রুরা যা বলুন না কেন তাতে কিছু যায় আসে না। এর আর এক বিশেষ লক্ষণ, বিশেষ করে যার প্রতি আমি (ডা, ন্যাশ) মনোযোগ দিতে চাই, তাহল যে মূহুর্তে রোগী ঘুমিয়ে পড়ে, তখনই দমবন্ধ হয়ে যায়।

ইহা কি রকম, হেরিং তা বলেছে। আমি প্রায়ই যেভাবে পেয়েছি, তাহল-রোগী ভালভাবে ঘুমতে পারে না, কারণ ঘুমবার উপক্রমেই দমবন্ধ হয়ে আসে এ রোগী শ্বাস নিতে জেগে উঠে। ইহা হৃৎপিণ্ডে যান্ত্রিক বা ক্রিয়াগত উপদ্রবেও প্রায় দেখা যায় এবং খুব কষ্টদায়ক। (গ্রিলিয়া রোবাস্টার এরূপ একটি লক্ষণ আছে, ডিজিটেলিসেও আছে)।

রোগী বিবরণী-

এক সময় আমাকে একটি পুরাতন সিফিলিসের রোগীর কোষ্ঠবদ্ধতার চিকিৎসা করতে হয়েছিল। অবশেষে তারভীষণ উদরশূল বেদনার আক্রমণ হত। বেদনা সমস্ত পেটে ছড়িয়ে পড়ত এবং রাত্রে শুরু হত। আমি নানা রকমের ঔষধ দিয়েও এই রোগীর ক্ষেত্রে হতাশ হয়ে পড়ি, কারণ সে কিছুতেই সারছিল না। একদিন সে হঠাৎ বলে উঠে যে, ডাক্তার আমি যদি সবসময় জেগে থাকতে পারতাম, তাহলে কখনও এর বেদনার আক্রমণ হত না। এই শুনে আমি তার দিকে সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাই, সে ও বলেছিল যে আমার বলার উদ্দেশ্য আমি আক্রমণের মধ্যে ঘুমাই এবং আবার ওর মধ্যে জেগে উঠি।

আমি তাকে ল্যাকেসিস ২০০ একমাত্রা দিই। তারপর থেকে তার আর বেদনার আক্রমণ হয়নি এবং তার মলও সেদিন থেকে নিয়মিত হয়ে গেছে।

-(ন্যাশ)

মন্তব্য-

আমি এরূপ ধরণের আরও অনেক রোগীর কথা বলতে পারি, যাদের নানা ধরণের রোগ এই লক্ষণটির দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমি ভাল করেছি। তাছাড়া এটা বললেই যথেষ্ট যে, এই ঔষধের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে অন্যসব ব্যক্তিরা যে উক্তি করেছেন, তা নির্দ্ধিধায় আমি সমর্থন করি।

 

 

১৮। টাইফয়েড-

আমার (ডাঃ ন্যাশ) মনে হয় ল্যাকেসিস যে টাইফয়েডের একটি অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ, তা বলবার জন্য এর লক্ষণগুলি সম্বন্ধে যথেষ্ট বলেছি। এখানে শুধু আর একটি কথা বলব- ইহা সাধারনত রোগের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে নির্দেশিত হতে দেখা যায়। ইহাই জেলসিমিয়ামের সঙ্গে পার্থক্যের অন্যতম লক্ষণ। জলসিমিয়ামের কম্পন ও দুৰ্বলতা খুব তাড়াতাড়ি আসে এবং তখন চিনতে পারলে জেলসিমিয়াম সেখানেই রোগ নিবারণ করে।

তবে পূর্বোক্ত মস্তিষ্ক, জিভ, গলা, উদর ও মলের লক্ষণগুলি বিশেষতঃ ঘুমের লক্ষণটিই ল্যাকসিসকে অন্যান্য ঔষধগুলির মধ্যে মনোনয়ন সাহায্য করে।

১৯। টিসু বা কলার উপরও ল্যাকেসিসের ক্রিয়াদর্শে।

বিশেষ করে আমাদের শরীরের যেকোন স্থানে ফোলা থাকলে, ঐ অংশের বই সর্বপ্রধান ও বিশেষ লক্ষণ হিসেবে ল্যাকেসিসকে চিহ্নিত করে। উহা প্রায়ই কালচে নীলবর্ণের হয় (ট্যারেন্টুলা কিউব, এ্যানথ্রাসিনাম)।

এই বর্ণের ফোলা দেখলেই ল্যাকেসিসের কথা ভাবতে হবে, তবে এতে যদি স্পর্শ সহ্য হয় না, বা এটি এত  সংবেদনশীল হয় যে, পুলটিসও সহ্য হয় না। (কারণ পওলটিস অত্যন্ত ভারী বোধ হয়) সেক্ষেত্রে ল্যাকেসিসই একম্ত্র ঔষধ। (আর এইসব ক্ষেত্রে আমি ল্যাকেসিসই দিই এবং কখনও বিফল হই না।)

২০। রক্ত ও রক্তস্রাব-

রক্ত বিশ্লিষ্ট হয় বা মাঝে মাঝে ভেঙ্গে যায়, ফলে জমাট বাঁধতে চায় না। ইহা প্রায়ই টাইফয়েড জ্বরে ঘটে,ইহা অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থা। এক্ষেত্রে সহজেই রক্তপাত হতে শুরু হয় ও তা একটানা চলতে থাকে। মনে হয় যেন রক্তস্রাবের একটি প্রবণতা আছে, তাই ল্যাকেসিস পারপিউর হেমোরেজিকার একটি প্রধান উপযোগী ঔষধ ক্ষত বা আঘাতের স্থানে প্রচুরক্তপাত হয়,এমনকি সামান্যক্ষত থেকে রক্তপাত হতে থাকে, ক্ষত সহজেই গ্যাংগ্রিনে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে ল্যাকেসিস অত্যন্ত উপকারী।

ক্যানসার কালো বা নীলবর্ণ ধারণ করে, রক্তপাত প্রচুর ও প্রায়ই হয়, এবং জ্বালা করে। অনেক রোগে প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায় এবং তাতে রক্তের ভেঙ্গে পড়া বা বিশ্লিষ্ট অবস্থা নির্দেশিত হয়।

মন্তব্য-

আমরা যখন এই যথার্থ বহুরোগ আরোগ্যকারী ঔষধটির কথা লিখতে আরম্ভ করি, তখন যে রকম মনে করেছিলাম, তার চাইতে আমাদের প্রবন্ধ দীর্ঘ হয়ে পড়েছে। আমাদের ছাত্রাবস্থায় চার্লস হেম্পেলের (তার প্রতি আমাদের কারকার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে) গ্রন্থ পাঠে আমাদের ধারণা জন্মেছিল এবং তখন যেরকম মনে করেছিলাম, এখন দেখছি ঔষধটি তার চেয়েও বেশী প্রয়োজনীয়। যাঁরা এর ৩০ শক্তি বা তার উপরে ব্যবহার করেছে, তাদেরই এটি বিশেষ কাজে লাগে।

তবে কখনও ভুলবেন না ল্যাকেসিস বিশেষভাবে বাঁদিকের ঔষধ, যেমন লাইকোপোডিয়াম একটি ডানদিকের ঔষধ।

বাঁদিকে পক্ষাঘাত, ডিম্বকোষের পীড়া, গলার উপদ্রব, ফুসফুসের পীড়া ইত্যাদি সবরোগেই প্রথমেই আমাদের এই ঔষধটির কথা মনে করিয়ে দেয়। কারণ এইসব সম্বন্ধে ইহার নিশ্চিত ক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে। অবশ্য যদি ডানদিকের পীড়ায়ও এর অন্যান্য লক্ষণ থাকে, সেক্ষেত্রেও এর ব্যবহার করতে ইতস্ততঃ করা উচিত নয়। চর্মরোগে, মারাত্মক ধরণের স্কার্লেটিনায়, কালোজাতীয় হামে, ইরিসিপেলাস, গুটি বসন্ত, মারাত্মক ধরণের ফোড়া, ফারাক্কল, কাৰ্ব্বল, পুরাতন ঘা, শয্যাক্ষত, রক্তস্রাবী অর্বুদ ইত্যাদি রোগে ল্যাকেসিস প্রায়ই উপযোগী। এইসব ক্ষেত্রে বা চর্মের উপর প্রকাশিত অন্যান্য রোগে এর ঘোর নীলবর্ণ থাকা চাই, অন্যথায় এই ঔষধে কোন উপকার হবে না বা উপকার আশা করা বৃথা। বয়সের বা ধাতু প্রকৃতি বলতে গেলে, এটি সকল বয়স এবং সকল ধাতুর ক্ষেত্রেই উপযোগী। কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ইইহা মোটা অপেক্ষা রোগা লোকের ক্ষেত্রে বেশী উপযোগী।

এখন আমরা এই পুরাতন ও বিশ্বস্ত বন্ধুকে কিছু সময়ের জন্য বিদায় জানাই, এবং যারা এর সঙ্গে পরিচিত নন, তাদের এর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই।

Lach : Lachesis Mutus
Left sided. Haemorrhagic. Hot flushes. Warm blooded. Better free secretions.Worse sleep after. Loquacity, sharp tongued.


COMMON NAME:

Surukuku snake poison-trituration. Bushmaster snake.

The most commonly used snake remedy.


FAMILY:

Ophidia.


PHYSIOLOGICAL ACTION:

– Brain-Congestion, coma, sensory nerve life destroyed.

– Cord-Spasms, convulsions, sudden prostration.

– Vagii-Spasms of throat, emesis.

– Blood-Rapid decomposition.

– Haemorrhage.

– Asthenic fever.

-Circulation-Vasomotor paralysis.

-Asthenia.

-Paralysis of the heart.

– Skin-Ecchymosis, gangrene, haemorrhages, jaundice.

– Glands-Congestion, fatty degeneration.

– Female-Ovarian atony, scanty delayed menses.


A/F:

-Long lasting grief, sorrow, fright, jealousy, vexation, disappointed love

-Suppression with quinine, climacteric

-Bad effect of poison wounds

-Suppressed discharges


MODALITIES:

< Sleep

< Morning

< Heat of summer and sun

< Warm room /drinks

< Swallowing, empty, liquids

< Retarded discharges

< Start and close of menses

< Climacteric

< Alcohol

< Cloudy weather

> Open air

> Free secretions

> Cold drink

> Hard pressure

> Bathing part


MIND:

-Mental symptoms < after sleep.

-PASSIONATE, expressive, outgoing.

-INTENSE. Creative, vital, lively. Constant overflowing ideas.

-Clairvoyance.

-LOQUACITY, which < if sexual desire is suppressed. Jumps from one subject to another. Communicative, expansive. SHARP TONGUED and WITTY. Aggressive. Critical. Sarcasm.

-Mocks, makes odd notions, crawls on the floor, hides, spits, laughs or is angry during spasms. Talking, singing, and whistling constantly.

-Attached to material values. Very possessive to things and persons. Envy. JEALOUSY (Hyos, Calc-s). Feels full of poison; malice. Revengeful.

-SUSPICIOUS. Fear of being poisoned.

-Dictatorial. Selfish. Don’t want to be restricted. Intolerance to authority. Delusion is under superhuman control. Thinks she is pursued, hated and despised.

-Delusion of death people, talking with the death; of his own funeral.

-Anxiety and depression in the morning. Great disposition to feel sad.

Indolence, apathy and extraordinary weakness of memory with loss of every mental faculty.

-RELIGIOUS affections.

-Feelings of guilt. Delusion has committed a crime.

-Psychosis. Manic-depression. Paranoia (Hyos, Kali-br, Verat).

-Fear of SNAKES (Lac-c), insanity (Calc, Cann-i, Manc, Puls), heart disease, being poisoned.

-Other aspect of Lachesis:

-Has managed to subdue his passion and instinct.

-Upraising with strong sense of ethics or responsibility.

-Become introverted and quiet. Hold themselves back. Moral.

-Feelings of inferiority. Frustration. Critical.

-Less aggressive.

-Loquacious about their special interests or after drinking alcohol.

-Hysterical reactions over small things.

-Anxiety about health, especially. heart, cancer, stroke (Aster, Ferr).

-Phobias.


GUIDING INDICATIONS:

-Suited to emaciated persons especially women, during and after climacteric with a choleric temperament, freckles and red, lain, mottled, livid skin, and who are of more melancholic temperament with dark eyes and low spirits.

-LEFT SIDED REMEDY. Complaints from left to right side. < LYING ON LEFT SIDE.

-WARMBLOODED < HEAT > Open air.

-< During or after SLEEP, sleeps into aggravation.

-> DISCHARGES < before menses, > onset < SUPPRESSED DISCHARGES.

-Everything that blocks circulation (collars, tight clothes, etc.).

-< Suppressed sexual desire.

-< Slight touch

-Flushes of heat, from below upwards.

-Desire:FARINACEOUS, oysters, ALCOHOL.

-Haemorrhagic tendency from any orifice, blood dark black, decomposed, thin, offensive.

-Trembling of extremities, of tongue when protruded, internal trembling.

-Paralytic conditions with heaviness and stiffness of parts-both body and mind worn out with relaxation of muscular force. Extreme prostration from any disease all out of proportion to the condition.

-Excessive painfulness of all complaints.

-Suffocation from the least thing coming near the mouth or nose, interferes with breathing. Desires fanning, but slowly and from a distance.

-Sensation of a ball rolling in the internal organs, ascending upward of complaints.

-Periodicity is strongly marked especially in the intermittent fevers every 14 days.

-Cannot look at the sun, or the heat of sun

-Head-Headaches of alcoholics, migrainous, pulsating, hammering headaches, bursting sensation with flushes of heat especially on vertex. Ebullition of blood to the head < before menses < climacteric > during flow.

-Throat-Tonsillitis and diphtheria beginning on left side and going to the right, with much soreness, dryness and constriction in the throat with dark blue purplish appearance of throat with a sense of lump and great sensitivity to touch, liquids more painful than solids on swallowing. With much prostration < sleep, < hot drinks, > cold drinks, < touch. Pain radiates to the ear.

-Chest-Useful in last stages of pneumonia, abscess of the lungs. With pin in the left side of the chest going upwards. Swelling of axillary glands.

-Respiration-Suffocative, constrictive feeling; must take a deep breath. Cough dry, suffocative; tickling; with much sensitiveness. Breathing almost stops on falling asleep. Respiration difficult > bending forwards.

-Heart-Violent palpitation with sense of oppression, must sit up, restless and trembling unable to lie on the left side. Cardiac neurosis or cardiac asthenia. Blueness of body with collapsed condition. Wants to be fanned slowly from a distance.

-Female-Climateric complaints. Palpitations, flushes of heat. Women who have never been well since menopause. Menses too short, too feeble, black, lumpy. Pains > at the onset of flow. Left ovary swollen, painful. Vicarious menstruation. Nosebleed instead of menses. Leucorrhoea copious, smarting, staining the linen greenish. Lochia bluish. Mammae inflamed. Nymphomania.

-Fevers-Indicated in the later stages (2nd / 3rd week) of Typhoid kinds of fevers with stupor or muttering delirium, sunken face, fallen lower jaw, trembling dry black tongue, which catches between the teeth when protruding, cold bloody perspiration with haemorrhage from bowels, exhaustion and trembling of whole body. Chilliness begins in the back, feet are icy cold, with a sense of oppression of chest. Periodic, every spring, alternate day. Heat on vertex, in flushes < sleep during and after. Burning of palms and soles.

-Skin-Hot; Sticky, perspiration with garlicky odour, stains yellow. Boils, carbuncles, malignant ulcers with bluish, purplish surroundings. Bedsores. Pyaemia. Senile erysipelas. Wens. Cellutitis with mottled appearance of skin. Small wounds bleed much. Gangrenous tendency to subcutaneous decomposition.


KEYNOTES:

1. Great loquacity, mirth, jesting, prophetic perceptions, talking singing and whistling constantly.

2. Unwarranted jealously and suspiciousness, malice, hides, spits, mocks, revengeful, intolerance to authority.

3. All complaints mental and physical are < after sleep and better with onset of menstrual flow.

4. Great sensitiveness to touch especially of throat and abdomen < even touch of clothes or tight collars.

5. Sense of constriction everywhere, suffocative feeling, must be fanned but slowly and from a distance.

6. Epilepsy only during sleep.

7. In throat complaints, empty swallowing of liquids more painful than solids.


NUCLEUS OF REMEDY:

– Left sided complaints of women at climateric who are jealous, suspicious, malicious and highly loquacious.

– < after sleep (mental and physical) > during menstrual flow / free discharges / secretions.

– General sensitivity to touch.

– Great prostration & trembling.

– Blueness of skin / mucous membranes, late stages of affections with degenerations and offensiveness.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Left sided complaints.

2. General < from warmth, desires cold drinks especially with throat complaints.

3. General < from sleep.

4. Tongue trembling and difficult to protrude, catches onto the teeth.

5. Dreams of snakes or of her own death and funeral, etc.

6. Bluish, purplish appearance of affected parts.

7. Constriction sensation especially of throat.

8. Cannot bear even slight touch of the affected parts.

9. Tendency to ulceration, destruction and gangrene.


CLINICAL:

-Circulation. High blood pressure. Strokes. Dark haemorrhages.

-Hormonal disturbances. Menopause. Pregnancy.

-Faintness during climacteric.

-LACHESIS, PHOS & SILICEA are very dangerous remedies if there is pretubercular tendency-Dr. Elizabeth Hubbard.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Complementary : Crot-c, Hep, Lyc, Nit-ac, Salam.

Follows Well : , Acon, Ars, Bell, Brom, Bry, Calc, Carb-v, Cham, Cinch, Hep, Hyos, Kali-bi, Lac-c, Lyc, Merc, Nit-ac, Nux-v, Olnd, Phos, Puls, Rhus-t, Sep, Staph, Stram, Sulph, Tarent, Verat.

Inimical : Acet-ac, Am-c, Carb-ac, Dulc, Nit-ac, Psor.

Compare : Agar, Alum, Am-c, Amph, Anac, Anthr, Ant-t, Apis, Arg-m, Arn, Ars, Asaf, Bapt, Bell, Both-l, Bry, Calc-p, Camph, Carb-ac, Carb-v, Caul, Caust, Chin-s, Cic, Cimic, Cinch, Cocc, Colch, Con, Crot-h, Dig, Dulc, Elaps, Euph, Gels, Glon, Graph, Grind, Hell, Helo, Hep, Hydr-ac, Hyos, Ign, Iris-t, Kali-bi, Kali-c, Kreos, Lac-ac, Lac-c, Laur, Led, Lepi, Lyc, Lyss, Meph, Merc, Mez, Mosch, Mur-ac, Murx, Naja, Nat-c, Nat-m, Nit-ac, Nux-m, Nux-v, Op, Pall, Par, Ph-ac, Phos, Phyt, Plat, Plb, Puls, Rhus-t, Sabad, Sel, Sil, Spig, Staph, Stram, Sul-ac, Sulph, Tarent, Ter, Ther, Thuj, Ust, Verat, Vib.

Similar : Agar, Alum, Anac, Apis, Arg-m, Arn, Asaf, Bell, Both-l, Bry, Calc, Camph, Carb-v, Caust, Cic, Cinch, Cocc, Colch, Crot-h, Dig, Elaps, Gels, Glon, Graph, Hell, Hydr-ac, Hyos, Ign, Kali-bi, Kali-c, Kreos, Lac-ac, Lac-c, Laur, Led, Lyc, Meph, Merc, Mez, Mosch, Mur-ac, Murx, Naja, Nat-c, Nat-m, Nit-ac, Nux-v, Op, Pall, Phyt, Plat, Plb, Puls, Rhus-t, Sil, Stram, Sul-ac, Sulph, Tarent, Ter, Ther, Thuj, Verat.

Antidoted By : Alum, Ars, Bell, Carb-v, Cham, Cocc, Coff, Hep, Led, Merc, Nit-ac, Nux-v, Op, Ph-ac.

It Antidotes : Bufo, Crot-h, Rhus-t.

Duration Of Action : 30-40 Days.

✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *