মেডোরিনাম MEDORRHINUM [Med]

হাঁপানিতে নিশ্বাস গ্রহন করা সহজ কিন্তু পরিত্যাগ করা কষ্টকর, উপুর হয়ে শয়ন করলে উপশম, হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বালিশে মাথা গুঁজে শুয়ে থাকে।
ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ার আগে মূত্রনালীতে উপদাহ হয়ে বার বার প্রস্রাবের বেগ হয় ও কখন কখন মূত্রনালীতে জ্বালা অনুভূত হয়।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল, এক লাইন পাঠ করে পরক্ষনে তা ভুলে যায়, নিকট আত্বীয় স্বজনের নাম ভুলে যায়, সময় ধীরে ধীরে যাচ্ছে এমনটি মনে হয়।
খাওয়ার পরই আবার রাক্ষুসে ক্ষুধা, মদ, লবণ এবং মিষ্ট খেতে ইচ্ছা, এ সকল দ্রব্য খাওয়া সত্ত্বেও স্পৃহার নিবৃত্তি নাই।
মেরুদন্ডের বরাবর স্পর্শকাতরতা, গা এত কাঁপে যে বিছানায় থা্কতে কষ্ট।
হাতে পায়ে অত্যন্ত জ্বালাসহ পায়ের অস্থিরতা, বাতাস লাগালে ভাল লাগে।
শিশু সর্বদা নিজের লিঙ্গ ঘাঁটে।

উপযোগিতা — গণোরিয়া চাপা পড়ে বা কুচিকিৎসিত হবার কুফলে ধাতুগত রোগ যখন সঠিকভাবে নির্বাচিত ওষুধে উপশম দেয় না বা স্থায়ীভাবে সারে না তখন উপযোগী ।

যারা গিটবাত, বাতব্যাধি, স্নায়ুশূল ও মেরুদন্ডের স্নায়ুর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর অসুখে ভোগে, কোন যন্ত্রে ক্ষয় হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এমন রোগগুলো যেগুলি সাইকোসিস দোষ হতে সৃষ্টি হয় তাদের রোগে ব্যবহার্য ।

যে সব মহিলাদের বহুদিনের ডিম্বকোষ প্রদাহ, ফ্যালোপিয়ান নলের প্রদাহ (Salpingitis), পেলভিসের টিস্যুর প্রদাহ, জরায়ুস্থানে ফাইব্রাস টিস্যু বা সেলুলার টিস্যুতে ছোট টিউমার ও জরায়ু ও ডিম্বকোষের অন্যান্য ক্ষতিকর বৃদ্ধি হয়ে রোগ হলেও ঐগুলো যদি মারাত্মক আকার নেয়— রোগটির মূলে সাইকোসিস দোষ থাক বা নাই থাক সেক্ষেত্রেও এই ওষুধ উপযোগী।

শক্ত টিউমার, ক্যান্সার বা এমন টিউমার যাতে ক্যান্সার হতে পারে বহু। দিনের বা অল্পদিনের ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, যদি মেডো সদৃশ লক্ষণ থাকে ও সাইকোসিস দোষের ইতিহাস থাকে তবে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সোরিনাম যেমনি চর্ম ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর গভীর প্রকৃতির রোগের সাথে সম্বন্ধযুক্ত তেমনি কঠিন প্রকৃতির সাইকোসিস দোষযুক্ত মেরুদন্ডে ও অনুভূতিকারক স্নায়ুমন্ডলীর বহুদিনের প্রাচীন রোগে মেডোরিনাম সম্পর্কযুক্ত।

শিশুরোগী — ফ্যাকাসে, রিকেটগ্রস্ত, বেঁটে, দেহের বাড় বন্ধ থাকে (ব্যারাকা) ও মানসিকভাবে জড়তাগ্রস্ত ও দুর্বল—এমন শিশুদের পক্ষে উপযোগী। সারা দেহে লসিকা গ্রন্থিগুলো বড় হয়ে যায়— সারা দেহে প্রচন্ড তাপ ও টাটানি ব্যথা ।

ক্ষয়কারী দুর্বলতা, ক্লান্তি, জীবনীশক্তির দারুণ অবসন্নতা ।

ব্যথাবেদনা – সন্ধিবাত হয়ে, বাত ব্যাধি হয়ে, গণোরিয়া চাপা পড়ে (ড্যাফনি, ভায়োলা—ওডো, ক্লিমে), টেনে রাখা মত যেন সারা দেহ চেপে আছে (ক্যাকটাস) সারা দেহে টাটানি ব্যথা যেন থেৎলে গেছে (আর্নিকা, ইউপেটো) ।

রোগী সারা দেহে কম্পন অনুভব করে । অত্যন্ত নার্ভাস হয়ে পড়ে ও অত্যন্ত দুর্বলতা বোধ করে।

হিমাঙ্গ অবস্থা (হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়) সারাক্ষণ পাখার বাতাস চায় (কার্বভে), খোলা বাতাস চায়, চামড়া ঠান্ডা তবুও গায়ের ঢাকা খুলে ফেলে (ক্যাফর, সিকেল); দেহ ঠান্ডা, ঠান্ডা ঘামে দেহ ভিজে যায় (ভিরেট্রাম)।

মন – স্মৃতিশক্তি দুর্বল, নাম, শব্দ বা নামের, দ্রব্যের প্রথম অক্ষরটি মনে করতে পারে না, অত্যন্ত অন্তরঙ্গ বন্ধুর নামও জিজ্ঞাসা করতে হয়, নিজের নামটিও ভুলে যায় এমনই দুর্বল তার স্মৃতিশক্তি ।

ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারে না। অতি পরিচিত নামও কিভাবে উচ্চারণ করতে হবে ভেবে অবাক হয়ে যায় ।

বারে বারে কথার খেই হারিয়ে ফেলে। নিজের কষ্ট বলতেও ভীষণ অসুবিধা বোধ হয়। যেহেতু খেই হারিয়ে ফেলে সেইজন্য বারে বারে জিজ্ঞাসা করতে হয়। না কেঁদে কিছু বলতে পারে না।

মৃত্যু সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে, সব সময় আগাম চিন্তা করে। কোন কিছু ঘটনা ঘটবার আগেই সূক্ষ্মভাবে বুঝতে পারে সাধারণতঃ তা নির্ভুল হয় ।

একটুতেই রেগে যায়—দিনের বেলায় মেজাজ খিটখিটে, রাতে আমোদ আহাদে পরিপূর্ণ ।

অত্যন্ত অধৈৰ্য্য, খিটখিটে।

উৎকণ্ঠা, স্নায়বিক অত্যন্ত অনুভূতিশীল– সামান্য শব্দে চমকে উঠে।

মনে করে সময় খুব আস্তে আস্তে কাটছে (এলুমি, আর্জ-না, ক্যানা-ই) ।

খুব তাড়াহুড়ো করে— যখন কিছু করে এত তাড়াহুড়ো করে যে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বহুরোগ লক্ষণ, যখন সে সব নিয়ে চিন্তা করে তখন বেড়ে যায় (ব্যথা বেদনা চিন্তা করলেই বেড়ে যায় = অক্সা-এসি) ।

মাথা – মস্তিষ্কে অত্যন্ত জ্বালাযুক্ত বেদনা, মাথার পেছনদিকেই বেশী ও ঐ বেদনা সমগ্র মেরুদন্ডে বিস্তৃত হয় ।

মাথা ভার মনে হয় যেন পেছন দিকে টেনে আছে এমন মনে হয়। মাথা যেন শক্ত করে এঁটে আছে, যেন ছোট হয়ে গেছে- ঐ ভাব পুরো মেরুদন্ডে বিস্তৃত হয়। গাড়ীতে ঝাকানি লেগে মাথাযন্ত্রণা ও উদরাময় দেখা দেয়।

গলা গলার হাড়ে অত্যন্ত কষ্টকর টাটানি ব্যথা, সাথে খুব ঠান্ডা লেগেছে এই অনুভূতি হয়, গলায় যেন ঘা হয়েছে, গলা ফোলে, শক্ত বা তরল কিছু গেলা একেবারে অসম্ভব (মার্ক) এই লক্ষণে ব্যবহার্য ।

গলার পেছন হতে আসা ঘন, ধূসর রঙের বা রক্তমেশানো শ্লেষ্মায় গলা ভরে থাকে (হাইড্রা)। ক্ষুধা-খাবার পরই আবার রাক্ষুসে ক্ষুধা পায় (সিনা, লাইকো, সোরিন) বারে বারে জলতৃষ্ণা পায়—স্বপ্নে জলপান করছে দেখে।

অতৃপ্ত ইচ্ছা — মদ খাওয়ার, যাতে কিনা রোগীর আগে নিজেরই ঘৃণ্য হতো (আসারাম)। নুন খাওয়ার (ক্যালকে, নেট-মি), মিষ্টি খাওয়ার (সালফ), বিয়ার, বরফ, টকদ্রব্য, কমলালেবু, সবুজ ফল খাওয়ার অদম্য স্পৃহা হয়।

অন্ত্র – মল-চটচটে, কাদার মত মল বার হতে চায় না। রেকটাম বার হবে এই ভয়ে কোথ দিতে পারে না। (এলুমি)।

ছোট ছোট গুটলিতে মল বার হয় ঐ সাথে মলদ্বার যেন সেঁটে আছে ও অন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা থাকে কেবলমাত্র পেছন দিকে অনেকটা হেলে থাকলে মলত্যাগ হয়, মলদ্বারে অত্যন্ত ব্যথা—এত ব্যথা যে চোখে জল এসে যায় ঐ সাথে মলদ্বার পেশীতে যেন দলামত কিছু আটকে আছে, এই অনুভূতি থাকে ।

রেক্টামে তীব্র ছুঁচ ফোটানো যন্ত্রণা। মলদ্বার হতে ভেজা ভেজা রসের মত ঝরতে থাকে তাতে মাছের আঁশটে গন্ধ (কষ্টি, হিপার)।

মূত্রযন্ত্র-   মূত্রগ্রন্থিতে (কিডনী) ভীষণ ব্যথা (পিঠে ব্যথা হয়) ঐ ব্যথা প্রচুর প্রস্রাব হলে কমে (লাইকো)।

মূত্রগ্রন্থিতে শূলবেদনা, মূত্রনালীতে তীব্র যন্ত্রণা মনে হয় যেন মূত্রপাথরী বার হচ্ছে (বার্বেরিস, লাইকো, অসিমাম-ক্যান), ঐ সময় বরফ খেতে চায় ।

রাতে শয্যামূত্র — প্রতিদিন রাতে বিছানায় ঘোরবর্ণ প্রচুর প্রস্রাব করে তাতে এ্যামোনিয়ার মত ঝাঁঝালো গন্ধ, বেশী পরিশ্রমে বা বেশী খেলাধুলায় ঐ বেড়ে যায়। অত্যধিক ঠান্ডা বা গরমে বাড়ে। যখন উত্তম রূপে নির্বাচিত ওষুধ কাজ করে না ও সাইকোসিস দোষের ইতিহাস থাকলেও ওষুধ প্রয়োগে উপকার হয়। প্রস্রাবের সময় মুত্রথলী ও অন্ত্রে যন্ত্রণাদায়ক কোথানি হয় ।

জননেন্দ্রিয় – ঋতুস্রাব-পরিমাণে বেশী, অত্যন্ত কালচে ঘন, চাপ চাপ, কাপড়ে দাগ লাগে ধুয়ে ওঠানো কষ্টকর (ম্যাগ-ফা)।

অতিরজ — রজোনিবৃত্তির সময় কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিমাণে বেশী হতে থাকে, কালচে, ঘন, চাপ বাঁধা, দুর্গন্ধ থাকে। দমকে বার হয়—নড়াচড়া করলে হতে থাকে ঐ সাথে জরায়ুর মারাত্মক রোগে ভোগে ।

তীব্র ঋতু বেদনা — ব্যথায় রোগিনী হাঁটু দুটো উচু করে রাখে ও ভয়ানক প্রসব বেদনার মত সবকিছু বার হয়ে যাবে—এই রকম ব্যথা হয়, প্রসব বেদনায় যেমনটি হয় ঐ রকম ব্যথায় পা দুটো কিছুতে ঠেকিয়ে চেপে রাখতে বাধ্য হয়।

যোনি ওষ্ঠে ও যোনিপথে ভীষণ চুলকানি— ঐ বিষয়ে চিন্তা করলে চুলকানি বেড়ে যায় ।

স্তন ও স্তনের বোঁটাদুটোয় টাটানি ও ব্যথা ও ছোয়া লাগান যায় না। স্তনদুটো বিশেষতঃ স্তনের বোটাদুটো ছোঁয়া লাগলে যেন বরফ অথচ দেহের অন্যান্য অংশ গরম (ঋতুর সময় এই লক্ষণ দেখা যায়) । শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া-হাঁপানি রোগে (এপিগুটিস) এপিগ্নটিস, উপজিব—জিবের ঠিক পেছনে পাতলা মত একটা কার্টিলেজ বা নরম হাড়ের ঢাকনা থাকে কিছু গিলতে গেলে ঐটি শ্বাসনালীতে ঢাকনার মত পড়ে শ্বাসনালীর মুখ বন্ধ করে দেয় না হলে খাদ্য শ্বাসনালীতে চলে যাবে) এর দুর্বলতায় বা আক্ষেপ হয়ে গলা বসে যায়। শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাস নিতে পারে না—ঐ অবস্থা উপুড় হয়ে শুলে বা জিব বার করে রাখলে উপশম হয়।

শ্বাসনালীতে টাটানি ব্যথা যেন ঘা হয়েছে ।

শ্বাসকষ্ট ও সঙ্কোচন অনুভূতি—শ্বাস সহজেই নিতে পারে কিন্তু সহজে শ্বাস ছাড়তে পারে না (স্যাম্বু)।

কাশি — শুকনো, অনবরত কাশতে থাকে, ভয়ানক যন্ত্রণাদায়ক কাশি যেন শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলো যেন শ্বাসনালী থেকে ছিঁড়ে আসছে। ঘন ঘন কাশি, যেন পিপের মধ্যে থেকে শব্দ হচ্ছে। কাশি রাতে বাড়ে মিষ্টি খেলে, শুলে বাড়ে, উপুর হয়ে পেটে চাপে দিয়ে শুলে উপশম হয় ।

গয়ের এলবুমেন এর মত সাদা, ফেনা থাকে, ছোট ছোট সবজে তেঁ বলের মত। চটচটে আঠালো-কাশি দিয়ে তুলে ফেলা কষ্টকর।

ক্ষয়রোগের প্রথম অবস্থা— ফুসফুসের মধ্যে ভাগে তীব্র ব্যথা—এসব লক্ষণে প্রযোজ্য ।

পিঠ ও হাত পায়ের লক্ষণ — কাঁধের দুই হাড়ের (স্ক্যাপুলা) মাঝে মাঝে যন্ত্রণা—সমস্ত মেরুদন্ডে স্পর্শকাতরতা এত বেশী যে ছোয়া লাগান যায় না (চিনি-সা)।

ঘাড়ের শুরু থেকে নীচে মেরুদন্ড পর্যন্ত অত্যন্ত জ্বালাযুক্ত উত্তাপ ঐসাথে আড়ষ্টভাবে যেন ছোট হয়ে গেছে এই অনুভূতি। দেহ টান টান করতে গেলে ঐ ভাব আরও বেড়ে যায় ।

কাঁধের ওপর ও হাতে বাতরোগ যন্ত্রণা হাতের আঙুল অবধি বেড়ে যায়— নড়াচড়ায় উপশম হয় (ডান দিকে স্যাঙ্গুইনে, বা দিকে ফেরাম)। মেরুদন্ডের (কোমরের দিকের মেরুদন্ডের হাড়ে) যন্ত্রণা ও যন্ত্রণায় ছোঁয়া লাগান যায় না ।

নিতম্বের পেছনে, ককসিক্স-এ কোমরের পেছন দিকের চারধারে যন্ত্রণা ঐ যন্ত্রণা নিচে নেমে আসে ।

কোমর হতে হাঁটু অবধি বাতের যন্ত্রণা ঐ যন্ত্রণা শুধু হাঁটতে গেলে হয়। পা যেন সিসার মত ভারী হাটতে দারুণ কষ্ট–পা দুটো এত ভারী যে পা চলে না।

পায়ের নীচের দিকে কনকনে ব্যথা সারারাত ধরে হয়—ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অত্যন্ত অস্থিরতা পা দুটো ও পায়ের পাতা ক্রমাগত নাড়াতে থাকে (জিঙ্কাম)।

বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টির সময় হাত পা দু’টোতে অসম্ভব জ্বালা ।

পা দুটোতে কামড়ানি ব্যথা, বিছানায় পা দুটো স্থির রাখতে পারে না— অসংযমী জীবন-যাপনে, বিশ্রামের সময় ও ঘুমাতে চেষ্টা করলে ঐ ব্যথা বেড়ে যায় ।

হাত ও পায়ের পাতা। পুরো হাত বা হাতের সামনের অংশে ঠান্ডা হয়ে থাকে ।

হ্যামস্ট্রিং মাশলে ও পায়ের গোড়ালীতে টেনে ধরামত, যেন ছোট ছোট হয়ে গেছে এই অনুভূতি। পায়ের ডিম ও পায়ের তলায় খালধরা মত হয় (কুপ্রাম)।

হাঁটতে গেলে সহজেই গোড়ালী মচকে যায় (কার্ব-এনি, লিডাম)। হাতে ও পায়ের তলায় জ্বালা ঐ ঢেকে রাখতে চায় অথচ তাতে পাখার বাতাস লাগাতে চায় (ল্যাকে, সালফ) ।

হাত পায়ের স্নায়ুতন্ত্রের শক্তি যেন প্রায় নিঃশেষিত-সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

দেহের হাড়ের সব সন্ধিগুলোতে যন্ত্রণাদায়ক আড়ষ্টতা। হাতের আঙুলের গাটগুলোর বিকৃতি, গাঁটগুলো বড় হয়ে যায় ফোলাভাব, পায়ের গোড়ালী ফোলে, ব্যথা হয়, আড়ষ্ট হয়ে থাকে—পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতায় এত ব্যথা যে চাপ দেওয়া যায় না বা ছোয়া লাগান যায় না—সমস্ত গাঁটগুলো স্পঞ্জের মত ফুলে যায়।

সম্বন্ধ শুকনো কাশিতে স্পঞ্জিয়ার সাথে, কোলান্স বা হিমাঙ্গ অবস্থায় ক্যাম্ফর, সিকেল, ট্যাবেকাম, ভিরেট্রাম এর সাথে, হাটাচলায় অসামর্থ্য এ লক্ষণে পিক-এসি, জেলস এর সাথে—ভোরে উদরাময়—এই লক্ষণে এলো, সালফের সাথে তুলনীয়।

সালফারের পায়ে জ্বালা ও জিঙ্কাম এর অস্থিরতা ও হাত পায়ের কম্পন এই দুটো লক্ষণই মেডোরিনামে একসাথে দেখা যায় ।

বৃদ্ধি — রোগ সম্বন্ধে চিন্তা করলে (হেলোনি, অক্সা-এসি), তাপে, গায়ে ঢাকা দিলে, শরীরে টানটান করার চেষ্টায়, বজ্রবিদ্যুতে, সামান্য নাড়াচড়ায়, মিষ্টি খেলে, সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (সিফিলিনাম এর বিপরীত)।

উপশম — সমুদ্রতীরে (নেট-মি এর বিপরীত) উপুড় হয়ে পেটে চাপ দিয়ে শুলে, ভেজা আবহাওয়ায় (কষ্টি, নাক্স-ভ) ।

কোলাপ্স (collapse) — হিমাঙ্গ অবস্থা ল্যাটিন collapsus শব্দটি হতে উৎপত্তি যা দেহের সব যন্ত্রের একই সাথে একই সময়ে বিপর্যয় অবস্থা বোঝায় (A) দৈহিক বা স্নায়বিক অবসন্নতাকে বোঝায় আবার (B) দেহের এমন যন্ত্র যার ভেতরটা ফাপা থাকে ঐসব যন্ত্রে বা শিরা-উপশিরায় ঐরূপ বিপর্যয় হতে পারে যেমন ফুসফুসে বাইরে বা ভেতরে থেকে বায়ুর চাপের পরিবর্তন হয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা লোপ পায় হিমাঙ্গ অবস্থা হতে পারে। হাত পা, দেহ ঠান্ডা বরফের মত, কপালে ঠান্ডা ঘাম মুখ, গাল, ঠোঁট সবই নীলচে কাল (cyanosis) এই সব লক্ষণ থাকে; চেতনা লোপ পায় যেন মৃতের মত দেখায়।

এটি একটি শক্তিশালীও গভীর ক্রিয়াশীল ঔষধ বিশেষ, প্রায়ই নানা প্রকারের পুরাতন উপসর্গে, বিশেষতঃ যে গুলি গণোরিয়া রোগ চাপা দেবার কারণে দেখা দিয়েছে, সেই ক্ষেত্রে নির্দেশিত হয়। স্ত্রীলোকেদের বস্তিকোটর সম্বন্ধীয় পুরাতন উপসর্গ সমূহ। পুরাতন বাতরোগ। স্নায়ুতন্ত্রের প্রচন্ড গোলযোগ ও উত্তেজনা। বেদনা অসহ্য, টেনে ধরার ন্যায়; স্নায়ু সমূহের কম্পন ও ঝনঝন্ করে। শিশুগুলি খর্বকার হয় ও বাড়ে না। শিশুদের পুরাতন সর্দি জাতীয় উপসর্গসমূহ। নাক ময়লা পূর্ণ, টনসিলদ্বয়ের বিস্তৃদ্ধি, নাসারন্ধ্র থেকে গাঢ়, হলুদবর্ণের শ্লেষ্মা নির্গত হয় ; মুখ দিয়ে শ্বাসকার্য চালাবার ফলে ঠোঁট দুটি পুরু হয়ে থাকে। হিমাঙ্গ অবস্থা এবং সারা শরীর কাঁপতে থাকে। যে ক্ষেত্রে সাইকোসিসের ইতিহাস থাকে। গণোরিয়া রোগের স্রাব চাপা পড়লে, এই ঔষধ তা পুনরায় ফিরিয়ে আনে। সকল অনুভূতি সমূহের প্রখরতা। কোষ সমূহের স্ফীতাবস্থা।

মন – স্মৃতি শক্তি দুর্বল। আলাপ-আলোচনার সময় কথার খেই হারিয়ে ফেলে। না কেঁদে কিছুতেই কথা বলতে পারে না। সময় খুব ধীরে যায়। (ক্যানাবিস্ ইন্ডিকা ; আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম)। অত্যন্ত ব্যস্ত, সবকিছু দ্রুত করতে চায়। আরোগ্য সম্পর্কে হতাশ। মনের একাগ্রতা আনা কষ্টসাধ্য। পাগলা হয়ে যাবে এই জাতীয় আশঙ্কা। (ম্যান্সিনেলা)। অনুভূতি শক্তির উন্নতাবস্থা। স্নায়বিক, অস্থির। অন্ধকার সম্পর্কে ভীতি এবং তার (স্ত্রী) পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে এই জাতীয় শঙ্কা। বিষাদ, তৎসহ আত্মহত্যা করার চিন্তা সমূহ।

মাথা – মস্তিষ্কের জ্বালাকর বেদনা; মাথার পিছনের অংশে বেশি হয়। মাথায় ভারবোধ এবং পিছন দিকে টেনে ধরার ন্যায় অনুভূতি। গাড়ীর ঝাঁকুনিতে মাথার বেদনা, ক্লান্তি। অথবা কষ্টকর কাজের পরে মাথার যন্ত্রনা। মাথার তালুতে ভারবোধ ও চাপবোধ। মাথার চুল শুষ্ক এবং কোঁচকাণো। মাথার খুলির চামড়ার চুলকানি ;খুস্কি।

চোখ – মনে হয় যেন সে (স্ত্রী) প্রতি বস্তুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। চোখের তারার কঙ্কনানি। চোখের ভিতরে কাঠি থাকার ন্যায় অনুভূতি। চোখের পাতার উত্তেজনা।

কান — আংশিক বধিরতা, কানের ভিতরে দন্দ কর অনুভূতি। ডানদিকের কানে দ্রুত, টেনে ধরার ন্যায় বেদনা।

নাক – তীব্র চুলকানি। নাকের অগ্রভাগের শীতলতা। নাকের পিছনের অংশ অবরুদ্ধ। নাক ও গলবিলের পুরাতন সর্দি জাতীয় প্রদাহ।

মুখমন্ডল – ফ্যাকাসে, ব্রণ, রক্তাভ ছোপসমূহ। ঋতুকালে ছোট ছোট ফোঁড়া বেরিয়ে থাকে।

মুখগহ্বর – জিহ্বা বাদামি লেপযুক্ত ও পুরু, ফোস্কা যুক্ত; মুখের ভিতরে পচা ক্ষত। ঠোঁট ও গালের ভিতরের অংশে ফোস্কা সমূহ।

পাকস্থলী – মুখের ভিতরে তামাটে আস্বাদও ঢেকুরে সালফিউরেটেড হাইড্রোজেনের গন্ধ। আহারের পরেই আবার প্রচন্ড ক্ষুধা পায়। প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত। মদ জাতীয় বস্তু, লবণাক্ত বস্তু ও মিষ্টদ্রব্য প্রভৃতি, তথা গরম পাণীয় পান করার ইচ্ছা। গর্ভাবস্থায় সাংঘাতিক বমন।

উদর — প্লীহা ও যকৃৎ স্থানে তীব্র বেদনা, পেটের উপর চাপ দিয়ে শুলে যেন আরাম হয়।।

মল — কেবল মাত্র পিছনদিকে অনেকটা হেলে থাকলে তবেই মল ত্যাগ করতে পারে। মলদ্বারের সঙ্কোচন পেশীর পিছনের অংশে বেদনা পূর্ণ পিন্ডের উপস্থিতির অনুভূতি। দূর্গন্ধযুক্ত রস নিঃসরণ। মলদ্বারে তীব্র চুলকানি।

প্রস্রাব – প্রস্রাব করার সময় বেদনা দায়ক কোঁথ। রাত্রিকালে অসাড়ে প্রস্রাব। বৃক্ক শূল। (বাবারিস; অসিমাম্; প্যারেরিয়া)। প্রস্রাবের ধারা খুব ধীরে নির্গত হয়।

স্ত্রীরোগ – তীব্র চুলকানি। ঋতুস্রাব দূর্গন্ধ যুক্ত, প্রচুর, কালো বর্ণের, জমাট বাঁধা ; রক্তের দাগ ধুয়ে তুলে ফেলা বেশ কষ্ট কর, ঋতুকালে বারে বারে প্রস্রাব করে। জরায়ুর প্রবেশ মুখের কাছে অনুভূতি প্রবণ স্থান। প্রদর স্রাব পাতলা, ঝাঁঝালো, হাজাকর, আঁশটে গন্ধযুক্ত। যোনাঙ্গে সাইকোটিক কারণ হেতু আঁচিল সমূহ। ডিম্বাশয়ের বেদনা, বাম দিকে বৃদ্ধি প্রাপ্ত, অথবা বেদনা একদিকে ডিম্বাশয় থেকে অপরদিকের ডিম্বাশ্য পর্যন্ত যায়। বন্ধ্যাত্ব। জরায়ু থেকে রক্তস্রাব। ঋতুকালে তীব্র শূলবেদনা। স্তনদুটি শীতল,টাটানি ব্যথা যুক্ত এবং অনুভূতি প্রবন।

পুরুষের রোগ – রাত্রি কালীন বীর্যপাত, এরপরে প্রচন্ড দুর্বলতা। ধবংজ ভঙ্গ, লালমেহ; সমগ্র প্রস্রাব নলীতে টাটানি ব্যথা। প্রস্রাব নলীর প্রদাহ। প্রস্টেট গ্রন্থির বিবৃদ্ধি তৎসহ বারে বারে প্রস্রাবের বেগ এবং বেদনাপূর্ণ প্রস্রাব।

শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্র সমূহ – শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় প্রচন্ড দম বন্ধ হবার মত অনুভূতি। পড়ার সময় স্বরভঙ্গ। বুকের ভিতর দিয়ে স্তন গ্রন্থি পর্যন্ত বেদনা ও টাটানি ব্যথা। রাত্রে অবিরাম, শুষ্ক কাশি, হাঁপানি, ক্ষয় রোগের শুরুর অবস্থা। কণ্ঠনলীর ভিতরে টাটানি ব্যথার অনুভূতি, শ্বাসকষ্ট, কিছুতেই শ্বাস ছাড়তে পারে না। (স্যাম্বিউকাস)। কাশি; পাকস্থলীর উপর চাপ দিয়ে শুয়ে উপশম বোধ করে।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – পিঠের বেদনা, তৎসহ জ্বালাকর উত্তাপ, পায়ে ভারী বোধ, সারা রাত্রি কন্কন করে; কিছুতেই পাদুটি স্থির রাখতে পারে না। (জিঙ্কাস)। হাঁটার সময় গোড়ালি দুটি সহজেই ঘুরে যায়। হাতে ও পায়ে পাতায় জ্বালা। হাতের অঙ্গুলের সন্ধিগুলির বিবৃদ্ধি ;ফোলা। গেঁটে বাত জনিত কারণে গুটি সমূহ। গোড়ালিতে ও পায়ের গোলাকার উচ্চ অংশের স্পর্শকাতরতা। (থুজা)। পায়ের তলায় টাটানি ব্যথা; অস্থির; হাত মুঠি করলে উপশম।

চামড়া হলুদ বর্ণ যুক্ত। তীব্র এবং অবিরাম চুলকানি; রাত্রে বৃদ্ধি ও চুলকানির কথা চিন্তা করলে বৃদ্ধি। সদ্যজাত শিশুর মলদ্বারের চারিদিকে আগুনের মত বর্ণ যুক্ত উদ্ভেদ সমূহ। তামাটে বর্ণের ছোপ সমূহ। অর্বুদ ও অন্যান্য জাতীয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সমূহ।

জ্বর সর্বদা পাখার বাতাস চায়। শীত পীঠের ভিতর দিয়ে উঠানামা করে; পাগুলি, হাত দুটি ও অগ্রবাহুর শীতলতা। রাত্রিকালীন ঘাম ও ঘুষঘুষে জ্বর।

ঘুম রোগী (স্ত্রী) জল পানের স্বপ্ন দেখে (আর্সেনিক; ফসফরাস)। হাঁটু দুটি বুকের কাছে গুটিয়ে নিয়ে এসে রোগী ঘুমিয়ে থাকে।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি, রোগের কথা যখন চিন্তা করে, সূর্যের আলোক থেকে সূর্যাক্ত পর্যন্ত সময়কাল, উত্তাপে, সমুদ্রোপকূল থেকে দূরবর্তী স্থানে থাকার সময়ে।

উপশম সমূদ্র তীরবর্তী স্থানে, পাকস্থলীর উপর চাপ দিয়ে শুলে, আর্দ্র আবহাওয়ায়, (কষ্টিকাম)।

সম্বন্ধ – তুলনীয় – সালফার; সিফিলিনাম; জিঙ্কাস

শক্তি – কেবল উচ্চতর শক্তিই কার্যকরী হয়। বারবার পুনঃ প্রয়োগ করা ঠিক নয়।

এই ঔষধটির বহুবিধ প্রয়োগের মধ্যে শিশুদিগের পিতামাতার নিকট হইতে প্রাপ্ত রোগলিতে প্রয়োগ অন্যতম। দীর্ঘকালের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাযুক্ত চিকিৎসকগণ শিশুদিগের মধ্যে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি পাইয়া থাকেন। শিশু শীঘ্রই শীর্ণতাপ্রাপ্ত হয় এবং পুঁয়ে-পাওয়া হইয়া পড়ে, অথবা শিশু হাপানিযুক্ত হয়, অথবা সে নাকের ও চক্ষের পাতার দুষ্টপ্রকৃতির সর্দিতে ভুগিতে থাকে, অথবা তাহার মস্তক-ত্বকে ও মুখমন্ডলে দাদ জন্মে, অথবা সে খর্বাকৃতি হইয়া যায় এবং কিছু সময় নষ্ট হইবার পর মনে পড়িয়া যায় যে, তাহার পিতার গণোরিয়ার জন্য চিকিৎসা করা হইয়াছিল, গণোরিয়ার আক্রমণটিও ছিল দুর্দমনীয় এবং সম্ভবতঃ তাহার জননেন্দ্রিয়ের উপর উপমাংস জন্মিয়াছিল। এই ঔষধে শিশুটি আরোগ্য হইবে এবং তাহার সহজারোগ্য আরম্ভ করিয়া দিবে। কয়েক বৎসর যাবৎ বিবাহিত কোন স্ত্রীলোক মাতা হইতে চাহেন। যখন তাহার বিবাহ হইয়াছিল, তখন তিনি স্বাস্থ্যযুক্তই ছিলেন, কিন্তু এখন তাহার ডিম্বকোষে, যন্ত্রণা হয়, ঋতুসংক্রান্ত গোলমাল দেখা দেয়, তাহার সঙ্গমলিপ্সা চলিয়া গিয়াছে এবং ক্রমশঃই তিনি বিবর্ণ ও মোমবর্ণ হইয়া পড়িতেছেন, অধিকন্তু অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্ট ও স্নায়বিক হইয়া পড়িয়াছেন। স্বামীর ইতিহাস হইতে কারণটি পাওয়া যাইবে এবং এই ঔষধে আরোগ্য হইবে। বিবর্ণ, মোমবর্ণ যুবকগণ, তাহারা উত্তেজক দ্রব্য ও তামাকে অতিশয় আকাঙ্ক্ষাযুক্ত, তাহারা বায়ুপ্রবাহে অত্যনুভূতিযুক্ত, পরিশ্রম ও পথহাঁটার পর আড়ষ্ট হইয়া পড়েন, তাহাদের সহজে ঘর্ম হয়, তাহারা অত্যন্ত শীতকাতর, গণোরিয়া ইনজেকশন দ্বারা আরোগ্য হওয়ার পর হইতে কোনদিনই ভাল থাকিতেছেন না;—তাহারা এই ঔষধের রোগী। শরীরের প্রত্যেক অংশে বাতের লক্ষণসকল। কতকগুলি লক্ষণ দিবাভাগে খারাপ হয়। সিফিলিনামের সহিত সচরাচর ইহার যে-তুলনা হয়, তাহা এইরূপ-“মেডোরিনামের বৃদ্ধি দিনে, ‘সিফিলিনামে’র বৃদ্ধি রাত্রে।” কিন্তু ইহাকে অবধারিত সত্য বলিয়া মানা চলে না। একথা সত্য যে, ‘সিফিলিনাম’-জ্ঞাপক অনেকপ্রকার যন্ত্রণা রাত্রিকালে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। ইহাও সত্য যে, কতকগুলি সাইকোসিস দোষদুষ্ট এবং মেডোরিণামজ্ঞাপক লক্ষণ দিবাভাগে বাড়ে। কিন্তু আরও সত্য যে, কতকগুলি সাইকোসিস দোষদৃষ্ট লক্ষণ সারা দিবা রাত্রই প্রবল থাকে। একথাও সত্য যে, মেডোরিনামের মানসিক লক্ষণগুলি রাত্রিকালে অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠে। কিন্তু এই ঔষধটির হ্রাস-বৃদ্ধি সম্বন্ধে অতটা অবধারিত হইলে চলিবে না। ইহার বাতজনিত প্রদাহ সঞ্চালনে বাড়ে, কিন্তু যে-স্থলে স্ফীতি বর্তমান থাকে না, সে স্থলে রোগী রাস টক্সের রোগীর ন্যায় ব্যবহার করে। সে শীতকাতর হয়, কনকনানি ও কষ্টকর বেদনায় ভুগে এবং রাসে’র ন্যায় কেবলমাত্র সঞ্চালনে উপশম পায় । অধিকাংশ সাইকোটিক রোগী ঠান্ডা সহ্য করিতে পারে না, কেহ কেহ উত্তাপেও অনুভূতিযুক্ত হয়। সে ক্ষততাযুক্ত, থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় ব্যথাযুক্ত, খঞ্জতাপ্রাপ্ত, যেন তাহার গভীরভাবে ঠান্ডা লাগিয়াছে, যেন সে জ্বরে শয্যাগত হইয়া পড়িতেছে। সর্বাঙ্গীণ টান-টানভাবের অনুভূতির সহিত বেদনাটি আসে। বাতের দুরারোগ্য রোগী। তাহার মাংসক্ষয় হইতে থাকে। সে সম্মুখদিকে ঝুঁকিয়া হাঁটে, সে অগোছাল হয়, হোঁচট খায়। দেখিলে মনে হয় যে, শীঘ্রই সে যক্ষ্মারোগগ্রস্ত হইয়া পড়িবে। কেহ সঙ্গে না থাকিলেও সে তাহার পোষাক বা একগোছা চুল স্পর্শ হওয়া সম্বন্ধে অত্যন্ত স্নায়বিক অনুভূতিপ্রবণ থাকে।

কম্পন ও থরথর করা, ক্রমেই দুর্বল হইতে থাকে। সর্বাঙ্গে পোকা হাঁটার ন্যায় প্রবল অনুভূতি। সামান্যমাত্র শব্দে চমকাইয়া উঠে। মূৰ্ছাকল্প হইয়া পড়ে, পাখার বাতাস চায়। খোলা বাতাস চায়। শীতল ঘৰ্ম্মে ঠান্ডা ও নাড়ীলোপবিশিষ্ট হইয়া পড়ে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্ফীতি, তৎসহ অত্যন্ত ক্ষততাবোধ এবং সৌত্রিক কোষগুলির শোথ। ঠান্ডা ভিজে আবহাওয়ায় অত্যন্ত অনুভূতিযুক্ত। স্নায়ুশূলের অধীন থাকে। সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর যন্ত্রণা। যন্ত্রণা উত্তাপে উপশমিত হয়। পৃষ্ঠে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে টানিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা। রোগী যন্ত্রণায় অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে। এই ঔষধটি কখনও নিম্নশক্তিতে ব্যবহার করা উচিত নহে।

ঘটনাগুলি, সংখ্যা অথবা লোকের বা জিনিষের নাম ভুলিয়া যায়, যাহা পড়িয়াছে, তাহা ভুলিয়া যায়। লিখিত বানান ও কথার ভুল করে। মনে হয় সময় বড় ধীরে ধীরে কাটিতেছে। সবকিছুতেই তাড়াতাড়ি, এত তাড়াতাড়ি করে যে, হাঁপাইয়া পড়ে। রোগিণী এত তাড়াতাড়ি করেন যে, তাহার মূৰ্ছা যাওয়ার মত হয়। মনের গোলমাল, হতবুদ্ধিভাব, উত্তেজনার ভয়, কথা বলিবার সময় বক্তব্য ভুলিয়া যান। রোগিণী তাঁহার লক্ষণগুলির বর্ণনা আরম্ভ করিতে অত্যন্ত অসুবিধা বোধ করেন, অন্যমনষ্ক হইয়া পড়েন, তাহাকে পুনঃ পুনঃ জিজ্ঞাসা করিতে হয়। মনে করেন, যেন কেহ তাঁহার পশ্চাতে বসিয়াছে, সে যেন ফিসফিস্ করিয়া কিছু বলিতেছে। মনে করেন, আসবাবপত্রের পিছন হইতে কে তাহাকে দেখিতেছে (‘ফস)। সবকিছুই অপ্রকৃত বলিয়া বোধ হয় (এ্যালু’)। উন্মাদের প্রারম্ভিক অবস্থার ন্যায় প্রচন্ড ক্ষিপ্তভাব। কথা বলিতে বলিতে কাঁদেন। সন্ধ্যাকালে আনন্দভাব। মনের পরিবর্তনশীল অবস্থা, একমুহূর্তে বিষন্ন, পর মুহূর্তে আনন্দপূর্ণ। মৃত্যু সম্বন্ধে পূর্বানুভূতি ভয় পাওয়ার ভাব, নিদ্রাভঙ্গে মনে হয়, যেন ভয়ানক কিছু ঘটিয়া গিয়াছে। অন্ধকারের ভয়। আত্মার মুক্তির সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা।

মাথা হেঁট করিলে শিরোঘূর্ণন, শুইলে উপশমিত হয়, সঞ্চালনে বৃদ্ধি। পড়িয়া যাইবার ভয়।

মাথায় সঞ্চরণশীল স্নায়ুশূল; শীতল, ভিজা আবহাওয়ায় বৃদ্ধি। তীব্র বেদনা হঠাৎ আসে, হঠাৎ চলিয়া যায়। মাথার কোন অংশ যন্ত্রণাযুক্ত থাকে না। যন্ত্রণা আলোকে, কাশিলে বাড়ে। মাথার খুব গভীর স্থানে যেন মস্তিষ্কের মধ্যে জ্বালাকর যন্ত্রণা। মস্তকতুকে অত্যন্ত টানটান ভাব। কপালের উপর দিয়া যেন ফিতা বাঁধা আছে, এরূপ অনুভূতি। মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে ও ঘাড়ে যন্ত্রণা, সঞ্চালনে বৃদ্ধি। মস্তক-তৃকে অত্যন্ত চুলকানি। মস্তকত্বকে ইন্দ্রবিদ্ধার ন্যায় উদ্ভেদ, দদ্রু। প্রচুর মরামাস। চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর।

চক্ষুর সম্মুখে আলোকের দপদপানি দেখে। অন্ধকার দেখে, দৃষ্টিপথে কাল কাল অথবা বাদামিবর্ণের দাগ দাগ দেখে। দুষ্টবস্তুগুলি দ্বিত্ব দেখে বা ক্ষুদ্র দেখে। কাল্পনিক বস্তুসকল দেখে। চক্ষু আকৃষ্ট বোধ হয়। পেশীগুলিতে টান টানবোধ। চক্ষু ঘুরাইলে যন্ত্রণা। চক্ষুতে বালিপড়ার ন্যায় অনুভূতি। কাঠি থাকার ন্যায় অনুভূতি। শ্বেতমন্ডলের প্রদাহ, কনীনিকার ক্ষত। অত্যন্ত স্ফীতির সহিত চক্ষুপত্রের প্রদাহ। প্রাতঃকালে চক্ষুর পাতা দুইটি জুড়িয়া যায়। চক্ষুপাতার কিনারাগুলি লালবর্ণ ও হাজাযুক্ত। অক্ষিপুটের পতন। চক্ষুর পাতায় চিড়চিড় করা। চক্ষুপাতার পক্ষগুলি খসিয়া পড়ে। ব্রাইটাখ্য পীড়ার ন্যায় চক্ষুর নীচে স্ফীতি।

শ্রবণশক্তির হ্রাস এবং সম্পূর্ণ বধিরতা। মনে হয়, সে যেন নানারূপ স্বর অথবা লোকজনের কথাবার্তা শুনিতেছে। প্রথমে শ্রবণশক্তি খুব তীক্ষ্ণ থাকে। ইউষ্টেচিয়ান নলের উপর দিয়া কর্ণ পৰ্য্যন্ত বেদনা। কানের মধ্যে সুড়সুড়িবোধ। কানের মধ্যে চুলকানি। কানের মধ্যে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা।

এই ঔষধটি দুরারোগ্য নাসিকার সর্দি এবং নাসিকার পশ্চাদ্ভাগের অবরোধ ও তৎসহ ঘ্রাণশক্তির লোপ আরোগ্য করে। হলদে বা সাদা শ্লেষ্মা। একটি মধ্যবয়স্ক লোককে উচ্চশক্তির মেডোরিনাম দেওয়ায় তাহার দুরারোগ্য নাসিকার সর্দি আরোগ্য হইয়াছিল এবং মূত্রনলীর স্রাব বহু বৎসর যাবৎ লোপ পাইয়াছিল, তাহা পুনরায় দেখা দিয়াছিল এবং উহা পুরাতন লালমেহের ন্যায় চলিতে আরম্ভ করিয়াছিল এবং শেষ পর্যন্ত অন্য চিকিৎসা ব্যতীতই উহাও নিবারিত হইয়াছিল। নাক হইতে রক্তপাত, এবং রক্তাক্ত নাসিকাস্রাব। গৃহীত শ্বাসবায়ুতে নাসিকা অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে। নাকের মধ্যে চুলকানি ও পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি।

সাইকোসিস দোষদুষ্ট রোগীদের মুখমন্ডল সবজেটে হলদে, মোমবর্ণ, ও রুগ্ন থাকে এবং ‘আর্সেনিকের মুখমন্ডলের ন্যায় দেখায়, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আর্সেনিক’ বস্তুতঃ লক্ষণগুলির সহিত সদৃশ হয় না, কিন্তু এই ঔষধের পরিবর্তে ভুলক্রমে আর্সেনিক’ ব্যবহৃত হইতে পারে। চর্ম চকচক করে, এবং সচরাচর জডুলের ন্যায় দাগে আবৃত থাকে এবং মুখের চারদিকে জ্বরঠুটো থাকে। মুখের উপর ইন্দ্রবিদ্ধা। নাসাপক্ষ অথবা ওষ্ঠের উপরে অন্তঃত্বকের অর্বুদ। মুখমন্ডলের বাতজনিত বেদনা ও আড়ষ্টভাব। চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিগুলির স্ফীতি। চিবাইবার সময় দাঁতগুলি সর্বদাই অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে। স্বাদ বদলাইয়া যায় এবং জিহ্বা অপরিষ্কার ও মূলদেশে সাদা লেপে আবৃত থাকে। মুখ জাড়িঘায়ের ন্যায় ক্ষতে পূর্ণ থাকে। মুখের মধ্যে ও জিহ্বার উপর ক্ষত। শ্বাস-প্রশ্বাস দুর্গন্ধ হয়। মুখের মধ্যে ও গলায় দড়ির মত শ্লেষ্মা। মুখ শুষ্ক এবং পুড়িয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূত হয়। গলার সর্দি এবং নাসিকার পশ্চার। হইতে অবিরত ঘন সাদা শ্লেষ্মা টানিতে থাকে।

রাক্ষুসে ক্ষুধা, এমনকি আহারের পরেও ক্ষুধা। অনিবাৰ্য তৃষ্ণা । উত্তেজক পদার্থ, তামাক, মিষ্টান্ন, কাচা ফল, বরফ, টক জিনিষ, কমলালেবু, “এল” মদ্য এবং লবণাক্ত খাদ্য চায়। আহারের পর এবং জলপানে পর বমনেচ্ছা। শ্লেষ্মা ও পিত্তবমন। টক ও তিক্ত বমন। ভীষণ উকি উঠা বমনেচ্ছা ব্যতীত বমন।

পাকস্থলীর মধ্যে কামড়ান, খাইলে বা পান করিলে উপশমিত হয় না। পাকস্থলীর মধ্যে কম্পনবোধ। পাকস্থলীতে নখ দিয়া আঁচড়াইবার মত যন্ত্রণা, হাঁটু দুইটি মাড়িলে বর্ধিত হয়। পাকস্থলীতে নিমগ্নতাবোধ। পাকস্থলীতে উৎকণ্ঠাজনক যন্ত্রণা।

যকৃতে ভয়ানক যন্ত্রণা, যকৃৎ ও প্লীহায় চাপিয়া ধরার ন্যায় যাতনা। ইহা উদরী রোগ আরোগ্য করিয়াছে। উদরে দপদপানির অনুভূতি। কুঁচকি গ্রন্থিগুলির যন্ত্রণা ও স্ফীতি। একজন যুবক বেশ মাংসল ও স্বাস্থ্যযুক্ত ছিল, তাহার গণোরিয়া হইল। তাহাকে ইনজেকশন দ্বারা চিকিৎসা করা হইল। শীঘ্রই তাহার দেহ শুকাইতে লাগিল। তাহার কুঁচকিস্থানে যন্ত্রণা হইতে লাগিল, সেইজন্য সে অবনত হইয়া হাঁটিতে বাধ্য হইল। সে বিবর্ণ ও মোমবর্ণ হইয়া পড়িল, তাহার সর্বাঙ্গ আড়ষ্ট ও খঞ্জবৎ হইয়া গেল এবং সে ঠান্ডায় অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়িল। তাহার সহজেই সর্দি লাগিতে লাগিল এবং ঐ সর্দি কিছুতেই ভালভাবে সারিল না। উচ্চশক্তিতে মেডোরিনাম দেওয়ার, পর তাহার স্রাব ফিরিয়া আসিয়াছিল এবং সে সম্পূর্ণ সুস্থ হইয়াছিল। রেতঃরজ্জুতে যন্ত্রণা।

যে-সকল শিশু পিতামাতার নিকট হইতে সাইকোসিস দোষ প্রাপ্ত হয়, তাহাদের অনেকের পুয়ে-পাওয়া রোগ এই ঔষধে আরোগ্য হইয়াছে। সাইকোসিস দোষদুষ্ট পিতার সন্তানেরা বিশেষভাবে বমন ও উদরাময় এবং শীর্ণতারোগগ্রস্ত হয়। তাহাদের পুরাতন রোগের সুনির্বাচিত ঔষধে ফল হয় না, কিম্বা সুনির্বাচিত ঔষধে উপশম মাত্র হয়। উচ্চশক্তির মেডোরিনাম দেওয়ার পর তাহাদের উন্নতি হয় এবং পরবর্তী ঔষধ ভাল কাজ করে। কোষ্ঠবদ্ধতা। মলত্যাগকালে পৃষ্ঠ পিছন দিকে বক্র করিয়া কোঁথ দিলে মল নির্গত হয়। সরলান্ত্রের ক্রিয়াহীনতা। গোল গোল বলের মত এবং কঠিন পিন্ডের ন্যায় মল। মলদ্বার হইতে রসানি ক্ষরিত হয়, উহা আঁসটে জলের ন্যায় গন্ধযুক্ত।

বাতজনিত খঞ্জতা ও আড়ষ্টতাযুক্ত রোগীর স্বল্প, ঘোরাল বর্ণের, তীব্রগন্ধবিশিষ্ট মূত্র। রোগী ঠান্ডায় অনুভূতিযুক্ত এবং পদতল স্পর্শকাতর। রোগী মোমবর্ণ, তাহার পায়ের পাতার ও পায়ের গাঁটের শোথ থাকে, পদতল এত স্পর্শকাতর থাকে যে, উহার উপর দিয়া হাঁটিতে পারে না, পদতলের চর্ম নীলাভ ও গরম হয়, স্ফীত পা দুইটি এত ক্ষততাযুক্ত হয় যে, সে উহা স্পর্শ করিতে দেয় না এবং চাপ দিলে ঐ স্থানের ফুলা বসিয়া যায় কিনা তাহা পরীক্ষা করিবার মত চাপ সহ্য করিতে পারে না এইরূপ রোগীর এলবুমেনযুক্ত ও স্বচ্ছ ও তলানিযুক্ত মূত্র। যদি গণোরিয়ার ইতিহাস থাকে, তাহা হইলে উপরোক্ত অবস্থায় মেডোরিনাম দ্রুত ক্রিয়া করিবে। মূত্রস্থলী, প্রষ্টেটগ্রন্থি ও মূত্রপিন্ডের প্রদাহ। মূত্রে প্রচুর শ্লেষ্মা। মূত্রপাথুরি শূল। মূত্রপিন্ডের সান্তরবিধানের প্রদাহ। প্রচুর বিবর্ণ মূত্র। রাত্রিকালে ঘন ঘন মূত্রত্যাগ। শয্যায় মূত্র ত্যাগ করিয়া ফেলে। মূত্রপিন্ডের ক্রিয়াহীনতা এবং ক্ষীণ মূত্রধারা। ইহা অতিমাত্রের বহু রোগী আরোগ্য করিয়াছে।

যে-সকল যুবকদের কয়েকবার গণোরিয়া হইয়াছিল এবং বিশেষতঃ যদি তাহাদের ইনজেকশন চিকিৎসা হইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাদের স্বপ্নদোষ ও ধ্বজভঙ্গ। বাতের লক্ষণ ও ক্রমিক স্বাস্থ্যনাশসহ দীর্ঘস্থায়ী লালামেহস্রাব। ইহা গণোরিয়াজনিত বাতের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ঔষধ। ইহা বাতলক্ষণ দূর করে এবং স্রাবটি পুনঃস্থাপিত করে। ইহা অন্ডদ্বয়ের কঠিনতা, শুক্রবহা রঞ্জুর বেদনা আরোগ্য করিয়াছে। কোন ব্যক্তির কয়েক বৎসর পূর্বে গণোরিয়া হইয়াছিল, তারপর তাহার প্রত্যেকবার বায়ুপ্রবাহে উন্মুক্ত থাকিলে বাম শুক্রবহা নলী ও বাম সায়েটিক স্নায়ুতে যন্ত্রণা এবং কটিবাত দেখা দিত, তিনি ১০এম শক্তির মেডোরিনাম দীর্ঘকাল বাদে বাদে দেওয়া হইলে আরোগ্য হইয়াছিলেন।

ডিম্বকোষ-প্রদেশে পুরাতন যন্ত্রণা। বন্ধ্যাত্ব। যন্ত্রণাপূর্ণ ঋতুস্রাব। দূরারোগ্য প্রদাহস্রাব। বৰ্দ্ধিত ডিম্বকোষ। যোনি-ওষ্ঠে এবং যোনিপথে ভীষণ চুলকানি। প্রচুর ঋতুস্রাব। যেন ঋতুস্রাব হইবে ত্রিকাস্থিতে, এরূপ আকর্ষণবৎ যন্ত্রণা। সমস্ত বস্তিগহ্বরে কাটিয়া ফেলার ন্যায় যন্ত্রণা। ঋতুকালে বস্তিদেশে ও নিতম্বে জ্বালা।

শ্বাসক্রিয়া কষ্টকর। সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসরোধভাব এবং হ্রস্ব শ্বাসক্রিয়া। সাইকোসিস দোষদুষ্ট পিতামাতা হইতে জাত শিশুদিগের হাঁপানি (নেট্রাম সালফ’)। কণ্ঠনলীতে কোকো শব্দের সহিত শ্বাসনলীর আক্ষেপ। শ্বাসবায়ু কষ্টে নির্গত হয়, কিন্তু স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করিতে পারে। এই ঔষধ দ্বারা অনেকগুলি হাঁপানি রোগী আরোগ্য হইয়াছে। কণ্ঠনলীর শুষ্কতাজনিত আক্ষেপ এবং নিদ্রিত হইয়া পড়িলে কাশি। বায়ুপথগুলির প্রচুর, চটচটে গয়েরযুক্ত দুর্দম্য সর্দি এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। শ্লেষ্মা তুলিবার মত গভীরভাবে কাশিতে পারে না (কষ্টি’)। উপুড় হইয়া শুইলে কাশি উপশমিত হয়, রাত্রে বর্ধিত হয়। গয়ের হলদে, সাদা বা সবুজ, চটচটে, তুলিয়া ফেলা কষ্টকর হয়। গরম ঘরে কাশির বৃদ্ধি।

যে-সকল রোগীর এই ঔষধ প্রয়োজন হয়, তাহাদের অনেকেই রুগ্ন, পান্ডুবর্ণ থাকে এবং অবনত হইয়া হাঁটে, যেন তাহাদের যক্ষ্মাসম্ভাবনা দেখা দিয়াছে। বুকে ঘড়ঘড় করার সহিত শুষ্ক কাশি। অত্যন্ত উত্তাপ, এমনকি বুকের মধ্যে জ্বালা। বক্ষে অনেকবার যাতনা। ভিজা ঠান্ডা বাতাসে উন্মুক্ত থাকিলে বুকের মধ্যে বাতের ন্যায় তীব্র যাতনা। যে-সকল রোগী গণোরিয়ায় ভুগিয়াছে এবং যাহাদের যক্ষ্মারোগ সদৃশ লক্ষণের জটিলতা দেখা দিয়াছে এবং স্বতন্ত্রীকরণের উপযুক্ত লক্ষণের অভাবে যাহাদের পক্ষে ঔষধ প্রয়োগ সন্দেহের ব্যাপার হইয়া পড়িয়াছে, তাহাদের এই ঔষধে উৎকৃষ্টতর প্রতিক্রিয়া উপস্থিত হইবে, এবং সময়ে সময়ে ইহাই বহুমাস যাবৎ ঔষধ হইবে। কাশিলে বুকের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা। বুকে ও স্তনে শীতলতার অনুভূতি। বুকে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। বুকে স্পর্শকাতরতা এবং শ্বাস লওয়ার সঞ্চালনে উহার বৃদ্ধি।

বাতগ্রস্ত ধাতুতে যে-সকল হৃৎপিন্ডের উপদ্রব স্বাভাবিক, হৃৎপিন্ডে তাহার সবগুলি লক্ষণই দেখা যায়। শ্বাসকৃচ্ছ্বতা, হৃদপিন্ডে ফড়ফড় করা, হৃদস্পন্দন। যন্ত্রণা তীব্ৰ কৰ্ত্তনবৎ, সূচীবিদ্ধবৎ, সঞ্চালনে বর্ধিত। হৃদপিন্ডে জ্বালা, উহা বাম বাহু পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এই সকল রোগীর “পৃষ্ঠের খঞ্জতাপ্রাপ্তি” একটি সাধারণ উপসর্গ। সাধারণত উহা কটিবাত অথবা কটিত্রিকাস্থিব্যাপী যন্ত্রণা, এবং সময়ে সময়ে উহা নিম্নাঙ্গগুলি পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয়। ঊরুদেশের এবং সায়েটিক স্নায়ুর যন্ত্রণা। ঘাড়ে ও পৃষ্ঠে টানিয়া ধরা। পৃষ্ঠের আড়াআড়ি, ডান স্কন্ধ হইতে বাম স্কন্ধ পর্যন্ত যন্ত্রণা। মেরুদন্ডের ঊর্ধ্বাংশে অত্যন্ত উত্তাপবোধ উঠিতে গেলে বা নুড়িতে আরম্ভ করিলে পৃষ্ঠে আড়ষ্টতা। সকল যন্ত্রণাই শীতল, ভিজা আবহাওয়ায় বর্ধিত হয়। মেরুদন্ডে স্পর্শকাতরতা। মূত্রপিন্ডপ্রদেশে ক্ষততাবোধ।

শীতল, ভিজা আবহাওয়ায় পুরাতন বাতের যন্ত্রণা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি খঞ্জতা প্রাপ্ত এবং আড়ষ্টতাযুক্ত। শরীরের উপর সর্বত্র এবং অঙ্গগুলিতে সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। রোগী যন্ত্রণায় অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে এবং সব যন্ত্রণাকেই তীব্র ও সূচীবিদ্ধবৎ বলিয়া মনে করে। এই যন্ত্রণার কতকগুলি সঞ্চালনকালে উপস্থিত হয় এবং কতকগুলি অবিরত সঞ্চালনে উপশমিত হয়। হস্তপদাদি শীতল। হাতের তালু ও পায়ের তলায় জ্বালা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কম্পন। স্কন্ধদ্বয়ে বাতজ যন্ত্রণা, সঞ্চালনে বৃদ্ধি। হাত ও বাহুদ্বয়ের অসাড়তা, বামদিকে অধিক। হাত ও বাহুদ্বয়ের কম্পন। জ্বালাযুক্ত হাতের তালুতে পাখার বাতাস চায়। ডান হাত তারপর বাম হাত শীতল। হাত দুইটি শীতল। হাতের পশ্চাদ্ভাগের উত্তাপ ও অসাড়তা।

নিম্নাঙ্গগুলির কম্পনযুক্ত দুর্বলতা ও অসাড়তা। পদদ্বয়ের অকুশলতা যেখানে উহাদিগকে ফেলিতে চায়, উহারা সেখানে পড়ে না। উরুদ্বয়ের অসাড়তা। সর্বদা পা ছড়াইয়া থাকিতে বাধ্য হয়। পদদ্বয়ের আকর্ষণবোধ এবং টানিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি। বাতের যন্ত্রণা। মাংস ও অস্থিবেষ্টের আড়ষ্টতা ও ক্ষততা। ঝড় বৃষ্টির সময় পায়ে ঊর্ধ্বমুখী তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। পদদ্বয়ের অস্থিরতা, সর্বদাই উহাদিগকে নাড়াইতে হয়। পায়ে, ঊরুতে, সায়েটিক স্নায়ুতে ঊরুর স্নায়ুতে কামড়ানির ন্যায়, টানিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা, অবিরত সঞ্চালনে উপশম। পদদ্বয় কাঠের ন্যায় অসাড় ও ভারি। পদদ্বয় হাঁটু পর্যন্ত শীতল। ঊরুর পশ্চাদ্ভাগে হাঁটু পর্যন্ত পেশীগুলির আকুঞ্চন। পায়ের তলায় এবং পায়ের ডিমে খালধরা। পদসন্ধির দুর্বলতা। পদদ্বয়ে জ্বালা, উহা অনাবৃত রাখিতে চায় এবং উহার উপর পাখার বাতাস চায়। পদদ্বয় হাঁটু পর্যন্ত স্ফীত এবং চাপ দিলে গৰ্ত্ত হইয়া যায়। পদদ্বয়, পদসন্ধি এবং পদতল ক্ষততাযুক্ত এবং ঘেঁৎলাইয়া যাওয়ার মত। ক্ষতযুক্ত ও থেঁৎলানবৎ বেদনাযুক্ত পদতল নীলবর্ণ দেখায়। সে পায়ের তলায় ভর দিয়া হাঁটিতে পারে না। পায়ের তলায় স্ফীতি ও চুলকানি। পুরাতন গণোরিয়াজাত বাতরোগে সাধারণত পদতল যেরূপ স্পর্শকাতর হয়, ইহা তাহা আরোগ্য করে। পায়ের তলায় স্পর্শকাতরতা, সেইজন্য তাহাকে হাটুর উপর ভর দিয়া হাঁটিতে হয়। পায়ের তলায় শীতল ঘৰ্ম্ম।

কেবলমাত্র চিৎ হইয়া ও মাথার উপর হাত তুলিয়া ঘুমাইতে পারে। বালিশের উপর মুখ পুঁজিয়া এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়া ঘুমাইতে পারে। ভূতের ও মৃতব্যক্তি সম্বন্ধে ভীষণ স্বপ্ন দেখে, সে রাত্রিকালকে ভয় করে। ঘুম ঘুমভাবযুক্ত, কিন্তু ঘুমাইতে পারে না। রাত্রির প্রথমভাগে নিদ্রাহীন। প্রচুর নৈশ-ঘৰ্ম্ম।

অপর নাম গ্লিনিকাম (Glinicum)

এটি গণোরিয়া বা প্রমেহের বিষ থেকে তৈরী ঔষধ।

মেডোরিনাম মেহের বা গণোরিয়ার বিষ। ইহা একটি ফলপ্রদ ঔষধ। যাঁরা প্রমেহে ভুগেছে, তারা ভাল করেই জানেন যে শরীরে গণোরিয়ার বিষ প্রবেশ করবার ফলে কি রকম সাংঘাতিক বাতরোগ জন্মায়। পুরাতন বাতে আমি এই ঔষধ ব্যবহার করে চমৎকার ফল পেয়েছি।

রোগী বিবরণী

একজন মধ্যবয়স্ক রমনী তার পায়ের পাতা, গোড়ালি ও পায়ের তলায় বেদনার জন্য তার বাড়ীর কাছেই অবস্থিত গীর্জায় যেতে পারত না। সে পায়ের উপর ভর দিয়ে হাঁটতে পারত না।

এইরকম লক্ষণযুক্ত কয়েকটি খারাপ অবস্থার রোগীকে আমি এন্টিমোনিয়াম ক্রুডাম দ্বারা আরোগ্য করেছিলাম, কিন্তু এক্ষেত্রে এর দ্বারা কোন উপকার হয়নি। তখন আমি একমাত্র মেডোরিনাম সি. এম. দিই। এতে তার এত উপকার হয় যে, সে যেখানে খুশি হেঁটে যেতে পেরেছিল।

‘অর্গানন নামক একটি সাময়িক পত্রিকার তৃতীয় খণ্ডে ডাঃ জে এগিলবার ৬০ বছর বয়স্ক একজন লোকের পুরাতন বাতের রোগের একটি চমৎকার বিবরণ দিয়েছেন।

এই রোগীর ইতিহাসে পূৰ্ব্বে গণোরিয়া হওয়ার কথা নেই। তাছাড়া আমি যেসব রোগীকে এই ঔষধে আরোগ্য করেছি, তাদেরও ঐরূপ কোন ইতিহাস পাইনি। ঐ সাময়িক পত্রের প্রথম খণ্ডে (লিভার পুল) ইংলণ্ডের ডাঃ স্কিনারে দেওয়া আর একটি অদ্ভুত আরোগ্যের বিবরণ দেওয়া আছে। তাতে সিফিলিনাম দ্বারা একটি দীর্ঘকালের মেরুদণ্ডের কেরিজ রোগের আরোগ্য সম্বন্ধে বর্ণনা দেওয়া আছে।

আমারও একটি এইরকম বোগী ছিল, তাকেও এক বছরের বেশীকাল চিকিৎসা করায় কোন ফল হয়নি। আমি প্রথমে এই রোগী বিবরণীটি পড়ি। আমার রোগীরও পূর্বোক্ত রোগীর ন্যায় আক্রান্ত স্থানে রাত্রিকালে তীব্র ব্যথা হত। যে কোন সিফিলিস জনিত রোগ, বিশেষতঃ হাড়ের রোগেরও সঙ্গে যিনি পরিচিত, তিনিই এই রাত্রিকালীন বেদনার সঙ্গে পরিচিত (সময়ে অসময়ে অতি তীব্র বেদনা)। এক্ষেত্রে তিন মাত্রা সিফিলিনাম সি. এম. দেওয়ায় অতি অল্পকালের মধ্যে (৪০ দিনের মধ্যে এই রোগীটিও আরোগ্য লাভ করে। এক্ষেত্রে আমি কোন বিশ্বাসযোগ্য সিফিলিসের ইতিহাস পাইনি।

এখন প্রশ্ন হল নোসোডস (nosodes) সম্বন্ধে ডাঃ সোয়ানের মতবাদ সত্য? অথবা বোগের ইতিবৃত্ত না থাকলেও হোমিওপ্যাথি মতে রোগজ ঔষধগুলি বা নোসোডসগুলির যেক্ষেত্রে লক্ষণের সাদৃশ্য থাকে, সেক্ষেত্রেই উপযোগী অন্য সকলে এর মীমাংসা করুন।

এই কথা লেখার পরও আমি তথাকথিত নোসোড সম্বন্ধে আরো পরীক্ষা করেছি এবং অনেক ক্ষেত্রেই দুরারোগ্য পুরাতন বাতের রোগে মেডোরিনাম ও সিফিলিনাম দ্বারা উৎকৃষ্ট ফল পেয়েছি। এদের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য হল –

মেডোরিনামের বেদনা বৃদ্ধি পায় দিনের বেলায়, আর সিফিলিনামের বেদনা বৃদ্ধি পায় রাত্রে।

এই দুটি ঔষধ নোসোডস বলে উপেক্ষা করা উচিত নয়, এদের আশ্চৰ্য্য আরোগ্যকারিণী শক্তি আছে।

✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *