মূত্র তন্ত্র (Urinary System):
যে সমস্ত অঙ্গ শরীরের বর্জ্য পদার্থসমূহ মূত্রের সাথে বের করে দেয় তাকে ইউরিনারী সিস্টেম বা মূত্র তন্ত্র বলে।
মূত্র (Urinary) তন্ত্রের অংশসমূহ:
- ১) কিডনি – ২টি,
- ২) ইউরেটার – ২টি,
- ৩) মূত্রাশয় – ১টি,
- ৪) মূত্রনালি – ১টি,
বৃক্ক (Kidney):
মেরুদণ্ডের দুই পার্শ্বে পেটের মধ্যে অবস্থিত । মূত্র তৈরি করে । প্রতি কিডনিতে ১০ লাখ নেফ্রন থাকে । নেফ্রন হচ্ছে বৃক্কের গঠন ও কার্যগত একক, যা মূত্র তৈরি করে । নেফ্রন নিন্মের অংশ নিয়ে গঠিত-
- ক) গ্লোমেরুলাস,
- খ) রেনাল টিউবিউল্স
মূত্র কিভাবে তৈরি হয় (How Urine is Formed)?:
গ্লোমেরুলসের মধ্যে ক্ষুদ্র ধমনী দিয়ে রক্তের তরল অংশ রেনাল টিউবসমূহে প্রবেশ করে । পানি এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন : গ্লুকোজ, মোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি , টিউবের কোষ দ্বারা শোষিত হয়ে শরীরে বয়ে যায় । এই শোষিত পানি ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি জালিকার ও শিরার মাধ্যমে শরীরের রক্ত প্রবাহে ফিরে আসে । সামান্য পানি বর্জ্য ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি কালেকটিং টিউবের মাধ্যমে কিডনির ক্ষুদ্র ক্যালিক্স, বৃহৎ ক্যালিক্স হয়ে পেলভিসে যায়। একটি কালেকটিং টিউবের সাথে অনেকগুলি নেফ্রন লাগানো থাকে । প্রতি নেফ্রন থেকে ফোটা ফোটা মূত্র পেলভিসে চলে আসে । পেলভিস থেকে মূত্র ইউরেটার এর মাধ্যমে মূত্রাশয়ে (U.Bladder) এসে সাময়িকভাবে জমা থাকে । প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষ মূত্রনালি দিয়ে মূত্র ত্যাগ করে। প্রতিদিন গ্লোমেরুলাস দিয়ে প্রায় ১৮০ লিটার রক্তের জলীয় অংশ ছাঁকন (Filtered) বা ফিল্টার হয় । কিন্তু ৯৯ ভাগ পুনঃ শোষিত (Reabsorbed) হয়ে শরীরে বয়ে যায় এবং বর্জ্য সহ ১% পানি মূত্র হয়ে বের হয়ে যায় । গড়ে প্রায় ১/২ লিটার মূত্র তৈরি হয় । তাই প্রত্যহ অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত ।
কিডনি / বৃক্ক কর্মক্ষম কিনা বোঝার উপায় কি ?
- ১) প্রস্রাব এর (Urine) আপেক্ষিক গুরুত্ব (Specific gravity) ও ঘনত্ব পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে ।
- ২) রক্তে ইউরিয়া (Urea mg / dl) বা ক্রিয়েটিনিন (( Creatinine এর পরিমাণ mg / dl) স্বাভাবিকের নীচে আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে ।
সফল রোগীর ভিডিও প্রমাণ
মূত্রাশয় (Urinary Bladder):
এটি অনৈচ্ছিক মাংসপেশী দ্বারা তৈরি
অঙ্গ । এর ভেতরের মাংস ট্রানজিশনাল আবরণী কলদ্বারা আবৃত থাকে যা, প্রয়োজনে সংকুচিত হয়ে, অধিক মূত্র ধারণ করতে পারে । এতে ২৫০-৩০০ মি .লি. মূত্র জমা হলে প্রস্রাবের বেগ পায়। এর নীচের অংশ দিয়ে মূত্রনালি
(Urethra) বের হয়ে আসে। ৫০০ মি.লি পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূত্র ধারণ করা যায়। মূত্রাশয়ের নিন্মাংশে ইউরেথ্রাকে আবৃত করে যে ঐচ্ছিক মাংসপেশী থাকে তার নাম হচ্ছে এক্রাটারনাল স্ফিংটার (External Sphincter) বা বহিঃমাংসপেশী কপাট । এটার সংকোচন এর ফলে আমরা জোর করে প্রস্রাব আটকাতে পারি।
প্রয়োজনীয় সংজ্ঞা:
- ১) Urinary Tract Infection (UTI): প্রস্রাব নালী সমূহের সংক্রমণ হয়ে প্রদাহ।
- ২) সিসটাইসিস (Cystitis) হচ্ছে মূত্রাশয়ের প্রদাহ ।
- ৩) পাইলোনেফ্রাইটিস (Pyelonephritis): কালেকটিং টিউব, পেলভিস ও ইউরেটারের প্রদাহ।
- ৪) গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (Glomerulonephritis): নেফ্রনের গ্লোমেরুলস এবং টিউবের প্রদাহ।
বৃক্কের কাজ (Function of Kidney):
- ১) মূত্র তৈরি করে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য পদার্থ সমূহ শরীর থেকে বের করে দেয় ।
- ২) দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের (Electrolytes = Na+ , K+) ভারসম্য রক্ষ করে।
- ৩) রেনিন (Renin) নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে ।
- ৪) লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্য ইরাইথ্রোপোয়টিন (Erythopoetin) নিঃসরণ করে।
- ৫) ভিটামিন ডি তৈরিতে সহায়তা করে ।
[PGPP id=1214]