চক্ষু (Eye) ও দেখা (Vision) :
দেখার প্রধান অঙ্গের নাম চোখ । এর প্রধান কাজ হচ্ছে প্রতিফলন (Image) তৈরি করে রেটিনার উপর ফেলা । এতে রেটিনার মধ্যস্থিত (স্নায়ুকোষ, রড, কোণ ইত্যাদি ) উত্তেজিত হয়। এই উদ্দীপনা (Impulse) অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অক্সিপেটাল লোবে পৌঁছে । বস্তু সম্পর্কে তখন আমরা ধারনা করি অর্থাৎ কি দেখলাম সেটা চিনতে পারি। (চোখের বিভিন্ন অংশের সম্পর্কে এনাটমি অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।)
চোখের প্রধান ৩ স্তর বা আবরণী :
ক) বাইরের ফাইব্রাস বা তন্তুময় আবরণী (Fibrous Layer)
- ৫/৬ ভাগ স্ক্লেরা (Sclera)
- ১/৬ ভাগ কর্নিয়া (Cornea)
কাজ :
- চোখের আকৃতি ঠিক করে রাখা।
- কর্নিয়া দিয়ে আলো ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিফলন তৈরি করে।
খ) মধ্যবর্তী রক্তনালী সমৃদ্ধ স্তর (Vuscular Layer)
- কোরয়েড (Choroid): পশ্চাৎ ভাগের ৫/৬ অংশ কালচে রঙের রক্তনালী সমৃদ্ধ আবরণী
- সিরিয়ারী বডি (Ciliary body) : এর মধ্যস্থ মাংসপেশী লিগামেন্টের মাধ্যমে লেন্সকে ঝুলিয়ে রাখে।
- আইরিশ (Iris): অনৈচ্ছিক মাংসপেশী। রঙ এর অনুযায়ী চোখের রঙ কাল, বাদামী, নীল হয় । আইরিশের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাকে পিউপিল (Pupil) বা মণি বলে।
সফল রোগীর ভিডিও প্রমাণ
কাজ :
- চোখের পুষ্টি যোগায়,
- আইরিশ এর মাংসপেশী চোখের অভ্যন্তরে আলোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে,
- সিলিয়ারী মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে লেন্সের আকার পরিবর্তিত হয়,
- এতে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী বস্তুর প্রতিফলন সামনে বা পেছনে ফেলে, সামনের বা দূরের যে কোন বস্তু দেখতে পাই ।
গ) অভ্যন্তরীণ স্নায়ু স্তর বা রেটিনা (Retina) :
এই স্তর ৩টি স্নায়ু কোষ স্তরের মাধ্যমে তৈরি । রড ও কোণ নামক অসংখ্য স্নায়ু কোষ এখানে আছে । রডের মাধ্যমে রাতের বেলায় আমরা দেখতে পাই । কোণের মাধ্যমে উজ্জ্বল আলোতে (দিনে) দেখতে পাই ।
এছাড়াও চক্ষুগোলকের নড়াচড়ার জন্য অরবিটের অস্থি সংলগ্ন ৬টি মাংসপেশী আছে । অরবিট বা চক্ষু গহ্বরের উপরে ও বাহিরের দিকে (Upper and Outer) লেকরিমাল (Lacrymal) গ্রন্থি আছে। যা থেকে সব সময় অল্প অল্প করে অশ্রু (Tear) নির্গত হচ্ছে। এ অশ্রু চোখের উপরিভাগের ময়লা দূর করে এবং জীবাণু নাশ করে। চোখের পল্লবের অভ্যন্তরে ও স্ক্লেরার বাহিরের দিকে স্বচ্ছ কনজাংটিভা নামক পর্দা আছে।
চোখের লেন্স (Lens) : স্বচ্ছ ইভত্তোল ইলাস্টিক এই লেন্সটি লিগামেন্ট দ্বারা আইরিশের পশ্চাতে ঝুলানো থাকে । চোখের মণি দিয়ে আগত আলো এর উপরে পরে প্রতিসরিত হয়ে ফোকাস বিন্দু রেটিনার উপর পড়ে । এর ফলে যে বস্তু থেকে আলো আসছে সে বস্তুর প্রতিফলন (Image) রেটিনার উপর তৈরি হয়।
চোখের কিছু অসুবিধা (Defect of Vision)
- ১) মায়োপিয়া (Myopia) : কাছের বস্তু দেখতে অসুবিধা হওয়াকে মায়োপিয়া বলে। এই রোগীকে অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হয়।
- ২) হাইপারমেট্রোপিয়া (Hypermetropia) : দূরবর্তী বস্তু দেখতে অসুবিধা হওয়াকে হাইপারমেট্রোপিয়া বলে । এই রোগীকে উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে।
- ৩) টেরা বা স্কুইন্ট (Squint) : এ অসুবিধা থাকলে রোগী যে বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকবে তার চোখের মণি অন্যদিকে নির্দেশিত থাকবে । অর্থাৎ একজনের সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে হবে সে অন্য দিকে চেয়ে আছে । অপারেশনের মাধ্যমে এটা ঠিক করা যায়।
- ৪) চালশে বা প্রেসবায়োপিয়া (Presbiopia): সাধারণত ৪০ বৎসর বয়সের পরে এ অসুবিধা দেখা দেয় । এতে সামনের ও দূরের দুই ধরনের বস্তু দেখতে অসুবিধা হয় । দুই লেন্স বিশিষ্ট চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।
[PGPP id=1214]