আর্ণিকা মন্টানা ARNICA MONTANA [Arn]

Arn আঘাত, পতন, চাপা লেগে থেঁৎলে যাওয়ার জন্য তরুণ বা পুরাতন উপসর্গে সর্বাপেক্ষা উপযোগী।
Arn শরীরে চোট লাগার মত কালশিরা পড়ে, আঘাতের দরুণ রক্তস্রাব।
Arn সমস্ত শরীরে অত্যন্ত ব্যথা, স্পর্শ-ভীতি, কেহ তাকে স্পর্শ করুক তা চায় না, বিছানা শক্ত মনে হয়।
Arn মস্তক ও মুখমন্ডল গরম কিন্ত শরীরের অন্যান্য অংশ শীতল।
Arn অচৈতন্য অবস্থায় অসাড়ে মলমূত্র ত্যাগ, কথার জবাব দিতে দিতে পুনরায় তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
Arn জরায়ু প্রদেশে চোট লাগার মত বেদনা, রোগী সোজা হয়ে চলতে পারে না।

স্নায়বিক স্ত্রীলোক, মোটাসোটা রক্তপ্রধান, মুখশ্রী সতেজ ও ভীষণ লালচে আভা মুখ—এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপযোগী।

শরীরের কোন যন্ত্রে বাহ্যিক আঘাতের কুফলে রোগ— তা যদি বহুদিন আগেও হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে। যাদের সামান্য ছোটখাট আঘাতের অনুভূতি বহুদিন যাবৎ থেকে যায় বিশেষভাবে তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী।

সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ, খোঁড়াদের মত, থেৎলে যাওয়ার মত ব্যথা বেদনা, মনে হয় যেন তাকে পেটানো হয়েছে। পেশীতে আঘাত লেগে রোগ হলে উপযোগী।

পড়ে গিয়ে (উঁচুস্থান হতে) আঘাত, বিশেষতঃ যদি মাথায় ঝাঁকুনি লেগে ‘অজ্ঞান হয়ে ও অসাড়ে মলমূত্র ত্যাগ করলে প্রযোজ্য। ভোঁতা কোনকিছুতে আঘাত লাগার পরবর্তী অবস্থায় (সিম্ফইটাম) হাড় ভেঙ্গে গিয়ে তাতে প্রচুর পুঁজ জমলে (ক্যালেনডুলা)। মাথায় ঝাঁকানি বা হাড়ে কোনভাবে চাপ লেগে, মানসিক আঘাত বা দেহে কোনভাবে আঘাত লেগে, দেহে নরম অংশে (মাংসপেশীতে) আঘাত লেগে তাতে ছড়ে যায় না—এমন সবেতে পুঁজ হতে দেয় না অথবা পুঁজরক্ত শুষে নিতে সাহায্য করে।

স্নায়বিক, ব্যথাবেদনা সহ্য করতে পারে না— সারাদেহ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে (ক্যামো, কফিয়া, ইগ্নে)।

যাতে সে শোয় সবকিছুই শক্ত বলে মনে হয়; বিছানা শক্ত- সব সময় এই অভিযোগ করে নরম জায়গা পাওয়ার জন্য সে অবিরত এপাশ ওপাশ করতে থাকে (যে দিকে চেপে শোয় দেহের সেই অংশে ক্ষতবৎ ও থেৎলানো ব্যথা অনুভব করে—(ব্যাপ্টি, পাইরো, উপশম পেতে সর্বদা নড়াচড়া করতে থাকে— রাস ট)। দেহের উপর অংশে তাপ ও নিচের দিকে ঠান্ডা।

কেবলমাত্র মুখ অথবা মুখ ও মাথা গরম বাকী অংশ ঠান্ডা।

অচেতনভাব— কোন কিছু প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তর দেয় পরক্ষণেই অচেতন ও প্রলাপভাব ফিরে আসে (কোন কিছু বলতে বলতে মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়ে ব্যাপ্টি)।

অসুস্থ অথচ বলে তার কিছু হয় নাই।

মেনিনজাইটিস – পড়ে গিয়ে দেহে কোন যন্ত্রে আঘাত লেগে, উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে, মাথায় ঝাঁকি লেগে, ঐসব কারণে দেহের ভিতরে রক্তস্রাব হচ্ছে। এরকম আশঙ্কায় প্রয়োগ করলে রক্তস্রাব শুষে নিতে সাহায্য করে।

মেনিনজাইটিস – পাইনাল কর্ড ও ব্রেন (মস্তিষ্ক) এর মেমব্রেণ বা পর্দার প্রদাহ। মেনিঞ্জেস— তিন রকম পর্দা দিয়ে গঠিত। [A] ডুরা ম্যাটার (বাইরের অংশ) [B] এ্যারাকনয়েড (মাঝের) [C] পায়া ম্যাটার (ভিতরের)। এই প্রদাহ বহুভাবে হতে পারে—

(১) মে, একুট সেপটিক – ভাইরাস ইনফেকশন থেকে, পুঁজ হয় না, মারাত্মক হয় না অল্পদিন থেকে সেরে যায়।

(২) মে, একুট মেনিনঞ্জোকক্কাল— নেইসেরিয়া মেনিনজাইটাইডিসও গ্রাম নেগেটিভ কক্কাই জীবাণুর সংক্রমণে, সময়মত রোগ নির্ধারণে ও সঠিক ওষুধে রোগ দমিত হয়।

(৩) মে, এ্যাসেপটিক – জীবাণুঘটিত বাতাস বা ওষুধ দ্বারা সাব এ্যারাকনয়েড স্পেস এ সংক্রমণে।

(৪) মে, ব্যাসাল – মস্তিষ্কের বেস্ (তলদেশ) আক্রান্ত হয় প্রধানতঃ টিউবার কিলোসিস রোগে।

(৫) মে, সেরেব্রাল – মস্তিষ্কের তরুণ বা পুরান রোগে;

(৬) মে, সেরেব্রোস্পাইনাল মস্তিষ্ক ও সুষুমাকান্ডতে প্রদাহ হয়ে,

(৭) মে, নিউমোকক্কাল – নিউমোকক্কাস জীবাণু সংক্রমণে, সাধারণতঃ শিশুদের হয়।

(৮) মে, সিরোসা সারকামসক্রিপটা – মস্তিষ্কের বা সুষুম্নাকান্ডে সিরাস রস জমে টিউমার তৈরী হয়।

(৯) মে. সিরাস – মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠে সিরায় রস জন্মে।

(১০) মে, ট্রমাটিক — মেনিঞ্জেস আঘাত লেগে হলে।

(১১) মে, টিউবার কুলাস – টিউবারকল ব্যাসিলাস জীবাণুর সংক্রমণে তরুণ প্রদাহ।

মস্তিষ্কের জলজমা (হাইড্রোসেফেলাস) রোগে শিশুদের সামনের হাত দুটি মড়ার মত ঠান্ডা, (উদরাময়ে ঐ লক্ষণে – ব্রোমিয়াম)।

সন্ন্যাসরোগ – জ্ঞান হারায়, অসাড়ে মলমূত্র ত্যাগ করে। তরুণ আক্রমণে ক্ষরিত রক্ত বন্ধ ও শোষণে সাহায্য করে এ ওষুধ। অন্য ওষুধের লক্ষণ না পাওয়া অবধি এর প্রয়োগ চলতে থাকবে ও কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ ধরে এর কাজ হতে দেবে—এ্যলেন।

আঘাত বা দমকা কাশির জন্য চোখের সাদা অংশ ও রেটিনা হতে রক্তস্রাব সেই সাথে রক্ত জমে থাকা (লিডাম, নাকস) এ ওষুধে সারে।

গেঁটেবাত বা বাত — কেউ কাছে আসলে তার ছোঁয়া বা আঘাত লাগার ভীতি এ লক্ষণে প্রযোজ্য।

পেলভিক বা বস্তিদেশে – থেৎলে যাওয়ার মত ব্যথা, সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না। একটার পর একটা ছোট ছোট ভীষণ ব্যথাযুক্ত ফোড়া হবার প্রবণতা ফোড়ায় ভীষণ ব্যথা থাকে (দলে দলে ছোট ছোট ফোড়া হলে -সালফ)।

পক্ষাঘাত (বাঁদিকে) – নাড়ী পূর্ণ ও সবল, নিশ্বাসে ঘড় ঘড় শব্দ, দীর্ঘশ্বাস সাথে বিড় বিড় করে প্রলাপ বকে।

উদ্গার শূন্য ঢেকুর ওঠে তাতে পচা ডিমের মত দুর্গন্ধ থাকে। আমাশয় সেইসাথে প্রস্রাব বন্ধ, নিষ্ফল মলবেগ, বহুক্ষণ পর পর মলত্যাগ।

কোষ্ঠবদ্ধতা – রেক্টাম মলে ভর্তি অথচ মল বার হতে চায় না। প্রষ্টেটগ্ন্যান্ড বেড়ে বা জরায়ুমুখ উল্টে গিয়ে সরু ফিতার মত চ্যাপ্টামল। প্রসবের পর জননাঙ্গ ক্ষতবোধ, প্রসবের পর রক্তস্রাব ও নানা উপসর্গে এ ওষুধ প্রয়োগে নিবারণ হয় ।

প্রসবের পর প্রস্রাব বন্ধ বা অসাড়ে প্রস্রাব (ওপি) সারায়।

(রেক্টাম— অ্যানাস বা গুহ্যদ্বারের ঠিক আগে অন্ত্রের যে অংশ)

সম্বন্ধ — একোনাইট, হাইপেরিকাম ও রাস-ট-এর অনুপূরক।

সমগুণ – থেলানোমত ব্যথায়— ব্যাপ্টি, চায়না, ফাইটো, পাইরো, রাস, রুটা, ষ্ট্যাফিস।

একোন, এপিস, হেমামে, ইপি ও ভিরেট্রাম-এর পর এ ওষুধে ভাল কাজ দেয়; আর্নিকার পর এসি-সালফ সুন্দর কাজ করে। মদ খাওয়ার ফলে ও কয়লার ধোঁয়ার শ্বাসরোধ হয়ে রোগ হলে সময় সময় আর্নিকা সূচীত হয় (এমন-কা; বোভিষ্টা)।

মেরুদন্ডের আঘাতে হাইপেরিকামের সাথে তুলনীয়।

বৃদ্ধি — বিশ্রামে, গুইলে, মদ খেলে।

উপশম — স্পর্শে ও নড়াচড়ায় (রাস, রুটা)।

শক্তি — ৩, ৩০, ২০০ বাহ্যিকভাবে θ ।

 

শরীরের উপর আঘাত করা; পড়ে যাওয়া, মারা, থেঁৎলিয়ে যাওয়া প্রভৃতির ফলে যে সকল লক্ষণ প্রকার পায়, এই ঔষধ ঐ একই জাতীয় লক্ষণ তৈরী করে। কানের ভিতর ভোঁ ভোঁ শব্দ। পচন-প্রক্রিয়া। বিষাক্ত বা সেপটিক অবস্থা, পুঁজ জাতীয় রোগ সংক্রমনের প্রতিষেধক। সন্ন্যাস রোগ, মুখমণ্ডল ভরাট, লালবর্ণযুক্ত।

এই ঔষধ বিশেষভাবে উপযুক্ত সেইসব ক্ষেত্রে, যেখানে কোন আঘাত, তা সে যতই পুরাতন হোক, বর্তমান উপসর্গের কারণ বলে বিবেচিত হয়। কোন প্রকার শারীরিক আঘাতের পরে। কোন শারীরিক যন্ত্রের অতি ব্যবহারের পরে। মুচকিয়ে যাওয়ার পরে ভালো কাজ করে। আর্নিকা মস্তিষ্কের রক্তাধিক্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। খুব ভালো কাজ করে রক্তপ্রধান ধাতু, দুর্বল তৎসহ অপুষ্ট রক্ত, হৃদপিণ্ডের শোথ সহ শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে। পেশীর বলকারক ঔষধ বিশেষ। শোক, দুঃখ অথবা হঠাৎ কোন কারণে ধনসম্পত্তি নষ্ট হবার ফলে যে মানসিক আঘাত দেখা দেয়, সেই ক্ষেত্রেও আর্নিকা ভালো কাজ। অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, যেন মারা হয়েছে। সন্ধিস্থানে মোচড়িয়ে যাওয়ার মত বেদনা। বিছানা খুব শক্ত বলে মনে হয়। রক্তের উপর খুব ভালো কাজ করে। শিরাতন্ত্রের উপর ভালো কাজ করে, বিশেষ করে যেখানে শিরা অবরুদ্ধতা প্রকাশ পায়। কালশিরা ও রক্তস্রাব। রক্তবহানলীর শিথিলতা, শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো ও নীলচে ছোপ। রক্তস্রাব প্রবণতা যুক্ত ও ঘুষঘুষে জ্বর। শারীরিক তন্তর ধবংসপ্রবণতা, বিষাক্ত বা সেপটিক অবস্থা, যেসকল ফোঁড়া যা পাকে না। টাটানি, খঞ্জবোধ ও থেঁতলিয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি। স্নায়ুশূল, উৎপত্তি নিউমো-গ্যাসট্রিক স্নায়ুর গোলযোগ থেকে। পিঠ ও ঘাড়ের পেশী ও টেন্ডনের বাতজনিত রোগ। তামাকে বিতৃষ্ণা। ইনফ্লুয়েঞ্জা। থ্রম্বোসিস্। হেমাটোসিল।

মন স্পর্শে ভয় অথবা কেউ রোগীর দিকে আসলে ভয় করে। অচৈতন্য, যখন কথার উত্তর দেয় তখন সঠিক ভাবেই দেয় কিন্তু তার পরেই আবার অচৈতন্য হয়ে পড়ে। উদাসীনতা। একটানা কোন কাজ করতে অক্ষমতা, বিষন্ন, প্রলাপ বকে, স্নায়বিক, যন্ত্রণা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না, সারা শরীর অত্যধিক স্পর্শকাতর। রোগী বলে তার সম্বন্ধে চিন্তা করার কিছু নেই। এক থাকতে চায়। উন্মুক্ত স্থান সম্পর্কে ভয়। মানসিক আঘাতের পর।

মাথা — গরম, তৎসহ শরীর ঠাণ্ডা, বিভ্রান্ত, মস্তিষ্কে স্পর্শাধিক্য, তৎসহ তীক্ষ্ম, চিমটি কাটার মত বেদনা। মাথার চামড়া সঙ্কুচিত বলে মনে হয়। কপালের নির্দিট অংশে একটি ঠাণ্ডাস্থল। পুরাতন মাথাঘোরা, বস্তুসকল তার চারপাশে ঘুরছে। বিশেষতঃ যখন হাঁটাচলা করে।

চোখ – আঘাতজনিত কারণে দৃষ্টিঝাপসা, পেশীর পক্ষাঘাত, রেটিনা থেকে রক্তস্রাব। খুব নিকটে চোখ রেখে কাজ করার পর চোখের ভিতর টাটানি, থেঁতলিয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি। চোখ খুলে রাখতে বাধ্য হয়। চোখ বন্ধ করলে মাথা ঘোরে। দৃশ্য দেখার বা চলন্ত ছবি দেখার পর পরিশ্রান্ত ও ক্লান্তি অনুভব।

কান – কানের ভিতর শব্দ, এর কারণ মস্তিষ্কে দ্রুত রক্ত সঞ্চালন। কানের ভিতর এবং চারিপাশে তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। কান থেকে রক্তস্রাব। মাথায় আঘাত লাগার পর কানে কম শোনে। কানের তরুণাস্থির বেদনা, মনে হয় যেন স্থানটি থেঁৎলিয়ে গেছে।

নাক – প্রতিবার কাশির পর নাক দিয়ে রক্তস্রাব, কালচে, তরল রক্ত। নাকে টাটানি। ব্যথা, নাক ঠাণ্ডা বলে মনে হয়।

মুখগহ্বর — দূর্গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস। শুষ্ক ও তৃষ্ণার্ত। আস্বাদ তিতো। (কলোসিন্থ)। পচা ডিমের মত আস্বাদ। দাঁত তোলার পর মাড়ীতে টাটানি। (সিপিয়া)। ম্যাক্সিল্যারি সাইনাসে পুঁজোৎপত্তি।

মুখমণ্ডল – কোটরগত, উজ্জ্বল লাল। ঠোট উষ্ণ। মুখমণ্ডলে হার্পিস।

পাকস্থলী — ভিনিগার খাওয়ার ইচ্ছা। দুধ ও মাংসে বিরক্তি। প্রচণ্ড ক্ষুধা। রক্ত বমি। খাবার সময় পাকস্থলীতে বেদনা। পেট ভৰ্ত্তি বলে মনে হয় তৎসহ খাদ্যে অরুচি। পেটের ভিতর হাওয়া গ্যাস চাপের সৃষ্টি করে ও উপর এবং নীচের দিকে ঠেলা মারে। পাথরের মত ভারী বলে মনে হয়। মনে হয় পাকস্থলী, মেরুদণ্ডের পাশ দিয়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত বমি। বো. মে. মে-৬

উদর – কৃত্রিম পাঁজরা অস্থির নীচে বেদনা। পেটের ভিতরে গ্যাস জমা হবার ফলে উদর স্ফীতি, দুর্গন্ধযুক্ত বাতকর্ম। পেটের ভিতর তীক্ষ্ম গুঁতো মারার মত অনুভূতি।

মল – উদরাময়ে জোরে কোঁথ দিতে হয়। মল দুর্গন্ধযুক্ত, বাদামি, রক্তমিশ্রিত, পচা,অসাড়ে নির্গত হয়। অনেকটা বাদামি রঙের ইষ্টের মত দেখতে। প্রতিবার মলত্যাগের পর রোগী শুয়ে পড়তে বাধ্য হয়। ক্ষয় রোগে উদরাময়, বামদিকে শুলে বৃদ্ধি। আমাশয়ের মত মল, তৎসহ পেশীর যন্ত্রণা।

প্রস্রাব — অত্যধিক পরিশ্রমের পর প্রস্রাবের অবরোধ। প্রস্রাবে কালচে, ইটের মত লাল রঙের তলানি থাকে। প্রস্রাব থলিতে কোঁথের অনুভূতি তৎসহ তীব্র যন্ত্রনাদায়ক প্রস্রাব।

স্ত্রীরোগ – প্রসবের পর, প্রসব সম্পর্কিত অঙ্গে থেঁতলিয়ে যাবার মত অনুভূতি। প্রসবের পর তীব্র বেদনা। সঙ্গমের পরে আঘাতজনিত কারণে জরায়ু থেকে রক্তস্রাব। স্তনের বোঁটায় টাটানি ব্যথা। আঘাত লাগার পর স্তনের প্রদাহ। মনে হয় গর্ভস্থ সন্তান আড়াআড়িভাবে রয়েছে।

শ্বাস-প্রশ্বাস – হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য কাশি, মাঝে মাঝে কাশি, রাত্রিতে, ঘুমের মধ্যে, পরিশ্রমের পর বৃদ্ধি। টনসিলের তরুন প্রদাহ, তালুর কোমল অংশ ও আলজিহ্বার স্ফীতি। নিউমোনিয়া, ফুসফুসে পক্ষাঘাতের উপক্রম। কণ্ঠস্বরের অতি ব্যবহারে স্বরভঙ্গ। সকালে কণ্ঠনলীতে টাটানি ব্যথা, হাজাকর অনুভূতি। কাঁদলে কাশি হয়। শুষ্ক কাশি, বায়ুনলীর নিম্নাংশে সুড়সুড়ি। রক্তমিশ্রিত কফ ওঠে। বুকের সকল অস্থি ও তরুণাস্থিতে বেদনা। তীব্র আক্ষেপিক কাশি, তৎসহ মুখমণ্ডলে হার্পিসের মত উদ্ভেদ। হুপিং কাশি, শিশুর কাশির পূর্বে কাঁদে। পাঁজরের অস্থিতে বেদনা। (র‌্যানাণ, সিমিসিফ)।

হৃদপিণ্ড – হৃদমূল বা অ্যাঞ্জামি পেক্টোরিস, খুব বেশি যন্ত্রণা হয় বাম কনুই স্থানে। হৃদপিণ্ডের ভিতর সূঁচ ফোটানোর মত বেদনা। নাড়ীদূর্বল ও অনিয়মিত। হৃদপিণ্ডের শোথ তৎসহকষ্টকর শ্বাসকষ্ট। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রসারিত, থেঁৎলিয়ে যাওয়া ও টাটানি ব্যথাযুক্ত মনে হয়। মেদযুক্ত হৃদপিণ্ড ও হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – গেঁটে বাত, স্পর্শ হওয়া সম্পর্কে তীব্র ভীতি অথবা তার দিকে কেউ গেলে ভয় পায় পিঠে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে থেঁৎলিয়ে যাওয়ার মত অথবা মারার মত ব্যথা। মুচকিয়ে যাওয়া অথবা সন্ধির স্থানচ্যুতির মত অনুভূতি। অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর টাটানি ব্যথা। যে কোন কিছুর উপর রোগী শুয়ে থাকুক, তাই শক্ত বলে মনে হয়। বহুমৃতের মত ঠাণ্ডা খাড়াভাবে কিছুতেই হাঁটতে পারে না, কারণ অস্তিকোটর স্থানে থেঁৎতলিয়ে যাওয়ার মত বেদনা। বাত নীচের দিক থেকে শুরু হয়ে উপরের দিকে উঠে। (লিডাম)।

চামড়া – কালো ও নীল বর্ণ। চুলকানি, জ্বালাকর ছোট ছোট উদ্ভেদ। ছোট ছোট ফোঁড়া এক সঙ্গে অনেকগুলি হয় (ইকথাইওল, সাইনিসিয়া) কালশিরা, শয্যাক্ষত (স্থানিকভাবে বোভিনাইন)। শক্ত জতীয় ব্রণ, এর বৈশিষ্ট্য হল খুব সুন্দর ভাবে বিস্তৃতি।

ঘুম – অতিরিক্ত ক্লান্তিতে অনিদ্রা ও অস্থিরতা। আচ্ছন্নগ্রস্ত, নিদ্রালুতা, মাথা গরম হলে জেগে ওঠে। মৃত্যু, কাটা অঙ্গ প্রভৃতির স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখার পর আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীত হয়ে পড়ে। রাত্রে ভয়াবহ আতঙ্ক। ঘুমের মধ্যে অসাড়ে মলত্যাগ।

জ্বর – জ্বরের লক্ষণগুলি অনেকটা টাইফয়েডের লক্ষণের মত। সমস্ত শরীরে কম্পন। মাথা গরম ও লালবর্ণ, তৎসহ শরীরের অবশিষ্টাংশ শীতল। শরীরের ভিতরে গরম বোধ। পা ও হাত ঠাণ্ডা। রাত্রিতে টকগন্ধযুক্ত ঘাম।

কমাবাড়া – বৃদ্ধি, সামান্য স্পর্শে, নড়াচড়ার বিশ্রামে, মদ্যপানে, আর্দ্র আবহাওয়ায়।

উপশম, শুয়ে থাকলে অথবা তৎসহ মাথা নীচু করে রাখলে।

সম্বন্ধ দোষঘ্ন – ক্যাম্ফর।

ভাইটেক্স ট্রাইফোলিয়া ইন্ডিয়ান আর্ণিকা। (মচকানো বেদনা, রগের দিকে যন্ত্রণা, সন্ধিস্থলে যন্ত্রণা, পেটের যন্ত্রণা, অণ্ডদ্বয়ে যন্ত্রণা)।

পরিপূরক – একোন, ইপিকাক।

তুলনীয় – একোন, ব্যাপ্টি, বেলিস, হ্যামাস, রাস, হাইপেরিকাম।

শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি। স্থানিকভাবে এই ঔষধের মূল অরিষ্ট। কিন্তু কখন যেন গরম অবস্থায় ব্যবহার করা না হয়। যদি কোন অংশ কেটে যায় বা ছাল উঠে যায় তবে সেক্ষেত্রে ঐ কাটা স্থানে কিছুতেই যেন স্থানিক ভাবে ঔষধটি প্রয়োগ করা না হয়।

আর্ণিকার রোগী বিষন্ন, সে একাকী থাকিতে চায়, সে চায় না যে কেহ তাহার সহিত কথা বলুক; কেহ তাহার কাছে আসুক। সে কাহাকেও কাছে আসিতে দিতে চায় না দুই কারণে, প্রথম তাহার মানসিক অবস্থা—সে কাহারও সহিত কথাবার্তায় প্রবৃত্ত হইতে চায় না, দ্বিতীয়তঃ তাহার দেহে অত্যন্ত ক্ষতবৎ বেদনা থাকার জন্য, সে চাহে না যে, কেহ তাহাকে স্পর্শ করুক। এই ঔষধে এই দুইটি বিশেষ লক্ষণীয় ব্যাপার। উত্তেজনাপ্রবণ, বিষন্ন, দুঃখিত, ভয়পূর্ণ, সহজেই ভীত; নানারূপ কল্পনা করে, বিশেষতঃ ভাবে যে, তাহার কোন হৃৎরোগ হইয়াছে অথবা তাহাকে পচনশীল ক্ষতরোগে মরিতে হইবে অথবা তাহাকে কোন গভীরমূল রোগে আক্রমণ করিয়াছে। সে বুকচাপা স্বপ্ন দেখে, ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে, কর্দমাক্ত জল, দস্যু প্রভৃতির স্বপ্ন দেখে। রাত্রিকালে ভয় পায়। মাঝে মাঝেই সে রাত্রে জাগিয়া উঠে, হৃৎপিন্ডস্থানে হাত দিয়া চাপিয়া ধরে, অত্যন্ত ভয় পাওয়ার ন্যায় চেহারা হয়, ভয় করে, যেন কোন সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার ঘটিবে। এই সময় অকস্মাৎ তাহার মৃত্যুভয় দেখা দেয়, সে জাগিয়া উঠে, হৃৎপিন্ডস্থানটি চাপিয়া ধরে। এবং মনে করে যে, সে মরিতে চলিয়াছে। তাহার দুঃসহ কষ্ট হয়, কিন্তু অবশেষে সে প্রকৃতিস্থ হয়, শুইয়া পড়ে এবং ভীতিপূর্ণ নিদ্রা যায়, আবার অকস্মাৎ মৃত্যুভয়ে লাফাইয়া উঠে এবং বলেও “এখনই একজন ডাক্তার ডাকিয়া আন।” এই সকল লোক দিনের বেলায় বেশ ভাল থাকে, কিন্তু রাতের পর রাত এইরূপ চলিতে থাকে; ইহারা অপরের সহানুভূতি হারায়; কারণ, মনে হয় যে, তাহাদের বাস্তবিক কোন রোগ নাই, এটি তাহাদের মানসিক অবস্থা মাত্র। যে-সকল লোক কোন রেল দুর্ঘটনায় পড়িয়াছিল অথবা কোন আকস্মিক সঙ্ঘাতের ফলে আহত হইয়া বেদনা ও চোট পাইয়াছিল, তাহাদের মধ্যেও এরূপ অবস্থা দেখা যায়। তাহারা রাত্রিকালে অকস্মাৎ মৃত্যুর ভয়ে জাগিয়া উঠে, চেহারাটি ভীতিপূর্ণ হইয়া উঠে এবং পূর্বে তাহারা যেরূপ ভয় পাইয়াছিল, সেইরূপ অবস্থারই পুনরাবির্ভাব হয়। ইহা ‘ওপিয়াম সদৃশ অবস্থা, কেবলমাত্র ‘ওপিয়ামের ক্ষেত্রে ভয়টি, দিনের বেলাতেও থাকে আর আর্ণিকা উহার স্বপ্ন দেখে।

কোন অন্তরুৎসেক্য রোগে আক্রান্ত হইয়া প্রবল জ্বর দেখা দিলে অথবা কোন দুর্ঘটনা বা আঘাত লাগার পর জ্বর হইলে, সে অত্যন্ত অবসন্ন, জড়বুদ্ধি ও অচেতন হইয়া পড়ে। তাহাকে জাগাইয়া তোলা যায় এবং তখন সে যথাযথভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়, কিন্তু সে আবার আচ্ছন্ন। হইয়া পড়ে অথবা যে-কোন একটি কথা বলিতে ইতস্ততঃ করে অথবা কোন প্রশ্নের উত্তর দিবার চেষ্টা করিলে, ঠিক কথাটি খুঁজিয়া পায় না এবং পুনরায় আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে। তাহাকে জাগাইলে সে ডাক্তারের দিকে তাকায় এবং বলে “আমি আপনাকে চাই না, আমি আপনাকে ডাকিয়া পাঠাই নাই। আমি পীড়িত নই, আমার ডাক্তারের আবশ্যক নাই।” সে ভয়ানক পীড়িত থাকিলেও এইরূপ বলিবে। আমি দেখিয়াছি, অত্যন্ত পীড়িত অবস্থায় যখন মুখমন্ডল বিবর্ণ হইয়া গিয়াছে; দুষ্টজাতীয় রোগে, অথবা যখন রক্তদুষ্টিঘটিত শীত দেখা দিতেছে, এরূপ অবস্থায় যখন মনে হইবে যে, লোকটি মরিতে চলিয়াছে, তখনও আর্ণিকার রোগী রক্তের মত কাল পদার্থ বমন করার পর, বালিশের উপরে শুইয়া ডাক্তারের দিকে চাইয়া দেখিবে এবং বলিবে, “আমি ত পীড়িত নই, আমি ত আপনাকে ডাকিয়া পাঠাই নাই, আপনি বাড়ী যান।” অথচ সুস্থ অবস্থায় সে আমার উপর বন্ধুভাবাপন্ন ছিল, সদয় ছিল, আমাকে ভালভাবে চিনিত; আমার সহিত আনন্দে করমর্দন করিত, কিন্তু এখন সে আমাকে দেখিয়াই উত্তেজিত হইয়া উঠিতেছে এবং জিদ করিয়া বলিতেছে যে, তাহার কিছুই হয় নাই। ইহা একটি সাঙ্ঘাতিক অবস্থা, প্রায় বিকারের প্রলাপের মত অবস্থা। এইরূপ একটি বাক্য শেষ করিয়াই সে আচ্ছন্ন হইয়া শুইয়া থাকিবে, বিছানার উপরে কুন্ডলী পাকাইয়া শুইবে; এবং তাহাকে কিছু বলিলে গোঁ গো করিতে থাকিবে। সে একা থাকিতে চায়, বিরক্ত করা চায় না, চায় না যে, কেহ তাহার সহিত কথা বলুক। যখন সমস্ত শরীরবিধানটি কোন সংঘাতের পরে বিচলিত হইয়া পড়ে এবং উহাতে রক্তসঞ্চালনের বিঘ্ন ঘটে, তখন এইরূপ অবস্থাই ঘটিয়া থাকে। যখন টাইফয়েড অবস্থা আসে অর্থাৎ যখন কোন সবিরাম বা স্বল্পবিরাম জ্বরে টাইফয়েড লক্ষণ প্রকাশ পায়, জিহ্বা চকচকে হয়, দাঁতে এবং ওষ্ঠে ময়লা জন্মে, রোগী অবসন্ন হইয়া পড়ে, তাহার সর্বাঙ্গে ব্যথা হয়, তখন সময়ে সময়ে আমি যেরূপ বর্ণনা করিতেছি, তদ্রূপ মানসিক অবস্থা দেখা দেয় এবং রোগীকে আর্ণিকা দিতে হয়। আর্ণিকা টাইফয়েড অবস্থার প্রসার রোধ করিবে এবং উহা নিবারিত করিবে। আরক্ত জ্বরে উদ্ভেদ বাহির হইলে, সাংঘাতিক প্রকারের আক্রমণে রোগীর সৰ্বাঙ্গ কৃষ্ণবর্ণ, চিত্র বিচিত্র এবং লাল লাল দাগে পূর্ণ হইয়া গেলে, রোগী অবিরত পার্শ্ব পরিবর্তন করিতে থাকিলে এবং মানসিক অবস্থা বিষন্নতা ও বিমূঢ়তার ন্যায় হইলে, সময়ে সময়ে আর্ণিকা উপযোগী হয়। ইহা একটি আশ্চৰ্য্য ঔষধ, ইহাকে বুঝিতে ভুল করা হয়। ইহা ভুলভাবে ব্যবহৃত হয়; কারণ ইহার ব্যবহার একমাত্র থেঁৎলান আঘাতেই সীমাবদ্ধ করিয়া রাখা হইয়াছে। পশ্চিম অঞ্চলের ম্যালেরিয়া প্রপীড়িত উপত্যকাগুলিতে বিশেষ বিশেষ ঋতুতে ম্যালেরিয়া জ্বরের ইহা প্রধান ঔষধ। সেইসব রক্তসঞ্চয়জনিত শীতে, সেইসব অবসন্নতা, অচৈতন্যতা, বিচিত্রবর্ণ চৰ্ম্মযুক্ত, সাঙ্ঘাতিক আক্রান্তিতে, অকস্মাৎ উদ্বেগসহ রক্তসঞ্চয় হইলে ইহা উপযোগী। ডাক্তাররা এই প্রকারের জ্বর চেনেন, তাহারা ইহাকে ভয় করেন এবং কেবলমাত্র আর্ণিকা; ল্যাকেসিস এবং অপর কয়েকটি গভীরক্রিয় ঔষধ দ্বারা এরূপ রোগের প্রতিবিধান করিতে পারেন। এইসকল রোগীকে যে ‘কুইনাইন’ দিতেই হইবে একথা ঠিক নহে। দীর্ঘকাল ধরিয়া আমি এইসব রোগীর চিকিৎসা করিয়াছি, আমি বহু রক্তসঞ্চয়বিশিষ্ট কম্পজ্বর দেখিয়াছি, কিন্তু কখনও কুইনাইনে’র আবশ্যক হয় না। ঔষধভান্ডারের সমস্ত কুইনাইনে’র পরিবর্তে আমি বরং আমার রেপার্টরি এবং কয়েকটি বিভিন্ন ক্রমের ঔষধ লইব। আমাদের চিনির বড়ি নিরাপদে, স্থায়ীভাবে; স্নিগ্ধভাবে রোগীকে আরোগ্য করিতে পারিবে, কিন্তু কুইনাইনে কখনও আরোগ্য হইবে না উহা দ্বারা রোগটি চাপা পড়িবে এবং কুইনাইন’ ও ‘আর্সেনিক’ খাওয়ান রোগীর পরবর্তী জীবনে যতদিন সে বাঁচিয়া থাকিবে, ততদিন পর্যন্ত রক্তসঞ্চয় ও তীব্রতা থাকিয়াই যাইবে।

“রাত্রিকালে হৃৎপিন্ড সম্বন্ধীয় উদ্বেগের সহিত, সেই মুহূর্তেই মৃত্যুর ভয়।” হৃৎপিন্ড হইতে উদ্বেগ সারা দেহে বিস্তৃত হয়, কিন্তু বিশেষ লক্ষণটি হইল—সেই মুহূর্তেই মৃত্যু হইবে—এরূপ ভয়, এবং হৃৎরোগ থাকুক আর নাই থাকুক, উহা দেখা দিবেই। এইরূপ রাত্রিকালীন ভয়, যখন রোগীর কোন কিছুই ঘটিবার সম্ভাবনা নাই। ইহা একপ্রকার ভয়ানক রক্তসঞ্চয়, যাহা অনুমস্তিষ্ক ও মেরুমজ্জার ঊর্ধ্বাংশ আক্রমণ করে।

“অচৈতন্যতার সহিত অসাড়ে স্রাব।”“অচেতন, অনুভূতিশূন্যতা।”“মৃতের ন্যায় শুইয়া থাকে।” এই লক্ষণগুলি রক্তবিষাক্ততাযুক্ত রোগে, টাইফয়েড প্রকৃতির রোগ দেখা যায়। অনেক স্বল্পবিরাম জ্বর যদি কু-চিকিৎসিত হয় অথবা খারাপ শুশ্রূষার মধ্যে চলিতে থাকে তাহা হইলে একজ্বরে পরিণত হয়। প্রকৃত ও স্বয়ম্ভূত টাইফয়েড কয়েক সপ্তাহ ধরিয়া ধীরে ধীরে কমিয়া বাড়িয়া প্রকাশ পায়, কিন্তু লাক্ষণিক টাইফয়েড হঠাৎ উপস্থিত হইতে পারে এবং উহার লক্ষণগুলিও সাধারণ টাইফয়েড অপেক্ষা গুরুতর হয়। স্বয়ম্ভূত টাইফয়েড কদাচিৎ প্রাণনাশ করে এবং ডাক্তার যদি ঠিকমত পৰ্যবেক্ষণ করিতে পারেন, তাহা হইলে ভালভাবেই শেষ হয়। এই ঔষধে ঐ প্রকার দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরে যথেষ্ট প্রলাপ দেখা যায়, এমন কি মদত্যয়ের ন্যায় প্রচন্ড প্রলাপ দেখা যায়। “আশাহীনতা, ঔদাসীন্য।” অবসাদ বায়ু রোগের সদৃশ উৎকণ্ঠা, খিটখিটে ভাব।” “ভয় পায়, যেন তাহারা তাহার দিকে আসিতেছে, তাহারা তাহাকে আঘাত করিবে।” এই অবস্থা উভয়ভাবে, শারীরিক ও মানসিক।

এই মানসিক অবস্থা সম্পূর্ণভাবে মনে রাখিয়া, আমরা এখন সাধারণ দৈহিক অবস্থাকে গ্রহণ করিব। সর্বপ্রকার রোগে ইহার দৈহিক অবস্থা এইরূপ, যেন তাহার সর্বাঙ্গ থেঁৎলাইয়া গিয়াছে। সুতরাং আর্ণিকা যে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় তাহাতে আশ্চর্য কিছু নাই, কিন্তু উহার মূল অরিষ্ট বাহিরে লাগাইয়া মালিশ করা নির্বুদ্ধিতা। ইহার রোগে উৎপাদন তত্ত্বে দেখা যায় যে, ইহা থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় দাগ উৎপন্ন করে। যদি তুমি অধিক মাত্রায় আর্ণিকা খাও, তোমার গায়ে চিত্রবিচিত্র নীলাভ দাগসমূহ প্রকাশ পাইবে, ঐগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৈশিকাগুলির অযথা স্রাব হইতে কালশিরা পড়িয়া পীতাভ হইয়া যাইবে। থেঁৎলাইয়া গেলে যেরূপ হয় ইহাও কতক পরিমাণে সেইরূপ। ইহা কৈশিকাগুলির এবং সময়ে সময়ে বড় বড় শিরাগুলির অযথা রক্তস্রাব। সে তাহার শরীরের সর্বত্র, কেহ যেন তাহাকে প্রহার করিয়াছে, এরূপ ক্ষতবৎ এবং থেঁৎলান। বেদনা অনুভব করিবে। যদি তুমি কোন আর্ণিকা রোগীকে তাহার রোগজ অবস্থার বহির্বিকাশ পাইবার জন্য পৰ্যবেক্ষণ কর, তাহা হইলে দেখিবে সে ক্রমাগত এপাশ ওপাশ করিতেছে। তৎক্ষণাৎ তোমার মনে প্রশ্ন উঠিবে— কেন সে এত অস্থির হইয়াছে? তারপর তুমি যদি, ঔষধসমূহের মধ্যে মনে মনে তুলনা কর, তুমি বলিবে যে তাহার অবস্থাও রাস টক্স সদৃশ্য; সে এক স্থানে সামান্যক্ষণ থাকে এবং তারপর সরিয়া যায়। অর্ধচেতন থাকিলেও তুমি দেখিবে যে সে একটুখানি পাশ ফিরিল, তারপর আর একটু সরিল, তারপর আর একটু এবং অবশেষে সে, সরিয়া অপর পার্শ্বে চলিয়া গেল। তারপর, সে আবার সরিতে আরম্ভ করিবে, একটু একটু করিয়া সরিবে এবং শেষে সে একপার্শ্ব হইতে অপর পার্শ্বে আসিয়া পড়িবে। এখন প্রশ্ন হইল—কেন সে ঐরূপ নড়াচড়া করে, কেন সে এত অস্থির। এই ব্যাপারটির মিমাংসা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা আর্সেনিকের রোগীর ভয়ঙ্কর উৎকণ্ঠা দেখিয়াছি, যাহার ফলে সে সর্বক্ষণই নড়াচড়া করে। আমরা রাস টক্স’ রোগীর যন্ত্রণাদায়ক অস্বচ্ছলতা দেখিয়াছি, যাহার জন্য সে কখনও স্থির থাকিতে পারে না। আর্ণিকার রোগী এতই ক্ষতবৎ বেদনা বিশিষ্ট যে, সে অল্পক্ষণও এক পার্শ্বে চাপিয়া শুইতে পারে না এবং সেইজন্য তাহাকে ঐ পার্শ্ব ত্যাগ করিতে হয় অথবা অন্য পার্শ্বে ফিরিতে হয়। যদি তাহাকে আমরা জিজ্ঞাসা করি, “তুমি এত নড়িতেছ কেন?” সে বলিবে । যে বিছানাটি বড়ই শক্ত বোধ হইতেছে। এইভাবেই সে বুঝাইতে চায় যে, তাহার দেহে ক্ষতবৎ বেদনা রহিয়াছে। বুদ্ধিমান লোকে বলিবে, ইহার কারণ তাহার দেহে বেদনা; যেন থেঁৎলাইয়া গিয়াছে বা কেহ তাহাকে প্রহার করিয়াছে—এরূপ বেদনা; এবং সেইজন্য সে নূতন স্থানে সরিয়া যাইতে চায়। এই বেদনান্বিত অবস্থা, লাক্ষণিক টাইফয়েড, সবিরাম জ্বর, স্বল্পবিরাম জ্বরে, এবং আঘাত লাগার পর যখন সে প্রকৃতই থেঁৎলাইয়া যায়, তখন বর্তমান থাকে। তোমরা অবিরত এই একই প্রকার অস্বচ্ছন্দতা এবং সঞ্চালন দেখিতে পাইবে এবং সে প্রতি মিনিটেই নড়িতে থাকিবে। সে নড়িয়া গিয়া ভাবে যে, এখন সে স্বস্তি পাইবে, কিন্তু সে স্বস্তি মাত্র এক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। যত বেশীক্ষণ যে শুইয়া থাকে ততই তাহার বেদনা বাড়িতে থাকে এবং সে বাধ্য হইয়া অবস্থান পরিবর্তন করে। রাস টক্সে’, সে যত বেশীক্ষণ শুইয়া থাকে, সে তত বেশী অস্থির হইয়া উঠে এবং বেশী কামড়ানি ব্যথা অনুভব করে এবং অবশেষে ভাবে যে, সে না নড়িলে চড়িলে অস্বস্তি চলিয়া যায়, আর্ণিকায় নূতন জায়গায় সরিয়া গেলে ক্ষতবৎ বেদনাটি চলিয়া যায়। আর্সেনিকে তোমরা দেখিবে যে, সে নড়াচড়া করিতেছে, অর্থহীনভাবে তাকাইতেছে এবং অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিয়াছে; ঐ উৎকণ্ঠার জন্য তাহাকে নড়িতে হইতেছে, কিন্তু উহাতে শান্তি পাইতেছে না এবং ক্রমাগতই নড়িতে বাধ্য হইতেছে। রাস টক্স’ ও আর্ণিকার রোগী প্রত্যেকে সামান্য নড়া-চড়াতেই আরাম পায়।

আর্ণিকা- রোগীর সহজেই রক্তপাত হয়, তাহার রক্তবহা নাড়ীগুলি শিথিল বোধ হয় এবং সহজেই অযথা রক্তস্রাব হয়। চর্মের উপর সহজেই নীল দাগ জন্মে এবং ভিতরে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে সহজেই রক্তক্ষরণ হয়। যে অঙ্গগুলি প্রদাহিত হয় তাহাদের রক্তপাত হয়। তাহার সর্দিজ অবস্থা দেখা দিলে, যদি কাশি থাকে, তাহা হইলে তাহার সহজেই রক্তপাত হয়। বুক এবং গলা হইতে সে কাশিয়া যে শ্লেষ্মা তুলে, তাহাতে রক্তের ডোরা থাকে অথবা আলপিনের মাথার ন্যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তের চাপ থাকে। তাহার মূত্রে রক্ত থাকে এবং দেহের অন্যান্য দ্বার হইতেও রক্তপাত হয়। রক্তবহা নাড়ীর তন্তুগুলির এত শক্তি থাকে না যে, রক্তকে নাড়ী প্রাচীরের মধ্যে ধরিয়া রাখিতে পারে এবং সেইজন্য ঐগুলি হইতে রক্তক্ষরণ হয়।

শরীরের সর্বত্র একপ্রকার খঞ্জতাবোধ, ক্ষতবৎ বেদনা এবং থেঁৎলাইয়া যাওয়ার মত অনুভূতি থাকে, একপ্রকার বাতজ বেদনা থাকে, সন্ধিগুলি স্ফীত, বেদনাযুক্ত এবং খঞ্জবৎ হয়। যদি কোন তরুণ রোগ কঠিন আকার ধারণ করে, আমরা পূৰ্ব্ববর্ণিতরূপ মানসিক লক্ষণ পাই এবং তৎসহ পেশীসমূহে ক্রমেই বাড়িয়া চলে—এরূপ ক্ষতবৎ বেদনা থাকে। আর্ণিকা দেহের এইরূপ বেদনা ও থেঁৎলানবৎ অবস্থায় বিশেষ উপযোগী। এজন্য আর্ণিকা আঘাতে, থেঁৎলাইয়া যাওয়ায়; আকস্মিক সঙ্ঘাতে, সন্ধি মচকাইলে, পৃষ্ঠে আঘাত লাগিয়া খঞ্জতা এবং ক্ষতবৎ বেদনা দেখা দিলে অত্যন্ত মূল্যবান ঔষধ। এইরূপ অবস্থায় আর্ণিকাই একটি প্রথম ঔষধ এবং যদি অন্য ঔষধ ব্যবহার করার মত নির্দিষ্ট সাধারণ লক্ষণ থাকে, তাহা হইলে আৰ্ণিকাকেই প্রথমে ব্যবহার করিতে হইবে। আর্ণিকা খুব সম্ভবতঃ মচকান সন্ধির সমস্ত ব্যথা সারাইয়া দিবে এবং রোগীকে কয়েক দিনের মধ্যেই হাঁটিতে সক্ষম করিয়া দিয়া সকলকে বিস্মিত করিবে। মচকান সন্ধির কাল ও নীলবর্ণ আশ্চৰ্য্যভাবে অত্যল্প সময়ের মধ্যেই চলিয়া যাইবে। আমি একটে মচকান গোড়ালি দেখিয়াছিলাম, উহা অত্যন্ত নীল ও কাল হইয়া গিয়াছিল, এত ফুলিয়া উঠিয়াছিল যে, জুতা পরা সম্ভব ছিল না। কিন্তু একমাত্র আর্ণিকা দেওয়ার পর, অদ্ভুতভাবে ফুলা চলিয়া গিয়াছিল, বিবর্ণতা মিলাইয়া গিয়াছিল এবং রোগী পায়ের উপর ভর দিয়া দাঁড়াইতে পারিয়াছিল। বাহ্যিকভাবে আর্ণিকা লোশন ব্যবহার করিয়া এরূপ ফল পাওয়া সম্ভব নহে। থেঁৎলাইয়া যাওয়ায়। উচ্চশক্তির আর্ণিকা অত্যন্ত সন্তোষজনক ক্রিয়া করে এবং যদি কোন নির্দিষ্ট বিপরীত লক্ষণ না থাকে তাহার হইলে আর্ণিকাই প্রথম ঔষধ হইবে; কিন্তু এরূপ অবস্থায় কন্ডরাগুলির যে দুর্বলতা থাকিয়া যায় তাহার পক্ষে আর্ণিকা সর্বদা যথেষ্ট নহে এবং সেইজন্য রাসটক্স’ স্বাভাবিক পরবর্তী ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়। যদি সন্ধিস্থানটিতে দুর্বলতা ও কোমলাত থাকিয়া যায়, রাসটক্সের পর ক্যাল্কেরিয়া প্রয়োগ করিবে। অবশ্য কেহ যেন এই সবকয়টি ঔষধ একদিনেই অথবা এক গ্লাসেই ব্যবহার করিও না; কিন্তু রাস টক্স’ দিবার পূর্বে তত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করিও, যতক্ষণ না আৰ্ণিকার সমস্ত উপকার শেষ হইয়া যায়। যে অঙ্গটি আহত হইয়াছে, তাহাতে টনটনানি, অস্থিরতা ও দুর্বলতা উপস্থিত হওয়া একটি সম্পূর্ণ সাধারণ ব্যাপার। এবং সেই সময় ‘রাস টক্সই উপযুক্ত ঔষধ: আবার যে সন্ধি কুচিকিৎসিত হইয়াছে, তাহাতে ক্ষতবৎ বেদনা ও দুৰ্বলতা থাকিয়া যাওয়াও সাধারণ ব্যাপার এবং সেক্ষেত্রে ক্যাল্কেরিয়া রাস টক্সে’র স্বাভাবিক পরবর্তী ঔষধ হইবে। মাঝে মাঝে রোগীর কতকগুলি অদ্ভুত লক্ষণ থাকার দরুণ আমাদিগকে কষ্টিকাম, ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া প্রভৃতি ঔষধের আশ্রয় লইতে হয়, কিন্তু ঐ ঔষধগুলিও অল্পাধিক আর্ণিকা, রাস টক্স’ ও ‘ক্যাল্কেরিয়া’র সহিত সম্বন্ধযুক্ত। অপর একশ্রেণীর আঘাতের জন্য ‘লিডাম’ ও ‘হাইপেরিকামে’র সহিত তুলনা কর।

আর্ণিকা কতকগুলি পুরাতন রোগে, বিশেষতঃ গেঁটেবাত রোগে উপযোগী। পুরাতন গেঁটেবাত রোগীদের, অত্যন্ত স্পর্শকাতরতার সহিত, নূতন করিয়া সন্ধিবেদনা দেখা দেওয়া একটি সম্পূর্ণ সাধারণ ব্যাপার। তোমরা দেখিবে যে, বৃদ্ধ পিতামহ ঘরের কোণে আলাদা হইয়া বসিয়া আছেন এবং এই সময়ে যদি ক্ষুদ্র জনি তাহার দিকে ছুটিয়া যায়, তিনি বলিয়া উঠিবেন, “ওরে, সরিয়া যা, সরিয়া যা।” তাহাকে এক মাত্রা আর্ণিকা দাও; এবং তিনি জনিকে তাহার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িতে দিবেন তিনি চান না যে, কেহ তাহাকে স্পর্শ করুক অথবা কাছে আসুক, তিনি অনুভব করেন যাহা কিছু তাঁহার দিকে আসিতেছে তাহাই তাহাকে আঘাত করিয়া বসিবে। তিনি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হইয়া পড়িয়াছেন, তাহার সন্ধিগুলি বেদনান্বিত ও কোমল হইয়া পড়িয়াছে; এবং তাঁহার ভয় যে, ঐগুলিতে আঘাত লাগিবে।

এই ঔষধে ইরিসিপ্লাস সদৃশ প্রদাহ আছে। যদি তুমি পূৰ্ব্ববর্ণিত মানসিক অবস্থা, ক্ষততা এবং সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ ও থেঁৎলানবৎ বেদনা পাও, তাহা হইলে মুখমন্ডলের বিসর্প রোগে, আর্ণিকা ব্যবহার করিতে আর বিলম্ব করিও না। সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ থেঁৎলানবৎ বেদনা এবং মানসিক অবস্থা অন্য ঔষধের বিরুদ্ধে আৰ্ণিকাকে সমর্থন করিবে। মূত্রগ্রন্থির প্রদাহ, মূত্রাধারপ্রদাহ যকৃতপ্রদাহ এবং নিউমোনিয়া রোগেও ঐ মানসিক অবস্থা এবং সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ এবং থেঁৎলানবৎ বেদনা, তোমাকে বিস্ময়কর কৃতিত্ব লাভের সুযোগ দিবে যদিও আর্ণিকা কখনও ফুসফুস-প্রদাহ রোগ উৎপন্ন করে নাই। ইহাতে তিনটি বিশিষ্ট লক্ষণ, যথা—সর্দিজ অবস্থা এবং বুকে ক্ষতবৎ বেদনাসহ লোহার মরিচার ন্যায় গয়ের, কাশির সহিত দমবন্ধ ভাব, এবং সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ ও থেঁৎলানবৎ ব্যথা আছে, তারপর, উহার সহিত যোগ কর আচ্ছন্নতা এবং মানসিক অবস্থা যাহা যে-কোন যন্ত্রের প্রাদাহিক অবস্থায় বর্তমান থাকে এবং এই ঔষধে বিশেষভাবে পরিস্ফুট থাকে। আমাদিগকে আর আৰ্ণিকার উপর মন স্থির করিবার জন্য রোগনিরূপণতত্ত্বের সূক্ষ্ম বিশেষত্বগুলির জন্য ব্যস্ত হইতে হইবে না।

আৰ্ণিকার মাংসে, ঝোলে এবং দুধে বিতৃষ্ণা আছে। বিশেষ বিশেষ সময়ে ইহাতে প্রবল তৃষ্ণা থাকে, উদাহরণস্বরূপ- সবিরাম জ্বরের শীতের সময় ইহার তৃষ্ণা আছে, কিন্তু অন্য সব সময়ে উহা তৃষ্ণাহীন। “ঘোর লাল বর্ণ চাপচাপ পদার্থ বমন, মুখে তিক্ত স্বাদ, সৰ্বাঙ্গীণ বেদনা।” কাল, কালির ন্যায় পদার্থ বমন।

উদর, যকৃৎ এবং অন্ত্রের প্রদাহ রোগে ফুলিয়া উঠা, বায়ু জমা, অবসন্নতা ও অস্বচ্ছন্দতা প্রবণতা এবং স্থানটি স্পর্শ করা যায় না—এরূপ বেদনা থাকিলে আর্ণিকা উপযোগী। টাইফয়েড রোগেও এরূপ অবস্থা আসিতে পারে। এপেন্ডিসাইটিস রোগে আর্ণিকার লক্ষণগুলি ভুলিও না । যদি তোমার ব্রায়োনিয়া’, রাস টক্স’ ‘বেলেডোনা’, আর্ণিকা এবং অনুরূপ ঔষধগুলির সঙ্গে পরিচয় থাকে, তাহা হইলে তোমাকে প্রত্যেকটি এপেন্ডিসাইটিস রোগীর জন্যই অস্ত্রচিকিৎসকের নিকট ছুটিতে হইবে না। হোমিওপ্যাথিক ঔষধেই এই রোগ আরোগ্য হইবে। এবং যদি তুমি ঔষধগুলিকে চিনিয়া থাক, তাহা হইলে একমাত্র পৌনঃপুনিক আক্রমণ ব্যতীত, অন্য সকল প্রকার এপেন্ডিসাইটিস ক্ষেত্রের জন্য অস্ত্রচিকিৎসককে খুঁজিতে হইবে না। আর যদি ঔষধগুলিকে তুমি না চিনিয়া থাক, তাহা হইলে তুমিও পেট চিরিয়া এপেন্ডিক্সটিকে বাহির করিয়া ফেলিতে হয় এই প্রচলিত ধারণার বশ হইয়া পড়িবে। ইহা একটি শোচনীয় অজ্ঞতা যে, আমরা এপেন্ডিসাইটিসকে ছুরির নীচে সমৰ্পণ করিয়া থাকি।

দুর্গন্ধ আর্ণিকার একটি লক্ষণ; উদগার ও অধঃবায়ুতে দুর্গন্ধ থাকে। মল ভয়ানক দুর্গন্ধ। “রাত্রিকালীন উদরাময়।” “নিদ্রার মধ্যে অসাড়ে মলত্যাগ।” “মলে অজীর্ণ খাদ্য পুঁজময় রক্তাক্ত;’ পিচ্ছিল শ্লেষ্মা”। কাল রক্ত, অত্যন্ত দুর্গন্ধ মল। এখানে, আমরা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে রক্তক্ষরণ প্রবণতা লক্ষ্য করি । কাল বমির সহিত কাল জলবৎ মল । “পরিশ্রম হইতে মূত্ররোধ।” অতি পরিশ্রম, আঘাত, মস্তিষ্কের সঙ্ঘাত, কোন প্রবল দুর্ঘটনা হইতে মূত্ররোধ। মূত্র বাদামি বর্ণ অথবা কালির ন্যায় কাল। “মূত্রপিন্ডে ছুরি ঢুকাইয়া দেওয়ার ন্যায় বিদ্ধকর বেদনা।” “মূত্র অত্যন্ত অম্লধর্ম্মী, তৎসহ আক্ষেপিক গুরুত্বের বৃদ্ধি।

গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের মধ্যে আর্ণিকার আর একটি লক্ষণ পাওয়া যায়। সৰ্ব্বাঙ্গীণ অতি-স্পর্শকাতরতা, ক্ষতবৎ বেদনা ও কোমলতা, উদরমধ্যস্থ যন্ত্রসমূহে, জরায়ুতে এবং বস্তি প্রদেশেই বিশেষভাবে অনুভূত হয়; সে উদরমধ্যে ভ্রূণের সঞ্চালনে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়, ক্ষতবৎ ও থেঁতলানবৎ বেদনা; ভ্রূণের সঞ্চালন এত যন্ত্রণাদায়ক হয় যে, সে সারারাত জাগিয়া থাকিতে বাধ্য হয় আর্ণিকা বেদনা দূর করিবে এবং সে প্রাণের সঞ্চালন বুঝিতেও পারিবে না। ব্যাপারটা প্রাণের অতি-সঞ্চালন নয়, কিন্তু গর্ভিণীরই অনুভবাধিক্য। “প্রসবের পর অবিরত ফোঁটা ফোঁটা মূত্রপাত।”

এই ঔষধের আর একটি সাধারণ লক্ষণ এই যে, রোগীর দেহ শীতল ও মাথা গরম থাকে; সমস্ত দেহ এবং হাত-পা ঠান্ডা থাকে, কিন্তু মাথা গরম বোধ হয়। এই লক্ষণ আকস্মিক রক্তসঞ্চয়, রক্তসঞ্চয়জনিত শীত এবং রক্তসঞ্চয়যুক্ত, সবিরাম জ্বরে পরিস্ফুট থাকে। ইহা কখন কখনও কোন গুরুতর রোগের আক্রমণের পূর্বে দেখা যায় যখন দুই এক রাত্রি দুঃস্বপ্ন ও উৎকণ্ঠা, ভয় ও জড়তা এবং দেহে ক্ষতবৎ বেদনা ব্যতীত রোগের অন্য কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। এই অবস্থা অতিক্রান্ত হইবার পর, দেহের ক্ষতবৎ বেদনা বাড়িতে থাকে এবং শেষে তাহার সর্বাঙ্গ ক্ষতবৎ ও থেঁৎলানবৎ বেদনায় পূর্ণ হইয়া উঠে। শিশুদিগের গুরুতর শৈশবকালীন জ্বরের আক্রমণে আক্ষেপ সম্ভাবনা উপস্থিত হয়, এবং শিশুর মস্তক গরম ও দেহ ঠান্ডা থাকে। অধিকাংশ চিকিৎসকই’ ‘বেলেডোনার কথা চিন্তা করেন, উহাতেও এইরূপ হাত-পা ঠান্ডা এবং মাথা গরম লক্ষণ আছে। যে-সকল শিশু কাহারও স্পর্শ পছন্দ করে না এবং যতবার মাতা, তাহার হাত-পা ধরেন ততবারই চিৎকার করিয়া উঠে, তাহাদিগের ক্ষেত্রে আর্ণিকাকে ভুলিয়া থাকিও না। রোগের ইতিহাসটি একটু লক্ষ্য করিও, দেখিবে যে, ইহা পূর্বোক্ত প্রকার বেদনা, আর যদি তুমি তাহার পোষাক খুলিয়া ফেল, তাহা হইলে তাহার দেহে কৃষ্ণাভ দাগ দাগ দেখিতে পাইবে এবং তাহাতে তুমি আর্ণিকা প্রয়োগের আর একটি অতিরিক্ত সঙ্কেত পাইবে ।

ইহা হুপিং কাশির একটি ঔষধ; তুমি ইহাতে হুপিং কাশির কি কি লক্ষণ আছে তাহা সহজেই আবিষ্কার করিতে পারিবে; স্পর্শে বৃদ্ধি, ক্ষতবৎ, থেঁৎলানবৎ বেদনা, আক্ষেপিক কাশির সহিত রক্ত উঠা অথবা কাল রক্তের ডোরাযুক্ত শ্লেষ্মার সহিত রক্তবমন। শিশুর মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়। শিশু রাগী এবং খিটখিটে। “রাগ ও ছটফটানির সহিত কাঁদিতে আরম্ভ করিলেই কাশি উদ্ৰিক্ত হয়।” “রাত্রিতে কাশির ধমক।” “হুপিং কাশি, শিশু কাশির আবেশ আসার পূর্বেই বেদনার ভয়ে কাঁদিতে আরম্ভ করে। আমরা এতক্ষণ এই ঔষধে যাহা দেখিলাম, তাহা তুমি অনায়াসে বহু রকমের রোগাক্রমণেই প্রয়োগ করিতে পারিবে। হুপিং, কাশিতে সুঁচফোটান যন্ত্রণা, বুকের সর্দি, নিউমোনিয়া, অথবা পুরিসির সহিত প্রদাহিক অবস্থায় বক্ষ বেদনা। ইহাতে আরও রোগক্রান্ত উপসর্গসমূহ আছে—“হৃৎপিন্ডের মেদাপকর্ষ”, হৃৎপ্রদেশে সুঁচফোটান ব্যথা, বামদিক হইতে ডানদিক পর্যন্ত উঁচফোটান ব্যথা। “ক্লান্তি, থেঁৎলান, ক্ষতবৎ বেদনা, অত্যন্ত দুর্বলতা, সে শুইয়া পড়িতে বাধ্য হয়, কিন্তু বিছানাটি অত্যন্ত কঠিন বোধ হয়।”

এই সকল লক্ষণগুলি পুনঃ পুনঃ পাঠ করা উচিত; এই ঔষধে অসংখ্য বিশেষ লক্ষণ আছে’ অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণ কিন্তু তাহারা যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক।

ইহা একোনাইটে’র পর ভাল খাটে এবং একোনাইট’, ইপিকাকুয়েনা’ এবং ভিরেট্রামের অনুপূরক।

অপর নাম – লেপার্ডসবেন (Leopard’s-Bane)

ইহা কম্মোজিটী জাতীয় একপ্রকার বৃক্ষ। এর মূল, ফুল ও পাতাকে একত্রিত করে মূল অরিষ্ট তৈরী করে ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়। কেবল এর ফুল থেকে তৈরী করা মাদার টিংচার ব্যবহার খুব বেশী উপযোগী হয় না। কারণ আর্নিকার ফুলে এক রকমের বিষাক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীট বাস করে; আর এই কীটযুক্ত ফুলজাত মূল অরিষ্ট সেবন করে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কিছু বাস্তবিকক্ষেত্রে আর্নিকা বিষাক্ত নয়, তাই এর লেপার্ডসবেন বা ব্যাঘ্রঘ্ন- বিষ নামের সার্থকতা কি, তা বিচার্য বিষয়। আর্নিকার উপক্ষারের নাম আর্নিসিন।

আর্নিকার – মূলকথা

১। সর্বাঙ্গে থেঁৎলে যাওয়া ও টাটানোর ন্যায় অনুভূতি, স্পর্শাদ্বেষ,

বিছনা অত্যন্ত শক্ত মনে হয়।

২। শুধু মাথা অথবা মাথা ও মুখমণ্ডল গরম; দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠাণ্ডা।

৩। চোট লাগার ফলে কালশিরে (echymoses)।

৪। আচ্ছন্ন নিদ্রা বা সুপ্তি; প্রশ্নের উত্তর দেয়; উত্তর দেওয়ার পরেই আবার সুপ্তি (stupor) (জ্বরে)।

৫। পচা ডিমের মত দুর্গন্ধ স্বাদ, উদগার ও মল।

৬। আঘাত লাগার ফলে, বিশেষ করে চেঁছে যাওয়ার ফলে (contusion) বা মুষ্ট্যাঘাত থেকে উৎপন্ন তরুণ ও পুরাতন রোগে আর্নিকা উপযোগী।

৭। অস্ত্রাঘাত ও যান্ত্রিক আঘাতের ফলে রক্তস্রাব।

আনিকা – পর্যালোচনা

১। আর্নিকা চোট লাগা ও তার পরিণামের ফলে উৎপন্ন সকলপ্রকার রোগের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। “দুৰ্বলতা, ক্লান্তি, থেঁৎলে যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি এর প্রধান লক্ষণ।”

“মনে করে যেন সমস্ত শরীর থেঁৎলে গেছে।”

এই লক্ষণটি ঔষধটি পরীক্ষার সময় পাওয়া গেছে। এই লক্ষণ অনুসারে বহু তরুণ ও পুরাতন (উভয়প্রকার) রোগকেই এর উচ্চক্রম ও নিম্নক্রম শক্তিকেই ব্যবহার করে আরোগ্য করা গেছে।

২। এর আর একটি চরিত্রগত লক্ষণ হল –“রোগী যার উপরে শুয়ে থাকে, তাহাই অত্যন্ত শক্ত বলে মনে হয় (পাইরোজেন)। তাই উপশম পাওয়ার জন্য রোগী অবিরত অবস্থান পরিবর্তন করে। তবে এর প্রধান কারণ রোগী বোধ করে, যেন তার সর্বাঙ্গ থেঁৎলে গেছে।

খ) ব্যাপ্টিসিয়ার রোগী মনে করে, “যেন সে তক্তার উপর শুয়ে আছে, আর এজন্যই সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে, তাছাড়া বিছানা এত শক্ত মনে হয়, যেন তার জন্যই তার দেহে এত টাটানো ব্যথা হয়েছে ও থেঁৎলে গেছে।

গ) ফাইটোলাক্কার রোগী মনে করে, তার সারা দেহ মাথা থেকে পা পৰ্য্যন্ত টাটানো ও আড়ষ্ট, সে কাতর শব্দ না করে নড়তে পারে না।

ঘ) রাসটাক্সে আছে দেহের প্রতিটি পেশী যেন টাটানো, উহা নড়াচড়ায় চলে যায়। কিন্তু প্রথম নড়াচড়া আরম্ভ করার সময় আড়ষ্টতা ও টাটানো বোধ থাকে।

ঙ) রুটায় – শরীরের যে যে স্থানের উপর ভর দিয়ে শোয়, তাহাই বেদনান্বিত ও টাটানো বোধ হয়।

এই পাঁচটি ঔষধ অনেকটা একরকম দেখতে। অন্যান্য ঔষধেও এইরকম লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন –

চ) স্ট্যাফিসাগ্রিয়ায় সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ টাটানো, যেন থেঁৎলে গেছে, যেন ওদের কোন শক্তি নেই।

ছ) চায়নায় – সৰ্ব্বশরীর টাটানো ব্যথা, সন্ধিসমূহে, অস্থিতে ও অস্থিবেষ্টে বেদনা, যেন ওগুলি মচকে গেছে, এরূপ বোধ। বিশেষ করে মেরুদণ্ড, ত্রিকাস্থি (Sacrum), হাঁটু ও উরুদেশে এক প্রকার টেনে ধরার ন্যায় বা ছিঁড়ে ফেলার ন্যায় বেদনা।

মন্তব্য –

এখন, এই ঔষধগুলি সম্বন্ধে এতদূর পর্যন্ত জানলেও চিকিৎসকের বিশেষ কিছু লাভ হবে না। কারণ এইগুলিকে সকলে তো আর মিশিয়ে ব্যবহার করবেন না বা হোমিওপ্যাথিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় না। তবে উপযুক্ত কারণ পেলে এদের পার্থক্য নিরূপণ করে ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এই পার্থক্য নির্ণয় করা সব সময় সহজ হয় না। যেমন দেখুন, আর্নিকা ও ব্যাপ্টিসিয়া; দু’টি ঔষধেই থেঁৎলে যাওয়ার মত টাটানো ব্যথার অনুভূতি আছে। উভয়েই বিছানাকে অতিরিক্ত শক্ত মনে করে। উভয়েরই আচ্ছন্ন নিদ্রা বা সুপ্তি আছে, তা থেকে রোগীকে জাগাতে পারা যায়; কিন্তু পরক্ষণেই আবার রোগী ঘুমিয়ে পড়ে। উভয়েরই জিহ্বার এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত একটি টানা মলিনবর্ণের রেখা দেখতে পাওয়া যায়। উভয়েই মুখমণ্ডল গাঢ় লাল। এইসকল সাদৃশ্য প্রায়ই টাইফয়েড জ্বরের ভোগকালে দেখা যায়। কিন্তু কেমন করে এদের পার্থক্য করতে হবে – তা একটু দেখা যাক।

ব্যাপ্টিসিয়া ও আর্নিকার পার্থক্য –

যদি উপরোক্ত লক্ষণের সঙ্গে রোগী বিছানায় এপাশ ওপাশ করে, এদিক ওদিক হাত বাড়ায় ও প্রলাপের মধ্যে অভিযোগ করে যে, সে তার দেহের খণ্ডগুলিকে একত্রিত করতে পারছে না, তাহলে ব্যাপ্টিসিয়াই এর ঔষধ। অথবা যদি মলমূত্র, ও ধর্ম অতিশয় দুর্গন্ধ যুক্ত হয়, তাহলেও উহা ব্যাপ্টিসিয়া। কিন্তু মলমূত্র যদি অসাড়ে নির্গত হয় এবং চর্মের নীচে ছিঁচে যাওয়ার ন্যায় নীল বা কাল কাল দাগ দেখা যায়, তাহলে আর্নিকা ব্যবস্থেয়।

এখানে কয়েকটি মাত্র প্রভেদক বিশেষ লক্ষণ দেওয়া হল। কিন্তু আরো এরূপ লক্ষণ আছে, যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে এই দুটি ঔষধের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়; কিন্তু হাইওসায়ামাস ও ওপিয়ামের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা বেশ কষ্টকর।

৩। ডিপথিরিয়া –

যদি ডিপিথিরিয়া গল-লক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে গলায় স্পষ্ট থেঁৎলে যাওয়ার অনুভূতি থাকে, তাহলে আর্নিকা নিৰ্বাচিত ঔষধ হবে না, ঔষধ হবে ফাইটোলাক্কা। ফাইটোলাক্কাতে আর্নিকার মত “মাথা ও মুখমণ্ডলের উত্তপ্ততা ও আরক্ততা, অথচ শরীর ও হাত-পায়ের শীতলতা লক্ষণটি আছে। আমি ডিপথিরিয়ার বহু রোগীকেই প্রথমেই ফাইটোলাক্কা দিয়ে আরোগ্য, করেছি। এখানে আমাকে অন্য ঔষধের সাহায্য নিতে হয়নি।

তবে যদি এমন রোগী দেখি, যার টাটানো ও থেঁৎলে যাওয়ার অনুভূতি আছে এবং সে ঘর্মাবস্থায় ভিজেছিল, গা ধুয়েছিল অথরা আর্দ্র মেঝেতে বা আর্দ্র বিছানার চাদরে শুয়েছিল কিংবা পেশীতে চাড় লাগয় একপ্রকার থেঁৎলে যাওয়ার মত অনুভবের উৎপত্তি হয়েছে, তাহলে রাসটাক্স তার ঔষধ, আর্নিকা নহে।

৪। উপঘাতে –

প্রকৃত উপঘাতে অর্থাৎ আঘাত পাওয়ার পর অস্থিতে বা অস্থিবেষ্টে থেঁৎলে যাওয়ার অনুভুতি জন্মালে রুটাই উপযোগী। তাছাড়া অক্ষিপুটের পেশী অর্থাৎ চোখের পেশী সমূহের অতিরিক্ত চালনায় রাসটাক্স অপেক্ষা রুটাই উপকারী।

বিঃ দ্রঃ – আমি সেলাইকারিণী মেয়েদের ও অধ্যয়নরত ছাত্রদের চোখের বেদনা রুটা দ্বারা আরোগ্য করেছি, তাছাড়া চশমা ব্যবহার না করে একোমোডেশনের ক্ষীণতা বা প্রতিযোজনা শক্তির দুর্বলতা রুটা ব্যবহারে আরোগ্য, করেছি; কিন্তু বিশুদ্ধ চক্ষুরোগ সংক্রান্ত দৃষ্টি ক্ষীণতায় এই ঔষধে উপকার হয় নি।

এইভাবে আমরা বিশেষ একটি লক্ষণ বিশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন ঔষধের মধ্যে প্রভেদক লক্ষণগুলির উল্লেখ করতে পারি। কিন্তু যথেষ্ট সময় ও স্থান না থাকায় ও এরকম করাও ঠিক নয় ভেবে, কারণ প্রত্যেক চিকিৎসকেরই তার নিজের জন্য এরকম পার্থক্য করা অভ্যাসের জন্য এখানেই একে ত্যাগ করলাম।

৫। আর্নিকার টাটানো যেন থেঁৎলে গেছে, এরূপ বেদনায় অনুভূতিতে এর উপযোগি সম্বন্ধে বলা যায়; এটি তরুণ বা পুরাতন উপঘাতের ফলে উৎপন্ন যে কোন রোগেই উপকারী। বিশেষ করে কনকাশান বা সংঘর্ষণ (concussion); মাথার খুলির হাড় ভাঙ্গায় (fracture) ও মস্তিষ্কের চাপ লাগায় (compression); দীর্ঘকাল স্থায়ী শিরপীড়ায়, মেনিনজাইটিসে, সন্ন্যাস রোগে, কাল বা নীল দাগযুক্ত চক্ষু প্রদাহে এমনকি রেটিনার রক্তস্রাবে বধিরতায়, নাসিকার রক্তপাতে, দাঁত পড়ে যাওয়ায়, পাকস্থলী বা অন্য কোন অভ্যন্তরীক যন্ত্রের উপর আঘাত লাগায় আর্নিকা উপযোগী।

রোগী বিবরণী –

আমি একসময়ে একটি লোককে আরোগ্য করেছিলাম, যে কয়েকবছর ধরে ডিসপেপসিয়ায় ভুগছিল। সে পর্যাপ্ত পরিমাণে আহার করতে পারত না, ফলে তার কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে গিয়েছিল এবং সে তার কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এতে অর চিকিৎসকরা বলেছিনে যে, সে আর সারবে না। তাছাড়া তারও আরোগ্যর আশা ছিল না। কিন্তু পাকস্থলী প্রদেশে একটি ঘোড়ার পদাঘাতে তার এইরোগ জন্মেছিল বলে তাকে আমি আর্নিকা ২০০ শক্তির কয়েকমাত্রা ঔষধ দিই এবং তাতেই অল্প সময়ে মধ্যে সে সুস্থ হয়ে যায় এবং পূনরায় সে কাজে যোগ দেয়।

আর্নিকার আরো কয়েকটি চরিত্রগত লক্ষণ নীচে দেওয়া হল, যে সমস্ত লক্ষণগুলি অত্যন্ত মূল্যবান ও খাঁটি।

আর্নিকার বিশেষ লক্ষণ-

১। অজ্ঞাতসারে মল-মূত্র নিঃসরণ সহকারে সুপ্তি বা আচ্ছন্ন নিদ্রা (stupor)।

২। কেউ কাছে এলে ছুঁয়ে দেবে বা আঘাত লেগে যাবে, এরূপ ভয়।

৩। মুখ থেকে পচা গন্ধ বের হয়।

৪। পচা ডিমের মত দুর্গন্ধ উদ্গার ও আধোঃবায়ু (flatus) নিঃসরণ।

৫। জরায়ু প্রদেশে থেঁৎলে যাওয়ার ন্যায় ব্যথা, সেজন্য সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না।

৬। প্রসবের পর জনাঙ্গে টাটানি, রক্তস্রাব রক্তদুষ্টি (পায়িমিয়া) এতে

নিবারিত হয়।

৭। কাশি, কাশির প্রত্যেক আবেশের আগে (বেদনা বশতঃ) শিশু কেঁদে উঠে।

৮। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় উত্তর শেষ না হতে হতেই গভীর সুপ্তিতে অভিভূত হয়ে পড়ে।

৯। কেবলমাত্র, বা কেবল মুখমণ্ডল গরম, অবশিষ্ট শরীর ঠাণ্ডা।

১০। বেদনাবিশিষ্ট বা অত্যন্ত স্পর্শ-দ্বেষ সংযুক্ত একটার পর একটা

অনেকগুলি ছেট ছোট ফোঁড়ার উৎপত্তি।

১১। এর দ্বারা পুঁজোৎপত্তি ও সেপ্টিসিমিয়া নিবারিত হয় ও আশোষণ (absorption) ক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

এইগুলি আর্নিকার প্রকৃত বিশেষ লক্ষণ এবং চিকিৎসাকালে অতীব প্রয়েজনীয়।

Arn : Arnica Montana
Trauma or injury remedy. Painful bruised, sore feeling.Foulness. Haemorrhagic.


A/F:

-Bad effects of mechanical INJURIES, even if received years ago

-Falls and blows

-Concussions and contusions

-Injury due to blunt instruments

-Mental or physical trauma

-Excessive use of any organ

-Hard work (over exertion)

-Stings

-Sprains

-Traumatism of grief, remorse or sudden realization of financial loss

-Mental shock

-Fright, anger, repentance

-Jarring

-Labour

-Charcoal vapour

-Spirituous liquor

-Excessive venery


MODALITIES:

< From least touch

< Old age

< Rest

< Alcohol

< In damp cold weather

< Shock

< Lying on left side

< Jarring

< After labour

< Motion

< After sleep

< Wine

> Uncovering

> Open air

> Cold bathing

> Lying down and lying with head low or outstretched


MIND:

– Says there is nothing the matter with him, sends the doctor away.

– Can be aroused from stupor, answers correctly and slips into coma.

– Fear of being struck or touched or approached (in Gout). Fear of wind, sudden death.

– Says NOTHING AILS HIM. Wants to be let alone.

– Stupor with involuntary discharge of urine and stool.


GUIDING INDICATIONS:

-Acts best in sanguine, plethoric persons, feebly in debilitated persons with impoverished blood.

-TRAUMATIC remedy par excellence. Trauma in all its varieties – mental or physical, and their effects, recent or remote.

-Sore, lame, BRUISED feeling all over body as if beaten. Hard bed sensation (Bapt, Rhus-t, Pyrog). Sore pain when touched.

-Very much OVERSENSITIVE TO PAIN.

-Everything on which patient lies seems too hard (Pyrog.).

-HEAD HOT WITH COLD BODY. (Bell, Verat-v, Glon). Great coldness of nose.

-In acute case of injury – controls haemorrhage, promotes reabsorption of extravasated blood, prevents suppuration and septic condition and helps in recovery of parts.

-Discharges are FOUL – breath, taste, flatus, stools etc. Putrid odours of ROTTEN EGGS.

-Ascending type of rheumatism. (Led.).

-MIND and uterine symptoms alternate.

-HAEMORRHAGIC tendency. Blood vessels are relaxed, causing ecchymosis, petechiae. Every little hurt makes a BLACK AND BLUE SPOT.

-SYMMETRICAL ERUPTIONS; indurated. Very sore acne or CROPS OF SMALL BOILS (Ichth, Sil.).

-Physically restless but mentally prostrated and APATHETIC.

-dysentery WITH LONG INTERVAL between stools (4 – 6 hrs.).

-Cough causes bloodshot eyes or epistaxis. Child cries before coughing as if aware of the soreness it will cause. Horror of instant death with cardiac distress at night.


KEYNOTES:

1. Hot head with cold body. Icy coldness of nose.

2. Putrid foul discharges.

3. dysentery with long interval between stools.

4. Symmetrical eruptions.

5. Ribbon like stools due to enlarged prostate or retroverted uterus.

6. Fears being struck by those coming near him.

7. Many boils painful one after another.


NUCLEUS OF REMEDY:

– Trauma- mental or physical with extravasation of blood.

– Sore, lame, bruised sensation.

– Black and blue spots.

– Foul discharges.


CLINICAL:

-First drug to be considered in APOPLEXY. Concussion of brain.

-EXTRAVASATION OF BLOOD in injuries or surgery.

-Epistaxis from washing face.

-Sprain (Bry, Rhus-t).

-Delivery-to start labour pains

-Bruised feeling after delivery.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Complementary : Acon.

Followed Well By : Acon, Ars, Bry, Ip, Rhus-t.

Follows Well : Acon, Apis, Ip, Verat.

Compare : Abrot, Absin, Calen, Cham, Cina, Gnaph.

Similar : Acon, Am-c, Ars, Bapt, Bell, Bry, Calen, Cham, Chin, Croto-t, Euphr, Ham, Hep, Hyper, Ip, Led, Merc, Puls, Ran-s, Rhod, Ruta, Sil, Staph, Sul-ac, Sulph, Symph, Verat.

Antidoted By : Acon, Ars, Camph, Chin, Ign, Ip.

It Antidotes : Am-c, Chin, Cic, Ferr, Ign, Ip, Seneg.

Duration Of Action : 6-10 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *