Ars | শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা, রোগের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত অস্থিরতা বর্তমান থাকে। |
Ars | রোগের কারণে মৃত্যুভয়, ক্যানসার হওয়ার ভয়। |
Ars | আক্রান্ত স্থানে জ্বালা, উত্তাপ প্রয়োগ করলে জ্বালা ও ব্যথার উপশম কিন্তু মাথায় ঠান্ডা পানি দিলে উপশম। |
Ars | অত্যন্ত পিপাসা কিন্তু বার বার অল্প মাত্রায় পানি পান করে, পুরাতন রোগে পিপাসা থাকে না। |
Ars | অতিমাত্রায় দুর্বলতা ও অবসাদ, মধ্য রাত বা মধ্য দিবসের পরে রোগের বৃদ্ধি। |
Ars | সময়ানুবর্তিতা, রোগ ঠিক একদিন, দুইদিন, তিনদিন, এক সপ্তাহ বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশ পায়। |
Ars | শরীরের সকল স্রাব পরিমাণে অল্প, তরল, ক্ষয়কর ও পচা মাংসের মত দুর্গন্ধ যুক্ত। |
অত্যন্ত অবসন্নতা, সাথে জীবনী শক্তির দ্রুত ক্ষয়, মূর্চ্ছা।
এইরূপ প্রকৃতি : (ক) অবসাদ, বিষন্ন, হতাশ ও উদাসীন।
(খ) উদ্বেগ, ভীত, অস্থির, বিরক্তিপূর্ণ।
(গ) খিটখিটে, অনুভূতি প্রবণ, অল্পেই বিরক্তি, অল্পেই রাগ।
যন্ত্রণা যত বাড়ে, উদ্বেগ, অস্থিরতা ও মৃত্যুভয় ততই বাড়তে থাকে। মানসিক ভাবে অস্থির কিন্তু শারীরিকভাবে এতই দুর্বল যে নড়াচড়া করতে পারে। শুধুই জায়গা পরিবর্তন করতে থাকে। এক বিছানা থেকে অন্য বিছানায় যেতে চায়, একবার এখানে আর একবার সেখানে শুতে চায়।
উদ্বেগ, মৃত্যুভয়— মনে করে ওষুধ খেয়ে কোন লাভ হবে না, এ রোগ সারবে না—নিশ্চিতভাবে সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; একা থাকলে বা শুয়ে থাকলে মৃত্যুভয় হয়। উৎকণ্ঠায় রাত্রে বিছানা হতে উঠে পড়ে—এই ভাব মধ্যরাতের পর বাড়ে।
যন্ত্রণায় জ্বালা থাকে; আক্রান্ত অংশ আগুনের মত জ্বালা হয়—মনে হয় কেউ জ্বলন্ত কয়লা রেখে দিয়েছে (এনথ্রাসিন) এই জ্বালা উত্তাপে, গরম পানীয়ে, গরম কিছু বাহ্য প্রয়োগে উপশম হয়। পিপাসায় গলা, বুক জ্বালা করে কিন্তু জলপানের ইচ্ছা ততটা নয়; পাকস্থলী যেন জল সহ্য করতে পারে না, ঠান্ডা জল হজম হয় না, ঠান্ডা জল যেন পাথরের মত শক্ত হয়ে পড়ে থাকে, সে জল চায় ঠিকই কিন্তু পান করতে পারে না, পান করতে সাহসেও কুলায় না (কারণ জল খেলেই আবার বমি হয়ে যাবে, তার কষ্ট বাড়বে)।
খাদ্যদ্রব্য দেখা বা তার গন্ধ সহ্য করতে পারে না (কলচি, সিপিয়া)। ঠান্ডা জলপানের খুব ইচ্ছা, বারে বারে জল খায় কিন্তু প্রতিবারে অতি অল্প পরিমাণে। খায় বারে কম কিন্তু পরিমাণে অনেকটা। ঠান্ডা ফল, আইসক্রিম, বরফজল, টক বিয়ার জাতীয় মদ, পচা মাংস, মদজাতীয় পানীয়, কড়া পনির প্রভৃতি খেলে পেটের গন্ডগোল দেখা দেয়।
দাঁত ওঠার সময়ে শিশু ফ্যাকাশে, দুর্বল, খিটখিটে হয়ে যায়, কোলে উঠে তাড়াতাড়ি বেড়াতে বলে । উদরাময় – খাওয়াদাওয়া ও পানের পর; মল সামান্য কালচে রঙ, দুর্গন্ধ; মলত্যাগ বেশীই হোক বা কমই হোক মলত্যাগের পরে অত্যন্ত অবসন্নভাব।
অর্শরোগ – নড়াচড়ায় ও বসে থাকলে (রেকটামে) সূঁচফোটানো যন্ত্রণা কিন্তু মলত্যাগের সময় কোন যন্ত্রণা থাকে না। যন্ত্রণায় বসে থাকতে বা ঘুমাতে পারে না। যন্ত্রণায় জালা থাকে—গরমে উপশম পায়। মলদ্বার ফেটে যায় সেজন্য প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়।
শ্বাসপ্রক্রিয়া – হাঁপানী রোগীর মত, রোগী বসে থাকতে বা সামনে ঝুঁকে বসে থাকতে বাধ্য হয়, রাতে বিশেষ করে রাত ১২ টার পর বিছানায় লাফ দিয়ে উঠে বসে; দম বন্ধ হয়ে যাবে—এই ভয়ে শুতে পারে না। সাধারণ আমবাতের পরিবর্তে কুপ কাশির মত কাশি হলে প্রযোজ্য।
রোগী খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, ঠান্ডা ঘাম হয় ও সাথে ভীষণ দুর্বলতা (টিউবার, ভিরেট্রাম); আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায়, পুঁয়ে পাওয়া রোগ (ম্যারাসমাস-হাড়ের উপর শুধু চামড়া, মাংস একদম থাকে না, চামড়া ভাঁজ ভাঁজ হয়ে ঝুলে পড়ে, খেতে পারে না, খেলে সহ্য হয় না আবার খেতে পারলেও গায়ে লাগে না)
সর্বাঙ্গীন শোথ, চামড়া ফ্যাকাসে, মোমের মত, এঁটেল মাটির মত গায়ের রঙ (এসেটি-এসি)। সামান্য পরিশ্রমে অত্যন্ত অবসন্নভাব।
স্থিরভাবে শুয়ে থাকলে কোন অবসন্নভাব থাকে না কিন্তু সামান্য নড়াচড়া করলে ভীষণ অবসন্নতা বোধ করে। রোগী নিজে আশ্চর্যবোধ করে। এতে আশ্চর্য হয়ে যায়, রোগ লক্ষণ সাধারণতঃ বেলা ১টা হতে ২টা ও রাত ১২টা হতে ২টার মধ্যে বাড়ে।
গায়ের চামড়া শুকনো, আঁস ওঠে, ঠান্ডা, নীলচে, কুঁচকে যায় সেই সাথে ঠান্ডা চটচটে ঘাম। চামড়া পার্চমেন্ট কাগজের মত সাদা ও চটচটে, চামড়ার ওপর কালচে ফুস্কুরী এবং জ্বালা ও ব্যথা থাকে ।
পার্চমেন্ট কাগজ বা চামড়া – চামড়া রঙের আগে কাঁচা চামড়ায় রাসায়নিক সহযোগে চামড়া পরিস্কার ও শুকানো হয়, কোন ভাঁজ থাকলে তা টান টান করা হয় একে ষ্টেইনিং বলে। (ষ্টেইন করা হলে চামড়া শুকনো খড়খড়ে হয়, সেটাই ঐ কাগজ) পচা খাবার বা মৃত জৈব পদার্থ সহযোগে টীকা দেওয়া, শোঁকা, অথবা দেহের ভেতর ঢুকে গিয়ে তার কুফলে। রোগ প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে (কার্ব-ডে; ল্যাকে, সালফ, থুজা)।
সম্বন্ধ – অনুপূরক- এলি-সেপা, কার্ব-ভেজ, ফস, পাইরো। তামাক খেলে, মদ খেয়ে, সমুদ্রে স্নান করে, বিষাক্ত খাবার খেয়ে, শবব্যবচ্ছেদে, এনথ্রাবস বিষ সংক্রমণে, বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ে যে কোন রো হলে আর্সেনিকের কথা চিন্তা করা উচিত।
বৃদ্ধি – মাঝ রাতের পর (বেলা বা রাত ১টা হতে ২ টা) ঠান্ডায়, ঠান্ডা খাদ্য বা পানীয়ে, আক্রান্ত অঙ্গ চেপে শুলে, বা মাথা নীচু করলে বাড়ে।
উপশম – সাধারণভাবে গরমে (বিপরীত সিকেল) মাথাব্যথা গরমে উপশম হয় না, ঠান্ডা জলে ধুলে সাময়িকভাবে মাথা যন্ত্রণার উপশম হয়। (স্পাইজে) জ্বালাযুক্ত ব্যথা গরমে উপশম হয়।
উপশম হয়।
শক্তি — ৩x, ৬, ৩০, ২০০।
শরীরের প্রতিটি যন্ত্র ও কলায় স্পষ্ট ও গভীরভাবে এই ঔষধটি কাজ করে থাকে। এর নিখুঁত বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লক্ষণাবলী এবং এই লক্ষনাবলীর সঙ্গে নানাপ্রকার রোগের লক্ষণাবলীর সাদৃশ্য থাকায়, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এই ঔষধ প্রায়ই প্রয়োজন হয় এবং এই ঔষধের ক্রিয়াও সুনিশ্চিত। এই ঔষধের সাধারণ লক্ষণগুলিই অনেক সময় ঔষধটি নির্বাচন করতে সাহায্য করে এবং এই লক্ষণাবলীর উপর নির্ভর করে যে নির্বাচন তা উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়। এই সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে সর্বাঙ্গীন দুর্বলতা, অবসাদ, এবং অস্থিরতা তৎসহ রাত্রিকালীন বৃদ্ধি, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। সামান্য পরিশ্রমে অত্যধিক ক্লান্তি। এই লক্ষণটি, তৎসহ শারীরিক তন্তুগুলির এক অদ্ভুত ধরনের উত্তেজনা, মিলে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণের সৃষ্টি করে, উত্তেজনার সঙ্গে দুর্বলতা। জ্বালাকর যন্ত্রণা। অতৃপ্ত পিপাসা। জ্বালা উত্তাপ প্রয়োগে উপশম। সমুদ্রতীরে থাকার ফলে উপসর্গ সমূহ (নেট্রাম মিউর,অ্যাকোয়া মেরিনা)। ফল খাওয়ার পর ক্ষতিকর ক্রিয়া, বিশেষতঃ অতিরিক্ত জল যুক্ত ফল খাওয়ার পর। যদি উচ্চশক্তিতে এই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। তবে রোগী। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্থিরভাব ও শান্তভাবে থাকতে পারবে। ভয়, ভয় পাওয়া ও আতঙ্ক। সবুজরঙের স্রাব।
শিশুদের কালাজ্বর। (ডাঃ নেটবি)। অতিরিক্ত মদ্যপানের কুফল, টোমেইন (পচা মাংসের ভিতর প্রাপ্ত উপক্ষার বিশেষ) বিষক্রিয়া, হুলফুটা, শব ব্যবচ্ছেদ ক্ষত, কাঁচা তামাক পাতা চিবানো থেকে সৃষ্ট উপসর্গে আর্সেনিকের কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, পচা খাদ্যবস্তু অথবা পচা প্রানীজ বস্তুর কুফল, স্রাব পচা গন্ধযুক্ত, যেসব উপসর্গ প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসে। রক্তাল্পতা ও ক্লোরোসিস। শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতাযুক্ত। অপুষ্টিজনিত কারণে ক্রমশঃ শরীরের ওজন কমে যাওয়া। রক্তের কার্যকরী ক্ষমতার লোপ (চায়না ও ফেরাম ফস)। শরীরের যে কোন অংশে রোগ প্রকাশ পাক না কেন। যদি কোন ম্যালিগন্যান্ট বা উৎকট বিষাক্ত রোগের প্রভাবে শরীর আক্রান্ত হয়, সেই ক্ষেত্রে আর্সেনিক শারীরিক তন্ত্রসকল সংরক্ষন করে থাকে। ম্যালেরিয়ার ফলে শারীরিক বিকৃতি। দুষিত রোগ সংক্রমণ বা সেপটিক ইনফেকশন এবং দুর্বল জীবনীশক্তি।।
মন – তীব্র মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রনা এবং অস্থিরতা। সর্বদা স্থান পরিবর্তন করে। মৃত্যুভয়, একা থাকতে ভয়। মারাত্মক ভীতি, তৎসহ ঠাণ্ডা ঘাম। রোগী ঔষধ খাওয়া নিরর্থক বলে মনে করে। আত্মহত্যার সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা। নিরাশা রোগীকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। কৃপন, হিংসা পরায়ন, স্বার্থপর, উৎসাহ বা সাহসের অভাব। সার্বিক স্পর্শাধিক্যের বৃদ্ধি (হিপার)। বিশৃঙ্খলা ও এলোমেলোভাব কিছুতেই সহ্য হয় না।
মাথা – মাথার যন্ত্রণা ঠাণ্ডায় কমে, কিন্তু অন্য উপসর্গ ঠাণ্ডায় বাড়ে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাথায় জ্বালাকর যন্ত্রণা, তৎসহ অস্থিরতা, তৎসহ গাত্রত্বক ঠাণ্ডা। আধকপালে, তৎসহ মাথার চামড়ায় বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা অনুভূতি ও প্রচণ্ড দুর্বলতা মুক্ত বাতাসে মাথা খোলা থাকা সহ্য হয় না। মাদকাসক্তের মত প্রলাপ বকা, অভিশাপ দেয় ও ভুল বকে, বদভ্যাসযুক্ত। মাথা সর্বদা নড়াতে থাকে। মাথার চামড়ায় অসহ্য চুলকানি, মাঝে মাঝে গোলাকার টাক, কর্কশ, মলিন, স্পর্শকাতর ও শুষ্ক আঁশের মত খুস্কি দ্বারা মাথার চামড়া ঢাকা থাকে, রাত্রিতে জ্বালা করে ও চুলকায়, মরামাস। মাথার চামড়া বা স্ক্যাল্প অত্যধিক স্পর্শকাতর, এমনকি চিরুনীর সাহায্যে মাথা আঁচড়াতে পর্যন্ত পারে না।
চোখ – চোখের ভিতর জ্বালা তৎসহজাকর চক্ষুস্রাব। চোখের পাতা লালবর্ণযুক্ত। ক্ষতযুক্ত, মামড়িযুক্ত, আঁশযুক্ত, দানাদ্বারা ঢাকা থাকে। চোখের চারিপাশে শোথ। বাইরের অংশে প্রদাহ, তৎসই তীব্র বেদনা, জ্বালাকর, উত্তপ্ত ও হাজাকর অশ্রুস্রাব। কর্ণিয়ার ক্ষত। তীব্র আলোকাতঙ্ক, বাহ্যিক গরমে উপশম বোধ করে। চোখের সিলিয়ারী পেশীর স্নায়ুশূল, তৎসহ জ্বালাকর যন্ত্রণা।
কান – কানের ভিতরের চামড়া হাজাকর ও জ্বালা করে। পাতলা, হাজার, দূর্গন্ধযুক্ত পুঁজ। কানের যন্ত্রনার সময়, কানের ভিতর ঝন্ঝন্ শব্দ হওয়া।
নাক – পাতলা, জলের মত, হাজাকর নাসিকা স্রাব। মনে হয় নাক বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁচির পরে উপশম হয় না। হে ফিভার ও সর্দি, মুক্ত বাতাসে বৃদ্ধি, ঘরের ভিতর উপশম। জ্বালা এবং রক্তপাত। নাকের উপর ব্রণ। নাকের চারপাশে বিষাক্তক্ষত বিশেষ।
মুখমণ্ডল – স্ফীত, ফ্যাকাশে, হলুদবর্ণ, রোগা, মুখমণ্ডল ভিতরের দিকে ঢোকা বা কোটরগত, শীতল ও ঘামে আবৃত থাকে। (এসেটিক অ্যাসিড)। মুখে যন্ত্রণার ছাপ। ছিড়ে ফেলার মত, সূঁচ ফোটানোর মত যন্ত্রণা। ঠোঁট কালো, ক্রুদ্ধ, গালের উপর গোলাকার উজ্জ্বল আভা।
মুখগহ্বর — মুখের ভিতর অস্বাস্থ্যকর, মাড়ী থেকে সহজেই রক্তপাত হয়। মুখের ভিতর ক্ষত তৎসহ শুষ্কতা ও জ্বালাকর উষ্ণতা। ঠোঁটের উপর অর্বুদ বা এপিথিলিএম্যা। জিহ্বা শুষ্ক, পরিষ্কার ও লাল, জিহ্বাতে সূঁচ ফোটানোর মত, ও জ্বালাকর বেদনা, ক্ষতযুক্ত জিহ্বা তৎসহ নীলচে বর্ণ। রক্তমিশ্রিত লালাস্রাব। দন্তশূল, মনে হয় দাঁতগুলি আয়তনে বড়ো হয়ে যাচ্ছে ও তীব্র টাটানি ব্যথা, মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধি, গরমে উপশম। মুখের ভিতর ধাতব পদার্থের মত আস্বাদ। মুখের ভিতর উঠে আসা জ্বালাকর জল রোগী ঢক করে গিলে ফেলে।
গলা – স্ফীত, শোথযুক্ত, সঙ্কুচিত, জ্বালা, ঢোক গিলতে অক্ষম। ডিফথিরিয়া রোগের কৃত্রিমঝিল্লী, দেখতে অনেকটা সুষ্ক ও কোঁচকানো।
পাকস্থলী – কিছুতেই খাবারের দৃশ্য বা গন্ধ সহ্য করতে পারে না। প্রচুর পিপাসা, প্রচুর জল পান করে, কিন্তু একসঙ্গে অল্প পরিমানে। বমি বমি ভাব, ওয়াক তোলা, বমি, খাবার পরে অথবা কোন কিছু পান করার পরে। পাকস্থলীর উপরের অংশে উদ্বেগ। জ্বালাকর যন্ত্রণা। অম্ল ও কফি পানের প্রবল ইচ্ছা। গলা বুক জ্বালা, মুখের ভিতর ভুক্ত খাদ্য বস্তু যা উঠে আসে তার আস্বাদ টক ও তিতে এবং রোগী তা ঢক্ করে গিলে ফেলে। দীর্ঘস্থায়ী ঢেকুর তোলা। রক্তবমন, পিত্তবমন, সবুজ শ্লেষ্মা বমন অথবা বমি কালচে বাদামীবর্ণযুক্ত তৎসহ রক্তমিশ্রিত। পাকস্থলী অত্যন্ত উত্তেজিত, মনে হয় পাকস্থলীর ভিতর ক্ষত তৈরী হয়েছে, যেন ছিঁড়ে যাবে। সামান্য খাদ্যে বা পানীয়ে পাকস্থলীর বেদনা। ভিনিগার, অম্ল, আইসক্রিম, বরফ, জল, তামাক প্রভৃতির কুফলে অজীর্ণ। তীব্র ভীতি ও শ্বাসকষ্ট তৎসহ পাকস্থলীর বেদনা, এছাড়াও মূর্চ্ছা, ও শরীর বরফের মত ঠাণ্ডা, প্রচণ্ড অবসাদ। ম্যালিগন্যান্ট জাতীয় লক্ষণাবলী। যা কিছুই খাওয়া হোক না কেন মনে হয় তা খাদ্যনলীতে আটকিয়ে আছে এবং ঐ স্থান থেকে কিছুতেই নিচের দিকে নামেনা। শাকসজি জাতীয় খাবার খাওয়ার কুফল, তরমুজ, ও জলযুক্ত ফল খাবার কুফল। দুধ খাবার ইচ্ছা।
উদর – দংশনবৎ, জ্বালাকর বেদনা, যেন মনে হয় পেটের ভিতর জ্বলন্ত কয়লা আছে, গরমে উপশম। যকৃত ও প্লীহার বিবৃদ্ধি ও বেদনাযুক্ত। উদরী ও সর্বাঙ্গীন শোথ। উদর স্ফীত ও বেদনাযুক্ত। কাশির সময় পেটের ভিতর বেদনা, মনে হয় যেন পেটের ভিতর ঘা হয়েছে।
সরলান্ত্র – যন্ত্রনাযুক্ত, সরলান্ত্রের আক্ষেপিক নির্গমন। কোথ। জ্বালাকর যন্ত্রণা এবং সরলান্ত্রে ও গুহ্যদ্বারে ভারীবোধ।
মল – অল্প দূর্গন্ধযুক্ত, কালচে, তৎসহ প্রচণ্ড দুর্বলতা। রাত্রে, খাবার পরে ও পান করার পরে বৃদ্ধি, পাকস্থলীতে ঠাণ্ডা লেগে, মদের অপব্যবহারে ও বিষাক্ত মাংস খেলে বৃদ্ধি। আমাশয়ে মল কালচে, রক্তযুক্ত, তীব্র দূর্গন্ধযুক্ত। কলেরা, তৎসহ মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা, দুর্বলতা এবং জ্বালাকর পিপাসা। সারা শরীর বরফের মত ঠাণ্ডা। (ভিরেট্রাম)। অর্শ, আগুনের মত জ্বালা, গরম প্রলেপে আরাম। গুহ্যদ্বারের চারপাশের চামড়ায় হাজা।
প্রস্রাব – অল্প, জ্বালাকর, অসাড়ে প্রস্রাব, প্রস্রাবথলি যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। প্রস্রাব অ্যালবুমিন যুক্ত। এপিথিলিয়্যাল কোষ যুক্ত, জমাট বাঁধা রক্ত কণিকা প্রস্রাবে পাওয়া যায়। প্রস্রাব করার পরে, পেটের ভিতর দুর্বলতা বোধ। ব্রাইটসডিজীজ। বহুমূত্ররোগ।
স্ত্রীরোগ – মাসিক ঋতুস্রাব প্রচুর এবং খুব শীঘ্র শীঘ্র দেখা দেয়। ডিম্বাশয় স্থানে জ্বালা। প্রদর স্রাব, হাজাকর, জ্বালাকর, দুর্গন্ধযুক্ত, পাতলা। গরম তার বিদ্ধ করার মত যন্ত্রণা, সামান্য পরিশ্রমে বৃদ্ধি, অত্যধিক অবসাদ, গরম ঘরে উপশম। অতিরক্ত। বস্তি কোটরে সূঁচ ফোটানোর অতিরজঃ। বস্তিকোটরে সূঁচ ফোটানোর মত যন্ত্রণা, যন্ত্রণানীচের দিকে উরু পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
শ্বাস-প্রশ্বাস – কিছুতেই শুয়ে থাকতে পারে না, শ্বাসবন্ধ হবার ভয়। বায়ু চলাচল পথের সংকীর্ণতা। হাঁপানী মধ্যরাত্রে বৃদ্ধি পায়। বুকের ভিতর জ্বালা। শ্বাস বন্ধকর সর্দি। কাশি মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধি পায়, চিৎ হয়ে শুলে বৃদ্ধি। শ্লেষ্মা উঠার পরিমান খুবই অল্প এবং ফেনা যুক্ত। ডানদিকের ফুসফুসের উপরিভাগের তৃতীয় স্তর থেকে তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। সাঁই-সাঁই শব্দযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস। কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠে তৎসহ দুই ঘাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বেদনা, সমস্ত জ্বালাকর উত্তাপ। শুষ্ক কাশি, অনেকটা গন্ধকের ধোঁয়া ফুসফুসে যাবার পর যে ধরনের কাশি হয়। পান করার পর কাশি।
হৃদপিণ্ড – হৃদকম্প, যন্ত্রণা, মূর্চ্ছা। যারা ধূমপান করে এবং তামাক পাতা চিবায় তাদের উত্তেজিত হৃদপিণ্ড। সকালের দিকে নাড়ী অত্যন্ত দ্রুত। (সালফ)। হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি। শরীর লালচে বর্ণ। হৃদপিণ্ডে মেদ সঞ্চয়ের ফলে অসুস্থতা। অ্যানজাইমা পেক্টোরিস বা হৃদশূল, তৎসহ ঘাড়ে ও মাথার পিছনের দিকে বেদনা।
পিঠ – পিঠের ছোট একটুখানি অংশের দুর্বলতা। কাঁধ দুই দিকে টেনে সেঁটে থাকে পিঠে যন্ত্রণা এবং জ্বালা (অক্সালিক অ্যাসিড)।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – কম্পন, নর্তন, আক্ষেপ, দুর্বলতা, ভারীবোধ, অস্বস্তি। পায়ের ডিমে খিল ধরা পায়ের পাতার স্ফীতি। সাইয়েটিকা। জ্বালাকর যন্ত্রণা। শরীরের প্রান্তস্থ স্নায়ু কোষের প্রদাহ। ডায়েবিটিক গ্যাংগ্রীন। গোড়ালির ক্ষত (সিপা, ল্যামিয়াম)। নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত তৎসহ শুকিয়ে যাওয়া।
চামড়া – চুলকানি, জ্বালা, স্ফীতি, শোথ, উদ্ভেদ, ফুসকুড়ি জাতীয়, শুষ্ক, খসখসে, আঁশযুক্ত, ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি ও চুলকালে বৃদ্ধি। বিষাক্ত পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ। ক্ষত তৎসহ দূর্গন্ধযুক্ত স্রাব। অ্যানথ্রাক্স। বিষাক্ত ক্ষত। আমবাত তৎসহ জ্বালা ও অস্থিরতা। সোরিয়াসিস কঠিন অবুদ। সমস্ত শরীর বরফের মত ঠাণ্ডা। চামড়ার উপর অবুদ। পচনশীল প্রদাহ।
ঘুম – বাধাপ্রাপ্ত, আতঙ্কিত, অস্থির। বালিশের সাহায্যে মাথা উঁচু করে রাখতে বাধ্য হয়। ঘুমের মধ্যে শ্বাসবন্ধ হবার মত অবস্থা। মাথার উপর হাত রেখে ঘুমায়। স্বপ্নগুলি ব্যস্ততা ও ভয়যুক্ত। নিদ্রালুতা, নিদ্রারোগ।
জ্বর — অত্যধিক উত্তাপ। নিয়মিত ভাবে, ঠিক সময়ে জ্বরের প্রত্যাবর্তন। বিষাক্ত জ্বর বা সেপটিক ফিভার। সবিরাম জ্বর। অসম্পূর্ণ রোগাক্রমনকাল, তৎসহ সুস্পষ্ট অবসাদ। হে-ফিভার। ঠাণ্ডা ঘাম। টাইফয়েড, প্রথম অবস্থায় ব্যবহার করা হবেনা, প্রায়ই রাসটক্সের পরে ব্যবহার হয় পরিপূর্ণ অবসন্নতা, প্রলাপ, মধ্যরাত্রির পর বৃদ্ধি। প্রচণ্ড অস্থিরতা। ভোর তিনটে নাগাদ প্রচণ্ড উত্তাপ। দন্ত মল।
কমা-বাড়া — বৃদ্ধি, ভিজে আবহাওয়া, মধ্যরাত্রি, ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডা পানীয় অথবা খাদ্যবস্তুতে। সমুদ্রতীর। ডানদিক।
উপশম – গরমে, মাথা উঁচু করে রাখলে, গরম পানীয়ে।
অনুপূরক – রাস, কার্বা, ফস, থুজা, সিকেল, সীসাঘটিত বিষক্রিয়ায় এই ঔষধ বিষক্রিয়া ধ্বংস করে।
দোষঘ্ন — ওপিয়াম, কাৰ্ব্ব, চায়না, হিপার, নাক্স।
রাসায়নিক দোষঘ্ন – কাঠকয়লা, হাইড্রেটেড পারঅক্সাইড অফ আয়রন, চুনজল।
তুলনীয় – আর্সনিক ষ্টিবিয়েটাম ৩x (শিশুদের বুকের প্রদাহ, অস্থিরতা তৎসহ পিপাসা এবং দুর্বলতা, তরল শ্লেষ্মাযুক্ত কাশি, বুকের ভিতর চাপুবোধ, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত বুকের ভিতর ঘড়ঘড় শব্দ)। সেনক্রিস কনটরট্রিক্স, আয়োড, ফসফরাস, চায়না, ভিরেট্রাম এল্বাম, কার্ব, কেলিফস, ঈপিলোবিয়াম (টাইফয়েড রোগে বশ না মানা উদরাময়)।
হোয়া নান। অ্যাটাক্সল – সোডিয়াম আর্সি নিয়েট ৩x, নিদ্রাকাতরতা, দৃষ্টিশক্তি বর্ধক স্নায়ুর শুকিয়ে যাওয়া। লিভিকো ওয়াটার —(এর ভিতর আর্স, আয়রন ও কপার । অফ সাউথ টাইরল আছে) (পুরাতন চর্মরোগ, কোরিয়া মাইনর, রক্তাল্পতার আক্রান্ত শিশুদের তড়কা। হজমে সাহায্য করে এবং পুষ্টিবর্ধক। দুর্বলতা ও চর্মরোগসমূহ, বিশেষভাবে যেখানে উচ্চতর শক্তি ব্যবহার করার পর উন্নতি থেমে গেছে। শক্তি – দশ ফোঁটা একগ্লাস গরম জলে, দিনে তিনবার খাবার পরে। (বার্ণের্ট)। সার্কোল্যাকটিক অ্যাসিড (ইনফ্লুয়েঞ্জা তৎসহ প্রবল বমি)।
শক্তি– ৩য় থেকে ৩০ শক্তি। সর্বোচ্চ স্তরের শক্তিযুক্ত ঔষধ অনেক সময় ভালো কাজ দেয়। পাকস্থলী, অন্ত্র ও বৃক্কের রোগের ক্ষেত্রে নিম্নশক্তি। স্নায়ুশূল, স্নায়ুসংক্রান্ত রোগ ও চর্মরোগে উচ্চতর শক্তি। কিন্তু যেক্ষেত্রে শরীরের বাহ্যিক ক্ষেত্রের প্রয়োজনে ঔষধটি ব্যবহার হবে, সেখানে নিম্নতর শক্তি যথা ২x অথবা 3x বিচুর্ণ। ঔষধ পুনঃপুনঃ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
হ্যানিম্যানের কাল হইতে আজ পর্যন্ত আর্সেনিক খুব সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধগুলির অন্যতম এবং খুব ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এলোপ্যাথিক মতে ফাউলারের সলিউশনরূপে ইহার অতিশয় অপব্যবহার হইয়া থাকে।
আর্সেনিক মানুষের প্রত্যেকটি অঙ্গকে আক্রমণ করে, ইহা সকল বৃত্তিগুলিকে হয় বর্ধিত করে নচেৎ অবসন্ন করে, সর্বপ্রকার ক্রিয়াকে উদ্ৰিক্ত করে অথবা বিশৃঙ্খল করে। আমাদের সকল ঔষধগুলি এই ঔষধটির ন্যায় ভালভাবে পরীক্ষিত হইলে আমরা আশ্চৰ্য্য আরোগ্য ক্রিয়া সম্পাদন করিতে পারিব। ইহার সক্রিয় প্রকৃতির জন্য ইহাকে সহজেই পরীক্ষা করা গিয়াছে এবং ইহার অপব্যবহার হইতে আমরা ইহার সাধারণ প্রকৃতি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানিতে পারিয়াছি। আর্সেনিক সমগ্র শারীরবিধানের উপর ক্রিয়া করে এবং সর্বপ্রকার শারীরক্রিয়া এবং টিসুসমূহকে বিচলিত করে, কিন্তু তথাপি ইহার কতকগুলি ব্যাপক এবং মূল্যবান লক্ষণ আছে। উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, অবসন্নতা, জ্বালা এবং দুর্গন্ধ ইহার প্রধান চরিত্রগত লক্ষণ। দেহের উপরিভাগ, বিবর্ণ শীতল, চটচটে, ঘর্মাক্ত এবং মৃতবৎ। দীর্ঘকাল ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপে থাকার ফলে অত্যন্ত দুর্বলতা এবং রক্তশূন্যতাযুক্ত পুরাতন রোগীর পক্ষে, উপযুক্ত আহার পায় নাই এরূপ রোগীর পক্ষে, এবং সিফিলিসগ্রস্ত রোগীর পক্ষে ইহা বিশেষ উপযোগী ঔষধ।
আর্সেনিকে যে উৎকণ্ঠা দেখা যায় তাহার সহিত ভয়, আবেগ, আত্মহত্যাপ্রবৃত্তি, আকস্মিক খেয়াল ও বাতিক মিশ্রিত থাকে। ইহাতে ভ্রান্তি এবং নানাপ্রকার উন্মাদ-লক্ষণ, এবং খুব প্রবল অবস্থায় প্রলাপ এবং উত্তেজনা থাকে। অত্যন্ত বিষাদভাব বর্তমান থাকে। সে এত বিমর্ষ যে, তাহার জীবনে ক্লান্তি দেখা দেয়, সে জীবনে বীতরাগ হয়, এবং মরিতে চায় এবং আর্সেনিকের রোগী আত্মহত্যাও করিয়া থাকে। ইহা একটি আত্মহত্যার প্রবৃত্তিতে পূর্ণ ঔষধ। তাহার উদ্বেগ অস্থিরতায় পরিণত হয়, সেইজন্য সে সৰ্ব্বদা নড়াচড়া করে। যদি সে হাঁটিতে সমর্থ থাকে, তাহা হইলে সে এক চেয়ার ছাড়িয়া আর এক চেয়ারে বসিতে থাকে, শিশু ধাত্রীকে ছাড়িয়া মাতার নিকট, একজনকে ছাড়িয়া আর একজনের নিকট যাইতে থাকে। রোগী যখন শয্যাগত থাকে এবং উঠিয়া বসিতে পারে না, সে নড়াচড়া করিতে এবং এপাশ ওপাশ করিতে থাকে এবং যদি কোন মতে পারে, সে বিছানা হইতে উঠিয়া চেয়ারে বসে, একস্থান হইতে আর একস্থানে যায় এবং সম্পূর্ণ শ্রান্ত হইয়া পড়িলে পুনরায় বিছানায় আসিয়া শুইয়া পড়ে। তাহার এই অস্থিরতা যেন মনেই অধিক, ইহা একপ্রকার উৎকণ্ঠাযুক্ত অস্থিরতা, অথবা মানসিক যন্ত্রণা তৎসহ অনুভূতি যেন ঐ মানসিক যন্ত্রণাই মৃত্যুর উদ্বেগ। ইহা তাহার অতিমাত্রায় প্রকাশ করার চেষ্টা। মনে হয়, সে যেন আর বাচিঁবে না। তাহার দৈহিক বেদনা এইপ্রকার উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করে না, ইহা অস্থিরতা ও বিষন্নতার সহিত মিশ্রিত একপ্রকার উদ্বেগ। এই অবস্থা সকল রোগেই অবসন্নতার সহিত মিশ্রিত থাকে। রোগের প্রথম দিকে একপ্রকার অস্বচ্ছন্দতা উপস্থিত হয় এবং যতদিন পর্যন্ত না অবসন্নতা সুস্পষ্ট হইয়া উঠে, ততদিন পর্যন্ত থাকিয়া যায়। শয্যায় শুইয়া, প্রথম প্রথম সে সমস্ত দেহটিকেই নাড়াইতে থাকে, একবার বিছানায়, একবার বাহিরে আসিতে থাকে কিন্তু ক্রমে অবসন্নতা এত বাড়িয়া উঠে যে, সে কেবলমাত্র হাত-পাগুলিকেই নাড়াইতে পারে, তারপর অবশেষে সে এতই দুর্বল হইয়া পড়ে যে, আর নড়িতে পারে না এবং অত্যন্ত অবসন্নতার মধ্যে। সম্পূর্ণ স্থির হইয়া পড়িয়া থাকে। মনে হয়, যেন অবসন্নতা, উৎকণ্ঠা এবং অস্থিরতার স্থান গ্রহণ করে এবং তাহাকে মৃতের মত দেখায়। সুতরাং মনে রাখিও যে, এই উদ্বেগ ও অস্থিরতার অবস্থা ক্রমশঃ মৃতবৎ অবস্থার দিকে, মৃত্যুর দিকে যাইতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, এই অবস্থা আর্সেনিক প্রয়োগের উপযুক্ত টাইফয়েড রোগে দেখা যায়। প্রথমে ভয়ের সহিত উদ্বেগপূর্ণ অস্থিরতা থাকে, কিন্তু বর্ধনশীল দুৰ্বলতা রোগীকে ক্রমশঃ অবসন্নতার দিকে লইয়া যায়।
এই ঔষধের সর্বত্র জ্বালা; উহাকে ইহার একটি বিশেষ পরিস্ফুট সাধারণ লক্ষণ বলা হইয়া থাকে। ইহাতে মস্তিষ্কের মধ্যে জ্বালা আছে, উহাতে সে ঠান্ডা জলে মাথা ধুইতে চায়। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে দপদপানি ভাবের সহিত উত্তাপের অনুভূতি, উহা ঠান্ডা জলে ধুইলে উপশমিত হয়। কিন্তু যখন বাতজ অবস্থা বর্তমান থাকিয়া মস্তকত্বক এবং বহিস্থঃ পেশীগুলিকে পীড়িত করে, তখনও জ্বালা থাকে এবং সেই জ্বালা উত্তাপ প্রয়োগে উপশমিত হয়। যখন শিরঃপীড়াটি রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির হয় এবং উত্তাপ ও জ্বালা মাথার অভ্যন্তরে অনুভূত হয়, তখন মনে হয় যেন মাথাটি ফাঁটিয়া যাইবে এবং মুখমন্ডল রক্তবর্ণ ও উত্তপ্ত হইয়া উঠে; এই অবস্থায় ঠান্ডা প্রয়োগে -এবং উন্মুক্ত শীতল হাওয়ায় শিরঃপীড়ার উপশম হয়। এই অবস্থা এতই স্পষ্ট যে, আমি দেখিয়াছি, রোগী দেহকে গরম রাখিবার জন্য একগাদা কাপড় জড়াইয়া ঘরের মধ্যে বসিয়া আছে এবং সেই সময়েই মাথায় রক্তসঞ্চয়ের উপশমের জন্য জানালাটি খোলা রাখিয়াছে। সুতরাং আমরা বলিব যে, এই ঔষধের একটি বিশেষ লক্ষণ এই যে, সাধারণভাবে কাপড় জড়াইয়া রাখিলে এবং উত্তাপে সমস্ত দৈহিক লক্ষণের উপশম হয় এবং মস্তকের লক্ষণ ঠান্ডায় উপশমিত হয় কিন্তু মাথার রোগটি যদি মাথার বাহির দিকের হয় তবে তাহাও উত্তাপে এবং কাপড় জড়াইয়া রাখিলে উপশমিত হয়। মুখমন্ডলের, চক্ষুর এবং চক্ষুর উপরের স্নায়ুশূল উত্তাপে উপশমিত হয়।
পাকস্থলীতে জ্বালা অনুভূত হয়, মূত্রস্থলীতে, যোনিপথে, ফুসফুসে জ্বালা থাকে। পচনশীল ক্ষত জন্মিবার আশঙ্কা দেখা দিলে এবং নিউমোনিয়ার বিশেষ বিশেষ অবস্থায়। সময়ে সময়ে মনে হয়, যেন ফুসফুসে জ্বলন্ত কয়লা রহিয়াছে। গলায় এবং সমস্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে জ্বালা থাকে। চুলকানির সহিত চৰ্ম্ম জ্বালা করে এবং যে পর্যন্ত না চৰ্ম্ম ছিঁড়িয়া যায়, সেই পর্যন্ত সে চুলকাইতে থাকে, তারপর জ্বালা থাকে, কিন্তু চুলকানি থামিয়া যায়; অতঃপর আবার যেই চিড়চিড় করা একটু বাড়িয়া উঠে তখন নূতন করিয়া চুলকানি আরম্ভ হয়। রাত্রিকালে চুলকানি ও জ্বালা পৰ্য্যায়ক্রমে চলিতে থাকে, এক মিনিট জ্বালা হইল, তখনই সে চুলকাইতে চুলকাইতে ছাল তুলিয়া ফেলিল, কিন্তু পরক্ষণেই আবার চুলকানি দেখা দিবে এবং বোধ হইবে যে, তাহার আর শান্তি নাই।
আর্সেনিকের স্রাব এবং মলমূত্র বিদাহী, উহারা অঙ্গগুলিকে হাজাইয়া দেয়, জ্বালা উৎপন্ন করে। নাসিকা এবং চক্ষুর স্রাব অঙ্গগুলির চারিদিকে লোহিতাভা উৎপাদন করে এবং অন্যান্য দ্বারপথে নির্গত স্রাবগুলির সম্বন্ধেও এই একই কথা প্রযুক্ত। ক্ষতে জ্বালা থাকে এবং উহা হইতে নির্গত পাতলা, রক্তাক্ত ও তরল স্রাব চারিদিকের অংশগুলিকে হাজাইয়া দেয়। ঐ স্রাবে পচা গন্ধ থাকে। যদি তুমি কখন গ্যাংগ্রিন ক্ষতের বা পচামাংসের গন্ধ শুকিয়া থাক, তাহা হইলে তুমি আর্সেনিকের স্রাবের দুর্গন্ধও বুঝিতে পারিবে। মল দুর্গন্ধ, পচা মাংসের ন্যায়, পচা রক্তের ন্যায় দুর্গন্ধ। জরায়ুর স্রাব, ঋতুকালীন রক্ত, প্রদ্ররস্রাব, মল, মূত্র, গয়ের এবং অন্যান্য প্রকার স্রাব সবই দুর্গন্ধ। ক্ষত এত দুর্গন্ধ যে, উহা হইতে গলিত মাংসের ন্যায় দুর্গন্ধ বাহির হয়।
আর্সেনিক রক্তস্রাবপ্রবণতা উৎপন্ন করে রোগীর সহজেই রক্তপাত হইতে পারে। রক্তবমন হয়, ফুসফুস ও গলা হইতে রক্তপাত হয়। প্রদাহ প্রবলভাবে চলিতে থাকিলে, সময়ে সময়ে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে রক্তাক্ত স্রাব নির্গত হয়; অন্ত্র, মূত্রগ্রন্থি, মূত্রস্থলী এবং জরায়ু হইতে রক্তস্রাব হয়; শরীরের যে যে স্থানে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আছে, তথা হইতেই রক্তস্রাব হইতে পারে। কাল রক্ত স্রাবিত হয় এবং স্রাবে দুর্গন্ধ থাকে।
আর্সেনিকে অনেক সময়েই গ্যাংগ্রিণ এবং পচা ক্ষত ও বিসর্প সদৃশ আকস্মিক প্রদাহিত অবস্থা দেখা যায়। কোন অঙ্গে অকস্মাৎ ইরিসিপ্লাস অথবা আহত অঙ্গে অকস্মাৎ গ্যাংগ্রিন উৎপন্ন হয়। আভ্যন্তরিক যন্ত্রে গ্যাংগ্রিন, দুষিত প্রদাহ; ইরিসিপ্লাস সদৃশ প্রদাহ। তুমি অবস্থাটিকে কি মনে করিবে তাহাতে কিছু আসে যায় না ঐ অবস্থাকে কি বলা হইয়া থাকে তাহাতেও কিছু আসে। যায় না, ব্যাপারটি যদি আকস্মিক প্রদাহ হয় এবং প্রদাহ যদি সংশ্লিষ্ট অঙ্গের দূষিত অবস্থা সৃষ্টি করে, তাহা হইলেই উহা আর্সেনিকের অধিকারভুক্ত হইবে। অন্ত্ৰমধ্যে কয়েকদিন যাবৎ প্রদাহ চলিল, উহার সহিত অতি দুর্গন্ধ স্রাব দেখা দিল, চাপচাপ রক্ত বমিত হইতে লাগিল, উদরস্ফীতির সহিত অন্ত্ৰমধ্যে জ্বালা দেখা দিল। এই অবস্থা এতই ভীষণ, এতই আকস্মিক এবং এতই দূষিত যে, তুমি ইহাকে গ্যাংগ্রিন জাতীয় প্রদাহ বলিয়া মনে করিতে পার এবং ইহার সঙ্গে আরও থাকিবে উৎকণ্ঠা, অবসন্নতা, মৃত্যুভয় এবং শীতভাব, যাহার জন্য রোগী দেহকে গরম কাপড়ে আবৃত রাখিতে চাহিবে। যখন এইরূপ অন্ত্র-প্রদাহের সহিত রোগীর উত্তাপে উপশম লক্ষণটি থাকে, তখন আর্সেনিক নির্দিষ্ট হইবে। মনে রাখিও ‘সিকেলি’তেও এইরূপ অবস্থা আছে, উহাতে অনুরূপ পেটফাঁপা, ক্ষত, অবসন্নতা, অনুরূপ দুর্গন্ধ, অনুরূপ চাপচাপ রক্ত উৎক্ষেপ এবং অনুরূপ জ্বালা আছে, কিন্তু ‘সিকেলি’ রোগী অনাবৃত থাকিতে চায়, ঠান্ডা জিনিষ চায় জানালা খুলিয়া রাখিতে চায়। কোন রোগে এই দুই ঔষধের মধ্যে প্রভেদ সূচক লক্ষণ হইবে এই যে, ‘সিকেলি ঠান্ডা চায় এবং আর্সেনিক উত্তাপ চায়। এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধসমূহের পৃথকীকরণ আমরা এইভাবেই করিয়া থাকি। যখন ফুসফুসে গ্যাংগ্রিন জাতীয় প্রদাহ উপস্থিত হয়, তখন আমরা দেখি যে, রোগী শীতার্ত হইয়াছে, অস্থিরতা, অবসন্নতা, উৎকণ্ঠা এবং ভয় দেখা দিয়াছে। ঘরে প্রবেশ করিলেই আমরা দুর্গন্ধ পাই; এবং পিকদানির ভিতর চাহিলে দেখি যে রোগী একমুখ করিয়া কালবর্ণ দুর্গন্ধ গয়ের তুলিতেছে। এইবার লক্ষ্য কর যে, রোগী গরম কাপড় আবৃত হইতে চাহিতেছে কিনা; যদি সে সহজে শীতার্ত হয় তাহার গরম ভাল লাগে, তাহা হইলে আর্সেনিক ব্যতীত অন্য কোন ঔষধের মধ্যেই লক্ষণসাদৃশ্য পাওয়া যাইবে না। অবসন্নতা, বমন, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা এবং দুর্গন্ধ বৰ্তমান আছে, এখন এই লক্ষণসমষ্টি লইয়া আর্সেনিক ব্যতীত আর কোথায় তুমি ঔষধ খুঁজিয়া পাইবে? আমি বহুবার দূর হইতেই, আশেপাশের অবস্থা দেখিয়াই এইসব লক্ষণগুলিকে ধরিতে পারিয়াছি, এগুলি ত ঘরের দরজা হইতে রোগীর শয্যাপার্শ্বে পৌঁছিতে পৌঁছিতেই সংগ্রহ করা যাইতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি লক্ষণই আর্সেনিক, রোগী দেখিতে আর্সেনিকের ন্যায়, তাহার ব্যবহার আর্সেনিকের ন্যায়, গন্ধ আর্সেনিকের ন্যায়। তুমি হয়ত একটি মূত্রাশয়ের প্রবল প্রদাহযুক্ত রোগীকে দেখিতে গিয়াছ, তাহার পুনঃ পুনঃ মূত্রবেগ হইতেছে; সে মূত্রত্যাগের জন্য কোথ দিতেছে, তাহার চাপচাপ রক্তমিশ্রিত রক্তাক্ত মূত্র নির্গত হইতেছে। পরিচর্য্যারত চিকিৎসক দেখিয়াছেন যে, ক্যাথিটার প্রবেশ করাইয়া মূত্রপাত করিতে গেলে ক্যাথিটারটিই চাপচাপ রক্তদ্বারা আবদ্ধ হইয়া যায়, সামান্য একটু মূত্র বাহির হয়, তারপর উহা থামিয়া যায়। এই সঙ্গে অস্থিরতা, উদ্বেগ, মৃত্যুভয়, উত্তাপে উপশম, অত্যন্ত অবসন্নতার ইতিহাস পাওয়া গেল। তোমাকে আর্সেনিক দিতেই হইবে,মূত্রস্থলীতে প্রদাহ দেখা দিয়াছে বলিয়া নহে, কিন্তু এই কারণে যে, প্রদাহটি ছিল দ্রুতবর্ধনশীল এবং গ্যাংগ্রিন প্রকৃতির। অল্পক্ষণের মধ্যেই মূত্রস্থলীটি আক্রান্ত হওয়া সম্ভব, কিন্তু আর্সেনিক উহা রোধ করিবে। সমস্ত আভ্যন্তরিক যন্ত্র, যকৃত, ফুসফুস প্রভৃতি সম্বন্ধেও এই একই কথা; উহাদের যে কোনটির তীব্র ও দ্রুতবর্ধনশীল প্রদাহ দেখা দিতে পারে। আমরা এখন বিশেষ লক্ষণগুলির কথা বলিতেছি না, কিন্তু আর্সেনিকের সাধারণ অবস্থার উদাহরণ দিতেছি, যাহাতে উহার সমুদয় প্রকৃতির মধ্যে সর্বত্র যাহা আছে তাহাই পরিস্ফুট হইয়া উঠে। আমরা যখন এই ঔষধটি সম্বন্ধে আরও বিশেষভাবে আলোচনা করিব, আমরা দেখিতে পাইব যে, সৰ্ব্বত্রই এই সাধারণ লক্ষণগুলি সুপ্রকাশিত রহিয়াছে।
মানসিক লক্ষণগুলির প্রথম দিকে উৎকন্ঠাপূর্ণ অস্থিরতা প্রকাশ পায়, তারপর উহা ক্রমশঃ প্রলাপ, এমন কি উন্মাদ-লক্ষণের দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু ইহার সবকিছুর মধ্যেই বুদ্ধিবৃত্তি ও ইচ্ছাশক্তির গোলযোগ থাকে। “সে মনে করে যে, সে মরিয়া যাইবে।” আমি কোন সময়ে একটি টাইফয়েড রোগীর শয্যাপার্শ্বে গিয়াছিলাম, তাহার পূর্ববর্ণিত সবগুলি সাধারণ লক্ষণই ছিল; সে কথা বলিতেও সক্ষম ছিল; এবং আমার দিকে চাহিয়া বলিয়াছিল, “আপনার আসার আর সার্থকতা কি, আমি ত মরিতেই চলিয়াছি, আপনি বরং বাড়ী চলিয়া যান, আমার ভিতরের সবকিছুই পচিয়া গিয়াছে। তাহার বন্ধু তাহার বিছানার এক পার্শ্বে বসিয়াছিলেন এবং তাহাকে কয়েক ফোঁটা করিয়া জল দিতেছিলেন এবং যতবারই তিনি জল লইয়া যাইতেছিলেন, রোগীটি ততবারই জল চাহিতেছিল। সে একমাত্র জলই চাহিত, তাহার মুখ কাল, ঝলসানবৎ শুষ্ক ছিল। তাহাকে আর্সেনিক দেওয়া হইয়াছিল। আর্সেনিকের একটি চরিত্রগত লক্ষণ ঠিক মুখটি ভিজাইবার মত অল্প অল্প জলপানের তৃষ্ণা মুখস্থ করিবার উদ্দেশ্যে ইহাকেই সাধারণতঃ ব্রায়োনিয়া এবং আর্সেনিকের মধ্যে প্রভেদসূচক লক্ষণ বলিয়া ধরা হইয়া থাকে; ‘ব্রায়োনিয়ায় অনেকক্ষণ পরে পরে অনেকখানি করিয়া জল পানের তৃষ্ণা থাকে কিন্তু আর্সেনিকে পুনঃ পুনঃ একটু একটু করিয়া জলপান করে অথবা প্রবল অনিবাৰ্য্য তৃষ্ণা থাকে।
“মৃত্যু সম্বন্ধে এবং তাহার রোগ যে আর আরোগ্য হইবে না এরূপ চিন্তা।” “নানা প্রকার চিন্তা তাহার মনে আসে, সে এত দুৰ্বল যে, উহাদিগকে দূর করিতে পারে না অথবা একটি চিন্তায় মনোনিবেশ করিতে পারে না।” অর্থাৎ সে শয্যায় শুইয়া দিবারাত্র অবসন্নকর ধারণা ও দুঃখজনক চিন্তায় পীড়িত হইতে থাকে। ইহা একপ্রকার উৎকণ্ঠা, চিন্তার দ্বারা উৎপীড়িত হইয়া সে উৎকণ্ঠিত হইয়া পড়ে। বিকারের মধ্যে সে বিছানার উপর নানান প্রকারের পোকা দেখে। “বিছানার চাদর খোঁটে। “নিদ্রার মধ্যে প্রলাপ, অজ্ঞানের মধ্যে বাতিক।” “ঘ্যানঘ্যান করা ও দাঁত কড়মড় করা। “উচ্চশব্দে কোঁথানি, গোঙানি এবং ক্রন্দন।” “বিলাপ ও জীবনে হতাশা।” “যন্ত্রণায় চিঙ্কার করিয়া উঠা।” “ভয়ে শয্যা ছাড়িয়া কোন প্রকোষ্ঠে লুকায়।” এইগুলি উন্মাদরোগের প্রাথমিক অবস্থার উদাহরণ, ইহা একটি উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা এবং ভয়ব্যাকুল অবস্থা। ধর্মবিষয়ক উন্মাদ—তাহার ভ্রান্ত ধারণা জন্মে যে, পাপের ফলে তাহার ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়ার দিনটি নষ্ট হইয়া গিয়াছে বাইবেলে যে মুক্তিসম্বন্ধীয় আশ্বাস দেওয়া হইয়াছে তাহা তাহার পক্ষে প্রযোজ্য হইবে না, তাহার আর কোন আশাই নাই, তাহার অদৃষ্টে শাস্তি ভোগ নির্দিষ্ট হইয়া গিয়াছে। এইভাবে উন্মাদ না হওয়া পর্যন্ত সে ধর্মবিষয়ক চিন্তা করিতে থাকিবে। অবশেষে তাহার পূর্ণতর উন্মাদ অবস্থা আসে—সে শান্ত অবস্থায় পৌঁছিয়া যায়নিস্তব্ধ, কথা বলিতে অপ্রবৃত্তি। সুতরাং আমরা দেখিতেছি একটি অবস্থা, পরবর্তী অবস্থার সহিত মিশিয়া যায়; আমাদিগকে সমগ্র অবস্থাটি একসঙ্গে গ্রহণ করিতে হইবে, অবস্থাটিকে ভালভাবে বুঝিবার জন্য ব্যাপারটি কিভাবে অগ্রসর হইয়াছে তাহা লিখিয়া লইতে হইবে, লিখিয়া লইতে হইবে যে, এক বিশেষ অবস্থায় কি কি লক্ষণ দেখা দিয়াছিল। উদাহরণস্বরূপ—আমরা জানি যে, তরুণ অবস্থায় আর্সেনিকের হয় কেবলমাত্র মুখটি ভিজাইবার মত বরফের ন্যায় শীতল জলের তৃষ্ণা থাকে অথবা প্রচুর জল পানের তৃষ্ণা থাকে, কিন্তু তাহাতে তৃষ্ণা দূর হয় না। তারপর এই তৃষ্ণার্ত অবস্থা আর এক অবস্থায় উপনীত হয় এবং তখন জলের উপর বিতৃষ্ণা জন্মে, সুতরাং আমরা দেখিতে পাই যে, পুরাতন রোগে আর্সেনিক তৃষ্ণাহীন। উন্মাদ রোগের পক্ষেও ঐ একই কথা; পুরাতন অবস্থায় রোগী শান্ত, কিন্তু পূর্ববর্তী অবস্থায় আর্সেনিকের রোগী হইলে, তাহাকে নিশ্চয়ই অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা এবং ভয়ের মধ্য দিয়া আসিতে হইয়াছে।
তাহার মানসিক অবস্থার মধ্যে ভয় একটি প্রধান উপাদান—একা থাকিবার ভয়, একা থাকিলে কোন কিছু তাহার অনিষ্ট করিবে—এরূপ ভয়; ভীতিপূর্ণ আশঙ্কায় পরিপূর্ণ—সে নির্জনতাকে ভয় করে, লোকসঙ্গ চায়, কারণ লোকসঙ্গে সে কথা বলিতে পারিবে, তাহার ভয় দূর হইবে । কিন্তু উন্মাদ রোগ যখন অগ্রসর হইতে থাকে তখন সে লোকসঙ্গে আনন্দ পায় না, লোকসঙ্গে থাকিলেও ভয় বর্তমান থাকে। অন্ধকারে তাহার ভয় এবং গ্রাস অত্যন্ত বাড়িয়া উঠে এবং তাহার বহু উপসর্গ। সন্ধ্যাকালে অন্ধকার উপস্থিত হইতেই আরম্ভ করিলে দেখা দেয়। তাহার অনেকগুলি মানসিক অস্বস্তি এবং দৈহিক উপদ্রব নির্দিষ্ট সময়ে আসে এবং বৃদ্ধি পায়। যদিও কতকগুলি উপসর্গ, বেদনা এবং কামড়ানি ব্যথা প্রাতঃকালে বাড়ে, তথাপি আর্সেনিকের অধিকাংশ কষ্টের বৃদ্ধি মধ্যরাত্রি ১-২টা হইতে এবং দুপুর ১-২টা হইতে। দুপুর রাত্রির পর, দুপুর রাত্রির অল্পক্ষণ পরেই, সময়ে সময়ে তাহার যন্ত্রণা আরম্ভ হয়, এবং রাত্রি ১-২টা হইতে ঐ যন্ত্রণা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সন্ধ্যাকালে শয্যায় তাহার অত্যন্ত উৎকন্ঠা।
“পরিচিত লোকেদের সহিত দেখা করিতে অনিচ্ছা, কারণ সে মনে করে যে, পূৰ্ব্বে সে তাহাদিগকে অপমান করিয়াছিল।” অত্যন্ত মানসিক অবসন্নতা, অত্যন্ত দুঃখভাব, বিষাদ, হতাশা, আরোগ্য সম্বন্ধে হতাশা। যখন সে একা থাকে অথবা যখন সে শয়ন করে, তখন উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতার সহিত মৃত্যুভয় উপস্থিত হয়। সে মনে করে যে, সে মরিতে চলিয়াছে এবং কাহাকেও তাহার সঙ্গী চায় । রাত্রিকালে উৎকণ্ঠার আক্রমণে তাহাকে শয্যা ছাঁড়িয়া উঠিতে হয়। এই উৎকণ্ঠা হৃৎপিন্ডকেও আক্রমণ করে, সুতরাং মানসিক উৎকণ্ঠা এবং হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত উৎকণ্ঠা একসঙ্গে মিলিয়া যায়। রাত্রিকালে অকস্মাৎ তাহার একপ্রকার উৎকণ্ঠাযুক্ত ভয় দেখা দেয়। সে মরিতে চলিয়াছে অথবা তাহার নিঃশ্বাস বন্ধ হইতেছে, ভয়ে সে বিছানা হইতে লাফাইয়া উঠে। ইহা শ্বাসকৃচ্ছ্রতা, হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত শ্বাসকৃচ্ছ্রতা এবং এক বিশিষ্ট প্রকারের হাঁপানি। এই প্রকার আক্রমণ সন্ধ্যাকালে বিছানায় শুইলে মধ্যরাত্রির পর দেখা দেয়; রাত্রি ১-২টা হইতে সে মানসিক উৎকণ্ঠা, শ্বাসকৃচ্ছ্রতা মৃত্যুভয় এবং দৈহিক শীতলতায় আক্রান্ত হয় এবং তাহার শীতল ঘৰ্ম্ম দেখা দেয়। যে লোক খুন করিয়াছে, তাহার ন্যায় উৎকণ্ঠা।” ইহা এক বিশেষ ধরনের উৎকণ্ঠা, অবশেষে তাহার ধারণা জন্মে যে, তাহার পিছনে পুলিশ আসিতেছে, সে তাকাইয়া দেখে যে সত্যসত্যই পুলিশ তাহাকে ধরিতে আসিতেছে কিনা। নিশ্চয়ই তাহার অস্বাভাবিক কোন অনিষ্ট ঘটিতে যাইতেছে এবং সে ঐরূপ ভীষণ কিছু ঘটিবার প্রতীক্ষা করে। “উত্তেজনাপ্রবণ, নিরুৎসাহ, অস্থির।” “অস্থিরতার জন্য কোথাও স্থির হইয়া থাকিতে পারে না।” “ভয়ের পরিণামস্বরূপ আত্মহত্যা করিতে চাহে।”
এইপ্রকার মানসিক অবস্থার সহিত আর্সেনিকের রোগী সৰ্ব্বদাই শীতার্ত থাকে, আগুনের পাশে ঘুরিয়া বেড়ায়, তাহার যেন শরীর গরম করিবার মত কাপড় জুটে না, শীতের জন্য কষ্ট পায়। আর্সেনিকের পুরাতন অক্ষম রোগীরা কিছুতেই গরম পায় না, সৰ্ব্বদাই শীতার্ত, বিবর্ণ, এবং মোমের ন্যায় বর্ণ বিশিষ্ট থাকে, এইরূপ অক্ষম ব্যক্তিদের কয়েকবার অস্বাভাবিক দুর্বলকর রোগের আক্রমণ হয় এবং তারপর শোথ অবস্থা দেখা দেয়। আর্সেনিক স্ফীতি ও শোথে পূর্ণ। হাত-পায়ের স্ফীত অবস্থা, বদ্ধকোষগুলির এবং দেহস্থ গহ্বরগুলির শোথ, চক্ষুর চারিপার্শ্বে ফুলা, মুখমন্ডলের স্ফীতি, ঐ স্ফীতির উপর টিপিলে গর্ত হইয়া যায়। এই প্রকার ফুলায়, আর্সেনিক চক্ষুর উপর পাতা অপেক্ষা নীচের পাতার সহিত অধিক সম্বন্ধযুক্ত, আর ক্যালি কার্বে’র ফুলা চক্ষুর নীচের পাতা অপেক্ষা উপর পাতাতেই, চক্ষুর পাতা এবং জ্বর মধ্যবর্তী স্থানেই অধিক। সময়ে সময়ে ক্যালি কাৰ্ব আর্সেনিকের অতিশয় অনুরূপ হইয়া উঠে; এবং সামান্য লক্ষণ দ্বারা উহাদের পার্থক্য নির্ণীত হয়। যদি তাহাদের সাধারণ লক্ষগুলি পরস্পর মিলিয়া যায়, তাহা হইলে তাহাদের বিশেষ লক্ষণগুলি লক্ষ্য করিতে হইবে ।
শিরঃপীড়া সম্বন্ধে একটি সাধারণ লক্ষণ এই যে আক্রমণটি নির্দিষ্ট সময় দেখা দেয়। এই ঔষধের সর্বত্রই নির্দিষ্ট সময়ে রোগাক্রমণ আছে; এবং সেইজন্য ইহা ম্যালেরিয়া রোগের একটি বহুব্যবহৃত ঔষধ। ম্যালেরিয়ার বিশেষত্বই হইল নির্দিষ্ট সময়ে রোগ আক্রমণ। আর্সেনিকের পৰ্য্যায়শীল আক্রমণ একদিন অন্তর, অথবা চারদিন অথবা সাতদিন অন্তর, এমন কি পনের দিন অন্তর দেখা দেয়। শিরঃপীড়াও এইরূপ চক্রাকারে একদিন অন্তর অথবা প্রতি তৃতীয় বা চতুর্থ বা সপ্তম বা চতুর্দশ দিনে উপস্থিত হয়। রোগটি যতই পুরাতন হয়, উহার চক্রবর্তনকালও দীর্ঘতর হইতে থাকে, এইজন্য আমরা দেখি যে যে-সকল রোগে আর্সেনিক উপযোগী, তাহারা যত তরুণ ও তীব্র হইবে, ততই তাহাদের একদিন বা চারদিন অন্তর বৃদ্ধি হইবে, কিন্তু রোগগুলি যদি পুরাতন ও গভীরমূল হয়, তবে উহাদের বৃদ্ধি হইবে সাতদিন অন্তর; আর দীর্ঘস্থায়ী, বহুদিনের এবং গভীরমূল সোরাদোষযুক্ত রোগে বৃদ্ধিলক্ষণ আসিবে চৌদ্দ দিন অন্তর। এই চক্রাকারে রোগাক্রমণ অনেক ঔষধেই আছে, কিন্তু আর্সেনিক ও চায়না’তেই ইহা বিশেষভাবে পরিস্ফুট। এই দুইটি ঔষধও অনেক বিষয়ে সদৃশ এবং ম্যালেরিয়া রোগের যে প্রকাশ বিকাশ দেখা যায় তাহাতে উহাদের সাধারণ প্রকৃতি সম্পূর্ণ একরূপ। যাহা হউক, এ কথা সত্য যে, চায়না’ অপেক্ষা আর্সেনিকই অধিকতর সংখ্যক ক্ষেত্রে প্রয়োজন। আমি যে সকল ম্যালেরিয়া জ্বরের বহুব্যাপকতা দেখিয়াছি, তাহার প্রত্যেকটিতেই আমি ‘চায়না অপেক্ষা আর্সেনিকের লক্ষণই অধিক পাইয়াছি।
আমরা উপরে যে চিত্তাকর্ষক বিষয়টির উল্লেখ করিলাম, এই সকল শিরঃপীড়াতেও তাহা বর্তমান থাকে। আর্সেনিকের প্রকৃতিতে লক্ষণসমূহের পর্যায়-শীতলতা আছে এবং তৎসহ কতগুলি সাধারণ লক্ষণও প্রকাশ পায়। আর্সেনিক সর্বপ্রকার দৈহিক রোগে একটি শীতপ্রধান ঔষধ, রোগী আগুনের পার্শ্বে বসিয়াও কাঁপে, যথেষ্ট বস্ত্রাদি চায় এবং গরম ঘরে থাকিতে চায়। যতক্ষণ রোগটি দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ অবস্থাটি এইরূপ থাকে। কিন্তু রোগ যখন মস্তক আক্রমণ করে, তখন দেহে উত্তাপ চাহিলেও সে মাথা ঠান্ডা জলে ধুইতে চায়, মাথায় ঠান্ডা হাওয়া চায়। মস্তকের রোগের সহিত মস্তক সম্বন্ধীয় সাধারণ লক্ষণগুলির অবশ্যই মিল থাকিবে, আবার দেহ সম্বন্ধীয় রোগগুলিরও, দেহ সম্বন্ধীয় সাধারণ লক্ষণগুলির সহিত অবশ্যই সম্বন্ধ থাকিবে। এই দুই অবস্থার মধ্যে কোনটি যে অধিকতর সাধারণ, তাহা বলা কঠিন এবং এই দুইটির মধ্যে কোনটি যে ব্যক্তিগতভাবে রোগীর পক্ষে সাধারণ লক্ষণ, তাহা বলাও সময়ে সময়ে কঠিন হইয়া উঠে, কারণ, সে এই বলিয়া তোমাকে হতবুদ্ধি করিয়া দিবে “আমি ঠান্ডায় খারাপ থাকি,” কিন্তু যখন তাহার শিরঃপীড়া চলিতে থাকে, তখন সে বলিবে, “আমি ঠান্ডাতেই ভাল থাকি, আমি ঠান্ডাতেই থাকিতে চাই।” একথা কেবলমাত্র মাথার ব্যাপারেই সত্য এবং তুমি ইহাকে পৃথক করিয়া লইবে; এবং রোগীর কোন অঙ্গটি আক্রান্ত হইয়াছে তাহাও দেখিবে। যখন ব্যাপারটি এতই আশ্চৰ্য্য তখন তোমাকে এ সম্বন্ধে পরীক্ষা করিতে হইবে যে, বাস্তবিক কিসে তাহার হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়। তুমি ফসফরাসের মধ্যেও অনুরূপ অবস্থা দেখিতে পাইবে; তাহার পাকস্থলী এবং মস্তকের রোগগুলি ঠান্ডায় ভাল থাকে অর্থাৎ মাথার যন্ত্রণা হইলে সে মাথায় ঠান্ডা প্রয়োগ চায়, পাকস্থলীর রোগে ঠান্ডা জিনিষ খাইতে চায়, কিন্তু দেহের অন্যান্য রোগে, তাহার উত্তাপেই উপশম। যদি তাহার বক্ষের রোগ থাকে, তাহা হইলে সে ঠান্ডা হাওয়ায় বাহির হইবে এবং কাশিতে থাকিবে। সুতরাং আমরা দেখিতেছি যে, আক্রান্ত অঙ্গ সম্বন্ধীয় হ্রাসবৃদ্ধি লক্ষণ আমাদিগকে লক্ষ্য করিতে হইবে। উদাহরণস্বরূপ তুমি হয়ত একটি রোগী। পাইলে যে স্নায়ুশূল বা বাতরোগে কষ্ট পাইতেছে এবং ঐ বেদনা যখন মস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত হইল, তখন সে মাথাটি জড়াইয়া রাখিতে চাহিল, কারণ উত্তাপেই তাহার যন্ত্রণার উপশম হয়। কিন্তু যখন উহা মস্তকে রক্তসঞ্চয়যুক্ত অবস্থায় পৌঁছিল, তখন তাহার মাথায় অত্যন্ত ঠান্ডা লাগাইলেই উপশম হইবে। আর আমি পূৰ্বেই বলিয়াছি যে, আর্সেনিকে এইসব অবস্থায় পরিবর্তনশীলতা আছে। আমি উদাহরণস্বরূপ একটি রোগীর কথা বলিব। কোন সময়ে একটি রোগী নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে উপস্থিত সবমন শিরঃপীড়ায় ভুগিতেছিল। তাহার সবমন শিরঃপীড়া ঠান্ডা জলে, ঠান্ডা কিছু লাগাইলে উপশমিত হইত। মাথায় ঠান্ডা জিনিষ লাগাইয়া তাহার আশা মিটিত না, যত ঠান্ডা পাইত ততই ভাল লাগিত। তাহার এই শিরঃপীড়া প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর দেখা দিত; এবং যতক্ষণ উহা বর্তমান থাকিত, ততক্ষণ সে মাথায় ঠান্ডা চাহিত। তারপর তাহার এই পৰ্য্যায়শীল শিরঃপীড়া বেশ কিছুকাল ভাল থাকিত, কিন্তু শিরঃপীড়া চলিয়া গেলেই সে সন্ধিসমূহের বাতরোগে ভুগিতে থাকিত, উহাও নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে উপস্থিত হইত এবং কিছুতেই ভাল হইতে চাহিত না। যখন সন্ধিসমূহ ও হস্তপদাদির এই বাতরোগ ও তাহার সহিত অল্পবিস্তর স্ফীতি ও শোথ চলিতে থাকিত, সে যেন আর কিছুতেই গরম পাইত না, সে কাপড় জড়াইয়া আগুনের নিকট থাকিত; সে উত্তাপে উপশম বোধ করিত এবং গরম হওয়া, গরম ঘর চাহিত। এইরূপ কিছুকাল চলিত এবং তারপর নিবৃত হইত; তখন তাহার সবমন শিরঃপীড়াটি আবার ফিরিয়া আসিত এবং কিছুদিন ধরিয়া চলিত। অবস্থার পৰ্য্যায়শীলতা বলিতে আমি ইহাই বুঝাইতে চাহিয়াছি। আর্সেনিক লোকটিকে আরোগ্য করিয়াছিল এবং তাহার আর ঐ দুইটির মধ্যে কোনটিই দেখা দেয় নাই। অবস্থায় পৰ্য্যায়শীলতা বলিতে কখনও কখনও বুঝায় যে, রোগীর দেহে হয়ত দুইটি রোগ আছে এবং কখনও কখনও ঐরূপ অবস্থায় পৰ্য্যায়শীলতার অন্তর্গত সবকিছুই বিশেষ ঔষধটির অধিকারভুক্ত হয়। আর একটি রোগীর কথা আমার মনে পড়িতেছে, উহা দ্বারা রোগের পৰ্য্যায়শীলতার অদ্ভুত প্রকৃতি সম্বন্ধে একটি উদাহরণ পাওয়া যাইবে। রোগটি অবশ্য আর্সেনিক ব্যতীত অন্য ঔষধের অধিকারভুক্ত। এই রোগিনী মস্তকশীর্ষে একপ্রকার চাপবোধে কষ্ট পাইতেছিলেন, যেরূপ চাপের কথা আমি সম্প্রতি এলুমেন’ অধ্যায়ে বর্ণনা করিয়াছি। তিনি এইরূপ চাঁপবোধে বহু সপ্তাহ কষ্ট পাইতেন। একমাত্র জোরে চাপ দিলেই তাঁহার কিছুটা উপশম হইত । চাপ দিয়া দিয়া তিনি ক্লান্ত হইয়া পড়িতেন এবং মাথার উপরে সৰ্ব্বপ্রকার ভার চাপাইবার উপায় উদ্ভাবন করিতেন। ঐ চাপবোধ রাত্রিকালে সরিয়া যাইত এবং পরদিন সকালে জাগিয়া উঠিলে তাহার অবিরত মূত্রবেগ দেখা দিত। মূত্রস্থলীর উত্তেজনার সহিত মস্তকশীর্ষ চাপবোধ পৰ্য্যায়ক্রমে উপস্থিত হইত। এলুমেন তাঁহাকে আরোগ্য করিয়াছিল। সম্ভবতঃ, সব সোরাদোষঘ্ন ঔষধগুলিতে রোগের পৰ্য্যায়শীলতা আছে। ইহা দ্বারা বুঝান হইতেছে যে, রোগারোগ্যের জন্য তোমাকে রোগীর যতগুলি অবস্থা দেখা দেয়, তাহার প্রত্যেকটিরই। লক্ষণ সংগ্রহ করিতে হইবে, নচেৎ, সোরাদোষদুষ্ট পুরাতন রোগে তুমি অনেক সময়েই যে ঔষধ ব্যবস্থা করিবে তাহা সাময়িক উপশম দিবে এবং তারপরেই রোগের আর একটি অবস্থা প্রকাশ পাইবে। রোগীকে বিনা ঔষধে রাখিয়া দিলে রোগটি যেরূপভাবে চলিত, তুমি ঔষধ দিয়া তাহার গতিকে আর একটু বাড়াইয়া দিবে মাত্র। কিন্তু ইহাকে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবস্থা বলে না। ঠিক জানিও যে-কোন ঔষধ যখন রোগের একটি অবস্থায় প্রযোজ্য হয়, তখন উহা রোগের অপর একটি অবস্থাতেও সুস্পষ্টভাবে প্রযোজ্য হইবে, নচেৎ ঔষধটি কখনও সদৃশ ঔষধ নহে। যতক্ষণ পৰ্য্যন্ত রোগের উভয় অবস্থার উপযোগী ঔষধটি না পাও, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে অনুসন্ধান করিতে হইবে, নচেৎ তুমি নিরাশ হইবে। ভুল ঔষধ ব্যবস্থা করিয়া যতদিন না আমরা রোগটিকে দুই তিনবার ঘুরাইয়া আনি, ততদিন অনেক ক্ষেত্রেই এই অবস্থায় পৰ্য্যায়শীলতা আমরা ধরিতে পারি না। কতকগুলি লোক এত কম কথা বলে যে, উহা হইতে লক্ষণগুলি পাওয়া কঠিন হইয়া উঠে এবং আমরাও সৰ্ব্বদা ঐ লক্ষণগুলি পাই না। কিন্তু তুমি তোমার খাতাপত্র পরীক্ষা করিলে দেখিতে পাইবে যে, কোথায় তুমি ভুল ঔষধ ব্যবস্থা করিয়া একটি অবস্থাকে দূর করিয়াছ, কিন্তু সাথে সাথেই পূর্বের অবস্থাটি ফিরিয়া আসিয়াছে এবং তুমি নাগরদোলার ন্যায় উঠাপড়া করিয়া চলিয়াছ। এক্ষণে, মনে রাখিও যে, এরূপ করায় তোমার রোগীর অবস্থার উন্নতি হয় নাই এবং তোমাকে এবার পর্যায়শীল অবস্থাগুলির সহিত সম্বন্ধ রাখিয়া সমগ্র রোগী বিবরণীটির পুনরালোচনা করিতে হইবে। আর্সেনিকে দৈহিক লক্ষণগুলির সহিত মস্তক-লক্ষণগুলি পর্যায়ক্রমে আসে। তুমি দেখিতে পাইবে যে, কতকগুলি ঔষধের মধ্যে তাহাদের প্রকৃতির অংশস্বরূপ মানসিক লক্ষণগুলির সহিত দৈহিক লক্ষণগুলি পৰ্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়; যখন শারীরিক লক্ষণ বর্তমান থাকে তখন মানসিক লক্ষণ বর্তমান থাকে না আবার, যখন মানসিক লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে তখন শারীরিক লক্ষণগুলি অদৃশ্য হয়। ইহা দ্বারাই বুঝা যায় সবগুলি অবস্থার সমগ্র লক্ষণ সংগ্রহ করা কত প্রয়োজন। উহা সংগৃহীত হইলে যথেষ্ট কাজ হইবে, কিন্তু কখনও কখনও হয়ত তুমি প্রকৃত ঔষধটি খুঁজিয়া পাইবে না। ইহার কারণ, আমাদের অনেকগুলি ঔষধের বিবরণ ভালভাবে লিখিত হয় নাই, উহাদিগের পর্যায়শীলতা লক্ষ্য করা হয় নাই; এবং তাহা ঐভাবে চিহ্নিত করাও হয় নাই। আমরা ‘পডোফাইলামে একটি বিশেষ লক্ষণ পাই উহার শিরঃপীড়া ও উদরাময় পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়; তাহার সবমন শিরঃপীড়া ও উদরাময় থাকে এবং উহাদের মধ্যে যে কোনটি সবসময়েই বর্তমান থাকে। আর্ণিকা’য় মানসিক লক্ষণের সহিত জরায়ু সংক্রান্ত লক্ষণ পৰ্যায়ক্রমে দেখা দেয়। লক্ষ্য করিলে জরায়ু-লক্ষণ ‘আর্ণিকা’র ন্যায় দেখায়, কিন্তু রাত্রিকালে উহা চলিয়া যায় এবং মানসিক লক্ষণ উপস্থিত হয়, তাহার মন দুঃখপূর্ণ, বিষাদিত এবং দুশ্চিন্তাযুক্ত হইয়া উঠে। আমরা যখন এইরূপ লক্ষণ-বিকাশযুক্ত ঔষধ পাই, তখন উহার অবস্থাসমূহের পৰ্য্যায়শীলতা লক্ষ্য করিতে গভীরতর দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন হয়; কারণ, এই সকল ব্যাপার ঔষধ পরীক্ষাকালে সবসময়েই প্রকাশিত হয় না, যেহেতু, একজন পরীক্ষক এক শ্রেণীর লক্ষণ উপলব্ধি করেন, আর একজন পরীক্ষক আর এক শ্রেণীর লক্ষণ উপলব্ধি করেন।
আর্সেনিকের পৰ্য্যায়শীল শিরঃপীড়া মস্তকের সকল স্থানেই দেখিতে পাওয়া যায়। উহা রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া, তৎসহ দপদপ করা এবং জ্বালা থাকে, উদ্বেগ ও অস্থিরতা থাকে; মস্তক গরম এবং ঠান্ডায় উপশম। কপালের উপর শিরঃপীড়া, উহাতে দপদপ করে, আলোকে বাড়ে, চলাফেরায় তীব্র হয়, প্রায়ই ঐ সঙ্গে অত্যন্ত অস্থিরতা থাকে। অস্থিরতার জন্য সে উৎকণ্ঠিতভাবে চলিয়া বেড়াইতে বাধ্য হয়। অধিকাংশ শিরঃপীড়ার সঙ্গেই বমিবমিভাব এবং বমন বমন থাকে। এই সবমন শিরঃপীড়া অত্যন্ত কষ্টকর, বিশেষতঃ যে আক্রমণ দুই সপ্তাহ পরে পরে আসে। এই প্রকারের কতকগুলি পুরাতন, ভগ্নস্বাস্থ্য ধাতুতে তোমরা দেখিতে পাইবে যে, সে ঠান্ডা, বিবর্ণ ও রুগ্ন থাকে, সে সবসময় শীতকাতর ও শীতার্ত থাকে, কেবল যখন শিরঃপীড়া চলিতে থাকে, তখন সে ঠান্ডায় ভাল থাকে; তাহার মুখমন্ডল কুঞ্চিত দেখায়, অত্যন্ত উৎকণ্ঠা থাকে এবং জলপানের ইচ্ছা থাকে না। মনে রাখিও যে, পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে, আর্সেনিকের তরুণ অবস্থায় তৃষ্ণা থাকে, পুনঃ পুনঃ অল্প জল পান করে, মুখ শুষ্ক থাকে, সে ওষ্ঠ ভিজাইবার মত জলটুকু চায়; কিন্তু আর্সেনিকের পুরাতন অবস্থায়, সে প্রায়ই তৃষ্ণাহীন। মস্তকের একপার্শ্বিক শিরঃপীড়া আছে, উহাতে মস্তকতৃক আক্রান্ত হয়, মাথার এক অৰ্দ্ধাংশ আক্রান্ত হয়, সঞ্চালনে বৃদ্ধি, ঠান্ডা জলে ধুইলে উপশম, ঠান্ডা হাওয়ায় চলাফেরা করিলে উপশম; কিন্তু ঝুঁকি লাগায় ও পা ফেলায় প্রায়ই তরঙ্গের মত বেদনা অনুভূত হয়, উহাতে মস্তিষ্কের মধ্যে কম্পন, স্পন্দন অথবা শিথিলতার অনুভূতি আরম্ভ হয়, অনুভূতিগুলি এইরূপ এবং উহা বিশেষ দপদপকর অবস্থা। তারপর মাথার পশ্চাদ্দিকের সাঙ্ঘাতিক শিরঃপীড়া, এত গুরুতর যে রোগী অচৈতন্যবৎ অথবা হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে। উহা উত্তেজনা হইতে, অতি পরিশ্রম হইতে মধ্যরাত্রির পর উপস্থিত হয়; পথ চলিতে চলিতে উত্তপ্ত হইলে উপস্থিত হয় কারণ তদ্দারা মস্তকে রক্তসঞ্চার হইয়া থাকে। পৰ্যায়শীলতার দিক হইতে এবং অনেকগুলি রোগে ‘নেট্রাম মিউর’ ঔষধটির ইহার সদৃশ। উহাতেও হাঁটিয়া বেড়ানর ফলে, উত্তপ্ত হওয়ার ফলে, বিশেষতঃ রৌদ্রের মধ্যে হাঁটিয়া বেড়ানর ফলে রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া আছে। আর্সেনিকের শিরঃপীড়া সাধারণতঃ আলোকে এবং শব্দে বাড়ে, অন্ধকার ঘরের মধ্যে মাথায় জোড়া বালিশ দিয়া শুইয়া থাকিলে কমে। অনেক সময়ে শিরঃপীড়া বেলা ১টা হইতে ৩টার মধ্যে মধ্যাহ্নভোজনের পর উপস্থিত হয়, বৈকালের দিকে বাড়িতে থাকে এবং সমস্ত রাত্রি থাকিয়া যায়। উহার সহিত সচরাচর বিবর্ণতা বমিবমিভাব, অবসন্নতা মৃত্যুকালীন দুৰ্বলতার ন্যায় দুর্বলতা থাকে। শিরঃপীড়া পৰ্য্যায়শীল হয়। সবিরাম জ্বরের শীত অবস্থায় তীব্র মাথার যন্ত্রণা। সবিরাম জ্বর ভোগকালীন মাথা যেন ফাটিয়া যাইবে। এরূপ শিরঃপীড়া। সবিরাম জ্বরে মাথা যেন ফাটিয়া যাইবে এরূপ রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া আর্সেনিকে আছে। তৃষ্ণা সম্বন্ধে একটি অদ্ভুত লক্ষণ এই যে, শীতের সময় গরম জলপানের ইচ্ছা ব্যতীত অন্য কোনরূপ তৃষ্ণা থাকে না; উত্তাপের সময় মুখ ভিজাইবার মত পুনঃ পুনঃ অল্প জলপানের ইচ্ছা থাকে, কিন্তু উহা প্রায় তৃষ্ণাই নহে; ঘৰ্ম্মকালে অনেকখানি করিয়া জলপানের তৃষ্ণা থাকে। উত্তাপ আরম্ভ হইবার সাথে সাথেই তৃষ্ণা দেখা দেয়, মুখ যতই শুষ্ক হইতে থাকে, তৃষ্ণাও ততই বাড়িতে থাকে সে শুধু তাহার মুখটি ভিজাইয়া রাখিতে চায়; তারপর তাহার ঘর্ম দেখা দেয় এবং তখন অনেকখানি করিয়া জল পুনঃ পুনঃ পান করিবার তৃষ্ণা দেখা দেয়; এবং যতই সে ঘামিতে থাকে ততই তাহার জলপান প্রবৃত্তিও বাড়িতে থাকে। শীতের সময় শিরঃপীড়া থাকে, উহা বাড়িয়া চলে, মস্তকে রক্তসঞ্চয় হয়, শীত এবং উত্তাপের সময় দপদপকর শিরঃপীড়া দেখা দেয়; উহা উত্তাপের শেষের দিকে কমিতে থাকে, এবং যখন ঘৰ্ম্ম উপস্থিত হয়, তখন ঘৰ্ম্মের দ্বারা উহার শান্তি হয়।
পুরাতন শিরঃপীড়ায়, রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়ায় এবং ম্যালেরিয়াজনিত রোগে চৰ্ম্মের উপরে কুঞ্চিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, চৰ্ম্মের আকৃতি অকাল বৃদ্ধবৎ কুঞ্চিত দেখায়। মুখের ও ওষ্ঠের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী সাধারণতঃ খাঁজ খাঁজ হইয়া কুঁচকাইয়া যায়। গলার ডিপথেরিয়াজাত ঝিল্লীর অবস্থাও ঐরূপ হয়; ইহা আর্সেনিকের একটি বিশেষ লক্ষণ; এবং আমি যতদূর জানি এরূপ লক্ষণ অপর কোন ঔষধে নাই। গলার নিঃস্রাব দেখিতে চৰ্ম্মবৎ এবং কোঁচকান। কুঞ্চিত ঝিল্লীই আর্সেনিক প্রয়োগের নিশ্চিত লক্ষণ নয়, কিন্তু যখন আর্সেনিক নির্দিষ্ট হইবে, তখন খুব সম্ভবতঃ তোমরা এইরূপ ঝিল্লী দেখিতে পাইবে। এইরূপ রোগগুলি অত্যন্ত দূষিত প্রকৃতির, অত্যন্ত দুর্গন্ধ, পচা গন্ধ বিশিষ্ট, উহার গন্ধ গ্যাংগ্রিনের গন্ধের ন্যায়।
দৈহিক রোগ থাকাকালীন সময়ে সময়ে, মাথাটি সর্বক্ষণ চালিত হইতে থাকে, কারণ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি এতই বেদনার্ত থাকে যে নাড়ান যায় না, তখন অস্থিরতা ও অস্বচ্ছন্দতার জন্য মাথার সঞ্চালনই উপস্থিত হয় এবং উপশম না হইলেও সে সর্বক্ষণই মাথা নাড়াইতে থাকে। মুখমন্ডল ও মস্তক স্ফীতিযুক্ত হয়, মস্তকত্বকে শোথ ও মুখমন্ডল ও মস্তকে ইরিসিপ্লাস সদৃশ্য প্রদাহ দেখা দেয়। মস্তকত্বকে চাপ দিলে গর্ত হইয়া যায় এবং চাপের ফলে উহার নীচে পিঁপড়া হাঁটার ন্যায় সামান্য অনুভূতি জন্মে। মস্তকত্বকে উদ্ভেদ জন্মে এবং উহা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়। মস্তকত্বক এতই স্পর্শকাতর হয় যে, চুল আঁচড়ান যায় না, মনে হয় যেন মাথার উপর চিরুনি অথবা বুরুশ ঘষিবার সময় উহার স্পর্শ যেন মস্তিষ্কের ভিতরে প্রবেশ করে।
অত্যনুভূতি আর্সেনিকের একটি বিশেষ লক্ষণ, গন্ধে এবং স্পর্শে অত্যনুভূতি, সৰ্ব্বপ্রকার ইন্দ্রিয়বোধের অত্যনুভূতি। ঘরের অবস্থা এবং চতুঃপার্শ্বস্থ দ্রব্যাদি সম্বন্ধে অত্যনুভূতি,—এই অদ্ভুত লক্ষণটির কথা বোধ হয় আমি পূৰ্ব্বে উল্লেখ করি নাই। আর্সেনিকের রোগীকে কিছুতেই সন্তুষ্ট করা যায় না। এক সময়ে হেরিং উহাকে “সোনায়গড়া মাথা এবং বেতেগড়া দেহ” বলিয়া বর্ণনা করিয়াছিলেন। এই লক্ষণটি যদি কোন শয্যাগত স্ত্রীরোগীর মধ্যে প্রকাশ পায়, তাহা হইলে দেওয়ালের প্রত্যেকটি ছবি ঠিক সোজা হইয়া না ঝুলিলেও তাহার অত্যন্ত অস্বস্তি হইবে। যাহারা বিশৃঙ্খলা ও অগোছাল অবস্থা সম্বন্ধে অত্যনুভূতিযুক্ত এবং সবকিছুই ঠিকমত সাজাইয়া না রাখা হইলে বিচলিত ও বৃদ্ধিযুক্ত হইয়া পড়েন, তাহাদেরই রোগজ সদা অসন্তুষ্টভাব দেখা যায় এবং আর্সেনিকই ঐরূপ ক্ষেত্রে সদৃশ ঔষধ হইয়া থাকে।
এই ঔষধের চক্ষু-লক্ষণগুলি অত্যন্ত স্পষ্ট। ম্যালেরিয়া চাপাপড়া পুরাতন রোগী, ভগ্নস্বাস্থ্যধাতু, দুৰ্বল, রোগা লোক, যাহাদের প্রায়ই সর্দি লাগে এবং ঐ সর্দি বিশেষভাবে নাকে এবং চক্ষুতে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহাদের চক্ষু-লক্ষণ গুলি কষ্টদায়ক হয়। চক্ষু হইতে স্রাব নির্গত হয়। উহা চক্ষুর শুক্লমন্ডল-প্রদাহ হইতে পারে, সাধারণভাবে চক্ষুর গোলক ও পাতাকে আক্রমণ করিতে পারে, কখন কখন উহার সহিত ক্ষত দেখা দিতে পারে, ক্ষত হইতে পাতলা রক্তাক্ত স্রাব নির্গত হইতে পারে, এ স্রাব ঘন ও ক্ষতকর হইয়া চক্ষুকে হাজাইয়া তুলিতে পারে, এ স্রাব হইতে চক্ষুর কোণদ্বয় লাল হইয়া উঠিয়া, জ্বালা এবং মাংসাঙ্কুর দেখা দিতে পারে। জ্বালাভাবটি ঠান্ডা জলে ধুইলে উপশম হয়, আবার শুষ্ক উত্তাপেও উপশম হয়। প্রায়ই ক্ষতটি চক্ষুগোলকে প্রকাশ পায়, কখনও কখনও কনীনিকাতেও দেখা দেয়। ইহাতে নানাপ্রকার অতিবৃদ্ধি দেখা যায়; তালির ন্যায় অতিবৃদ্ধি, যাহাতে ক্ষতচিহ্নবৎ দাগ সৃষ্টি হইয়া ক্রমে পুরাতন ক্ষত উৎপাদন করে; ঐ ক্ষতগুলি ছোট ছোট অণুপক্ষের ন্যায় চক্ষুর মধ্যভাগে উৎপন্ন হইয়া অন্ধত্বের সম্ভাবনা ঘটায়। প্রদাহের সহিত প্রায়ই স্ফীতি, জ্বালা এবং ক্ষতকর স্রাব থাকে, স্ফীতিটি দেখিতে থলির মত এবং সেইজন্য আমরা থলির মত ফুলা চক্ষুর পাতা এবং চক্ষুর নীচে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থলির উৎপত্তি দেখিতে পাই মুখমন্ডল মোমবর্ণ ও বিবর্ণ, দেখিতে ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তি অথবা শোথগ্রস্ত ব্যক্তির ন্যায়।
সর্দিজ অবস্থা গলা ও নাসিকাকে আক্রমণ করে, অনেক সময়ে গল-লক্ষণ হইতে নাসিকা লক্ষণকে পৃথক করা কষ্টকর হয়। আর্সেনিকের রোগীর সৰ্ব্বদাই নাকে সর্দি লাগে, প্রত্যেকবার আবহাওয়া পরিবর্তনে পুনঃ পুনঃ হাঁচি হইতে থাকে। সে সৰ্ব্বদাই শীতার্ত এবং বায়ুপ্রবাহে তাহার কষ্ট হয়, ঠান্ডা ভিজে আবহাওয়ায় রোগলক্ষণ বাড়ে, সৰ্ব্বদাই যেন শীতে জমিয়া থাকে, অভ্যন্তর পর্যন্ত শীতার্ত হয়। এই সকল সর্দিস্রাবযুক্ত, বিবর্ণ মোমের বর্ণ ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তিরা, উজ্জ্বল আলোকের দিকে চাহিলে অন্ধ হইয়া যায়। সমগ্র নাসারন্ধ্র, গলা, স্বরযন্ত্র এবং বক্ষের প্রদাহ অবস্থার সহিত সর্দি ও হাঁচি। সর্দি নাকে আরম্ভ হইয়া গলা পর্যন্ত প্রসারিত হয় এবং প্রায়ই শুষ্ক, সুড়সুড়িযুক্ত, কঠিন, বিরক্তিকর কাশির সৃষ্টি করে। যে সর্দি নাকে আরম্ভ হইয়া বক্ষের দিকে প্রসারিত হয় এবং বায়ুনলীর উপদ্রব সৃষ্টি করে, তাহার ঔষধ খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন, প্রায়ই তোমাকে ঔষধ পরিবর্তন করিতে হইবে, কারণ, বক্ষ-লক্ষণ প্রায়ই বিভিন্ন ঔষধের অনুরূপ হইতে থাকিবে। নাসিকা এবং বক্ষ, উভয়ের লক্ষণের অনুরূপ হয়, এরূপ ঔষধ খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন।
আর্সেনিক পুরাতন নাকের সর্দিজ উপদ্রবের ঔষধ, ইহাতে নাক হইতে সহজে রক্তপাত হয়, রোগীর সৰ্ব্বদাই হাঁচি এবং সর্দি লাগা থাকে সে সৰ্ব্বদাই রাত্রিকালে শীতার্ত, বিবর্ণ, ক্লান্ত, অস্থির এবং উৎকণ্ঠাযুক্ত, থাকে এবং কষ্টকর স্বপ্ন দেখে। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী সহজেই প্রদাহিত হয়, উহাতে লালবর্ণ তালি তালি এবং সহজে রক্তক্ষরণশীল ক্ষত উৎপন্ন হয়। নাকের পশ্চাদ্দিকে বড় বড় মামড়ী জন্মে। আর্সেনিকে অতিশয় ক্ষত উৎপাদন প্রবণতা আছে। গলায় ব্যথা হইলে ক্ষত উৎপন্ন হয়, চক্ষুতে সর্দি বসিলে, উহার পরিণামে ক্ষত জন্মে, নাকের সর্দিজ উপদ্রবের শেষে ক্ষত জন্মে, এবং রোগটি যেখানেই হউক না কেন, এই ক্ষত উৎপাদন প্রবণতা আর্সেনিকের একটি বিশেষ লক্ষণ। সিফিলিস অথবা ম্যালেরিয়া হইতে ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তি অথবা ক্ষত ব্যবচ্ছেদের সময়, কিম্বা, ইরিসিপ্লাস বা টাইফয়েড় হইতে অথবা কুচিকিৎসিত অন্তরুৎসেক্য রোগের ফলে অথবা কুইনাইন বা অনুরূপ জিনিষ যাহা রক্তকে বিশ্লিষ্ট করিয়া রক্তাল্পতা সৃষ্টি করে—তাহা দ্বারা বিষাক্ত হইয়া, যে-সকল ব্যক্তি রক্তবিষাক্ততার অধীন হইয়াছিল তাহাদের নাসিকা বা অন্য স্থানের সর্দিজ রোগের পক্ষে ইহাই প্রকৃত ঔষধ। যদি পায়ে কোন ক্ষত দেখা দেয়, তাহা হইলে প্রদরস্রাব দেখা দিলে বা অন্য কোন প্রকার স্রাব স্থাপিত হইলে রোগী উপশম বোধ করে। এক্ষণে মনে কর এইরূপ কোন স্রাব কমিয়া গেল, তাহা হইলে অবরুদ্ধ স্রাব হইতে একপ্রকার পুরাতন অবরুদ্ধ কর্ণস্রাব, অবরুদ্ধ গলস্রাব, অবরুদ্ধ প্রদরস্রাব এবং অবরুদ্ধ ক্ষতস্রাব হইতে ঐরূপ হয়। সর্বপ্রকার স্রাব রুদ্ধ হইয়া যে নীরক্ত অবস্থা দেখা দেয়, আর্সেনিক তাহার অন্যতম ঔষধ। বর্তমানকালে প্রদরস্রাব, অন্যান্য স্রাব বন্ধ করিবার জন্য এবং ক্ষত আরোগ্য-করিবার জন্য দহনক্রিয়া এবং বাহ্যপ্রয়োগ একটি ফ্যাসান হইয়া দাড়াইয়াছে। ইহার ফলে বাহ্যিক রোগটি চলিয়া গেলে, শারীরবিধানে একপ্রকার নীরক্ত অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং রোগী মোমের বর্ণ, বিবর্ণ এবং রুগ্নাকৃতি হইয়া পড়ে এবং এই সকল সর্দিজ স্রাব পূর্বোক্ত কোন প্রকার অবস্থা চাপা পড়িলে, উপশমের উপায়স্বরূপ উপস্থিত হইয়া থাকে। উদাহরণস্বরূপ কোন স্ত্রীলোকের প্রদরস্রাব চাপা পড়িলে, তাহার নাক হইতে ঘন, রক্তাক্ত অথবা জলবৎ স্রাব দেখা দিতে পারে। যখন কোন ক্ষত প্রলেপ দ্বারা শুষ্ক করা হয় অথবা কর্ণস্রাব কোন প্রকার বিচূর্ণের বাহ্যিক ব্যবহার দ্বারা নিবারিত করা হয়, তখন সেই সকল ধাতুতে এই ঔষধটি প্রায়ই উপযোগী হইয়া থাকে। ডাক্তার মনে করেন যে, তিনি ঐ স্রাবটি থামাইয়া দিয়া খুব বুদ্ধির কাৰ্য্য করিয়াছেন, কিন্তু তিনি রোগীর পক্ষে যে স্রাব বাস্তবিক উপশমকর ছিল তাহারই গতিরোধে কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন। ভগ্নস্বাস্থ্য ধাতুতে এইসব অবরোধ হইতে যে সর্দিজ স্রাব উপস্থিত হয়, তাহাতে সালফার’, ‘ক্যাল্কেরিয়া, আর্সেনিক প্রভৃতি ঔষধ উপযোগী। অধিকন্তু, জৈব বিষ দেহে প্রবেশ করিলে যেরূপ অবস্থার উদ্ভব হয়, আর্সেনিক তাহারও অনুরূপ। ক্ষত ব্যবচ্ছেদ হইতে যেরূপ লক্ষণসকল উপস্থিত হয়, আর্সেনিক তাহারও অনুরূপ। ক্ষত ব্যবচ্ছেদ হইতে যেরূপ লক্ষণসকল উপস্থিত হয়, ইহা তাহার সদৃশ বলিয়া রোগের মূলদেশ পর্যন্ত প্রবেশ করে। আর্সেনিক এবং ‘ল্যাকেসিস’ সঙ্গে সঙ্গে রোগের মূলদেশে প্রবেশ করে, বিষটির প্রতিবিধান করে, শারীরবিধানের সামঞ্জস্য সংস্থাপন করিয়া সবকিছুর শৃঙ্খলা বিধান করে।
আর্সেনিকের নাকের লক্ষণগুলি অত্যন্ত কষ্টদায়ক; এবং উহা আর্সেনিক রোগীর লক্ষণচিত্রের অনেকখানিই প্রকাশিত করে। তাহাদের সহজেই সর্দি লাগে, তাহারা সৰ্ব্বদাই সর্দিতে অত্যনুভূতিযুক্ত হয় এবং সামান্য উত্তেজক কারণেই তাহাদের সর্দি জাগিয়া উঠে। আর্সেনিকের রোগী যখন খুব ভাল থাকে, তখনও তাহার অল্পাধিক ঘন সর্দি ঝরে, কিন্তু সামান্য সর্দি লাগিলেই স্রাবটি তরল হইয়া পড়ে। যে ঘন সর্দি তাহাদের স্বচ্ছন্দতার জন্য প্রয়োজন, তাহা তরল হইয়া পড়ে এবং তখন তাহার শিরঃপীড়া দেখা দেয় এবং তৎসহ তৃষ্ণা, অস্থিরতা, উদ্বেগ এবং কষ্ট উপস্থিত হয়। ইহা দুই তিন দিন স্থায়ী সর্দিজ্বরে পরিণত হয় এবং তারপর পুনরায় ঘন সর্দিস্রাব আরম্ভ হয়, সে ভাল বোধ করে এবং তাহার সকল কষ্ট ও বেদনা অন্তর্হিত হয়। ইহা নাসিকা ও ওষ্ঠের কৌষিক অর্ব্বদে বিশেষ উপযোগী হইয়াছে।
গলার ও টনসিলের প্রদাহ, উহাতে জ্বালা, ঠান্ডায় বৃদ্ধি এবং উত্তাপে উপশম। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী লালবর্ণ ও কুঞ্চিত হইয়া পড়ে। ডিপথেরিয়া প্রভৃতি রোগে যখন রক্ত বিষাক্ততা উপস্থিত হয় এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপরে পর্দা জন্মে তখন ঐ পর্দা ধূসরবর্ণ এবং কুঞ্চিত, ছাইয়ের রং হয় এবং সময়ে সময়ে সমগ্র কোমলতালু এবং বলয়গুলিকে ঢাকিয়া ফেলে। উহা বিশুষ্ক দেখায়। সে শয্যাশায়ী, উৎকণ্ঠিত ও দুর্বল হইয়া পড়ে, জ্বর বেশী থাকে না, কিন্তু মুখের যথেষ্ট শুষ্কতা থাকে। স্বরভঙ্গের সহিত সর্দিজ অবস্থা কণ্ঠনলীতে নামিয়া যায়, শ্বাসনলী আক্রমণ করে, জ্বালা থাকে, কাশিলে উহার বৃদ্ধি হয়, তারপর বুকের সঙ্কোচন উপস্থিত হয়, হাঁপানির ন্যায় শ্বাসকষ্ট, শুষ্ক খকখকে কাশি, কিন্তু কোন গয়ের উঠে না। এই বিরক্তিকর কাশির সহিত উৎকণ্ঠা, অবসন্নতা ও অস্থিরতা থাকে, ক্লান্তি এবং ঘর্ম দেখা দেয় এবং কাশিতে কোন উপশম হয় না। এই কাশি প্রাথমিক অবস্থা, উহা কয়েক দিন ধরিয়া চলিতে থাকে শুষ্ক বিরক্তিকর, কর্কশ কাশি, কিন্তু কোনই উপশম হয় না এবং হাঁপানির লক্ষণসমূহ দেখা দেয়, প্রচুর পরিমাণে পাতলা জলের মত গয়ের তুলিতে থাকে। বুকের মধ্যে সঙ্কোচনবোধ, অত্যন্ত কষাভাব এবং সাঁই সাঁই শব্দ হইতে থাকে, তাহার মনে হয়, যেন দম আটকাইয়া যাইবে। সময়ে সময়ে রক্তাক্ত গয়ের উঠে, কিন্তু লক্ষণগুলি প্রায়ই সর্দিজ প্রকৃতির। কখনও লোহার মরিচার বর্ণ গয়েরের সহিত নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। গয়ের হাজাজনক। বুকের মধ্যে যেন জ্বলন্ত কয়লা রহিয়াছে এরূপ জ্বালা এবং উহাতে রক্তস্রাব হয় এবং যকৃতের বর্ণ গয়ের উঠে।
আর্সেনিক রক্তস্রাবজনক ঔষধ, উহাতে রক্তস্রাবের প্রবণতা আছে, এবং সমস্ত ঝিল্লী হইতেই রক্তস্রাব হয়। সাধারণতঃ রক্ত উজ্জ্বল লালবর্ণ, কিন্তু এইস্থলে আক্রান্ত অংশটির গ্যাংগ্রিন সদৃশ অবস্থা থাকে বলিয়া কাল রক্তস্রাব হয় এবং উহার মধ্যে যকৃতের অংশের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাপ থাকে। বমিত পদার্থে এবং মলেও ঐ একই জিনিষ দেখা যায়। গয়ের অত্যন্ত দুর্গন্ধ, এত দুর্গন্ধ যে, তোমার শীঘ্রই ধারণা হইবে, ঐ স্থানে গ্যাংগ্রিণ জন্মিয়াছে। রোগী এই সময় এমন একটি অবস্থার দিকে যায়, যাহাকে গ্যাংগ্রিন প্রকৃতির প্রদাহ ব্যতীত কোন কথা দ্বারাই ভালভাবে প্রকাশ করা যায় না। উহাতে প্রাদাহিক অবস্থাজ্ঞাপক লক্ষণ আছে, উহাতে গয়েরের গন্ধ এতই বিশ্রী যে, তুমি দরজা খুলিবামাত্রই তাহা ধরিতে পারিবে। গয়ের চাপমিশ্রিত পাতলা জলবৎ তরল। গুয়ের ফেলিবার পাত্রে তুমি দেখিবে যে, ঐ জলবৎ শ্লেষ্মা পাকা কুলের নলের মত দেখাইতেছে, মধ্যে মধ্যে রক্তের চাপ এবং উহার গন্ধ অতি ভয়ানক। রোগী অস্থিরতার অবস্থা পার হইয়াছে এবং এখন সে শয্যাগত, অবসন্ন, বিবর্ণ এবং সম্ভবতঃ ঠান্ডা ঘামে সিক্ত।
পাকাশয়ের অবস্থায় উপস্থিত হইলে, আমরা পাকস্থলী-প্রদাহ বলিতে যাহা বুঝায় তাহার সবকিছুই দেখিতে পাইব-ভক্ষিত সবকিছু এমন কি এক চামচে জলও বমি হইয়া যায়, পাকস্থলীর অত্যন্ত উপদাহিতা, অত্যন্ত অবসন্নতা, ভয়ানক উৎকণ্ঠা, শুষ্ক মুখ, একটুখানি গরম জল পান করিলে সে এক মিনিটের জন্য শান্তি পায়, কিন্তু উহাও উঠিয়া আসে; ঠান্ডা তরল পদার্থ তৎক্ষণাৎ বমি হইয়া যায়। সমস্ত অন্ননলীটি প্রদাহিত অবস্থায় থাকে, যাহা কিছু উঠিয়া আসে বা নামিয়া যায় তাহাতেই জ্বালা করে। পিত্ত এবং রক্তবমন। পাকস্থলীতে অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা বর্তমান থাকে, কেহ স্পর্শ করিলে সহ্য হয় না। বাহ্যিকভাবে উত্তাপ প্রয়োগে উপশম হয়, গরম পানীয়ে সাময়িকভাবে উপশম হয়, উত্তাপমাত্রই উপশমদায়ক। অন্ত্রের মধ্যেও বহু উপসর্গ, ইহাতে পেরিটোনাইটিস (অন্ত্রাবরণপ্রদাহ) রোগের সমস্ত লক্ষণই আছে; উদরে স্ফীতি, ঢাকের মত অবস্থা, হাত দেওয়া বা স্পর্শ করা যায় না, কিন্তু তবুও সে নড়িতে থাকিবে, কারণ, সে অত্যন্ত অস্থির, সে স্থির হইয়া থাকিতে পারে না, কিন্তু পরিশেষে এতই দুর্বল হইয়া পড়ে যে, অবসন্নতা অস্থিরতার স্থান গ্রহণ করে। হয়ত আমাশয় দেখা দেয়, তৎসহ অনিচ্ছায় মল ও মূত্র নির্গত হইতে থাকে, হয় একটি না হয় একসঙ্গে দুইটি, অন্ত্র হইতে রক্তস্রাব এবং রক্তাক্ত মূত্রস্রাবও হয়। মলত্যাগ হইলে, আমরা মলে মড়ার মত গন্ধ, পচা মাংসের মত গন্ধ পাই। মল রক্তাক্ত, জলবৎ, বাদামি বর্ণ, পাকা কুলের নালের ন্যায় অথবা কাল এবং ভয়ানক দুর্গন্ধযুক্ত। কখনও রক্তামাশয় প্রকৃতির মলের সহিত মলদ্বারে তীব্র কোঁথানি ও জ্বালা থাকে, প্রত্যেকবার মলত্যাগকালে এরূপ জ্বালা হয় যেন সরলান্ত্রের মধ্যে কয়লার আগুন রহিয়াছে; অন্ত্রের মধ্যেও জ্বালা, জ্বালা সমস্ত অন্ত্রপথটি জুড়িয়া। উদরের বেদনা উত্তাপ প্রয়োগে উপশম হয়। পেটের বায়ুস্ফীতি অত্যধিক। কখন কখন অন্ত্র-প্রদাহ (Gastroenteritis) দেখা যায় এবং উহা গ্যাংগ্রিনের প্রকৃতি ধারণ করে; পূৰ্ব্বে ইহাকেই অন্ত্রের গ্যাংগ্রিন বলা হইত এবং এ রোগে সবসময়েই রোগীর মৃত্যু হইত। ঘন রক্তাক্ত স্রাব নির্গত হয়, উহাতে ভয়ঙ্কর দুর্গন্ধ থাকে, সমস্ত পদার্থই বমি হইয়া যায়, রোগী অত্যন্ত গরম ঘরে থাকিতে চায়, ভালভাবে আবৃত থাকিতে চায়, গরম বাহ্য প্রয়োগ চায়, গরম পানীয় চায়; তাহাকে মৃতের ন্যায় দেখায়, মড়ার মত গন্ধ, তৎসহ তীব্র ঝাঁঝাল গন্ধ, উহা সবকিছুকেই ছাপাইয়া উঠে। কিন্তু যদি এরূপ রোগী কাপড় খুলিয়া ফেলিতে চায়, ঠান্ডা ঘর চায়, জানালাগুলি খুলিয়া দেওয়া চায়, ঠান্ডা জলে গা মুছান চায় এবং বরফের মত শীতল পানীয় চায়, তাহা হইলে তাহাকে সিকেলি’ দিতে হইবে।
ছোট শিশুদের গ্রীষ্মকালীন রোগে, আমাশয়ে এবং শিশু-কলেরায় আর্সেনিকের এলোমেলো ব্যবহার সম্বন্ধে আমি তোমাদিগকে সতর্ক করিয়া দিতেছি। এই সকল রোগের সহিত ইহার এত বেশী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণ আছে এবং ঐ লক্ষণগুলি এতই সাধারণ যে, যদি তুমি ভালভাবে না দেখ এবং সতর্ক না হও, তাহা হইলে হয়ত তোমার রোগীকে আর্সেনিক দিয়া ফেলিবে, ফলে কতকগুলি লক্ষণ চাপা পড়িবে এবং রোগের প্রকৃতি এরূপ বদলাইয়া যাইবে যে, তুমি আর উহার ঔষধ খুঁজিয়া পাইবে না, এদিকে আর্সেনিক দ্বারাও সে আরোগ্য হইবে না। বাঁধাধরা নিয়মে চিকিৎসা করার একটি প্রবল প্রবৃত্তি আছে এবং সেজন্য যথেষ্ট সংখ্যক সাধারণ লক্ষণ বর্তমান না থাকিলেও আর্সেনিক দিয়া ফেলা হয় অর্থাৎ তুমি কেবলমাত্র বিশেষ লক্ষণগুলির উপর নির্ভর করিয়া ঔষধ ব্যবস্থা কর, রোগীর সাধারণ লক্ষণগুলির উপর নহে।
এই ঔষধে যথেষ্ট উদরাময় ও আমাশয়ের লক্ষণ আছে এবং এই অবস্থায় রোগীর বিবর্ণতা, উৎকণ্ঠা, মৃতবৎ চেহারা এবং মড়ার মত গন্ধ বর্তমান থাকে। আমাশয় রোগে অত্যন্ত কষ্টকর ও পুনঃ পুনঃ মলপ্রবৃত্তি থাকে, সামান্য চটচটে, কাল, তরল, কালির বর্ণ মল, তৎসহ মড়ার ন্যায় দুর্গন্ধ, অত্যন্ত অবসন্নতা, অস্থিরতা এবং বিবর্ণতা। অন্ত্রসম্বন্ধীয় উপদ্রবে, দুষ্ট প্রকৃতির রোগে মল অনিচ্ছায় নির্গত হয়। ইহা সরলান্ত্রের একপ্রকার অবস্থা, সরলান্ত্রের শিথিলতা, অত্যন্ত অবসন্নতা। অসাড়ে মল স্থানীয় বা সৰ্বাঙ্গীণ অবসন্নতা জ্ঞাপন করে, আর এই ঔষধে ভীতিজনক অবসন্নতা আছে, সুতরাং টাইফয়েড অবস্থায় ও দুষ্ট প্রকৃতির অন্তরুৎসেক্য রোগে অসাড়ে তরল মলত্যাগ থাকে এবং অসাড়ে মূত্রত্যাগ থাকে।
সময়ে সময়ে আর্সেনিকে ভেদলক্ষণ থাকে, কিন্তু সাধারণতঃ আমরা ‘পডোফাইলাম এবং ফসফরিক এসিডে’ যেরূপ দেখি সেরূপ অনেকখানি করিয়া ভেদ হয় না। সাধারণতঃ অল্পঅল্প মল, পুনঃ পুনঃ বেগে নির্গত হয়, অল্প পড়পড় শব্দ অল্প অধঃবায়ু থাকে; কলেরা রোগে অত্যন্ত অবসন্নতার সহিত অল্প অল্প বেগে নির্গত মল, আমযুক্ত, পিচ্ছিল, সাদাটে মল দেখা যায়। কলেরা রোগে অর্থাৎ প্রবলবেগে মল নির্গমন কালে, আর্সেনিক তত সচরাচর প্রযোজ্য হয় না, কিন্তু সময়ে সময়ে প্রবল মলবেগ শেষ হইবার পর এবং ভেদবমন শেষ হইবার পর কাজে আসে; তখন রোগীর অত্যন্ত অবসন্নকর অবস্থা দেখা দেয়, সে অচেতন নিদ্রায় পড়িয়া থাকে, তাহাকে প্রায় মৃতের মত দেখায়, এবং কেবলমাত্র নিঃশ্বাসটি পড়িতে থাকে। আমরা দেখি যে, এই সময়ে আর্সেনিক প্রতিক্রিয়া জাগায়। শিশু-কলেরা, উহাতে অত্যন্ত দুর্বলতা, অবসন্নতা, মড়ার ন্যায় চেহারা, অত্যন্ত শীতলতা, ঠান্ডা ঘামে আবৃত, হাত-পা ঠান্ডা, মৃতের মত ঠান্ডা; মল মূত্র, এমন কি বমিত পদার্থ হইতে সারা ঘরে মড়ার মত, অস্বাস্থ্যকর, দুর্গন্ধ, ঝাঁঝাল, তীব্র গন্ধ। অন্ত্রের স্রাব বিদাহী, ক্ষতকর, আরক্ততা ও জ্বালা উৎপাদক। অনেক ক্ষেত্রেই ঐ জ্বালা অন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সরলান্ত্র ও মলদ্বার জ্বালা করে, মলদ্বারের চারিদিকে যন্ত্রণা। ইহাতে কোঁথানি, আছে, অসহ্য কোঁথানি, অন্ত্রের নিম্নদেশে প্রবল যাতনা, সরলান্ত্র এবং মলদ্বারে যাতনা, রোগীর ভয়ানক উৎকণ্ঠা যন্ত্রণা এতই তীব্র, উৎকণ্ঠা এতই প্রবল যে, সে মৃত্যু ভিন্ন আর কোন কথাই ভাবিতে পারে না। ভীতি এবং আতঙ্কবোধ এতই ভীষণ যে, সে জীবনে কখনও আর এইরূপ বোধ করে নাই এবং তাহার নিশ্চিত বোধ হয় এইসবের অর্থ—সে মরিতে চলিয়াছে। এই ভাবের সহিত, অন্যান্য রোগেও যেরূপ দেখা যায়, রোগীর অস্থিরতা বর্তমান থাকে এবং যে সময়টিতে সে মলত্যাগ করে না, তখন সে মেঝেয় হাঁটিতে, বিছানায় যাইতে, বিছানা হইতে চেয়ারে আসিতে, চেয়ার হইতে বিছানায় যাইতে আরম্ভ করে। সে মলত্যাগ করিতে উঠে, তারপর শুইয়া পড়ে, আবার মলত্যাগ করিতে ছুটে, কিন্তু সময়ে সময়ে কাপড় নষ্ট হইয়া যায়। কখনও কখনও জ্বালার সহিত পুরাতন অর্শরোগ থাকে; মলত্যাগকালে অর্শবলি বাহির হইয়া পড়ে, মলত্যাগের পর বিছানায় শুইয়া সে অত্যন্ত অবসন্ন হইয়া পড়ে, আঙ্গুরের ন্যায় বহির্নির্গত বলিটিতে আগুনের ন্যায় জ্বালা হইতে থাকে। উহা উত্তপ্ত, শুষ্ক এবং রক্তস্রাবী। সরলান্ত্রে ফাটা ফাটা, উহা হইতে প্রত্যেকবার মলত্যাগকালে রক্তস্রাব হয়, জ্বালা করে। গুহ্যদ্বারের চারিদিকে চুলকানি ও পামার ন্যায় উদ্ভেদ, তাহাতে জ্বালা।
শরীরের সর্বত্র একপ্রকার বেদনা অনুভূত হয়; জ্বালা আর্সেনিকের চরিত্রগত লক্ষণ, সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনাও আর্সেনিকের চরিত্রগত লক্ষণ। এইবার এই দুইটিকে একত্র কর এবং অবস্থাটি বর্ণনা করিতে রোগী বলিবে যে, তাহার সর্বাঙ্গে টকটকে লাল উত্তপ্ত সূঁচদ্বারা খোঁচান হইতেছে। এই টকটকে লাল উত্তাপের অনুভূতি একটি সৰ্বাঙ্গীণ সাধারণ লক্ষণ, ইহা মলদ্বারে অনুভূত হয় এবং বিশেষতঃ অর্শবলি থাকিলে, উহাতে জ্বালা এবং উত্তপ্ত সূঁচ দিয়া খোঁচানর ন্যায় বোধ হয়।
কখনও কখনও যখন কোন তীব্র আক্রমণের প্রথমভাগে রোগী শয্যাশায়ী হইয়া পড়ে, তখন মেটিরিয়া মেডিকায় প্রাপ্তব্য এবং রোগাধিকারে প্রাপ্তব্য সর্বপ্রকার কম্প ও শীত দেখা দিতে পারে। প্রবল শীত এবং কম্প এবং ঐ সময়ে রোগী বলিবে যেন রক্তবহা নাড়ীর মধ্যে রক্তস্রোত বরফজলের মত ঠান্ডা হইয়া গিয়াছে। সে দেহের মধ্যে বরফের ন্যায় শীতল ঢেউয়ের চলাচল অনুভব করে। জ্বর আসিলে, সে পা হইতে মাথা পর্যন্ত অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়, ঘৰ্ম আসিবার পূর্বে সে মনে করে যেন রক্তবহা নাড়ীগুলির মধ্য দিয়া ফুটন্ত জল চলাচল করিতেছে। তারপর ঘর্ম ও শ্বাসকষ্ট এবং নানা উপসর্গ দেখা দেয়, উহাতে সে অবসন্ন হইয়া পড়ে এবং দেহ ঠান্ডা হয়। যদি ঘৰ্ম্মে জ্বরের ও যন্ত্রণার উপশম দেয়, তথাপি উহা অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়, তৎসহ অত্যন্ত অবসন্নতা দেখা দেয় এবং অবসন্নতার উপশম হয় না। ঘৰ্ম্মের সহিত তাহার অনেক উপসর্গ বাড়িয়া উঠে, উদাহরণস্বরূপ তৃষ্ণা বর্ধিত হয়। প্রচুর জলপান করে, কিন্তু, উপশম হয় না, মনে হয় যেন সে যথেষ্ট জল পাইতেছে না; রোগী বলে, “আমি জল পান করিয়া কুয়াটিকে শুকাইয়া দিতে পারি” অথবা “আমাকে এক বালতি জল দাও।” এইসব তাহার তৃষ্ণার অবস্থা জ্ঞাপন করে। জ্বরের সময় সে পুনঃ পুনঃ অল্প অল্প জন চায়, শীতের সময় সে গরম পানীয় চায়।
জননেন্দ্রিয়ে উদ্ভেদসহ জ্বালা থাকিলে আর্সেনিক একটি অত্যুপযোগী ঔষধ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতে জ্বালা করে, এমন কি যদি উহা সিফিলিস দোষযুক্ত হয়, পোড়া নারাঙ্গার মত ফোস্কা, যাহা, লিঙ্গাগ্র চর্মে এবং ভগৌষ্ঠে প্রকাশ পায়, জ্বালা, চিড়িকমারা ও হুলবিদ্ধবৎ যন্ত্রনাযুক্ত ক্যান্সার বা ক্যান্সারসদৃশ কৌষিক অৰ্ব্বদ, কিন্তু বিশেষতঃ যে ক্ষতগুলি দুৰ্বল, যেগুলি কিছুতেই আরোগ্য হইতে চায় না, কিন্তু ঠিক উহার বিপরীত ক্রিয়া করে অর্থাৎ ছড়াইতে থাকে, যেগুলিতে আমরা গলিত ক্ষত নাম দিয়া থাকি, যেগুলির বহির্দিকের ধারগুলি খাইয়া ক্রমশঃ বাড়িয়া যাইতে থাকে। এইরূপে বিস্তরণশীল ক্ষত, যাহা চারিদিকে খাইয়া যাইতে থাকে এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধ ছাড়ে, তাহাদের পক্ষে আর্সেনিক ও মার্ক কর’ দুইটি প্রধান ঔষধ। কুঁচকি স্থানের বাঘী ফাটিয়া যাওয়ার পর যে ক্ষত জন্মে তাহা যদি আরোগ্য হইতে না চায়। ক্ষত হইতে সামান্য দুর্গন্ধ স্রাব নির্গত হইতে থাকে এবং উহা বাড়িতে থাকে, ফাটা স্থানের চারিদিকে ক্ষত বিস্তৃত হইতে থাকে, কোনরূপ আরোগ্যপ্রবণতা দেখা যায় না। অথবা, আমাদের রোগী হয়ত কোন অস্ত্রচিকিৎসকের হাতে ছিলেন, তিনি হয়ত ঐ ভীতিজনক পুঁজোৎপত্তিবিশিষ্ট’ বাঘীতে ছুরি চালাইয়াছিলেন এবং তারপর উহা লাল প্রদাহিত এবং বিসর্পের ন্যায় আকৃতি বিশিষ্ট হইয়া পড়িয়াছে, কিন্তু কিছুতেই আরোগ্য হইতে চাহিতেছে না। ক্ষতের কিনারাগুলি খাইয়া গিয়াছে এবং উহার উপরিভাগ পরিষ্কৃত হইয়া একটি ডলারের (আমেরিকার মুদ্রা) আকার ধারণ করিয়াছে, কখন বা দাদের মত দেখাইতেছে। এইরূপ ক্ষতগুলি স্পর্শকাতর হয় এবং আগুনের ন্যায় জ্বালা করে।
স্ত্রী এবং পুং-জননেন্দ্রিয় সম্বন্ধে অনেকগুলি প্রয়োজনীয় লক্ষণ আছে। পুরুষের জননেন্দ্রিয়ের শোথ অবস্থা, লিঙ্গের শোথ, ফুলাভাব, সেইজন্য লিঙ্গটি অত্যন্ত ফুলিয়া থাকে এবং জলপূর্ণ থলির ন্যায় দেখায়; অন্ডকোষ, বিশেষতঃ অন্ডকোষের চৰ্ম্ম অত্যন্ত স্ফীত এবং ঐ স্থানের চারিদিকে আর্দ্র থাকে। স্ত্রীলোকদিগের ভগৌষ্ঠদ্বয় অত্যন্ত ফুলিয়া উঠে, তৎসহ জ্বালা, শূলবিদ্ধবৎ যাতনা, বেদনা, দৃঢ়তা ও স্ফীতি থাকে, এই সকল যন্ত্রের বিসর্পের ন্যায় প্রদাহ, উপদংশ প্রকৃতির ক্ষত, উহাতে যদি জ্বালা, চিড়িকমারা এবং সূঁচীবিদ্ধবুঁ যাতনা থাকে। ফুলা থাকুক আর নাই থাকুক স্ত্রী-জননেন্দ্রিয়ে ভয়ানক জ্বালাকর যন্ত্রণা, ঐ যন্ত্রণা যোনিদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, তৎসহ যোনিপথের অত্যন্ত শুষ্কতা এবং চুলকানি থাকে। প্রদরস্রাবে অত্যন্ত চুলকানি ও জ্বালা, তৎসহ তীব্র যাতনা সৃষ্টি করিয়া অঙ্গগুলিকে হাজাইয়া দেয়। সাদাটে, জলবৎ, পাতলা স্রাব, উহা ক্ষতকর, এত প্রচুর যে সময়ে সময়ে উহা ঊরু বাহিয়া-গড়াইতে থাকে। আর্সেনিকের ঋতুপ্রবাহ সচরাচর ক্ষতকর প্রকৃতির। ঋতুপ্রবাহের সহিত মিশ্রিত প্রচুর প্রদরস্রাব, অত্যন্ত প্রচুর এবং অত্যন্ত ক্ষতকর হয়। অনেক মাস ধরিয়া ঋতুস্রাব অবরুদ্ধ থাকে, কুঞ্চিত চিন্তাক্লিষ্ট, মলিন মুখাকৃতিবিশিষ্টা দুৰ্বল ও স্নায়বিক প্রকৃতি নারীদিগের ঋতুলোপ। অবশ্য, এলোপ্যাথি মতে আর্সেনিকের রক্তহীনতায় অদ্ভুত সুনাম আছে, বলা হয় যে, রক্তহীনতায় উহা ‘ফেরামের সমগুণ। ফেরাম’ ও আর্সেনিক নীরক্ততার পক্ষে শক্তিশালী ঔষধ, সুতরাং এইসব বিবর্ণ রোগী যে আর্সেনিক দ্বারা উপকার পায়, তাহাতে বিস্মিত হইবার কিছু নাই। “ঋতুস্রাবকালে সরলান্ত্রে সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা”, “প্রদরস্রাব, বিদাহী; ক্ষতকর; ঘন হরিদ্রাবর্ণ” ইত্যাদি। প্রসবের পর স্ত্রীলোক মূত্রত্যাগ করে না, মূত্রস্থলীতে মূত্র থাকে না; মূত্রনাশই হউক অথবা মূত্রস্থলী মূত্রেই পূর্ণই হউক, উহা নির্গত হয় না। এই প্রসঙ্গে তোমরা দেখিবে যে, কষ্টিকাম’ই সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধ; তুমি দ্বিতীয়বার দেখিতে গেলে তখনও দেখিলে যে, স্ত্রীলোকটির মূত্রপাত হয় না, কিন্তু ঐ সময় মধ্যে মূত্রত্যাগ হওয়া উচিত ছিল; তুমি দেখিবে যে অন্য কোন বিশেষ লক্ষণ না থাকিলে কষ্টিকাম’ই প্রযোজ্য হইবে। যদি শিশুটি মূত্রত্যাগ না করিয়া থাকে তখন অন্য যে-কোন ঔষধ হইতে ‘একোনাইট’ই বেশী প্রযোজ্য হইবে। ইহা প্রধান লক্ষণ ধরিয়া চিকিৎসা, কিন্তু অপর ঔষধ ব্যবহারের উপযোগী লক্ষণ থাকিলে ইহাকে নিন্দা করিতে হইবে। যদি অন্য কোন ঔষধের লক্ষণ না থাকে, একোনাইট’ ও ‘কষ্টিকাম’ দিবে এবং দেখিবে যে উহাদিগকে প্রয়োগ না করার মত কোন কারণ আছে কিনা। স্ত্রীলোকদিগের সম্বন্ধে আরও একটি লক্ষণ যে জাতীয় ক্যান্সার স্ত্রীলোকদিগের জরায়ু ও স্তনগ্রন্থিতে দেখা যায় আর্সেনিক তাহার পক্ষে একটি অদ্ভুত উপশমকর ঔষধ। বাস্তবিক আরোগ্য সম্ভব নহে—এরূপ বহু ক্ষেত্রেও ইহা দ্বারা জ্বালা এবং সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা সম্পূর্ণ অন্তর্হিত হইয়াছে। ইহা উপশমকর ঔষধগুলির অন্যতম।
আর্সেনিকে স্বরনাশ, শুষ্ক বিরক্তিকর, কাশির সহিত স্বরযন্ত্র-প্রদাহ আছে; কাশিতে কোনই উপশম হয় না, সৰ্ব্বদা খুক খুক করে, শুষ্ক খকখকে কাশি চলিতে থাকে। হাঁপানি, কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস, শ্বাস-কৃচ্ছ্রতার সহিত ইহার সম্বন্ধ অনুশীলন কর। আর্সেনিক বহু স্নায়বিক প্রকৃতির রোগীর দীর্ঘকালস্থায়ী হাঁপানি আরোগ্য করিয়াছে; এইপ্রকার হাঁপানি দুপুর রাত্রির পরে আসে, রোগী সর্দিতে ভুগে, তাহার বিবর্ণ, শুষ্ক; কাশি শুষ্ক ও সাঁই সাঁই শব্দকর, বিছানার উপর উঠিয়া বসিয়া বুকটি চাপিয়া ধরিতে হয়, উদ্বিগ্ন, অস্থির, অবসন্ন।
হৃৎলক্ষণ আর্সেনিকের সদৃশ হইলে তাহার চিকিৎসা করা কঠিন হইয়া পড়ে; লক্ষণগুলি অতিশয় দুৰ্বলতাজ্ঞাপক,— প্রবল বুক ধড়ফড়ানি, সামান্য উত্তেজনায় বা পরিশ্রমে হৃৎস্পন্দন, অত্যন্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুর্বলতা, রোগী কথা বলিতে পারে না, সে চলিতে পারে না, সে উপর তলায় উঠিতে পারে না; নড়িতে গেলেই তাহার বুক ধড়ফড়ানি বাড়ে, সামান্য উত্তেজনায় বুক ধড়ফড়ানি আরম্ভ হয়। “বুক ধড়ফড়ানির প্রবল আবেশ, অথবা হৃদন্তরবেষ্ট (Endocarditis) রোগে মূর্চ্ছার আক্রমণ।” আর্সেনিক হৃত্যন্ত্রের গুরুতর রোগের উপযোগী ঔষধ, অনেক অসাধ্য রোগের সদৃশ ঔষধ অর্থাৎ যখন তুমি দেখ এইসব সুস্পষ্ট হৃৎপিন্ডের রোগে, হৃদবেষ্টের শোথ প্রভৃতিতে আর্সেনিকের সবকিছু লক্ষণ মিলিয়া গেল, তখন তুমি এক শ্রেণীর সাঙ্ঘাতিক রোগ পাইলে,“হৃৎশূল” প্রভৃতি “হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত বাত” ইত্যাদি “অত্যন্ত উত্তেজনার সহিত হৃৎবেষ্টে জলসঞ্চয়” ইত্যাদি “নাড়ী” দ্রুত, ক্ষুদ্র, কম্পমান।” “সৰ্ব্ব শরীরে স্পন্দনবোধ” ইত্যাদি। আবার আর একপ্রকার অবস্থাও দেখা যায় তখন হৃৎপিন্ডটি দুর্বল, নাড়ী সুতার ন্যায়, রোগী বিবর্ণ ও শীতল, ঘৰ্ম্মে আবৃত নাড়ী অতি দুর্বল। যখন হৃৎপিন্ডটির নিজস্ব যান্ত্রিক অবস্থা এরূপ হয় না, তখন আর্সেনিক একটি অদ্ভুত ঔষধ অর্থাৎ তখন ইহা আরোগ্য করিতে সক্ষম।
আমি আর্সেনিক প্রকৃতির সবিরাম জ্বর সম্বন্ধে কয়েকটি সাধারণ কথা, কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় লক্ষণ সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলিতে চাই। তুমি সবিরাম জ্বরের এবং সাধারণভাবে জ্বরের লক্ষণগুলি পড়িয়া লইতে পার এবং যেরূপ বলা হইয়াছে, সেইভাবে ব্যবহার করিতে পার। আর্সেনিকে অন্যান্য ঔষধের ন্যায় শীতের তীব্রতা আছে, তৎসহ উত্তেজনা, শিরঃপীড়া, অবসন্নতা, মুখের শুষ্কতা, উষ্ণ পানীয়ে আকাঙ্খা, গরম বস্ত্রে আবৃত থাকিতে ইচ্ছা আছে, অন্য ঔষধের ন্যায় উদ্বেগ, অস্থিরতা ও অবসন্নতা আছে, কিন্তু আর্সেনিকের রোগের আক্রমণ সময়টি একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার। আর্সেনিকের শীতের আক্রমণকাল সম্বন্ধে একটি আশ্চৰ্য্য বিষয় এই যে, উহা অনিয়মিত, দুইবার একই সময়ে আসে না, যে-কোন সময়ে আসে। ইহাতে বৈকালিক শীত আছে, মধ্যরাত্রির পর শীত আছে; কখন প্রাতঃকালে, কখন বেলা ৩-৪টায়, কখন কখন দুপুর ১টায় শীত দেখা দেয়। ইহার প্রকৃতিতে আশ্চৰ্য্যরূপ পৰ্য্যায়শীলতা আছে। সুতরাং ইহাতে অবিরাম প্রকৃতিও আছে। ইহার তৃষ্ণার একটি বিশেষত্ব আছে। শীতের সময় কখন কখন প্রবল তৃষ্ণা থাকিলেও ইহার ঠান্ডা জিনিষে বিতৃষ্ণা আছে, সুতরাং সে কেবলমাত্র উষ্ণ পানীয়, গরম চা ইত্যাদি খাইতে পারে। জ্বরের সময় তৃষ্ণা বাড়ে তাহার মুখ শুষ্ক থাকে এবং সে পুনঃ পুনঃ একটু একটু জলপান করে, ঠিক মুখটি ভিজাইবার মত একবারে এক চা-চামচ জল। জলে তাহার তৃষ্ণা মেটে না, কারণ, সে মাত্র এক বড় চামচ জল, একটুখানি জল পুনঃ পুনঃ পান করে। তারপর ঘর্ম দেখা দেয়, তৎসহ অবসন্নতা, বর্ধিত শীতলতা, প্রচুর জলপানের ইচ্ছা, ঠান্ডা জলপানের অদম্য তৃষ্ণা দেখা দেয়। শীতের সময় হাড়ের মধ্যে বেদনা থাকে, সম্ভবতঃ ইহা হাতে-পায়ে, আরম্ভ হয়, শীতের সময় মস্তকে প্রবল রক্তসঞ্চয় হয়, হাতের ও পায়ের আঙ্গুলগুলি বেগুনি বর্ণ হইয়া যায়। এই লক্ষণগুলিকে এবং ইহার সহিত ভয়ঙ্কর উদ্বেগের সহিত যেরূপ অবসন্নতা দেখা দেয়, তাহা একত্রিত কর এবং তুমি প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাধারণভাবে আর্সেনিক রোগীকে বাছিয়া লইতে পারিবে। কিন্তু এই ঔষধে শীত, উত্তাপ ও ঘর্ম সম্বন্ধে এত বেশী সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণ আছে যে, তুমি যদি সাধারণ লক্ষণগুলি পরিত্যাগ করিয়া ঐ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণগুলিই গ্রহণ কর, তাহা হইলে ইহা যে-কোন শীতের রোগীতেই প্রযোজ্য বলিয়া মনে হইবে, অর্থাৎ তুমি হয়ত ভাবিবে যে, তুমি ঠিকই ধরিয়াছ, কিন্তু কাৰ্য্যক্ষেত্রে তুমি বিফল হইবে, যদি না আর্সেনিকে চিহ্নিত করিবার মত কতকগুলি সাধারণ লক্ষণ বর্তমান থাকে। সমুদয় রোগীটিকে আর্সেনিকের রোগী বলিয়া চিনিয়া লওয়া এক কথা এবং লক্ষণগুলিকে আর্সেনিকের লক্ষণ বলিয়া মনে করা আর এক কথা। চায়না এবং কুইনাইন সম্বন্ধেও ঐ একই ব্যাপার, তাহাদেরও অসংখ্য বিশেষ লক্ষণ আছে, কিন্তু রোগীকে ‘চায়না’ বা কুইনাইনে’র রোগী বলিয়া চিনিয়া লইবার কতকগুলি নির্দিষ্ট সাধারণ লক্ষণ বৰ্ত্তমান থাকা চাই।
অপর নাম—হোয়াইট আর্সেনিকাম (White Arsenicum)
আর্সেনিয়াস অ্যাসিড (Arsenious acid)
সেঁকোবিষ, শঙ্খ-বিষ।
সংক্ষেপে –
১। নিদারুণ যন্ত্রণা ও অস্থিরতা, রোগী একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে চায়।
২। আকস্মিক অতিশয় অবসন্নতা, জীবনী শক্তির বিলোপ।
৩। তীব্র জ্বালাকর বেদনা।
৪। দারুণ পিপাসা, রোগী বার বার জল পান করে কিন্তু কবারঅল্প পরিমাণে জল পান করে, ঠাণ্ডা জল সহ্য হয় না।
৫। শ্বাসকষ্ট-সঞ্চালনে বৃদ্ধি বিশেষতঃ উপরে উঠায়।
৬। বমি ও বাহ্যে এক সঙ্গে; বৃদ্ধি আহারের বা জলপান করার পরে।
৭। হ্রাস-বৃদ্ধি-বৃদ্ধি- ঠাণ্ডা হওয়ায়, ঠাণ্ডা জিনিসে, ঠাণ্ডা বাহ্য প্রয়োগ, রাত্রি ১টা থেকে ৩টায় ও সঞ্চালনে।
উপশম – গরম বাতাসে বা গরম ঘরে, গরম বাহ্য প্রয়োগ ও ঘাম হলে।
আর্সেনিক অ্যালবাম – পরিক্রমা।
১। আর্সেনিকের মত অস্থিরতা অন্য কোন ঔষধেই নেই। অস্থিরতা একোনাইটেরও লক্ষণ, কিন্তু প্রাদাহিক রোগের প্রথমাবস্থায় তীব্র জ্বর সহকারেই এই অস্থিরতা দেখা যায়। আর্সেনিকে অস্থিরতা দেখা দেয় রোগের শেষাবস্থায় যখন রোগীর শক্তি যথেষ্ট হ্রাস পায় অথবা টাইফয়েডের জ্বরের নিস্তেজ অবস্থা প্রকাশ পায়। একোনাইটের রোগী ভয়ে ও যন্ত্রণায় এদিক-ওদিক গড়াগড়ি দেয়, আর্সেনিকের রোগী গড়াগড়ি দিতে চায়, কিন্তু অত্যন্ত দুর্বল বলে পারে না। তাছড়া আর্সেনিক রোগী ইচ্ছানুসারে নড়াচড়া করতে পারে না, কিন্তু একস্থান থেকে অন্যস্থানে বা একবিছানা থেকে অন্য বিছানায় নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু নিজে অত্যল্পমাত্ৰ চেষ্টা করলেই অবসন্ন হয়ে পড়ে। রোগীর মৃত্যু ভয় থাকে, কিন্তু উহাতে একোনাইটের মত মৃত্যু ভয় নেই। তবে ওতে এক প্রকারের উৎকণ্ঠা থাকে, বিশেষ করে সে মনে করে যে, তার রোগ আর সারবে না। তাই ঔষধ খেয়ে আর কি হবে? তার মৃত্যু হবে। এক্ষেত্রে শারীরিক অস্থিরতার মত রোগীর মানসিক অস্থিরতারও আতিশয্য থাকে। আর্সেনিক রোগী সময়ে সময়ে একপ্রকার উৎকণ্ঠায় ভোগে আর সেজন্যই রাত্রিকালে সে বিছনা থেকে উঠে পড়তে চায়। এমনকি যখন কোন বেদনা থাকেনা, তখনও সে ক্রমাগত স্থান পরিবর্তন করতে চায়, আর যথেষ্ট শক্তি থাকলে সে হেঁটে বেড়াতে চায়। এগুলি সাধারণতঃ রোগী স্থির থাকতে পারে না বলেই ঘটে থাকে।
তবে যে সকল রোগীর পক্ষে এই ঔষধটি উপযোগী, তাদের এটা দেওয়া হলে প্রথমেই রোগীর উদ্বেগ ক্রমশ কমতে থাকে, রোগী স্থির হয়ে শুয়ে থাকে। বেদনা কম না হলেও রোগীর অস্থিরতা কমে যায় এবং সে পূৰ্ব্বাপেক্ষা উহা সহ্য করতে পারে। তাই ইহা একটি শুভ লক্ষণ এবং সাধারণতঃ এর পরে অন্যান্য লক্ষণগুলিও উপশম হয়।
তাই রোগ যা হোক না কেন, যদি অবিচলিত অস্থিরতা ও তার সঙ্গে রোগীর অতিশয় দুৰ্ব্বলতা বর্তমান থাকে, তাহলে আর্সেনিক ব্যবস্থা করতে কখনও ভুলবেন না।
২। জ্বালা
জ্বালা, বিশেষতঃ তরুণ রোগের জ্বালা আর্সেনিকের অপর একটি পরিচালক লক্ষণ।
তবে এই জ্বালা যে কেবল তরুণ রোগেই অনুভূত হয়, তা নয়। ইহা বহু পুরাতন রোগে বিশেষ করে মারাত্বক প্রকৃতির বা মারাত্বক প্রকৃতি নেবে, এরূপ পুরাতন রোগে দেখা যায়। তবে পুরাতন রোগের জ্বালায় সাধারণতঃ সালফারই শ্রেষ্ঠ ঔষধ। মানুষের দেহে এমন কোন যন্ত্র বা বিধানতন্ত্র (টিসু) নেই, যেখানে আর্সেনিকের জ্বালা প্রকাশ পায়না। আশ্চৰ্যবোধ হলেও এই জ্বালা প্রশমিত হয় উত্তপে, বিশেষ করে উত্তপ্ত বাহ্য প্রয়োগে, আগুনের তাপে বা গরম ঘরের উষ্ণতাঁয় রোগীর জ্বালায় উপশম ঘটে। ইহা সিকেলি করনিউটামের জ্বালায় ঠিক বিপরীত। কারণ সিকেলি করে যে স্থানস্পর্শ করলে ঠাণ্ডা বোধ হয়, সেখানে রোগীর জ্বালা অনুভূত হয়, কিন্তু গরম বাহ্য প্রয়োগ একেবারেই সহ্য হয় না, এমনকি সেই স্থানটি ঢেকে রাখতেও কষ্ট হয়।
আর্সেনিকের তরুণ সর্দিতে গলা ও নাকের জ্বালা গরম বাহ্য প্রয়োগে উপশমিত হয়, এমনকি গলার জালা গরম জিনিস খেলে বা পান করলে কম হয়। এইটিই আর্সেনিকের প্রধান উপচয় ও উপশম লক্ষণ, যারদ্বারা তরল সর্দিতে আমরা এই ঔষধকে অ্যালিয়াম সেপা ও মারকিউরিয়াস থেকে আলাদা করতে পারি।
রোগী বিবরণী –
তিনটি ঔষধেই তরল সর্দি আছে। এক সময়ে আমি একটি রোগিণী পেয়েছিলাম, যার হাতের একজিমা বসে গিয়ে উগ্র পাকাশয় শূলবেদনা (gastralgia) জন্মে। একজিমা বসে যাওয়ার কথা আমি কিছুই জানতাম না। কিন্তু আর্সেনিক ব্যবস্থা করি, কারণ বেদনা মধ্যরাত্রির পর থেকে রাত ৩টে পৰ্য্যন্ত থাকত। সেই সময় রোগিণীকে যন্ত্রণার জন্য মেঝের উপর হেঁটে বেড়াতে হত ও পাকস্থলীতে অত্যন্ত জ্বালা ছিল। আর্সেনিক সেবনের পর কেবলমাত্র একবার সামান্য বেদনা হয়েছিল, কিন্তু আমি যখন তাকে দেখতে যাই সে বলে, ডাক্তার, এই ঔষধটি কি একজিমার জন্ম দেয়। তখন আমি জানতে পারি যে, মলম লাগানোর ফলে তার একজিমা বিলুপ্ত হয়েছিল। তখন আমি তাকে বলি যদি সে ইচ্ছা করে, তাহলে আবার একজিমা (ইরাপশান) বসিয়ে দিয়ে যেকোন সময় সে পাকস্থলীর বেদনা ফিরে পেতে পারে, আর তা সে চাই কি? কিন্তু সে তা চায়নি।
৩। টাইফয়েড বা সন্নিপাত প্রকৃতির জ্বরে আর্সেনিক একটি অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ। তবে লক্ষণ সাদৃশ্যের উপরেই এর উৎকৃষ্টতা নির্ভর করে।
কোন কোন চিকিৎসক (ডা.বেয়ার) টাইফয়েডের পূর্ণবিকাশের অবস্থার জন্য অপেক্ষা না করে প্রথম থেকেই আর্সেনিককে ঘন ঘন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। কিন্তু রোগের ভাব লক্ষণ আর্সেনিকের মত হবে ভেবেই আগে থেকেই আর্সেনিক ব্যবহার করা বিজ্ঞান সম্মত নয়। ভবিষ্যতে মিউরিয়েটিকে অ্যাসিড বা কাৰ্ব্বো ভেজিটেবিলিসেরও লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। অতএব ভবিষ্যৎ সম্ভবনা আশঙ্কা করে ঔষধ ব্যবহার করা বিধেয় নহে। কারণ রোগের কোন ভবিষ্যৎ বা প্রত্যাশিত অবস্থার চিকিৎসা করার চেষ্টা না করে যে কোন বা সর্বপ্রকার (বর্তমান) অবস্থার নির্দেশিত ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা অপেক্ষা আর অন্য কোন নিরাপদ বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নেই।
সবিরাম জ্বরেও, বিশেষ করে কুইনাইনের অপব্যবহারের পরে আর্সেনিক সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ। তবে রোগীর ও ঔষধের বিশেষ লক্ষণের সাদৃশ্য দেখেই এস্থলে ঔষধের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। ঠোঁট দুটি থেকে মলদ্বার পর্যন্ত সমগ্ৰ পরিপাক নালীতেই আর্সেনিকের ক্রিয়া প্রকাশ পায়। ঠোঁট দুটি এতই শুকনো ও ফাটাফাটা হয় যে, রোগ উহা আর্দ্র রাখবার জন্য বারবার ঠোঁট চাটে। জিভও নানাভাবে আক্রান্ত হয়, উহা শুকনো ও আরক্ত এবং উন্নত জিহ্বা কন্টকযুক্ত, অথবা লাল খাঁজকাটা ধারযুক্ত কিংবা খড়ি বা শবেদার মত সাদা, অথবা সীসাবর্ণ বা কটা বা কাল বিশেষত টাইফয়েড জ্বর মুখগহ্বর শুকনো বা উপক্ষত বিশিষ্ট বা পচাক্ষতযুক্ত বা গ্যাংগ্রিনাস হয়, গলমধ্যেও এইরকম অবস্থা জন্মে। নিদারুণ বা প্রবল পিপাসা কিন্তু এই পিপাসায় বিশেষত্ব এই যে, উহা তীব্র হওয়া সত্ত্বেও রোগী এক একবারে কেবল একটু একটু করে জলপান করে। পাকস্থলীতে এত উপদাহ থাকে যে, অতি অল্প অল্প খাদ্য বা পানীয়ে কষ্ট ও বেদনা জন্মে অথবা তৎক্ষণাৎ বমি বা মলত্যাগের বা একসঙ্গে উভয়েরই উদ্রেক হয়। ঠাণ্ডা পানীয়, বরফের জল বিশেষতঃ আইসক্রিম সহ্য হয় না এবং যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। জল বা শ্লেষ্মা, পিত্ত বা রক্ত ও কফি চূর্ণের মত পদার্থ বমি হয়।
৫। পাকস্থলীর ভয়ানক বেদনা অতি অল্প খাদ্য বা পানীয়ে, বিশেষ করে ঠাণ্ডা অবস্থায় গ্রহণ করলে বেদনার বৃদ্ধি হয়। পেটেও তীব্র বেদনা, তার জন্য রোগী সম্ভবপর সবদিকে ঘুরে ফিরে ও মোচড়া-মুচড়ি করে। সাধারণতঃ জলের মত মল থেকে, কাল রক্তাক্ত ও ভয়ানক দুর্গন্ধময় মল পৰ্য্যন্ত সকলরকম মলের উদরাময় জন্মে এবং পরিশেষে অন্ননালী পথের শেষসীমা আক্রান্ত হয়ে অর্শরোগ জমায়। তাছাড়া সমগ্র অন্ননালীর প্রতি রোগেই সামান্য উপদাহ থেকে অত্যন্ত প্রদাহিক ও সাংঘাতিক রোগেও আর্সেনিকের প্রকৃতিগত বিশেষ লক্ষণ বা জ্বালা (কম বা বেশী) বর্তমান থাকে এবং উত্তাপে উপশম পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া সবসময় বৃদ্ধি না হয়ে মধ্যরাত্রে বৃদ্ধি হতে দেখা যায়।
৬। শ্বাসযন্ত্রের রোগেও আর্সেনিক ব্যবহৃত হয়।
প্রথমতঃ নাসিকার তরুণ সর্দিতে ইহা প্রথম স্থান অধিকার করে এবং প্রায়ই মনোনয়ন করতে হয় অ্যালিয়াম সেপা ও মারকিউলিয়াসের সঙ্গে তুলনা করে। আর্সেনিকের তরল সর্দি স্রাব নাকের পাতায় ও ওষ্ঠে লাগলে উহা হেজে যায় এবং অন্যদুটি ঔষধ অপেক্ষা আর্সেনিকে জ্বালা বেশী। মারকিউরিয়াস দ্বারা আংশিক উপকার হলে ওর পরে আর্সেনিক ভাল খাটে।
৭। ফুসফুসে বোগ অতিশয় শ্বাসকষ্ট থাকলে আর্সেনিক বিশেষ উপযোগী। শ্বাসে সাঁই সাঁই শব্দ হয়, তার সঙ্গে কাশি থাকে এবং ফেনাফেনা গয়ের উঠে। রোগী শুয়ে থাকতে পারে না, উঠে সে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়। নড়লে চড়লে হাঁপিয়ে পড়ে, মনে হয় বায়ুপথগুলি সরু হয়ে গেছে। উদ্ভেদ বসে যাওয়া জনিত বা ঐ কারণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হাঁপানি রোগে, যেমন হাম বসে যাওয়ার ফলে নিউমোনিয়া রোগে বা একজিমা বসে যাওয়ার ফলে ফুসফুসের পুরাতন উপদ্রবে ইহা বিশেষভাবে উপকারী।
রোগী বিবরণী –
আমার (ডা. ন্যাশ) একটি দীর্ঘকালের হাঁপানি রোগিণীর কথা মনে আছে। তাকে দেখবার জন্য আমাকে মধ্যরাত্রে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ তার আত্মীয় স্বজন মনে করেছিলেন, যে সকাল হওয়ার আগেই রোগিণী মারা যাবে। আমি দেখলাম যে তার রোগের আক্রমণ সৰ্ব্বদাই রাত্রি ১টার সময় উপস্থিত হয়। আমি আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ দিয়েছিলাম এবং রোগিণী সম্পূর্ণভাবে সেরে গিয়েছিল। তবে রলিন আর, গ্রেগের দেওয়া এই লক্ষন ডানদিকে ফুসফুসের উপরের দিকে ও উহার উপরের তৃতীয়াংশের ভিতর দিয়ে তীব্র, তীক্ষ্ম, নিশ্চল চিড়িকমারা বেদনা (fixed or darting pain) আর্সেনিকের একটি মহামূল্য লক্ষণ। এই লক্ষণে উপর নির্ভর করে ডা. ন্যাশ অনেকগুলি দুরারোগ্য পীড়া আরোগ্য করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বৃদ্ধদের পচনশীল (গ্যাংগ্রিনস) গয়েরযুক্ত নিউমোনিয়াতেও অন্যান্য লক্ষণের মিল থাকলে আর্সেনিক দ্বারা প্রায়ই রোগীর প্ৰাণরক্ষা করা যায়। অন্যান্য স্থানের মত এস্থলেও সচরাচর জ্বালা লক্ষণটি বর্তমান থাকে। প্লুরিসিতেও ইফিউশান জন্মালে আসেনিক উপকারী।
৮। আর্সেনিক স্নায়ুমণ্ডলকেও গভীর আক্রমন করে। এই জন্যই আর্সেনিকের প্রকৃতিগত লক্ষণ অস্থিরতার সঙ্গে অতিশয় অবসন্নতা প্রকাশ পায়। আর এই অবসন্নতা অধিকাংশ তরুণ ও পুরাতন রোগেই বর্তমান থাকে। যেমন টাইফয়েড জ্বরে কোন ঔষধেই আর্সেনিকের মত এত বেশী অবসন্নতা থাকে না। কার্বভেজ ও মিউবিয়েটিকে অ্যাসিড ইহা সমতুল্য বটে, কিন্তু আর্সেনিকের রোগী সৰ্বই নড়াচড়া করতে বা কেউ তাকে নড়ানড়ি করুক (to move or be moved) তা চায়। অন্য দুটি ঔষধে এইরূপ সঞ্চালন প্রবৃত্তির পুরোপুরি অভাব বর্তমান থাকে, এমনকি রোগী মৃতের মত নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকে। তরুণ ও পুরাতন রোগে রোগী যদি শয্যাগত নাও হয়, তবুও সে এতই দুর্বল যে সামান্য পরিশ্রমেই অবসন্ন হয়ে পড়ে এক তখন তাকে শুতে হয়। কখন কখন এই কিম অবসন্নতা অতি দ্রুত উপস্থিত হতে দেখা যায়।
পুরাতন রোগের কি রকম অবস্থায় আর্সেনিকের প্রয়োজন হয়, তার একটি উদাহরণ দেওয়া হল।
পর্বতারোহণে অন্য কোন শারীরিক পরিশ্রমে রোগী যখন দমের অভাব, অবসন্নতা, নিদ্রাহীনতা ও অন্যান্য অসুখ দেখা দেয়, তখন আর্সেনিক উপকারী। এর দ্বারা রোগীর দুর্বলতাই প্রতিপন্ন হয়। এই দুর্বলতা বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। রোগীর পক্ষে দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আর্সেনিকের দুর্বলতা তার রোগের পরিমাণ অপেক্ষা অনেক বেশী। ইহা এক প্ৰকার সৰ্বাঙ্গীন অবসন্নতা, ফসফরিক অ্যাসিড, স্ট্যানাম ও সালফারের বক্ষস্থলে বা ফসফরাস উদরে অথবা ইগ্নেসিয়া, হাইড্রাসটিস ও সিপিয়া পাকস্থলীতে যেরকম স্থানিক দুর্বলতা দেখা যায়, আর্সেনিক সেরূপ নহে।
ফ্যারিংটন বলেন যে, টিসু বা বিধান তন্তুর উপদাহিত আর্সেনিকের সার্বভৌমিক লক্ষণ। বাস্তবিকভাবে টিস্যুর প্রায় সর্বত্রই আর্সেনিকের ক্রিয়া দেখা যায়, যেমন –
১। আর্সেনিক দ্বারা আক্রান্ত হলে পচনজনক বা সেপটিক পরিবর্তন ঘটে, উদ্ভেদ প্রবণতা বা ইরাপশন, কালশিটে পড়া বা একাইমোসিস ও সান্নিপাতিক জ্বরের পীড়কা (pateche) জন্মে।
২। এর দ্বারা শিরা আক্রান্ত হয়; শিরাস্ফীতি ঘটে তবে উহাতে আগুনের মত জ্বালা থাকে এবং রাত্রিতে বাড়ে।
৩। সেরাস মেমব্রেন আক্রান্ত হলে প্রভৃত সেরাস রসস্রাব হয়।
৪। আর্সেনিক গ্রন্থিগুলিকেও আক্রমন করে এক উহার দৃঢ়তা বা পুঁজ জন্মায়।
৫। এর দ্বারা অস্থি বেস্ট বা পেরিয়স্টিয়াম আক্রান্ত হয়।
৬। সন্ধি আক্রান্ত হলে সন্ধি ফুলে, ফ্যাকাশে দেখায় ও জ্বালাকর বেদনা জন্মে।
৭। আর্সেনিকে প্রাদাহিক স্ফীতি উৎপন্ন করে, উহাতে জ্বালা ও বল্লামের ফলা বেঁধামোর মত বেদনা দেখা দেয়।
৮। সৰ্বাঙ্গীন শোথ জন্মায়, চর্ম ফ্যাকাশে মোমের মত বা মাটির রংয়ের মত দেখতে, এর সঙ্গে প্রবল পিঁপাসা থাকে। (এপিসে- পিঁপাসা থাকে না।)
৯। খুব তাড়াতাড়ি শীর্ণতা জন্মায়, বিশেষ করে শিশুদের শীর্ণতা উৎপন্ন হয়।
১০। আর্সেনিকে ক্ষত উৎপন্ন হয়, ক্ষতের প্রসার ক্রমশঃ বাড়তে থাকে, ক্ষতগুলি আগুনের মত জ্বালা করে, এমনকি ঘুমাবার সময়ও ঐ জ্বালা থাকে। রসস্রাব অধিক বা সামান্য, ক্ষতের তলদেশ নীলবর্ণ বা কাল শূকরের চর্বির ন্যায় দেখতে।
১১। কার্ব্বাঙ্কলে আগুনের মত জ্বালা; ঠাণ্ডা নীলবর্ণের পার্চমেন্ট কাগজের মত শুকনো চর্ম ও তা থেকে বড় বড় মামড়ি খসে পড়তে থাকে।
১২। গ্যাংগ্রিনের মত স্থানগুলি কাল ও আগুনের মত জ্বালাযুক্ত।
১৩। গ্যাংগ্রিনের জ্বালা উত্তাপে কমে (উত্তাপে বাড়ে –সিকেলি)।
১৪। ত্বক পার্চমেন্টের মত শুকনো অথবা শুকনো মামড়িযুক্ত (বড় বড় শল্কযুক্ত)।
১৫। আর্সেনিকের চর্মরোগগুলি প্রায়ই শুকনো ও শল্কপত্রযুক্ত (মামড়িযুক্ত), এবং প্রায় সর্বদাই ওতে জ্বালা থাকে। উদ্ভেদ বসে যাওয়ায় বা অবরুদ্ধ হওয়ায় বা পুরাতন একজিমা প্রভৃতি বসে গিয়ে যে সকল রোগ জন্মায়, তাতে আর্সেনিক সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ।
মন্তব্য –
কিন্তু টিসুর যে যে রোগে আর্সেনিক ফলপ্রদ তাদের সকলের নাম এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আর্সেনিক একাই সব রোগের ঔষধও নয়। তাই একে অন্যান্য ঔষধের মতই লক্ষণসাদৃশ্য অনুসারেই ব্যবহার করতে হবে, তা না হলে বিফল হতে হবে। তবুও অস্থিরতা, জ্বালা, অবসন্নতা ও মধ্য রাত্রির পর বৃদ্ধি আর্সেনিকের এই চারটি সিদ্ধপ্রদ লক্ষণ।