Asaf | খাদ্যনালী ও বায়ূ নলীতে হিস্টিরিয়াজনিত খিল ধরা। |
Asaf | পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিপরীত গতি (Reverse peristalsis)। |
Asaf | হিস্টিরিয়ার সঙ্গে উপর পেট ও গলায় কষ্ট অনুভূতি। |
Asaf | পেট ফুলে উঠে ও মনে হয় পেটের সব জিনিস মুখ দিয়ে বাহির হয়ে যাবে। |
Asaf | উদগার উঠার পরে মুখে পচা তেল বা ঘিয়ের আস্বাদ, উদগারে রসুনের গন্ধ। |
Asaf | বেলা এগারটার সময় উপর পেট খালি খালি অনুভূতি। |
Asaf | দাঁড়িয়ে থাকলে নাভির নিচে বলের মত অনুভূতি হয়ে কামড়ান ব্যথা। |
Asaf | অক্ষিকোটরের হাড়ে চোট লাগার মত ব্যথা ও স্পর্শকাতরতা। |
পেট ফাঁপা এবং পাকস্থলী ও খাদ্যনলীর আক্ষেপিক সঙ্কোচন তৎসহ বিপরীত অস্ত্র প্রবাহ এই ঔষধের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। এই ঔষধটি নির্বাচনের সময়, হিস্টিরিয়া বা মূর্চ্ছারোগগ্রস্ত ব্যক্তি ও স্নায়বিক রোগগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে এই ঔষধের সম্পর্কের কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এই লক্ষণগুলি ছাড়া, গভীর ক্ষত, অস্থিক্ষত, বিশেষতঃ সিফিলিটিক রোগগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে, এক্ষেত্রে অত্যধিক স্পর্শকাতরতা তীব্র দপদপানি, রাত্রিকালীন যন্ত্রণা, এই ঔষধ নির্বাচনের পথ প্রদর্শক লক্ষণ।
মাথা — উত্তেজিত, রোগিনী তার কষ্ট সম্বন্ধে অভিযোগ করে, অনুভূতি প্রবণ। দুইদিকে ভ্রুর উপর ছিদ্র করার মত বেদনা। ভিতর থেকে বাইরের দিকে চাপ দেবার মত বেদনা।
চোখ – চক্ষুকোটরের স্নায়ুশাল, উপশম চাপে ও বিশ্রামে। আইরাইটিস ও অক্ষিগোলকের প্রদাহ, তৎসহ রাত্রে ছিদ্র করার মত, দপদপ্টর যন্ত্রণা। কপালের বাম দিকে সূঁচ ফোটানোর মত বেদনা। চোখের ভিতর এবং চোখের চারপাশে ছিদ্র করার মত বেদনা। সিফিলিটিক আইরাইটিস। কর্নিয়াল ক্ষত সহ খননবৎ বেদনা, রাত্রে বৃদ্ধি।
কান – দূর্গন্ধযুক্ত কানপাকা, তৎসহ ম্যাটয়েড অস্থিতে ছিদ্র করার মত বেদনা। ম্যাসটয়েড অস্থির রোগ তৎসহ রোগের অস্থির স্থানে বেদনা, ঠেলে বেরিয়ে আসার মত অনুভূতি। দূর্গন্ধযুক্ত, পুঁজের মত স্রাব।
নাক – সিফিলিসজাত নাসিকা ক্ষত, তৎসহ খুবই দূর্গন্ধযুক্ত পূজের মত স্রাব। নাকের অস্থির ক্ষত (অরাম)।
গলা – গ্লোবাম হিস্টিরিকাম। বলের মত পিণ্ড গলায় ঠেলে উঠে। মনে হয় অন্ত্রপ্রবাহ বিপরীত হচ্ছে এবং এর ফলে মনে হয় খাদ্যনলী পাকস্থলী থেকে গলার দিকে ঠেলে আসছে।
পাকস্থলী – পেটের ভিতর জমা হওয়া বায়ু ঢেকুর তুলে বার করতে কষ্ট। পেটফাঁপা ও মুখে তরল পদার্থ উঠে আসে। হিষ্টিরিয়া রোগে: পেট ফাঁপা। পাকস্থলীর ব্যাপক স্ফীতি। পাকস্থলীর ভিতর খালিবোধ ও দুর্বলতা তৎসহ বিস্তৃতি এবং পাকস্থলীও তলপেটে ভুটভাট শব্দ। জোরে শব্দ করে ঢেকুরের সঙ্গে বায়ু উঠে আসে। পাকস্থলীর উপরের অংশে দপদপানি। পাকস্থলীর তীব্র বেদনা। পাকস্থলী ও মধ্যচ্ছদা স্থানে কেটে ফেলার মত ও জ্বালাকর বেদনা। পাকস্থলীর ভিতর বায়ুর নড়াচড়া ও কলকল শব্দ, কিছু পরে খুবই কষ্টের সঙ্গে ঢেকুরের সাহায্যে বায়ু বেরিয়ে আসে।
স্ত্রীরোগ – স্তন গ্রন্থি স্ফীত তৎসহ স্তনে দুধ অথচ রোগিনীর গর্ভসঞ্চার হয়নি। মায়ের স্তনের গুনগত উৎকর্ষতা কম তৎসহ অনুভূতিপ্রবণতা।
সরলান্ত্র — স্ফীত, মোচড় দেবার মত ব্যথা, তৎসহ ক্ষুধা। দুর্দমনীয় কোষ্ঠ কাঠিন্য। পেরিনিয়াম স্থানে বেদনা, মনে হয় কোন বস্তু ভিতর থেকে ঠেলছে। উদরাময়, মল অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত। তৎসহ পেটে গ্যাস ও ভুক্তখাদ্যবস্তু ঢেকুরের সঙ্গে মুখে উঠে আসে।
বুক — বুকের ভিতর আক্ষেপিক ও কষ্টভাব, যেন মনে হয় ফুসফুস সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত হতে পারবে না। হৃদস্পন্দন, অনেকটা কম্পন প্রকৃতির।
অস্থি — অস্থির ভিতর টেনে ধরার মত বেদনা ও অস্থিক্ষত। পেরিঅষ্টিয়াম যন্ত্রনাদায়ক, বিবৃদ্ধি। আক্রান্ত অস্থিতে ক্ষত, পাতলা, রসানির মত পুঁজ।
চামড়া — চুলকানি, আঁচড়ালে আরাম হয়, ক্ষত, কিনারার দিকে বেদনা। চর্মরোগ চাপা পড়ার ফলে স্নায়বিক উপসর্গ।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – রাত্রে, স্পর্শে, বামদিক, বিশ্রামের সময়, গরম প্রলেপে।
উপশম – মুক্ত বায়ুতে, নড়াচড়ায়, চাপে।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন, চায়না, মার্কিউরিয়াস।
তুলনীয় – মস্কাস, চায়না, মার্কিউরিয়াস, অরাম।
শক্তি – ২য় থেকে ৬ষ্ঠ শক্তি।
প্রাচীনকালে এই ঔষধটি মানুষ ও পশুদিগের রোগে প্রায়ই অপব্যবহৃত হইত। আমাদের পিতামহগণ মনে করিতেন যে, ইহা রোগনিবারক, এইজন্য তাহারা ইহা আস্তাবলে ব্যবহার করিতেন। তাঁহারা ইহাকে হিংয়ের ডেলা বলিতেন এবং ঘোড়ার দানার মধ্যে রাখিয়া দিতেন, যাহাতে ঐগুলি খারাপ হইতে না পারে। ইহা দ্বারা কি উপকার হইয়াছে তাহা আমি বলিতে পারি কিন্তু ঐসকল কৃষকেরা এসাফোটিডাকে একটি শ্রেষ্ঠ রোগনিবারক দ্রব্য বলিয়া মনে করিতেন। সাধারণ লোকে মূৰ্ছা, হিষ্টিরিয়া ও অন্য প্রকার স্নায়বিক রোগে ও লক্ষণে ইহা ঔষধরূপে ব্যবহার করিতেন। পরীক্ষা দ্বারাও এরূপ ব্যবহার সমর্থিত হইয়াছে। এইসকল ব্যাপার উল্লেখযোগ্য নহে, কিন্তু ইহাতে বুঝা যায় যে, অসংস্কৃত অবস্থায় ইহা সাধারণ লোকের মধ্যে পারিবারিক ঔষধরূপে সৰ্ব্বদাই ব্যবহৃত হইত। ইহা এইভাবে যত অধিক ব্যবহৃত হইয়াছে, চিকিৎসা ব্যবসায়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে তত ব্যবহৃত হয় নাই।
এক শ্রেণীর রোগী আছে, তুমি দেখিবে যে, তাহারা তোমাকে বিরক্ত করিবেই। এইসকল রোগীরা তোমার ঔষধালয়ে আসিলে দেখিবে যে, তাহাদের মুখ স্ফীত, শিরা ভাসা এবং বেগুনি বর্ণ; তাহাদের চেহারা শোগ্রস্তের মত, মুখ ফুলা, স্ফীত, সময়ে সময়ে শোথগ্রস্ত, উহা ঘোর লালবর্ণ, কৃষ্ণাভ; আমরা এসাফোটিডা দ্বারা এরূপ মুখকে আরোগ্য করিতে পারি। এইরূপ মুখের সহিত কাৰ্ব্ব এনি’, ‘অরম, কার্বো ভেজ’ এবং পালসেটিলারও সম্বন্ধ আছে, ইহা। অত্যন্ত কষ্টদায়ক মুখ, ইহাতে অল্পাধিক হৃৎপিন্ড সম্বন্ধীয় উপদ্রব এবং শৈরিক রক্তাবরোধ নির্দেশ করে। এইরূপ মুখ পাইলে বুঝিবে যে, হৃৎপিন্ডের শৈরিক অংশ আক্রান্ত হইয়াছে অথবা আক্রান্ত হইবার উপক্রম হইয়াছে। আমি কখন পছন্দ করি না ঐরূপ রোগী আমার ঔষধালয়ে আসুক, কারণ, ঐসকল রোগীকে আরোগ্য করা কঠিন। তাহাদের রক্তপাতের সহিত গভীরমূল রোগ থাকে, তাহারা হঠাৎ প্রদাহের অধীন হইয়া পড়ে এবং তাহারা শীঘ্র আরোগ্যপথে আসে না। এইপ্রকার ধাতুতে, আমরা ক্ষত দেখিতে পাই, অল্প একটু স্থানে ক্ষত দেখা দেয়, উহা পাকিয়া উঠে এবং ক্ষতটি ক্রমশঃ গৰ্ত্ হইতে থাকে; এই ঔষধটি ঠিক এইরূপ ব্যাপার ঘটায়। এইরূপ ধাতুতে আর এক ব্যাপার,স্ফীতির সহিত অস্থিবেষ্টের প্রদাহ উপস্থিত হয়, উদাহরণস্বরূপ রক্তসঞ্চালন দ্রুত না হওয়ায় টিবিয়া অস্থিবেষ্টের প্রদাহ কোমলাস্থির প্রদাহ তৎসহ অৰ্ব্বুদাকার স্ফীতি, বেগুনি বর্ণ চৰ্ম্ম, সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা, শোথ, ক্ষত এবং নালীক্ষতের সদৃশ ছিদ্র। এই ঔষধ ঠিক ঐরূপ অবস্থায় উপযোগী। “ক্ষতের সহিত অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা।”
রোগী অনেক সময় বলে, “আমার চেহারা এত ভাল দেখায় যে, আমি পীড়িত হইলেও কাহারও সহানুভূতি পাই না।” মোটা, থলথলে এবং বেগুনি রং-বিশিষ্ট। এই ঔষধ শীর্ণ লোকের পক্ষে কদাচিৎ উপযোগী হয়, কারণ ঐরূপ ব্যক্তিরা এসাফোটিডাজ্ঞাপক রোগ হইতে মুক্ত থাকে, কিন্তু ইহার উপযোগিতা মোটা, থলথলে রোগীর পক্ষে, যাহারা অত্যন্ত স্নায়বিক, অত্যন্ত বেদনাকাতর এবং হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত। তাহাদের মুখশ্রী ঠান্ডায় গেলে বেগুনি হইয়া উঠে, উত্তেজিত হইলে বেগুনি হইয়া উঠে। অন্য কথায়, তুমি একটি শৈরিক ধাতুবিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখিতেছ, অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখিতেছ, এমন ব্যক্তিকে দেখিতেছ যে বিনা কারণেই মূর্হিত হইয়া পড়ে, যাহার বদ্ধঘরে, উত্তেজনায় অথবা যে-কোন প্রকার বিরক্তির ফলে। হাতে-পায়ে খাল ধরে অথবা, বিশেষভাবে, মূর্চ্ছা উপস্থিত হয়। তাহাদের হাড় হইতে উপরিভাগ পৰ্য্যন্ত অর্থাৎ ভিতর হইতে বাহির দিকে সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা দেখা যায়। অস্থিবেষ্ট উত্তেজিত হয়, গ্রন্থিসমূহ স্ফীত হয়। অনেক সময়ে সিফিলিস হইতে এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেহের রক্তবহা নাড়ী সম্বন্ধীয় উদ্ৰব, অস্থিবেষ্ট-প্রদাহ, অস্থিপচন, গ্রন্থির কঠিনতা, স্নায়ু উপদংশ ও মাথার যন্ত্রণা। পুরাতন সিফিলিসগ্রস্ত ব্যক্তির ঐরূপ শিরাভাসা মুখ, রক্তস্রাবপ্রবণতা, ক্ষতের বর্ণ কাল অথবা বেগুনে হইয়া যায়। এই লক্ষণে ইহার সহিত ‘ল্যাকেসিসে’র সাদৃশ্য আছে। পুরাতন ক্ষতচিহ্ন বেগুনিবর্ণ হইয়া উঠে এবং পুনরায় পুঁজসঞ্চয় সম্ভবনা দেখা যায়; উহা শৈরিক রক্তসঞ্চয়বিশিষ্ট হয় এবং যন্ত্রণাবিশিষ্ট হইয়া কালবর্ণ ধারণ করে। সিফিলিসগ্রস্ত রোগীর, কখনও সোরাদোষদুষ্ট ব্যক্তির পুরাতন ক্ষতচিহ্নের উপর ক্ষত জন্মে। অধিকাংশ উপসর্গই বিশ্রামকালে উপস্থিত হয় এবং ধীরে ধীরে সঞ্চালনে উপশমপ্রাপ্ত হয়।
এই ঔষধের মধ্যে আর একটি প্রবল লক্ষণ আছে, উহা স্রাবপ্রবণতা, সর্দিজ-স্রাব, ক্ষত হইতে স্রাব, বিভিন্ন স্থান হইতে জলবৎ স্রাব, এমন কি জলবৎ মল। এইসকল স্রাবের প্রত্যেকটিই ভীষণ দুর্গন্ধ এবং রসানিসদৃশ। হাড়ের উপর গভীর চেপ্টা ক্ষত জন্মে এবং অস্থিবেষ্টের রোগে জলবৎ রক্তাক্ত স্রাব নির্গত হয়, বাহিরদিকে প্রধাবিত বেদনার সহিত, উহা ভীষণ দুর্গন্ধ। তোমরা শৈরিক রক্তাবরোধের কথা ভালভাবে মনের মধ্যে অঙ্কিত করিয়া রাখিও এবং সিফিলিস অবস্থা যোগ করিয়া লইও।
এই ঔষধে বহুপ্রকার যন্ত্রণা আছে এবং উহা সিফিলিসের যাতনার ন্যায় নৈশ যাতনা, নৈশ অস্থিবেদনা এবং অস্থিবেষ্টবেদনা। ক্ষতগুলি গভীর এবং নীলাভ কিনারাযুক্ত। ক্ষতের চারিদিকে প্রসারিত শিরা। অস্থি ও অস্থিবেষ্টের প্রদাহ, তৎসহ ক্ষতের চারিদিকে নীলবর্ণ। যখন কতকটা অলস প্রকৃতির অস্থিবেষ্ট-প্রদাহ দেখা দেয়, তখন চর্মে হাড়ের সহিত লাগিয়া যায়, শিরিষ দিয়া জোড়ার ন্যায় পরস্পর লাগিয়া যায়। উহা এত মৃদু প্রকৃতির যে ক্ষত জন্মে না, প্রবল প্রদাহে পরিণত হয় না, কিন্তু উহা একটি অলস অবস্থা। সিফিলিস, পুরাতন সোরাদোষ এবং স্ক্রোফুলা রোগে তীরবিদ্ধবৎ ও ঝাঁকিমারা বেদনার সহিত শরীরের সর্বত্র গ্রন্থিগুলি উত্তপ্ত হইয়া থাকে এবং দপদপ করে।
মাথার হাড়ে যে বেদনা অনুভূত হয়, তাহা সময়ে সময়ে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়। পুরাতন উপদংশগ্রস্ত ব্যক্তিদিগের মস্তকের হাড়ে সূঁচফোটানর মত, বিদ্ধকর বেদনা। মনে হয়, মাথার চারিদিকে স্ফীতাংশ বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিন্ডবৎ থাকিলে এই ঔষধে শীঘ্র ফল হয়। বাম কপালের উন্নত স্থানের নীচে, সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর বেদনা। সময়ে সময়ে ঐ সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা, মাথার মধ্যে যেন পেরেক বা গোঁজ পোতা হইতেছে বলিয়া বর্ণিত হয়। এসকল স্নায়রিক শিরোবেদনা উপদংশ হিষ্টিরিয়া বা স্কোফুলার জন্য দেখা দেয়, হিষ্টিরিয়াজ বেদনাকে বিদীর্ণকর, ছিন্নকর, গোঁজবিদ্ধবৎ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। মাথার উপরে সর্বত্র সূঁচফোটান বেদনা থাকে, কিন্তু কপালের উন্নত স্থানে এবং শঙ্খদ্বয়ে উহা পেরেক বা গোঁজবিদ্ধবৎ অনুভূতি হয়। অধিকাংশ বেদনাই রন্ধ্রকরণবৎ, যেন উহা হাড় হইতে উপরিভাগে বিস্তৃত হইতেছে এবং সেইজন্য ইহাকে ভিতর হইতে বাহির দিকে বলিয়া বর্ণনা করা হয়।
ইহা পুরাতন সিফিলিসগ্রস্তদের চক্ষুরোগে উপযোগী,— চক্ষুগোলকের উপর ক্ষত, কনীনিকার উপর ক্ষত; খোলা বাতাসে উপশম, তৎসহ চক্ষে অসাড়তার অনুভূতি থাকে; উপরার অসমান চেহারার সহিত উপতারার প্রদাহ, উহাতে তীব্র সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, যন্ত্রণাটি ভিতর হইতে বাহির দিকে। এই ঔষধটি জ্বালায় পূর্ণ এবং সেইজন্য চক্ষুগোলকে জ্বালা করে, উন্মুক্ত বাতাসে ভাল থাকে। উপতারা প্রদাহ, কিন্তু সময়ে সময়ে প্রদাহ উপদংশ প্রকৃতির প্রদাহের অবস্থা উৎপাদন করিয়া চক্ষুগোলকের বহিঃস্থ ঝিল্লী, চক্ষুর আলো কাচ এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আক্রমণ করে। চক্ষুর চারিদিকে নানা স্থানে ছিন্নকর যন্ত্রণা থাকে, খোঁচাবিদ্ধবৎ, সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, রাত্রে বৃদ্ধি। ক্ষতগুলিতে সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা রাত্রে বৃদ্ধি। চক্ষুতে শুষ্কতার সহিত জ্বালাকর সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা, সেইজন্য চক্ষুর পাতা দুইটি চক্ষুগোলকে আটকাইয়া যায়, রাত্রে বেদনার বৃদ্ধি। চক্ষুর সম্মুখে কুয়াসার মত, দৃষ্টির অপরিচ্ছন্নতা, যেন কুয়াসার মধ্য দিয়া দেখিতেছে। আরও বোধ হয়, যেন বায়ুমন্ডল কাল কাল উড়ন্ত মাছিতে ঢাকিয়া যাইতেছে। “প্লবমান এসরেণু (Muscae Voliantes)” অর্থাৎ তুমি শূন্যে চাহিলে ছোট ছোট ডাঁশ ও মশা দেখিবে। এইসকল রোগীর মনে হয়, যেন ঐগুলি ঐস্থানে রহিয়াছে, কিন্তু বাস্তবিক ঐগুলি ঐস্থানে থাকে না। চক্ষুর স্রাব রসানির মত, রক্তাক্ত এবং সচরাচর দুর্গন্ধ।
এই সিফিলিস দোষ কর্ণ এবং কর্ণাস্থিগুলিকেও আক্রমণ করিতে পারে। ঐ হাড়গুলি ক্ষয়িয়া যাইতে পারে এবং শ্রবণশক্তি নষ্ট হইতে পারে। “কর্ণ মধ্যে জ্বালা, তৎসহ দুর্গন্ধ পুঁজস্রাব।” কর্ণের ভিতর হইতে বাহির দিকে সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা।
নাসিকা হইতে ভীষণ দুর্গন্ধ স্রাব নির্গত হয়, নাকের গোড়ার দিকে অনেক উপরে ক্ষত, নাসিকাস্থির পচন, সিফিলিসজাত পুতিনস্য। দুর্গন্ধ পুরাতন সর্দি। “গাড়ীতে চড়িলে মনে হয়, যেন নাকের গোড়ার দিকে বুজিয়া গিয়াছে, যেন সে উহার মধ্য দিয়া নিঃশ্বাস লইতে পারিতেছে , ঐসঙ্গে মাথায় পূর্ণতাবোধ থাকে” (অরম’, অরম মিউর’)
অসাড়তা এই ঔষধের একটি প্রধান লক্ষণ, মস্তকত্বকে অসাড়তা, মস্তকের গভীর প্রদেশে অসাড়তা, যেখানে সেখানে অসাড়তা, যন্ত্রণার সহিত অসাড়তা ও অনুভূতিশূন্যতা যন্ত্রণার পর অসাড়তা, সচরাচর নিদ্রার পর অসাড়তা। হিষ্টিরিয়া সংক্রান্ত লক্ষণগুলি ব্যতীত, অন্য স্নায়বিক লক্ষণও প্রকাশ পায়। ইহাতে কোরিয়া রোগ সদৃশ কম্পন আছে। এইরূপ অদ্ভুত স্নায়বিক ধাতু রোগীর মধ্যে, তুমি আশা করিতে পার যে, তাহার স্নায়বিক লক্ষণে সবকিছুই দেখিতে পাইবে। ‘সে সর্বদা চিবাইতে থাকে, তাহার মুখ হইতে ফেনাযুক্ত লালা বাহির হয়, জিহ্বা ফুলিয়া থাকে।” “কথা বলিলে বুঝা যায় না।” দাঁত কড়মড় করে, রাত্রে চমকিয়া উঠে।; ওষ্ঠদ্বয় ফুলিয়া থাকে, মুখগহ্বরের সমস্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ফুলিয়া থাকে নীচের ওষ্ঠটি বেশী ফুলে, তৎসহ মুখের মধ্যে জ্বালা থাকে।
গলায় সিফিলিস সংক্রান্ত লক্ষণ বর্তমান থাকে, উহার সহিত চরিত্রগত জ্বালা, তীরবিদ্ধবৎ যাতনাযুক্ত ক্ষত, গিলিতে গেলে বেদনা, গ্লোবাস হিষ্টিরিয়ায় যেরূপ হয়, দ্রুপ গলার ভিতর দিয়া একটা গোলা উঠিতেছে–এরূপ অনুভূতি, এবং অবিরত ঢোক গেলা লক্ষণ থাকে। গলনলী এবং শ্বাসনলীর হিষ্টিরিয়া সদৃশ এবং কোরিয়া সদৃশ গলনলীর আক্ষেপ। গলনলীর আক্ষেপের। একটি বিশেষ প্রকার,—গলার মধ্যে একটা ডেলার অনুভূতি ও শ্বাসরোধভাব।“গলনলীর মধ্যে। শুষ্কতা ও জ্বালা।”
পাকস্থলীর উপদ্রব সম্বন্ধে, তুমি যদি একটি আদর্শ এসাফোটিডা রোগী দেখিয়া থাক, তুমি ভাবিয়া বিস্মিত হইবে, কোথা হইতে এত বায়ু আসিতেছে, উহা কুন্ডলী হইয়া উঠিতে থাকে। ‘হিক্কার ন্যায় বক্ষ ব্যবধায়ক পেশীর সঙ্কোচন। প্রায় প্রতি সেকেন্ডেই খেলার বন্দুকের শব্দের ন্যায় শব্দ করিয়া ঢেকুর উঠিতে থাকে, এবং তাহাতে বক্ষ ব্যবধায়ক পেশী কোরিয়া রোগের ন্যায় ঝাঁকি দিতে থাকে। ইহা এরূপ একটি অবস্থা, যাহার উপর রোগীর আয়ত্ত থাকে না। ইহাতে ছোট বন্দুক ছোঁড়ার মত, পাকস্থলী হইতে উচ্চ শব্দে ঢেকুর ও শূন্য উদ্গার উঠে। পাঠ্যপুস্তকে এই স্থলে কয়েকটি লক্ষণের উল্লেখ আছে। ঐগুলি উল্লেখযোগ্য। “পাকস্থলীগহ্বরে স্পন্দন, উহা চোখে দেখিতে ও হাতে দিয়া অনুভব করা যায়। চাপ দেওয়ার মত, কাটিয়া ফেলার মত, সূচীবিদ্ধবৎ করার মত বেদনা।” একটি অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা গিয়াছে যে, নিম্নদিকে ? বায়ু-ত্যাগ হয় না, সমস্তই উপরদিকে উঠে। “উদ্গার, উহাতে রসুনের গন্ধ, স্বাদ উগ্র, তীব্র এবং পচা।” সৰ্ব্বদা ভীষণ দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধ এই ঔষধের একটি প্রকৃতিগত লক্ষণ। তারপর “পাকস্থলীগহ্বরে সবকিছুই চলিয়া গিয়াছে—এরূপ শূন্যতাবোধ”, উহা বেদনা নয়। “আহারের পর উদরে স্পন্দন।”“পাকস্থলীর আধ্নান।” এই ঔষধে অনেক প্রকার পাকাশয় ও উদর সম্বন্ধীয় উপদ্রব আছে; সমগ্র উদরে বেদনা, সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা, শূলবেদনা। উদরাময় অল্পাধিক কষ্টদায়ক হয়। এইসব রোগীরা সামান্য অজীর্ণতায়, খাদ্যবস্তুর সামান্য গোলযোগে উদরাময়ে কষ্ট পায়, উদরাময় কষ্টদায়ক, জলের মত। “তরল মল, তাহাতে অত্যন্ত বিরক্তিকর গন্ধ।” “কৃষ্ণাভ বাদামিবর্ণ কাইয়ের মত দুর্গন্ধ মল, উহাতে উপশম।”
“জননেন্দ্রিয়ে প্রসববেদনার ন্যায় আবেগ, গাড়ীতে চড়িলে উপশম।” জরায়ুতে ক্ষত, স্পর্শকাতর ও যন্ত্রণাদায়ক।” পূর্বে যেরূপ বলা হইয়াছে, তদ্রুপ ধাতুতে, যাহাদের মুখমন্ডল বেগুনে, কখনও বিবর্ণ নয়, তাহাদের জরায়ুর ক্যান্সার রোগে এই ঔষধটি বিশেষভাবে উপশমদায়ক হইয়াছে। দুৰ্বল, থলথলে, শৈরিকধাতুবিশিষ্ট স্ত্রীলোকের রক্তস্রাব ও গর্ভস্রাব প্রবণতা। কখনও কখনও গর্ভবতী নহেন—এরূপ স্ত্রীলোকদিগের স্তনও দুগ্ধে পূর্ণ হইয়া উঠে। ইহা একটি আশ্চর্য্য বিরক্তিকর ব্যাপার, খুব অল্প ঔষধেই এরূপ লক্ষণ আছে, আর সেই অল্পসংখ্যক ঔষধের মধ্যে ইহা একটি। ইহাতে দুগ্ধের অম্লতাও দেখা যায়। “প্রসবের দশ দিন পরে দুগ্ধ কমিয়া যায়।”
“এই সকল রোগীর অনেক সময় হিষ্টিরিয়াজাত হাঁপানি রোগগ্রস্ত হন, নিঃশ্বাস লইতে সৰ্ব্বপ্রকার কষ্ট, শ্বাসকৃচ্ছ্রতা।” “শ্বাসনলীতে হাঁপানিবৎ অনুভূতি।” “তাহার সমস্ত জীবন ধরিয়া দিনের মধ্যে অন্তত একবার হাঁপানির আক্রমণ হয়, উহা দেখা দেয় যে-কোন প্রকার শারীরিক পরিশ্রমের পর, সঙ্গমের পর, বিশেষভাবে প্রত্যেকবার পেট ভরিয়া খাওয়ার পর।” এম্বার ন্যায় সঙ্গমের পর শ্বাসকৃচ্ছ্রতা। অদম্য সুড়সুড়িযুক্ত কাশি, রাত্রে বৃদ্ধি’ এই সকল রোগের অনেকগুলিই রাত্রে বাড়ে, নৈশবৃদ্ধি। সাধারণতঃ সিফিলিস সংক্রান্ত রোগগুলি রাত্রেই বাড়ে, ‘মার্কিউরিয়াস’, ‘ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’, ‘হিপার’, নাইট্রিক এসিড’ প্রভৃতি সিফিলিস দোষনাশক ঔষধগুলির, সবকয়টিরই রাত্রে বৃদ্ধি-লক্ষণ আছে। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে, আমি কয়েকটি পড়িয়া শুনাইব, ঐগুলি পাঠ্যপুস্তকে স্পষ্ট করিয়া দাগ দেওয়া হইয়াছে এবং লক্ষ্য করিবার মত।“বক্ষাস্থিতে চাপবোধ ও জ্বালা।” “গুরুভার চাপানর মত বক্ষে চাপবোধ।” “বক্ষে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা।” অল্পক্ষণ ব্যবধানে ভিতরে হইতে বাহিরদিকে একটি মাত্র সূঁচ দিয়া খোঁচা মারার ন্যায় বেদনা।
এই ঔষধে বহু বাতজ ও গেঁটেবাতের লক্ষণ আছে, স্নায়বিক ধাতুতে সাধারণভাবে গেঁটেবাত রোগ। এইরূপ স্নায়বিক ধাতুতে পরিশেষে বাতগন্ডসমূহ জন্মে এবং তখন স্নায়বিকতা প্রায়ই চলিয়া যায়, কারণ উহা সন্ধিতে ঢিবলিসমূহ জন্মানর ফলে উপশমিত হয়; একটি রোগান্তর প্রাপ্তির দৃশ্য উপস্থিত হয়।
[Asafoetida – asa, mastic, a gum; foetida, stinking]
অপর নাম -ডেভিল ডাং (Devil’s dung); বাংলায় – হিং
ফেরুলা ফটিডা (Ferula foetida)
আম্বেলিফেরী জাতীয় উদ্ভিদ। এর মূলের নির্যাসকে হিং বলে। হিং থেকে হোমিওপ্যাথি ঔষধার্থে অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
১। পেটে অত্যন্ত বায়ু সঞ্চয়, সব কিছুই যেন উপর দিকে ঠেলে উঠে।
গলার মধ্যে একটি গোলা উঠার ন্যায় অভূতি।
২। বিশেষতঃ হিস্টিরিয়া গ্ৰস্তাদের স্রাব বিলুপ্তবশতঃ পেটে অত্যন্ত তীব্র
বেদনা; স্রাবে দুর্গন্ধ।
৩। স্পর্শে ক্ষতস্থানে অত্যন্ত স্পর্শ-দ্বেষ বা সংচেত্য; বিশেষত
অস্থিবেষ্টের ক্ষতে স্পর্শ সহ্য হয় না।
৪। উদর বায়ুপর্ণ; তার সঙ্গে বায়ু স্ফীতি ও উদ্গার সব কিছুই উপরের
দিকে চাপ দেয়, কিছুই নিম্নগামী হয়না, মনে হয় যে উপমুখী চাপে
পেট ফেটে যাবে। বিপরীত পরিস্ট্যালটিক মুভমেন্ট (reverse peristalsis) বা বিপরীত ধমনক্রিয়া।
ইহা বিশেষভাবে উপযোগী হয় যদি লক্ষণগুলি প্রদরস্রাব বা অন্য কোন স্রাব অবরুদ্ধ হওয়ার পর দেখা দিয়ে থাকে। সব স্রাবই দুর্গন্ধ এমনকি ক্ষতের স্রাবও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। ক্ষতগুলি কোন কিছুর সংস্পর্শে এলে : হাত লাগলে অতিশয় অনুভূতিযুক্ত। তাছাড়া অস্থি প্রদাহ বা হাড়ের কেরিজেও অতিরিক্ত সংচেত্য থাকলে এসাফটিডা ব্যবহার্য (হিপার)।