Bar-c | খর্বাকৃতি, বুদ্ধি অত্যন্ত মোটা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, পড়াশুনায় অমনোযোগী। |
Bar-c | অকাল বার্ধক্য, বয়সের অনুপাতে শিশুর দৈহিক পুষ্টি ও মানসিক উন্নতির অভাব। |
Bar-c | অপরিচিত লোক দেখে ভয়, সে জন্য লুকিয়ে থাকে, খেলা ধূলা পছন্দ করে না। |
Bar-c | দেরীতে হাঁটতে ও কথা বলতে শেখে, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও পেশী দুর্বল এবং অস্থি অপুষ্ট বলে দেরীতে হাঁটতে শেখে। |
Bar-c | শরীরের নানাস্থানের যথা ঘাড়, বগল, কুঁচকি ও পেটের গ্রন্থি বড় ও শক্ত হয়। |
Bar-c | মুখমন্ডলে যেন ডিমের সাদা অংশ মাখান আছে এরুপ অনুভূতি। |
Bar-c | সর্দি প্রবণ, সর্বদা শীদ শীত অনুভূতি করে, ঠান্ডা সহ্য হয়না, গায়ে কাপড় জড়িয়ে রাখে। |
প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থার অসুখে অর্থাৎ শৈশবে ও বার্দ্ধক্যের রোগে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। সোরা ও টিউবারকুলার ধাতুর লোকেদের ক্ষেত্রে উপযোগী ।
স্মরণশক্তি কমে যায় সবকিছু ভুলে যাওয়া, কোন কিছুতে মন না লাগা এর লক্ষণ। শিশুকে শেখানো যায় না কারণ মনে রাখতে পারে না, ভয় হয় বোকা হাবা হয়ে যাবে ।
গালগলা গ্ল্যান্ডের রোগগ্রস্ত, যারা বেঁটে, শিশু বাড়ে না (যে সব শিশু দ্রুত। বাড়ে = ক্যাল্কে-ফস); গ্লাডের রোগ হতে চোখের প্রদাহ, কর্নিয়া অস্বচ্ছ; পেট ফোলা থাকে, বারে বারে পেটে শূলব্যথা হয়; মুখে ফোলা ফোলা ভাব কিন্তু সারাদেহ শুকিয়ে যায় ।
শিশু মানসিক ও দৈহিকভাবে দুর্বল ।
বেঁটেখাটো, হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত স্ত্রীলোক ও বয়স্কা অবিবাহিতা যারা—ঋতুস্রাব খুব অল্প, দেহে জৈবিক তাপ কম, সব সময়ই ঠান্ডা ও শীত-শীতবোধ। বৃদ্ধ যাদের অপুষ্টি ও ক্ষয়কারী রোগে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে, আবার গ্ল্যান্ডসংক্রান্ত রোগে যদি মোটা হয়ে যায় বা গিটবাত রোগগ্রস্ত (এসি-ফ্লু) তাদের উপযোগী ।
বয়স্কদের অসুখ, প্রষ্টেট গ্রন্থি বা অন্ডকোষ বেড়ে যায় বা শক্ত হয় সাথে মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা ।
বৃদ্ধদের সন্ন্যাস রোগ হওয়ার প্রবণতা; মদ খাওয়ায় অভ্যস্থ যারা-তাদের অসুখে, যে বৃদ্ধদের ছেলেমানুষীভাব, তাদের মাথা ব্যথায় প্রযোজ্য ।
যাদের প্রায়ই গলায় ঘা হয়, একটুতেই সর্দি লাগে বা একটু ঠান্ডা লাগলেই প্রতিবার টনসিল প্রদাহ হয় তা পেকে গিয়ে পুঁজ হয় তাদের (হিপার, সোরিন) উপযোগী ।
তরদ্রব্য ছাড়া কিছুই গিলতে পারে না (ব্যাপ্টি, সাইলি) ।
অর্শবলি, প্রতিবার প্রস্রাবের সময় বাইরে বেরিয়ে আসে (এসি-মি) ।
সোরাধাতুর শিশুদের পুরান কাশি, টনসিন বাড়ে বা আলজিভ বড় হয় বা সামান্য ঠান্ডাতেই বেড়ে যায় (এ্যালুমি) ।
গ্রন্থিগুলো বিশেষতঃ ঘাড়ে ও কুঁচকিতে গ্রন্থি ফোলে ও শক্ত হয়ে যায় বা পুঁজ হবার মত হয় ।
পায়ের ঘামে দুর্গন্ধ-পায়ের আঙুল ও পায়ের তলায় ক্ষতভাব, পায়ের গোড়ালিতে ঘাম হয়, পায়ের ঘাম বন্ধ হয়ে পরবর্তীকালে গলায় বিভিন্ন অসুখ হলে (তুলনীয়—গ্রাফা; সোরিন, স্যানিকি, সাইলি) ব্যবহার্য । ঠাণ্ডা একদম সহ্য হয় না (ক্যাল্কে, কেলি-কা, সোরিন)।
সম্বন্ধ — সোরিনাম, সালফ, টিউবার-এর আগে বা পরে প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। ব্যারাইটার পরে সোরিনাম দিলে অনেক ক্ষেত্রে কুইনসি বা গলায় ঘা হবার প্রবণতা নষ্ট হয় ।
সমগুণ — এলুমি, ক্যাল্কে-আয়ড, ডালকা, এসি-ফ্লু, আওডি, সাইলি । গ্ল্যান্ডঘটিত রোগে ক্যাল্কে-কার্বের পর ব্যারাইটার প্রয়োগে ক্ষতি হয় ।
বৃদ্ধি – রোগের কথা চিন্তা করলে (এসি-অক্সা), যেদিকে ব্যথা সে দিকে শুলে, খাওয়ার পর, আক্রান্ত অঙ্গ ধুলে ।
শক্তি – ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি ।
বিশেষভাবে শিশুকালে ও বৃদ্ধবয়সে নির্দেশিত হয়ে থাকে। গণ্ডমালা ধাতুদোষগ্রস্ত শিশুদের ক্ষেত্রে উপকারে আসে, বিশেষ করে যদি ঐ শিশুরা মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে অনুন্নত হয়, এছাড়াও যদি ঐ শিশুরা খর্বকায়, সঠিকভাবে যদি তাদের বাড়বৃদ্ধি না হয়, চোখে গণ্ডমালা দোষজনিত প্রদাহ দেখা দেয়, পেট দেহের থেকে বড়ো হয়, খুব সহজেই ঠাণ্ডা লেগে যায় এবং পরিশেষে সকল অবস্থাতেই দুইদিকের টনসিলের স্ফীতি থাকে। যেসকল ব্যক্তির গলক্ষত দেখা দেয় এবং তা পেকে যায়, মাড়ী থেকে সহজেই রক্তপাত হয়ে থাকে। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের রোগ, যে বয়সে তাদের শারীরিক ক্ষয় দেখা দেয়, হৃদপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের ক্ষয়, যাদের প্রস্টেট গ্রন্থির বিবৃদ্ধি দেখা যায় অথবা অণ্ডদ্বয়ের কঠিনতা দেখা দেয়, খুব সহজেই ঠাণ্ডা লাগে, পদতলে দূর্গন্ধযুক্ত ঘাম, যারা অতিরিক্ত দূর্বল ও ক্লান্ত। সর্বদা শুয়ে অথবা বসে থাকতে চায় অথবা কোন কিছুর উপর হেলান দিতে হয় তাদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত। অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে তীব্র বিরক্তি বা ভয়ভাব। নাকের পিছনের অংশের প্রদাহ, তৎসহ বারে বারে নাক থেকে রক্তস্রাব হয়। যুবকদের অজীর্ণ রোগে খুবই ভালো কাজ করে, বিশেষ করে যারা হস্তমৈথুন ও শুক্রক্ষয় রোগে কষ্ট পায় তৎসহ হৃদপিণ্ডের উত্তেজনা ও হৃদকম্পতে কষ্ট পায়। শরীরের গ্রন্থিগুলির উপর এই ঔষধের প্রভাব আছে এবং শরীরের সাবির্বক ধবংস প্রবনতা বিশেষ করে ধমনীগুলির অভ্যন্তরের স্তর, ধমনীরঅকূদ ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা। ব্যারাইটা, এই ঔষধটি কার্ডিও ভাসাকিউলার পয়জন হিসাবে পরিচিত, সাধারণত ঔষধটি হৃদপিণ্ড ও রক্তবহানলীর পেশী স্তরের উপর কাজ করে। আটারিক্যাল ফাইব্রসিস। রক্তবহানলীর কোমলতা এবং ধবংস, প্রসারণ, এবং রক্তবহানলীর অর্বুদ, রক্তবহানলীর ফেটে যাওয়া। এবং এর ফলে উদ্ভূত সন্ন্যাস রোগ।
মন — স্মৃতিশক্তির লোপ, মানসিক দুর্বলতা। অস্থিরচিত্ত। নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাব। বার্ধক্যজনিত কারণে মানসিক শক্তির হ্রাস পাওয়া। বিভ্রান্তি। লাজুক। অপরিচিত ব্যাক্তির সম্পর্কে ভীতি। শিশুর মত কাজকর্ম, সামান্য বিষয়ে দুঃখ পাওয়া।
মাথা — মাথা ঘোরা, রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকলে মাথার ভিতর সূঁচ ফোটার মত বেদনা, বেদনা সমগ্র মাথায় বিস্তৃত হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের ভিতর খালি বোধ। মাথার চুল পড়ে যায়। বিভ্রান্তি। মাথার চামড়ার ঘর্মস্রাবী গ্রন্থির অর্বুদ।
চোখ — পর্যায়ক্রমে চোখের তারার প্রসারণ ও সঙ্কোচন। আলোকাতঙ্ক। চোখের সামনে গজের মত কিছু থাকার ন্যায় অনুভূতি। ছানি। (ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, ফসফরাস, সাইলিশিয়া)। বো. মে. মে- ৮
কান – কানে কম শোনে, কানের ভিতর তীক্ষ্ণ শব্দ হওয়া। কানের চারপাশের গ্রন্তির স্ফীতি ও যন্ত্রনাদায়ক। নাক দিয়ে শ্বাস নেবার শব্দ। কানের ভিতর প্রতিধ্বনি হয়।
নাক – শুষ্ক, হাঁচি, সর্দি, তৎসহ উপরের ঠোঁট ও নাকের স্ফীতি। নাকের ভিতর ধোঁয়া থাকার মত অনুভূতি। নাক থেকে হলুদ রঙের গাঢ় শ্লেষ্মাস্রাব। মাঝে মাঝে নাক থেকে রক্তস্রাব। নাকের পাতা দুইটির চারপাশে শক্ত মামড়ী।
মুখমণ্ডল – ফ্যাকাশে ফোলা, মুখের উপর মাকড়সার জাল দিয়ে ডাকা এইরূপ অনুভূতি। (এলুমিনা)। উপরের ঠোঁটের স্ফীতি।
মুখগহ্বর – ঘুম থেকে জাগার সময় মুখগহ্বর শুষ্ক বলে মনে হয়। মাড়ী থেকে রক্তপাত ও মাড়ীর স্থানচ্যুতি। ধাতুস্রাবের আগে দাঁতের যন্ত্রণা। মুখের ভিতর প্রদাহিত ফোস্কায় ভর্তি, দুর্গন্ধযুক্ত আস্বাদ। জিহ্বার পক্ষাঘাত, জিহ্বার অগ্রভাগে তীব্র হুল ফোটার মত জ্বালাকর বেদনা। ভোরবেলা মুখ থেকে লালা নিঃসরণ। অন্ননলীর ভিতর খাদ্যবস্ত্ত ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অন্ননলীর আক্ষেপ।
গলা – চোয়ালের নিচের অংশের ও টনসিলের স্ফীতি। খু্ব সহজেই ঠান্ডা লাগে। তৎসহ সূঁচ ফোটার মত হুল ফোটার মত তীব্র বেদনা। গলক্ষত। প্রতিবার ঠান্ডা লাগার পর টনসিলের পঁজোৎপত্তি। টনসিল প্রদাহিত। তৎসহ শিড়া স্ফীতি। ঢোক গেলার সময় হুলফোটার মত বেদনা। খালি ঢোক গেলার সময় বৃদ্ধি।
গলবিলের ভিতর গোঁজ ফুটে থাকার ন্যায় অনুভূতি। কেবল মাত্র তরল বস্তু গিলতে পারে। খাদ্যবস্তু অন্ননলীর ভিতর ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অন্ননলীর আক্ষেপ। এই কারণে শ্বাস বন্ধ হবার মত অবস্থা দেখা দেয় (মার্ক কর, গ্র্যাফাইটিস)। অতিরিক্ত কথা বলার পর গলার কষ্ট। টনসিলে, গলবিলে অথবা কণ্ঠনলীর ভিতর হুলফোটার মত বেদনা।
পাকস্থলী – মুখে জল উঠে, জিহ্বা, এবং ঢেকুর, এইগুলরি সাহায্যে পেটের ভিতর পাথরের মত কিছু থাকায় অনুভূতির থেকে আরাম হয়। ক্ষুধার্ত, কিন্তু খাবার ফিরিয়ে দেয়।খাবার সঙ্গে পাকস্থলীতে বেদনা ও ভাড়ীবেধ, তৎসহ পেটের উপরের অংশের স্পর্শকাতরতা। (কেলি কার্ব)। গরম খাবারে বৃদ্ধি। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের পাকস্থলীর দূবলর্তা তৎসহ ম্যালিগন্যান্ট জাতীয় কিছু হবার সম্ভাবনা থাকে।
উদর – শক্ত এবং টানভাব,স্ফীতি, শূলবেদনা। ক্ষুদ্রান্তের গ্রন্থিমূলে বিবৃদ্ধি। খাবার গেলার সময় পেটে বেদনা। স্বভাবগত শূলবেদনা, তৎসহ ক্ষুধা কিন্তু খাবার ফিরিয়ে দেয়।
সরলান্ত্র – কোষ্ঠকাঠিণ্য, তৎসহ মলশক্ত,গুটলে প্রকৃতির। প্রস্রাব করার সময় অর্শনলী বাইরে বেরিয়ে আসে। গুহ্যদ্বার দিয়ে রস চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে।
প্রস্রাব – রোগী যতবার প্রস্রাব করে ততবার অর্শবলি বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাব নলীতে জ্বালা।
পুরুষের রোগ – যৌন ইচ্ছা কমে যায় ও অকালে ধবজভঙ্গ। প্রস্টেট গ্রন্থির বিবৃদ্ধি। অণ্ডদ্বয়ে কঠিণতা।
স্ত্রীরোগ – ধাতুস্রাবের আগে, পাকস্থলী ও কোমরে বেদনা। ধাতুস্রাবের পরিমান অল্প।
শ্বাস-প্রশ্বাস – শুষ্ক, দমবন্ধ হবার মত কাশি, বিশেষতঃ বৃদ্ধ ব্যক্তিদের, ফুসফুস শ্লেষ্মায় পূর্ণ, তথাপি শ্লেষ্মা তুলে ফেলার ক্ষমতা থাকে না, আবহাওয়ার যে কোন প্রকারের পরিবর্তনে বৃদ্ধি। (সেনেগা)। কণ্ঠনলীতে ধোঁয়া টেনে নেবার মত অনুভূতি। পুরাতন স্বরভঙ্গ। বুকের ভিতর সূঁচ ফোটার মত বেদনা। শ্বাস নেবার সময় বৃদ্ধি। ফুসফুস ধোঁয়ায় পূর্ণ বলে মনে হয়।
হৃদপিণ্ড – হৃদকম্প ও হৃদপিণ্ড স্থানে কষ্ট। ধমনীর অর্বুদ (লাইকোপোডিয়াম)। প্রথমে হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি হয়। এরপর রক্তের চাপ অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পায়, রক্তবহা নলীর সঙ্কোচন দেখা দেয়। বামদিক চেপে শুলে হৃদকম্প, বিশেষ করে যখন হৃদকম্পর কথা বিশেষ করে চিন্তা করে তখন হৃদকম্প, নাড়ী পূর্ণ ও শক্ত। পায়ের ঘাম চাপা পড়ার পর হৃদপিণ্ডের লক্ষণসমূহের প্রকাশ।
পিঠ – মাথার পিছনের অংশের গ্রন্থিস্ফীতি। ঘাড়ের চারপাশে চর্বিযুক্ত অর্বুদ। দুই স্কন্ধাস্থির মধ্যবর্তী অংশে থেঁৎলানোবৎ বেদনা। ত্রিকাস্থির আড়ষ্টভাব। মেরুদণ্ডের দুর্বলতা।
অঙ্গ-প্রতঙ্গ – বগলের গ্রন্থিসমূহের বেদনা। ঠান্ডা, চটচটে পায়ের পাতা। (ক্যাল্কেরিয়া)। দুগন্ধযুক্ত পায়ের ঘাম। অঙ্গ-প্রতঙ্গের অসাড়ভাব। হাঁটু থেকে অণ্ডকোষ পর্যন্ত অসাড়ভাবের মত অনুভূতি, বসে পড়লেই এই অনুভূতি চলে যায়। পায়ের আঙ্গুলে ও পায়ের তলায় ক্ষতের মত অনুভূতি, হাটার সময় পায়ের তলায় বেদনা হয়। সন্ধিস্থানের বেদনা, নিম্নাঙ্গে জ্বালাকর যন্ত্রনা।
ঘুম – ঘুমের মধ্যে কথা বলে, মাঝে মাঝে ঘুম থেকে জেগে উঠে, সে সময় গরম বোধ ঘুমের ভিতর পেশী স্পন্দন
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, রোগের কথা যখন চিন্তা করে, ধোয়ার পর, যন্ত্রনার দিকের স্থান চেপে শুলে।
উপশম – মুক্ত বাতাসে হাঁটা-চলা করলে।
সম্বন্ধ – তুলনীয়ঃ ডিজিট্যালিস, রেডিয়াম, এরাগ্যালাস, অক্সিট্রপ, পরিপূরক, গলকামড়া, সিলিকা, সোরিনাম।
প্রতিবন্ধক – ক্যাল্কেরিয়া কার্ব।
বিষাক্ত মাত্রায় যদি এই ঔষধ খাওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে এই ঔষধের কার্যাবলী এপসম সল্ট নষ্ট করে থাকে।
শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি, শেষোক্ত শক্তি গলক্ষত হবার প্রবণতা নষ্ট করে থাকে। ব্যারাইটা কাজ খুব ধীরে হয়, এই কারণে এই ঔষধের পূনঃপ্রয়োগ প্রয়োজন হয়।
ব্যারাইটা কাৰ্ব্বনিকা সম্বন্ধে আলোচনা বেশ চিত্তাকর্ষক কেননা, ইহা সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষিত এবং একটি ঋতুদোষ সংশোধক ঔষধ। এইরূপ ঔষধ সব সময়েই স্বল্পক্রিয় অগভীর ঔষধ অপেক্ষা চিত্তাকর্ষক হয়। উহারা গভীরমূল, দীর্ঘকাল স্থায়ী, সোরা – সিফিলিস-সাইকোসিস দোষজাত রোগগুলিকে আয়ত্ত করে। এই ঔষধ শিশুদিগের বর্ধনের দিকে লক্ষ্য দেয়। তোমরা পাঠ্যপুস্তকে এই ঔষধের মধ্যে প্রায়ই “খর্ব্বতা ” কথাটি লেখা আছে দেখিবে। কিন্তু এই ঔষধ সম্বন্ধে বলা হইলেও উহা সৰ্ব্বদা দৈহিক খৰ্ব্বতা জ্ঞাপন করে না। উহার অর্থ দেহ ও মনের। খর্বতা, মানসিক খৰ্ব্বতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির খর্বতা। তোমরা জান “উপযুক্ত সময়ের পূর্বে বিকাশ” বলিতে কি বুঝায়, অস্বাভাবিক বুদ্ধিবিশিষ্ট যুবা পুরুষ, যাহারা মনের দিক হইতে যথেষ্ট অগ্রগতিসম্পন্ন। আমরা বলে তাহারা বয়সের অপেক্ষা বেশী বুদ্ধিমান। ইহাদিগকেই উপযুক্ত সময়ের পূর্বে বিকশিত বলা হয়। প্রথমে এই কথাটি মনে লও, ভাবিয়া দেখ ইহা দ্বারা কি বুঝায়। আর তারপর ব্যারাইটা কাৰ্বের ধাতুতে আমরা ইহা ঠিক বিপরীতটি পাই। খৰ্ব্বতা দ্বারা ইহাই বুঝান হইয়াছে। শিশুরা বিলম্বে সাংসারিক বিষয়ে উপযোগী অথবা কাজের হয়, বিলম্বে লেখাপড়া শিখে, বিলম্বে কথা বলিতে শিখে, জীবনে প্রবেশ করিতে যে-সকল সংযোগের প্রয়োজন হয়, তাহা শিখিতে বিলম্ব করে, বিলম্বে মূৰ্ত্তিসমূহ মনে রাখিতে এবং ধারণা করিতে শিখে, বিলম্বে কর্মতৎপর হয় বিলম্বে নিজেদের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাজ করিতে শিখে। আমরা বলি যে ক্যাল্ক কাৰ্ব’ বিলম্বে হাঁটিতে শিখে, ব্যারাইটা কাৰ্ব্বও বিলম্বে হাঁটিতে শিখে, কিন্তু তাহার কারণটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। চলতি সেকেলে কথায় বলিতে গেলে, ব্যারাইটা কাব্বের হাঁটিতে শিখিতে বিলম্ব হইলেও, তাহার হাত-পাগুলি বেশ সুন্দর থাকে। ক্যাল্ক কাৰ্ব্বে, হাত-পাগুলি রুগ্ন, দুৰ্বল, পেশীগুলি থলথলে, হাড়গুলি অগঠিত এবং সেইজন্যই তাহার হাঁটিতে শিখিতে বিলম্ব হয়। “বিলম্বে হাঁটা” ক্যাল্কেরিয়া জ্ঞাপক। “বিলম্বে হাঁটিতে শিখা” ব্যারাইটা জ্ঞাপক। ইহা ‘বোরাক্স’ ‘নেট্রাম মিউরে’র প্রতিযোগী। এই তিনটি ঔষধের প্রত্যেকটিতেই মস্তিষ্কের বৃদ্ধি সম্বন্ধে বিশেষ প্রকার বিলম্ব আছে, সুতরাং তাহাদের কাজ করিতে শিখিতে বিলম্ব হয়, বৃদ্ধি পাইতে বিলম্ব হয়। কিন্তু কাজ-কৰ্ম্ম আয়ত্ত করা এবং জীবনের উপযোগী হওয়ায় বিলম্ব করা ব্যাপারে ব্যারাইটা কাৰ্ব উহাদের মধ্যে অগ্রণী।
তুমি চিকিৎসা করিতে কতকগুলি রোগী পাইবে,—ঐসব বালিকার ১৮ হইতে ২৫ বৎসর বয়সেও ধীরে ধীরে বাড়িয়া উঠার স্বরূপ প্রকাশিত রহিয়াছে, তাহারা এখনও সেই সব করে, যাহা তাহারা শিশুকালে করিত এবং সেইভাবে কথা বলে, যেরূপ তাহারা শিশুকালে বলিত। “শিশুর মত কাজের ধরণ, শিশুর মত ব্যবহার; পুতুল লইয়া খেলা, নির্বোধের মত কথা বলা।” তাহারা এখনও স্ত্রীত্বে উপনীত হয় নাই। তাহারা বিলম্বে কাজকর্ম আয়ত্ত করে, বিলম্বে স্ত্রীসুলভ ব্যবহার শিক্ষা করে। তাহাদের স্ত্রীসুলভ বিজ্ঞতার অভাব থাকে। তাহারা এখনও বিচক্ষণ হয় নাই, এবং কোন বালক বা কোন ছোট বালিকা তাহাদের সহিত যেরূপভাবে কথা বলে তাহারাও ঠিক সেইরূপ ভাবেই কথা বলে। ইহাই মানসিক খর্বতা। ব্যারাইটা কাৰ্বে এই ধীর গতি বৃদ্ধি, সকল প্রকার লক্ষণ এবং বিশেষত্বের দিক হইতে বুঝিতে হইলে, উহাকে ভালভাবে আয়ত্ত করা প্রয়োজন। ইহার কতকগুলি গ্র্যাফাইটিস’, ‘সালফার এবং ক্যাল্কেরিয়া প্রভৃতিতে দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু এই ঔষধের সহিত তাহার তুলনা হয় না। যে বৃদ্ধিক্রিয়া শিশুকে পুরুষ ও স্ত্রীলোকে পরিণত করে, মনে হয় যেন ইহা সেই বৃদ্ধিক্রিয়াকেই স্থগিত করিয়া দেয়। একটি খর্বকায় লোক দেখিলেই আমার ব্যারাইটার কথা মনে পড়ে না, কিন্তু উহার খৰ্ব্বতা এরূপ যে, তাহা মানসিক ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সম্বন্ধীয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় অথবা একটি অঙ্গ বর্ধিত হয় না। ঐ অঙ্গটি থামিয়া থাকে, অপরগুলি বাড়িয়া চলে। এইরূপ দেখিলেই আমার এই ঔষধের কথা মনে পড়ে। একটি অঙ্গ পূর্ণতা লাভ করে না, কিন্তু অঙ্গগুলি বাড়িতে থাকে; একপার্শ্বিকতা, বর্ধনক্রিয়া সম্বন্ধে পক্ষপাতিত্ব।
এই ঔষধের আর একটি বিশেষ লক্ষণ, ইহার সহিত দেহের সমুদয় লসিকাগ্রন্থিগুলির সংযোগ। সমস্ত দেহের গ্রন্থিগুলি ফুলিয়া থাকে এবং কঠিন হয়। ঘাড়ের গ্রন্থি, কুঁচকির গ্রন্থি, উদরের লসিকাগ্রন্থিসমূহ আক্রান্ত হয়; ঘাড়ে গ্রন্থির মালার সৃষ্টি হয়। আমি পরে আরও কয়েকটি কথা বলিতেছি, ঐগুলি একত্রিত করিলে দেখিবে যে, ব্যারাইটার রোগী একটি অদ্ভুত চেহারার জীব। ইহাতে শীর্ণতা আছে যাহারা মোটা ছিল, যাহারা বেশ পুষ্ট ছিল তাহাদের ক্রমিক শীর্ণতা। ইহাতে পেটটি বড় হওয়া আছে। ইহা শিশুদিগের পুঁয়ে পাওয়া রোগে উপযোগী হইয়াছে। শিশু গ্রন্থিগুলি বর্ধিত পেটটি বর্ধিত, তন্তুগুলি শীর্ণতা প্রাপ্ত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি শীর্ণ, ও মানসিক খৰ্ব্বতা; ইহা দ্বারাই তুমি ব্যারাইটা কাৰ্বের পুঁয়ে পাওয়া রোগের পূর্ণ চিত্র পাইলে।
রোগী নিজে শীতার্ত থাকে। ঠান্ডা সহ্য করিতে পারে না, ভালভাবে আবৃত থাকিতে চায়। দুৰ্বল নাড়ীর সহিত সুস্পষ্ট দুর্বলতা একটি প্রবল লক্ষণ, এবং তাহাকে শুইয়াই থাকিতে হয়, দাঁড়াইলে বা উঠিয়া বসিলে খারাপ বোধ করে। আহারের পর দুর্বলতা আরও বেশী হয়। তাহার বেদনা সঞ্চালনে ও উন্মুক্ত বাতাসে উপশম হয়। তাহার উপসর্গগুলি ঠান্ডায় বাড়ে। বর্ধিত গ্রন্থিগুলি উন্মুক্ত হাওয়ায় স্পর্শকাতর ও রক্তসঞ্চয়যুক্ত হইয়া উঠে। তাহার টনসিলদ্বয় ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে। ঘাড়ের গ্রন্থিগুলি প্রত্যেক শীতে এবং প্রত্যেকবার ঠান্ডা লাগিলে আকারে এবং কঠিনতায় বাড়িতে থাকে।
“গ্রন্থিগুলির স্ফীতি ও কঠিনতা।” গ্রন্থিগুলির প্রদাহ ও রসপ্রসেক। এই ঔষধে রসপ্রসেক আছে। গ্রন্থিগুলি ক্রমেই কঠিন হইতে কঠিনতর হইতে থাকে। ক্ষতগুলির তলদেশ কঠিনতা বিশিষ্ট হয়। উন্মুক্ত ক্ষতের কিনারাগুলি কঠিন হয়। শিশু যখন হাম, আরক্ত জ্বর, কর্ণমূলপ্রদাহ, এমনকি বেশী সর্দি লাগা অথবা ম্যালেরিয়ার আক্রমণ প্রভৃতি যে-কোন রোগে ভুগে, তখনই তাহার বৃদ্ধি থামিয়া যায় এবং খৰ্ব্বতা উপস্থিত হয়, কিন্তু সে তা ঐরূপ অবস্থা লইয়া জন্মায় নাই, অবস্থাটি প্রাপ্তি, উহা বৃদ্ধিকে স্থগিত করিয়াছে। ইহাতে সমগ্র দেহের শীর্ণতা এবং ক্রমিক ক্ষয় আছে, কিন্তু পেটটির কথা স্বতন্ত্র, উহা ক্রমেই বড় হইতে থাকে। এই সকল লক্ষণগুলি প্রারম্ভেই উপেক্ষা করা চলে না, কারণ এই লক্ষণগুলির সাহায্যেই ভিত্তি প্রস্তুত হয় এবং তারপর পরিণাম স্বরূপ রোগসমূহ এবং তন্তুসমূহের পরিবর্তন উপস্থিত হয়।
এই ঔষধের আর একটি বিশেষ লক্ষণ এই যে, পূর্বোক্ত বিষয়গুলি অধিক বয়স্ক ব্যক্তির পক্ষেও প্রযোজ্য হইতে পারে। আমরা বলি, ইহা বাল্যাবস্থা, ইহা যৌবন-অবস্থা এবং বৃদ্ধির অবরুদ্ধ অবস্থা। এই বৃদ্ধির অবরুদ্ধ অবস্থা যৌবনে আসিল, কি শৈশবে আসিল অথবা পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে পরিণত বয়সে আসিল তাহাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের পক্ষে অবোধ্য কতকগুলি ব্যাপার দেখিয়া আমরা বলি যে, লোকটি বৃদ্ধ বয়সের আকৃতি প্রাপ্ত হইতেছে। আমরা উহাকে অকাল-বার্ধক্য বিল। ম্যালেরিয়া, শারীরিক বা মানসিক অতিপরিশ্রম দীর্ঘকালস্থায়ী মানসিক-পরিশ্রম হইতে যখন দুরারোগ্য রোগসকল জন্মে, তখন অকালবার্ধক্য লক্ষণটি বলবৎ থাকিলে, ব্যারাইটা কাৰ্ব উহা আরোগ্য করে। বার্ধক্য তাহার উপরে অকালে আসিয়া পড়ে। বাল্যকাল এবং বার্ধক্যের বিশেষ কোন পার্থক্য নাই এইজন্য বাৰ্ধক্যকে দ্বিতীয় বাল্যাবস্থা বলা হয়, কিন্তু ৭০ বৎসরের কম বয়স্ক লোককে বাল্যভাববিশিষ্ট হইতে দেখিলে আমরা দুঃখিত না হইয়া পারি না, অথচ আমরা দেখিতে পাই যে, এরূপ বয়সের অনেক লোকই সরল ও বাল্যভাববিশিষ্ট হইয়া পড়ে। ইহার অর্থ কেবলমাত্র মানসিক জড়তা নহে, বালকসুলভ আচরণও বটে। তাহারা শিশুর ন্যায় কাজ করিতে ও কথা বলিতে থাকে। সুতরাং এরূপ অকালবার্ধক্যে, এই সব লক্ষণে আমরা ব্যারাইটা কার্ব্বের কথা চিন্তা করি।
ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব মেদময় অর্বুদ, বুক রোগ গুটিকারোগ সদৃশ মাংসবৃদ্ধি, মাংসাৰ্ব্বদ আরোগ্য করিয়াছে, ইহা ক্যান্সার রোগের বেদনা ও যাতনা কমাইয়া রোগীর জীবন দীর্ঘ করিয়াছে।
ইহার মানসিক লক্ষণগুলি সযত্নে পাঠ করা উচিত এবং দেখিতে পাইবে যে, তত্ত্বসমূহের পরিবর্তনের সহিত মিশ্রিত সর্বপ্রকার অবস্থাই ইহার মানসিক লক্ষণের মধ্যে পরিস্ফুট থাকে। ব্যারাইটা কাব্বের শিশু অপরিচিত লোক ঘরে আসিলে আসবাব পত্রের পিছনে লুকায়, যেন কিছু লজ্জার কারণ হইয়াছে অথবা সে ভয় পাইয়াছে—এরূপ ভাবে লুকায়। তাহার সম্বন্ধে কিছু বলা হইলে বা তাহাকে দেখিয়া হাসিলে, সে অদ্ভুত কিছু কল্পনা করিয়া লয়। মনে হয় সে যেন আর বাড়িতেছে না। মনে হয় যেন তাহাকে পড়াইয়া কোনই উপকার হইতেছে না, কারণ সে বার বার একই কাজ করে; এবং কিছুই শিখে না। হয় তাহারা কিছু বুঝিতে পারে না, নচেৎ কিছুই মুখস্ত করিতে পারে না, অথবা তাহারা কোন চিন্তাকে ধরিয়া রাখিতে পারে না, তুমি বার বার তাহাকে একই কথা শিখাও কিন্তু মা বিস্মিত হইয়া দেখিবেন যে, শিশু কিছুই শিখিতেছে না এবং শিক্ষক জানাইবেন যে, তাহার শিখিবার ক্ষমতা নাই। শিক্ষক অবস্থাটি বুঝিতে পারেন না, মাতা উহা বুঝিতে পারেন না, কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের এক দৃষ্টিতেই সব কিছু বুঝা উচিত। যদি তাহার মেটিরিয়া মেডিকার জ্ঞান থাকে, তাহা হইল তিনি দুর্বল শিশু কিভাবে বাড়ে তাহারা কিভাবে রিকেট অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়, তাহারা কিরূপ দুৰ্বল, কিরূপ ভাবে সৰ্ব্বদাই অপরের উপরে নির্ভরশীল হয় এবং কেবল মাত্র চাকর বাকরের কাজের উপযুক্ত হয়, তাহা ভালভাবেই উপলব্ধি করিতে পরিবেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছোট ছোট ছেলেমেয়েদিগকে কোলের উপর বসাইয়া, তাহাদের কর্মক্ষমতা সম্বন্ধে সম্যক অনুসন্ধান করিবেন, দেখিবেন তাহাদের কিসের অভাব, এবং বুঝিয়া লইবেন ঐ অভাব পূরণ করা যায়। তাহারা কি নিজে নিজে কাজ করার উপযুক্ত হইবে না? ধাতুগত দোষের চিকিৎসা করিতে সকল শক্তির ঔষধেরই প্রয়োজন হয়। কাহারও কাহারও মধ্যশক্তির ঔষধ লাগে কাহারও অতি নিম্নশক্তির, কাহারও অতি উচ্চশক্তির ঔষধ প্রয়োজন হয়। শিশুদের যেরূপ শক্তি প্রয়োজন, আমরা যেন তাহাদিগকে তাহা বঞ্চিত না করি। আমরা শুধু দৃষ্টি রাখিব ঔষধের শ্রেষ্ঠ ব্যবহারের দিকে ঔষধের পূর্ণশক্তিতে বিকাশ পাওয়ার দিকে।
পাঠ্যপুস্তকে একটি কথা আছে “পরিষ্কার চৈতন্য-শক্তির অভাব।” আমি বলিয়াছি তাহা হইতে এই ঔষধ সম্বন্ধে উহার অর্থ যে কি, এবং ঐ অর্থ অন্যান্য বহু ঔষধ অপেক্ষা যে কত পৃথক তাহা কি বুঝা যায় না? কিন্তু তবুও তুমি যখন এই কথাটি পড়িবে, তখন প্রথমে উহার অর্থ বুঝিতে পারিবে না। “পরিষ্কার চৈতন্য-শক্তির অভাব।” ইহা বিশেষভাবে বৃদ্ধবয়সের পক্ষেই উপযোগী। ইহা মনের গোলযোগ নয়, যাহাকে আমরা মাথাঘোরা বলি। ব্যাপারটি এই যে, সে পরিষ্কার বুদ্ধিযুক্ত নয়। আমরা দেখি যে, এই ঔষধটি কিরূপ ভাবে বুদ্ধিবৃত্তিকে আক্রমণ করে। ইহা প্রথমে তাহার স্মৃতিশক্তিকে অধিকার করে। প্রথম প্রথম উহা দুৰ্বল অবস্থামাত্র কিন্তু ক্রমে উহা জড়বুদ্ধির দিকে অগ্রসর হয়। তুমি উহাকে চরম অবস্থার দিকে লইয়া চল, উহা তখন সম্পূর্ণ জড়ভাব এবং গোড়া হইতে রেখার আকারে উহা ধাপে ধাপে বাড়িয়া আসিয়াছে, সামান্য চিন্তার মেঘাচ্ছন্নতা হইতে জড়বুদ্ধিতে পরিণত হইয়াছে।”
ব্যারাইটা কাৰ্বের শিশুকে ঔষধালয়ে লইয়া গেলে, সে হাত দিয়া মুখ ঢাকিবে এবং আঙ্গুলের ফাক দিয়া উঁকি মারিবে। সলজ্জ। ভীরু। সহজেই ভয় পায়। অচেনা লোককে ভয় করে। অন্য ঔষধেও এরূপ লক্ষণ আছে কিন্তু ব্যারাইটা কাৰ্ব্বে ইহা একটি প্রবল লক্ষণই। শুষ্ক মুখ। রুগ্ন চেহারা। ইহা তাহার লুকাইবার চিন্তা, তাহার ভীরুতার চিন্তা। শিশু খেলা করে না এবং এক কোণে বসিয়া থাকে। বালক হইলে তাহার খেলার হাতুড়ির দিকে, বালিকা হইলে তাহার খেলার পুতুলের দিকে মনোযোগ দেয় না। ক্রমাগত বসিয়া থাকে। মনে হয় না যে, সে কোন চিন্তা করিতেছে, চিন্তা করিবার ক্ষমতার অভাব। শিশু বড় হইতে থাকে, কিন্তু কোন বিশেষত্ব থাকে না, বুঝিবার ক্ষমতা থাকে না এবং সেইজন্য তাহার মনেরও বৃদ্ধি হয় না। সৰ্ব্বদাই মনে মনে উৎপাত ডাকিয়া আনে। কষ্টিকামে’র ন্যায় ভয় করে, যেন কিছু ঘটিতে চলিয়াছে। কল্পনায় পূর্ণ থাকে, দুঃখকষ্টের কল্পনা করে। সম্ভাব্য সকল প্রকার দুঃখকষ্টের চিন্তায় ডুবিয়া থাকে। ইহা অনেকটা আর্স’ সদৃশ। শিশুর ঘ্যানঘ্যানে স্বভাব, সৰ্ব্বদাই ঘ্যানঘ্যান করে। এই অবস্থার মধ্যে তাহার কোন দেহাংশের যাতনা অথবা মানসিক লক্ষণ থাকে। “যতই সে তাহার যাতনার কথা ভাবে, ততই উহা বাড়িতে থাকে।” যদি সে তাহার কষ্টের কথা, তাহার যাতনার কথা ভাবে তৎক্ষণাৎ উহা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। দীর্ঘকালব্যাপী মানসিক কার্যের পর অকালবার্ধক্য এবং মস্তিষ্কের ক্লান্তি।
কষ্টদায়ক শিরঃপীড়া। “মস্তিষ্কে চাপবোধ।” মস্তিষ্কটি শিথিল হইয়া গিয়াছে— এরূপ অনুভূতি, মস্তিষ্ক যেন একপাশ হইতে আর এক পার্শ্বে ঢলিয়া পড়িতেছে, একবার উঠিতেছে, একবার পড়িতেছে। মাথা নাড়িলে অথবা অকস্মাৎ ধাক্কা লাগিলে মনে হয়, যেন মস্তিষ্কটি নড়িয়া উঠিল। মাথা এক দিক হইতে আর একদিকে ঘুরাইলে মনে হয়, যেন মস্তিষ্কটিও ইতস্ততঃ নড়িয়া মাথার গতির সহিত সমতা রক্ষা করিতেছে। “চাপনবৎ শিরঃপীড়া।” শিরঃপীড়া মুক্ত বায়ুতে, নির্মল বায়ুতে উপশমিত হয়, উত্তাপে বর্ধিত হয়। ইহা উহার সাধারণ অবস্থার বিপরীত। ব্যারাইটা কার্ব্বের সাধারণ অবস্থা ঠান্ডায় বাড়ে, সে ঠান্ডা সহ্য করিতে পারে না, ঠান্ডা লাগিলেই তাহার রোগগুলি দেখা দেয়, কিন্তু তাহার শিরঃপীড়া ঠান্ডা হাওয়ায় উপশমিত হয়। ব্যারাইটা কার্ব্বের রোগী উত্তাপ ও শীতের আতিশয্যে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়। গরম আবহাওয়ায় তাহার রোগ উপস্থিত হয়। গরম আবহাওয়ায় তাহার মাথায় রক্ত উঠে, এবং সন্ন্যাসরোগের পক্ষে অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করে। ইহাতে অনেক মানসিক রোগ আছে, সন্ন্যাসরোগ পর্যন্ত। পুরাতন সন্ন্যাসরোগগ্রস্তদিগের সদৃশ কতকগুলি পক্ষাঘাতিক লক্ষণ এই ঔষধে আছে এবং ইহা পেশীগুলির উপর পেশীশক্তির পুনঃস্থাপন ও যোগান দেওয়ার ব্যাপারে বিশেষ উপযোগী হইয়াছে। ইহা ফসফরাস সদৃশ এবং পুরাতন পক্ষাঘাতিক অবস্থার একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ, যেরূপ অবস্থা রক্তবহা নাড়ী ফাটিয়া যাওয়ার ফলে হয় এবং সেইজন্য স্নায়ুতে রক্তসঞ্চালনের উপর চাপ পড়ার ফলে উপস্থিত হয়। ইহার শিরঃপীড়া রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির, চাপনবৎ ও মস্তিষ্কে চাপ পড়ার ন্যায় অনুভূতিযুক্ত।
আমরা যেরূপ বর্ণনা করিয়াছি, সেই ক্ষুদ্রকায় শিশুদের মস্তকে উদ্ভেদ দেখা দেয়। মাথার উপর, একজিমা এবং যাহারা সংসারে সুখসম্পদে থাকার জন্য জন্মিয়াছে, তাহারা ঐ একজিমা মলম ও বাহ্যিক প্রয়োগ দ্বারা তাড়াইয়া দিয়া থাকে। “মস্তকত্বকের উপর ভিজা মামড়ী” “মস্তক ত্বকের উপর শুষ্ক উদ্ভেদ, কেশ পতন। টাকপড়া। উদ্ভেদ চাপা পড়ার ফলে মস্তকরোগ, মানসিক খৰ্ব্বতা এবং বুদ্ধির অভাব।
ইহাতে বহু চক্ষু-লক্ষণ আছে। “দানাময় চক্ষুর পাতা, চক্ষুর পাতা পুরু হওয়া, চক্ষুর চারিদিকের ঝিল্লী ও তন্তুগুলি পুরু হওয়া, কনীনিকার অস্বচ্ছতা।” চক্ষুর বিবিধ আচ্ছাদনে রসসঞ্চয়। ইহা ছানিরোগ আরোগ্য করিয়াছে, ইহা নানাপ্রকার অস্পষ্ট দৃষ্টি রোগ আরোগ্য করিয়াছে, বিশেষভাবে যাহারা ঘোলা দেখে তাহাদের অস্পষ্ট দৃষ্টি।“সে যেন কুয়াশার মধ্য দিয়া দেখে, ধোয়ার মধ্য দিয়া দেখে | কনীনিকার ক্ষত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ, উহাতে দৃষ্টিশক্তির বিকৃতি ঘটায়। প্রাতঃকালে পাতা দুইটি জুড়িয়া যায়। অঞ্জনী। “উপর পাতা ভারি বোধ হয়।” কপালের উপর ভার চাপান আছে— এরূপ অনুভূতি, তৎসহ শিরঃপীড়া, যেন কপালটি চাপ দিয়া ভ্রূর দিকে ঠেলিয়া দিতেছে। কাৰ্ব্ব ভেজ’, ‘কাৰ্ব্ব এনি’ ও ‘নেট্রাম মিউর’ সদৃশ লক্ষণ। রোগী সময়ে সময়ে হাত দিয়া সমস্ত কপালটি চাপিয়া ধরিবে এবং বলিবে, “মনে হইতেছে, যেন কপালটি চক্ষুর দিকে চাপিয়া আসিতেছে।”
ইহাতে নানাপ্রকার কানের শব্দ আছে, বিশেষতঃ শ্বাস লওয়ার, গিলিবার এবং চিবাইবার সময় কটকট ও পতপত্ শব্দ, শয়ন করিলে উপশম। ইহা ডান কানকেই অধিক আক্রমণ করে। নিঃশ্বাস গ্রহণকালে কানে শোঁ শোঁ শব্দ। “কানের চারিদিকে উদ্ভেদ, কানের চারিদিকে গ্রন্থিস্ফীতি এবং উদ্ভেদ।” কর্ণমূলগ্রন্থির প্রদাহ ও কঠিনতা। প্রথম প্রথম উহাকে স্ফীতি বলা হয়, কিন্তু অবশেষে উহা স্থায়ী বৃদ্ধি ও কঠিনতায় পরিণত হয়, কখন কখন উহার অর্থ খুব বড় রকম অতিবৃদ্ধি। ঘাড়ের দিকের অপর গ্রন্থিগুলিও কর্ণরোগের সহিত আক্রান্ত হয়। ঘাড়ের দিকে কানের নীচে লসিকাগ্রন্থিগুলির গাঁট গাঁট অবস্থা (ব্যারা মিউর, ‘টিউবার’)। কখন কখন নিম্ন চোয়ালের গ্রন্থিগুলি আক্রান্ত হইয়া বৰ্দ্ধিত ও কঠিন হইয়া উঠে। কখন কখন টনসিলদ্বয় বৰ্দ্ধিত ও কঠিন হইয়া উঠে। এইসকল গ্রন্থি প্রদাহিত ও স্পর্শকাতর হয়, একবার ঠান্ডা লাগিলে অথবা অকস্মাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনে আর একটু বড় হইয়া উঠে। বৰ্দ্ধিত গ্রন্থিগুলির সম্বন্ধে ইহা একটি আশ্চর্য্য ঔষধ। রোগীদেহে পরীক্ষার পর, পুস্তকে ইহাকে এইসকল গ্রন্থিতে পুঁজোৎপত্তির ঔষধ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে, কিন্তু আমি আমার সারা জীবনে ইহাকে পুঁজোৎপত্তির উক্তৃষ্ট ঔষধরূপে দেখিতে পাই নাই। ইহার প্রদাহ প্রায়ই বর্ধিত রসসঞ্চয়ে পরিণত হয়। ইহাকে পুস্তকে টনসিল পাকার ঔষধ বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে, কিন্তু আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফলে, ইহাকে বড় জোর টনসিল পাকার শেষ ঔষধগুলির মধ্যে একটি বলিয়া মনে করিতে পারি। হয়ত উহা ঐরূপ করিয়া থাকিবে, কিন্তু আমি কখনও উহাকে ঐরূপ করিতে দেখি নাই, সুতরাং পুস্তকে ঐ উক্তিকে যে উচ্চ মূল্য দেওয়া হইয়াছে এবং ঐভাবে চিহ্নিত করা হইয়াছে, তাহাতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রহিয়াছে। কিন্তু উহাতে নিশ্চয়ই ঠান্ডা লাগিলেই ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে—এরূপ রসপ্রসেক আছে। বৰ্দ্ধিত টনসিল লাল হইয়া উঠে এবং প্রদাহিত হয়, ক্রমে ঐ তরুণ প্রদাহ ও বেদনা চলিয়া যায়, কিন্তু টনসিলদ্বয় পূৰ্ব্ববারে ঠান্ডা লাগার সময় যেরূপ ছিল তাহা হইতে আর একটু বড় হইয়া থাকে। এইভাবে টনসিলদ্বয় বর্ধিত হইতে থাকে। শিশুদিগের ক্ষেত্রে উহা প্রায়ই কাটিয়া ফেলা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উহা যে কাটিয়া ফেলার প্রয়োজন হইতে পারে একথা আমি স্বীকার করি। কিন্তু ঐরূপ ক্ষেত্রে টনসিলদ্বয় অদ্ভুতভাবে বৰ্দ্ধিত হইয়া গিলিতে ও কথা বলিতে যথেষ্ট অসুবিধার সৃষ্টি করে। দুই তিন বার আমার যথাসাধ্য ঔষধ আরোগ্য করিতে ব্যর্থ হইয়াছি, কিন্তু আমার মনে হয় ঐগুলিও আরোগ্য হওয়া উচিত ছিল। হ্যানিম্যানের অর্গানন গ্রন্থে হোমিওপ্যাথি সম্বন্ধে একটি জিনিষ শেখান হইয়াছে, যে, ঔষধটি নির্বাচনের মত সদৃশ লক্ষণ না থাকিলে, ঐ ঔষধ প্রয়োগে বড় কিছু করা চলে না। কেবলমাত্র টনসিলের বৃদ্ধি এমন একটি লক্ষণ নহে, যাহার উপরে ঔষধ নিৰ্বাচন চলিতে পারে এবং এইজন্য অনুমানের উপর নির্ভর করিয়াই বার বার ঔষধ প্রয়োগ করা হয় এবং সম্ভবতঃ উহার কোনটিই কাজে লাগে না। এইরূপ অনুমানের উপর ঔষধ নির্বাচন অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরণের চিকিৎসা। অথচ বর্ধিত টনসিল লইয়া অনেক শিশুই আমাদের কাছে আসে, যাহাদের ঔষধ নির্বাচনের উপযুক্ত কোন লক্ষণই পাওয়া যায় না। লক্ষণ বলিতে বৰ্দ্ধিত টনসিল অথবা পরিবর্ধিত টিসুসমূহ বুঝায় না, বুঝায় এমন কিছু যাহা দ্বারা রোগীটির প্রকৃত স্বরূপ বুঝিতে পারা যায়। আমাদের পক্ষে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, অস্ত্রচিকিৎসক আসিয়া এমন কিছু কাটিয়া ফেলিতে বাধ্য হন, যাহাদ্বারা রোগীর ধাতুগত অপকার হওয়ার সম্ভাবনা। তথাপি এমন কতকগুলি ব্যাপার আছে, যাহা আমরা করিতে বাধ্য, যদিও আমরা জানি যে, উহা দ্বারা রোগীর ধাতুগত অপকার হয়। আমাদিগকেও অস্ত্রচিকিৎসকদিগের জীবিকা অর্জনের সুবিধা করিয়া দিতে হয় এবং রোগীদিগের উপর অস্ত্রোপচার করিতে দিতে হয়, কারণ রোগীরা ত আর এক বা দুই বৎসর ধরিয়া আরোগ্যের আশায় পড়িয়া থাকিতে পারে না। অস্ত্রচিকিৎসকগণের সর্বদাই আমাদের পার্শ্বে স্থানে আছে, কিন্তু প্রথমে চিকিৎসক হিসাবে আমাদিগকে চেষ্টা করিতে হইবে।
মুখের উপর উদ্ভেদ। মুখখানি রুগ্ন, সচরাচর বেগুনি, লালবর্ণ, এবং ফুলা ফুলা অথবা রোগা ও শীর্ণ, দেখিতে বৃদ্ধের মত বিশুষ্ক। শিশুকে দেখিতে ক্ষুদ্রকায় বৃদ্ধের মত, যেমনটি ‘নেট্রাম মিউর’ ও ‘ক্যাল্কেরিয়ায় দেখা যায়। তাহার মুখের রোগ, দাঁতের রোগ বিশেষভাবে গলার রোগ, চোয়ালের নিম্নের ও ঘাড়ের গ্রন্থির স্ফীতি। আরক্ত জ্বরের পরবর্তী কানের রোগ। আরক্ত জ্বরের কর্ণমূলগ্রন্থি এবং নিম্ন চোয়ালের গ্রন্থির বৃদ্ধি ও কঠিনতা। আরক্ত জ্বর অনেক সময়েই শারীরবিধানে নানা রোগের সৃষ্টি করে, বিশেষতঃ যদি উহা ভালভাবে চিকিৎসিত না হয় অথবা যদি এলোপ্যাথ অথবা ভীরুপ্রকৃতির হোমিওপ্যাথ দ্বারা চিকিৎসত হয়। ভীরুপ্রকৃতি হোমিওপ্যাথ বলিতে এরূপ একটি লোক, যিনি নিজের দৃঢ় বিশ্বাসেরও শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে পারেন না, একটি ঔষধ দিয়া তাহার ক্রিয়া হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন না, একটির পর একটি ঔষধ দেন, ইতিমধ্যে আরক্ত জ্বর নির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হইতে থাকে, রোগী অত্যন্ত অসুস্থ হইয়া পড়ে, শেষে তাহার কর্ণরোগ, বৰ্দ্ধিত গ্রন্থি এবং সময়ে সময়ে মূত্রপিন্ডের রোগ দেখা দেয়। যখন আরক্ত জ্বরের ফলে কর্ণরোগ এবং বর্ধিত গ্রন্থিসমূহের সৃষ্টি হয়, তখন যে কয়েকটি ঔষধ চিন্তা করিতে হয়, তাহাদের মধ্যে ব্যারাইটা কার্ব অন্যতম।
“বৃদ্ধ ব্যক্তিদের জিহ্বার পক্ষাঘাত। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের জিহ্বার দুর্বলতা। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের জিহ্বার কঠিনতা।” অকালবার্ধক্য এবং পেশীসমূহের অক্ষমতা।
এই ঔষধে সর্দিজ অবস্থা দেখা যায়। নাসিকা, গলা কণ্ঠনলী ও শ্বাসনলীতে শ্লেষ্মা সঞ্চয় হয়। যে-সকল বৃদ্ধলোকের শ্বাসনলীতে শ্লেষ্মা ঘড়ঘড় করে, ইহা তাহাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। প্রত্যেকবার আবহাওয়ার পরিবর্তনে ঠান্ডা পড়িলে, অথবা প্রত্যেকবার ঠান্ডা লাগিলে, তাহার এই ঘড়ঘড়ি আরও বাড়িয়া যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সহিত ঘড়ঘড়ি। এরূপ কম ঔষধই আছে, যাহাতে বৃদ্ধ ব্যক্তিদের বুকে এরূপ মোটা ঘড়ঘড় শব্দ এত বেশী পরিমাণে দেখা যায়, সুতরাং এই কথাটি জোর দিয়া বলা হইতেছে। ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব ঐরূপ ঔষধগুলির মধ্যে একটিই। সেনেগা’, ‘এমোনিয়েকাম’ এবং ব্যারাইটা মিউরে’র সহিত ইহার তুলনা করিতে হইবে। যখন একজন অশীতিপর বৃদ্ধের বুকে সর্বক্ষণই মোটা ঘড়ঘড়ি থাকে, আর তিনি যদি গ্রীষ্মকালে বেশ ভাল থাকেন, কিন্তু সারা শীতকাল ধরিয়া এই বুকের ঘড়ঘড়িতে কষ্ট পান, আর যদি অন্য কোন বিশেষ লক্ষণ না থাকে, তাহা হইলে এমোনিয়েকাম’ তাহাকে স্বচ্ছন্দে রাখিবে।
এই ঔষধে গলক্ষতের বহু লক্ষণ আছে। “কণ্ঠদেশের ও টনসিলদ্বয়ের কৌষিক তন্তুসমূহের প্রদাহ।” এই ঔষধটি গলার সাধারণ সর্দির একটি ঔষধ। গলার মধ্যে দানাদানা মাংসাঙ্কুর জন্মে, সেইজন্য প্রত্যেকের ঠান্ডা পড়িলে অথবা ঠান্ডা লাগাইলে, দানাদানা মাংসাঙ্কুরগুলি প্রদাহিত হইয়া উঠে এবং গলকোষটি চকচকে ও বড় বড় দানায় ভর্তি দেখায়। প্রতিবার ঠান্ডা পড়িলে টনসিলদ্বয় প্রদাহিত হয় এবং শিশুদের ক্ষেত্রে উহা শীঘ্রই বাড়িয়া উঠে। যে-সকল শিশুর টনসিল বর্ধিত, এবং অন্যান্য স্থানের গ্রন্থিগুলি বৰ্দ্ধিত, যাহারা বুদ্ধির দিক হইতে কিছুটা খৰ্ব্ব, লেখাপড়া শিখিতে দেরী হয়, তাহাদের বর্ধিত টনসিল ব্যারাইটা কাৰ্ব আরোগ্য করিবে। তুমি দেখিতেছ: যে, এগুলি সবই ধাতুগত লক্ষণ। সুতরাং এখানে তুমি কেবলমাত্র বৰ্দ্ধিত টনসিল দেখিয়াই ঔষধ নির্বাচন করিতেছ না।
“টনসিলদ্বয়ের প্রদাহ।” কিন্তু এই প্রদাহ ‘বেলেডোনায়’ যেরূপ প্রবল প্রদাহ নহে, ইহা একরাত্রেই উপস্থিত হয় নাই, ইহা দ্রুত পুঁজোৎপত্তির দিকে যাইতেছে না, কিন্তু ইহা অত্যধিক গলবেদনা, ধীরে ধীরে অনেকদিন ধরিয়া ঠান্ডা লাগার ফলে দেখা দিয়াছে এবং ইহার উৎপত্তি ধীর, বৃদ্ধি ধীর। ব্যারাইটা কাব্বের টনসিলপ্রদাহ রোগের প্রকৃতি এইরূপ, কিন্তু বেলেডোনায়’ উহা অত্যন্ত দ্রুততার সহিত উপস্থিত হয়। ‘হিপারের ক্রিয়াও দ্রুত এবং পুঁজোৎপত্তি ঘটায়। টনসিল-প্রদাহের আর একটি ঔষধ ক্যামোমিলা’ উহাতে কর্ণও আদ্রান্ত হয় এবং উত্তাপে উপশমিত হয়, কিন্তু যথেষ্ট উপযোগী হইলেও উহার ব্যবহার অল্পই হইয়া থাকে। রোগী অত্যন্ত ক্রোধপ্রবণ হইলে ইহা বিশেষভাবে উপযোগী হয়। বেদনা অত্যন্ত তীব্রভাবে উপস্থিত হয় এবং উত্তাপে উপশমপ্রাপ্ত হয়। ইহাকে ‘বেলেডোনার’ প্রদাহ বলিয়া ভুল হইতে পারে, কিন্তু ক্যামোমিলা উহাকে স্থায়ীভাবে আরোগ্য করে। “গলায় একটা গোঁজা থাকার ন্যায় অনুভূতি।” অর্থাৎ টনসিল দুইটি এত বড় হয় যে, উহাদিগকে গলায় মধ্যে দুইটি বল বা বড় ঢেলা বলিয়া মনে হয়। তাহারা স্বরের প্রকৃতি বদলাইয়া দেয় এবং কষ্ট উৎপাদন করে। “গলার মধ্যে অত্যন্ত জ্বালা। তরল পদার্থ ভিন্ন অন্য কিছু গিলিতে অক্ষমতা।” এই উত্তেজনায় গলা সৰ্ব্বদা অবরুদ্ধ বোধ হয় এবং গলার মধ্যে আক্ষেপিক সঙ্কোচন দেখা দেয়। গলার সঙ্কোচন, আকর্ষণ এবং খালধরা। ইহাতে গেলার সময় অন্ননলীতে আক্ষেপ আছে, বিশেষতঃ বৃদ্ধ, স্নায়বিক প্রকৃতি অথবা অকালে ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তিদিগের। “অন্ননলীতে আক্ষেপ, গিলিতে কষ্ট।” খাদ্যের ঢেলা কিছু দূর যায় এবং তারপর আক্ষেপ সৃষ্টি করে। তাহার গলা বন্ধ হইয়া যায় এবং শ্বাসরোধ হয়। সামান্য খাদ্যে এইরূপ গলার অবরোধ এবং শ্বাসরোধ ক্যালি কাৰ্ব্ব, গ্র্যাফাইটিস’ এবং মার্ক করে’র একটি বিশেষ লক্ষণ। ইহা ব্যারাইটা কাৰ্বের একটি প্রবল লক্ষণ, কিন্তু মার্ক করে আরও প্রবল।
খাওয়ার ও পান করিবার কষ্ট এবং ক্ষুধা ও পাকস্থলীর গোলযোগ একসঙ্গে মিলিয়া থাকিতে পারে। হজমের দুর্বলতা থাকে। আহারের পর নানাপ্রকার গোলযোগ এবং অস্বচ্ছতার অনুভূতি। সময়ে সময়ে পাকাশয়শূল, সময়ে সময়ে পাকাশয়-স্ফীতি। “আহারের পর পাকস্থলীতে বেদনা করে।” আহারের পর অত্যন্ত দুর্বলতা। উদর কঠিন এবং টানটান। “মধ্যান্ত্রক গ্রন্থিগুলি স্ফীত ও কঠিন; পেটটি বড়, পেটের পেশীগুলি স্পর্শকাতর।” মধ্যান্ত্রিক ক্ষয়রোগের প্রথম অবস্থায় ঐ রোগ ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। ইহা দ্বারা শিশুদের স্কুলোদরতা আরোগ্য হইয়াছে, তখন হাত-পায়ের শীর্ণতা, সর্বাঙ্গের শীর্ণতা, গাঁট গাঁট বর্ধিত গ্রন্থি এবং বুদ্ধিবৃত্তির খর্বতা লক্ষণ ছিল।
ব্যারাইটা কাৰ্ব্বে বদ্ধমূল কোষ্ঠবদ্ধতা আছে। “কষ্টদায়ক গ্রন্থিল মল। মল কঠিন এবং অপ্রচুর।” সরলান্ত্রের ক্রিয়ার অভাব। মল ও মূত্রত্যাগকালে অর্শবলি বাহির হইয়া আসে।
পুরুষের জননেন্দ্রিয় সম্বন্ধে কতকগুলি অদ্ভুত লক্ষণ আছে। এই ঔষধ সমুদয় সঙ্গমপ্রবৃত্তি এবং ক্ষমতা হরণ করে, জননেন্দ্রিয়কে শিথিল করে এবং ধ্বজভঙ্গ অবস্থার সৃষ্টি করে। লিঙ্গ শিথিল, ধ্বজভঙ্গ সঙ্গমপ্রবৃত্তির হ্রাস। প্রষ্টেট গ্রন্থিদ্বয়ের অতিবৃদ্ধি। অন্ডদ্বয়ের শুষ্কতা।” ইহা মূত্রনালীর পুরাতন লালামেহ আরোগ্য করে। বহুদিনস্থায়ী পুরাতন যন্ত্রণাহীন সাদাটে লালামেহস্রাব, যাহা বহুদিন হইতে চলিয়া আসিতেছে। উহা দুর্গন্ধস্রাব এবং উহাতে কোন প্রদাহ থাকে না। “জননেন্দ্রিয়ের অসাড়তা।”
স্ত্রীলোকদিগের অনেক রোগ আছে। বন্ধ্যাত্ব। ডিম্বকোষের ক্ষীণতা, স্তন গ্রন্থিসমূহের ক্ষীণতা, কিন্তু লসিকা গ্রন্থিগুলি বর্ধিত এবং রসসঞ্চয়যুক্ত নয়। অসাড়ে প্রদরস্রাব, সাদাটে, ঘন, অবিরত, সচরাচর প্রচুর, উহা ঋতুকালের প্রায় এক সপ্তাহ পূৰ্বে আরম্ভ হয়।
ইহা বিশেষ প্রকার ধাতুগত দুৰ্বলতার সহিত কণ্ঠনলীকে আক্রমণ করে; একপ্রকার পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা। সম্পূর্ণ স্বরনাশ হয় অথবা “স্বরভঙ্গ ও কর্কশ স্বর।” মৃদু চাপা স্বর। ধাতুগত্ দুৰ্বলতা এবং পক্ষাঘাত হইতে স্বরনাশ। সৰ্ব্বদা স্বরনলীতে অনুভূতি, যেন ধোঁয়া বা পিচ, গন্ধকের ধোঁয়া বা ধূলার ঘ্রাণ লইতেছে। স্বরভঙ্গের সহিত পুরাতন, শুষ্ক, কর্কশ, কুকুর ডাকের ন্যায় শব্দ বিশিষ্ট কাশি থাকে, তত কঠিন নহে, কিন্তু উহা প্রতি রাতেই দেখা দেয়। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের শ্বাসরোধকর কাশি। বলা হয় যেন “ফুসফুসের পক্ষাঘাত আসন্ন হইয়া পড়িয়াছে।” ইহা ঔষধটির সাধারণ প্রকৃতির সহিত বেশ মিলিয়া যায়। বক্ষ শ্লেষ্মায় পূর্ণ, কিন্তু সে উহা তুলিয়া ফেলিতে পারে না। কাশির সময় যে চেষ্টা করা হয়, তুমি দেখিবে যে, তাহাতে কোন স্থানে দুৰ্ব্বলতা আছে, শক্তির অভাব আছে। উহা প্রবল চেষ্টা নয়। রাত্রিকালীন কাশির সহিত হাঁপানির ন্যায় শ্বাসক্রিয়া।” কণ্ঠনালীতে ও গলনলীতে উপদাহ হইতে উদ্ৰিক্ত কাশি। ব্যারাইটী কাৰ্বে আর এক প্রকার কাশি আছে, উহাতে রোগী ক্রমাগত কাশিতে থাকে এবং যতক্ষণ না সে উপুড় হইয়া শোয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন উপশম পায় না; যতক্ষণ উপুড় হইয়া শুইয়া থাকে, ততক্ষণ সে কাশি মুক্ত থাকে। বাম পার্শ্বে শুইলে বা হৃৎস্পন্দনের কথা ভাবিলে, সামান্য পরিশ্রমেই হৃৎস্পন্দন আরম্ভ হয়, তৎসহ উদ্বেগ ও রক্তোচ্ছ্বাস থাকে এবং মাথায় প্রবল দপদপানি এবং দ্রুত নাড়ী দেখিতে পাওয়া যায়। হরিৎপান্ডুরোগগ্ৰস্তা বালিকাদের হৃৎস্পন্দন।
“পৃষ্ঠের পেশীগুলিতে টানভাব। ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকের গ্রন্থিগুলির স্ফীতি।” গ্রীবা গ্রন্থিগুলির স্ফীতি। পৃষ্ঠের উপর মেদময় অর্বুদ। একটি রোগী অনেকবার বলিয়াছিলেন—“ডাক্তার, আপনি কি আমার পৃষ্ঠের মেদময় অর্বুদ সারাইয়া দিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন?” কিন্তু সংসারে আকস্মিক ঘটনা ঘটে; আমি জানিতাম না যে, তাহার একটি অর্বুদ ছিল। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকালে এইভাবেই ব্যাপারগুলি উপস্থিত হয়। চিকিৎসক অৰ্ব্বুদটির জন্য ঔষধ ব্যবস্থা করেন নাই, কিন্তু সুযোগটি ছিল। তিনি ব্যবস্থাপত্রে অর্ব্বদটির সম্বন্ধে কিছুই চিন্তা করেন নাই, কিন্তু ধাতুদোষ সংশোধক ঔষধটি দিয়াছিলেন এবং কিছুদিন পরে অর্বুদটিও অদৃশ্য হইয়াছিল। তখন রোগীর মনে হয় যে ডাক্তার একটা আশ্চৰ্য্য কাৰ্য্য করিলেন। তিনি রোগীকে আরোগ্য করিয়া যে যশ এবং সুখ্যাতি পাইলেন, ঐ অর্বুদটি আরোগ্য করিয়া তাহা অপেক্ষা বেশী যশ ও সুখ্যাতি পাইলেন। যে ডাক্তার ঠিকমত ঔষধ ব্যবস্থা করেন, তিনি সমগ্র জীবনীশক্তিকে সুভাবে ফিরাইয়া আনেন। তিনি রোগীকে আরোগ্য করেন এবং রোগী প্রতিষ্ঠিত হইলে, তাহার শরীরও পুষ্ট হইতে থাকে, টিসুগুলি বাড়ী মেরামতের ন্যায় মেরামত হইতে থাকে, এবং অকেজো জিনিষগুলি পরিত্যক্ত হয়; তখন লোকে ভাবে যে, চিকিৎসক, একটা আশ্চর্য্য কিছু করিলেন। এইভাবে এই ঔষধটি অর্বুদ ও আঁচিল আরোগ্য করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর আঁচিল, পিঠের উপর, হাতের উপর আঁচিল।
ইহার বেদনা গেঁটেবাত ও বাতপ্রকৃতির; ঠান্ডা লাগিলে বাড়ে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাড়ে। পদদ্বয় পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা; কম্পন ও অসাড়তা। দুর্গন্ধ পদ-ঘৰ্ম্ম, উহাতে পদতল ক্ষয়িয়া যায়, পায়ের পাতায় ক্ষত, অবরুদ্ধ পদ-ঘর্ম। দাড়াইলে পায়ের পাতা কাঁপিতে থাকে, চলিতে গেলে টলমল করে। নিম্নাঙ্গে ছিন্নকর, আকর্ষণবৎ বেদনা। হাঁটুতে হঠাৎ তীব্র বেদনা।
অপর নাম – কার্বনেট অফ ব্যারাইটা [(Carbonate of Baryta) (BaCo2)]
ঔষধার্থে ব্যারাইটার বিচূর্ণ প্রস্তুত হয়।
ব্যারাইটা কাৰ্বের — মূলকথা
১। মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা, এই দুৰ্বলতা প্রধানতঃ জীবনের দুই প্রান্ত সীমায় (বাল্য ও বার্দ্ধক্যে) পরিলক্ষিত হয়। শিশু বাড়ে না; শিশুর প্রায়ই জড়তা, ক্ষীণতা ও অত্যধিক দুৰ্বলতা থাকে। বৃদ্ধদের শিশুর মত আচরণ ও চিন্তা, ফলে কাজ করবার ক্ষমতা হীনতা, চিন্তাশক্তিশূন্য ও স্মৃতিশক্তির বিলোপ।
২। ঠাণ্ডা লাগলেই টনসিল প্রদাহিত হয়, ফোলে ও পুঁজ হয়। পরিশেষে উহা পুরাতন বিবৃদ্ধিতে (hypertrophy) পরিণত হয়ে থাকে। গ্রন্থিগুলির স্ফীততা, উহাতে কোনও তরল পদার্থের প্রবেশ বা রস প্রসেস হয় ও উহার বিবৃদ্ধি, গ্রীবাগ্রন্থি, কর্ণমূল গ্রন্থি (parotids), সাবম্যাক্সিলারী গ্রন্থি (submaxiliary), কুঁচকি ও পেটের ভিতরে গ্রন্থিগুলি (lymphatic glands) বর্ধিত হয় ও কখনও কখনও পুঁজোৎপত্তি হয়।
৪। পায়ের পাতায় দুর্গন্ধ ঘাম, ওতে পায়ের আঙ্গুল ও পায়ের তলায় ঘা হয়; পায়ের ঘাম অবরুদ্ধ হয়ে গলায় রোগের উৎপত্তি।
৫। ঠাণ্ডা একেবারেই সহ্য হয় না।
ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব – একটি আলোচনা
১। ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব তথাকথিত গণ্ডমাল দোষনাশক (antisercrofulous) ঔষধগুলির মধ্যে একটি প্রধান ঔষধ। আমি (ডাঃ ন্যাশ) সালফার বিষয়ে গণ্ডমালা (scrofula) লিখবার সময় যা বলেছি, তা একবার দেখে নিতে হবে। ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব ও একটি ঔষধ, যার প্রধান লক্ষণ ক্যালকেরিয়া অষ্টের মত রোগীর ধাতু প্রকৃতিতেই থাকে।
বেঁটে শিশুদের রোগ, মন ও দেহদুৰ্বল, বাড়ে না, গ্রন্থিবৃদ্ধির প্রবণতা, মন ও দেহের উভয়েরই অসম্পূর্ণ পরিপুষ্টি। মনের দুর্বলতার ফলে জড়বুদ্ধি দেখা দিতে পারে। তারপর ঔষধটি আবার সমভাবে উপযোগী হয় শারীরিক ও মানসিক • দুৰ্বলতাযুক্ত বার্ধক্যে। রোগী দুৰ্বল ও কম্পমান, শিশুভাবাপন্ন নির্বোধ আচরণ। ইহা বিশেষভাবে উপযোগী হয় বৃদ্ধদের সন্ন্যাসরোগে বা উহার প্রবণতায়। এইসব রোগীর স্মৃতি বিলোপে ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব, এনাকার্ডিয়ামেব সমকক্ষ। এখন বাস্তবিক যদি এই সকল সত্য হয়, তবে জীবনের উভয়প্রান্তেই অর্থাৎ বাল্যকালে ও বার্ধক্যে ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব একটি পরমোপকারী ঔষধ। শিশুর বা বৃদ্ধের পুঁয়ে পাওয়া বা ম্যারাসমাস রোগেও এটি ব্যবহৃত হয়। এই রোগে সাইলিসিয়া, এব্রোটেনাম, নেট্রাম মিউরিয়েটিকাম, সালফার, ক্যালকেরিয়া ও আয়োডিন প্রযুক্ত হয়ে থাকে। এইসব ঔষধগুলিতে পেটের দিক অতিশয় বড় হয় এবং শরীরের অবশিষ্টাংশ শীর্ণ। তাছাড়া এগুলির প্রত্যেকটিতেই শিশুর রাক্ষুসে ক্ষুধা থাকে, সে পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে আহার করে অথচ তার শরীর শুকনো হয়ে যায়; সমীকরণ ক্রিয়া বা অ্যাসিমিলেশান (assimilation) ক্রিয়ার অসম্ভাব হেতু এরূপ ঘটে।
সাইলিসিয়া ও ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব কোন কোন বিষয়ে প্রবল সাদৃশ্য আছে। পায়ের দুর্গন্ধ ঘৰ্ম্ম, শরীরের অনুপাতে মাথা বড়, আর্দ্রকালে অসুখের উৎপত্তি ও মাথায় ঠাণ্ডার অতিরিক্ত অনুভূতি বা মাথায় ঠাণ্ডা সহ্য না করতে পারা -এই তিনটি লক্ষণ দু’টি ঔষধেই আছে। কিন্তু সাইলিসিয়া ক্যালকেরিয়া অষ্টের ন্যায় মাথায় প্রভূত ঘৰ্ম্ম জন্মে, ব্যারাইটায় মাথায় ঘাম থাকে না এবং সাইলিসিয়ায় ব্যারাইটার মত মনের দুর্বলতাও থাকে না, বরং বালকের স্বেচ্ছাচারিতা ও বিরুদ্ধচারিতা বা একগুঁয়েমি থাকে।
ব্যারাইটার সঙ্গে উল্লিখিত ঔষধগুলি ছাড়া অন্যান্য ঔষধের সাদৃশ্য এত বেশী যে, আমরা এখানে তাদের তুলনা করার চেষ্টা করলাম না; বরং এখানে ব্যারাইটার অন্যান্য বিশেষ ব্যবহারগুলি উল্লেখ করলাম।
২। গ্রন্থিমণ্ডলে ব্যারাইটার সাধারণ ক্রিয়া ও টনসিলে বিশেষ ক্রিয়া দর্শে। অল্পমাত্র সর্দি লাগলেই টনসিলের অতিশয় প্রদাহ, স্ফীততা ও পুঁজ জন্মে। সুতরাং পুরাতন টনসিল প্রদাহের রোগীদের পক্ষে এই ঔষধটি অত্যন্ত ফলপ্রদ। টনসিল আক্রমণে একমাত্রা এই ঔষধ ব্যবহারেই অনেক সময় প্রথম আক্রমণের উপক্রমেই উহা নিবারিত হয়ে যায় এবং দীর্ঘকাল পরে উচ্চক্রমে উহা ব্যবহার করলে উহার প্রবণতাও দূর হয়।
কিন্তু ল্যাকেসিস, লাইকোপোডিয়াম, ফাইটোলাক্কা ও অন্যান্য ঔষধের ন্যায় ইহাও সমস্ত লক্ষণানুসারেই নির্বাচিত হওয়া আবশ্যক। বাস্তবিক ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব যেমন টনসিল প্রদাহের তরুণ আক্রমণ নিবারণ করে, তেমনি উহা রোগীর ধাতুগত প্রবণতাও সংশোধন করতে পারে।
এর দ্বারা আমরা বৰ্দ্ধিত টনসিলযুক্ত শিশুদের পুরাতন কাশি আরোগ্য হওয়ার কথা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় পড়ি। এইক্ষেত্রে কাশির আরোগ্যপ্রাপ্তি স্পষ্টত নির্ভর করে সেই শক্তির উপর, যা পরীক্ষাকালে টনসিলের বৃদ্ধি উৎপন্ন করেছিল; কারণ এছাড়া অন্যক্ষেত্রে আমি একে কাশিতে উপযোগী ঔষধ হিসেবে কাজ করতে দেখিনি।
পায়ের পাতায় ঘৰ্ম্ম অবরুদ্ধ হওয়ার ফলে তরুণ বা পুরাতন যে কোনপ্রকার টনসিলাইটিসে ব্যারাইটা কাৰ্ব্ব ব্যবস্থয়ে, সাইলিসিয়া নহে। যদিও পায়ের ঘাম বিলুপ্তিজনিত অধিকাংশ রোগেই অন্যান্য ঔষধাপেক্ষা সাইলিসিয়াই বেশী প্রযুক্ত হয়, তথাপি গমধ্যের সহিত ব্যারাইটার যেরূপ ঘনিষ্ট সম্পর্ক সাইলিসিয়ায় সেরূপ নহে।
আমরা এখানেই ব্যারাইটার প্রসঙ্গ শেষ করব। কারণ যদিও ইহা একটি মহামূল্যবান ঔষধ, কিন্তু ইহার ক্রিয়াক্ষেত্র বিস্তৃত নয়। তবে এর সঙ্কীর্ণ অধিকারের মধ্যে ইহা বড়ই ফলপ্রদ ও নিশ্চিত ক্রিয়া দান করে।