Benz-ac | গ্যাঁটে বাত আক্রান্ত স্থান হঠাৎ পরিবর্তন করে হৃদপিন্ড আক্রমন করে, অথবা মূত্রের লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাত থাকে না। |
Benz-ac | রোগীর গায়ে মূত্রের গন্ধ, খড় পচা পানির মত গাঢ়বর্ণের মূত্র, পরিমাণে কম। |
Benz-ac | মূত্রে তীব্র গন্ধ, ঘোড়ার চোনার মত তীব্র গন্ধ, রোগী নিজে এ গন্ধ টের পায়না। |
Benz-ac | সাবানের ফেনার মত প্রচুর সাদা মল, মলে মূত্রের মত ঝাঁঝাল গন্ধ। |
Benz-ac | অধিকাংশ রোগ বাম দিকে আরম্ভ হয় কিন্ত সময় সময় ডানদিকে আসে। |
Benz-ac | ক্যালকেরিয়া কার্বের মত পা ঠান্ডা ও ভিজা ভিজা। |
গণোরিয়া ও সিফিলিস গ্রস্ত রোগীর গেঁটে বাত ও বাতগ্রস্ত অবস্থা। গিঁটবাতে এ্যাসিড জমে ঢিবলীমত ফুলে ওঠে। বাতের ব্যথা চলেফিরে বেড়ায়, সমস্ত সন্ধিই আক্রান্ত হয় বিশেষতঃ হাঁটু দুটি। চলতে গেলে হাঁটুতে কটকট করে শব্দ হয়। গিটগুলি শক্ত হয়ে ফুলে যায় (বার্বেরিস, লিথি-কা, লাইসিন)।
প্রস্রাবে গাঢ় বাদামি রঙ ও গন্ধ ভীষণ তীব্র ।
দুর্বল শিশুদের রাত্রে বিছানায় প্রস্রাব; বৃদ্ধ, যাদের প্রষ্টেট গ্রন্থি বাড়ে তাদের ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব। দুর্গন্ধ থাকে ।মূত্র পরীক্ষায় ইউরিক এ্যাসিডের বৃদ্ধি দেখা যায় ।
গণোরিয়া স্রাব বন্ধ হয়ে মূত্রপথে স্রাব ।
শিশুদের উদরাময় – মল সাদা, ভীষণ দুর্গন্ধ, দুর্বল হয়ে পড়ে। তরল মল, মলপাত্রের মধ্য দিয়ে মল গড়িয়ে পড়ে (পডো); প্রস্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ গাঢ় লালবর্ণ ।
কাশিঁ – সবুজ শ্লেষ্মা ওঠে (নেট্রাম-সা); অত্যন্ত ক্লান্তিভাব ও অবসন্নতা ।
বেদনা – ছিঁড়ে ফেলা মত, যেন সূঁচ ফোটানো হয়েছে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে, বড় বড় সন্ধিগুলিতে; সন্ধিগুলি লাল হয় ও ফুলে যায়; গিঁটবেদনা রাতে বাড়ে ।
সম্বন্ধ — নাইট্রেট অব পটাশ প্রয়োগে কাজ না হলে বিশেষতঃ শয্যামূত্র রোগে কোপেইবা, নাইটার, ফেরাম ও থুজার সমগুণ বাত বেদনায় বার্বেরিস, লিথিয়ম- এর সমগুণ। বাতরোগে কলচিকম ব্যর্থ হলে কোপেইবার অপব্যবহারে গনোরিয়া স্রাব বন্ধ হলে ব্যবহার্য ।
বিরুদ্ধভাব – মদের সাথে, যা খেলে মূত্র সম্বন্ধীয় ও গিটবাত এবং সাধারণ বাতের উপসর্গ বাড়ে ।
শক্তি – ৩, ৬, ২০০ হতে উচ্চশক্তি ।
গণোরিয়া — ছোঁয়াচে রোগ, যৌনাঙ্গের মিউকাস মেমব্রেনের প্রদাহ হয়ে সাব। ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই হতে পারে । এই রোগে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন—হৃৎপিন্ড, চোখে কনজাংকটিভা, মুখের ভিতর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, রেক্টাম ও সন্ধিগুলো আক্রান্ত হতে পারে। মেয়েদের মূত্রথলী, যোনিও, যৌনাঙ্গের গ্ল্যাভ, ভগদ্বার, জরায়ু, বার্থোলীন গ্ল্যান্ড বা ফ্যালোপিয়ন টিউব আক্রান্ত হতে পারে ।
লক্ষণ – পুরুষের লিঙ্গ হতে পুঁজ রক্ত মেশানো স্রাব, মূত্রথলীতে প্রদাহ, প্রষ্টেট গ্ল্যান্ড আক্রান্ত হতে পারে । প্রস্রাব ধীরে ধীরে, কষ্টকর ও বেদনাদায়ক। কখনও লিঙ্গ বেদনাদায়ক শক্ত হয়ে থাকে। মেয়েদের যোনিদ্বার হতে ঐরূপ : স্রাব, যন্ত্রণাপূর্ণ, বারে বারে প্রস্রাব। তলপেটে যন্ত্রণা, বার্থোলিন গ্ল্যান্ডের স্থানে। ছোয়া লাগান যায় না। পেলভিক বা বস্তি দেশে তরুণ প্রদাহ।
উত্তেজক কারণ – নেইসেরিয়া গণোরি নামক গণোকক্কাস জীবাণুর সংক্রমন । রক্তের সেরো কালচারে ধরা পড়ে ।
রোগ পুরানো হলে প্রষ্টেটাইটিস, এপিডিডাইমাইটিস, অৰ্কাইটিস, সিষ্টাইটিস, আর্থাইটিস্ ও এন্ডোকার্ডাইটিস হতে পারে ।
এই ঔষধের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য প্রস্রাবের রঙ ও গন্ধের ভিতর পাওয়া যায়। বিপাক ক্রিয়ার উপর এই ঔষধের সুস্পষ্ট কাজ আছে। ইউরিক অ্যাসিড ধাতুদোষগ্রস্ত লক্ষণ এই ঔষধ তৈরী করতে পারে আবার আরোগ্যও করতে পারে, তৎসহ প্রস্রাবের রঙ খুব গাঢ় ও তীব্র দূর্গন্ধযুক্ত এবং গেঁটে বাতের মত লক্ষণ। কিডনীর কার্যহীনতা। শিশু সর্বদা কোলে থাকতে চায় কিছুতেই শুয়ে থাকতে চায় না। যন্ত্রণা হঠাৎ করে স্থান পরিবর্তন করে। অ্যান্টিসাইকোটিক। গেঁটে বাত ও হাঁপানী রোগগ্রস্ত।
মন – অতীত কালে ঘটা অসুখীকর ঘটনা নিয়ে মনের ভিতর আলোড়ন। লেখার সময় মাঝে মাঝে শব্দ বাদ পড়ে যায়। হতাশা।
মাথা — মাথাঘোরা, কোন একদিকে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা। রগের ধমনীতে দপদপানি, এর ফলে কানের চারিপাশে ফুলে উঠে। ঢোক গেলার সময় কানের ভিতর শব্দ। জিহ্বায় ক্ষত। কানের পিছনের অংশে স্ফীতি। (ক্যাপসিকাম)। কপালে ঠাণ্ডা ঘাম। মুখগহ্বরে খোচামারার মত, সংকোচনবৎ বেদনা,নীলচেবর্ণযুক্ত ও মাড়ী থেকে রক্তস্রাব। সিবেশাস গ্রন্থির অবুদ।
নাক – নাকের ভেদকে চুলকানি। নাকের অস্থিতে বেদনা।
মুখমণ্ডল – তামাটে বর্ণের দাগ। লাল, তৎসহ ছোট ছোট ফোস্কা। গালে লালবর্ণের গোলাকার আভা।
পাকস্থলী – খাবার সময় ঘাম, পাকস্থলীতে চাপবোধ, পাকস্থলীতে মণ্ডের ন্যায় দলা থাকার অনুভূতি।
উদর – নাভীর চারিপাশে কেটে ফেলার মত বেদনা। যকৃৎ স্থানে সূঁচ ফোটার মত বেদনা।
সরলান্ত্র – উঁচফোটার মত ও সঙ্কোচনবৎ অনুভূতি। সরলান্ত্রে কুঞ্চিত সংকোচনের অনুভূতি। মলদ্বারের চারিপাশে চুলকানি ও জলপূর্ণ উঁচু অংশ বিশেষ।
মল – ফ্যানা ফ্যানা, দূর্গন্ধযুক্ত, তরল, হাল্কাবর্ণের, অনেকটা সাবানের ফ্যানার মত, সরলান্ত্রের ভিতর বায়ু চলাচল।
প্রস্রাব — বিকট গন্ধ, পরিবর্তনশীল রঙ, বাদামী, আম্লিক, অসাড়ে প্রস্রাব, ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব, বৃদ্ধদের দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব। প্রস্রাবে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমানের বৃদ্ধি। গণোরিয়া রোগ চাপা পড়ার ফলে প্রস্রাবথলির প্রদাহ। প্রস্রাব থলির প্রদাহ।
শ্বাস-প্রশ্বাস – সকালে স্বরভঙ্গ। হাঁপানীর মত কাশি, রাত্রে বৃদ্ধি, ডানদিকে শুয়ে থাকলে। বুক অত্যন্ত স্পর্শকাতর। হৃদপিণ্ড স্থানে বেদনা। সবুজ রঙের শ্লেষ্মা।
পিঠ – মেরুদণ্ডে চাপবোধ। ত্রিকাস্থি স্থানে শীতল অনুভূতি। কিডনী স্থানে অল্প অল্প। বেদনা, মদপানে বৃদ্ধি।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – চলার সময় সন্ধিগুলিতে কটকট শব্দ। ছিড়ে ফেলার মত তৎসহ উঁচ ফোঁটার মত বেদনা। পায়ের গোড়ালির পেশী বন্ধনীর বেদনা। সন্ধিবাত, অসিগুটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। সন্থিস্থানে গেঁটে বাতজনিত কারণে সঞ্চয়। কজির স্ফীতি। হাঁটুতে যন্ত্রণা ও স্ফীতি। পায়ের বুড়ো আহগুলের কড়া। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে ছিড়ে ফেলার মত বেদনা।
জ্বর — হাতগুলি, পাগুলি, পিঠ ও হাঁটু দুটি ঠাণ্ডা। শীত ভাব, ঠাণ্ডা ঘাম। জেগে উঠলে শরীরের ভিতরে গরম অনুভূতি।
চামড়া – লালচে ছোপ। ছোট ছোট স্থানে চুলকানি।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, মুক্তবাতাসে, গায়ের ঢাকা খুলে ফেলে বৃদ্ধি।
সম্বন্ধ – গেঁটে বাতে কলচিকামের ব্যর্থ হওয়ার পরে উপযোগী, গণোরিয়া রোগে। কোপাইভার পরে উপযোগী।
তুলনীয় – নাইট্রিক অ্যাসিড, এমন বেজোয়িকাম, স্যাবাইনা, ট্রোপিয়োলাম (দূর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব)।
দোষঘ্ন – কোপাইভা।
প্রতিবন্ধক – মদ।
শক্তি – ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ শক্তি।
যখন আমরা কোন ঔষধের প্রকৃতিতে, কতকগুলি সুস্পষ্ট লক্ষণের সমষ্টি সাহায্যে পরিস্ফুট, মনুষ্যদেহের বিশেষ প্রকার অবস্থা ও পরিস্থিতি লক্ষ্য করি, তখন আমরা বুঝি যে মনুষ্যসমাজে ঐরূপ রোগজ্ঞাপক অবস্থা বর্তমান আছে। যদি মানুষের শারীরবিধানের ঐরূপ রোগজ্ঞাপক অবস্থা (সোরাদোষ) বর্তমান না থাকিয়া উদ্দীপ্ত না হইত, তাহা হইলে মানুষ কখনই নিজে নিজে ঐরূপ রুগ্ন অবস্থা সৃষ্টি করিতে পারিত না। যাহা সমগ্র মনুষ্যজাতির মধ্যে আছে, যাহা ব্যক্তিবিশেষের মধ্যেও আছে, তাহাই বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে উদ্দীপ্ত হইয়া উঠে, এবং যখন আমরা কোন ঔষধে ঐরূপ রুগ্ন অবস্থা দেখি, তখন বুঝিতে পারি যে, সমগ্র মনুষ্যজাতির মধ্যেই উহার কিছুটা থাকা সম্ভব। জগতে সব কিছুই এমনভাবে গঠিত যে উহা কাজে আসিতে পারে। মনুষ্যজাতির মধ্যেও এমন রোগ থাকিতে পারে যে, তাহার ঔষধ আমরা আজিও। জানিতে পারি নাই। আমরা দেখি যে কতকগুলি বিশেষ লক্ষণের সমষ্টি মাঝে মাঝেই ঘুরিয়া আসিতে থাকে এবং তখন বুঝি যে, ঐগুলি শারীরবিধানের রোগজ্ঞাপক অবস্থার প্রতিনিধি সদৃশ, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কোন মেটিরিয়া মেডিকাতেই উহাদের অনুবর্ণনা পাই নাই। ঔষধগুলির মধ্যেই আমরা মনুষ্যজাতির রোগজ অবস্থার প্রতিলিপি পাইতে পারি।
তারপর এই ঔষধে এমন একটি অবস্থা ও পরিস্থিতি আছে যাহাকে সময়ে সময়ে গেঁটেবাত ধাতু, মূত্রে ইউরিয়া বা লিথিক এসিডযুক্ত ধাতু বলা হয়; আর ঐ অবস্থা এতই অবিচলিত থাকে যে, ঐরূপ রোগীর চিকিৎসা করা বড়ই কঠিন হইয়া উঠে। ইহা সোরাদোষের এক বিশেষ বিকাশ। এই সকল রোগী মূত্রপিন্ডের অল্পাধিক অনিয়মিত কাৰ্য্য হইতে ভুগে, কখন কখন মূত্র অল্প হইয়া যায় এবং তাহারা শারীরিক রোগ হইতে ভুগে; তারপর আবার যখন মূত্রপাত প্রচুর হয়, তখন তাহাদের শারীরিক রোগের উপশম হয়। তাহাদের বাতরোগ দেখা দেয়, সন্ধিগুলিতে বেদনা দেখা দিয়া গেঁটেবাত ধাতু প্রকাশ পায় এবং তারপর প্রচুর মূত্রপাত হইতে থাকিলে এবং ঐ মূত্রে প্রচুর তলানি থাকিলে তাহাদের উপশম হয়। তারপর মূত্র অল্প হউক আর অধিক হউক, মূত্রের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়া গেলেও, তাহাদের নানারূপ বেদনা দেখা দেয়; ঐরূপে তাহাদের রোগ বারবার কমবেশী হইতে থাকে। এক্ষণে তরুণ চিকিৎসক সময়ে সময়ে দেখিতে পাইবেন যে, তাঁহার রোগী প্রচুর পরিমাণে ইউরিক এসিড ত্যাগ করিতেছে, তাহাতে মরিচের গুঁড়ার ন্যায় তলানি পড়িতেছে, তখন তিনি ভাবিবেন ঐ তলানি বন্ধ করিতে হইবে; তাহার লক্ষ্য হইবে ঐ বিশেষ জিনিষটি রোধ করা। কিন্তু রোগী, যতক্ষণ ঐ তলানি থাকিবে, ততক্ষণই বেশ ভাল থাকিবে। উহা নিবারণ করা,—চৰ্ম্মের উদ্ভেদ লোপ করা অথবা অন্য কোন রোগের বিকাশকে চাপা পড়াইয়া দেওয়ার তুল্য।
এই ঔষধ-জ্ঞাপক রোগে, সর্বপ্রথম জিনিষ দেখা যাইবে যে, ইহার মূত্র অত্যন্ত তীব্র গন্ধ বিশিষ্ট, মূত্র অত্যন্ত ঝাঁঝাল, আর সময়ে সময়ে উহা এত তীব্র হয় যে, উহাতে হিপিউরিক এসিডের ন্যায় গন্ধ বাহির হয়, এইজন্য বলা হয় যে, মূত্র অশ্বমূত্রের ন্যায় তীব্র গন্ধবিশিষ্ট। এই ঔষধে গন্ধ হিপিউরিক এসিডের গন্ধের কাছাকাছি যায়।
তারপর, বেঞ্জয়িক এসিডের রোগসমূহ পরিবর্তনশীল এবং আমরা জানি যে, তাহারা কোন পরিবর্তনশীল। যখন প্রচুর মূত্রপাত হয় এবং ঐ সঙ্গে যথেষ্ট ইউরিক এসিড নির্গত হয় এবং মূত্রে যথেষ্ট তলানি থাকে, তখন রোগী সৰ্ব্বাপেক্ষা ভাল থাকে; কিন্তু যখন মূত্র অল্প হয়, অথবা মূত্রের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়া যায়, তখন রোগী পৃষ্ঠবেদনা ও সন্ধিবেদনায় ভুগে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে পীড়িত হয়, ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহের এবং বাতাসে অনুভূতিসম্পন্ন হয়। তারপর আবার মূত্রস্রাব বৰ্দ্ধিত হয়; ইহা একপ্রকার পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হয়, একবার হালকা মূত্র, অপর বার ভারি মূত্র, ভারি মূত্রেই রোগী স্বস্তিবোধ করে। তারপর একপ্রকার রোগ দেখা যায়, উহাতে মূত্র তীব্র ও ঝাঁঝাল গন্ধযুক্ত, ইহা সচরাচর শিশুদেরই দেখা যায়। ইহা সত্যই আশ্চৰ্যজনক যে, শিশুর শৈশবকালেই ইউরিক এসিড ধাতুর, পূৰ্ব্বসূচনা প্রকাশ পায়। মাতা সচরাচর উহাকে অত্যন্ত গন্ধযুক্ত মূত্র বলেন। উহা হইতে তীব্র গন্ধ বাহির হয়, উহা পচা মূত্রের গন্ধ নহে অথবা দুর্গন্ধ মূত্রের গন্ধ নহে, কিন্তু তীব্রগন্ধ মূত্র। ইহা বহুবার নিদ্রাকালে অনিচ্ছায় শয্যামূত্র রোগ আরোগ্য করিয়াছে, ঐসব ক্ষেত্রে কয়েকবার মূত্রত্যাগে বিছানা ভিজিয়া যাওয়ার পর উহা পরিষ্কার করা অসাধ্য হইয়া পড়িয়াছিল। তুমি ঘরে প্রবেশ করিবার সাথে সাথেই ঐ গন্ধ পাইবে, শিশুর দেহ হইতে মূত্রের গন্ধ, তীব্র মূত্রের গন্ধ বাহির হইবে। সারা বাড়ীতে মূত্রের ন্যায় গন্ধ ছাড়িবে। এইরূপ দুই তিনটি শিশু যদি রাত্রে বিছানায় মূত্রত্যাগ করে তাহা হইলে গন্ধ এতই তীব্র হইবে যে, তাহা হইলে গন্ধ এতই তীব্র হইবে যে, তাহা হইতেই অবস্থাটি তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারা যাইবে।
আর এই ঔষধটির পুনঃপরীক্ষা প্রয়োজন; ইহার বিশেষ লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয় নাই, কিন্তু ইহার প্রকৃতি জানা গিয়াছে। মূত্রের এইরূপ প্রকৃতিবিশিষ্ট কতকগুলি ঔষধ আছে, কিন্তু ইহাই হয়ত অপর যেকোনটির সমান তীব্র গন্ধ বিশিষ্ট। অবশ্য, এই ঔষধ ঐরূপ সকল রোগীর পক্ষেই উপযোগী নহে, কারণ ইহা সকলেরই বিশেষ লক্ষণের সদৃশ হয় না; কিন্তু ইহার যে প্রকৃতি ও সাধারণ লক্ষণ আছে, তাহা রোগীদেহে অন্য সবকিছু পূর্বেই পাওয়া যায় এবং কখন বিশেষ। লক্ষণগুলিরও মিল হয়, তখন ইহা আশ্চর্য্য পরিবর্তন সাধন করে।
ইহার কয়েকটি মানসিক লক্ষণ আছে। “সে অস্বস্তিকর বিষয় লইয়া চিন্তা করে, যদি সে কোন বিকৃত ব্যক্তিকে দেখে তাহা হইলে কাপিতে থাকে। দীর্ঘকালব্যাপী জাগরণের সহিত পৰ্য্যায়ক্রমে প্রগাঢ় নিদ্রা। জাগরণের সময় তাহার রাত্রিকালে যতরূপ অস্বস্তিকর বিষয় মনে পড়ে, তৎসম্বন্ধে ভাবিতে থাকে। এই অবস্থার সহিত পর্যায়ক্রমে দেখা দেয় সপ্তাহব্যাপী জড়-নিদ্রাপূর্ণ রাত্রি এবং মূত্রের অবস্থার হ্রাস-বৃদ্ধির সহিত এই অবস্থারও কমবেশী হয়। বিষাদ।” “ঘৰ্ম্মকালে উদ্বেগ।” “শিশুর খিটখিটে স্বভাব।”
অনেক প্রকার শিরঃপীড়া আছে, উহা মূত্রবিষজাত রক্তদুষ্টিজ্ঞাপক, উহা অনেক স্থানেই দেখা দেয় এবং অনেক বিশেষ লক্ষণ থাকে। “ঘাড়ের পশ্চাতে ও অনুমস্তিষ্কে ভীতিকর যন্ত্রণা।” ইহা ভালভাবেই বর্ণনা করা হইয়াছে যে, মূত্রবিষজাত শিরঃপীড়া, বাতজনিত শিরঃপীড়ার অনুরূপ হইয়া থাকে। “ভক্তি ও দৃঢ়তাসূচক যন্ত্র যেস্থানে অবস্থিত আছে, তথায় যাতনা ও উত্তাপ।” “শীর্ষদেশে ছিন্নকর বেদনা।” শিরঃপীড়া বহু প্রকারের আছে, এই ঔষধটিতে মৃদু কামড়ানির ন্যায় ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকে শিরঃপীড়া আছে, উহা আবহাওয়ার পরিবর্তনে রাত্রিকালে উপস্থিত হয়। সন্ধিস্থানে কিছুকাল বেদনা থাকার পর মস্তিষ্কের তলদেশে বেদনা, ঐ সময়ে রোগী সামান্যমাত্র মূত্রত্যাগ করে। প্রত্যেকবার ঠান্ডা লাগিলেই, মূত্র কমিয়া যায় এবং তাহার মস্তকে, বিশেষতঃ মস্তকের পশ্চাতে, মৃদু কনকনানি ও বেদনা উপস্থিত হয়।
ঘ্রাণশক্তির বিপর্যয়। ঘ্রাণশক্তি কমিয়া যায় ।” “নাসিকার অস্থিতে বেদনা হয়।”
এই ঔষধে আর এক প্রকার রোগান্তরপ্রাপ্তি ঘটে, দেহের সমস্ত গেঁটেবাত-লক্ষণ চলিয়া গিয়া জিহ্বার প্রদাহ উপস্থিত হয়। ঠান্ডা লাগায়, ঝড়যুক্ত প্রদাহ উপস্থিত হয়। ঠান্ডা লাগায়, ঝড়যুক্ত আবহাওয়ায় অকস্মাৎ সন্ধিস্থলের বেদনা অন্তর্হিত হয় এবং অকস্মাৎ জিহ্বার স্ফীতি উপস্থিত হয়। মার্কারিতেও এই অবস্থা আছে। “গভীর ফাটা অথবা উপরিভাগে ছাতাপড়া জিহ্বায় বিস্তৃত ক্ষত।” এই একই কারণে এক বিশেষ প্রকারের গলক্ষত জন্মে। হঠাৎ মূত্ররোধ অথবা মূত্রাল্পতা, মূত্র অল্প, ঘোরাল ও ঝাঁঝাল ঘোড়ার মূত্রের ন্যায় মূত্র (নাইট্রিক এসিড) দেখা দেয় এবং ইনসিল ও গলার স্ফীতি ও তরুণ প্রদাহ উপস্থিত হয়। ইহা রোগান্তরপ্রাপ্তির আর একটি উদাহরণ। একটি লোককে ধর, সে সন্ধিগুলিতে অল্পবিস্তর বাতজ বেদনা লইয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে, তাহার ঠান্ডা লাগিল এবং সমস্ত উপসর্গ চলিয়া গেল, কিন্তু পরদিনই সে জিহ্বার প্রদাহ অথবা গলক্ষত অথবা পাকস্থলীর প্রদাহে আক্রান্ত হইয়া পড়িল, এবং যাহা কিছু খাইল সমস্ত বমি করিয়া ফেলিতে লাগিল। এইক্ষেত্রে গেঁটেবাত রোগটি অন্য স্থানে সরিয়া গেল, ইহা পাকস্থলীতে গেল এবং এখন বেঞ্জয়িক এসিড, এন্টিম ক্রুড’ অথবা ‘স্যাঙ্গুইনেরিয়া’ সম্ভবতঃ উপযোগী হইবে। যদি উহা গলায় সরিয়া যায় অথবা যদি তারপর জিহ্বা ফুলিয়া উঠে, তাহা হইলে ‘মার্কারি ও বেঞ্জয়িক এসিড চিন্তনীয় হইবে। যখন এই গেঁটেবাত অবস্থা পাকস্থলীতে যায়, তখন এই ঔষধ প্রয়োগের জন্য এই ঔষধের প্রকৃতিতে যে যে লক্ষণ আছে তাহা থাকা চাই। এই ঔষধে আমরা পাই “বিতৃষ্ণা পাকস্থলীতে অস্বস্তি”, গলার অবরোধের সহিত বমি বমিভাব, লবণাক্ত পদার্থ বমন, তিক্ত বমন। যখন আমরা পাকস্থলীর পীড়ার জন্য বেঞ্জয়িক এসিডের চিন্তা করিব, তখনই আমরা মনে রাখিব ইহার সম্পূর্ণ প্রকৃতিটি কিরূপ, ইহার রোগগুলি উপস্থিত হয় এবং বেঞ্জয়িক এসিড রোগীর চরিত্রগত লক্ষণগুলি কি? কেবলমাত্র পাকস্থলীর লক্ষণ হইতে আমরা ইহাকে পৃথক করিয়া লইতে পারিব না, আমাদিগকে উহার সহিত ঔষধের প্রকৃতিটি ধরিতে হইবে।
ইহাতে যকৃতের নানা উপদ্রব আছে এবং অনেকগুলি যকৃৎ-লক্ষণ আছে। অন্ত্র, মল, সরলান্ত্র, মলদ্বার, মূত্রযন্ত্রাদি সম্বন্ধে ইহাতে বহু লক্ষণ আছে। আমি উহাদের মধ্যে যেগুলি বিশিষ্ট প্রকৃতির, সেইগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিব, কিন্তু তোমরা ইহার একস্থান হইতে অন্যস্থানে সরিয়া যাওয়া রোগান্তরপ্রাপ্তি স্বভাব, ইহার উপসর্গগুলির স্থান পরিবর্তনশীলতার কথা ও ঐ সঙ্গে এই লক্ষণগুলি মনে রাখিবে। “মল প্রচুর জলবৎ।” এই কথা গ্রীষ্মকালীন উদরাময় সম্বন্ধে সত্য, যাহা হঠাৎ উপস্থিত হয়। “অত্যন্ত দুর্গন্ধ” সাবানের ফেনাযুক্ত জলের মত সাদা মল এরূপ একটি প্রবল লক্ষণ যে, গেঁটেবাতযুক্ত ধাতু বর্তমান না থাকিলেও, ঔষধটি ব্যর্থ হয় না। “মল অত্যন্ত দুর্গন্ধ, সমস্ত বাড়ীটিকে গন্ধময় করিয়া ফেলে।” “পচা গন্ধবিশিষ্ট, রক্তময়”, “জলের মত হাল্কা বর্ণের অতি দুর্গন্ধ মল শিশুদিগের। সুতরাং আমরা এই ধারণা পাইলাম যে, মল সাদা, প্রথম প্রথম উহা সাবানের ফেনার ন্যায় ফেনাযুক্ত জলের ন্যায়, পরে সাবানের ন্যায় চেহারা বদলাইয়া গিয়া উহা সাদা থাকিয়া যায়। যখন ফিকে রঙবিশিষ্ট মল নির্গত হয়, তখন সচরাচর যে কয়টি ঔষধে ঐরূপ অবস্থা উৎপন্ন করে, তাহা মনে রাখা ভাল এবং লক্ষ্য করা উচিত যে, উহা সাবানের ফেনাযুক্ত জলের ন্যায় অথবা বায়ুপূর্ণ বুদবুদে পূর্ণ কিনা। “শিশুদের উদরাময়।” দেহে মূত্রের ন্যায় গন্ধ, বিশেষতঃ মূত্র ঐ অদ্ভুতভাবে তীব্র, ঝাঁঝাল গন্ধ। “গুহ্যদ্বারের চারিদিকে সামান্য উঁচু আঁচিলের ন্যায় গোল গোল উদ্ভেদ।” মূত্রযন্ত্র সংক্রান্ত লক্ষণ এত অধিক যে, পড়িয়া শেষ করা কষ্ট। দুর্গন্ধ মূত্র। মূত্রের গন্ধে বমি আসে। মূত্র হাইড্রোক্লোরিক এসিডে গাজিয়া উঠে।” “গন্ধ সময়ে সময়ে এমোনিয়ার ন্যায় ঝাঁঝাল”—এই কথাগুলি দ্বারা উহার গন্ধের তীব্রতা প্রকাশ করার চেষ্টা করা হইতেছে। “মূত্র ঘোর বাদামিবর্ণ।” সত্য বটে যে, স্বাভাবিক মূত্রও কিছুক্ষণ থাকিলে এক প্রকার দুর্গন্ধবিশিষ্ট হয়, কিন্তু এই ঔষধে সদ্যপতিত মূত্রও অত্যন্ত তীব্র গন্ধবিশিষ্ট বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। মূত্র শ্লেষ্মা ও পুঁজ থাকে। “মূত্রের অবস্থা রোগজ্ঞাপক।” “মূত্রে ইউরিক এসিড থাকে।” পাঠ্যপুস্তকে উহা হিপিউরিক এসিড বলা হয়, কিন্তু ঐরূপ অবস্থা কদাচিৎ দেখা যায়। “বাদামি মূত্রে টক গন্ধ ছাড়ে।” পুনঃ পুনঃ মূত্রস্থলী খালি করিবার চেষ্টা।” “মূত্রপিন্ডের শূলব্যথা।” “মূত্র ঘোরাল বর্ণ, উহার গন্ধ খুব বাড়িয়া উঠে।” “যকৃতের গেঁটেবাত রোগ, বাতরোগ, মূত্রপিন্ডশূল; ইহা গণোরিয়ার পরবর্তী এরূপ অবস্থা আরোগ্য করিয়াছে, কিন্তু ইহা বা একটা গণোরিয়ার ঔষধ হয় না। যখন বাত অবস্থা এবং এই সকল লক্ষণ বর্তমান থাকে, তখন মূত্রপিন্ডে অল্পবিস্তর বেদনা থাকে।” “পৃষ্ঠদেশে ক্ষতবৎ বেদনা, মূত্রপিন্ডে জ্বালা।”“দুর্গন্ধ মূত্রসহ জরায়ু নির্গমন।”“শিশুদিগের মূত্রারোধ।”
“প্রদাহযুক্ত বাতরোগের সহিত হাঁপানি।” “কাশির পরে সবুজ গয়ের উঠে।” এই সকল বাতরোগে সচরাচর যে যন্ত্রটি আক্রান্ত হয়, তাহা হৃৎপিন্ড। বাতরোগ বাহিরের অঙ্গগুলি ত্যাগ করিলে, খুব সম্ভবতঃ হৃৎপিন্ডের ন্যায় অপর কোন যন্ত্র তত বেশী আক্রান্ত হয়, তাহা হৃৎপিন্ড । বাতরোগ বাহিরের অঙ্গগুলি ত্যাগ করিলে, খুব সম্ভবতঃ হৃৎপিন্ডের ন্যায় অপর কোন যন্ত্র তত বেশী আক্রান্ত হয় না। হৃৎপিন্ডে যন্ত্রণা। সুতরাং এইরূপ ধাতুদোষে, যাহাতে তীব্রগন্ধ মূত্র এবং গেঁটেবাত বৰ্তমান থাকে, তাহাতে আমরা হৃৎপিন্ডের আক্রমণ আশা করিতে পারি। যন্ত্রণা অবিরত স্থান পরিবর্তন করে।” “হৎপিন্ডের স্পন্দন।” অবশ্য এক্ষেত্রে বাত হৃৎপিন্ডকে আক্রমণ করিতেছে। “হৃৎপিন্ডের প্রবল স্পন্দনের সহিত মধ্যরাত্রির পর জাগিয়া উঠে।” এক মুহূর্ত চিন্তা কর এবং তোমরা দেখিতে পাইবে যে, কিরূপ রোগীক্ষেত্রে তোমাদের বেঞ্জয়িক এসিডের প্রয়োজন হইবে। তোমাদের সঙ্গে সঙ্গেই মনে আসিবে যে, ঔষধের ধাতুতে, বাত-লক্ষণের সহিত হৃৎ-লক্ষণ, শ্বাসকৃচ্ছ্রতা, হৃৎপিন্ডে বেদনা থাকিবে। “সে নিদ্রা যাইতে পারে না। এই সঙ্গে চিন্তা কর যে, ইহার রোগীর নিদ্রার সহিত পৰ্য্যায়ক্রমে সুনিদ্রা থাকে; চিন্তা কর, ইহার মূত্রের তীব্র গন্ধ, মনে কর, ইহার উপসর্গসমূহের অনিয়মিত প্রকৃতির বৃদ্ধি ও উপশম। “হৃৎস্পন্দন রাত্রিকালে বাড়ে।” “হাতের পায়ে বাতজ বেদনা দেখা দিলে হৃৎ-লক্ষণের উপশম হয়। এক্ষেত্রে আমরা উপশম পাই, কারণ যন্ত্রণা হাত-পায়ে সরিয়া গিয়া হৃৎপিন্ডকে মুক্ত দেয়। বেঞ্জয়িক এসিডে মূত্রের পরিমাণ প্রচুর হইলে, অথবা বাতরোগ হাত-পায়ে, হাতের আঙ্গুলে, এবং হাঁটুতে, বিশেষতঃ হাঁটুতে ফিরিয়া গেলে, হৃৎপিন্ডের উপশম হয়। বাতরোগ একবার হাতপায়ে, অপরবার হৃৎপিন্ডে প্রকাশ পায়। হাত-পা হইতে বাতরোগ বহুকাল পূৰ্ব্বে চলিয়া গিয়াছে। আর সেই অবধি হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হইয়াছে—এরূপ রোগীকে এই ঔষধ আরোগ্য করিয়াছে। বেঞ্জয়িক এসিড প্রয়োগ করার পর হাত-পাগুলি যন্ত্রণাপূর্ণ হইয়া উঠা এবং মূত্র প্রচুর হওয়া শুভ লক্ষণ। মূত্র অবাধ নির্গত হয়, ঘনগর্ভ পদার্থ বর্ধিত হয়, মূত্ৰ পূৰ্ব্বে হাল্কা ছিল, কিন্তু এখন ভারি হইয়া উঠে। “কঠিন দ্রুত নাড়ী।”
হস্ত-পদাদি বাতজনিত রোগে পূর্ণ হয়। “নিম্ন অঙ্গের দুর্বলতা।” “হাঁটুর স্ফীতি।” এই ঔষধে সকল প্রকার গেঁটেবাত রোগ আছে। গেঁটেবাতজনিত বাত-গন্ড।” “সন্ধিস্থানে ঢিবলি। পুরাতন গেঁটেবাত ধাতুতে বেঞ্জয়িক এসিড প্রায়শঃই একটি সুন্দর উপশমদায়ক ঔষধ; রোগীরা হাতের আঙ্গুলের যন্ত্রণা এবং সন্ধিস্থানের ঢিবলিগুলি উপশম চায়। হাতের আঙ্গুলগুলি ফাঁটিয়া যায় ও কদাকার এবং যন্ত্রণাপূর্ণ হয়। কিন্তু প্রায়ই যন্ত্রণার উপশম হয়, উহা অন্য অঙ্গে সরিয়া যায়। যে ঔষধগুলিতে আভ্যন্তরিক যন্ত্রাদি হইতে উপসর্গগুলি তাড়াইয়া দেয়, এবং সাধারণতঃ হাতেপায়ের যন্ত্রণা বাড়াইয়া দেয় বলিয়া রোগীরা গালাগালি করে, ইহা তাহাদের মধ্যে অন্যতম। “হৃৎস্পন্দনের সহিত কম্পন।” “অত্যন্ত দুর্বলতা, ঘর্ম এবং অচৈতন্যবৎ অবস্থা।” অচৈতন্যবৎ অবস্থার সহিত ঘর্ম কথাটি ভালভাবে মনে রাখিবে, বেঞ্জয়িক এসিড রোগী ঘামে, কিন্তু উপশম হয় না। প্রচুর অবসন্নকর ঘর্ম ও গভীর নিদ্রা, কিন্তু কোন উপশম হয় না।“জাগিয়া উঠিলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।” সর্বাঙ্গে স্পন্দন অনুভূত হয়।
সর্বপ্রকার সর্দিজ অবস্থা, গেঁটেবাত ধাতু, গেঁটেবাতের সহিত সন্ধিতে ঢিবলি, উপদংশজনিত বাত ইত্যাদি। এই সকল রোগীর জীবনমান ক্রমশঃ হীন হইতে থাকে, তন্তুগুলি দুর্বল হইতে থাকে। চৰ্ম্ম ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপর ক্ষত হইতে থাকে।
টাইরেক্স বেঞ্জয়েন নামক গাছের বল্কলজাত ধুপ থেকে এই অ্যাসিড পাওয়া যায়। একে অ্যালকোহলে দ্রবীভূত করে বা বিচুর্ণাকারে ইহা ব্যবহৃত হয়।
১। মূত্রেই এই ঔষধটির সর্বপ্রধান বিশেষ লক্ষণগুলি দেখা যায়। মূত্রের স্বল্পতা, ফ্রেঞ্চব্রাণ্ডির ন্যায় ঘোরাল বাদামী রংয়ের মূত্র, অতিশয় তীব্র গন্ধ বেঞ্জোয়িক অ্যাসিডের মূত্র লক্ষণ। মল ত্যাগ কালে ও মূত্র ত্যাগের পরেও এই গন্ধ বর্তমান থাকে। বাত, তালুমূলপ্রদাহ, শোথ, উদরাময়, মাথাধরা প্রভৃতি অন্যান্য রোগের সঙ্গেও এই মূত্র লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য অনেক ঔষধেও মূত্রের দুর্গন্ধ লক্ষণ আছে। তাদের মধ্যে নাইট্রিক অ্যাসিড, বাৰ্বেরিস ও ক্যালকেরিয়া প্রধান।
পার্থক্য-
ক) নাইট্রিক অ্যাসিডের মূত্রে ঘোড়ার মূত্রের ন্যায় দুর্গন্ধ,
খ) বাৰ্ব্বেরিসের তলানি ঘোলা (turbid),
গ) ক্যালকেরিয়া তলানি সাদা,
ঘ) বেঞ্জোয়িক অ্যাসিডের মূত্রে ভয়ানক দুর্গন্ধ থাকে বটে, কিন্তু কোন অধঃক্ষেপ থাকে না।
২। বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড ও বাৰ্ব্বেরিস উভয়েই সন্ধিবাতে (arthritis)
প্রধান ঔষধ এবং উভয়েরই উপরোক্ত মূত্র লক্ষণগুলি থাকে। লাইকোপোডিয়াম ও লিথিয়াম কার্বনিকামও এই রোগে উপযোগী বটে, কিন্তু আনুষঙ্গিক লক্ষণ দৃষ্টে এই সকল ঔষধের প্রভেদ নির্ণয় করে ওদের নির্বাচন করতে হয়।
* বেঞ্জোয়িক অ্যাসিডের প্রকৃতিগত দুর্গন্ধ সহকারে বৃক্কশূলে (Renal colic) এই ঔষধ দ্বারা আশ্চর্য রকম ফল পেতে দেখা গেছে।
** বৃদ্ধদের প্রস্ট্রেট গ্রন্থির বৃদ্ধি বশতঃ ফোঁটা ফোঁটা করে মূত্র পাতে ইহা সুন্দর কাজ করে। কাপড়ে যে মূত্র পড়ে তাতে সমগ্র ঘর গন্ধে ভরে যায়।
* * * এই ঔষধের প্রকৃতিগত মূত্র লক্ষণের সঙ্গে রজঃকষ্ট ও প্রোলান্সে (prolapsus uteri), এবং বাতজনিত হৃৎপিণ্ডের উপদ্রবেও বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড উপকারী।
অতএব অনেকগুলি ভিন্ন ভিন্ন রোগেই একই প্রবল বিশেষ লক্ষণানুসারে এই ঔষধের ব্যবহার হয়ে থাকে অর্থাৎ ইহা উপযোগী।