Bism | নির্জনে একা থাকতে পারে না, সঙ্গী চায়, শিশু মায়ের হাত ধরে থাকে। |
Bism | উৎকন্ঠা ও অস্থিরতা, কখন বসে কখন বেড়ায় কখনওবা শোয়, স্থির থাকতে পারে না। |
Bism | মাথার অসুস্থতার সঙ্গে পাকাশয়ে ব্যথা অথবা পর্যায়ক্রমে পাকাশয় শূল ও মাথার অসুস্থতা। |
Bism | মুখমণ্ডল মড়ার মত পাংশু দেখায় ও চোখের চারিদিকে কালিমা পড়ে। |
Bism | জল পান করা মাত্রই বমি হয়ে যায়, কিন্তু খাদ্যদ্রব্য কিছুক্ষণ পেটে থাকে। |
Bism | আহারের পর পাকস্থলীর কোন নির্দিষ্ট স্থানে চাপ বোধ ও পর্যায়ক্রমে জ্বালা অনুভূত হয়। |
নির্জনতা অসহ্য, লোকজনের সঙ্গ পছন্দ করে। শিশু মায়ের সঙ্গ চায় মায়ের হাত ধরে চলতে চায় (কেলি-কা, লিলি-টি, লাইকো)।
ভীষণ বিরক্তিভাব—একবার বসে একবার হাঁটে, একবার শোয় এক জায়গায় বেশীক্ষণ থাকতে পারে না ।
প্রতিবছর শীতে মাথা যন্ত্রণা ফিরে আসে, পেট বেদনার সাথে পাল্টাপাল্টি করে বা একই সাথে ।
মুখ — মড়ার মত ফ্যাকাশে, চোখের চারপাশে নীল কালিমা, দাঁতব্যথা— ঠান্ডা জল মুখে রাখলে উপশম হয় (ব্রায়ো, কফিয়া, পালস্)।
বমি – জল পাকস্থলীতে পৌঁছাইলেই বমি হয়ে যায় কিন্তু খাদ্যদ্রব্য অনেকক্ষণ থাকে (জল ও খাদ্যদ্রব্য দুই বমি হয়ে উঠে আসে-আর্স); কয়েকদিন বাদে বাদে যখন খাদ্যদ্রব্যে পাকস্থলী ভর্তি হয়ে আসে তখন এক সাথে প্রচুর পরিমাণে বমি করে—তরলদ্রব্য কিন্তু পেটে গেলেই বমি করে ফেলে, মলত্যাগ করে মলে দুর্গন্ধ। (জলের মত তরল মল-ভিরেট্রাম)। পেট অপারেশনের পর হেঁচকি তোলা ও যন্ত্রণাদায়ক ওয়াক ওয়াক করতে থাকে (নাক্স, ষ্ট্যাফিস)।
পাকস্থলী – কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেন ভারী কিছু চাপান আছে এইরকম চাপবোধ-সাথে পর্যায়ক্রমে জ্বালা, খিঁচে ধরার মত আক্ষেপজনক ব্যথা ঐসাথে বুক জ্বালা ও মুখ বেয়ে (গলা বেয়ে) জল উঠে আসে। উদরাময়যুক্ত কলেরা বা গরমের দিনে পেট খারাপ বমির প্রাধান্য বেশী, মলে পচা দুর্গন্ধ, আঠা আঠা মত, জলের মত—ভীষণ অবসাদ আনে (আর্স, ভিরেট্রাম) ।
শক্তি – ৬, ৩০।
এই ঔষধের প্রধার কাজ হল, পাকাশয় সংক্রান্ত নলীর অস্বস্তি ও প্রদাহিত অবস্থায় দখা যায়।
মন – নিঃসঙ্গতা অসহ্য। সর্বদা সঙ্গ চায়। নিজের অবস্থা সম্পর্কে সর্বদা অভিযোগ করে। মানসিক যন্ত্রণা। অসন্তুষ্টি।
মাথা – পর্যায়ক্রমে মাথার যন্ত্রণা ও পাকাশয়ের শূল বেদনা। স্নায়ুশূল, যেন মনে হয় সাঁড়াশি দ্বারা ছেঁড়া হচ্ছে, মুখমণ্ডল ও দাঁতগুলি আক্রান্ত হয়, খাবার সময় বৃদ্ধি, ঠাণ্ডায় উপশম, পৰ্য্যায়ক্রমে পাকাশয়িক শূলবেদনা। কেটে ফেলার মত অথবা চাপ দেবার মত বেদনা ডানদিকের চক্ষুকোটরের উপরের অংশে, বেদনা মাথার পিছন স্থান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মাথার পিছনের অংশে চাপ বোধ, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি, তৎসহ ভারী বোধ।
মুখগহ্বর – মাড়ী স্ফীত। দাঁতের যন্ত্রণা, মুখের ভিতর ঠাণ্ডা জল রাখলে উপশম। (কফিয়া)। জিহ্বা সাদা। স্ফীত। জিহ্বার নিচের অংশে এবং প্রান্তদেশে কালো, পচনশীল গাঁজের মত পদার্থসমূহ। প্রচুর লালাস্রাব, দাঁতের গোড়া আলগা। ঠাণ্ডা পানীয়ের পিপাসা।
পাকস্থলী – বমি, তৎসহ আক্ষেপিক, শ্বাসবন্ধ হবার মত বেদনা। জল পাকস্থলীতে পৌঁছানো মাত্র বমি হয়ে উঠে যায়। পান করার পরেই ঢেকুর। যাবতীয় তরল বস্তু বমি হয়ে যায়। জ্বালা, ভারী বোঝার মত অনুভূতি। কয়েক দিন ধরে খাওয়া দাওয়া করে, তারপর বমি করে। দুর্বল হজমশক্তি, তৎসহ দূর্গন্ধযুক্ত ঢেকুর। পাকাশয়িক শূলবেদনা, পাকস্থলীর শূলবেদনা, পাকস্থলী থেকে মেরুদণ্ড পর্যন্ত বেদনা। পাকস্থলীর প্রদাহ। ঠাণ্ডা পানীয় বস্তুতে উপশম, কিন্তু যেই পাকস্থলী ভর্তি হয়ে উঠে, সেই বমি শুরু হয়।
জিহ্বা – সাদা লেপযুক্ত, মিষ্ট, ধাতব অম্লস্বাদ। পাকস্থলীতে অবর্ণনীয় বেদনা। পিছনদিকে বেঁকে থাকতে বাধ্য হয়। পাকস্থলীর কোন অংশে কোন বোঝা চাপ দিচ্ছে রূপ অনুভূতি, তৎসহ পর্যায়ক্রমে জ্বালাকর, খিল ধরার মত বেদনা ও মুখে জল উঠা।।
মল — যন্ত্রনাহীণ উদরাময় তৎসহ প্রচুর পিপাসা এবং বারে বারে প্রস্রাব ও বমি করে। তলপেটে চিমটি কাটার মত বেদনা তৎসহ পেট ডাকে।
শ্বাস-প্রশ্বাস — মধ্যচ্ছদার মাঝে চিমটি কাটার মত অনুভূতি, আড়াআড়িভাবে বুকের পর দিয়ে বেদনা প্রসারিত হয়ে থাকে। হৃদশূল বা অ্যানজাইনা পেক্টোরিশ, হৃদপিণ্ডের চারিপাশে বেদনা, বেদনা বাম থেকে বাম হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – হাত ও পায়ে খিল ধরা। কজিতে ছিড়ে ফেলার মত বেদনা। পক্ষাঘাতের মত দুর্বলতা, বিশেষ করে ডানদিকের বাহুতে। হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগে, নখের নীচে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা (বার্বেরিস), পায়ে, টিবিয়া অস্থির নিকটবর্তীস্থানে পায়ের পিছনে সন্ধি স্থানে চুলকানি যুক্ত ক্ষত। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শীতল।
ঘুম – কামোত্তেজনাপূর্ণ স্বপ্নের ফলে, ঘুমের ভিতর অস্থিরতা। সকালের দিকে ঘুম ঘুম ভাব, খাবার অল্প কয়েক ঘন্টা পরে ঘুম-ঘুম ভাব।
সম্বন্ধ – দোষযঘ্ন — নাপ; ক্যাপসিকাম, ক্যাল্কে।
তুলনীয় – এন্টিমন, আর্সেনিক, বেলেডোনা, ক্ৰিয়ো।
শক্তি – ১ম থেকে ৬ষ্ঠ শক্তি।
অপর নাম – সাব-নাইট্রেট-অফ বিসমাথ (Sub-nitrate of Bismuth)
ঔষধার্থে বিসমাথ বিচুর্ণাকারে প্রস্তুত হয়।
বিসমাথের – মূলকথা
১। উদরাময়, প্রভৃত জলের মত, বেদনাশূন্য, দুর্গন্ধ, মৃতদেহের ন্যায় গন্ধযুক্ত মল।
২। প্রভূত বমন তৎসহ প্রবল তৃষ্ণা, জল পাকস্থলীতে পৌঁছালেই বমি হয়ে যায়; খাদ্যবস্তু অনেকক্ষণ পেটে থাকার পর বমি হয়ে যায়।
৩। অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা, অতিশয় অবসন্নতা, বিবর্ণ চেহারা সহ চোখের চারিদিকে নীলমণ্ডল, সৰ্ব্বশরীরের ঘাম কিন্তু ঐ ঘাম গরম।
বিসমাথ – পরিক্রমা
১। শিশু কলেরায় বিসমাথ একটি অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ। রোগটি হঠাৎ আরম্ভ হয় এবং দ্রুত অগ্রসর হতে থাকে এবং এইরকম ক্ষেত্রে রোগী এক রাত্রি বা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যায়। বিশেষ করে যদি বিসমাথ, ভেরেট্রাম, ক্রিয়োজোট বা অন্য কোন দ্রুত ক্রিয়াশীল ঔষধ দ্বারা তাদের জীবন রক্ষা করা না যায়।
বিসমাথের মল জলের মত প্রভূত, বেদনা শূন্য, অত্যন্ত দুর্গন্ধ, পচা মৃতদেহের ন্যায় গন্ধ যুক্ত। বমিও প্রচুর পরিমাণে হতে থাকে, প্রবল তৃষ্ণা, জল পাকস্থলীতে পোঁছবামাত্র বমি হয়ে যায়; কেবল জলই বমি হয়। খাদ্যবস্তু কিছুক্ষণ পেটে থাকে আর্সেনিকে জল ও খাদ্যবস্তু উভয়ই বমি হয়ে যায়। অবসন্নতা আর্সেনিকাম ও ভেরেট্রাম অ্যালবার সমান, কিন্তু গাত্রচর্ম প্রায়ই গরম থাকে এবং প্রায়ই গরম ঘামে আবৃত থাকে। মুখমণ্ডল মৃতের ন্যায় ফ্যাকাশে, চোখের চারদিকে নীলমণ্ডল। ইহাই বিসমাথের নিখুঁত চিত্র। তাই অন্য কোন ঔষধের সঙ্গে গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
২। এছাড়া বিসমাথ বিশুদ্ধ স্নায়বীয় পাকশয় শূলেরও (nervous gastralgia) একটি প্রধান ঔষধ। চাপ দেওয়ার ন্যায় বেদনা, কখন কখন স্কন্ধ দ্বয়ের মধ্যে চাপ দেয়, কখন কখন পাকস্থলীতে অত্যন্ত জ্বালা থাকে, (আর্সেনিক)। সময়ে সময়ে ইহা পাকস্থলীর ক্যানসারেও ফলপ্রদ। সময়ে সময়ে অত্যধিক পরিমাণে ভুক্তদ্রব্যের বমন হয়, বোধ হয় যেন কয়েকদিন ধরে উহা পাকস্থলীর মধ্যেই ছিল। এরূপ ক্ষেত্রে যথেষ্ট জ্বালা ও বেদনা থাকে। এতে আর্সেনিকামের মত অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠাও থাকে। রোগী ইতস্ততঃ নড়াচড়া করতে চায়, একস্থানে বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। স্নায়বিক প্রকৃতির পাকাশয় শূলে নিম্নক্রমের বিচুর্ণ আমাকে সর্বোৎকৃষ্ট ফল দিয়েছে। কিন্তু শিশু কলেরায় আমি ২০০ শক্তি অপেক্ষা নিম্নক্রম ব্যবহার করি না এবং উহা দ্বারাই আমি আশ্চৰ্য্য ফল হতে দেখি। শিশু রোগীর পক্ষে নিঃসঙ্গতা অসহ্য হয়, শিশুসঙ্গ পাওয়ার জন্য মায়ের হাত চেপে ধরে রাখতে চায় (স্ট্রামোনিয়াম)।