Cimic | মন বিমর্ষ, মৃত্যুভয়, অস্থিরতা, সন্দেহপূর্ন, বাতরোগ উপশম হলে মানসিক লক্ষণ সমূহ বৃদ্ধি হয়। |
Cimic | মনে হয় মাথার চাদিটা উড়ে যাবে। |
Cimic | ঘাড়ে ব্যথা, ঘাড় আড়ষ্ট হয়ে মাথাটি পেছন দিকে খেচে ধরে। |
Cimic | জরায়ুর নানাবিধ অসুস্থতায় তলপেটের একপাশ হতে অপর পাশে তীর বেঁধার মত বেদনা, জরায়ু প্রদেশে চাপ দিলে অত্যন্ত ব্যথা। |
Cimic | ঋতুস্রাবের সময় প্রচুর পরিমানে রক্তস্রাব, রজঃনিবৃত্তি কালে বামদিকের স্তনের নিন্মদেশে বেদনা। |
সন্তান জন্মের পরবর্তীকালে সূতিকা হয়ে উন্মত্ততা; মনে করে সে পাগল হয়ে যাবে। (তুলনীয়—সিফিলি); নিজেকে আঘাত করতে চায় ।স্নায়ুশূল কমে গিয়ে উন্মত্ততা প্রকাশ পায়)।
অনুভূতি- (মানসিক)- যেন (জমাট বাধা) ভারী কাল মেঘ তাকে ঢেকে ফেলেছে এবং মাথাকে এমনভাবে আবৃত করেছে যেন সমস্ত কিছুই অন্ধকার এবং কোন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ।
চেয়ারের নীচ হতে একটি ইঁদুর দৌড়ে গেল—এরূপ ভ্রান্ত অনুভূতি। চোখের পাতার আয়ুশূল ও অক্ষিগোলকে কামড়ান, তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা যাহা মস্তকের শখস্থান (Temples), শীর্ষদেশ, পেছনদিকে, চোখের কোটর অবধি বিস্তৃত হয় এবং সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলে বাড়ে এবং শুলে কমে ।
জরায়ু অথবা ডিম্বকোষ (ovary) সম্বন্ধীয় রোগ লক্ষণ হতে উদ্ভূত হৃদরোগ। হৃদপিন্ডের ক্রিয়া হঠাৎ থেমে যায়, দমবন্ধের মত অবস্থা হয়; সামান্য সঞ্চালনে বুক ধড়ফড় করে (ডিজিটা)।
ঋতুস্রাব – অনিয়মিত, দুর্বলতা আনে (এলুমি, ককুলাস), মানসিক উত্তেজনা, ঠান্ডা লেগে, জ্বর হয়ে ঋতুস্রাব বিলম্বিত অথবা অবরুদ্ধ হয়। তৎসহ কোরিয়া রাগে, হিষ্টিরিয়া অথবা উন্মত্ততা প্রকাশ পায়। এই সময় মানসিক লক্ষণগুলো বাড়ে্। আক্ষেপ—হিষ্টিরিয়া অথবা এপিলেপটিক; জরায়ুপীড়া হতে উদ্ভূত। ঋতুকালে বাড়ে, কোরিয়া রাগে বাঁদিকে বৃদ্ধি হয় ।
বাম স্তনের নিম্নদিকে প্রচন্ড বেদনা (অষ্টিলেগো) ।ডিম্বাধান (ovary) অথবা জরায়ুপীড়ার সাথে দেহের ভিন্ন ভিন্ন অংশে বিদুত্বৎ বেদনা অথবা জরায়ুস্থানে বেদনা তীরের মত এক দিক হতে অন্য দিকে যায় । গর্ভাবস্থায় — গা বমি বমিভাব, অদ্রিা, অলীক প্রসববেদনা, তলপেটে আড়াআড়ি ভাবে তীক্ষ্ম বেদনা; তৃতীয় মাসে গর্ভপাত (স্যাবাইনা);
প্রসবকালে—প্রথমাবস্থায় শরীর কাঁপতে থাকে, স্নায়বিক উত্তেজনায় খিচুনি হয়; জরায়ুমুখ কঠিন; তীব্র আক্ষেপিক বেদনা যাহা ক্লান্তিকর এবং যাহা সামান্য গোলমালে বৃদ্ধি পায় ।
প্রসবান্তে – কুঁচকি স্থানে ভ্যাদাল ব্যথা ।
গর্ভাবস্থায় শেষ মাসে প্রয়োগ হলে প্রসব বেদনার স্থিতিকাল কম হয়—যদি লক্ষণানুযায়ী দেওয়া হয়, (কলোফা, পালস)।
নাচের পর, ফেটিং করার পর অথবা অন্য কোনরকম অত্যধিক পেশীচালনার পরে পেশীগুলিতে অত্যধিক টাটানি ব্যথা হলে প্রযোজ্য ।
ঘাড় ও পিঠের পেশীতে বাতবেদনা, আক্রান্ত অঙ্গ আড়ষ্ট, অবশ ও সঙ্কুচিত বোধ হয়; সেলাই করা, টাইপ করা, পিয়ানো বাজানো প্রভৃতি কারণে মেরুদণ্ড পর্শকাতর হয়, (এগারি, ব্যানানকু-বা)। বাতে পেশীগুলির ভেতরদিক আক্রান্ত হয়—বেদনা ছুঁফোটানো বা খালধরা মত ।
বাতজনিত রজঃকষ্ট ।
সম্বন্ধ — সমগুণসম্পন্ন : জরায়ু ও বাতরোগে কলোফাই ও পালস; সাধারণভাবে—এগারি, লিলিয়াম, সিপিয়া ।
বৃদ্ধি — ঋতুকালে—সাব যত বেশী হয় যন্ত্রণাও ততই বাড়ে ।
শক্তি – ১x, ৬, ৩০, ২০০, ১০ এম ।
সেরিব্রোস্পাইন্যাল ও পেশীমণ্ডলের উপর এই ঔষধের বিরাট কাজ আছে, এছাড়াও জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের উপর এই ঔষধের যথেষ্ট কাজ আছে। বিশেষকরে উপযোগী বাতরোগযুক্ত, স্নায়বিক ব্যক্তি তৎসহ ডিম্বাশয়ের উপসর্গ, জরায়ুর আক্ষেপ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ভারবোধ প্রভৃতি লক্ষণ যেখানে পাওয়া যায়। পেশী সমূহের খিলধরা বেদনা, প্রাথমিকভাবে স্নায়ুঘটিত রোগসমূহ থেকে এই অবস্থায় উৎপন্ন হয়, শরীরের প্রায় সর্বাঙ্গে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় এবং এই লক্ষণগুলি খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
উত্তেজনা ও যন্ত্রণা— এই ঔষধকে নির্দেশ করে। শরীরের এখানে ওখানে যন্ত্রণা, অনেকটা বিদ্যুতের শক লাগার ন্যায়। অধিক পানে। বস্তিকোটরীয় যন্ত্রসমূহের লক্ষণাবলী সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। এই ঔষধটি নাড়ীর দ্রুতগতি ও শক্তি কমিয়ে দেয়। যন্ত্রণায় শান্তি ঘটায় এবং উত্তেজনা কমিয়ে থাকে। বা মানসিক রোগিনীর মনে হয় একখন্ড মেঘ ক্রমশ; তাকে ঢেকে ফেলছে। প্রচণ্ড হতাশা, তৎসহ আসন্ন অমঙ্গলের স্বপ্ন। বন্ধ গাড়ীতে চড়তে ভয়, এত ভয় যে, রোগীর মনে হয় গাড়ীর ভিতর থেকে লাফিয়ে পড়তে হবে। অবিরাম কথা বলতে থাকে। বড়ো ইঁদুর অথবা ছোট হঁদুর প্রভৃতির কাল্পনিক দর্শন। সকম্প প্রলাপ; নিজেকে আঘাত করতে চেষ্টা করে। স্নায়ুমূল অদৃশ্য হলে উন্মাদ রোগ দেখা দেয়।
মাথা— মস্তিষ্কের ভিতর অসংযত বা উত্তেজনার অনুভূতি। মানসিক উত্তেজনা, অতিরিক্ত পড়াশুনা অথবা জরায়ু রোগের প্রতিবর্তক্রিয়া হিসাবে মাথায় তীর বেঁধার ন্যায় এবং দপ দপ করে যন্ত্রণা। তরঙ্গের ন্যায় অনুভূতি অথবা মস্তিষ্কের ভিতর খোলা এবং বন্ধ হবার মত অনুভূতি। মস্তিষ্ক অনেকটা বড়ো হয়ে গেছে বলে মনে হয় বাইরের দিকে ঠেলা মারার মত বেদনা। কান গুলি অনুভূতি প্রবণ, সামান্য শব্দ সহ্য হয় না।
চোখ – দষ্টিহীন, তৎসহ বস্তিকোটরীয় উপসর্গ সমূহ। চোখের গভীরে দপদপকর এবং তীরবিদ্ধবৎ বেদনা তৎসহ কৃত্রিম আলোকে আলোকাতঙ্ক। চোখের তারায় তীব্র, ‘কনকনানি। চোখ থেকে মাথার উপরের অংশ পর্যন্ত বেদনা।
পাকস্থলী — মেরুদন্ড ও গ্রীবা দেশে চাপ দিলে বমি বমিভাব, বমি। পেটের উপরের অংশে খালি-খালিভাব। (সিফিয়া; সালফার)। দংশনবৎ বেদনা। জিহ্বার অগ্রভাগ সূঁচানো ও কম্পমান।
স্ত্রী রোগ — রক্তঃলোপ (ম্যাক্রোটিন ব্যবহার করা অধিক ভালো)। ডিম্বাশয় দেশে বেদনা। উরুদেশের সামনের অংশ থেকে বেদনা তীর বেগে উঠানামা করে। মাসিক ঋতুস্রাব শুরুর ঠিকপূর্ব মুহূর্তে বেদনা। ঋতুস্রাব প্রচুর, কালো, জমাটবাঁধা, দূর্গন্ধযুক্ত তৎসহ-কোমরের বেদনা, এবং দুর্বলচিত্ত। ঋতুস্রাব সর্বদা অনিয়মিত। ডিম্বাশয়ের স্নায়ুশূল। অস্তিকোটরে আড়াআড়িভাবে বেদনা, একদিকের নিম্নস্থান থেকে অন্যদিকের নিম্নস্থান বরাবর। বেদনার পর অতিরিক্ত অনুভূতি প্রবণতা এবং বেদনা সহ্য করতে পারে না। স্তন্যগ্রন্থির নিম্নাংশে বেদনা, বামদিকে বেশী হয়। কমবয়সী স্ত্রীলোকের মুখের উপর দাগ।
শ্বাস–প্রশ্বাস — গলার ভিতর সুড়সুড়ি। শুষ্ক, ছোট-ছোট কাশির চমক,কথাবলার সময় রাত্রিতে বৃদ্ধি। কাশি, যখন শ্লেষ্মা উঠার পরিমান কম হয়— আক্ষেপিক, শুষ্ক, তৎসহ পেশীমূহের টাটানি ও স্নায়বিক উত্তেজনা দেখা যায়।
হৃদপিণ্ড – অনিয়মিত, মন্থর ও কম্পমান নাড়ী। স্পন্দনশীলতা। অ্যানজাইনা। পেক্ৰোরিস বা হৃদশূল। বাম বাহু অসাড়তা, মনে হয় বামদিকে আবদ্ধ রয়েছে। হৃদপিণ্ডের স্পন্দন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাসরোধ দেখা দেয়। বামদিকের স্তন্যগ্রন্থির নিম্নাংশে। বেদনা।
পিঠ – মেরুদন্ড অত্যন্ত অনুকৃতি প্রবন, বিশেষকরে উপরের অংশ। ঘাড় ও পিঠের আড়ষ্টতা ও সঙ্কোচন। পন্ডরাস্থির মধ্যবর্তী অংশের বাত রোগ। পিঠ ও ঘাড়ের পেশীর বাতজ বেদনা। কোমর ও ত্রিকাস্থিস্থানে বেদনা, নিম্ন প্রদেশ হয়ে যন্ত্রণা নীচের দিকে উরুস্থান পর্যন্ত নামে। পিঠে পেশীর ফিক ব্যথা।
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ – অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অস্বস্তি, অস্থিরতা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কনকনানি ও পেশীর টাটানি। পেটের পেশীর বাতজ উপসর্গ, বিশেষ করে বড়ো পেশীগুলির। পেশীর নর্তন তৎসহ বাতজ উপসর্গ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ঝাঁকানি। গোড়ালি স্থানের বৃহৎ পেশী বন্ধনীর আড়ষ্টতা। নিম্নাঙ্গের ভারীবোধ। ভারীবোধ, কনকনানি ও টেনে ধরার মত বেদনা।
ঘুম — অনিদ্রা, দন্তোদগমকালে শিশুদের মস্তিষ্কের উত্তেজনা।
চামড়া — আইভি (রাসটক্স) বিষক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে এই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
কমা–বাড়া–বৃদ্ধি – সকালে ঠাণ্ডায় (কেবলমাত্র মাথার যন্ত্রণা ছাড়া), ঋতুস্রাব চলাকালীন অবস্থায়, যত বেশী স্রাব হয়, ততবেশী যন্ত্রণা হয়।
উপশম – উষ্ণতায়, আহারে।
সম্বন্ধ – তুলনীয় র্যামনাস ক্যালিফোর্নিয়া (পেশীর বেদনা, কোমরের বেদনা, বক্ষাবরক ঝিল্লীর বেদনা, তরুন বাতরোগ।
ডেরিস পিন্নেট্যা (বাতজনিত কারণ থেকে উদ্ভুদ স্নায়বীয় মাথার যন্ত্রণা।)
অ্যারিস্টোলোকিয়া মিলহোনেন্স (গোড়ালি স্থানের সব থেকে বড়ো পেশী বন্ধনীর বেদনা, বহুমূত্র রোগ। কলোফাইলাম, পালসেটিলা, লিলিয়ামটিগ,এগারিকাস, ম্যাক্রোটিন (বিশেষ করে কোমর প্রদেশীয় স্থানের বেদনা।)
শক্তি – ১ম থেকে ৩০ শক্তি,৩য় শক্তি প্রায়ই ব্যবহার হয়ে থাকে।
এই ঔষধটি কেবলমাত্র আংশিকভাবে পরীক্ষিত হইয়াছে; তথাপি ইহাতে কতকগুলি প্রয়োজনীয় লক্ষণ আছে। ইহার পরীক্ষা হইতে আমরা দেখিতে পাই যে, ইহা মনুষ্য-সমাজের বিশেষ অসুস্থ অবস্থার, বিশেষতঃ স্ত্রীলোকদিগের হিষ্টিরিয়া ও বাতজ অবস্থার সদৃশ। রোগী সৰ্ব্বদাই শীতার্ত, সহজেই ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়, ঠান্ডা এবং ভিজা আবহাওয়া সহ্য করিতে পারে না; উহাতে তাহার বাত জাগিয়া উঠে; কেবলমাত্র সারা দেহের পেশী ও সন্ধিগুলির বাত নহে, স্নায়ুপথের সর্বত্রই বাতজ অবস্থা প্রকাশ পায়। সাধারণভাবে সে স্নায়বিক গোলযোগের মধ্যে থাকে,—বৃত্তি-সামঞ্জস্যের অভাব অথবা গতিবিধায়ক স্নায়ুতন্ত্রের বিশৃঙখলা। ইহা হিষ্টিরিয়ার একটি পরিস্ফুট লক্ষণ; লক্ষণগুলি বাতের সহিত মিশ্রিত থাকে। যাতনার সহিত আমরা পাই। সর্বাঙ্গে আড়ষ্ট ব্যথা। কম্পন, অসাড়তা, পেশীসমূহ ঝাঁকি দিয়া উঠা। পেশীসমূহের উপর ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের অক্ষমতা, গতিবিধায়ক তন্ত্রের আড়ষ্টতাসহ বিশৃঙ্খলতা।
ঠান্ডা লাগার প্রবণতা এবং তাহা হইতে তাহার গ্রন্থিসমূহে এবং যকৃৎ, জরায়ু প্রভৃতি বড় বড় যন্ত্রে স্পর্শকাতরতা দেখা দেয়। এই সকল যান্ত্রিক গোলযোগ ঠান্ডা, স্যাঁৎসেঁতে আবহাওয়া হইতে (ডালকামারা’) এবং ঠান্ডা লাগানর ফলে উপস্থিত হয়। রোগী মাথা ব্যতীত সর্বাঙ্গে ঠান্ডা অসহ্য বোধ করে এবং দেহের কোন অংশে অথবা সাধারণভাবে সর্বাঙ্গে ঠান্ডা লাগাইলে তাহার রোগ-লক্ষণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু তাহার শিরঃপীড়া খোলা বাতাসে ও ঠান্ডায় উপশমিত হয়। ইহা একটি ব্যতিক্রম এবং বিশেষ লক্ষণ, কারণ ঠান্ডায় বৃদ্ধিই তাহার সাধারণ প্রকৃতি।
শারীরিক অবস্থার সহিত পর্যায়ক্রমে ভয়াবহ মানসিক বিকার উপস্থিত হয়। উহা একটি মুহ্যমানকারী বিমর্ষতা বা দুঃখভাব, দুঃখে সে অভিভূত হইয়া পড়ে। সারিণাম এবং ‘পালসেটিলার ন্যায় সে দুঃখে চুপ করিয়া বসিয়া থাকে এবং মুষড়িয়া পড়ে। এই ভাব অল্পকাল মধ্যেই চলিয়া যাইতে পারে কিংবা সঞ্চালন, ভয়, উত্তেজনা অথবা ঠান্ডা লাগায় দেখা দিতে ও বৰ্দ্ধিত হইতে পারে। প্রায়শঃ পেশীসমূহে ক্ষতবৎ বেদনা এবং সর্বাঙ্গে থেঁৎলানবৎ অনুভূতি ও তৎসহ আড়ষ্টতা ও উৎক্ষেপণ থাকে। এই ভাব খুব হঠাৎ থামিয়া যায় এবং স্নায়বিক প্রকৃতি হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা বালিকাকে বিষাদের অবস্থায় আনিয়া ফেলে, সে চুপ করিয়া বসিয়া থাকে, একটিও কথা বলে না। কোন কিছু জিজ্ঞাসা করিলে সে কাঁদিয়া ফেলে এবং নানা ভাবে তাহার আকুলকারী দুঃখ প্রকাশ করে। শিরঃপীড়ার সহিত সুস্পষ্ট বিষাদভাব থাকে। পরিবর্তনশীল মনোভাব। শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ পুনঃ পুনঃ বদলাইতে থাকে। অপর লক্ষণগুলিও পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হয় এবং বদলাইতে থাকে। এইসব হিষ্টিরিয়া-বাতগ্রস্ত রোগীর অঙ্গোৎক্ষেপ চিকিৎসকের নিকট কোরিয়া রোগের ন্যায় প্রতীয়মান হয়। বাতবেদনা হয়ত একদিনেই কোরিয়া রোগে পরিবর্তিত হয়, আবার কোরিয়া রোগের ঝাঁকানি সমগ্র দেহের পেশীগুলিতে ক্ষতবৎ ব্যথা সৃষ্টি করে। কখন কখন ঝাঁকি দিয়া উঠা, ক্ষতবৎ বেদনা এবং অসাড়ভাব একসঙ্গেই থাকিয়া যায়।
কোরিয়া রোগের কতকগুলি লক্ষণ আছে, যাহা লক্ষ্য করা প্রয়োজন। হৃদয়াবেগ উপস্থিত হইলে অথবা ঠান্ডা লাগিলেই পেশীসমূহের উৎক্ষেপ। শরীরের কোন অংশ চাপ দিলে ঐ অংশের পেশীগুলির উৎক্ষেপ হইতে থাকে। এই সমস্ত স্নায়বিক, বাতগ্রস্ত, হিষ্টিরিয়াপ্রবণ রোগীদের কাহারও কোরিয়া লক্ষণ সৰ্ব্বদা না থাকিতে পারে, কিন্তু যেমনি সে রাত্রে শুইয়া পড়ে, তখনি যে পার্শ্বে চাপিয়া শোয় সেই পার্শ্বের সমগ্র অংশ উৎক্ষিপ্ত হইতে আরম্ভ করে এবং তাহাকে ঘুমাইতে দেয় না। যদি সে চিৎ হইয়া শোয়, তাহার পৃষ্ঠের ও কাঁধের পেশীগুলি উৎক্ষিপ্ত হয় এবং নিদ্রায় বাধা দেয়। সে এক পার্শ্বে ফিরিয়া শুইল, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে-সকল পেশীতে চাপ পড়িল, তাহারা উৎক্ষিপ্ত হইতে আরম্ভ করিবে। এইরূপ সমস্তক্ষণ ধরিয়া সে এত অস্থির ও ভীত থাকে যে, সে ক্ষিপ্তবৎ হইয়া উঠে। তাহার দেহ নানারূপ অস্বস্তিতে ভরিয়া উঠে, কারণ সে বিশ্রাম করিবার মত স্থান খুঁজিয়া পায় না। সময়ে সময়ে পেশীগুলি এতই বেদনান্বিত হয় যে, তাহার উপর বেশীক্ষণ চাপ দিয়া শয়ন করা যায় না; ব্যথাটি কখন অসাড়তার মত, কখন বা ঝাঁকি দেওয়া প্রকৃতির। এই লক্ষণগুলি অদ্ভুত, কিন্তু এইগুলি রোগীর থাকে এবং দেহের এক অংশকে নহে, সমগ্র দেহটিকেই আক্রমণ করে।
ভয়, উদ্বেগ ও অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। মৃত্যুভয়, উত্তেজনা এবং সন্দেহ। “ঔষধে খারাপ কিছু আছে ভাবিয়া ঔষধ পর্যন্ত খাইতে চায় না।” স্নায়বিক হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা নারীদের যেরূপ উন্মাদ লক্ষণ থাকে, ইহাতেও সেইরূপ আছে এবং ইহা দ্বারা সূতিকা-উন্মাদ আরোগ্য হইয়াছে। প্রসবকালে অথবা প্রসবের অল্পক্ষণ পরে ঠান্ডা লাগায় সূতিকা-উন্মাদ। এই ঔষধটি বিশেষ ভাবে স্ত্রীলোকের ঔষধ কারণ ইহার লক্ষণগুলি সাধারণতঃ স্ত্রীরোগসমূহের সহিত সংযুক্ত। বাত উপশম হইবার পর মানসিক বিকৃতি ইহার একটি বিশেষ লক্ষণ। বাত যত ভাল হইতে থাকে, মানসিক অবস্থা তত খারাপ হইতে থাকে। কখন কখন সামান্যই বাত সারিয়া যায় এবং মনও বিচলিত হয় না, কিন্তু তখন এইরূপ হইবার কারণ, অন্ত্রে প্রবল ক্ষতবৎ বেদনা এবং কামড়ানির সহিত এক প্রকার উদরাময় দেখা দেয় অথবা জরায়ু হইতে এক প্রকার স্রাব দেখা দিয়া উপশম আনে। কোন প্রকারে কিছুটা উপশম হওয়া চাইই, নচেৎ ‘এব্রোটেনামের ন্যায় উৎসর্গ দেখা দেয়। কোন প্রকার স্রাব স্থাপিত হওয়া প্রয়োজন, সেইজন্য ঋতুস্রাব অথবা উদরাময় উপশম আনে। অন্যথায় মানসিক উপদ্রব উপস্থিত হয়, রোগী নিরানন্দ হইয়া পড়ে অথবা তাহার কোন মৃদু প্রকারের মানসিক উত্তেজনা দেখা দেয়। আমি যে নিরানন্দের কথা বলিলাম, তাহার একটি বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে বর্ণনাযোগ্য। মনে হয় যেন, তাহার সর্বাঙ্গের উপর একখানি কাল মেঘ জন্মিয়াছে”, আবার সেই সঙ্গেই উহা “মাথার উপর সীসা চাপানর মত” ভারি বোধ হয়। এই কথাটি সম্পূর্ণ অলঙ্কারাত্মক। “বিষাদ” কথাটি দ্বারাই এই ভাবটি প্রকাশ করা যাইতে পারে। আমরা পাঠ্য পুস্তকের সর্বত্র “বিমর্ষতা।”, “নিরানন্দ”, “ভগ্নোৎসাহ” প্রভৃতি কথার উল্লেখ দেখি, কিন্তু “বিষাদ” কথাটি উহাদের যে, কোনটির ন্যায় ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক।
শিরোবেদনা বাতের জন্য হয়। “সমস্ত মাথায় ক্ষতবৎ, থেঁৎলানবৎ অনুভূতি। মাথার পশ্চাদ্দিকে থেঁৎনবৎ বেদনা, মাথার উপরিভাগে ক্ষতবৎ, থেঁৎলানবৎ অনুভূতি, যেন মাথার উপরিভাগটি উড়িয়া যাইবে।” “যেন মস্তিষ্কের উপর দিয়া ঠান্ডা বাতাস বহিয়া যাইতেছে।” তথাপি এই শিরোবেদনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠান্ডা হাওয়াতেই ভাল থাকে। “আবহাওয়ার পরিবর্তনে, ঠান্ডা স্যাঁৎসেঁতে হাওয়ায়, ঠান্ডা লাগায় শিরোবেদনা উপস্থিত হয়।” অনেক রকমের শিরোবেদনা দেখা দেয়। চাপনবৎ শিরোবেদনা। অনেক ক্ষেত্রেই শিরোবেদনাটি তীব্র এবং বর্ণনায় বলা হয় যেন একটি তীর ঘাড়ের পশ্চাদভাগ দিয়া ঢুকাইয়া দিতেছে। ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকে ক্ষতবৎ অনুভূতি। ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকে ব্যথা। হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা বালিকা;—তাহাদের ঘাড়ে অত্যন্ত ব্যথা থাকে। শিরোবেদনার সহিত চক্ষুগোলক ক্ষতবৎ বেদনাযুক্ত থাকে, “কোনদিকে চক্ষু ঘুরান কষ্টকর হয়।” “চক্ষে ব্যথা, মাথায় থেঁৎলানবৎ বেদনা।” “পেটে ব্যথা, ক্ষতবৎ ব্যথা, থেঁৎলানবৎ বেদনা। পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময়। পর্যায়ক্রমে উদরাময় ও শারীরিক উপসর্গ।”
এইবার আমরা স্ত্রী-জননেন্দ্রিয়ের কথা বলিতেছি। উহাই এই ঔষধের অনেক উপসর্গের কেন্দ্র হইয়া থাকে। একটিয়া সম্বন্ধে একটি বাঁধা উক্তি—এই ঔষধ প্রসবকাৰ্য্য সহজ করিয়া দেয়। কোন ঔষধের পক্ষেই ইহা সঙ্গত উক্তি নহে এবং এরূপ উক্তিতে বাধা নিয়মে চিকিৎসারই উৎসাহ দেওয়া হয়। অবশ্য একথা সত্য যে, এই ঔষধ লক্ষণ সাদৃশ্যে গর্ভবতী স্ত্রীলোককে দেওয়ায় ইহা প্রসবকাৰ্য্য সহজ করিতে সক্ষম হইয়াছে। কিন্তু যেভাবে উহা দেওয়া হইয়াছে তাহা মূল অরিষ্ট, ২য় বা ৩য় ক্রমে, বাঁধা নিয়মের চিকিৎসা পদ্ধতিতে এবং দেওয়া হইয়াছে ততক্ষণ যতক্ষণ পর্যন্ত না ঔষধটি নির্দিষ্ট না হইয়াও এবং লক্ষণসদৃশ না হইয়াও রোগীকে উহার বশীভূত করিতে পারিয়াছে। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কখনও ঐভাবে চিকিৎসা করেন না। কোন ঔষধ বিশেষ সাধারণ অবস্থার উপযোগী হয় মাত্র তখনই, যখন ঐ সাধারণ অবস্থার লক্ষণগুলি ঔষধের মধ্যেও পাওয়া যায়। মনে রাখিবে, ঔষধটি উপযোগী হয় কারণ লক্ষণ-সমষ্টিই মিলিয়া যায়।
“জরায়ু স্থানে বেদনা; উহা এক পার্শ্ব হইতে অপর পার্শ্বে ধাবিত হয়। বেদনাটি ঠেলিয়া বাহির হওয়ার ন্যায় এবং প্রচাপনবৎ।” এই ঠেলিয়া বাহির হওয়ার ন্যায় অনুভূতি, রোগীর অন্য সমস্ত সাধারণ লক্ষণের সহিত ধরিলে দেখাইয়া দেয় যে ইহা জরায়ুচ্যুতির একটি প্রয়োজনীয় ঔষধ। ইহাতে ঐ অঙ্গের শিথিলতা লক্ষণ আছে। মনে করিও না যে, আমাদের ঔষধসমূহ লক্ষণের মিল থাকিলে এই অবস্থা (জরায়ুচ্যুতি) আরোগ্য করিতে সক্ষম নয়। একথা সত্য যে, লক্ষণগুলির মিল থাকিলেই ঔষধ জরায়ুচ্যুতি রোগ আরোগ্য করিতে পারে, অন্যথায় নহে। যদি ঔষধটি সাধারণ ভাবে রোগীর উপযোগী হয়, তাহা হইলে এই ঠেলিয়া বাহির হওয়ার অনুভূতি চলিয়া যাইবে, রোগী স্বচ্ছন্দ হইবে এবং অবশেষে পরীক্ষা করিয়া দেখা যাইবে যে যন্ত্রটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া গিয়াছে। (কিন্তু) তুমি জরায়ুচ্যুতির জন্য ঔষধ ব্যবস্থা করিতে পার না, তোমাকে ঐ স্ত্রীলোকটির জন্য ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইবে। তুমি একটি মাত্র লক্ষণ সাদৃশ্যে ঔষধ ব্যবস্থা করিতে পার না, কারণ ঐ লক্ষণটি সম্ভবতঃ আরও পঞ্চাশটি ঔষধে থাকিতে পারে।
এই সকল হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা বাতধাতুর রমণীদের ঋতুর গোলযোগ থাকে। ঋতুস্রাবের অনিয়মিততা। ঋতুস্রাব প্রচুর, অবরুদ্ধ অথবা স্বল্প হইতে পারে। ঋতুপ্রবাহকালে বরাবর তীব্র যন্ত্রণা। স্রাব যত বেশী হইতে থাকে যন্ত্রণাও ততই বেশী হইতে থাকে। এই লক্ষণটি অত্যন্ত অদ্ভুত। সাধারণতঃ স্রাবে যন্ত্রণার উপশম হয়, কিন্তু এই ঔষধটিতে স্রাবের সময়েই যন্ত্রণা হইতে থাকে। সাধারণতঃ স্ত্রীলোকগণের স্রাবের প্রারম্ভেই সৰ্ব্বাপেক্ষা তীব্র ও কষ্টকর যন্ত্রণা হয়, আবার কতকগুলি স্ত্রীলোকের স্রাব থামিবার ঠিক পরেই ঐরূপ দেখা দেয়। প্রত্যেক স্ত্রীলোকের লক্ষণই তাহার নিজের মত এই ঔষধের যন্ত্রণা ঋতুস্রাবের সময়ে হওয়াই নিয়ম। ঋতুস্রাবের সময়েই সর্বাপেক্ষা ভীষণ মানসিক লক্ষণ, সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর বাতলক্ষণ এবং সর্বাপেক্ষা অধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উৎক্ষেপ ও খালধরা এবং অনিদ্রা দেখা দেয়। ঋতুর সময় অপআরবৎ আক্ষেপ হয়। স্রাবকালে স্নায়ুসমূহে অশেষ যন্ত্রণা, স্নায়ুসমূহের উপর ক্ষতবৎ বেদনা, পেশী ও সন্ধিসমূহে বেদনা। মানসিক লক্ষণসমূহের বৃদ্ধি। তাহার ঠান্ডা বোধ এবং শীত শীত ভাব থাকে, তাহাকে গায়ে কাপড় জড়াইয়া রাখিতে হয়। রাতরোগ, বাধক রোগ।” “জরায়ু ও ডিম্বকোষ প্রদেশ ক্ষতবৎ বেদনা। সর্বাঙ্গে খঞ্জবৎ থেঁৎলানবৎ বেদনা, যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাব।” কেহ কেহ ইহাকে বাতজনিত-বাধকবেদনা নাম দিয়াছেন, নামটি মন্দ নহে।
গর্ভাবস্থায় বহু লক্ষণ প্রকাশ পায়। স্নায়বিক, বাতগ্রস্তা, অস্থির প্রকৃতির রমণীগণের পেশীসমূহের উৎক্ষেপ লক্ষণ থাকিলে, ঐরূপ ধাতুগ্রস্তার সকল উপসর্গ ইহা দ্বারা আরোগ্য হয়। তাহার উপসর্গগুলি এরূপ সুস্পষ্টভাবে একটির পর আর একটি পর্যায়ক্রমে দেখা দেয় যে, তাহার রোগের বিশিষ্ট প্রকৃতিই হয় পরিবর্তনশীলতা। তুমি প্রায়ই দেখিতে পাইবে যে, তাহার উপসর্গচয়ের বাকিগুলি চলিয়া গিয়াছে; কিন্তু বমি বমি ভাবটি প্রকাশিত হইয়াছে। বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ তিনি হিষ্টিরিয়া ধাতুগ্রস্তা ছিলেন, কিন্তু এখন তিনি গর্ভবতী হওয়ায়, তাঁহার সর্বক্ষণ বমি বমি ভাব দেখা দিয়াছে। তুমি দেখিতে পাইবে যে, এক শ্রেণীর লক্ষণগুলি যখন অত্যন্ত গুরুতর হইয়া উঠে, তখন অপরগুলি সাময়িকভাবে নিবৃত্ত হয় এবং এইভাবে পালসেটিলা’র ন্যায় পরিবর্তিত হইতে থাকে। কিন্তু রোগীর স্বরূপটি পাইতে হইলে, লক্ষণগুলি সমষ্টিগতভাবে লইতে হইবে। কোন স্ত্রীলোক আজ হয়ত একশ্রেণীর লক্ষণ লইয়া তোমার নিকট উপস্থিত হইল, কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে সেই হয়ত সম্পূর্ণ পৃথক আর একশ্রেণীর লক্ষণ লইয়া ফিরিয়া আসিবে। এইসব রোগীর ঔষধ ব্যবস্থা করা বড়ই কষ্টকর। সময়ে সময়ে তোমাকে হয়ত লক্ষণগুলি বার বার গ্রহণ করিতে হইবে, তারপর সেগুলি যেন একই দিনে উপস্থিত হইয়াছিল এরূপভাবে সাজাইয়া লইতে হইবে এবং তারপর তোমাকে ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইবে । লক্ষণের এই পরিবর্তনশীলতা এবং ঐসঙ্গে রোগীর চিকিৎসককে প্রতারিত করিবার প্রবৃত্তি থাকার জন্য, হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা রোগীকে আয়ত্ত করা কঠিন।
“প্রসব বেদনার প্রথম দিকে কম্পন। প্রসব বেদনার মধ্যেই হিষ্টিরিয়ার প্রকাশ।” বেদনা একেবারেই থামিয়া যায় অথবা অনিয়মিতভাবে উপস্থিত হয়; সুতরাং তাহাতে কাজ হয় না। প্রসবদ্বারের কোনই প্রসারণ হয় না। কিন্তু যখন নিয়মিত বেদনা আসে, তখন আমরা কতকগুলি প্রয়োজনীয় লক্ষণ পাই। একটি বেদনা আসে এবং মনে হয় যে উহা সন্তোষজনকভাবে কার্য্য করিবে, উহা নিয়মিত ও দীর্ঘকালস্থায়ী হয়, কিন্তু তিন ভাগের দুই ভাগ কাল স্থায়ী হওয়ার পর, অকস্মাৎ রোগিণী চিৎকার করিয়া উঠেন এবং নিতম্বদেশটি চাপিয়া ধরেন; বেদনাটি তখন জরায়ু ছাড়িয়া নিতম্বদেশে চলিয়া গিয়াছে এবং ঐ স্থানে খাল ধরিয়া গিয়াছে, এক্ষণে তাহাকে ডলিয়া দিতে এবং উল্টাইয়া দিতে হয়। এই ঔষধ তাঁহার বেদনাটি নিয়মিত করিবে এবং পরের বার বেদনা আসিলে, তাহা শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হইবে। প্রসবকালে এইসব স্ত্রীলোক এরূপ হৃদয়াবেগবিশিষ্টা হন যে, যদি তাহার কোনরূপ উত্তেজনা আসে, যেমন ঘরের মধ্যে হয়ত একটি উত্তেজনাপূর্ণ গল্প হইল অথবা উত্তেজক কিছু ঘটিল, তাহা হইলেই বেদনাটি থামিয়া যাইবে। যদি তিনি প্রসবকাল অতিক্রম করিয়া থাকেন এবং প্রসবান্তিক স্রাব প্রবর্তিত হইয়া থাকে তাহা হইলেও স্রাবটি বন্ধ হইয়া যাইবে; যেন তাঁহার ঠান্ডা লাগিয়াছে, এরূপভাবে খালধরা এবং কষ্টকর ভ্যাদাল ব্যথা হইতে থাকিবে, দুগ্ধ বন্ধ হইয়া যাইবে, তাঁহার সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ এবং থেঁৎলান ব্যথা দেখা দিবে এবং জ্বর প্রকাশ পাইবে। কলোফাইলামের সহিত এই ঔষধ্বটির তুলনা করা উচিত। কলোফাইলামের লক্ষণ ও স্ত্রীলোকগণের প্রজনন সংক্রান্ত যন্ত্রের দুর্বলতা। দুৰ্বলতার জন্য তিনি বন্ধ্যা অথবা গর্ভের প্রথম দিকেই তাহার গর্ভস্রাব হয়। প্রসবকালে জরায়ুর সঙ্কোচন এত ক্ষীণভাবে হয় যে উহা গর্ভস্থ সন্তান বাহির করিয়া দিতে পারে না এবং উহা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়। ঋতুকালে প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা হয়, তৎসহ ঊরুতে, পায়ে, এমনকি পায়ের পাতায় ও পায়ের আঙ্গুলে টানিয়া ধরার মত যন্ত্রণা থাকে। জরায়ুর নিশ্চেষ্টতাহেতু জরায়ু হইতে রক্তস্রাব। পেশী ও বন্ধনীসমূহের শিথিলতা, ভারবোধ এমনকি জরায়ুচ্যুতি। জরায়ুর অসম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণ। ক্ষতকর প্রদরস্রাব। ঋতুস্রাব অতি শীঘ্র অথবা অতি বিলম্বিত। তিনি ঠান্ডা সহ্য করিতে পারেন না, এবং গরম বস্ত্রে আবৃত থাকিতে চান, ‘পালসেটিলার’ সম্পূর্ণ বিসদৃশ লক্ষণ। তিনি ‘ইগ্নেশিয়া’র ন্যায় হিষ্টিরিয়াপ্রবণ। তিনি খিটখিটে এবং শঙ্কাৰিতা। তিনি ‘একটিয়ার’ ন্যায় লাতগ্রস্তা, সম্ভবতঃ কেবলমাত্র তাহার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সন্ধিগুলিই আক্রান্ত হয়। পরে তিনি ভ্যাদাল ব্যথায় কষ্ট পান এবং ঐ বেদনা কুঁচকি স্থানে অনুভূত হয়। বাতজনিত পৃষ্ঠের আড়ষ্টতা এবং মেরুদন্ডের স্পর্শকাতরতা। তিনি নিদ্রাশূন্য, অস্থির এবং সর্বোপরি অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণ। এই ঔষধ যৌবনে ঋতুপ্রকাশের বিলম্বহেতু কোরিয়া রোগ আরোগ্য করিয়াছে।
এইকথা শুনিয়া বিস্মিত হইও না যে, এরূপ হৃদয়াবেগবিশিষ্টা রোগিণীরও সঞ্চরণশীল, দ্রুত নাড়ী থাকে এবং হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া অনিয়মিত হয়, কিন্তু হিষ্টিরিয়া রোগের বহু পরিস্ফুট লক্ষণ প্রকাশিত থাকিলেও, হৃৎপিন্ডের কোন ক্রিয়াগত গোলযোগ থাকে না। “হৃৎপিন্ডস্থানে ক্ষতবৎ বেদনা এবং হৃৎপিন্ডটি যে বৰ্দ্ধিত হইয়াছে—এরূপ অনুভূতি।”
“মাথার পশ্চাদ্ভাগ ও ঘাড়ে ক্ষতবৎ বেদনা।” “ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকের পেশীর সঙ্কোচনবশতঃ মাথাটি পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়। পৃষ্ঠের উপর দিয়া ভয়ানক কনকনানি ব্যথা।” পৃষ্ঠের বাত। পৃষ্ঠের পেশীসমূহের সঙ্কোচনের জন্য চিৎ হইয়া শয়ন করা অসম্ভব। পেশীর সঙ্কোচন ও উৎক্ষেপণের জন্য এক পার্শ্বে চাপিয়া শুইতে পারে না। “অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসাড়তা, কম্পন ও বেদনা।”
এই পেশীলক্ষণগুলি আমি পূর্বে যাহা বলিয়াছি, তাহারই পুনরুক্তি মাত্র। “হিষ্টিরিয়াজনিত আক্ষেপ, খেঁচুনি, পদদ্বয়ের কম্পন, অতি কষ্টে হাঁটিতে পারে।” পক্ষাঘাতের সহিত যেরূপ অসাড়তা সংযুক্ত থাকে, ইহাও সেইরূপ অসাড়তা। পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা।
৩০, ২০০, ১০০০ এবং আরও উচ্চতর ক্রমে এবং মাত্র এক মাত্রা ঔষধ ব্যবহারে সর্বোৎকৃষ্ট ফল পাওয়া যায়।
ইহা নীল কোহসের’ কতকগুলি অবস্থার সহিত সমগুণ। পালসেটিলা, সিপিয়া’, ‘নেট্রাম। মিউর’, ‘লিলি টাই’, ‘কলোফাইলাম’ এবং ইগ্নেশিয়ার সহিত ইহার তুলনা করিবে।
অপর নাম – সিমিসিফিউগা রেসিমোসা (Cimicifuga Recemosa)
ব্লাক স্নেকরূট (Black Snake root)
ব্লাক কোহশ (Black cohos)
বাগবেন (Bugbane)
রেনানকিউলেসী জাতীয় এই গাছ আমেরিকায় স্বয়াবৃর্ত ও শিলাময় অরণ্যে এবং উৰ্ব্বরা ভূমিতে জন্মে। এরসরস মূল থেকে মূলঅরিষ্ট তৈরী হয়। সিমিসিফিউগার রেজিনয়েড (উপক্ষার নয়) থেকে ম্যাক্রোটিন ও সিমিসিফিউগিন বিচূর্ণ প্রস্তুত হয়।
একটিয়া রেসিমোসার- মূলকথা
১। স্নায়বিক লক্ষণ, স্পন্দন, আক্ষেপ, তড়কা ও স্নায়ুশূল, কাঁপুনি ছড়া শীত বোধ, ঋতুকালে বাড়ে।
২। পেশীর বাত, ঘাড়ের আড়ষ্টতা (stiffneck), মাথা পিছন দিকে টেনে রাখে, মাথা ঘুরতে পারে না, পেশীসমূহের ভিতর (belly of muscles) বাতের আক্রমনে ইহা শ্রেষ্ট ঔষধ।
৩। শিরঃপীড়া, মাথায় বাইরের দিকে বা উপরের দিকে চাপবোধ; মনে হয় যেন মাথার চাদি উড়ে যাবে,অথবা কোন চোখের দিকে ধাবিত হয় অর্থাৎ অক্ষিপুটের স্নায়ুশূল অথবা বেদনা নিম্নগামী হয়ে ঘড়ের নীচে মেরুদন্ডে সঞ্চারিত হয়।
৪। বিমর্ষতা, শোকার্ত্ততা ও নিদ্রাহীনতা, রোগিণী মনে করে সে পাগল হয়ে যাবে।
৫। অতিরজঃস্রাব (menorhagia), বেদনা কুঁচকির ভিতর দিয়ে উরুর দিকে ধাবিত হয়,
৬। রজোনিবৃত্তিকালে বাঁ দিকের স্তনের নিচে অনবরত বেদনা।
৭। হ্রাসবৃদ্ধি –ঋতুকালে ও রজোনিবৃত্তিকালে রোগ লক্ষণ বাড়ে।
একটিয়া রেসিমোসা- একটি আলোচনা
১। একটিয়া রেসিমোসা এমন একটি ঔষধ যা স্ত্রীজনন তন্ত্রের যন্ত্রসমূহের উপর প্রবল প্রভাব ফেলে। স্নায়ুমন্ডলে এর ক্রিয়াবশতঃ আবার বহুবিধ লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর অনেকগুলি লক্ষণই হিস্টিরিয়ার মত। পেশীর স্পন্দন, আক্ষেপ, তড়কা, স্নায়ুশূল বেদনা ও মানসিক লক্ষণও প্রচুর পরিমানে প্রকাশিত হয়। রোগিণী কাপে (শীতলতা ব্যতীত স্নায়বিক কম্পন), মূর্খ যায়, বারবার বিষয় পরিবর্তন করে,অবিরত কথা বলে, শোক-সন্তপ্ত ও বিমর্য, মানসিক কষ্ট পায়, দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে, অথবা নিদ্রাহীনতা সহ তার অতিশয় বিষন্নতা জন্মে, সে মনে করে যেন সে পাগল হয়ে যাবে।
২। শিরঃপীড়া
মাথায় তীব্র বেদনা, উহা বাইরের দিকে চাপ দেয়, মনে হয় যেন মাথার চাঁদি উড়ে যাবে অথবা কেনা চোখের ভিতরে ধাবিত হয়, চোখের মধ্যে ভীষন যন্ত্রনা হতে থাকে, অথবা বেদনা মাথার পিছন দিকে থাকে এবং সেখান থেকে ঘাড়ে দ্রুত সঞ্চারিত হয়।
একটিয়া রেসিমোসা অপেক্ষা আর কোন ঔষধেই এত অধিক মাত্রায় অক্ষি পুটের স্নায়ুশূল (ciliary neuralgia) থাকে না।
৩। জরাযু প্রদেশের বেদনা একপাশ থেকে অন্য পাশে দ্রুত সঞ্চারিত হলে একটিয়া রেসিমোসা আরোগ্য করে। একটিয়ার ঋতুক্রিয়া অনিয়মিত ভাবে সম্পন্ন হয়,কখনও ঋতু রক্ত খুবস্বল্প থাকে,তবে অধিকাংশ সময়েই প্রচুর পরিমানেই হয়। তবে এতে এ ঋতু বৈলক্ষণ সহকারে পূৰ্ব্ববর্ণিত মানসিকও স্নায়বিক লক্ষণগুলি ও প্রচুর পরিমানে বর্তমান থাকে।
অতিরজঃরোগে নীচের দিকে দুঃসহ চাপ বোধ সহকারে, পীঠে, উরুদেশের নীচে এবং কুঁচকির ভিতর দিয়ে দারুন বেদনা লক্ষণ বর্তমান থাকতে দেখা যায়। আর এক্ষেত্রে একটিয়া রেসিমোসা সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ এবং আমি বহুবার প্রমান ও পেয়েছি। এছাড়া ইহা রজোনিবৃত্তিকালীন বাঁ দিকে স্তনের নীচের বেদনাও একটি অত্যুকৃষ্ট ঔষধ।
৪। জরায়ু-রোগের সহানুভূতি জনিত বা সিমপ্যাথিটিক (sympathetic) পৃষ্ঠ বেদনায় ও মেরুদন্ডের উপদাহে (irritation) একটিয়া উপকারী। জরায়ুর উপদ্রবের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত শরীরের নানা স্থানের স্নায়বিক ও পৈশিক, শস্ত্র বিদ্ধবৎ (lancinating) তীব্র বেদনা এই ঔষধে আরোগ্য করে। বাতে পেশীর ভিতর ভাগ আক্রান্ত হলে ইহা একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। তাছাড়া একটি একটি বহুরোগে কার্যকরী ঔষধ এবং নানা প্রকার স্নায়বীয় উপদ্রবেই উপযোগী ও উপকারী।
CIMICIFUGA RACEMOSA [Cimic] |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|