রাত্রি জেগে কাজ করার ফলে নানাপ্রকার অসুস্থতা। |
ককুলাসের প্রায় সমস্ত রোগে যথেষ্ট অবসাদ ও স্নায়বিক ক্লান্তি দেখা যায়। |
মাথা ও শরীরের অন্যান্য স্থান ফাঁপাউ হালকা অনুভূত হয়, মাঝে মাঝে মাথায় ভারী অনুভূতি। |
গাড়ি বা নৌকায় চড়লে অত্যন্ত বমিভাব, শীত শীত ভাবের সহিত বমি ভাব। |
মেরুদন্ডের দুর্বলতার জন্য কোমর, অঙ্গ প্রতঙ্গ ও জিহ্বায় পক্ষাঘাতের মতো অনুভূত হয়। |
পেটে অত্যান্ত বায়ু জমা ও ধারালো কোনযুক্ত পাথরের টুকরা আছে বা একে অন্যের সাথে ঘষাঘষি করছে এরুপ মনে হয়। |
সামান্য মতানৈক্য হলে প্রচন্ড রেগে যায়। |
সময় দ্রুত চলে যায় কিন্তু কাজ কর্ম ধিরে ধিরে করে। |
(গাছের বীজ, যাতে Picrotoxin বিষ থাকে, যা মাছকে খাইয়ে দিলে মাছ ভেসে ওঠে, হাত দিয়েই ধরা যায়)
যে সব স্ত্রীলোক ও শিশুদের চুল ও চোখ কটা, যেসব স্ত্রীলোক ঋতুকালে ও গর্ভাবস্থায় খুব কষ্ট পায়, অবিবাহিতা ও বন্ধ্যা স্ত্রীলোক, তাদের পক্ষে উপযোগী। যারা সব সময় বই পড়তে ভালবাসে, উত্তেজনা প্রবণ; কল্পনা বিলাসী মেয়েরা যাদের অনিয়মিত ঋতুসাব হয়, কু-চরিত্র, হস্ত মৈথুনে অভ্যস্ত, অত্যধিক যৌন ক্রিয়ার ফলে দুর্বল ব্যক্তি—তাদের পক্ষে উপযোগী ।
বমি বা বমিবমিভাব — গাড়ীতে চড়লে, নৌকা বা রেলগাড়ীতে ভ্রমণ করলে (আর্নিকা, নাক্স-ম) বা ভাসমান নৌকার দিকে তাকালে ঐভাব। সমুদ্রে ভ্রমণ করলে ও গাড়ীঘোড়া চড়লে অসুস্থ হয়।
মাথাযন্ত্রণা — ঘাড়ে ও মাথার পেছনদিকে—তা মেরুদন্ড অবধি এগিয়ে যায়-মনে হয় দড়ি দিয়ে টাইট করে বেধে রেখেছে সাথে গা বমি বমি ভাব প্রতি ঋতুর সময় এই রকম মাথা যন্ত্রণা হয়—মাথার পেছনে চাপ দিয়ে শুলে বেড়ে যায়।
গাড়ীতে, নৌকায় বা রেলগাড়ীতে চড়লে মাথা যন্ত্রণা সমস্ত শরীর দুর্বল করে ফেলে।
মাতালদের অস্বাভাবিক রোগ হলে ব্যবহার্য। ক্ষিধে থাকে না সাথে মুখে ধাতব আস্বাদ (মার্ক)।
অনুভূতি — সময় খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায় (সময় ধীরে ধীরে কাটে = আর্জ-না, ক্যানা-ইন্ডি) ।
সারা দেহ নিস্তেজ, অনেক চেষ্টা করে তবে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, জোরে : কথা বললে অত্যন্ত দুর্বলতা বোধ, নিদ্রাহীনতা, মানসিক উত্তেজনা ও রাত। জাগার কুফল, একঘণ্টা কম ঘুমালেও দুর্বলতাবোধ করে, অনিদ্রা, রাগ বা দুঃখ হলে হাত পায়ে খিচুনী হয়।
মানসিক উত্তেজনা বা শারীরিক পরিশ্রমে গা হাত পা ব্যথা হয়ে হাত পা কাঁপতে থাকে।
মাথাঘোরা – বিছানা হতে উঠে বসলে মাতালের মত টলতে থাকে বা চলন্ত গাড়ীতে (ব্রায়ো) মাথা ঘোরে। প্রতি নড়াচড়ায় যেন পেটে ধারাল পাথর একটা আরেকটায় ঘষা লাগছে ও কেটে যাচ্ছে এই অনুভূতি হয়।
মাথায় ও অন্যান্য অঙ্গে শূন্যতাবোধ (ইগ্নে)। প্রতিবার ঋতুকালে রোগিনীএত দুর্বল হয়ে যান যে ক্বচিত দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন কারণ পা দুটি ভীষণ দুর্বল (এলুমি, কার্ব-এনি) প্রতিবার ঋতুস্রাবের পর অর্শরোগ দেখা দেয়। শ্বেতপ্রদর—ঋতুস্রাব না হয়ে বা দুই ঋতুর মধ্যবর্তী সময়ে (আয়োডি, জ্যান্হো)-মাংস ধোয়া জলের মত, রক্তের সিরামের মত, পঁচা, রক্তমেশানো মত হয়, গর্ভকালে শ্বেতপ্রদর হয়।
* প্রতিবাদ সহ্য হয় না। একটুতেই অপমান বোধ, তুচ্ছ ব্যাপারে চটে যায়। তাড়াতাড়ি কথা বলে (এনাকা)।
জ্বর — যখন মন্দগতি, ঘুসঘুসে জ্বর, একটুতেই রোগী উত্তেজিত হয়, মাথাঘোরা ও একটুতেই রেগে যাওয়া লক্ষণ আসে তখন প্রযোজ্য ।
সম্বন্ধ — কোরিয়া ও পক্ষাঘাত লক্ষণে ইগ্নে ও নাক্স-ভ-এর সাথে আক্রান্ত অঙ্গে ঘাম হওয়া লক্ষণে এ-টার্ট তুলনীয়। দুর্দম্য কোষ্ঠবদ্ধতা সহ নাভীস্থানের হার্নিয়া (অন্ত্র বৃদ্ধি) হলে নাক্স দিয়ে ব্যর্থ হলে এ ওষুধ সারাতে পারে।
বৃদ্ধি – আহারে, পান করলে, ঘুমালে, ধূমপানে, কথা বললে, গাড়ীতে চড়লে, নড়াচড়ায়, জাহাজের দোলায়, গর্ভাবস্থায় উঠে বসলে রোগলক্ষণ বাড়ে।
শক্তি – ৬, ৩০, ২০০।
ককিউলাসের কাজের মধ্যে বহু প্রকারের আক্ষেপিক ও আংশিক পক্ষাঘাত জনিত, রোগ সমূহ পড়ে। বিশেষ করে শরীরের অর্ধাংশ আক্রান্ত হয়। এই জাতীয় রোগ সমূহ। এই ঔষধটি সেরিব্রাম বা গুরু মস্তিষ্কের উপর কাজ করে, কিন্তু সুষুম্না কান্ড সম্পর্কিত বা সুষুম্নাকান্ডকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত রোগ সমূহ এই ঔষধ আরোগ্য করতে পারে না। (এ.ঈ.হিনসডেল)। যন্ত্রনাদায়ক সঙ্কোচন,শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ধড়ে; ধনুষ্টঙ্কার। রাত্রিজাগার জন্য উদ্ভূত বহু প্রকার উপসর্গ এই ঔষধ উপশম করে। এই ঔষধ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, এই ঔষধ হাল্কা রঙের চল বিশিষ্ট স্ত্রীলোকের উপর বিশেষভাবে কাজ করে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, এই সময়ে স্ত্রীলোকের প্রচুর বমিবমিভাব ও পিঠের বেদনা থাকে। অবিবাহিতা ও সন্তানহীনা স্ত্রীলোক, অত্যন্ত অনুভূতি প্রবন স্ত্রীলোক ও ভাবাবেগ সম্পন্ন স্ত্রীলোক প্রকৃতির উপর ভালো কাজ করে। গাড়ী অথবা জাহাজে চড়লে সকলকষ্টের বৃদ্ধি; এই কারণে এই ঔষধটি সামুদ্রিক বমন বা সামুদ্রিক অসুস্থতায় ব্যবহার হয়ে থাকে। শরীরের ভিতরটা ফাঁপা বা শূন্য বলে মনে হয়। যেন শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ঘুমিয়ে রয়েছে এরূপ অনুভূতি। খুব জোরে কথা বললে প্রচন্ড দুর্বলতা বোধ।
মন – খেয়ালি; বোকা ও অকর্মণ্য। সময় খুব দ্রুত চলে যায়। এই জাতীয় অনুভূতি। অলীক কল্পনায় মগ্ন থাকে। গান করার অদম্য ইচ্ছা। কোন কিছুই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে । মানসিক আচ্ছন্নতা।
প্রচন্ড বিষন্নতা – প্রতিবাদ বা বিতর্ক সহ্য করতে পারে না। খুব দ্রুত কথা বলে। অন্যান্যর স্বাস্থ্য সম্পর্কে অত্যন্ত চিন্তিত।
মাথা – মাথাঘোরা, বমি বমিভাব, বিশেষ করে গাড়ীতে চড়ার সময় অথবা বসে থাকলে, মাথার ভিতর খালিবোধ। গ্রীবা দেশেও মাথার পিছনের অংশে বেদনা; মাথার পিছনদিক চেপে শুলে বৃদ্ধি। গাড়ীতে চড়ার সময় বমিবমিভাবের সঙ্গে মাথার যন্ত্রনা, কিছুতেই মাথার পিছনদিক চেপে শুতে পারেনা। চোখের তারাগুলি, সঙ্কুচিত। পর্যায়ক্রমে খুলছে এবং বন্ধ হচ্ছে এই জাতীয় অনুভূতি, বিশেষ করে, মাথার পিছনের অংশে। মাথার কম্পন। চোখের ভিতর বেদনা, যেন মনে হয় চোখগুলি মাথার ভিতর থেকে টেনে ছিড়ে ফেলা হচ্ছে।
মুখমন্ডল — মুখমন্ডলীয় পেশী সমূহের স্নায়ুগুলি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। চর্বন পেশীতে খিলধরার মত বেদনা।
মুখ খোলার সময় বৃদ্ধি। বিকেলের দিকে মুখমন্ডলের স্নায়ুর শূলবেদনা, তৎসহ বহুদূর ব্যাপিযন্ত্রনার প্রসারণ।
পাকস্থলী – গাড়ীতে অথবা নৌকায় চড়লে বমি বমি ভাব অথব চলমান নৌকা দেখলে বমি বমি ভাব। শরীর ঠান্ডা হলে অথবা ঠান্ডালেগে সর্দি প্রভৃতি হলে বৃদ্ধি। বমিবমিভাব তৎসহ মূর্চ্ছা এবং বমি। খাবারে, পানীয় ও তামাকে অনিচ্ছা। মুখের আশ্বাদ ধাতুর ন্যায়। পেশীসমূহের পক্ষাঘাত, বাধাপ্রাপ্ত গলাধকরণ, অন্ননলীর শুষ্কতা। সামুদ্রিক অসুস্থতা। (রেসোরসিন 1x) আহারের সময় ও পরে পাকস্থলীর ভিতর আক্ষেপ। হিক্কা ও আক্ষেপিক হাইতোলা। ক্ষুধা কমে যাওয়ায়। শীতল পানীয়ের স্পৃহা, বিশেষ করে বিয়ার, মদ প্রভৃতি। পাকস্থলীর ভিতর এরূপ অনুভূতি যেন, দীর্ঘকাল রোগী খাদ্যাভাবে থেকে বর্তমানে তার ক্ষুধা চলে গেছে। খাবারের গন্ধ বিরক্তিকর (কলচিকাম)। এ উদরস্ফীত, তৎসহ বায়ুসঞ্চয় এবং চলাফেরা করার সময় মনে হয় যেন পেটের ভিতর ধারালো পাথর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক পাশে ফিরে শুলে উপশম। তলপেটের গোলাকার অংশে বেদনা, যেন মনে হয় অস্থান থেকে কোন কিছু ঠেলে বেরিয়ে আসছে। পেটের পেশীর দুর্বলতা; মনে হয় যেন অন্ত্রবৃদ্ধি বা হানিকর হবে।
স্ত্রীরোগ – বাধক বেদনা, তৎসহ প্রচুর কালো ঋতুস্রাব। সময়ের অনেক আগে ঋতুস্রাব দেখা দেয়, রক্ত জমাট বাঁধা, তৎসহ আক্ষেপিক শূলবেদনা। জরায়ুর স্থানে বেদনাদায়ক চাপবোধ, তারপরে অর্শ দেখা দেয়। দুর্বল ঋতুকালের মধ্যবর্তী সময়ে প্রদর ভাব, ভাব হুসহুস করে বেরোয়, স্রাব পুঁজযুক্ত, প্রচন্ডদুর্বলতা, দুর্বলতার জন্য কথা বলতেও কষ্ট হয়। ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে, প্রায় দাঁড়াতে পারে না। বললেই চলে।
শ্বাস-প্রশ্বাস – বুকের ভিতর খালিবোধ ও খিল ধরা। শ্বাসনলীর সঙ্কোচনের জন্য শ্বাসকষ্ট, যেন ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসার জন্য শ্বাসনলীর উত্তেজনা, এরূপ অনুভূতি। অন্ননলীর উপরের অংশে শ্বাসরুদ্ধকর সঙ্কোচন। কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস ও কাশির সৃষ্টি হয়।
পিঠ – মাথা ঘোরাবার সময়, গ্রীবাদেশীয় কশেরুকার ভিতর কটকট শব্দ। কোমরে পক্ষাঘাতের ন্যায় যন্ত্রনা। ঘাড়ে ও বাহুতে থেঁৎলিয়ে যাবার মত বেদনা। স্কন্ধাস্থি স্থানে ও গ্রীবাদেশে চাপবোধ। ঘাড় ঘোড়াবার সময়, ঘাড়ের আড়ষ্টতা।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – অজ্ঞাতাবোধ, ঝালে বৃদ্ধি। অঙ্গে কম্পন ও বেদনা। বাহুদ্বয় যেন ঘুমিয়ে পড়েছে, এই জাতীয় অনুভূতি। একাঙ্গীন পক্ষাঘাত ঘুমের পরে বৃদ্ধি। হাতগুলি পর্যায়ক্রমে গরম ও ঠাণ্ডা; অসাড়তা ও ঠাণ্ডা ঘাম, কোন সময় এই হাতে, আবার কোন সময় অপর হাতে। অসাড়তা ও অস্থির। হাঁটার সময় হাঁটুর ভিতর কটকট শব্দ হয়। নিমাঙ্গে অত্যন্ত দুর্বল। হাঁটুর পদাহ জনিত স্ফীতি। তীব্র বেদনাদায়ক, পক্ষাঘাত সদৃশ টেনে ধরা। অঙ্গগুলি টান টান করে সোজা থাকে। ভাঁজকরার সময় বেদনা হয়।
ঘুম – আক্ষেপিক হাইতোলা। চোখ খোলা অবস্থায় অচৈতন্যভাব। সর্বদা ঝিমুনি বা নিদ্রালু ভাব। রাত্রিজাগা, রোগীর সেবাজনিত কারনে রাতজাগা প্রভৃতি কারণে এই অবস্থা দেখা দেয়।
জ্বর — শীতবোধ, তৎসহ পেট ফাঁপা জনিত কারণে শূলবেদনা, বমি বমিভাব, মাথাঘোরা, নিমাঙ্গের শীতলতা ও মাথা উত্তপ্ত। সর্বাঙ্গে ঘাম। স্নায়বিক উত্তেজনাসহ খুষখুষে জ্বর। শীতভাব তৎসহ ঘাম ও চর্মের উত্তাপ।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি — আহারে, ঘুমের সময়ে না ঘুমালে, শুষ্ক বাতাসে, ধূমপানে, গাড়ীতে চড়লে, সাঁতার কাটলে, স্পর্শে, শব্দেও ঝাঁকুনিতেঃ বিকালে, মাসিক ঋতুস্রাবকালীন। আবেগ সম্পর্কিত গোলযোগ।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন কফিয়া; নাক্স।
তুলনীয় – পিকোটক্সিন – কমিউলাসের উপক্ষার দাঁড়ালে রোগাক্রমন, হার্নিয়া, লোকোমোটর অ্যাটাক্সি, রাত্রিকালীন ঘাম। । সিমরি কাপাস (সকালে বমি বমিভাব); পেট্রোলিয়াম; পালসেটিলা, ঈগ্নেশিয়া।
শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি।
পূর্বের ন্যায় আমরা এক্ষেত্রেও সাধারণ লক্ষণ ও মনোলক্ষণের আলোচনা করিব। কক্কুলাস শরীর ও মনের সর্বপ্রকার তৎপরতা মন্থর করিয়া দেয়, ফলে একপ্রকার পক্ষাঘাতিক দুর্বলতার সৃষ্টি হয়। স্নায়ুমন্ডলের সর্বপ্রকার অনুভূতিরই কেন্দ্রে পৌছিতে বিলম্ব হয়। যদি তুমি এই রোগীর পায়ের বুড়া আঙ্গুলে চিমটি কাট, সে তৎক্ষণাৎ “উঃ” করিয়া উঠার পরিবর্তে, এক মিনিট চুপ করিয়া থাকিবে এবং তারপর “উঃ করিয়া উঠিবে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সে বাহ্যতঃ চিন্তা করার পর, ধীরে ধীরে উত্তর দেয়, কিন্তু উহা তাহার চিন্তা করিবার চেষ্টা মাত্র। তাহার সকল স্নায়বিক লক্ষণের প্রকাশ, চিন্তা, পৈশিক কর্মতৎপরতা প্রভৃতি সবই এইরূপ। সে কোনরূপ পেশী সংক্রান্ত পরিশ্রম সহ্য করিতে পারে না। কারণ সে দুর্বল থাকে, সে ক্লান্ত থাকে। প্রথমে এইরূপ মন্থরতা আসে, তারপর আসে একপ্রকার দৃশ্যমান পক্ষাঘাতিক অবস্থা এবং তারপর দেখা দেয় সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত। এই পক্ষাঘাত বিশেষ কোন স্থানের অথবা সর্বাঙ্গীণ। হইতে পারে। স্ত্রী হয়ত তাহার স্বামীকে শুশ্রুষা করিতেছেন, কন্যা হয়ত পিতাকে শুশ্রুষা করিতেছেন, উৎকণ্ঠা-শ্রান্তি, অনিদ্রায় তিনি জীর্ণ হইয়া পড়িলেন। তিনি অবসন্নতা, কোনরূপ মানসিক বা শারীরিক পরিশ্রম করিতে অক্ষম হইয়া পড়িয়াছেন, তাহার হাঁটু দুর্বল, পৃষ্ঠদেশ দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে এবং যখন ঘুমাইবার সময় আসে, তিনি আর ঘুমাইতে পারেন না। এমনভাবে যে রোগের সৃষ্টি হয়, তাহা কক্কুলাস বিষ দ্বারা উৎপন্ন রোগের সদৃশ্য এবং সেইজন্য হ্যানিম্যানের সময় হইতে আজ পর্যন্ত রোগী শুশ্রুষা করার জন্য রোগে কক্কুলাস ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে; অবশ্য পেশাদার শুশ্রুষাকারীদিগের মধ্যে যেরূপ রোগ উপস্থিত হয়, সেরূপ রোগে নহে, কারণ, কক্কুলাসে বিরক্তি, উৎকণ্ঠা ও দীর্ঘকাল যাবৎ নিদ্রাহীনতার সমন্বয় প্রয়োজন হয়, যেমনটি তোমরা শুশ্রুষানিরত মাতা বা কন্যার মধ্যে, অথবা পরিবারের উৎকণ্ঠার সহিত সমদুঃখী শুশ্রষাকারীর মধ্যে, অথবা টাইফয়েড বা অন্য কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে স্বামীর শুশ্রুষারত স্ত্রীর মধ্যে দেখিতে পাইবে। এইরূপ কার্যের শেষে, তিনি শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা বিশিষ্ট হইবেন, তিনি ঘুমাইতে পারিবেন না, তাঁহার রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া দেখা দিবে, বমি বমিভাব বমন শিরোঘূর্ণন উপস্থিত হইবে। ইহা দ্বারা দেখা যাইতেছে যে, কক্কুলাসের রোগ কিভাবে আরম্ভ হয়। এইরূপ শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা বিশিষ্ট কোন এক ব্যক্তি হয়ত ঘোড়ায় চড়িয়া বাহির হইলেন। তাঁহার সবমন শিরঃপীড়া, পৃষ্ঠবেদনা, শিরোঘূর্ণন, বমি বমিভাব ও বমন দেখা দিবে। তিনি হয়, গাড়ী চড়িয়া কোথাও চলিলেন। তাঁহার সব মন শিরঃপীড়া দেখা দিবে। এক বা দুই মাইল যাইতেই তাহার বমি বমিভাব, বমন ও সবমন শিরঃপীড়া উপস্থিত হইবে। তিনি সর্বাঙ্গে দুর্বলতা বোধ করিবেন এবং তাহার মনে হইবে যে, তিনি ভাঙ্গিয়া পড়িবেন।
কক্কুলাসের রোগী যদি গাড়ী চড়েন, তাঁহার সবমন শিরঃপীড়া, বমি বমিভাব ও শিরোঘূর্ণন উপস্থিত হয়। কক্কুলাসের রোগী গতি সহ্য করিতে পারেন না। কথা বলিলে, সঞ্চালনে, চক্ষু নাড়াইলে, গাড়ী-ঘোড়া চড়িলে তিনি উপচয় গ্রস্ত হন। কোন কিছু দেখিতে হইলে সতর্কভাবে মাথা ঘুরাইবার জন্য তাঁহার যথেষ্ট সময় লাগে। তাঁহার নড়িতে চড়িতে, চিন্তা করিতে, সবকিছু করিতে প্রচুর সময় লাগে। সমগ্র শারীরবিধান মন্থর ও নিষ্ক্রিয় হইয়া পড়ে।
কম্পনযুক্ত, ক্লান্ত এবং অল্প ক্রুদ্ধ । কোন কিছু ধরিতে গেলে হাত কাঁপে, তিনি অকুশলভাবে জিনিষটি ধরেন এবং ফেলিয়া দেন। এই ঔষধটির সর্বত্র পেশীশক্তির অসামঞ্জস্য আছে, এইজন্য ইহা কশেরুক মাজ্জেয় ক্ষয়রোগে সাফল্যের সহিত ব্যবহৃত হয়। ইহাতে টলমল করা ভাব ও অসাড়তা আছে। অসাড়তা এই ঔষধের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ। নিম্নাঙ্গগুলির, হাতের আঙ্গুলের, কাধের, মুখের পার্শ্বের অসাড়তা। উল্কণ্ঠা হইতে রোগ।
স্নায়ুমন্ডলের অত্যধিক উত্তেজনা। সামান্য গোলমাল বা ঝকিলাগা অসহ্য। তোমরা শুনিয়াছ ‘বেল নড়াচড়ায় খারাপ হয়, কক্কুলাসেও সেইরূপ, ঠিক ‘বেলের ন্যায়। নিদ্রাশূন্যতা ও অন্যান্য সাধারণ লক্ষণেও কক্কুলাস ‘বেলেডোনা’র সদৃশ। সময়ে সময়ে সমুদ্রপীড়া বা মাথাঘোরা শরীরের সর্বত্র অনুভূত হয়, একপ্রকার মূৰ্ছার ভাব, কখন কখন তাহার পর সংজ্ঞাহীনতা, পক্ষাঘাতের ন্যায় স্তব্ধতা আসে। সন্ধিসমূহে আড়ষ্টতা ককুলাসের একটি সাধারণ লক্ষণ। উহা সকল অঙ্গেই বর্তমান থাকে। কিন্তু উহা এমন একটি প্রবল লক্ষণ যে, এস্থলে আমাকে তাহার উল্লেখ করিতে হইতেছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সোজা করিয়া ছড়াইয়া দিলে এবং সামান্যক্ষণ ঐভাবে রাখিলে, সঙ্কোচন করিবার সময় যন্ত্রণা করে। যে-সকল লোক উৎকণ্ঠায় কষ্টভোগ করিতেছে ও অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে, তাহারা চিৎ হইয়া শুইয়া, অঙ্গসমূহ ছাড়াইয়া দিবে এবং বহু কষ্ট করিয়া উঠিতে পারিবে। ডাক্তার আসিয়া ব্যাপারটি আবিষ্কার করেন। তিনি অঙ্গাদি বাকান, আর সে চীৎকার করিয়া উঠে, কিন্তু বাকানর পর সে উপশম পায় এবং তখন সে উঠিয়া চলাফেরা করিতে পারে। অন্য কোন ঔষধে তুমি এমনটি দেখিতে পাইবে না। ইহার সহিত কোনরূপ প্রদাহ থাকে না। ইহা একপ্রকার পক্ষাঘাতিক আড়ষ্টতা, শ্রান্ত দেহ ও মনের একপ্রকার পক্ষাঘাত। ইহার সহিত কক্কুলাস-জ্ঞাপক শিরঃপীড়া ও পৃষ্ঠবেদনা, যন্ত্রণা ও কষ্ট বর্তমান থাকে। কেহ হয়ত চেয়ারে বসিয়া পা ছড়াইয়া দিবে, কিন্তু তারপর হাত নামাইয়া সাহায্য না করিলে উহা আর মুড়িতে পারিবে না। এইরূপ ব্যাপারগুলি অদ্ভুত। শরীর নাড়াইতে গেলে মূৰ্ছাভাব, অন্ত্রাদিতে বেদনা হইতে, শূলবেদনা হইতে মূৰ্ছাভাব। এইরূপ চিন্তা ও কর্মতৎপরতার মন্থরভাবের সহিত রোগী যন্ত্রণায় অত্যনুভূতিযুক্ত, বেদনায় অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে।
বিদ্যুতাঘাতের ন্যায় শরীরের মধ্যে আক্ষেপ, নিদ্রাহীনতার পর খেঁচুনি। এইরূপ স্নায়বিক, উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা ও নিদ্রাহীনতা চলিতে চলিতে রোগীর আক্ষেপ উপস্থিত হয়। ধনুষ্টঙ্কার, তান্ডব নর্তন রোগ, যন্ত্রণাবিশিষ্ট পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা, মুখের ও চক্ষের পক্ষাঘাত, দেহের সকল স্থানের পেশীর পক্ষাঘাত, অঙ্গসমূহের পক্ষাঘাত। ডিপথেরিয়া রোগেও নিদ্রাহীনতা ও উৎকণ্ঠাহেতু, আমি যেরূপ বর্ণনা করিলাম, তাহার অত্যন্ত অনুরূপ অবস্থা উৎপন্ন হইতে দেখা গিয়াছে। আমার নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাতবিশিষ্ট একটি রোগীর কথা মনে পড়ে অনেক বৎসর তিনি একজন বিশেষ যত্নশীল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসিত হইতেছিলেন। আমার চিকিৎসা ব্যবসায় এবং রোগী পৰ্যবেক্ষণের গোড়ার দিকে, ইহা আমাকে বিশেষভাবে আশ্চর্যান্বিত করিয়াছিল। রোগটি ছিল একটি ছোট বালিকার ডিপথেরিয়ার পরবর্তী নিম্নাঙ্গে পক্ষাঘাত এবং তাহাকে আরোগ্যের কোন আশাই দেওয়া হয় নাই। কিন্তু ডাঃ মুর (তিনি তখন অশীতিপর বৃদ্ধ) রোগীটিকে দেখিতে আসিলেন। আমি ঐ পরিবারের সহিত পরিচিত ছিলাম এবং ঐ ডাক্তারের সহিত উপস্থিত ছিলাম। তিনি যত্নের সহিত রোগীটি দেখিলেন এবং কক্কুলাস-সি-এম দিলেন। অল্পদিনমধ্যেই শিশুটি পা নাড়িতে আরম্ভ করিল, এবং অবস্থাটি সম্পূর্ণভাবে অপসৃত হইল এবং আমারও বিস্ময়ের সীমা রহিল না। রোগটির মূল উপাদানগুলির সহিত মিলাইয়া সুন্দরভাবে ঔষধ ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। ডাঃ মুর, লিপে ও হেরিংয়ের ছাত্র ছিলেন।
শুশ্রুষা করিবার সময়, আমরা যেরূপ উৎকণ্ঠা ও নিদ্রাহীনতা হইতে মানসিক কুৰ্ম্মতৎপরতার মন্থর অবস্থা দেখিতে পাই, তাহার ফল যে কিরূপ হইবে, তাহা আমরা কদাচিৎ বুঝিতে পারি। মন ক্রমশঃ জড়তার দিকে অগ্রসর হইতে থাকে এবং একটি আদর্শ কক্কুলাস রোগীকে দেখিলে, তুমি আশ্চর্য হইয়া ভাবিবে যে, রোগীটি দুই এক বৎসরের মধ্যে উন্মাদ হইয়া যাইবে কি কারণ তাহার মন একেবারেই শূন্য হইয়া যায়। সে শূন্যের দিকে তাকাইয়া থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রশ্নকারীর দিকে চক্ষু ফিরাইয়া অতি কষ্টে তাহার কথার উত্তর দেয়। এরূপ অবস্থা স্নায়বিক। অবসন্নতায়, টাইফয়েড জ্বরে দেখা দেয়। ইহা এসিড ফসে’র এত সদৃশ যে, দুইটি ঔষধের পার্থক্য যত্নের সহিত নির্ণয় করা উচিত। সময় যেন দ্রুত চলিয়া যায়। সে উপলব্ধি করিতে পারে না যে, রাতটি কাটিয়া গেল । সে এতই হতবুদ্ধি থাকে, একটি সপ্তাহ চলিয়া গেলেও তাহার নিকট উহা একটি মুহূর্ত বলিয়া মনে হয়। ধীরে ধীরে বোধগম্য হয়; তাহার মন এত ধীরে কাজ করে যে মনের ভাব প্রকাশ করিবার মত ঠিক কথাটি খুঁজিয়া পায় না, যাহা ঘটিয়া গিয়াছে, তাহা স্মরণ করিতে পারে না, যাহা পড়িয়াছে, তাহা তৎক্ষণাৎ ভুলিয়া যায়, আলাপ আলোচনা করিতে পারে না, সামান্য গোলমালও সহ্য করিতে পারে না। জিহ্বা সাড়া দেয় না। মনের গোলমাল থাকে এবং শব্দ উচ্চারণ করিতে কষ্ট হয়। মনে যে ধারণাটি আসে, তাহা চাপিয়া বসে। সে উহা রূপান্তরিত করিতে পারে, সরাইতে পারে না; উহা ঐস্থানেই থাকিয়া যায় এবং সে যদি কথা বলে, তাহা হইলে এমন কিছু বলিবে, যাহা হইতে তোমরা বুঝিতে পারিবে যে, সেই ধারণাটিই তাহার মনে বদ্ধমূল হইয়া রহিয়াছে। সুতরাং সে মানসিক জড়তার মধ্যেই থাকিয়া যায়। শিরোঘূর্ণনের সহিত মানসিক গোলযোগ। অধিকাংশ মানসিক লক্ষণের সহিত শিরোঘূর্ণন থাকে। সে দৃশ্যতঃ এক প্রকার সংজ্ঞাহীন অবস্থায় শুইয়া থাকে, কিন্তু যাহা কিছু ঘটিতেছে, তাহার সবকিছুই বুঝিতে পারে এবং সময়ে সময়ে যাহা ঘটিতেছিল, তাহা স্মরণ করিতে ও বর্ণনা করিতে পারে; কিন্তু চক্ষে পলক ফেলে না, একটি পেশীও নাড়ায় না। মুখে একপ্রকার ভাববাচ্ছ্বাস মৃদু হাসি দেখা দেয়। সবকিছুই জানে, পেশীসমূহের সম্পূর্ণ শিথিলতার জন্য দৃশ্যতঃ বাক্যহীন এবং কাহাকেও চিনিতে পারিতেছে না, এরূপভাবে পড়িয়া থাকে। সম্পূর্ণ শিথিলিত অথচ যাহা ঘটিতেছে, তাহার সবকিছুই বুঝিতে পারে। ইহা নড়াচড়া ও কথা বলার অক্ষমতা অর্থাৎ ক্যাটাটোনিয়া রোগের সদৃশ। চিন্তা করিতে পারে না। মৃত্যুকে ভয় করে। মনে করে, যেন ভয়ানক কিছু ঘটিতে চলিয়াছে। ইহার সবকিছুই দুঃখ, উৎকণ্ঠা, বিরক্তি ও দীর্ঘকালব্যাপী নিদ্রাহীনতার ফল। বমি বমিভাবের সহিত শিরোঘূর্ণন বর্তমান থাকে। কক্কুলাসের রোগী গাড়ীর জানালা হইতে বাহির দিকে চাহিলে, নৌকা হইতে নীচের দিকে চাহিলে জলের স্রোত দেখিলে তৎক্ষণাৎ বমি বমিভাবযুক্ত হইয়া পড়ে।
সম্ভবতঃ, এখন তোমরা অনুমান করিতে পারিবে যে, মস্তক লক্ষণ কিরূপ হইতে পারে। শিরঃপীড়ার সহিত মাথাঘোরা, অত্যন্ত বমি বমিভাব এবং পাকাশয়িক লক্ষণগুলি উপস্থিত হয়। মালটানা গাড়ীতে চড়িলে, মোটর গাড়ীতে চড়িলে, জাহাজে চড়িলে, শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়, সঞ্চালন গতিতে শিরঃপীড়া। চলমান জিনিষের দিকে চাহিতে পারে না, শিরোঘূর্ণন, ঘুরনি, শিরঃপীড়া দেখা দেয়। মাথায় রক্তসঞ্চয়, চাপনবৎ, দপদপকর শিরঃপীড়া। শিরঃপীড়া—যেন মাথার খুলিটি ফাটিয়া যাইবে অথবা যেন একটি বড় কপাটিকার ঢাকনি বন্ধ হইতেছে ও খুলিতেছে। সবমন শিরঃপীড়ার সহিত শিরোঘূর্ণন। আবার রৌদ্রে কাজ করার জন্য শিরঃপীড়া। গাড়ীতে চড়িলে সবমন শিরঃপীড়া।
অস্পষ্ট, দৃষ্টি, এবং দৃষ্টিশক্তির গোলযোগ। চক্ষুর পেশীসমূহের এবং তৎসহ সামঞ্জস্যবিধায়ক পেশীগুলির পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা, মুখমন্ডল, বিবর্ণ ও রুগ্ন হয়। মুখমন্ডলে যন্ত্রণা, শিরোঘূর্ণন ও বমনেচ্ছার সহিত মৃতের ন্যায় বিবর্ণ মুখমন্ডল। মুখমন্ডলে ছিন্নকর বেদনা। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল। মুখ স্ফীত। মুখের পেশীগুলির কম্পন ও সঙ্কোচন। মুখের পেশীগুলির পক্ষাঘাত। মুখমন্ডলের অসাড়তা। মোচড়ান, ঝাঁকিমারা, অসাড়তা, পক্ষাঘাত, ছিন্নকর বেদনা।
ককুলাসের অধিকাংশ রোগেই শয্যাশায়িতা ও স্নায়বিক অবসন্নতা থাকে।
পাকস্থলী লক্ষণ। খাদ্যে অপ্রবৃত্তি। মুখে ধাতব আস্বাদ। মুখে তিক্ত আস্বাদ। মুখে অম্ল, বমনজনক আস্বাদ, কোন খাদ্যেই লোভ হয় না। সামান্য জ্বর বা একটু সর্দির সহিত সে পীড়িত হইয়া শুইয়া থাকে। শিরঃপীড়া, শিরোঘূর্ণন, বমনেচ্ছা, খাদ্যে অপ্রবৃত্তি। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, বিশেষতঃ পায়ের হাড়ে ঐ অদ্ভুত প্রকার আড়ষ্টতা, বমিবমিভাব ও খাদ্যে অপ্রবৃত্তির সহিত যন্ত্রণাকর সবিরাম জ্বর। সবিরাম জ্বরে অথবা দুষ্ট প্রকৃতির টাইফয়েড অবস্থায় আমরা এই প্রকার বমনেচ্ছার সহিত খাদ্যে অপ্রবৃত্তি পাই। তুমি রোগীর শয্যাপার্শ্বে গিয়া শুশ্রষাকারীকে জিজ্ঞাসা কর, “আপনি রোগীকে কি খাওয়াইতেছেন?” আর রোগীর মুখরোধ হইতে থাকিবে। খাবারের চিন্তাতেই রোগীর গলরোধ হইয়া পড়ে। শুশ্রূষাকারী বলিবেন, যতবারই তিনি খাবার কথা বলেন, ততবারই রোগীর মুখরোধ হয়। খাদ্যের চিন্তা বা অন্য ঘরের বা রান্নাঘরের খাদ্যের গন্ধেও রোগীর বমি আসে। দুইটি ঔষধে এই লক্ষণ আছে, উহারা কক্কুলাস ও কলচিকাম’।
পক্ষাঘাতের ন্যায় অবস্থা। গলনলীর পক্ষাঘাত। গিলিতে পারে না। “ডিপথেরিয়ার পর গলার পক্ষাঘাতিক অবস্থা। দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরের সহিত গলক্ষতজ্বরটি চলিয়া গিয়াছে, কিন্তু রোগীর স্বাস্থোন্নতি হয় নাই, অত্যন্ত স্নায়বিক কম্পন, অসাড়তা, পেশীসমূহের উৎক্ষেপ এবং অতিশয় দুর্বলতা রহিয়া গিয়াছে। মনে হয়, যেন পাকস্থলীর মধ্যে পোকা হাঁটিতেছে। পাকস্থলীর আক্ষেপ। প্রবল পাকাশয়-প্রদাহের আক্রমণ, তৎসহ পাকস্থলীতে ভীষণ খালধরা। চাপিয়া ধরা, চিমটি কাটা, আকুঞ্চনের ন্যায় বেদনা। অন্ত্রের মধ্যে বেদনা, যেন দুইখানি তীক্ষ্ণ পাথরের মধ্যে উহাতে পেষণ করা হইতেছে। ইহাতে মূৰ্ছা ও বমন উৎপন্ন করে। অন্ত্রাদিতে শূলবৎ বেদনা, টাইফয়েড জ্বরে যেরূপ দেখা যায়, তদ্রুপ অত্যন্ত পেট-ফ্লপ; কিছু পান করার পর উদরের মধ্যে টানবোধ, বায়ুসঞ্চয়জনিত শূলবেদনা। অন্ত্রাদিতে ছিন্নকর, কাটিয়া ফেলার ন্যায় আক্ষেপিক বেদনা। উদরাময়ের আনুষঙ্গিক অন্ত্রাদিতে বিস্তারশীল বেদনা। সরলান্ত্রের পক্ষাঘাতিক অবস্থা মলত্যাগকালে কোঁথ দেওয়ার অক্ষমতা। মলবেগ ও সরলান্ত্রে জ্বালা। মলত্যাগের প্রবৃত্তি, কিন্তু অন্ত্রের উপর দিকে বমনক্রিয়ার অভাব।
প্রচুর ঋতুরক্তস্রাব, অতি শীঘ্র শীঘ্র ঋতু, উহা দীর্ঘকালস্থায়ী হয়। ঋতুকালের দুই সপ্তাহ পুর্বে ঋতু। দুঃখ হইতে ও উৎকণ্ঠা হইতে এবং দীর্ঘকালব্যাপী নিদ্রাহীনতা হইতে, অবসন্না স্ত্রীলোকদিগের ঋতুস্রাব খুব শীঘ্র শীঘ্র দেখা দেয়, উহা প্রচুর ও দীর্ঘকালস্থায়ী হয়। শিরঃপীড়া, শিরোঘূর্ণন ও বমি বমিভাব। ঋতুস্রাবকালে অন্ত্রাদিতে ভীষণ খালধরার ন্যায় বেদনা, জরায়ুতে মুঠা করিয়া ধরার ন্যায় বেদনা। আবার, যেরূপ রোগীর কথা বলা হইল তাহাদের ঋতুললাপ দেখা দিতে পারে অথবা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরিয়া ঋতু দেখা দিবে না অথবা ঠিক যে-সময়ে ঋতুস্রাব হওয়া উচিত ছিল তখন প্রচুর প্রদরস্রাব দেখা দিবে, এবং তাহা ঋতুস্রাবের স্থান গ্রহণ করিবে। রোগিণী শীর্ণতাপ্রাপ্ত এবং ক্রমশঃ অধিকতর শীর্ণ ও হরিৎপাণ্ডু রোগগ্রস্ত হইয়া পড়েন। মুখমন্ডল সবজেটে হলদে, ম্লানবর্ণ হয়। “ঋতুস্রাবের পরিবর্তে প্রদরস্রাব অথবা দুই ঋতুর মধ্যবর্তীকালে প্রচুর প্রদরস্রাব।” ব্যবত্তাকালে প্রচুর প্রদরস্রাব।
হৃৎপিন্ড দুর্বল, নাড়ী ক্ষীণ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা, পেশীসমূহের অসাড়তা; উৎক্ষেপ ও কম্পন, অনুভূতি নাশ, শক্তিহীনতা, সকল অঙ্গের পৈশিক দুর্বলতা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অসাড়তা ও পক্ষাঘাতের ন্যায় অনুভূতি। হাতের ও হাতের আঙ্গুলের অকুশলতা। এক হস্তকে অন্য হস্ত দিয়া ধরিতে চেষ্টা করলে, একস্থান হইতে অন্যস্থানে সঞ্চরণশীল অসাড়তা, কিম্বা পক্ষাঘাতের ন্যায় দুর্বলতার সহিত সংশ্লিষ্ট অধিকতর স্থায়ী ভাবের, কখন কখন পরিবর্তনশীল।
অসাড়তা; কখন কখন একপার্শ্ব অসাড় ও অপর পার্শ্ব পক্ষাঘাতিক বোধ হয়। পায়ের তলা দুইটি অসাড় হইয়া পড়ে, যেমনটি গতিজনক স্নায়ুসমূহের পক্ষাঘাতে দেখিতে পাই; পায়ের পাতার শীতলতা। দুর্বলতার জন্য হাঁটু দুইটি অক্ষম হইয়া পড়ে, হাঁটিবার সময় থরথর করিয়া কাপে এবং মনে হয়, যেন সে একপার্শ্বে পড়িয়া যাইবে। হাঁটু দুইটি আড়ষ্ট। পৃষ্ঠের নিম্নাংশ হইতে আরম্ভ করিয়া নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত। ঠান্ডা লাগিয়া অথবা মার্কারি’র অপব্যবহার হইতে উহা উৎপন্ন। হয়। নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত, তত্সহ আড়ষ্টতা, অসাড়তা এবং থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় ব্যথা।
দীর্ঘকাল যাবৎ শুশ্রূষা করা অথবা রাত্রি জাগরণহেতু নিদ্রাহীনতা; এই লক্ষণটির উপর আমি পুনঃ পুনঃ তোমাদের মনোযোগ আকৃষ্ট করিয়াছি। নিদ্রাহীনতার কুফলস্বরূপ, উৎকন্ঠাপূর্ণ ও ভীতিকর স্বপ্ন। “সামান্যমাত্র নিদ্রাহীনতাও তাহাকে পীড়িত করে।
[Cocculus, diminutive of Coccus, Kokkos, a berry.]
অপরনাম — মেনিসপারমাম ককিউলাস (Menispermum Cocculus),
ফিস বেরিস (Fish berries), ইণ্ডিয়াণ
বেরিস (Indian berries), কাকমারি (বাংলা নাম)।
মেনিসপারমেসী জাতীয় ককিউলাস ইণ্ডিকাম নামক গাছের ফল ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে জন্মে। এর শুকনো বীজ চূর্ণ থেকেই ঔষধার্থে মূল অবিষ্ট তৈরী করা হয়।
পিক্রোটক্সিন এর কাজের অ্যাকটিভ প্রিন্সিপ্যাল।
১। ঘাড়ের পেশী দুর্বলতা, এমনকি মাথা সোজা করে রাখতে কষ্ট হয়।
২। কোমরে দুর্বলতা ও পক্ষাঘাতেমত অনুভূতি। হাঁটবার সময় কোমর ভেঙ্গে আসে; দাঁড়াতে, হাঁটতে, চলতে অথবা কথা বলতেও কষ্ট হয়।
৩। হাত – পা অসাড় হয়ে যায়, ঝিঁঝিঁ ধরে।
৪। বমি বমি ভাব ও বমন সহকারে শিরঃশীড়া; বিছনায় উঠে বসলে, গাড়ী বা নৌকায় চড়লে মূৰ্ছার উপক্রম হয়। অসুস্থ বোধ করে।
৫। সৰ্বাঙ্গীন দুর্বলতার অনুভূতি, অথবা মাথা, পাকস্থলী ও পেট প্রভৃতিতে দুৰ্বলতা, শূণ্যতা ও কোন কিছু যেন নেই এরূপ অনুভব করে; নিদ্রাহীনতায় বা রাত্রি জাগরণে ওর বৃদ্ধি হয়।
৬। অত্যন্ত বায়ুস্ফীতি ও পেট ডাকা, ঋতুস্রাবজনিত উদর বেদনা সঞ্চারে পেটের অতিশয় স্ফীততা, বায়ুজনিত বা ঋতুকালীন শূলবেদনা, খাল ধরার ন্যায়
বেদনা, হর্নিয়ার আশঙ্কা হয়।
৭ । হ্রাস-বৃদ্ধি-উঠে বসলে, নড়লে চড়লে, গাড়ী বা নৌকায় আরোহনে, ধূমপান, কথা বললে, আহারে, পানে ও রাত্রি জাগরনে কষ্ট বাড়ে; চুপ করে শুয়ে থাকলে উপশম হয়।
ককিউলাস – একটি আলোচনা
ফ্যারিংটন বলেন—ককিউলাসের ক্রিয়া মস্তিষ্ক ও সুষুম্নকান্ডে অর্থাৎ সেরিব্রো-স্পাইন্যাল সিস্টেম দেখা যায়, এবং সেইজন্যে ঐসব যন্ত্রে অতিশয় দুর্বলতা উৎপন্ন হয়। এর দ্বারা মেরুদন্ডের, বিশেষ করে মোটর নার্ভের এক প্রকার পক্ষাঘাতিক দুৰ্ব্বলতা উৎপন্ন হয়। তাই মেরুদন্ড মজ্জা বা স্পাইন্যালকর্ডের রোগ বশতঃ পক্ষাঘাত জমালে এই ঔষধ সচরাচর ব্যবহৃত হয় ও নিশ্চিত ভাবে উপকার করে। রোগের প্রথমাবস্থায় বিশেষ করে যখন মেরুদন্ডের নিম্নদেশ বা লাম্বার রিজিয়ন আক্রান্ত হয়, কোমরে বা মাজায় পক্ষাঘাতের মত দুৰ্বলতা অনুভূত হয়, হাঁটবার সময় কোমর ভেঙ্গে পড়ে বলে মনে হয়, তখনই এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী। পাদুটি দুর্বলতা বিশেষ করে সমস্ত নিম্নাঙ্গে দুর্বলতা থাকে, হাঁটবার সময় হাটু ভেঙ্গে পড়ে, পায়ের তলা অসাড় হয়ে পড়ে। উরুদুটি যন্ত্রনা হয় যেন উহার থেৎলে গেছে, প্রথমে একহাত ঝিনঝিন করে, পরে অপর হাত ও ঝিনঝিন করে, কখনও বা সমগ্র হাতটাই ঝিনঝিন করে, মনে হয় হাতটি ফুলে গেছে।
এইলক্ষণগুলি ককিউলাসের লক্ষণতত্ত্বের ভিত্তিস্থল। মেরুদন্ডের দুর্বলতা থেকে এই সকলের উৎপত্তি হয় বলে মনে হয়।
ডানহাম বলেন যে, ককিউলাসের মুখ্য ক্রিয়া প্রথমতঃ ঐচ্ছিক পেশীতন্ত্রে (voluntary muscular system), ও পরে মস্তিষ্কে ইন্দ্রিয়জ্ঞানের কেন্দ্রস্থলে জন্মে। তাই বিবমিষার বমি বমি ভাব বমিতে পরিণত হয়, ও তার সঙ্গে মূর্চ্ছাভাবও মাথা তুললে প্রচন্ড মাথা ঘোর ককিউলাসের চরিত্রগত লক্ষণরূপে প্রকাশ পায়।
ডা. হিউজ বলেন “বুদ্ধিবৃত্তি অপেক্ষা ঐচ্ছিক পেশী বা ভোলেনটারী মাসলসেই ককিউলাসের অধিক প্রভাব দেখা যায়”।
হ্যানিম্যানের পরীক্ষা লক্ষণও এর মত।
প্যারিয়া বলেন—’ইহা মানসিক বৃত্তিসমূহ অপেক্ষা ঐচ্ছিক পেশী সমূহের উপর অধিক ক্রিয়া প্রকাশ করে। অর্থাৎ ডা. প্যারিয়া ও ডা. হিউজের উক্তিতে কোন পার্থক্য নেই”।
আমরা বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে এই সব উদ্ধৃতি দিলাম, কারণ বাস্তব ক্ষেত্রে এরা আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করে, এবং ডা.হিউজ বলেন হ্যানিম্যানের পরীক্ষা লক্ষণগুলি এই সব অনুমানগুলিকেও সমর্থন করে।
নীচে ককিউলাসের কতকগুলি পরীক্ষা লক্ষণের উল্লেখ করা হল-
১। ঘাড়ের পেশী দুর্বলতা সহ মাথায় ভার বোধ, পেশীগুলি মাথাকে ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে হয়। (ক্যাল ফস, ভেরেট্রাম আলবাম)।
২। কটিতে পক্ষাঘাতের মত বেদনা, তার সঙ্গে কুচকীর আড়াআড়ি ভাবে আক্ষেপিক টান, এতে রোগী ঠিকমত হাঁটতে পারে না।
৩। দুৰ্বলতা বশতঃ হাটু ভেঙ্গে পড়ে, চলতে গেলে টলমল করে এবং একদিকে পড়ে যাওয়ার ভয় হয়।
৪। একবার তার পায়ের পাতায় ঝিঁঝিঁ ধরে, আবার তার হাতেও ঝিঁঝিঁ ধরে।
৫। খাওয়ার সময় হাত কাপে এবং যত বেশী হাত তোলে তত বেশী হাত কাপে।
৬। কখনও এক হাতে বা কখনও অন্য হাতে ঝিঁ ঝিঁ ধরে ও অসাড় বোধ হয়ে যায়। বসে থাকলে পায়ের তলায় ঝিঁঝিঁ লাগে।
৮। পৃষ্ঠবেদনা সহকারে পক্ষাঘাত বা দুর্বলতার সাধারণ আক্রমণ জন্মায়।
মন্তব্য–
এইগুলি অ্যালেনের এনসাইক্লোপিডিয়া অব পিত্তর মেটেরিয়া মেডিকা থেকে গৃহীত ও সত্য বলে প্রতিপন্ন ককিউলাসের লক্ষণ।
এদের খুব সহজ করে দেওয়া হয়েছে।
এণ্ডলি আবার পূৰ্ব্বোক্ত পন্ডিতগণে উদ্ধৃতির সঙ্গে মিলেও যায়; এবং যেহেতু এইগুলি মেরুদণ্ড ও ঐচ্ছিক পেশীর উপর ক্রিয়াবশতঃ উৎপন্ন, সেইজন্য এইগুলি হ্যানিম্যানের নির্দেশমত অসুস্থকে আরোগ্য করার জন্য সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন অব্যবসায়ীগণের দ্বারাও ব্যবহৃত হতে পারে। আর এই ক্ষেত্রে আরোগ্যকর ঔষধটিও কল্পনাকারী মনগড়া ঔষধ ব্যবস্থাপকদের হাত থেকেও মুক্তি পেয়েছে।
তাই ককিউলাসের কোন একটি রোগীকে যদি এই লক্ষণগুলির দ্বারা আরোগ্য করা যায় তবে তা প্রত্যেক আরোগ্য সাধ্য রোগীকেও আরোগ্য করবে।
২। স্নায়ুমণ্ডলে ককিউলাসের সমগ্র ক্রিয়াকে আমরা এক কথায় প্রকাশ করতে পারি।
কথাটি হল—অবসাদ বা অবসন্নতা।
কিন্তু কেবল অবসন্নতার উপর নির্ভর করে হেমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহার করা যায় না। অনেকগুলি ঔষধেই ভয়ঙ্কর অবসন্নতা লক্ষণ আছে। প্রত্যেক ঔষধের অবসন্নতার প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন অর্থাৎ স্বতন্ত্র ধরনের। আর এই স্বতন্ত্রতানুসারেই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। শারীরতত্ত্ব অনুসারে উহারা ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে প্যাথলজিক্যাল কন্ডিশান যা হোক না কেন, লক্ষণতত্ত্ব অনুসারেই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
কারণ নিদানগত অবস্থা যা হোক না কেন হ্যানিম্যানের উপদেশ অনুসারে লক্ষণতত্ত্ব ছাড়া হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহার করা যায় না।
৩। সৰ্বাঙ্গীন অবসন্নতা ও মেরুদন্ডের উপদ্রব সংক্রান্ত লক্ষণগুলি ছাড়াও ককিউলাসের আরো কতকগুলি বিশেষ লক্ষণ আছে, যারা প্রত্যেকেই এর প্রকৃতি গত। যথা-
ক) মস্তকের বিশৃঙ্খলা ও জড়তা, পানাহারে ওর বৃদ্ধি।
খ) নেশাখোরের মত মাথাঘোরা ও মনের গোলমাল ভাব।
গ) বিছানায় উঠে বসলে চক্রাকারে মাথা ঘুরে, সেজন্য রোগীকে শুতে হয়।
ঘ) বিবমিষা ও বমন প্রবৃত্তিসহ সবমন মাথাঘোরা।
ঙ)গাড়ী বা নৌকায় চড়লে উপরোক্ত লক্ষণগুলির বৃদ্ধি হয়।
চ) সামুদ্রিক পীড়া (sea sickness); জাহাজের ডেকের উপরের বিমূক্ত শীতল বায়ুতে উপশম।
(জাহাজের ডেকের উপর বিমুক্ত শীতল বায়ুতে বিবমিষার বৃদ্ধি ট্যাবেকামের লক্ষণ)
পার্থক্য–
ককিউলাসের মাথাঘোরা ও মাথাবেদনা ব্রায়োনিয়া থেকে আলাদা, যদিও বিছানায় উঠে বসলে উভয় ঔষধেই বৃদ্ধি হয়।
ব্রায়োনিয়াও অন্য কতকগুলি ঔষধে মাথা বেদনার আগে বমিভাব জন্মে কিন্তু ককিউলাসে ঠিক এর উল্টে। মাথার দুর্বলতা বা কষ্টদায়ক শূণ্যতার অনুভূতি ককিউলাসে আছে এবং ইহা সৰ্বাঙ্গীন দুৰ্বলতার সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ। এই শুন্যতার অনুভূতি প্রকৃতি পক্ষে দুৰ্ব্বলতারই নামান্তর। ইহা ককিউলাসের একটি সাধারণ প্রকৃতিগত লক্ষণ। ইহা সাধারণত মাথায়, পেটে, অন্ত্রে, বুক, হৃৎপিন্ডে ও পাকস্থলীতে দেখা যায়।
সংক্ষেপে- দেহের সকল আভ্যন্তরিক যন্ত্রেই এই শূণ্যতানুভব লক্ষণ বর্তমান থাকে।
ককিউলাসের শিরঃপীড়ায় যে অবিরত গা বমি বমি ভাব বর্তমান থাকে তা কতকটা কলচিকামের মত, যেমন খাদ্যে অতিশয় অরুচি,এমনকি খাদ্যের গন্ধেও গা বমি বমি জমায়, যদিও ভিতরে খিদে থাকে। তবে কলচিকামের গা বমি বমি ও অরুচি আরো সুস্পষ্ট, বমির চোটে রোগীর মূর্চ্ছা যাওয়ায় ভাব হয়।
ককিউলাসের মুখে ধাতব আস্বাদ থাকে, মস্তিষ্কের যে প্রগাঢ় অবসাদ জমায় তাতে রোগীর সর্বাঙ্গীন স্নায়ুমন্ডল আক্রান্ত হয়, বা সব্বাঙ্গীন স্নায়ুমন্ডলের যে রকম প্রগাঢ় অবসাদ (depression) দেখা যায়, মস্তিষ্কেরও সেই রকম অবসাদ জন্মে। রোগী বিমর্ষ, উন্মাদ ও বিষাদ-পূৰ্ণ চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে নীরবে ঘরের এককোণে বসে থাকে। সাধারণতঃ স্নায়বিক জ্বরেই এই প্রকারের বিশেষ অবস্থা দেখতে পাওয়া যায়।
অবসাদ অবসাদ অবসাদই ককিউলাসের প্রধান লক্ষণ।
৪। পেটে (উদর প্রদেশে) ও জরাযু প্রদেশে ককিউলাসের কয়েকটি অতি প্রয়োজনীয় লক্ষণ আছে। যেমন
উদরের অতিশয় স্ফীততা। ইহা পেটে বায়ুজমাজনিত পেটের শুল বেদনা ও ডিসমেনোরিয়া বা বাধক রোগে অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
বায়ু জমা জনিত উদর শূল বেদনায় ককিউলাস একটি মূল্যবান ঔষধ। এতে রোগীর পেট যেন ধারাল পাথরে বা পাথরকুচিতে বা ধারল কাঠিতে পূর্ণ বলে মনে হয়। সচরাচর মধ্য রাত্রিতে রোগের আক্রমন হয়। উদর বায়ু স্থানে স্থানে জমে আছে বলে মনে হয়, কিন্তু উহা নির্গত হলেও রোগীর কষ্টের উপশম হয়, কারণ আবার নূতন করে বায়ু জমে এবং উহার স্থান গ্রহণ করে।
তারপর কুঁচকিতে (ইঙ্গুইন্যাল রিজিয়ানে) অত্যন্ত চাপ বোধ হয়, মনে হয় যেন হার্নিয়া (অন্ত্রবৃদ্ধি) জমাবে।
ডিসমেনোরিয়া বা বাধক রোগে উদরের স্ফীততার সঙ্গে প্রচন্ড পেট কামড়ানি, ও খাল ধরার মত বেদনা থাকে, এর সঙ্গে থাকে অত্যন্ত দুর্বল।
রোগিণীর এতই দুৰ্বলতা জন্মে যে, সে দাঁড়াতে, বেড়াতে ও কথা বলতে পারে না।
এই দুৰ্বলতা ককিউলাসের একটি বিশেষ লক্ষণ।
পার্থক্য–
কার্বো অ্যানিমেলিসের ও এইরকম দুর্বলতার লক্ষণ আছে। তবে ককিউলাসের দুর্বলতা সৰ্বাঙ্গীন অবসন্নতাবশতঃ হয়ে থাকে, আর কাৰ্ব্বো অ্যানিমেলিসের দুর্বলতা বক্তবের জন্য হয়।
ককিউলাসের রক্তস্রাব মোটেই বেশী হয় না বা হলেও ক্রমে ক্রমে কমে যায় বা ঋতুর পরিবর্তে প্রদর স্রাব হতে আরম্ভ করে, এমনকি দুই ঋতুর মধ্যবর্ত্তকালেও প্রদর ব বর্তমান থাকে।
চিকিৎসায় কৃতকাৰ্য্য হতে হলে এই রকমভাবে ঔষধের পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে।
ককিউলাসের চারটি প্রধান চরিত্রগত লক্ষণ-
এখন যদি আমাকে এই ঔষধের চারটি প্রধান চরিত্রগত লক্ষণ দিতে হয়, তাহলে সেগুলি হল-
১) ঘাড়ের পেশীর দুর্বলতা সহ মাথা ভার।
২) রেলগাড়ী, ঘোড়ারগাড়ী বা নৌকায় চড়লে রোগ জন্মায় ও বাড়ে।
৩) বিভিন্ন যন্ত্রে দুর্বলতা ও শূণ্যতার অনুভূতি।
৪) নিদ্রাহীনতা, রাত্রি জাগরণ বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কুফল। (কষ্টিকাম, কুপ্রাম মেট, ইগ্নেসিয়া, নাইট্রিক অ্যাসিড)।
তুমি আর কি যোগ করবে ভাই।