হাইপেরিকাম পারফোরেক্টাম HYPERICUM PERFORATUM [Hyper]

স্নায়ুতে আঘাত, তার সহিত অত্যন্ত ব্যথা ও টানাটানি।
মাথা, মেরুদণ্ড, ককসিক্সে আঘাত পরবর্তি উপসর্গ।
আবহাওয়ার পরিবর্তনে স্নায়ুশুল প্রকারের বেদনা।
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, গয়ের উঠলে উপশম।
কেউ যেন তাকে শূন্যে ধরে রেখেছে এবং সে স্থান হতে নীচে পড়ে যাওয়ার ভয়।

উপযোগিতা – মেরুদন্ডে আঘাত, মেরুদন্ডে ও মস্তিষ্ক স্নায়ুতে আঘাত লাগার কুফলে, কক্সিক্স (Coccyx—মেরুদন্ডের নীচের দিকে শেষ হাড়) এ পড়ে গিয়ে আঘাত লেগে যন্ত্রণা হলে ব্যবহার্য।

ছিদ্র হয়ে, ফেটে বা ছড়ে গিয়ে আঘাত তাতে টাটানি ব্যথা (লিডাম) পিষে গিয়ে ঘা হলে—আর্নিকা, হেমামে-যদি বহু দিন ধরে ঘা উপরোক্ত ভাবে হয়, তাহলে উপযোগী ।

পেরেক, ছুঁচ, পিন বা গোঁজার (খোঁটা) উপর পা পড়ে ঘা হলে, ইদুরের কামড়ে ঘা, এসবে উপযোগী। এই ওষুধে টিটেনাস হয়ে চোয়াল শক্ত হওয়া নিবারণ করে।

কোন অঙ্গ ছিঁড়ে গিয়ে, ক্ষত-বিক্ষত হয়ে দেহ হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন হবার মত হলে এ ওষুধে ঐ ক্ষত সারিয়ে তোলে (ক্যালেন্ডু)।

চেতনা রক্ষাকারী স্নায়ু (Sentient Nerve) মন্ডলী যেখানে বেশী সেখানে আঘাত লেগে যেমন, হাতে পায়ের আঙ্গুল, নখের নীচে, হাতের পায়ের তালুতে আঘাত লেগে অসহ্য বেদনা হলে বোঝা যায় স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হয়েছে, হাতে পায়ের টিস্যুগুলোতে আঘাত লাগলে এ ওষুধ সারিয়ে তোলে। ঘা হয়ে বা অস্ত্রোপচারের পর স্নায়বিক অবসন্নতা হলে, মানসিক আঘাতে, ভয় পেয়ে ও মেসমেরিজমের কুফল এ ওষুধ দূর করে ।

এ ওষুধ ক্ষতের অবস্থার পরিবর্তন ও অনেক ক্ষেত্রে ক্ষত হওয়া ও ক্ষতস্থান পচে যাওয়া রোধ করে (ক্যালেন্ডু)। হাতের আঙুল পিষে গেলে, থেঁৎলে গেলে ব্যবহার্য। আঘাত লেগে ধনুষ্টঙ্কার (ফাইসসটিগমা তুলনীয়) ।

মাথাঘোরা –  মনে হয় মাথা যেন লম্বা হয়ে ঝুলে আছে এই অনুভূতি হয়- রাতে এই অবস্থা, সাথে প্রস্রাবের বেগ হয়।

মাথাযন্ত্রণা – পড়ে গিয়ে মাথার পেছনে আঘাত লেগে হয়— যেন তাকে শূন্যে উঁচুতে তুলে নিচ্ছে এই অনুভূতি হয়— ভীষণ উদ্বিগ্ন যেন সে ঐ উচুস্থান হতে পড়ে যাচ্ছে।

মেরুদন্ডে আঘাত লেগে রোগ-হাত ও ঘাড় সামান্য নাড়লে চিৎকার করে ওঠে। মেরুদন্ডে ভীষণ স্পর্শকাতরতা ।

বড় বা ছোট, পায়ের কড়ায় প্রচন্ড ব্যথা হলে বোঝা যায় যে স্নায়ু মন্ডলী আক্রান্ত হয়েছে, মাথায় আঘাত লেগে বা মস্তিষ্কে ঝাঁকি লেগে তড়কা হলে উপযোগী ।

সম্বন্ধ – আর্নিকা, ক্যালেন্ডুলা, রুটা, স্ট্যাফিস এর সাথে তুলনীয়। যে সব ক্ষতে আগে একোনাইট ও আর্নিকা পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে সেক্ষেত্রে হাইপেরিকাম দিলে সেরে যায়।

শক্তি – ৬, ৩০, ২০০ টিংচার হতে ৩ শক্তি বোরিক ।

স্নায়ুসমূহের আঘাতের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঔষধ বিশেষ, বিশেষ করে হাতের ও পায়ের আঙ্গুলসমূহ ও নখের স্নায়ুসমূহের আঘাতের ক্ষেত্রে। হাতের আঙ্গুল সমূহের বিশেষ করে হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগের পিষে যাওয়া। তীব্র বেদনা। এই ঔষধে একটি পথপদর্শক লক্ষণবিশেষ। চোয়াল ধরে যাওয়া রোধ করে। ফুটো হওয়া ক্ষত সমূহ। অস্ত্রোপচারের পরে যন্ত্রনার উপশম করে। অস্ত্রোপচারের পরে মর্ফিয়ার থেকে ভালো কাজ করে। (হেলমিউথ)। প্রতিবার আঘাতের পরে আক্ষেপ। সরলান্ত্রের উপর এই ঔষধের বিশেষ কাজ আছে; অর্শ। কক্সিসের বা চঞ্চু অস্থিতে বেদনা; আবহাওয়ার পরিবর্তনে। অথবা ঝড়বৃষ্টির পূর্বে আক্ষেপিক হাঁপানির আক্রমণ, প্রচুর শ্লেষ্মা উঠার পরে উপশম। জন্তুর কামড়ের ফলে স্নায়ুর উপর আঘার্তের ক্ষেত্রে। ধনুষ্টঙ্কার। স্নায়ুর প্রদাহ, সুড়সুড়ঙ্কর অনুভূতি, জ্বালা ও অসাড়তা। অবিরাম নিদ্রালুতা।

মল — রোগীর মনে হয় তাকে শূন্যে বাতাসের উপর তোলা হয়েছে, অথবা উপর থেকে পড়ে যাবে এই জাতীয় আতঙ্ক। লিখতে গেলে ভুল হয়। মানসিক আঘাতের কুফল। বিষন্নতা।

মাথা — ভারবোধ, একটি বরফের হাত মাথাটি স্পর্শ করে রয়েছে, এই জাতীয় অনুভূতি। মাথার তালুতে দপদপানি; বদ্ধ করে বৃদ্ধি। মস্তিষ্ককে থেঁৎলিয়ে যাবার মত। অনুভূতি। মুখমন্ডলের ডানদিকের কনকনানি। মস্তিষ্কে শূন্যতার অনুভূতি ও স্নায়বিক দুর্বলতা। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল এবং টেনে ধরার মত; ছিঁড়ে ফেলার মত দাঁতের বেদনা, তৎসহ বিষন্নতা। মাথাটি বড়ো হয়ে গেছে এই জাতীয় অনুভূতি বড়ো, বড়ো হাতে হতে ক্রমশঃ একটি বিন্দুতে পরিণত হচ্ছে এই জাতীয় অনুভূতি। মাথার খুলি ভেঙ্গে যাবার পরে, অস্থিগুলি টুকরো হবার পরে। মনে হয় মস্তিষ্ক জীবিত আছে। চোখ ও কানে বেদনা। মাথার চুল পড়ে যায়।

পাকস্থলী — মদ খাবার স্পৃহা। পিপাসা; বমিবমিভাব। জিহ্বার উপর সাদা প্রলেপ, অগ্রভাগ পরিষ্কার। পাকস্থলীর ভিতর পিন্ডের ন্যায় অনুভূতি। (এবিস নাইগ্রা; ব্রায়োনিয়া)।

মলদ্বার — বেগ, শুষ্ক, মৃদু, চাপ দেবার ন্যায় বেদনা। অর্শ, তৎসহ বেদনা; রক্তপাত ও স্পর্শ কাতর।

পিঠ — খাড়ের গ্রীবাদেশে বেদনা, ত্রিকাস্থিস্থানে বেদনা। মেরুদন্ডের আঘাত। পড়ে যাবার ফলে চঞ্চু অস্থির আঘাত, তৎসহ বেদনা, বেদনা উপরের দিকে মেরুদন্ড বরাবর উঠে এবং নীচের দিকে পা পর্যন্ত নামে। পেশী সমূহের ঝাঁকুনি ও নর্তন।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – কাঁধে টেনে ধরার মত বেদনা। বাহুস্থানে আলনাস্থি বরাবর চাপবোধ। পায়ের ডিমের খিলধরা। হাত পায়ের আঙ্গুলের বেদনা। বিশেষ অগ্রভাগের। হাত ও পায়ের সুড়সুড়ি অনুভূতি। উপরের ও নিম্নাঙ্গে ছুরি দিয়ে কাটার মত বেদনা। স্নায়ুপ্রদাহ, তৎসহ সুড়সুড়ি, জ্বালাকর বেদনা, অসাড়তা ও ফেঁসের মত চামড়া। সন্ধিস্থানে থেঁৎলিয়ে যাবার মত অনুভূতি। ধনুষ্টঙ্কার। (ফাইসোস্টিগমা; ক্যালিব্রোম)। আঘাতজনিত স্নায়ুশূল ও স্নায়ুপ্রদাহ।

শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ – হাঁপানি কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়ার বৃদ্ধি ও প্রচুর ঘামে উপশম।

চামড়া – প্রচুর ঘর্মস্রাব, মাথার চামড়ায় ঘাম, সকালে ও ঘুমের পরে বৃদ্ধি; আঘাত লাগার পরে চুল পড়ে যাওয়া হাত ও মুখমন্ডলের একজিমা। তীব্র চুলকানি, মনে হয় চামড়ার নীচে উদ্ভেদ রয়েছে। হার্পিস জুষ্টার। মুখগহ্বরের ভিতরের পুরাতন ক্ষতসমূহ, যখন অত্যধিক অনুভূতি প্রবন হয়। থেঁৎলিয়ে যাওয়া ক্ষতসমূহ তৎসহ রক্তপাতহেতু প্রচুর দুর্বলতা।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি — ঠান্ডায়; আদ্রর্তায় কুয়াশায়; বদ্ধ ঘরে সামান্য ঠান্ডা লাগলে; স্পর্শে।

উপশম — মাথা পিছনদিক ঝোঁকালে।

সম্বন্ধ-তুলনীয় — লিডাম (ছিদ্রকর ক্ষত ও জন্তুর কামড়ে); আর্নিকা; স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া, ক্যালেন্ডুলা, রুটা, কফিয়া।

দোষঘ্ন – আর্সেনিক; ক্যামোমিলা।

শক্তি – অরিষ্ট থেকে ৩য় শক্তি।

হাইপেরিকামের পরীক্ষা-লক্ষণসমূহ পাঠ করিলে স্পর্শচেতন স্নায়ুগুলি সংক্রান্ত এক শ্রেণীর অভিঘাতের কথা মনে পড়িবে, আর ইহাও বিস্ময়কর নয় এই ঔষধ ঐরূপ অভিঘাতের কুফলে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে। হোমিওপ্যাথি মতের অস্ত্রচিকিৎসা বলিতে ‘আর্ণিকা, রাসটক্স, ‘লিডাম’, ‘ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’, ‘ক্যাল্কেরিয়া’, এবং হাইপেরিকামের ব্যবহার। কোন চিকিৎসক কতকটা অস্ত্রোপচারের মত অবস্থার অথবা আঘাতের পরিণামজনিত ব্যাপারের রোগী পাইলে, বাঁধা নিয়মে এই ঔষধগুলির ব্যবহার করিয়া থাকেন। থেঁৎলান, “কালশিরা পড়া”, ক্ষততাযুক্ত অবস্থা এবং ঐরূপ অনুভূতির জন্য আর্ণিকা ব্যবহৃত হয়, ইহা প্রধানতঃ তরুণ অবস্থার ঔষধ, যতক্ষণ পর্যন্ত আহত অঙ্গ হইতে অথবা সারাদেহ হইতে ক্ষততা এবং থেঁৎলানবৎ বেদনা চলিয়া না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত উপযোগী; কিন্তু পেশী বা কন্ডরাসমূহে আঘাত লাগিলে আর্ণিকা’ অপ্রচুর বলিয়া প্রমাণিত হয় এবং রাসে’র সম্পূর্ণ পরীক্ষা-লক্ষণ পাঠ করিলে দেখা যায় যে, ঔষধটি কন্ডরা ও পেশীসমূহের আঘাতজনিত দুর্বলতায় এবং প্রত্যেক বারের ঝড়বৃষ্টির সময়ে আগমনশীল এবং ক্রমিক সঞ্চালনে উপশমযুক্ত বাতের ন্যায় অনুভূতিতে উপযোগী। রাসের প্রয়োগের পরও যে শেষ দুর্বলতাটি থাকিয়া যায়, তাহার জন্য আমাদের ক্যাল্কেরিয়া আছে।

পূর্বোক্ত তিনটি ঔষধে আমরা একটি শ্রেণীর সন্ধান পাই, কিন্তু হাইপেরিকামের সহিত উহাদের প্রভেদ নির্ণয় করা প্রয়োজন। থেঁৎলান এবং আঘাতপ্রাপ্ত পেশী বা কন্ডরাগুলির জন্য হাইপেরিকাম তেমন কাৰ্য্যকর নহে, উহার রোগ ভিন্ন শ্রেণীর। হাইপেরিকাম ও ‘লিডাম’ পরস্পর খুব কাছাকাছি ঔষধ এবং উহাদের তুলনা করিতে হইবে। লিডামে’ ‘আর্ণিকা’র ন্যায় ক্ষতবৎ ও থেঁৎলানবৎ অনুভূতি আছে এবং উহা প্রায়ই আর্ণিকা’র স্থান গ্রহণ করিতে পারে; কিন্তু যখন কোন স্নায়ুতে আঘাত লাগিয়া প্রাদাহিক অবস্থা উপস্থিত হয়, তখন হাইপেরিকাম ও লিডাম’ একসঙ্গে বিবেচ্য। মাংসপেশীতে, অস্থিতে এবং রক্তবহা নাড়ীগুলি সম্বন্ধে আর্ণিকা, রাস’ ও ক্যাল্কেরিয়া যেরূপ, তদ্রুপ এই দুইটি ঔষধের পক্ষে স্নায়ুগুলিই ক্রিয়াক্ষেত্র। যখন কোন হাত বা পায়ের আঙ্গুলের ডগা থেঁৎলাইয়া যায় বা বিচ্ছিন্ন হয়, অথবা একটি পেরেক বিদ্ধ হয় বা হাতুড়িতে কোন স্নায়ু বা আঘাতিত হাড় চিটাইয়া যায় এবং ঐ স্নায়ুগুলি প্রদাহিত হইয়া উঠে এবং স্নায়ুটির পথ বরাবর যন্ত্রণা হইতে থাকে, ঐ যন্ত্রণাটি যখন আহত অঙ্গ হইতে দেহকান্ডের দিকে প্রসারিত হইতে থাকে, তৎসহ তীরবিদ্ধবৎ, সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা একবার আসিতে, একবার যাইতে থাকে অথবা আহত স্থান হইতে দেহকান্ডের দিকে তীরের মত বিস্তৃত হইতে থাকে, তখন একটি সাঙ্ঘাতিক অবস্থা উপস্থিত হয়। এই অবস্থায় হাইপেরিকাম সম্ভাব্য সকল ঔষধের উপরে, এবং কদাচিৎ অন্য কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়। একথা না বলিলেও চলে যে, এরূপ ক্ষেত্রে দাতিলাগা একটি ভীতিপ্রদ লক্ষণ।

সময়ে সময়ে কোন বদমাইস কুকুর কোন লোকের বুড়া আঙ্গুল, হাত বা কজি-কামড়াইয়া ধরিতে পারে এবং উহার একটি বড় দাত প্রকোষ্ঠাস্থি সংক্রান্ত স্নায়ু বা উহার কোন শাখা-প্রশাখায় ফুটাইয়া দিতে পারে এবং তাহার ফলে একটি ছিন্ন ক্ষত উৎপন্ন হইতে পারে। প্রথম অবস্থায় তোমরা হয়ত হাইপেরিকামের লক্ষণগুলি দেখিতে পাইবে না, কিন্তু লক্ষণগুলি ক্রমশঃ প্রকাশ পাইতে থাকিবে এবং তোমাদিগকেও উহার চিকিৎসা করিতে হইবে। হাতখানাকে কাটিয়া ফেলিও না, উহাকে আরোগ্য কর। আমরা এই সমস্ত আঘাত, যথা—ছিদ্র হইয়া যাওয়া, ছুরিতে কাটিয়া যাওয়া, পিষিয়া যাওয়া, ছিঁড়িয়া যাওয়া ক্ষত, যন্ত্রণাকর ক্ষত প্রভৃতি ঔষধ দিয়াই আরোগ্য করিয়া থাকি।

সময়ে সময়ে কোন ক্ষত হাঁ হইয়া থাকিতে পারে, স্ফীত হইয়া উঠিতে পারে, উহার আরোগ্য প্রবণতা না থাকিতে পারে, হয়ত উহার কিনারাগুলি শুষ্ক ও চকচকে দেখাইবে, হয়ত উহা লালবর্ণ, প্রদাহিত, জ্বালাকর, সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা, ছিন্নকর বেদনাযুক্ত হইয়া উঠিবে এবং আরোগ্যের কোন লক্ষণই দেখা যাইবে না। এইরূপ ক্ষতের জন্য হাইপেরিকামের প্রয়োজন। ইহা ধনুষ্টঙ্কার নিবারণ করে। প্রত্যেক চিকিৎসকই জানেন যে, স্পর্শচেতন স্নায়ুপ্রণালীতে আঘাত লাগিলে হনুস্তম্ভ দেখা দিতে পারে। এলোপ্যাথিক চিকিৎসক এইরূপ আঘাত লাগার পরবর্তী বাহুর উপরদিকে ধাবমান বেদনা দেখিলে ভীত হইয়া পড়েন। কোন জুতা প্রস্তুতকারক হয়ত হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে জুতা সেলাইয়ের সূঁচ ফুটাইয়া ফেলিতে পারে, কোন ছুতার হয়ত তাহার আঙ্গুলে একটা পেরেক বিদ্ধ করিয়া ফেলিতে পারে, এবং সে হয়ত উহা গ্রাহ্যই করে না, কিন্তু সম্ভবতঃ পরবর্তী রাত্রে তীব্র তীরের ন্যায় বেদনা তাহার হাতের উপরদিকে ধাবিত হইতে থাকিবে। এলোপ্যাথিক ডাক্তার উহাকে একটি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার বলিয়া মনে করিবেন, কারণ তিনি দেখিবেন যে, ধনুষ্টঙ্কার বা হনুস্তম্ভ আসন্ন হইয়া পড়িয়াছে। এইরূপ যন্ত্রণা উপস্থিত হইলে, হাইপেরিকাম তাহা নিবারণ করিবে এবং এই অবস্থা হইতে পশ্চাদ্ধক্রতাযুক্ত ধনুষ্টঙ্কার ও হনুস্তম্ভের জন্য হাইপেরিকামই ঔষধ হইবে।

ধনুষ্টঙ্কারের যে লক্ষণ থাকে, যে লক্ষণগুলি ধনুষ্টঙ্কারের সৃষ্টি করে, ইহাতে ঠিক সেই সবই আছে এবং ইহা ঊর্ধ্বদিকে গতিবিশিষ্ট স্নায়ুপ্রদাহের লক্ষণসমূহে পূর্ণ।

তারপর, তোমরা হয়ত একটি পুরাতন ক্ষতচিহ্ন দেখিলে, উহা কোন কঠিন দ্রব্যের সংস্পর্শে আসিয়া আঘাত পাইল, থেঁৎলাইয়া গেল, ভিতরদিকে ছিঁড়িয়া গেল, পিষিয়া গেল, উহাতে হুলবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর যাতনা উপস্থিত হইল, উহাতে জ্বালা এবং হুল ফোটানোর ন্যায় যন্ত্রণা আরম্ভ হইল, কিছুতেই উহার উপশম হইল না, যন্ত্রণা স্নায়ুপথ দিয়া দেহকান্ডের দিকে ছুটিতে লাগিল। বেদনান্বিত ক্ষতচিহ্নে স্নায়ুপথের উপর দিয়া দেহকান্ডের দিকে তীরবেগে গমনশীল যাতনা। ইহার ঔষধ হাইপেরিকাম।

তারপর অন্যান্য ঔষধও আছে—সকলেই ‘আর্ণিকা’র কথা জানে, কিন্তু তোমরা নিশ্চয়ই উহাকে উহার নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করিবে। আঘাতপ্রাপ্তির প্রথম অবস্থায়, যেখানে অধিক থেঁৎলাইয়া গিয়াছে, যেখানে আমি যেরূপ বর্ণনা করিলাম, ড্রপ বেদনা নাই; থেঁৎলাইয়া যাওয়া, সঙ্ঘাত এবং সাঙ্ঘাতিক আঘাতের প্রথম কয়েক ঘন্টার পক্ষে আর্ণিকা’ই বাঁধা ধরা নিয়মের ঔষধ, কারণ ইহা মানবদেহে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অবস্থার সৃষ্টি করে। কিন্তু তোমরা লক্ষ্য করিবে যে, আর্ণিকা কেবলমাত্র একই অবস্থায় কাজে লাগে। আনাড়ি লোকেরা ক্ষতের জন্য যেরূপ ভাবে ব্যবহার করে, সেরূপ ভাবে আর্ণিকা’ কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ পূর্ণশক্তিতে ব্যবহৃত হইলে উহা ইরিসিপ্লাসের সৃষ্টি করিতে পারে।

তারপর, অস্থি, উপাস্থি, পেশীবন্ধের সন্নিবেশনে, উপাস্থি এবং সন্ধিস্থানে থেঁৎইয়া গেলে, রুটা’ যে-কোন ঔষধ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, এবং আমরা ‘রুটা’র পরীক্ষা-লক্ষণ পাঠ করিলে বিস্মিত হইব না, কারণ ইহা ঐরূপ অবস্থায় যেরূপ লক্ষণগুলি দেখা যায়, তাহাই সৃষ্টি করিয়া থাকে। অস্থি, উপাস্থি ও সন্ধির উপর দীর্ঘকাল থেঁৎনবৎ ক্ষততা। কিন্তু ‘লিডাম’ কাৰ্য্য করে প্রতিষেধক ঔষধরূপে। হস্তাঙ্গুলির ডগায় কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটিলে, কোন ব্যক্তি একটি পেরেক, কাটা, অথবা কাঠি বা গোঁজা হাতের আঙ্গুলে অথবা পায়ে ফুটাইয়া ফেলিলে লিডাম’ প্রতিষেধক ঔষধের কাজ করিবে। যদি কোন ঘোড়ার একটি পেরেক বিধিয়া যায়, পেরেকটি তুলিয়া ফেল এবং তাহাকে একমাত্রা লিডাম’ সেবন করাও, তাহা হইলে কোন উপসর্গ দেখা দিবে না, তাহার হনুস্তম্ভ হইবে না। এইরূপ কোন কিছু ফুটিয়া যাওয়া ক্ষত, ইঁদুর কামড়ান, বিড়াল কামড়ান প্রভৃতি সমস্তই লিডাম প্রয়োগে নিরাপদ হয়। অর্থাৎ এইরূপ ক্ষেত্রে যে তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা উপস্থিত হয়, ‘লিডাম’ তাহা নিবারণ করিবে এবং স্নায়ুগুলি কখনও আক্রান্ত হইবে না। আমরা যদি উহা সঙ্গে সঙ্গেই দিতে পারি, কোন উপদ্রবই উপস্থিত হইবে না। আহত অঙ্গে অথবা ক্ষতে যদি মৃদু প্রকৃতির যন্ত্রণা হইতে থাকে, তাহা হইলেও ‘লিডাম’ই ঔষধ। যন্ত্রণা যদি ক্ষত হইতে স্নায়ুপথ দিয়া উপরদিকে তীরের মত সম্প্রসারিত হইতে থাকে, তাহা হইলে হাইপেরিকামের প্রয়োজন হয়।

হয়ত একজন অত্যনুভূতিবিশিষ্টা, স্নায়বিক প্রকৃতির রমণী দিনের বেলা একটি পেরেকের উপর পা দিয়া ফেলিলেন, এবং সারাদিন পেরেকটি যেখানে বিধিয়াছিল, তাহা অনুভব করিতে লাগিলেন, তারপর হয়ত শয্যায় শুইয়া পড়িলেন, এইবার উহা ভীষণভাবে কক করিতে লাগিল, তিনি স্থির থাকিতে পারিলেন না। লিডাম’ দিলে আর তাহার কোন উপদ্রব থাকিবে না, কিন্তু যদি উহা প্রাতঃকাল পর্যন্ত চলিতে থাকে এবং যন্ত্রণাটি পায়ের উপর দিয়া উপরদিকে উঠিতে থাকে, তাহা হইলে হাইপেরিকাম দিবে। ঘোড়ার পায়ে পেরেক ফুটিয়া গেলে আমি লিডামের কথা বলিয়াছি। কিন্তু যদি পেরেকটি ক্ষুরের পাতলা অংশে বিধে এবং ক্ষুরের উপরিস্থ হাড় পর্যন্ত চলিয়া যায়, তাহা হইলে ঐ ঘোড়া নিশ্চয়ই ধনুষ্টঙ্কার রোগে মরিবে। পশু চিকিৎসকেরা ইহার জন্য কিছুই জানেন না, যদিও তাহারা উহাতে পুলটিস, মালিশ প্রভৃতি দিবেন, ঘোড়াটি ধনুষ্টঙ্কারে মরিবেই। কিন্তু যদি ধনুষ্টঙ্কার উপস্থিত হওয়ার পূর্বে এক মাত্রা লিডাম দেওয়া হয়, উহা জন্তুটিকে ধনুষ্টঙ্কার হইতে রক্ষা করিবে। কিন্তু উৎক্ষেপ আরম্ভ হইলে আর লিডাম’ চলিবে না, হাইপেরিকাম দিতে হইবে। হাইপেরিকাম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্নায়ু, স্পর্শচেতন স্নায়ুসমূহে পূর্ণ অঙ্গে, কোন কিছু বিদ্ধ হওয়ার ফলে উৎপন্ন ক্ষতের পক্ষে উপযোগী, ইহা তৎক্ষণাৎ প্রয়োগ করিবে। ক্ষততা আছে বলিয়া আর্ণিকা দিয়া সময় নষ্ট করিও না, কারণ কোন কিছু বিধিয়া যাওয়ার ফলে উৎপন্ন ক্ষতস্থানের স্নায়ুগুলি সংক্রান্ত বিপদ অপেক্ষা ক্ষততা অনেক কম প্রয়োজনীয়। কিন্তু কিছু বিদ্ধ হওয়ার ক্ষুতে ‘লিডাম’ দিও। অবশ্য, অন্য প্রকার কিছু ঘটিলে, রোগীর অবস্থা ও লক্ষণগুলি অনুসারেই কাৰ্য্য করিতে হইবে।

মেরুদন্ডে আঘাতে আমরা হাইপেরিকাম ব্যবহার করার মত আর এক শ্রেণীর রোগ পাই। আমার একটি রোগীর কথা মনে পড়ে; রোগটি সচরাচর যেরূপ দেখা যায় সেইরূপই ছিল, যেরূপ আমরা পড়ি ও শুনিয়া থাকি সেইরূপ ছিল, কিন্তু রোগীটিকে বাঁচান যায় না। একখানি গাড়ীর পশ্চাদ্ভাগে দন্ডায়মান একটি লোক, হঠাৎ গাড়ী পিছনদিকে হটিয়া যাওয়ায়, বেগে পশ্চাদ্দিকে নিক্ষিপ্ত হইয়া পিকচঞ্চু অস্থির উপর ঠুকিয়া পড়িল। সে উহা তত গ্রাহ্য করিল না, বাড়ী চলিয়া গেল, তাহার মাথায় ও শরীরের নানাস্থানে যন্ত্রণা হইতে লাগিল। কয়েকজন ডাক্তারকে ডাকা হইল, তাহারা কি যে হইয়াছে, তাহা ধরিতে পারিলেন না, এবং দশদিন পরে লোকটি মারা গেল। তাহারা লোকটিকে উল্টাইয়া ফেলিলেন এবং দেখিলেন যে, তাহার পিকচঞ্চু অস্থিস্থানটি কাল হইয়া গিয়াছে এবং ঐ স্থানের পেশীমন্ডলে একটি ফোড়া জন্মাইবার সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে। যদি চিকিৎসকদের জানা থাকিত, তাহা হইলে হাইপেরিকাম লোকটির জীবন রক্ষা করিতে পারিত। আমি বহুবার হাইপেরিকামে এরূপ অবস্থা আরোগ্য হইতে দেখিয়াছি। চিকিৎসকগণ যত রকম সাঙ্ঘাতিক ও কষ্টদায়ক আঘাতের সংস্পর্শে আসেন, তাহাদিগের মধ্যে পিকচঞ্চু অস্থিতে আঘাতই সর্বাপেক্ষা ভয়ানক—ঠিক ঐরূপ পড়িয়া যাইয়া একখানি পাথরে বা অন্য কিছুতে আঘাত লাগিয়া পিকচক্ষু অস্থিস্থানটি থেঁৎলাইয়া যাওয়া। সঙ্গে সঙ্গেই পিকচক্ষু অস্থিতে বড় কিছু দেখা যায় না, ভালভাবে পরীক্ষা করিলে, চাপ দিলে বেদনা ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না, কিন্তু আমরা অনেক সময়েই মেরুদন্ডের উপরদিকে এবং পদাদির দিকে নিম্নমুখে এবং দেহের উপর দিয়া তীরবৎ সঞ্চরণশীল বেদনার বর্ণনা পাই এবং আক্ষেপিক, সঞ্চালনও উপস্থিত হয়। যখন এইরূপ লক্ষণ বর্তমান থাকে, তখন প্রত্যেক চিকিৎসকেরই আঘাতটি খুঁজিয়া বাহির করার মত বিজ্ঞতা থাকা উচিত, কিন্তু খুব সূক্ষ্মবুদ্ধি চিকিৎসকও পিকচঞ্চু অস্থির আঘাত সম্বন্ধে অন্ধ থাকেন। অনেক স্ত্রীলোক প্রসবকালে পিকচক্ষু অস্থির আঘাত পান, কিন্তু আঘাত যত সামান্যই হউক বেদনাটি অনেক বৎসর যাবৎ থাকিয়া যায় এবং এই পিকচক্ষু অস্থির আঘাতের জন্য তিনি সর্বদাই কষ্ট, সর্বদাই হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা এবং স্নায়বিক থাকিয়া যান। প্রথমেই ধরা পড়িলে এরূপ আঘাত হাইপেরিকাম দ্বারা আরোগ্য হইতে পারে। উহা এই ঔষধটিতে আছে। মেরুরজুর নিম্নাংশের সামান্য প্রদাহ বা উপদাহিতা, ঐস্থানে বিদ্ধ হওয়ার ন্যায়, ক্ষত হওয়ার ন্যায় অনুভূতি ও কনকন করা; যতদিন পর্যন্ত বিশেষ স্থানটি হইতে আঘাতের কুফল বিদূরিত না হয়, ততদিন পর্যন্ত কিছুতেই চলিয়া যায় না। এইরূপ আঘাত বহুবৎসর পরেও কার্বো এনিমেলিস’, ‘সাইলিশিয়া এবং থুঁজা ও লক্ষণসাদৃশ্যে অন্য ঔষধ দিয়া আরোগ্য হইয়াছে।

ইহা মেরুদন্ডের আরও উপরের অংশের আঘাতের সহিতও সম্পর্কান্বিত। কোন ব্যক্তি হয়ত সিঁড়ি দিয়া নামিতেছে, সে হয়ত পা পিছলাইয়া পিছনদিকে পড়িয়া গেল, কোন একটা সিঁড়ির ধাপে ঠোকা লাগিয়া তাহার পৃষ্ঠ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হইল,—এরূপ ব্যাপার অসাধারণ নহে। কেহ হয়ত সঙ্গে সঙ্গেই রাস টক্স’ দিবেন; আমি জানি যে, অপর কেহ কেহ ‘আর্ণিকা” দিয়া থাকেন। কিন্তু ঐরূপ আঘাত হইলে যে-প্রকার প্রদাহ উপস্থিত হইতে পারে, তাহা নিবারণ করিবার জন্য হাইপেরিকাম দিতে হইবে। তারপর, অন্যান্য রোগপ্রবণতাও আসিতে পারে, যথা—আকর্ষণের ন্যায় অনুভূতি, বাতের ন্যায় লক্ষণও আসিতে পারে, এবং ঐরূপ হইলে ‘রাসটক্স’ এবং অবশেষে ক্যাল্কেরিয়া প্রয়োজন হইবে। পৃষ্ঠের পুরাতন দুর্বলতা, তৎসহ আসন হইতে উঠিতে গেলে যাতনা, ইহা প্রায়ই রাস টক্স’ বা তারপর ক্যাল্কেরিয়া দ্বারা আরোগ্য হইবে, কিন্তু হাইপেরিকাম দ্বারা সর্বপ্রথমেই তন্তুসমূহের, মেরুরজ্জ্বর এবং ঝিল্লীগুলির খবরদারি, করিতে হইবে। এই শ্রেণীর আঘাত হইতে, পৃষ্ঠের পেশীগুলির আকর্ষণ এবং একপ্রকার সঙ্কোচন ও কষিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতিযুক্ত ঝিল্লীপ্রদাহ উপস্থিত হওয়া সাধারণ ব্যাপার। পৃষ্ঠের নানাদিকে সূচীবিদ্ধবৎ, তীরবিদ্ধবৎ যাতনা, উহা তীরবেগে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি নিম্নদিকে ছাড়াইতে থাকে। স্পর্শচেতন স্নায়ুগুলিতে আঘাত লাগিলে যেমন উহা ধনুষ্টঙ্কারে পরিণত হয়, পৃষ্ঠে আঘাত লাগিলে তদ্রুপ হয় না, কিন্তু উহা দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় বলিয়া আরও বেশী কষ্টদায়ক হহয়া থাকে।

যে-সকল লোক মেরুদন্ডে বা পিকচক্ষু অস্থিতে আঘাত পায়, তাহারা বৎসরের পর বৎসর এরূপ কতকগুলি লক্ষণে কষ্ট পায়, যাহার জন্য অনেকগুলি ঔষধেরই প্রয়োজন হইতে পারে। এইরূপ আঘাতের পর যেরূপ লক্ষণসমূহের উদ্ভব হইতে পারে, আমরা তাহা ঔষধ পরীক্ষায় দেখিতে পাইব, কিন্তু এই ঔষধটি ইহার পরীক্ষালব্ধ লক্ষণে পাওয়া গেলে, যে-কোন প্রকার রোগ আরোগ্য করিবে। ইহার ক্রিয়া স্নায়ুকোষ এবং মাত্রিকাগুলির উপরে, তৎসহ যেখানেই আঘাত লাগে, সেই স্থানেই স্নায়ুসমূহের উপর দিয়া সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর, বিদীর্ণকর যাতনা থাকে। এখন, আর একটি ঔষধ আছে, তাহাও আমাদের জানা দরকার। যদি তোমরা পরিষ্কারভাবে কাটা বা ধারাল অস্ত্র বসিয়া যাওয়ার ফলে ক্ষত পাও অথবা যদি অস্ত্রচিকিৎসা করিবার সময় তোমরা ছুরিতে ঐরূপভাবে কাটিয়া যায়, যদি তুমি উদরগহ্বরটি কাটিয়া থাক এবং উদর প্রাচীরগুলি অসুস্থ আকৃতি ধারণ করে এবং যদি ঐসঙ্গে হুলবিদ্ধবৎ জ্বালাকর বেদনা থাকে, তাহা হইলে স্ট্যাফিসাগ্রিয়া’ ঔষধ হইবে, উহা ক্ষতস্থান পুরিবার মত নবজাত মাংস কণাসকল উৎপন্ন করিবে। যে-সকল স্থানে যন্ত্রাদির দ্বার বিস্তারকারী পেশীসকল থাকে, সে সকল স্থানের পক্ষেও ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’ একটি আশ্চৰ্য্যভাবে উপকারী ঔষধ। ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’ পেশীর বিস্তৃত হওয়ার পক্ষে একটি স্বাভাবিক প্রতিষেধক। মূত্রস্থলীর পাথুরির জন্য কোন স্ত্রীলোকের মূত্রনলী বিস্তৃত হইয়া গেলে ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’ উপযোগী। মূত্রনলীর বিস্তৃতিবিশিষ্ট একটি রোগীর কথা আমার মনে পড়িতেছে। অস্ত্রোপচারের পর সে অত্যন্ত কষ্ট পাইতেছিল, তীব্র চিৎকার করিতেছিল, কাঁদিতেছিল, শীতলঘৰ্ম্মে সিক্ত হইতেছিল, উত্তপ্ত মস্তক, শরীর শীতল ঘৰ্ম্মে আবৃত ছিল। তাহাকে ‘স্ট্যাফিসাগ্রিয়া’ দেওয়া হইলে, কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। কিছুমাত্র উপশম ব্যতীত সে ছয় ঘন্টা ধরিয়া ঐ যন্ত্রণা ভোগ করিতেছিল। যেখানে বরফ দ্বারা পেশীগুলি বিস্তৃত হওয়ার জন্য অথবা অস্ত্রোপচারের উদ্দেশ্যে কোন যন্ত্র কাটিয়া ফাক করার পর শীতলতা, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয় এবং ছিন্নকর, বিদীর্ণকর যাতনা উপস্থিত হয়, সেখানে মৃত্যুসম্ভাবনাই অধিক এবং ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’ ঐরূপ ছিঁড়িয়া যাওয়া, কাটিয়া যাওয়া এবং তন্তুসমূহের বিস্তৃত হওয়ার ফলে যে-যাতনা উপস্থিত হয় তাহার সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধবিশিষ্ট।

অনেকটা কাটা হইয়াছে, এরূপ অস্ত্রোপচারের পর, অত্যন্ত অবসন্নতা, হিমাঙ্গতা, রক্তক্ষরণ, শীতলপ্রায় শ্বাস-প্রশ্বাস উপস্থিত হইলে, যদি নিকটে মেটিরিয়া পড়া লোক থাকেন, তাহা হইলে তিনি বলিবেন, “কেন, নিশ্চয়ই তাহাকে কার্বোভেজ’ দিবেন।” হাঁ, তোমরাও তাহাই দিবে, কিন্তু উহাতে উপকার হইবে না। উহা তোমাকে নিরাশ করিবে। কিন্তু তুমি যদি অস্ত্রচিকিৎসক হও, এবং মেটিরিয়া মেডিকা পড়া লোক অপেক্ষা তোমরা যদি অস্ত্রচিকিৎসা সম্বন্ধীয় আময়িক প্রয়োগ ভাল জান, তাহা হইলে তুমি বলিবে “না না, আমার যাহা দরকার, তাহা হইতেছে সিয়াম কার্ব।” উহা শরীরের উপর সর্বত্র ঐ প্রকার রক্তসঞ্চয়ের উপশম দিবে, সে গরম হইয়া উঠিবে এবং শান্তিতে রাত্রিটি কাটাইবে। স্ট্রনসিয়াম কার্ব অস্ত্রচিকিৎসকের কাব্বো ভেজ।

সর্বশেষে, আমাদিগকে অনেক সময়ে ক্লোরোফৰ্ম্মের প্রতিবিধান করিতে হয়, কারণ ঐরূপ ক্ষেত্রে যন্ত্রণা ও কনকনানি থাকে বলিয়া, তোমরা পূর্বোক্ত ঔষধগুলি দ্বারা কোন কাজ পাইবে না। তোমরা একমাত্রা ‘ফসফরাস’ দিয়া ক্লোরোফৰ্ম্মের প্রতিবিধান করিতে পারিবে, কারণ উহা ক্লোরোফৰ্ম্মের স্বাভাবিক প্রতিবিষ। ফসফরাস’ বমন বন্ধ করিবে। ফসফরাসে’ ক্লোরোফৰ্ম্মের ন্যায় বমন আছে। ফসফরাস’ ঠান্ডা জিনিষ চায়, পাকস্থলীতে ঠান্ডা জল পছন্দ করে এবং উহা পাকস্থলীর মধ্যে গরম হইলেই বমি করিয়া ফেলে। ক্লোরোফৰ্ম্মেও ঐরূপ হয়। তবে উহারা পরস্পর প্রতিবিষ হইবে না কেন?

সেন্ট জন্স ওয়ার্ট (St. John’s Wort)। ইহা হাইপেরিকেসী জাতীয় উদ্ভিদ। এর কুসুমিত সরস বৃক্ষ থেকে অরিষ্ট তরী করা হয়।

* স্নায়ুর উপঘাত এবং মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের স্নায়ুর উপঘাতে ইহা উপযোগী।

বিঃ দ্রঃ – আনিকা, হেমামেলিস, রুটা ইত্যাদি – কালশিটেয়;

ক্যালেণ্ডুলা – সদ্য ব্রণে এবং ধারাল অস্ত্রের কাটা ঘায়ে – ট্র্যাফিসাগ্রিয়া যেমন উপযোগী, ঠিক তেমনি নখ, সূঁচ, ইঁদুর দংশনজনিত স্নায়ুর উপঘাতে হাইপেরিকাম উপযোগী।

Hyper : Hypericum Perforatum
Injuries to nerves, especially of fingers, toes and nails.Crushed finger tips.Punctured wounds. Tetanus.

Asthma attacks with changes of weather or before storms.


COMMON NAME:

St.John’s Wort


FAMILY:

Hypericaceae


SOURCE:

Tincture of fresh blooming plant.

PHYSIOLOGICAL ACTION:

1. Venous System-Capillary Paralysis, Congestion.

2. Joint-Rheumatoid Inflammations.


A/F:

-Fright, Shock

-Bites, Wounds


MODALITIES:

< Injury

< Jar

< Shock

< Motion

< Fogs; Cold damp

< Change of weather

< Concussion of spine, coccyx

< Bruises

< Exertion

< Touch

< Pressure

< After forceps delivery

< As a complication of injury

< In closed room

< Least exposure

< At night

< Before a storm

> Lying on face

> Bending head backward

> Rubbing

> Lying quietly


MIND:

-Feels as if lifted high in air, or anxiety lest he fall from heights.

-Mistakes in writing, omiting letters.

-Mistakes in speaking, using wrong words, saying right for left or vice-versa.

-Forgets what she wanted to say.

-Mental symptoms before thunderstorm.


GUIDING INDICATIONS:

-Complaints from fright, shock, injury to head, following wounds or surgical operations.

-Remedy for injury to nerves especially of fingers and toe nails. Crushing injury of finger tips.

-Excessive painfulness and sore parts, relieves pain after operations.

-More tenderness about the wound than the appearance would indicate.

-PUNCTURED WOUNDS; very sensitive to touch.

-LACERATIONS; when the intolerable, violent, shooting, lancinating pain shows that nerves are severely involved.

-Preserves the integrity of torn and lacerated members when almost entirely separated from body [Calen].

-Neuritis and tingling burning pain, numbness and glossy skin.

-Tetanus [Kali-br, Phys].

-Head-Heavy, feels as if touched by an icy cold hand.

-Throbbing in vertex < closed room, feeling of heat in head, afternoons.

-Vertigo; head feels longer, elongated to a point, extending upward like a conical hat with strong desire to urinate [Chaudhary].

-G.I.T.-Tongue-coated white at base, tip clean.

-Toothache > lying on affected side quietly.

-Craves wine with a feeling of heat in mouth.

-Desire for pickles, warm drinks, wine.

-Haemorrhoids with pain, bleeding, tenesmus.

-Respiratory system-In patients of pneumonia with piles.

-Asthma < foggy weather > after expectoration.

-Asthmatic respiration after injuries to spine.

-Tightness of chest, stinging < moving.

-Back-Pressure over sacrum, coccydynia.

-Injuries of spine (fractures, sprains) with sharp, shooting pains [Morrison] < raising arms, movement, urination.

-Extremities-Crawling in hands and feet in morning.


KEYNOTES:

1. Feels as if lifted high in air, or anxiety lest he fall from height.

2. Vertigo-head feels elongated to a point, extending upward like a conical hat.

3. Asthma < foggy weather > after expectoration.

4. Skin rough, feels as if full of small knots.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Injuries to parts rich in nerves.

2. Crushed finger tips, punctured, lacerated wounds.

3. Excessive painfulness, soreness of parts with spasm after injury.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Remedy for injury to nerves of fingers, toes, nails. Crushing injuries of finger tips.

-Excessive painfulness, sore parts.

-Punctured wounds; very sensitive to touch.

-Lacerations; when the intolerable, violent, shooting, lancinating pains show that nerves are severely involved.

-Spasmodic affection after injuries, especially to spine; spasmodic.

-Asthma worse foggy weather.


CLINICAL:

-Prevents lock jaw.

-In wounds where formally Aconite and Arnica were given alternately, Hypericum cures.

-Hypericum is superior to Arnica before or after teeth extraction.

-Hypericum ointment, used for packing nail groove after removal of splinter derbis in onycho-cryptosis.

-As post operative dressing on neurovascular helona, has analgesic properties.

-Hypericum serves well after nerve trunks have been handled, stretched or bruised, and when partial paralysis exists. Remember it in the paresis of arm or hand when the patient has been inadvertently placed on operating table with upper extremity under body producing postural paresis.

-Paresis caused by entanglement of nerves in scars.

-Locally for neuralgia of leg with profuse sweating (sciatica).

-Facial paralysis resulting from forceps delivery when Arnica fails.

-Hypericum oil is wonderful in ecchymosis about eye or anywhere in body, it takes away the pain.

-Following punctured wounds, Hypericum may be required in those cases in which lymphangitis develops with red lines or streaks extending up the arm or leg.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Compare : Arn, Calen, Coff, Led, Ruta, Staph.

Antidoted By : Ars, Cham.

Duration Of Action : 1-7 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *