লিডাম প্যালাষ্ট্রে LEDUM PALUSTRE [Led]

ব্যথা পায়ের পাতা হতে আরম্ভ হয়ে উপরের দিকে উঠে।
শরীরের স্বাভাবিক উত্তাপের অভাব কিন্তু বাহিরের উত্তাপ সহ্য হয় না, পায়ের তলায় বরফ ঠাণ্ডা দিলে উপশম।
আক্রান্ত স্থান লাল, ফোলা, শীতল অথচ উত্তাপ সহ্য হয় না।
আঘাত প্রাপ্ত স্থান অত্যন্ত ঠান্ডা অনুভূত হয়।
পায়ে অত্যন্ত বেদনা, বেদনার জন্য মাটিতে পা ফেলতে পারে না।
উজ্জ্বল রক্তস্রাব (জরায়ু বা ফুসফুস হতে)।

উপযোগিতা — বাত ও গিটবাত জনিত অসুখে ভুগে, মদ খেয়ে স্বাস্থ্য বিকৃতি হয়েছে এমন লোকেদের পক্ষে উপযোগী।

চোখের তারায় অপারেশনের (ছানি কাটা) পর চোখের ভিতর সামনের প্রকোষ্ঠে রক্তস্রাব হয়ে রক্ত জমা হলে উপযোগী।

চোখ ও চোখের পাতায় চাপ ও আঘাত লেগে বিশেষতঃ তা হতে রক্ত জমে গেলে বা চোখের পাতা ও চোখের সাদা অংশে কালশিটে পড়লে এ ওষুধ ব্যবহার্য ।

বাত ও গিটবাত—নিম্নাঙ্গে শুরু হয়ে উপরদিকে ব্যথা উঠতে থাকে (নীচেনামে = ক্যালমিয়া), বিশেষতঃ কলচিকাম অত্যধিক ব্যবহার করে রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে, হাড়ের সন্ধিগুলো বেড়ে যায় ও বাতজ ক্যালকুলাস (গুড়ো গুড়ো পাথরের মত পদার্থ) জন্মে ব্যথা হয়—তরুণ রা পুরাতন এই অবস্থায় ওষুধ প্রযোজ্য ।

বা কাধ ও ডান নিতম্ব বাতরোগে আক্রান্ত হয় (এগারি, এ-টার্ট, স্ক্রামো) । আক্রান্ত অঙ্গ শুকিয়ে যায় (গ্রাফাই)।

ব্যথা যন্ত্রণা — বিঁধে আছে এমন, ছিড়ে ফেলা মত, দপদপ করে—বাতের ব্যথা নড়াচড়ায় বাড়ে, রাতে বাড়ে, বিছানার গরমে বা গায়ে ঢাকা দিলে (মার্ক) বেড়ে যায়। শুধুমাত্র পায়ের পাতা বরফ ঠাণ্ডা জলে রাখলে (সিকেল) উপশম পায়।

যাদের দেহ সর্বদা ঠান্ডা, যারা সর্বদা ঠাণ্ডা বা শীত অনুভব করে, জৈব উত্তাপের অভাৱ যাদের (সিপিয়া, সাইলি) তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী। আঘাত প্রাপ্ত অঙ্গ স্পর্শে প্রচণ্ড ঠান্ডা মনে হয় ।

আঘাত প্রাপ্ত স্থান স্পর্শে প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূতি হয় অথচ রোগী নিজে ঠান্ডা বুঝতে পারে না ।

কোন কোন উপসর্গে অঙ্গ প্রত্যঙ্গে উত্তাপ ও জ্বালার জন্য বিছানার গরম অসহ্য মনে হয় ।

ফীতি–পায়ের পাতা হতে হাঁটু অবধি ফোলে। হাঁটতে গেলে পায়ের গোড়ালীতে অসহ্য ব্যথা মনে হয় যেন পা মুচকে গেছে বা হড়কে গেছে। পায়ের বুড়ো আঙুলের সামনের দিকে ব্যথা, ফুলে যায়। গোড়ালীতে ব্যথা থেলে গেছে—এসব বাতজ লক্ষণে ব্যবহার্য।

পায়ের পাতা ও গোড়ালীতে অসহ্য চুলকানি—চুলকালেও বিছানার গরমে ঐ চুলকানি বেড়ে যায় (পালস্, রাস-ট) ।

সহজেই পায়ের পাতা ও গোড়ালী মচকে যায় (কার্ব-এনি)। ছুঁচালো মুখওয়ালা কোন কিছুতে যথা আল, পেরেক ইত্যাদি বিধে ক্ষত হলে (হাইপেরি), ইঁদুরে কামড়ালে, পোকামাকড় হুল ফোটালে বিশেষত মশা কামড়ালে এ ওষুধ প্রয়োগে সেরে যায়। কপালে ও গালে লাল লাল ব্রণ বা ফোড়া জাতীয় কিছু হলে যেমনটা মদ্যপায়ীদের হয় সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার্য। ওতে ছোঁয়া লাগলে যেন হুল ফোটানো যন্ত্রণা হয় ।

আঘাত লেগে দীর্ঘদিন যাবৎ চামড়াতে স্বাভাবিক রঙ ফিরে না এলে বা কাল ও নীলচে স্থানগুলো ক্রমশঃ সবজে হয়ে গেলে এ ওষুধ ব্যবহার্য ।

সম্বন্ধ— আঘাতে তুলনীয়—আর্নিকা, ক্রোটন, হেমামে, বেলিস, রুটা । আঘাতের দীর্ঘস্থায়ী কুফলে তুলনীয়—কোনি ।

শক্তি — ৬, ৩০, ২০০ ।

বাতরোগযুক্ত ঋতুদোষে এই ঔষধটি বিশেষভাবে কার্যকরী হয়। এই বিষয়ক সকল প্রকার পরিবর্তনে উপযুক্ত, ক্রিয়াবিকার ঘটিত বেদনা থেকে স্রাবের পরিবর্তন এবং শক্ত জমাট বাঁধাবস্তু, তন্তু সমূহের মধ্যে শক্ত মাটির মত পদার্থের সঞ্চয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে। লিডামের বাতের কষ্ট পায়ের পাতা থেকে শুরু হয় এবং উপরের দিকে অগ্রসর হয়। এটি চামড়ার উপরেও কাজ করে, অনেকটা পয়জন ওকের মত উদ্ভেদ উৎপন্ন করে এবং পয়জন ওকের বিষক্রিয়ায় এই ঔষধ ক্রিয়া নাশক হিসাবে কাজ করে, এছাড়াও ঔষধটি পোকা-মাকড়ের কামড়ে ক্রিয়া নাশক হিসাবে কাজ করে। এই ঔষধে সব্বাঙ্গীণ শারীরিক উত্তাপের অভাব দেখা যায়। এবং তথাপি বিছানার উত্তাপ অসহ্য। তীক্ষ্মসঁচানো অস্ত্রের দ্বারা অথবা কীটাদির দংশনে উৎপন্ন ক্ষতে এটিই একমাত্র ঔষধ, বিশেষ করে ক্ষতস্থানটি যদি শীতল হয়। ধনুষ্টঙ্কার তৎসহ ক্ষতস্থানের নিকটের পেশীসমূহের নর্তন।

মাথা – চলাফেরা করার সময়ে ঘোরা, তৎসহ একদিকে পড়ে যাবার প্রবণতা। মাথা ঢাকা থাকা কালে কষ্ট। নাক থেকে রক্তস্রাব। (মেলিলোটাস; ব্রায়োনিয়া)।

চোখ – চোখদুটির ভিতরে কঙ্কনাণী। চোখের পাতায় ও চোখের সাদা অংশে রক্তসঞ্চয়। নিষ্পেষনজনিত ক্ষত। চোখে ছানি তৎসহ গেঁটে বাত।

মুখমন্ডল — কপালে ও গালে লালবর্ণের ফুস্কুড়িসমূহ, স্পর্শ করার সময় হুল ফোটার মত বেদনা।নাক ও মুখগহ্বরের চারিপাশে মামড়ীযুক্ত উদ্ভেদসমূহ।

মুখগহুর – শুষ্ক, ওয়াক তোলা তৎসহ ঢেকুর তোলা। ছাতা পড়ার মত আস্বাদ সহ। সর্দি কাশি জনিত উপসর্গ।

শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র সমূহ — নাকের ভিতরে জ্বালা। কাশি, তৎসহ রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা উঠে। শ্বাসকষ্ট, বুকের ভিতরে সঙ্কোচনের মত অনুভূতি। শ্বাসরুদ্ধকর শ্বাস-প্রশ্বাস। শ্বাসনলী বরাবর বেদনা। বৃদ্ধবয়েসে ব্রঙ্কাইটিস তৎসহ এমফাইসিমা। বুকের ভিতরে সঙ্কোচনের ন্যায় অনুভূতি তৎসহ শ্বাসরোধের মত অবস্থা। কণ্ঠনলীর ভিতরে সুড়সুড়ঙ্কর অনুভূতি। আক্ষেপিক কাশি। রক্তকাশি, পর্যায়ক্রমে তৎসহ বাতরোগ। বুক স্পর্শ করলে, বুকের ভিতরে বেদনা হয়। হুপিং কাশি; আক্ষেপিক, একই সঙ্গে দুইবার শ্বাস নেওয়া তৎসহ ফোঁপানি।

সরলান্ত্র – মলদ্বারে ফাটা সমূহ। অর্শজনিত বেদনা।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – গেঁটে বাতজনিত বেদনা পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সন্ধিস্থানের উপর দিকে তীর বেগে প্রবাহিত হয়, কিন্তু বিশেষ করে শরীরের ছোট ছোট সন্ধিগুলি আক্রান্ত হয়। স্ফীত, উত্তপ্ত, ফ্যাকাশে। ডানদিকের কাঁধে দপ্তর বেদনা। কাঁধে চাপবোধ, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। সন্ধিস্থানে কটকট শব্দ হয়; বিছানার গরমে বৃদ্ধি। গেঁটে বাতজনিত অস্থিগুটি সমূহ।

পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নীচের অংশের স্ফীতি। (বোথ্রোপস) বাতরোগ নিম্নাঙ্গ থেকে শুরু হয়ে উপরের দিকে উঠে (ক্যালসিয়াম বিপরীত)। গোড়ালি দ্বয় স্ফীত। পায়ের তলা বেদনাপূর্ণ, খুব কষ্ট করে তার উপর ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। (এন্টিম ক্রুড; লাইকোপোডিয়াম)। গোড়ালি সন্ধি খুব সহজেই মোচকিয়ে যায়।

জ্বর — শীতলতা, শারীরিক উত্তাপের অভাব। শরীরের কোন কোন অংশে ঠান্ডা জল রয়েছে এই জাতীয় অনুভূতি; সর্বাঙ্গীণ শীতলতা তৎসহ মুখমন্ডলের উষ্ণতা।

চামড়া – কপালে উপর ব্রণ, ঐ সকল অংশে খোঁচা মারার মত বেদনা। একজিমা (মুখমন্ডলীয়)। পায়ে ও গোড়ালিতে চুলকানি; আঁচড়ালে ও বিছানার উত্তাপে বৃদ্ধি। কালশিরা। আঘাতের পরে, আঘাতপ্রাপ্তস্থান দীর্ঘকাল বিবর্ণ হয়ে থাকে। কার্বাঞ্চলসমূহ (এনথ্রেসিনাম; ট্যারেন্টুলা কিউবেন)। রাসটক্সের বিষক্রিয়ার এটি ক্রিয়ানাশক হিসাবে কাজ করে, (গ্রিডোলিয়া; সাইপ্রিপেডিয়াম; এনাকার্ডিয়াম)।

কমা-বাড়া-উপশম – ঠান্ডায় ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে রাখলে।

বৃদ্ধি – রাত্রে এবং বিছানার উত্তাপে।

সম্বন্ধ-তুলনীয় —  লিডাম, স্পাইডার পয়জনের ক্রিয়ানাশ করে।, রুটা, বেলিস; আর্নিকা।

শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি।

‘ল্যাকেসিস’ সম্বন্ধে আলোচনার পর এই ঔষধটিতে গ্রহণ করা ভালই হইল কারণ আমরা দেখিতে পাই যে, ইহা রোগতত্ত্বের মধ্যে অনেকগুলি লক্ষণ ল্যাকেসিসের লক্ষণাবলির সদৃশ। ইহাতে চিত্র-বিচিত্র আকৃতি এবং মুখের সেই একই রকম ফুলা-ফাঁপাভাব আছে। ইহা ‘ল্যাকেসিসে’র কীটপতঙ্গ বিষের, এপিসে’র বিষক্রিয়া এবং জীবজন্তুর বিষের প্রতিষেধক।

লিডাম অস্ত্রচিকিৎসকের ঔষধ, এবং আঘাত ‘আর্ণিকা’ ও ‘হাইপেরিকামের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত। কয়েক প্রকার আঘাতের পর যে সকল লক্ষণ আসে, ইহা তাহার খুব বেশী সদৃশ, যথা-পেরেকের উপর পা পড়া, সূচ ফুটা, অর্থাৎ এরূপ আঘাত, যাহাতে রক্তপাত সামান্যই হয়, কিন্তু তারপর বেদনা, স্ফীতি এবং আক্রান্ত অঙ্গে শীতলতা দেখা দেয়। পেরেকের উপর পা পড়িয়া উহাতে পায়ের তলা অথবা গোড়ালি ফুটা হইয়া গেল অথবা তাহার হাতের তালুতে সূঁচ ফুটিয়া সে আঘাত পাইল অথবা তাহার হাতের নখের নীচে একটি সূঁচ ঢুকিয়া গেল; এইরূপ ছিন্নক্ষতের পর ঐ অঙ্গটি যদি শীতল হইয়া যায়, এবং তারপর বিবর্ণ, পক্ষাঘাতিকবৎ এবং চিত্র-বিচিত্র হইয়া পড়ে, তাহা হইলে লিডামের কথা চিন্তা করিও। অনেক সময় ঘোড়ার পা পেরেকের উপর পড়ে। ঐ পেরেক যদি ভিতরে ঢুকিয়া গিয়া ক্ষুরের উপরিস্থ হাড়ে বিদ্ধ হয়, তাহা হইলে ধনুষ্টঙ্কার উপস্থিত হয়। উহাতে প্রায়ই ঘোড়ার নিশ্চিত মৃত্যু হয় বলিয়া জানা আছে। ঐ ঘোড়ার জিহ্বার উপর লিডাম দাও, এবং কোন উপসর্গ হইবে না, কারণ ইহা ঐরূপ অবস্থা নিবারণ করে।

যখন হাতের তালুতে বা পায়ের তলা অথবা অন্য কোন অঙ্গে ছিন্নক্ষতের ফলে ধনুষ্টঙ্কার উপস্থিত হয়, তখন হাইপেরিকামে’র কথা চিন্তা করিও, কিন্তু যদি তোমাকে ঐরূপ ছিদ্র হইয়া যাওয়া ক্ষতের চিকিৎসা করিতে হয়, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ লিডাম দিবে এবং তুমি ধনুষ্টঙ্কার নিবারণ করিতে পারিবে। যখন হাতের আঙ্গুলের নখ ছিড়িয়া যায়, বা হাতের আঙ্গুলের ডগায় ন্যায় কোন অনুভূতিপ্রধান অঙ্গের স্নায়ু বিদ্ধ হয়, বা ছিড়িয়া যায়, তখন হাইপেরিকাম’ ঔষধ হইয়া থাকে। যখন বিশেষ অঙ্গগুলি থেঁৎলাইয়া যায় এবং রোগী সারা দেহে থেঁৎলানবৎ বেদনা অনুভব করে, সে কত বেশী থেঁৎলাইয়া গিয়াছে তাহাতে কিছু আসে যায় না, সাধারণতঃ ‘আর্ণিকাই ঔষধ হইবে । এইরূপ বলা যাইতে পারে যে, সূক্ষ্মাগ্র বস্তুতে ছিদ্র হওয়ার জন্য লিডাম পাঠ করিবে, অনুভূতি প্রধান স্নায়ু ছিন্ন হইয়া ক্ষতের জন্য হাইপেরিকাম’, থেঁৎলাইয়া যাওয়ার জন্য আর্ণিকা এবং ছিঁড়িয়া স্থানটি উন্মুক্ত হইয়া পড়িলে ও কাটিয়া গেলে ক্যালেন্ডুলা পাঠ করিবে। যে-সকল ব্যাপার বাহির হইতে উপস্থিত হয়, তাহা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাহ্যপ্রয়োগ দ্বারাই চিকিৎসা করা উচিত। বাহ্যিক কারণ হইতে যে-সকল অবস্থা উপস্থিত হয় তাহাতে ক্যালেন্ডুলা’র জলমিশ্রিত টিংচার চমৎকার ঔষধ, উহা বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করা উচিত। যখন তোমরা ছিন্নক্ষত এবং ছুরি বা অন্য কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা কাটা ক্ষত পাইবে, তখন ক্যালেন্ডুলা ব্যবহার করিবে, কারণ আঘাতটি বাহ্যিক এবং উহাতে কোন আভ্যন্তরিক ক্ষতি হয় নাই। যে, সকল লক্ষণ আভ্যন্তরিক কারণে উৎপন্ন হইয়াছে, তাহাদিগের চিকিৎসা আভ্যন্তরিকভাবে ঔষধ দিয়া কহিবে, কিন্তু বাহ্যিক কারণে যে-লক্ষণগুলি উপস্থিত হইয়াছে এবং রোগীটির মধ্যে যাহা কিছু আছে সবই যদি বাহ্যিক ব্যাপারই হয়, তাহা হইলে বাহ্যিক ঔষধ দ্বারাই চিকিৎসা করিবে; অন্য কথায়, বাহ্যিক কারণে যাহা ঘটিয়াছে তাহার জন্য বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিক ও জৈবশক্তি-আক্রমণকারী কারণে যাহা ঘটিয়াছে, তাহার জন্য আভ্যন্তরিকভাবে চিকিৎসা করিবে। আভ্যন্তরিক বিকৃতিগুলিকে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করিও,এবং বাহ্যিক ও স্থানীয় অবস্থাগুলি স্নিগ্ধকর ব্যান্ডেজ, প্লাষ্টার প্রভৃতি, যাহাতে উপশম হয়, তাহা দ্বারা চিকিৎসা করিও। যে-সকল স্থান ছিঁড়িয়া উন্মুক্ত হইয়া গিয়াছে, ক্ষতযুক্ত ও রক্তপাতবিশিষ্ট হইয়া পড়িয়াছে, তাহা কোন জ্বালাবিহীন ও অক্ষতিকর বস্তু দ্বারা সর্বদাই রক্ষা করিতে হইবে। ক্ষতগুলিকে যতদূর সম্ভব সরল উপায়ে বন্ধন করিতে হইবে এবং ক্যালেন্ডুলা অপেক্ষা অধিকতর সরল ক্ষতবন্ধনের জিনিষ আর নাই; চার বা ছয় ভাগ জলের সহিত ১ ভাগ ‘ক্যালেন্ডুলা মিশাইয়া লইবে। মূল আরকে খুব জ্বালা করিবে। ক্যালেন্ডুলা’র অধীনে তোমাদের উন্মুক্ত ক্ষতগুলিতে খুব সুন্দরভাবে মাংসকণার উৎপত্তি হইবে এবং উহা দ্বারা কোন ধাতুগত কুফলও দেখা দিবে না। যখন ধাতুগত অবস্থা সুশৃঙ্খল থাকে এবং কোন উন্মুক্ত ক্ষত দেখা দেয়, তখন ধাতুগত অবস্থাকে অমনি ছাড়িয়া দিও এবং বাহ্যিকভাবে কোন স্নিগ্ধকর বাহ্যপ্রয়োগ কর। এ বিষয়ে চিকিৎসককে পরিচালিত করিবার কোন বাধাধরা নিয়ম নাই। ক্ষতযুক্ত স্থানের পক্ষে বায়ু উপদাহজনক এবং উহাতে সম্পূর্ণ নির্দোষ ক্ষত হইতেও অন্যাবশ্যক পুঁজ স্রাব হয়। ক্যালেন্ডুলা’ উহাকে সুরক্ষিত রাখিবে। কাটা স্থানের দুই মুখ টানিয়া একত্র করিতে হইবে এবং ঐ জোড় যদি ঠিকমত করা হয়, তাহা হইলে ক্ষতটি আপনা হইতেই আরোগ্য হইয়া যাইবে। যদি তাহা না যায়, তাহা হইলে বুঝিবে যে, ধাতুগত অবস্থায় এমন কিছু আছে, যাহা তোমাদিগকে খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে এবং তাহার জন্য ঔষধও ব্যবস্থা করিতে হইবে। তখন বাহ্যিক চিকিৎসা স্থগিত রাখিতে হইবে। আমি এই যে ঔষধগুলির উল্লেখ করিলাম, তাহারা যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষত সম্বন্ধীয় করণীয়কে সম্পন্ন করিবে, আর তাহা খুব সহজও বটে। যে-কোন লোকেরই এতটুকু বুদ্ধি আছে যে, একটি হাঁ-করা ক্ষতের মুখ টিপিয়া, জুড়িয়া দিয়া উহা ভালভাবে বন্ধন করিতে পারে। যে-সকল পেশী স্বভাবতঃই আকৃষ্ট হইয়া কোন ক্ষতকে উন্মুক্ত করিয়া রাখে তাহাদিগকে সেলাই করিয়া বা বন্ধনী দিয়া বাধিয়া, ফাক হইয়া যাওয়া রোধ করিতে হইবে। উহা ঔষধব্যবস্থার অধিকারভুক্ত নহে, উহা অস্ত্রচিকিৎসকের কার্য্য।

লিডামের রোগী প্রায়ই যাহাকে ধাতুগত শীতলতা বলা হয়, তাহার অধীন থাকে, স্পর্শে শীতলতা, দৈহিক শীতলতা, হাতপায়ের শীতলতার সহিত মস্তকে উত্তাপ; আবার আমরা ইহার ঠিক বিপরীতও দেখিতে পাই, তখন সমস্ত শরীর অত্যুত্তপ্ত থাকে এবং মাথাও খুব উত্তপ্ত থাকে। সর্বাঙ্গে দপদপানি ও স্পন্দন হইতে থাকে, চর্ম বেগুনিবর্ণ বা খুব ঘোরাল রঙ্গের হয়, রোগী সব আচ্ছাদন ফেলিয়া দিতে চায়। লিডাম-জ্ঞাপক শিরঃপীড়াযুক্ত কোন রোগিণীর পক্ষে ঠান্ডা বাতাসে মাথা বাড়াইয়া দিতে চাওয়া, জানালা খুলিয়া দিতে বলা কিছু অসাধারণ ব্যাপার নয়, তিনি মাথায় কোন আচ্ছাদন রাখিতে চাহিবেন না, উহা খুব ঠান্ডা জলে ধুইতে চাহিবেন।

লিডামে হাত দুইটির, মুখমন্ডলের, পায়ের পাতার ফুলাভাব আছে; কোন কোন প্রকার শোথ অবস্থায় হাঁটু হইতে নিম্নদিক ফুলাফুলা ও বেগুনিবর্ণ থাকে। হাঁটু হইতে পায়ের পাতা পর্যন্ত এইরূপ বেগুনি; চিত্রবিচিত্র, স্ফীত অবস্থার সহিত, চর্মের পক্ষে যত বেশী সম্ভব, তত বেশী ফুলা ও অত্যন্ত তীব্র যন্ত্রণা থাকে। রোগী বরফের ন্যায় শীতল জলের গামলায় পায়ের পাতা ডুবাইয়া বসিয়া থাকিলে যেটুকু আরাম পায়। সর্বপ্রথম যে রোগীটিকে আমি এই অবস্থায় দেখিয়াছিলাম, তাহার কথা আমার মনে পড়িতেছে। সে ছিল একটি পুরাতন সিফিলিসগ্রস্ত রোগী, তাহার নাকের হাড়গুলি সিফিলিসে খাইয়া গিয়াছিল, নাক একখানি থলথলে চামড়ায় পরিণত হইয়াছিল, উহাতে কোন দৃঢ়তা ছিল না। সে একটি মাতাল ছিল এবং মদ খাইয়া পরিজনবর্গকে ভীষণ গালাগালি করিত। সে কয়েক বৎসর যাবৎ কাজকৰ্ম্ম করিতে চাহিত না, সর্বপ্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা হারাইয়া ফেলিয়াছিল; সে সর্বদা বাড়ী বসিয়া থাকিত এবং স্ত্রীর উপর হুকুম চালাইত। বস্তুতঃ সে একটি ভবঘুরে হইয়া পড়িয়াছিল, কিন্তু শোথ অবস্থা আসিয়া পড়ার জন্য টো টো করিয়া ঘুরিতে পারিত এবং পদদ্বয় এত খারাপভাবে স্ফীত ও স্পর্শকাতর ছিল যে, সে দিনের পর দিন বাড়ীতে বসিয়া থাকিত। যখন আমি তাহাকে প্রথম দেখিলাম, তখন তাহার সম্মুখে একটা বড় আকারের পুরাতন ধরনের গামলা ছিল এবং সে তাহার হাঁটু পর্যন্ত পায়ের তিন ভাগের দুই ভাগ বরফ জলে ডুবাইয়া বসিয়াছিল এবং গামলার জলের উপর খন্ড খন্ড বরফ ভাসিতেছিল, এবং ঐসব বরফখন্ডগুলি তাহার চর্মকে স্পর্শ করিলে সে আরাম পাইতেছিল। ঐ বরফখন্ডগুলি গলিয়া গেলে সে আরও বরফ দিতেছিল। তাহার স্ত্রী এই কথাগুলি বলিয়া তাহার যন্ত্রণার বর্ণনা করিয়াছিল—-“সে যে-যন্ত্রণা ভোগ করিতেছে, তাহা যথেষ্ট ভীতিজনক।” লিডাম তাহার পদদ্বয়কে বরফজল হইতে বাহিরে আনিয়াছিল এবং সে আর পরে কখনও উহা ব্যবহার করে নাই। উহাতে বেগুনিভাব চলিয়া গিয়াছিল, পায়ের ফুলা দূর হইয়াছিল এবং সে মদ খাওয়াও ছাড়িয়া দিয়াছিল। লিডাম তাহার সিফিলিসজনিত কষ্ট দূর করিয়াছিল এবং সে আর কখন তাহার পুরাতন রোগাবস্থায় ফিরিয়া যায় নাই। পালসেটিলা ও লিডাম, পায়ের পাতায় খুব ঠান্ডা জল চায়, এরূপ লক্ষণযুক্ত দুইটি প্রধান ঔষধ। কিন্তু পূর্বোক্ত লোকটির পক্ষে লিডাম উপযোগী হইয়াছিল।

লিডামে যে-ক্ষেত্রে চৰ্ম্মের প্রদাহ থাকে, সে ক্ষেত্রে রক্তপাতের প্রবণতা থাকে এবং ঐ রক্ত কাল হয়। লিডামের রোগীরা হৃষ্টপুষ্ট, রক্তপূর্ণ ও রক্তপ্রধান হইয়া থাকে। ঐরূপ রক্তপ্রধান রোগীদের সহজেই রক্তপাত হয়, তাহাদের মুখমন্ডল লাল হয়, তাহারা মাংসল, বলবান, হৃষ্টপুষ্ট ধাতুর লোক হইয়া থাকে। চক্ষুর কক্ষে সময়ে সময়ে রক্তস্রাব হয়, নাসাপথে রক্তস্রাব হয়, দেহের গহ্বরগুলিতে রক্তপাত হয়, মূত্র রক্তাক্ত হয়।

যে ধাতুর লোকেরা সর্বদাই শীতল থাকিতে চায়, তাহাদের পুরাতন, যন্ত্রণাদায়ক, বিস্তারশীল ক্ষত, ক্ষতের চারিদিক চিত্র-বিচিত্র; ক্ষতগুলি ঠান্ডাতে উপশমিত হয়।

এই ঔষধটি বাতপ্রকৃতি,— বাত এবং গেঁটেবাত। এই গেঁটেবাতের একটি ঔষধ, রোগীরা গেঁটেবাতে ভুগিয়া নানা উপসর্গগ্রস্ত হয়, তাহাদের সন্ধিস্থানে গেঁটেবাতের ঢিবলি জন্মে, হাতে কজিতে, আঙ্গুলে এবং পায়ের আঙ্গুলে সঞ্চিত পদার্থ জমে। সঞ্চিত পদার্থগুলি নীচে হইতে উপর দিকে উঠে। গেঁটেবাতগ্রস্ত সন্ধিগুলি হঠাৎ প্রদাহিত হইয়া উঠে এবং ঠান্ডায় উপশমিত হয়। লিডাম বিশেষভাবে হাঁটু দুইটিকে বাছিয়া লয়। ইহা বিশেষভাবে জানুসন্ধির দীর্ঘস্থায়ী পুরাতন প্রদাহের, বাতগ্রস্ত জানুসন্ধির পক্ষে উপযোগী। তোমরা দেখিবে যে, ঐরূপ রোগীরা সন্ধিগুলি ঠান্ডায় উন্মুক্ত করিয়া বসিয়া আছে, সন্ধিতে বাতাস করিতেছে, অথবা সন্ধিগুলিতে ক্লোরোফর্ম বা ইথার প্রভৃতি উদ্বায়ী আরক লাগাইতেছে; এবং উহা যখন বাম্পাকারে উড়িয়া শুকাইতেছে, তখন আরাম পাইতেছে। যন্ত্রণা ও স্ফীতিবিশিষ্ট বাত এবং গেঁটেবাতগ্রস্ত হস্তপদাদি;-যন্ত্রণা সঞ্চালনে এবং শয্যার উত্তাপে বাড়ে, রাত্রিকালে বাড়ে, ঠান্ডা বাহ্যপ্রয়োগে উপশমিত হয়, প্রচুর বিবর্ণ মূত্রত্যাগে ভাল থাকে। যন্ত্রণা ও স্ফীতি উপরদিকে উঠে এবং হৃদপিন্ডকে আক্রমণ করে।

আমি ইতিপূর্বেই বলিয়াছি যে, মুখমন্ডল ল্যাকেসিসের মুখের ন্যায় ফুলা-ফুলা বা স্ফীত থাকে। তাহার মুখ বিমূঢ়ের মত থাকে এবং পুরাতন মাতালের মুখমন্ডলের ন্যায় দেখায়। লিডাম হুইস্কি মদের কুফল নিবারণ করে এবং হুইস্কি পানের প্রবৃত্তি দূর করে। ধূমপান অভ্যাসের পক্ষে ‘ক্যালাডিয়াম যেরূপ, হুইস্কি পান অভ্যাসের পক্ষে লিড়ামও সেইরূপ। তোমরা ধূমপান অভ্যাস কাটাইয়া দিতে পারি এবং রোগী তখন অন্য সীমায় চলিয়া গিয়া ধূমপানের উপর বীতশ্রদ্ধ। হইয়া পড়ে। | তোমরা যেরূপ আশা করিতে পার, ইহাতে ইরিসিপ্লাসও আছে। উহাতে নীল, চিত্র-বিচিত্র, ফুলাফুলা এবং সময়ে সময়ে শোথের ন্যায় আকৃতি থাকে। উহা তরুণ প্রকৃতি ধারণ করে এবং জ্বালাযুক্ত হয়। শরীরের যে-কোন অংশের, কিন্তু বিশেষভাবে মুখমন্ডলের বা আহত স্থানের দাহক প্রকৃতির ইরিসিপ্লাস।

তোমরা স্বভাবতঃই মনে করিতে পার যে, যে-ঔষধের এত অধিক গেঁটেবাত প্রকৃতি আছে, তাহাতে অল্প-বিস্তর মূত্রপিন্ডসংক্রান্ত পীড়া থাকিবেই। “মূত্রপাত ঘন ঘন, পরিমাণ কমিয়া যায় বা বাড়িয়া উঠে, মূত্রত্যাগকালে মূত্রধারা প্রায়ই থামিয়া যায়।” “মূত্রত্যাগের পর মূত্রনালীতে জ্বালা।” “চুলকানিযুক্ত আরক্ততা এবং পুঁজস্রাব।” ইহাতে ‘লাইকোপোডিয়ামে’র ন্যায় মূত্রে স্পষ্ট লাল বালির মত তলানি থাকে। ইহাতে প্রচুর পরিমাণে নানা বর্ণের বালির মত তলানি আছে। রোগী যখন সর্বাপেক্ষা বেশী ভাল থাকে, তখন প্রচুর পরিমাণ বালির ন্যায় তলানি নির্গত হইতে থাকে। যখন মূত্রের তলানি কমিয়া যায়, তখন সন্ধিগুলিতে গেঁটেবাতজনিত সঞ্চিত পদার্থ স্পষ্ট হইয়া উঠে এবং সে অসুস্থ হইয়া পড়ে। ইহাতে আর একটি লক্ষণ আছে, তাহা ডাঃ লিপে সপ্রমাণ করিয়াছিলেন। প্রচুর পরিষ্কারবর্ণ মূত্র, উহার আপেক্ষিক গুরুত্ব কম এবং মূত্র হাল্কা এবং ক্ষার পদার্থের অল্পতাযুক্ত, এরূপ অবস্থায় গেঁটেবাতজ লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। মনে রাখিও যে, বাতপ্রবণতা নিম্নাঙ্গ হইতে উপরদিকে অর্থাৎ পরিধি হইতে কেন্দ্রের দিকে বিস্তৃত হইতে থাকে।

“ঋতুস্রাব, অতি শীঘ্র শীঘ্র, অত্যন্ত প্রচুর, উজ্জ্বল লাল, জৈব উত্তাপের অভাব।” এই সময়ে শরীর অত্যন্ত শীতল থাকে, তথাপি রোগিণী ঠান্ডা বাতাস চায়। প্রচুর ঋতুরক্তস্রাব। পুরাতন গেঁটেবাতগ্ৰস্তা রোগিণী, মুখমন্ডলী চিত্র, বিচিত্র, ফুলাফুলা; কিন্তু শোথযুক্ত নহে, কেবলমাত্র শৈরিক রক্তাবরোধহেতু ঐরূপ অবস্থা, প্রচুর ঋতুরক্তস্রাব, তৎসহ ঋতুকালে প্রবল যন্ত্রণা। বাতধাতু স্ত্রীলোকদিগের রজঃকষ্ট। ইহাতে ধাতুগত অবস্থার শৃঙ্খলাবিধান করে এবং গেঁটেবাতজ সঞ্চয় নিবারণ করে। যখন ঐরূপ রোগগুলি গভীরমূল হয়, তখন মধ্যবয়সের জরায়ুসংক্রান্ত রোগগুলি ইহা দ্বারা আরোগ্য হইবে এবং গেঁটেবাতজ আকৃতি পৃথকভাবে প্রকাশিত হইবে। অসাধ্য রোগে অভ্যন্তর যত ভাল থাকে, বাহ্যিক অবস্থা ততই খারাপ হয় এবং যখন এইরূপ বাহ্যিক উপসর্গগুলি স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় হইয়া পড়ে, তখন যতদিন পর্যন্ত ঐ বাহ্যিক উপসর্গের প্রকাশ দেহের প্রান্তগুলিতে থাকে এবং সন্ধিগুলি বর্ধিতভাবে আক্রান্ত হইতে থাকে, ততদিন পর্যন্ত আভ্যন্তরীণ অবস্থা সুশৃঙ্খল থাকে। যখন ঔষধ এইভাবে কাৰ্য্য করিতে থাকে, তখন আর উহার পরিবর্তন করিও না এবং এমন কোন জিনিষের খোজ করিও না, যাহা বাহ্যিক উপসর্গগুলিকে তাড়াইয়া দিতে পারে। যতদিন রোগীর উন্নতি হইতে থাকে এবং বাহ্যিক অবস্থা খারাপ হইতে থাকে, ততদিনই ঔষধটি ঠিকপথে চলিতেছে বলিয়া মনে করা উচিত। লিডাম এইভাবে কার্য্য করে। ইহার প্রকৃতি রোগগুলিকে কেন্দ্র হইতে তাড়াইয়া দেওয়া, কারণ ইহার রোগগুলি পরিধিতে আরম্ভ হইয়া কেন্দ্রের দিকে যাইতে থাকে। গেঁটেবাতগ্রস্ত রোগীকে অনেক সময় কিছু একটা না বুঝাইতে পারিলে সন্তুষ্ট করা যায় না। লাইকোপোডিয়াম’ও রোগজ উপসর্গগুলিকে দেহের উপরদিকে লইয়া যায়। উপসর্গগুলির যখন অভ্যন্তরে প্রবেশ করার ঝোক থাকে তখন উহা সেইগুলিকে তাড়াইয়া তাহাদের স্বস্থানে বাহ্য অঙ্গে লইয়া আসে। লাইকোপোডিয়ামে’ মূত্রে পুনরায় লাল বালির মত তলানি ফিরাইয়া আনে।

“আক্রান্ত অঙ্গের শীর্ণতাপ্রাপ্তি।” কোন স্নায়ু সূক্ষ্মাগ্র কিছুতে বিদ্ধ হইয়া আহত হইয়াছে, সামান্য বিষাক্ততা দেখা দিয়াছে, ক্ষতটি রক্তসঞ্চয়যুক্ত, চিত্র-বিচিত্র এবং ফুলাফুলা হইয়া পড়িয়াছে, আক্রান্ত অঙ্গটি শীতল হইয়া পড়িয়াছে, ঠিক এইরূপ অবস্থা লিডাম দ্বারা আরোগ্য হইবে। যে-সকল স্নায়ুগুলি ঐ অঙ্গের রক্তরসাদি যোগান দেয়, তাহাদের ঊর্ধ্বগামী প্রদাহ উপস্থিত হয়, বেদনা তীরবেগে উপরদিকে ধাবিত হয় এবং যে-সকল স্নায়ু ঐ স্থানের পেশীগুলিকে পুষ্ট রাখে, তাহারা শীর্ণতাপ্রাপ্ত হইতে থাকে, সুতরাং স্থানটিও শুকাইতে আরম্ভ করে। আমরা ‘পালসেটিলা’তেও এইরূপ অবস্থা পাই- “আক্রান্ত অঙ্গটি শুকাইতে থাকে।

[Ledum-ledom, ladanum, a resinous juice; palustre, a swamp]

অপর নাম — মার্শ-টি (Marsh-tea)

ল্যাব্রাডোর টি (Labrador tea)

ওয়াইল্ড রোজমেরি (Wild Rosemary)

ইহা ইরিকেসী জাতীয় উক্তি। এর পাতা ও ফুল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়।

লিডাম পলের – মূলকথা

১। বাত পায়ের পাতায় আরম্ভ হয়ে উপরের দিকে উঠে (ক্যালমিয়া এর বিপরীত)

২। ফুলা ফ্যাকাশে, সময়ে শোথযুক্ত এবং রাত্রে বিছানার গরমে বাড়ে; অনাবৃত থাকলে অথবা ঠাণ্ডা জল লাগালে উপশম বোধ হয়।

৩। কালশিটে (ইকাইমোসিস); আঘাত বা ঘুসি (মুস্ট্যাঘাত) লাগাবশতঃ চোখের মধ্যে কাল হয়ে যাওয়ায় লিডাম আর্নিকা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

৪। বাত ও সন্ধিবাতে (gout) সন্ধিগুলি বাতের অধিষ্ঠান ক্ষেত্র হয়ে পড়ে। সন্ধি গুলিতে যন্ত্রণাদায়ক চূর্ণময় পদার্থ (nodes) ও পাথরের মত শক্ত পিণ্ডের সঞ্চয় (sout stone) হয়।

৫। যে সকল ব্যক্তির জৈব উত্তাপ অল্প; দেহ সৰ্ব্বদাই ঠাণ্ডা থাকে, শরীরের বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা লাগে। কিন্তু রোগীর কাছে উহা ঠাণ্ডা বোধ হয় না, তাদের ক্ষেত্রে লিডাম পল উপযোগী।

৬। ধারাল সূক্ষ্মাগ্রযন্ত্রের (অস্ত্র) দ্বারা বিদ্ধক্ষত (punctured wound)। ইদুরের কামড়ে, পোকামাকড়ের কামড়ে, বিশেষতঃ মশার দংশনে ইহা উপকারী।

লিডাম পল – পর্যালোচনা

লিডাম বাতের একটি মূল্যবান ঔষধ। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় এই রোগ দুসাধ্য বলে স্বীকৃত। প্রাদাহিক প্রকৃতির বাত তারা সম্পূর্ণভাবে সারাতে পারে না। অধিকাংশ স্থলেই রোগটি তরুণ অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে ক্রনিক অবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং সারা জীবনই থেকে যায়। রোগীর প্রায়ই অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকৃতি ঘটে নচেৎ অনাবোগ্য হৃকপার্টিকার উপদ্রব জন্মে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এরূপ হয় না। হোমিওপ্যাথিক মতে চিকিৎসায় রোগীরা সাধারণতঃ সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়, কদাচিত হৃৎপিণ্ডের উপদ্রবের কিছু কিছু অবশিষ্ট থেকে যায়। তবে হৃৎপিণ্ডের বাত আরম্ভ হলেও এর দ্বারা সেরে যায়। হৃৎপিণ্ডের বাত প্রায়ই আরম্ভ হয় পিঠে, হাতে-পায়ে বা সন্ধিস্থানে। তারপর অ্যালোপ্যাথিক মতে বাহ্য প্রয়োগের দ্বারা চিকিৎসিত হয়ে রোগটি হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে, কিন্তু সেখানেও আর বাহ্য প্রয়োগের ঔষধ পৌছাতে পারে না। সুতরাং উহা ঐস্থানে থেকে যায় ও রসক্ষরণ আরম্ভ হয়ে হৃৎপিণ্ডের কপাটিকায় (valves) শক্ত জমাবাধা পদার্থের সঞ্চয় হয় (deposit)।

তাই কোন হোমিওপ্যাথেরই এইরকমভাবে চিকিৎসা করে (বাহ্য প্রয়োগে ঔষধ ব্যবহার করে) হৃৎপিণ্ডের রোগ সৃষ্টি করা উচিত নয়। আমি (ডাঃ ন্যাশ) ত্রিশ বছর ধরে বাতপ্রধান স্থানে প্র্যাকটিস করছি। তাই আমি অবিবেচক বা অনভিজ্ঞতা

বশতঃ ইহা বলছি না, সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে বলছি। আমরা পূর্ব দেশের হোমিওপ্যাথগণ যখন পশ্চিমদেশীয় হোমিওপ্যাথদের সবিরাম জ্বরে কুইনাইন বৃহৎ মাত্রায় ব্যবহারের জন্য নিন্দা করি, তখন আমাদের মনে করে দেওয়া হয় যে, আমরা ম্যালেরিয়া উৎপাদক স্থানে বাস করি না। সুতরাং আমরা ঐ বিষয়ে অথরটি নই। এখন আমরা কিন্তু বলতে পারি যে, অনেক চিকিৎসকই আছেন যাঁরা ঐ অঞ্চলে বাস করেন ও কুইনাইনের অপব্যবহার ব্যতীতও তাদের রোগীদের আরোগ্য করে থাকেন। তাই বাতের সম্বন্ধে কিন্তু আমাকে ঐভাবে আর হটান যাবে না। কারণ বাত এমন একটি রোগ, যা বহু লক্ষণই উৎপন্ন করে এবং বহু রকমের হ্রাসবৃদ্ধি প্রকাশ পায়; যার দ্বারা পরিচালিত হয়ে ঔষধের দীর্ঘ তালিকা থেকেও বাতের রোগীর জন্য আমি তার উপযোগী একটিমাত্র ঔষধ নির্বাচন করতে পারি। এক্ষেত্রে লক্ষণ সাদৃশ্যে নিৰ্বাচিত ঔষধের ফলও নিদানগত বা প্যাথলজিক্যাল ঔষধ নির্বাচনের ফলের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। আর এটা বুঝবার জন্য কাউকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয় না। বাস্তবিক ক্ষেত্রে এই রোগের প্যাথলজিক্যাল অবস্থানুসারে ঔষধ ব্যবস্থায় ঔষধ বিশেষ কার্যকর হয় না। কিন্তু উপচয়-উপশম ও অনুভূতি সমূহের উপর ঔষধ নির্বাচন বিশেষভাবে উপযোগী।

১। লিডামের বাত পায়ের পাতায় আরম্ভ হয় এবং উপর দিকে উঠতে থাকে। ইহা ক্যালমিয়ার ঠিক বিপরীত; ক্যালমিয়ার বাত নীচের দিকে যায়।

তরুণ ও পুরাতন উভয়প্রকার বাতেই লক্ষণের সাদৃশ্যে লিডাম ব্যবহৃত হতে পারে। * তরুণ রোগে লিডামের বাতে সন্ধিগুলি ফুলে ও গরম হয় কিন্তু লাল বর্ণের হয় না। স্ফীততায় পাণ্ডুবর্ণ থাকে এবং বেদনা রাত্রিকালে ও বিছানার গমে বাড়ে। বোগ আক্রান্ত স্থানগুলিকে অনাবৃত রাখতে চায়। এস্থলে মারকিউরিয়াসের সঙ্গে লিডামেব সাদৃশ্য দেখা যায় বটে, কিন্তু মারকিউরিয়াসের প্রভূত উপশম ব্যতীত ঘর্ম, ও মুখবিবর ও জিহ্বার, বিশেষ লক্ষণ লিডামে নেই। পুরাতন বাতেও লিডাম পল অতিশয় উপকারী। এখানেও সন্ধির স্ফীততা ও বেদনা থাকে, বিশেষতঃ বিছানার উত্তাপে উহা বাড়ে এবং প্রথমে পায়ের সন্ধিতে ও তারপরে হাতের সন্ধিস্থানে শক্ত পিণ্ডের সঞ্চয় হয়। লিডামের’, লক্ষণে হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাড়ের পেরিঅস্টিয়ামের চাপ দিলে বেদনা অনুভূত হয়, গোড়ালি ফুলে ও পায়ের তলায় এত ব্যথা ও স্পর্শাদ্বেষ থাকে যে, ওতে ভর দিয়ে পা ফেলে চলতে রোগী প্রায় অপারগ। পায়ের তলায় এইপ্রকার ব্যথার অনুভূতি ও স্পর্শাদ্বেষ এন্টিমোনিয়াম ক্রুডাম, লাইকোপোডিয়াম ও সাইলিসিয়াতে আছে। আমি অন্যান্য লক্ষণ মেলায় এদের প্রত্যেকটির দ্বারাই রোগী আরোগ্য করেছি। এইরূপ বাতরোগে লিডামের রোগীর দেহ অস্বাভাবিক ভাবে ঠাণ্ডা হতে দেখা যায়। “জৈব বা শারীর পোষক উত্তাপের অভাব” বলে মনে হয়। এই লক্ষণেও সাইলিসিয়ার সঙ্গে লিডামের সাদৃশ্য আছে। এ সাইলিসিয়াতেও লিডামের ন্যায় পা, পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতার পুরাতন বাত থাকে এবং রাত্রে তা বাড়ে, কিন্তু বিছানার গরমে বৃদ্ধি পায় না; বরং সে গরম কাপড়ে ঢেকে রাখতে চায়।

লিডামে ঠাণ্ডায় উপশম এতই সুস্পষ্ট যে, সময়ে সময়ে কেবলমাত্র ঠাণ্ডা জলে পা ডুবিয়ে রাখলেই কেবল সে উপশম বোধ করে। * পায়ের পাতার সকলপ্রকার বাতেই লিডামকে মনে রাখতে হবে।

২। উপঘাতেও লিডাম ব্যবহৃত হয়। চোট লাগায় ও উহার ফলে আমরা সাধারণতঃ প্রথমে আর্নিকার কথাই মনে করি এবং উহার স্বঅর্জিত খ্যাতির জন্য ভুলে যাই যে এর সমান অন্য কোন মূল্যবান ঔষধও থাকতে পারে। যে কাজ আনিকা ভালভাবে আরম্ভ করেছিল কিন্তু শেষ করতে পারেনি, তা শেষ করার জন্য সময় সময় লিডামের প্রয়োজন হয়। প্রথমদিকে আর্নিকাহ হয়ত সৰ্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ ছিল, কারণ উহা কালশিরা ও বিবর্ণতা অতি দ্রুত ও নিখুতভাবে আরোগ্য করে। কিন্তু আঘাত লেগে বা থেঁৎলে যাওয়ার ফলে কাল বা লাল দাগ থেকে গেলে আনিকার চেয়ে লিডাম পলহ সর্বোৎকৃষ্ট।

৩। তাছাড়া কালশিরেয় সালফিউরিক অ্যাসিডও উপযোগী। বিশেষ করে ধাতু বিকৃতিযুক্ত দুর্বলীভূত রোগীদের পক্ষে পারার প্রবণতা থাকলে ও সালফিউরিক অ্যাসিডের বিশেষ লক্ষণগুলি বর্তমান থাকলেই ইহা বিশেষভাবে উপযোগী।

আমরা অনেক সময় চোখের শুক্লমণ্ডলে কালশিরা দেখতে পাই, নাক্স ভমিকা উহার অব্যর্থ ঔষধ। কিন্তু ঘুসিমারাজনিত কাল চোখের জন্য দ্বিতীয় শক্তির লিডামের তুল্য আর কোন ঔষধ নেই।

* ৪। বিদ্ধক্ষতে অর্থাৎ পায়ে পেরেক ফুটলে বা হাতে তুরপুন বা সূঁচ ফুটলে লিডাম সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ। ইহা পোকার হুল ফুটায় বিশেষ করে মশার কামড়ের একটি প্রধান ঔষধ।

বিঃ দ্রঃ – তবে এইসকল ক্ষতে সাধারণতঃ যে প্ৰকাবের বিধানতন্তু আঘাতিত হয়, সেই অনুসারে ঔষধের প্রয়োগ হয়ে থাকে। যেমন – যদি কোন মায়ুতে আঘাত লাগে, তাহলে হাইপেরিকাম উপযোগী; যদি অস্থিবেস্টে আঘাত লাগে, তাহলে রুটা, যদি অস্থিতে আঘাত লাগে, তাহলে জোড় লাগাব বা মেরামতের জন্য ক্যালকেরিয়া ফস বা সিম্ফাইটাম প্রয়োজন। চোখের উপঘাত সম্বন্ধে লিডামের কথা আমরা যা বলেছি, তা ভুললে চলবে না। যদি আঘাতবশতঃ চক্ষুগোলকে অতিশয় বেদনা থাকে তাহলে সিম্ফাইটাম প্রয়োজন হতে পারে। আমার বিশ্বাস, এইসকল রোগে নিম্নক্রম অপেক্ষা ২০০ শক্তিই উৎকৃষ্টতর।

 

 

 

✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *