Aesc | পূর্ণতাঅনুভূতি, অর্শের সহিত পিঠ ব্যথা, ব্লাড সার্কুলেশন সংক্রান্ত সমস্যা। |
Aesc | মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে ও মন মরা, অতীব বেয়াড়া স্বভাব, নিদ্রা হতে জাগ্রত হলে নির্জীবতা ও দুদোল্যমান অবস্থা। |
Aesc | মলদ্বার শুষ্ক ও তাতে ছোট ছোট কাঠি বা তুষ আছে এরূপ অনুভব হয়। |
Aesc | কোমর, ত্রিকাস্থি ও ইলিয়াক অস্থির সন্ধি স্থানে বেদনা, সামান্য নড়লে চড়লে, নীচু হলে, উঠে দাঁড়ালে বা চললে বৃদ্ধি। |
Aesc | হাত, বাহু, পা ও মেরুদন্ডের আংশিক পক্ষাঘাত। |
অর্শরোগের প্রবণতাযুক্ত ব্যক্তি এবং যাহারা পাকাশয়জনিত পৈত্তিক ও সর্দিকাশির অসুখে ভোগে তাহাদের পক্ষে উপযোগী।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত রক্তসঞ্চয় হয়েছে এরূপ পূর্ণতাবোধ যথা হৃৎপিন্ডে, ফুসফুসে, পাকস্থলীতে, মস্তিষ্কে, বস্তিদেশে এবং চর্মে।
শৈরিক (যাহার মাধ্যমে De-oxygenated blood হৃৎপিণ্ডে পৌঁছায়) রক্তসঞ্চয় বিশেষতঃ যকৃৎ ও অর্শবলিতে।
হতাশ, বিষন্ন, অত্যন্ত খিটখিটে, সহজেই মেজাজ হারায় ও ধীরে ধীরে শান্ত হয়; অত্যন্ত ক্রোধী (ক্যামো)। মুখ, গলা ও রেক্টামের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহ স্ফীত, উহাতে জ্বালাবোধ, মনে হয় যেন শুকিয়ে গেছে হেজে গেছে।
সর্দি – পাতলা, জলের মত, জ্বালা থাকে, মনে হয় (নাক, গলা) হেজে গেছে—ঠাণ্ডা বায়ুতে শ্বাস নিতে অত্যানুভূতি।
গলকোষ প্রদাহে – দানাসংযুক্ত, ভীষণ জ্বালা, গলা মনে হয় হেজে গেছে গলায় শুকনো ভাব ও খসখসে ভাব। বারে বারে ঢোক গিলতে চায়, জ্বালা থাকে, গলায় কাঁটা ফোটার মত, হুলবেধার মত যন্ত্রণা তৎসহ শুকনো ভাব এবং গলা যেন আটকে আসছে এরূপ অনুভূতি থাকে (এপিস; বেল)।
রেকটাম — (মলদ্বারের ঠিক আগে যে অন্ত্রাংশ) ঐস্থানে শুষ্কতা ও উত্তাপবোধ মনে হয় স্থানটিতে ছোট ছোট কাঠি ফুটে আছে ছুরিকাঘাতের মত যন্ত্রণা রেক্টামের মধ্য দিয়ে যেন উপরদিকে উঠতে থাকে (ইগনে; সালফ)। অন্ধ অর্শবলি-যন্ত্রণাযুক্ত, জ্বালা থাকে, বেগুণিবর্ণ কদাচিত রক্তস্রাবী।
রেক্টামে—ঘায়ের মত ব্যথা, ফুলে আছে এরূপ অনুভূতি, জ্বালা এবং চুলকায় (সালফ)।
কোষ্ঠবদ্ধতা — শক্ত, শুকনো মল, কষ্টে বের হয় সেইসাথে রেক্টামে শুষ্কতা ও উত্তাপ; কোমরের নিচে ভীষণ যন্ত্রণা।
মলত্যাগের পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে রেক্টামে পূর্ণতাবোধ ও মলদ্বারে তীব্র যন্ত্রণা (এলো; ইগ্নে; মিউ-এসি, সালফ)। জরায়ু বেরিয়ে আসে—প্রদরস্রাব হাজাকর, কালচে সেইসাথে কোমরের নীচে বেদনা—হাঁটাচলায় অত্যন্ত ক্লান্তিবোধ।
কোমরে ও পিঠের নীচের গ্রন্থিগুলিতে ভয়ানক ঘিনঘিনে ব্যথা—এই ব্যথা কমবেশী সবসময়ই থাকে, এতে স্যাক্রাম ও নিতম্ব আক্রান্ত হয়।
গর্ভাবস্থায় পিঠে অবশভাব-চলতে গেলে, সামনে ঝুঁকলে জরায়ু বেরিয়ে আসে, তৎসহ প্রদরস্রাব হয়—এজন্য শুয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়। পিঠে ভারবোধ ও অবশভাব থাকে। হাতে, পায়ে ও মেরুদন্ডে পক্ষাঘাতের মত অনুভূতি।
সম্বন্ধ — সমগুণ অর্শরোগে এলো, কলিনসো, ইগ্নে, মিউ-এসি, নাক্স : সালফ-এর মত। কলিনসোনি দিয়ে অর্শ উপশমিত হওয়ার পর ইস্কিউলাস আরোগ্য করে।
নাক্স ও সালফারে অর্শের উপকার হয়েছে কিন্তু সারে নি, সেক্ষেত্রে ব্যবহার্য।
বৃদ্ধি – চলাফেরায়; পেঠে বেদনা ও ক্ষতরোধ চলাফেরায়, সামনে ঝুঁকলে এবং ঠান্ডা বাতাসে শ্বাস নিলে ।
শক্তি – θ হইতে ৩, ২০০।
এই ঔষধের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল অন্ত্রের নিম্নাংশে, এটি অর্শের স্ফীত শিরার সৃষ্টি করে, তৎসহ চরিত্রগত পিঠের বেদনা লক্ষণ থাকে এবং তৎসহ প্রকৃত কোষ্ঠকাঠিণ্য লক্ষণ থাকে না। তীব্র যন্ত্রণা কিন্তু রক্তস্রাব স্বল্প। শিরার ভিতর সর্বাঙ্গীনভাবে রক্ত চলাচলে বাধা, বেগুনিবর্ণের শিরাস্ফীতি বা ভেরিকোজ ভেনস, সবকিছুই ধীরগতিতে হয়, যেমন হজমক্রিয়া, হৃদপিণ্ডের সঞ্চালন, অন্ত্রের কাজ প্রভৃতি। যকৃতে ও যকৃত ধমনীতে রক্তবার্ধক্য ও ধীরগতিতে কাজ, তৎসহ কোষ্ঠকাঠিণ্য। পিঠের যন্ত্রণা, এবং যন্ত্রণার ফলে রোগী তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। সারা শরীরে যন্ত্রণা ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন অঙ্গে পূর্ণতার অনুভূতি, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী শুষ্ক, ফোলা। গলার ভিতর শিরাস্ফীতি।
মাথা — অবসাদগ্রস্ত ও খিটখিটে। মাথা নিস্তেজ, বিভ্রান্ত, মাথার ভিতর কন্ কন্ করে যেন ঠাণ্ডা লেগেছে বলে মনে হয়। কপালে ভারবোর্ধ তৎসহ বমি, এর পরেই উপর পেটের ডানদিকে উঁচ ফোটানোর মত বেদনা। মাথার পিছন থেকে কপাল পর্যন্ত যন্ত্রণা, তৎসহ মাথার ত্বকে থেঁৎতলিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, সকালে বৃদ্ধি। কপালের ডানদিক থেকে বামদিকে স্নায়বিক সূঁচ ফোটানোর মত বেদনা, এর পরে পেটের উপর অংশে স্থান পরিবর্তনশীল যন্ত্রণা। বসে থাকলেও হাঁটাচলার সময় মাথা ঘোরা।
চোখ – ভারী, উত্তপ্ত তৎসহ প্রচুর জল পড়ে, ও রক্তবহানলীর বিবৃদ্ধি চোখের তারায় ব্যথা।
নাক – শুষ্ক, শ্বাস নেবার সময় বাতাস ঠাণ্ডা বলে মনে হয়, নাকের ভিতর বাতাসের স্পর্শ অসহ্য, সর্দি, হাঁচি। নাকের প্রান্তভাগে চাপ বোধ। টারমিনেট অস্থির শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্ফীত ও নরম, এটি যকৃত-এর রোগের উপর নির্ভর করে।
মুখবিবর – মুখের ভিতর জ্বালাকর অনুভূতি। ধাতব স্বাদ। লালাস্রাব। জিহ্বা পুরো লেপযুক্ত। মনে হয় জিহ্বা পুড়ে গেছে।
গলা – উষ্ণ, শুষ্ক, ঢোক গেলার সময় কানে সূঁচ ফোটানোর মত ব্যথা। ফালিকিউলার ফ্যারিনজাইটিস তৎসহ যকৃতেরক্তাধিক্য। গলবিলে থাকা শিরাগুলিরস্ফীতি ও আঁকাবাকা। শ্বাস নেবার সময় গলার ভিতর বাতাসের স্পর্শ অসহ্য; মনে হয় গলার ভিতর হেজে ও সংকুচিত হয়ে গেছে, ঢোক গেলার সময় স্থানটিতে পুড়ে যাওয়ার মত অনুভূতি, ধাতুযুক্ত ব্যক্তির শীর্ণতা প্রাপ্ত, গলবিল প্রদাহের প্রথম অবস্থা। কাশির পর দড়ির ন্যায় মিষ্ট স্বাদযুক্ত শ্লেষ্মা উঠে।
পাকস্থলী – পাথরের মত ভারবোধ তৎসহ তীব্র যন্ত্রণা; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাবার তিনঘন্টা পর এই অবস্থা দেখা দেয়। যকৃত স্থানে হাত দিলে ব্যথা পায় রোগী তৎসহ পূর্ণতার অনুভূতি।
উদর – যকৃতে ও পেটের উপর অংশ অস্বস্তিকর কণকণে বেদনা। নাভি স্থানে বেদনা। জন্ডিস; তলপেট ও পেলভিস স্থানে দপদপানি।
সরলান্ত্র – শুষ্ক, কণকণে বেদনা। মনে হয় মলদ্বার ছোট ছোট কাঠিতে ভর্তি। গুহ্যদ্বার হেজে যাওয়ার মত ব্যথা যুক্ত। পায়খানার পর অধিক যন্ত্রণা, মলদ্বারের স্থানচ্যুতি। অর্শ তৎসহ কেটে ক্ষত, তীরবেঁধার মত যন্ত্রণা, যন্ত্রণা সারা পিঠে ছড়িয়ে যায়। স্রাবহীন ও রক্তস্রাব যুক্ত অর্শ। ধাতুবন্ধ হবার পর বৃদ্ধি। শক্ত, শুষ্ক ও বৃহৎ মল। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ফোলা মনে হয় এবং গুহ্যদ্বারে বাধার সৃষ্টি করে গোল ক্রিমির জন্য গুহ্যদ্বারে অস্বস্তি এবং এটি বার করতে সাহায্য করে। গুহ্যদ্বারে পুড়ে যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি তৎসহশীত, শীতভাব পিঠের উপর থেকে নিচের দিকে ধাবমান।
প্রস্রাব – বারে বারে, অল্প, কালচে, মাটির মত, গরম প্রস্রাব, বৃস্থানে বেদনা, বিশেষতঃ বামদিকের বৃক্ক ও ইউরেটারে।
পুরুষের রোগ – পায়খানার সময় বীৰ্য্যপাত।
স্ত্রীরোগ – সিমফ্যাসিস পিউরিস এর পিছনে সর্বদা দপদপানি। সাদাস্রাব তৎসহ কোমরের আড়ষ্টতা যা ত্রিকাস্থি স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়; কালচে-হলুদ, চটচটে, হাজার, ধাতুস্রাবের পর বৃদ্ধি।
বুক – সংকোচনের অনুভূতি। হৃদপিণ্ডে ভারবোধ, শরীরের সর্বাঙ্গে হৃদস্পন্দন অনুভূত হয়। কণ্ঠনালীর প্রদাহ, কাশি, যকৃতের ক্রিয়া বিকৃতির উপর নির্ভরশীল; বুকের ভিতর উত্তপ্ত বলে মনে হয়, অর্শ আছে এরূপ ব্যক্তির হৃদপিণ্ডের চারিপাশে বেদনা।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কণকণে বেদনা বামদিকের স্কন্ধাস্থি থেকে তীরবেগে বাহুতে নেমে আসে; আঙ্গুলের অগ্রভাগ অবশ।
পিঠ – ঘাড়ের আড়ষ্টতা; ঘাড়ের দুইদিকের মধ্যবর্তী অংশে কণকণে বেদনা; মেরুদণ্ড স্থান দুর্বল বলে মনে হয়; হাত-পায়ে খসে যাওয়ার মত অনুভূতি। পিঠের বেদনা স্যাক্রাম ও হিপ জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, যন্ত্রণা সামনের দিকে ঝুঁকলে ও হাঁটা চলায় বৃদ্ধি পায়। হাঁটার সময় পা দুটি ভিতরের দিকে বেঁকে যায়। পায়ের তলায় ক্ষততা, ক্লান্ত ও স্ফীত বলে মনে হয়।
হাত ও পা স্ফীত এবং হাত-পা ধোবার পর লালচে বর্ণ হয়, পূর্ণতার অনুভূতি।
জ্বর — বিকাল চারটের সময় শীত ভাব দেখা দেয়। পিঠের দিকে শীত বোধ, উপর থেকে নীচের দিকে নামে। জ্বর রাত্রি ৭টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। সন্ধ্যাকালীন জ্বর, চামড়া উত্তপ্ত ও শুষ্ক। প্রচুর ঘাম এবং প্রচুর উত্তপ্ত ঘাম।
কমা-বাড়া – সকালে ঘুম থেকে উঠার সময়, হাঁটাচলার এবং যে কোন প্রকার নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায়খানার সময় বৃদ্ধি, খাবার পর, বিকালের দিকে, দাঁড়িয়ে থাকলে বৃদ্ধি। ঠাণ্ডামুক্ত বাতাসে উপশম।
সম্বন্ধ — ইস্কিউলাস প্ল্যাবরা – তীব্র যন্ত্রণাদায়ক, কালচে-বেগুনি বর্ণের অর্শ তৎসহ কোষ্ঠকাঠিণ্য, মাথাঘোরা এবং যকৃত ধমনীতে রক্তাধিক্য। কথা জড়িয়ে যায়, গলার ভিতর সুড়সুড় করে, দৃষ্টি অস্পষ্ট, আংশিক পক্ষাঘাত। ফাইটোলক্কা (গলা শুষ্ক, মূলতঃ তরুণ রোগে)। নিগানডিয়াম আমেরিকানাস (সরলান্ত্রের শিরাগুলির স্ফীততা ও অর্শ তৎসহ তীব্র যন্ত্রণা, ১০ ফোটা করে টিংচার প্রতি দুই ঘন্টা পর পর)। এ ছাড়াও তুলনীয়। এলো, কলিনসন, নাক্স, সালফার।
শক্তি – টিংচার থেকে ৩য় শক্তি।
ইথিওপস মারকিউরিফ্যালিস -মিনারেলিস ।
(সালফার এবং কুইক সিলভার, অথবা ব্ল্যাক সালফাইড মারকিউরি)
এই ঔষধটি গণ্ডমানা ধাতু যুক্ত উপসর্গে, চোখের রোগে, কান-পাকায়, যন্ত্রণাকর বিরক্তিকর মামড়ীযুক্ত উদ্ভেদে এবং বংশগত সিফিলিস রোগে ব্যবহার হয়ে থাকে।
চামড়া – উদ্ভেদ। মৌমাছির চাকের ন্যায়, গণ্ডমালার ন্যায়, হার্পিসের মত ও একজিমার ন্যায় উদ্ভেদ।
শক্তি – নিম্নশক্তির বিচূর্ণ, বিশেষ করে ২x।
সম্বন্ধ – ইথিওপস্ এন্টিমোনালিস – (অনেক সময় গণ্ডমালাজনিত উদ্ভেদ, গ্রন্থিস্ফীতি, কানপাকা এবং গণ্ডমালাজনিত চোখের রোগে, চোখের তারার ক্ষতে আগে বলা ঔষধটি থেকে বেশী কার্যকরী হয়)। তুলনীয় ক্যালক;সাইলি; সোরিন।
এই ঔষধটির সর্ব অবস্থাতেই এক বিশেষ প্রকারের রক্তাধিক্য দেখা যায়। উহা শৈরিক পূর্ণতা এবং দেহের নিম্নশাখা ও সমগ্র দেহকে আক্রমণ করে। মস্তিষ্কও যে একই ভাবে আক্রান্ত হইয়াছে—এরূপ লক্ষণসমূহও দেখা যায়।
ইস্কিউলাসের অবস্থা নিদ্রার সময়েই খারাপ হয়, এইজন্য লক্ষণগুলি জাগিয়া উঠিলেই দেখিতে পাওয়া যায়। সে মানসিক হতবুদ্ধিতার সহিত জাগিয়া উঠে, সে হতবুদ্ধির মত ঘরের চারিদিকে তাকাইতে থাকে, দিশাহারা হইয়া পড়ে, লোক চিনিতে পারে না; ভাবিয়া আশ্চর্য্য হয়, কোথায় সে রহিয়াছে এবং সে যে সকল জিনিষ দেখিতেছে তাহার অর্থ কি। ‘লাইকোপোডিয়মের’ শিশুর ন্যায়, যেসকল শিশু ভয় পাইয়া এবং হতবুদ্ধি হইয়া জাগিয়া উঠে, ইহা তাহাদের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী। এই ঔষধটি অত্যন্ত বিমর্ষতা, কোপনতা, স্মৃতিশক্তিহীনতা ও কাজকর্মে অনিচ্ছা উৎপাদন করে। সময়ে সময়ে যখন শারীরিক রক্তসঞ্চয় ও শিরার পূর্ণতা দেখা দেয়, তখনই এই লক্ষণগুলি বিশেষভাবে পরিস্ফুট হয়। ইহা সাধারণভাবে শৈরিক রক্তের স্তব্ধতা এবং সময়ে সময়ে ঐভাবে ঘুমাইলে বৃদ্ধি পায়, শুইয়া থাকিলে বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক পরিশ্রমের উপশম হয়। যথেষ্ট পরিশ্রমের পর লক্ষণগুলি অন্তর্হিত হয়; চলিয়া বেড়াইলে, কিছু করিলে, নিজেকে ব্যস্ত রাখিলে উপশম হয়। যে-সকল লোক বুক ধড়ফড়ানিতে ভোগে এবং ঐ ধুকধুকুনি নিম্নশাখা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়; এবং ঘুমাইলে যাহাদের বুকের ধুকধুকুনি। কানে শোনা যায়, হৃৎস্পন্দন পরিষ্কার শ্রবণযোগ্য হয়, তোমরা দেখিতে পাইবে যে, এই ঔষধটি তাহাদের পক্ষে উপযোগী।
এক্ষণে, ঔষধ পরীক্ষাকালে মানসিক লক্ষণগুলি যেমন সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়, তেমনি রোগক্ষেত্রেও মানসিক লক্ষণগুলিই সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী দরকারী। হ্যানিম্যান আমাদিগকে মানসিক লক্ষণগুলির দিকেই সর্বাপেক্ষা বেশী মনোযোগ দিতে আদেশ দিয়াছেন, কারণ মানসিক লক্ষণগুলিই মানুষের স্বরূপকে প্রকাশিত করে। সর্বাপেক্ষা পরিস্ফুট এবং সর্বাপেক্ষা আভ্যন্তরীণ লক্ষণগুলিই সর্বাপেক্ষা মূল্যবান এবং ঐগুলিই মানসিক লক্ষণ। ইস্কিউলাসকে উহা খুব সবিস্তারে বর্ণনা করা হয় নাই, কিন্তু আমরা উহার চাবি কাঠিটি পাইয়াছি। অত্যন্ত কোপনতাই সেই সাধারণ অবস্থাটি এবং তাহা হইতেই শাখা প্রশাখারূপে বহুসংখ্যক মানসিক লক্ষণ বাহির হইয়াছে। কোপনতা এবং মানসিক অবসাদ বহু ঔষধের মধ্যেই আছে এবং ঐ অবস্থাটিকে কেন্দ্রে রাখিয়া, কোন কোন রোগীর মানসিক লক্ষণগুলি চারিদিকে ঘুরিতে থাকে। কারণ অন্য মানসিক লক্ষণগুলি অপেক্ষা এগুলি আরও আভ্যন্তরীণ এবং সেইজন্য বর্তমান পীড়াটির সহিতও সম্বন্ধযুক্ত। কোন ঔষধে লক্ষণগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করা চলিতে পারে। যে জিনিষগুলি স্মৃতিশক্তির সহিত সম্বন্ধযুক্ত, তাহারা যে জিনিষগুলি বুদ্ধিবৃত্তির সহিত সম্বন্ধযুক্ত, তাহাদের মত প্রয়োজনীয় নহে; আবার যে জিনিষগুলি বুদ্ধিবৃত্তির সহিত সম্বন্ধযুক্ত তাহারা, যে জিনিষগুলি অনুরাগ, বিরাগ অথবা ইচ্ছা বা অনিচ্ছার সহিত সম্বন্ধযুক্ত, তাহাদের মত প্রয়োজনীয় নয়। আমরা রোগীর কোপন অবস্থার মধ্যেও দেখি যে, সে তাহার ইচ্ছানুরূপ কাৰ্য্য করিবার সময় কোপনতাবিশিষ্ট থাকে না; উদাহরণস্বরূপ—যদি সে অপরের কথা শুনিতে ইচ্ছা করে, তাহা হইলে তাহার সহিত কথা বলিবার সময় তুমি তাহার কোপনতা লক্ষ্য করিতে পারিবে না। সে যাহা করাইতে চায়, তুমি যদি তাহাই কর, তাহা হইলেও তুমি তাহার কোপনতা দেখিতে পাইবে না। কিন্তু সে যাহা ইচ্ছা করে না, তুমি যদি তাহাই কর, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ তাহার কোপনতা বা ইচ্ছাবৃত্তির বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হইবে, আর এইটিই হইল মানুষের সর্বাপেক্ষা আভ্যন্তরীণ জিনিষ। সে যাহা ইচ্ছা করে তাহাই তাহার ইচ্ছাবৃত্তির অন্তর্গত এবং ঔষধ পরীক্ষা কালে মানুষের ইচ্ছাবৃত্তির সহিত সম্বন্ধযুক্ত বস্তুগুলিই সর্বাপেক্ষা মূল্যবান। তুমি হয়ত বলিবে যে, কোন ব্যক্তি দুঃখিত, কিন্তু সে দুঃখিত কারণ, সে যাহা চায় তাহা সে পায় না। তাহার কিছু পাইবার ইচ্ছা, কিন্তু সে তাহা পায় নাই এবং সেইজন্যই সে দুঃখিত। এই দুঃখভাব এতদূর পর্যন্ত যাইতে পারে যে, তাহার ফলে মানসিক বিশৃঙ্খলা পর্যন্ত উপস্থিত হইবে।
মানসিক বিশৃঙ্খলা ও শিরোঘূর্ণন। প্রভেদটি মনে রাখিও যে, শিরোঘূর্ণন বুদ্ধিবৃত্তির বিশৃঙ্খলা নহে। এক মুহূর্ত চিন্তা করিলেই তুমি বুঝিতে পারিবে যে, শিরোঘূর্ণন উহা নহে। মানসিক বিশৃঙ্খলা বুদ্ধিবৃত্তিরই বিশৃঙ্খলা, অনুভূতি রাজ্যের বিশৃঙ্খলা নহে। চলিবার সময় আন্দোলিত গতি এবং পরিষ্কার চিন্তা করিবার অক্ষমতাসহ মানসিক বিশৃঙ্খলা—তুমি এ দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়া লইবে। শিরোঘূর্ণন একপ্রকার আবর্তনের ন্যায় অনুভূতি এবং উহা অনুভূতি রাজ্যের অধিকার ভুক্ত। আমাদের কোন কোন রেপার্টরীতে ‘অনুভূতি’ শিরোনামায় শিরোঘূর্ণনের সহিত মানসিক বিশৃঙ্খলাকেও স্থাপন করিয়া একটি মহাভুল করা হইয়াছে। এইসব বিষয়গুলি আমাদিগকে সযত্নে বুঝিয়া রাখিতে হইবে, যাহাতে আমরা ঠিক পরিষ্কার ভাবে বুঝিতে পারি যে, রোগী কর্তৃক বর্ণিত লক্ষণগুলির প্রকৃত অর্থ কি? কোন রোগী হয়ত বলিবে যে, সে যখন রাস্তায়। হাঁটে, তখন তাহার শিরোঘূর্ণন হয় অথবা বোধ হয় যেন সবকিছুরই অভ্যন্তরটি ঘুরিয়া চলিয়াছে, তথাপি সে হয়ত এক সারি সংখ্যা যোগ দিতে পারে এবং তাহার মনটিও বেশ পরিষ্কার থাকে। যদি আমরা নিজেরাই এইসব উক্তির অর্থ পরিষ্কার ভাবে বুঝি, তাহা হইলে রোগীর কথার অর্থটিও বুঝিতে পারিব। রোগীর ভাষাটি লিখিয়া রাখা প্রয়োজন, অথচ তুমি দেখিবে যে, রোগী অনেক সময়ে এমন অনেক কিছুই বলিতেছে, যাহা সে ঠিক বুঝাইতে চায় না এবং সেইসব ক্ষেত্রে একটি বন্ধনী চিহ্নের সাহায্যে সে ঠিক যাহা বলিতে চাহে তাহা লিখিয়া রাখিতে হয়। উদাহরণ—একটি রোগী পেটে হাত দিয়া বলিতেছে, “আমার বুকের মধ্যে এইরূপ একটা ব্যথা আছে” কিংবা একটি স্ত্রীলোক ঋতুস্রাবকালে বলিল যে, তাহার পাকস্থলীতে ব্যথা করিতেছে, কিন্তু তুমি ত জান যে ব্যথাটি প্রকৃতপক্ষে জরায়ুতে। রোগীকে তাহার বর্ণনা সম্বন্ধে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন করিতে হয় অথবা তাহাকে ব্যথিত স্থানটিতে হাত দিয়া দেখাইয়া দিতে বলিতে হয়। ঠিক এইভাবে, রোগী হয়ত শিরোঘূর্ণনের কথা বলিতে পারে, যখন তাহার শিরোঘূর্ণনের পরিবর্তে আছে মানসিক বিশৃঙ্খলা; আবার সে হয়ত মানসিক বিশৃঙ্খলায় কথা বলিতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহার বক্তব্য থাকে যে রাস্তায় চলিতে সে টলমল করে।
এই ঔষধটির প্রকৃতিতে ‘পালসেটিলা ও ক্যালি কার্বের ন্যায় সর্বাঙ্গে সঞ্চরণশীল বেদনা;—ছুটিয়া চলার ন্যায়, তীব্র, তীরবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর, একস্থান হইতে অন্য স্থানে পরিবর্তনশীল বেদনা আছে; এই বেদনা কদাচিৎ গাত্রচর্ম অপেক্ষা গভীরতর স্থানে থাকে, কখন কখন স্নায়ুর উপর দিয়া চলিয়া বেড়াইতেছে বোধ হয়।
এই ঔষধটিতে নানাপ্রকার শিরোবেদনা আছে। ইহাতে মৃদু কামড়ানবৎ শিরঃপীড়া আছে, বোধহয় যেন মস্তিষ্কটিকে চাপ দিয়া বাহির করা হইতেছে। কিন্তু এই বেদনা বিশেষভাবে মস্তকের পশ্চাদ্দিকে অনুভূত হয়, মনে হয় যেন মাথাটিকে পিষিয়া ফেলা হইতেছে, গুরুতর কামড়ানবৎ বেদনা, তীব্র কামড়ান বেদনা, মস্তিষ্কে পূর্ণতা বোধ। “ডানদিক হইতে বামদিক পর্যন্ত মৃদু কপাল কামড়ানি, তৎসহ কপালের চর্মে সঙ্কোচনবোধ।” মৃদু চাপনবৎ যন্ত্রণার সহিত, মস্তকে পূর্ণতাবোধ, দক্ষিণ চক্ষুর উপরে ব্যথা। “ডান চক্ষুকোটরে ঊর্ধ্বপ্রদেশে স্নায়বিক বেদনা।” “বাম হনুতে তীরবৎ বেদনা, পরে উহা ডানদিকে প্রসারিত হয়।” মস্তক-ত্বকে সড়সড়ানি বোধ। তুমি যদি চৰ্ম্ম পরীক্ষা কর, তবে শরীরের সর্বত্র পিঁপড়া হাঁটার ন্যায় অনুভূত, সড়সড়ানি, তীরবিদ্ধবৎ ভাব এবং চুলকানি দেখিতে পাইবে; সুতরাং এই ঔষধ সৰ্ব্ব শরীরে যাহা অনুভূত হয়, মস্তক ত্বকেও তাহাই অনুভূত হয়।
ইস্কিউলাস চক্ষুর পক্ষে একটি আশ্চর্য্য ঔষধ—বিশেষতঃ যদি চক্ষের “অর্শ” থাকে। এই কথা দ্বারা তুমি কিছু বুঝিলে কি? এই কথা দ্বারা আমি বিশেষভাবে স্ফীত রক্ত চলাচলের শিরা বুঝাইতেছি। “অশ্রুপাত সংযুক্ত চক্ষের অতিশয় আরক্ততা, জ্বালাযুক্ত চক্ষুগোলক এবং উহার রক্তবহা শিরাময় আকৃতি।” এই বৰ্দ্ধিত রক্তসঞ্চয় অল্পাধিক যন্ত্রণাদায়ক, চক্ষুগোলকে ক্ষতবৎ ব্যথা হয় ও টনটন করে, চক্ষুতে তীব্র তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা থাকে। আমরা ইস্কিউলাসের পরিচায়ক লক্ষণগুলি প্রায় প্রত্যেকটিতেই সূচীবিদ্ধবৎ তীরবৎ যাতনা, সামান্য-সামান্য চিড়িকমারা বেদনা, পূর্ণতার সহিত সঞ্চরণশীল বেদনা দেখিতে পাই; প্রায় প্রত্যেক প্রকার গোলযোগেই এই পূর্ণতা বর্ধিত করে। যে পূর্ণতায় টিপিলে গর্ত হইয়া যায়, তাহাকে আমরা ফোলা বলি, ইহা সেরূপ নহে, ইহা হাত-পায়ের পূর্ণতা এবং টানটান ভাব। যে-সকল ঔষধে শিরার যথেষ্ট উপদ্রব থাকে, তাহাদের রোগীর সচরাচর গরম জলে স্নানে রোগ বৃদ্ধি হয়, গরম জলে স্নানের পর দুর্বলতা দেখা দেয়, গরম আবহাওয়ায় রোগ বাড়ে, উত্তাপে বিরাগ ও ঠান্ডায় প্রতিবোধ দেখা যায়। ইহা ‘পালসেটিলা সদৃশ অবস্থা। পালসেটিলার’ শিরা ঠান্ডা বাতাসে সঙ্কুচিত হয়, এবং সেই সঙ্কোচনে রোগী ভাল বোধ করে, কিন্তু গরম হাওয়ায় ও গরম জলে স্নানে শিরা পূর্ণ ও রক্ত স্ফীত হইয়া উঠে। পালসেটিলার’ রোগী সময় সময় ঈষৎ উষ্ণ জলে স্নানে ভাল বোধ করে, কিন্তু তুরষ্কদেশীয়গণের ন্যায় গরম জলে স্নানে কষ্টবোধ করে। ইস্কিউলাসের রোগীর উপসর্গগুলিও ঐরূপ। ইস্কিউলাসের রোগীও সাধারণতঃ ঠান্ডা বাতাসে ভাল বোধ করে। ইস্কিউলাসের লক্ষণ, বিশেষতঃ সামান্য সামান্য হুলফোটান বেদনা উত্তাপে আবির্ভূত হয়। এই সকল বাহ্যিক যন্ত্রণার বিশেষ লক্ষণ প্রায় সর্বদাই উত্তাপে উপশম কিন্তু গভীর রোগগুলি প্রায়শঃ ঠান্ডাতেই উপশমিত হয়। আর ‘পালসেটিলার মস্তক-ত্বকে এবং শরীরের উপরে যথাযথ হুলফোটানবৎ যন্ত্রণা উত্তাপের বাহ্যিক প্রয়োগে উপশমপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু রোগী নিজে ঠান্ডায় থাকিতে ভালবাসে। ঐ একইভাবে ইস্কিউলাসের হুলফোটান যাতনাও উত্তাপে ভাল থাকে, এবং যদিও সময়ে সময়ে রোগীর বাত ও শৈরিক অবস্থাগুলি ঠান্ডা ভিজা হাওয়ায় বর্ধিত হয় তথাপি সে সচরাচর ঠান্ডাতেই ভাল থাকে। আবার কিকেলিতে আমরা দেখি যে, রোগীর স্নায়ুপথের উপর দিয়া যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হুলফোটান যাতনা থাকে, তাহা উত্তাপেই উপশমিত হয়; কিন্তু রোগী নিজে সৰ্বাঙ্গ ঠান্ডায় । রাখিতে,—অনাবৃত রাখিতে চায়, একমাত্র বেদনার স্থানটি ব্যতীত, যাহা সে গরমে রাখিতে চায়। আমরা ক্যাম্ফারেরর মধ্যেও ঐ একই ব্যাপার দেখিতে পাই। চিড়িকমারা বেদনার সময়, সে জানালা বন্ধ করিয়া বাহ্য প্রয়োগ চায়, কিন্তু যেই যন্ত্রণাটি ছাড়িয়া যায় অমনি সে জানালা খুলিয়া: দিয়া অনাবৃত হইতে ইচ্ছা করে, কারণ তাহাতে তাহার নিঃশ্বাস লওয়ার সুবিধা হয়। এইগুলি সাধারণ জিনিষ এবং লক্ষণগুলি বিশ্লেষণ করার সময় এইগুলি লক্ষ্য করিতে হয়।
অতঃপর, ইস্কিউলাস একটি শিরার ঔষধশিরাগুলি পূর্ণ, রক্ত-স্ফীত, কখন কখন ফাটিয়া যাওয়ার মত। এক্ষণে ইহাতে যে আর একটি বিশেষ লক্ষণ আছে, তাহা আমি বর্ণনা করিতে চাই। তোমরা দেখিতে পাইবে যে, যে স্থানটিতে যে রক্তসঞ্চয় হয়, তাহার বর্ণটি হয় বেগুনি অথবা নীল। এই ঔষধে গলার প্রদাহ উৎপন্ন করে, উহার পরিচালক লক্ষণ স্থানটির বর্ণ অত্যন্ত কাল। ইহাতে শিরাস্ফীতি ও ক্ষত উৎপত্তির প্রবণতা আছে; এবং ঐরূপ স্থানটির চারিদিকে আমরা সুস্পষ্ট কালিমা দেখিতে পাইব। ইস্কিউলাস শিরাস্ফীতিযুক্ত পদক্ষত, উহার চতুর্দিকে বেগুনি কৃষ্ণমন্ডল থাকিলে আরোগ্য করে। যখন আমরা অর্শরোগের আলোচনা করিব, তখন দেখিব যে, উহার স্ফীতি বেগুনি বর্ণের এবং যেন উহা পচিতে আরম্ভ করিয়াছে। প্রদাহ অবস্থায় এই ঔষধটি উপযোগী নহে, ইহার ক্রিয়া ধীর এবং মন্থর। কতকগুলি ঔষধ সামান্য প্রদাহেও অতিশয় আরক্ততা সৃষ্টি করে, উহাদের সবকিছুই প্রবল ও দ্রুত, কিন্তু এই ঔষধটিতে সবকিছুই ধীরগতি, রোগীর কাৰ্যতৎপরতা কমিয়া যায়, হৃৎপিন্ড কষ্টে কাৰ্য্য করে এবং শিরাগুলিতে রক্তসঞ্চয় হয়।
“উদ্গার—উহা টক, চর্বির ন্যায়, তিক্ত।” “বমি করিবার প্রবৃত্তি।” “বুকজ্বালা এবং আহারের পর খাদ্যদ্রব্য গলায় উঠা।” ইহাতে পরিপাক ক্রিয়ার যথেষ্ট গোলযোগ আছে এবং আমরা এই সকল লক্ষণ হইতে ফসফরাস ও ‘ফেরামের’ সমপৰ্য্যায়ভুক্ত করিতে পারি। রোগী যেই খাদ্য খাইল অথবা তাহার অল্পক্ষণ পরেই খাদ্য টক হইয়া উঠিবে এবং সে উদ্গার তুলিতে থাকিবে, আর কিছুক্ষণ পরেই পাকস্থলীর কুঞ্চনসহ অস্থিরতা অনুভব করিবে এবং বমি করিয়া ফেলিবে। ফোরাম’, ‘আর্সেনিক, ইস্কিউলাস এবং আরও কয়েকটি ঔষধে এইরূপ অবস্থা থাকে। ইস্কিউলাসে পাকস্থলীতে রক্তসঞ্চয় ও ক্ষত উৎপন্ন হয়। পাকস্থলীতে অবিরত যাতনা এবং জ্বালা, বমি করিবার প্রবৃত্তি।” পাকস্থলীর ক্ষত রোগ এরূপ অবস্থা বর্তমান থাকিতে পারে।
উদর অস্বস্তিতে পূর্ণ থাকে। যদি আমরা ডান কুক্ষির, উদরের এবং সরলান্ত্রের লক্ষণগুলি অধ্যয়ন করি, তাহা হইলে দেখিতে পাইব যে, ঐ স্থানে কিঞ্চিত রক্ত সঞ্চালনের অবরোধ ঘটিয়াছে। পরিপাক ক্রিয়া ধীর, অন্ত্র কোষ্ঠবদ্ধ বিশিষ্ট এবং মলত্যাগের সময় সরলান্ত্রের বহির্নিগমন হয়। ইহাতে দক্ষিণ কুক্ষিদেশে পূর্ণবোধসহ অত্যন্ত কষ্টকর অর্শরোগ আছে। যকৃৎটি যাতনায় পূর্ণ থাকে। আহারের পর উদরে ও সরলান্ত্রে কষ্ট হয়। কাঠি ফোটার ন্যায়, টানিয়া ধরার ন্যায়, জ্বালাকর বেদনা, যেন সরলান্ত্রটি কতকগুলি কাঠিতে পূর্ণ রহিয়াছে। অন্ধবলিযুক্ত অর্শের সহিত তীব্র যাতনা। অর্শ শিরাগুলিই প্রসারিত এবং বলয়যুক্ত হয়। সরলান্ত্রে এই সকল স্ফীত শিরার পার্শ্বে বল শক্ত হইয়া জমিয়া থাকে এবং তারপর রক্তস্রাব ও তীব্র যন্ত্রণার সহিত ক্ষত উৎপন্ন হয়। এই ঔষধে রক্ত পড়ে না—এরূপ অর্শের পক্ষে উপযোগী মনে করা হয়, ইহা দ্বরা রক্তস্রাবী অর্শও আরোগ্য হইয়াছে। আমরা দেখিতে পাই যে, সরলান্ত্রের লক্ষণগুলি পাঠ্য পুস্তকে দুই পৃষ্ঠারও বেশী স্থান লইয়া আলোচিত হইয়াছে। অত্যন্ত ক্ষততা, অত্যন্ত যন্ত্রণা, মলপ্রবৃত্তি, যকৃতের শিরাবরোধজ্ঞাপক কাল মলের পর সাদা মল। পুরাতন কোষ্ঠবদ্ধতা।
পৃষ্ঠটি বহুবিধ উপসর্গের আবাসস্থল হয়, বিশেষতঃ পৃষ্ঠের নিম্নদিকটি, ত্রিকাস্থি ও নিতম্ব বরাবর; যদিও সারা পিঠের উপর দিয়া তলদেশে ব্যথা, মস্তিষ্ক-সম্বন্ধীয় শিরঃপীড়া, খুব সাধারণ ব্যাপার এবং যখন এইসব অর্শরোগী চলিতে আরম্ভ করে, তখন তাহাদের ত্রিকাস্থির ভিতর দিয়া নিতম্ব পৰ্য্যন্ত কনকনানি ও টাটানি অনুভূত হয়। ইস্কিউলাসের পক্ষে এই চলিবার কালীন ত্রিকাস্থির ভিতর দিয়া নিতম্ব পর্যন্ত বেদনা একটি পরিচালক লক্ষণ, এত পরিচালক যে অর্শ না থাকিলেও তুমি উহা থাকিবে, এরূপ মনে করিতে পারে।
অবিরত মৃদু পৃষ্ঠবেদনা থাকে, উহাতে হাঁটা প্রায় অসম্ভব হয়। বসিয়া থাকার পর অতিকষ্টে উঠিতে বা হাঁটিতে পারে। তুমি দেখিতে পাইবে যে, যে-লোক ইস্কিউলাসের পৃষ্ঠবেদনায় ভুগিতেছে, সে বসিয়া থাকার পর উঠিয়া দাঁড়াইতে সম্পূর্ণ কৃতকার্য হইবার পূর্বে অনেকবার চেষ্টা করিবে। ইহা ‘সালফার’ ও ‘পেট্রোলিয়ামে’ দেখিতে পাওয়া যায় এবং এগারিকাস’ দ্বারাও আরোগ্য হয়।
বস্তিপ্রদেশে অত্যন্ত টানিয়া ধরার ন্যায় বেদনা থাকিলে ইস্কিউলাস অনেক সময়ে স্ত্রীলোকদিগের রোগেও ব্যবহৃত হয়। বহু ক্ষেত্রে ইস্কিউলাস প্রচুর প্রদরস্রাব সংযুক্ত, এবং চলিবার সময় নিতম্বদেশে প্রচাপনবৎ যন্ত্রণাযুক্ত, বস্তিপ্রদেশের নিম্নাকর্ষণবৎ বেদনা আরোগ্য করিয়াছে। রোগিণী অনুভব করেন যে, জরায়ুটি অতিশয় রক্তপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। তিনি বলেন যে, ঋতুর পূর্বে এবং ঋতুকালে তাঁহার উদরের নিম্নভাগ ভারি বোধ হয়। এই সময়ে নিতম্বদেশে ব্যথার সহিত তাহার প্রবল যন্ত্রণা দেখা দেয়। “জরায়ুতে ক্ষতবৎ অনুভূতি এবং তৎসহ কুক্ষিদেশে দপদপানি ব্যথা।” “পুরাতন প্রদর রোগীর গাঢ় হলদে রংয়ের চটচটে স্রাব” “পৃষ্ঠ ও ত্রিকাস্থি হইতে তলপেট পর্যন্ত স্থানের খঞ্জতাবোধ সহ প্রদর।’ গর্ভাবস্থায় বহু উপসর্গ দেখা দেয়, তৎসহ জরায়ুতে ক্ষততাবোধ, পূর্ণতাবোধ, অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং চলিবার সময় পৃষ্ঠের উপর দিয়া বেদনা থাকে।
ইস্কিউলাসে যথেষ্ট গেটেবাতের কষ্ট আছে—সমস্ত সন্ধিগুলিতে গেঁটেবাত, গেঁটেবাত সংযুক্ত বাতরোগ স্নায়ুশূল রোগ। এই বাতপ্রবণতা বিশেষ ভাবে কনুই হইতে হাত পর্যন্ত, হাতের সামনের অংশে এবং হস্তলেই প্রকাশ পায়। এই বেদনা বিদীর্ণবৎ, ছিন্নকর, যেদিকে সঞ্চরণশীল, কোন বিশেষ নিয়মে উপস্থিত হয় না, কিন্তু উত্তাপে উপশমিত হয়। ইস্কিউলাস (ফ্লুরিক এসিড) দ্বারা ঊরুদেশ ও পায়ের শিরাস্ফীতি আরোগ্য হইয়াছে। আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি যে, দেহের এই শিরাস্ফীতি প্রবণতা ইস্কিউলাসের একটি বিশেষ লক্ষণ। গলক্ষত সারিয়া যাইবার পর যে শিরাস্ফীতি থাকিয়া যায়, তাহা ইস্কিউলাস দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে আরোগ্য হয়। আরও—চক্ষুর রোগ সারিয়া যাওয়ার পর, চক্ষে যে শিরাস্ফীতি থাকে, বাতজনিত রোগগুলির সহিত, যে শিরাস্ফীতি দেখা দেয়। কথিত হয় যে, অর্শরোগ বিশিষ্ট ধাতুর পক্ষে ইহা সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধগুলির অন্যতম।
[ Aesculus, the old Latine name for the Italian oak Hippus, horse; Kastana, chestnut]
অপর নাম— হর্স চেষ্টনাট (Horle Chestnut)
ইহা স্যাপিণ্ডেসী জাতীয় উদ্ভিদ। মধ্য এশিয়ায় জন্মে। এর সপুষ্পক নিস্তক ফল (Chestnut) থেকে বিচূর্ণ ও অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
মূলকথা-
১। শরীরের বিভিন্ন যন্ত্রে ও শিরায় (বিশেষ করে রক্ত প্রধান রোগীদের) পূর্ণতা বোধ ও দপদপ করা অনুভবে, এবং উহারা অতিরিক্ত রক্তে পূর্ণ হয়ে আছে। এরূপ বোধ হয়।
২। স্যাক্যাম বা ত্রিকাস্থি ও হিপবোন বা নিতম্ব দ্বয়ের মধ্যদিয়ে অবিরত মৃত্যু। বেদনা, উহা হাঁটলে বা অবনত হলে বাড়ে (অর্শ, প্রদরস্রাব, জরায়ুর স্থানচ্যুতি প্রভৃতিতে)।
৩। পূর্ণতা বোধ ও সরলান্ত্রে যেন কতকগুলি কাঠি ঢোকান আছে এরকম বোধ (অর্শ)।
৪। মুখগহ্বর, গলা ও সরলাষ্ট্রে মিউকাস মেমব্রেনের স্ফীততা, জ্বালা, উষ্ণতা, শুষ্কতা ও হেজে যাওয়া ক্ষতের মত অনুভব।
৫। সর্দি পাতলা জলের মত ও জ্বালাকর। ঠান্ডা বায়ু গ্রহণে নাকের অবদরণ বা ছাল উঠা ও অনুভাবাধিক্য।
৬। জ্বালাকর, হুল ফুটার ন্যায় বেদনা এবং শুকনো সঙ্কুচিত গল-গহ্বর (এপিস, বেল) সহকারে বার বার ঢোক গেলার ইচ্ছা।
ইস্কিউলাস হিপ-পর্যালোচনা
এই ঔষধটি এর বিস্তৃত ক্রিয়াক্ষেত্রের জন্য তেমন বেশী উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু এর নিজের অধিকারের মধ্যে এর নিশ্চিত ক্রিয়া উল্লেখযোগ্য। যতদূর জানা গেছে এর সমগ্র ক্রিয়া পিঠের নিম্নাংশে ও বস্তিদেশে কেন্দ্রীভূত, এবং এদের উপরই ইস্কিউলাসের প্রায় সমস্ত ক্রিয়া প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে এর চরিত্রগত প্রধান লক্ষণটি হল-“অবিরত মন্দ মন্দ পৃষ্ঠ বেদনা, ওতে ত্রিকাস্থি ও নিতম্বদ্বয় আক্রান্ত হয়, হাঁটলে বা মাথা নত করলে কষ্ট বাড়ে।”
ইহা অর্শরোগের একটি প্রধান ঔষধ। পূর্বোক্ত কটি বেদনা সহকারে সরলান্ত্রে পূর্ণতা, পরিশুদ্ধতা এবং কাঠি দিয়ে খোঁচানোর মত অনুভূতি ইস্কিউলাসের প্রয়োগ লক্ষণ।
ইগ্নেসিয়া, অ্যালো, পডোফাইলাম ও অন্যান্য কয়েকটি ঔষধে যেমন বলি নির্গমন বা সরলান্ত্র বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে, ইস্কিউলাসে তা নেই,
তবে অর্শ লক্ষণের অনুপাতে পৃষ্ঠবেদনা অত্যন্ত বেশী পরিমাণে বর্তমান থাকে। মনে হয় পূর্ণতার অনুভূতি যেন ইস্কিউলাসের একটি সৰ্বাঙ্গীন সাধারণ লক্ষণ, কিন্তু উহা বিশেভাবে প্রকাশিত হয় বস্তিগহ্বরে।
এই লক্ষণগুলি অর্শরোগ ছাড়াও অন্যান্য রোগের সঙ্গেও প্রায়ই দেখা যায়, যেমন- জরায়ুর স্থানচ্যুতি ও প্রদাহ। কোন কোন সময়ে একপ্রকার অতিশয় খারাপ কমে প্রদরস্রাবও পূর্বোক্ত বিশেষ লক্ষণানুসারে ইস্কিউলাসে খুব তাড়াতাড়ি সেরে গেছে।
এই সব বস্তিগহ্বরের রোগের আর একটি মূল্যবান লক্ষণ হল-দপদপ করা বা আঘাত করার মত অনুভব। আমি (ডা.ন্যাশ) এই ঔষধের তৃতীয় শক্তি থেকে উচ্চতর শক্তি পর্যন্ত ব্যবহার করে সমান সুফল পেয়েছি।
আমি (ডা. ন্যাশ) নাকের সর্দি ও গলা ব্যথায় ইস্কিউলাস ব্যবহার করে ও যথেষ্ট সুফল পেয়েছি। এর সর্দি খুব বেশী রকম আর্সেনিকের সর্দির মত পাতলা, জলের মত ও জ্বালাকর। কিন্তু এক্ষেত্রে ইস্কিউলাসের নির্দেশ করে দুটি লক্ষণ অবদরাণের বা হেজে যাওয়ার পর ক্ষতের ন্যায় অনুভূতি (rawness), ও গৃহীত শ্বাস বায়ুতে অতিরিক্ত অনুভূতি।
তরুণ ও পুরাতন উভয়প্রকার ফলিকিউলার ফ্যারেনঞ্জাইটিসে গলায় এক প্রকার অবদরন অনুভব হয় এবং ওর জন্য ইহা একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। হয়ত কালক্রমে আরো বহু ব্যবহারে এই ঔষধটির আরো উপকারিতা পরিস্ফুট হবে।