অরাম মেটালিকাম AURUM METALLICUM [Aur]

Aur মানসিক বিষন্নতা। আত্নহত্যা করবার অদম্য ইচ্ছা। রোগী সর্বদাই যেন নৈরাশ্যের সমুদ্রে ডুবে থাকে, জীবন তার সদাই ভার অনুভূতি, মৃত্যু হলেই যেন বাঁচে, খিটখিটে মেজাজ।
Aur উপদংশজনিত ‍অস্থির অসুস্থতা, পারদের অপব্যাবহার জনিত অস্থির রোগ।
Aur নাক ও অন্যান্য স্থানের ক্ষুদ্র ক্ষত।
Aur নাকের ভিতর ক্ষত (ওজিনা)।
Aur অস্থি বা হারে বেদনা, রাত্রে বৃদ্ধি হয়।
Aur মস্তকের চুল উঠে যায়, বিশেষত উপদেংশ হেতু।
Aur বয়ঃসন্ধি বালিকার মুখে অত্যন্ত দুর্গন্ধ।
Aur শরীরের ভিতরে গরম অনুভূতি, কিন্তু বাহিরে ঠান্ডা অনুভূতি।

রক্তপ্রধান, রাগী লোক, কালো চুল কালো চোখ। সজীব, অস্থির, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উদ্বেগ। বৃদ্ধ, যাদের দৃষ্টি ক্ষীণ, মোটা দেহ, জীবনে বিতৃষ্ণা। পারদের অপব্যবহারে সিফিলিসের কুফলে স্বাস্থ্য যাদের ভেঙ্গে গেছে এরূপ ক্ষেত্রে উপযোগী।

রোগাটে ছেলে, নির্জীব, কোন কাজে উৎসাহ নেই, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, শিশুদের ছেলেমানুষির অভাব, অন্ডকোষ বয়সানুযায়ী বাড়ে না শুধু চামড়ার থলির মত ঝুলে থাকে। সর্বদা আত্মহত্যার চিন্তা করে (ন্যাজা)। [আত্মহত্যার চিন্তা করে কিন্তু মরতে ভয় পায় নাক্স-ভ]।

অত্যন্ত বিষন্ন, নিজের প্রতি ঘৃণা হয়, ঝগড়াটে; আত্মহত্যা করতে চায়, জীবন বোঝা বলে মনে হয়, পারদের অপব্যবহারে, প্রায় সব রোগেই এই বিষন্নভাব।

অস্বস্তি, ভীষণ ব্যস্তভাব- মানসিক ও দৈহিক পরিশ্রমের কাজ করতে ভীষণ ইচ্ছা অথচ কোন কিছুই দ্রুত করতে পারে না (আর্জ-নাই)।

ভয়, রাগ, প্রতিবাদ করলে, বিরক্তি, খারাপ কিছুর আশঙ্কা বা মানসিক অসন্তোষ চেপে রাখার ফলে রোগ হলে (ষ্ট্যাফিস) প্রযোজ্য।

অত্যন্ত স্নায়বিক, সামান্য প্রতিবাদেই রেগে যায় (কোনি)।

ব্যথাবেদনা, গন্ধ, স্বাদ, শ্রবণ ও স্পর্শে অত্যানুভূতি (এনাকার্ডি)।

যে সব লোকের মুখ কালচে বাদামি রঙের, দুঃখিত, বিষন্ন, কম কথা বলে, কোষ্ঠবদ্ধ ধাতু তাদের সামান্য মানসিক পরিশ্রমে মাথার যন্ত্রণা হলে প্রযোজ্য।

বিশেষতঃ সিফিলিস ও পারদ অপব্যবহারের কুফলে চুল উঠে যাওয়া।

অৰ্দ্ধদৃষ্টি – কেবলমাত্র সব জিনিসের নিচের অর্দ্ধভাগ দেখতে পায় (কেবল  বা-অৰ্দ্ধ দেখে = লিথি-কা; লাইকো)। সিফিলিস ও পারদ ব্যবহারের কুফলে হাড়ের রোগ।

হাড়ের ক্ষয়রোগ – নাকের নরম হাড় ও ম্যাষ্টয়েড হাড়ে ক্ষয়রোগ, ওজিনা বা নাকে দুর্গন্ধযুক্ত মামড়ি, কানে পুঁজ হয়, তাতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ স্রাব— ব্যথা রাতে বাড়ে। রোগী যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়ে— এই বেদনা সিফিলিস ও পারদ বিষাক্ততা হতে উৎপত্তি (আসাফো)।

কোন উঁচু জায়গা হতে কিছু পাড়বার সময় বা কোঁথ দিলে (পডো, রাস) ও বড় হয়ে যাওয়া (কোনি) জরায়ু বার হয়ে পড়ে এবং জরায়ু শক্ত হয়ে যায়।

ঋতু ও জরায়ু ঘটিত রোগ, সাথে অত্যন্ত বিমর্ষভাব-ঋতুর সময় এইভাব বাড়ে।

যৌবনোদ্গমের সময় মেয়েদের নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ।

হৃৎপিন্ড মনে হয় স্থির হয়ে গেছে যেন আর নড়ছে না তারপর হঠাৎ ঝাঁকি দিয়ে নড়ে ওঠে (সিপিয়া)।

ভীষণ বুক ধড়ফড়ানি, উদ্বেগ সেইসাথে পরিশ্রম করলে মাথায় ও বুকে রক্তসঞ্চয় হয়; নাড়ী ক্ষুদ্র, দুর্বল, দ্রুত, এক সমান চলে না; ক্যারোটিড ও টেম্পোরাল ধমনী (শিরা) কাপে-যা খালি চোখে দেখা যায় (বেল, গ্লোনয়িন)। হৃৎপিন্ডের পেশীতে চর্বি জমে (ফস)।

সম্বন্ধ – অরামের পর সিফিলিনাম বা সিফিলিনামের পর অরাম ভাল কাজ দেয়।

হাড়ের রোগে, জরায়ু রোগে—আসাফো, ক্যাল্কে-কা, প্ল্যাটিনা, সিপিয়া, টেরেন্টুলা, থেরিডি এর সমগুণ।

বৃদ্ধি — ঠান্ডা বাতাসে, ঠান্ডা লেগে, শুয়ে থাকলে, মানসিক পরিশ্রমে। অনেক রোগ লক্ষণ শীতকালে হয়।

উপশম – গরম আবহাওয়াতে। শরীর গরম হলে, সকালে ও গ্রীষ্মকালে।

শক্তি – ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি।

যদি সম্পূর্ণভাবে অরাম কে কাজ করতে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে অরাম মানুষের রক্ত, গ্রন্থি ও অস্থির উপর কাজ করে যে সকল উপসর্গ তৈরী করে, তার সঙ্গে সিফিলিস ও পারদঘটিত দোষের উপসর্গের বিস্ময়কর ভাবে মিল, দেখতে পাওয়া যায়। এবং শরীরের তরল পদার্থের এইরূপ বিচ্যুতি ও শারীরিক তন্তুর এই পরিবর্তন করতে সক্ষম বলে, অরাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সিফিলিস রোগীর মত, মানসিক অবসাদ এই ঔষধ তৈরী করে থাকে। হতাশা নৈরাশ্য এবং আত্মহত্যা করার তীব্র ইচ্ছা। নিজেকে ধবংস করার জন্য নানাপ্রকার উপায়ের অনুসন্ধান করে থাকে। অস্থিবৃদ্ধি,

অস্থিক্ষত, রাত্রিকালীন অস্থির যন্ত্রণা বিশেষ করে মাথার, নাকের, এবং তালুর অস্থির। গলা ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তির গ্রন্থি স্ফীতি। হৃদকম্প ও রক্তাধিক্য। উদরী, যা প্রায় সময়ে হৃদপিণ্ডের গোলযোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। প্রায়ই সেকেন্ডারী সিফিলিস ও পারদের কুফলে নির্দেশিত হয়ে থাকে। যৌনরোগে ও গণ্ডমালা ধাতুদোষে সোনার এই ব্যবহার বহু পুরান কাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু সোনার এই ব্যবহার পুরান ভেষজ তত্ত্ববিদগন, পুনরায় আবিষ্কার হওয়ার আগে পর্যন্ত ভুলেছিলেন এবং পরবর্তীকালে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ এই ঔষধ আবিষ্কার করেন, ঔষধটিকে একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করালেন এবং এইবার আর আগের মত হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকল না। যখন গণ্ডমাল ধাতুদোষগ্রস্ত ব্যক্তির দেহে সিফিলিস চেপে বসে, তখন আমরা একটা ভয়াবহ, বিকৃত অবস্থা দেখতে পাই এবং সোনা ঐ জঘন্য মিশ্রিত অবস্থার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। মানসিক ক্লান্তি। নাকে পচা ঘা, যৌন ইচ্ছা-সম্পর্কিত অতি অনুভূতি প্রবণতা। আটিরিয়োস্কেলোরোসিস, উচ্চরক্তচাপ, রাত্রিতে বৃক্কাস্থির পিছনের অংশে যন্ত্রনা। যকৃত, রক্তবহানলী ও মস্তিষ্কের স্কেলেরোসিস। শীর্ণকায় বালক, বিষন্ন, জীবনীশক্তি ক্ষীন, স্মৃতি শক্তির দূর্বলতা।

মন – নিজেকে তিরস্কার কারার প্রবণতা ও রোগী নিজেকে অপদার্থ বলে মনে করে। তীব্র নৈরাশ্য। তৎসহ  ক্রমবর্ধমান উচ্চ রক্তচাপ, তৎসহ জীবনের বিতৃষ্ণা এবং আত্মহত্যার ইচ্ছা। সর্বদা আত্মহত্যার কথা বলা। তীব্র মৃত্যুর ভয়। সর্বদা খিটখিটি ও সামান্য প্রতিবাদে রেগে যায়। মানুষে ভীতি। মানসিক বিকলতা। উত্তরের অপেক্ষা না করে, সর্বদা দ্রুত প্রশ্ন করে থাকে। কোন কাজই দ্রুত করতে চাই না। অতি অনুভূতিপ্রবণ, (স্ট্যাফি) শব্দে উত্তেজনা, বিভ্রান্তি।

মাথা – মাথায় তীব্র যন্ত্রনা, রাত্রে বৃদ্ধি, মাথার বাইরের দিকে চাপবোধ। মাথার ভিতর গর্জন। মাথা ঘোরা। মস্তিস্ক  থেকে কপাল কপাল পর্যন্ত ছিঁড়ে যাওয়ার মত বেদনা। মুখমন্ডল পর্যন্ত প্রসারিত অস্থি বেদনা। মাথায় রক্তাধিক্য। মাথায় চামড়ায় ছোট ছোট ফোঁড়া।

চোখ – তীব্র আলোকাতঙ্ক, চোখের চারপাশে তীব্র টাটানির মত ব্যথা এবং চোখের তারার চারিপাশে বেদনা। দ্বিত দৃষ্টি, দৃষ্ট বস্ত্তর উপরের অর্ধেক অংশ দেখতে পায় না। টান টান অনুভব। জ্বলন্ত বস্ত সকল চোখের সামনে দেখতে পায়। চোখের চারিপাশের অস্থিতে বেদনা (এসাফেটিডা) রক্তবহানলীময়  কনীনিকা। বাইরে থেকে ভিতরের দিকে বেদনা। ভিতরের অংশে খোঁচা মারার মত বেদনা। ট্র্যাকোমা সহ কনানিকার রক্তাধিক্য।

কান – কানের ভিতরের ছোট অস্থি ও চর্বন অস্থির ক্ষত। স্কারলেটিনার পর দুর্দমনীয়, দূর্গন্ধযুক্ত কর্ণস্রাব। কানের বাইরের ছিদ্র পুজেঁ ভর্তি থাকে। পুরাতন স্নায়বিক বধিরতা। সিফিলিস জনিত কারণে কানের ভিতরের পর্দার রোগ।

নাক – ক্ষতযুক্ত, যন্ত্রনাদায়ক, স্ফীত, বাঁধাপ্রাপ্ত। নাকের প্রদাহ, ক্ষত, দূর্গন্ধযুক্ত স্রাব, পুঁজযুক্ত, রক্তমিশ্রিত স্রাব। নাকের ভিতর ছিদ্র করার মত বেদনা, রাত্রে বৃদ্ধি। নাক থেকে পচা গন্ধ বেরিয়ে থাকে। গন্ধে অনুভূতিপ্রবণ (কার্বলিক অ্যাসিড)। নাক ও মুখ থেকে বিকট গন্ধ। নাকের অগ্রভাগে আব।

মুখগহ্বর – বয়ঃসন্ধিকালে  বালিকাদের শ্বাস-প্রশ্বাস দূগন্ধযুক্ত। মাড়ীর ক্ষত।

মুখমণ্ডল – গন্ডাস্থিতে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। চর্বন অস্থি ও মুখমণ্ডলের অন্যান্য অস্থির প্রদাহ ।

গলা – ঢোক গিলার সময় সূঁচ ফোটার মত বেদনা। গ্রন্থির বেদনা। তালুর ক্ষত।

পাকস্থলী – ক্ষুধা ও পিপাসার বৃদ্ধি, তৎসহ সাময়িক অসুস্থতাবোধ। এপিগ্যাসট্রিয়াম স্থানে স্ফীতি। পাকস্থলীতে জ্বালা ও ঢেকুর উত্তপ্ত।

উদর – পেটের ডানদিকের উপরের অংশ উত্তপ্ত ও যন্ত্রনাদায়ক। পেটের ভিতর অস্বাভাবিক উপায়ে বায়ুসঞ্চয় কুঁচকিস্থানের গ্রন্থির স্ফীতি ও পুঁজোৎপত্তি।

প্রস্রাব – ঘোলাটে, অনেকটা ঘোলের মত দেখতে, তৎসহ পুরু তলানিযুক্ত। যন্ত্রনাদায়ক মূত্ররোধ।

সরলান্ত্র — কোষ্ঠকাঠিণ্য, মলশক্ত ও গুটলে মত। রাত্রিকালীন উদরাময় তৎসহ সরলান্ত্রে জ্বালা।

পুরুষের রোগ অন্ডদ্বয়ের স্ফীতি ও যন্ত্রণা – অণ্ডদ্বয়ের পুরাতন কঠিনতা প্রবল লিঙ্গোদ্রেক। বালকদের অণ্ডদ্বয়ের শীর্ণতা। হাইড্রোসিল।

স্ত্রীরোগ – যোনি নলী অত্যধিক অনুভূতি প্রবণ। জরায়ুর বিবৃদ্ধি ও স্থানচ্যুতি। বন্ধ্যাত্ব। যোনিনলীর আক্ষেপ।

হৃদপিণ্ড – রোগীর মনে হয় হৃদপিণ্ডের স্পন্দন দুই অথবা তিন সেকেণ্ডের জন্য থেমে গেছে। এর পরেই খুব জোরে হৃদপিণ্ডের কম্পন শুরু হয় তৎসহ পেটের উপরের অংশে খালি বোধ। হৃদকম্প। নাড়ী, দ্রুত, ক্ষীণ, অনিয়মিত। হৃদপিণ্ডের বিবৃদ্ধি। উচ্চরক্তচাপ হৃদকপাটিকার রোগ (অয়াম -৩০)।

শ্বাস-প্রশ্বাস — রাত্রিতে শ্বাসকষ্ট। বারে বারে, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, বুক্কাস্থি স্থানে সূঁচফোটার মত বেদনা।

অস্থি — অস্থিক্ষয়, অনেকটা সেকেণ্ডারী সিফিলিসে যেরকম দেখা যায়। মাথায় হাড়ের বেদনা, মাথার চামড়ার নীচে পিণ্ডের মত দলা, অস্থির বিবৃদ্ধিসহ রাত্রিকালীণ অস্থিবেদনা। নাকের, তালুর ও চর্বন অস্থির ক্ষয়। আক্রান্ত অস্থিতে টাটানি ব্যথা, মুক্ত বাতাসে আরাম, রাত্রে বৃদ্ধি।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – শরীরের সমস্ত রক্ত মনে হয় মাথা থেকে নিম্নাঙ্গের দিকে ছুটে চলেছে। নিম্নাঙ্গের শোথ। উত্তেজনা, মনে হয় যেন সকল শিরার মধ্যে রক্ত ফুটছে। সন্ধিস্থানে পক্ষাঘাতের মত, ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। হাঁটুর দুর্বলতা।

ঘুম — অনিদ্রা। ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে ফোঁপাতে থাকা। ভয়যুক্ত স্বপ্ন।

কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে ঠাণ্ডা লাগলে। বহু কষ্ট কেবলমাত্র শীতকালে দেখা যায়। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত।

সম্বন্ধ- তুলনীয় — অরাম, আর্স (বৃহৎ ধমনীর পুরাতন প্রদাহ, লুপাস, সিফিলিসজাত মাথার যন্ত্রণা সহ ক্ষয়রোগ, এছাড়াও রক্তাল্পতা। এই ঔষধে খুব দ্রুত ক্ষুধার বৃদ্ধি হয়।

অরাম ব্রোম (মাথার যন্ত্রনাসহ স্নায়বিক দুর্বলতা, অধিক পানে, রাত্রিতে ভয়, হৃদকপাটিকার রোগ)।

অরাম মিউর — জ্বালাকর, হলুদবর্ণের, হাজাকর প্রদর স্রাব, হৃদপিণ্ডের লক্ষণসমূহ, গ্রন্থিসংক্রান্ত উপসর্গসমূহ, জিহ্বাতে ও যৌনাঙ্গে আঁচিল, স্নায়ুকোষের ধবংস। মাল্টিপিল স্কেলেরোসিস্। মরভ্যানস্ ডিজীজ। ২x বিচূর্ণ। অরাম মিউর একটি সাইকোটিক ঔষধ, এই ঔষধটির সাহায্যে চাপা পড়া স্রাব পুনরায় দেখা দেয়। রজোনিবৃত্তি কালে জরায়ুর রক্তস্রাবে এই ঔষধটি খুবই মূল্যবান। ফ্রন্টাল সাইনাসের রোগসমূহ। কপালের বাম দিকে সূঁচ ফোটার মত বেদনা। ক্লান্তি সকল কাজেই বিরক্তি। পাকস্থলীর ভিতর টান ধরার মত অনুভূতি। ক্যানসার জিহ্বা চামড়ার মত শক্ত, জিহ্বার প্রদাহের পর  জিহ্বার কঠিনতা।

অরাম মিউর কেলি – পটাসিয়াম ও সোনা এই দুই প্রকারের ধাতুর মিশ্রিত ক্লোরাইড।(জরায়ুর কঠিণতা ও রক্তস্রাবে)।

অরাম আয়োড (পুরাতন হৃদাবরক ঝিল্লীর প্রদাহ হৃদকপাটিকার রোগসমূহ, আটিরিয়ো-স্কেলেরোসিস। নাকের পচাক্ষত, লুপাশ, অস্থির প্রদাহ, ডিম্বাশয়ের অর্বুদ, এইগুলিই মোটামুটি প্যাথোলজিক্যাল অবস্থা যা এই ঔষধের কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র। বার্ধক্যজনিত পক্ষাঘাত)।

অরাম সালফ – (প্যারালাইসিস অ্যাজিট্যানস) সর্বদা মাথা নড়ে স্তনের উপসর্গসমূহ, স্তনের বোঁটার স্ফীতি, যন্ত্রনা, বোঁটা ফালা ফালা, তৎসহ ছুরি মারার মত যন্ত্রনা।

এ ছাড়ও এসাফেটিভা (নাকের ও কানের অস্থির ক্ষত)। সিফিলিন, কেলি আয়োড, হিপার মার্কিউরিয়াস, মেজেরিয়াম, নাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরাস।

দোষঘ্ন – বেলেডোনা, সিঙ্কোনা, কুপ্রাম, মার্কিউরিয়াস।

শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি। শেষের শক্তিটি বিশেষ করে বর্ধিত রক্ত চাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এই ঔষধের সাধারণ লক্ষণগুলি এরূপ যে, হয় তাহারা মনের সহিত সম্বন্ধ বিশিষ্ট অথবা সামগ্রিকভাবে দেহের তন্তুগুলির সহিত সম্বন্ধ বিশিষ্ট। যদি তোমরা ইহার মানসিক লক্ষণগুলিকে, একটি সমষ্টিরূপে গ্রহণ করিয়া পাঠ কর, তাহা হইলে দেখিতে পাইবে যে, সুস্থ মানুষের পক্ষে যে-সকল প্রবৃত্তি থাকা উচিত, তাহার সবকিছুই বিকৃত হইয়া গিয়াছে। এই বিকৃতির পরিমাণ এতই বেশী যে, মানুষের মৌলিক আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি, যথা—বাঁচিয়া থাকিবার ইচ্ছা, আত্মরক্ষার ইচ্ছা পর্যন্ত বিকৃত হইয়া যায় এবং সে জীবনে বিতৃষ্ণা বোধ করে, সে জীবনে ক্লান্ত হইয়া উঠে, মরিতে চায় এবং আত্মহত্যার পন্থা অনুসন্ধান করে। জীবনের প্রতি ভালবাসা থাকে। মনোবৃত্তিগুলি বিকৃত হয়, বুদ্ধিবৃত্তি গৌণভাবে পরিবর্তিত হয়। অবশ্য এই ঔষধের সর্বত্রই উন্মত্ততা আছে, কিন্তু সেই উন্মত্ততা ইচ্ছাবৃত্তিতে আরম্ভ হয় এবং পরে বুদ্ধিবৃত্তিতে প্রসারিত হয়; ইহা প্রথমে বৃত্তিসমূহের বিপর্যয়ের মধ্যেই প্রকাশ পায়। ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয় যে, মানুষ কিভাবে মনের এরূপ অবস্থায় উপনীত হইতে পারে; তাহার প্রাণশক্তি এরূপ ভয়ানক ভাবে অবসন্ন হইয়া পড়ে যে, তাহার সবকিছুতেই আনন্দভাবের সম্পূর্ণ অভাব হইয়া পড়ে। যদি তুমি মানুষের আশা কাড়িয়া লও, তাহার আর বাঁচিবার কিছুই থাকে না, তখন সে মরিতে চায়। মনে হয়, এই ঔষধের অবস্থাও এইরূপ। আত্মনিগ্রহ, সৰ্ব্বদা আত্মগ্লানি, আত্মসমালোচনা, সৰ্ব্বদাই আত্মানুসন্ধান করে সে যেন ভাল কিছুই করে নাই, সবকিছুই অন্যায় হইয়াছে; তাহার কোন কাৰ্য্যই সফল হইবে না, সে নিরাশ হইয়া পড়ে। “সে কল্পনা করে তাহার কোন কাৰ্যই সফল হইবে না, সে যাহা কিছু করে সবই অন্যায়, নিজের সহিতই তাহার ঐক্য হয় না।” “কল্পনা করে যে, তাহার পথে সৰ্ব্বদাই বিঘ্ন রহিয়াছে। সে সৰ্ব্বদাই ভাবে যে, কোন কিছুকে অবজ্ঞা করিয়াছে, সে তাহার বন্ধুগণকে অবহেলা করিয়াছে। সে মনে করে যে কর্তব্য কার্যে অবহেলার জন্য তাহার তিরস্কৃত হওয়াই উচিত। সে কোন কিছুকে অবহেলা করিয়াছে, সে অন্যায় করিয়াছে, সে একেবারেই অসৎ, সে তাহার ঈশ্বরের দয়া পাওয়ার দিনটিও পাপ করিয়া হারাইয়াছে, সে মুক্তি পাওয়ার উপযুক্ত নয়— এইরূপ চিন্তা পরম্পরাই তাহার মনে সৰ্ব্বদাই উদিত হইতে থাকে। এই চিন্তা সে কোনমতেই রোধ করিতে পারে না, সে আত্মচিন্তায় ডুবিয়া থাকে, বসিয়া বসিয়া এই কথাই ভাবে; ভাবিয়া ভাবিয়া সে বর্তমান দুঃখকে বাড়াইয়া তুলে, নূতন অনুযোগের সৃষ্টি করে, নিজের উপরে বিরক্ত হইয়া উঠে, ভাবে সে এই পৃথিবীর সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত এবং তারপর সে মরিতে চায়। সে সবকিছুর মন্দ দিকটাই দেখে, সৰ্ব্বদাই দুঃসংবাদের আশা করে, দেখে সবকিছুই যেন খারাপ হইয়া যাইতেছে। ভবিষ্যৎ তাহার কাছে অন্ধকার বোধ হয় এবং সে মরিতে চায়; সে কোনদিনই কৃতকার্য হইবে না, কারণ যাহাতে সে হাত দেয়, তাহাই খারাপ হইয়া যায়। তাহার ব্যবসায় অন্ধকারময়, তাহার পরিবারবর্গ তাহাকে কষ্ট দেয়, তাহার বন্ধুগণ তাহাকে বিরক্ত করে, সে অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণ হইয়া উঠে, অতি সহজেই রাগিয়া যায়, সামান্য ব্যাপারে বিচলিত হয় এবং সহজেই উত্তেজিত হইয়া পড়ে। প্রত্যেকটি সামান্য ব্যাপারে তাহার রাগ ও মানসিক গোলযোগ উপস্থিত হয়, সে সৰ্ব্বদাই বিরক্ত থাকে।” অরামের মানসিক অবস্থা একপ্রকার উন্মাদ; বিশৃঙ্খলা ও বিষাদের জন্য দেখিতেও ভীতিকর। অরম অতি গভীর বিষাদ এবং অবসাদ অবস্থার উপযোগী ঔষধ, ঐ অবস্থায় রোগী চুপ করিয়া বসিয়া থাকে, কিছুই বলে না। যদি কেহ তাহাকে বিরক্ত করে, সে প্রচন্ড ক্রুদ্ধ ও মারমুখী হইয়া উঠে। “সে বিষন্ন, মনে করে সে ঘৃণিত এবং কলহপ্রিয়।” “পারদ ব্যবহারের পর ভয়ানক বিমর্ষতা।”এই প্রকার উন্মাদের কারণ দীর্ঘস্থায়ী উৎকণ্ঠা, অস্বাভাবিক দায়িত্ব, সিফিলিস এবং সম্পত্তি নাশ। যে- সকল লোককে পুনঃ পুনঃ পারদ সেবন করান হইয়াছে, তাহাদের পারদজনিত রোগ জন্মে, তৎসহ যকৃৎ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, প্রায় সবক্ষেত্রেই অল্পাধিক বিষাদ ও দুঃখভাব এবং আশাহীনতা দেখা দেয় এবং এইরূপ অবস্থাই আমরা অরমে দেখিতে পাই। অরম যেরূপ যকৃৎ রোগ উৎপন্ন করে, তাহার সহিত হৃৎরোগ, হৃদন্তর্বেষ্টৌষ, হৃৎপিন্ডের শোথ এবং হৃৎপিন্ড পর্যন্ত প্রসারিত বাতরোগ থাকে। তোমরা দেখিতে পাইবে যে, মানসিক রোগে যেখানেই জৈব প্রবৃত্তিগুলি বিকৃত হয়, সেইখানেই, হয় হৃৎপিন্ডের দুর্বলতা, হৃদন্তর্বেষ্টৌষ, হৃৎপিন্ডের বিবৃদ্ধি, নচেৎ হৃৎপিন্ডের কোন যান্ত্রিক রোগ থাকে। তোমরা অনেক সময়েই এরূপ পারদ ব্যবহারের ইতিহাস পাইবে, যাহার ফলে বাতরোগ প্ৰবৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিয়াছিল এবং তারপর বাহ্যিক মালিশ ব্যবহার করিয়া ঐ বাতরোগ তাড়াইয়া দেওয়ার ফলে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হইয়াছিল এবং সেই সঙ্গে নৈরাশ্য, ইচ্ছাশক্তি সংক্রান্ত উন্মাদ লক্ষণ এবং স্নেহ, ভালবাসার বিপর্যয় দেখা দিয়াছিল। মনে হয়, এই ঔষধটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি হইতে আরম্ভ করিয়া বোধশক্তি পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে আক্রমণ করে। ভাবিয়া দেখ, যে মানুষটির অবস্থা বেশ ভাল, যে ব্যবসায় ক্ষেত্রে বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত, তাহার পক্ষে আত্মহত্যা করার প্রবৃত্তি কিরূপ অবস্থা। তুমি আর এক প্রকার উন্মাদ অবস্থা, স্বাস্থ্যভঙ্গ ও বুদ্ধিবৃত্তির দুর্বলতা দেখিতে পার, এরূপ অবস্থায় সে চিন্তা বা বিচার করিতে পারে না, তাহার বৃত্তিগুলি অবিকৃত থাকে, কিন্তু সে ক্রমশঃ জড় অবস্থায় উপনীত হয় অথবা দুরন্ত হইয়া উঠিয়া, উত্তেজনার বশে আত্মহত্যা করিতে যায়। যে স্থলে বুদ্ধিবৃত্তি প্রথমে আক্রান্ত হয় এবং তারপর উহা ইচ্ছাবৃত্তিতে বিস্তৃত হয়, ইহা তাহারই একটি উদাহরণ। সময়ে সময়ে এরূপ অবস্থা উপস্থিত হয়, যখন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত অবস্থার কোন ব্যতিক্রম হয় না, উহা অবিকৃত থাকে, ঠিকই থাকে। সে ব্যবসা সম্বন্ধে বেশ সুস্থই থাকে, পিতা হিসাবে তাহার কোন ত্রুটি থাকে না, আশপাশের লোকেরা তাহাকে বুদ্ধিমানই ভাবে, কিন্তু সে তাহার অবস্থার বিষয়ে এবং জগতের প্রতি তাহার বিদ্বেষের বিষয়ে নীরবে চিন্তা করিতে থাকে, সে এ সম্বন্ধে কাহাকেও কিছু বলে না, আর তারপর একদিন দেখা যায় যে, সে নিজের ঘরের মধ্যেই গলায় দড়ি দিয়াছে। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত অবস্থা তাহাকে জগতের সহিত সম্বন্ধ বিশিষ্ট রাখে, কিন্তু তাহার স্নেহ, ভালবাসা প্রভৃতি তাহার নিজের জিনিষ। কোন ব্যক্তির সবকিছুর উপর অনুরাগ থাকিতে পারে আবার বিরাগও থাকিতে পারে, কিন্তু তাহার বুদ্ধিবৃত্তি তাহার জাগতিক পছন্দ, অপছন্দকে নিয়ন্ত্রিত করিবে না। মানুষের স্নেহ, ভালবাসা প্রভৃতি দেখা যায় না, কিন্তু তাহার বুদ্ধিবৃত্তি পরীক্ষার অধীন। সে তাহার বুদ্ধিবৃত্তিকে গোপন করিতে পারে না। আমরা দেখি যে, তাহার স্নেহ, ভালবাসা প্রভৃতি তাহার ভিতরের জিনিষ, তাহারা একটি আচ্ছাদন দিয়া ঢাকা থাকে, পরীক্ষা করা যায় না, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তি. তাহার বাহিরের পোষাক, উহা তাহার স্নেহ, ভালবাসাকে ঢাকিয়া রাখে, ঠিক যেমনটি পরিহিত পোষাক তাহার দেহটিকে ঢাকিয়া রাখে। অরম যে-সকল বৃত্তিগুলির সহিত জড়িত সেগুলি মানুষের প্রকৃতির অত্যন্ত অভ্যন্তরের জিনিষ।

“দুঃখ, নিরাশ প্রেম, ভয়, ক্রোধ, প্রতিবাদ, অপমান প্রভৃতি হইতে রোগ।” “যাতনায় সে এতই হতাশ হইয়া পড়ে যে জানালা হইতে বাহিরে লাফাইয়া পড়িতে চায়।” সে মৃত্যুর বিষয়ে চিন্তা করে, আত্মহত্যার বিষয় চিন্তা করে, সে পৃথিবী হইতে চলিয়া যাইতে চায়, নিজেকে ধ্বংস করিতে চায়, তাহার জীবনে প্রতি আকর্ষণ থাকে না সে জীবনকে অসার মনে করে।

এই ঔষধ বাতরোগে পরিপূর্ণ, পুরাতন পারদজনিত রোগে যেরূপ দেখা যায় ইহা তাহার সহিত বিসদৃশ নহে; বাতরোগে সন্ধিগুলি স্ফীত হয়, উপাস্থি ও অস্থিগুলি আক্রান্ত হয়, অস্থিবেষ্ট প্রদাহিত হয়, অস্থিবেষ্ট পুরু ও কঠিন হইয়া পড়ে। সন্ধিগুলি কঠিন হয়, সন্ধিগুলির চারিদিকের উপস্থিগুলি কঠিন হয়। এইগুলি সবই সিফিলিস ও পারদ প্রকৃতির। ইহা পুরাতন সিফিলিসগ্রস্ত রোগীর দেহের কোন অস্থি, পায়ের বৃহঅস্থি, নাসাস্থি, কর্ণের অস্থি অন্য কোন ক্ষুদ্র অস্থি আক্রান্ত হইলে উপযোগী। সিফিলিস ও পারদের ন্যায়, রোগগুলি রাত্রে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, সন্ধ্যাকালে উপস্থিত হয় এবং সমস্ত রাত্রি থাকে। বেদনা ভীষণ, উহা ছিড়িয়া ফেলার মত, হাড়গুলি এত কনকন করে যে, তাহারা যেন ভাঙ্গিয়া যাইবে; এরূপ অবস্থা তরুণ জ্বরে হয় না, কিন্তু পুরাতন সিফিলিসজনিত অবস্থায় হয়। অস্থিবেষ্টে ছুরি দিয়া কাটার ন্যায় যাতনা। সন্ধির বেদনায় ঐগুলি নিশ্চল হইয়া পড়ে। আসল হাড়গুলি প্রদাহিত হয়, তৎসহ অস্থিপচন। এই ঔষধে শারীর বিধানের সৰ্ব্বত্র অদ্ভুত প্রকারের রক্তবহা নাড়ীসংক্রান্ত উপদাহিতা আছে, এইজন্য ইহা আদৌ আশ্চৰ্য্য নহে যে, অস্থির নাড়ীময় আবরণ, অস্থিবেষ্টগুলিও বিশেষ ভাবে আক্রান্ত হয়। শিরাগুলি বর্ধিত হয় এবং রক্তসঞ্চয়যুক্ত ও প্রদাহিত হইয়া ভঙ্গুর হইয়া পড়ে। শিরাগুলি পুরু ও স্ফীত হয়। দেহের সর্বত্র রক্তবহা নাড়ীগুলি স্পন্দিত হইতে থাকে। যান্ত্রিক উত্তেজনা এবং রক্তবহা নাড়ীর পূর্ণতা, ইহার। প্রায় সব রোগেরই চরিত্রগত লক্ষণ।” হস্ত-পদাদির শিরাগুলির পূর্ণতা, উহা ক্রমশঃ বাড়িয়া দুর্বলতার সহিত স্ফীতি জন্মায়, এইজন্য ঔষধটির সর্বত্রই শোথ লক্ষণ দেখা যায়। হস্ত-পদাদির ফুলা, উহাতে চাপ দিলে গৰ্ত্ত হইয়া যায়; হৃৎপিন্ড ও যকৃৎ রোগে এরূপটি হয়। শরীরে একপ্রকার কৃত্রিম রক্তাধিক্য অবস্থা দেখা দেয় এবং পরিশেষে বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা প্রকাশ পায়। দেহে প্রবল রক্তোচ্ছ্বাস হইতে থাকে, কখন কখন উহা তীব্র উত্তাপ রূপে প্রকাশ পায়, উত্তেজনার সহিত রক্তোচ্ছ্বাস থাকিয়া থাকিয়া দেখা দেয়। অস্থিরতা, সমগ্র শারীরবিধানে যেন ভয়ানক কিছু ঘটিতে চলিয়াছে—এরূপ অনুভূতি। তারপর ঐ উত্তেজনা স্থির অবস্থায় আসে এবং পুনরায় দেখা দেয়। এইপ্রকার রক্তোচ্ছ্বাস সাময়িকভাবে কোন বিশেষ স্থানে অথবা শরীরবিধানের কোন দুর্বল অংশে উপস্থিত হয়। কখন কখন ইহা বক্ষাস্থির পশ্চাতে চাপবোধ এবং দ্রুত চলিলে বা সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিলে শ্বাসকৃচ্ছ্রতার সহিত হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত রোগ। হৃদন্তর্বেষ্ট-প্রদাহে দেহে এইরূপ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, ক্রমে ক্রমে তোমরা মূত্রে এলবুমেন পাইবে, যকৃৎ বৃদ্ধি পাইবে জরায়ুতে ক্যান্সার রোগের লক্ষণ পাইবে এবং অন্যান্য গভীরমূল রোগের সম্ভাবনা দেখিতে পাহবে।

“হাড়ে রন্ধ্রকরণবৎ বেদনা।” “বেদনায় পাগল করিয়া তুলে।” বেদনায় রোগী রাত্রে বিছানা ছাড়িয়া উঠে এবং পায়চারি করে। এইরূপ অবস্থা পুরাতন সিফিলিস রোগজ অস্থিবেদনায় এবং পারদ সেবনজনিত অস্থিবেদনায় দেখা যায়। রোগী হয়ত সারাজীবন পারদ ব্যবহার করিয়াছে এবং ফলে তাহার যকৃৎটি বাড়িয়া উঠিয়াছে সন্ধিগুলি স্ফীত হইয়াছে। কষ্টদায়ক রোগভোগ হইতে নিষ্কৃতি পাইবার জন্য সে হয়ত প্রত্যেক চিকিৎসকের নিকটেই যাইবে। পারদ ও রোগ মিশ্রিত হইয়া তাহার এরূপ অবস্থার সৃষ্টি করিয়াছে যে, তোমার প্রথম ঔষধে ভয়ানক উপচয়ের সৃষ্টি হইবে। সে একের পর একটি করিয়া এরূপ উপচয় ও সাময়িক আক্রমণের মধ্য দিয়া অগ্রসর হইবে। এই সকল ভীতিপ্রদ আক্রমণ যাহা রোগীটি অতিক্রম করিতে বাধ্য, তাহা পার করিয়া দিবার মত ঔষধ অরম, চেলিডোনিয়াম’ ও ‘ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া প্রভৃতি। এবং উহাদের সহিত তোমাকে পরিচিত হইতে হইবে।

এই ঔষধ অদ্ভুতভাবে গ্রন্থিসমূহকে আক্রমণ করে, কর্ণমূলগ্রন্থি কুঁচকিগ্রন্থি, উদরের লসিকাগ্রন্থিসমূহ, বস্তুতঃ, সকল স্থানের সকল গ্রন্থিই আক্রান্ত হয়। স্তনগ্রন্থি, অন্ড ও ডিম্বকোষ আক্রান্ত হইয়া কঠিন ও রসপ্রসেকযুক্ত ইত্যাদি হইয়া পড়ে। অরম অন্ডকোষের পুরাতন বিবৃদ্ধি এবং স্তন্যগ্রন্থিগুলি ডেলার ন্যায় হইয়া থাকা আরোগ্য করে। অরম এই সব গ্রন্থির কৌষিক অর্বুদ আরোগ্য করিয়াছে। হ্যানিম্যান অরমকে শক্তীকৃত করিয়া একটি রোগীকে দিয়াছিলেন, কিন্তু উহার কোন ক্রিয়া প্রকাশ পায় নাই, কিন্তু বিচূর্ণন পদ্ধতিতে ১৫শ শক্তি প্রস্তুত করার পর, উহার ক্রিয়া প্রকাশ পাইয়াছিল এবং ঐ রোগীটিকে তাহার পরিবারের বক্ষে ফিরাইয়া দিয়াছিল। হ্যানিম্যান বলিয়াছেন যে, পূৰ্ব্বেকার বিচূর্ণগুলিতে ঔষধ মাত্রা এত বেশী ছিল যে, উহা দ্বারা আরোগ্যক্রিয়া সম্ভব হয় নাই সুতরাং তাহাকে আরও উচ্চক্রম প্রস্তুত করিতে হইল এবং তখন উহা আরোগ্যবিধানের মত যথেষ্ট সূক্ষ্ম হইল, যথেষ্টভাবে শক্তীকৃত হইয়া দেহের বিবিধ আবরণের মধ্য দিয়া শারীরবিধানের অভ্যন্তরদেশে প্রবেশ করিতে পারিল।

অরমের আরও একটি বিরাট লক্ষণ আছে, উহার রোগী কিভাবে উত্তাপ এবং আবহাওয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। এ স্থলে কয়েকটি লক্ষণ আছে, যাহা সৰ্বাঙ্গীণভাবে মানুষটির সহিত সম্বন্ধযুক্ত এবং এই সংস্রবে ঐগুলি সম্বন্ধে বিবেচনা করতে হইবে। “উন্মুক্ত বাতাসের ইচ্ছা।” রোগী উত্তাপ সম্বন্ধে ‘পালসেটিলার’ সমশ্রেণীভুক্ত, কিন্তু অরম মৃদু, শান্ত এবং বিনম্র নয়, সে উদ্ধত, ক্রোধপরায়ণ অর্থাৎ ‘পালসেটিলা’ রোগীর সম্পূর্ণ বিপরীত। “সাধারণতঃ উত্তপ্ত হইলে উপশম।” ইহা শিরঃপীড়া সম্বন্ধে প্রযোজ্য। “ঠান্ডা জলে চক্ষের যন্ত্রণার উপশম হয়, “অনাবৃত হইতে চায় না। কিন্তু সে ‘পালসেটিলার ন্যায় খোলা বাতাস চায়। “গরম হাওয়ায় হাঁপানির বৃদ্ধি।” অনেক লক্ষণ স্নানের পর, বিশেষতঃ শীতল জলে স্নানের পর অদৃশ্য হয়, কিন্তু রোগী এখন প্রবল উত্তেজনা, উপদাহ ও রক্তবহা নাড়ীর পূর্ণতা, ধাতুগত রক্তোচ্ছ্বাস ও স্পন্দন হইতে কষ্ট পাইতে থাকে, তখন সে দরজা জানালা খোলা রাখিতে চায়, গাত্রবস্ত্র খুলিয়া ফেলিতে চায়। তাহার উত্তেজনা ও স্পন্দন অবস্থা খোলা বাতাসে উপশমিত হয়। ইহাতে স্ত্রীলোকের রজোনিবৃত্তিকালে যেরূপ উত্তাপের উচ্ছ্বাস আছে এবং উহার পর ঘৰ্ম্ম এবং সময়ে সময়ে শীতার্ত্ততা দেখা যায়।

এই ঔষধ সম্বন্ধে আমরা যাহা কিছু বলিয়াছি তার প্রায় সবই সাধারণ লক্ষণ, কারণ মন সম্বন্ধে সবকিছুই সাধারণ লক্ষণের অন্তর্গত।

অরমের মাথা বেদনা অত্যন্ত তীব্র; উহাতে রোগী পাগল হইয়া উঠে, প্রায়ই একপ্রকার অনুভূতি থাকে যে মাথার উপর দিয়া হাওয়া বহিয়া যাইতেছে; সে বাস্তবিক হাওয়া না থাকিলেও চারিদিকে চাহিয়া দেখে কোথা হইতে হাওয়াটি আসিতেছে, সে অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ হইয়া উঠে। প্রায়ই সে মাথায় কাপড় জড়াইয়া রাখে, কিন্তু তথাপি মাথা গরম থাকে, মাথায় যথেষ্ট রক্তসঞ্চয় থাকে এবং মাথার দিকে রক্তোচ্ছ্বাস থাকে। মাথায় বেদনা এবং মনে হয়, যেন মাথাটি থেঁৎলাইয়া গিয়াছে। মাথায় সূচীবিদ্ধবৎ, জ্বালাকর ছিন্নকর বেদনা, মাথায় প্রবল দপদপানি। মুখমন্ডল স্ফীত, উজ্জ্বল এবং চকচকে, উহার সহিত রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া প্রায়ই সিফিলিসগ্রস্ত ব্যক্তিদেরই দেখা যায় এবং উহার সহিত হৃদরোগের সম্বন্ধ থাকে, রক্তসঞ্চালন শ্লথ হয়, মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ ধারণ করে এবং চৰ্ম্ম কৃষ্ণাভ হয়। সিফিলিসের ন্যায় অস্থিবৃদ্ধি। মাথার খুলির হাড়গুলি স্পর্শকাতর, অস্থিবেষ্টে স্পর্শ সহ্য হয় না। পুরাতন পারদদুষ্ট রোগীর মস্তকের অস্থিরোগ ও অস্থিক্ষয়; সিফিলিস ও পারদ ধাতুতে যেরূপ দেখা যায়, তদ্রুপ প্রচুর চুল উঠিতে থাকে ও মাথায় টাক পড়ে। সিফিলিস জনিত টাক রোগ, মাথার ত্বক চক্‌চক্‌ করে, আর চুল উঠে না। তরুণ রোগে চুল উঠিয়া যায়, কিন্তু উহা পুনরায় জন্মায়। কিন্তু সিফিলিস ধাতু যুবকগণের চুল উঠিয়া গেলে, তাহাদের আজীবন টাক পড়িয়া থাকে।

ইহাতে চক্ষের উপদ্রব আছে, উহা সর্দিজ প্রকৃতির, কিন্তু উহাতে চক্ষুর বিবিধ আবরণে ক্ষত এবং রসসঞ্চয় হয়। উপতারা-প্রদাহ, সমগ্র দৃষ্টিসংক্রান্ত যন্ত্রের বিকৃতি। আমি পুস্তক হইতে কতকগুলি আশ্চৰ্য্য লক্ষণ পড়িয়া শুনাইব, কিন্তু রোগীর ধাতুটি যে কিরূপ তাহা তোমরা সর্বদা মনে রাখিবে, তাহার মানসিক অবস্থা মনে রাখিবে, মনে রাখিবে যে, সে সিফিলিস ও পারদদোষদুষ্ট, সে গেঁটেবাতপ্রবণ এবং সন্ধিগুলিতে বেদনাযুক্ত, মনে রাখিবে যে, তাহার হৃৎপিন্ডের পীড়া আছে। সুতরাং আমরা যখন চক্ষুলক্ষণগুলির আলোচনা করিব, তখন মনে রাখিব যে, কিরূপ ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে ঐগুলি প্রযোজ্য হওয়া সম্ভব। “আলোকাতঙ্ক।” চক্ষু ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল। “গ্যাসের আলোকে বহুসংখ্যক উজ্জ্বল ভাসমান দাগও বিন্দু বিন্দু দেখা যায়।” চন্দ্রালোকে চক্ষুর উপশম হয়।” “বড় বড় অক্ষর পৃথক করা যায় না।” “দৃষ্টিপথের উপরের অন্ধকার অর্ধাংশে উজ্জল তারার মত বস্তু মাঝে মাঝেই ঝরিয়া পড়িতে থাকে।” ক্যাল্কেরিয়াতে একটি অদ্ভুত লক্ষণ আছে, সে দৃষ্টিপথের নীচের অংশ হইতে অকস্মাৎ একটি আলোকের ঝলকা উঠিতে দেখে, উহা উঠিয়া ভাগ ভাগ হইয়া যায় এবং তখন সে চতুর্দিকে তারার মত দেখিতে পায়। এইরূপ দৃশ্য তোমরা সময় হাওয়াই বাজী ছুড়িবার সময় দেখিতে পাইবে, হাওয়াইটি উপরে উঠিয়া গিয়া ফাটিল এবং তারা বৃষ্টি করিতে করিতে নামিয়া পড়িল। এই লক্ষণ ক্যাল্কেরিয়াতে দেখা গিয়াছে। বাম চক্ষের অর্ধদৃষ্টি।” এবং এইরূপ আরও অনেক অদ্ভুত জিনিষ আছে, যাহা পাঠ্যপুস্তকের ভাষা ব্যতীত বর্ণনা করা যায় না “বহির্নির্গত চক্ষু।” গলগন্ডরোগে হৃৎপিন্ডের বিবর্ধনসহ চক্ষুর বহিনির্গমন অরম দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। দ্রুত ও পূর্ণ নাড়ীর সহিত ফলক গ্রন্থির (Thyroid) বৃদ্ধি, চক্ষুবিনির্গমনযুক্ত গলগন্ড রোগ অরম দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। নেট্রাম মিউর দ্বারাও আরোগ্য হইয়াছে। “একদৃষ্টে তাকাইয়া থাকে, ভীতিপ্রদভাবে তাকাইয়া থাকে।” “উপতারাপ্রদাহের সহিত চক্ষুর চারিদিকে অত্যন্ত বেদনা, বেদনাটি হাড়ের গভীর প্রদেশে।” এরূপ অবস্থা পারদ দ্বারা চিকিৎসিত সিফিলিস হইতেই উৎপন্ন হওয়া সম্ভব এবং অরম এক্ষেত্রে সিফিলিস ও পারদ উভয়েরই প্রতিবিষ হইবে। “চক্ষুতারকাদ্বয় অসমানভাবে বিস্তৃত। ইহাতে চক্ষুর সর্দিজ অবস্থা আছে। ইহাতে চক্ষুর শ্বেতমন্ডল, চক্ষুগোলকের বহিস্থ ঝিল্লী উপতারা এবং আলোকাচের প্রদাহ আছে জানিয়া রাখ, সিফিলিসই ইহা করে, ঠিক এইভাবে চক্ষুকে আক্রমণ করিয়া, অত্যধিক রসপ্রসেক ঘটায়। চক্ষুর চারিদিক ব্যাপিয়া বেদনা পাতলা পাতের ন্যায় অস্থি, মাথার খুলির অস্থিগুলি চাপে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়, হাড়গুলি কোমল হয়, অস্থিবেষ্ট-প্রদাহ, কনীনিকার অস্বচ্ছতা।

সিফিলিস কখন কখন কর্ণকে আক্রমণ করিয়া হাড়গুলিকে পীড়িত করে। “কর্ণশঙ্কলির অস্থিপচন, দুর্গন্ধ কর্ণপুঁজ।” কানের অস্থিগুলির ক্ষত। কর্ণমূলগ্রন্থি স্ফীত, স্পর্শ যন্ত্রণাদায়ক। “গোলমাল সহ্য করিতে পারে না, কিন্তু সঙ্গীতে উপশম।” “কর্ণে গুনগুন, ভনভন, শোঁশোঁ শব্দ।” বেগে বায়ু বহার ন্যায় বা জলপড়ার ন্যায় শব্দ। “কানের ও নাকের বিরক্তিকর শুষ্কতা।” এগুলি সবই সিফিলিস রোগের সদৃশ রোগ এবং এগুলি অরম দ্বারা আরোগ্য হয়, কিন্তু অরম আরক্ত জ্বরের পরবর্তী কর্ণপুঁজে, কর্ণপটহ ও অস্থিগুলি সম্পূর্ণ নষ্ট হইয়া যাওয়ার পরেও, বহুক্ষেত্রে উপযোগী হইয়াছে এবং আরোগ্য করিয়াছে। অবশ্য ইহা দ্বারা শ্রবণশক্তি ফিরিয়া আসে নাই। কর্ণরোগের জন্য রোগীরা তোমার নিকট আসিলে, তুমি হয়ত দেখিবে যে, সমগ্র কর্ণ যন্ত্রটি নষ্ট হইয়া গিয়াছে, কানের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এবং অস্থি সবই ক্ষতযুক্ত হইয়া পড়িয়াছে এবং অস্থিনাশ ও দুর্গন্ধ স্রাব দেখা দিয়াছে। রোগী তাহার শ্রবণশক্তি ফিরিয়া পাইবার জন্য তোমার পরামর্শ চাহিবে, কিন্তু তাহা হয়ত সম্ভব হইবে না, কিন্তু সে দুইটি কথাই ভাবিতেছে, কর্ণস্রাবের নিবৃত্তি এবং শ্রবণশক্তির পুনঃস্থাপনা। তুমি যদি আজ আমাদের কোন কর্ণ বিশেষজ্ঞের নিকট যাও এবং রোগীকে আরোগ্য করার কথা বল, তাহা হইলে তিনি বুঝিবেনই না যে তুমি কি বলিতেছ। যে কথাটি তাঁহারা চিন্তা করিবেন, তাহা হইল যত শীঘ্র সম্ভব কানের স্রাবটি বন্ধ করা। তাহারা পরীক্ষা করিয়া দেখিবেন যে, কানটি ঠিক আছে কিনা, যদি না থাকে, তাহা হইলে শ্রবণশক্তি নিশ্চয়ই চলিয়া গিয়াছে এবং তখন বিবেচনার বিষয় হইবে ঐ কর্ণস্রাবটিকে বন্ধ করা। হোমিও শিক্ষা দেয় যে, রোগীকে এবং একমাত্র রোগীকেই চিকিৎসা করিতে হইবে, এবং তারপর রোগীর যন্ত্রগুলি ও তন্তুগুলি আপনা হইতেই স্বাভাবিক হইয়া উঠিবে। চিকিৎসকের একত্র কর্তব্য হইল রোগীকে পুনঃ স্বাস্থ্যযুক্ত করা। আমাদের নাসারোগ বিশেষজ্ঞ আছেন, তাঁহাদের বাহ্য প্রয়োগের ঔষধ আছে। ঐ সকল জিনিষ দ্বারা কেবলমাত্র অস্থিরোগ এবং গুটিকারোগ উপস্থিত হইবে। উহাদ্বারা নাসিকার স্রাব বন্ধ হইবে সত্য, কিন্তু প্রকৃতিদেবী আর কোথাও আর একটি ছিদ্র খুঁজিয়া পাইবেন এবং এইভাবে তিনি হয়ত বক্ষেই স্রাবটি স্থাপন করিবেন; রোগটি এখন শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে ফুসফুসে আসিল মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করিল এবং সম্ভবতঃ যক্ষ্মারোগের আকার ধারণ করিল; আমাদের বিশেষজ্ঞেরা বলিলেন যে, যক্ষ্মাজীবাণুর সংক্রমণ হইয়াছে। ইহা কৃত্রিম বিজ্ঞান। পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ টিসুসমূহই আমাদের রক্ষক।

অরমে দুর্গন্ধ স্রাবযুক্ত নাসারোগ আছে। নাসিকার অস্থি পচিতে থাকে সিফিলিসজাত অস্থিপচন, নাক চেপ্টা হইয়া বসিয়া যায়, পচা হাড় নির্গত হয়। তুমি দেখিবে যে, ঐসকল লোক চেপ্টা নাক লইয়া ঘুরিতেছে, এবং তুমি যদি খুব নিকটে যাও, তাহা হইলে দুর্গন্ধ পাইবে। তাহাদের প্রায় সকলে সিফিলিসবিশিষ্ট। খুব অল্প ঔষধেরও এইরূপ সিফিলিসজাত নাকের অবস্থা আরোগ্য করিবার ক্ষমতা আছে; অরম, মার্কারি’, ও ‘হিপার’ তাহাদের মধ্যে তিনটি । আমি এইরূপ অবস্থা বহুবার হিপার’ দ্বারা আরোগ্য করিয়াছি। একবার একটি লোককে, হাড়গুলি সম্পূর্ণভাবে কোমল হইয়া যাওয়ার পর, আরোগ্য করিয়াছিলাম। তাহার নাক নড়াচড়া করিলে সম্পূর্ণ ভাবে বাঁকিয়া যাইত, কেবলমাত্র একপ্রকার উপস্থিময় গঠন নাকটিকে যথাস্থানে ধরিয়া রাখিয়াছিল। আমি ঐ রোগীকে ‘হিপার দিয়াছিলাম। পারদ খাওয়াইয়া বৃথা চেষ্টা করার পর ‘হিপার’ তাহার সিফিলিস আরোগ্য করিয়াছিল। “নাসিকার সর্দি, ঘন স্রাব, ডিমের শ্বেতাংশের ন্যায় স্রাব। প্রাতঃকালে নাসিকার পশ্চাদরন্ধ্র দিয়া শ্লেষ্মাস্রাব।” নাকের ডগা ল্যাকেসিসে’র ন্যায় গুটির মত, স্ট্রবেরীর ন্যায় লাল নাক। হৃৎপিন্ডের ডানপার্শ্বে উপদ্রব বিশিষ্ট হৃৎরোগীর বর্ধিত শিরা হইতে উৎপন্ন নাসিকার উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুটি; এরূপ অবস্থা সময়ে সময়ে পুরাতন মদ্যপায়ীদের মধ্যে এবং সাধারণতঃ হৃৎরোগে দেখিতে পাওয়া যায়। মুখমন্ডল লাল ও স্ফীত। অরম নাকের পাখার এবং ওষ্ঠের কৌষিক অর্বুদ আরোগ্য করিয়াছে। মনে রাখিওনাক হইতে ভীষণ দুর্গন্ধ ছাড়ে, নাসিকার অস্থির বেদনা পরবর্তী ঘ্রাণশক্তির লোপ, নাসিকার সর্দি, “ক্ষতযুক্ত, জুড়িয়া যায় এরূপ ও বেদনাতি নাসারন্ধ্র।” “নাকের মধ্যে মামড়ী।” “শুষ্ক সর্দিতে নাক অবরুদ্ধ বোধ হয়।” এইরূপ সমস্ত নাসারোগের সহিত, রোগী তাহার উপর যেন কাল মেঘ সঞ্চিত হইয়া থাকে সে মরিতে চায়। তাহার জীবনে বিতৃষ্ণা সে আত্মহত্যা করিবার উপায় খোঁজে।

“চক্ষুর নিম্নে ফুলা।” “নাকের ও ওষ্ঠের চারিদিকে নীলবর্ণ।” মুখমন্ডল উজ্জ্বল লালবর্ণ।” “হাঁটিবার সময় গন্ডাস্থির যুগ প্রবর্ধনে তীব্র ছিদ্রকর বেদনা।” “দন্তক্ষয়।” “রাত্রে দন্তশূল।” “দুর্গন্ধ নিঃশ্বাস।” তালুতে ও গলায় সিফিলিসজাত ক্ষত।” “কঠিন তালুতে ছিদ্রকর বেদনা।” এই ঔষধ সুরাপান প্রবৃত্তি আরোগ্য করিয়াছে, মাতালদের সুরাপানেচ্ছা।

এই ঔষধের আর একটি বিশেষ লক্ষণ কঠিনতা উৎপন্ন করার ক্ষমতা; যকৃৎকে বর্ধিত ও প্রদাহিত করিবার ক্ষমতা। হৃৎরোগে কঠিনতা দেখা যায়, হৃৎপিন্ড এবং যকৃৎ বর্ধিত হয়। যখন তুমি শিরামন্ডল ও যকৃৎমন্ডল সম্বন্ধে বিবেচনা কর এবং লক্ষ্য কর যে, উদরদেশে রক্তসঞ্চালনক্রিয়া স্থাপন করার জন্য এবং উদরকে একটি বড় রক্তগ্রাহক যন্ত্ররূপে কাৰ্য্য করানর জন্য উহার সহিত হৃৎপিন্ডের সম্বন্ধ কত গভীর তখন নিশ্চয়ই বিস্মিত হইবে না যে, হৃৎরোগ ও যকৃৎরোগের সহিত এই ঔষধে নৈরাশ্য ও হতাশা বর্তমান থাকে। অন্যপক্ষে দেখ,—কতকগুলি ব্যাপার হয়ত তোমাকে যক্ষ্মারোগীদের কথা মনে করাইয়া দিবে, ঐরূপ রোগীর কেহই হতাশ হয় না, তাহারা ভাবে যে, তাহারা আরোগ্য হইতে চলিয়াছে, ফুসফুসটি হয়ত গুটিকায় নষ্ট হইতে চলিয়াছে, তবু সে ভাবে যে, গলা হইতে কিছুটা শ্লেষ্মা তুলিয়া ফেলিতে পারিলেই সে ভাল হইয়া যাইবে। এইবার লক্ষ্য কর ফুসফুস ও বোধশক্তির মধ্যে এবং হৃৎপিন্ড ও ইচ্ছাশক্তির মধ্যে কিরূপ অদ্ভুত সম্বন্ধ বৰ্ত্তমান রহিয়াছে। হৃৎপিন্ডে একটু কিছু গোলযোগ দেখা দিলেই, হতাশার আবির্ভাব ঘটে, কিন্তু রোগ ফুসফুসে চাপিয়া বসিলেও আশাপূর্ণতা বর্তমান থাকে।

উদরের শোথ অবস্থা। “কুঁচকি সম্বন্ধীয় অন্ত্রবৃদ্ধি (Inguinal Hernia)।” ‘মধ্যান্ত্রের , ক্ষয়।” শরীরের সকল গ্রন্থিই অম্লাধিক আক্রান্ত হয়। জননেন্দ্রিয়ের সকল প্রকার উপদ্রব। “অন্ড কঠিনতাপ্রাপ্ত।, “পুনঃ পুনঃ রাত্রিকালীন শুক্রস্রাব।” “পাপকাৰ্য্যের পরিণামস্বরূপ নানাবিধ পীড়া।” “কোরন্ডরোগ।” গণোরিয়ার পর অন্ডকোষের উপর ক্ষত।” “মূলাধারে জ্বালা, এবং বিদ্ধকর বেদনা।” গুহ্যদ্বারের চারিদিকে শ্লেষ্মাগুটি।” জরায়ুর কঠিনতা। ঋতুস্রাব বিলম্বিত এবং অল্প।” জরায়ু বহির্নির্গত এবং কঠিনতাপ্রাপ্ত।” গাঢ় এবং সাদা প্রদরস্রাব।” হাতের কাজ করিলে অথবা হাত বাড়াইলে জরায়ু ও বস্তিপ্রদেশে যাতনা করে, হাত বাড়াইয়া জানালা খুলিলে এবং মশারি প্রভৃতি খাটাইতে গেলে গর্ভস্রাব। পুনঃ পুনঃ গর্ভস্রাবের ফলে জরায়ুর কঠিনতা ও জরায়ুতে ক্ষত উৎপন্ন হইলে অরম একটি উপযোগী ঔষধ। যখন তুমি এইরূপ অবস্থার সহিত স্নেহ, ভালবাসা প্রভৃতি বৃত্তির অভাব লক্ষ্য কর এবং অরমেও ঐসব বৃত্তি বা তাহাদের অভাব দেখিতে পাও, তখন তুমি একটি গভীর মূল লক্ষণসাদৃশ্য পাইলে এবং এইভাবেই ঔষধ খুঁজিয়া বাহির করিতে হয়। চিকিৎসক বিচার করিয়া দেখিবেন যে, কিরূপ অবস্থা হইলে মানুষ নিজের সন্তানকে নষ্ট করিতে পারে, আরও দেখিবেন কোন কোন ঔষধ এইরূপ অবস্থা উৎপাদন করিতে পারে। আমরা অরমে দেখি যে, মানুষের সর্বপ্রকার স্নেহ, ভালবাসা বিকৃত হইয়াছে এবং অবশেষে ঐগুলি সম্পূর্ণ ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। .

তুমি নিশ্চয়ই আশা কর যে, হৃৎরোগের সহিত হাঁপানি লক্ষণ এবং কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া লক্ষণ বর্তমান থাকিবে। লক্ষ্য কর যে, কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া দুই প্রকার,একপ্রকার ফুসফুসের সহিত সম্বন্ধযুক্ত আর একপ্রকার হৃৎপিন্ডের সহিত সম্বন্ধযুক্ত। সেইজন্য আমরা দেখি শ্বাসকষ্টের সহিত হাঁপানি লক্ষণ হৃৎপিন্ড সম্বন্ধীয় অবস্থা; এবং সাধারণ প্রকার শ্বাস-প্রশ্বাসক্রিয়ার ব্যাপার। এই দুইটি অবস্থার প্রকৃতি সম্পূর্ণ বিপরীত, একটি সেই সকল ঔষধের অধিকার-ভুক্ত যাহাদের ক্রিয়া প্রধানতঃ স্নেহ, ভালবাসা প্রভৃতি বৃত্তির উপর, অপরটি অন্য কতকগুলি ঔষধের অধিকারভুক্ত, যাহাদের ক্রিয়া প্রধানতঃ বুদ্ধিবৃত্তির উপর একটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে এবং পরিশেষে বায়ুস্ফীতি সৃষ্টি করে; অপরটির প্রকৃতি সম্পূর্ণ অন্যরূপ, উহার সহিত হৃৎপিন্ডের অনিয়মিত ক্রিয়া বর্তমান থাকে এবং মাত্র গৌণভাবে বায়ুস্ফীতির সহিত সম্বন্ধযুক্ত হয়। এই সকল বিষয় মনে রাখিয়া নিদানশাস্ত্র পাঠ কর এবং তাহা হইলে তুমি পীড়ার প্রকৃতি এবং উহার পরিণামফল বুঝিতে পারিবে। এই সকল ব্যাপার কেবলমাত্র ভূয়াদর্শন, খেয়াল বা অনুমান নহে, কিন্তু অবস্থাগুলি ভিতর হইতে বাহির পর্যন্ত অনুধাবন করার ফল।

এই ঔষধে বেদনা এক সন্ধি হইতে আর এক সন্ধিতে চলিতে থাকে এবং অবশেষে হৃৎপিন্ডে উপস্থিত হয়। যে-সকল পুরাতন বাতরোগ সন্ধি হইতে সন্ধিতে বিচরণ করে তাহাদের পরিণাম সাধারণতঃ হৃৎশূল। “কষ্টকর শ্বাস-ক্রিয়া।” রোগটি যদি কিছুদিন চলিতে থাকে, তাহা হইলে দেহে রক্তাধিক্যজনিত দাগ দেখা যাইবে, এবং যদি সে ডান পার্শ্বে শয়ন করে তাহা হইলে আঙ্গুল দিয়া আঘাত করিলে নিম্নাংশে নিরেট শব্দ পাওয়া যাইবে এবং উপর অংশে ফাঁপা শব্দ হইবে । অত্যন্ত উদ্বেগের সহিত বুক ধড়ফড়ানি। দ্রুত চলিলে এবং উপর তলায় উঠিতে গেলে হৃৎপিন্ডে অত্যন্ত চাপবোধ হইবে এবং ঐ সঙ্গে নিম্নাঙ্গের স্ফীতি থাকিবে।

অপর নাম – মেটালিক গোল্ড (Metallic Gold) – স্বর্ণ।

সোনা আমাদের সবার পরিচিত মূল্যবান ধাতু । একে সুগার অফ মিল্কের সঙ্গে মিশিয়ে বিচূর্ণন পদ্ধতিতে ঔষধ তৈরী করা হয়।

অরাম মেটের – মূলকথা

১। আত্মহত্যার প্রবৃত্তি; রোগী মনে করে তার সংসারে থাকা বৃথা বা জগতে সে কোন কাজেরই নয়।

২। গভীর মানসিক অবসাদ সহকারে হাড়ের অর্বুদ (nodes), ও হাড়ের বেদনা, হাড়ের ক্ষত (caries), ও নিক্রোসিস বা পচন।

৩। সিফিলিস রোগে অতি মাত্রায় পারদ অপব্যবহারে এই ঔষধ উপযোগী।

অরাম মেট – একটি আলোচনা

১।“অরাম মেটের রোগিণী সবকিছুরই খারাপ দিকটি দেখে, কাঁদে, প্রার্থনা করে, এবং ভাবে সে এই জগতের পক্ষে উপযুক্ত নহে; মৃত্যু কামনা করে, আত্মহত্যার প্রবৃত্তি।”

আশ্চর্যের বিষয় এই যে মূল্যবান ধাতুর জন্য লোকের এত আকিঞ্চন; ও চেষ্টা; তাহাই শরীরের অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে সর্বাপেক্ষা গুরুতর অসুখের সৃষ্টি করে।

অরামের রোগী গভীরতম বিষাদে ও নৈরাশ্যের মধ্যে ডুবে থাকে। জীবন তার কাছে একটি বোঝা বলে মনে হয়।

সে মৃত্যু কামনা করে। তার মনে সর্বদা আত্মহত্যার কথা জাগে। আমি এই অবস্থা পুরুষদের যকৃৎ পীড়ার সঙ্গে এবং স্ত্রী লোকদের জরায়ু পীড়ার সঙ্গে বর্তমান থাকতে দেখেছি। স্ত্রীলোকের জরায়ুর বৃদ্ধি বা কাঠিন্যতা বা বাইরে বের হয়ে পড়া বর্তমান থাকে। উভয় ক্ষেত্রেই স্থানিক অবস্থা সম্বন্ধে মনে হয় যে ঐ সকল স্থানে পুনঃপুনঃ রক্তসঞ্চয়ের ফলেই ঐরূপ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সৃষ্টি হয়। যকৃত বিবৰ্দ্ধিত হয়, জরায়ুও বিবর্জিত হয় এবং যন্ত্রটি ঐভাবেই বাইরে বের হয়ে আসে অর্থাৎ ওদের প্রোলাপ্স জন্মে। এই রক্তসঞ্চয় এই ঔষধের এতই প্রকৃতিগত লক্ষণ যে মস্তক, হৃৎপিণ্ড, বক্ষঃস্থল ও বৃক্কতেও রক্তসঞ্চয় হয়। আর যখন রক্তসঞ্চয় হয় তখনই স্বর্ণের বিশেষ মানসিক লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় এবং এই সকল মানসিক লক্ষণানুসারেই সাধারণতঃ স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়।

সোনার রোগী সময়ে সময়ে প্রচণ্ড খিটখিটে হয়ে যায়; তাই সামান্য প্রতিবাদে সে রেগে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এমনকি সোনার অধিকতর । বিশেষ লক্ষণ অবসাদ ও বিষাদের যথেষ্ট প্রাধান্য থাকা সত্ত্বেও মধ্যে মধ্যে তার ক্রোধের আবেশ প্রকাশ পায়। ন্যাজা ও নাক্স ভমিকা প্রভৃতি অন্যান্য ঔষধের মত অরামেও অবসাদ ও আত্মহত্যার প্রবৃত্তি থাকে কিন্তু অরামের মত এত বেশী পরিমাণে আত্মহত্যার প্রবৃত্তি ঐ সমস্ত ঔষধে দেখা যায় না।

রোগী বিবরণী —       

আমি এক সময় একটি যুবতীকে আরোগ্য করেছিলাম। সে জলে ডুবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পরে সে আরোগ্য হয়ে এই ঘটনার কথায় হেসে বলে ছিল যে সে উহা না করে থাকতে পারেনি। কারণ সে মনে করেছিল যে এই পৃথিবীতে তার আর কোন প্রয়োজন নেই।

২। অরাম মেট সিফিলিসজাত কোন কোন অস্থিরোগেও বিশেষ ফলপ্রদ। বিশেষ করে যদি ঐ সকল স্থলে রোগী পুরাতন তন্ত্রের মতানুসারে পারদ ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ রোগী অ্যালোপ্যাথি মতে পারদ সেবন করে থাকলে এর দ্বারা বিশেষ উপকার দর্শে। অ্যালোপ্যাথগণ যদি তাদের ঔষধে পারদ ব্যবহার না করে রোগীদের চিকিৎসা করতেন তা হলে অন্য চিকিৎসকগণের রোগী অনেক কমে যেত। (অর্থাৎ অ্যালোপ্যাথিতে পারদ ব্যবহৃত হওয়ায় পারদ অপব্যবহারের ফলে বহু রোগের সৃষ্টি হয়। যারা সেই সব রোগ চিকিৎসা করানোর জন্য হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। ফলে হোমিওপ্যাথদের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়)।

দেহের যে সকল অংশে অরাম এই সিফিলিস ও পারদ ঘটিত রোগে সৰ্ব্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট ফল দেখায় তা হল দীর্ঘাস্থির কেরিজ রোগে (ফ্লুরিক অ্যাসিড, এঙ্গুস্টুরা); নাসিকা ও তালু অস্থির কেরিজে এবং স্তন বৃন্তাকার অস্থি প্রবর্দ্ধনের (mastoid process) কেরিজ রোগে। প্রকৃত কেরিজ বা অস্থিক্ষয় দেখা দেওয়ার আগে যে সর্দি বা ওজিনা (ozoena) প্রকাশ পায় তাতে সময়ে সময়ে অরাম মেট যথেষ্ট উপযোগী। নাকের ছিদ্র জুড়ে যায়, ক্ষতযুক্ত হয়, ও মামড়িতে পূর্ণ হয়ে যায় (filled with crusts) অথবা অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব থাকে। রোগী বিষন্ন হয়ে পড়ে এবং তার আত্মহত্যার প্রবৃত্তি জন্মে।

৩। যে সকল ঔষধে অৰ্দ্ধদৃষ্টি আছে তাতে অরাম মেট উপযোগী। এর ২০০ শক্তি দ্বারা অর্দ্ধদৃষ্টি আরোগ্য লাভ করে।

লাইকোপোডিয়াম ও লিথিয়াম কার্বনিকামেও অর্দ্ধদৃষ্টি আছে কিন্তু অরামের কেবল নিম্নার্দ্ধ দেখা যায় এবং অন্য দুটি ঔষধে কেবলমাত্র দৃষ্ট বস্তুর ‍বামাৰ্দ্ধ দেখা যায়।

৪। অরামে যে কেবল স্ত্রীলোকেদের জরায়ুর কঠিনতা (induration) জন্মায় ও আরোগ্য করে তা নয়, এর দ্বারা পুরুষের অণ্ডকোষের কঠিনতা জন্মে ও আরোগ্য হয়। তবে উভয় ক্ষেত্রেই অরামের মানসিক লক্ষণ বর্তমান থাকে অথবা সিফিলিস ও পারদ ব্যবহারের ইতিহাস থাকে।

৫। আরক্ত বদন, স্থূলকায় বৃদ্ধদের হৃৎপিণ্ডের মেদাধিক্যে ইহা আমাদের একটি অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ। এই সকল ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের অতিশয় গোলযোগ থাকে। প্রবল বুক ধড়ফড় করা এবং উৎকণ্ঠা, এবং বক্ষস্থলে রক্ত সঞ্চয় সহ ক্যারোটিড ও টেম্পোর‌্যাল ধমনী সমূহের দৃশ্যমান স্পন্দন বর্তমান থাকে। রোগের আক্রমণ কালে বেলেডোনা দ্বারা উপশম জন্মায় বটে কিন্তু অরামের ক্রিয়া আরো গভীর ও দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়।

৬। হাড়ের বেদনায় অরাম মেট আমাদের একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। একে কখন ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ইহা অস্থি বেষ্টের (periosteum) রোগে কেলি আয়োডাইড, এসাফিটিডা ও মার্কারি ঘটিত ঔষধ সমূহের সমশ্রেণী ভুক্ত।

Aur : Aurum Metallicum
Intense, idealistic, overly serious, polished, high goals, disappointment, grief, frustration, irritability.Depression, joyless existence, religious convictions, suicidal state.Syphilitic remedy < at night.

Malignancy. Bone pains.


COMMON NAME:

Metallic Gold


A/F:

-Mercury, Alcohol, Iodide of potassium

-GRIEF, fright, anger, CONTRADICTION

-DISAPPOINTED LOVE

-Reserved displeasure

-Prolonged anxiety

-Unusual responsibility

-Loss of property


MODALITIES:

< Emotions

< Depressing; disordered affections

< Mental exertion

< Cold

< Cold weather

< Night, sunset to sunrise

< Mercury

< Alcohol

< Cloudy weather

< Winter

< Getting cold

< In the morning

< While reposing

< In the house or warm room

> Cold, open air

> Cold bathing

> Becoming warm

> Music

> Walking

> Moonlight

> Warm air

> Motion

> Cold wet weather


MIND:

-Uneasy, hurried, great desire for mental and physical activity, cannot do things fast enough.

-Acute mental depression, hopelessness and loss of love of life, great desire to commit suicide. Talks of committing suicide. Great fear of death. Relieved by thought of suicide. Suicidal impulses by jumping from a height.

-Feeling of self-condemnation and utter worthlessness.

-Fear of-failure

-heights

-heart disease

-Brooding, melancholy alternating with irritability and moroseness.

-Person having no confidence in himself, thinks he cannot succeed in anything, pessimistic.

-Hopeless with heart disease, hopeful with lung disease.

-Peevish and vehement on least contradiction, or cheerful alternately.

-Weeping, praying and self-reproaching from heart disease.

-Constant rapid questioning without waiting for reply.

-Anthrophobia.

-Delusion has neglected his duty and deserves reproach.

-Forsaken feeling.

-Music ameliorates. Deep love of music.

-Ailments from unusual responsibilities, grief, disappointed love.

-Spiritual inclination, religious, desire for prayer or meditation.

-Serious, successful, intimidating.

-DUTYBOUND, workaholic, industrious; always busy and working, never finished. Ambition; wants to be the best.

-Despair or violent from pain.

-Egotism, haughty and arrogant.

-Oversensitiveness to noise.


GUIDING INDICATIONS:

-Adapted to nervous, hysterical women, girls at puberty who are low spirited, lifeless, with weak memory, yet sensitive to pain which drives them to despair, to boys lacking in boyish go, testes undeveloped, mere pendant shreds.

-Aurum develops in the organism by attacking the blood, glands and bone.

Conditions bearing striking resemblance to mercurial and syphilitic infections; and it is just for such deteriorations of bodily fluids and in tissue that Aurum assumes great importance.

-Circulation is disturbed, all the blood seem to rush from head to lower limbs.

-Venous congestion. Erythema and vascular fullness characterize nearly all complaints of Aurum.

-Caries of bones especially of nose, palatine and mastoid. Bone pains are boring, cutting and nightly.

-Arteriosclerosis, high blood pressure; nightly paroxysms of pain behind sternum. Sclerosis of liver, arterial system, brain, coronary, etc.

-Burning pain > application of cold water.

-Pains wander, impelling motion, finally attack heart.

-Glands swollen in scrofulous subjects.

-Frequently indicated in secondary syphilis and effects of mercury.

-Oversensitive to cold air. Craving for and amelioration in open air.

– Sensation as of air blowing on part.

-Extremely violent symptoms.

-Chronicity of complaints.

-Complaints are aggravated from sunset to sunrise.

-Head-Headache of people with dark olive, brown complexion, sad, gloomy, taciturn, disposed to constipation.

-Vertigo as if turning in a circle, when stooping, goes off on rising.

-Eyes-Extreme photophobia, double vision; upper half of objects invisible, sees only lower half.

-Vascular cornea, sticking pains inward.

-Pain in bones around eye.

-Greenish vision.

-Ear-Caries of ossicular and of mastoid.

-Obstinate foetid otorrhoea after scarlatina.

-Nose-Ulcerated, painful, swollen, obstructed.

-Putrid smell from nose.

-Sensitive to smell.

-Severe sinusitis.

-Nasal malignancy.

-G.I.T.-Desire for alcohol, milk, bread, sweets, delicacies, pastries.

-Aversion to meat.

-Carcinoma of the tongue or throat.

-C.V.S.-Violent pain in the heart < night.

-Outward pressure, from least mental exertion.

-Sensation as if heart stopped beating for 2 or 3 seconds, immediately followed by a tumultuous rebound with sinking at the epigastrium.

-Pulse rapid, feeble, irregular.

-Fatty degeneration of heart.

-Violent palpitation at puberty.

-Heart feels loose on walking.

-Exopthalmia with enlargement of heart.

-Easy suppression affecting the heart.

-Whenever there is even a trivial heart ailment, Aurum patients develop a fear of heart disease.

-Male genitalia-Pain and swelling of testicles.

-Atrophy of testicles in boys.

-Increased sexual desire.

-Pain in the right testicle.

-Malignancy of the testes.

-Female genitalia-Prolapsed and indurated uterus from over-reaching, or straining, from hypertrophy.

-Menstrual and uterine affections with great melancholy < at menstrual period.

-Uterine fibroids.

-Foul breath in girls at puberty.

-Extremities-All the blood seems to rush from head to lower limbs.

-Orgasm, as if blood were boiling in all veins.

-Paralytic drawing in the limbs in the morning, when awakening and on getting cold.

-Bone pains worse at night.

-Wandering rheumatic pains.

-Sleep-Moaning, crying out in sleep.

-Nightmares.

-Severe, chronic insomnia.


KEYNOTES:

1. A/F- grief, fright, anger, disappointed love, contradiction, reserved displeasure, prolonged anxiety, unusual responsibility, loss of property.

2. Melancholy, hopeless, profound depression, tendency to suicide, longing for death and constantly dwelling on suicide.

3. Sees only the lower half of objects.

4. Sensation as if heart stopped beating for 2 or 3 seconds, immediately followed by a tumultuous rebound with sinking at epigastrium.


NUCLEUS OF REMEDY:

-A/F-grief, fright, anger, disappointed love, contradiction, reserved displeasure, prolonged anxiety, unusual responsibility, loss of property.

-Melancholy, hopeless, profound depression, tendency to suicide, longing for death, constantly dwelling on suicide.

-Mercurial and syphilitic dyscrasia.

-Caries of mastoid process, of bones of nose etc.

– < sunset to sunrise.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Melancholy, hopeless, depression, tendency to suicide, longing for death, constantly dwelling on suicide.

2. < sunset to sunrise.

3. Tendency to neurosis, destruction of parts especially bone.


CLINICAL:

-Alcoholism, Angina, Ankylosing spondylosis, Anorexia, Anxiety, Arrhythmia, Arthritis, Bone pains, Chronic fatigue syndrome, Depression, Drug abuse, Endocarditis, Hypertension, Insomnia, Malignancy, Mastoiditis, Nightmares, Orchitis, Sinusitis, Suicidal states, Undescended testes, Uterine fibroids, Valvular heart disease.

-Aur-m 200 to 10M is a pathological remedy for undescended testicles, providing testicle is not ectopic- Dr. Foubister.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Follows Well : Bell, Calc, Hep, Lyc, Merc, Nux-v, Phos, Puls, Rhus-t, Sep, Sil, Sulph.

Compare : Am-c, Arg-m, Arg-n, Ars, Asaf, Bell, Calc, Calc-p, Caps, Cinch, Cocc, Coff, Cupr, Dig, Ferr, Glon, Hep, Iod, Kali-bi, Kali-br, Kali-c, Kali-i, Lach, Lyc, Merc, Nit-ac, Nux-v, Pall, Plat, Puls, Sep, Sil, Sol-n, Spig, Sulph, Tarent, Thuj, Verat-v.

Similar : Am-c, Arg-m, Arg-n, Ars, Asaf, Bell, Calc, Calc-p, Caps, Cinch, Cocc, Coff, Cupr, Dig, Ferr, Glon, Hep, Iod, Kali-bi, Kali-br, Kali-i, Lach, Lyc, Merc, Nit-ac, Nux-v, Pall, Plat, Puls, Sep, Sil, Sol-n, Spig, Sulph, Tarent, Thuj, Verat-v.

Antidoted By : Bell, Camph, Cinch, Cocc, Coff, Cupr, Puls, Sol-n.

It Antidotes : Merc, Spig.

Duration Of Action : 50-60 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

1 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *