Bell | আক্রান্ত অংশে উত্তাপ, লালবর্ন (আরক্তিম) ও জ্বালাপোড়া। |
Bell | মস্তকে রক্তাধিক্য, মাথা গরম কিন্তু হাত পা ঠান্ডা, লোগের তীব্র অবস্থায় মুখমন্ডল লালবর্ণ ও ফোলা, ক্যালোটিড ধমনীর দপদপানি ও মাথা ব্যথা। তরুণ লোগে উল্লিখিত লক্ষণ সমূহ প্রায়ই থাকে। |
Bell | তরুণ লোগ হঠাৎ প্রচন্ডবেগে আক্রমণ করে, বেদনা হঠাৎ আসে আবার হঠাৎ উপশম হয়। |
Bell | সামান্য ঝাঁকিতে, নড়াচড়ায় ও ঠান্ডায় বেদনার বৃদ্ধি। |
Bell | লোগী ঘুমের মধ্যে চমকে উঠে, অনেক সময় জাগ্র্ত অবস্থায়ও চমকে উঠে। |
Bell | শিশু হঠাৎ জেগে কিছু ধরার জন্য হাত বাড়ায়, কাঁপতে থাকে, মনে হয় যেন ভয় পেয়েছে। |
পিত্ত, রস ও রক্তপ্রধান ধাতুর লোক—-যারা সুস্থ অবস্থায় সজীব ও আমোদ প্রিয় অথচ অসুস্থ হলে ভীষণভাবে অসুস্থ ও মাঝে মাঝে প্রলাপ বকতে থাকে তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী ।
স্ত্রীলোক ও শিশু যাদের পাতলা চুল, নীল চোখ, গায়ের রঙ অত্যন্ত সুন্দর, কোমল চামড়া, অল্পেতেই অনুভূতিপ্রবণ, স্নায়বিক, আক্ষেপ হবার প্রবণতা, টিউবারকুলার ধাতুযুক্ত তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী ।
একটুতেই সর্দিকাশি লাগে, দমকা হাওয়ায় অনুভূতি প্রবণতা বিশেষতঃ যদি মাথা না ঢাকা থাকে, বা চুল কাটার পরে; ঠান্ডা বাতাসে ঘোড়ায় চড়লে টনসিল প্রদাহ হয় (একোন, হিপার, রাস) ।
পায়ে ঠান্ডা লেগে সর্দি = কোনি, কুপ্রাম, সাইলি ।
লোগীর চলাফেরা ও অনুভূতি খুব দ্রুত—চোখ দ্রুত মিটমিট করে ও নড়াচড়া করে যে কোন বেদনা হঠাৎ আসে—অনির্দিষ্টকাল থাকে আবার হঠাৎ চলে যায় (ম্যাগ ফস) ।
ব্যথাবেদনা অল্পসময় থাকে; বেদনায় মুখ ও চোখ দুটি লাল হয়ে ওঠে; মাথা যেন ভারী ও ক্যারোটিড ধমনী দপদপ করে ।
কল্পনায় লোগী ভূতপ্রেত, ভয় পাওয়ানো বিভৎস মুখ, নানা রকম পোকামাকড় (ষ্ট্র্যামো), কালো রঙের জন্তু জানোয়ার, কালো কুকুর, কালো নেকড়ে প্রভৃতি দেখতে পায় ।
কাল্পনিক বস্তুতে ভয় তাতে লোগী ভয় পায়; অলীক বস্তু দেখে। লোগী ভীষণ প্রলাপ বকে; কামড়াতে আসে, থুতু দিতে, মারতে ও জিনিসপত্র ছিঁড়ে ফেলতে চায়, অট্টহাসি হাসে, দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকে ও কাছাকাছি যারা আসে তাদের মারতে চায় (ষ্ট্র্যামো); আবার ছুটে পালাতে চায় (হেলিবোর)।
মাথা গরম, মাথায় যন্ত্রণা, মুখ আরক্তিম, বন্য হিংস্র দৃষ্টি, একদৃষ্টে চেয়ে থাকে, চোখের তারা বিস্তৃত; নাড়ী পূর্ণ ও লাফাতে থাকে—নাড়ীতে হাত দিলে ছড়রা গুলির মত আঙুলে ধাক্কা দেওয়ার মত অনুভূতি; মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী শুকনো, মলত্যাগে দেরী হয়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়; সাথে ঘুমঘুম ভাব কিন্তু ঘুমাতে পারে না (ক্যামো, ওপি)
শিশুদের দাঁত ওঠার সময় তড়কা সাথে জ্বর (জ্বর না থাকলে = ম্যাগ ফস); জ্বর হঠাৎ আসে-মাথা গরম কিন্তু পায়ের তলায় ঠান্ডা। মাথা ও মুখের দিকে শরীরের সমস্ত রক্ত উঠে আসে (এমিল-না, গ্লোন, মেলিলো)।
রক্তাধিক্য হয়ে মাথাযন্ত্রণা, মুখ আরক্তিম, মস্তিষ্কে ও ক্যালোটিড ধমনীতে দপদপানি যন্ত্রণা (মেলিলো); মাথাযন্ত্রণা বাড়ে- সামান্য শব্দে, সামান্য আঁকি লাগলে, নড়াচড়ায়, আলোতে, শুয়ে থাকলে পরিশ্রমে । কমে-চেপে রাখলে, মাথা কষে বাঁধলে, মাথা ঢেকে রাখলে ও ঋতুস্রাব এর সময় ।
যন্ত্রণায় লোগী বালিশে মাথা ঘষতে থাকে (এপিস, হেলিবো, পডো)।
মাথাঘোরা — সামনে ঝুঁকলে বা অবনত অবস্থা থেকে মাথা তুলতে গেলে (ব্রায়ো); যে কোনভাবে অবস্থান পরিবর্তন করলে মাথাঘোরে ।
পেটে হাত দেওয়া যায় না, পেট ফুলে থাকে সামান্য ঝাঁকি এমনকি বিছানার ঝাঁকিতেও যন্ত্রণা বাড়ে । লোগী সামান্য ঝাঁকি লাগতে পারে এই ভয়ে অতি সতর্ক হয়ে পা ফেলে ।
ডান ইলিও-সিকাল প্রদেশে ব্যথা যা সামান্য ছোঁয়ায় এমনকি বিছানার ছোঁয়াতেও বেড়ে যায়। পেটে ট্রানসভার্স কোলন গদির মত ফুলে যায়।
চর্ম — সর্বত্র সমানভাবে মসৃণ ও চকচকে, স্কারলেট জ্বরের উদ্ভেদের মত লালবর্ণ। চামড়া শুকনো, তাতে জ্বালা- হাত দিলে হাত জ্বালা করে ওঠে। যেন প্রকৃত সিডেনহাম বর্ণিত স্কারলেট-জ্বর যে ক্ষেত্রে উদ্ভেদগুলো মসৃণ ও পরিস্কার লালবর্ণ থাকে ।
পেটে ঠেলামারা ব্যথা মনে হয় পেটের সমস্ত কিছু যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসবে—এই ভাব দাঁড়ালে বা সোজা হয়ে বসলে উপশম, সকালে এইভাব বেড়ে যায় (লিলি-টি; মিউরেক্স; সিপিয়া) ।
সম্বন্ধ – অনুপূরক ক্যাল্কে-কার্ব ।
ক্যালকেরিয়ার তরুণ অবস্থার ওষুধ বেল। আলোগ্য সম্পূর্ণ করতে বেল এর পরে ক্যাল্কে-কা-র প্রয়োজন হয় ।
সমগুণ — একোন, ব্রায়ো, সাইকুটা, জেল, গ্লোন, হায়োস, মেলিলো, ওপি, ষ্ট্র্যামো ।
বৃদ্ধি – ছোঁয়া লাগলে, নড়াচড়ায়, শব্দে, প্রবল বাতাস লেগে, চকচকে জিনিষে চোখ পড়লে (লাইসিন, ষ্ট্র্যামো); বিকেল ৩টার পর, মাঝরাতের পর, কোন কিছু পান করার সময়, মাথা খুলে রাখলে, গরমকালে সূর্যতাপে, বিছানায় শুলে ।
উপশম — বিশ্রামে, দাঁড়ালে বা সোজা হয়ে বসলে, গরম ঘরে ।
শক্তি — ৩x, ৬, ৩০, ২০০, ১০ এম ইত্যাদি ।
স্নায়ুতন্ত্রের সকল অংশের উপর বেলেডোনা কাজ করে, তৈরী করে সক্রিয় রক্তাধিক্য বা প্রবল রক্ত সঞ্চয়, তীব্র উত্তেজনা, বিশেষভাবে চিহ্নিত ইন্দ্রিয় সমূহের বিকৃত কার্য, নর্তন, আক্ষেপ ও যন্ত্রণা। রক্তবহানলীতন্ত্র, চামড়া ও গ্রন্থির উপর এই ঔষধের সুস্পষ্ট। কাজ আছে। বেলেডোনার সঙ্গে যে সকল লক্ষণ সর্বদা উপস্থিত থাকে তা হল, উত্তপ্ত, লালচে বর্ণযুক্ত চামড়া, আরক্ত মুখমণ্ডল, উজ্জ্বল চোখ, দুই দিকের রগের ধমনীর দপদপানি, উত্তেজিত মানসিক অবস্থা, অত্যানুভূতিযুক্ত ইন্দ্রিয় সকল, প্রলাপবকা, অস্থির প্রকৃতির নিদ্রা, আক্ষেপিক নড়াচড়া, মুখ গহ্বরের ও গলার শুষ্কতা তৎসহজলপানে অনিচ্ছা, স্নায়বিক বেদনা হঠাৎ আসে ও হঠাৎ চলে যায় (অক্সিটপিস) উত্তাপ, লালবর্ণ, দপদপানি ও জ্বালা। শিশুদের জন্য একটি ভালো ঔষধ। মৃগী রোগের আক্ষেপের পর, বমি বমি ভাব ও বমি। স্কারলেট জ্বর বা আরক্ত জ্বর এবং এই রোগের এটি একটি প্রতিষেধক। এক্ষেত্রে ৩০ শক্তি ব্যবহার করা হয়। যে গলগণ্ড রোগে চোখের তারা বাইরের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসে। বিমান চালক বা বিমান যাত্রীর, বিমানে চড়ার পর যে জাতীয় অসুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পায়, এই ঔষধের লক্ষণের সঙ্গে তার যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। এই জাতীয় ক্ষেত্রে এই ঔষধটি প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তৃষ্ণাহীন অথবা ভয়। বেলেডোনার বৈশিষ্ট্য হল, হঠাৎ করে রোগাক্রমণ ও রোগের তীব্র ভাবে তা শুরু হয়। গলগ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের বিষক্রিয়ায়, বেলেডোনার ১x বিচূর্ণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। (বীব)
মন – বেলেডোনা রোগী নিজস্ব একটি জগতে বিচরণ করে, যেখানে ভূতপ্রেত ও বাস্তববর্জিত একটি স্বপ্নময় অবস্থার দেখা পাওয়া যায়। যদিও প্রকৃত দৃষ্ট বস্তু সম্পর্কে অনুভূতিবিহীন, রোগীর চারপাশে নানা প্রকার দৃষ্টিবিভ্রান্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং এইগুলি রোগীর ভিতর থেকে উদ্ভব হয়। কেবলমাত্র রোগী নিজে এই জাতীয় দৃষ্টি বিভ্রান্তি ও কাল্পনিক বস্তুসকল অনুভব করতে পারে। দৃষ্টি বিভ্রান্তিসমূহ, দৈত্যদানব ও বিকটাকার প্রকৃতির মুখসমূহেদর্শন। প্রলাপ বকা, ভয়পূর্ণ মূর্তিসমূহ, উন্মত্ততা রাগে রোগী চিৎকার করে কামড়াতে যায়, আঘাত করে, পলায়ন প্রবৃত্তি। জ্ঞানহারা অবস্থা। কথা বলতে অনিচ্ছা।, একগুঁয়ে ভাব, তৎসহ কান্না। তীক্ষ্ম অনুভূতি সম্পন্ন ইন্দ্রিয়সমূহ। পরিবর্তনশীলতা।
মাথা – মাথাঘোরা, তৎসহ বামদিকে বা পিছন দিকে পড়ে যাবার মত অনুভূতি। খুব সামান্য স্পর্শেও কষ্ট পায়। তীব্র দপদপানি ও উত্তাপ। হৃদকম্প, মাথার ভিতর হৃদকম্পের শব্দ প্রতিধ্বনি হয়, তৎসহকষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রণা, পূর্ণতা, বিশেষতঃ কপালের ভিতর, এছাড়া মাথার পিছনের দিকে ও রগের দিকে। সর্দিজ স্রাব চাপা পড়ার ফলে মাথার যন্ত্রনা হঠাৎ করে চিৎকার করা। যন্ত্রণা, আলোতে, শব্দে, ঝাঁকুনি, শুয়ে থাকলে এবং বিকালের দিকে বৃদ্ধি পায়, চাপে ও হেলান দেওয়া অবস্থায় থাকলে উপশম। মাথা বালিশের উপর গুঁজে থাকে, মাথা পিছনদিকে ঝুঁকে রাখে ও বালিশে একদিক থেকে অপরদিকে চালাতে থাকে। সর্বদা ঘ্যানঘ্যান করতে থাকা। চুল ফেটে যায়, শুষ্ক ও উঠে যায়। মাথার যন্ত্রণা, ডানদিকে এবং শুয়ে থাকলে বৃদ্ধি, ঠাণ্ডা লাগা প্রকৃতির কুফল, চুল কাটার পর মাথার যন্ত্রণা।
মুখমণ্ডল — লাল, নীলচে-লাল, উত্তপ্ত, স্ফীত, চকচকে, মুখমণ্ডলের পেশীর আক্ষেপিক নড়াচড়া। উপরের ঠোঁটের স্ফীতি। মুখমণ্ডলের স্নায়ুশূল, তৎসহ পেশীর স্পন্দন ও রক্তিম মুখমণ্ডল।
চোখ – শুয়ে পড়ার পর চোখের গভীরে দপ্ কর বেদনা। চোখের তারা বিস্ফারিত।(এগনাস)। চোখ স্ফীত ও বাইরের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসার মত অনুভূতি, স্থির দৃষ্টি, বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি, কনৰ্জাংটিভা লাল, শুষ্ক, জ্বালাকর, আলোকাতঙ্ক, চোখের ভিতর তীর বিদ্ধের ন্যায় যন্ত্রনা। চোখের মনি বাইরের দিকে ঠেলে বেরিয়ে আসে। দৃষ্টি সম্পর্কিত ভ্রান্তি, আগুনের মত দৃষ্টি। দ্বিত দর্শন, চোখ টেরা, চোখের পাতার আক্ষেপ। চোখগুলি যেন অর্ধেক বন্ধ রয়েছে, এরূপ অনুভূতি। চোখের পাতাগুলি স্ফীত। চোখের নীচের অংশের রক্তাধিক্য।
কান – মধ্য ও বহিঃকর্ণে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। কানের ভিতর শব্দ। কানের পর্দার বাইরের দিকে স্ফীতি। কর্ণমূল গ্রন্থির স্ফীতি। জোরে শব্দে অনুভূতিপ্রবণ। প্রখর শ্রবনশক্তি। ওটাইটিসমিডিয়া বা কানের মাপের অংশের প্রদাহ। কানের যন্ত্রণা থেকে প্রলাপের উদ্ভব। শিশু ঘুমের মধ্যে কাঁদে, কানের গভীরে দপদপকর ও আঘাত করার মত বেদনা, এই আঘাত হৃদস্পন্দনের সঙ্গে ছন্দবদ্ধ ভাবে হয়। কানের ভিতর রক্তার্বূদ। কর্ণনলীর অ্যাকিউট ও সাব-অ্যাকিউট রোগসমূহ। নিজের কণ্ঠস্বর কানের ভিতর শুনতে পায়।
নাক – কাল্পনিক গন্ধ পায়। নাকের অগ্রভাগে সুড়সুড় করে। লালবর্ণযুক্ত ও স্ফীত। । নাক থেকে রক্তস্রাব, তৎসহ মুখমণ্ডল রক্তবর্ণ। সর্দি, রক্তমিশ্রিত শ্লেষ্মা।
মুখগহ্বর – শুষ্ক, দাঁতগুলিতে দপদপকর বেদনা। মাড়ীতে ফোঁড়া। জিহ্বার ধারগুলি লাল বর্ণ। জিহ্বা স্ট্যাবরি বা রসাল ফলের মত দেখতে। দাঁতগুলি কড়মড় করে। জিহ্বা স্ফীত ও বেদনা যুক্ত। তোতলামি।
গলা — শুষ্ক, যেন চকচক করছে, রক্তাধিক্য, মারাত্মক দেখতে (জিনসেঙ্গ), লালবর্ণযুক্ত, ডানদিকে বৃদ্ধি। টনসিলের বিবৃদ্ধি, গলার ভিতর সংকীর্ণতা বোধ, ঢোক গিলতে কষ্ট, তরল বস্তু পানে বৃদ্ধি। গলার ভিতর মণ্ডের ন্যায় দলা মত কিছু থাকার অনুভূতি। গলার ভিতর আক্ষেপ। সর্বদা ঢোক গেলার ইচ্ছা। ঘষে যাওয়ার মত অনুভূতি। ঢোক গেলার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশীগুলি অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবন। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্ফীতি।
পাকস্থলী – ক্ষুধার অভাব। দুধ ও মাংসে অনিচ্ছা। পেটের উপরের অংশে আক্ষেপিক বেদনা। সঙ্কোচন, যন্ত্রণা মেরুদণ্ড বরাবর উঠা-নামা করে। বমি বমি ভাব ও বমি। ঠাণ্ডা। জল পানের তীব্র পিপাসা। পাকস্থলীর আক্ষেপ। শূন্য ঢেকুর। তরল পানে অনিচ্ছা। আক্ষেপিক হিক্কা। জলপানে ভয়। কমতে চায় না এরূপ বমি।
উদর – স্ফীত, উত্তপ্ত, ট্রান্সভার্স কোলন গদির মত ঠেলে উঠে। স্পর্শকাতর, স্ফীত। হাত দিয়ে চেপে ধরার মত যন্ত্রণা, ঝাঁকুনি ও চাপে বৃদ্ধি। পেটে আড়াআড়ি ভাবে কেটে ফেলার মত বেদনা, কাশির সময়, হাঁচির সময়, অথবা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে পেটের বামদিকে সূঁচ ফোটার মত বেদনা। স্পর্শ, বিছানার স্পর্শ প্রভৃতিতে অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। (ল্যাকেসিস)।
মল – পাতলা, সবুজবর্ণের, আমাশয়ের মত, খড়ির মত গোলাকার। মলত্যাগ কালে কাঁপুনি। সরলান্ত্রে হুল ফোটার মত বেদনা, আক্ষেপিক সংকীর্ণতা। পিঠের বেদনার সঙ্গে অর্শবলী অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ হয়। মলদ্বার বাইরে বেরিয়ে আসে। (ঈগ্নেশিয়া, পডোফাইলাম)।
প্রস্রাব – মূত্ররোধ। প্রস্রাব সম্বন্ধীয় তরুন সংক্রামক উপসর্গ। মনে হয় প্রস্রাব থলির ভিতর ক্রিমির মত কোন পোকা নড়া-চড়া করছে। প্রস্রাব স্বল্প, তৎসহ কোঁথ, কালচে ও ঘোলাটে, ফসফেটে পরিপূর্ণ। প্রস্রাব থলির স্থান স্পর্শকাতর। প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না, সর্বদা ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ে। বারে বারে, ও প্রচুর পরিমানে প্রস্রাব। কোন রোগজ অবস্থা ছাড়াই রক্তপ্রস্রাব। প্রস্টেট গ্রন্থির বিবৃদ্ধি।
পুরুষের রোগ — অণ্ডদ্বয় শক্ত, উপরের দিকে টেনে ধরার মত, প্রদাহযুক্ত। যৌনাঙ্গে রাত্রিকালীন ঘাম। প্রস্টেট গ্রন্থি থেকে তরল পদার্থের নিঃসরণ। কামেচ্ছা কমে যায়।
স্ত্রীরোগ – নিচের দিকে জোরে ঠেলা মারার মত অনুভূতি, মনে হয় যোনিপথে সকল যন্ত্র ঠেলে বেরিয়ে আসবে। যোনিনলী শুষ্ক ও উত্তপ্ত। কোমরের চারপাশে টেনে ধরার মত অনুভূতি। ত্রিকাস্থি স্থানে বেদনা। ধাতুস্রাব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত, উজ্জ্বল লাল, নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে, পরিমানে প্রচুর। রক্তস্রাব উত্তপ্ত। একদিকের হিপ্ থেকে অপরদিকের হিপ পর্যন্ত কেটে ফেলার মত বেদনা। ধাতুস্রাব ও প্রসবান্তিক স্রাব অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত ও উত্তপ্ত। প্রসব বেদনা হঠাৎ আসে, হঠাৎ চলে যায়। স্তন প্রদাহ, দপদপানি বেদনা, লালবর্ণ, স্তনের বোঁটা থেকে লাল আভা চারিদিকে প্রসারিত হয়। স্তনে ভারবোধ, দুইদিকের স্তন শক্ত লাল। স্তনের অর্বুদ, যন্ত্রণা শুয়ে পড়ার পড় বৃদ্ধি পায়। দূর্গন্ধযুক্ত রক্তস্রাব, গরম। রক্ত বেগে বেরিয়ে থাকে। প্রসবান্তিক স্রাবের স্বল্পতা।
শ্বাস-প্রশ্বাস – নাক, গলার ভিতর, কণ্ঠনলী ও শ্বাসনালীর শুষ্কতা। সুড়সুড়কর ছোট ছোট, শুষ্ক কাশি, রাত্রে বৃদ্ধি। কণ্ঠনলীতে টাটানি। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুকের ভিতর চাপবোধ, শ্বাস-প্রশ্বাস খুব তাড়াতাড়ি হয় এবং সমান নয়। গভীর ও অসম প্রকৃতির শ্বাস-প্রশ্বাস (কোকেন, ওপিয়াম)। স্বরভঙ্গ, স্বরলোপ। যন্ত্রণাহীন স্বরভঙ্গ, কাশি তৎসহ বামদিকের হিপস্থানে বেদনা। ঘড়ঘড় শব্দযুক্ত কাশি, হুপিং কাশি, তৎসহ কাশির পূর্বে পাকস্থলীতে বেদনা, ও কাশির সঙ্গে রক্ত উঠে। কাশির সময় বুকের ভিতর সূঁচ ফোটার মত বেদনা। কণ্ঠনলী তীব্র বেদনাযুক্ত, মনে হয় কণ্ঠনালীর ভিতর কিছু ফুটে রয়েছে, তৎসহ কাশি। জোরে, কাঁশির মত শব্দ। প্রতিবার শ্বাসের সঙ্গে কাতরানি।
হৃদপিণ্ড – তীব্র হৃদকম্প, মাথার ভিতর প্রতিধবনিত হয়, তৎসহ কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস। সামান্য পরিশ্রমে হৃদকম্প। সারা শরীরে দপদপকর অনুভূতি। নাড়ীর দ্বিত স্পন্দন। মনে হয় হৃদপিণ্ড অনেকটা বড়ো হয়েছে। দ্রুত কিন্তু দুর্বল নাড়ী।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ — অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে তীর বেঁধার মত বেদনা। সন্ধিস্থান স্ফীত, লালচে, চকচকে তৎসহ সন্ধিস্থান থেকে লাল আভা বিচ্ছুরিত হয়। টলমলে চলনভঙ্গি। পরিবর্তনশীল বাতের বেদনা। ফিনোর্যাল শিরার প্রদাহ তৎসহ পায়ের স্ফীতি। সাধারণতঃ প্রসবের পর অথবা জ্বরযুক্ত কোন তরুন রোগের পর দেখা যায়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ঝাঁকুনি। আক্ষেপ। অনৈচ্ছিকভাবে খুঁড়িয়ে হাঁটা। অঙ্গ-প্রতঙ্গ শীতল।
পিঠ – গ্রীবাস্থান আড়ষ্ট। ঘাড়ের গ্রন্থির স্ফীতি। গ্রীবাদেশে-বেদনা, যেন মনে হয় ফেটে যাবে। পিঠে চাপযুক্ত তীব্র বেদনা। কোমরের বেদনা, তৎসহ হিপ ও ঊরুস্থানে বেদনা।
চামড়া — শুষ্ক ও উত্তপ্ত, স্ফীত, অনুভূতিপ্রবন, জ্বালাকর, রক্তবর্ণ, মসৃন। স্কারলেট জ্বরের মত উদ্ভেদ, হঠাৎ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লাল দাগযুক্ত উদ্ভেদ হঠাৎ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। লাল দাগযুক্ত উদ্ভেদ, মুখমণ্ডলে পুঁজযুক্ত ফুস্কুড়ি৷ গ্রন্থিসকল স্ফীত, স্পর্শকাতর, লাল, ছোট ফোঁড়া। গোলাপিবর্ণের ব্রণ। পুঁজযুক্ত ক্ষত। চামড়া পৰ্য্যায়ক্রমে লাল ও ফ্যাকাশে বর্ণযুক্ত। প্রদাহের পর কঠিনতা। ঈরিসিপেলাস।
জ্বর — তীব্র জ্বরযুক্ত অবস্থা তৎসহ তুলনামূলক ভাবে রক্তে বিষদুষ্টির অভাব। জ্বালাকর, ঝাঁঝাঁল, বাষ্পায়িত উত্তাপ। পা বরফের মত ঠাণ্ডা অগভীর রক্তবহানলীর প্রসারণ। ঘাম, কেবলমাত্র মাথা শুষ্ক। তৃষ্ণাহীন, তৎসহ জ্বর।
ঘুম — অস্থির, চিৎকার করে উঠে, দাঁতে দাঁতে ঘর্ষন। রক্তবহানলীর স্পন্দনের জন্য জেগে থাকতে বাধ্য হয়। ঘুমের মধ্যে জোরে চিৎকার করে উঠে। নিদ্রাহীনতা, তৎসহ ঝিঁমুনি। চোখ বন্ধ করলে অথবা ঘুমের মধ্যে চমকিয়ে উঠে। মাথার নিচে হাত রেখে ঘুমায়। (আর্সেনিক, প্ল্যাটিনা)।
কমাবাড়া – বৃদ্ধি, স্পর্শে, ঝাঁকুনিতে, শব্দে, বায়ুপ্রবাহে, বিকালে, শুয়ে পড়লে।
উপশম – হেলান দেওয়া মত অবস্থায় থাকলে।
সম্বন্ধ — তুলনীয় ও স্যাঙ্গুনারিয়াঅফিসিন্যালিস ২x – ৬x, গোলাপ গোত্রীয় পরিবারের একটি সদস্য, (প্রচুর, দীর্ঘকালস্থায়ী মাসিক ধাতুস্রাব, বিশেষ করে স্নায়বিক রোগী, তৎসহ মাথায় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্তাধিক্যযুক্ত উপসর্গসমূহ। রজোনিবৃত্তিকালে অপ্রবল রক্তস্রাব। জরায়ুর পুরাতন প্রদাহ। ফুসফুস থেকে রক্তস্রাব। শিরার স্ফীতি ও ক্ষত)। ম্যানড্র্যাগেরা – (ম্যানড্রেক), প্রাচীণকালের একটি মাদকদ্রব্য বিশেষ অস্থিরতাযুক্ত উত্তেজনা এবং শারীরিক দুর্বলতা। ঘুমাতে চায়। চায়না ও এরেনিয়ার মত নির্দিষ্ট সময়ে রোগলক্ষণ ফিরে আসার লক্ষণযুক্ত। মৃগী ও জলাতঙ্ক রোগে উপযোগী, এছাড়া সিটোনিয়া ও কাজ করে এই জাতীয় রোগে। (এ. ঈ, ল্যাভাই)। হায়োসায়োমাস (জ্বরকম, উত্তেজনা বেশি), স্ট্রামোনিয়াম (মস্তিষ্কের উত্তেজনা বেশে, ক্রোধোন্মত্ততা), হোয়িতজিয়া – মেক্সিকো দেশের ঔষধ, বেলেডোনার মত একই জাতীয় কাজ করে। (জ্বর, স্কারনেট জ্বরের মত উদ্ভেদ, হাম, আমবাত প্রভৃতিতে উপযুক্ত। তীব্রজ্বর তৎসহ উদ্ভেদযুক্ত জ্বর। মুখগহ্বর ও গলা শুষ্ক, মুখমণ্ডল লাল, চক্ষুরক্তবর্ণ, প্রলাপ)। প্রায় ক্ষেত্রেই বেলেডোনার পর ক্যাল্কেরিয়া কার্বের প্রয়োজন হয়, অ্যাট্রোপিয়া। বেলেডোনার একটি উপক্ষার, বেলেডোনার থেকে বেশি মাত্রায় স্নায়বিক রোগ লক্ষণের উপর কাজ করে।
(গলা প্রচণ্ড শুষ্ক, ঢোক গেলা প্রায় অসম্ভব। পাকস্থলীর পুরাতন বস্তুর বমি পেরিটোনাইটিস। দৃষ্টি সম্পর্কিত যাবতীয় ভ্রান্তি। সব কিছু বড়ো দেখে। প্ল্যাটিনা এর বিপরীত)। পাচক রসে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের স্বল্পতা, পাইরোসিস। সবকিছুর উপর কালো ছোপ দেখে। পড়ার সময়, কথাগুলি পরস্পর সম্মিলিত হয়ে যায়, দ্বিত দৃষ্টি সকল দৃষ্ট বস্তু বৃহৎ দেখে। কর্ণনলী ও কানের ভিতরের পর্দার রক্তাধিক্য। অগ্ন্যাশয়ের উপর এই ঔষধের কাজ আছে। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অম্নরসের ক্ষরণ। মাঝে মাঝে পাকস্থলীর বেদনা, ডিম্বাশয়ের স্নায়ুশূল)।
অ-হোমিওপ্যাথিক ব্যবহার অ্যাট্রোপিয়াও এর উপর ক্ষারগুলি চোখের রোগে ব্যবহার হয়, এই ঔষধের সাহায্যে চোখের তারার প্রসারণ ঘটে এবং দৃষ্টি সুনির্দিষ্ট হয়। আভ্যন্তরীণভাবে অথবা চামড়ার নীচে ব্যবহার করা হয় ওপিয়াম ও মর্ফিনের কাজ নষ্ট করার জন্য। বৃক্কের শূলবেদনায় ১/২০০ ভাগ গ্রেন চামড়ার নীচে দেওয়া হয়। অন্ত্ৰাবরোধের ক্ষেত্রে, যখন জীবন সংশয় দেখা দেয়, সেই সময় অ্যাট্রোপিন এক মিলিগ্রাম বা তার থেকে বেশি মাত্রায় চামড়ার নীচে ইনজেকশন দেওয়া হয়। থাইসিস রোগে, রাত্রিকালীন ঘামে ১-৮০ গ্রেন চামড়ার নীচে দেওয়া হয়।
অ্যাট্রেপিয়া ১-২০ গ্রেন, ১ গ্রেন মর্ফিনের কার্য নষ্ট করতে ব্যবহার হয়।
এছাড়াও স্থানিক অবশ করার কাজে, আক্ষেপ নিরোধক, স্তনদুগ্ধ, যেকোন স্রাব শুষ্ক করার কাজে ব্যবহার হয়।
শক্তি – অ্যাট্রোপিয়া সালফ, ১-১২০ থেকে ১-৬০ গ্রেন।
বেলেডোনার দোষগ্ন – ক্যাম্ফর, কফিয়া, ওপিয়াম, একোনাইট।
পরিপূরক – ক্যালেরিয়া, বেলেডোনা, বিশেষ করে আধা-পুরাতন ও ধাতুগত রোগের ক্ষেত্রে।
প্রতিবন্ধক — এসেটিক অ্যাসিড।
শক্তি – ১ম থেকে ৩০ শক্তি ও উচ্চতর শক্তি। তরুণ রোগে অবশ্যই বারে বারে প্রয়োগ করা হবে।
বেলেডোনা এমন একটি ঔষধ যে, ইহা শারীরবিধানকে অত্যন্ত প্রবলভাবে আক্রমণ করে। ইহা রক্তপ্রধান বলিষ্ঠ ব্যক্তি এবং মস্তিষ্কচালনাকারী ব্যক্তিদের পক্ষেই বিশেষ উপযোগী। মস্তিষ্কচালনকারী ব্যক্তিগণ যদি বেশ সুস্থ হয় এবং যথেষ্ট রক্ত এবং রক্তবহা নাড়ী প্রধান হয়, তাহা হইলে তাহাদের রোগগুলি অকস্মাৎ উপস্থিত হইয়া থাকে। বেলেডোনার রোগগুলি হঠাৎ উপস্থিত হয়, নিয়মিতভাবে চলে এবং হঠাৎ নিবৃত্ত হয়। বেদনা এবং যন্ত্রণা হঠাৎ তীব্রভাবে উপস্থিত হয় এবং হঠাৎ নিবৃত্ত হয়। সর্দি লাগিলে উহা দ্রুত চূড়ান্ত সীমায় পৌছে, তীব্রভাবে চলিতে থাকে, অতি তীব্রভাবে ধারণ করে এবং হঠাৎ নিবৃত্ত হইয়া যায়। বেলেডোনা বিশেষভাবে সমগ্র রক্তবহা। নাড়ীমন্ডল, হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুমন্ডলকে আক্রমণ করে।
প্রাথমিক অবস্থাগুলির মধ্যে উত্তাপই প্রথম আলোচ্য। ইহাতে সমস্ত যন্ত্রের বিশেষতঃ মস্তিষ্ক, ফুসফুস ও যকৃতের প্রদাহ উপস্থিত হয়। অন্যান্য যন্ত্রাদির সহিত অন্ত্রও আক্রান্ত হয়। এই প্রদাহের সহিত সৰ্ব্বদা ভীষণ উত্তাপ থাকে, এই উত্তাপ একটি অস্বাভাবিক জিনিষ। অন্য যেকোন ঔষধ অপেক্ষা ইহা বেলেডোনাতেই অধিক লক্ষিত হয়। উত্তাপ এতই প্রখর যে, বেলেডোনা রোগীর গায়ে হাত দিলে, তোমাকে হাত সরাইয়া আনিতে হইবে। ঐ উত্তাপের স্মৃতি তোমার হাতে ও আঙ্গুলে কিছুক্ষণ থাকিয়া যাইবে। যন্ত্রণা, প্রদাহ, ক্লেশ, রাত্রিকালীন প্রলাপ, প্রাদাহিক প্রকৃতির তীব্র আক্রমণ, সবকিছুই ঐ প্রকার উত্তাপযুক্ত হয়। প্রদাহটি কোথায় তাহাতে কিছু আসে যায় না, ঐ একই প্রকার প্রখর উত্তাপ থাকিবেই। সময় সময় ঐ প্রকার উত্তাপ বৰ্তমান থাকিলেও উহা বেলেডোনা জ্ঞাপক হয় না, ঐ অবস্থা একমাত্র একটানা জ্বরেই দেখা যায়। বেলেডোনায় কোন একটানা জ্বর নাই। একথা যথার্থ যে, পূৰ্ব্বেকার পুস্তকগুলিতে টাইফয়েড জ্বরে এবং অন্য কয়েক প্রকার একজ্বরে এই ভীষণ উত্তাপের জন্য বেলেডোনার কথা বলা হইয়াছে; কিন্তু তোমরা যদি বেলেডোনাকে প্রারম্ভ হইতে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা কর, তাহা হইলে দেখিতে পাইবে যে, ইহার জ্বরে একটানা জ্বরের ভাব কিছুই নাই। ইহার জ্বর বিরামশীল। ইহার উপসর্গগুলি কখনও টাইফয়েড জ্বরের ন্যায় ধীরে ধীরে আসে না। ইহাতে একটানা জ্বরের ন্যায় ক্রমশঃ বৃদ্ধি এবং ক্রমশঃ হ্রাস নাই। যাহাতে তোমার কোন গোলমাল উপস্থিত না হয়, সেইজন্যই আমি একথাগুলি বলিলাম। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকগণের অন্যতম পরলোকগত শ্রদ্ধেয় ডাঃ হেরিংও টাইফয়েড জ্বরে কতকটা বেলেডোনা সদৃশ উত্তাপ ও প্রলাপ দেখিয়া এই অবস্থার জন্য বেলেডোনার উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু ঠিক যাহা ঘটে তাহা আমি বলিতেছি। বেলেডোনা সদৃশ বিকার দেখিয়া তুমি যখন টাইফয়েড জ্বরে, প্রলাপের জন্য বেলেডোনা দিবে, তখন তুমি উহা দ্বারা প্রলাপটিকে দমন করিতে পারিবে, কিন্তু ঐ জ্বরের অন্যান্য লক্ষণগুলি বাড়িয়া উঠিবে। তুমি জ্বরকে দমন করিতে পারিবে না, কিন্তু রোগীকে দমন করিয়া ফেলিবে। প্রলাপকে অমনি রাখিয়া দিলে যেরূপ হইত, রোগী এখন তাহা অপেক্ষা বেশীদিন ভুগিবে, অধিকতর অবসন্ন হইয়া পড়িবে। কিন্তু হেরিং যেরূপ বর্ণনা দিয়া ‘বেল’ দেওয়ার উপদেশ দিয়াছেন সেরূপ অবস্থায় ‘ষ্ট্র্যামোনিয়াম সুন্দর উপযোগী হইবে। এই উত্তাপের ধারণা মনে ভালভাবে গাঁথিয়া রাখিতে হইবে। উত্তাপ, তীব্র উত্তাপ, প্রবল উত্তাপ।
‘বেলে’র আর একটি বিশেষ লক্ষণ ইহার সর্বপ্রকার প্রদাহিক অবস্থায় এবং জ্বরে বর্তমান থাকে। প্রদাহিত অঙ্গ, এবং খুব সচরাচর উহার চৰ্ম্ম, অত্যন্ত লাল হয় এবং তারপর প্রদাহ বাড়িতে থাকিলে, উহা কৃষ্ণাভ লাল হইয়া উঠে; জ্বর বাড়িতে থাকিলে মুখমন্ডল চিত্র-বিচিত্র হইয়া উঠে, কিন্তু বেলের প্রথম চেহারা উজ্জ্বল লাল এবং চর্ম চকচকে। যে প্রদাহিত অঙ্গটি চোখে দেখা যায় তাহা লাল হয়। গ্রন্থির প্রদাহে, গ্রন্থির উপরিস্থত চৰ্ম্ম মন্ডলাকারে লাল। সুতরাং ঘাড়ের গ্রন্থিগুলির প্রদাহে চৰ্ম্মে লাল লাল দাগ থাকে। কর্ণমূলগ্রন্থির প্রদাহে, নিম্ন চোয়ালের গ্রন্থি প্রদাহে, ঘাড়ের গ্রন্থির প্রদাহে, প্রত্যেকটি স্থানেই আগুনের ন্যায় লাল লাল দাগ থাকে। গলা আরক্ত জ্বরের চর্মের ন্যায় লাল হয়। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহ হইলে উহাও আরক্ত জ্বরের ন্যায় লাল হয়। কিছু পরে উহা ঈষৎ কালচে এবং অবশেষে চিত্র-বিচিত্র হইয়া পড়ে ইহাতে বেলেডোনার ধাতুর প্রকৃতি ও গতি দেখিতে পাওয়া যায়। আমরা আরক্ত জ্বরে এবং দুষ্ট প্রকৃতির প্রাদাহিক অবস্থায় যেরূপ দেখিতে পাই, ইহাও তদ্রুপ অন্তরুৎসেক্য অবস্থার দিকে যাইতে থাকে; প্রথমে প্রবল রক্তসঞ্চয় কিন্তু পরে গতিবিধায়ক স্নায়ুর পক্ষাঘাত উপস্থিত হয়। প্রবল রক্তসঞ্চয়, এবং নীলাভা অথবা বেগুনি আভা এবং চিত্র-বিচিত্র অবস্থা।
প্রদাহিক অঙ্গে এবং ব্যথাযুক্ত অঙ্গে বেলের আর একটি বিশেষ লক্ষণ বর্তমান থাকে। যখনই বেলে নিশ্চিত ক্রিয়ার ন্যায় কিছু উপস্থিত হয়, তখনই ঐ স্থানে জ্বালা প্রবল জ্বালা দেখা দেয়। বেলের গলবেদনায় গলায় জ্বলন্ত অঙ্গারের ন্যায় জ্বালা হয়। টনসিলের প্রদাহে আগুনের ন্যায় জ্বালা। চৰ্ম্মে জ্বালা, রোগীর কাছে উহা জ্বালাকর উত্তাপ, চিকিৎসকের কাছে উহা প্রখর উত্তাপ। আরক্ত জ্বরে চৰ্ম্মে জ্বালা করে। পৈত্তিক অথবা স্বল্পবিরাম জ্বরে, সে বলে, ডাক্তার অত্যন্ত জ্বালা করে, অত্যন্ত জ্বালা করে। কোন যন্ত্রের প্রদাহে চৰ্ম্ম জ্বালা করে, জ্বালাকর জ্বর হয়, এবং যন্ত্রটির মধ্যেও জ্বালা করে। জ্বালার সৃহিত মূত্রাশয়ের প্রদাহ। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে মাথা জ্বালা করে। গলায় রক্তসঞ্চয় হইলে গলা জ্বালা করে। উহা বাহ্যিক ভাবে গরম এবং অনুভূতির দিক হইতে জ্বালাকর। পাকস্থলী-প্রদাহ জ্বালা থাকে। যকৃৎ-প্রদাহে যকৃৎ জ্বালা করে। যকৃৎপ্রদাহের সহিত ন্যাবা রোগে যকৃৎ জ্বালা করে। যকৃৎ-প্রদাহের সহিত ন্যাবা রোগে যকৃৎ জ্বালা করে। এক্ষণে আমরা তিনটি প্রধান লক্ষণ পাইলাম, উহাদিগকে পরিচালক লক্ষণ বলিও না, কারণ আমি ঐরূপ অর্থে কথাটি বলি নাই,—ঐগুলি উত্তাপ, আরক্ততা এবং জ্বালা। তোমরা লক্ষ্য করিবে কিরূপে ঐগুলি রোগের সমগ্র প্রকৃতিটির পরিবর্তন ঘটায়, কিরূপে উহারা অনুপ্রবিষ্ট হয়, কিরূপে শাখাপ্রশাখার সৃষ্টি করে এবং কিরূপে অর্থপ্রকাশক হয়।
কিন্তু ইহাই সব কিছু নহে। আমরা বেলে অত্যন্ত ফুলা দেখিতে পাই। প্ৰদাহিত অঙ্গ দ্রুত ফুলিয়া উঠে, অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়, অত্যন্ত বেদনান্বিত হয়, চাপনবৎ। সূঁচীবিদ্ধবৎ এবং জ্বালাকর বেদনার সহিত মনে হয় যেন স্থানটি ফাঁটিয়া যাইবে। এইরূপ প্রদাহিত অঙ্গে উত্তাপ, আরক্ততা, জ্বালা এবং ফুলা থাকে। ফুলা, সূঁচফোটান বেদনা, জ্বালা, দপদপ করা। সর্বাঙ্গে দপদপ করে। রক্তসঞ্চয় এবং প্রদাহের সহিত তাহার দপদপ করে। আক্রান্ত অঙ্গ দপদপ করে, এবং তাহার করোটি ধমনী দপদপ করে। শিশুরা যখন মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয়ের সহিত শয্যাশায়ী হয়, তখন তাহাদের মাথা অত্যন্ত গরম হইয়া উঠে। যদি সে কথা কহিবার মত বড় হইয়া থাকে, তাহা হইলে সে বলিবে, “ঐস্থানে জ্বালা করিতেছে।” কিন্তু তখনও আমরা দপদপানি লক্ষ্য করিব। রগের ধমনীদ্বয় এবং করোটির ধমনীদ্বয় অত্যন্ত তীব্রভাবে স্পন্দিত হইবে। একটি বিশৃঙ্খলা চলিতে থাকিবে। যেন এক প্রকার ভূমিকম্প হইতে থাকিবে। যখন রোগীর বেল প্রয়োজন হয় তখন সবকিছুই যেন কম্পিত হইতে থাকে। ইহা অত্যন্ত যন্ত্রণাপূর্ণ ঔষধসমূহের অন্যতম। তারপর, ইহা অত্যন্ত স্পর্শদ্বেষযুক্ত। সে এতই স্পর্শদ্বেষযুক্ত যে, সে যন্ত্রণা হইতে সাধারণ লোক অপেক্ষা অধিক কষ্ট পায়। তারপর মনে রাখিও যন্ত্রণাটি হঠাৎ আসে, যে অল্পক্ষণ বা অধিকক্ষণ থাকে এবং হঠাৎ চলিয়া যায়। স্নায়ুশূলে এইরূপ হয়, প্রাদাহিক অবস্থায় এইরূপ হয়; প্রদাহিত যন্ত্রের এইরূপ হয়, যখনই যন্ত্রণা আসে তখনই এইরূপ হয়। বেদনা, ছিঁড়িয়া ফেলার মত বেদনা, জ্বালা, সূঁচফোটান বেদনা, চাপনবৎ বেদনা, চিড়িকমারা বেদনা, সবকিছুই একসঙ্গে দেখা দেয়। এই সকল চরিত্রগত লক্ষণগুলি জড় হইয়া একত্রিত হয়, এবং সে তাহাতে কষ্ট পায়। তাহার সমস্ত যন্ত্রণাই সঞ্চালনে বাড়ে, আলোকে বাড়ে, ঝাঁকি লাগিলে বাড়ে, ঠান্ডায় বাড়ে। সে গরম বস্ত্রে আবৃত থাকিতে চায় এবং সে অনাবৃত থাকিলে এবং হাওয়া লাগাইলে খারাপ বোধ করে। তাহার শিরঃপীড়াও অন্যান্য বেদনার ন্যায়; মনে হয়, যেন মস্তিষ্কটি উঠাপড়া করিতেছে, প্রতি পদক্ষেপে এবং প্রত্যেকবার চক্ষুসঞ্চালনে, চক্ষুগোলক ঘুরাইলে অথবা সিঁড়ি দিয়া উঠিলে অথবা আসন হইতে উঠিলে বা বসিলে ছিন্নকর, জ্বালাকর বেদনা অনুভূত হয়; সর্বপ্রকার সঞ্চালনেই ভীষণ যন্ত্রণা দেখা দেয়, মনে হয় যেন মাথাটি ফাঁটিয়া যাইবে, যেন চক্ষু ঠেলিয়া বাহির হইবে। যদি সে নড়ে, তাহা হইলে তাহার হৃৎপিন্ডটি সহসা সঞ্চালিত হইয়া উঠে, ব্যথিত অঙ্গে দপদপ করে এবং সে উহাকে “হাতুড়িমারার ন্যায় ব্যথা” বলে। যেখানেই এইরূপ ব্যথা থাকে, সে ঐ স্থানটি স্পর্শ করিতে দিতে পারে না। উহা স্পর্শ করিলেই, দপদপ করিতে থাকে। অনাবৃত হইলে যন্ত্রণা বাড়িবে। যদি কেহ মেঝের উপর দিয়া হাঁটিয়া যায়, তাহা হইলে ঐ কম্পন তাহার যাতনার বৃদ্ধি করে। যদি সে বিছানায় শুইয়া থাকে, তাহা হইলে বিছানার কম্পনে রোগ-লক্ষণ বাড়া বেলের একটি সাধারণ লক্ষণ। যদি সে রোগে শয্যাশায়ী হয় বিছানার কম্পনে তাহার সমস্ত রোগ-লক্ষণ বাড়ে। যকৃৎ-প্রদাহে ভুগিতেছে— এরূপ একটি রোগীর শয্যাপার্শ্বে তুমি গেলে, কিন্তু সে তোমাকে তাহার বিছানায় হাত দিতে দিবে না, কারণ ঐ কম্পনে তাহার রোগ-লক্ষণ বাড়িয়া উঠে। যদি যন্ত্রণাটি উদরে হয়, যদি উহা জরায়ুপ্রদাহ হয়, এরূপ একটি বিশেষ লক্ষণ যে, উহা সৰ্ব্বদাই প্রদাহের সহিত সংযুক্ত থাকে না। ইহা কখন কখন স্নায়বিক অত্যনুভূতিতে রূপান্তরিত হয়। কোন স্ত্রীলোক হয়ত আঁতুড়ে আছেন, কোন প্রদাহ নাই অথবা প্রদাহের সম্ভাবনা নাই, কিন্তু তিনি এরূপ অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকিতে পারেন যে, বায়ুপ্রবাহ রোধ করিবার জন্য জানালাগুলি বন্ধ রাখিতে চাহিবেন, চাহিবেন না যে, কেহ তাহাকে স্পর্শ করুক, চাহিবেন না যে কেহ তাহার বিছানা বদলাইয়া দিক; যে কোনরূপ সামান্য নড়াচাড়াতেই তাহার যাতনা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তিনি ঝাঁকিলাগায় অত্যনুভূতিযুক্তা হন, যদিও হয়ত তাহার কোন বিশেষ অঙ্গ অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে না। তুমি এইরূপ একটি রোগীর কাছে গেলে, বুঝিতে পারিবে যে, যথাসময়ে বেল না দিলে, প্রসবক্রিয়াটি কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক হইয়া পড়িবে। কিন্তু একমাত্রা বেল দিলে সমস্ত উপসর্গগুলি অতি দ্রুত চলিয়া যাইবে; বেলের ক্রিয়া এইরূপ দ্রুতই হইয়া থাকে। বিছানার কম্পনেই সচরাচর ঔষধটির প্রকৃতি তোমার কাছে প্রকাশিত করিবে। তুমি যদি ভীষণ যন্ত্রণা বিশিষ্ট একটি পিত্তপাথরী শূলগ্রস্ত রোগীর শয্যাপার্শ্বে যাও, সে তোমাকে তাহার বিছানা স্পর্শ করিতে দিবে না। তাহার মুখমন্ডল লাল, চৰ্ম্ম জ্বালাকর, তাহাকে স্পর্শ করা যায় না, সে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগিতেছে এবং মেঝে পার হইয়া আসিবার পূৰ্বেই সে তোমাকে ঐ কথা বলিয়া দিবে। তুমি এই সব দেখিবে। সে বলিবে, “ডাক্তার আমার বিছানাটি স্পর্শ করিও না।” ইহা একটি বিশেষ লক্ষণ, নাড়া লাগিলে যাতনার সুস্পষ্ট বৃদ্ধি।
আপেক্ষ সৰ্বাঙ্গীন আক্ষেপ এবং স্থানবিশেষের আক্ষেপ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রণালীর, গোলাকার তন্তুর এবং পিত্তপাথরী শূলরোগের ব্যাপারে যেরূপ বলিয়াছি, তদ্রুপ নলাকার যন্ত্রের আক্ষেপ। পিত্তকোষ সংযোগকারী নলে একপ্রকার টিপিয়া ধরার ন্যায় বেদনা থাকে অথবা উহা পিত্তকোষ প্রণালীতেও দেখা দিতে পারে, ফলে গোলাকার তন্তুগুলি ঐ ক্ষুদ্র পিত্তশিলাখন্ডটিকে টিপিয়া ধরে, এবং উহাকে বাহির হইতে দেয় না। রাস্তাটি কিন্তু উহা প্রবেশ করিবার মত প্রশস্ত থাকে এবং উহা চলিতেও আরম্ভ করে, কিন্তু ঐ পথের উপদাহহেতু আক্ষেপ জন্মে, এবং তাহারই ফলে ক্ষুদ্র পিত্তশিলাটি আটকাইয়া যায়। তুমি রোগীর জিহ্বার উপরে একমাত্রা বেল ঢালিয়া দাও, আক্ষেপ দূর হইবে, পিত্তশিলাটি বাহির হইতে থাকিবে, আর কোন উপদ্রব থাকিবে না; পনের মিনিটের মধ্যেও পিত্তশিলাজনিত শূলের নিবৃত্তি হইবে। পিত্তপাথরী শূলে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কখনই ব্যর্থ হয় না। অবশ্য লক্ষণগুলি সৰ্ব্বদাই বেলজ্ঞাপক হয় না; কিন্তু যে ক্ষেত্রে এইরূপ ভয়ঙ্কর স্পর্শকাতরতা থাকে, তাহাতে বেল প্রযোজ্য।
“শিশুদিগের তড়কা।” উহা ভীষণ হয় এবং সচরাচর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চয়ের সহিত সম্বন্ধবিশিষ্ট থাকে। চৰ্ম্ম সর্বদাই জ্বরযুক্ত অবস্থায় থাকে। ঐ জ্বর আলোক হইতে, ঠান্ডা হাওয়ার স্রোতে, অথবা শিশুর ঠান্ডা লাগিলে উপস্থিত হয়। স্নায়বিক বুদ্ধিমান শিশু, মাথাটি সুগঠিত এবং গোলগাল, বৃহৎ মস্তিষ্কযুক্ত বালক, বিশেষতঃ বালক অথবা যে-সকল বালিকার মাথা বালকদের মত, তাহাদের ঠান্ডা লাগিলে তড়কা দেখা দেয়। আলোকে, সঞ্চালনে, ঠান্ডায় তড়কা উপস্থিত হয়। বেলের রোগীর, মানুষ হিসাবে, ব্রায়ো’র রোগীর ন্যায় সঞ্চালনে সমস্ত উপসর্গের বৃদ্ধি হয়। সঞ্চালনে তড়কা উপস্থিত হয়, সঞ্চালনে বেদনা দেখা দেয়। সঞ্চালনে হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বৰ্দ্ধিত হয়, এবং দপদপানি দেখা দেয়; সঞ্চালনে অনেক উপসর্গের সৃষ্টি করে এবং যন্ত্রণা বৃদ্ধি করে। যখন তুমি বেল প্রয়োগ করিবে তখন এই সব সাধারণ লক্ষণগুলির কথা ভাবিবে। বেল সম্বন্ধে এইরূপ ধারণা থাকা চাই। তুমি কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণ সংগ্রহ করিতে পার, তাহাতে কিছু আসে যায় না, এইগুলি সৰ্ব্বপ্রথমে লক্ষ্য কর।
বেলেডোনার মানসিক লক্ষণগুলি পড়িতে আনন্দদায়ক, কিন্তু দেখিতে ভীষণ। মানসিক লক্ষণগুলি প্রবল জ্বরের মধ্যে এবং উন্মাদজনিত উত্তেজনায় এবং বিকারে লক্ষিত হয়। ইহার সৰ্ব্বত্র উত্তেজনা থাকে। মানসিক লক্ষণের সর্বত্র ভীষণতা থাকে। মানসিক লক্ষণগুলি সৰ্ব্বদাই প্রবল, কখনও অপ্রবল নহে। বেলে কখনও অপ্রবল প্রলাপ থাকে না। উহা একটি প্রচন্ড অবস্থা। রোগী প্রচন্ড হইয়া উঠে, মারিতে যায়, কামড়াইতে যায়, দ্রব্যাদি ছিড়িয়া ফেলিতে যায়। অস্বাভাবিক কাজ করে, অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করে, আশা করা যায় না—এরূপ কাজ করে। সে উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। এই সব মানসিক লক্ষণ, প্রলাপ, উত্তেজনা প্রভৃতি জ্বরের মধ্যে দেখা দেয় এবং সাধারণতঃ সামান্য কিছু লঘু পথ্য করিলে উপশমিত হয়। বেল সম্বন্ধে একথা সাধারণতঃ জানা নাই, কিন্তু উহা একটি প্রবল লক্ষণ। কিন্তু ভীষণতার কথা মনে রাখিও, যদি তুমি ভয়ানক প্রলাপযুক্ত অবস্থার রোগীর শয্যাপার্শ্বে যাও, তাহা হইলে এই তিনটি কথা মনে। রাখিও-উত্তাপ, আরক্ততা এবং জ্বালা।
কল্পনায় পূর্ণ। সে ভূত, প্রেত, পুলিশ এবং বন্য জীবজন্তু দেখে। জ্বরের প্রথম অবস্থায় প্রলাপ অত্যন্ত ভয়ানক ও উত্তেজনাপূর্ণ থাকে, কিন্তু উহা চলিতে থাকিলে, সে ঘুমাইয়া পড়ে, একপ্রকার অর্ধনিদ্রা, অর্ধসংজ্ঞাহীন অবস্থা। সে যেন ঐ অবস্থায় স্বপ্ন দেখে এবং চিৎকার করিয়া উঠে। ভীষণ ব্যাপার সম্বন্ধে স্বপ্ন দেখে। সে যে বিষয়ে কথা বলে, তাহারই স্বপ্ন দেখে। যখন তাহার প্রকৃত নিদ্রা বা বিশ্রাম আসে, কারণ নিদ্রাই তাহার পক্ষে বিশ্রাম, তখন সে ভয়ানক স্বপ্ন দেখে, বুকচাপা স্বপ্ন দেখে। সে দ্রব্যাদি আগুনে পুড়িতে দেখে। সে প্রলাপ এবং যাতনার মধ্যে থাকে। সময়ে সময়ে সে হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে, মনে হয় যেন তাহার চৈতন্য লোপ পাইতেছে। সবকিছু সম্বন্ধে পূৰ্ব্বস্মৃতি হারায় এবং তখন প্রচন্ড হইয়া উঠে। যখন তাহাকে নিদ্রিতবৎ দেখায়, তখনও তাহার প্রলাপ চলিতে থাকে। এই লক্ষণগুলি সাধারণতঃ দেখা যায় মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে,—শিশুদের মস্তিষ্কে প্রবল রক্তসঞ্চয়। যদি তাহারা কথা বলিবার মত বড় হইয়া থাকে, তাহারা মাথায় হাতুড়ি মারার কথা বলিবে। বেলের শিশু রোগীও অনেক সময়ে প্রগাঢ় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকে,—উহার সহিত মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, বিস্তৃত চক্ষুতারকা, উত্তপ্ত ও শুষ্ক গাত্রচর্ম, মুখমন্ডল আরক্ত, করোটি ধমনীদ্বয়ের উল্লম্ফন থাকে। অবশেষে যখন আচ্ছন্ন নিদ্রা বাড়িতে থাকে, তখন শিশু বিবর্ণ হইয়া পড়ে, এবং তাহার ঘাড়টি পশ্চাৎ দিকে বাকিয়া যায়; কারণ নিদ্রাভাব যতই বাড়িতে থাকে মস্তিষ্কের তলদেশ ও মেরুদন্ড ততই আক্রান্ত হইতে থাকে; তখন ঘাড়ের পেশীগুলি সঙ্কুচিত হয়, মাথা পিছন দিকে আকৃষ্ট হয় এবং সে মাথা চালিতে থাকে। সে একদৃষ্টে চাহিয়া থাকে, তারকাদ্বয় বিস্তৃত হয়। এইরূপ মানসিক অবস্থা আরক্ত জ্বর, এবং মস্তিষ্কমেরুমজ্জা-প্রদাহের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকে। তারপর, এইরূপ মানসিক অবস্থা তরুণ উন্মাদের আকার ধারণ করে, তখন রোগী চামচে কামড়ায়, কুকুরের ন্যায় চিৎকার করে, নানারূপ ভয়াবহ কাৰ্য্য করিতে থাকে, এমনকি জানালা দিয়া লাফাইয়া পড়িতে চায়। তাহাকে আটকাইয়া রাখিতে হয়, বাঁধিয়া রাখিতে হয়। তাহার মুখমন্ডল লাল হয়, গাত্র উত্তপ্ত থাকে; সময়ে সময়ে রোগী বলে যে, তাহার সর্বাঙ্গ পুড়িয়া যাইতেছে, অথবা তাহার মাথাটি পুড়িয়া যাইতেছে এবং তাহার মাথাটি সত্যই অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে। এই সময়ে সর্বক্ষণ তাহার পা ঠান্ডা থাকে। মাথা গরম পা ঠান্ডা অথবা হাত পা দুই-ই বরফের ন্যায় ঠান্ডা। মনে হয়, দেহের সমস্ত রক্ত মাথায় উঠিতেছে। তরুণ উন্মাদের সহিত ভ্রান্ত বিশ্বাস ও ভ্রান্ত দর্শন মিশিয়া থাকে। সে ভূত, ভয়ানক বিকট মূৰ্ত্তি, অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিষ, বিকৃত বস্তুসমূহ দেখে। কল্পিত জিনিষের ভয়ে পালাইয়া যাইতে চায়। বেলের বিকারে, সে জানালা দিয়া লাফাইয়া পড়িতে চায়, ছুটিয়া বেড়াইতে চায়, সঙ্গীদের নিকট হইতে পলাইয়া যাইতে চায়। সে ভাবে যে, তাহারা তাহার ক্ষতি করিতেছে। তরুণ উন্মাদ ও প্রলাপ অবস্থার সর্বত্র, সে যাহা কিছু করে সবই প্রচন্ড হয়। সে সবকিছু ধ্বংস করিতে চায়। অত্যন্ত তরুণ অবস্থায় বেলের রোগীকে পাহারা দিতে হয়, শাসন করিতে হয়, বল প্রয়োগ করিতে হয় এবং সময়ে সময়ে বাঁধিয়া রাখিতে হয়। পাঠ্যপুস্তকে এই সকল অবস্থাকে “ক্রোধ, প্রচন্ডতা” বলা হইয়াছে। সে সত্যই প্রচন্ড ব্যবহার করে। “খেদ করিতে থাকে; আহারের পরিবর্তে কাঠের চামচে কামড়াইয়া দুইখন্ড করিয়া ফেলে, থালায় কামড় দেয়, কুকুরের ন্যায় গোঁ গোঁ শব্দ করে, চিৎকার করে। একটি বালক ভীষণ পীড়িত হইয়া অত্যন্ত হাসিতে হাসিতে ঘরের মধ্যে দৌড়াইয়া বেড়াইয়া ছিল।” ইহাতে পাগলের মত হাসা লক্ষণ আছে। প্রচন্ড শব্দ করিয়া উচ্চহাস্য। “একখানা রুটিকে পাথর মনে করিয়া সে দূরে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দেয়। প্রচন্ড ক্রোধে সে শয্যায় ওলট-পালট খাইতে থাকে। সে শব্দ ও লোক-সঙ্গ সহ্য করিতে পারে না।” আলোক অসহ্য বোধ হয়, অন্ধকারেই ভাল থাকে। এইরূপ দুই দুইটি প্রচন্ড আক্রমণের মধ্যে মাঝে মাঝে সে উদাসীন হইয়া পড়ে। যখন সে ক্রিয়াশীল থাকে তখন সৰ্ব্বদাই সে প্রচন্ড, কিন্তু সময়ে সময়ে তাহার অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় ভাবে দেখা দেয়, সে বিছানার উপর বসিয়া বা শুইয়া থাকে এবং বিছানার চাদর ছিঁড়িতে থাকে অথবা হাতের কাছে যাহা কিছু পায় তাহাই ভাঙ্গিতে থাকে। যদি উহা একগাছি ছড়ি হয় সে উহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবে।
এই সকল উপসর্গের মধ্যে, উহা প্রলাপ, জ্বর বা বেদনা যাহাই হউক না কেন, সে চমকিয়া উঠে। ঘুমের মধ্যে বিদ্যুতঘাত পাওয়ার ন্যায় চমকিয়া উঠে। যখনই সে ঘুমাইয়া পড়ে, তখনি শরীরের সর্বত্র বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার ন্যায় এক প্রকার অনুভূতি জন্মে। “অন্য কেহ আসিলে চমকিয়া উঠে, কল্পিত জিনিষের ভয়ে, তাহা হইতে পলাইয়া যাইতে চাহে। অত্যন্ত উৎকণ্ঠা এই ঔষধের সর্বত্রই দেখা যায়। যখন রোগী এইরূপ প্রলাপ হইতে নিষ্কৃতি পায়, যখন সে এইরূপ আক্ষেপ হইতে নিষ্কৃতি পায়, তাহার মুখে ভয়ের ভাব অঙ্কিত থাকে। রোগী অত্যন্ত উত্তেজিত অবস্থায় থাকে, সঞ্চালনে মানসিক আবেগে তাহার হৃৎস্পন্দন বৰ্দ্ধিত হয়। এখন ইহা ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে যে, বেল একটি অতিরিক্ত অনুভূতি বিশিষ্ট আহার অত্যনুভূতির অবস্থা, তন্তুসমূহের অত্যন্ত উত্তেজনা। ইহাকে স্নায়ুকেন্দ্রসমূহের বর্ধিত উত্তেজনা বলা হইয়াছে। ইহাদের স্বাদের, গন্ধের ও অনুভূতির শক্তি বাড়িয়া যায়, অনুভূতিকেন্দ্রের উত্তেজনা ঘটে। সে তাহার ধারণাগুলিতে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়। আলোকে অত্যনুভূতিযুক্ত, শব্দে, স্পর্শে, ঝাঁকি লাগায় অত্যনুভূতিযুক্ত। অনুভূতিকেন্দ্র প্রবলভাবে উত্তেজিত থাকে। অত্যধিক স্নায়বিক উত্তেজনাই বোধ হয় বেলেডোনার লক্ষণসমূহের মধ্যে সর্বপ্রধান এবং ‘ওপিয়ামের ন্যায় ঔষধগুলি ইহার ঠিক বিপরীত, কারণ উহাতে রোগীর অনুভূতি শক্তি নষ্ট হইয়া যায়। বেলে যত বেশী রক্তসঞ্চয় থাকে, উত্তেজনাও ততই বেশী। আর ‘ওপিয়ামে রক্তসঞ্চয় যত বেশী থাকে, উত্তেজনাপ্রবণতাও ততই কমিয়া যায়। তথাপি উহারা অনেক বিষয়ে অনুরূপ, আকৃতিতে, অনুরূপ, চোখমুখের চাহনিতে অনুরূপ, নিদানতত্ত্বের দিক হইতে অনুরূপ। যদি আমাকে নিদানতত্ত্বের উপর, রোগীর মস্তকে রক্তসঞ্চয়ের উপর, রোগীর চেহারার উপর ঔষধ ব্যবস্থা করিতে হইত, আর যদি আমি একটি বা অপরটির প্রাবল্য লক্ষণ ধরিতে না পারিতাম, তাহা হইলে আমি ‘ওপিয়াম ও বেলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করিতে পারিতাম না। কিন্তু আমরা নিদানতত্বের উপর ঔষধ ব্যবস্থা করি না, আমরা ব্যবস্থা করি লক্ষণসমূহের উপর এবং তাহাও সযত্নে পার্থক্য নির্ণয় করিয়া।
অত্যন্ত উত্তেজনার সহিত “শিরোঘূর্ণন”। বিছানায় পাশ ফিরিলে অথবা মাথা ফিরাইলে তাহার শিরোঘূর্ণন দেখা দেয়। “জিনিষগুলি ঘুরিতে থাকে।” “শিরোঘূর্ণনের সহিত হৃৎস্পন্দন।” মস্তক সঞ্চালনে হৃৎস্পন্দন ও শিরোঘূর্ণন বর্ধিত হয়। রোগী বিছানায় পড়িয়া থাকে, মাথা উঁচু করিতে পারে না। এই বর্ধিত স্পর্শানুভূতি মস্তক-ত্বক সম্বন্ধেই বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আমরা ইহা বিশেষভাবে স্ত্রীলোকগণের মধ্যেই দেখিতে পাই। সে তাহার চুল বাঁধিতে পারে না। অনেক সময়েই দেখা যায় যে বেলের রোগিণীর চুলে চিরুনি বা বুরুশ দিতে পারে না। মস্তক-ত্বক এতই স্পর্শকাতর যে, সে “চুল পৃষ্ঠের উপর ঝুলাইয়া রাখে।” “মনে হয়, যেন কেহ চুল ধরিয়া টানিতেছে, সে চায় না যে কেহ তাহার চুল স্পর্শ করুক।” আরও কয়েকটি ঔষধ আছে যাহাদের স্নায়বিক প্রকৃতিতে অনুরূপ অত্যনুভূতি দেখা যায়; যথা “হিপার’ উহাতে রোগী যন্ত্রণায় মূর্হিত হইয়া পড়ে; নাইট্রিক এসিড’-উহাতে রোগী রাস্তা দিয়া গাড়ী যাওয়ার শব্দ সহ্য করিতে পারে না, কারণ উহা অত্যন্ত ভীষণ যাতনার সৃষ্টি করে; কফিয়া’ “উহাতে পদশব্দ সমস্ত উপসর্গ বৰ্দ্ধিত করে, সে যন্ত্রণায় এতই অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকে যে, সে চার তলায় থাকিলেও যদি কেহ সদর দরজা দিয়া প্রবেশ করে, সেই শব্দে তাহার যাতনার বৃদ্ধি হয়, অথচ অপর লোকে সেই শব্দটি শুনিতেও পায় না। নাক্স ভমিকা’তে পা ফেলার শব্দে তাহার সর্বাঙ্গের বেদনা বাড়িয়া উঠে। বেলের প্রকৃতিতে এইরূপ বেদনার অত্যনুভূতি আছে। ইহা তাহার জ্ঞানকেন্দ্রের একটি অংশ সৰ্বাঙ্গীণ অনুভূতির বর্ধিত অবস্থা। ক্যামোমিলা’ রোগীও বেদনায় অত্যনুভূতিযুক্ত, কিন্তু আমাদের ক্যামোমিলা’ রোগীকে সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন হয় না, সে নিজেই উহা তাড়াইয়া দেয়। কিন্তু বেলের, পালসেটিলার’, নাইট্রিক এসিডের রোগীকে তোমরা সহানুভূতি দেখানর প্রয়োজন আছে।
এই ঔষধের আর একটি বিশেষত্ব ইহার প্রতিক্রিয়া শক্তির আতিশয্য। এই ঔষধের প্রতিক্রিয়া এত দ্রুত এবং এত আকস্মিক যে, আমি রোগীশয্যা হইতে উঠিয়া আসিবার পূর্বেই বহুবার রোগীকে বলিতে শুনিয়াছি, এই ঔষধটিতে আমাকে উপশম দিয়াছে।” ইহার প্রতিক্রিয়া এতই দ্রুত। অনেক ঔষধে প্রতিক্রিয়া ধীরে হয়, কিন্তু বেলে উহা প্রবলভাবে দেখা দেয়। নাক্স ভমিকা’ ও ‘জিঙ্কামে’ও এইরূপ হয়। রোগটি যদি তরুণ থাকে অথবা যদি পুরাতনও হয় তাহা হইলেওঁ ঐ অত্যনুভূতি সুস্পষ্ট থাকে। কুপ্রাম’ সৰ্বাঙ্গীণভাবে অত্যনুভূতিবিশিষ্ট। ইহাতে অত্যনুভূতিযুক্ত আঁচিল আছে, অত্যনুভূতিযুক্ত চর্ম, অত্যনুভূতিযুক্ত নাসিকার বহুপাদ আছে, এবং ইহার প্রতিক্রিয়াও এতই অত্যধিক যে, ইহার প্রয়োজন হইলে আংশিকভাবে প্রযোজ্য অন্য ঔষধ সেখানে কাৰ্য্য করিবে না; কারণ রোগী এতই অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে যে, সকল জিনিষই অতিরিক্ত ক্রিয়া করে। ঐরূপ ঔষধের ক্ষুদ্র মাত্রা, মৃদু মাত্রা, সাধারণ মাত্রাও অতিক্রিয়া করিবে এবং সবকিছুই বাড়িয়া উঠিবে। তখন গন্ধেও রোগলক্ষণ বাড়িবে, সুনিৰ্বাচিত ঔষধও আরোগ্য করার পরিবর্তে উৎপাত সৃষ্টি করিবে। কুপ্রাম’ ঐ অত্যনুভূতি কমাইয়া আনে, উপশম দেয় এবং তখন সুনিৰ্বাচিত ঔষধ আরোগ্যকরভাবে এবং দীর্ঘকাল ক্রিয়া করে। কুপ্রামে’ সেরূপ অধিক রক্তসঞ্চয় নাই,—এ বিষয়ে উহা বেলের সদৃশ নহে। কুপ্রামে প্রবল জ্বর ও রক্তসঞ্চয়, রক্তসঞ্চালন ক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলতা ও স্পন্দনের সহিত অত্যনুভূতি থাকে না, কিন্তু পুরাতন অবস্থায় উহাতে অত্যনুভূতি থাকে। স্ত্রী ও শিশু রোগীরা এতই অনুভূতিসম্পন্ন যে, তাহারা কোন সহানুভূতি পায় না, আবার, যাহারা নিজদিগকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করিতে পারে না, তাহারা ব্যতীত অপর হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর পক্ষেও ইহা উপযোগী হয় না। কুপ্রাম’ এইরূপ। অত্যনুভূতিবিশিষ্ট ব্যক্তির, বিশেষতঃ অত্যনুভূতিযুক্তা স্ত্রীলোকদিগের পক্ষে যেরূপ ঔষধ উপযোগী তাহা আমাদিগের আছে। তাহারা গন্ধে অনুভূতিযুক্ত যে কোনরূপ সম্ভাব্য বাহ্যিক অনুভূতিযুক্ত। সে চিকিৎসক রোগী দেখিতে গিয়া এই সকল হতভাগ্য পীড়িত ক্ষুদ্র মানবদের সম্বন্ধে যত্ন লইবেন, যিনি তাহাদের প্রকৃতি বুঝিতে পারিবেন, তাহাদের বিশেষত্ব লক্ষ্য করিতে পারিবেন এবং তাহাদের কষ্টের লাঘব করিতে পারিবেন, তিনি তাঁহার সম্মুখস্থ অপর চিকিৎসকগণের খ্যাতি থাকিলেও, জনসাধারণের প্রশংসা লাভ করিবেন। যে ব্যক্তি নিজের অনুভূতিকেন্দ্র দ্বারা অপর সকল লোকের পরিমাপ করেন, তিনি নিশ্চয়ই সেরূপ লোক হইবেন না। তিনি নিজে অল্প অনুভুতিবিশিষ্ট হইতে পারেন, কিন্তু অত্যনুভূতিযুক্ত রোগীরা তাঁহার নিকটেই আসিবে।
বেলের অধিকাংশ শিরঃপীড়াতেই এই অত্যনুভূতি বর্তমান থাকে। ছোরামারার ন্যায় বেদনা, দপদপকর বেদনা, তীরবিদ্ধবৎ বেদনা, সমস্তই রক্তসঞ্চয়ের সহিত সম্বন্ধবিশিষ্ট থাকে।
ঐ সমস্তই সঞ্চালনে, সৰ্ব্বপ্রকার নাড়া পাওয়ায়, আলোকে, এমনকি চক্ষের পলক পড়াতেও অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকে; বায়ুপ্রবাহে অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকে। রোগী মাথা চালিতে থাকিলে বেল উপযোগী হয়, রোগী মাথা চালিতে থাকে; কারণ যন্ত্রণা এত বেশী হয় যে, যদিও সঞ্চালন শিরঃপীড়া বৰ্দ্ধিত করে, তথাপি সে স্থির থাকিতে পারে না। শিশু শুইয়া থাকে এবং রক্তসঞ্চয়ের জন্য এপাশ-ওপাশ করিতে করিতে ও মাথা চালিতে চালিতে মস্তিষ্ক-রোগসূচক চিৎকার, হঠাৎ তীব্র চিৎকার করিয়া উঠে। কিছুক্ষণ পরে সে জাগিয়া উঠে এবং মাথা চালিতে থাকে, কয়েক মিনিট বাদে বাদেই সে মস্তিষ্কে রোগসূচক তীব্র চিৎকার করে এবং অচেতন অবস্থার দিকে অগ্রসর হইতে থাকে, তাহার ঘাড় পিছনদিকে বাকিয়া যায়, মুখ উজ্জ্বল ছিল, কিন্তু এখন তাহা বিবর্ণ হইতে থাকে। সময়ে সময়ে অচৈতন্যতা আসে এবং অচৈতন্যতার মধ্যেই সে চিৎকার করিয়া উঠে। সমুদয় মস্তিষ্কপীড়ায় অতিরিক্ত খাওয়া অথবা পাকস্থলী অতি পূর্ণ করা সম্বন্ধে আমাদিগকে সতর্ক হইতে হইবে, কারণ পাকস্থলীটিও অত্যন্ত দুর্বল থাকে। উহা বেশী হজম করিতে পারে না, সেজন্য খাদ্য সুনিৰ্বাচিত ও লঘু হওয়া প্রয়োজন।
মাথায় অত্যন্ত ভারবোধ। মাথা বোঝার মত মনে হয় এবং পিছনদিকে আকৃষ্ট হয়। মেরুদন্ডের উপর অংশের ঝিল্লী আক্রান্ত হইলে, ঘাড়ের পেশীর সঙ্কোচন-হেতুও সময়ে সময়ে, মাথা পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়। আবার কখন কখন আমরা দেখি যে, বেলের রোগী নিজেই পিছনদিকে ঘাড় আকর্ষণ করিতেছে, কারণ পশ্চাদ্দিকে ঘাড় বাঁকাইলে তাহার ভীষণ শিরঃপীড়ার উপশম হয়। যতক্ষণ সে মাথা পিছনদিকে হেলাইয়া রাখে, ততক্ষণ এই উপশম বজায় থাকে। বসিয়া থাকার সময় মাথা সম্মুখদিকে নোয়াইলে, মাথা হেঁট করিলে মাথাধরার বৃদ্ধি হয়। মনে হয় দাড়াইয়া থাকার সময় মাথা সম্মুখদিকে নোয়াইলে, যেন মস্তিষ্কটি খসিয়া পড়িবে বা ঠেলিয়া বাহির হইবে। ইহাতে শিরঃপীড়া এতই বর্ধিত হয় যে, সময়ে সময়ে উহা ছোরা মারা বা হাতুড়ি মারার ন্যায় বেদনায় পরিণত হয়। এইরূপ ভাষাই ব্যবহৃত হয়। পেরেক পোতার মত, হাতুড়ি মারার মত, খাজ কাটার মত, ছিঁড়িয়া ফেলার মত বেদনা, কিন্তু সবকিছুর সহিত চাপবোধ এবং দপদপানি থাকে। আসন হইতে উঠিলে এই সকল অনুভূতি বাড়িয়া উঠে। দপদপানি, স্পন্দন, মাথার খুলির মধ্যে যেন ক্ষতস্থানে হাতুড়ি মারিতেছে—এরূপ বেদনা, রোগী বলে যেন তাহার মাথার খুলির মধ্যে একটি বিস্তৃত ক্ষতবৎ স্থান আছে এবং প্রতি স্পন্দনে ঐ স্থানটিতে হাতুড়ির আঘাত করা হইতেছে। স্থিরভাবে বসিয়া থাকিলে অথবা শুইয়া থাকিলে বেদনাটি স্থগিত থাকে, কিন্তু চেয়ার হইতে উঠিলেই আবার হাতুড়ি মারা চলিতে থাকে। “বিস্তারশীল”—এই উক্তি সচরাচর রোগী দ্বারা ব্যবহৃত হয়, উহা পরীক্ষাকারীরাও ব্যবহার করিয়াছিল। বিস্তরণের অনুভূতি, যেন মাথাটি বড় হইয়া উঠিতেছে, ভিতর হইতে বাহির দিকে চাপ দিতেছে। এই সকল শিরঃপীড়া বাহিরদিক হইতে চাপ দিলে উপশমিত হয়। অকস্মাৎ স্পর্শে বা চাপ দিলে উহা বাড়িয়া উঠে, কিন্তু পটি বাঁধার ন্যায় অথবা আঁটিয়া বসা টুপির ন্যায়, চাপ ক্রমশঃ বাড়াইলে এবং সমাধানে সহ্যের উপযোগী করিয়া মাথা চাপিয়া ধরিলে, উহা উপশমিত হয়। তারপর, এই সকল শিরঃপীড়া ঠান্ডা বাতাসে অনাবৃত থাকিলে, ঠান্ডা হাওয়ায় দাঁড়াইয়া থাকিলে উপস্থিত হয়। কখন কখন কেবল মাত্র চুল ছাটার জন্য শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। চুল কাটার পর মাথায় রক্তসঞ্চয়, দপদপানি ও স্পন্দন কয়েকদিন স্থায়ী থাকে। মাথাটি ঠান্ডায় এত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে যে, চুল কাটায়, ঠান্ডা বাতাসে টুপি খুলিয়া দাঁড়াইয়া থাকায় কানের উপদ্রব, বক্ষের রোগ, বাতরোগ প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। এই ঔষধ সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে, দেহের নানাবিধ উপদ্রব মস্তক দিয়া প্রবেশ করে এবং নীচের দিকে ছড়াইয়া পড়ে। মাথা অনাবৃত রাখিলে, খোলা বাতাস লাগাইলে, মাথা ভিজিলে বা মাথায় বৃষ্টি পড়িলে, অত্যন্ত স্ফীতি ও আরক্ততার সহিত নিম্নাঙ্গের রোগসমূহ, সন্ধিসমূহের বাতরোগ উপস্থিত হয়। এর একটি রোগ আছে, উহা দেখিতে পাইলে তুমি হতবুদ্ধি হইয়া পড়িবে, আর আমি যাহা বলিতেছি তাহা তোমার জানা না থাকিতে পারে। বেলের রোগসমূহ সাধারণতঃ বিশ্রামে উপশমিত হয় এবং সঞ্চালনে বাড়িয়া উঠে। কিন্তু দেখিতে অত্যন্ত কষ্টদায়ক, ঊরু হইতে নীচের দিকে ছিন্নকর বেদনার সহিত একপ্রকার অস্থিরতা দেখা দেয়, উহাতে রোগী সৰ্ব্বদা হাঁটিয়া বেড়াইতে বাধ্য হয়। যে মুহূর্তে সে বিশ্রাম লয়, সেই মুহূর্তেই বেদনা উপস্থিত হয়। ঐ বেদনা সময়ে সময়ে তীরবেগে নীচের দিকে যায়। সময়ে সময়ে উহা পেশীসমূহের উপর দিয়া ছিন্নকরভাবে উপর-নীচে করিতে থাকে এবং ইহা মাথায় ঠান্ডা লাগিয়া দেখা দেয়, পা ভিজার জন্য দেখা দেয় না। একোনাইট’ ও ‘পালসেটিলা’র রোগ পা ভিজার জন্য উপস্থিত হয় এবং উহা উপরদিকে যায়, পা দিয়া প্রবেশ করিয়া উপরদিকে উঠিয়া মাথাকে আক্রমণ করে। বেলের রোগ মাথায় ঠান্ডা লাগার জন্য আসে এবং নীচের দিকে যায়। সময়ে সময়ে উহা মাথা, সময়ে সময়ে বুক, সময়ে সময়ে পাকস্থলী, সময়ে সময়ে উদরের কেন্দ্রস্থল, এবং সময়ে সময়ে জরায়ু ও ডিম্বকোষের কেন্দ্রস্থল আক্রমণ করে। “রাস টক্সেও ভিজিয়া যাওয়ার জন্য রোগ হয়, কিন্তু উহা যে অর্ধ ভিজে, তাহাকেই আক্রমণ করে। যদি তাহার পা ভিজিয়া যায়, তাহা হইলে তাহার পায়েই বাত হয়। ইহা একটি বিরাট পার্থক্য এবং তুমি যে ব্যবস্থাপত্রই করিবে,তাহাতে এই পার্থক্য মনে রাখিতে হইবে। হোমিওপ্যাথি একটি স্বতন্ত্রীকরণের শাস্ত্র, কেমন করিয়া রোগটি বিস্তার করিল, তাহা স্বতন্ত্রভাবে দেখিতে হইবে। কোন কোন রোগ শরীরের ডান পার্শ্বে এবং বাম পার্শ্বে বিস্তৃত হয়। কোন কোন রোগ শরীরের ঊর্ধ্ব অংশে আরম্ভ হয় এবং নিম্নদিকে নামে। এই ঔষধটিও ঐ প্রকার কাৰ্য্য করে। কোন কোন ঔষধে পায়ে বরফের ন্যায় শীতল বায়ু লাগিয়া শিরঃপীড়া উপস্থিত হয় (সাইলিশিয়া), কিন্তু বেলে ঠান্ডা লাগিলে শিরঃপীড়া অথবা নিম্নাঙ্গগুলির স্নায়ুশূল উৎপন্ন করে। এক্ষণে যে বেদনা বিশ্রামে উপস্থিত হয় তাহা বেলের পক্ষে ব্যতিক্রম। ইহাতে সাধারণ লক্ষণ ও বিশেষ লক্ষণগুলির মতে নিশ্চিতভাবে পার্থক্য নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে আবার একটি উদাহরণ পাইলে। “সাধারণ লক্ষণ” ও “বিশেষ লক্ষণ” না জানিয়া তোমরা কখনই যথার্থ ব্যবস্থাপত্র করিতে পারিবে না; ‘এস্থলে নিম্নাঙ্গগুলির অবস্থাই বিশেষ লক্ষণ। রোগী ও তাহার সাধারণ অবস্থা বিশ্রামেই উপশমিত হয়। রোগীর লক্ষণগুলি বিশ্রামে উপশমিত হয়। রোগীর নিজের সম্বন্ধে যে লক্ষণগুলি অনুমান করা যাইতে পারে, তাহাও বিশ্রামে উপশমিত হয়, কিন্তু পূর্ববর্ণিত নিম্নাঙ্গের বেদনা, ঐরূপ স্নায়বিক বেদনা সঞ্চালনে উপশমিত হয় এবং বিশ্রামে উপস্থিত হয়। ইহা দ্বারা এরূপ অর্থ করিও না যে, নিম্নাঙ্গের সব বেদনাই সঞ্চালনে উপশমিত হয়, কারণ বাতের বেদনা সৰ্ব্বসময়েই বিশ্রামে উপশমিত হয় এবং সঞ্চালনে বর্ধিত হয়। কেবল নিতম্বদেশ হইতে নিম্নাভিমুখে ফোলাবিহীন এই ছিন্নকর বেদনা বিশ্রামকালে উপস্থিত হয়। সকল ঔষধেরই খেয়ালিভাব আছে। আর ঐ বিচিত্র লক্ষণগুলি বাছিয়া লইতে পারিলেই আমরা নির্ভুল ঔষধ ব্যবস্থা করিতে পারি।
বেলের সমস্ত রোগের সহিত ঊর্ধ্বমুখী রক্তসঞ্চয়ের কথা ভুলিও না। “মস্তকে রক্তের, প্রধাবন, হাত-পা ঠান্ডা। পায়ের পাতা ঠান্ডা, হাত ঠান্ডা মস্তক গরম।
চক্ষুর প্রদাহিত অবস্থা। “জ্বলজ্বলে চক্ষু; চক্ষুতারকা বিস্তৃত, আরক্তিম মুখমন্ডল; প্রদাহিত অঙ্গে অত্যন্ত আরক্ততা।” চক্ষুর সমস্ত তন্তুর, চক্ষুর পাতার, চক্ষুগোলকের সমস্ত অংশের প্রদাহ, তৎসহ ভয়ানক বেদনা। উত্তাপ, আরক্ততা, জ্বালা। এই তিনটি প্রবল লক্ষণ এই ঔষধের সৰ্ব্বত্রই আছে, উহা চক্ষুরোগেও দেখা যায়। দপদপ করা, ফুলাভাব, অশ্রুপতন, তীব্র যন্ত্রণা, সকল যন্ত্রণারই সঞ্চালনে বৃদ্ধি, আলোকে বৃদ্ধি। অত্যন্ত প্রবল আলোকাতঙ্ক। “চক্ষুর সম্মুখে। আলোকের ক্ষণিক প্রভা এবং দপদপানি দেখে।” পড়িবার সময় লাইনগুলি বাঁকা দেখায়। “দৃষ্টির অপরিচ্ছন্নতা অথবা প্রকৃত দৃষ্টিলোপ।” আক্রান্ত অংশে প্রবল রক্তসঞ্চয় ও পূর্ণতা। “চক্ষুর আলোকাচের সন্ন্যাসরোগ। অর্ধ-উন্মীলিত, বহিনির্গত, একদৃষ্টি বিশিষ্ট চক্ষু।” তোমরা দেখিবে যে, শিশু যখন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়িয়া থাকে, তখন তাহার চক্ষু অর্ধ-উন্মীলিত থাকে, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, মুখমন্ডল আরক্ত এবং অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে, সে এপাশে-ওপাশে মাথা চালিতে থাকে, যদি এইরূপ অবস্থা কয়েকদিন চলিতে থাকে, তাহা হইলে মুখমন্ডল বিবর্ণ হইয়া যায়, ঘাড় পশ্চাদ্দিকে বাঁকিয়া যায়। এই সকল রক্তসঞ্চয়জনিত রোগে, সে অর্ধ-উন্মীলিত চক্ষে পড়িয়া থাকিলেও চক্ষে পলক পড়ে না। চক্ষুকোটরের স্নায়ুশূল, বিস্তৃত চক্ষুতারকার সহিত চক্ষুর বহির্নির্গমন। চক্ষুপেশী ও আলোকাচের প্রদাহ। চক্ষু রক্তসঞ্চয়বিশিষ্ট, আরক্ত। চক্ষুর আর একটি লক্ষণ টেরা দৃষ্টি। যে-সকল রোগ ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং যাহাতে অস্ত্রচিকিৎসকের প্রয়োজন হয়, ইহা সেরূপ নহে। কিন্তু ইহা মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়হেতু উপস্থিত হয়, এই রক্তসঞ্চয় এবং এপাশে-ওপাশে মাথা চালা ও বিস্তৃত চক্ষুতারকার সহিত আরক্ত মুখমন্ডল, করোটি ধমনীদ্বয়ের স্পন্দন এবং তীব্র উত্তাপ বৰ্তমান থাকে। দুই একদিন পরে চক্ষু ভিতর দিকে আকৃষ্ট হয় এবং শিশু টেরা দৃষ্টিযুক্ত হইয়া পড়ে। ইহা বেলের একটি অতিরিক্ত লক্ষণ। কখন কখন ভীষণ রক্তসঞ্চয় চলিয়া গেলেও, টেরা দৃষ্টি থাকিয়া যায় এবং ঐরূপ ক্ষেত্রে, অনেক সময় বেলই উপযোগী হয়। এইরূপ রক্তসঞ্চালনজনিত অবস্থা হইতে আগত রোগ, ঔষধে আরোগ্য হওয়া উচিত। ঐরূপ রোগীকে কখনও অস্ত্রচিকিৎসকের নিকট পাঠান উচিত নয়। যদিও উহা কিছুকাল, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত থাকে, তথাপি উহা সুনিৰ্বাচিত ঔষধে আরোগ্য হইবে, আর যাহাদের রোগ ক্রমশঃ উপস্থিত হয় অথবা যাহারা ঐরূপ রোগ লইয়াই জন্মে, তাহাদের ঔষধে উপকার হইবে না। কেবলমাত্র যেগুলি আক্ষেপিক অথবা মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ের সহিত সম্বন্ধযুক্ত হইয়া উপস্থিত হয়, সেইগুলিই আরোগ্য হইবে। যকৃতে রক্তসঞ্চয়ের সহিত এবং দ্বাদশাঙ্গুলান্ত্রের সর্দিজ প্রদাহে চক্ষে পীতাভা থাকে।
যে কর্ণ-প্রদাহ পুঁজোৎপত্তিতে পরিণত হয়, তাহাতে বেল কদাচিৎ আবশ্যক হয়। ঐজন্য আমাদিগকে গভীরক্রিয় ঔষধগুলি দেখিতে হইবে। আমরা যন্ত্রণা, স্পর্শকাতরতা, অত্যনুভূতি প্রভৃতি প্রাদাহিক অবস্থার সব লক্ষণই পাইতে পারি, কিন্তু বেল-জ্ঞাপক রোগ কদাচিৎ পুঁজোৎপত্তির দিকে যাইবে।
এইবার আমরা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, নাসিকা, মুখ, গলা, কণ্ঠনলী, বক্ষদেশ, ইউষ্টেচিয়ান নলের মধ্য দিয়া কর্ণ পর্যন্ত বিস্তৃত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে উপনীত হইলাম। এখানে বেলের একটি বিশেষ লক্ষণ আছে, যাহা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বর্তমান থাকে। অত্যন্ত শুষ্কতা, শুষ্কতার অনুভূতি। নাসিকায়, মুখে, জিহ্বায়, গলায়, বুকে শুষ্কতা এবং উহার প্রমাণস্বরূপ শুষ্ক কাশি এবং আক্ষেপিক অবস্থা। এইটি এরূপ সাধারণ লক্ষণ যে, নাসিকা-লক্ষণ, সর্দি-লক্ষণ, গল-লক্ষণ, কাশির সহিত উহা প্রবল আকার ধারণ করে এবং সাধারণতঃ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর শুষ্কতা দেখা যায়। ফসফরাসেও ঐরূপ হয়। ফসফরাসে’ গলক্ষত থাকিলে তাহার সহিত মুখ, জিহ্বা ও বায়ুপথের শুষ্কতা থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসপথ সম্বন্ধে ইহাই লক্ষণ। তারপর ইহাতে অত্যন্ত হাঁচির সহিত সর্দি থাকে। “নাকের মধ্যে কাঁটা বেধার ন্যায় এবং জ্বালা।” নাকে উত্তাপের অনুভূতি। সাধারণভাবে মুখমন্ডলের অত্যন্ত আরক্ততা এবং সর্দির সহিত অত্যন্ত উত্তাপ; মাথা গরম হাত পা ঠান্ডা; সুস্পষ্ট শিরঃপীড়া বর্তমান থাকে, কারণ শুষ্কতা, বর্তমান থাকে। এই শুষ্কতাই সময়ে সময়ে বেদনার সৃষ্টি করে, কারণ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্বাভাবিক স্রাব শুষ্ক হইয়া যায়। যখনই স্রাব বন্ধ হইয়া যায়, তখনই জ্বর দেখা দেয় এবং বেলে উহা সুস্পষ্ট। স্রাব বন্ধ হইয়া জ্বর হইলে তাহার সহিত উত্তাপ, আরক্ততা, এবং জ্বালা, লাল মুখমন্ডল, মস্তকে ও মুখে উত্তাপ এবং হস্তপদাদির শীতলতা থাকে। পাঠ্যপুস্তকে বলা হয় “অবরুদ্ধ সর্দিস্রাবের সহিত উন্মদকর শিরঃপীড়া।”
আর, এইরূপ আবহাওয়ায়, শীতকালে, ঠান্ডা আবহাওয়ায়, এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনে, অধিকাংশ লোকের নাক, চক্ষু, বায়ুপথ হইতে অল্পাধিক শ্লেষ্মাস্রাব হয়। উহা হইলে তাহারা ভাল থাকে। কিন্তু উহা হঠাৎ থামিয়া গেলে, সমস্ত অঙ্গ শুষ্ক হইয়া যায় এবং তারপর দেখ কি হয়। একপ্রকার ভীতিপ্রদ, উন্মাদকর, দপদপকর শিরঃপীড়া দেখা দেয়। ইহা যে-সকল পুরাতন সর্দিতে প্রচুর ঘন হলদে স্রাব নির্গত হয়, তাহার পক্ষে তেমন উপযোগী নহে। কিন্তু বেল সাধারণ ভাবে প্রচুর সাদা শ্লেষ্মাস্রাবে উপযোগী । যেখানে সৰ্দিটি ঘন ও হলদে ছিল এবং তার ঠান্ডা লাগিয়া হঠাৎ অবরুদ্ধ হইয়া আবার সর্দিস্রাব দেখা দিল, সেখানে বেল উপযোগী নহে। সৰ্ব্বদাই মনে রাখিও যে, তুমি যখন অবরুদ্ধ সর্দির জন্য কোন ঔষধ নির্বাচন কর তখন যেন ঔষধটি পূর্বের চাপা পড়া সর্দির লক্ষণগুলির অনুরূপ হয়। সুতরাং ঘন হলদে-সবুজাভ শ্লেম্মার জন্য ঔষধ হইবে ‘মার্ক, সালফ অথবা পালস’ এবং তাহা হইলে তুমি এমন ঔষধের অধিকারে আসিলে যাহা দ্বারা স্রাবটি পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং সঙ্গে সঙ্গে তন্তুগুলির উপর আরোগ্যকর ক্রিয়া দেখা দিবে এবং রোগীও যথেষ্ট সুস্থ অবস্থায় আসিবে।
মুখে প্রবল বেদনা। মুখমন্ডলে বিদীর্ণকর, ছিন্নকর বেদনা, মুখমন্ডলে দপদপকর বেদনা। মুখমন্ডলের বেদনা ডান পার্শ্বেই অধিক, ঝাকি লাগিলেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, যথেষ্ট উত্তাপ থাকে, করোটি ধমনীদ্বয় দপদপ করে, মস্তক উত্তপ্ত; ঠান্ডা বাতাসে উন্মুক্ত থাকায় এবং ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে গাড়ী-ঘোড়া চড়ায় উপস্থিত হয়। বেল পক্ষাঘাতিক অবস্থা আরোগ্য করিয়াছে, কিন্তু ঠান্ডা হাওয়ায় গাড়ী-ঘোড়া চড়ায় মুখমন্ডলের পক্ষাঘাতের পক্ষে সাধারণতঃ কষ্টিকাম’ই ঔষধ। মুখমন্ডলের পেশীসমূহের আক্ষেপ। মুখমন্ডলের অদ্ভুত পেশীসঙ্কোচন। মুখমন্ডলের ইরিসিপ্লাস উজ্জ্বল লালবর্ণ, উহার সহিত জ্বর থাকিলে ক্রমশঃ বেগুনিবর্ণ হইতে থাকে স্নায়বিক বেদনায় সৰ্ব্বদাই ভীষণ যন্ত্রণার সহিত অল্পাধিক রক্তসঞ্চয় থাকে এবং মুখমন্ডল উজ্জ্বল লাল হয়। অন্তরুৎসেক্য অবস্থা উপস্থিত হইলে, জ্বর আরও বাড়িয়া উঠে এবং রক্ত আরও বিষাক্ত হইয়া উঠায় মুখমন্ডল কৃষ্ণাভ হইতে চিত্র-বিচিত্র হইয়া পড়ে এবং তোমরাও ব্যাপ্টিশিয়া’র অনুরূপ অবস্থা দেখিতে পাও; এরূপ অবস্থা বেল অপেক্ষা ব্যাপ্টিশিয়া’তে বেশী স্পষ্ট থাকে। “লাল মুখমন্ডলের সহিত জ্বালাকর উত্তাপ।” দাঁতগুলি যন্ত্রণাপূর্ণ হয়, একই প্রকার রক্তসঞ্চয় ও বেদনা দেখা দেয়। দাঁতগুলি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
ইহার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী সম্বন্ধে সাধারণতঃ যেরূপ দেখা যায়, জিহ্বাটিও তদ্রুপ শুষ্ক থাকে। শুষ্ক মুখ, শুষ্ক জিহ্বা, স্ফীত জিহ্বা, বিনির্গত জিহ্বা, শুষ্ক ও শক্ত, চামড়ার মত মনে হয়। জিহ্বায় অনুভূতি থাকে না, স্বাদ লোপ পায়, জিহ্বার শক্তি লোপ পায়, বাক্য লোপ পায়—এগুলি সবই বেলের লক্ষণ। জিহ্বার পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা, জিহ্বা বাহির করিলে উহার কম্পন।” জিহ্বা অত্যন্ত দুর্বলভাবে বিনির্গত হয়। খুব অল্প দিনের মধ্যেই বেলের জ্বররোগী অত্যন্ত শীর্ণ হইয়া পড়ে, অত্যন্ত অবসন্ন হয় এবং পক্ষাঘাতিকবৎ দুর্বল হইয়া পড়ে। যখন সে হাত উচু করে এবং উহা এক মুহুৰ্ত্ত ঐভাবে রাখে, তখন হাতটি একই ভাবে কাঁপিতে থাকে। জিহ্বায় যাহা দেখা যায়, উহা সাধারণ অবস্থার অংশ মাত্র। স্নায়ুকেন্দ্রে রক্তসঞ্চয়জনিত কম্পন। জিহ্বাকন্টকগুলি খাড়া হইয়া থাকে, এবং জিহ্বা উজ্জ্বল লালবর্ণ হয়। আরক্ত জ্বরে উজ্জ্বল লালবর্ণ জিহ্বা। মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয়, উজ্জ্বল লাল জিহ্বা, তৎসহ উন্নত জিহ্বাকন্টক। এরাম ট্রিফাইলামের বিষয় বলিবার সময় আমি বলিয়াছি যে, উহাকে “স্ট্রবেরী জিহ্বা” বলা হয়। বেলেও তদ্রুপ। জিহ্বা স্ট্রবেরীর ন্যায় লাল দেখায় এবং জিহ্বাকন্টকগুলি বীজের মত লাগিয়া থাকে। “জিহ্বার মধ্যভাগে লাল দাগ, উহা ডগার দিকে আরও বিস্তৃত ও প্রশস্ত।” লাল পার্শ্ব ও সাদা মধ্যভাগ বিশিষ্ট জিহ্বা । মস্তিষ্ক রোগের সহিত সাদা জিহ্বা অনেক সময়েই দেখা যায়। মস্তিষ্করোগে জিহ্বা ঘন ঘন দুধের ন্যায় সাদা, যেন জিহ্বার উপর কোমল লোম রহিয়াছে। “তৃষ্ণার সহিত মুখের শুষ্কতা।” “তৃষ্ণাহীনতার সহিত মুখের শুষ্কতা।” আমরা যখন পাকস্থলীর লক্ষণে আসিব, আমরা দেখিতে পাইব যে, বেল তৃষ্ণায় পরিপূর্ণ। কখন কখন বেল প্রচুর পরিমাণ জল চাহে, কখন কখন ‘আর্সের ন্যায় মুখ ভিজাইবার মত জল চাহে। আর্সে’র ন্যায় সামান্য পরিমাণ পুনঃ পুনঃ জল চাওয়া বেলের একটি সাধারণ লক্ষণ। জল শুষ্ক জিহ্বাটি মুখ ও গলা ভিজাইবার পক্ষে যথেষ্ট হইলেই হইল। নাসিকার পশ্চাদরন্ধের শুষ্কতা এবং ঐ পশ্চাদর হইতে যে শ্লেষ্মা নির্গত হয়, তাহা শক্ত, দড়ির ন্যায়, এবং অতি অল্প, আর উহা সাদা, অথবা যদি সাদা হইতে আদৌ পরিবর্তিত হয়, তবে উহা রক্তময়। আমি এ পর্যন্ত এই ঔষধটির রক্তাক্ত স্রাব এবং রক্তস্রাব সম্বন্ধে কিছু বলি নাই। এই প্রসঙ্গ শেষ করিবার পূর্বে আমরা দেখিব যে, ইহা একটি রক্তস্রাবজনক ঔষধ, আর অঙ্গাদি হইতে সহজেই রক্তস্রাব হয়। চক্ষু হইতে রক্তস্রাব, নাক হইতে রক্তস্রাব, গলা হইতে রক্তস্রাব, কণ্ঠনলী হইতে রক্তস্রাব, বক্ষ হইতে রক্তস্রাব, মূত্রাশয় হইতে রক্তস্রাব, জরায়ু হইতে রক্তস্রাব, ক্ষত হইতে রক্তস্রাব হয়। গলায় আলপিনের মাথা হইতে বড় নয়, এরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিষ্কার ক্ষত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তালির ন্যায় উপক্ষত হইতে রক্তপাত হয়। গলায় উৎসঙ্গবৎ প্রদাহ, কিন্তু গলার অধিকাংশ রোগেই গলা শুষ্ক এবং লালবর্ণ থাকে। অত্যন্ত ফুলা। অত্যন্ত অনুভূতিযুক্ত, অত্যন্ত স্ফীতি, কোন কিছু গিলিতে পারে না। গলক্ষতের সহিত এবং গলার প্রদাহের সহিত চারিদিকের অঙ্গগুলির অত্যনুভূতি থাকার জন্য গিলিতে অত্যন্ত কষ্ট হয়। ঠান্ডা লাগার ফলে আরক্ত মুখ, প্রবল উত্তাপ, স্পন্দনযুক্ত করোটি ধমনী ও প্রবল জ্বরের সহিত টনসিলদ্বয়ের প্রবল প্রদাহ ও স্ফীতি। গলগহ্বর ও গলনলী ঘোর লাল। কোমল তালু ও টনসিলদ্বয় স্ফীত। গলাধঃকরণ, বিশেষতঃ তরল পদার্থ গেলা কষ্টকর। কথা ভারি হইয়া পড়ে। “গলায় একটি ডেলা থাকার অনুভূতি।” উহা টনসিল স্ফীতির জন্য অনুভূত হয়। অবিরত গলায় ঘেঁকারি দেওয়া ও হক হক করা। গলনলী ও কণ্ঠনলী প্রায়ই আক্ষেপ অবস্থায় থাকে, উহা কতকটা শুষ্কতার জন্য, কতকটা ঐ অঙ্গের স্নায়ুসমূহের অত্যন্ত অনুভূতির জন্য। নিদ্রা যাইবার সময় গলা চাপিয়া ধরে, কাশিবার সময় গলা চাপিয়া ধরে। গলনলীর আক্ষেপ। “গলার আক্ষেপিক সঙ্কোচন।” সঙ্কোচন আক্ষেপিক প্রকৃতির। কণ্ঠনলীর, গলকোষ ও গলার সঙ্কোচন। বেলে স্থানে স্থানে সঙ্কোচনবৎ বেদনা আছে, বেদনাটি হস্তাঙ্গুলি দ্বারা চাপিয়া ধরার মত। জরায়ুতে চাপিয়া ধরার ন্যায় বোধ হয়, উহা একপ্রকার আক্ষেপ। যকৃতেও ঐরূপ বোধ হয়, মস্তিষ্কেও ঐরূপ বোধ হয়, গলাতেও ঐরূপ বোধ হয়। ব্যথিত অঙ্গে তীব্র বেদনার সহিত পেশীগুলি সঙ্কুচিত ও উৎক্ষিপ্ত হইয়া উঠে। ইহা বেলের একটি প্রবল লক্ষণ। রোগীরা সময়ে সময়ে তাহাদের অনুভূতির বর্ণনায় অক্ষম হইয়া বলে, “ডাক্তার, আমার মনে হয়, ঐ স্থানটি মুঠো করিয়া ধরিয়াছে।”
গলবেদনায় এই সঙ্কোচন উপস্থিত হয়, ঠিক কোন তরল বা শক্ত খাদ্য গিলিবার সময়, এবং ঐরূপ হওয়ার ফলে খাদ্য ও পানীয়টি নাকের মধ্যে উঠিয়া আসে এবং সময়ে সময়ে নাক দিয়া নির্গত হইয়া পড়ে। কতকগুলি ঔষধে পক্ষাঘাতিক অবস্থার জন্য এরূপ ঘটে, কারণ গলাধঃকরণের পেশীগুলি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়, তাহারা খাদ্যকে গলনলী দিয়া নামাইয়া দেওয়ায় স্বাভাবিক সঙ্কোচন কার্যের অনুকূল হয় না এবং এই ভাবে খাদ্য জোর করিয়া নাকে উঠিয়া আসে। এবং শ্বাসরোধ ঘটায়। বেলের তরুণ ক্ষেত্রে ইহা প্রাদাহিক অবস্থা এবং আক্ষেপ লক্ষণ দ্বারাই বেল ল্যাকেসিস’ হইতে স্বতন্ত্র। ল্যাকেসিসে’র আক্ষেপ ডিপথেরিয়ার পরবর্তী পক্ষাঘাতিক অবস্থায় উপস্থিত হয়। এলুমিনাতে’ও অন্ননলীর আক্ষেপ আছে, কিন্তু উহাও বেল হইতে স্বতন্ত্র । এই দুইটি ঔষধে আক্ষেপটি ধীরে আসে, কিন্তু বেলে হঠাৎ দেখা দেয়। জ্বর রোগের প্রথম ভাগটিই উত্তেজনার সময়। জ্বরের শেষ ভাগটি উহার শিথিলতার সময়। টনসিলের উপর দ্রুত উৎপন্ন তালির ন্যায় উপক্ষত। আমি যেরূপ গলক্ষতের বর্ণনা করিয়াছি, তাহার সহিত তোমরা প্রায় সবসময়েই চোয়ালের নিম্নবর্তী ও ঘাড়ের চারিদিকে গ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি, প্রদাহ এবং ক্ষততা, দেখিতে পাইবে। বেলেডোনার গলক্ষতের সঙ্গে স্পর্শসহিষ্ণুতা একটি স্বাভাবিক আনুসাঙ্গিক লক্ষণ।
বেলের সকল প্রকার জ্বরের মধ্যেই একটি অদ্ভুত লক্ষণ এই যে, রোগীর লেবুর ও লেবুর রসের প্রতি এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা থাকে। সময়ে সময়ে লেমনেড ভাল লাগে। তরুণ রোগে যখন তাহারা লেবুর আকাঙ্ক্ষা করে, তখন উহা তাহাদের পক্ষে ভাল। তাহারা প্রায়ই নানারূপ খাদ্যের আকাঙ্ক্ষা করে। রোগী যদি তরুণ রোগে একটু বিয়ার মদ্য চায়, তাহা হইলে উহা না দেওয়ার মত অতটা সংযত অথবা অতটা বিধিনিষেধের পক্ষপাতী হওয়ার প্রয়োজন নাই। “জলের তৃষ্ণা বদলাইয়া বিয়ারের তৃষ্ণা হয়। যে-সকল জিনিষ সুস্থ অবস্থাতেও অনুমোদন করা চলে না, তাহাই পান করিতে চায়। “ঠান্ডা জলের অত্যন্ত আকাঙ্ক্ষা।”
পাকস্থলী এবং অন্ত্রে আমরা যে-সকল প্রাদাহিক অবস্থা পাই, তাহাদিগকে একই শ্রেণীভুক্ত করা যাইতে পারে। বেদনা, জ্বালা, কষ্ট, স্ফীতি, সামান্য মাত্র ঝাঁকি লাগায়, সামান্য মাত্র সঞ্চালনে, সামান্য মাত্র চাপে স্পর্শকাতরতা। ঝঁকি লাগায় অত্যনুভূতি, সঞ্চালনে অত্যনুভূতি। পাকস্থলীর বেদনা মেরুদন্ডের ভিতর দিয়া বিস্তৃত হয়।” ঠান্ডা লাগার ফলে পাকস্থলীর প্রদাহ, তৎসহ প্রবল উত্তাপ এবং তীব্র জ্বালা। ইহাতে প্রবল শূলব্যথা আছে, শিশুদিগের তীব্র খালধরা বেদনা। মুখমন্ডল লাল ও উত্তপ্ত, যন্ত্রণা কেবলমাত্র সম্মুখদিকে হেঁট হইলে উপশমিত হয় ।
পশ্চাদ্দিকে বাঁকিলে উপশমিত হয়।–এরূপ ব্যতিক্রমের উদাহরণও পাওয়া যায়, তখন উহা ডায়স্কোরিয়ার অনুরূপ। মাতা দেখেন যে, শিশুকে হাতে করিয়া ধরিলে, তাহার বেদনার উপশম হয়। ইহা কিলোসিন্থে’র ন্যায়, কিন্তু কলোসিন্থে’ অধিক জ্বর থাকে না, অধিক তৃষ্ণা থাকে না, বেদনাটি থাকে বিশেষ একটি স্থানে, উদরের তীব্র বেদনা দ্বিভাজ হইয়া শুইলে উপশম হয়, কোন কঠিন জিনিষ পেটে চাপিয়া অবনত হইলে উপশম হয়। ইহাই ‘কলোসিন্থে’র লক্ষ্য। এইরূপ লক্ষণসমষ্টি পাওয়া গেলে ঐ স্থলে কলোসিন্থ ব্যবস্থা করা চলিতে পারে।
“জড়িতান্ত্র ও অন্ধান্ত্রের সংযোগ স্থলে তীব্র বেদনা, সামান্যমাত্র স্পর্শও সহ্য হয় না, এমনকি শয্যাবস্ত্রের স্পর্শও সহ্য হয় না।” এপেন্ডিসাইটিস রোগে যে বেল ঔষধ হয়, তাহারও উদাহরণ আছে।
বেলেডোনায় আমাশয় রোগ আছে। অল্প অল্প তরল মলযুক্ত উদরাময়, সুস্পষ্ট কোঁথানি, কিন্তু তাহার সহিত মুখমন্ডল রক্তাভ, চকচকে থাকে। মুখমন্ডলে ও মাথায় উত্তাপ, আরক্ততা এবং জ্বালা। উত্তপ্ত মস্তিষ্কের সহিত হাত-পায়ের শীতলতা। অত্যন্ত কোঁথানি থাকিলেও সামান্যমাত্র মলত্যাগ হয়। “অর্শের সহিত মলদ্বার-সঙ্কোচক পেশীর আক্ষেপিক সঙ্কোচন।” অর্শবলির অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক অত্যন্ত লাল, অত্যন্ত স্ফীত এবং প্রদাহিত। প্রদাহ অত্যধিক, স্পর্শ করা যায় না, পা দুইটি অতিশয় ফাঁক করিয়া শুইয়া থাকিতে হয়, অর্শবলি যন্ত্রণাদায়ক এবং উহাতে অত্যন্ত জ্বালা থাকে।
কোন ঔষধেই মূত্রস্থলীতে এবং মূত্রপথে বেলেডোনা অপেক্ষা অধিকতর উপদাহ নাই। অবিরত মূত্রত্যাগপ্রবৃত্তি। মূত্র গড়াইয়া পড়ে, উহা মূত্রনালীর সমগ্র দৈর্ঘ্য জুড়িয়া জ্বালার সৃষ্টি করে। সমগ্র মূত্রযন্ত্রটি উপদাহ অবস্থায় থাকে। বেল মূত্রস্থলীর প্রদাহ আরোগ্য করিয়াছে। অন্যান্য অঙ্গ সম্বন্ধে বেল নির্দিষ্ট হইলে যেরূপ দেখিতে পাই, এক্ষেত্রেও আমরা সেইরূপ উপদাহ ও রক্তসঞ্চয়ের সহিত চাপে স্পর্শকাতরতা, ঝাঁকি লাগার অত্যনুভূতি দেখিতে পাই। মনের উত্তেজিত অবস্থা, সমগ্র স্নায়ুমন্ডলের উত্তেজিত অবস্থা। “মূত্রস্থলীতে কুন্থন; মূত্রত্যাগের পর বসিয়া থাকে এবং কোঁথ পাড়ে। মূত্র কম হইয়া যায়, রক্তাক্ত, সময়ে সময়ে তাজা রক্ত কিম্বা ছোট ছোট রক্তের চাপ। মূত্রস্থলীতে যথেষ্ট রক্ত ছোট ছোট চাপে পরিণত হইয়া বাহির হইয়া আসে।” মনে হয়, যেন মূত্রে হঁটের গুড়া অথবা ডোরা ডোরা পদার্থ মিশান আছে; অত্যন্ত অম্লধৰ্ম্মী মূত্র। মূত্রের আক্ষেপিক অবরোধ অথবা অবাধে মূত্রপাত। মস্তিষ্করোগে ফোঁটা ফোঁটা মূত্র গড়ান। নিদ্রিত অবস্থায় মূত্র ফোঁটা ফোঁটা করিয়া গড়াইয়া পড়ে। স্বপ্ন দেখে, যেন মূত্রত্যাগ করিতেছে এবং ঐ সময় মূত্রত্যাগ করিয়া ফেলে। কোন সঙ্ঘাতের পর, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয় হেতু। অথবা প্রসবের পর মূত্ররোধ। মূত্রস্থলী পূর্ণ থাকে, অত্যন্ত যন্ত্রণা, অত্যন্ত স্পর্শানুভূতি। দাঁড়াইয়া থাকিলে বা হাঁটিরার সময় অসাড়ে মূত্রপাত হয়, কিম্বা কেবলমাত্র সামান্য নড়াচড়ার ফলে মূত্র বাহির হইয়া পড়ে। মূত্রবেগ ভীষণ আকস্মিক। মূত্রস্থলীতে সামান্যমাত্র মূত্র জমা হইলেই, তাহার আকস্মিক যন্ত্রণাদায়ক মূত্রবেগ উপস্থিত হয়। অধিকাংশ উদ্ৰবই মূত্রস্থলীর গ্রীবায় থাকে এবং উহা আক্ষেপিক প্রকৃতির। তাহার মনে হয়, যেন আপেক্ষিকভাবে টিপিয়া ধরিয়াছে। সঙ্ঘাতের ফলে, ঠান্ডা লাগায়, উদ্বেগ হইতে অথবা মানসিক গোলযোগের ফলে, মূত্রপ্রবৃত্তির সময় এবং অন্য সময়েও মূত্রস্থলীর গ্রীবায় আক্ষেপ দেখা দেয়। ডালকামারা এবং কষ্টিকামে’র ন্যায়, ঠান্ডায়, ঠান্ডা লাগিলে অথবা অত্যন্ত ঠান্ডা বাতাসে স্ত্রীলোকদের মূত্রাবরোধ হয়। নিদ্রায় চমকিয়া উঠিয়া মূত্রে বিছানা ভিজাইয়া ফেলেন। ভীতিজনক স্বপ্নে, চমকিয়া উঠিয়া তিনি মূত্রত্যাগ করিয়া ফেলেন। ঘুমাইতে গেলে, অকস্মাৎ সর্বাঙ্গে বিদ্যুতাঘাতের ন্যায় অনুভূত হয় এবং তিনি মূত্রত্যাগ করিয়া ফেলেন। বেলেডোনা এইরূপে অদ্ভুত অদ্ভুত ছোট ছোট বিশেষত্বে পূর্ণ, কিন্তু উহাতে বেলেডোনা ধাতুর আক্ষেপিক অবস্থা এবং সৰ্বাঙ্গীণ উত্তেজনাই প্রকাশ পায়। আমরা এইরূপ অদ্ভুত অদ্ভুত লক্ষণ ও অবস্থা, এইরূপ সর্বাঙ্গের উত্তেজনা ভাব দেখিতে পাই, বিশেষভাবে সেই সব স্থানে, যেখানে দ্বারসঙ্কোচক পেশী আছে, যেখানে গোলাকৃতি তন্তুগুলি মূত্রস্থলীর গ্রীবাকে আঁকড়াইয়া আছে, যোনির মুখ আঁকড়াইয়া আছে, নলের আকৃতি যন্ত্রগুলির সঙ্কোচন। জরায়ুর সঙ্কোচন। এস্থলে আমরা মূত্রস্থলীর গ্রীবায় উহার একটি সুস্পষ্ট বিশেষ প্রকৃতি দেখিতে পাই। ইহাতে পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলোকগণের রোগই বেশীর ভাগ দেখা যায়, অর্থাৎ স্ত্রীলোকদিগের জননযন্ত্র প্রসব ও স্তনের অবস্থা ও লক্ষণসমূহের মধ্যে এবং গর্ভধারণকালে এরূপ অনেক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, তাহাতে বেলেডোনার প্রয়োজন হয়। স্নায়বিক প্রকৃতি, অত্যনুভূতিযুক্ত স্ত্রীলোকগণের পক্ষে এবং উপদাহবিশিষ্ট তন্তুযুক্ত স্ত্রীলোকগণের পক্ষে ইহা বাস্তবিকই একটি মূল্যবান ঔষধ।
পুং-জননেন্দ্রিয় সম্বন্ধে এই ঔষধে আমরা বিশেষ কোন লক্ষণ পাই না, কিন্তু স্ত্রী-জননেন্দ্রিয় সম্বন্ধে অনেকগুলি লক্ষণ আছে এবং কতকগুলি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তাঁহাদিগের অত্যন্ত যাতনার এবং অত্যন্ত উত্তেজনার লক্ষণ আছে। জননেন্দ্রিয় অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ, জরায়ু ও ডিম্বকোষ রক্তসঞ্চয়যুক্ত, স্পর্শকাতর, ঝাঁকি লাগিলে অত্যন্ত অনুভূতি। জরায়ুর উপদাহে উহা বৰ্দ্ধিত, বেদনান্বিত এবং স্পর্শকাতর হইয়া উঠে। সময়ে সময়ে প্রসবের পর উহা ঐরূপ অবস্থায় থাকে। অথবা প্রত্যেকবার ঋতুস্রাবের পর উহা একটু একটু করিয়া বড় হয় এবং ঐরূপই থাকিয়া যায়। উহা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া যায় না, কিন্তু রক্তসঞ্চয়বিশিষ্ট থাকিয়া যায় এবং স্ত্রীলোকটি দুই ঋতুর মধ্যবর্তী সময়ে অনুভব করেন যেন তাহার ঋতুস্রাব হইতেছে। লোনবৎ অনুভূতি, নাড়া পাইলে অত্যনুভূতি। ঋতুস্রাব প্রচুর ও চাপ চাপ। কিন্তু এস্থলে জরায়ু হইতে রক্তস্রাবই সৰ্ব্বাপেক্ষা আশ্চৰ্য্য লক্ষণ। রক্তসঞ্চয়হেতু আক্ষেপের সহিত, অত্যন্ত অনুভূতির সহিত জরায়ু হইতে রক্তস্রাব। জরায়ু প্রবলভাবে সঙ্কুচিত হয় এবং সেইজন্য আক্ষেপিক সঙ্কোচন দেখা যায়। অত্যন্ত ক্ষতবৎ বেদনার সহিত প্রচুর উজ্জ্বল লাল রক্তস্রাব ও মধ্যে মধ্যে চাপ থাকাই বেলেডোনার রক্তস্রাবের চরিত্রগত লক্ষণ। এ বিষয়ে উহা স্যাবাইন’র সদৃশ। দুই ঔষধেই এই লক্ষণটি বিশেষভাবে বর্তমান আছে। জরায়ুতে রক্তের চাপ জমে, তারপর প্রসববেদনার ন্যায় সঙ্কোচন হয় এবং চাপ নির্গত হইয়া যায়, তৎপর কিছুক্ষণ যাবৎ তরল রক্তস্রাব হয়। আবার রক্তে চাপ বাধে এবং রক্তস্রাবের সহিত রোগিণী অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়েন। তারপর কোনরূপ উত্তেজনার কারণ ব্যতীতই এরূপ ঘটে। গর্ভস্রাবের সংস্রবও এরূপ রক্তস্রাব হয়। অনুভূতিপ্রবণতা লক্ষণ বর্তমান থাকিলে, গর্ভস্রাবের সংস্রবে অথবা অন্য যে-কোন কারণে রক্তস্রাব হইলে বেলেডোনা উহা নিবারণ করিবার একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। স্পর্শে অত্যনুভূতি, ঝুাঁকি লাগিলে অত্যনুভূতি, রোগিণী নিজেই এক উত্তেজনাপূর্ণ অত্যনুভূতির অবস্থায় থাকেন, উহা জাগ্রত অবস্থায় ও নিদ্রার অবস্থায় প্রকাশ পায়। সময়ে সময়ে জ্বর থাকে। জ্বর অবস্থার সহিত রক্তস্রাব, কিন্তু সাধারণতঃ রক্তস্রাবই জ্বরের স্থান অধিকার করে এবং রক্তস্রাব দেখা দিলে, জ্বরের উপশম হয়।
ইহা প্রসবের পরবর্তী রক্তস্রাবেরও একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। রক্ত গরম বোধ হয়। বালিঘড়ির (যাহার বালি একঘন্টা ধরিয়া থাকিয়া থাকিয়া ঝরিয়া পড়ে) ন্যায় সঙ্কোচনের সহিত রক্তস্রাব। বালিঘড়ির ন্যায় মাঝে মাঝে সঙ্কোচনের জন্য জরায়ু ফুল মধ্যস্থানে চাপিয়া যাওয়া এবং স্থানে স্থানে ছিঁড়িয়া আলগা হইয়া যাওয়া অসাধারণ ব্যাপার নহে। তখন তলা হইতে রক্তস্রাব হইতে থাকে, প্রচুর রক্তপ্রবাহ। বেল এই বালিঘড়ির (Hour Glass) ন্যায় সঙ্কোচন আরোগ্য করে।
ইহাতে অত্যন্ত ভীষণপ্রকৃতির বাধক বেদনা আছে। বেদনাটি প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা। আক্ষেপিক প্রসববেদনা। গোলাকার তন্তুসমূহের সঙ্কোচনই বেলের সাধারণ প্রকৃতি। সমস্ত তন্তুগুলি সমভাবে যোগ দিলে, এবং সমভাবে তাহাদের কাৰ্য্য করিলে, আধেয় ক্রমশঃ উপরকার চাপ সহ্য করার মত অবস্থায় আসে। বেলে এই চাপ একগাছি দড়ির মত জরায়ুদেহের চারিদিকে বিস্তৃত থাকে এবং উহাকে কষিতে থাকে, সেইজন্য উহা প্রসবের বাধা সৃষ্টি করে। বেলের বাধক বেদনার প্রকৃতি এইরূপ। গোলাকার তন্তুসমূহের প্রবল সঙ্কোচন এবং এইজন্যই কোন স্ত্রীলোক উহার বর্ণনা করিতে সাধারণতঃ বলিবেন যে, জরায়ুটি যেন একগাছি দড়ি দিয়া কষিয়া ধরিতেছে—এরূপ অনুভূতি। যেন উহা আঁটিয়া কষা হইতেছে। বেলে যথেষ্ট আক্ষেপিক অবস্থা, রক্তস্রাবপ্রবণ অবস্থা উপদাহ অবস্থা, বেদনা এবং বেদনাযুক্ত অংশে যন্ত্রণার অত্যনুভূতি আছে এবং স্ত্রীলোকটি নিজে অত্যন্ত সঙ্কুচিতভাবে চলাফেরা করেন এবং বেদনায় বিচলিত হইয়া উঠেন । উহার সহিত ডিম্বকোষের বেদনা যোগ হয়। বেলেডোনা অনেক স্থলেই ডানদিকে কাৰ্য্য করে। সাধারণতঃ ডান ডিম্বকোষটিই বাম ডিম্বকোষ অপেক্ষা অধিক বেদনাযুক্ত হওয়া, অথবা ডানটিই সম্পূর্ণভাবে আক্রান্ত হওয়া এবং বামটি আদৌ আক্রান্ত না হওয়া বেলেডোনার লক্ষণ। গলার ডানদিক সম্বন্ধেও ঐ ব্যাপার। শরীরের ডানদিকেও সময়ে সময়ে ঐরূপ হয়। “ঋতুর আবির্ভাবে ডিম্বকোষে যন্ত্রণা। বস্তিপ্রদেশে যন্ত্রণা, উহা অকস্মাৎ আসে এবং অকস্মাৎ থামিয়া যায়।” বেলেডোনার প্রকৃতিগত বেদনা হঠাৎ উপস্থিত হয়, সময়ে সময়ে কয়েক সেকেন্ডমাত্র স্থায়ী হয়, কখনও বা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় এবং তারপর হঠাৎ চলিয়া যায়। জরায়ুতে রক্তসঞ্চয়হেতু বেদনা। জরায়ুর তরুণ প্রদাহ। জরায়ুর বিবৃদ্ধি এবং থাকিয়া থাকিয়া আক্ষেপিক প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা।” ইহাতে অঙ্গাদির শিথিলতাও আছে। জরায়ু রক্তসঞ্চয়যুক্ত হইয়া বৰ্দ্ধিত ও ভারি হইয়া উঠে, এবং উহার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধারণকারী বন্ধনীগুলি শিথিল, ক্লান্ত এবং দুর্বল হইয়া পড়ে, ঐগুলি বিস্তৃত ও লম্বা হইয়া পড়ে এবং পূৰ্ব্ব হইতে বিস্তৃত ও অতি ভারি জরায়ু ঐ বন্ধনীগুলিকে টানিতে থাকে এবং তাহারই ফলে এরূপ অনুভূতি জন্মে যে স্ত্রীলোকগণ বলেন যে, প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা, যেন জরায়ুটি বাহির হইয়া পড়িবে এরূপ বেদনা । উহাকে সময়ে সময়ে ফঁদেলের ন্যায় হওয়ার অনুভূতি বলিয়া বর্ণনা করা হয়। যে-সকল স্ত্রীলোক জরায়ু নির্গমন হইতে ভোগেন, ইহা তাহাদের সম্বন্ধীয় বর্ণনা । আর্গট দ্বারা বিষাক্ত বহুসংখ্যক রোগিণীর মধ্যেই এই শিথিলতা দেখা যায় জরায়ু নামিয়া পড়ে এবং ভগৌষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে আংশিকভাবে বাহির হইয়া আসে। জরায়ু নির্গমন, যেমন অভ্যন্তরস্থ সমস্ত যন্ত্রাদি বাহির হইয়া পড়িতেছে একটি সাধারণ লক্ষণ এবং ইহার সহিত নড়াচড়ায় বৃদ্ধি থাকে। জননাঙ্গে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। জরায়ুতে অত্যন্ত ক্ষতবৎ বেদনা এবং ভারবোধ। বাহ্য জননেন্দ্রিয়মুখ দিয়া নির্গমনশীল জরায়ুগ্রীবায় এতই স্পর্শকাতরতা থাকে যে, আমি স্ত্রীলোকদিগকে বিস্তৃতভাবে পা ফাক করিয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছি। “তাঁহাকে বসিয়া থাকিতে হয়, শুইতে পারেন না।” বেলেডোনায় অনেক রোগিণী উদরপেশীর বিস্তৃতির জন্য শয়ন করিতে পারেন না। যখন তাঁহারা শোন, তখন ঐ পেশীগুলিকে শিথিল করিয়া দিবার জন্য তাঁহাদিগকে পা গুটাইয়া লইতে হয়। তাহাদিগকে বসিয়া জোড়াসন করিয়া থাকিতে হয়। অঙ্গাদিতে অত্যন্ত অনুভূতি। জননেন্দ্রিয়ে চাপ ও বেগের অনুভূতিতে যে বিশেষ পেশীসমূহ আক্রান্ত হয়, তদনুসারে বেলেডোনায় বিভিন্ন প্রকার অবস্থান এবং বৃদ্ধি ও উপশম দেখা দেয়। কোন কোন রোগী বসা অপেক্ষা শয়নে ভাল থাকেন। প্রায় সকলেরই দাঁড়াইলে খারাপ হয়। কেহ কেহ পা ফাঁক করিয়া বসিলে ভাল থাকেন। প্রায় সকলেই সম্মুখ দিকে ঝুঁকিলে বৃদ্ধিবিশিষ্টা হন। চেয়ারে বসিয়া তিনি সম্মুখদিকে খুব ঝুঁকিতে পারেন না, আবার পিছনে হেলিলেও তাহার যাতনা বাড়ে। এই সকল অঙ্গ এতই স্পর্শকাতর এবং ফুলাযুক্ত থাকে। তাহার সঞ্চালনে বৃদ্ধি, ঝাঁকি লাগিলে বৃদ্ধি, উত্তেজনায় বৃদ্ধি, জোরে দরজার বন্ধ করার শব্দে বৃদ্ধি, কারণ উহাতে তাহার পেশীগুলি ঝাঁকি দিয়া উঠে। এই সকল উদাহরণ হইতে বুঝা যায় যে, তাহার উপাদাহযুক্ত অঙ্গগুলি কতই না স্পর্শকাতর। তারপর বহিঃস্থ এবং অভ্যন্তরস্থ জননেন্দ্রিয়ে এবং ডিম্বকোষদ্বয় জ্বালা, ঝুঁকিমারা এবং যথেষ্ট উত্তাপ থাকে। সচরাচর বেদনাটি ছিন্নকর; ছিন্নকর বেদনা সাধারণতঃ ঐ আঁকড়ানবৎ ও সঙ্কোচনবৎ যাতনার আতিশয্য মাত্র এবং যাহাকে আক্ষেপ বলা হয় তাহাও বিশেষভাবে ঐ গোলাকার তন্তুগুলির আক্ষেপ।
যে-সকল গর্ভবতী স্ত্রীলোক অত্যন্ত অনুভূতিবিশিষ্টা, যাঁহারা রক্তপ্রধান ধাতু, যাহাদের ঠান্ডা লাগিলে রক্তসঞ্চয় হয়, যাহাদের ক্ষতবৎ বেদনা থাকে; তাহাদের গর্ভস্রাব সম্ভাবনার অথবা গর্ভস্রাবের পরে রক্তস্রাব হইতে থাকিলে বেলেডোনা উপযোগী। তারপর আবার যে-সকল স্ত্রীলোকের মুখমন্ডল লালবর্ণ, যাহারা রক্তপ্রধানা, বলিষ্ঠা, যাঁহারা বেশী বয়সে বিবাহ করিয়াছেন। এবং তারপর গর্ভবতী হইয়াছেন, তাঁহাদিগের প্রসবের দিন আসিলে যদি পেশীতন্তুগুলির টানটানভাব উপস্থিত হয়, তাহা হইলে বেল উপযোগী। তাঁহাদের জরায়ু শিথিল হইবে না। তাহার মুখ আরক্তিম হইবে, উত্তাপ দেখা দিবে, তিনি উত্তেজনা, স্পর্শকাতরতা এবং ঝুঁকি লাগিলে অত্যনুভূতিযুক্তা হইয়া পড়িবেন। পরে শীঘ্রই শিথিলতা উপস্থিত হইবে। এরূপ আশা করিতে নাই যে তাহার সহজ প্রসব হইবে, কারণ যাঁহারা ২৮ বা ৩০ বা তদপেক্ষা অধিক বয়সে বিবাহ করেন, তাহারা দীর্ঘকালব্যাপী প্রসববেদনায় কষ্ট পান।
রক্তস্রাবের এবং অন্যান্য স্রাবের একটি বিশেষ প্রকৃতি আছে, উহা গরম বোধ হয়। প্রসবকালে যে রক্তপ্রবাহ দেখা দেয়, তাহা গরম বোধ হয়। গর্ভস্রাবের পর যে রক্তপ্রবাহ দেয়, তাহা গরম বোধ হয়। লোকিয়া স্রাব গরম বোধ হয় এবং তাহার সহিত অঙ্গগুলির অনুভবাধিক্য ও বেদনা থাকে। চাপে অত্যনুভূতি। আঁতুড়ের সময় স্তনের প্রদাহ দেখা দেয়। দুগ্ধজ্বর। উহাতে স্তনদ্বয় লাল হয় এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর হইয়া পড়েন। তিনি শয্যায় পাশ ফিরিতে পারেন না, তিনি শয্যা নাড়াইতে দিতে পারেন না, মুখমন্ডল রক্তিম হইয়া উঠে, করোটি-ধমনীদ্বয় দপদপ্ করে, জ্বর হয়, সমস্ত শারীরবিধানে অনুভবাধিক্য ঘটে। স্তনদ্বয় অত্যন্ত কঠিন হয়, পাথরের ন্যায় কঠিন। বেল কয়েক ঘন্টার মধ্যেই স্তনের যন্ত্রণা নিবারণ করিবে । উহা রক্তসঞ্চয় রোধ করিবে এবং যাতনার উপশম দিবে।
যখন কোন সাধারণ লক্ষণ থাকে না, কিন্তু স্তনগ্রন্থিগুলির প্রদাহ থাকে, উহা কেবলমাত্র গ্রন্থির প্রদাহ হইলে ফাইটোলেক্কা দিবে।
কণ্ঠনলীর প্রদাহ। আবার সেই আঁকড়ানি ও চাপিয়া ধরা দেখা যাইবে উহা গলায় খসখসে ভাবের, চিড়িকমারার, চাঁচিয়া ফেলার ন্যায় অনুভূতির ও সামান্য শ্লেষ্মা সঞ্চয়ের সহিত আরম্ভ হয়। অনেকক্ষণ গলা খেঁকারি দেওয়ার এবং হক হক করার পর, ঐ শ্লেষ্মা গলার সামান্য দূর পর্যন্ত উঠে, কিন্তু সে কাশিতে আরম্ভ করিবার পূর্বেই উহা শুষ্ক হইয়া যায়। চিড়িকমারা এবং স্বরনাশ দেখা দেয়। যেমনই সে নিদ্রা যাইবার চেষ্টা করে, ঐ আঁকড়াইয়া ধরার ভাব উপস্থিত হয় এবং তাহাকে জাগাইয়া রাখে । গলার স্বরভঙ্গ, ক্ষততা এবং আঁকড়াইয়া ধরা অত্যনুভূতির সহিত কণ্ঠনলীর প্রদাহ। হঠাৎ স্বরভঙ্গের আক্রমণ। সামান্য সঞ্চালন বা কথা কহিবার চেষ্টা অথবা কণ্ঠনলীকে সঞ্চালিত করিতে বা স্পর্শ করিতে সামান্য চেষ্টা করিলেই যন্ত্রণা উপস্থিত হয় । মাথা পশ্চাদ্দিকে বাঁকা করিলে অথবা একদিক হইতে আর একদিকে ফিরাইলে যন্ত্রণা ও কাশি দেখা দেয়। গিলিতে গেলে কষ্ট বাড়িয়া উঠে। কণ্ঠনলী দিয়া খাদ্যের ডেলা নামিবার সময়ে সে কণ্ঠনালীর মধ্যে একটা বড় ক্ষতবৎ স্থান আছে অনুভব করে। স্বর বদলাইয়া যায়। এক মিনিট এক পর্দায় স্বরটি থাকে, পরের মিনিটেই উহা বদলাইয়া যায়। কখন স্বরটি ভগ্ন, কখন চিচি করা স্বর। আর, তারপর সম্পূর্ণ স্বরনাশ হয়, সে আর একটুও শব্দ করিতে পারে না। “কণ্ঠনালীতে ক্রুপ কাশির ন্যায় আক্ষেপ। গলকোষে আক্ষেপ। ক্রুপ রোগের যাবতীয় লক্ষণ।” কিন্তু কোন পরদা সৃষ্টি হয় না। খসখসে ভাব, চাঁচিয়া ফেলার ভাব এবং প্রাদাহিক অবস্থার সহিত উহা কণ্ঠনলীর সাধারণ শুষ্কতা ও ছাল উঠা। উহা একপ্রকার তরুণ কণ্ঠনালী-প্রদাহ, এবং ঐ প্রদাহ অতি দ্রুত উপস্থিত হয়। শ্বাসক্রিয়াহ্রস্ব, দ্রুত, এবং কষ্টকর। কখন কখন হাঁপানি রোগের ন্যায়। আক্ষেপিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সহিত হাঁপানির ন্যায় অবস্থা। তারপর এই লক্ষণগুলি সমুদয় বক্ষকে আক্রমণ করে, বুকে চাপ বোধ হয়। উষ্ণ-ভিজা আবহাওয়ায় হাঁপানি।
কণ্ঠনলীতে সঙ্কোচনহেতু বেলেডোনার কাশি দেখা দেয়। মনে হয়, যেন কোন কিছুর সামান্য একটি কণিকা কণ্ঠনলীর মধ্যে চলিয়া বেড়াইতেছে যেন একটু ধূলিকণা, একটু খাদ্য অথবা একবিন্দু জল কণ্ঠনলীর মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে, এবং সেইজন্য সে কাশিতে থাকে। “শুষ্ক, আক্ষেপিক কাশি।” তীব্র কাশি। রাত্রিকালে কাশি। শুইয়া থাকিলে কাশি, দিনের বেলা অপেক্ষা রাত্রিকালে অধিক কাশি। কাশি আক্ষেপিক, ঘংঘং-করা এবং হ্রস্ব। কণ্ঠনলীর আক্ষেপ হইতে যে হুপিং কাশি, হুপ হুপ শব্দ এবং শ্বাসকষ্ট উৎপাদন করে, ইহা তাহার ঔষধ। কাশিতে কাশিতে, বহু পথগুলির মধ্যে যে ভীষণ আলোড়ন চলিতে থাকে তাহার পরিণতিতে অনেকক্ষণ কাশিবার পর সামান্য একটু রক্ত বা সামান্য পাতলা সাদা শ্লেষ্মা উঠে। বেলেডোনার কাশি অদ্ভুত। যেমনই উহাতে অত্যন্ত তীব্রতা এবং অত্যন্ত চেষ্টার ফলে সামান্য একটু শ্লেষ্মা উঠে, অমনি রোগী কিছুক্ষণের জন্য শান্তি পায় এবং তাহার কাশি থাকে। কিন্তু এই বিরতির সময় তাহার কণ্ঠনলী, কণ্ঠ ও বায়ুনলীগুলি অধিক হইতে অধিকতর শুষ্ক হইতে থাকে এবং অবশেষে তাহারা সুড়সুড় করিতে থাকে এবং তখন আক্ষেপ উপস্থিত হয়, মনে হয় যেন সমস্ত বায়ুপথ ঐ আক্ষেপে যোগ দিতেছে, ফলে হুপ হুপ শব্দ, কণ্ঠরোধ এবং সময় সময় বমি দেখা দেয়। তারপর সে সামান্য শ্লেষ্মা তুলে এবং কাশিও থামে। আবার কিছুক্ষণ বিরতির পরে, আর একবার আক্রমণ হয়। এই প্রকারে উহা হুপিং কাশির ন্যায় চলিতে থাকে, কিন্তু সবসময়েই বিরতিকালে অবিরত শুষ্কভাব বর্তমান থাকে। এইজন্য এই কাশিকে থাকিয়া থাকিয়া আক্রমণশীল বলা হয়। বুকের মধ্যে কষিয়া ধরা বোধ। বুকের মধ্যে বেদনা। বুকের মধ্যে ক্ষতবৎ অনুভূতি। বেলে যে মুহর্তে শিশু কাশির আবেগ অনুভব করিবে, সেই মুহূর্তেই কাঁদিতে থাকিবে, কারণ সে জানে কি কষ্টই না উপস্থিত হইতে চলিয়াছে। বক্ষদেশ এত বেদনান্বিত যে, শিশু কাশিতে ভয় পায় এবং চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠে। শিশুর কান্না হইতেই আমরা জানিতে পারি যে তাহার আর একটি কাশির দমক আসিতেছে। ইহা ঠিক ব্রায়ো’, ‘হিপার’ ও ‘ফসের অনুরূপ, অন্য ঔষধ অপেক্ষা উহাদের মধ্যে এই লক্ষণ অধিক আছে। বুকের মধ্যে জ্বালা থাকে, ভয়ানক রক্তসঞ্চয় থাকে। এই সকল বুকের রোগের সহিত শুষ্ক, উত্ত্যক্তকর, আক্ষেপিক কাশি থাকে রাত্রিকালে বদ্ধি।
এই ঔষধে নিউমোনিয়া ও প্লুরিসি আরোগ্য হয়। আমি নিশ্চিত জানিতেছি যে, এখানকার প্রত্যেকেই বেলেডোনার নিউমোনিয়া অথবা বেলেডোনার প্লুরিসি চিত্রিত করিতে পারিবে। আমি নিশ্চিত বুঝিতেছি যে, তোমরা বেলের রোগীকে এরূপ ভালভাবে চিনিয়াছ যে, আমার আর রোগীর মস্তকের, রক্তসঞ্চয়ের, লাল মুখমন্ডলের এবং জ্বালার বর্ণনা করিবার প্রয়োজন নাই, কিন্তু প্লুরিসি রোগে আমি ইহার রহস্য বর্ণনা করিব। বেল ডান দিকটিই বাছিয়া লয় । অত্যন্ত বেদনা, আক্রান্ত অঙ্গের অত্যন্ত ক্ষততা,—সে ঐ পার্শ্বে চাপিয়া শুইতে পারে না, সামান্য ঝাঁকি লাগিলেই বেদনার বৃদ্ধি হয়—এইবার তোমরা বেলের প্লুরিসি পাইলে। ব্রায়োনিয়াও ডান দিক বাছিয়া লয়, কিন্তু ব্রায়ো’র রোগী ব্যথিত পার্শ্ব চাপিয়া শুইবে, ঐ পার্শ্বে চাপ পাইতে চাহিবে, ঝাঁকানিতে অত স্পর্শকাতর হইবে না, তাহার ঐরূপ প্রবল উত্তাপ থাকিবে না, তাহার ঐরূপ তীব্র দপদপানি ও জ্বালা থাকিবে না। যে রোগীই তুমি দেখিতে যাও না কেন, তোমাকে এইভাবে প্রত্যেক ঔষধের পার্থক্য নির্ণয় করিতে হইবে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অন্য কোন পন্থা নাই।
মনে রাখিবে যে, সৰ্ব্বপ্রকার প্রাদাহিক অবস্থায় দপদপানি উত্তাপ, আরক্ততা, জ্বালা, স্পর্শকাতরতা, ঝাঁকি লাগিলে অত্যনুভূতি থাকিবে। বেলে ইহার অর্থ যে, সে প্রদাহিত অঙ্গের উপর চাপিয়া শুইতে পারে না; কিন্তু ব্রায়ো’তে সে প্রদাহিত পার্শ্বে চাপিয়া শুইলে উপশম পায়।
রক্তবহা নাড়ীগুলির মধ্যে দপদপ করে। অত্যন্ত রক্তসঞ্চয়। রক্তবহা নাড়ীসমূহের উত্তেজনা। বেলের সর্বপ্রকার রক্তসঞ্চয় ও প্রদাহের সহিত লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে।
বেলেডোনা প্রাদাহিক বাতরোগ আরোগ্য করে। তখন সকল সন্ধিগুলি, অন্ততঃ উহাদের অনেকগুলি স্ফীত থাকে, উহারা উত্তপ্ত, লালবর্ণ ও জ্বালাযুক্ত থাকে। আমরা বাতরোগেও সৰ্ব্বত্র উত্তাপ, আরক্ততা এবং জ্বালা দেখিতে পাইব, তৎসহ রোগীর পূৰ্ব্ববর্ণিতরূপ সৰ্বাঙ্গীণ অত্যনুভূতি, বিছানা নাড়ানতে সন্ধিগুলির স্পর্শকাতরতা দেখিতে পাইব। সে সম্পূর্ণ স্থির হইয়া শুইয়া থাকিতে চায়, সঞ্চালনে অত্যন্ত খারাপ বোধ করে এবং তাহার যথেষ্ট জ্বর থাকে। প্রদাহযুক্ত বাতের জ্বর যথেষ্ট প্রবল থাকিলে সময়ে সময়ে প্রলাপ দেখা দেয়। কিন্তু বিশেষ লক্ষণ হইল সন্ধিগুলির স্ফীতির সহিত আরক্ততা, সামান্য সঞ্চালন বা ঝাঁকুনিতে অত্যনুভূতি। যাহারা ঠান্ডায় অত্যনুভূতিযুক্ত, যাহারা সামান্যমাত্র অনাবৃত থাকাও সহ্য করিতে পারেন না, হাওয়ার বেগ সহ্য করিতে পারেন না, আচ্ছাদনবস্ত্র নাড়াতেই অনুভূতিবিশিষ্ট হইয়া পড়েন এবং উত্তাপে উপশমপ্রাপ্ত হন, ইহা বিশেষতঃ তাঁহাদেরই ঔষধ। বেলের এই চরিত্রগত পরিচায়ক লক্ষণ অন্যান্য সকল রোগের ন্যায় বাতরোগেও বর্তমান থাকে। পরীক্ষাকালে রোগীই বেলের এই সকল লক্ষণ প্রকাশিত করিয়াছে, রোগীই রোগ ভোগকালে তাহার রোগের প্রকৃতির বর্ণনা দিয়াছে, সুতরাং ঐগুলিকে একত্রিত করিয়া সমনিয়োগ নীতি অনুসারে প্রয়োগ করিলেই হইল, ঔষধটি রোগকে ধ্বংস করিবে।
বিশেষ অঙ্গে অকস্মাৎ ঠান্ডা লাগিয়া সন্ধিগুলির প্রদাহ দেখা দেয়। অথবা, গুরুতর ঠান্ডার আক্রমণে কোন বিশেষ সন্ধি প্রদাহিত হইয়া উঠে। রোগটি স্থান পরিগ্রহ করে। উহা যে-কোন সন্ধিতেই হইতে পারে, কারণ বেল সকল সন্ধিকেই আক্রমণ করে। রক্তপ্রধান ব্যক্তিগণের অকস্মাৎ ঠান্ডায় অনাবৃত থাকাই বেলজ্ঞাপক রোগের একটি সর্বপ্রধান কারণ। পুরাতন ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগিলে সাধারণতঃ উহা স্থান পরিগ্রহ করে এবং বেল দেহের সর্বাপেক্ষা দুৰ্বল অংশে গোলযোগ সৃষ্টি করে অথবা গোলযোগ থাকিলে তাহার বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী ব্যক্তিদের নাকে সর্দি জন্মে এবং তাহারা শীঘ্রই উহা ঝাঁড়িয়া ফেলিতে পারে। কিন্তু তোমরা দুৰ্বল রোগীদিগকে প্রায়ই বলিতে পার যে, “ঠান্ডা লাগায় তোমার দুর্বলতম যন্ত্র আক্রান্ত হইবে। যদি তোমার যকৃতেই চাপিয়া বসিবে, ইত্যাদি; কিন্তু যদি তুমি ভাল হইয়া ওঠ, তোমারও অন্য লোকের মত নাকেই সর্দি লাগিবে।” সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির কদাচিৎ সর্দি লাগে, কিন্তু আমরা ঐরূপ লোক বড় একটা দেখিতে পাই না; তাহাদের সংখ্যা এতই কম যে, আমরা তাহাদিগকে প্রায়ই দেখিতে পাই না এবং সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরা নাক ঝাঁড়িয়া, হাঁচিয়া এবং নাক দিয়া সর্দি ঝরার সাহায্যে সর্দিকে ঝাড়িয়া ফেলিয়া দেয়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও আক্ষেপ দেখা যায়, উহা সাধারণ লক্ষণেরই অংশ। হাত-পায়ের পেশীতে ও শরীরের সর্বত্র আক্ষেপ। শিশুরা মাথার উপদ্রবের সহিত, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ের সহিত এবং মস্তিষ্কের উপদাহের সহিত আক্ষেপযুক্ত হয়। রক্তপ্রধান শিশুদের ঠান্ডা লাগিয়া আক্ষেপ দেখা দেয় এবং সাধারণতঃ পেশীসমূহের আক্ষেপের বিকাশ অঙ্গসমূহে প্রকাশ পায়। ভীষণ খালধরা। সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আক্ষেপিক অবস্থা উপস্থিত হয়। আক্ষেপ সময়ে সময়ে এই আসে এই যায়, আবার সময়ে সময়ে দীর্ঘকাল থাকিয়া যায়। অঙ্গাদির আক্ষেপ সময়ে সময়ে এরূপ হয় যে, হাত-পাগুলি হঠাৎ উৎক্ষিপ্ত হইয়া উঠে আবার হঠাৎ নিক্ষিপ্ত হইয়া পড়ে; কখন কখন আক্ষেপে শরীর পশ্চাদ্দিকে বাঁকিয়া যায়, উহাকে পশ্চাৎবক্রতা বলে, আবার কখনও কখন শরীর সম্মুখদিকে বাঁকিয়া যায়, উহাকে সম্মুখবক্রতা বলে। বেলের অধিকাংশ রোগই স্থির হইয়া শুইয়া থাকিলে উপশমিত হয়। টানিয়া ধরা বেদনা, স্পন্দন, প্রাদাহিক অবস্থা রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম লইতে ইচ্ছুক করিয়া তুলে এবং সঞ্চালনে রোগ-লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। সামান্য সঞ্চালনেও অনিচ্ছা এবং বিরক্তি বেলের চরিত্রগত লক্ষণ, এবং এই লক্ষণ বেলেও যেমন ব্রায়ো’তেও তদ্রুপ। বেলের অঙ্গগুলি এত অনুভূতিবিশিষ্ট যে, কথা কহিবার জন্য সঞ্চালনেও বেদনা জন্মে, ব্যথিত স্থানে স্বরের প্রতিঘাত ও যাতনা উৎপন্ন করে। জোর আওয়াজ, মোটা আওয়াজবিশিষ্ট লোক তাহার কথায় যে প্রতিঘাত জন্মে, তাহা কদাচিৎ ভাবেন। স্ত্রীলোকদিগের স্বরের ঐরূপ অবস্থা হইলে তাহারা আরও কম ভাবেন, কিন্তু তথাপি আমি স্বরসঞ্চালন হইতে ঐরূপ বৃদ্ধি দেখিয়াছি এবং স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে ঐরূপ নাড়া লাগায় এরূপ সুস্পষ্ট বৃদ্ধি হয় যে, তাহার নিকট স্বর হাতুড়ি পেটানুর মত বোধ হইয়া থাকে। জরায়ুর ও ডিম্বকোষের এবং অন্ত্রের প্রদাহে, স্ত্রীলোক কথা কহিতে বিরত থাকেন কারণ তাহার কণ্ঠস্বর ব্যথিত স্থানে প্রতিঘাত উৎপন্ন করে। ইহা সঞ্চালনে ও নাড়ালাগায় যে কিরূপ অত্যধিক অনুভবাধিক্য ঘটে, তাহারই একটি উদাহরণ। নাড়ালাগা সঞ্চালনের একটি বর্ধিত অবস্থা, উহা দ্বারা অনুভূতিপ্রবণতা প্রকাশিত হয়।
স্নায়ুসমূহ সম্বন্ধে, অধ্যয়নকালে, তোমরা অদ্ভুত অদ্ভুত স্নায়বিক লক্ষণের এক বিরাট তালিকা দেখিতে পাইবে, যথা—স্নায়ুসমূহের অনুভবাধিক্য; সংঘাত হইতে বৃদ্ধি; আক্ষেপ; সমগ্র স্নায়ুমন্ডলের নানা উপদ্রব-মোচড়ানি, ঝাঁকি মারা, কম্পন, আক্ষেপিক ক্রিয়া-বিকৃতি। শিশুদিগের খালধরা আক্ষেপ ও খিঁচুনি। খুব এবং অন্তরুৎসেক্য প্রকৃতির ঔষধসমূহে আক্ষেপের অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগিণী গর্ভকালের শেষদিকে ভাল থাকে না, কিন্তু বেলে তিনি প্রসবকাল পর্যন্ত কতকাংশে ভালই থাকেন, প্রসবক্রিয়া আংশিকভাবে অগ্রসর হয়, হয়তবা শেষই হয় এবং কোন বিপদের আশা করা যায় না। হয়ত তাহার মুখমন্ডলটি একটু বেশী লাল থাকে, কিন্তু তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে আক্ষেপবিশিষ্টা হইয়া পড়েন, মাথা হইতে পা পৰ্যন্ত ভীষণ আক্ষেপ। উত্তেজনার সহিত মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়। অত্যন্ত উত্তাপ, প্রত্যেক কিছুই অত্যধিক, প্রবল, আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত। প্রসবকালে কখন কখন বেদনাটি অকস্মাৎ চলিয়া যায় এবং আক্ষেপ উপস্থিত হয়। কিন্তু তোমরা লক্ষ্য করিও যে, আমি যে-সকল অত্যনুভূতির কথা বলিয়াছি, তাহার সবকিছুই রোগিণীর মধ্যে থাকে। বেদনা অকস্মাৎ থামিয়া গেল। রক্ত যেন মাথায় উঠিতে থাকিল। মুখমন্ডল লাল হইল। তারপর হঠাৎ আক্ষেপ দেখা দিল। আক্ষেপটি মৃগীরোগের আক্ষেপ সদৃশ। কিন্তু বেল মৃগীরোগের বহুবার ও পুনঃ পুনঃ আক্রমণের পক্ষে উপযোগী নহে, যদিও একটিমাত্র আক্রমণ হইলে বেল তাহার প্রতিবিধান করিবে। এইরূপ আক্রমণের যে কোনটি ধর—উহা আক্ষেপই হউক, আর শিরঃপীড়াই হউক, আর মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ই হউক, রোগী ভাঙ্গিয়া পড়িবে এবং উত্তেজিত হইয়া উঠিবে; যদি উহা রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া হয়, রোগী বিছানায় শুইয়া পড়িবে এবং মাথা চালিতে থাকিবে। তুমি এইরূপ ক্ষেত্রে বেল দিয়া চিকিৎসা কর, আক্রমণের নিবৃত্তি হইবে। কিন্তু তুমি মনে রাখিও যে, আমি এই প্রসঙ্গের প্রারম্ভেই বলিয়াছি যে পর পর কতকগুলি আক্রমণের একটি, তুমি হয়তো উহা না জানিতেও পার। উহা হয়ত প্রথম আক্রমণ না হইতেও পারে। তুমি ঐ আক্রমণটি বেল দ্বারা কমাও এবং তারপর যদি ঐ রোগ পুনরায় দেখা যায়, ঐ একই প্রকার আক্রমণ ফিরিয়া আসে, বেল আর আগেকার মত কাজ করিবে না। দুই তিনবার আক্রমণের পর বেল আর কাজই করিবে না এবং তোমার রোগীর অবস্থাও পূর্বাপেক্ষা খারাপ হইবে । প্রথম আক্রমণটি চলিয়া গেলে, চিকিৎসককে লক্ষ্য করিতে হইবে যে, উহা পরপর কতকগুলি আক্রমণের মধ্যে একটি, সুতরাং উহাতে বেল উপযোগী নহে। প্রায়ই উহা একটি ক্যাল্কেরিয়া প্রয়োগের ক্ষেত্র হইবে। আমি বলিতেছি প্রায়ই, কিন্তু সর্বদা নহে। শিশুকে এই সকল আক্রমণ হইতে বাঁচাইতে হইলে, দুইটি আক্রমণের মধ্যবর্তীকালীন লক্ষণসমূহ পরীক্ষা করিতে হইবে, কারণ এই তরুণ রোগের ঔষধটি দ্বারা মাত্র প্রথম, দ্বিতীয় বড়জোর তৃতীয় আক্রমণটিতেই ফল পাওয়া সম্ভব। ইহার ক্রিয়ার তত গভীরতা নাই। ইহার ক্রিয়া তত দীর্ঘস্থায়ী নহে। ইহা শারীরবিধানকে যথেষ্ট গভীরভাবে আক্রমণ করে না। ইহার ক্রিয়া কয়েক দিন পরেই শেষ হইয়া যায় এবং ইহার পুনঃপ্রয়োগের প্রয়োজন হয়। এই সমস্ত পৌনঃপুনিক, আক্ষেপিক ও নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে আগত রোগে, রোগীকে অনুসরণ করিতে ও লক্ষ্য করিতে হইবে। বেল পৌনঃপুনিক আক্রমণযুক্ত রোগে উপযোগী ঔষধ নহে; কারণ, ইহাতে রোগের সেরূপ দীর্ঘস্থায়িত্ব নাই, সেইরূপ পৰ্য্যায়শীলতাও নাই। যদিও প্রথম আক্রমণটি বেলের মত দেখায়, তথাপি পরবর্তী আক্রমণটি ঠিক সেই ভাবেই উপস্থিত হইবে। বেলেডোনা সেই সকল রোগে উপযোগী, যাহা একবার দমিত হইলে আবার ঘুরিয়া আসে না; যাহার পরিণতি হয়—আরোগ্যে নচেৎ মৃত্যুতে। ইহা দ্বারা পৰ্য্যায়শীল রোগে উপশম মাত্র পাওয়া যায়।
ইহার নিদ্রা রক্তসঞ্চয়জনিত নিদ্রা, অচৈতন্যতা, স্বপ্নে পূর্ণ, ভীষণতায় পূর্ণ। ভীষণ স্বপ্ন দেখিয়া, রাত্রে বুকচাপা স্বপ্নে জাগিয়া উঠে। নিদ্রার মধ্যে উৎক্ষেপ ও ঝাঁকি দিয়া উঠা। “অস্থির। নিদ্রা।” নিদ্রার মধ্যে ক্রন্দন ও গোঁ গোঁ করা। সর্বপ্রকার ভীষণ কাৰ্য্য করা। নিদ্রার মধ্যে প্রলাপ। “নিদ্রার মধ্যে ভয় পাওয়ার ন্যায় চমকিয়া উঠে।” নিদ্রার মধ্যে রোগী সময় সময় কথা বলিতে থাকে, ক্রমেই অধিকতর দ্রুত ও উচ্চস্বরে কথা বলিতে থাকে, মাথা গরম হইয়া উঠে, পদদ্বয় ঠান্ডা হয়, এবং শেষে বিকট চিৎকার করিয়া উঠে। “নিদ্রায় অস্থিরভাবে মাথা চালে। নিদ্রার মধ্যে পদদ্বয় বরফের ন্যায় ঠান্ডা হয়। নিদ্রার মধ্যে মাথা উত্তপ্ত হয়। জ্বর ও উত্তেজনা লইয়া জাগিয়া উঠে।”
ইহাতে পূৰ্ব্বেকার সিডেনহাম প্রদেশের আদর্শ আরক্ত জ্বরের ন্যায় এত বেশী লক্ষণ আছে যে, ইহা আরক্ত জ্বরে উপযোগী হইয়াছে। সম্ভবতঃ ইহা ঐ রোগে খুব সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধগুলির অন্যতম। অন্ততঃপক্ষে কোন কোন ধাতুতে, ইহা আগাগোড়া কাজে আসিবে এবং অধিকাংশ রোগীই উজ্জ্বল লাল মুখমন্ডল, চৰ্ম্মের চকচকে আকৃতির সহিত বেলের রোগী হইবে । উজ্জ্বল লাল, প্রখর উত্তাপ, অত্যন্ত রক্তসঞ্চয় এবং যদি কয়েকদিন বেল দেওয়া না হয়, তাহা হইলে ঐ চৰ্ম্ম কৃষ্ণাভ হইয়া উঠিবে। কিন্তু ইহার আগাগোড়া তিনটি কথা থাকিবেই উত্তাপ, আরক্ততা এবং জ্বালা। জ্বালা সর্বত্র। সাধারণ লক্ষণের মধ্যে আমি যে গাত্রতাপের বর্ণনা করিয়াছি, বেলের আরক্ত জ্বরে তাহা এতই সুস্পষ্ট ও তীব্র হইবে যে, রোগীকে স্পর্শ করার পর তোমার হাতের আঙ্গুলে উহার অনুভূতি কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকিয়া যাইবে । ইহা ‘এপিসের রোগী হইতে সম্পূর্ণ পৃথক, কারণ ‘এপিসে চর্মের উপর খসখসে উদ্ভেদ থাকে। বেলের চর্ম মসৃণ ও চকচকে। এপিস’ ঠান্ডায় থাকিতে চায়, অনাবৃত হইতে চায়, বেল গরমে থাকিতে চায়, গরম ঘর চায়। বলিতে গেলে ‘এপিসে’ তৃষ্ণা থাকে না, বেলে তৃষ্ণা না থাকা একটি ব্যতিক্রম, সাধারণতঃ রোগীর অত্যন্ত তৃষ্ণা থাকে, পুনঃ পুনঃ অল্প জল পান করে। সমগ্র শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ও গাত্র-ত্বকের শুষ্কতা। উত্তপ্ত মস্তিষ্কের সহিত হস্ত-পদের শীতলতা। এরাম ট্রিফাইলাম’ অবরুদ্ধ বা অল্প মূত্রের সহিত রোগী সর্বদা মুখ খোটে, দেহের উপরিভাগ বিবর্ণ, মধ্যে মধ্যে এখানে সেখানে কিছু উদ্ভেদ দেখা দেয়; হস্তাঙ্গুলির, পদাঙ্গুলির, নাসিকার ও ওষ্ঠের চুলকানি হইতেই তুমি ‘এরাম ব্যবহার করিতে পারিবে। ব্যাপ্টিশিয়া’র রোগীর কথা মনে কর,তাহার মানসিক অবস্থা যেন সৰ্বাঙ্গ বিছানায় ছড়াইয়া আছে এবং “সে সেইগুলি একত্র করিতে চেষ্টা করিতেছে।” তারপর রোগীর দেহে উল্লেখযোগ্য কোন উদ্ভেদ নাই হয়ত এখানে সেখানে রোগ নির্ণয় করিবার মত তালির ন্যায় কিছুটা উদ্ভেদ আছে, অথবা পরিবারের মধ্যে অন্য কাহারও ঐ রোগ হওয়ার ব্যাপার হইতেই রোগ নির্ণয় করা যাইবে। শিশু বরফজল গিলিতে থাকে, কিন্তু উহা পেটে গিয়া গরম হইলে বমি করিয়া ফেলে এরূপ অবস্থায় কে ‘ফস’ প্রয়োগ করিবে না? সুতরাং রোগশয্যা পার্শ্বেই আমরা পার্থক্য নির্ণয় করিয়া থাকি এবং দেখি যে এই সকল ঔষধ আদৌ অনুরূপ নহে। বেলের পার্থক্য নির্ণয় করে-উহার উত্তাপ, উহার আরক্ততা, উহার মানসিক গোলযোগ। মনে রাখিও ইহাতে একটানা জ্বর নাই। ইহা টাইফয়েড জ্বরে উপযোগী নহে। ঐরূপ ক্ষেত্রে বেল একরাত্রেই জ্বর কমাইয়া আনিবে, প্রলাপের উপশম করিবে, কিন্তু তার পরের রাত্রে কি হইবে? আবার জ্বর বাড়িবে, রোগী পূর্বাপেক্ষাও খারাপ হইয়া পড়িবে। ইহার একমাত্র কারণ বেল যাহা আরম্ভ করে, তাহা বজায় রাখিতে পারে না। সুতরাং উহা উপযোগী নহে। উহাতে ঐরূপ একজুর প্রকৃতি নাই। সুতরাং আমাদিগকে এরূপ একটি ঔষধ বাছিতে হইবে, যাহা একটানা জ্বরের অনুরূপ এবং ঐরূপ ঔষধটি আমরা পাইব যখন রোগী টাইফয়েড অবস্থায় প্রবেশ করিবে। আমাদের পূর্ববর্তী চিকিৎসকগণ, যাহা চোখের উপর দেখিতেন, মাত্র সেই সম্বন্ধেই চিন্তা করিতেন। আমাদের সম্প্রদায় যথেষ্ট অভিজ্ঞতা লাভের পর, আমরা দেখিলাম যে, পৰ্য্যায়শীলতাও একটি লক্ষণ। প্রত্যেক ঔষধেরই একটি গতিবেগ আছে, বৃদ্ধির সময় আছে, এবং উপশমের সময় আছে। বেল সম্বন্ধেও ঐরূপ। ইহার নির্দিষ্ট সময় সাধারণতঃ বৈকাল ৩টা। ইহার রোগগুলি সাধারণতঃ রাত্রেই বাড়ে। ইহার রোগ সাধারণতঃ বৈকাল ৩টায় আরম্ভ হইয়া ভোর ৩টা পর্যন্ত চলিতে থাকে অথবা মধ্যরাত্রির পর পর্যন্ত চলিতে থাকে। সুতরাং রাত্রিকালেই ইহার জ্বর সর্বাপেক্ষা বেশী হয়। জ্বর আসিলে গাত্রতাপ দ্রুত। বাড়িতে থাকে, কখন কখন ১০৪, ১০৫ পর্যন্ত হয়, আবার নামিয়া প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় আসে, কিন্তু সম্পূর্ণ বিজ্বর হয় না। যে-সকল রোগে সম্পূর্ণ বিজ্বর অবস্থা আসে ইহা তাহার পক্ষে উপযোগী নহে, কারণ উহাতে সম্পূর্ণ পৰ্য্যায়শীলতা বুঝায়, কিন্তু বেলে তাহা নাই।’
চৰ্ম্ম-লক্ষণের বিশেষত্ব—উত্তাপ, আরক্ততা এবং জ্বালা। ইহাতে অতি সূক্ষ্ম উদ্ভেদ আছে, খসখসে উদ্ভেদ নহে, কিন্তু সূক্ষ্ম, উজ্জ্বল, লাল এবং মসৃণ উদ্ভেদ। ইহাতে দাহকর চর্মপ্রদাহ আছে, গভীর প্রদাহ। প্রথমে উজ্জ্বল লাল, ক্রমে নীলাভ, বেগুনি বা চিত্র-বিচিত্র হয়; আর উহার সহিত উত্তাপ, আরক্ততা ও জ্বালা থাকে। ইহা সাধারণতঃ চৰ্ম্মের ও গভীর স্থানের তন্তুসমূহের রাসে’র ন্যায় ফোস্কাকার বিসর্প প্রকৃতির প্রদাহে উপযোগী নহে। কখন কখন ইহাতে ফোস্কাকার উদ্ভেদ থাকে, কিন্তু উহা ব্যতিক্রম; কিন্তু রাসে’ উহা সাধারণ প্রকৃতি। রাস’ প্রদাহের সহিত আরম্ভ করে, ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি বড় ফোস্কা বাহির হয় এবং উহা রক্তাম্বুতে পূর্ণ হইয়া উঠে। প্রায় সব সময়েই বেল-জ্ঞাপক চৰ্ম্মে প্রদাহ উপস্থিত হইলে লালবর্ণের উদ্ভেদ বাহির হয়। প্রবল জ্বরে, আরক্ত জ্বর-জ্ঞাপক অথবা অন্য কোনপ্রকার উদ্ভেদ না থাকিলেও প্রায়ই এক প্রকার অতিসূক্ষ্ম চঞ্চকে উদ্ভেদ প্রকাশ পায়। মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয়ে অথবা পৈত্তিক জ্বরে ঐপ্রকার উদ্ভেদ বাহির হওয়া অসাধারণ ব্যাপার নহে। ইহা সময়ে সময়ে চিকিৎসককে রোগনির্ণয় প্রতারিত করে; তিনি হয়ত উহাকে কোন উদ্ভেদমূলক রোগ মনে করেন, কিন্তু বাস্তবিক উহা মিশ্র প্রকৃতির। বেলের চর্ম লাল হইলে উহা এরূপ নিশ্চল প্রকৃতির লাল যে, তুমি প্রায় চৰ্ম্মের উপর আপনার নাম লিখিয়া রাখিতে পার। যেমনই তুমি তোমার আঙ্গুল লইয়া চৰ্ম্মের উপর একটি রেখা টানিবে, উহা তোমার আঙ্গুল সরাইবার পিছনে পিছনে একটি সাদা দাগ রাখিয়া যাইবে। এইভাবে পূর্বে আরক্ত জ্বর নির্ণয় করা হইত এবং ইহা দ্বারা বুঝা যায় যে, বেল শরীরের উপরিভাগে আরক্ত জ্বরের সদৃশ কিরূপ অদ্ভুত অলস প্রকৃতির রক্তসঞ্চয় উৎপন্ন করে। সুতরাং আমরা বেলের পরীক্ষায় এমন একটি লক্ষণ পাইলাম যাহা আরক্ত জ্বরেরও একটি রোগজ্ঞাপক লক্ষণ। কিন্তু আমরা একটি লক্ষণের উপর ঔষধ ব্যবস্থা করি না। এখনকার কালে কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মাত্র নাড়ীর বেগ কমাইবার জন্য অথবা জ্বর নামাইবার উদ্দেশ্যে ঔষধ দিবার কথা কখনও চিন্তা করেন না। তিনি রোগীটির জন্য ঔষধ ব্যবস্থা করেন। সত্য বটে যে, আমরা ঠিক ঔষধটি দিতে পারিলে জ্বর কমিয়া যায়, কিন্তু নাড়ীর বেগ কমাইবার জন্য ব্যবস্থা করিলে, ভুল পথের সীমাতেই যাওয়া হয়। যিনি হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে চিন্তা করেন, তিনি কখনও একটি লক্ষণ দূর করিবার জন্য ঔষধ ব্যবস্থা করেন না, কিন্তু লক্ষণসমষ্টি দ্বারা পরিচালিত হইয়া ঔষধ নির্বাচন করেন, তারপর যাহা হইবে সে সম্বন্ধে চিন্তা করার আবশ্যক হয় না। সত্য বটে যে, লক্ষণগুলি চলিয়া যায়। অন্যে বলিতে পারেন, তিনি লক্ষণগুলি দূর করিবার জন্যই ঔষধ দিয়াছিলেন, কারণ লক্ষণগুলি চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু তোমরা মনে মনে হোমিওপ্যাথির আদর্শকে গ্রহণ কর, সুস্থভাবে চিন্তা কর, এবং উহা করিতে হইলে তোমাদিগকে প্রচুর পরিমাণে পূর্বলব্ধ ধারণা পরিত্যাগ করিতে হইবে। আমাদের পূর্বলব্ধ ধারণা ভুল পথেই চিন্তা করিতে শিখাইয়াছে।
“যকৃতে রক্তসঞ্চয়, এবং দ্বাদশাঙ্গুলান্ত্রের সর্দি চর্মের হরিদ্রাবর্ণ।” যখন লোকে অতি মাত্রায়। কুইনাইন খায়, এবং তারপর সামান্যেই সর্দিযুক্ত হইতে থাকে এবং অত্যন্ত বেদনার সহিত অকস্মাৎ যকৃৎটিতে রক্তসঞ্চয়ের আক্রমণ হয়, এবং ঔষধ জ্ঞাপক সমস্ত অত্যনুভূতির সহিত চৰ্ম্ম হলদে হইয়া উঠে, তখন বেল এরূপ রোগীকে আরোগ্য করে।
বেলের পর এরূপ অবস্থা দেখা যায়, যাহাকে পুরাতন রোগ বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে । বেল তরুণ অবস্থায়, রক্তসঞ্চয় অবস্থায় উপযোগী ছিল, কিন্তু তারপর আমি যে পৰ্য্যায়শীলতার কথা বলিয়াছি, তাহা দেখা দিল; এরূপ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরবর্তী ঔষধগুলির মধ্যে ক্যাল্কেরিয়া একটি। যে-সকল বালকের মাথাটি বড়, যাহারা হৃষ্টপুষ্ট, রক্তপ্রধান, অতি সতর্ক, যাহাদের সহজেই সর্দি লাগে এবং শিরঃপীড়া ও রক্তসঞ্চয়ের জন্য শয্যাশায়ী হইয়া পড়ে, যে-সকল স্কুলের ছেলেমেয়েরা শিরঃপীড়াযুক্ত হইয়া প্রথমে বেল দ্বারা বেশ উপকার পাইয়াছিল,—তুমি যদি যত্ন করিয়া পৰ্যবেক্ষণ কর, তাহা হইলে দেখিবে যে, পূর্বোক্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যাল্কেরিয়া’র রোগ দাড়াইয়াছে। ক্যাল্কেরিয়া এইভাবে সাধারণতঃ বেলের সহিত সম্বন্ধযুক্ত হয়। আজকাল আমরা মাঝে মাঝেই খকখকে কাশিযুক্ত রোগী দেখি, যাহারা ডাক্তারদের হাতে অতিমাত্রায় ল্যাকেসিস সেবন করিয়াছেন। ল্যাকেসিস’ সাধারণতঃ অত্যনুভুতিযুক্তা স্ত্রীলোকদিগকে দেওয়া হয় এবং উহা অনেক ক্ষেত্রে ঐরূপ অবস্থার সৃষ্টি করে; উহা দ্বারা রোগীর অত্যধিক কষ্ট দূর হয়। বটে, কিন্তু পরে একপ্রকার শুষ্ক খকখকে কাশি থাকিয়া যায় এবং সেইজন্য রোগিণী ঘুমাইতে পারে না। অনেক সময় ঐ কাশি প্রথম ঘুমের পর উপস্থিত হয়, সাধারণতঃ রাত্রি ১১টার সময়, শুইয়া থাকিলে শুষ্ক খকখকে কাশি। বেল ল্যাকেসিসে’র এই দীর্ঘকাল স্থায়ী কুফল, স্নায়বিকতা, উত্তেজনাপ্রবণতা এবং কাশি আরোগ্য করিবে। বেল ল্যাকেসিসে’র প্রতিবিষ হিসাবে উপযোগী হইবে অর্থাৎ তরুণ লক্ষণগুলির পক্ষে উপযোগী হইবে। বেলের অপব্যবহারের পর ক্যাল্কেরিয়া উহার স্বাভাবিক প্রতিবিষগুলির অন্যতম।
অপর নাম— অ্যাট্টোপা বেলেডোনা (Atropa Belladonna)
ডেডলি নাইটশেড (Deadly Nightshade)
* সোলানেসি জাতীয় এট্টোপা বেলেডোনা নামক গাছ থেকে এই ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। স্পেনের মেয়েরা মুখের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ও চোখের তারার বিকাশার্থে একে ব্যবহার করে থাকে।
[Atropa — Atropos, one of the Fates whose duty was to clip the thread of life.
Belladonna – the Italian for beautiful lady, probably because the Italians made an extract from the berries for preserving the freshness of the complexion.
* A student from another college once gave this explanation for the calling of deadlynightshade, Belladonna or beautiful lady; he said to supposed it was “because its physiological action was to paralyze the heart and to stimulate the sympathetic”.]
বেলেডোনার মূলকথা
১। সকল প্রকার তরুণ প্রাদাহিক পীড়ায় যেখানে মাথায় প্রধান প্রধান লক্ষণগুলি, যেমন-বেদন, স্ফীত আরক্ত মুখমণ্ডল বা ফোলা ফোলা টকটকে লাল রংয়ের মুখ; ক্যারোটিড ধমনীর দপদপানি; প্রলাপ ও আক্ষেপ বা পেশীর খিঁচুনি ও স্পন্দন থাকে; সেখানে বেলেডোনা প্রযোজ্য।
২। চক্ষু একদিকে রেখে নির্নিমেষে চেয়ে থাকে, চোখ রক্তের মত টকটকে লাল, মনে হয় যেন রক্ত ফেটে বেরিয়ে আসবে এবং চক্ষুতারকা প্রথমে সঙ্কুচিত ও পরে অত্যন্ত প্রসারিত হয়।
৩। মুখবিবর ও গলদেশ অত্যন্ত শুকনো, লাল, কখন কখনও অত্যন্ত ফুলে, সেজন্য সকল মিউকাস মেমব্রেনেই শুকনো ও গরম বোধ হয়।
৪। হঠাৎ বেদনা আরম্ভ হয়, আবার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ চলে যায়।
৫। গাত্রচর্ম অত্যন্ত লাল ও উত্তপ্ত, শরীরের নানাস্থানে অত্যাধিক উত্তাপের আবেশ, ত্বক স্পর্শ করলে হাত পুড়ে যাওয়ার মত বোধ হয়, আবৃতস্থানে ঘর্ম।
৬। কতকগুলি প্রদাহ একটি কেন্দ্র থেকে সরলরেখায় পরিধি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। হ্রাস-বৃদ্ধি – বৃদ্ধি-বিকেল ৩টের পর বা মধ্যরাত্রির পর অনাবৃত হলে; বায়ুপ্রবাহে ও শয়নে।
উপশম – আবৃত হওয়ায় ও মাথা উচু করে রাখায়।
৮। প্রায়ই সর্দি লাগে বা সর্দি লাগার অত্যধিক প্রবণতা; বায়ুপ্রবাহ মোটেই সহ্য হয় না, বিশেষতঃ মাথার ঢাকা খুললে, চুল কাটলে (হিপার), সর্দি সম্ভাবনা; ঠাণ্ডা হাওয়ায়, ঘোড়ায় চড়নে টনসিল ফোলে (একোনাইট)।
৯। রোগী মনে করে সে যেন ভূত-প্রেত, ভয়ঙ্কর বিকৃতি মুখ, নানা রকমের কীট (স্ট্রামোনিয়াম), কাল জন্তু, কুকুর ও নেকড়ে বাঘ দেখছে।
১০। উদরের ব্যথা ও স্ফীততা অতি সামান্য ঝাঁকুনি লাগলে কষ্টবাড়ে। এমনকি বিছনার ঝাঁকুনিতেও বৃদ্ধি হয়। ঝাঁকুনির ভয়ে রোগী অতি সাবধানে হাঁটে।
১১। ডানদিকের ইলিও-সিকেল প্রদেশে বেদনা, অতি সামান্য স্পর্শে, এমনকি বিছানায় চাদরের স্পর্শেও বেদনা বৃদ্ধি হয়।
১২। পেটেরনীচের দিকে চাপ বোধ, মনে হয় যেন পেটের আধেয় সকল (contents) যোনিদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়বে; দাঁড়ালে বা বসলে এবং প্রাতঃকালে উহার বৃদ্ধি হয় (লিলিয়াম, মিউরেক্স ও সিপিয়া তুলনীয়)
১৩। জিভ-লাল ও শুকনো, ধারগুলি লাল কিন্তু মাঝখানটি সাদা লেপে আবৃত; জিভের প্যাপিলিগুলি চকচকে, স্কার্লেটিনা জ্বরের মত জিহ্বা, (একোনাইট, এন্টিম টার্ট); পানাহারকালে যদিও খাদ্যদ্রব্যের স্বাভাবিক স্বাদ পাওয়া যায়, তথাপি গলার ভিতরে চাপা দুর্গন্ধ স্বাদ থাকে।
বেলেডোনা- একটি আলোচনা
১। প্রলাপ-বেলেডোনা, হাইওসায়ামাস ও স্ট্যামোনিয়াম, এই তিনটি প্রলাপের প্রধান ঔষধ। এদের প্রলাপের এয়ী (trio of delirium) বলে অভিহিত করা যায়। তাছাড়া বহু ঔষধেই প্রলাপ হতে দেখা যায়, কিন্তু এই তিনটিই -সাধারণতঃ মাথার রোগে প্রধান। তবে এদের মধ্যে বেলেডোনাকে সর্বপ্রথম মাথার ঔষধ বলা যেতে পারে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেখানে এই ঔষধটি নির্দেশিত হয়, সেখানে মাথার লক্ষণের আধিক্য থাকে। মনে হয় সমস্ত রক্ত যেন বেগে মাথায় উঠছে(এমিল নাইটেট, গ্লোনয়েন, মেলিলোটাস)। মাথা গরম কিন্তু হাত-পা ঠাণ্ডা; চোখলওরক্তপূর্ণ, মুখমণ্ডল আরক্ত। ক্যারোটিড ধমনী দুটি এরূপ দপদপ করে যে, স্পষ্ট দেখা যায়। অতিশয় বেদনা, চাপ বোধ বা পূর্ণাতানুভব কিংবা একপ্রকার বিমূঢ়ভাব (stupid) প্রকাশ পায়। তবে যদি উন্মত্তের মত ভয়ঙ্কর প্রলাপ বর্তমান থাকে, তাহলে রোগী বেদনার কথা বলে অথবা একেবারেই কোন বেদনার অভিযোগ করে না। প্রলাপের সময় রোগী মনে করে সে ভূত-প্রেত; ভয়ঙ্কর মুখ এবং জন্তু ও কীট দেখছে। সে সকল কাল্পনিক বস্তুকে ভয় করে ও তাদের কাছ থেকে সে পালিয়ে যেতে চায়; থেকে থেকে হেসে উঠে বা চিৎকার করে; দাঁত কড়মড় করে, তার কাছে যারা থাকে; তাকে কামড়ায় বা মারে।
সংক্ষেপে- সে সকল রকমের ভয়ঙ্কর কাজ (violent acts) করে, ফলে তাকে অতিকষ্টে বশে আনতে হয়।
ক্রমাগত প্রবল প্রলাপ বেলেডোনা অপেক্ষা অন্য কোন ঔষধেই দেখা যায় না। তবে হাইওসায়ামাস ও স্ট্যামোনিয়ামের প্রলাপের সঙ্গে বেলেডোনার প্রলাপের তুলনা করলে মস্তিষ্কের অতিরিক্ত রক্তাধিক্য বেলেডোনার প্রলাপের বিশেষ প্রকৃতি বলে পরিলক্ষিত হয়। তবে যতই ক্যারোটিড ধমনীর দপদপানি, রোগীর গাত্রতাপ, আবক্ত মুখমণ্ডল, ও চক্ষু শুক্ল-মণ্ডলের রক্তসঞ্চয় কমতে থাকে, ততই বেলেডোনার প্রলাপও কমতে থাকে। ফ্যাকাশে মুখমণ্ডলসহ বেলেডোনা প্রলাপও থাকতে পারে, কিন্তু উহা সাধারণত দেখা যায় না। বেলেডোনার প্রলাপের সময় উপরের ঠোঁটেও রক্ত জমতে পারে ও ফোলে।
২। প্রদাহ-
প্ৰদাহ স্থানিক হলে প্রথমাবস্থায় অন্যান্য ঔষধের মত বেলেডোনাও উহার প্রধান ঔষধ হতে পারে। এতে কোথায় প্রদাহটি হয়েছে তাতে কিছু যায় আসেনা। মাথা, গলার ভিতর, স্তন বা অন্য যেখানেই প্রদাহ হোক না কেন, যদি উহা হঠাৎ শুরু হয়, দ্রুত প্রসারিত হয়, লাল হয়ে উঠে, বেদনা করে, বিশেষ করে দপদপানি থাকে, তাহলে বেলেডোনা প্রযোজ্য। ভাবলে আশ্চর্য্য হতে হয় যে বহু রকমের স্থানিক প্রদাহে এমনকি কাৰ্ব্বাঙ্কল, ফোঁড়াতে ও সমগ্র শরীরে ও মুক্তসঞ্চালনের এতই বিশৃঙ্খলা ঘটায় যে, এতে বেলেডোনার মস্তিষ্কের লক্ষণ সহকারে সর্বাঙ্গীন প্রদাহিক জ্বরের উৎপত্তি হয় এবং তাতে (বেলেডোনা নির্দেশিত হলেও) ঠিকমত ইহা ব্যবহৃত হলে ঔষধটিই স্থানিক ও সর্বাঙ্গীনভাবে অর্থাৎ প্রদাহ ও জ্বর উভয়ই সারিয়ে দেয়।
মন্তব্য-
হাতে বা পায়ে ফোঁড়া হলে বেলেডোনা সেবনে কি হবে? হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধবাদীরা একথা বলতে পারেন। কিন্তু কেবল বেলেডোনাই নয়, মারকিউরিয়াস, হিপার সালফ, ট্যারেন্টুলা কিউবেনসিসও অন্যান্য অনেক ঔষধেরও ফোঁড়া সারানোর শুণ আছে এবং এইসকল ঔষধ সেবন করালে আর বাহ্য প্রয়োগের দরকার হয় না। বেলেডোনা কেবল প্রাথমিক রক্তসঞ্চার জনিত বা প্রবল প্রাদাহিক অবস্থায় উপযোগী নহে, যদি একে ঠিকমত প্রয়োগ করা যায়, তাহলে সবকিছুই অঙ্কুরে বিনষ্ট করে এবং প্রদাহকে তার পরবর্তী অবস্থায় যেতে দেয় না। কিংবা যদিও তা হয়, তাহলে তত প্রবল হয় না জ্বর সামান্য হয়ে সেরে যায়।
৩। বেলেডোনা শিশুদের রোগে একটি সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ এবং ইহা ক্যামোমিলার সমকক্ষ।
বেলেডোনার রোগ হঠাৎ শুরু হয়, আগে থেকে কিছুই জানা যায় না। সিনায় হঠাৎ করে তীব্র জ্বরের আক্রমণ হয়, কখন কখন দুবার জ্বর উপস্থিত হয়, কিন্তু ওর সঙ্গে কৃমির উপসর্গ থাকে।
বেলেডোনার লক্ষণে শিশু এক মিনিট ভাল থাকে, আবার পরের মিনিটেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এইস্থানে বিশেষ লক্ষণগুলি হল শিশুর শরীর অতিশয় উত্তপ্ত হয়, মুখমণ্ডল লাল হয় ও উহার অর্ধসুপ্তি বা সেমিস্টুপার (Semi-stupour) জন্মে, অল্পক্ষণ পরে পরে সে চমকে চমকে উঠে, অথবা নিদ্রাবস্থায় এমনভাবে লাফিয়ে উঠে যে, মনে হয় তার আক্ষেপ জন্মাবে। এরূপ অবস্থায় বেলেডোনা উন্মত্ত জলরাশিতে তেল, ঢেলে দেওয়ার মত কাজ করে অর্থাৎ শিশুদের রোগের উপশম ঘটায়।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, বেলেডোনার প্রদাহ একোনাইটের প্রদাহ অপেক্ষা অনেক স্থানিক ভাবে দেখা যায়।
বিঃ দ্রঃ- একোনাইট আলোচনা করার সময় প্রদাহ ও প্রাদাহিক জ্বরে একোনাইট ও বেলেডোনার প্রভেদ আলোচনা করা হয়েছে। তাই ওদের মধ্যে গণ্ডগোল হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ দুটিকে গুলিয়ে ফেলে,তবে সেটি তার অজ্ঞতার পিরচয়।
মন্তব্য-
প্রত্যেক ঔষধেই অনুভূতি, অবস্থা, ধাতুপ্রকৃতি বা হ্রাস-বৃদ্ধি সম্বন্ধে কতকগুলি বিশেষ লক্ষণ থাকে, যা রোগ ও ঔষধ উভয়েই একান্ত নিজস্ব। এইসকল লক্ষণের প্রায়ই কোন কারণ দেখানো যায় না। তাছাড়া প্যাথলজিক্যাল দিক থেকে তাদের কারণ দেখানো সম্ভব নয় বা সম্ভব হলেও তার প্রয়োজন নেই। যা প্রায়ই পাওয়া যায় না, তা খুঁজে বের করার জন্য দীর্ঘকাল অপেক্ষা করার চেয়ে যা সত্য, তা সহজে মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ অপেক্ষা করার চেয়ে আমরা যা জানি, তার উপর নির্ভর করলেই ঔষধ ব্যবস্থাপকের মত কাজ কাজ করে। যদিও আমরা উহার ব্যাখ্যা দিতে বা কারণ দেখাতে পারি না। যেমন বলা যায়—কেন বেলেডোনার বেদনা হঠাৎ আরম্ভ হয়, কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ চলে যায়? আবার স্ট্যানামের বেদনা ক্রমে ক্রমে বেড়ে চরম সীমায় পৌঁছায় ও একই রকম ভাবে ক্রমে ক্রমে কমে বা সালফিউরিক অ্যাসিডের বেদনা ধীরে ধীরে আরম্ভ হয় ও হঠাৎ কমে যায় বা ক্রমে ক্রমে বেড়ে হঠাৎ থামে -তার কোন কারণ নির্দেশ করতে পারা যায় না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগন ইহা বুঝিয়ে দিতে পারুন বা পারুন, এইসকল লক্ষণানুসারে ঔষধ ব্যবস্থা করলে রোগী আরোগ্য লাভ করে।
গ্যারেলী বলেছেন যে- “যে সকল স্থানে অনুভূতি বা গতির সত্বরতা বা আকস্মিতার প্রাধান্য থাকে, সেখানে বেলেডোনা উপযোগী, ইহা অন্যান্য ঔষধ অপেক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ।”
তবে ইহা নিশ্চিত যে, আমরা প্যাথলজিক্যাল বা নিদানগতভাবে কারণ দেখাতে পারলেও সদৃশবিধান মতে ঔষধ প্রয়োগ করে আমরা আমাদের রোগীদের আরোগ্য করতে পারি, চার্ট বা কম্পাস নেই বলে অকূল সমুদ্রে পড়ি না। তাছড়া আমরা জানি, যে, এইসকল লক্ষণ প্রকৃতির অভিব্যক্তি এবং যে বিষ প্রয়োগে অনুরূপ অভিব্যক্তি উৎপন্ন করতে পারে, তাহাই রোগীকে আরোগ্য করতে পারে। এর বেশী আর কি দরকার? এর ইহা সত্য নচেৎ হোমিওপ্যাথি একটি জুয়াচুরি।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধে লক্ষণের সাদৃশ্যই প্রয়োজিত হয়ে থাকে। ঔষধের লক্ষণ এবং রোগীর লক্ষণ সম্যকরূপে মিলে গেলেই সেই ঔষধে রোগ আরোগ্য হয়। তাছাড়াই সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত সহজ তথ্যটি এই যে, ঔষধের লক্ষণসমূহ রোগীর, লক্ষণসমুহের দৃশ হলে নিদান যা হোক না কেন, ঔষধটি রোগীকে আরোগ্য করে
(যদি আরোগ্য আদৌ সম্ভব হয়)। ইহাই বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি শ্রেষ্ঠতম আবিস্কার। আবিষ্কারক হ্যানিম্যানের নাম অক্ষয় হোক।
৪। শিরঃপীড়া
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, বেলেডোনা রক্তসঞ্চয় জনিত শিরঃপীড়ার একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। বাস্তবিক ক্ষেত্রে উহা তাই এবং রক্তসঞ্চয় জনিত শিরঃপীড়াই বা কেন, স্নায়বীয় শিরঃপীড়াতেও ইহা উপকারী। মাথায় রক্তসঞ্চয়ের পূর্বোক্ত নিদর্শনগুলিসহ দপদপানি বেদনা এই ঔষধের লক্ষণ।
তবে বেলেডোনার মাথাবেদনা রক্তসঞ্চয় জনিতই হোক বা স্নায়বিকই হোক, সামনের দিকে হেট হলে, মাথা নোয়ালে বা শুলে কষ্ট বাড়ে। তাছাড়া রোগীকে খাড়াভাবে রাখা থেকে অন্য অবস্থানে আনলেই উহার কষ্ট বাড়ে। শুলে বাড়ে বেলেডোনার একটি বিশেষ নির্ভরযোগ্য লক্ষণ।
রোগী বিবরণী-
একজন স্ত্রীলোকের স্তনে দীর্ঘকাল স্থায়ী বিবৃদ্ধি, ফুলা ও বেদনা ছিল এবং তাকে স্তনের ক্যানসার বলে সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু বেদনা শুলে অতিশয় বাড়ত দেখে বা কেবল এই লক্ষণ দ্বারা পরিচালিত হয়ে কয়েক মাত্রা বেলেডোনা দেওয়ায় রোগিণী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে।
(ডাঃ লিপি)
তাছাড়া আমি (ডা. ন্যাশ) বিভিন্ন প্রকারের অনেক রোগীতেও এই লক্ষণটি লক্ষ্য করেছি এবং সত্য বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।
৫। টনসিলাইটিস
বেলেডোনার মত অন্য কোন ঔষধ গলার সঙ্গে এত বেশী সম্বন্ধ যুক্ত নয়। তালু ও তালুমূলের স্ফীততা সহকারে বা ফুলা ব্যতীত গলায় জ্বালা, শুকনো বোধ (স্যাবাডিলা) ও সঙ্কোচন বোধ; (গলার মধ্যে শুকনো বোধের আরাম পাওয়ার জন্য বার বার ঢোক গিলবার প্রবৃত্তি – লাইসিন) সময়ে সময়ে অত্যন্ত তীব্র হতে দেখা যায়।
এক সময় আমি (ডাঃ ন্যাশ) বেলেডোনা দ্বারা বিষাক্ত এইরূপ একটি রোগীকে দেখেছিলাম। যার এই লক্ষণগুলি ভীষণভাবে যন্ত্রণাদায়ক ছিল।
৬। পেটের বেদনা
পেটে বেলেডোনার দুটি অতি বিশেষ লক্ষণ আছে, যেমন:
ক) পেটের টাটানি বাড়ে অতি সামান্য ঝাঁকুনিতে, হাঁটায়, পা ফেলায় এমনকি যে চেয়ারে বসে থাকে বা যে বিছনায় শুয়ে থাকে, তার ঝাঁকুনিতেও।
খ) পেটের নীচের দিকে চাপ বোধ, মনে হয় যেন পেটের ভিতরে বস্তুসমূহ যোনিদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়বে এবং প্রাতঃকালে এর বৃদ্ধি।
শেষাক্ত লক্ষণটি অন্যান্য ঔষধেও আছে। বিশেষ করে লিলিয়াম টাইগ্রিনাম ও সিপিয়া-তে ইহা দেখা যায়।
তবে বেলেডোনার নীচের দিকে চাপ দেওয়া লক্ষণটির সঙ্গে পীঠে একপ্রকার বেদনা থাকে মনে হয় পিঠ যেন ভেঙ্গে যাবে। ঘুমলে বা ঘুমবার সময় চমকে চমকে উঠা ও লাফিয়ে উঠা বা পেশীর স্পন্দন বা সংঙ্কোচন বেলেডোনার বিশেষ লক্ষণ। তাছাড়া রোগী ঘুমে কাতর কিন্তু ঘুমতে পারে না বা ঘুমের মধ্যে আর্তনাদ করে বা কোঁকায়— বেলেডোনার লক্ষণ।
৭। বেলেভোনার রোগীর মাথা ঢাকা রাখলে ভাল থাকে; মাথার ঢাকা খুললে বা চুল কাটলে তার সর্দি লাগে (সাইলিসিয়া, গ্লোনয়নের রোগীর মাথায় টুপী সহ্য হয় না)।
৮। ত্বকের সৰ্ব্বত্র সমান, মসৃন, চকচকে উজ্জ্বল ও টকটকে লাল, তাছাড়া এত গরম যে স্পর্শ করলে হাতে জ্বালা অনুভব হয় বা পুড়ে যাওয়ার মত হয় বেলেডোনার ইহা বিশেষ প্রকৃতিগত লক্ষণ (গ্যারেন্সী)।
৯। বেলেডোনায় অন্যান্য লক্ষণ সহযোগে খিঁচুনি বা কনভালশান সচরাচর বর্তমান থাকে।
মন্তব্য-
আমি এখানে এই উপকারী ঔষধটির মোটামুটি একটি বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেছি। তবে এর গুণাবলী সম্বন্ধে একটি উপযোগী গ্রন্থ লেখা যেতে পারে। আমাদের ভৈষজ্য তত্ত থেকে যদি এই ঔষধটি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে এর অভাব যে পরিমাণে অনুভূত হবে, সে অভাব আর কোন ঔষধ তুলে দিলে অনুভূত হবে না। কিন্তু এখন আমরা একে পরিত্যাগ করব।