Bor | চঞ্চলচিত্ত, সহজে ভীত, অল্পতেই কাতর। |
Bor | নিম্নগতিতে ভয়, শিশুকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে আরম্ভ করলে শিশু তাকে জড়িয়ে ধরে ও কেঁদে উঠে, ঘুমন্ত শিশুকে শোয়াতে গেলে চমকে উঠে। |
Bor | স্তন্যপান করবার সময়, পায়খানা ও প্রস্রাব করবার পূর্বে শিশু কান্না করে। |
Bor | সামান্য শব্দ, এমন কি দূরের শব্দ শুনে রোগী চমকে উঠে। |
Bor | কোন কাজ করার সময় উক্ত কাজের বিষয়ে চিন্তা করলে বমিভাব হয়। |
Bor | মুখের ভিতর সাদা প্রলেপ, ক্ষত ও উত্তাপ, মুখের ঘায়ের জন্য শিশু স্তন্যপান করতে চায় না। |
প্রায় সব অসুখেই নিচের দিকে নামতে ভয় পায়। নীচে নামতে ভীষণ উদ্বেগ—শিশুকে বিছানায় বা দোলনায় শোয়াতে গেলে কেঁদে ওঠে ও ধাত্রীকে জড়িয়ে ধরে। দোল দিয়ে নাচালে, এদিকে ওদিক দোলালে, সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলে, পাহাড় হতে দ্রুত নীচে নামতে গেলে, ঘোড়ার পিঠে চড়ালে ভয় পায় (স্যানিকি-তুলনীয়)
শিশু হঠাৎ জেগে উঠে চিৎকার করতে থাকে, দোলনার পাশে চেপে ধরে কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না (এপিস, সিনা, ষ্ট্র্যামো)।
অত্যন্ত স্নায়বিক সামান্য গোলমালে, তীব্র শব্দে, কাশিঁ, হাঁচি, কান্নার শব্দে, দেশলাই জ্বালানোর শব্দেও সহজেই ভয় পায় (আসারাম, ক্যালেডি)।
চুলে গন্ধ, জটা বাঁধে, চুলের ডগা চিরে যায়, জট পাকিয়ে যায়, চুলের জটা কাটলেও আবার জটা বাঁধে চিরুণী দিয়ে মসৃণভাবে আচড়ান যায় না (এসি-ফ্লু, লাইকো, সোরিন, টিউবার)।
চোখের পাতায় শুকনো আঠার মত পিচুটিতে ভরা থাকে। সকালে চোখ জুড়ে যায়, চোখের কোণাগুলো বেঁকে ভিতর দিকে ঢুকে আসে তাতে চোখে প্রদাহ হয় বিশেষতঃ চোখের বাইরের কোণের প্রদাহ হয়, চুল উসকো-খুসকো হয়ে থাকে ।
নাকে মামাড় পড়ে, প্রদাহ হয়, নাকের ডগা চকচকে লালবর্ণ হয়। অল্পবয়সী মেয়েদের নাক লাল হওয়া রোগে। ডানদিকের নাক বন্ধ বা প্রথমে ডানদিক পরে বাঁদিক বন্ধ হয় সাথে সবসময় নাক ঝাড়ার প্রবৃত্তি (এমন-কা, ল্যাক-ক্যা, ম্যাগ-মি)।
জাড়ীঘা- মুখে, জিবের উপর, গালের ভিতর-খাওয়ার সময় বা স্পর্শ করলে সহজেই রক্ত বার হয়—তাতে শিশুর স্তন্যপানে কষ্ট হয় সাথে মুখের ভিতর গরমভাব, মুখ শুকনো ও পিপাসা থাকে (আর্স)। জিব ফাটাফাটা রক্ত বার হয় (অরাম); দাঁত ওঠার সময় লালাস্রাব হয়। জাড়ী ঘা হতে মুখে ঘা হয় যা স্পর্শে, লবণাক্ত বা টক খেলে বাড়ে; বৃদ্ধদের মুখে ঘা, কখনো কখনো দাঁতের মাড়িতে ঘা হয় (এলুমেন)।
শিশুদের বারে বারে প্রস্রাব, প্রস্রাবের আগে কেঁদে ওঠে (লাইকো, স্যানিকি, সার্সা)।
শ্বেতপ্রদর – প্রচুর, ডিমের সাদা অংশের মত, শ্বেতসারের মত। মনে হয় যেন কিছুটা গরম জল বের হল এই রকম অনুভূতি, দুই ঋতুর মাঝে দু-সপ্তাহ ধরে প্রদরস্রাব (বোভিষ্টা, কোণি তুলনীয়)।
রোগীর চামড়া অস্বাস্থ্যকর— সামান্য আঘাতে পেকে ওঠে (ক্যালেন্ডু, হিপার, মার্ক, সাইলি)।
সম্বন্ধ— ক্যাল্ক-কা, সোরিন, স্যানিকি, সালফের পর ভাল খাটে। বোরাক্সের পর আর্স, ব্রায়ো, লাইকো, ফস, সাইলি ভাল খাটে ।
এসেটিক-এ, ভিনিগার ও মদের সাথে শত্রু সম্বন্ধ = এদের আগে বা পরে ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
বাড়ে – নিম্নগতিতে, হঠাৎ সামান্য শব্দে, ধূমপানে যা থেকে উদরাময় হতে পারে, ভিজে ঠান্ডা হাওয়াতে, প্রস্রাবের আগে।
কমে – চাপ দিলে, যে দিকে ব্যথা সেই দিক চেপে রাখলে ।
শক্তি – ৬, ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি ।
(এ্যাপথা বা জাড়ী ঘা— মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ছোট ছোট ঘা যেমন থ্রাস রোগে ।এ-দুপ্রকার। (A) এ্যাপথা বেডনার‘স্-বাচ্চাদের মুখে শক্ত তালুতে সাদা সাদা ঘা। (B) এ্যাপথা ক্যাচেকটিক- জিবের তলায় ঘা, ধাতুগত রোগে সাধারণতঃ দেখা যায়।)
পাকাশয় ও অন্ত্রঘটিত গোলযোগ। লালাস্রাব, বমি বমিভাব, বমি, শূলবেদনা, উদরাময় পতনাবস্থা, অ্যালবিউমিন যুক্ত প্রস্রাব, প্রস্রাবে তলানি ও প্রস্রাব থলির আক্ষেপ। প্রলাপ বকা, দৃষ্টি শক্তির পরিবর্তন, রক্তপ্রস্রাব এবং চামড়ার উপর উদ্ভেদ, এই সকল লক্ষণ বেশি মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করার পর দেখা গিয়েছে। নীচের দিকে চলাফেরার ভয়, এ লক্ষণটি প্রায় সব অবস্থাতেই বর্তমান থাকে। হোমিওপ্যাথিক মতানুসারে এই ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে, অদ্ভুত স্নায়বিক লক্ষণগুলি খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং বারে বারে তা প্রমাণি হয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে। মৃগী রোগে এটি একটি মূল্যবান ঔষধ। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপর সাদা বর্ণের ক্ষত।
মন – তীব্র মানসিক আতঙ্ক, বিশেষ করে নীচের দিকে নামার সময়, দোলনায় দোলার সময়, কোলে করে সিঁড়ি দিয়ে নীচের দিকে নামার সময়, এবং শোবার সময় নীচের দিকে নামার সময় ভীতি পূর্ণ মুখমণ্ডল, রোগীকে শুয়ে দেবার সময় চমকিয়ে উঠে ও হাত উপর দিকে ছোঁড়ে, যেন রোগীর পড়ে যাবে বলে ভয় হয়েছে। অত্যন্ত স্নায়রি খুব সহজেই ভয় পায়। হঠাৎ কোন শব্দে অনুভূতিপ্রবণ। বন্দুকের শব্দে তীব্র ভয়ভাব এমনকি শব্দ যদি বহুদূরেও হয়ে থাকে। বজ্রের শব্দে ভয়।
মাথা – অবিরাম বেদনা, তৎসহ বমি বমি ভাব ও সারা শরীরে কম্পন। মাথার চুল অগ্রভাগের দিকে জট পাকিয়ে যায়, কিছুতেই তা পৃথক করা যায় না। (ভিঙ্কা মাইনর)।
চোখ – চোখের পাতার চুলগুলি ভিতর দিকে বেঁকে যায়। চোখের পাতা প্রদাহিত চোখের পাতা, চোখের তারার উপর কেটে যায়। চোখের পাতা পিছনদিকে ঘুরে যায়।
কান — সামান্য শব্দে অত্যন্ত অনুভূতি প্রবণ, কিন্তু তুলনামূলক ভাবে উচ্চস্বরে শব্দে ততটা বিরক্ত হয় না।
নাক – যুবতী স্ত্রীলোকের নাক লালবর্ণযুক্ত।(ট্রোমকার্ব)। লাল ও উজ্জ্বল স্ফীতি তৎসহ দপপানি ও টানভাবের মত অনুভূতি। নাকের অগ্রভাগ স্ফীত এবং ক্ষতযুক্ত শুষ্ক মামড়িযুক্ত।
মুখমণ্ডল – ফ্যাকাশে, মাটির মত, তৎসহ মুখমণ্ডলে কষ্টের ছাপ। স্ফীতি, তৎসহ নাকে ও ঠোঁটে ফুস্কুড়ি। মুখমণ্ডল মাকড়সার জালের দ্বারা ঢাকা এই জাতীয় অনুভূতি।
মুখগহ্বর – মুখগহ্বরের ভিতর সাদা রঙ্গের ক্ষত। সাদা ছত্রাকের মত উদ্ভেদ। মুখগহ্বরে ভিতর উত্তপ্ত ও স্পর্শকাতরতা, খাবার সময় এবং স্পর্শ কালেই ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হয়ে থাকে। মাড়ীতে যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া। শিশু মায়ের দুধ পান করার সময় কাঁদে। মুখে আস্বাদ তিতো। (ব্রায়োনিয়া, পালসেটিলা, কুপ্রাম)।
পাকস্থলী ও উদর – খাবারের পরে উদরের স্ফীতি, বমি। পাকাশয়িক শূলবেদনা, যা জরায়ুর গোলযোগ থেকে উৎপন্ন হয়। বেদনা, যেন মনে হয় উদরাময় দেখা দেবে।
মল – পাতলা, শিশুদের দূর্গন্ধযুক্ত মল।
উদরাময়, দূর্গন্ধযুক্ত, মলত্যাগের আগে শূল বেদনা, শ্লেষ্মাযুক্ত মল তৎসহ মুখের টাটানি ব্যথাযুক্ত সাদা ঘা।
প্রস্রাব – উত্তপ্ত, লিঙ্গের ছিদ্রের মুখে তীব্র বেদনা। ঝাঁঝাল গন্ধযুক্ত। শিশু প্রস্রাব করতে ভয় পায়, প্রস্রাবের পূর্বে চীৎকার করে উঠে (সার্নাপ)। কাপড়ের উপর ছোট ছোট লাল কণা থেকে যায়।
স্ত্রীরোগ – প্রসব বেদনা, তৎসহ বারে বারে ঢেকুর তোলা। স্তন থেকে প্রচুর পরিমাণে দুধ বেরিয়ে থাকে। (ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, কোনিয়াম বেলেডোনা)। শিশু যে দিকের স্তন্য পান করে, তার বিপরীত দিকের স্তনে বেদনা। প্রদর স্রাব, অনেকটা ডিমের সাদা অংশের মত,তৎসহ রোগী মনে হয় যেন গরম জলের ধারা বয়ে চলেছে। ধাতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে, প্রচুর তৎসহ মোচড়ানি, বমি বমি ভাব এবং পাকস্থলীতে বেদনা, বেদনা কোমর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ধাতুস্রাব কালে বেদনা। বন্ধ্যাত্ব। সহজে গর্ভসঞ্চারে সাহায্য করে। ভগাঙ্কুর স্ফীতি বলে মনে হয় তৎসহ খোঁচা মারার মত বেদনা। যৌনিপথের চুলকানি ও একজিমা।
শ্বাস-প্রশ্বাস – দমবন্ধ করার মত তীব্র কাশি, শ্লেষ্মা, ছাতা পড়ার মতস্বাদ ও গন্ধযুক্ত। বুকের ভিতর সূঁচ ফোটার মত বেদনা তৎসহ শ্বাস নেওয়া ও কাশি। কাশি তৎসহ ছাতা পড়ার মত স্বাদযুক্ত, বক্ষাবরক
ঝিল্লীর বেদনা, ডানদিকের উপরের অংশে কষ্ট বেশি হয়। শুয়ে থাকার সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, ঐ সময়ে রোগী লাফিয়ে উঠে পড়ে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়, যার ফলে বুকের ডানদিকে বেদনা হয়ে থাকে।সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
অঙ্গ-প্রতঙ্গ – মনে হয় হাতে মাকসাড় জাল জড়িয়ে আছে। হাত, হাতের আঙ্গুল ও সন্ধিস্থানের পিঠে চুলকানি। বুড়ো আঙ্গুলের অগ্রভাগ দপদপকর বেদনা। পায়ের তলায় সূঁচ ফোটার মত বেদনা। গোড়ালিতে বেদনা, পায়ের আঙ্গুলের গোলাকার অংশের প্রদাহ। হাতের ও পায়ের আঙ্গুলের একজিমা তৎসহ নখগুলি ধ্বংস হয়ে যায়।
চামড়া – সোরিয়াসিস। মুখমণ্ডলের ঈরিসিপেনাল। হাতের আঙ্গুলের সন্ধিস্থানের পিঠে অংশে চুলকানি। অস্বাস্থ্যকর চুলকানি, সামান্য আঘাত পুঁজ হয়ে উঠে। হার্পিস (রাস)। ঈরিসিপেলাসের মত প্রদাহ। তৎসহ স্ফীতি এবং চামড়ার টানটান। শতিস্ফোটক, মুক্ত বাতাসে আরাম। হাতে এবং হাতের আঙ্গুলে ট্রেড ঈরাপশন, চুলকানি ও খোঁচা মারার মত বেদনা। মাথার চুলে জটা।
ঘুম – কামোত্তেজনার স্বন দেখে। কিছুতেই গরমের জন্য ঘুমাতে পারে না, বিশেষ করে মাথায় গরম ভাব। ঘুমের ভিতর ভয় পেয়ে কেঁদে উঠে (বেল)।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, নিম্নগতিতে, শব্দে, ধূমপানে, উষ্ণ আবহাওয়ায়, ধাতুস্রাবের পর।
উপশম – চাপে, সন্ধ্যায়, ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়।
সম্বন্ধ – এসেটিক অ্যাসিড, ভিনিগার এবং মদ, এইগুলি এই ঔষধের প্রতিবন্ধক।
দোষঘ্ন – ক্যামোমিলা, কফিয়া।
তুলনীয় – ক্যালকারিয়া কার্ব, ব্রায়োনিয়া, স্যানিকিউলা, সালফিউরিক অ্যাসিড।
শক্তি – ১x থেকে ৩x বিচূর্ণ। চর্মরোগের ক্ষেত্রে এই ঔষধ একাদিক্রমে কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করার প্রয়োজন। স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের বাইরের অংশের চুলকানিতে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায়। ঠাণ্ডা লেগে হঠাৎ করে স্বরভঙ্গের ক্ষেত্রে, মটরের দানার মত এক টুকরা সোহাগা মুখের ভিতর ফেলে দিলে. গলার স্বরের এইরূপ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়ে থাকে যা কেবলই যাদু বলে মনে হয়। এবং এইভাবে কয়েক ঘন্টা পর পর ব্যবহার করা যায় এবং যা গলার স্বর স্বচ্ছ ও পরিষ্কার রাখে।
যে-সকল গার্হস্থ্য ঔষধ স্থানিক রোগের জন্য সিদ্ধকর পদার্থস্বরূপ এবং আরোগ্যকর হিসাবে বহুকাল যাবৎ ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে, তাহাদের মধ্যে সোহাগা অন্যতম। স্তন্যদাত্রী মাতার ও শিশুর “মুখক্ষতে প্রাচীনকালের পরিবারসমূহের মধ্যে সোহাগা ও মধু প্রলেপ হিসাবে ব্যবহৃত হইত। ইহার যে বিস্তৃত ব্যবহার হইয়াছে, তাহাতে হোমিওপ্যাথিগণ বিস্মিত হইয়া ভাবিবেন যে লোকেরা পূর্বে বিশেষ কিছু দেখিতে পাইয়াছিলেন কিনা, আর একথাও সত্য যে বোরাক্স দ্রুত আরোগ্য করিয়া থাকে। ইহা যে ঐরূপ করে তাহাও আশ্চর্য নহে। কারণ বোরাক্স পরীক্ষাকালে মুখের উপক্ষতযুক্ত অবস্থা উৎপন্ন করিয়াছিল, ঐ ক্ষত গলা পর্যন্ত, এমন কি পাকস্থলী পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল। জননেন্দ্রিয় ও মলদ্বার ঐরূপ উপক্ষতে ছাইয়া গেলেও বোরাক্স তাহা আরোগ্য করে।
বোরাক্স প্রধান লক্ষণ উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা ও অত্যনুভূতি। সে সামান্য বিষয়ে উৎকণ্ঠিত হয়। সে প্রত্যেকটি শব্দে, অপ্রত্যাশিত সংবাদ শুনিয়া, সঙ্গীতে, উত্তেজনা হইতে চমকিয়া উঠে। তাহার মধ্যে এই উৎকণ্ঠা বা স্নায়বিকতা, এই অবর্ণনীয় অনুভূতি উপরদিকে অথবা নিম্নদিকে গতিতে বাড়িয়া উঠে। এলিভেটার যন্ত্রে উপর দিকে উঠিতে গেলে যে গতি জন্মে, তাহাতে সে পাগলের মত হইয়া উঠে, কিন্তু নীচের দিকে নামার সময় সে আরও খারাপ হয়। সমস্ত রোগ লক্ষণ নিম্নদিকের গতিতে বর্ধিত হয়। বাধা নিয়মের চিকিৎসায় বলা হইয়াছে যে, শিশুদের সর্বপ্রকার মুখক্ষতে, নিম্নগতিতে বৃদ্ধি থাকিলে, বোরাক্সই তাহার ঔষধ। মাতা যখন শিশুকে শয্যায় শোওয়াইতে যান, সে প্রায়ই জাগিয়া উঠে এবং ভয়ে চিৎকার করিয়া উঠে। যদি তুমি এলিভেটারে চড়িয়া ঐসব উচ্চ বাড়ীর ছাদে উঠ এবং নামিয়া আইস, তাহা হইলে এই উৎকণ্ঠা যে কিরূপ তাহা ভালভাবে বুঝিতে পারিবে। ঐরূপ দ্রুত গতিতে, প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষেই পাকস্থলীর মধ্যে একপ্রকার উদ্বেগ বোধ এবং পড়িয়া যাওয়ার মত অনুভূতি স্বাভাবিক, এরূপ অনুভূতি স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষেও স্বাভাবিক, আর তোমরা যদি ঐ অনুভূতির তীব্রতাকে বর্ধিত করিতে পার, তাহা হইলে বোরাক্সে অবস্থা পাইবে; উহাতে সামান্যমাত্র নিম্নগতি, পাহাড় হইতে ঘোড়ায় চড়িয়া নামার নিম্নগতি অথবা সিঁড়ি দিয়া নীচে নামার নিম্নগতি অথবা শিশুকে কোলে লইয়া মাতা যখন নীচে নামেন সেই নিম্নগতি, প্রবল উপচয়ের সৃষ্টি করিয়া থাকে। সমস্ত স্নায়ুগুলিই যেন ভয়কাতর থাকে।
আমরা লক্ষ্য করি যে, বোরাক্সে শরীরের সর্বত্রই বর্ধিত কার্যকারিতা থাকে। তাহার শ্রবণশক্তি প্রখর হয়, সে পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে অত্যনুভূতিযুক্ত হয়, অতি উৎকণ্ঠিত হয়। তাহার সর্বাঙ্গেই উত্তেজনাপ্রবণতা থাকে। ঘোড়ায় চড়িয়া পাহাড়ের নীচের দিকে নামিলে মাথা ঘোরে। স্নায়বিক উত্তেজনা, ভয় ও আশঙ্কা। ইহা বোরাক্সের একটি প্রবল লক্ষণ। ইহার এইরূপ অনেক লক্ষণ আছে, কিন্তু স্নায়বিক উপাদানগুলি এই প্রকার আচরণ করে। এই ঔষধ সম্বন্ধে আলোচনা কালে আরও অনেক বিষয় প্রকাশ পাইবে, কিন্তু এইটিকেই বোরাক্সের মানসিক অবস্থার প্রধান কথা বলিয়া ধরা চলে এবং বহুল পরিমাণে উহাই বোরাক্স রোগীর চাবিকাঠিস্বরূপ। নিম্নগতিতে অথবা দোল খাইলে উৎকন্ঠাপূর্ণ অনুভূতি।” এই অবস্থা বর্তমান থাকিলে উদরাময় আরোগ্য হইবে। এই অবস্থা বর্তমান থাকিলে মুখক্ষত আরোগ্য হইবে। এই চাবি বর্তমান থাকিলে, বাত, মাসিক ঋতুর গোলযোগ, অন্য বহুবিধ রোগ বোরাক্স প্রয়োগে আরোগ্য হইবে।
ইহাতে হিষ্টিরিয়া রোগের প্রকাশ আছে। “এক কাজ করিতে করিতে আর এক কাজ আরম্ভ করে।” ইহাতে শরীরের মধ্যে অস্থির, স্নায়বিক, উৎকণ্ঠিত ও উত্তেজনাবিশিষ্ট অবস্থা আছে। শিশুকে নাচাইলে বা উঁচু-নীচু করিয়া লুফিলে সে কর্কশ স্বরে চিৎকার করিয়া উঠে। দোল খাওয়া, উঠা-পড়া প্রভৃতিতে মস্তিষ্কের মধ্যে যে গতির, যে ঊর্ধ্ব ও নিম্নগতির সৃষ্টি হয় তাহাতে রোগী আত্মহারা হইয়া উঠে, সে বুঝিতে পারে না যে, কোথায় আছে, হতবুদ্ধিভাব এবং শিরোঘূর্ণন উপস্থিত হয়। যদি কেহ শিশুকে দোল দেয়, তাহার মুখে উল্কাব্যঞ্জক ভাব প্রকাশ পায়। পাহাড় হইতে ঘোড়ায় চড়িয়া দ্রুত নিম্নে নামিতে গেলে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।” “রাত্রি ১১টা পর্যন্ত উৎকণ্ঠা বাড়িতে থাকে।” উৎকণ্ঠা বৃদ্ধির এই অদ্ভুত সময় আমি বোরাক্সে লক্ষ্য করিয়াছি। যে সকল স্ত্রীলোকের নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে উন্মাদ লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহাদের স্নায়বিক উপসর্গ ও মানসিক অবস্থা, তাহাদিগকে রাত্রি ১১টা পর্যন্ত জাগাইয়া রাখে। অনেক সময়ে উন্মাদ রোগীদের মধ্যে এরূপ দেখিবে যেন তাহাদের ভূতে পাইয়াছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই একটি সুস্পষ্ট বিরামকাল আসিবে এবং তাহারা এরূপভাবে কথা কহিবে, যেন কিছুই হয় নাই। ঠিক এইরূপ ভাব বোরাক্সেও আছে, রাত্রি ১১টার সময় একটি প্রবল পরিবর্তন ঘটে, ঐ সময়ে উৎকণ্ঠা এবং স্নায়বিক উত্তেজনা থামিয়া যায়। “খিটখিটে ভাব, বদমেজাজ এবং কুড়েমি বাড়িতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না মলত্যাগ হইয়া, উহার শান্তি হয়। “উৎকন্ঠাপূর্ণ চিৎকার শুনিয়া সে চমকাইয়া উঠে; কোনরূপ অপ্রত্যাশিত শব্দ শুনিলে, কোন কিছু চেয়ার হইতে মেঝেয় পড়িয়া যাওয়ার শব্দ শুনিলে অথবা অকস্মাৎ কেহ দরজা খুলিলে, সে চমকিয়া উঠে। এইরূপ সবকিছুই বোরাক্সের প্রকৃতির অনুরূপ। যদি তুমি বোরাক্সের সহিত ‘নেট্রামগুলির, বিশেষতঃ নেট্রাম কাৰ্ব্ব ও নেট্রাম মিউরে’র তুলনা কর, তাহা হইলে স্নায়বিক উত্তেজনা সম্বন্ধে একপ্রকার আশ্চর্য্য সাদৃশ্য দেখিতে পাইবে। সমগ্র সোডিয়াম পরিবারে মধ্যেই শব্দ হইতে বৃদ্ধি, শব্দে অত্যনুভূতি স্নায়ুমন্ডলের অতি-উত্তেজনা আছে। ঐসব ঔষধের রোগী অদ্ভুত প্রকারের অত্যনুভূতিযুক্ত হয়।
“কাজের বিষয়ে চিন্তা করিতে থাকিলে প্রবল বমনেচ্ছা দেখা দেয়।” বোরাক্স অনেকবার এই প্রকারের রোগ আরোগ্য করিয়াছে। আমি উহাকে এইভাবে উপস্থিত হইতে দেখিয়াছি যে কোন প্রকার চিন্তা করিতে থাকিলে তাহার বমি বমিভাব ও উত্তেজনা দেখা দেয়, তখন তাহাকে কাজ ছাড়িয়া কিছুক্ষণ বিশ্রাম করিতে হয়, আবার, তারপর সে আবার কাজ করিতে থাকে এবং তাহার পাকস্থলী পীড়িত হইয়া উঠে, সে পুনরায় বিশ্রাম লইতে বাধ্য হয়। বোরাক্সের মানসিক লক্ষণ মানসিক পরিশ্রমে বৃদ্ধি, বিশ্রামে, উত্তেজনায়, নিম্নভিমুখী গতিতে বৃদ্ধি।
তাহার জ্ঞানস্থান সম্বন্ধে আরও পরীক্ষা করিলে দেখা যায়; “পর্বত হইতে, বা সিঁড়ি দিয়া নামিতে শিরোঘূর্ণন ও মাথায় পূর্ণতা বোধ।” ইহাও একপ্রকার উদ্বেগ। এই ঔষধে যথেষ্ট শিরোঘূর্ণন আছে, সময়ে সময়ে অবিরত শিরোঘূর্ণন দেখা দেয়, উহা নিম্নগতিতে বাড়ে এবং তাহাকে কিছু না করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে হয়। ইহাতে বহু প্রকার রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া আছে, চাপনবৎ শিরঃপীড়া আছে এবং মাথায় অত্যন্ত উত্তাপবোধ আছে।
ইহাতে নানাবিধ চক্ষু-লক্ষণ আছে। “চক্ষুর পাতার দানাময় অবস্থা।” চক্ষুর পক্ষগুলি ভিতর দিকে চক্ষুর মধ্যে বাকিয়া যায় ও চক্ষুকে প্রদাহিত করে; উদ্ভেদ জন্মায়। চক্ষুপাতায় দানা দানা জন্মে এবং উহার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি পুরু হইয়া উঠে, চক্ষের সঙ্কোচন, ক্ষত ও ভিতর দিকে আকর্ষণ। “নিম্নপাতা দুইটি সম্পূর্ণভাবে উল্টাইয়া যায়।” “চক্ষু খুলিতে কষ্ট হয়।
‘সোডিয়াম’জাত সকল ক্ষারগুলির ন্যায়, নাকের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর পুরাতন প্রদাহ থাকে, সর্দি ঝরে, যথেষ্ট স্রাব হয়, নাকে মামড়ি পড়ে, নাক অবরুদ্ধ হইয়া যায়। সমগ্র নেট্রাম পরিবারেই নাকে এইরূপ শুষ্ক মামড়ি পড়া ও নাক হইতে প্রচুর স্রাব আছে। নেট্রাম মিউর, প্রধানতঃ সাদা স্রাব উৎপাদন করে, বোরাক্সও ঐরূপ করে, ‘নেট্রাম সালফ’ নাক হইতে হলদে স্রাব, এমন কি হরিদ্রাভ সবুজ স্রাব নির্গত করে। বোরাক্সও সবজেটে স্রাব উৎপন্ন করে বলিয়া লিখিত আছে, কিন্তু ইহার প্রকৃতিগত স্রাব, যাহা ঔষধটির সাধারণ লক্ষণ, তাহা সাদা স্রাব।
শিশুর মুখ বিবর্ণ মাটির বর্ণ। “শিশুদিগের মুখের চারিদিকে ও কপালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুস্কুড়ি জন্মে।” ‘নেট্রাম মিউর’ সকল প্রকার জ্বর অবস্থায় এবং যখন রোগীর সর্দি লাগে, তখন মুখের চারিদিকে পোড়া নারাঙ্গার ন্যায় উদ্ভেদ জন্মায়। এই অবস্থায় বোরাক্সকে সময়ে সময়ে ভুলিয়া থাকা হয় এবং নেট্রাম মিউর’কেই চিন্তা করা হয়; কারণ নেট্রাম মিউর’ই পরিচিত ঔষধ। ‘নেট্রামে’র ধাতু বর্তমান থাকিলে কোন নেট্রাম’টি উপযোগী হইবে, তাহাকে স্বতন্ত্রীকরণ প্রণালীতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
“মুখে ও জিহ্বার উপরে উপক্ষত।” জিহ্বার উপর ও ভিতর দিকে উপক্ষত।” ইহাই বোরাক্স প্রয়োগের একমাত্র লক্ষণ নহে, যদিও বোরাক্স সেইসব ঔষধের অন্যতম, যাহাতে মুখের মধ্যে অত্যন্ত বেদনার জন্য শিশু মাতার স্তন অথবা বোতল ছাড়িয়া দেয়। অনেক চিকিৎসক এই লক্ষণটি পাইয়াই বোরাক্স প্রয়োগ করেন, কিন্তু ধাতুগত অবস্থা লক্ষ্য করা কর্তব্য, যাহাতে ঔষধটি প্রয়োগের ধাতুগত ভিত্তি থাকে। সালফ এসিড’ আরও সচরাচর নির্দিষ্ট হয়। “জিহ্বার উপর লালবর্ণ ফোস্কাসমূহ।” “পানের পরই বমন।” ইহাতে আশা করা চলে যে, উপক্ষত অবস্থাটি অন্ননলী দিয়া পাকস্থলী পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছে। তখন, অনেকগুলি পাকস্থলী-লক্ষণ দেখা দেয়, ঐগুলি সম্ভবত এই অবস্থার ফলস্বরূপ উপস্থিত হয়। “মুখগহ্বরের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী অতিশয় লাল হইয়া উঠে।” এইরূপ মুখক্ষত, মাতার থাকিলে অথবা শিশুর থাকিলে, তাহা বোরাক্স দ্বারা আরোগ্য করা যায়। প্রত্যেকবার আহারের পর উদরের বায়ুস্ফীতি।” “অবিরাম বমন।” অম্নলালা বমন। পাকস্থলীর উপক্ষতবিশিষ্ট বোরাক্সের রোগীর মুখ বন্ধ হইয়া যায়, উকি উঠে এবং কাশি দেখা দেয় উহাকেই পাকস্থলীর কাশি বলে। মাতারা বলেন- “উহা পাকস্থলীর কাশি, কারণ উহার সহিত শিশুর মুখ বন্ধ হইয়া যায় উকি উঠে। “পাকস্থলীর কাশি ও তৎসহ বেদনা প্লীহাস্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।” শিশুদিগের গ্রীষ্মকালীন উদরাময়ে বোরাক্সের প্রয়োজন হইতে পারে। মলদ্বারের চারিদিকে তোমরা উপক্ষতের মত আকৃতি দেখিতে পাইবে। দিবারাত্র সবুজ, পিচ্ছিল মল নির্গত হয়, শিশু কাতরভাবে কাঁদিতে থাকে, তাহার মুখ উপক্ষতযুক্ত হয়, সে শীর্ণ হইতে থাকে, ঘাড় বাঁকাইয়া পড়িয়া থাকে। “মল পুনঃ পুনঃ নরম হাল্কা হরিদ্রাবর্ণ এবং পিচ্ছিল ।” মলদ্বার দিয়া সিদ্ধ শ্বেতসারের ন্যায় প্রচুর তরল পদার্থ নির্গত হইয়া আসে, এই লক্ষণ বোরাক্স ও ‘আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম’ দুইটি ঔষধেই আছে। এরূপ অবস্থাও দেখা যায়, যখন সরলান্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহ পুরু হইয়া সরলান্ত্রের সঙ্কোচন দেখা দেয়, এবং উহা সরু হইতে হইতে অবশেষে পেন্সিলের ন্যায় সরু মল নির্গত হইতে থাকে। এইরূপ প্রাদাহিক অবরোধ বোরাক্স দ্বারা আরোগ্য হইয়া থাকে।
এইরূপ অত্যনুভূতিবিশিষ্ট শিশুদের প্রায়ই সর্দি হয়, তখন মূত্র নির্গমনকালে এত জ্বালা বারে যে, প্রথম মূত্রবেগের সঙ্গেই সে চিৎকার করিয়া, উঠে (কারণ, সে বুঝিতে পারে যে, এইবার তাহাকে মূত্রত্যাগ করিতে হইবে)। মূত্রত্যাগের ইচ্ছা জন্মিলেই সে চিৎকার করে। মূত্রত্যাগের পূর্বে বৃদ্ধি বলিয়া, এই কথাটিই বুঝান হইয়াছে। এরূপ নহে যে, মূত্রত্যাগের পূর্বে মূত্রসংক্রান্ত যন্ত্রাদি খারাপ হইয়া পড়ে, কিন্তু শিশু তাহাকে মূত্রত্যাগ করিতে হইবে—উপলব্ধি করিয়া কাতর শব্দ করে এবং চিৎকার করিয়া উঠে। “পুনঃ পুনঃ মূত্রপাত এবং তৎপূর্বে চিৎকার।” মূত্রে জ্বালা করে, আর শিশু কাঁদিতে আরম্ভ করিলেও তোমরাও বুঝিতে পার যে, শিশু এখনই মূত্রত্যাগ করিবে। মূত্রত্যাগের পর মূত্রনলীর মুখে ক্ষতবৎ বেদনা হয়।” “মূত্রত্যাগের প্রবৃত্তি কিন্তু এক ফোঁটা মূত্রও নির্গত হয় না।”
এই ঔষধে গণোরিয়া আরোগ্য হইয়াছে। যেখানেই শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী নির্গত হয়, সেখানে তোমরা তালির ন্যায় উপক্ষত আছে আশা করিতে পার। নেট্রাম মিউর’ ও ‘নেট্রাম কার্বের ন্যায়, ইহা পুরুষ ও স্ত্রীলোক উভয়েরই সঙ্গমপ্রবত্তি হরণ করে, ইহা রোগীকে অসাড় করে এবং জননেন্দ্রিয় ও মন উদাসীন অবস্থায় থাকে।
তারপর, আমরা স্ত্রীলোকদিগের জননেন্দ্রিয় সম্বন্ধে বোরাক্সের সর্বাপেক্ষা আশ্চর্য লক্ষণে উপস্থিত হইলাম, ইহার ঋতুপ্রবাহের মধ্যে খন্ড খন্ড শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী থাকে। বোরাক্স অতিশয় ভীষণ প্রকৃতির ঝিল্লীবিশিষ্ট বাধক বেদনা আরোগ্য করে, যদি প্রবাহের পূর্বে ও সময়ে ভয়ানক প্রসববেদনার ন্যায় বেদনা থাকে এবং মনে হয় যে, জরায়ু যোনিপথ দিয়া বাহির হইয়া পড়িবে । স্রাব সামান্যভাবে আরম্ভ হয়, কিন্তু একই প্রকার ভীষণ বেদনা চলিতে থাকে, এবং অবশেষে ঝিল্লী নির্গত হয়। ঝিল্লীটি জরায়ুর অধঃপাতিত অংশ হইলেও, আমি বোরাক্সকে উহা আরোগ্য করিতে দেখিয়াছি। এইরূপ রোগিণী নিম্নগতিতে সহজেই চমকিয়া উঠেন,—ঝিল্লীযুক্ত বাধক বেদনায় এই লক্ষণটিই যেন তোমার পথ নির্দেশ করে। রোগিণী নিম্নগতি, দোল খাওয়া, ঝুল খাওয়া প্রভৃতির ন্যায় গতিকে ভয় করেন। ঋতুকালে মস্তকে দপদপ করে, কর্ণে সে-সে করে।” “উদরে চিমটিকাটা ও মোচড়ানর ন্যায় বেদনা।” এই উক্তি দ্বারা কথাটি ঠিক বুঝান হইল না কারণ বেদনাটি, প্রসববেদনার ন্যায়; পাকস্থলী হইতে বিস্তরণশীল বেদনা।” কুঁচকিপ্রদেশে ছুরিকাবিদ্ধবৎ বেদনা, উহা ঋতুস্রাবের পূর্বে বা সময়ে উপস্থিত হইতে পারে। “শ্রান্ত, মধ্যরাত্রির পর ঘৰ্ম্ম।” কিন্তু মনে রাখিও, এইসব অবস্থার সহিত, মানসিক লক্ষণটি অর্থাৎ স্নায়বিক উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থাটি চাই, এবং তাহা হইলে বোরাক্স এই প্রকার বাধক বেদনা আরোগ্য করিবে। বোরাক্সের আর একটি মূল্যবান লক্ষণ আমি পরবর্তী বাক্যে পড়িয়া শুনাইতেছি। “ডিম্বের শ্বেতাংশের ন্যায় প্রদরস্রাব।” ইহার প্রদরস্রাব অন্ডলালাবৎ, উহা উত্তপ্ত তরল পদার্থের ন্যায় বোধ হয় এবং পা দিয়া গড়াইয়া পড়ে। সাদা অন্ডলালাবৎ বা মাড়ের মত প্রদরস্রাব।” “দুই সপ্তাহব্যাপী বিদাহী প্রদরস্রাব” “অন্য কোন প্রকার উপসর্গ ব্যতীত শ্লেষ্মার ন্যায় সাদা প্রদরস্রাব।” এক্ষণে, এই বিদাহী প্রদরস্রাব হইতে এইরূপ ঋতুসংক্রান্ত অবস্থা হইতে, এইরূপ কৃত্রিম ঝিল্লী উৎপন্ন হওয়া ও তাহা নির্গত হওয়া হইতে, অনায়াসে বুঝা যায় যে, এরূপ স্ত্রীলোকেরা বন্ধ্যা হইয়া থাকেন। এইরূপ স্ত্রীলোকেরা বন্ধ্যা, যাহাদের এইরূপ লক্ষণ থাকে, তাঁহারা বন্ধ্যা এবং এইরূপ অবস্থাই যদি কারণ হয়, তাহা হইলে বোরাক্স ঐ বন্ধ্যাত্ব দূর করিবে । তোমরা দেখিবে যে, অবস্থার কথা বিবেচনা না করিয়া বাধা নিয়মে চিকিৎসাকারীরা সকল বন্ধ্যা স্ত্রীলোকদিগকে বোরাক্স দিয়া থাকেন। যখন কোন ঔষধ বন্ধ্যা অবস্থার জন্য প্রয়োগ করা হয় তখন ঐ প্রদত্ত ঔষধটির বিশেষ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করিতে হইবে, এবং দেখিতে হইবে যে ঔষধটি সুস্থ স্ত্রীলোকদিগের উপর যে অনুরূপ অবস্থার সৃষ্টি করিতে পারে।
আর একটি লক্ষণ। মাতা যদি শিশুকে স্তন্যদান করিতে না পারেন এবং যদি সর্বদাই বলেন যে, তাঁহার দুধ সামান্য পরিমাণ ও ঘন তাহা হইলে ঐরূপ ক্ষেত্রে আমি বহুবার বোরাক্স ব্যবহার করিয়াছি।“দুধ অত্যন্ত ঘন, এবং বিস্বাদ।” দুধের এই অবস্থার জন্য মাতা শিশুকে স্তন্যদান করিতে পারেন না। ইহা একটি ধাতুগত অবস্থা এবং রোগিণী যদি বোরাক্সের হন এবং তাহাকে যদি গর্ভকালের প্রথম দিকে বোরাক্স দেওয়া হয় তাহা হইলে উহা দুগ্ধের অবস্থা বদলাইয়া দিবে এবং সঙ্গে সঙ্গে মাতার ধাতুগত অন্য উপসর্গগুলিও দূর করিবে, ফলে তিনি শিশুকে স্তন্যদান করিতে সক্ষম হইবেন। মাতা কয়েকটি শিশু প্রসব করিয়াছেন, কিন্তু শিশুকে স্তন্যদান করিতে পারেন নাই, এরূপ বহু ক্ষেত্রে আমি বোরাক্স ব্যবহার করিয়াছি এবং তাহার ফল এরূপ পাইয়াছি যে, মাতা পরবর্তী শিশুকে স্তন্যদান করিতে পারিয়াছেন। এই ঔষধে শিশুদিগের স্তন্যদুগ্ধ পানে অপ্রবৃত্তিও আছে—ইহার কারণ শিশুদের কোন দোষ নহে, কিন্তু দুগ্ধই বিস্বাদ লাগা। তুমি হয়ত শিশুর জন্যই ঔষধব্যবস্থার কথা ভাবিবে কিন্তু তুমি ব্যাপারটি লক্ষ্য করিলে দেখিবে যে, দুধ বিস্বাদ বলিয়াই শিশু উহা পান করে না। এক্ষেত্রে মাতারই একমাত্র বোরাক্সের প্রয়োজন, তাহা হইলে শিশুর উদরাময় ও দুগ্ধে অপ্রবৃত্তি দুই-ই দূর হইবে। “শিশু বিবর্ণ, প্রায় মাটির বর্ণ হইয়া পড়ে।” “শিশুকে কোল হইতে নামাইতে গেলে সে হাত ছুড়িতে থাকে। মাতা যদি বোরাক্সের রোগিণী হন, তাহা হইলে শিশুও সম্ভবতঃ বোরাক্সেরই শিশু; ইহা কোন অসাধারণ ব্যাপার নহে যে, মাতা ও শিশু উভয়েরই একই ঔষধ প্রয়োজন হয়। উভয়েরই এক ঔষধ প্রয়োজন হইলে আমি বহুবার মাতার দুগ্ধের মধ্য দিয়াই শিশুরও ঔষধক্রিয়া করাইয়াছি। আর একটি অদ্ভুত লক্ষণ এই যে, শিশু যখন এক স্তন পান করিতে থাকে তখন মাতার অপর স্তনে যন্ত্রণা উপস্থিত হয়। বোরাক্সের ক্রিয়া আবশ্যিকভাবে প্রসবক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, স্নায়বিক প্রকৃতির স্ত্রীলোকদিগের জন্য জীবনের সব অবস্থাতেই ইহার ব্যবহারিক প্রয়োজন হইতে পারে।
ব্রায়োনিয়’র একান্ত সদৃশ, বিশেষভাবে ব্রায়োনিয়া’র ন্যায় ডানদিকের প্লুরিসি রোগ বোরাক্স দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। বাহির হইতে ভিতরদিকে, যেন ডান ফুসফুসের পশ্চাদ্ভাগের ঊর্ধ্বাংশের মধ্য দিয়া সূঁচীবিদ্ধবৎ অথবা বর্শাবিদ্ধবৎ বেদনা; ঐ সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা তোমাকে হয়ত ব্রায়োনিয়ার কথা মনে করাইয়া দিবে।
“তালির ন্যায় কুঞ্চিত চর্ম।” “চর্ম পান্ডুর বা বেগুনিবর্ণ।” শীর্ণতাপ্রাপ্ত, থলথলে, শিশু ক্রমেই শীর্ণ হইতে থাকে। মুখক্ষতের সহিত পৰ্য্যায়ক্রমে শিশুর অন্য রোগ দেখা দেয়। তাহারা হজম করিতে পারে না; তাহারা বমি করে অথবা উদরাময় দেখা দেয়; সমুদয় অন্ত্রপথ জুড়িয়া শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে উপক্ষত দেখা দেয়। শিশু অত্যনুভূতিযুক্ত, নিম্নগতিতে চিৎকার করিয়া উঠে। মুখক্ষতের সহিত আরও বহু লক্ষণ প্রকাশ পায়; মূত্রত্যাগের পূর্বে চিৎকার করিয়া উঠে, কারণ মূত্রস্থলীও পীড়িত হইয়া পড়ে। উপক্ষতযুক্ত অবস্থা, নিম্নগতিতে খারাপ বোধ করা, শব্দে অত্যনুভূতি, সহজেই চমকিয়া উঠা, উৎকণ্ঠাযুক্ত মনোভাব প্রভৃতি, এই ঔষধের পরিচায়ক ও চরিত্রগত লক্ষণ।
অপর নাম – সোডিয়াম টেট্রাবোরেট (Sodium Tetraborate Na2B407+10H20)
বাংলায় – সোহাগা
বিশুদ্ধ সোহাগা বিচূর্ণাকারে অথবা প্রথম শততমিকক্রমের জলীয় দ্রব্যের পর ক্রমরূপে প্রস্তুত ব্যবহৃত হয়।
বোরাক্সের – মূলকথা
১। নিম্নাভিমুখী গতিতে ভয়; শিশুকে শোয়বার সময় শিশু লাফিয়ে
ওঠে, ভয়ে জড়সড় হয় অথবা কাঁদে; আর শব্দেও অতিশয় অনুভবাধিক্য।
২। মুখের মধ্যে জাড়ি ঘা; দিনে ও রাত্রিতে ঈষৎ সবুজাভ মল। মুখবিবর অত্যন্ত গরম।
৩। ডানদিকের বুকে বেদনা, কাশি, উহাতে একপ্রকার ভ্যাপ্সা দুর্গন্ধ গয়ের উঠে।
বোরাক্স – পর্যালোচনা
১। ইহা একটি পুরাতন ঔষধ, কিন্তু সকলের কাছে সমোচিতভাবে সমাদৃত নহে। তবে স্নায়ু মণ্ডলের উপর এর ক্রিয়া সুস্পষ্ট। প্রথমতঃ উহা প্রকাশ পায় শব্দ সম্বন্ধীয় স্নায়বিকতায়। রোগী অতিশয় শব্দে সংচেত্য প্রায় সর্বপ্রকার শব্দে, এমনকি যৎসামান্য শব্দে বা অসামান্য তীব্র শব্দে এবং কাশি, হাঁচি, কাগজের খসখসানি শব্দে, ক্রন্দনে, দেশলাই জ্বালানোর শব্দে ও দূরের বন্দুকের শব্দেও রোগী চমকে উঠে। সময়ে সময়ে এইরূপ চমকে উঠার জন্য বেলেডোনা দেওয়া হয়, কিন্তু বোরাক্সহ অধিকতর উপযোগী।
২। বোরাক্সে আর একটি অতিশয় স্বতন্ত্র ধরনের স্নায়বীয় লক্ষণ আছে। যেমন – নিম্নভিমুখী গতিতে পড়ে যাওয়ার ভয় (জেলসিমিয়াম, স্যানিকিউলা)।
শিশুকে দোলনায় শুইয়ে দিতে গেলে সে কেঁদে উঠে এবং ধাত্রীকে জড়িয়ে ধরে। তাকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে আনার সময়ও এরূপ করে। শিশু যতক্ষণ নীচের দিকে গতি থাকে, ততক্ষণই চীৎকার করে ও ধাত্রীকে জড়িয়ে ধরে। বয়স্কদেরও এই লক্ষণটি থাকে। তারা এই নিম্নমুখী গতিতে ভয়ের জন্য দোলনাচেয়ারে বসে না বা ঘোড়ার পিঠে উঠে না বা ঢেউয়ের উপর চড়ে না বা সমুদ্রতীরে যায় না, এমনকি পাহাড় থেকে নীচের দিকে নামতে চায় না। আমার জানা আর একটি মাত্র ঔষধে এই লক্ষণটি আছে। তা হল জেলসিমিয়াম। আমার মনে হয় তা কেবল সবিরাম জ্বরেই প্রকাশ পায়।
এছাড়া শিশু হয়ত শান্তভাবে ঘুমচ্ছে। কিন্তু সহসা কোন দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই জেগে উঠে এবং চীৎকার করে দোলনার পাশ চেপে ধরে অথবা ঘুম থেকে চমকে জেগে উঠে, যেন ভয় পেয়েছে, এরূপস্থলে আমরা এপিস মেলিফিকা, বেলেডোনা, স্ট্রামোনিয়াম প্রভৃতিকে মনে করতে পারি। কিন্তু একটিমাত্র লক্ষণের উপর ঔষধ ব্যবস্থা করা উচিত নয়। শিশুর মুখবিবর দেখে যদি উপক্ষত (aphthae) দেখা যায়, তবে এই ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বোরাক্স উপযোগী। তাছাড়া মুখের উপতে বোরাক্সের বহুল ব্যবহার হয়। গৃহিণীরা পৰ্য্যন্ত একে টোটকা ঔষধ হিসেবে জাড়ি ঘায়ে বাহ্য প্রয়োগ করে থাকেন। তবে এই রোগে মারকিউরিয়াস, হাইড্রাসষ্টিস, সালফার ও সালফিউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি ঔষধও প্রয়োজিত হয়ে থাকে। কিন্তু বোরাক্সের নির্দেশ স্বরূপ যে সকল স্নায়বীয় লক্ষণের কথা ইতিপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে, সেগুলিই এস্থলেও এর প্রভেদক লক্ষণ।
কেবল যে মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতেই বোরাক্সের এই ক্রিয়া দর্শে তা নয়। অন্যান্য ঝিল্লীতেও এই ক্রিয়া প্রকাশ পায়। চোখের পাতার লোমগুলি চটচটে হয়। ও জুড়ে যায় অথবা ভিতর দিকে থেকে যায়। কান থেকে পুঁজ স্রাব নির্গত হতে থাকে। আমি একটি চোদ্দ বছরের স্থায়ী কর্ণস্রাবের রোগীকে এই ঔষধে আরোগ্য করেছিলাম।
৩। নাকের উপর শুকনো মামড়ি পড়ে, তুলে ফেললে আবার মামড়ি পড়ে।
* মুখের ক্ষতের সঙ্গে সবুজাভ মল দিবারাত্র নির্গত হয়। শিশু মূত্রত্যাগকালে বা পূৰ্ব্বে কাঁদে। এ থেকে বুঝা যায় মূত্ৰমার্গ প্রদাহিত হয়েছে। তবে যদি এই কাদার পালা শেষ হয়ে যাওয়ার পর শয্যাবস্ত্রে বা কপনিতে বা পাত্রে বালির মত পদার্থ জমে, তাহলে লাইকোপোডিয়াম বা সার্সাপ্যারিলাকে মনে করতে হবে।
৪। শ্বাসযন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীও এর দ্বারা আক্রান্ত হয়। দুর্গন্ধ ভ্যাপসা গন্ধযুক্ত গয়ে উঠতে থাকে, তারপর বুকের ডানদিকে সুস্পষ্ট প্লুরিসির লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৫। বোরাক্সে সাদা অণ্ডলালাযুক্ত (albuminous), মাড়ের মত (starchy), প্রভূত শ্বেতপ্রদর স্রাব আছে। রোগীর মনে হয় যেন খানিকটা গরমজল গড়িয়ে নামল। এগুলি সবই শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে বোরাক্সের ক্রিয়ার লক্ষণ।
৬। ক্যামোমিলা, হিপার সালফ ও সাইলিসিয়ার ন্যায় বোরাক্সেও চর্মের উপর সামান্য আচড় লাগলে তা পেকে যায়।