Calc-s | সহজেই ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে, শীতের সময়ও গায়ে কাপড় রাখতে চায়না। |
Calc-s | শরীরের নানাস্থানে পূঁজ হওয়ার প্রবণতা। |
Calc-s | ঘন, হলদে, ডেলা ডেলা রক্তাক্ত পূঁজ। |
Calc-s | ডান ওভেরিতে কেটে ফেলার মতো ব্যথা। |
Calc-s | পায়ে দুর্গন্ধযুক্ত শীতল ঘাম, পায়ের তলায় জ্বালা ও চুলকানি। |
Calc-s | কাশলে অতি সহজে ঘাম হয়। |
একজিমা ও অসাড় গ্রন্থিজস্ফীতি। সিস্টিক টিউমার সমূহ। ফাইব্রয়েড। পুঁজোৎপত্তির যাবতীয় পদ্ধতি এই ঔষধের অন্তর্গত। শ্লেষ্মা স্রাব হলুদ বর্ণের, গাঢ় ও দলা পাকানো। লুপান ভাল্পারিস।
মাথা – শিশুদের মাথায় হওয়ায় উদ্ভেদ বিশেষ, এই ক্ষেত্রে ঔষধটি প্রযোজ্য হবে, যদি ঐ উদ্ভেদ থেকে পুঁজ যুক্ত স্রাব নির্গত হয় অথবা হলুদ বর্ণের পুঁজ যুক্ত মামড়ী দেখা যায়।
চোখ – চোখের প্রদাহ তৎসহ গাঢ়, হলুদ বর্ণের স্রাব। কেবলমাত্র দৃষ্ট বস্তুর অর্ধেক টুকু দেখতে পায়। কর্ণিয়া ঘোলাটে। সদ্যজাত শিশুর চক্ষু প্রদাহ।
কান – বধিরতা, তৎসহ মধ্যকর্ণ থেকে থেকে স্রাব নির্গত হয়, কোন – কোন সময় স্রাব রক্ত মিশ্রিত থাকে। কাণের চারিপাশে ফুসকুড়ি।
নাক – মাথায় ঠান্ডা লাগা, তৎসহ, গাঢ়, হলুদ বর্ণের, পুঁজের মত স্রাব। স্রাবে প্রায়ই রক্তের ছিটে থাকে। নাকের একদিকে থেকে স্রাব। নাকের পশ্চাৎ অংশ থেকে হলুদবর্ণের স্রাব। নাসারন্ধ্রের কিনারাগুলি ক্ষতযুক্ত।
মুখমন্ডল – মুখমন্ডলে ফুসকুড়ি ও পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ। হাপিসি।
মুখগহ্বর – ঠোঁটের ভিতরের অংশ ক্ষতযুক্ত। জিহ্বা শিথিল, দেখে মনে হয় জিহ্বার উপর শুষ্ক কাদার প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। মুখের আস্বাদ অম্লযুক্ত, সাবানের মত, উগ্র। জিহ্বার গোড়ার দিক হলুদ লেপ যুক্ত।
নালা – গলার ক্ষত যুক্ত অবস্থাকে শেষদশা, তৎসহ হলুদ বস্তুযুক্ত স্রাব। টনসিলের প্রদাহ যখন পুঁজোৎপত্তি দশায় পৌঁছায়, যে অবস্থায় ফোঁড়া থেকে পুঁজ নির্গত হয়।
উদর – যকৃৎ স্থানে, ডানদিকের বস্তিকোটরের কিনারায় বেদনা, এরপর দুর্বলতা, বমি বমিভাব, ও পাকস্থলীতে বেদনা দেখা দেয়।
মল – পুঁজের মত উদরাময় তৎসহ রক্ত মিশ্রিত। মেই পল গাছের রস থেকে তৈরী চিনি খেয়ে ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে উদরাময়। অন্ত্র থেকে পুঁজ যুক্ত, পিচ্ছিল ভাব। মলদ্বারের চারিপাশে যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া, যা ভগন্দর রোগে দেখা যায়।
স্ত্রীরোগ — মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের পরে, দীর্ঘস্থায়ী, তৎসহ মাথার যন্ত্রণা, স্পন্দন ও প্রচন্ড দুর্বলতা।
শ্বাস–প্রশ্বাস – কাশি তৎসহ পুঁজযুক্ত ও রসানির মত থুথু ও ঘুষঘুষে জ্বর। ফুসফুসে পুঁজোৎপত্তি, পুঁজ ফুসফুসে অথবা ফুসফুস আবরক ঝিল্লীর ভিতর তৈরী হয়। পুঁজযুক্ত, রসানির মত শ্লেষ্মা। সর্দি তৎসহ গাঢ়, মন্ডের মত, সাদাটে-হলুদ বর্ণের অথবা পুঁজের মত স্রাব।
অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ – পায়ের তলায় জ্বালাকর চুলকানি।
জ্বর – ঘুষঘুষে জ্বর, পুঁজোৎপত্তি থেকে এই জ্বর হয়ে থাকে। তৎসহ কাশি ও পায়ের তলায় জ্বালা।
চর্ম – কেটে গিয়ে ক্ষত, আঘাত লেগেক্ষত, থেঁৎলিয়ে যাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, চর্ম অস্বাস্থ্যকর, পুঁজযুক্ত স্রাব; ক্ষতস্থান খুব সহজে সারেনা। হলুদবর্ণের, পুঁজযুক্ত মামড়ি অথবা যুক্ত রসক্ষরণ। চামড়ার উপসর্গ তৎসহ হলুদ বর্ণের মামড়ি। চুলের গোড়ায়, শাঁসবিহীন বহু ফুসকুড়ি, আঁচড়ালে রক্তপাত হয়। শিশুদের শুষ্ক একজিমা।
সম্বন্ধ – তুলনীয় – হিপার; সিলিকা।
শক্তি – ২x অথবা ৩x বিচুর্ণ। লুপাসের ক্ষেত্রে ১২ শক্তি উপযোগী হতে দেখা গেছে।
বহু বৎসর পূর্বে সুসলার এই ঔষধটি প্রচলিত করেন এবং ইহা বাইওকেমিক মতে বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হইতেছে। যদিও ইহা একপ্রকার অসংস্কৃত হোমিওপ্যাথি, তথাপি এই ঔষধ দ্বারা বহু সুন্দর রোগারোগ্য হইয়াছে বলিয়া, আমাদের অনেকেই উহাকে হোমিওপ্যাথিক আরোগ্যক্রিয়া বলিয়া মনে করেন। এই সকল রোগারোগ্য সম্বন্ধে অনুসন্ধান করিয়া, সংবাদদাতারা এমন অনেকগুলি লক্ষণ দিয়াছেন যে, তাহা প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে হয় না। ঐ লক্ষণগুলি সচরাচর আরও অনুসন্ধান করিবার ও রোগীক্ষেত্রে আরও পর্যবেক্ষণ করিবার ভিত্তি জোগাইয়া দেয়। অনেক অসম্পূর্ণ পরীক্ষাও করা হইয়াছে, এবং তাহা হইতে প্রাপ্ত অনেকগুলি লক্ষণও এই প্রবন্ধে লিপিবদ্ধ করা হইতেছে। বর্তমান লেখক সাধারণতঃ সুসলারের ১২শ ক্রম পরে ৩০শ ও ২০০শ ক্রম ব্যবহার করিতেন, বর্তমানে আরও উচ্চ ক্রম ব্যবহার করেন। এই সকল হইতেও অনেক মূল্যবান লক্ষণ পাওয়া গিয়াছে। এই সকল লক্ষণের অনেকগুলি এই ঔষধের অধীনে রোগীদেহে প্রকাশিত হইয়াছে এবং তারপর অনুমোদিত হইয়াছে, সুতরাং আমাদের ঔষধ ব্যবস্থা করার পক্ষে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলিই এখন আমাদিগকে শ্রেষ্ঠ ভিত্তি প্রদান করিতেছে। এই ঔষধ সম্বন্ধে এ পর্যন্ত যে-সকল শ্রেষ্ঠ আলোচনা হইয়াছে, তাহা ডাঃ বোরেক ও ডিউইর বাইওকেমিক মেটিরিয়া মেডিকায় পাওয়া যাইবে।
শরীরের যে-কোন স্থানে ফোড়া সৃষ্টি করিবার প্রবণতা এই ঔষধের একটি প্রবল লক্ষণ এবং উহা ‘পাইরোজেনের সম্পূর্ণ অনুরূপ। যে ফোড়া ফাটিয়া গিয়া, ধীরে ধীরে আরোগ্য হয় এবং ক্রমাগত হলদে পুঁজ নির্গত করিতে থাকে, তাহাই এই ঔষধের বিশেষ প্রয়োগক্ষেত্র। রোগী খোলা বাতাস পছন্দ করে, বায়ুপ্রবাহে অত্যনুভূতিযুক্ত হয় এবং সহজেই ঠান্ডা লাগে। দুষ্টজাতীয় উৎপত্তিতে ক্ষত দেখা দিবার পর ইহা বিশেষ উপযোগী। এইরূপ অবস্থায় ইহা চমৎকার উপশমদায়ক ঔষধ। ইহা একটি গভীরক্রিয় ধাতুদোষ সংশোধক এবং এন্টিসোরিক ঔষধ এবং যদি সময় থাকিতে দেওয়া হয়, তাহা হইলে দুষ্টজাতীয় উৎপত্তির সাধারণ পরিসমাপ্তি নিবারণ করে। ইহা হাড়ের রোগে, অস্থিপচন রোগে উপকারী। রোগী যদিও সাধারণভাবে শীতলতা চায়, তবুও বিশেষ প্রকার অবস্থায়, তাহার অনাবৃত হওয়া আবশ্যক হইয়া থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, ক্রুপ রোগে এবং শিরঃপীড়ায়, সে অত্যন্ত উত্তাপ রোধ করে, কিন্তু শরীরের বেদনায় সাধারণতঃ উত্তাপেই তাহার উপশম হয়। সে ঠান্ডা এবং উত্তাপ দুইয়েতেই অত্যনুভূতিযুক্ত থাকে। ঠান্ডা লাগার পর রোগসমূহ উপস্থিত হয়। বায়ুপ্রবাহে বা সামান্য ব্যাপারেই ঠান্ডা লাগার প্রবণতা। সে ঠান্ডা, ভিজে আবহাওয়ায় অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকে। ইহা অপস্মাররোগ এবং অপস্মার ও হিষ্টিরিয়া রোগের আক্ষেপের তলগত ভিত্তি আরোগ্য করে। ইহার রোগীর পরিশ্রমে রোগ-লক্ষণ বৃদ্ধিপাপ্ত হয়। তাহার পেশীগুলি থলথলে থাকে, তাহার রক্তস্রাব প্রবণতা থাকে। যখন সুনিৰ্বাচিত ঔষধ মাত্র অল্পসময়ের জন্য কাজ করে, তখন লক্ষণ মিলিলে, এই ঔষধের কথাও ‘সালফার, ‘সোরিণাম’ ও ‘টিউবারকুলিনামের সহিত চিন্তা করা উচিত। কোন ভারি জিনিষ তোলা প্রভৃতি কারণে পেশী ও কন্ডাগুলি টান পড়ায়, তজ্জনিত রোগ। এই সকল কারণ হইতে পৃষ্ঠের খঞ্জতা। বুক ও মাথার সর্বত্র এবং সময়ে সময়ে হস্ত-পদাদি পর্যন্ত রক্তের তীব্র উচ্ছ্বাস, উত্তাপের ঝলকা এবং স্পন্দন। হস্তমৈথুন ও অত্যধিক সঙ্গমের ফলে শারীরবিধান এত শীর্ণ অবস্থায় উপনীত হয় যে, তাহারা ধাতুগত উপদ্রব অনুভব করে; এরূপ অবস্থায় যে-সকল ঔষধ শরীরকে অধিকতর শৃঙ্খলার অবস্থায় পুনঃস্থাপন করিতে পারে, ইহা তাহাদের মধ্যে একটি দিবারাত্র হাড়ের মধ্যে বেদনা। সর্বাঙ্গে দপদপকর অনুভূতি। দাঁড়াইয়া থাকিলে অনেক রোগ, বিশেষতঃ সন্ধিগুলির লক্ষণ বর্ধিত হয়। গ্রন্থিগুলি স্ফীত ও কঠিনতাপ্রাপ্ত। সৰ্ব্বশরীরের উপর পেশীগুলি ছাঁকি দিয়া উঠে। নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিলে বহু লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। হাঁটিলে, বিশেষতঃ দ্রুত হাঁটিলে এবং উত্তপ্ত হইলে অনেক লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। অতিশয় উত্তপ্ত হইলে রোগ-লক্ষণের বৃদ্ধি। অনাবৃত হইতে চায়। শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি। গরম ঘরে বৃদ্ধি। গরম কাপড় জড়াইলে বৃদ্ধি। অত্যন্ত শারীরিক দুর্বলতা। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীসমূহ হইতে ঘন হলদে স্রাব। ঘন রক্তময় স্রাব। স্নৈহিক কোষসমূহ হইতে পুঁজময় স্রাব। ফোড়া, ক্ষত, ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে রক্তাক্ত পুঁজ নির্গমন। বহুদিন স্থায়ী পুজোৎপত্তি। স্থির হইয়া থাকিতে চায়।
তারপর, দেখা যাইবে যে, উপরোক্ত সাধারণ লক্ষণগুলি অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ লক্ষণগুলির সহিত মিশিয়া থাকে এবং মনে হয় যে, এই লক্ষণগুলি অল্পাধিক শারীরবিধানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
রোগী অন্যমনস্ক, সহজে উত্তেজিত, সহজে ক্রুদ্ধ। ক্রোধ বা বিরক্তির পর সে দুৰ্বল হইয়া পড়ে। প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না। সে সহজেই, বিশেষতঃ সন্ধ্যাকালে শয্যায়, রাত্রিকালে, এবং শুইয়া থাকিলে উৎকণ্ঠিত হইয়া পড়ে। জ্বরের সময় ভয়ের সহিত উৎকণ্ঠা। ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা। তাহার হৃৎপিন্ড, ও সাধারণ স্বাস্থ্য সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা। খোলা, বাতাসে তাহার উৎকণ্ঠার উপশম হয়। তাহার মুক্তি সম্বন্ধে উৎকণ্ঠা থাকে। প্রাতঃকালে জাগিয়া উঠিলে তাহার, উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। অনেক পরিবর্তনশীল মনোভাব এবং খেয়াল। লোকসঙ্গ চায় না। প্রাতঃকালে জাগিয়া উঠিলে এবং আবার সন্ধ্যাকালে মানসিক বিশৃঙ্খলা। উহাও শীতল বাতাসে উপশমিত হয়। মানসিক পরিশ্রমে মনের গোলমাল। বিপরীত এবং বিভিন্নমুখী মনোভাব। ছোট ছোট ভ্রান্ত বিশ্বাস, খেয়াল ও অদ্ভুত কল্পনা। রাত্রিকালে ঘুমাইতে চেষ্টা করিলে ভীতিপ্রদ মূর্তিসকল দেখে। স্বপ্ন দেখে। উত্তাপের সময় আরোগ্য সম্বন্ধে অত্যন্ত নিরাশা। কম্পনশীল দুৰ্বলতা নিবারণ করিবার জন্য উত্তেজক পানীয় চায়। সে সর্বদা অসন্তুষ্ট থাকে। মনের অত্যন্ত মন্থরতা। সৰ্ব্বদাই আশঙ্কাশীল অবস্থায় থাকে। মৃত্যুভয়। ভয় করে, যেন তাহার কোন বিপদ হইবে। পাগল হইবার ভয় এবং দুর্ভাগ্যের ভয়, উহা রাত্রিকালে উপস্থিত হয়। বিস্মৃতি পরায়ণ। যে-সকল লোকের সহিত মতের মিল হয় না, তাহাদের প্রতি ঘৃণাপূর্ণ থাকে। সৰ্ব্বদাই ব্যস্ত থাকে। হিষ্টিরিয়াযুক্ত। অধৈৰ্য্য। দুৰ্বলচিত্ততা, এমনকি মূঢ়তা। পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে উদাসীন। দৃঢ় সঙ্কল্পের অভাব। সন্ধ্যাকালে অত্যন্ত উত্তেজনা। সঙ্গমকাৰ্য্যের পর উত্তেজনা। দুঃখ করে যে, কেহ তাহাকে বুঝিল না। জীবনে বিতৃষ্ণা। হিংসুক। মদ্যপানের ফলে ভগ্নস্বাস্থ্য ব্যক্তির পক্ষে বিশেষ উপযোগী। মনের, স্মৃতিশক্তির ও শরীরের দুর্বলতা। কতকগুলি মানসিক লক্ষণ প্রাতে জাগিয়া উঠিলে দুঃখিত ভাবের সহিত বাড়িয়া উঠে, সন্ধ্যাবেলায় আনন্দভাব, এমনকি উল্লাস দেখা দেয়। সে কথা বলিতে ভুল করে, ভুল শব্দের প্রয়োগ করে। মনোভাব পরিবর্তনশীল। বিমর্ষ। একগুঁয়ে। সামান্যে দোষ গ্রহণ করে অথবা অপমানিত বোধ করে। মানসিক অবসন্নতা। কলহপ্রিয়। অস্থিরতা। প্রাতঃকালে মানসিক অবসন্নতা, সন্ধ্যাকালে উল্লাস! ঘামের সময় দুঃখিতভাবে। ইন্দ্রিয়শক্তির নিস্তেজভাব। বসিয়া বসিয়া কাল্পনিক দুর্ভাগ্যের বিষয় চিন্তা করে। চায় না যে, কেহ তাহার সহিত কথা বলুক। সহজেই চমকিয়া উঠে। হতবুদ্ধিভাব। সন্দেহ। অপরকে সন্দেহ করে। কথা বলিতে চায় না। স্থায়ী কষ্টদায়ক চিন্তা। মনোযোগ দিয়া চিন্তা করিতে গেলে চিন্তাগুলি অদৃশ্য হইয়া যায়। ভীরু, লজ্জিত এবং আশঙ্কাযুক্ত হইয়া পড়ে এবং কথাবার্তায় অত্যন্ত ক্লান্তি বোধ করে। ঘামের সময় কাঁদে। মানসিক বা শারীরিক কার্য্যে অনিচ্ছা। প্রকৃত আলস্য।
এইরূপ রোগীর পক্ষে শিরোঘূর্ণন একটি সাধারণ ব্যাপার। প্রাতে উঠিলে অথবা আবার সন্ধ্যাকালে শিরোঘূর্ণন, কিন্তু খোলা বাতাসে তাহার উপশম হয়। শিরোঘূর্ণনের সহিত বমি বমিভাব। শিরোঘূর্ণনের সহিত পড়িয়া যাইবার প্রবণতা। অপরজনিত শিরোঘূর্ণন। তাড়াতাড়ি মাথা নাড়াইলে, হেঁট হইলে ও দ্রুত হাঁটিলে শিরোঘূর্ণন। মাথার, বিশেষতঃ মস্তক-শীর্ষের শীতলতা। মস্তিষ্কে রক্তাধিক্য, সন্ধ্যায় ও রাত্রে বৃদ্ধি। উত্তেজক দ্রব্যে, বিশেষতঃ কাশিলে, ঋতুকালে ও গরম ঘরে বৃদ্ধি। খোলা বাতাসে উপশম। মস্তক, বিশেষতঃ কপাল ও মাথার পশ্চাদ্ভাগ সঙ্কুচিত বোধ হয়। মস্তক-ত্বকে অত্যন্ত মরামাস জন্মে। মস্তক-ত্বকে পুরু হলদে মামড়ীবিশিষ্ট উদ্ভেদ। পামা এবং ব্রণ। মাথায়, বিশেষতঃ কপালে শীতলতা। মাথার ত্বকে পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি। চুল উঠিয়া যায়। প্রাতে ও সন্ধ্যায় মাথায় উত্তাপ। উত্তাপের ঝলক। কপালে ও মস্তকশিখরে উত্তাপ। কপালে ও মাথার পশ্চাতে ভারবোধ। মস্তক-ত্বকে চুলকানি, জ্বালা। এই ঔষধে অনেক দুরারোগ্য পুরাতন শিরঃপীড়া ও নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে শিরঃপীড়া আরোগ্য হইয়াছে। প্রাতে জাগিয়া উঠিলে শিরঃপীড়া। শিরঃপীড়া অপরাহ্নে উপস্থিত হয়, সন্ধ্যাকালে ও রাত্রি পর্যন্ত থাকিয়া যায়, খোলা বাতাসে উপশমিত হয়। সর্দিজনিত শিরঃপীড়া। কাশিতে গেলে, আহারের পর বা পাকস্থলীর বিশৃঙ্খলা হইতে শিরঃপীড়া। উত্তপ্ত হইলে শিরঃপীড়া এবং ঐ বেদনা নড়াচড়ায় বাড়ে। রোগী শুইয়া থাকিতে বাধ্য হয়। উপরদিকে চাহিলে বাড়ে। স্ত্রীলোকদিগের ঋতুর পূর্বে বা ঋতুকালে শিরঃপীড়া। মানসিক পরিশ্রমে, মাথা নাড়াইলে, সঞ্চালনে, গোলমালে, শিরঃপীড়া বৰ্দ্ধিত হয়। বমনেচ্ছা বা বমনবিশিষ্ট নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে শিরঃপীড়া। চাপে উপশম। প্রায় সর্বপ্রকার শিরঃপীড়ার সহিত দপদপকর বেদনা। পড়িলে বৃদ্ধি হয়। শয়ন অবস্থা হইতে উঠিলে দদপকর যাতনা হয় এবং শিরঃপীড়া বাড়ে। মাথা নাড়িলে বৃদ্ধি হয়। সে শিরঃপীড়ার সহিত ঘুম হইতে জাগিয়া উঠে। মদ্যজাতীয় পানীয় হইতে, দাঁড়াইয়া থাকিলে, অবনত হইলে, সূৰ্য্যতাপে, কথা বললে, গা ধুইলে শিরঃপীড়া বাড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাড়ে। শিরঃপীড়া ঠান্ডা লাগিয়া উপস্থিত হয়, কিন্তু শিরঃপীড়া উপস্থিত হওয়ার পর, ঠান্ডা বাতাসেই উপশমিত হয়। অনেক শিরঃপীড়াই প্রাতে জাগিয়া উঠিলে কপালে থাকে অথবা মধ্যাহ্ন ভোজনের পর সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়। এই শিরঃপীড়া হেঁট হইলে বা চলিলে বর্ধিত হয়। চক্ষুর উপরে তীব্র যন্ত্রণা। ইহাতে মাথার পশ্চাদ্দিকের শিরঃপীড়া আছে, মস্তক-শীর্ষে এবং মাথার পার্শ্বদ্বয়ের শিরঃপীড়া আছে। এই শিরঃপীড়া অনেক ক্ষেত্রেই চাপনবৎ এবং মানসিক পরিশ্রমে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। কাশিতে গেলে সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা। কপালে ও শঙ্খদ্বয়ে সূঁচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা। মস্তকের সর্বত্র সূঁচীবিদ্ধবৎ যাতনা। মাথার চারিদিকে ছিন্নকর বেদনা, শুইলে উপশম। মস্তকে ও শঙ্খদ্বয়ে দপদপানি। বৈকাল ৪টায় মনে হয়, যেন মাথায় টুপি পরান রহিয়াছে।
সর্দি ও সোরাদোষজাত বহু লক্ষণ আছে। প্রাতঃকালে চক্ষুর পাতা জুড়িয়া যায়। এই ঔষধ আংশিকভাবে কতকগুলি ছানিরোগ আরোগ্য করিয়াছে। ইহা দ্বিত্বদৃষ্টি উৎপাদন ও আরোগ্য করিয়াছে। চক্ষুর পুরাতন প্রদাহ, তৎসহ গাঢ়, হরিদ্রাবর্ণ পুঁজ। কনীনিকায় ক্ষত। প্রাতঃকালে চুলকানি ও জ্বালার বৃদ্ধি। সন্ধ্যাবেলা চক্ষে চাপবোধ। স্পর্শকাতরতা। আলোকাতঙ্ক। চক্ষু কাঁচা গো-মাংসের ন্যায় রক্তবর্ণ। চক্ষুর কোণগুলি লালবর্ণ। চক্ষুকোণের ফাটা। চক্ষুর পাতায় আঁকি দিয়া উঠা। অস্পষ্ট, কুয়াসার মত দৃষ্টি। চক্ষুর সম্মুখে কম্পমান আলোকশিখা দেখা।
কর্ণ হইতে দুর্গন্ধ ও পুঁজময় স্রাব। আরক্ত জ্বরের সময় হইতে আরম্ভ হইয়াছে—এরূপ ঘন, রক্তাক্ত পুঁজ, বেদনা ও দক্ষিণ কর্ণমূলগ্রন্থির স্ফীতি। কর্ণের মধ্যে ও কর্ণের পশ্চাতে চুলকানি। কর্ণমধ্যে ভনভন, গুনগুন, ঘন্টাবাদ্যবৎ, গর্জনবৎ, সঙ্গীতবৎ শব্দ। কর্ণে কামড়ানি বেদনা। কর্ণে সূঁচীবিদ্ধবৎ, দপদপকর বেদনা, কর্ণ পুঁজিয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। লক্ষণ মিলিলে ইহা ইউষ্টেচিয়ান নলের সর্দি আরোগ্য করে। কর্ণমূলগ্রন্থি ও কর্ণের পশ্চাতে স্ফীতি।
এই ঔষধে নাকের অত্যন্ত দুরারোগ্য সর্দি আরোগ্য হইয়াছে। সর্দি, তৎসহ স্রাব, খোলা বাতাসে উপশম। শুষ্ক সর্দি। নাসিকার স্রাব—রক্তাক্ত, ক্ষতকর, দুর্গন্ধ পুঁজের ন্যায়, ঘন, হলদে, হলদেটে সবুজ। রোগীক্ষেত্রে দেখা গিয়াছে যে, ইহা একপার্শ্বিক রোগই ভালভাবে আরোগ্য করিয়াছে। নাকের মধ্যে মামড়ী জন্মে। নাকের কিনারায় মামড়ী জন্মে। নাকের মধ্যে অত্যন্ত শুষ্কতার অনুভূতি। প্রাতে নাসিকা হইতে রক্তপাত। নাসিকা হইতে দুর্গন্ধা নাকের ডগায় ও নাকের মধ্যে চুলকানি। নাকের অবরুদ্ধতা, সেইজন্য তাহার পক্ষে উহার মধ্য দিয়া শ্বাস লওয়া অসম্ভব হয়। মুখ খোলা রাখে। নাকের অস্থিক্ষত। ঘ্রাণনোপ। হাঁচি, খোলা বাতাসে উপশম হয়। নাসিকার স্ফীতি।
জিহ্বা ফাটা এবং মুখে উত্তাপের ঝলকা। বিবর্ণ, রুগ্ন মুখ। মুখের উপর নানাপ্রকার উদ্ভেদ—ফোড়া, পামা, নারাঙ্গা, চুলকানি, অপচ্যমান পীড়কা, পুঁজবটী, খুস্কির মত উদ্ভেদ, ফুস্কুড়ি। মুখের চুলকানি। ঠান্ডা লাগার ফলে মুখে বেদনা। কৰ্ত্তনবৎ যন্ত্রণা। মুখের উপর শীতল ঘৰ্ম্ম। গ্রন্থির স্ফীতি চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থির স্ফীতি।
মুখ ও জিহ্বার শুষ্কতা। মুখগহ্বর উত্তপ্ত। মুখমধ্যের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহ। জিহ্বার স্ফীতিবিশিষ্ট প্রদাহ। প্রাতঃকালে মুখে প্রচুর শ্লেষ্মা। মুখে দুর্গন্ধ। ওষ্ঠের ভিতরদিকে হাজাবোধ ও জ্বালা। জিহ্বায় জ্বালা। মুখ হইতে লালাস্রাব। জিহ্বার আড়ষ্টতা ও স্ফীতির জন্য কথা বলা কষ্টকর হয়। মুখমধ্যের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর স্ফীতি। মাড়ি স্ফীত। স্বাদ—খারাপ, তিক্ত, ধাতব,টক, মিষ্ট। মুখের, ওষ্ঠের এবং গলার ক্ষত। মুখের মধ্যে জলপূর্ণ ফুস্কুড়ি। জিহ্বার তলদেশে ঘন হলদে লেপ।
‘হিপারে যেরূপ এই ঔষধেও তদ্রুপ গলরোধ একটি চরিত্রগত লক্ষণ। গলা ও টনসিলদ্বয়ের শুষ্কতা ও প্রদাহ। গলার মধ্যে একটা গোঁজা থাকার অনুভূতি। গলায় শ্লেষ্মা জমা। নাসিকার পশ্চাৎরন্ধ্র হইতে যে শ্লেষ্মা টানে তাহা ঘন ও হলদে। গিলিতে গেলে গলায় ব্যথা। চাপবৎ ব্যথা। গলার ভিতর হাজাবোধ। গলায় ক্ষততাবোধ। গলায় সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা। গলা হইতে শ্লেষ্মা খেঁকারি দিয়া তোলে। গিলিতে গেলে কষ্ট হয়। টনসিলগ্রন্থির স্ফীতি ও পুঁজোৎপত্তি টনসিলের উপর ক্ষত। গলার বহির্ভাগ স্ফীত, গ্রন্থিগুলি স্ফীত ও বেদনান্বিত।
ক্ষুধা বৰ্দ্ধিত। রাক্ষুসে ক্ষুধা, অথবা ক্ষুধার সম্পূর্ণ অভাব। কফি, দুধ ও মাংসে অপ্রবৃত্তি। ফল, ঠান্ডা পানীয়, অম্ল, নোন্তা জিনিষ, মিষ্ট খাইতে চায়; অত্যন্ত তৃষ্ণা। আহারের পর উদরস্ফীতি।
পাকস্থলীতে শূন্যতাবোধ। আহারের পর উদ্ধার। শূন্য উদার। জ্বালাকর, তিক্ত, দুর্গন্ধ, অম্ল উদ্গার। ভুক্ত দ্রব্যের গন্ধ উদ্গার। মুখ দিয়া জল উঠা। আহারের পর পাকস্থলীতে পূর্ণতাবোধ। বুকজ্বালা। পাকস্থলীতে বোঝা চাপানর ন্যায় ভারবোধ। সামান্য কারণেই অজীর্ণতা দেখা দেয়। সন্ধ্যাকালে বমি বমিভাব। বমি বমিভাবের সহিত শিরঃপীড়া ও শিরোঘূর্ণন। সন্ধ্যাকালে পাকস্থলীতে বেদনা। আহারের পর পাকস্থলীতে বেদনা। আহারের পর জ্বালাকর, খালধরার ন্যায়, কৰ্ত্তনবৎ, দংশনবৎ, চাপনবৎ বেদনা। চাপে অত্যনুভূতি। সূঁচফোটান ব্যথা। পাকস্থলীর মধ্যে দপদপকর যাতনা। পাকস্থলীতে একটি পাথর থাকার ন্যায় অনুভূতি। রাত্রিকালে আহারের পর শিরঃপীড়ার সহিত বমন- পিত্ত, তিক্ত, রক্ত, খাদ্য, শ্লেষ্মা, অম্ল বমন।
আহারের পর উদরের স্ফীতির সহিত অত্যন্ত শীতলতাবোধ। আহারের পর পূর্ণতাবোধ। ভারবোধ। উদরের অধিকাংশ বেদনাই শূলবৎ এবং রাত্রিকালে উপস্থিত হয়। জ্বালাকর বেদনা। খালধরা, কৰ্ত্তনবৎ, টানিয়া ধরার মত, আকর্ষণবৎ, সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা। যকৃতে বেদনা—উহা চাপনবৎ, ক্ষতবৎ, সূঁচীবিদ্ধবৎ। উদরে স্পন্দন, গড়গড় করা এবং স্ফীতি।
দুর্দম্য কোষ্ঠবদ্ধতা। কষ্টদায়ক মল। অপ্রচুর মল। ভগন্দর। মলদ্বারে যন্ত্রণাহীন স্ফোটকসমূহ। সালফারের ন্যায় ইহাও প্রাতঃকালীন উদরাময় আরোগ্য করিয়াছে, কিন্তু ইহাতে সন্ধ্যাকালীন উদরাময়ও আছে, এবং শিশুদের উদরাময়ে ইহা অত্যন্ত উপকারী। যতসামান্যই হউক, আহারের পর বৃদ্ধি-লক্ষণ দেখা দিবেই। ইহাতে বেদনাহীন উদরাময় আছে। সরলান্ত্রে পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি ও অত্যন্ত চুলকানি। সরলান্ত্র ও মলদ্বার হইতে রক্তস্রাব। বহির্বলি। সরলান্ত্রের ক্রিয়াহীনতা। অনিচ্ছায় মল নির্গমন। মলদ্বারের চারিদিকে ভিজা ও উহাতে চিড়িকমারা ও জ্বালা উৎপাদন করে। মলত্যাগের সময় ও পরে বেদনা। মলত্যাগকালে জ্বালাকর বেদনা। মলদ্বারে চাপবোধ, সূঁচীবিদ্ধবৎ ও ক্ষততাবোধ। মলত্যাগকালে কোঁথানি। সরলান্ত্র নির্গমন। নিষ্ফল মলপ্রবৃত্তি। মল রক্তাক্ত, শুষ্ক, শক্ত, গাঁট-গাঁট, প্রকান্ড, অজীর্ণ খাদ্য মিশ্রিত, নরম, সাদা, হলদে ও পুঁজযুক্ত।
প্রচুর হলদেবর্ণ পুঁজবিশিষ্ট মূত্রাধারের সর্দিতে ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ। ইহা মূত্রগ্রন্থির পুরাতন প্রদাহ আরোগ্য করিয়াছে। ইহা মূত্ৰনলীর স্রাবে বিশেষ উপযোগী, যদি স্রাবটি হলদেবর্ণ, রক্তাক্ত এবং লালমেহের ন্যায় হয়। মূত্রপাতকালে, মূত্রনলীতে জ্বালা। অন্যান্য লক্ষণ মিলিলে ইহা ধ্বজভঙ্গ রোগের একটি চমকার ঔষধ। লক্ষণ মিলিলে যে-সকল স্ত্রীলোকের কয়েকবার গর্ভপাত হইয়াছে, তাহাদের পক্ষে উপযোগী। যোনি-ওষ্ঠের ছাল উঠিয়া যায়, যোনি-ওষ্ঠ প্রদাহিত হইয়া পাকিয়া উঠে। প্রদরস্রাবহেতু জননাঙ্গে চুলকানি। ঘন, হরিদ্রাবর্ণ রক্তাক্ত প্রদরস্রাব। ঋতুকালীন যোনি-ওষ্ঠে চুলকানি। ঋতুর পরে চুলকানি। যোনির বহু উপরে চুলকানি। প্রদরস্রাব ক্ষতকর, রক্তাক্ত জ্বালাকর, প্রচুর, ঘন ও হলদেবর্ণ। ঋতুস্রাবের পূর্বে ও পরে প্রদরস্রাব। ঋতুস্রাব লুপ্ত। ঋতুস্রাব প্রচুর, কাল, অতিশীঘ্র বা অতিবিলম্বিত। ধাতুস্রাব অনিয়মিত। সময়ে সময়ে বিবর্ণ, বিলম্বিত সামান্য লুপ্ত। বালিকাদের আদ্য ঋতু প্রকাশে বিলম্ব। জরায়ু হইতে রক্তস্রাব। ঋতুকালে জরায়ুতে বেদনা। ঋতুকালে যেন জরায়ুর বহির্গমন হইতেছে, বস্তিপ্রদেশে এরূপ নিম্নাভিমুখী আকর্ষণ। জননেন্দ্রিয়ে জ্বালা। জরায়ুর বহির্নির্গমন। যোনি-ওষ্ঠের স্ফীতি। জরায়ুতে সৌত্রিক অৰ্ব্বদ ও জননেন্দ্রিয়ে ও জরায়ুমুখে ক্ষত।
কণ্ঠনলী ও গলকোষের সর্দি। শুষ্কতা ও প্রদাহ। প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব, উহা হলদেবর্ণ এবং সময়ে সময়ে রক্তাক্ত। হাজাবোধ ও ক্ষততা। রোগীর যক্ষ্মাসম্ভব অবস্থা। কণ্ঠনলীতে অত্যন্ত খেঁকার দিতে থাকে। দুর্দম্য স্বরভঙ্গ। বহুদিন হইতে ইহা ক্রুপ রোগের মূল্যবান ঔষধ বলিয়া মনে করা হয়। ক্রুপের ন্যায় কাশি, তৎসহ যথেষ্ট গলার অবরোধ ভাব, এরূপ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকও হয়ত “হিপারের কথা ভাবিবেন, কিন্তু স্মরণ রাখিতে হইবে যে, হিপারে একটি হাত খোলা রাখিলে, বা বুক হইতে চাপা ফেলিয়া দিলে, ক্রুপের প্রবণতা বর্ধিত হইবে, ক্রুপকাশি বাড়িবে, এবং “হিপারে’র রোগী বায়ুপ্রবাহে ও বায়ুতে অত্যন্ত অনুভূতিযুক্ত থাকে। এই ঔষধে রোগীর ঢাকা খুলিয়া দিলে, সে ভাল বোধ করে। সে আচ্ছাদন ফেলিয়া দেয়, এবং বাতাস চাহে এবং তাহাতে ভাল শ্বাস-প্রশ্বাস লইতে পারে ও ক্রুপকাশি কম হয়। ইহা অদ্ভুত বোধ হইতে পারে যে, চুনের সালফাইড এবং চুনের সালফেটের মধ্যে এত অধিক পার্থক্য রহিয়াছে।
সন্ধ্যায় ও রাত্রিকালে শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর হয়, উঁচুতে উঠিতে গেলে, শুইলে ও হাঁটিলে উহা বৰ্দ্ধিত হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস ঘড়ঘড়িযুক্ত ও হ্রস্ব উহাতে শ্বাসরোধ, এমনকি সাঁইসাঁই শব্দ হয়। লক্ষণ মিলিলে ইহা হাঁপানির একটি চমৎকার ঔষধ।
কাশি সন্ধ্যায় ও রাত্রিকালে বর্ধিত হয়। ঠান্ডা বাতাসে উপশমিত হয়—‘হিপারের বিপরীত। হাঁপানির ন্যায় কাশি, প্রাতঃকালে জাগিয়া উঠিলে এবং দুপুরের নিদ্রার পর ক্রুপের ন্যায় আকার ধারণ করে। রাত্রিকালে শুষ্ক কাশি। খকখকে কাশি। স্বরভঙ্গযুক্ত কাশি। ঢিলা ঘড়ঘড়িযুক্ত কাশি। কাশিতে সমস্ত দেহ নড়িয়া উঠে। হস্ব শুষ্ক কাশি। আক্ষেপিক কাশি এবং থাকিয়া থাকিয়া কাশির আবেগ আসে। প্রাতঃকালে যথেষ্ট শ্লেষ্মা উঠে। গয়ের রক্তাক্ত, সবুজাভ, পুঁজমিশ্রিত, ঘন চটচটে এবং হলদে।
বগলে ফোড়া। হৃদপ্রদেশে উৎকণ্ঠা। গলনলী ও বায়ুনলীসমূহের সর্দি। ফুসফুস হইতে রক্তস্রাব। কুচিকিৎসিত নিউমোনিয়া এবং নিউমোনিয়ার পরিণামফল। ফুসফুসের যকৃৎবৎ কঠিনতা প্রাপ্তি। বক্ষে চাপবোধ। বক্ষে হাজাবোধ। কাশিলে বা শ্বাস লইলে বুকে ক্ষততাবোধ।
বুকের মধ্যে জ্বালাবোধ। যক্ষ্মাসম্ভব ব্যক্তিগণের বুকের মধ্যে কৰ্ত্তনবৎ যাতনা। রাত্রিকালে বুক ধড়ফড়ানি, উৎকণ্ঠা, উপরে উঠিতে গেলে বৃদ্ধি। বক্ষমধ্যে পুঁজোৎপত্তি। বক্ষের দুর্বলতা। বুকের বহির্দিকে চুলকানি, জ্বালা। পৃষ্ঠে শীতলতার অনুভূতি। কটিদেশের নিকটে মেরুদন্ডের বক্রতা, এবং সেইজন্য রোগীর বসিয়া থাকা কষ্টকর হইলে, ঐ রোগের চিকিৎসায় ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ।
হস্ত-পদাদির লক্ষণ হইতে ইহা একটি গেঁটেবাত প্রধান ধাতু সৃষ্টি করিয়াছে। সন্ধিসমূহ গেঁটেবাতগ্রস্ত। হাতের আঙ্গুলের সন্ধিগুলির গেঁটেবাতের জন্য আঙ্গুলগুলি অকুশল ও বিকৃত হইয়া পড়ে। নিম্নাঙ্গগুলির, হাতের, পায়ের ও পদতলের শীতলতা। হাঁটুর পশ্চাদ্ভাগের খালধরা। উদ্ভেদ, পুঁজবটি ও ফুস্কুড়ি। হাতের উত্তাপ। নিম্নাঙ্গে ভারবোধ। ঊরুসন্ধিরোগে, বহুক্ষেত্রে ইহা অত্যন্ত উপযোগী হইয়াছে। হস্ত-পদার্দির চৰ্ম্মের চুলকানি। অনেক সময়ে চুলকানির সহিত জ্বালা। হাতে-পায়ে জ্বালা, হাতের চেটো ও পায়ের পাতায় জ্বালা। হাতে এবং নিম্নাঙ্গের এবং পায়ের পাতায় অসাড়তা। জ্বরের শীতের সময় হস্ত-পদাদিতে বেদনা, বাতের বেদনা। সন্ধিস্থানে বাতের ও গেঁটেবাতের যন্ত্রণা। রাত্রিকালে ঊর্ধ্ব অঙ্গে বেদনা; কাঁধে, কনুইয়ে, কজিতে, আঙ্গুলে বেদনা। নিম্নাঙ্গে বেদনা, সায়েটিকা; বাতের যন্ত্রণা। নিতম্বদেশ, ঊরু ও হাঁটুতে বেদনা। পায়ে জ্বালাকর বেদনা। নিম্নাঙ্গে বেদনা, টানিয়া ধরার মত, সূঁচফোটানর মত, ছিঁড়িয়া ফেলার মত। ঊর্ধ্ব ও নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত। হাতের তলা ও পদতলে ঘর্ম। পদঘর্ম শীতল ও দুর্গন্ধ। বাহুদ্বয়ের আড়ষ্টতা। পদদ্বয় ছড়াইলে বেদনার বৃদ্ধি হয়। হাঁটু ও পদদ্বয়ের বাতজ স্ফীতি। পায়ের ও পায়ের পাতার শোথবৎ স্ফীতি। হাঁতের আঙ্গুলে ঝিঁঝিঁ ধরিয়া অবশ হইয়া যাওয়া। হাত ও নিম্নাঙ্গের কম্পন। পায়ের উপর ক্ষত। জ্বালা, চুলকানিযুক্ত মামড়ী। শিরাস্ফীতি। ঊর্ধ্বাঙ্গের, নিম্নাঙ্গের, হাঁটুর, পায়ের ও গোড়ালির দুর্বলতা।
নিদ্রা অস্থির। উদ্বেগ ও ভীতিপূর্ণ স্বপ্ন। সন্ধ্যাকালে নিদ্রালুতা। মধ্যরাত্রির পূর্বে ও রাত্রি ৩টার পর নিদ্রাহীন। নানারূপ চিন্তার জন্য নিদ্রা হয় না। সন্ধ্যাকালীন, শীতবিশিষ্ট বহু পুরাতন সবিরাম জ্বরের রোগী এই ঔষধে আরোগ্য হইয়াছে। শীত পায়ে আরম্ভ হয়। কম্পনকর শীত। সন্ধ্যাকালে ও রাত্রে জ্বর। সন্ধ্যাকালীন জ্বর, শীতের সহিত সংমিশ্রিত থাকে, তৎপর জ্বর, কিন্তু জ্বরের শেষে ঘর্ম হয় না। হাতে পায়ে বেদনা থাকে, চলিলে ঐ বেদনার উপশম হয়। উত্তাপের ঝলকা উঠে। বিলেপী জ্বর নিশাঘৰ্ম্ম। শীতার্ত। সামান্য পরিশ্রমেই ঘাম হয়। ঘর্ম প্রচুর ও অম্লগন্ধ।
‘সালফার’ ও ‘ক্যাল্কেরিয়া’য় যেরূপ বহুসংখ্যক চৰ্ম্ম-লক্ষণ আশা করা যায়, ইহাতেও তেমনি বহু চৰ্ম্মলক্ষণ আছে। জ্বালা ও চুলকানি। ছালউঠা, চৰ্ম্মফাটা। আমরা নোনালাগা রোগে যেরূপ দেখি, শীতকালে স্নান করিবার পর ঐরূপ চৰ্ম্মফাটা, বিশেষতঃ হাতের তালুতে। যকৃৎরোগসূচক চিহ্ন; চৰ্ম্ম বিবর্ণ এবং গাত্র হলদেবর্ণ এমনকি সুস্পষ্ট ন্যাবারোগ। চৰ্ম্মের শুষ্কতা। উদ্ভেদ—ফোড়া, জ্বালাযুক্ত শুষ্ক অথবা ভিজা একজিমা, পোড়ানারাঙ্গার ন্যায় পুঁজবটী, মামড়ী ও শল্কযুক্ত ফুস্কুড়ি। চুলকানি ও জ্বালাযুক্ত উদ্ভেদ। লক্ষণ মিলিলে এই ঔষধ সোরিয়েসিস (চর্মরোগ) আরোগ্য করে। উদ্ভেদ, পুঁজযুক্ত উদ্ভেদ গুটিকা। শীতপিত্ত ছাল-উঠা, অহিপূতন। পোকা হাঁটার ন্যায় অনুভূতি। শয্যায় গেলে চুলকানি; চুলকানি ও জ্বালা; চুলকানি ও কিছু চলিয়া বেড়ানর ন্যায় অনুভূতি। চুলকাইলে চুলকানির উপশম হয়। চৰ্ম্মে স্পর্শকাতরতা। চর্মে ক্ষত। ক্ষত ধীরে ধীরে আরোগ্য হয়। অসুস্থ চৰ্ম্ম।
ক্ষত হইতে রক্ত পড়ে, জ্বালা করে, উহার উপর শল্ক জন্মে মামড়ী পড়ে, গভীর ক্ষত। এই ক্ষত হইতে রক্তাক্ত, ঘন, হলদে পুঁজ নির্গত হয়। নালীক্ষত। দুর্গন্ধযুক্ত অলস ক্ষত। কঠিনতাযুক্ত ক্ষত। দপদপকর বেদনাযুক্ত ক্ষত বেদনান্বিত ক্ষত। আঁচিল।
অপর নাম- সালফেট অফ ক্যালসিয়াম (Sulphate of Calcium)
ক্যালকেরিয়া সালফিউরিকা শুসলারের টিসু রেমিডিজগুলির অন্যতম ঔষধ। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সম্যকভাবে জানা যায়নি কিন্তু ইহা হিপারের মতই কাজ করে।
রোগী বিবরণী –
আমি একটি রোগিণী পেয়েছিলাম, যার বৃক্ক প্রদেশে (kidney region) একদিন সারা দিনরাত যন্ত্রণা হয়েছিল। তারপর মূত্রের সঙ্গে পূঁজাস্রাব দেখা দেয়। উহা কয়েকদিন ধরে চলে এবং রোগিণী খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। শিকাগোর জনৈক বিশেষজ্ঞ তার মূত্র পরীক্ষা করে উহাকে ব্রাইটস ডিজিজ বলে ডায়াগনোসিস করেন। আমি অবশেষে ক্যালকেরিয়া সালফিউরিকা ১২ ব্যবস্থা করি। ফলে ওর ক্রিয়ায় রোগিণী দ্রুত ও স্থায়ী ভাবে আরোগ্য লাভ করে। সেই থেকে নানা প্রকার রোগে প্রভূত পুঁজ জমলে বা পূঁজাস্রাবে আমি একে ব্যবহার করি এবং এতেই উপকার দর্শে।