ক্যামোমিলা CHAMOMILLA VULGARIS [Cham]

Cham অত্যন্ত খিটখিটে মেজাজ, বিমর্ষ, অত্যন্ত রাগী, সামান্য কিছুতেই বিরক্ত হয় ও কাঁদে, শিশু সর্বদা ঘ্যান ঘ্যান করে ও নানারকম জিনিসের বায়না ধরে, কিন্তু দিলে নিতে চায় না ছুড়ে ফেলে দেয়, কোলে উঠে বেড়াতে চায়।
Cham সামান্য ব্যথাও অত্যন্ত অসহ্য অনুভূত হয়।
Cham জ্বরের উত্তাপের সহিত ঘাম হয়, বিশেষত মাথায় ঘাম হয়, পিপাসা হয়, এক গাল লাল ও গরম, অন্য গাল বিবর্ন দেখায়।
Cham সালফারের মত হাত ও পায়ের তলা জ্বালা করে।
Cham আহার ও পানের পর মুখমন্ডল ঘামে।

যাদের চুল হালকা বাদামী রঙের। স্নায়বিক ও অল্পেই উত্তেজিত হয় যারা কফি বা অন্য কোন মাদক দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার করে অত্যানুভূতি প্রবণ হয় তাদের পক্ষে উপযোগী ।

সদ্যোজাত শিশু ও তাদের দাঁত ওঠার সময় উপযোগী। খিটখিটে, রাগী, ব্যথা বেদনায় পাগলের মত অস্থির হয়ে পড়ে (কফিয়া), অশিষ্ট, ভদ্রভাবে কথার উত্তর দেয় না তাদের অসুখে প্রযোজ্য ।

শিশু অত্যন্ত বিরক্ত, খিটখিটে, কোলে করে বেড়ালেই কেবল শান্ত হয়, অধৈর্য, এটা চায় ওটা চায় ও না পেলে রেগে যায় বা দিলে রাগ হয়ে ছুড়ে ফেলে (ব্রায়ো, সিনা; ক্রিয়ো); নোংরা ঘাটে, বদমেজাজী ও হিংসুটে প্রকৃতির তাদের অসুখে উপযোগী ।

শিশু যা চায় তা না পেলে করুণভাবে কাঁদতে থাকে, ঘ্যান ঘ্যান করে, অস্থির হয়ে পড়ে ।

কেউ কাছে থাকুক রোগী এটা সহ্য করতে পারে না, খিটখিটে, কথা বললে সহ্য করতে পারে না (সাইলি), কথা বলায় অনিচ্ছা, রাগের সাথে কথার উত্তর দেয় ।

রাগ হওয়া থেকে অসুখ বিশেষতঃ শীতভাব ও জ্বর এর উৎপত্তি ।

ব্যথা-বেদনা অসহ্য, যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যায়, গরমে বৃদ্ধি, সন্ধ্যায়, মাঝরাতের আগে ব্যথা বাড়ে। ব্যথার সাথে গায়ে উত্তাপ, পিপাসা ও মূর্চ্ছাভাব। আক্রান্ত অংশ অসাড় হয়ে যায় ।ঢেকুর ওঠায় বেড়ে যায়।

একদিকের গাল লাল ও গরম অন্য গাল ফ্যাকাসে ও ঠান্ডা ।

*খোলা হাওয়ায় অত্যানুভূতি, বাতাসে অত্যন্ত বিতৃষ্ণা বিশেষতঃ কানে বাতাস লাগা একদম সহ্য করতে পারে না। গরম কিছু খেলে দাঁতে ব্যথা হয় (বিসমাথ, ব্রায়ো, কফিয়া) গরম ঘরে, বিছানায় শুলে, কফি খেলে, ঋতুর সময় বা গর্ভাবস্থায় দাঁতে যন্ত্রণা হলে ব্যবহার্য ।

প্রসব বেদনা – আপেক্ষিক, যন্ত্রণাদায়ক, বিছানা থেকে উঠে পালাতে চায়। ব্যথায় পা দুটো যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে, ব্যথা উপরদিকে চাপ দেয়।

উদরাময় – ঠান্ডা লেগে, রাগ হয়ে বা মনে কষ্ট পেয়ে, দাঁত ওঠার সময়, ধূমপানের পর, প্রসবের পর, উপর হতে নীচে নামলে (বোরাক্স, স্যানিকি) উদরাময় হয়।

মল – সবুজ, জলের মত, মলদ্বার হেজে যায়, খন্ড খন্ড ডিমের টুকরো বা কুচানো শাকের মত, গরম, ভীষণ পচা গন্ধ, ডিম পচা গন্ধ ছাড়ে।

স্তনের বোঁটায় প্রদাহ, ছোয়া দেওয়া যায় না (হেলোনি, ফাইটো), বাচ্চাদের স্তনে হাত দেওয়া যায় না এত ব্যথা। স্তনদাত্রী মায়ের স্তন হতে দুধ আপনি গড়িয়ে পড়ে ।(শিশুকে স্তন্যপান ছাড়িয়ে দিলেও দুধ আপনি গড়িয়ে পড়ে=কোনি)। মা রেগে গেলেও তারপর শিশুকে দুধ খাওয়ালে শিশুর তড়কা (নাক্স-ভ) [মা ভয় পাওয়ার পর ঐরূপ = ওপি] । রাতে ভয়ানক বাত-বেদনা বিছানা হতে উঠে পড়তে বাধ্য হয় ও হাটাচলা করতে বাধ্য হয় (রাস-ট) ।

ঘুম ঘুম ভাব কিন্তু ঘুমাতে পারে না (বেল, কষ্টি, ওপি)। রাতে পায়ের তলায় জ্বালা, পায়ের পাতা বিছানা হতে বার করে রাখে (পালস, মেডো, সালফ)।

সম্বন্ধ — শিশুদের রোগে, মস্তিষ্ক স্নায়ুর রোগে বেল, পেটের স্নায়ুর রোগে ক্যামো অনুপূরক ।

শিশুদের রোগে ওপিয়াম বা মার্কিন প্রয়োগে অবস্থা খারাপ হলে প্রযোজ্য ।

তুলনীয় — বেল, বোরাক্স, ব্রায়ো, কফিয়া, পালস, সালফ, মানসিক শান্তভাব ক্যামো-র ব্যবহার নির্দেশ করে না ।

বৃদ্ধি – উত্তাপে, রাগ হলে, সন্ধ্যা হতে মাঝ রাত অবধি, খোলা হাওয়ায়, জোরে বাতাস লেগে ঢেকুর উঠলে। উপশম — কোলে নিয়ে বেড়ালে, উপবাসে, গরম অথচ ভেজা জল হাওয়ায় ।

শক্তি- ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি ।

মন ও আবেগ কেন্দ্রীক লক্ষণগুলিই এই ঔষধের প্রধান পথ নির্দেশক লক্ষণ, যা এই ঔষধটিকে বহু রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিশুদের রোগে ঘন-ঘন ব্যবহার হয়ে থাকে, যেখানে খিটখিটেভাব, অস্থিরতা ও শূল বেদনা থাকে, এইগুলিই প্রয়োজনীয় লক্ষণ সমূহ। যদি অবস্থা কোমল, শান্ত ও ভদ্রচিত হয় এবং অন্ত্রগুলি যদি শিথিল হয় এবং কোষ্ঠ কাঠিণ্য যদি থাকে, সে ক্ষেত্রে ক্যামোমিলা ব্যবহার নিষেধ।

ক্যামোমিলা রোগী, অনুভূতি প্রবল, খিটখিটে, তৃষ্ণার্থ, উত্তপ্ত ও অসাড়। অতিরিক্ত কফি ও মাদকজাতীয় ঔষধের কুফলে রোগী অতিরিক্ত অনুভূতি প্রবল হয়ে পড়ে। যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না, এর সঙ্গে অসাড়ভাব বর্তমান থাকে। রাত্রিকালীন ঘাম।

মন ঘ্যানঘ্যানানি সহ অস্থিরতা। শিশু বহু জিনিষ চায়, আবার পরক্ষণেই তা প্রত্যাখ্যান করে। শিশু সর্বদা ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদে কারণ যে যা চায় তা পায় না বলে। শিশু কেবলমাত্র ঠান্ডা থাকে তাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ালে এবং অবিরাম আদর করলে অধৈর্য, কেউ তার সঙ্গে কথা বললে অথবা তার কথার মাঝে কথা বললে বিরক্ত হয়; সকল প্রকার যন্ত্রণায় অত্যন্ত অনুভূতি প্রবণ; সর্বদা অভিযোগকরে। বিদ্বেষ পরায়ণ, খুব খারাপ ভাবে কথার উত্তর দেয়। রাগ ও বিরক্তি থেকে রোগের উৎপত্তি। মানসিক প্রশান্তি ক্যামোমিলার সঙ্গে মাননসই নয়।

মাথা মস্তিষ্কের একদিকের অংশে দপ দপ কর বেদনা। রোগী সর্বদা মাথা পিছন দিকে বেঁকিয়ে রাখতে চায়। কপালে ও মাথার চামড়ার উষ্ণ ও চটচটে ঘাম।

কান কানের ভিতর ঝিনঝিন শব্দ। কানের বেদনা তৎসহ টাটানি ব্যথা; স্ফীতি ও উত্তাপ রোগীকে পাগল করে তোলে। সূঁচ ফোটার মত বেদনা। মনে হয় কানে তালা লেগেছে।

চোখ চোখের পাতায় হুল ফোটার মত বেদনা। চোখের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ হয়ে যায়। আক্ষেপের দরুণ চোখের পাতা গুলি বন্ধ থাকে।

নাক সর্বপ্রকার গন্ধে অনুভূতি প্রবণ। সর্দি, তৎসহ ঘুমাতে পারে না।

মুখমন্ডল গালের একদিকের অংশ লাল ও উত্তপ্ত; এবং অপর দিক ফ্যাকাশে ও ঠান্ডা। চোয়ালে সূঁচ ফোটার মত বেদনা, বেদনা কানের ভিতরের দিকে ও দাঁত পর্যন্ত প্রসারিত হয়। গরম পাণীয়, পানকার পরে দাঁতের যন্ত্রণার বৃদ্ধি; রাত্রে, কফি পাণের পর বৃদ্ধি। বেদনার কারণে রোগী পাগলের মত করে। জিহ্বা ও মুখমন্ডলের পেশীর ঝাঁকুনি। দাঁত উঠার সময়ে শিশুদের উপসর্গ। (ক্যাল্কেরিয়া ফস ; টেরিবিন্থ)।

গলা কর্ণমূল ও চোয়ালের নিম্নস্থগ্রন্থির স্ফীতি। সঙ্কোচনের অনুভূতি ও গোঁজ ফুটে থাকার মত বেদনা।

মুখগহ্বর দাঁতের যন্ত্রণা, যদি কোন কিছু গরম বস্তু মুখে নেওয়া হয়, কফি পাণের পরে, প্রসবকালে। রাত্রিকালীন লালা স্রাব।

পাকস্থলী দূর্গন্ধ যুক্ত ঢেকুর। কফি পাণের পরে বমি বমি ভাব। আহারের পরে বা পান করার পরে ঘাম। জিহ্বা হলুদবর্ণের। মুখের আস্বাদ তিতো। গরম পাণীয়ে অনিচ্ছা। পিত্ত বমন। মুখে টক জল উঠে; ভুক্ত খাদ্য বস্তু উঠে আসে। তিতো, পিত্ত বমন। চাপ দেবার মত পাকস্থলীর শূল বেদনা, যেন পাথর দিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে এই জাতীয় অনুভুতি (ব্রাইয়োনিয়া ; এবিসনাইগ্রা)।

উদর স্ফীত। নাভীর কাছে মোচড়ানি এবং কোমরে বেদনা। ক্রুদ্ধ হবার পরে, পেটে বায়ু সঞ্চয় জনিত কারণে শূল বেদনা, তৎসহ গাল লালবর্ণ এবং গরম ঘাম হয়। যকৃতের শূল বেদনা। ডিওডিনামের তরুণ প্রদাহ (ক্যালিবাই (পুরাতন ক্ষেত্রে)

মল উত্তপ্ত, সবুজ বর্ণের, জলের মত, দূর্গন্ধ যুক্ত, পিচ্ছিল তৎসহ শূলবেদনা। মল ডিম ও শাকের কুচি মেশানোর মত দেখতে। মলদ্বারে টাটানি ব্যথা। দাঁত উঠার সময় উদরাময়। অর্শ তৎসহ মলদ্বারে যন্ত্রণাদায়ক ফাটা সমূহ।

স্ত্রীরোগ জরায়ু থেকে রক্তস্রাব। প্রচুর জমাট বাঁধা, কালচে বর্ণের রক্ত স্রাব, তৎসহ প্রস্রব বেদনার মত বেদনা। অক্ষেপিক প্রসব বেদনা; উপরের দিকে ঠেলা মারে। (জেলস) রোগী বেদনা সহ্য করতে পারে না। (কলোফাইলাম ; কষ্টিকাম ; জেলস ; হায়োসায়েমাস; পালসেটিলা;) স্তন বৃত্তের প্রদাহ; অত্যন্ত স্পর্শ কাতর। শিশুর স্তন স্পর্শ কাতর। হলুদ, হাজাকর প্রদর স্রাব (আর্সেনিক; সিপিয়া; সালফার)।

শ্বাস-প্রশ্বাস — স্বরভঙ্গ, গলা খাঁকার দিতে হয়, কণ্ঠনলীর ক্ষততা। অস্বস্তিকর, শুষ্ক, সুড় সুড়কর কাশি; বুকের ভিতর শ্বাস বন্ধ হবার মত কষ্টভাব, তৎসহ দিনের বেলা তিতো স্বাদ যুক্ত শ্লেষ্মা উঠে। শিশুর বুকের ভিতর সর্দি ঘড়ঘড় করে।

পিঠ কোমরে ও নিতম্ব স্থানে অসহ্য বেদনা। কোমরের বেদনা, ঘাড়ের পেশীর আড়ষ্টতা।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – রাত্রে; তীব্র বাতের যন্ত্রণায় রোগীকে বিছানা থেকে উঠে পড়তে বাধ্য করে; বেদনার কারণে রোগী চলাফেরা করতে বাধ্য হয়। রাত্রে পায়ের তলায় জ্বালা। (সালফ)। বিকালের দিকে পায়ের গোড়ালি আড়ষ্ট হয়ে পড়ে। রাত্রের দিকে পক্ষাঘাতের ন্যায় পায়ের ক্ষমতার লোপ, পায়ের উপর ভর দিয়ে পা ফেলতে পারে না।

ঘুম ঝিমুনিভাব তৎসহ ঘ্যানঘ্যানানি, করুণ সুরে কাঁদা এবং ঘুমের ভিতর ফুঁপিয়ে কাঁদে; উদ্বেগ, ভয়পূর্ণ স্বপ্ন, তৎসহ ঘুমের সময় চোখের অর্ধেকটা খোলা থাকে।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি — গরমে, রেগে গেলে, মুক্ত বাতাসে, বায়ু প্রবাহে, রাত্রে।

উপশম কোলে করে ঘুরে বেড়ালে, উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া।

সম্বন্ধ – তুলনীয় – সাইপ্রিপেড; স্যানথেসিন্; একোনাইট পালসেটিলা; কফিয়া ; বেলেডোনা; স্ট্যাফি; ঈগ্নেশিয়া।

শিশুদের রোগের ক্ষেত্রে ও আফিম সেবনের কুফলে বেলেডোনার পর এই ঔষধটি ভালো কাজ করে।

রিউবাস ভিলোসাস — ব্ল্যাকবেরী – (শিশুদের উদরাময়; মল জলের মত পাতলা, এবং কাদার মত দেখতে)।

দোষঘ্ন ক্যাম্ফার; নাক্স ; প্যালসেটিলা।

পরিপূরক বেলেডোনা ; ম্যাগকার্ব।

শক্তি ৩য় থেকে ৩০ শক্তি।

ক্যামোমিলার সাধারণ ধাতুগত অবস্থা অত্যনুভূতি; প্রত্যেকটি ধারণায় অত্যনুভূতি; পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে অত্যনুভূতি, লোকজন সম্বন্ধে অত্যনুভূতি এবং সর্বোপরি বেদনায় অত্যনুভূতি। এই ধাতুগত অত্যনুভূতি এত অধিক যে, সামান্য যন্ত্রণাতেও এরূপ লক্ষণের বিকাশ হয়, যেন রোগী অত্যন্ত কষ্ট পাইতেছে। ইহা সাধারণতঃ স্ত্রীলোকদিগের স্নায়ুমন্ডলের উপর ক্রিয়াশীল, তিনি অত্যন্ত কাতর এবং অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়েন।

ইহার সহিত মানসিক অবস্থা চলিতে থাকে। মনের অনুভূতিপ্রবণতা। অত্যন্ত উত্তেজনা। এই দুইটি ক্যামোমিলায় এত ঘনিষ্ঠভাবে থাকে যে, ইহাদিগকে পৃথক করা যায় না। বেদনায় অত্যনুভূতি। অপমানে, বিরক্তিতে এত সহজেই বিচলিত হইয়া পড়ে যে, স্নায়ুমন্ডল এইসব কারণে অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ হইয়া উঠে এবং বেদনা, আক্ষেপ, শূলব্যথা, শিরঃপীড়া ও অন্যান্য স্নায়বিক লক্ষণ আরম্ভ হয়। স্নায়বিক শিশুকে শাস্তি দিলে, তাহার আক্ষেপ উপস্থিত হয়। অত্যনুভূতিপ্রবণ স্নায়বিক প্রকৃতির স্ত্রীলোকেরা মনমরা হইয়া পড়েন। অপমান ও উত্তেজনায় পেশীর উৎক্ষেপ ও সঙ্কোচন দেখা দেয়। স্নায়ুসমূহের অত্যনুভূতি এত অধিক যে, মাত্র কয়েকটি ঔষধ ইহার সমকক্ষ, যথা কফিয়া’, নাক্স ভমিকা’ ও ‘ওপিয়াম। অবশ্য ‘ওপিয়াম’, সম্বন্ধে একটি বক্তৃতা না শুনিলে তোমরা স্বভাবতঃই ভাবিবে যে, ‘ওপিয়াম’ কেবলমাত্র অচৈতন্যতাই উৎপাদন করিতে সমর্থ। তোমাদের মধ্যে যাহারা অসংস্কৃত ওপিয়াম প্রয়োগের পর মনের যে ভীতিপ্রদ অবস্থা ও কষ্ট উপস্থিত হয়, তাহা দেখিয়াছে, তাহারা বুঝিতে পারিবে যে, আমি ক্যামোমিলার অত্যনুভূতি বলিতে কি বুঝাইতেছি। শিশুদিগের আক্ষেপ। আজকাল সাধারণতঃই দেখা যায়, বিশেষতঃ পল্লী অঞ্চলে চিকিৎসা করার সময় দেখা যায় যে, অল্পবয়স্কা মাতা ও ধাত্রীরা শিশুদের উদরশূলে ক্যামোমিলা চা দিয়া থাকেন এবং শিশুও তাহাতে আক্ষেপগ্রস্ত হয়। কেহই উহাকে ক্যামোমিলা চা পান করানর ফল বলিয়া মনে করে না, কিন্তু ডাক্তার যদি ক্যামোমিলার বিষয় জানেন, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারিবেন যে, ঐ আক্ষেপ ক্যামোমিলার জন্য। তখন তোমরা উৎক্ষেপ, আক্ষেপ, উত্তপ্ত মস্তক, অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা, শব্দে ও লোক দেখিলে

অত্যনুভূতি এবং দুইবার আক্ষেপের মধ্যে অত্যন্ত উত্তেজনা দেখিতে পাইবে। শিশুদের আক্ষেপ, তাহারা আড়ষ্ট হইয়া যায়, চক্ষু ঘুরাইতে থাকে, মুখ বিকৃত করে, পেশীর সঙ্কোচন হয়, চারিদিকে অঙ্গাদি নিক্ষেপ করিতে থাকে, বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ মুষ্টিবদ্ধ করে, শরীর পশ্চাদ্দিকে বাঁকায়। ক্যামোমিলার আক্ষেপের প্রকৃতি এইরূপ। যে অত্যনুভূতিযুক্ত শিশুরা দাঁত উঠিবার সময় অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করে, তাহাদের এরূপ আক্ষেপ দেখা যায় দাঁত উঠিবার সময় স্বভাবতঃই মাতা বেশ উদ্বিগ্ন হইয়া পড়েন এবং শিশুকে নানা প্রকার খেলনা ইত্যাদি দিয়া তাহার কষ্টের লাঘব করিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশু যেন কোন কিছুতেই শান্তি পায় না। শিশুর দাঁত উঠা সম্পূর্ণ সুস্থভাবেই হওয়া উচিত, কিন্তু কাৰ্যতঃ ইহাকে একটি রোগ বলিয়া গণ্য করা হয় এবং অনেক চিকিৎসক “দাঁত উঠা শিশুদের” ঔষধ সঙ্গে রাখেন এবং একটির পর একটি প্রয়োগ করেন। ক্যামোমিলারও “দাঁত উঠার জন্য এইরূপ অপব্যবহার হয়। একথা সত্য যে, অনেক শিশুর দাঁত উঠার সময়, মস্তিষ্কের উত্তেজনা, আক্ষেপ, পেটের গোলমাল, ও বমন দেখা যায়, কিন্তু আমি বলি দন্তোগম একটি পীড়িত অবস্থা হওয়া উচিত নয়, উহা স্বাভাবিক হওয়াই উচিত। যদি শিশুরা সুস্থ থাকে, তাহাদের কষ্টভোগ ব্যতীতই দাঁত উঠিবে। কিন্তু আমাদিগকে ধীর দন্তোগমের চিকিৎসা করিতে হয় এবং ঐ সময়ে শিশু উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় থাকে, অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে, সে ঘুমাইতে পারে না। ভীতিপূর্ণ স্বপ্ন দেখার ন্যায় জাগিয়া উঠে। উত্তেজিত হইয়া জাগিয়া উঠে, বমি করে, দাঁত উঠার সহিত উদরাময় দেখা দেয়। শিশুকে যদি উপযুক্তভাবে, দেখাশুনা করা না হইয়া থাকে, তাহা হইলেই এরূপ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিম্বা, হয়ত মাতা সন্তান। প্রসবের জন্য উপযুক্তভাবে তৈয়ারী হন নাই। “ধনুষ্টঙ্কারের ন্যায় আক্ষেপ। চক্ষুর পাতার পেশীসঙ্কোজন। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যন্ত্রণা । সৰ্বাঙ্গীণ দুর্বলতা, মূর্চ্ছাকল্পতা। সর্বাঙ্গে অসাড়তার সহিত স্নায়ুশূল। আঁকি মারার ন্যায়, তীরবেঁধার ন্যায়, ঝিনঝিন করা যাতনা। চোয়াল ও দন্তের বেদনা ভিন্ন বেদনা অনেক সময়েই উত্তাপে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। কিন্তু কানের বেদনা ও হস্ত-পদাদির। যন্ত্রণা উত্তাপে উপশম হয়।

তোমরা পাঠ্যপুস্তকে “শীতোত্তাপ ও আবহাওয়া” অনুচ্ছেদ দেখিবে। যন্ত্রণা উত্তাপে বুদ্ধিযুক্ত হয়’ লক্ষণটির নীচে দুইটি কাল রেখা টানিয়া দেওয়া হইয়াছে, যেন উহা একটি মহামূল্যবান লক্ষণ। আবার তারপর দেখিবে, কোনরূপ রেখা ব্যতীত “ঠান্ডায় অত্যনুভূতিবিশিষ্ট, শীতার্ত” এবং “উত্তাপে উপশমপ্রাপ্ত লেখা আছে। কিন্তু ব্যাপারটি এই যে, যে-যন্ত্রণা উত্তাপে বাড়ে, তাহা দাঁত ও চোয়াল সংক্রান্ত, উহা নিশ্চয়ই ঐ অঙ্গ সম্বন্ধে একটি বিশেষ লক্ষণ, কিন্তু একথাও সত্য যে, রোগী সৰ্বাঙ্গীণভাবে ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত; সে উত্তাপেই উপশমিত হয়। সাধারণভাবে রোগী উত্তাপে উপশম পায়। অতএব উত্তাপে খারাপ হওয়া একটি বিশেষ লক্ষণ এবং পাঠ্যপুস্তকে বলা উচিত ছিল যে, যে-যন্ত্রণা সাধারণতঃ উত্তাপে খারাপ হয়, তাহা দন্তসংক্রান্ত।

মানসিক অবস্থায়ই ক্যামোমিলার সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় অংশ। সমুদয় শারীর-বিধানেই ইহা পরিব্যাপ্ত থাকে এবং তোমরা দেখিতে পাইবে যে, যে-অঙ্গটিই গ্রহণ করা হউক না কেন, যে-অঙ্গটি সম্বন্ধেই পাঠ করা হউক না কেন, তাহাতেই রোগীর মানসিক অবস্থাটি বর্তমান থাকে। এই ঔষধে অন্য যে কোন অঙ্গের লক্ষণ অপেক্ষা মানসিক লক্ষণই অধিক ক্রন্দন। “করুণ ক্রন্দন। উত্তেজনাপূর্ণ। এই উত্তেজনা এত বেশী হয় যে, উহা সময়ে সময়ে অদ্ভুত অদ্ভুতভাবে প্রকাশিত হইয়া পড়ে। রোগী যন্ত্রণায় উন্মাদের মত হইয়া উঠে এবং সে তাহার বিচক্ষণতা ও নীতিজ্ঞান ভুলিয়া যায়। উদারতা লোপ পায়। সে অপরের মনোভাব সম্বন্ধে বিবেচনা করে না। অন্যের মনোভাবের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে সে সোজাসুজি ঝগড়া ও বিবাদে প্রবৃত্ত হয়। সুতরাং যখন তোমরা চিকিৎসা ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইবে তখন প্রসববেদনার কষ্টে ও যন্ত্রণায় কাতর কোন রোগিণী যদি বলেন, “ডাক্তার আমি তোমায় চাহি না, তুমি বাহির হইয়া যাও,” তাহা হইলে তোমরা বিস্মিত হইও না। কিন্তু ঠিক এইরূপ স্ত্রীলোকই অন্য অবস্থায় ভদ্র মহিলার ন্যায় ব্যবহার করিবেন। তাহার যে ভয়ানক যন্ত্রণা হইতে থাকে, তাহাতে তাহাকে উন্মত্ত করিয়া তুলে এবং এই উন্মাদলক্ষণ ও এই যন্ত্রণার অত্যনুভূতি তাঁহার মানসিক অবস্থার সহিত মিশিয়া যায়। তিনি ক্রোধকে দমন করিতে পারেন না, তাহার মেজাজ শুভ্র-উত্তাপের মত প্রচন্ড হইয়া উঠে। তারপর শিশুদের ক্ষেত্রে শিশু ঘ্যানঘ্যান করে ও কাঁদে, সবকিছুতেই থুতু ছিটাইয়া দেয়। প্রতি মিনিটে সে একটি করিয়া নূতন জিনিষ চায়। সে যে-জিনিষটি চায়, তাহা আর গ্রহণ করে না। সে কিছু খাবার চায়, কিছু খেলা করিবার জিনিষ চায়, খেলনা চায়, কিন্তু যখন উহা তাহাকে দেওয়া হয়, সে উহা হুঁড়িয়া ফেলিয়া দেয়, ঘরের অপর দিকে নিক্ষেপ করে। শিশু পূৰ্বে চাহিয়াছিল, কিন্তু এখন আর চাহে না—এরূপ কিছু দিতে গেলে ধাত্রীর মুখে আঘাত করে। অব্যবস্থিতচিত্ততা। বোধ হয়, যন্ত্রণা ও কষ্ট সময়ে সময়ে ধীর সঞ্চালনে উপশমিত হয়, বিশেষভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে। শিশুকে কোলে করিয়া বেড়াইলে যন্ত্রণা যেন কম হয়, সুতরাং শিশু সৰ্ব্বদাই কোলে কোলে থাকিতে চায়। একথা শূলব্যথা এবং পেটের গোলযোগ সম্বন্ধে সত্য। ইহা কান কামড়ানিতেও সত্য। ইহা সন্ধ্যাকালীন জ্বর; ঠান্ডা লাগার জন্য সর্বাঙ্গীণ কষ্ট, দাঁত উঠার সময়কার উপসর্গ সম্বন্ধেও সত্য। শিশুকে কোলে করিয়া বেড়াইতে হয়। ধাত্রী শিশুকে সৰ্ব্বক্ষণ কোলে করিয়া বেড়াইতে বাধ্য হয়। আর তারপর শিশু অস্থিরতা ও বাড়ীর অন্যান্য লোকের সম্বন্ধে খেয়াল জাগে। শিশু দুই তিনবার ধাত্রীর সহিত ঘরের এদিক হইতে ওদিকে যায়, তারপর, মাতার কাছে যাইবার জন্য ব্যগ্র হয়; মায়ের সহিত দুই তিনবার ঘরের এদিক ওদিক করে, এবং তারপর পিতার কাছে যাইতে চায়। এইভাবে তাহার মতলব বুদলাইতে থাকে। কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না। উহার যেন কোন শান্তি থাকে না। যখন শিশুর কান কামড়ায়, তীব্র তীরবিদ্ধবৎ বেদনায় শিশু চিৎকার করিতে থাকে। সে কানের কাছে হাত লইয়া যায়। যন্ত্রণার জন্য তীব্র, কান-ফাটান স্বরে চিৎকার করে। যন্ত্রণা এত তীব্র হয় যে, বয়স্কগণ কিছুতেই, স্থির থাকিতে পারে না; একথা সত্য নয় যে, তাহারা নড়িলে চড়িলেই সব সময়ে উপশম পায়, কিন্তু তবু ঐরূপ মনে হয়। বাস্তবিক তাহারা নড়াচড়া করে, কারণ তাহারা স্থির থাকিতে পারে সুতরাং ক্যামোমিলা রোগী শয্যায় থাকিলে এপাশ-ওপাশ করিতে থাকে, শয্যায় না থাকিলে এক মুহূর্তের জন্যও স্থির থাকিতে পারে না। আর এইসবের সহিত সেই একই প্রকার উত্তেজনা প্রবণতা বর্তমান থাকে;—বেদনায় ভীষণ উত্তেজিত হইয়া উঠে, বেদনায় ক্রুদ্ধ হইয়া, উঠে। যন্ত্রণায় বদমেজাজ হইয়া উঠে, বেদনায় গালাগালি দিতে থাকে, তাহার বেদনা এতই কষ্টদায়ক হয়। কথা বলিতে চায়, খিটখিট করে। বেদনা চলিয়া গেলে রোগী অবিরত বসিয়া আপন মনে ভাবতে থাকে।

ক্যামোমিলায় বিমর্ষতা আছে; যন্ত্রণা ব্যতীত মনোকষ্ট আছে। ক্যামোমিলা রোগী বসিয়া আপন মনে ভাবিতে থাকে- ইহা এক প্রকার অন্তর্দর্শন। তাহাকে একটি কথাও বলাইতে পারা। যায় না। বিষাদ। ক্যামোমিলার শিশুকে স্পর্শ করা যায় না। সে খুশিমত কাজ করিতে চায়। পরিবর্তন চায়, নূতন কিছু করিতে চায়। পূর্ণবয়স্ক ও শিশু উভয়ের নিকট হইতেই খিটখিটে ভাবের পাওয়া যায়। তুর্কবিতর্ক হইতে, ক্রোধ হইতে রোগাক্রমণ হয়। ক্রোধ হইতে আক্ষেপ। উপস্থিত হয়। শিশু যদি হুপিং কাশিতে ভুগিতে থাকে, তাহা হইলে, চটিয়া গেলে তাহার কাশির আবেশ, আক্ষেপিক কাশি উপস্থিত হয়। তেজঃপূর্ণ হইয়া উঠে, মুখ লাল হয় আর তারপর, কাশিতে আরম্ভ করে। খিটখিটে ভাব। “ঝগড়াটে, সহয়জই মুখ ভার করে অথবা ক্রোধে উত্তেজিত হয়। মনে আঘাত লাগার কুফল।” মানসিক অবস্থাটি এইরূপ হয় এবং আমি পূর্বে যেরূপ বলিয়াছি, যেখানেই ক্যামোমিলা-জ্ঞাপক প্রাদাহিক অবস্থা থাকে, সেইখানেই এইরূপ, মানসিক অবস্থা পাওয়া যায়। নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কণ্ঠনলীপ্রদাহ, কর্ণ-প্রদাহ, বিসর্প। শিরঃপীড়া, জ্বর প্রভৃতি সবকিছুই ক্যামোমিলা দ্বারা আরোগ্য হইতে পারে যদি এই মানসিক লক্ষণ এবং অন্য বিশেষ লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে।

অত্যনুভূতিযুক্ত ব্যক্তিগণের ও অনুভূতিপ্রবণ স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে ক্যামোমিলাজ্ঞাপক, শিরঃপীড়া দেখা যায়। স্নায়বিক প্রকৃতি, অতি পরিশ্রান্ত, অতি ক্লান্ত। অকুশলতা। যে-সকল উত্তেজনাপ্রবণ স্ত্রীলোকেরা বেদনায় কষ্ট পান। সামান্য শিরঃপীড়াই বড় ব্যাপার বলিয়া মনে হয়। দপদপকর, ছিন্নকর, ফাটিয়া যাওয়ার ন্যায় যন্ত্রণা। রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া। যন্ত্রণার বিষয় চিন্তা করিলে, কষ্টের বিষয় চিন্তা করিলে শিরঃপীড়ার বৃদ্ধি। শিরঃপীড়া সন্ধ্যাকালে বাড়ে। সন্ধ্যা ৯ ঘটিকাই অনেক উপসর্গের উপচয়ের বিশিষ্ট সময়। সময়ে সময়ে প্রাতঃকালে ৯ ঘটিকায় আবার কখন কখন রাত্রি ৯ ঘটিকায় বৃদ্ধি। জ্বরাবস্থা প্রাতঃকালে ৯টায় খারাপ হয়। যন্ত্রণা সন্ধ্যায়, বিশেষতঃ রাত্রি ৯টায় বৃদ্ধিযুক্ত হয়। মস্তকে ও শঙ্খস্থানে সূঁচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর বেদনা। শঙ্খস্থানে সঞ্চরণশীল যন্ত্রণা। মাথার দিকে মনোযোগ দিলেই, উহাতে চাপনবৎ বেদনা, মনকে অন্য কোন বিষয়ে বা কাৰ্যে ব্যস্ত রাখিলে উপশম হয়; নিজেকে জোর করিয়া কোন কাজে লাগাইলে অথবা অন্য কিছু ভাবিতে থাকিলে উপশম হয়। মস্তকে রক্তসঞ্চয়। মুখমন্ডল, দাঁত, কান, মাথার দুইপার্শ্বে ভীষণ স্নায়ুশূল। মুখের অভ্যন্তরের যন্ত্রণা ঠান্ডা প্রয়োগে উপশমিত হয়। কর্ণের ও মাথার দুই পার্শ্বের যন্ত্রণা উত্তাপে উপশমিত হয়; কর্ণশূল উত্তাপে উপশমিত হয়।

চক্ষে যন্ত্রণা থাকে। রক্তপাতের সহিত চক্ষুর প্রদাহ। নবজাত শিশুদের চক্ষু হইতে রক্তাক্ত জল ক্ষরণ। যদি উত্তেজনাপূর্ণ মেজাজ থাকে, তাহা হইলে ক্যামোমিলা আরোগ্য করিবে। চক্ষু হইতে বিদায়ী স্রাব, হলদে স্রাব, পুঁজের ন্যায় পদার্থ স্রাব। চক্ষুকোটরে ভয়ানক চাপ বোধ। হাঁচিযুক্ত সর্দির সহিত অশ্রুস্রাব। নাক বুজিয়া যাওয়া। শিরঃপীড়া, উত্তেজনাপ্রবণতা। এই লক্ষণের সহিত “মুখমন্ডলের একদিক, লাল ও উত্তপ্ত এবং অপরদিক বিবর্ণ।” এই ঔষধের সামগ্রিক ধাতুগত অবস্থার ন্যায় শ্রবণশক্তিরও আতিশয্য আছে। কর্ণে গর্জনবৎ, ঘন্টাবাদনবৎ এবং সঙ্গীতবৎ শব্দ। কর্ণে সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা, উত্তাপে উপশম। চাপনবৎ কর্ণবেদনা। তোমরা দেখিবে যে, যন্ত্রণার সময় শিশু কানে হাত দিতেছে, এবং বিরক্তভাবে কাঁদিতেছে, উচ্চ চিৎকার করিতেছে, কাতরভাবে চিৎকার করিতেছে। কর্ণে ভীষণ বেদনা। কথা কহিবার মত বড় হইয়া থাকিলে, সে কর্ণে এক প্রকার উত্তাপ এবং কর্ণ যেন আবদ্ধ হইয়াছে বা পুঁজিয়া গিয়াছে, এরূপ অনুভূতির বিষয় অভিযোগ করিবে। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি, স্নায়বিক স্পর্শকাতর স্ত্রীলোক, যাহারা কান ঢাকা না দিয়া গাড়ী-ঘোড়ায় চড়িতে পারে না, তাহাদের কর্ণবেদনা, মুখের ও মস্তকের অন্যান্য অংশ বায়ুতে অনুভূতিবিশিষ্ট না থাকিলেও, কর্ণদ্বয় বায়ুতে স্পর্শকাতর থাকে। তোমরা এমন কতকগুলি রোগী দেখিবে, যাহারা ঘাড়ে বায়ু লাগিতে দিতে পারে না। অপর কতকগুলি রোগী দুই কাধের মধ্যে বাড়তি আচ্ছাদন রাখে। ক্যামোমিলা কান দুইটিকেই বাছিয়া লয়। তাহার সমুদয় দেহ বায়ুতে ও ঠান্ডায় অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে এবং সে প্রচুর পোষাকে আবৃত থাকিতে চায়।

হাঁচি, জলবৎ সর্দি। মুখের একপার্শ্ব উত্তপ্ত এবং তাহার সহিত অনেক সময়ে মাথা ও চোয়ালে বেদনা থাকে। ঝরা সর্দি, চটচটে, বিদাহী সর্দি, তৎসহ ঘ্রাণশক্তির লোপ। যতদিন সর্দি থাকে, ততদিনই ঘ্রাণশক্তির লোপ থাকে।

মুখমন্ডলে ছিন্নকর বেদনা, সময়ে সময়ে একই সঙ্গে দাঁত ও বহিস্থ মুখমন্ডল আক্রান্ত হয়। এরূপ প্রায়ই দেখা যায় যে, অত্যন্ত অনুভূতিশীল স্ত্রীলোক, মনঃকষ্ট পাইলে বা ভৃত্য দ্বারা বিরক্ত হইলে তাহার ঘরে গিয়া ঐ উত্তেজনার ফলে বা ক্রোধের ফলে মুখমন্ডলের যন্ত্রণায় কষ্টভোগ করিতে থাকেন। যদি তাহার মুখমন্ডলের বাহির দিকে বেদনা হয়, তাহা হইলে উহা উত্তাপে উপশমিত হয়, কিন্তু ঐ বেদনা যদি দাঁতকে আক্রমণ করে, তাহা হইলে উহা ঠান্ডায় উপশমিত হয়। মুখের উত্তাপ, কিন্তু শরীরে অবশিষ্ট অংশ শীতল থাকে। “আহার বা স্নানের পরে মুখ ঘামে।” এই ঔষধের একটি সাধারণ লক্ষণ—কেবলমাত্র মাথার চারিদিক এবং মাথার কেশবিশিষ্ট ত্বকের ঘর্ম। কখন কখন হাম বা আরক্ত জ্বরে আমরা ক্যামোমিলার লক্ষণ পাইয়া থাকি। মাথার চারিপার্শ্বে ঘর্ম ও মুখের একপার্শ্ব লাল। “গালের একপার্শ্বে ফুলা।” অর্থাৎ প্রদাহের আক্রমণ ক্রমশঃ লাল হইতে থাকে এবং অবশেষে বেগুনিবর্ণ ধারণ করিয়া মানসিক লক্ষণের সহিত বিসর্পের আকার ধারণ করে। মুখমন্ডল উত্তপ্ত, একপার্শ্ব লাল। মুখমন্ডলে জ্বালা। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল। যদি মুখের মধ্যে গরম কিছু লওয়া হয়, তাহা হইলে তাহাতে দাঁত কনকনানি আরম্ভ হইবে এবং সময়ে সময়ে দাঁতের গোড়ায় জ্বালা ও দপদপানি দেখা দিবে; ছিন্নকর, সূঁচীবিদ্ধবৎ, হুলফোটানবৎ যাতনা, কথা বলিলে বৃদ্ধি, খোলা বাতাসে বৃদ্ধি, গরম ঘরে বা বিছানা গরম হইয়া উঠিলে বৃদ্ধি, যাহা কিছুতেই দেহকে উত্তপ্ত করে, তাহাতেই বৃদ্ধি; মুখের মধ্যে ঠান্ডা পানীয় রাখিলে উপশম। দন্তশূল দিনের বেলা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে; কিন্তু যেমনই রাত্রি আসে, আর রোগী গরম বিছানায় শয়ন করে, অমনি এই তীরবিদ্ধবৎ ছিন্নকর যন্ত্রণা আরম্ভ হয়, এবং তোমরাও উত্তেজনাপ্রবণতা, অত্যনুভূতি, বিশেষ প্রকার মানসিক অবস্থা, মস্তকে উত্তাপযুক্ত ক্যামোমিলাজ্ঞাপক দন্তশূলের সাক্ষাৎ পাও। দন্তমাড়ির স্ফীতি ও প্রদাহ। দন্তমাড়িতে স্ফোটক জন্মানর সম্ভাবনা। গরম ঘরে প্রবেশ করিলে দন্তবেদনা।” এই সময়ে উহা ঠান্ডা বাতাসে ভাল থাকে। ইহা এমন একপ্রকারের দন্তবেদনা যে, ঠান্ডা লাগিলে, ঘামিবার সময় নিজেকে ঠান্ডা বাতাসে উন্মুক্ত রাখিলে উপস্থিত হয়, কিন্তু যখন বেদনাটি চলিতে থাকে, তখন উহা ঠান্ডাতেই উপশমিত হয়, “বায়ুপ্রবাহ হইতে দন্তশূল।” “ঠান্ডা জিনিষ খাইলে উপশম হয়; মধ্যরাত্রির পূর্বে বৃদ্ধি।” ক্যামোমিলার যে-সকল রোগ সন্ধ্যায় বা রাত্রে উপস্থিত হয়; তাহার অধিকাংশই মধ্যরাত্রের দিকে, কখন কখন মধ্যরাত্রির পূর্বেই নিবৃত্ত হয়। মধ্যরাত্রির পর হইতে প্রাতঃকাল পৰ্য্যন্ত ক্যামোমিলার প্রায় সকল লক্ষণই অনুপস্থিত থাকে

অনেকগুলি লক্ষণ দিবাভাগেও অনুপস্থিত থাকে। ইহার বৃদ্ধি রাত্রির প্রথম দিকে। দাঁত অত্যন্ত লম্বা বোধ হয়, মাড়ি স্ফীত হয়। ক্যামোমিলার শিশু প্রায়ই দাঁতের মাড়ির গায়ে এক গ্লাস ঠান্ডা জল চাপিয়া ধরে। শিশুর দন্তমাড়ি প্রদাহিত হয়, দন্তমাড়িতে যাতনা দেখা দেয়, দাঁত উঠা যন্ত্রণাপূর্ণ হয় এবং শিশু মুখের মধ্যে ঠান্ডা কিছু রাখিতে চায়। তোমরা অবশ্য আশা করিও না যে, শিশু অত্যন্ত ছোট থাকিলেও সে গ্লাসের ঠান্ডা দিকটা চাপিয়া ধরার উপযোগিতা বুঝিতে পারিবে। মুখ হইতে দুর্গন্ধ, পচা গন্ধ বাহির হয়।

যে আক্ষেপ শিশুর সর্ব্বাঙ্গ আক্রমণ করে, তাহা সম্ভবতঃ কণ্ঠনালীতেও আক্রমণ করে, আবার সময়ে সময়ে শিশুর অন্য কোথাও আক্রমণ দেখা না দিয়া কণ্ঠনলীটিই আক্রান্ত হয়। “কাশির সময় অথবা কাশি ব্যতীতই কণ্ঠনালীর আক্ষেপ। কণ্ঠনলীর আক্ষেপিক সঙ্কোচন। গলনরাধ। গলার ক্ষততা ও প্রদাহ।” গলার সর্বত্র আরক্ততা থাকিলে, ঐ আরক্ততা সমভাবে সৰ্ব্বত্র পরিব্যাপ্ত হইলে এবং যথেষ্ট ফুলা থাকিলে, ক্যামোমিলা গলক্ষত আরোগ্য করে। টনসিলদ্বয়ের প্রদাহ। অত্যন্ত আরক্ত, ঐ সঙ্গে মানসিক অবস্থাও বর্তমান থাকে। যে-প্রকার উত্তেজনাপ্রবণ ধাতু যন্ত্রণায় কষ্ট পায়, যাহারা সহজেই ক্রুদ্ধ হয় এবং খিটখিটে মেজাজে থাকে, তাহাদের ছাড়া অন্যপ্রকার ধাতুতে ক্যামোমিলা কখনও গলক্ষত আরোগ্য করিবে না। কখন ক্যামোমিলা গলক্ষত রোগে দিতে হইবে, তাহা তোমাদিগকে ক্যামোমিলার মানসিক অবস্থাই জানাইয়া দিবে। ক্ষুধার অভাব। ঠান্ডা জলের জন্য প্রবল তৃষ্ণা এবং অম্ল পানীয়ে প্রবৃত্তি। অদম্য পিপাসা।” কফিপানে, উষ্ণ পানীয়ে, সূপ ও তরল খাদ্যে অপ্রবৃত্তি। কফিতে অপ্রবৃত্তি একটি অদ্ভুত ব্যাপার। শারীরবিধানের অনুভূতিপ্রবণতার দিক হইতে ক্যামোমিলা ও কফি খুব বেশী সদৃশ। উহা একে অপরের প্রতিবিষ। লোকে যখন অতিরিক্ত কফি খাইতে থাকে, শুশ্রুষাকারীরা রোগীর দেখাশুনা করিবার জন্য রাত্রি জাগিতে কফি খায়, লোকে যখন অতি ক্লান্ত ও অতি পরিশ্রান্ত হইয়া অতিরিক্ত কফি খায়, তখন ক্যামোমিলা তাহার প্রতিবিষ। “যন্ত্রণায় তৃষ্ণার্ত ও উত্তপ্ত।” যখন যন্ত্রণা আসে, কোথায় যন্ত্রণা তাহাতে কিছু আসে যায় না, যদি রোগিণী উত্তপ্ত হইয়া উঠেন এবং সময়ে সময়ে সত্যসত্যই জ্বরাক্রান্ত হন, তাহা হইলে ক্যামোমিলা প্রযোজ্য। মুখ আরক্ত, বিশেষভাবে একদিক। মস্তক উত্তপ্ত, অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণতা।

ক্যামোমিলায় যথেষ্ট বমন আছে। বাষ্প উগার, উহার গন্ধ গন্ধকমিশ্রিত হাইড্রোজেনের ন্যায়। ক্যামোমিলা রোগীর প্রবল উকি উঠা আছে। সে বমি করিবার জন্য ভয়ানক চেষ্টা করে। মনে হয়, উহাতে পাকস্থলী ছিঁড়িয়া যাইবে। ঠান্ডা ঘামে সর্বাঙ্গ আবৃত হয়। অবসন্ন হইয়া পড়ে। মর্ফিন দ্বারা যেরূপ হয়, ইহাও তদ্রুপ। চিকিৎসকের দ্বারা অতি মাত্রায় ঔষধ সেবিত এরূপ রোগী যদি তুমি দেখিয়া থাক- আশা করি তোমার নিজের দ্বারা হইয়াছে, অতিরিক্ত ঔষধ সেবিত হইয়াছে, এরূপ রোগী কখনও দেখিবে না—তোমাকে রোগী তৈয়ারী করিতে হইবে না, কিন্তু তুমি যদি যেখানে একজন এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক আছেন, এরূপ কোন সহরে যাও, তাহা হইলেই রোগী দেখিতে পাইবে। চিকিৎসক মহাশয় হয়ত কোন অত্যনুভূতিযুক্ত রোগীকে ‘মনি’ দিবেন, উহাতে হয়ত তাহার বেদনা অল্পক্ষণের জন্য উপশমিত হইবে, কিন্তু শীঘ্রই উকট উকি উঠা আরম্ভ হইবে, রোগিণী উকি তুলিতে ও বমি করিতে থাকিবেন এবং বমি করিতে করিতে বমি করিবার মত আর কিছুই পেটে থাকিবে না। ক্যামোমিলা উহা নিবারণ করিবে, প্রথম মাত্রায় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই, আর, এই একটি মাত্র ঔষধই তোমার প্রয়োজন হইবে। অপসংস্কৃত মফিনের ক্রিয়াশেষে বমন আরম্ভ হইলে, মর্জিন’জাত ঐ বমন ইহা সৰ্ব্বদাই থামাইয়া থাকে।

উদরশূল, বিশেষতঃ ছোটদের, এবং শিশুদের। পাকস্থলী ও উদরে যন্ত্রণা। শিশু দ্বিভাজ হয় ও চিৎকার করে, লাথি ছেড়ে, কোলে উঠিয়া বেড়াইতে চায়, অত্যন্ত উত্তেজিত হয়; আক্রমণটি সন্ধ্যার দিকে উপস্থিত হয়, মুখের এক পাশ লাল ও অপর পাশ বিবর্ণ থাকে, এটা সেটা চায়।। উহা দিলে আর লয় না আর এই খানেই তুমি একটি ক্যামোমিলার উদরশূল বেদনার রোগী পাইলে। উহা বায়ুজনিত উদরশূল। উহা এক মিনিটেরও অংশ কাল থাকে এবং তারপর আবার চাড়া দিয়া উঠে। ইহা হইতে বুঝা যায় যে, ইহা একপ্রকার খালধরা, বায়ুজনিত খালধরা। যেসকল পূর্ণবয়স্ক লোক এই সকল লক্ষণ অনুভব করিয়াছে, তাহাদের মনে হইয়াছে, উহা কৰ্ত্তনবৎ, জ্বালাকর, কামড়ানবৎ প্রকৃতির বেদনা। পেট কামড়ানি বেদনা। অবশ্য, যে-প্রকার বেদনাকে শূলবেদনা বলা হয়, ইহাও তাহাই। অন্ত্রের মধ্যে খালধরা। পেট কামড়ানি ব্যথা। কখন কখন এরূপ কামড়ানি যে, এখনই পায়খানায় ছুটিতে হইবে। পেট ঢাকের ন্যায় ফাপিয়া উঠে। সময়ে সময়ে উহা উষ্ণ বাহ্য প্রয়োগে উপশমিত হয়। প্রস্রাব করিবার সময় উদরশূল।” ইহা একটি অসাধারণ লক্ষণ। “প্রাতঃকালে শূলব্যথা, উদর বায়ুস্ফীতিযুক্ত।”

ক্যামোমিলার সর্বাপেক্ষা বিশিষ্টপ্রকার মল ঘাসের ন্যায় সবুজ অথবা কাটা ডিমের ন্যায় অথবা দুই খন্ড করা ডিম পুনরায় কাটার মত; হলদে ও সাদা। উহার মাঝে মাঝে ঘাসের মত সবুজ আম, কাটা ঘাসের মত, কুচান শাকের মত। সবুজাভ পিচ্ছিল মল-সবুজাভ জল। যাহারা নিজের ভাব প্রকাশ করিবার মত বড় হইয়াছে, যাহারা পরীক্ষাকালে বলিয়াছে যে, মল নির্গমন কালে গরম মনে হয়। উহার গন্ধ গন্ধকমিশ্রিত হাইড্রোজেনের মত। প্রচুর মল, আমাশয়ের ন্যায় কোঁথানিযুক্ত সামান্য মল। জলের মত উদরাময়, প্রত্যহ ছয়, আটবার মলত্যাগ। আমযুক্ত উদরাময়। সবুজ জলের মত উদরাময়, মল ও আমসংযুক্ত। “হরিদ্রাভবাদামি বর্ণ মল।” আবার মলত্যাগের বেগ দেওয়ায় অক্ষমতাযুক্ত কোষ্ঠবদ্ধতা। সরলান্ত্রের প্রক্ষাঘাতিক দুর্বলতা, সরলান্ত্রের ক্রিয়াহীনতা। মলদ্বার স্ফীত আকৃতি ও আরক্ততার সহিত ঠোঁট উল্টানর ন্যায় বাহির হইয়া থাকে।

আমি যেরূপ বর্ণনা করিয়াছি, সেইরূপ বেদনায় অত্যনুভূতিযুক্ত, খিটখিটে, সামান্য যাতনাতেই কাতর হইয়া পড়ে, এরূপ স্ত্রীলোকদিগের ঋতুকালে অনেক লক্ষণ প্রকাশিত হয়। ঋতু প্রবাহকাল, চাপচাপ, দুর্গন্ধ। জরায়ুতে খালধরা বেদনা, উত্তাপে উপশম। সর্বপ্রকারন বেদনা ও উপসর্গের সহিত যাতনায় অত্যনুভূতি”। অধিকন্তু মানসিক অবস্থা, ঋতুকালে। উত্তেজনাপ্রবণ ও খিটখিটে মানসিক অবস্থা। অতিরজঃই হউক আর জরায়ুর সাধারণ স্রাবই হউক, প্রচুর কাল কাল চাপ থাকে। “ক্রোধের পরবর্তী ঋতুশূল।” অর্থাৎ, “যদি তাহার ক্রোধ হইতে খুব উত্তেজনা দেখা দিয়া থাকে, তাহা হইলে ঋতুকালে জরায়ুতে তীব্র খালধরার ন্যায় যাতনা। যে-স্ত্রীলোক খালধরার অধীন নন, তাঁহারও যেন সর্দি হইয়াছে, এরূপ জননেন্দ্রিয়ের উপদাহ, উত্তেজনা ও মনের গোলমাল দেখা দিয়া ঋতুর সময় খালধরা উপস্থিত করিবে। ইহা ঝিল্লীযুক্ত কষ্টরজঃরোগে অত্যন্ত উপযোগী ঔষধ। সম্ভবতঃ উহা প্রথম ঋতুকাল হইতেই বর্তমান ছিল। স্ত্রীলোকটির প্রতি মাসেই সামান্য সামান্য ঝিল্লীস্তর নির্গত হয়। উহা প্রসববেদনার ন্যায়। তীব্র বেদনার সহিত নির্গত হয়, এবং প্রায়ই ঐসঙ্গে রক্তের চাপ থাকে। ক্যামোমিলা উপশমকর হইতে পারে । ইহা গভীরক্রিয় এন্টিসোরিক ঔষধগুলির ন্যায়, ঋতুদোষ সংশোধক ঔষধ নয়, যাহা ঝিল্লীকে সম্পূর্ণ নির্গত করে এবং ভবিষ্যতে উহার উৎপত্তি নিবারণ করে; কিন্তু মনের উত্তেজিত অবস্থা ও উত্তাপে উপশমিত জ্বরভাবের সহিত, খালধরা ও আঁকড়াইয়া ধরা প্রসব বেদনার ন্যায় বেদনাযুক্ত গুরুতর আক্রমণে ইহা উপশমপ্রদ হইয়া থাকে।

“যন্ত্রণাকর হলদে প্রদরস্রাব। অতিরিক্ত ঋতুরক্ত; রক্ত ঘোরাল বর্ণ, প্রায় কাল, চাপচাপ, পশ্চাদ্দিক হইতে ভিতর দিয়া সম্মুখভাল পর্যন্ত বিস্তৃত বেদনাযুক্ত, তৎসহ মূর্চ্ছার আক্রমণ হস্তপদাদির শীতলতা এবং অত্যন্ত তৃষ্ণা।”

গর্ভকালেও স্ত্রীলোকের ক্যামোমিলাসূচক অবস্থা দেখা দেয়। অনিয়মিত সঙ্কোচন, মিথ্যা প্রসববেদনা। প্রসববেদনা ভুল স্থানে অনুভূত হয়। প্রসববেদনা পৃষ্ঠের দিকে বেশী অনুভূত হয়। অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, কৰ্ত্তনবৎ, ছিন্নকর, উচ্চ চিৎকারকারক সঙ্কোচন। অত্যন্ত উত্তেজনাযুক্ত, তিনি বেদনাকে গালি দেন, ডাক্তারকে গালাগালি করেন; সকলকেই ভর্ৎসনা করেন; ডাক্তারকে ঘর হইতে তাড়াইয়া দেন ধাত্রীকে তাড়াইয়া দেন; আবার তাহাকেই ডাকিয়া পাঠান, যাহা দিতে যাওয়া হয়, তাহাই ফেলিয়া দেন। তাঁহার প্রসববেদনা একবার এখানে, আবার সেখানে আঁকড়াইয়া ধরে এবং খালধরা থাকে; তাহাতে বুঝা যায় যে, জরায়ুর কতকগুলি তন্তু একদিকে এবং অপর কতকগুলি আর একদিকে সঙ্কুচিত হইতেছে। যেরূপ নিয়মিত সঙ্কোচন হইলে জরায়ুর আধেয় নির্গত হইতে পারে, জরায়ু হইতে মাংসপিন্ড বা সন্তান নির্গত হইতে পারে, সেরূপ সঙ্কোচন হয় না। যদি চিকিৎসক ঐ গর্ভবতী স্ত্রীলোকটিকে গর্ভকালে পান, তাহা হইলে তাহার ঐসকল অনিয়মিত সঙ্কোচন দূর করার উপযুক্ত অথবা প্রসবকালে উহা নিবারণ করার উপযুক্ত ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত। তাহা হইলে যন্ত্রণা আর তত ভীষণ হইতে পারে না তিনি সঙ্কোচন অনুভব করেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই উহা যন্ত্রণাশূন্য হয়। তোমরা অনেক সময়েই স্ত্রীলোকদিগকে এইভাবে তৈয়ারী করিতে পারিবে না, তাহারা উহার অনুমতি দিবেন না। স্ত্রীলোকেরা অন্য সময় অপেক্ষা সন্তান-প্রসবের পূর্বে অধিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও খেয়ালী হইয়া উঠেন। স্ত্রীলোকের গর্ভাবস্থার আগাগোড়া এবং সময়ে সময়ে তাহা অপেক্ষা অধিককালে চিকিৎসাধীন থাকা উচিত। গর্ভকালই স্ত্রীলোকদের চিকিৎসার উপযুক্ত সময়। তাঁহার বিশৃঙ্খলাজ্ঞাপক লক্ষণগুলি এই সময়েই প্রকাশিত হয়, অন্য সময়ে হয় না। যদি তাহার সোরাদোষ থাকে, তাহা হইলে উহা গর্ভকাল উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত সুপ্ত থাকে; গর্ভকালই ঐসকল ধাতুগত অবস্থা প্রকাশিত হইবার উত্তেজক কারণ স্বরূপ ক্রিয়া করে। সুতরাং ঐ সময়টিই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের রোগী পর্যবেক্ষণ করবার এবং লক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করিয়া ধাতুগত ঔষধ প্রয়োগ করিবার এমন সুন্দর সুযোগ দিবে যে, উহা কেবলমাত্র তৎকালীন লক্ষণগুলি দূর করিয়া তাহাকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করিয়া তুলিবে না, তাহার শারীর বিধানের বহু রোগজ বিশৃঙ্খলা ও দূর করিবে, তিনি সমস্ত জীবন বহুবিধ যন্ত্রণা হইতে মুক্ত থাকিবেন, এবং এমন কতকগুলি অবস্থা হইতে আরোগ্য হইবেন, যাহা অন্য কোন প্রকার বিশেষ ঘটনা দ্বারা উদ্দীপিত না হওয়া পর্যন্ত অপ্রকাশিতই থাকিবে। যে স্ত্রীলোক হোমিওপ্যাথির বিষয় অবগত আছেন, তিনি গর্ভকালে নিয়মিতভাবে ধাতুদোষসংশোধক চিকিৎসার অধীনে থাকিতে সম্মত হইবেন অর্থাৎ চিকিৎসক যাহাতে রোগটিকে পর্যবেক্ষণ করিতে পারেন, সেইজন্য তাঁহাকে সকল বিষয়; সকল কষ্ট, সকল যন্ত্রণার কথা বিস্তৃতভাবে জানাইবেন। গর্ভকালে যে-সকল ব্যাপার লক্ষ্য করা যাইবে, সেইগুলিকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা বর্তমান না থাকিলেও যে-সকল ধাতুরোগ লক্ষণ দেখা যাইবে, তাহার সহিত যোগ করিতে হইবে, কারণ উহার সবগুলিই একই রোগীর উপদ্রবের প্রমাণ। এবং আমাদিগকে চিকিৎসা করিতে হইবে রোগীকে,—রোগকে নহে। গর্ভ অবস্থা রোগীর শরীরবিধানের উপদ্রবের ও বিশৃঙ্খলার একটি বিশেষ মূর্তি। প্রসবকালে, প্রসবক্রিয়া চলিতে থাকার সময় এবং প্রসব অন্তে, ক্যামোমিলা যে-সকল লক্ষণে উপস্থিত হয়, তাহা—অনিয়মিত সঙ্কোচন, বালিঘড়ির ন্যায় থাকিয়া থাকিয়া সঙ্কোচন, “জরায়ুমুখের কঠিনতা।” প্রসবের পর ভ্যাদাল ব্যথা। এই সকলের সহিত একই প্রকার মানসিক অবস্থা, একই প্রকার যন্ত্রণায় অত্যনুভূতি বর্তমান থাকে। “প্রসবান্তিক রক্তস্রাব”। যতবারই শিশুকে স্তন্য দান করা হয়, ততবারই জরায়ুতে খাল ধরে, পৃষ্ঠে খাল ধরে। ক্যামোমিলা ইহার যে-কোনটিকে বা দুইটিকেই আরোগ্য করে। শিশুকে স্তন্যদানকালে পৃষ্ঠে খালধরা এবং পেটে খালধরা লক্ষণে যে-দুইটি প্রধান ঔষধের উপর নির্ভর করিতে হইবে তাহারা ক্যামোমিলা ও ‘পালসেটিলা। মনোলক্ষণে ঔষধ দুইটি নিশ্চিতরূপে পৃথক। একটি খেয়ালী হইয়াও নম্র ও শান্ত, অপরটি খিটখিটে ও ক্রোধী। উভয়েই যন্ত্রণায় অনুভূতিযুক্ত কিন্তু ক্যামোমিলা ‘পালসেটিলা’ অপেক্ষা অনেক বেশী অনুভূতিপ্রবণ।

ক্যামোমিলায় স্তনগ্রন্থির প্রদাহ আছে। তুমি উহার সহিত আর কিছু না পাইলে ঔষধ ব্যবস্থা করিতে পার না, আর আমি নিশ্চয় জানিতেছি যে, তুমি ক্যামোমিলা রোগীকে চিনিতে পারিবে। স্ত্রীলোকটি আক্ষেপযুক্ত হইয়া থাকেন। প্রসবকালের প্রারম্ভে স্বামী তাহার স্ত্রীকে সদ্ব্যবহার দেখাইতে বাধ্য করিবার জন্য” কতকটা খিটখিটে মেজাজ ঘরে ঢুকিলে উহাতে রোগিণী ক্ষিপ্তা হইয়া উঠেন এবং আক্ষেপযুক্তা হইয়া পড়েন। হয়ত চিকিৎসক সবেমাত্র উহা দেখিয়া ফিরিতেছেন, কিন্তু তখন তিনি বলিবেন, “বেশ তো! আমি কেন স্ত্রীলোকটিকে একমাত্রা ক্যামোমিলা দিবার কথা ভাবি নাই? যদি আমি তাহা করিতাম, তাহা হইলে আমি এই আক্ষেপ নিবারণ করিতে পারিতাম।” এক মাত্রা ক্যামোমিলার পর, তিনি খুব দার্শনিক ভাবযুক্ত হইবেন, এবং প্রায়ই ঘুমাইয়া পড়িবেন।

তুমি অনায়াসে পড়িয়া লইতে পারিবে যে, ইহাতে অনেক প্রকারের শ্বাসরোধের আক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, কণ্ঠনলীর প্রদাহ প্রভৃতি আছে। ক্যামোমিলা কাশিতে কিছু আশ্চর্য ব্যাপার আছে। উহা একপ্রকার কঠিন কাশি, একপ্রকার শুষ্ক, খকখকে কাশি। শিশু রাত্রে ঘুমাইয়া পড়ে এবং কাশিতে থাকে অথচ জাগিয়া উঠে না। সে নিদ্রার মধ্যেই কাশে। তাহার সামান্য জ্বরভাব থাকে, সর্দি লাগে এবং মুখের একপার্শ্ব আরক্তিম হয়। জাগিয়া উঠিয়া সে খিটখিটে হইয়া পড়ে। সর্দি লাগিলে, সর্দি সামান্য হইলে, কণ্ঠনলীর ও বায়ুনলীর সামান্য উপদ্রব দেখা দিবার সম্ভাবনা, শিশু ক্রুদ্ধ হইবে এবং হঠাৎ আরও উত্তেজিত হইয়া কোলে চড়িয়া বেড়াইতে চাহিবে; এবং যদি না সন্তুষ্ট করা যায় বা রাগাইয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলে তাহার তীব্র কাশির আবেগ আসিবে, সে কাশিতে কাশিতে বমি করিয়া ফেলিবে। ক্রোধ হইতে কাশির আবেশ।” অর্থাৎ তাহার পূর্ব হইতেই সর্দি বা কাশি থাকে, সে কাশে, এবং যদি সে রাগান্বিত হয়, তাহার কাশির ধমক উপস্থিত হয়। কাশি, বুকের রোগ, কণ্ঠনলীর রোগ সাধারণতঃ রাত্রেই বাড়ে। ক্যামোমিলাজ্ঞাপক সর্দিতে ক্যামোমিলা-জ্ঞাপক হুপিং কাশিতে, ক্যামোমিলা-জ্ঞাপক বক্ষরোগে রাত্রে জ্বরভাব দেখা দেয়। ক্যামোমিলার অধিকাংশ রোগই দুপুর রাত্রের পর ভাল থাকে। রাত্রি ৯টা হইতে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত ঐগুলি খারাপ হয়। শুষ্ক কাশি রাত্রে ও ঘুমের মধ্যে বাড়ে।” সর্দি লাগায় শুষ্ক কাশি। শিশুদিগের শীতকালীন খসখসে, চাচার ন্যায় এবং বুকের হাড়ের নীচে সুড়সুড়িযুক্ত কাশি। শুষ্ক কাশি, নিদ্রাকালেও চলিতে থাকে। শয্যায় উত্তপ্ত হইয়া উঠিলে কাশির উপশম। যে স্থলে শিশু কোলে উঠিয়া বেড়াইতে চায়, এবং সর্বদাই ধাত্রীকে ব্যস্ত রাখে, সেইরূপ হুপিং কাশির একটি সাধারণ ঔষধ। কাশে, গলা আটকায়, এবং বমি করে এবং শিশু অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণ, ও তাহার সব আকাক্ষার বিষয়েই খেয়ালপরবশ থাকে, নিদ্রার মধ্যেও কাশে।

তোমরা অনায়াসেই বক্ষ-লক্ষণগুলি ধরিতে পারিবে। তাহার মানসিক লক্ষণ, উত্তেজনাপ্রবণতাও কাশির সহিত বর্তমান থাকে। বুকের কাশি, কণ্ঠনলীর কাশি এবং সর্দির কাশির সহিত বড় বেশী পৃথক নয়। ইহাও সেই একই ক্যামোমিলার কাশি। নিদ্রিত অবস্থায় কাশি। অধিকাংশ রোগ, জ্বর, সর্দি, তরুণ রোগ এবং সামান্য রোগাক্রমণের সময়, হস্তপদাদিতে জ্বালা। অঙ্গগুলিতে সূঁচ ফোটান যন্ত্রণা। পেশীগুলিতে খালধরা। অঙ্গগুলি অসাড় হইয়া পড়ে। অঙ্গগুলিতে এবং সময়ে সময়ে অন্য স্থানে, বিশেষভাবে অঙ্গগুলিতেই যন্ত্রণার সহিত একপ্রকার অসাড়তাবোধ অথবা অসাড়তার অনুভূতির সহিত যন্ত্রণা; কখন কখন চৰ্ম্মের অনুভূতি সম্পূর্ণ লোপ পায়, কিন্তু তৎসত্ত্বেও দীর্ঘ পেশীগুলিতে, হস্তপদাদিতে তীব্র যাতনা এবং অন্য সময়ের ন্যায় এক্ষেত্রেও যন্ত্রণার অত্যনুভূতি থাকে। যন্ত্রণার অত্যনুভূতি এবং ঐ যন্ত্রণার

পরে উহা হইতেই একপ্রকার অসাড়ভাব আসে। পূৰ্ব্বেকার পুস্তকগুলিতে ইহাকেই পক্ষাঘাতিক যন্ত্রণা বলা হইয়াছে। হস্ত-পদাদির আক্ষেপ। সমুদয় শরীরের আক্ষেপ। “পায়ে ও পায়ের পিন্ডিকায় খালধরা। ভীষণ শীত লাগার পর, পায়ের পাতার ছিন্নকর যাতনা। রাত্রিকালে পদতলে জ্বালা। রোগী পায়ের পাতা দুইটি বিছানার বাহিরে রাখে।” বাধা নিয়মে চিকিৎসকগণ, যখনই জানিতে পারেন যে, রোগী পায়ের পাতা দুইটিকে শয্যার বাহিরে রাখে, তখনই ‘সালফার’ দেন, অথচ উত্তপ্ত পায়ের পাতা, জ্বালাযুক্ত পায়ের পাতাবিশিষ্ট ঔষধসমূহের একটি প্রকান্ড তালিকা আছে, আর তাহাদের সকলেই পায়ের পাতা দুইটি শীতল করিতে, উহা শয্যার বাহিরে রাখে। তাহাদের সকলকেই ‘সালফার’ দিতে হইবে, এরূপ কোন কারণ নেই।

যে-সকল যন্ত্রণা রাত্রে, সময়ে সময়ে মধ্যরাত্রির পূর্বে আসে, তাহাদের আর একটি লক্ষণ এই যে, উহা এত তীব্র হয় যে, রোগী স্থির থাকিতে পারে না। যখন শিশুর এরূপ যন্ত্রণা হয়, তখন সে কোলে উঠিয়া বেড়াইতে চায়, এবং তাহাতে তাহার উপশম হয়। বয়স্ক ব্যক্তির যখন রাত্রে, বিছানায় শুইয়া থাকাকালে এরূপ যন্ত্রণা হয়, তখন তিনি উঠিয়া পড়েন এবং মেঝের উপর পায়চারি করিতে থাকেন। অসাড়কারী যন্ত্রণা, যন্ত্রণা উত্তাপে উপশমিত হয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশী-সঙ্কোচনের সহিত এরূপ যন্ত্রণা যে, তাঁহাকে শয্যা ছাড়িয়া উঠিতে হয়। যন্ত্রণার অত্যনুভূতি। অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণতা। ক্যামোমিলার রোগী রাত্রে ঘুমাইতে পারে না। বেলের ন্যায় তাহার ঘুম পায়, কিন্তু সে ঘুমাইতে পারে না। যদি দিনের বেলা যন্ত্রণার শান্তি হয়, তাহা হইলে সে ঘুমাইয়া লইতে চায়। কিন্তু যেই সে বিছানায় যায়, অমনি তাহার ঘুম চলিয়া যায়, সে রাত্রে নিদ্রাহীন ও অস্থির হইয়া পড়ে, বিশেষতঃ প্রথম রাত্রে। সময়ে সময়ে ক্যামোমিলার রোগী স্বপ্ন দেখে, রাত্রির প্রথমভাগে এতই উত্তেজিত থাকে যে, ঘুমাইতে চেষ্টা করিলে, সে ঘুমের মধ্যে ঝাঁকি দিয়া উঠে, উৎক্ষিপ্ত হয় এবং ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখিয়া যন্ত্রণাযুক্ত হইয়া পড়ে। উৎকন্ঠাপূর্ণ নিদ্রা। ভয়ঙ্কর ভূতপ্রেত দেখিয়া চমকিয়া উঠে। মারাত্মক দুর্ঘটনা বিষয়ক স্বপ্ন দেখে। নিদ্রা যাইবার চেষ্টায় মানসিকভাবে দুর্বল হইয়া পড়ে এবং সে ক্লান্ত হইয়া পড়ে।

Cham : Matricaria Chamomilla
Peevish, whining restless, impolite, snappy, uncivil, capricious, impatient.Desires to be carried fast.Sensitive, irritable, thirsty, hot and numb.Earache, swelling and heat, driving the patient frantic.Toothache worse after warm drink.Colic from anger. Hot, green, slimy stools.

Uterine haemorrhage of dark blood with labour-like pains.

Ankles give way in the afternoon.


SYNONYMS:

Chamomilla Matricaria


COMMON NAME:

German Chamomile


FAMILY:

Compositae


SOURCE:

Tincture of whole fresh plant.


PHYSIOLOGICAL ACTION:

-Hyperaesthesia of sentient nerve fibres.

-Digestive organs- Excessive acidity.

-Portal congestion.


A/F:

-Abuse of coffee, narcotics

-Anger, vexation

-Dentition


MODALITIES:

< Anger

< Night

< Dentition

< Coffee, narcotics

< 9 p.m.

< Evening, before midnight

< Damp, cold weather

< Drafts

< Alcohol

< Lying in bed

< Music

< Eructations

< Open air

< Warmth

< Covering

< Touch

< Evening

< After suppressed perspiration

< After breakfast

> Being carried about

> Warm, wet weather (Mild weather)

> Cold applications

> Fasting

> Heat

> Sweating


MIND:

-Complaints from anger and vexation.

-Whining restlessness.

-Child wants many things, which he then refuses with disdain and discourtesy [Ant-c, Ant-t, Bry, Cina, Kreos, Iod].

-Piteous moaning because child cannot have what he wants.

-Child can be quieted only when carried about or petted constantly.

-Ugly in behaviour, cross, uncivil, quarrelsome.

-Snappish, cannot return a civil answer.

-Vexed at every trifle.

-Anger from pain.

-Impatient; intolerant of being spoken to or interrupted when spoken to.

-Aversion to being touched or even looked at.

-Fear of wind.

-Kicks when carried and becomes stiff.

-Dwells on past disagreeable occurrences [Nat-m].

-Indifference to pleasure.

-Sensitive to music, noise.

-Weeping in sleep.


GUIDING INDICATIONS:

-Offensiveness; foul smelling discharges like rotten eggs.

-All complaints are worse in the evening and night upto midnight

-Oversensitiveness; irritable, thirsty, hot, numb.

-Pains-Unendurable, excessive sensitiveness to pain, becomes mad with pain < night.

-Pains with numbness [Acon, Rhus-t, Plat, Kalm, Gnaph].

-Pains with prostration, even to sinking down.

-Pains > coffee, heat, except teeth and jaws.

-Hot discharges – stools, sweat, urine.

-Hot and thirsty. Warm blooded though many local complaints > heat.

-Mental and physical symptoms appear in paroxysms; irritability, restlessness, colic.

-Complaints at the time of dentition.

-Tendency to spasm, convulsion from anger, during dentition.

-Head-Headache from suppressed perspiration.

-< thinking of it

< sudden stooping

< mental exertion

< morning and 9 p.m.

> when MIND is engaged

> bending head backwards

-Ears-Earache and soreness, swelling and heat from ears, driving patient frantic < touch, wind.

-Face-One cheek red and hot, other pale and cold.

-Face sweats after eating and drinking.

-Mouth-Toothache if anything warm is taken into the mouth [Bism, Bry, Coff] < warm drinks, coffee, after eating, getting warm in bed, night.

-Toothache from cold drinks [Morrison].

-Toothache during pregnancy, during menses, on entering a warm room.

-Painful teething and dentition.

-G.I.T.-Aversion to warm drinks and coffee.

-Thirst for cold drinks, cold water, sour drinks.

-Pressive gastralgia, as from a stone [Abies-c, Bry, Nux-v], after eating a little.

-Flatulent colic; after anger, with red cheeks and hot perspiration.

-Cutting wind colic < night, < urinating, > drinking coffee, > warm applications.

-Abdomen distended like a drum, sensitive to touch, wind passes off in small quantities.

-Eructations tasting like rotten eggs.

-Stools like chopped, white, yellow mucus, like chopped eggs or spinach.

-Diarrhoea during dentition, from cold, anger, tobacco, from downward motion [Bor, Sanic].

-Stools-sour, grass green or lienteric, smelling like bad eggs.

-Female genitalia-Menses; profuse discharge of dark, clotted blood and labour-like pains which may extend to the thighs [Vib, Xanth]

-Temper < before and during flow [Nux is conscious of it, Chamomilla is not].

-Nipples inflamed, tender to touch [Helon, Phyt]. Infants’ breast tender.

-Leucorrhoea yellow, acrid [Ars, Sep, Sulph], dark, lumpy.

-Milk spoiled, baby will not suck.

-Drawing from sacral region forward, griping, pinching in uterus followed by discharge of large clots of blood.

-Rigid os preventing parturition.

-Respiratory system-Tickling in throat pit causing irritable, dry, tickling cough.

-Cough < 9-12 p.m., doesn’t wake up the child [Calc, Psor], < cold weather, winter.

-Asthma from anger < dry weather > bending head back.

-Extremities-Burning of soles at night, puts them out of bed. [Sulph, Medo, Puls, Sang].

-Ankles give way in the afternoon, feels as if she is walking on the ends of bones of her legs.

-Rheumatism compels the patient to move about [Rhus-t, Ferr, Verat] < night in bed.

-Sleep-Drowsiness during day but cannot sleep if he lies down [Bell, Caust, Opium].

-Sleeplessness from pain.

-Fever-Chill of posterior part and heat of anterior part of body or vice-versa < uncovering.

-Fever; one sided chill, face flushed on one cheek.

-Perspiration of covered parts, scalp [Perspiration of uncovered parts – Thuj], thirsty, restlessness and irritability [Morrison].

-C.N.S.-Convulsions in children from nursing, after a fit of anger in the mother [Nux-v] [After fright in mother – Opium].


KEYNOTES:

1. Highly irritable, peevish, ugly, uncivil. Mental calmness contraindicates Chamomilla.

2. Pains; unendurable with numbness of affected parts.

3. One cheek red and hot, the other pale and cold.

4. Toothache < warm drinks.

5. Dry cough at night during sleep which does not waken the child.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Mental irritability with oversensitiveness.

2. Pains- terrible, unendurable, associated with numbness.

3. Hot sweat with pains.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Indicated in oversensitive states from abuse of coffee or narcotics.

-Pains are unendurable, cause anger and numbness.

-Especially useful in diseases of children where peevishness, restlessness, colic and convulsions are the important indications.

-A disposition that is mild, calm, gentle, sluggish, constipated bowels, contraindicates Chamomilla.


CLINICAL:

-For nervous reaction to local anaesthesia- Chamomilla, Gelsemium.

-A dose of Chamomilla will do wonders to quiet both child, adult and make the tolerance for drilling and grinding amazingly easier- Dr. W.W. Robinson.

-Chamomilla for muscular and nerve pain; valuable especially in the aftermath of injury in children, will have more of a sedative effect than codeine- Dr. C.C. Boericke.

-Asthmatic attack induced by anger- Dr. Krichbaum.

-Chamomilla is a valuable remedy in labour, the pains shoot upward or pass off down the inner aspect of thigh. The patient is cranky, orders the doctors out of the room. It is also useful for post-partum pains when the patient has stood a good deal, is hypersensitive and worn out – Homoeopathic Recorder Aug. 32.

-Hartman’s recommendation of Chamomilla in flatulent colic is where the flatus seems to collect in several spots in the abdomen as if incarcerated- Dr. Hughes.

-In the sleeplessness, restlessness, nervous disorders of children and females, Coffee cruda is a sovereign remedy, second only to Chamomilla.

-Bad effects of narcotics – Chamomilla, Acetic Acid- Dr. Boericke.

-Chamomilla has been found useful in antidoting the desire for morphia-Dr. Foubister.

-Dr. Tyrell once said to me- When the husband complains of the wife being irritable and cross, and he cannot get along with her give him a dose of Chamomilla ;it has worked- Dr. Edwards.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Complementary : Bell.

Follows Well : Merc, Puls, Sulph.

Compare : Acon, Bell, Bor, Calc, Nux-v, Staph, Tereb.

Antidoted By : Acon, Alum, Bor, Camph, Cocc, Coff, Coloc, Con, Ign, Nux-v, Puls.

It Antidotes : Coff, Op, Puls, Thuj.

Duration Of Action : 20-30 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *