Chel | ডানদিকের পাখনার (স্কেপুলার) কোণের দিকে ভিতরে সর্বদা বেদনা। |
Chel | নাকের পাখনা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নড়ে। |
Chel | মন বিমর্ষ, কাঁদতে ইচ্ছা, কিন্তু তার কারণ বুঝতে পারা যায় না, উৎকন্ঠা ভাব, কোন বিপদ হবে সর্বদা এরূপ আশঙ্কা। |
Chel | মাথাঘোরার সহিত জণ্ডিস বা পাকাশয়ের গোলযোগ। |
Chel | জিহ্বার গোঁড়ার দিক হলদে বর্ণের ময়লা। |
Chel | লিভারে আঘাত লাগার মত ব্যথা অনুভূতি। |
Chel | গরম খাদ্য খেলে লিভার, বুক ও পাকস্থলীর লক্ষণগুলির উপশম। |
Chel | ডান পায়ের পাতা বরফের মত ঠান্ডা, বাম পায়ের উত্তাপ স্বাভাবিক। |
ফর্সা রঙ, সুন্দর দেখতে, রোগা, পাতলা, খিটখিটে যারা যকৃৎ পাকাশয় ও অন্ত্রের বিভিন্ন অসুখে ভোগে (পডো), সব বয়সের মেয়ে পুরুষের, সব রকম ধাতুর লোকদের পক্ষে উপযোগী।
কাঁধে ডান স্ক্যাপুলার নীচে ও ভেতরের কোনে সবসময় ব্যথা হয় (কেলি-কা, মার্ক) (বাঁদিকে হলে = চেনোপডিয়াম; স্যাঙ্গুই)।
বারে বারে জল হাওয়ার পরিবর্তনে রোগ হলে (মার্ক); খেলে সব উপসর্গ কমে যায়। জিব হলদে পুরু লেপে ঢাকা, জিবের ধারগুলো লাল ও তাতে দাতের ছাপ পড়ে (পড়ো) (থলথলে দাঁতের ছাপযুক্ত জিব = মার্ক)।
অত্যন্ত গরম পানীয় খেতে চায়—যদি না পাকস্থলী ফুটন্ত গরম হওয়ায় সহ্য করতে পারে না (আর্স, ক্যাঙ্কেরিলা) নির্দিষ্ট সময় অন্তর চোখের কোটরে স্নায়ুশূল (ডানদিকে) সাথে চোখ দিয়ে অত্যধিক জল পড়ে যেন জল বেগে বার হচ্ছে (রাস)।
কোষ্ঠবদ্ধতা – মল শক্ত, ভেড়ার নাদির মত গোল গোল বল-এর মত (ওপি প্লাম্বাম); কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময় পর্যায়ক্রমে হয় ।
উদরাময় — রাতে কাদা কাদামত, হাল্কা ছাই রঙের, উজ্জ্বল হলদে রঙ, বাদামী বা সাদা জলের মত, আঠালো, অসাড়ে মলত্যাগ হয় ।
মুখ, কপাল, নাক ও গাল সুস্পষ্টভাবে হলদে হয়ে যায় গায়ের চামড়া হলদে শুকনো, ধুসর, কোচকানো, হাতের তালুতেও এই রকম হয়ে থাকে (সিপিয়া)।
লিভারের অসুখ, জন্ডিস—ডান কাঁধে ব্যথা। নিউমোনিয়া—ডান ফুসফুসে সাথে লিভারের রোগ (মার্ক)।
কাশিতে আক্ষেপ হয়—কাশলে ছোট ছোট শ্লেষ্মার টুকরো ছিটকে বার হয় (ব্যাডি; কেলি-কা)। বেশীর ভাগ ডানদিকেই রোগ হয় যেমন ডান চোখ, ডান ফুসফুস, ডান হাই পোকনড্রিয়াম ও তলপেট, ডান নিতম্ব, ডান পা বরফের মত ঠান্ডা, বাঁদিকে স্বাভাবিক (লাইকো)।
লিভারের অসুখের ইতিহাস বা টিউবারকুলার ধাতুর লোকেদের বহুদিনের বাড়তে থাকা ঘা হলে ব্যবহার্য ।
পিত্ত পাথুরী— যাতে ডান স্ক্যাপুলার নীচে ব্যথা থাকে (পিত্ত পাথুরী থেকে প্রচন্ড ব্যথার আক্রমণে = কার্ডুমেরি)।
সম্বন্ধ – লিভারের অসুখে ব্রায়ো দিয়ে কুফল হলে এ ওষুধ প্রযোজ্য ।
‘তুলনীয় – একোন, ব্রায়ো, লাইকো, মার্ক, নাক্স-ভ, স্যাঙ্গু, সিপিয়া, সালফার ।
এরপর আর্স, লাইকো, সালফার ভাল খাটে, প্রায়ই আরোগ্য সম্পূর্ণ করতে একটির প্রয়োজন হয় ।
শক্তি – ɵ, ১x, ৬, ৩০।
জন্ডিস – রোগ নয় কিন্তু অন্য রোগের লক্ষণ, গায়ের চামড়া, চোখের সাদা অংশ, সমস্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী যেমন মুখের হাঁ, নাকের ফুটো ইত্যাদি হলদে রঙ হয় কারণ রক্তে বিলিরুবিন-এর মাত্রা বেড়ে যায় (হাই পারবিলিরুবিনেমিয়া)। পিত্তবহা নালী বন্ধ হয়ে, লোহিত কণিকা বেশী পরিমাণে নষ্ট হয়ে (হোমোলাইসিস) বা লিভার সেল এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে জন্ডিস হতে পারে ।
ক্লিনিক্যাল লক্ষণ ছাড়াও Ultra Sonography ও Computed Tomography-র সাহায্যে অসুখের কারণ নির্ণয় করা হয়। কমন বাইল ডাক্ট-এ পাথর হয়ে পথ বন্ধ হওয়া বা প্যাংক্রিয়াসের মাথায় ক্যাপার হয়ে কমন বাইল ডাক্ট যেখানে ডুওডেনামের সাথে মিলছে সেই স্থানে আটকে গিয়ে বিলিরুবিন লিভারে না গিয়ে রক্তে মিশে জন্ডিস হতে পারে ।স্বাভাবিক সূর্যের আলোয় জন্ডিসের পরীক্ষা করতে হয় ।পালস্ বীট সাধারণতঃ কমে মিনিটে ৪০ বার হয় (Ref : Syllabus of Diagnosis- W. F. Baker) অসুখ মারাত্মক হলে হলদে রঙের সাথে নীলচে আভা থাকে। জন্ডিস পরীক্ষার সময় গাল স্বাভাবিক রঙের সাথে জন্ডিস এর হলদে ভাব মিশে যেতে পারে কিন্তু চোখের কনজাংটিভায় হলদেভাব জন্ডিস নির্দেশক লক্ষণ। ঘন কমলা রঙ বা বাদামী রঙের প্রস্রাব Obstructive Jaudice-এর নির্দেশক লক্ষণ-N. chamberlein.]
এটি যকৃতের রোগের একটি বিশিষ্ট ঔষধ, যকৃতকে কেন্দ্র করে শরীরের বিভিন্ন অংশে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায়, তার প্রায় সব গুলিই এই ঔষধের মধ্যে প্রকাশ পায়। জন্ডিস রোগাক্রান্ত চামড়া এবং বিশেষ করে ডানদিকের স্কন্ধাস্থির নিন্মাংশে অবিরাম বেদনা, এই গুলি এই ঔষধের নিশ্চিত লক্ষণাবলী। শরীরের একটি অংশে পক্ষাঘাতের মত টেনে ধরা ও খঞ্জতা। প্রচন্ডভাবে সর্বাঙ্গীন নিস্তেজ ভাব এবং প্রচন্ড ভাবে শ্রম বিমুখ এই ঔষধের সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনে উপসর্গ প্রকাশ পায়। রক্তাম্বুস্রাবী ঝিল্লী থেকে রস নিঃসরণ। হাইড্রোসিল। গর্ভকালে পিত্তসম্বন্ধীয় উপসর্গ।
মাথা – গ্রীবার পিছনের অংশ থেকে মাথার পিছনের অংশে প্রায় সবটাই বরফের মত ঠান্ডা; সীসাব মত ভারী বলে মনে হয়। ভারবোধ, নিস্তেজভাব; ঝিমুনিভাব খুব স্পষ্ট ভাবে থাকে, তৎসহ সর্বাঙ্গীণ অসাড়তা; মাথা ঘোরা, তৎসহ যকৃৎ সংক্রান্ত উপসর্গ। সামনের দিকে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা যুক্ত। ডান দিকের মাথার যন্ত্রণা, নীচের দিকে কানের পিছনের অংশে ও স্কন্ধাস্থি পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ডানদিকের চোখে স্নায়ুশূল, ডানদিকের গালের হাড়ে ও ডান দিকের কানে শূল বেদনা, তৎসহ প্রচুর অশ্রুস্রাব। এর আগে যকৃকের বেদনা শুরু হয়।
নাক – নাসিকার পাখা দুটি পাখার মত দুলতে থাকে (লাইকোপোডিয়াম)।
চোখ – চোখের সাদা অংশ, মলিন হলুদ বর্ণ যুক্ত হয়। উপরের দিকে তাকালে টাটানি ব্যথা। চোখে জল প্রবল বেগে বেরিয়ে আসে, ডান দিকের চক্ষু কোটরের স্নায়ুশূল, তৎসহ প্রচুর অশ্রু স্রাব; চোখের তারার সংকোচন, চাপ দিলে উপশম।
মুখমন্ডল – হলুদ; নাকে ও গালে হলুদ রঙের প্রাধান্য দেখা যায়। চামড়া শুষ্ক।
পাকস্থলী – জিহ্বা হলুদ, তৎসহ দাঁতের ছাপ যুক্ত; বৃহৎ এবং থলথলে। (মার্কসল ; হাইড্রাষ্টিস)। আস্বাদ তিতো ও লেইয়ের মত। মুক থেকে দূর্গন্ধ বেরিয়ে থাকে। গরম খাবার ও পাণীয় পচ্ছন্দ করে। বমি – বমি ভাব, অত্যাধিক গরম জল পাণে উপশম। বেদনা পাকস্থলী থেকে পিঠ ও ডান দিকের স্কন্ধাস্থি পর্যন্ত প্রসারিত হয়। পাকাশয়িক শূল বেদনা। আহার সাময়িকভাবে উপশম দেয় বিশেষ করে যেখানে পাকাশয়িক গোলযোগের সঙ্গে যকৃতের উপসর্গ থাকে।
উদর – মূলতঃ হেপাটিক ও পিত্তথলির প্রতিবন্ধকতার জন্যে জন্ডিস দেখা দেয়। পিত্ত-শূল বেদনা। স্ফীতি। পেটের ভিতর গাঁজলা উঠে ও অন্ত্রের শিথিলতা। পেটের একদিক থেকে অপর দিক পর্যন্ত সঙ্কোচন, যেন দড়ি দিয়ে বাধা রয়েছে, এরূপ অনুভূতি। যকৃতের বিবৃদ্ধি। পিত্ত পাথুরি (বার্বেরিস)।
প্রস্রাব – প্রচুর, ফেনাযুক্ত, হলুদ বর্ণের প্রস্রাব, অনেকটা বিয়ারের মত দেখতে (চেনোপোডিয়াম), কালচে, ঘোলাটে।
মল – কোষ্ঠ কাঠিণ্য; মল শক্ত, গোলাকার বলের মত, অনেকটা ভেড়ার মলের মত, উজ্বল হলুদ বর্ণের, লেইয়ের মত; কাদার মত; মল জলের উপর ভাসে; পর্যায়ক্রমে ও উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিণ্য। মলদ্বারে চুলকানি ও জ্বালা (র্যাটেনহিয়া ; সালফার)।
স্ত্রীজননেন্দ্রিয় – মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরেও প্রচুর পরিমাণে হয়।
শ্বাস-প্রশ্বাস — খুব দ্রুত ও ছোট-ছোট শ্বাস নেয়; গভীরভাবে শ্বাস নিলে ব্যথা পায়। শ্বাসকষ্ট। ছোট ছোট, ক্লান্তিকর কাশি। শ্বাসযন্ত্রে ধুলা রয়েছে। এই জাতীয় অনুভূতি এবং কাশির পরেও কমে না। হুপিং কাশি; আক্ষেপিক কাশি; তরল, ঘড়ঘড়ে; শ্লেষ্মা তুলতে কষ্ট হয়। বুকের ডানদিকে বেদনা এবং ডানদিকের কাঁধে তৎসহ শ্বাসক্রিয়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। কাশির সময় ছোট শ্লেষ্মার দলা ছুটে বেরিয়ে আসে। বিকালের দিকে স্বরভঙ্গ। বুকের সঙ্কোচন।
পিঠ – গ্রীবার পিছনের অংশে বেদনা। ঘাড় আড়ষ্ট, মাথা বাম দিকে টেনে ধরে। ডানদিকের স্কন্ধাস্থির ভিতরের দিকে এবং নিম্নাংশে স্থির বেদনা। বাম দিকের স্কন্ধাস্থির নিম্নাংশে বেদনা।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে – বাহু, কাঁধ, হাত, হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগে বেদনা। হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ বরফের মত শীতল; কজিতে টাটানি ব্যথা, মেটাকারপ্যাল অস্থিতে ছিড়ে ফেলার মত বেদনা। সমগ্র মাংসপেশী অত্যন্ত স্পর্শকাতর।নিতম্ব ও ঊরুস্থানে বাত জনিত বেদনা; গোড়ালিতে অসহ্য যন্ত্রণা, যেন খুব সরু জুতো পায়ে দেওয়া হয়েছে এরূপ অনুভূতি; ডানদিকের গোড়ালীতে বেশী হয়। পক্ষাঘাতের মত অনুভূতি। নিম্নাঙ্গের আংশিক পক্ষাঘাত, তৎসহ পেশীর আড়ষ্টতা।
চামড়া – চামড়া শুষ্ক, উত্তপ্ত; চুলকায়, হলুদবর্ণ যুক্ত। যন্ত্রণাদায়ক, লালচে বর্ণের ফুসকুড়ি ও পুঁজ যুক্ত উদ্ভেদ। পুরাতন, ছড়িয়ে পড়ে, দূর্গন্ধ যুক্ত ক্ষত, চামড়া শুষ্ক। মলিন, ঠান্ডা, চটচটে।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি – ডানদিক, নড়াচড়ায়, স্পর্শে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, খুব সকালে।
উপশম – রাত্রে খাবার পরে, চাপে।
সম্বন্ধ – চেলিডোনি (শরীরের সর্বত্র মসৃণ পেশীর আক্ষেপ, অন্ত্রের শূল, জরায়ুর শূল, শ্বাসনলীর আক্ষেপ, নাড়ীর গতির বৃদ্ধি, প্রভৃতি)।
বোল্ডো – বোল্ডোয়া ফ্র্যাগ্র্যানস (প্রস্রাব থলির নিষ্ক্রিয়তা, পিত্তথলির প্রদাহ এবং পিত্ত পাথুরি। আস্বাদ তিতো, খিদে একেবারেই থাকেনা; কোষ্ঠকাঠিন্য; যকৃতের রক্তাধিক্য; যকৃৎ ও পাকস্থলীতে জ্বালাকর ভারবোধ। যন্ত্রণাদায়ক যকৃতের রোগ সমূহ। ম্যালেরিয়া রোগের পরে যকৃতের গোলযোগ। সালফার, প্রায়ই এই ঔষধের কাজ সমাপ্ত করে।
পরিপূরক – লাইকোপোডিয়াম; ব্রাইয়োনিয়া।
দোষঘ্ন – ক্যামোমিলা।
তুলনীয় — নাক্স; সালফার; ব্রাইয়োনিয়া; লাইকোপোডিয়াম; ওপিয়াম; পডোফাইলাম; স্যাঙ্গুইনেরিয়া; আর্সেনিক।
শক্তি – অরিষ্ট এবং নিম্নশক্তি।
চেলিডোনিয়াম তরুণ রোগের পক্ষে উপযোগী ঔষধ, যদিও ইহা কতকগুলি পুরাতন রোগও আরোগ্য করিয়া থাকে। ইহা খুব গভীরক্রিয় ঔষধ নহে। সাধারণ ক্রিয়াক্ষেত্রে, ক্রিয়ার স্থায়িত্বে এবং গভীরতায়, ইহা প্রায় ব্রায়োনিয়া’র অনুরূপ। ইহার প্রধান ব্যবহার পাকস্থলী ও অন্ত্রের সর্দিতে, তরুণ ও অল্প পুরাতন যকৃৎরোগে এবং দক্ষিণ পার্শ্বের নিউমোনিয়ায়। এই সকল রোগের সংস্রবে চৰ্ম্মের রং সম্ভবতঃ বিবর্ণ হইয়া পড়ে, ঐ বিবর্ণতা বাড়িতে বাড়িতে সুস্পষ্ট ন্যাবারোগ দেখা দেয়। ন্যাবার সহিত অল্প পুরাতন পাকাশয়-প্রদাহ। পাকাশয় ও দ্বাদশাঙ্গুলান্ত্রের সর্দি; ন্যাবার সহিত যকৃতে রক্তসঞ্চয় ও ক্ষতবৎ বেদনা, যকৃৎরোগ ও ন্যাবার সহিত সংশ্লিষ্ট দক্ষিণ পার্শ্বের নিউমোনিয়া। এই ঔষধটি সম্ভবতঃ শারীরপ্রণালীর সর্বত্র ক্রিয়া প্রকাশ করে কিন্তু প্রায় সর্বদাই উহার সহিত যকৃৎ আক্রান্ত হয় এবং যাহাকে বৃদ্ধ লোকেরা ও চিকিৎসকেরা ‘পিত্তাধিক্য বলেন, তাহাতে উপযোগী হয়। রোগী সাধারণতঃ পিত্তাধিক্যবিশিষ্ট, বমন ও বমি বমিভাবযুক্ত হয়। তাহার শিরাগুলি বিস্তৃত হয়। চৰ্ম্মের বর্ণ হয় হরিদ্রাভ ধূসর।
ইহা পরীক্ষায় খুব অল্প মানসিক লক্ষণই প্রকাশিত হইয়াছে। তাহা দ্বারা ইহার ইচ্ছা ও বিতৃষ্ণা সম্বন্ধে ভালরূপ ধারণা জন্মে না। আমরা ইহার বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে পরিষ্কার কোন ধারণা পাই নাই। ইহার আরও পরীক্ষা হওয়া উচিত, কিন্তু দেহের কোন কোন অংশ সম্বন্ধে ইহার প্রচুর পরীক্ষিত লক্ষণ পাওয়া গিয়াছে। দুঃখিততা ও উৎকণ্ঠা। ইহার মানসিক লক্ষণের সর্বত্র কোনপ্রকার বিপদ সম্বন্ধে চিন্তা করা আছে। এরূপ উৎকণ্ঠা যে, সে কোনরূপ শান্তি পায় না। উহাতে রোগীকে দিবারাত্র অস্বচ্ছন্দ রাখে। এরূপ দুঃখিততা, যেন সে কোন অপরাধ করিয়াছে, যেন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটিতে চলিয়াছে। এত দুঃখিততা যে, সে ভাবে, তাহাকে মরিতেই হইবে।
কান্নার সহিত হতাশা। মানসিক শ্ৰম করিতে ও কথাবার্তা বলিতে অনিচ্ছা। যে-সকল ঔষধ প্রধানতঃ যকৃতের উপর ক্রিয়া করে, যাহারা যকৃতের ক্রিয়া মন্থর করিয়া দেয়, যদি তোমরা পরীক্ষা কর, তাহা হইতে তাহাদিগের মধ্যে বিষাদভাব’ কথাটি দেখিতে পাইবে। হৃৎপিন্ডের। উপদ্রবের সহিত উত্তেজনা থাকে। যকৃৎরোগের সহিত মানসিক অবস্থার ধীরতা, মনের কাৰ্য্য করিবার অক্ষমতা, মনের মন্থরতা, চিন্তা করিবার অক্ষমতা, মনোনিবেশ করিবার অক্ষমতা থাকে। সমগ্র শারীরবিধানের মন্থরতা। জানস্থান বিচলিত হয় এবং রোগী শিরোঘূর্ণনবিশিষ্ট হইয়া পড়ে। সবকিছু চক্রাকারে ঘুরিতে থাকে। শিরোঘূর্ণন উপস্থিত হয় এবং যে-পৰ্য্যন্ত বমনেচ্ছা এবং সময়ে সময়ে বমন না হয়, সে পর্যন্ত ছাড়ে না। মাথা এত ঘুরায় যে, সে বমি করিয়া ফেলে। মনের গোলযোগ। জ্ঞানহারা অবস্থা, মূর্চ্ছা যাওয়া। যকৃৎরোগের সহিত এগুলি সাধারণ লক্ষণ।
নিম্নলিখিত যকৃৎ-লক্ষণগুলির সহিত অল্পাধিক মানসিক লক্ষণগুলিও বর্তমান থাকে। মৃদু কনকনানি প্রকৃতির যন্ত্রণা হয়। ক্ষততাবোধ।” থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা। স্পর্শ করিলে যকৃতে অত্যনুভূতি জনে। কামড়ানি ব্যথা, উহা পূর্ণতার অনুভূতি উৎপাদন করিয়া যকৃতের সমগ্র দক্ষিণ পার্শ্বটি আক্রমণ করে। উপরদিকে চাপবোধ, তৎসহ শ্বাসকষ্ট। নিম্নাভিমুখে চাপ, পাকস্থলী আনুষঙ্গিকভাবে আক্রান্ত হইয়া বমি বমিভাব ও বমন সৃষ্টি করে। আর, তারপর দক্ষিণ পার্শ্বের স্কন্ধাস্থির নীচে তীব্রতর যাতনা অনুভূত হয়। দক্ষিণ স্কন্ধাস্থির নীচে মৃদু কনকনানি বেদনা, দক্ষিণ স্কন্ধাস্থির নীচে তীব্র তীরবিদ্ধবৎ যাতনা। এই বেদনা আবার নিউমোনিয়া ও প্ররিসির সহিত জড়িত হইয়া পড়ে। এই ঔষধে নিউমোনিয়া ও প্লুরিসি আরোগ্য হয়, ইহা যকৃতের নানাপ্রকার। রক্তসঞ্চয় আরোগ্য করে, যখন পূর্বোক্ত বেদনা সন্মুখ হইতে পশ্চাদ্দিকে যায় এবং পৃষ্ঠের মধ্যেও বিস্তৃত হইয়া পড়ে। যকৃৎস্থানে সূঁচীবিদ্ধবৎ যাতনা, উহা পৃষ্ঠের মধ্যেও অনুভূত হয়। কোন কোন রোগী এই যন্ত্রণাকে তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা বলিয়া বর্ণনা করে, কেহ কেহ ইহাকে ছিন্নকর বেদনা বলে, আবার অনেকে ইহাকে দক্ষিণ কুক্ষির মধ্য দিয়া অথবা যকৃতের দক্ষিণ অংশের। মধ্য দিয়া পৃষ্ঠ পৰ্যন্ত বিস্তৃত তীব্র বেদনা বলিয়া প্রকাশ করে। যকৃৎপ্রদেশ হইতে, পৃষ্ঠ ও স্কন্ধ পৰ্যন্ত প্রধাবিত তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। যকৃৎস্থানে আক্ষেপিক বেদনা। যকৃৎপ্রদেশে চাপনবৎ বেদনা। রক্তসঞ্চয়ে অথবা প্রদাহে, পূর্ণতায় ও স্ফীতিতে, কতকটা পুরাতন রোগে, অথবা তরুণ রোগেও এই ঔষধ পূর্বোক্ত অবস্থার পক্ষে উপযোগী বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। দক্ষিণ কুক্ষিদেশ, চাপে, টানটানভাবযুক্ত ও বেদনান্বিত বোধ হয়।
এই ঔষধে পিত্ত শিলাজনিত শূলরোগ আরোগ্য করিয়াছে। যে-সকল চিকিৎসক কিরূপে ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়, তাহা জানেন, তাহারা কয়েক মিনিটের মধ্যেই পিত্তপাথুরী শূলরোগে উপশম দিতে পারেন। আমাদের এমন ঔষধসমূহ আছে যে, তাহারা ঐ সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নলের। গোলাকার তন্তুগুলির উপর ক্রিয়া: করিয়া উহাদিগকে শিথিল করিয়া দেয় এবং ফলে পাথরটি বিনা যন্ত্রণায় নির্গত হয়। অবশ্য সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পিত্তের মধ্যে এমন কোন পাথর থাকে না যে, তাহা পিত্তকোষে আটকাইয়া যাইতে পারে, কিন্তু ক্ষুদ্র পিত্তপ্রণালীর মুখটি ফাক হইয়া গেলে, ছোট ছোট পাথর উহার মধ্যে ঢুকিয়া যায়, ফলে ঐ ক্ষুদ্র প্রণালীটির শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আঁচড়াইয়া যাইয়া একপ্রকার প্রদাহ উৎপন্ন হয়। যখন এই তীরবিদ্ধবৎ, ছুরিকাবৎ, ছিন্নকর, বর্শাবিদ্ধবৎ বেদনা পৃষ্ঠ পৰ্য্যন্ত ধাবিত হয়, তখন চেলিডোনিয়াম উহাকে আরোগ্য করিবে । যে-মুহূর্তে উহা উপশম দিবে, অমনি রোগী বলিয়া উঠিবে, ‘আঃ, কি উপশম, বেদনাটি চলিয়া গিয়াছে। এই ঔষধটি আক্ষেপের উপশম দিয়া থাকে, ক্ষুদ্র প্রণালীটি খুলিয়া যায় এবং পাথরটি পিত্তকোষ সংযোগকারী নলের মধ্য দিয়া বাহির হইয়া যায়। লক্ষণগুলির দ্বারা নির্দিষ্ট প্রত্যেকটি ঔষধই পিত্তপাথরী শূল আরোগ্য করিবে।
পিত্তপাথুরী শুলের শয্যাশায়ী রোগী, অত্যন্ত উত্তাপ, অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা, গায়ে হাত দিতে দেয় না, যন্ত্রণায় চিৎকার করিতে থাকে, মুখ লাল এবং মস্তক উত্তপ্ত বেল’ তাহাকে তিন মিনিটের মধ্যেই উপশম দিবে, কিন্তু উহা আদৌ এই ঔষধের ন্যায় নহে। নেট্রাম সালফ’ এবং আরও অনেক ঔষধ লক্ষণ মিলিলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পিত্তপাথুরী শূল আরোগ্য করিয়াছে।
এক্ষণে নিউমোনিয়ার কথা। উহা সাধারণতঃ ডানপার্শ্বের—ডানপার্শ্ব হইতে বামপার্শ্বে বিস্তৃত হয়। ডানপার্শ্বই স্পষ্ট আক্রান্ত হয় এবং বামপার্শ্বের সামান্যমাত্র অংশ আক্রান্ত হইতে পারে। ফুসফুস আবরক ঝিল্লী প্রায়ই আক্রান্ত হয় এবং সেইজন্য সূঁচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর বেদনা বর্তমান থাকে। কেহ বেশী দিন চিকিৎসা করিতে না করিতেই, দেখিতে পাইবেন যে, চেলিডোনিয়াম রোগী প্রবল জ্বরাবস্থায়, কনুয়ের উপর ভর দিয়া সম্মুখদিকে ঝুঁকিয়া শয্যার উপর বসিয়া রহিয়াছে এবং নিজেকে সম্পূর্ণ স্থির রাখিয়াছে, কারণ এই ঔষধেও ব্রায়োনিয়া’র ন্যায় নড়াচড়ায় খুব বেশী বৃদ্ধি আছে। সকল প্রকার যন্ত্রণাই নড়াচড়ায় অত্যন্ত বর্ধিত হয়। বেদনায় যেন তাহাকে ফুড়িয়া রহিয়াছে এরূপভাবে, এই ঔষধের রোগী বসিয়া থাকে, সে নড়িতে পারে না, নড়িতে গেলেই বেদনা ছোরা বসানর ন্যায় প্রধাবিত হয়। পরদিনই দেখিতে পাইবে যে, তাহার চর্ম হলদে হইতেছে। তোমরা যদি তাহাকে প্রথম হইতে দেখ, তাহা হইলে, চেলিডোনিয়াম তাহাকে উপশম দিবে, নিউমোনিয়া নিবারিত হইবে। ইহা শিশুদের মধ্যে অসাধারণ নহে, এবং বয়স্কদের মধ্যে অতি সাধারণ।
ব্রায়োনিয়া’র সহিত গোলমাল করিয়া ফেলিও না। উভয় ঔষধই নড়াচড়ায় ভীষণ বৃদ্ধিযুক্ত হয়। ব্রায়োনিয়া ব্যথিত পার্শ্বে চাপিয়া শুইতে চায়, কিম্বা যদি নিউমোনিয়া বেশীর ভাগ ডান ফুসফুসের পিছনের অংশে হয়, তাহা হইলে চিৎ হইয়া শুইতে চায়। চেলিডোনিয়ামের মত সে স্পর্শে ও নড়াচড়ায় বৃদ্ধিযুক্ত হয়।
চেলিডোনিয়ামে ডান পার্শ্বের বক্ষলক্ষণ ও যকৃৎপীড়ার সহিত কাশি এবং উহাদের সহিত সংশ্লিষ্ট মানসিক রোগ ও নড়াচড়ায় ভীষণ বৃদ্ধি আছে। বেদনা উত্তাপে উপশমিত হয়। রোগী গরম দুধ ও গরম খাদ্য আকাক্ষা করে। গরম খাদ্য খাইলে তাহার যকৃৎ, বক্ষ ও পাকস্থলীর লক্ষণগুলির উপশম হয়।
‘পিত্ত বমন। ওয়াক তোলা, পিত্তময় ঢেকুর। উৎকণ্ঠার আক্রমণকালে বমি বমিভাব ও ওয়াক তোলা। পূৰ্ববর্ণিত রোগগুলির সহিত সাধারণতঃ এই লক্ষণ থাকে। যন্ত্রণা যখন গুরুতর হয়, উহা পাকস্থলীকে আক্রমণ করিয়া বমন উৎপন্ন করে। গরম জিনিষে উহার উপশম হয়। ‘পাকস্থলী-গহ্বরে একপ্রকার কষ্টের অনুভূতি। পাকস্থলীতে সদাস্থায়ী যন্ত্রণা, উহার নড়াচড়ায়। বৃদ্ধি এবং উদ্গারে উপশম। পাকস্থলী-গহ্বরে সঙ্কোচন ও অত্যনুভূতি। এ সমস্তই স্পর্শে বৰ্দ্ধিত ও আহারে উপশমিত হয়। পাকস্থলীতে অবিরত কনকনানি, আহারে উপশম। পাকস্থলীতে আকুঞ্চনবৎ, চিমটিকাটার ন্যায় যন্ত্রণা, হাত-পা গুটাইয়া বামপার্শ্বে শুইলে ও আহারে উপশম।
ইহাতে অনেক চক্ষু লক্ষণ আছে। সূঁচ ফোটানর ন্যায় যাতনা। “কনীনিকার অস্বচ্ছতা।” প্রদাহ। চক্ষে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা। “ডানচক্ষুর উপরে স্নায়ুশূল।” অনেক ক্ষেত্রেই ইহা ডানপাকে বাছিয়া লয়।
মুখমন্ডলে ন্যাবাই একমাত্র ব্যাপার, যাহা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। তারপর আমরা পাই ময়লাটে ধূসরবর্ণ গাত্র-ত্বক। “বিবর্ণ, ময়লাটে হরিদ্রাবর্ণ মুখমন্ডল।”
পাকস্থলী, যকৃৎ ফুসফুস প্রভৃতির উত্তাপে উপশম হইলেও শিরঃপীড়া উত্তাপেই উপস্থিত হয়। শিরঃপীড়া সঞ্চালনে বাড়ে, উত্তাপে বাড়ে, উত্তপ্ত ঘরে বাড়ে, উত্তাপ প্রয়োগে বাড়ে। এই স্থলেই ইহা আভ্যন্তরীণ বা সৰ্বাঙ্গীণ লক্ষণের সহিত পৃথক। অনেক প্রকারের শিরঃপীড়া আছে। নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে, পৈত্তিক সবমন শিরঃপীড়া উহাতে পিত্তবমন হয়, উহা উত্তাপে লাগাইয়া, অত্যুত্তপ্ত হওয়ার ফলে উপস্থিত হয়, সঞ্চালনে বৃদ্ধি, রোগী সম্পূর্ণ স্থির হইয়া অন্ধকার ঘরে শুইয়া থাকিতে চায় এবং পিত্তবমনে উপশম প্রাপ্ত হয়। পুরাতন ধরণের পৈত্তিক সবমন শিরঃপীড়া।
পৈত্তিক উদরাময়। ন্যাবার সহিত, কাদার ন্যায়, মলিন, দুর্গন্ধ, পডিংয়ের ন্যায় মল। পিত্তহীন মল। অত্যন্ত ফিকে রংয়ের মল। শিশুদের একেবারে সাদা মল। পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময় দেখা দেয়। মল বাদামিবর্ণ, সাদা, জলবৎ, সবুজ আমযুক্ত, পাতলা, কাইয়ের মত, উজ্জ্বল হলদেবর্ণ অথবা হলদের ছিটযুক্ত ধূসরবর্ণ।
স্বরভঙ্গ। “কাশিবার সময় কণ্ঠলীতে বেদনা এবং কণ্ঠনলীতে চাপবোধ।”
সাধারণতঃ যকৃৎ-লক্ষণ, নিউমোনিয়া এবং বক্ষরোগের সহিত শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। “হ্রস্ব কাশির আবেশের সহিত কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া। দ্রুত শ্বাস, যেন তাহার শ্বাসরোধ হইবে এরূপ। উল্কণ্ঠা। কষ্টকর শ্বাসক্রিয়া, যেন শ্বাসক্রিয়া বাধা পাইবে—এরূপ টানবোধ। ইহাতে আরও আর্দ্র হাঁপানির নৈশ আক্রমণ আছে। প্রত্যেকবার আবহাওয়ার পরিবর্তনে উহা উপস্থিত হয়। ইহার সকল রোগই আবহাওয়ার পরিবর্তনে উপস্থিত হয়। অত্যন্ত ঠান্ডা অথবা অত্যন্ত গরম কোন আবহাওয়ার পরিবর্তনই সহ্য করিতে পারে না। আবহাওয়ার পরিবর্তনে কাধে, নিতম্বে এবং অন্যান্য অঙ্গের বাতরোগ।
যকৃৎ, ফুসফুস ও বক্ষরোগের সহিত কাশি থাকে। উহা আক্ষেপিক প্রকৃতির। পুরাতন কাশি ভীষণ, আক্ষেপিক ও শুষ্ক হয়, আবেশে আবেশে উপস্থিত হইতে থাকে। “গয়েরবিহীন আক্ষেপিক কাশি।” কিছুক্ষণ কাশি চলিবার পর, একটু গয়ের উঠে। “পুনঃ পুনঃ হ্রস্ব কাশির আক্রমণ। হ্রস্ব কাশের সহিত অল্প ধূসরাভ গয়ের উঠে। ঘড়ঘড় করা, ক্লান্তকর কাশি।”
অঙ্গাদিতে বাতজনিত ও স্নায়ুশূলজনিত যন্ত্রণা আছে। অঙ্গাদির স্নায়ুশূল অত্যন্ত ভীষণ হয়। আক্রান্ত অঙ্গ ভারি ও অসাড়বোধ হয়। আক্রান্ত অঙ্গ থলথলে। পরে, রোগী কতকটা অবসন্ন হইয়া পড়ে, হৃৎপিন্ড দুর্বল, ক্ষীণ রক্তসঞ্চালন,—অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শোথ অবস্থা। অত্যন্ত অস্থিরতা। “অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কম্পন ও উৎক্ষেপ। ক্লান্তিবোধ, আলস্য, কাজকর্মে অনিচ্ছা।”
শরীরের নিম্নাংশ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও হস্তপদাদি অপেক্ষা মাথায় ও মুখে স্নায়ুশূল হওয়াই সাধারণ।
শীতযুক্ত নিউমোনিয়া এবং যকৃৎ-প্রদাহে যেরূপ তীব্র জ্বরের আক্রমণ হয়, ইহাতেও সেইরূপ জ্বর আছে। ইহা অপরাহ্ন ও সন্ধ্যায় আগমনশীল সবিরাম জ্বর আরোগ্য করিয়াছে। চৰ্ম্মে চুলকানি। ন্যাবা। ইহা পুরাতন পঁচা গন্ধযুক্ত ক্ষত আরোগ্য করিয়াছে।
অপর নাম – সোওয়ালো ওয়ার্ট (Swallow wort)
টেটার ওয়ার্ট (Tetter wort)
সিলাণ্ডাইন(Celandine)
চেলিডোনিয়াম পেপাভেরেসী জাতীয় উদ্ভিদ। ইহা জার্মানী ও ফ্রান্সে জন্মে। সরসবৃক্ষ থেকে এ মূল অরিষ্ট তৈরী হয়।
চেলিডোনিয়ামের – মূলকথা।
১। দক্ষিণ স্কন্ধীস্থির (Scapula) নীচের কোণের ভিতর দিকে (মৃদু বা তীব্র) অবিরত বেদনা।
২। চক্ষু, মুখমণ্ডল, ত্বক ও হাত হলদে; মল কাদার মত বর্ণ বিশিষ্ট অথবা সোনার মত হলদে; মূত্র হলদে। ঘন লেপাবৃত জিহ্বা ও কিনারায় লাল।
৩। ডান দিকের রোগ সমূহের ঔষধ। চক্ষুকোটবের উপরিভাগের রোগ, কুঁচকির রোগ, ফুসফুস ও কটিররোগ; পায়ের পাতা বরফের মত ঠাণ্ডা।
চেলিডোনিয়াম – এটি আলোচনা
১। লিভার এই ঔষধের ক্রিয়াল। এর সৰ্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রগত লক্ষণ —ডানদিকের স্কন্ধাস্থির (Scapula) নীচের কোণের ভিতরের দিকে অবিরাম (মৃদু বা তীব্র বেদনা। এই চরিত্রগত লক্ষ থটি জণ্ডিস রোগ, কাশি, উদরাময়, নিউমোনিয়া, ঋতুর গণ্ডগোলে, স্তনদুগ্ধের বিলোপ দুগ্ধাররোধে ও অবসন্নতা প্রভৃতির সঙ্গে বর্তমান থাকে। বস্তুতঃ রোমের নাম যা হোক না কেন এই লক্ষণটি বর্তমান থাকলে সবসময় চোলিডোনিয়ামই প্রযোজ্য, অছড়া ভালভাবে খোঁজ নিলেই এইসব ক্ষেত্রে লিভারের বা লিভার সংক্রান্ত গোলযোগের প্রাই বর্তমান থাকতে দেখা যায়। চেলিডোনিয়াম, লাইকোপোডিয়ামের মত বিশেষ ভাবে ডান দিকের ঔষধ। ডানদিকের চক্ষু কোঠরের উপরিভাগের স্নায়ুশূল, ডানদিকের কুঁকির ও পাকস্থলী গহ্বরের, ডানদিকের টেনে ধরা ভাবে, ও চেপে ধরার মত বেদনায়, ডানদিকে নিউমোনিয়ায়, ডান দিকের কাঁধের ব্যথায়, ডান কুঁচকিতে চিড়িক মারা বেদনা উদর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, কুঁচকি, উরুদেশ, বিশেষ করে ডান দিকের কেনা ও ডান পায়ের পাতার বরফের মত ঠাণ্ডা কিন্তু বাঁ পায়ের পাতা স্বাভাবিকতা চেলিডোনিয়ামের লক্ষণ। আরো বিশেষভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে যে চেলিডোনিয়াম কেবল মাত্র ডান দিকের ঔষধ নয় কিন্তু অন্যান্য অনেক বিষয়ে লাইকোপোডিয়ামের সহিত ঘনিষ্ট সম্পর্কযুক্ত এবং আমার অভিজ্ঞতায় একটিকে অন্যটি পরে প্রায়ই নির্দেশিত হতে দেখেছি। যদিও ডান দিকের ফলকাস্থির বেদনা এই মেটেরিয়া মেডিকার অপর যে-কোন লক্ষণের মতই নির্ভরযোগ্য তথাপি এরকম রোগীও থাকতে পারে যার ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি আদৌ থাকে না। কিন্তু এক্ষেত্রেও বোগীর বিশেষতঃ লিভার ও ফুসফুসের উপদ্রব চেলিডোনিয়াম দ্বারা আরোগ্য হতে দেখা গেছে।
* তাই রোগীর লিভার বাড়ুক বা না বাড়ুক, চাপে লিভারে বেদনা হোক বা না হোক যদি লিভার প্রদেশে প্রচাপিত বেদনা (pressive pain) থাকে, মুখের স্বাদ তিতো হয়, জিভে গাঢ় হলদে ময়লা জমে, কিন্তু জিভের প্রান্তদুটি লাল হয়, জিভের উপর দাঁতের ছাপ পড়ে, চোখের শ্বেতমণ্ডল, মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয় ও ত্বক পীত বর্ণের হয়, মল ধূসর, কাদার মত অথবা সোনার মত হলদে, মূত্রও সোনার মত হলদে, লেবুর মত রংয়ের বা ঘোর বাদামী এবং কোন পাত্রে রাখলে তাতে হলদে দাগ ধরে; এছাড়া ক্ষুধাহীনতা, বিরক্তিভাব, বিবমিষা অথবা পিত্তযুক্ত পদার্থের বমন এবং রোগীর পেটে গরম পানীয় ছাড়া আর কোন কিছু না থাকে তাহলে। চেলিডোনিয়াম প্রযোজ্য। (এক্ষেত্রে স্কন্ধাস্থির নীচে বেদনা এই বিশেষ লক্ষণ না থাকলেও চেলিডোনিয়াম ব্যবস্থয়) উপরোক্ত লক্ষণগুলিও প্রায়ই তরুণ বা পুরাতন রোগে দেখতে পাওয়া যায়।
তবে যদি পুরাতন রোগ সম্পূর্ণ সারানোর জন্য লাইকোপোডিয়ামের সাহায্য নিতে হয় তাহলে তাকে লক্ষণ সাদৃশ্যে ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু মূখ্য ঔষধ হিসেবে চেলিডোনিয়ামের উপরই নির্ভর করতে হবে।
২। যকৃত উপদ্রবে যথা সামান্য রক্ত সঞ্চয় ও প্রদাহ থেকে আরম্ভ করে কঠিন ও বদ্ধমূল রোগ, যথা যকৃতের মেদাধিক্য ও পিত্তশিলা প্রভৃতি গুরুতর গভীর মূল রোগেও চেলিডোনিয়াম উপযোগী।
তাছাড়া যকৃতের উপসর্গ সংযুক্ত ফুসফুসের প্রদাহে বা নিউমোনিয়াতে চেলিডোনিয়াম একটি প্রধান ঔষধ। দুর্দম্য কাশি সহকারে বুকের ডান দিকের ভিতর দিয়ে বেদনা কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত হলে চেলিডোনিয়াম উপকারী। বিশেষ করে এইক্ষেত্রে যে রোগটি সহজেই যক্ষ্মায় পরিণত হতে পারত তার হাত থেকে চেলিডোনিয়াম আমাদের রক্ষা করে।