শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ:
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকালকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন
- নবজাতক (Newborn): জন্ম থেকে ১ মাস বয়সী শিশু
- ইনফ্যান্ট (Infant): ২য় মাস থেকে ১ বৎসর বয়সী শিশু
- টুডলার (Toddler): ১ থেকে ৩ বৎসর বয়সী শিশু
- প্রিস্কুল (Preschool years): ৩ থেকে ৬ বৎসর বয়সী শিশু
- মধ্য শৈশবকাল (Middle childhood years): ৬ থেকে ১০ বৎসর বয়সী শিশু
- কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকাল (Adolescence): ১০ থেকে ১৯ বৎসর বয়সী। এ কয়েকটি বছরে একজন মানুষ শিশু থেকে যুবকে রূপান্তরিত হয়।
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি:
একজন শিশু যে পরিমাণ ওজন নিয়ে জন্মায় তার ৫% থেকে ১০% ওজন কয়েকদিনের মধ্যে কমে যায়। ২ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ৪ থেকে ৬ মাস বয়সের মধ্যে শিশুর ওজন জন্মের ওজন থেকে দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৬ মাস থেকে ১ বৎসর পর্যন্ত শিশুর বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়।
১ থেকে ২ বছর বয়সের মধ্যে শিশুর ওজন প্রায় ৫ পাউন্ড (২.২ কিলোগ্রাম) বৃদ্ধি পায়। ২ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে শিশুর ওজন প্রতি বছর প্রায় ৫ পাউন্ড (২.২ কিলোগ্রাম) করে বৃদ্ধি হতে থাকবে।
২ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে শিশুরা স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পায়। বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে ৯ থেকে ১৫+ বছর বয়সের মধ্যে শিশুর চূড়ান্ত বৃদ্ধি হয়। এরপর কয়েক বছরে সামান্য বৃদ্ধি ঘটে।
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির জন্য খাদ্য ও পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুষ্টিহীনতা শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শিশু ক্লান্ত ও স্কুলে কোনো কিছু শিখতে অক্ষম হতে পারে। এছাড়াও পুষ্টিহীনতা শিশুর অসুস্থ হওয়া ও স্কুল মিস করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সকালের নাস্তা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা সকালে ভালো নাস্তা না করলে ক্লান্ত ও আনমোটিভেটেড হয়ে যেতে পারে।
শিশুর বয়স যখন ১ সপ্তাহ:
এক সপ্তাহ বয়সের মধ্যে আপনার শিশু তার মা ও সেবিকার উপর নির্ভর করতে শিখে, আপনার কন্ঠ চিনতে পারে, গর্ভের বাইরের অদ্ভুত নতুন জগতের সাথে মানিয়ে নিতে শিখে, শিশু আপনার কথা বুঝতে পারে না, কিন্তু তাদের সাথে কথা বলা ভালোবাসার প্রকাশ অনুভব করতে পারে এবং তাদের মস্তিষ্কে ভাষা বিকাশের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
শিশুর বয়স যখন ২ সপ্তাহ:
আপনার শিশু ৮ থেকে ১৪ ইঞ্চি দূরের বস্তুগুলিতে ফোকাস করতে পারে। আপনি যখন আপনার শিশুকে খাওয়ান তখন আপনার মাথা ধীরে ধীরে এদিক থেকে অন্য দিকে সরান এবং দেখুন আপনার শিশুর চোখ আপনাকে অনুসরণ করে কিনা। এই ব্যায়াম তাদের চোখের পেশী এবং ট্র্যাকিং দক্ষতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
শিশুর বয়স যখন ৩ সপ্তাহ:
যদিও তাদের নড়াচড়া এখনও এলোমেলো এবং ঝাঁকুনিপূর্ণ, তবুও আপনার শিশুটি তিন সপ্তাহের মধ্যেই ছটফট করতে শুরু করতে পারে। আপনি শিশুকে ধরার সাথে সাথে লক্ষ্য করুন তারা কীভাবে আপনার স্পর্শের প্রতিক্রিয়া দেখায়। এ বয়সে আপনার শিশু আপনার স্পর্শ এমনকি আপনার ঘ্রাণ পেয়েও প্রতিক্রিয়া দেখায়।
শিশুর বয়স যখন ৪ সপ্তাহ:
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে আপনার শিশু কান্না ছাড়া অন্য শব্দ তৈরি করছে? তারা চার সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে “আহহ” শব্দ করতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা একজন অভিভাবককে দেখতে পায়। শিশুরা নকল করে শেখে, তাই তাদের শব্দগুলি তাদের কাছে পুনরায় উচ্চারণ করতে থাকুন।
শিশুর বয়স যখন ৫ সপ্তাহ:
এ সময়ে শিশুর এলোমেলো ঝাঁকুনিগুলি অদৃশ্য হতে শুরু করে এবং শিশুর নড়াচড়া মসৃণ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ হতে শুরু করবে। এ সময়ে আপনার শিশুকে বসার মতো পজিশনে কিছুক্ষণ রাখুন। অবশ্যই শিশুর মাথায় সাপোর্ট রাখতে হবে।
শিশুর বয়স যখন ৬ সপ্তাহ:
এ সময়ে আপনার শিশু মাঝে মাঝে মনকাড়া হাঁসি দিবে। তা দেখে সবার মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পরবে।
শিশুর বয়স যখন ৭ সপ্তাহ:
এ সময় থেকে শিশুর ইন্দ্রিয় শক্তি বিকশিত হতে শুরু করে, শব্দের দিকে ঘুরে তাকাবে, উজ্জ্বল রং ও নড়াচড়ার দিকে লক্ষ্য করবে।
শিশুর বয়স যখন ৮ সপ্তাহ:
এ সময়ে শিশুর ঘাড়ের পেশী কিছুটা শক্ত হয়ে উঠবে, প্রায় ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত মাথা উঠাতে পারবে, অভিভাবকরা শিশুকে দিনে কয়েকবার উপুড় করে পেটের উপরে শুয়ে দিবেন এরফলে শিশু ঘাড় উঠানো প্র্যাকটিস করবে।
শিশুর বয়স যখন ৯ সপ্তাহ:
শিশু নানান রকম শব্দে মুগ্ধ হবে, আপনার কথা শুনতে আগ্রহী হবে, আপনি কথা বলার সাথে সাথে আপনার মুখের দিকে মনোযোগ সহকারে তাকাবে।
শিশুর বয়স যখন ১০ সপ্তাহ:
এ সময়ে শিশু পিতা-মাতা ও নিকটজনের মুখ দেখে চিনতে পারবে, তারা কাছে আসলে শিশু উল্লসিত হয়ে সাড়া দিবে, এখন শিশু সামাজিক দক্ষতা উন্নত করতে প্রস্তুত, তাই তাদের পারিবারিক ক্রিয়াকলাপে অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন, শিশুকে সামনে রেখে খাবার খাওয়া, এবাদত করা ও কাজ কর্ম করা ইত্যাদি।
শিশুর বয়স যখন ১১ সপ্তাহ:
এ সময়ে শিশু দীর্ঘ সময়ের জন্য জেগে থাকে। তারা বিশ্ব সম্পর্কে জানতে উদ্বিগ্ন, খেলনার প্রতি আগ্রহ দেখাবে।
শিশুর বয়স যখন ১২ সপ্তাহ:
এ সময়ে আপনার শিশু মজার শিশুতে রূপান্তরিত হবে, আপনার সাথে হাসবে, ধমক দিলে রাগ করবে, শিশু তার হাত দুটি চিহ্নিত করতে পারবে, তার আঙ্গুলসমূহ চিহ্নিত করতে পারবে, আঙ্গুল মুখে দিয়ে তার স্বাদ উপলব্ধি করবে, যে কোন বস্তু শিশুর হাতে দিলে তা মুখে দিয়ে তার স্বাদ উপলব্ধি করবে। এ সময় আপনার শিশুর সাথে বেশি বেশি কথা বলুন, নতুন নতুন জিনিস তার সামনে আনুন, শিশুর নিকট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাম, বাবা, মা, দাদা, দাদী, নানা, নানী ও সৃষ্টিকর্তার নাম বার বার বলুন ও চিনিয়ে দিন।
শিশুর বয়স যখন ৪ মাস:
- প্রতিদিন প্রায় ২০ গ্রাম করে (এক আউন্সের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ) ওজন বৃদ্ধি পাবে।
- তাদের জন্মের ওজনের চেয়ে ২ গুণ বেশি ওজন হবে।
- বসা অবস্থায় মাথা নিচু করতে পারবে না।
- সোজা হয়ে বসতে সক্ষম হবে।
- উপুড় করে রাখলে মাথা ৯০ ডিগ্রি উঠাতে পারবে।
- সামনে থেকে পিছনে ঘুরতে সক্ষম হবে।
- কোনো বস্তুকে ধরে রাখবে এবং ছেড়ে দিবে।
- দু’হাত দিয়ে কোনো খেলনা ধরতে সক্ষম হবে।
- তাদের হাতে কোনো খেলনা তুলে দিলে সেটি হাত থেকে পড়ে গেলে আর তুলতে পারবে না।
- সামনে কোনো বস্তু রাখলে তা নিয়ে মুখে দিতে সক্ষম হবে।
- দিন-রাত মিলে ১৪-১৬ ঘণ্টা ঘুমাবে।
সংবেদনশীলতা ও জ্ঞানের দক্ষতা
- দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো এবং পরিষ্কার হবে।
- পিতামাতা এবং অন্যদের সাথে ঠিকমত চোখাচোখি করতে সক্ষম হবে।
- চোখে-মুখে হাত দিতে সক্ষম হবে।
- মুখে থুতুর বুদবুদ উঠাতে বা বিভিন্ন শব্দ করতে সক্ষম হবে।
- জোরে হাসতে সক্ষম হবে।
- যদি ফিডার দেখে তাহলে সেটা নেওয়ার জন্য বা খাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করবে।
- বিগত কোনো বস্তু বা কাজের কথা শিশুর স্মরণে থাকবে।
- পিতামাতা এবং অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে।
- পিতামাতার কণ্ঠস্বর এবং স্পর্শ বুঝতে সক্ষম হবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- শিশুকে আয়নার সামনে বসিয়ে রাখতে পারেন।
- শিশুর হাতে উজ্জ্বল রঙের খেলনা দিতে পারেন।
- শিশুর মুখের উচ্চারিত শব্দ পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।
- শিশুকে হামাগুড়ি দিতে সাহায্য করতে পারেন।
- শিশুর ঘাড় এবং মাথা শক্ত হয়ে থাকলে দোলনায় দোল খাওয়াতে পারেন।
শিশুর বয়স যখন ৯ মাস:
- প্রতিদিন প্রায় ১৫ গ্রাম হারে (আধা আউন্স), প্রতি মাসে ১ পাউন্ড হারে (৪৫০ গ্রাম) শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতি মাসে ১.৫ সেন্টিমিটার হারে শারীরিক দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাবে।
- অন্ত্র ও মূত্রাশয় আরও নিয়মতান্ত্রিক হয়ে উঠবে অর্থাৎ নিয়মিত মল-মূত্র ত্যাগ করবে।
- শিশুর মাথা নিচের দিকে নিতে গেলে মাথা মাটিতে স্পর্শ করার আগেই শিশু হাত দিয়ে নিজের মাথাকে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
- হামাগুড়ি দিতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হবে।
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে সক্ষম হবে।
- নিজে নিজে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।
- বসা অবস্থায় কোনো বস্তু বা খেলনার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
- কোনো বস্তুকে দাঁত দিয়ে কামড়ে চ্যাপ্টা করতে সক্ষম হবে।
- বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনীর সাহায্যে কোনো বস্তুকে ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
- নিজের আঙ্গুলের সাহায্যে একটু-আধটু খাবার খেতে সক্ষম হবে।
- শিশুর হাতে কোনো বস্তু বা খেলনা দিলে তা নিক্ষেপ করতে এবং ঝাঁকাতে সক্ষম হবে।
সংবেদনশীলতা ও জ্ঞানের দক্ষতা
- মুখ দিয়ে বুদবুদ উঠাবে।
- পিতামাতাকে আঁকড়ে ধরে রাখবে অন্য কারো কোলে যেতে চাইবে না।
- কোনো বিষয়কে গভীরভাবে উপলব্ধি করবে।
- এমন কোনো বস্তু যা নিয়মিত দেখে, তা যদি হঠাৎ করে না দেখে, তাহলে শিশুটি বুঝতে সক্ষম হবে।
- সাধারণ আদেশ নিষেধে শিশু সাড়া দিবে।
- নাম ধরে ডাক দিলে সাড়া দিবে।
- কোনো বিষয়ে “না” করলে সেটা সে বুঝতে সক্ষম হবে।
- পিতামাতা বা অন্যদের কথার অনুকরণ করার চেষ্টা করবে।
- শিশুকে কোথাও একা রাখলে সে ভয় পাবে।
- পারস্পরিক বিভিন্ন খেলা খেলবে।
- হাত দিয়ে টাটা বা বিদায় দিতে সক্ষম হবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- শিশুর সামনে বিভিন্ন ছবি বিশিষ্ট বই-পুস্তক দেওয়া যেতে পারে।
- বিভিন্ন শপিংমল বা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন।
- পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বস্তুর নাম, মানুষের নাম বা বিভিন্ন শব্দ শিখাতে পারেন।
- খেলার ছলে ঠাণ্ডা ও গরমের অনুভূতি শেখাতে পারেন।
- বড় সাইজের খেলনা কিনে দিতে পারেন যাতে শিশু ধাক্কা দিয়ে খেলার জন্য দাঁড়াতে সক্ষম হয়।
- শিশুর নিকট বসে কবিতা, গান ও গজল গাইতে পারেন।
- শিশুর বয়স ২ বছর হওয়া পর্যন্ত টিভি ও মোবাইল দেখা এড়িয়ে চলুন।
- শিশুকে একা রাখতে হলে তার হাতে বা সামনে কোনো খেলনা বা বস্তু দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে করে সে আতংকিত না হয়ে পড়ে।
শিশুর বয়স যখন ১২ মাস:
- শিশুর শারীরিক ওজন তার জন্মের ওজনের তিনগুণ হবে।
- শিশুর শারীরিক উচ্চতা তার জন্মের উচ্চতার চেয়ে ৫০% বেশি হবে।
- শিশুর বুক এবং মাথার পরিধি সমান হবে।
- ১-৮ টা দাঁত উঠবে।
- কোনো কিছু না ধরে শিশু দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
- সম্পূর্ণ একা অথবা কারো হাত ধরে শিশু হাঁটতে সক্ষম হবে।
- কারো সাহায্য ছাড়াই শিশু বসতে সক্ষম হবে।
- ২ টি বস্তু দ্বারা টুংটাং শব্দ করতে সক্ষম হবে।
- শিশুর সামনে কোনো বই দিলে একসাথে অনেকগুলি করে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখতে থাকবে।
- বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনীর সাহায্যে ছোট-খাটো কোনো বস্তু তুলে নিতে সক্ষম হবে।
- রাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ও দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা ঘুমাবে।
সংবেদনশীলতা ও জ্ঞানের দক্ষতা
- খেলাধুলোর ভান করতে থাকে।
- দ্রুত চলমান কোনো বস্তু বা খেলনার অনুসরণ করবে।
- নাম ধরে ডাক দিলে সাড়া দিবে।
- “মা” “বাবা” এবং আরো অন্তত ১/২ টি শব্দ বলতে শিখবে।
- সহজ সহজ নির্দেশনাগুলো বুঝতে শিখবে।
- বিভিন্ন পশু-পাখির শব্দ নকল করার চেষ্টা করবে।
- বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখবে।
- পোশাক পরিধান করানোর সময় নিজের হাত/পা উঁচু করবে।
- নিজের দিকে এবং বিপরীত দিকে বল গড়াগড়ি খেলবে।
- আঙ্গুল দিয়ে কোনো বস্তুর দিকে নির্দেশ করবে।
- হাত দিয়ে টাটা বা বিদায় জানাবে।
- একটি বস্তু অপর আরেকটি বস্তুর সাথে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করবে।
- পিতামাতা থেকে আলাদা হলে শিশু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে এবং পিতামাতাকে আঁকড়ে ধরে রাখবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- শিশুর সামনে বিভিন্ন ছবি বিশিষ্ট বই-পুস্তক দেওয়া যেতে পারে।
- বিভিন্ন শপিংমল বা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন।
- বল ছুঁড়ে দেয়া খেলতে পারেন।
- পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বস্তুর নাম, মানুষের নাম বা বিভিন্ন শব্দ শিখাতে পারেন।
- খেলার ছলে ঠাণ্ডা এবং গরমের অনুভূতি শেখাতে পারেন।
- বড় সাইজের খেলনা কিনে দিতে পারেন যাতে আপনার শিশু ধাক্কা দিয়ে খেলার জন্য দাঁড়াতে সক্ষম হয়।
- শিশুর নিকট বসে কবিতা, গান ও গজল গাইতে পারেন।
- সমবয়সী শিশুদের সাথে খেলার জন্য দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করতে পারেন।
- শিশুকে একা রাখতে হলে তার হাতে বা সামনে কোনো খেলনা বা বস্তু দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে করে সে আতংকিত না হয়ে পড়ে।
শিশুর বয়স যখন ১৮ মাস:
- মাথার সামনের দিকের ফন্টানেলস থাকলে তা বন্ধ হয়ে যাবে।
- শারীরিক বৃদ্ধি ধীরগতিতে হবে আগের তুলনায় কম ক্ষুধা লাগবে।
- মল-মূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে তবে টয়লেট ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত নাও হতে পারে।
- দৌড়াতে সক্ষম হবে কিন্তু প্রায়শই পড়ে যাবে।
- কারো সাহায্য ছাড়াই ছোট-খাটো চেয়ারে উঠতে সক্ষম হবে।
- এক হাতে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
- খেলনা ব্লকের সাহায্যে ২ থেকে ৪ তলা বিশিষ্ট টাওয়ার তৈরি করতে সক্ষম হবে।
- নিজে নিজে খাওয়ার জন্য চামচ ও কাপ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
- হিজিবিজি, এটা-সেটা লেখা বা আঁকাআঁকি করার চেষ্টা করবে।
- সামনে কোনো বই দিলে একসাথে ২/৩ টা করে পৃষ্ঠা উল্টাতে সক্ষম হবে।
সংবেদনশীলতা ও জ্ঞানের দক্ষতা
- স্নেহ দেখাতে শিখবে।
- পিতা-মাতা একা রেখে গেলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করবে।
- গল্প শুনবে, চিত্র বা ছবি দেখবে।
- জিজ্ঞাসা করা হলে ১০ টি বা তার অধিক শব্দ বলতে সক্ষম হবে।
- হা করে বাবা মাকে চুমু দিবে।
- শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের নাম বললে সে চিনতে পারবে।
- সাধারণ বস্তুগুলোকে সে চিনতে সক্ষম হবে এবং সেগুলো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে।
- প্রায়শই বিভিন্ন কিছুর অনুকরণ করবে।
- কিছু কিছু পোশাক একা একাই খুলে ফেলতে সক্ষম হবে, যেমন: হাত মোজা, পা মোজা, ক্যাপ ইত্যাদি।
- এটা আমার, ওটা আমার, অর্থাৎ বিভিন্ন বস্তুর মালিকানা “আমার” বলার মাধ্যমে প্রকাশ করবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা দেখিয়ে দিন ও উৎসাহ প্রদান করুন।
- প্রাপ্তবয়স্কদের খেলার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি (যদি শিশুর জন্য নিরাপদ হয়) দিতে পারেন।
- প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে বা পারিবারিক দৈনন্দিন কাজে আপনার শিশুকে অংশগ্রহণ করতে দিন।
- কোনোকিছু বিনির্মাণ এবং বিভিন্ন সৃজনশীল খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন।
- ২ বছর বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
- শিশুকে একা রাখতে হলে তার হাতে বা সামনে কোনো খেলনা বা বস্তু দিয়ে রাখতে পারেন, যাতে করে সে আতংকিত না হয়ে পড়ে।
শিশুর বয়স যখন ২ বছর:
- দরজার হাতল ধরে দরজা খুলতে সক্ষম হবে।
- সামনে কোনো বই-পুস্তক দিলে একবারে একটি পৃষ্ঠা উল্টাতে সক্ষম হবে।
- খেলনা ব্লক বা কিউব দিয়ে ৬-৭ তলা বিশিষ্ট টাওয়ার নির্মাণ করতে সক্ষম হবে।
- ভারসাম্য না হারিয়ে ফুটবলে লাথি দিতে সক্ষম হবে।
- ভারসাম্য না হারিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো ভারী বস্তু তুলতে সক্ষম হবে। (২ বছর বয়সে যদি শিশু এটা করতে না পারে তবে এটি চিন্তার বিষয়)
- ঠিকমত হাঁটতে বা দৌড়াতে সক্ষম হবে।
- টয়লেট ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
- অন্তত ১৬ টি দাঁত উঠবে তবে দাঁতের সঠিক সংখ্যা পরিবর্তনও হতে পারে।
সংবেদনশীলতা ও জ্ঞানের দক্ষতা
- কারো সাহায্য ছাড়াই সাধারণ পোশাক পরিধান করতে সক্ষম হবে।
- তৃষ্ণা মেটাতে পানি পান করা, ক্ষুধা লাগলে খাবার খাওয়া, টয়লেট চাপলে বাথরুমে যাওয়ার মত ছোট ছোট প্রয়োজনগুলো নিজে নিজে মেটাতে সক্ষম হবে।
- ২-৩ টি শব্দ দ্বারা বাক্য গঠন করতে সক্ষম হবে।
- ২ টি ধাপের নির্দেশনা বুঝতে সক্ষম হবে, যেমন: আগে আমার বল দাও তারপর তোমার জুতা নাও ইত্যাদি।
- মনোযোগের পরিধি বৃদ্ধি পাবে।
- দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করবে।
- শব্দভাণ্ডারে ৫০-৩০০ শব্দ জমা হবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- প্রতিবেশীদের সাহায্য করতে ও পারিবারিক দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ করতে দিন।
- শারীরিক কার্যকলাপ ও খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিন।
- কোনোকিছু বিনির্মাণ ও সৃজনশীল খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন।
- প্রাপ্তবয়স্কদের কাজের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি যদি শিশুর জন্য নিরাপদ মনে করেন তবে প্রদান করতে পারেন।
- শিশুর সামনে বই পড়তে পারেন।
- এই বয়সে শিশুকে টিভি ও মোবাইল দেখা থেকে বিরত রাখুন।
- গেম খেলায় আসক্ত হতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন। গেম খেলা শিশুর মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
শিশুর বয়স যখন ৩ বছর:
- প্রায় ৪-৫ পাউন্ড শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাবে।
- শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হলে যতটা উচ্চতা প্রাপ্ত হওয়ার কথা, মাত্র ৩ বছর তার অর্ধেক উচ্চতা প্রাপ্ত বা লম্বা হবে।
- শরীরের ভারসাম্য উন্নতি লাভ করবে।
- দৃষ্টিশক্তি আরো প্রখর হবে।
- প্রায় ২০ টি প্রাথমিক দাঁত উঠবে।
- এক দিনে প্রায় ১১ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমাবে।
- দিনের বেলা মল-মূত্রের বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে, কখনো কখনো রাতেও সক্ষম হবে।
- ভারসাম্য রক্ষা করে এক পায়ে হালকা লাফ দিতে সক্ষম হবে।
- রেলিং না ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সক্ষম হবে।
- খেলনা ব্লক বা কিউব দিয়ে ৯ তলা বিশিষ্ট টাওয়ার নির্মাণ করতে সক্ষম হবে।
- ছোট ফাঁকা স্থানে সহজেই একটি ছোট বস্তু স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
- একটি বৃত্ত আঁকতে পারবে।
- তিন চাকা বিশিষ্ট খেলনা সাইকেলের প্যাডেল চালাতে সক্ষম হবে।
সংবেদনশীলতা, মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা
- তার ব্রেইনে কয়েকশো শব্দের শব্দভাণ্ডার সঞ্চিত হবে।
- তিন শব্দের বাক্যে কথা বলতে সক্ষম হবে।
- তিনটি বস্তু গণনা করতে সক্ষম হবে।
- বহুবচন এবং সর্বনাম ব্যবহার করতে শিখবে।
- শিশুর প্রায় সকল কথাই বোধগম্য হবে।
- নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে।
- দীর্ঘ সময় ধরে কোনো বিষয় বা খেলাধুলায় আবদ্ধ হয়ে থাকবে।
- কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে সক্ষম হবে।
- সহজেই নিজের খাবার নিজে খেতে পারবে।
- অল্প সময়ের জন্য বাবা মা তার কাছ থেকে সরে গেলে সে আর ভয় পাবে না।
- কাল্পনিক বিষয়ে ভয় পাবে।
- নিজের নাম, বয়স এবং লিঙ্গ (ছেলে/মেয়ে) বলতে পারবে।
- বিভিন্ন বিষয় বা ঘটনা শেয়ার করবে।
- অংশগ্রহণমূলক খেলা খেলবে অর্থাৎ টিম করে খেলতে পারবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- খেলাধুলা করার জন্য নিরাপদ জায়গা প্রদান করুন।
- শারীরিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা দিন।
- শিশুকে বিভিন্ন খেলাধুলা ও তার নিয়ম-কানুন শিখতে সহায়তা করুন।
- টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইল দেখার সময় বা বিষয়-বস্তু সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করুন।
- পছন্দের জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন।
- ঘরের ছোট-খাটো কাজে সাহায্য করতে উৎসাহিত করুন।
- সামাজিক কাজে দক্ষতা বিকাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে দিন।
- সৃজনশীল খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন।
- একসাথে বই পড়ুন।
- শিশুর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদেরকে শিখতে সহায়তা করুন।
- শিশুর ইতিবাচক আগ্রহকে প্রাধান্য দিন।
- শিশুর অনুভূতি প্রকাশে অভিনয় না করে যেন মুখের ভাষায় প্রকাশ করে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
শিশুর বয়স যখন ৪ বছর:
- প্রতিদিন প্রায় ৬ গ্রাম হারে শারীরিক ওজন বৃদ্ধি পাবে।
- প্রায়শই দিনে ঘুমাবে না কিন্তু রাতে ১১ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমাবে।
- শারীরিক উচ্চতা জন্মের সময়ের উচ্চতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে।
- শারীরিক ভারসাম্যের আরো উন্নতি হবে।
- শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে এক পায়ে দাঁড়াতে বা লাফাতে পারবে।
- হাত দিয়ে সোজাসুজি ও জোরে বল নিক্ষেপ করতে সক্ষম হবে।
- এখনো বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে।
ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত এবং জ্ঞান সম্বন্ধীয় দক্ষতা
- তার ব্রেইনে এক হাজারেরও বেশী শব্দভাণ্ডার সঞ্চিত হবে।
- ৪-৫ টি শব্দ দ্বারা বাক্য গঠন করে কথা বলতে সক্ষম হবে।
- অতীতকাল বুঝবে।
- ২-৪ পর্যন্ত গণনা করতে পারবে।
- কৌতূহলী হবে এবং আগের চেয়ে আরো বেশী প্রশ্ন করবে।
- কথার মাঝে এমন এমন শব্দ ব্যবহার করবে যা শিশু নিজেই সম্পূর্ণরূপে বুঝবে না।
- অশ্লীল বা অমার্জিত শব্দও ব্যবহার করা শুরু করে দিতে পারে।
- সহজ সহজ গান, গজল ও কবিতা শিখবে ও গাওয়ার চেষ্টা করবে।
- আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করবে।
- আক্রমণাত্মক আচরণ করা শুরু করে দিতে পারে।
- পারিবারিক গোপন কথা অন্যদের কাছে ফাঁস করে দিবে।
- কাল্পনিক খেলার সাথী বানিয়ে ফেলবে।
- আকার ও আয়তনের উপর ভিত্তি করে ২ টি বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হবে।
- সঠিক এবং ভুলের মাঝে পার্থক্য করার মত নৈতিক জ্ঞানের ঘাটতি থাকবে।
- তাদের কাছে বেশী কিছু আশা করলে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা দিন এবং উৎসাহিত করুন।
- আপনার শিশুকে শেখান যে, কিভাবে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে হয় এবং তার নিয়ম মেনে চলতে হয়।
- আপনার শিশু যেন নিজের জিনিস, যেমন: খাবার, খেলনা ইত্যাদি অন্য শিশুদের সাথে ভাগাভাগি করে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
- সৃজনশীল খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন।
- আপনার শিশুকে ছোট ছোট কাজ করতে শেখান।
- একসাথে বই পড়ুন।
- টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইল দেখার সময় বা বিষয়-বস্তু সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করুন।
- পছন্দের জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন এতে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে।
শিশুর বয়স যখন ৫ বছর:
- শারীরিক ওজন ১ বৎসরে প্রায় ৪-৫ পাউন্ড বা ১.৮-২.২৫ কেজি হারে বৃদ্ধি হবে।
- শারীরিক উচ্চতা প্রায় ২-৩ ইঞ্চি বা ৫-৭.৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে।
- হাত-পা আরো ভালোভাবে কাজ করবে।
- শারীরিক ভারসাম্য আরো মজবুত হবে, আরো ভালোভাবে লাফালাফি, দৌড়ঝাঁপ করতে সক্ষম হবে।
- চোখ বন্ধ করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
- সাধারণ সরঞ্জামাদি দ্বারা বিভিন্ন দক্ষতা প্রদর্শন করবে।
- একটি ত্রিভুজ আঁকতে পারবে।
- নরম খাবার-দাবার কাটতে ছুরি ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত এবং জ্ঞান সম্বন্ধীয় দক্ষতা
- তার ব্রেইনে দুই হাজারেরও বেশী শব্দভাণ্ডার সঞ্চিত হবে।
- ৫ বা তার বেশী শব্দ দ্বারা বাক্য গঠন করে কথা বলতে সক্ষম হবে।
- বিভিন্ন মুদ্রা বা টাকা সনাক্ত করতে পারবে, কোনটা ১০ টাকা কোনটা ৫০ টাকা তা নির্ণয় করতে পারবে।
- ১০ পর্যন্ত গণনা করতে পারবে।
- ফোন নাম্বার মনে রাখতে পারবে।
- বিভিন্ন রঙ্গের নাম বলতে পারবে।
- গভীর অর্থবোধক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে।
- “কেন” প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে।
- ভুল করলে “আমি দুঃখিত” বলতে শিখবে।
- আক্রমণাত্মক আচরণ কমে যাবে।
- আগের চেয়ে ভয়-ভীতি কমে যাবে।
- অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে কিন্তু সেগুলো বুঝতে পারবে না।
- গণিতের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
- বাবা-মা সহ অন্যদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করবে।
- ফ্রেন্ড সার্কেল তৈরি হবে।
- খেলার সময় কল্পনা এবং ভান করতে পছন্দ করবে।
অভিভাবকদের করণীয়
- একসাথে বই পড়তে পারেন।
- বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিন।
- বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে শেখান।
- অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করুন কারণ, এটা শিশুর সামাজিক দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে।
- শিশুর সাথে সৃজনশীল খেলাধুলা করতে পারেন।
- টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইল দেখার সময় বা বিষয়-বস্তু সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করুন।
- পছন্দের জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন।
- ঘরের ছোট-খাটো কাজে সাহায্য করতে আপনার শিশুকে উৎসাহিত করুন।
শিশু যখন স্কুলে যায়:
স্কুলগামী শিশু বলতে ৬ থেকে ১২ বছর বয়সের শিশুদের বুঝানো হয়। আমরা সহজভাবে বলতে পারি প্রাইমারি স্কুলগামী শিশু।
শারীরিক বিকাশ
স্কুলগামী শিশুদের প্রায়শই সূক্ষ্ম ও শক্তিশালী মোটর (হাত-পায়ের কাজ) দক্ষতা তৈরি হয়। বিশেষ করে চোখ ও হাতের নিপুণ দক্ষতা তৈরি হয়, শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় হাত-পা সঠিক কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে।
এ সময়ে শিশু সুন্দরভাবে লেখা শিখতে পারে, নিজের পোশাক নিজে পরা, বিছানা তৈরি ও খাবার তৈরি করার মতো রুটিন কাজসমূহ করতে পারে।
এ বয়সী শিশুদের মধ্যে উচ্চতা, ওজন ও গড়নের মধ্যে বড় পার্থক্য থাকবে। কারণ জেনেটিক ব্যাকগ্রাউন্ড, পুষ্টি ও ব্যায়াম শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬ বছর বয়সের মধ্যে বডি ইমেজের অনুভূতি তৈরি হতে শুরু করে। এ সময় শিশুদের প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা শারীরিক কার্যকলাপ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।
এ সময়ে শিশুদের সেকেন্ডারি লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য বিকাশ লাভ করতে শুরু করে, যেমন:
মেয়েদের সেকেন্ডারি লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
- স্তন বৃদ্ধি হওয়া।
- বগলের নিচে লোম ও যৌনকেশ দেখা দেওয়া।
ছেলেদের সেকেন্ডারি লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বগলের নিচে লোম, বুকের উপরে লোম ও যৌনকেশ দেখা দেওয়া।
- অণ্ডকোষ এবং পুরুষাঙ্গ বৃদ্ধি পাওয়া।
৫ বছর বয়সী বেশিরভাগ শিশু স্কুলের রুটিন অনুসারে বিভিন্ন বিষয় শিখতে শুরু করে। প্রথম কয়েক বছর মৌলিক বিষয়গুলো শেখার উপর বেশি জোর দিতে হয়। অতঃপর অক্ষর ও শব্দ চেনানোর পাশাপাশি বিষয়বস্তু গল্প আকারে শেখাতে হবে।
৬ বছর বয়সী শিশুর ১৫ মিনিটের জন্য কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারে। এ সময় শিশুকে ১৫ মিনিট পড়িয়ে কিছুক্ষণ গল্প বা খেলাধুলা করে আবার পড়াতে পারেন।
৯ বছর বয়সী শিশু প্রায় এক ঘণ্টার জন্য মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সক্ষম। এদেরকেও ১ ঘণ্টার বেশি কিছু পড়তে বা অংক করতে দেয়া উচিৎ না। তবে কিছুক্ষণ গল্প বা খেলাধুলা করে আবার পড়াতে পারেন।
মানুষের জীবন মানেই ব্যর্থতা ও সফলতার সমন্বিত রূপ, শিশু ক্লাসে ভালো না করলে কখনো তিরস্কার করা যাবে না। বরং ব্যর্থতা ও হতাশাকে জয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সাহস যোগাতে হবে।
শিশু বারবার শারীরিক অভিযোগ করতে পারে (যেমন গলা ব্যথা, পেটে ব্যথা, হাত-পায়ে ব্যথা ইত্যাদি)। এটি শিশুর শরীরের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে হতে পারে। অনেক সময় শিশুদের এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি থাকে না। কিন্তু শিশু অভিযোগ করলে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে অনুসন্ধান করতে হবে। শিশুকে আশ্বস্ত করবে যে পিতামাতা তাদের মঙ্গল চায়।
সাধারণত এ বয়সে শিশুদের বন্ধুত্ব একই লিঙ্গের শিশুদের সাথে হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে স্কুলগামী শিশুরা প্রায়ই বিপরীত লিঙ্গের শিশুদের অস্বস্তিকর মনে করে। শিশুরা বয়ঃসন্ধিকালের কাছাকাছি আসলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি নেতিবাচক ধারণা কমতে শুরু করে।
শিশুদের সুরক্ষাঃ
স্কুলগামী শিশুদের সুরক্ষাটা খুব জরুরী
- স্কুলগামী শিশুরা অত্যন্ত সক্রিয়। তাদের সমবয়সীদের থেকে উৎসাহ প্রয়োজন, শিশুরা সমবয়সীদের থেকে বাহবা, লাইক বা উৎসাহ পাওয়ার আশায় অনেক দুঃসাহসিক কাজ করতে পারে। অভিভাবকদের অবশ্যই এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
- শিশু যেন খারাপ সঙ্গীর সাথে না মিশে তা খেয়াল রাখতে হবে। অসৎ ও অসভ্য পরিবারে শিশুকে মিশতে দিবেন না, অসৎ পরিবারের সন্তানদের অভিজাত চলাফেরা যেন আপনার আপনার সন্তানকে প্রভাবিত করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। মাঝে মাঝে সৎ-অসৎ, ভদ্রতা-অভদ্রতা, মান-সম্মান, সুসঙ্গ-কুসঙ্গ, ইত্যাদি বিষয়ের সুফল ও কুফল শিশুকে বুঝিয়ে বলুন। বারবার বলুন যেন শিশু তার শৈশবেই নৈতিক করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ উপলব্ধি করতে পারে।
- শিশুদের উপযুক্ত ও নিরাপদ এলাকায় উপযুক্ত সরঞ্জাম এবং নিয়মসহ খেলাধুলা করতে শেখানো উচিত।
- জলে সাঁতার কাটার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে শিশু যেন ডুবে না যায়।
- ম্যাচ, লাইটার, বারবিকিউ চুলা, খোলা আগুন সম্পর্কিত বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
পিতামাতার জন্য কিছু টিপস:
- আপনার সন্তানের শারীরিক বিকাশ স্বাভাবিকের বাইরে গিয়ে থাকলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ভাষাগত দক্ষতা পিছিয়ে আছে বলে মনে হলে, শিশুর বক্তব্য ও ভাষা উন্নত করার চেষ্টা করুন।
- শিক্ষক, স্কুলের কর্মচারী ও সন্তানের বন্ধুদের পিতামাতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখুন যাতে আপনি সম্ভাব্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।
- শিশুদের খোলাখুলিভাবে কথা বলতে এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাহীন কথা বলতে উৎসাহিত করুন।
- শিশুদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করুন।
- শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়া ও সমবয়সীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সহিংসতা, যৌনতা ও অপরাধমূলক কাজে জড়িত হচ্ছে কি না তা নিবিড়ভাবে লক্ষ রাখুন। সর্বদা তার কুফলসমূহ বলতে বলতে অপরাধমূলক বিষয়ের প্রতি শিশুদের ঘৃণা তৈরি করুন।
- অসৎ ও অসভ্য পরিবারে শিশুকে মিশতে দিবেন না, অসৎ পরিবারের সন্তানদের অভিজাত চলাফিরা যেন আপনার আপনার সন্তানকে প্রভাবিত করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। মাঝে মাঝে সৎ-অসৎ, ভদ্রতা-অভদ্রতা, মান-সম্মান, সুসঙ্গ-কুসঙ্গ, ইত্যাদি বিষয়ের সুফল ও কুফল শিশুকে বুঝিয়ে বলুন। বারবার বলুন যেন শিশু তার শৈশবেই নৈতিক করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়সমূহ উপলব্ধি করতে পারে।
- খেলাধুলা, ক্লাব, শিল্পকলা, সঙ্গীত এবং স্কাউটের মতো গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে শিশুদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করুন।
- স্কুলগামী শিশুদের পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত, যেমন টেবিল গুচিয়ে রাখা, বিছানা গুচিয়ে রাখা, খাবারের প্লেট পরিষ্কার করা ইত্যাদি।
- দিনে ২ ঘণ্টার উপরে যেন টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি না দেখে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন।