শিশু খিটখিটে ও বদমেজাজী, শিশুকে ছুলে এমন কি তার দিকে তাকালেও বিরক্ত হয়, অপরিচিত লোক দেখলে মেজাজ আরও খারাপ হয়। |
প্রায়ই আঙ্গুল দিয়ে নাক খোঁটে অথবা বালিশে নাক ঘষে, ঘুমানর সময় দাঁতে দাঁত ঘষে। |
রোগী সারাক্ষন শুধু খাই খাই করে, আহারের কিছুক্ষন পরেই খেতে চায়, আবার কখন কখন কিছুই খেতে চায় না। |
মূত্র অত্যন্ত ঘোলা এবং কিছুক্ষন রাখার পর চুন গোলার মত দেখায়। |
চোখের চারিদিকে নিলিমা পড়ে অথবা মুখের চারিদিকে সাদা ও নীলচে দাগ পড়ে। |
গলার ভিতর হতে কিছু উঠে আসছে এমন মনে হয়, সেজন্য রোগী প্রায়ই ঢোঁক গেলে। |
শিশু উপুর হয়ে শুয়ে ঘুমায়, অন্য অবস্থায় ঘুমাতে পারে না। |
শিশু – যাদের চুল কালো, অত্যন্ত খিটখিটে, রাগী, বদ মেজাজী, কোলে উঠে বেড়াতে চায় কিন্তু তাতেও শান্ত হয় না, গায়ে ছোয়া লাগাতে চায় না, কাছে কেউ আসুক তা সহ্য করতে পারে না, আদর পছন্দ করে না; অনেক কিছু চায় কিন্তু দিলে ছুঁড়ে ফেলে দেয় (তুলনীয়—এ-টার্ট, ব্রায়ো, ক্যামো, ষ্ট্যাফি)।
সর্বদা নাক খোঁটে, নাকের ফুটোতে আঙুল ঢোকায়, আঙুল দিয়ে ঘষতে থাকে, নাক চুলকায়, বালিশে ধাত্রীর কাঁধে নাক ঘষতে থাকে (টিউক্রিয়া ম্যারাম ভেরাম)।
যে শিশু ক্রিমিতে ভোগে, ঘুম থেকে জেগে কাতরভাবে কাঁদতে থাকে, ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে ওঠে, দাঁত কিড়মিড় করে (সাইকুটা, স্পাইজে);লম্বা ক্রিমি (টিউক্রি)।
মুখ ফ্যাকাশে, অসুখে ভুগে যেন সাদা ও নীলচে ভাব। চোখের নীচের দিকে কালিমা, এক গাল লাল ও অপরদিক ফ্যাকাসে (ক্যামো) রাক্ষুসে ক্ষুধা, পেট ভরে খেলেও ক্ষিধা থাকে। মিষ্টি ও অন্যান্য টুকিটাকি খেতে চায়, মায়ের দুধ খেতে চায় না।
প্রস্রাব – যখন বার বার হয় তখন ঘোলাটে—কিছুক্ষণ থাকলে সাদা ও দুধের মত রঙ হয়। সাদা, ঘোলাটে প্রস্রাব। অজান্তে প্রস্রাব করে ফেলে।
কাশি – শুকনো, সাথে হাঁচি, কাশিতে সারাদেহ ঝাঁকতে থাকে, সকালে ওয়াক ওয়াক করে। নির্দিষ্ট সময়ান্তর কাশি, বসন্তকালে ও বসন্তের শেষে কাশি ঘুরে আসে। শিশু কাশির আবেগ আসতে পারে এই ভয়ে কথা বলতে ও নড়াচড়া করতে ভয় পায় (ব্রায়ো)।
সম্বন্ধ – শিশুদের খিটখিটে ভাব এই লক্ষণ—এ-ক্রুড, এ-টার্ট, ব্রায়ো, ক্যামো, ক্রিয়ো, সাইলি ও স্ট্যাফির সাথে তুলনীয়।
হুপিংকাশিতে প্রচন্ড কষ্ট ড্রসেরা দিয়ে কমলে সিনা দিতে হয়।
ঠান্ডা লেগে স্বরলোপ—এতে একোন, ফস, স্পঞ্জিয়া দিয়ে ব্যর্থ হলে সিনা সারিয়ে তুলছে।
এপিডেমিক রোগে বয়স্কদের অন্য ওষুধের প্রয়োজন হলে শিশুদের প্রায়ই এই ওষুধের প্রয়োজন হয়।
কৃমিরোগে যেখানে সিনা নির্দিষ্ট হয়ে প্রয়োগ করে বিফল হয় সেখানে স্যান্টোনাইন ব্যবহার্য (টিউক্রি, স্পাইজ)।
শক্তি – ৩x, ৩০, ২০০।
এপিডেমিক(Epidemic)একটি সম্প্রদায় বা জাতি বা এক জায়গায় বহুলোকের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ে, কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা ঋতুতে হতে পারে বা কোন একটি নির্দিষ্ট বয়সের গ্রুপ-এর মধ্যেও হতে পারে। যেমন শিশুদের মাম্পস রোগ হওয়া।
এনডেমিক(Endemic)কোন একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ-এর লোকেদের মধ্যে বা কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে কোন রোগ সীমাবদ্ধ থাকে যখন তা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তখন তা এপিডেমিক হয়ে পড়ে। প্যানডেমিক (Pandemic) এপিডেমিক যখন আরও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে যেমন 1918 সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা—যা আমেরিকা মহাদেশ ছাড়িয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও দেখা দিয়েছিল।
এটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশী ব্যবহার হয়, এই জাতীয় একটি ঔষধ বিশেষ। এই জাতীয় শিশুরা আকারে বড়, মেদবহুল, গায়ের রঙ গোলাপি বর্ণের, গণ্ডমালা দোষ যুক্ত, অন্ত্রঘটিত গোলযোগের জন্য বহু উপসর্গের প্রকাশ যেমন ক্রিমি ও ক্রিমি ঘটিত উপসর্গ সমূহ। মেজাজ খিটখিটে, পরিবর্তনশীল ক্ষুধা, দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ বা দাঁত কড় কড় করা। এবং এমনকি আক্ষেপ-দেখা যায় তৎসহ হঠাৎ করে চিঙ্কার, এবং হাত-পায়ের তীব্র ঝাঁকানি, এই ঔষধের কাজের মধ্যে পড়ে। সিনা রোগী ক্ষুধার্ত, খিটখিটে, কুৎসিত, এবং তাকে সর্বদা দোল দেওয়া হোক এইরূপ ইচ্ছা। আকস্মিক আঘাতের মত বেদনা দেখা দেয়। চর্ম অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
মন – অভদ্র। শিশু অত্যন্ত খিটখিটে, কেহ তাকে স্পর্শ করুক, শিশু তা চায় না। অথবা বদমেজাজী অথবা কেউ তাকে কোলে করুক তা পছন্দ করে না। বহুকিছু পেতে চায় কিন্তু যেই তাকে তা দেওয়া হয়, সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখান করে। অস্বাভাবিক জাতীয় জ্ঞানের উদ্ভব, রোগীর মনে হয় সে কোন পাপপূর্ণ বা অসৎকাজ করেছে।
মাথা – মাথার যন্ত্রণা, তৎসহ পর্যায়ক্রমে পেটের বেদনা। সামনের দিকে ঝুঁকলে উপশম।(মেজেরিয়াম)। চোখের পরিশ্রমে মাথার যন্ত্রণা।
চোখ – চোখের তারা বিস্ফারিত; দৃষ্ট বস্তু হলুদ দেখে। হস্ত মৈথুনের ফলে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি। পেটের উপসর্গজনিত কারণে ট্যারাদৃষ্টি। চোখের কষ্ট, বিশেষ করে বার্ধক্যজনিত কারণে যখন দৃষ্টি শক্তি কমতে শুরু করে। হৃদয়ের পেশীর স্পন্দন।
কান – কানের ভিতর গর্ত করার মত ও আচূড়ানোর মত বেদনা।
নাক – সর্বদা নাকের ভিতর চুলকায়। সর্বদা নাক খোঁটায় বা নাক ডলার প্রবণতা। রক্ত পাত না হওয়া পর্যন্ত নাক খোঁটে।
মুখমণ্ডল – গালের উপর দিকটা লালরঙের গোলাকার দাগ দেখা যায়। ফ্যাকাশে, উষ্ণ, তৎসহ কালচে বর্ণের গোলাকার রং চোখের চারিপাশে। ঠাণ্ডা ঘাম। মুখগহ্বরের চারিপাশ সাদাটে ও নীলচে বর্ণযুক্ত। ঘুমের মধ্যে দাঁত কড়কড় করে। হাত ও মুখমণ্ডলের পেশীর স্পন্দন।
পাকস্থলী – খাবার অল্প সময় পরেই ক্ষুধা পায়। ক্ষুধাও, পাকস্থলীর ভিতর খুড়ে ফেলার মত, দংশন করার মত অনুভূতি। পেটের উপরের অংশের বেদনা, সকালে ঘুম থেকে প্রথম জাগার সময় ও আহারের পূর্বে বৃদ্ধি। কিছু আহার করার পরে বা পান করার সঙ্গে সঙ্গে বমি ও উদরাময়। বমি তৎসহ জিহ্বা পরিষ্কার। একই সঙ্গে অনেক ও বিভিন্ন প্রকারের জিনিষ পেতে ইচ্ছা। মিষ্টি খেতে ভালোবাসে।
উদর – নাভির চারিপাশে মোড়ানোবৎ বেদনা। (স্পাইজেলিয়া)। পেট ফোলা ও শক্ত।
মল – মল সাদা শ্লেষ্মায় পূর্ণ, দেখতে অনেকটা ভাজা ভুট্টার টুকরো থাকার মত। মলত্যাগের পূর্বের পেটের ভিতর চিমটি কাটার মত শূলবেদনা। গুহ্যদ্বারের চারিপাশে চুলকানি (টিউক্রিয়াম)। ক্রিমি। স্যোবাডিলা; ন্যাপথেলিন; নেট্রামফস।
প্রস্রাব – ঘোলাটে সাদা; প্রস্রাব কিছুটা সময় রেখে দেবার পর সাদাবর্ণযুক্ত হয়। রাত্রে অসাড়ে প্রস্রাব।
স্ত্রীরোগ – বয়সন্ধি কালের পূর্বের জরায়ু থেকে রক্ত স্রাব।
শ্বাস-প্রশ্বাস – সকালের দিকে কাশির ধমকে শ্বাসন্ধের মত অবস্থা। হুপিং কাশি। মাঝে-মাঝেই তীব্র কাশির ধমক দেখা দেয়। কাশির শেষে আক্ষেপ। কাশি এত তীব্র যে কাশির ধমকে চোখ দিয়ে ও জল বেরিয়ে আসে এবং বুক্কাস্থিতে বেদনা শুরু হয়। রোগীর মনে হয় কোন কিছু ছিড়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাশি; বসন্তকালে রোগ ফিরে আসে এবং এর পরে কমে যায়। কাশির পর শ্লেষ্মা গিলে ফেলে। কাশির পরে গলা থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত গলগল শব্দ হয়। কাশির ধমক দেখা দিতে পারে এই ভয়ে শিশু কথা বলতে ও ঘুরে বেড়াতে চায় না। কাশির পরে করুন স্বরে কান্না, উদ্বেগ, বাতাসের জন্য ফাঁকাতে থাকে, এবং ফ্যাকাশে বর্ণযুক্ত হয়ে উঠে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ঝাঁকুনি, বিকৃতি ও কম্পন। আকস্মিক আঘাতের ন্যায় পক্ষাঘাতের সদৃশ অবস্থা। রোগী হঠাৎ করে লাফিয়ে উঠে যেন যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছে। শিশু এক দিক থেকে অপরদিকে হাত ছোঁড়ে। রাত্রিকালীন আক্ষেপ। ডানহাতের আঙ্গুলের হঠাৎ করে ভিতরের দিকে ঝাঁকুনি দেখা দেয়। শিশু আক্ষেপ অবস্থার মত পাগুলিকে টান করে রাখে। বাম পা সর্বদা আক্ষেপ যুক্ত ও গতিশীল।
ঘুম – শিশু ঘুমের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে; পেটের উপর চাপ দিয়ে শুয়ে থাকা। শিশুদের রাত্রিকালীন ভয় কান্না করে, চিৎকার করে, ভয় পেয়ে মুখ থেকে জেগে উঠে। হাই তোলার সময় কষ্ট। ঘুমের ভিতর কথা বলে ও চিৎকার করে। দাঁত কড়মড় করে।
জ্বর – শীত সামান্য। প্রচণ্ড তাপ, তৎসহ জিহ্বা পরিষ্কার। প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত; মূলবেদনা; শীতভাব সহ তৃষ্ণা কপালে, হাতে ও নাকে ঠাণ্ডা ঘাম।সিনার জ্বরের প্রকৃতি হল, মুখমন্ডল ঠাণ্ডা ও হাতগুলি গরম।
কমাবাড়া-বৃদ্ধি – কোন বস্তুর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকলে, ক্রিমি থেকে রাত্রে, সূর্যের উত্তাপে ও গ্রীষ্মকালে।
সম্বন্ধ-তুলনীয়-স্যান্টোনাইন-(প্রায়ই ক্রিমিজনিত উপসর্গে ব্যবহার হয়; সিনার মত একই লক্ষণযুক্ত; সিনার মত আকস্মিক সংঘাত তাপ বেদনা। দৃষ্টি সম্বন্ধীয় বিভ্রান্তি, দৃষ্টবস্তু হলুদ দেখে; বেগুনি বর্ণের আলোক চিনতে পারে না, রঙগুলির পার্থক্য বুঝতে পারে না। প্রস্রাব গাঢ় জাফরান রং বিশিষ্ট। আক্ষেপ ও নূতন পুরাতন পাকাশয়িক ও অন্ত্রঘটিত গোলযোগ, কোন কোন সময় একমাত্রা ঔষধে কমে যায়।(ফিজিওলজিক্যাল)।
হেলমিন্টো করটোস-ওয়ারম মস (অন্ত্রের ক্রিমির উপর খুবই শক্তিশালী ঔষধ হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে লুম্বিকয়েডের উপর। টিউক্রিয়াম ইগ্নেশিয়া; ক্যামোমিলা; স্পাইজেলিয়া।
দোষঘ্ন-ক্যাম্ফর; ক্যাপসিকাম।
শক্তি – ৩য় শক্তি। স্নায়বিক, উত্তেজনা প্রান শিশুদের ক্ষেত্রে ৩০ ও ২০০ শক্তি উপযোগী।
স্যান্টোনাইন ১x (খুবই সর্তকতার সঙ্গে) ৩x বিচূর্ণ প্রযোজ্য।
সিনা প্রধানতঃ শিশুদের ঔষধ, কিন্তু পূর্ণবয়স্কদের মধ্যেও যে-সকল অবস্থার কথা ক্কচিৎ ভাবা যাইতে পারে, তাহাতে উহা উপযোগী। এই ঔষধের সর্বত্র মানসিক ও শারীরিক সহ্যশক্তির অভাব একটি স্পষ্ট লক্ষণ। শিশু কিছু চায়, কিন্তু জানে না যে, কি চায়। শিশু স্পর্শে, এমনকি তাহার দিকে চাহিলে, অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখিলে বৃদ্ধি-লক্ষণযুক্ত হইয়া পড়ে। গাত্রচর্ম স্পর্শকাতর থাকে। মস্তক-ত্বক, ঘাড়ের পশ্চাদ্ভাগ এবং কাঁধ দুইটি ও বাহুদ্বয় এত স্পর্শকাতর থাকে যে, উহাতে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় একপ্রকার বেদনা অনুভূত হয়। এই অনুভবাধিক্য একাধারে শারীরিক ও মানসিক। ক্রিমির জন্য ব্যবহৃত হয়, এই আগেকার বাঁধা নিয়ম তোমাদের নোট বইতে লিখিয়া লইবার প্রয়োজন নাই, কারণ তোমরা যদি লক্ষণ দ্বারা পরিচালিত হওঁ, তাহা হইলে রোগী আরোগ্য হইবে এবং ক্রিমিগুলিও চলিয়া যাইবে।
এই রোগী সবকিছুতেই বিচলিত হয়, এমনকি সাধারণভাবে আহার করিলেও, খাওয়ার পর খারাপ বোধ করে। শিশু সাধারণভাবে নৈশ ভোজন করে, এবং সারারাত্রি স্বপ্ন দেখে, নিদ্রার মধ্যে ঝাঁকি দিয়া উঠে, উৎক্ষেপ বিশিষ্ট হয়, ভীত হইয়া জাগিয়া উঠে; সে যে স্বপ্ন দেখিয়াছে, উত্তেজিতভাবে তাহার কথা বলে, মনে করে, যেন উহা প্রকৃত, নিদ্রার মধ্যে যে-সব কুকুর, ছায়ামূৰ্ত্তি ভীতিপ্রদ বস্তু দেখিয়াছে, তাহাই দেখিতে থাকে। স্বপ্নবস্থা বাড়িয়া জাগ্রত কালেও থাকিয়া যায়। জাগিয়া উঠিয়া অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সহিত কাঁদে ও অভিযোগ করে। শিশু নাড়াচাড়ায় বৃদ্ধিযুক্ত হইলেও, ক্যামোমিলা’র ন্যায় কোলে উঠিয়া বেড়াইতে চায় এবং কাজে ব্যস্ত থাকিতে চায়। যদিও ঐ ঔষধের ন্যায় অতটা ক্ৰোধী নয়, তবুও কোলে চড়িয়া বেড়াইতে চাহে। প্রথমে দোলনা হইতে তুলিবার জন্য তাহাকে ধরিলে সে কাঁদিয়া উঠে, কারণ প্রথম স্পর্শে বৃদ্ধি হয়। এই স্পর্শে বৃদ্ধি এবং অনুভবাধিক্য, প্রলাপ, দীপ্তিহীন চক্ষু, আকৃষ্ট মুখমন্ডল এবং নাক ও মুখের চারিদিকে সাদা মন্ডলের সহিত আক্ষেপ ও জ্বর বর্তমান থাকে। পাকস্থলীর বিশৃঙখলায়, আহারের পর তাহার আক্ষেপ দেখা দেয়, তৎসহ মাথা পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয় এবং চক্ষু দীপ্তিহীন হইয়া পড়ে। পাকস্থলীতে অম্ল জন্মে এবং শিশু সর্বদা অম্ল দুধ তুলিতে থাকে, অম্ল বায়ুর ঢেকুর তুলিতে থাকে। শিশুর গাত্র হইতে টক গন্ধ বাহির হয়। মা বলেন “শিশু ক্রিমিসূচক নিঃশ্বাস ফেলে।” কিন্তু ক্রিমি না থাকিলেও ঐ একই প্রকার গন্ধ পাওয়া যায়। আক্ষেপকালে সংজ্ঞাহীনতা এবং মুখে ফেনা উঠা থাকে।
সর্দি লাগিলে বা নিদ্রা হইতে জাগিলে ঘ্রাণ, দৃষ্টি, ও স্বাদের বিভ্রান্তি ঘটে এবং সে প্রলাপ বকিতে থাকে। সে ভ্রান্ত দৃষ্টি লইয়া জাগিয়া উঠে। দ্রব্যাদির ভিন্ন-প্রকার স্বাদ ও গন্ধ পায়। স্বাদ ও স্পর্শজ্ঞান হয় বাড়িয়া উঠে, না হয় কমিয়া যায়।
*আভ্যন্তরিক মস্তকোদকগ্রস্ত কোন কোন রোগীর মাথা বড় হইয়া উঠে না, কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গহ্বরে এবং মেরুদন্ডের মধ্যবর্তী প্রণালীতে তরল পদার্থের বৃদ্ধি হয়, এরূপ রোগীর সিনা লক্ষণ থাকিতে পারে। সে মাথা চালিতে থাকে, পুনঃ পুনঃ শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়, নাড়াচাড়ায়, অত্যনুভূতিযুক্ত হয়,তাহাকে স্পর্শ করা যায় না, মেরুদন্ডে টোকা দিলেই মাথা ধরিয়া উঠে, সব সময়েই রৌদ্রে মাথা গরম ও পায়ের পাতা ঠান্ডা হইয়া উঠে। সিনা এইরূপ রোগীর কতকগুলিকে আরোগ্য করিবে। তাহারা কোনরূপ গোলমাল সহ্য করিতে পারে না, উহাতে আক্ষেপ দেখা দেয়। তাহাদিগকে শাস্তি দেওয়া চলে না, কারণ উহাতে আক্ষেপ দেখা দেয়। যদি মস্তিষ্কের তৃতীয় ও চতুর্থ গহ্বরের কোন একটি বন্ধ হইয়া যায়, তাহা হইলে রোগীকে আরোগ্য করা যায় না; আভ্যন্তরিক চাপ চলিতে থাকে এবং উহাতেই তাহার মৃত্যু হয়। এইরূপ সহজাত অবস্থার আরোগ্য অসম্ভব।
চক্ষুর অত্যনুভূতির সহিত অপ্রবল শিরঃপীড়া। অপরের আক্রমণের পূর্বে বা পরে, এবং সবিরাম জ্বরের পরে শিরঃপীড়া, শিরঃপীড়ার পূর্বে ও সময়ে মাথার খুলিতে স্পর্শকাতরতা। সিনার শিশুদের চুল আঁচড়ান যায় না এবং সিনার রোগিণীরা মাথা ও স্নায়ুমন্ডলের রোগে চুল ঝুলাইয়া রাখেন।
হস্ত-পদাদির শীতলতা, চর্মের কিছুটা চুলকানিও আছে, কিন্তু মস্তকলক্ষণই প্রধান। মনের সামান্য গোলযোগ হইলেই, সে হজম করিতে পারে না এবং তাহার উদরাময় হয়। লক্ষণগুলি গ্রীষ্মকালে বাড়ে, উত্তাপ মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে, উহার ক্রিয়ার ব্যাঘাত জন্মায় এবং সাথে সাথে সবুজ পিচ্ছিল মল, অথবা সাদা মলযুক্ত উদরাময় দেখা দেয় এবং শিশু বমি করিতে থাকে। সিনায় মস্তিষ্ক লক্ষণের প্রাধান্য। মস্তিষ্ক হইতে নির্দেশ আসে না এবং তাই পাকস্থলীর লক্ষণগুলি জাগিয়া উঠে এবং ক্রিমি জন্মে। যদি রোগী আরোগ্য হয়, তাহা হইলে স্বাস্থ্যকর আমাশয়িক রস ক্রিমিকে তাড়াইয়া বাহির করিয়া দিবে।
শিশু এপাশ-ওপাশে মাথা চালিতে থাকে। সময়ে সময়ে মাথা এপাশ-ওপাশ করিলে যন্ত্রণা কিছুটা কম হয়। তোমরা অত্যনুভূতিযুক্তা স্ত্রীলোকদের মধ্যেও ইহা দেখিতে পাইবে, তাহারা চুল ঝুলাইয়া রাখে, মাথা চালায় উপশম পায়, কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে লেখা থাকিলেও ঝাঁকাইলে উপশম পায় না, কারণ ঝাঁকুনি অত্যন্ত প্রবল ব্যাপার।
চক্ষুর সম্মুখে নানাপ্রকার বর্ণ দেখে। বস্তুসকল হলদে দেখায়। ইহা অত্যনুভূতিযুক্তা স্ত্রীলোকদিগের, অত্যনুভূতিযুক্তা স্নায়বিক প্রকৃতি স্ত্রীলোকদিগের পক্ষে উপযোগী। তাহারা চক্ষুর কাজ করিলেই খারাপ বোধ করে, সেলাই করিলে মাথার ও চক্ষে যন্ত্রণাযুক্ত হয়। এই বিষয়ে, অর্থাৎ চক্ষুর অতিচেষ্টাজাত লক্ষণে ইহা ‘রুটা’র অনুরূপ। ইহা যুবতী স্ত্রীলোকদিগের পক্ষে তত বেশী উপযোগী হয় না, কিন্তু যখন মধ্যবয়স্কা স্ত্রীলোকদিগের দূরদৃষ্টি রোগ দেখা যায়, অর্থাৎ সূক্ষ্ম কাজ ও ছাপা জিনিষ দেখিবার জন্য চক্ষুর অতিচেষ্টার প্রয়োজন হয়, তখনই উপযোগী হইয়া থাকে। চক্ষু মুছিয়া লইলে, অপেক্ষাকৃত ভাল দেখিতে পায়। শয্যা হইতে উঠিলে চক্ষুর সম্মুখে কাল দেখে, নানা বর্ণ দেখে, বিশেষভাবে হলদে বর্ণ দেখে। ক্রিমি বর্তমান থাকিলে টেরা দৃষ্টি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উহা মস্তিষ্করোগজাত; কারণ ক্রিমি উহার সহিত সম্পর্কযুক্ত।
মুখ-বসা, বিবর্ণ; নাকের পাখা দুইটি ভিতরদিকে আকৃষ্ট মুখের চারিদিকে নীলমন্ডল অথবা ধূসরবর্ণ ডোরা। মাতারা বলেন, “উহা ক্রিমির একটি নিশ্চিত লক্ষণ। শিশু হাত দিয়া নাক ঘষে, বালিশের উপর অথবা ধাত্রীর কাধের উপর নাক ঘষে। শিশু যে-পয়ন্ত না রক্ত পড়ে, আঙ্গুল দিয়া নাক খুঁটে। স্পষ্ট রুগ্ন চেহারা থাকে, কিন্তু উহা মস্তিষ্করোগ; কেন্দ্রগতরোগ নির্দেশ করে। মস্তিষ্ক লক্ষণই সর্বপ্রধান এবং সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়। যদি ভয় পায়, বেত মারা হয়; অথবা ভৎসনা করা হয়, তাহা হইলে, পাকস্থলীর গোলযোগ দেখা দেয়। তাহাদের অজীর্ণ রোগ ধরে এবং ক্রিমি উৎপন্ন হয়, মুখের চারিপাশে সাদা বা নীল বর্ণের আভা দেখা দেয়, নিদ্রাবস্থায় দাঁত কড়মড় করে। দাঁত উঠিবার পূর্বে হইলে, শিশু চিবানর ন্যায় মুখ নাড়ে, এপাশ-ওপাশে মুখ নাড়ায়। ঠান্ডা বাতাসে ও ঠান্ডা জলে দাঁতে অত্যনুভূতি দেখা দেয়। নাক ও মুখ হইতে রক্তপাত হয়। তরল পদার্থ গিলিতে পারে না, আক্ষেপের পূর্বে এবং পরে তরল পদার্থ গলনলী দিয়া গলগল শব্দ করিয়া নামিতে থাকে। যখন মস্তক-লক্ষণ বর্তমান থাকে, তখন দুধ ও জল গলনলী দিয়া গলগল করিয়া নামিবার সময় একপ্রকার কোকোঁ শব্দ হয়। মস্তিষ্ক লক্ষণের সহিত উদরাময় ও বমনে উহা বর্তমান থাকে। আর্সেনিক’ ও ‘কুপ্রামেও গিলিবার সময় গলনলীতে গলগল শব্দ হওয়া লক্ষণটি বিশেষভাবে আছে। জিহ্বার কোরিয়া রোগের ন্যায় কম্পন দেখা দেয়।
শিশু বা পূর্ণবয়স্ক কাহারও খাইয়া তৃপ্তি হয় না, সে তখনও ক্ষুধার্তই থাকে। তোমরা আশা কর যে, বমনের পর খাদ্যে অপ্রবৃত্তি দেখা দিবে, কিন্তু সিনাতে পূর্বের ন্যায় সেই শূন্যতা ও ক্ষুধাবোধ থাকিয়া যায়। যখন আহারের পর পাকস্থলীতে কামড়ানির ন্যায় যন্ত্রণা হয় বা যখন শিশু পেটে যত ধরে তত খাইয়া লয়, তখনও সে আর এক বোতল দুধের জন্য কাঁদিতে থাকে অথবা খাদ্য তুলিয়া ফেলিয়া বা বমি করিয়া, পাকস্থলীটি খালি করিয়া লয়, এবং তারপর আরও পাইবার জন্য হাত বাড়াইয়া ঘ্যানঘ্যান করে,—সিনার অবস্থা এইরূপ। মদ্যপানের সময়, উহা যেন ভিনিগার, এরূপভাবে কাঁপিতে থাকে।
উদর কঠিন ও স্ফীত। প্রায়ই সিনার শিশু উদরের উপর ভর দিয়া শুইবে এবং ঐভাবেই নিদ্রা যাইবে। যদি তাহাকে কোন পার্শ্বে ফিরাইয়া দেওয়া হয়, সে, পুনরায় জাগিয়া উঠিবে। যখন সে মায়ের কোলে থাকিবে, তখন মায়ের কাধের উপর পেট রাখিয়া নিদ্রা যাইবে, কিন্তু মা যখন তাহাকে তাঁহার দিকে পাশ ফিরাইয়া শোয়াইবেন, তখনই সে জাগিয়া উঠিবে। যদি তুমি এমন শিশু পাও, যাহার প্রচুর, বেগে নির্গত, অতি দুর্গন্ধ মল নির্গত হইতেছে এবং উপুড় হইয়া শুইলে উপশম পাইতেছে, কিন্তু অপর কোনভাবে শুইলেই আর একবার মলত্যাগ হইতেছে, তাহা হইলে ‘পডোফাইলাম’ ঔষধ হইবে। উহাতে সিনা চলিবে না। সিনার মল খুব প্রচুর নহে এবং প্রায়ই সাদা।
প্রাতঃকালে গলরোধকর কাশি। রাত্রে শুষ্ক খুকখকে কাশি। হুপিং কাশি।
স্পর্শে অত্যনুভূতিযুক্ত কম্পন, আক্ষেপ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নৰ্ত্তন। আক্ষেপিক প্রকৃতির হাই তোলা। শিশু হয় উপুড় হইয়া শুইবে, নচেৎ তাহাকে অবিরত নাড়াইতে হইবে।