বাতের ব্যথা, এক গাঁট থেকে অন্য গাঁটে, শরীরের এক স্থান হতে অন্য স্থানে, উপরের দিক হতে নিচের দিকে অথবা নিচের দিক হতে উপরের দিকে চলে বেড়ায়। |
গ্রীষ্মকালে ছিঁড়ে ফেলার মত ও শীতকালে সূচ ফোটানোর মতো ব্যথা। |
সমস্ত শরীরে স্পর্শানুভূতি, বিশেষত আক্রান্ত স্থানে সামান্য স্পর্শ করলে অথবা নড়লে ব্যথা। |
ঘ্রানশক্তি তীক্ষ্ণ্ন, রান্নার গন্ধ, বিশেষত মাছ ভাঁজার গন্ধ বা খাদ্যদ্রব্যের গন্ধে ভয়ানক বমিভাব। |
মুখের লালা ও প্রস্রাব বেশী হলে পায়খানার পরিমান কম হয়, আবার পায়খানা বেশী হলে লালা ও প্রস্রাবের পরিমান কম হয়। |
হাতের নখের নিচে ঝিনঝিনি অনুভূতি। |
বাত ও গিটবাতগ্রস্ত রোগী যারা মোটাসোটা বলিষ্ঠ গঠন; বয়স্ক লোকেদের অসুখে উপযোগী।
বাহ্যিক কারণ — গোলমাল, আলো, উগ্রগন্ধ, কাহারও ছোয়ায়। অভদ্র আচরণে রোগী রাগে খেপে যায়, সহ্য করতে পারে না (নাক্স-ভ); যন্ত্রণা অসহ্য মনে হয়। শোক পেয়ে বা অন্যের খারাপ ব্যবহারে রোগ (ষ্ট্যাফিস) হয়।
যন্ত্রণা — টেনে ধরা মত, ছিড়ে ফেলা মত, চেপে ধরেছে এমন, গরমকালে মৃদু ব্যথা বা ওপর ওপর ব্যথা অনুভব কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঐ ব্যথা হাড় বা গভীর মাংসপেশীতে আক্রমণ করে যন্ত্রণা বাদিক হতে ডানদিকে যায় (ল্যাকে)।
সুতীব্র ঘ্রাণশক্তি, রান্না করার মশলার গন্ধে গা বমিবমি করে ও মূর্হিত হয়ে পড়ে বিশেষতঃ যদি মাছ ডিম বা চর্বিযুক্ত মাংস রান্না হতে থাকে (আর্স, সিপিয়া); রাত জাগার কুফল।
খাদ্যে বিতৃষ্ণা, খাবার দেখলে বা বিশেষতঃ তার গন্ধে অভক্তি আসে।
পেটে অত্যন্ত বায়ু জমে মনে হয় যেন পেট ফেটে যাবে। পাকস্থলী ও পেটে জ্বালা বা বরফের মত ঠান্ডাভাব। শরৎকালে আমাশয়-সাদা ছেড়াছেড়া, চাচানির মত সাদা আম বার হয় (ক্যান্থা, এসিড-কার্ব)।
প্রস্রাব – কালচে, অল্প হয় বা বন্ধ হয়ে যায়, ফোঁটা ফোঁটা পড়তে থাকে, সাদা তলানি পড়ে, রক্তাক্ত, বাদামি রঙের, কালকালির মত তাতে চাপবাধা পঁচা রক্ত থাকে, এলবুমিন, সুগার পাওয়া যায় (প্রস্রাব পরীক্ষায়)। আক্রান্ত অঙ্গে ছোয়া লাগান অসহ্য।
হাড়ের সন্ধিগুলোতে বাতবেদনা, সন্ধিগুলো ছোঁয়ায় বা পায়ের আঙুলে হোঁচট লাগলে যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে।
সম্বন্ধ — তুলনীয় গিটেবাতে যদি রস জমে ও গ্রীষ্মকালে বাতরোগে ভুগলে ব্রায়েরি সাথে তুলনীয় ।
এপিস ও আর্সেনিক প্রয়োগে ফল না পেলে এ ওষুধ অনেক সময় শোথ আরোগ্য করে।
বৃদ্ধি – মানসিক উত্তেজনা বা অবসাদে, অত্যধিক পড়াশোনায়, রান্নার গন্ধে ।
সঞ্চালনে বৃদ্ধি যেমন চুপ করে শুয়ে থাকলে বমিভাব কিছুটা কমে কিন্তু নড়াচড়ায় আবার নতুন করে বমি শুরু হয় (ব্রায়ো)।
শক্তি – ৬, ৩০, ২০০।
এই ঔষধটি পেশীতন্তু সকল, অস্থি আবরক ঝিল্লী ও সন্ধিস্থানের স্নেহষ্যানী ঝিল্লী সমূহের উপর বিশেষ ভাবে কার্যকরী হয়। এই ঔষধের একটি নির্দিষ্ট কাজ হল, গেঁটে বাতজনিত রোগের চরম অবস্থায় উপশম প্রদান করা। সন্ধিস্থানের পুরাতন বাত রোগে এটি আরো ভাল কাজ করে বলে মনে করা হয়। আক্রান্ত অংশ লালচে, উত্তপ্ত ও স্ফীত। ছিড়ে ফেলার মত যন্ত্রণা; সন্ধ্যায়, রাত্রে ও স্পর্শে বৃদ্ধি, কোন কিছুর উপর পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঠোক্কর মারলে তীব্র বেদনা অনুভব করে। সর্বদা প্রচন্ড দুর্বলতা। আভ্যন্তরীণ শীতলতা এবং হিমাঙ্গ পরাবস্থার প্রবনতা। প্রচন্ড পড়াশুনা ও রাত্রি জাগার কুফল সমূহ। শরীরের একদিক দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ন্যায় সংঘাত। ঘাম বসে যাওয়ার কুফল সমূহ। ছোট ইঁদুরের স্বপ্ন দেখে।
মাথা — মাথার যন্ত্রনা, প্রধানতঃ কপাল ও রগের দিকে, কিন্তু এছাড়াও মাথার পিছনের অংশে ও গ্রীবা দেশে বেদনা হয়। বিকালের দিকেও সন্ধ্যায় বৃদ্ধি।
চোখ – চোখের তারা দুটি অসমান; বামদিকের চোখের তারা সঙ্কুচিত। দৃষ্টিশক্তির ক্ষমতা বিভিন্ন প্রকারের। মুক্ত বাতাসে অশ্রুস্রাবের বৃদ্ধি; চোখে তীব্র ছিড়ে ফেলার মত যন্ত্রনা। পড়ার পরে অস্বচ্ছ দৃষ্টি। চোখের সামনে ছোপ ছোপ দাগ সমূহ।
কান — কানদুটির ভিতরে চুলকানি, ডানদিকের কানের পাতায় নিম্নাংশে তীব্র তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। মুখমন্ডল — মুখমন্ডলের পেশী সমূহের বেদনা, বেদনা চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়। সুড়সুড় করেও শোথ যুক্ত স্ফীতি; গাল লালচে, উত্তপ্ত ও ঘামে ঢাকা থাকে। যন্ত্রনা তৎসহ প্রচন্ড খিটখিটে। ক্যামোমিলা, ডানদিকের নিম্নচোয়ালের পিছনের অংশে বেদনা।
পাকস্থলী — মুখ গহুর শুষ্ক, জিহ্বায় জ্বলন, মাঢ়ী ও কাঁধে যন্ত্রনা। পিপাসা; পাকস্থলীর বেদনা তৎসহ পেট ফাঁপা। খাবারের গন্ধে বমিবমিভাব, এমনকি রোগী মূর্চ্ছা পর্যন্ত যায়, বিশেষ করে মাছের গন্ধ। প্রচুর লাল স্রাব। শ্লেষ্মা, পিত্ত ও অভুক্ত খাদ্যবস্তুর বমন, যে কোন প্রকার নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। পাকস্থলীর ভিতর প্রচন্ড ঠাণ্ডা ভাব। বহু প্রকারের খাদ্যবস্তুর জন্য স্পৃহা। কিন্তু যে সকল খাদ্যবস্তুর গন্ধপায় সেই গুলি প্রত্যাখ্যান করে। এবং সঙ্গে সঙ্গে বমি বমিভাব দেখা দেয়। গেঁটে বাতযুক্ত পাকাশয়িক শূলবেদনা। পাকস্থলীতে জ্বালা অথবা বরফের মত ঠাণ্ডা অনুভূতি। এবং সমগ্র পেটে বুজবুজ করে ওঠে এবং মদ জাতীয় পানিয়ের জন্য পিপাসা। অস্ত্রের আড়াআড়ি অংশ বা ট্রানভার্স কোলনের বেদনা।
উদর — উদর স্ফীতি তৎসহ বায়ু সঞ্চয়, পাগুলি সোজা করে প্রসারিত করতে পারে। পেট ডাকা, যকৃত স্থানে বেদনা। অন্ত্রের অগ্রবর্তী অংশ বা অ্যাসেন্ডিং কোলন ও সিকাম অংশের ব্যাপক স্ফীতি। পেটপূর্ণ ও অবিরাম পেটের ভিতর গুড়গুড় শব্দ। উদরী।
মল – যন্ত্রনাদায়ক, অল্প, স্বচ্ছ, জেলির মত শ্লেষ্মা যুক্ত; যন্ত্রনা, যেন মনে হয় মলদ্বার ছিদ্র করে খোলা হয়েছে। তৎসহ মলদ্বারের নির্গমন। শরৎকালীন আমাশয়; মলের ভিতর ছোট-ছোট সাদা রঙের ফালির মত টুকরো প্রচুর পরিমাণে থাকে। বারে বারে মলদ্বারে চাপ বা কোঁথ দেয়। মনে হয় মলদ্বারে মল রয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তা বার করতে পারে।
স্ত্রীরোগ – যৌনাঙ্গের চুলকানি। শাসক ঋতুস্রাবের পরে উরুস্থানে ঠাণ্ডা অনুভূতি। যোনি কপাট ও ভগাঙ্কুরে স্ফীতির অনুভূতি।
প্রস্রাব – কালো, অল্প অথবা মূত্র রোধ। রক্তমিশ্রিত, বাদামি বর্নের, কালো, কালির মত দেখতে। প্রস্রাবে পচারক্তের জমাট বাঁধা ঢেলা। অ্যালবিউমিন ও সুগার থাকে।
হৃদপিন্ড – হৃদপিন্ড স্থানে উদ্বেগ। হৃদস্পন্দন অনুভব করা যায় না। হৃদাবরক ঝিল্লীর প্রদাহ, তৎসহ তীব্র বেদনা। শ্বাসরোধ ও শ্বাসকষ্ট, নাড়ীসূতার মত। হৃদস্পন্দনের শব্দ ক্রমশঃ দুর্বল হতে থাকে, নাড়ীর গতি মন্থর।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – বাম বাহুর উপর দিয়ে তীক্ষ্ম বেদনা নীচের দিকে নেমে আসে। অঙ্গে ছিড়ে ফেলার মত বেদনা বিশেষ করে উষ্ণ আবহাওয়ায় এবং ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় হুল ফোটার মত বেদনা। হাতে এবং কজিতে চিনচিন করে, হাতের আঙ্গুলের ডগা অসাড়। উরুস্থানের সামনের দিকে বেদনা। ডানদিকের পায়ের প্রসারক পেশীর প্রসারণ ক্ষমতার লোপ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খঞ্জ, দুর্বল ও সুড় সুড় করে। যন্ত্রনা সন্ধ্যায় ও উষ্ণ আবহাওয়ায় বৃদ্ধি পায়। সন্ধিস্থান আড়াল ও জ্বর জ্বর ভাব; পরিবর্তনশীল বাতরোগ; বেদনা রাত্রে বৃদ্ধি পায়। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের প্রদাহ। গোড়ালির গেঁটে বাত। কিছুতেই ঐ স্থান স্পর্শ করতে চায় না বা নড়াচড়া করতে চায় না। হাতের নখের ভিতর সুড়সুড় করে। হাঁটুগুলি পরস্পর জড়িয়ে যায় এবং এর জন্য রোগী প্রায় হাঁটতেই পারে না। শোথ যুক্ত স্ফীতি এবং পা দুটি ও পায়ের পাতার শীতলতা।
পিঠ – কোমর প্রদেশে ও কোমর ও ত্রিকাস্থি স্থানে কনকনানি। কোমরে আড়াআড়ি ভাবে মৃদু বেদনা। কোমরের বেদনা। বিশ্রাম ও চাপে উপশম।
চামড়া – মুখমন্ডল ছোট ছোট ফুসকুড়িতে ঢাকা থাকে। গোলাপি রঙের ছোপ ছোপ দাগ পিঠে, বুকে ও উদর স্থানে। আমবাত।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়কাল; নড়াচড়া, ঘুম কমে যাওয়া, সন্ধ্যায় খাবারের গন্ধে, মানসিক পরিশ্রমে।
উপশম — সামনের দিকে ঝুঁকলে।
সম্বন্ধে – দোষঘ্ন-থুজা, ক্যার, ককিউলাস, নাক্স, পালসেটিলা।
তুলনীয় — কলচিসাইন(অন্ত্রের প্রদাহ, তৎসহ ফালি ফালি শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর টুকরো বেরিয়ে নাকে; ডান দিকের হাতে আক্ষেপের মত ঝাঁকুনি; বাতজ জ্বর, গেঁটে বাত, এন্ডো পেরিকার্ডাইটিস, প্লুরিসি, আর্থাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহ, সন্ধিবাতের ক্ষেত্রে সন্ধিস্থানের বিকৃতি ঘটায় প্রথমাবস্থায়; বাতরোগের তীব্র বেদনায় ৩x বিচূর্ণ প্রযোজ্য)। এছাড়াও কার্বোভেজ, আনিকা, লিলিয়াম, আর্সেনিকাম, ভিরেট্রাম।
শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি।
চলতি চিকিৎসার কলচিকাম গেঁটেবাত রোগে এত বেশী ব্যবহৃত হইত যে, তাহা বাস্তবিকই বিস্ময়কর। সকল প্রাচীন গ্রন্থেই ইহাকে ঐ রোগে ব্যবহার করিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। কলচিকাম যে গেঁটেবাতের বহু অবস্থায় উপযোগী হয়, তাহা পরীক্ষা দ্বারাও প্রমাণিত হইয়াছে। তরুণ বাত এবং ইউরিক এসিড ধাতু; স্ফীতিবিশিষ্ট ও স্ফীতিহীন সাধারণ বাত। কিন্তু কি রকমের গেঁটেবাত বা কি রকমের বাত রোগে ইহা দিতে হইবে চলতি চিকিৎসা প্রণালীতে তাহা বলা হয় নাই। উহা ছিল অভিজ্ঞতাপ্রসূত ঔষধ। “গেঁটেবাত হইয়াছে, কলচিকাম দিয়া দেখ।” এই ঔষধ বিফল হইলে রোগীর যে কিরূপ ব্যবস্থা হইবে সে সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই উঠে নাই। উহা ছিল “এই ব্যবস্থাপত্র লও, ও উহা চালাইতে থাক।” কিন্তু এইভাবে ঔষধ চালাইতে চালাইতে রোগী ক্রমশঃ খারাপ হইয়া পড়িত এবং অন্য চিকিৎসকের হাতে চলিয়া যাইত। একথা সত্য যে, কলচিকাম গেঁটেবাত অবস্থায় উপযোগী। ঠান্ডা ভিজে আবহাওয়া উপস্থিত হইলে, মূত্র-প্রবাহ কম হইয়া যায়, মূত্রের পরিমাণ কমিয়া যায় এবং মূত্রমধ্যস্থ কঠিন পদার্থের হ্রাস ঘটে। কলচিকামের পরীক্ষাতেও এইরূপ ঘটিয়া থাকে এবং উহা বহুবার প্রমাণিত হইয়াছে। ভালরূপেই জানা আছে যে, ঐরূপ অবস্থায় গেঁটেবাত অবস্থা উপস্থিত হয় অথবা বৰ্দ্ধিত হয়। যদি মূত্রমধ্যস্থ কঠিন পদার্থগুলি কমিয়া যায়, যদি তাহারা মূত্রের সহিত নির্গত না হইয়া যায়, কোন না কোন ব্যাপার ঘটিবেই এবং গেঁটেবাত অবস্থাই আসিয়া থাকে।
কলচিকামের বৃদ্ধি ঠান্ডা ভিজে আবহাওয়ায়, বর্ষাকালীন শীতল বৃষ্টিপাতে। যে-কোন জিনিষে দুর্বলতা আসে, ইহা তাহা দ্বারাই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ইহা গ্রীষ্মকালে অত্যধিক উত্তাপে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়; ইহাতে গ্রীষ্মকালীন বাত আছে; উত্তাপে মূত্র-প্রবাহ কমিয়া যায় অথবা মূত্রস্থ কঠিন পদার্থের পরিমাণ কমিয়া যায়।
এই ঔষধের আগাগোড়া, বাতের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ,উহার এক সন্ধি হইতে আর এক সন্ধিতে, একপার্শ্ব হইতে আর একপার্শ্বে, নিম্ন হইতে ঊর্ধ্বদিকে বা উর্ধ্ব হইতে নিম্নদিকে সরিয়া যাইবার প্রবণতা। স্ফীতির সহিত বা স্ফীতিবিহীন বাত অবস্থা, প্রথমে এখানে, তারপরে সেখানে, একস্থান হইতে অন্যস্থানে সরিয়া বেড়ায়। আর একটি বিশেষ লক্ষণ সৰ্ব্বাঙ্গীণ শোথ অবস্থা । যখন হাত পা ফুলে, তখন ঐস্থানে চাপ দিলে গর্ত হইয়া যায়। উদরগহ্বরে শোথ, হৃৎবেষ্টের, বক্ষাবরক ঝিল্লীর, স্নৈহিক কোষসমূহের শোথ। স্ফীতি,—প্রাদাহিক ও বাতজনিত, স্ফীতি- শোথজনিত এবং তৎসহ বিবর্ণমূত্র। মূত্র বেশীই হোক আরকমই হউক, উহা বিবর্ণ হইবেই।
পেশীর বাত, এবং সন্ধিস্থানের শ্বেততন্তসমূহের বাত। বাতরোগ কিছুদিন যাবৎ চলিতে চলিতে, হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত রোগে পরিসমাপ্ত হয়। যখন হৃৎরোগে হৃৎকপাটিকার দোষ উপস্থিত হয়, কর্মব্যস্ত চিকিৎসকের মনে প্রথমেই উদিত হয় বাতরোগের ইতিহাসের কথা। আমাকে বলিতে হইতেছে মেটিরিয়া মেডিকার আলোচনার এই অংশটি রোগীদেহে পৰ্যবেক্ষণের উপরেই প্রতিষ্ঠিত। কর্মব্যস্ত চিকিৎসককে পুস্তক ব্যতীতই শিক্ষা করিতে হয়, অবশ্য চিকিৎসা সাহিত্যেও তাঁহার জ্ঞান থাকা চাই, তাহা হইলে পড়িয়া ও দেখিয়া তিনি রোগের সাধারণ প্রকৃতি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করিতে পারিবেন। যখন তিনি রোগীর ইতিহাস শুনেন এবং রোগীর শরীর পরীক্ষা করেন, তখন তিনি বুঝিতে পারেন বর্তমান রোগটি কিভাবে অগ্রসর হইবে। তিনি জানেন, বর্তমান ক্ষেত্রে কি আশা করা চলিতে পারে। তিনি বুঝেন যে, রোগটির সাধারণ প্রকৃতি কিরূপ এবং তৎক্ষণাৎ যাহা অদ্ভুত ও অস্বাভাবিক, তাহা বাছিয়া লইতে পারেন। তিনি যদি না জানেন যে, সাধারণ লক্ষণ বলিতে কি কি, তাহা হইলে অদ্ভুত লক্ষণগুলিও ধরিতে পারেন না। সুতরাং তোমাদের লক্ষণতত্ত্ব, নিদানশাস্ত্র, রোগনির্ণয়তত্ত্ব প্রভৃতি এই সব সম্বন্ধে অনেক কিছু বলিলেই, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় তোমরা যতই অভিজ্ঞতা লাভ করিবে, ততই তোমরা এসব সম্বন্ধে সূক্ষ্মতর জ্ঞানলাভ করিতে পারিবে; তোমাদের মেটিরিয়া মেডিকা তোমাদিগকে আরও যন্ত্রের সহিত পৰ্যবেক্ষণ করিতে শিক্ষা দিবে। মেটিরিয়া মেডিকা পড়া লোক ঔষধের স্বতন্ত্রীকরণের জন্য অতি সামান্য ব্যাপারও বাছিয়া লইতে পারেন। সুতরাং একথা বলা যাইতে পারে যে বহু বৎসর ধরিয়া রোগ নিরীক্ষণ, মেটিরিয়া মেডিকার সহিত মিলাইয়া রোগগ্রস্ত ব্যক্তিতে লক্ষ্য করা, তোমাদের মনের সম্মুখে মনুষ্য সমাজের রোগসমূহ সম্বন্ধে চলতি প্রণালীতে চিকিৎসা করা অপেক্ষা সূক্ষ্মতর জ্ঞানের বিকাশ করিয়া দিবে। চলতি প্রণালীর চিকিৎসার নিরীক্ষণ করার শক্তিকে অসাড় করিয়া দেয়।
এই ঔষধের সকল রোগই সঞ্চালনে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। যন্ত্রণাদায়ক রোগসমূহ, মাথার রোগ, অন্ত্রাদির রোগ, যকৃতের রোগ, পাকস্থলীর রোগ সমস্তই নড়াচড়ায় খারাপ হয়। নড়াচড়ায় এত বৃদ্ধি হয় যে, সে নড়িতে ভয় করে। ব্রায়োনিয়া’য় যেরূপ দেখা যায়, এই লক্ষণটি এক্ষেত্রেও দ্রুপ স্পষ্ট থাকে। নড়িতে অপ্রবৃত্তি, নড়িলে বৃদ্ধি। ঠান্ডায় বৃদ্ধি, ঠান্ডা ভিজা আবহাওয়ায় বৃদ্ধি। সে শীতার্ত এবং ঠান্ডায় অত্যনুভূতিবিশিষ্ট। অধিকাংশ বাতরোগীই ঠান্ডায় অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে, অবশ্য কয়েকটি ব্যতিক্রমও আছে। “লিডামে’র রোগীর চেয়ে আর বড় বাতরোগী নাই। তাহার মধ্যে দুই রকম অবস্থাই আছে। যদিও সে শীতল থাকে, তাহার যন্ত্রণা শীতলতাতেই উপশম হয়। কলচিকামে যন্ত্রণা উত্তাপে, বস্ত্রাদি জড়াইয়া রাখিলে, উষ্ণ হইলে উপশমিত হয়। তাহার যন্ত্রণা যেরূপেই হউক, নড়িলে তাহার বৃদ্ধি হয়। এই ঔষধের রোগগুলিতে অত্যন্ত অবসন্নতা থাকে। টাইফয়েড প্রকৃতির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অতি দুর্বলতা, অতি অবসন্নতা, স্নায়বিক অবসন্নতা। ব্রাইটাখ্য পীড়ার দিকে অগ্রসর হইতেছে, এরূপ ব্যক্তির ন্যায় ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা। সে কিছুকাল ধরিয়া দুৰ্বল হইতেছে এবং বিবর্ণ ও মোমবর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। তাহার হাতে-পায়ে চাপ দিলে গর্ত হইয়া যায়। মূত্র পরীক্ষা কর উহাতে এলবুমেন পাইবে। এলবুমেন যোগে মূত্র: কালির ন্যায় কাল হইয়া যায়। টিসুসমূহের অস্বাভাবিক উপদাহিতা, ক্ষততা, স্পর্শে অনুভূতিপ্রবণতা, সঞ্চালনে অনুভূতি প্রবণতা থাকে; সন্ধিগুলিতে এবং সমস্ত শরীরে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। স্পর্শে ও সঞ্চালনে বৈদ্যুতিক কম্পনের ন্যায় শরীরে একপ্রকার যন্ত্রণাপূর্ণ অনুভূতি উপস্থিত হয়। অত্যন্ত দুর্বলতা ও অবসন্নতা। শ্বাসকৃতা দেখা না দিয়া সে সামান্যমাত্র পরিশ্রমও করিতে পারে না। সে শুইয়া থাকিতে বাধ্য হয়, নড়িতে চায় না, শক্তি লোপ পাইতে থাকে, এত ক্লান্ত ও অবসন্ন থাকে যে, সঞ্চালনে ও পরিশ্রমে তাহার মনে হয়, যেন প্রাণটি বাহির হইয়া যাইবে। ব্রাইটাখ্য পীড়ার দিকে, একটানা জ্বরের দিকে যাইতে থাকিলে সাধারণতঃ এইরূপ হইয়া থাকে। মূত্রপিন্ডের রোগ, এবং যকৃতের রোগ। দুৰ্বলতা, অবসন্নতা, উৎকণ্ঠা। পেশীগুলি ঝাঁকি দিয়া উঠে এবং দেহের মধ্য দিয়া যেন বিদ্যুৎতরঙ্গ প্রবাহিত হইয়া যায়। দীর্ঘকাল পরীক্ষায় এবং বিষক্রিয়ায় পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা গিয়াছিল। চোয়াল ঝুলিয়া পড়ে, পেশীগুলি থলথলে ও শিথিল হয়। সে অবসন্নভাবে চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে এবং তাহার অবসন্নতা এত বেশি হয় যে, টাইফয়েড রোগীর ন্যায়, দুষ্ট প্রকৃতির বাতরোগীর ন্যায় এবং একটানা জ্বরের রোগীর ন্যায় বিছানার নীচের দিকে গড়াইয়া পড়ে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের, বিশেষ কোন অঙ্গের বা বিশেষ দেহাংশের পক্ষাঘাত।
কলচিকামের রোগী প্রায় সর্বদাই, এমনকি জ্বরের মধ্যেও ঘামিতে থাকে এবং সেই ঘাম প্রায়ই শীতল। দেহের উপর দিয়া বায়ুপ্রবাহ বহিয়া গেলে ঐ ঘাম শুকাইয়া যায় এবং অঙ্গাদির পক্ষাঘাতিক অবস্থা আসে। মূত্রনাশ এবং মূত্ররোধ। ইহা তাহার রোগের গভীর প্রকৃতি এবং ধারার বর্ণনা করিতেছে। দুষ্ট প্রকৃতির রোগ, দীর্ঘস্থায়ী রোগ, রোগের সহিত স্নায়বিক কম্পন এবং অত্যন্ত দুর্বলতা। তরুণ রোগ চলিয়া যাইবার পর অত্যন্ত দুর্বলতা এবং শোথ দেখা দেয়। আরক্ত জ্বরের পরবর্তী শোথ।
এই সমস্ত রোগের সহিত খুব স্পষ্ট পাকস্থলী ও অন্ত্রাদির লক্ষণ থাকে। উহা কক্কুলাসের সদৃশ। একেবারে স্পর্শ করিতে পারে না। বমি বমিভাব, গলরোধ, তাহার সম্মুখে খাদ্যের নাম করিতেই উকি উঠা। খাদ্যের চিন্তা ও গন্ধে বমনেচ্ছা ও বমন উপস্থিত হয় এইরূপ দুষ্ট প্রকৃতির রোগে, পূর্বে যেরূপ বলা হইল, তদ্রুপ অবস্থায়, আমরা যে-প্রকারের দুর্বলতা দেখি, তাহা কলাসে’র দুর্বলতা হইতে সামান্য পৃথক। কলচিকামে প্রলাপ, অবসন্নতা, মানসিক অবসাদ ও বেদনায় অত্যনুভূতি থাকে, সে যেন উহা মনের মধ্যে অনুভব করে এবং উহাতে মানসিক লক্ষণগুলি উপস্থিত হয়। যন্ত্রণায় অত্যন্ত অনুভূতি, মাসিক বিশৃঙ্খলা, বিচারবুদ্ধির বিশৃঙ্খলা । যাহা পড়ে তাহা বুঝিতে পারে না। সকল শিরঃপীড়াই বাতপ্রকৃতির হয়। সচরাচর, সমুদয় মাথার খুলিটি, মস্তিষ্ক-ঝিল্লীচয় র্থেৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনাযুক্ত থাকে। মস্তক-ত্বক স্পর্শকাতর হয়। মাথার মধ্যে চাপবোধ, সঙ্কোচন, চাপিয়া ধরার ন্যায়, ফাটিয়া যাওয়ার ন্যায় শিরঃপীড়া। মাথা গরম বোধ হয়। মস্তক-ত্বকে ছিন্নকর বেদনা সৰ্ব্বপ্রকার শিরঃপীড়াই সঞ্চালনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
চক্ষু লক্ষণগুলি বাতপ্রকৃতির, বাতের সহিত, বাতজ্বরের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকে। বাতজ্বরের সহিত চক্ষুর উপতারা-প্রদাহ খুব অসাধারণ কিছু নহে, কিন্তু কলচিকামে ইহা একটি প্রবল লক্ষণ। চক্ষের পাতায় ক্ষত, আঞ্জনি, উন্মুক্ত বাতাসে অশ্রুপাত চক্ষের জল হাজাইয়া দেয় এবং চক্ষুর পাতার আরক্ততা সৃষ্টি করে।
তাহার সহজেই সর্দি লাগে। হাঁচি, নাসারন্ধ্র বুজিয়া যায়। বাত ও গেঁটেবাত ধাতুতে নাসিকার রক্তপাত। কিন্তু আর একটি লক্ষণ আছে, যাহা অন্যান্য ঔষধ অপেক্ষা কলচিকামে অধিকতর সুস্পষ্ট। রোগী গন্ধে এত অনুভূতিযুক্ত থাকে যে, অপর লোকে যে-সকল জিনিষের গন্ধ পায় না, সে তাহার গন্ধ পায়। সে যে-সকল গন্ধ পায়, তাহাতে তাহার বমনোদ্রেক হয়। “তীব্র গন্ধ তাহাকে অত্যন্ত কাতর করিয়া ফেলে।” তুমি হয়ত “ঝোল”, “ক্কাথ” অথবা অপর কিছু খাইতে বলিলে, এবং সে পীড়িত হইয়া পড়িল। বহু সতর্কতা সত্তেও সে রান্নাঘরের জিনিষগুলির গন্ধ পায় এবং এই লক্ষণটি ঔষধটির সর্বত্রই থাকে। টাইফয়েড জ্বরে, সাধারণ অপেক্ষা অধিক অবসন্ন হয় অবশ্য টাইফয়েডে সৰ্ব্বদাই যথেষ্ট অবসন্নতা থাকে, কিন্তু সে অস্বাভাবিক বেশী অবসন্ন হইয়া পড়ে। সে দুধ খাইতে পারে না, কাচা ডিম খাইতে পারে না, ঝোল খাইতে পারে না, কারণ ঐগুলির কথা ভাবিলেই তাহার মুখরোধ হয়। সে অনাহারে অনেক দিন কাটায় এবং পরিজনগণের ভয় হয় যে, সে অনাহারেই মরিতে চলিয়াছে। তাহার গন্ধে বৃদ্ধি এত প্রবল একটি লক্ষণ যে, উহা তাহাকে আয়ত্ত করিয়া বসে। ইহাতে তাহার ক্ষুধা, তাহার দুর্বলতা, তাহার পাকস্থলী জড়িত হইয়া পড়ে। সুতরাং মনে হয়, ইহা একটি অতি প্রবল লক্ষণ। লক্ষ্য কর, ইহা তাহার একপ্রকার অনুরাগ, ইহা তাহার বিকৃত অনুরাগ, আর চক্ষু, নাক, অথবা স্পর্শের মধ্য দিয়া প্রকাশিত হইলেও অনুরাগ একটি সাধারণ লক্ষণ। ইহা রোগীর অন্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে, কারণ ইহার মধ্যে থাকে গন্ধের প্রতি ঘৃণা এবং যখন ইহা একজ্বর, দুৰ্বলকর জ্বর, বাতজ্বরের ন্যায় দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরে প্রবল আকার ধারণ করে, তখন ইহা একটি সাধারণ লক্ষণে পরিণত হয়। যদি মাত্র বিশেষ বিশেষ জিনিষগুলির উপরেই এই ভাব থাকিত, তাহা হইলে ইহাকে বিশেষ লক্ষণ বলিয়া মনে করা চলিত, কিন্তু তোমরা দেখিতেছ যে, ইহা তাহার অন্তঃস্থল পর্যন্ত প্রবেশ করিতেছে। ইহা তাহার ঘৃণার সহিত বিজড়িত, ইহা মানসিক লক্ষণ, ইহা তাহার ব্যক্তিসত্তার একটি অংশ। তাহার অন্তর গন্ধকে ঘৃণা করে, খাদ্যের গন্ধকে ঘৃণা করে, উহার চিন্তাকে ঘৃণা করে। কলচিকামের রোগীর নিকট “খাদ্যের” নামটি করিও না, কিন্তু প্রথমে তাহাকে কলচিকাম দাও এবং দেখিবে যে, শীঘ্রই সে কিছু খাইতে চাহিবে। ইহা খাদ্যের প্রতি ঘৃণা দূর করে। যে জিনিষ মানুষকে জীবিত রাখে, তাহার উপর একটি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার।
দাঁতগুলি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। “ব্যতগ্রস্ত দাঁত।” মাড়ি ছাড়িয়া যায়, কিছুদিন পরে দাঁতগুলি আলগা হইয়া যায়। দাতে বেদনা, চোয়াল এবং দাঁতের বাত অবস্থা। “দাঁত কড়মড় করা, দাতে দাঁতে চাপিলে অত্যন্তানুভূতি।”
“খাদ্যে অপ্রবৃত্তি, খাদ্যের গন্ধে ও খাদ্যদর্শনে বিতৃষ্ণা”, গন্ধেই বেশী বিষ্ণা। “মাছ, ডিম, চর্বিযুক্ত মাংস, মাংসের ক্কাথে বমি বমিভাব, এমনকি মূৰ্ছাভাব।” কলচিকাম রোগীর অতিতৃষ্ণা বা একেবারে তৃষ্ণাহীনতা থাকিতে পারে বা উহা পৰ্য্যায়ক্রমে দেখা দিতে পারে। বমি বমি ভাব ও বমন একটি প্রবল লক্ষণ। “লালা গিলিতে গেলে বমনেচ্ছা ও বমি করিবার প্রবৃত্তি। বমনেচ্ছা, এবং প্রচুর শ্লেষ্মা ও পিত্তবমন। ভয়ানক উকি তোলা এবং তারপর প্রচুর ও বেগে খাদ্যমন, তারপর পিত্তবমন।”
পাকস্থলীতে কখনও শীতলতা, কখনও জ্বালা থাকে। এরূপও হইতে পারে যে, কলচিকাম রোগীর শীতলতা ও জ্বালা দুইই থাকে। ইহাদের দুইটিই রেপার্টরিতে লিখিত আছে এবং পরীক্ষাকালেও লিখিত হইয়াছে, কিন্তু সময়ে সময়ে কোনটি যে কি তাহা বলা কঠিন; তুমি যতটা অনুমান করিতেছ তাহা অপেক্ষা বেশী কঠিন, যদি না তুমি কোন স্থানে এক টুকরা বরফ এবং আর কোন স্থানে খুব উত্তপ্ত কিছু রাখিয়া পরীক্ষা কর।
“পাকস্থলীগহ্বরে জ্বালা।” পাকস্থলীতে শীতলতাবোধ। তারপর, উদর সম্বন্ধে লক্ষ্য করিবার মত অনেক কিছু আছে। উদর বায়ুতে স্ফীত, ফাপযুক্ত। সমস্ত উদরে অত্যন্ত ক্ষততা। টাইফয়েড রোগে যেরূপ দেখা যায় সেইরূপ পেটফাপ। তুমি যদি কখন পাড়াগাঁয়ে চিকিৎসা করিতে যাও এবং দেখ যে, কোন কৃষকের গরুগুলি তাজা ক্লোভারের চাপড়া পাইয়া ও তাহা পেট পুরিয়া খাইয়া পেটফাপযুক্ত হইয়া পড়িয়াছে, ঐ পেটফাঁপ এত বেশী যে, তোমার ভয় হইবে, যেন পেটটি ফাটিয়া যাইবে; তাহা হইলে তুমি সাহায্য করিতে অগ্রসর হইও এবং প্রত্যেকটি গরুকে কয়েকটি করিয়া কলচিকামের অনুবটিকা দিও। কয়েক মিনিট যাইতে না যাইতেই, দেখিয়া বিস্মিত হইবে যে, ঐ বায়ু নির্গত হইয়া যাইতেছে, আর কৃষকও উহা দেখিয়া বিস্মিত হইবে এবং তুমি হয়ত তাহাকে হোমিওপ্যাথিতে দীক্ষিত করিতে পারিবে। জানা যায় যে, কৃষকেরা ঐ বায়ু বাহির করিবার জন্য গরুর শেষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পঞ্জরাস্থির মধ্যবর্তী চর্মকোষে কসাইয়ের ছুরি বসাইয়া দিয়া থাকে। উহাতে গরুটি ভাল হয় বটে, কিন্তু কলচিকাম ছুরি বসান অপেক্ষা অনেক ভাল। ঘোড়া সম্বন্ধেও ঐ একই কথা; বস্তুতঃ, মানুষ ও পশু সম্বন্ধে একই কথা। পেট যখন ভয়ানক ফাপিয়া ঢাকের মত হয়, তখন কলচিকাম প্রায়ই উপযোগী ঔষধ।
আক্ষেপিক যন্ত্রণা, শূলব্যথা, ছিন্নকর বেদনা, জ্বালা, কামড়ান বেদনা, বেদনায় রোগীকে দ্বিভাজ করিয়া ফেলে। সঞ্চালনে বর্ধিত হয়। শূলবেদনার সহিত অত্যন্ত স্পর্শকাতরা ও ক্ষততা। আহারে বৃদ্ধি, দ্বিভাজ হইলে উপশম। আর তারপর উদরাময় উপস্থিত হয়। দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরে যেরূপ দেখা যায়, তদ্রুপ উদরাময়। আমাশয় বা উদরাময়ের মল জেলির মত, জমাটবাঁধা শ্লেষ্মা। কলচিকামের মল খুব যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত বেদনাকর। উদরে অত্যন্ত ক্ষততা। যন্ত্রগুলির অত্যন্ত শিথিলতা সরলান্ত্র নির্গমন। পচা গন্ধ, কাল, রক্তাক্ত আম। “অত্যন্ত বমনেচ্ছার সহিত অন্ত্র হইতে রক্তাক্ত সাব।” সাদা আব স্রাব এবং ভীষণ কোথযুক্ত বর্ষাকালীন আমাশয়। অন্ত্র হইতে পচা গন্ধ, কাল, চাপচাপ রক্ত ও আম নির্গত হয়। উদরাময়ের সহিত তীব্র শূলবৎ বেদনা। অন্ত্রের চাঁচুনির মত পদার্থের সহিত রক্তাক্ত মল ও গুহ্যদ্বার নির্গমন।
উষ্ণ ভিজা আবহাওয়ায় বা শরৎকালে প্রচুর জলবৎ মল। মলদ্বার আবরক পেশীর ভীষণ আক্ষেপের সহিত মলদ্বার হইতে গুহ্যদ্বারপথে জলবৎ, জেলির মত আম নির্গত হয়। উহা সরু জলবৎ প্রবাহের ন্যায় নির্গত হয় কিন্তু ঠান্ডা হইলেই থকথকে হইয়া যায়।
যখন মূত্র নির্গত হয়, ইহাতে জ্বালা করে। উহার সহিত অত্যন্ত যন্ত্রণা থাকে। মূত্রপিন্ডের প্রদাহ, মূত্রস্থলীর প্রদাহ, কুন্থন, মূত্রাবরোধ। মূত্রপিন্ড দুইটিতে মূত্র জন্মায় না, শোথের সহিত স্বল্প মূত্র। মূত্র–কালির ন্যায় অর্থাৎ অত্যন্ত ঘোরাল বাদামিবর্ণের এবং কখন কখন প্রায় কাল, অন্ডলালে পূর্ণ। এই ঔষধ প্রধানতঃ তরুণ ব্রাইটাখ্য রোগের অনুরূপ।
অত্যন্ত শ্বাসকৃচ্ছ্রতা, দ্রুত ও হ্রস্বশ্বাস, হৃৎপিন্ডের প্রবল উত্তেজনা। শ্বাস-প্রশ্বাসের বেগের বৃদ্ধি। ঘরের মধ্যে সর্বত্র হৃৎপিন্ডের প্রবল স্পন্দন শুনিতে পারা যায়। বুক ধড়ফড়ানি, বুক চাপিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি। মনে করে, যেন তাহার বুকের উপর একটা বড় ভার চাপান আছে, নিঃশ্বাস লইতে পারে না। বক্ষরুদক, বক্ষাবরক ঝিল্লীর গহ্বরে রক্তাম্বু, সঞ্চয়ের জন্য স্ফীত দেখা দেয়, তাহাতে শ্বাসকৃচ্ছ্রতা জন্মে। “হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া যেন কোন কিছু দিয়া আচ্ছাদন করা হইয়াছে, এরূপ অস্পষ্ট ও ক্ষীণ।” বক্ষের পেশীসমূহের হুলবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর বেদনা।
বাহুদ্বয়ে পক্ষাঘাতিক যাতনা, হস্তাঙ্গুলির সন্ধিগুলি বর্ধিত। ইহা হইতে বুঝা যায় যে, কিরূপ দুষ্ট প্রকৃতির রোগ, কিরূপ ক্ষীণ রক্ত সঞ্চালন এই ঔষধটির দ্বারা সৃষ্ট হয়। “দুর্বলতা, সেইজন্য হুঁটিবার সময়, তাহার হাঁটু দুইটি একত্রে ঠোকাঠুকি হইয়া যায়; সর্বাঙ্গে থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় বেদনা; সন্ধিগুলির স্ফীতি।” সন্ধিগুলিই বেশী আক্রান্ত হয়। পেশীসংক্রান্ত বাত। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসাড়তা, শোথ, স্ফীতি।
[Colchicum-Kolchikon, a plant with a poisonous, bulbous root]
অপর নাম – মেডো স্যাফ্রন (Meadow Saffron)
ইহা মেলান্থেসী জাতীয় একপ্রকার বৃক্ষ। এর মুকলিত হওয়ার অব্যবহিত পূৰ্ব্বেই এর সরস কন্দ থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়। কলচিকামের সদ্য সংগৃহীত মূলের অরিষ্টই সৰ্বাধিক উপযোগী।
কলচিকামের — মূলকথা
১। খাদ্য বস্তু রান্নার গন্ধে বিবমিষা ও দুর্বলতার উৎপত্তি হয়।
২। শরৎকালে যখন দিনে গরম ও রাত্রিতে ঠাণ্ডা তখনকার আমাশয়ে, অন্ত্রের চাচানির মত পদার্থের ন্যায় কুচিকুচি আম ও রক্তময় মল।
৩। সন্ধির স্ফীততা, এই স্ফীততা একস্থান থেকে অন্যস্থানে নড়েচড়ে বেড়ায়; উহাদের প্রায়ই শোথের আকৃতি থাকে এবং টিপলে গর্ত হয়ে যায়। অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও শীতলতা বা অতিরিক্ত উষ্ণতা ও শুষ্কতায় উহার কষ্ট বাড়ে। (ডাঃ কেন্ট)
কলচিকাম – পর্যালোচনা
এই ঔষধটির সমগ্র ভৈষজ্যতত্ত্বের মধ্যে একটি সুনিশ্চিত ও বিশ্বাসযোগ্য লক্ষণ আছে, যার নিদানগত কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা আমরা দিতে পারি না। আমি কথাটার এখানে উল্লেখ করলাম, কারণ কারো কারো নিদানতত্তের উপর নির্ভর করে হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহার করার প্রবৃত্তি আছে। তবে তারা যদি এইভাবে তাদের রোগী সারাতে পারে, তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।
কিন্তু আমি মনে করি যেসকল শারীরিক ও মানসিক (subjective) অনুভূতি সংক্রান্ত ও উপচয় – উপশমাদি বিষয়ক লক্ষণের কোন ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না, সেগুলির উপযোগিতা সম্যকভাবে স্বীকৃত হওয়া উচিত।
তাছাড়া বাস্তবিক ক্ষেত্রে আমরা যেসকল নিদানগত অবস্থা জানি, তার চেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত মানসিক লক্ষণগুলিই অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ আরোগ্যের অধিকতর নির্ভরযোগ্য লক্ষণ।
এখন কলচিকামের লক্ষণের কথা বলি।
১। খাদ্যবস্তু রান্নার গন্ধে বমি বমি ভাব উপস্থিত হয়, উহাতে মূৰ্ছাকল্পতা ও দুৰ্ব্বলতা পর্যন্ত জন্মে।
এই লক্ষণটির মূল্য বুঝাবার জন্য আমার নিজের চিকিৎসিত একটি রোগীর বিবরণ দেওয়া হল।
রোগী বিবরণী –
একজন পঁচাত্তর বছর বয়স্ক রমণীর সহসা পাকস্থলী পীড়া উপস্থিত হয়; অনেকখানি করে বক্তবমি হতে থাকে এবং তারপর রক্তাক্ত মল নির্গত হতে থাকে। প্রথমদিকে উহা প্রচুর পরিমাণে ছিল, কিন্তু পরে স্বল্প পরিমাণে রক্তময় আমে পরিণত হয়। অন্ত্রে অতিশয় কুন্থন ও বেদনাও ছিল। আমার তখনকার ঔষধ নিৰ্বাচনের জ্ঞান অনুসারে আমি তখন একোনাইট, মারকিউরিয়াস, নাক্স ভমিকা, ইপিকাক ও সালফার দিয়েছিলাম, কিন্তু কোন উপকার হয় নি। এদিকে বাবুদিনের মধ্যেই বোগিণী দ্রুত অবসন্ন হয়ে পড়েছিল এবং আমার মনে হয়েছিল তিনি নিশ্চয়ই মারা যাবেন। কারণ তিনি এত দুৰ্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, বালিশ থেকে মাথা তুলতে পারছিলেন না। এদিকে গুণে দেখা গিয়েছিল ২৪ ঘণ্টায় তিনি মোট ৬৫ বার বিছানায় মলত্যাগ করেছিলেন এবং বেদনা, মল নিঃসরণের সংখ্যা ও সকল লক্ষণই সূর্যাস্ত থেকে সুৰ্য্যোদয় পর্যন্ত বৃদ্ধি পেত (ইহা কলচিকামের একটি চরিত্রগত বিশেষ লক্ষণ)।
এই অসুখের মধ্যেও রোগিণীর খাদ্যদ্রব্য রান্নার গন্ধে এত বমির বেগ ও মূৰ্ছাকল্পতা দেখা গিয়েছিল যে, রান্নাঘরটি দুটি বড় বড় ঘরের পরে থাকা সত্ত্বেও তার শোয়ার ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়েছিল।
তখন আমি মেটেরিয়া মেডিকার সঙ্গে এখনকার মত এত সুপরিচিত ছিলাম না। তাই যদিও আমি ঐ লক্ষণটি উপেক্ষা করিনি, তথাপি যেহেতু আমি কোন ঔষধে আছে তা জানতাম না, তাই প্রয়োগ করিনি। কিন্তু আমার গাড়ীতে লীপির মেটেরিয়া মেডিকা ছিল। আমি বাইরে গিয়ে উহা নিয়ে এসে রোগীর শয্যাপাশে বসে ঐ স্বতন্ত্র ধরনের সর্বক্ষণস্থায়ী লক্ষণটিকে যতই সময় লাগুক না কেন, খুঁজে বের করতে মনস্থ করি। আমি একোনাইট থেকে আরম্ভ করে প্রত্যেকটি ঔষধের পাকস্থলী লক্ষণ পড়ে চলি এবং সোজা ইংরেজীতে উহা কলচিকামে প্রথম লিখিত থাকতে দেখি। তারপর আমি আমার ঔষধের বাক্সে ঔষধটি খুঁজি কিন্তু তাতে উহ ছিল না এবং আমি তখন আমার বাড়ী থেকে ৪ মাইল দূরে ছিলাম। তবে আমার গাড়ীতে আসনের তলায় ডানহ্যামের ২০০ শক্তির ঔষধপূর্ণ একটি বাক্স ছিল। উহা এক বছরের অধিককাল ঐখানেই পড়েছিল, কিন্তু উচ্চ শক্তিতে আমার বিশ্বাস না থাকায় আমি ওকে ব্যবহার করিনি। বর্তমান অবস্থায় আমার পক্ষে ইহা করাই সবচেয়ে ভাল ভেবে আমি কয়েকটি অনুবটিকা আধ গেলাস ঠাণ্ডা জলে গুলে প্রতিবার মলত্যাগের পর এক চা-চামচ করে খাওয়ানোর নির্দেশ দিই। আমার বাড়ী, ফেরার পথে আমি দুতিন বার ঘোড়া থামিয়ে ভাবি, ফিরে গিয়ে রোগ পীড়িত হতভাগ্য রমণীকে অন্য কোন ঔষধ দিব কিনা? আমি নিজেকে অপরাধী মনে করছিলাম, কিন্তু আপন মনেই বলতে লাগলাম –“বইখানি লীপির মেটেরিয়া মেডিকা” এবং ঔষধগুলি ক্যাবোল ডানহ্যামের পোটেন্সি এবং ঔষধ প্রয়োগের লক্ষণটিও সুনির্দিষ্ট আর অন্যান্য লক্ষণগুলিও বিরুদ্ধ নির্দেশক নয়। সুতরাং ভয়ের কি আছে? যাহোক আমি বাড়ী পৌছলাম ও পরের দিন ভোরেই আমার আগের দিনের গোঁয়ার তুমির সংশোধনের জন্য এবং রোগিণী মারা গেছে কিনা দেখার জন্য বের হলাম। কিন্তু কল্পনার বাইরে, যখন আমি রোগীর ঘরে প্রবেশ করছি, তখন তিনি বালিশ থেকে মাথা তুলে হেসে বললেন – “সুপ্রভাত ডাক্তার।” বিগত কয়েকদিন সকালে আমি কিন্তু কেবলমাত্রই গোঙানি শুনেছিলাম। আমার তখন মূর্চ্ছা যাওয়ার মত অবস্থা, আমি বিছানার পাশে একখানা চেয়ারে বসে পড়লাম এবং বললাম –“আপনি নিশ্চয়ই কিছুটা ভাল বোধ করছেন?” “হ্যা ডাক্তার।” “আপনি শেষের ঔষধটি কতখানি খেয়েছেন?”, “দু মাত্রা।” কি, দু মাত্রা মাত্র! আপনি চলে যাওয়ার পর আমার কেবল দু’বার পায়খানা হয়েছিল।
“আপনার কি এখনও বেদনা হচ্ছে? বেদনাও ঐ সঙ্গে থেমে গিয়েছিল। আমি দুৰ্বলতা ছাড়া ভালই বোধ করছি।”
তিনি আর কোন ঔষধ খাননি, দ্রুত আরোগ্য হয়েছিলেন এবং পরে আরও পাঁচ বছর সুস্থ ছিলেন। শেষে আশি বছর বয়সে মারা যান। আমি কিন্তু সেই বিস্ময় থেকে এখনও মুক্ত হতে পারিনি।
এরপর আমি ২০০ শক্তির ঔষধের পরীক্ষা আরম্ভ করি এবং আমি সেই একই লক্ষণে ঐ ঔষধ দ্বারা বহু শরৎকালীন আমাশয়ের রোগীকে আরোগ্য করেছি। আমি রুগ্ন প্রকৃতির একটি টিফ্লাইটিস বা যাকে আজকাল এপেণ্ডিসাইটিস বলা হয় এবং অ্যালোপ্যাথেরা যাকে অপারেশান করার কথা বলেন, সেইরূপ রোগীকেও ঐ একই লক্ষণে আমি আরোগ্য করেছি। তাছাড়া ব্রাইটস ডিজিজের একটি উৎকট রোগীও রোগমুক্ত হয়েছিল এবং এই বিশেষ লক্ষণটি বর্তমান থাকাতেও এই ঔষধে বাত, গেটেবাত ও শোথ আরোগ্য হয়েছে। আমি তিনটি বিষয় প্রমাণ করার জন্য এই ঔষধ সম্বন্ধে আমার অভিজ্ঞতা এত বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করলাম।
* বিষয়গুলি হল –
১মঃ – আমাদের কুসংস্কার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়।
২য় – মনোলক্ষণগুলিই সর্বাপেক্ষা মূল্যবান।
৩য়ঃ – যেকোন শক্তির ঔষধই তার ক্রিয়া প্রকাশ করে ও রোগ আরোগ্য করে।
২। তবে কলচিকামের যে লক্ষণটির গুরুত্বের বিষয়ে এত বিশদভাবে উল্লেখ করা হল, এছাড়া এই ঔষধের আরো কতকগুলি মূল্যবান লক্ষণ আছে। যেমন – কলচিকামের দুটি পরস্পর বিরুদ্ধ লক্ষণ হল – “পাকস্থলীতে দারুণ জ্বালা এবং বরফের মত শীতলতা”।
এই দুটি পৰম্পর বিবোধী লক্ষণ উদরে প্রকাশ পায়। কখন কখন কলচিকাম শরৎকালীন আমাশয়ে নির্দেশিত হয়। বিশেষ করে যে সাদা বা রক্তাক্ত আম নির্গত হয়, তার আকৃতি কুচিকুচি এবং দেখলে মনে হয় যেন অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী চেঁছে বের হয়ে আসছে এবং তার সঙ্গে যথেষ্ট কুন্থন থাকে।
তুলনা –
ক) কলচিকামের ন্যায় ক্যান্থারিসেরও এই অন্ত্রের চাচানির ন্যায় মল লক্ষণ স্পষ্টরূপে আছে। কিন্তু ক্যান্থারিসের বেদনা ও কুন্থন দ্বারা যুগপৎ মূত্রযন্ত্রও আক্রান্ত হয়।
খ) কলোসিন্থেও ঐরূপ লক্ষণ আছে। কিন্তু কলোসিন্থের উদর বেদনার দ্বিভাজ করলে উপশম বোধ উপরোক্ত ঔষধ দুটিতে নেই।
৩। কলচিকামে উদরে অতিশয় আধানিক স্ফীততা (great meteoristic distension of the abdomen) বা বায়ু জমাজনিত উদর স্ফীততা আছে। অতিরিক্ত কাঁচা ক্লোভার ঘাস খেয়ে যে সকল গাভীর পেট ফাঁপে, তাদের ক্ষেত্রে এর ২০০ শক্তির ঔষধ ভাল কাজ করে।
* অম্লজীর্ণ বা ডিসপেপসিয়া রোগে রোগী যখন পাকস্থলীতে জ্বালা বা শীতলতা বোধের অভিযোগ করে এবং পাকস্থলী ও উদরে প্রচুর বায়ু জমা হয়, তখন কলচিকাম উৎকৃষ্ট। কখন কখন কাৰ্বভেজ, চায়না বা লাইকোপোডিয়াম অপেক্ষাও ইহা অধিক ফলপ্রদ।
৪। কলচিকাম সৰ্ব্বদাই পাঠ্য পুস্তকে বাত, সন্ধিবাত ও সঞ্চরণশীল বাত রোগের ঔষধ বলে উল্লেখিত আছে। আমি একে সময়ে সময়ে পরীক্ষা করেছি, কিন্তু কখনও বাতের অন্যান্য ঔষধের ন্যায় একে ফলপ্রদ হতে দেখিনি। এক্ষেত্রে হয়ত আমি যথেষ্ট নিম্নশক্তি ব্যবহার করিনি বলেই এই রকম হয়েছে।
* একে দুর্বলতা ও আকস্মিক অবসন্নতার উকৃষ্ট ঔষধও বলা হয়। কিন্তু এ সম্বন্ধেও আমার কোন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই। যা হোক, যদি এরূপ কোন রোগে আমরা এর প্রধান চরিত্রগত লক্ষণটি বর্তমান থাকতে দেখি, তাহলে নিশ্চয়ই একে ব্যবহার করব এবং এতে সুফল পাওয়া যাবে।