কপালে বা চক্ষুকোটরে চাপবৎ বেদনা। |
অন্ননালীতে জ্বালা, অন্ত্রে পানি পড়ার মত কল কল শব্দ। |
চর্ম লাল, চর্মে ভয়ানক চুলকানি ও জ্বালা কিন্তু জোরে চুলকানো সহ্য হয় না, সামান্য চুলকালে বা ঘষলেই চুলকানির উপশম। |
রোগ নিচ হতে উপরের দিকে উঠে। |
কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে আসে, শুলেই কাশি হয়, সে জন্য কোন উঁচু জিনিসে ঠেসান দিয়ে বসে থাকে। |
অন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আক্রান্ত হয়ে রক্তের সমস্ত জলীয় অংশ বেরিয়ে আসে তা থেকে প্রচুর পরিমাণে জলের মত উদরাময় হয় (ভিরেট্রাম) আবার সারা দেহে তরুণ একজিমা সৃষ্টি করে (রাস-ট)।
বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার মত মল ছিটকে বার হয় (গ্যাম্বোজ); যেইমাত্র খায় বা পান করে বা খেতে বসলেই জলের মত, হলদে মলত্যাগ করে ।অনবরত মলত্যাগ বেগ—তারপরই হঠাৎ মলত্যাগ—রেকটাম হতে মল ছিটকে বেরিয়ে আসে (গ্যাম্বো, গ্র্যাটি, পড়ো, থুজা)।
মলত্যাগের আগে তন্ত্রমধ্যে জলের মত কলকল করে আওয়াজ হয় (মলত্যাগের আগে গুড়গুড় করে ডাকে—এলোজ) ।
শিশুকে স্তনদানের সময় স্তন হতে স্ক্যাপুলা অবধি বুকের মধ্যে টেনে ধরা মত ব্যথা, স্তনের বোটায় ভীষণ ব্যথা ।
দেহের চামড়ায় অত্যন্ত চুলকানি, এত ব্যথা যে চুলকাতে পারে না, ধীরে ধীরে হাত বুলালে উপশম-সারা শরীরে একজিমা।
স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই যৌনাঙ্গে ভীষণ চুলকানি (রাস-ট)। পুংজননেন্দ্রিয়ে ফুস্কুড়িমত চুলকানি—ঐতে ব্যথা ও ক্ষতবোধ এত বেশী যে চুলকান যায় না।
কাশি – বালিশে মাথা রাখামাত্র কাশির আবেশ, শরীর ঝেঁকে ওঠে, শ্বাস বন্ধ হয়-ঘরের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে বাধ্য হয় বা চেয়ারে বসে ঘুমায়।
সম্বন্ধ – শিশুদের বহুদিনের পুরান উদরাময়ে কেলি-ব্রোম, ফস্-এর সাথে স্তন্যদানকালে স্তনবৃন্ত হতে পিঠ অবধি ব্যথায় সাইলিশিয়ার সাথে তুলনীয় ।
বৃদ্ধি – উদরাময় নড়াচাড়ায়, কিছু পান করলে, খাওয়ার সময় বা স্তনদানের সময় বাড়ে। (আর্জ-না; আর্স); সামান্য কিছু খেলে বা পান করলে বাড়ে ।
শক্তি – ৩, ৬, ৩০।
উদরাময়, গ্রীষ্মকালীণ উপসর্গও চামড়ার উপসর্গে এটি একটি মূল্যবান ঔষধ বিশেষ। এই উপসর্গগুলি পর্যায়ক্রমে একটির পরে আর একটি দেখা দিতে পারে। সর্বাঙ্গে কষাভাব, এই জাতীয় অনুভূতি। রাসবিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি ক্রিয়ানাশক ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়। এই জাতীয় ক্ষমতা যে এই ঔষধের ভিতরে আছে, তা চামড়া ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপর ঔষধটির ব্যাপক কাজ থেকে বুঝতে পারা যায়, কারণ এই জাতীয় কাজের থেকে উত্তেজনাও প্রদাহ তৈরী হয়। তৎসহ ফোস্কা তৈরী হয় ও শ্লেষ্মা স্রাব নির্গত হয়। মুখমন্ডলের চামড়া ও বর্হিজননেন্দ্রিয়ের উপর, এই স্থানদুটি বেছে নিয়ে এই ঔষধটি কাজ করে। খাদ্য নলীর ভিতর জ্বালা।
মাথা – কপালে চাপ দেবার মত বেদনা, বিশেষত। চক্ষু কোঠরের ভিতর।
চোখ — চোখের পাতা দানাযুক্ত কনানিকায় পুঁজ যুক্ত উদ্ভেদ। লাল ও কাঁচা বর্ণযুক্ত। পিছনদিকে টেনে ধরার মত অনুভূতি। চোখের চারিপাশে উদ্ভেদ। ডানদিকের চক্ষু কোটরে উপরে টেনে ধরার মত যন্ত্রনা।
মল – প্রচুর, জলের মত মল, তৎসহ ব্যাপক বেগ; সর্বদা মল প্রবলবেগে বার হয়। তৎসহ অন্ত্রের ভিতর গুড় গুড় শব্দ; সামান্য পরিমানে কিছু পান করলে বৃদ্ধি অথবা এমনকি খাবার সময়ে। অবিরাম মলত্যাগের বেগ, এরপরে হঠাৎ করে মল বেরিয়ে আসে। অন্ত্রের ভিতর জল পড়ার মত অনুভূতি।
প্রস্রাব – রাত্রির প্রস্রাব ফেনাযুক্ত। কালো, কমলা লেবুর মত বড়; প্রস্রাব ঘোলাটে বর্ণের হয়, কিছু সময় রেখে দেবার পরে। প্রস্রাবের উপর তৈলাক্ত পদার্থের মত কনা ভেসে বেড়ায়। দিনের বেলায় প্রস্রাব ফ্যাকাসে, তৎসহ সাদা তলানিযুক্ত।
বুক – বামদিকের বুকের ভিতর দিয়ে পিঠ পর্যন্ত টেনে ধরার মত বেদনা। তৎসহ কাশি, কিছুতেই বুক প্রসারিত করতে পারে না। স্তন্যদায়ী স্ত্রীলোক; প্রতিবার শিশুর চোষার সঙ্গে সঙ্গে স্তনের বোটা থেকে পিঠের দিকে পর্যন্ত বেদনা। স্তন প্রদাহিত, কাশি; মাথা বালিশের উপর রাখার সঙ্গে-সঙ্গে কাশি শুরু হয় এবং উঠে পড়তে বাধ্য হয়। নাভীর শ্বাস-প্রশ্বাসে অনুভূতি প্রবন।
চামড়া – গায়ের চামড়া যেন শরীরের উপর সেঁটে আছে, এই জাতীয় অনুভূতি। তীব্র চুলকানি; কিন্তু চুলকালে ব্যথা করে। পুঁজ যুক্ত উদ্ভেদ বিশেষ করে মুখমন্ডল ও যৌনাঙ্গে। তৎসহ ভয়াবহ চুলকানি, এর পরে জ্বালাকর যন্ত্রনা। ফোস্কা সমূহ; ফোস্কার জল গড়িয়ে আসে। ফোস্কাযুক্ত ইরিসিপেনান, তীব্র চুলকানি। হার্পিস জুস্টার; হুলফোটার মত, তীব্র বেদনা উদ্ভেদের উপর।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি, সামান্য আহারে বা পান করলে; গ্রীষ্মকালে, স্পর্শে, রাত্রি ও সকালে, ধোবার পরে।
সম্বন্ধ – তুলনীয়-মোমর্ডিকা ক্যারানশিয়া- হেয়ারী-মর্ডিকা (ব্যাপক ধংসাত্বক ক্ষমতাযুক্ত, শূলবেদনা, বমিবমিভাব, বমি, কলেরা মত লক্ষণ, পেট তরল পদার্থে পূর্ণ এই জাতীয় অনুভূতি, প্রচুর পরিমানে স্রাব, পাতলা, জলের মত, হলুদ বর্ণের প্রভৃতি উপসর্গ উৎপন্ন করে। প্রচন্ড পিপাসা। রাসটক্স, এনাগেলিস; এনাকার্ডিয়াম, সিপিয়া।
দোষঘ্ন — এন্টিম টার্ট।
শক্তি — ৬ষ্ট থেকে ৩০ শক্তি।
চর্মের উপর ক্রোটন তৈল লাগাইলে, প্রদাহিত তলদেশ বিশিষ্ট ফোস্কা ও পুঁজবটী দুইই উৎপন্ন হয় এবং ঐ অংশটি অত্যন্ত লাল ও বেদনান্বিত হইয়া পড়ে। প্রদাহটি কখন কখন বাড়িয়া ইরিসিপ্লাস সদৃশ হইয়া উঠে, কিন্তু প্রায়শঃ উৎপন্ন ফুস্কুড়িগুলি ফোস্কাযুক্ত একজিমার অনুরূপই হইয়া থাকে। কয়েক দিন যাবৎ উদ্ভেদগুলি বাহির হইতে থাকে এবং তারপর শুকাইতে থাকে এবং কিছুদিনের মধ্যেই উপরকার ছাল উঠিতে আরম্ভ হয়।
অতিদীর্ঘকাল ধরিয়া পরীক্ষায় সেরূপ হয়, তদ্রূপ অতিমাত্রায় পান করান হইলে, অথবা অসংস্কৃত ঔষধে অথবা পরীক্ষাকারী অত্যনুভূতিযুক্ত হইলে আমরা দুইটি অবস্থার পৰ্য্যায়ক্রমতা অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ অবস্থার সহিত বাহ্যিক অবস্থার পৰ্য্যায়ক্রমতা দেখিতে পাই। উদ্ভেদগুলি বাহির হওয়ার পর আভ্যন্তরীণ লক্ষণগুলি, যথা- বাত-লক্ষণ, কাশি-লক্ষণ ও উদর-লক্ষণগুলি আর থাকে না। যদি আমরা এই উভয়প্রকার অবস্থার লক্ষণগুলি পৃথকভাবে পাঠ করি, তাহা হইলে ঐগুলি চিত্তাকর্ষক হইবে।
প্রথমতঃ ইহার কাশি। ইহাতে একপ্রকার হাঁপানির ন্যায় কাশি আছে; উহা মধ্যরাত্রে উপস্থিত হয়, প্রায়ই রোগীকে গাঢ় নিদ্রা হইতে জাগাইয়া তুলে। শ্বাসকৃচ্ছ্বতা এবং গলরোধ: বিশিষ্ট তীব্র কাশির আক্রমণ, রাত্রে বৃদ্ধি, শুইলে বৃদ্ধি, রোগীকে উঠিয়া বসিতে হয়, বিছানায় ঠেস দিয়া বসিয়া থাকিতে হয় অথবা হেলান দেওয়া চেয়ারে বসিয়া থাকিতে হয়। বন্ধুগণ বিস্মিত হইয়া ভাবেন, সে যক্ষ্মারোগ আক্রান্ত, হইতেছে না। যদি সে শিশু হয়, তাহারা ভাবেন তাঁহার হুপিং কাশি হয় না ত? বায়ুপথগুলির অত্যন্ত উপদাহিতা থাকে, সুতরাং নিঃশ্বাসবায়ু গ্রহণ করিলেই কাশি উপস্থিত হয়। গভীর নিঃশ্বাসে অনুভূতিবিশিষ্ট। আর তারপর কিছুদিন যাবৎ এইভাবে চলিতে থাকিলে, অবশেষে তাহার দেহের কোন একস্থানে একটি উদ্ভেদ বাহির হয়, ক্রমে দলে দলে ও স্তুপাকারে ফুস্কুড়ি ও পুঁজবটী বাহির হইতে থাকে, ঐগুলি প্রদাহিত এবং লাল হইয়া উঠে এবং সবশেষে ফুস্কুড়িগুলি শুকাইয়া উহাদের উপরের ছাল উঠিয়া যায় এবং অদৃশ্য হয়, আর তারপর, আবার তাহার কাশি দেখা দেয়। ইহা পুরাতন রোগাবস্থার ন্যায় চলিতে থাকে এবং এইরূপ ব্যাপার যখন উপস্থিত হয়; তখন এই ঔষধটিকে চিনিয়ে রাখা ভাল।
ইহার পরবর্তী মূল্যবান লক্ষণ বলিতে উদর লক্ষণ এবং বোধ হয়, উদ্ভেদগুলির পরেই, এই লক্ষণগুলিই সাধারণের কাছে সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী পরিজ্ঞাত। ইহা তরুণ ও পুরাতন উভয়প্রকার উদরাময়েই উপযোগী। ইহা শিশু-কলেরায় উপযোগী। ইহার সুস্পষ্ট লক্ষণ অত্যন্ত হঠাৎ মল নির্গমন। হলুদে জলের মত থকথকে মল একচোটে বেগে বাহির হইয়া আসে, নরম পাতলা মল একচোটে বেগে বাহির হয়। ইহা এত স্পষ্ট থাকে যে, পল্লীগ্রামের লোকেদের পক্ষে ইহাকে “হাঁসের বাহ্যের ন্যায়” বলিয়া বর্ণনা করা অসাধারণ কিছু নয়। উহার সবখানিই এক ধমকে পিচকারির ন্যায় বাহির হইয়া আসে। মাতা তাঁহার শিশু রোগীর সম্বন্ধে বলেন, “ডাক্তার, আপনি সেই ভীষণ বেগে মল নির্গমন দেখিলে বিস্মিত হইবেন, কারণ সমস্ত মলই পিচকারির ন্যায় একধারায় নির্গত হয়।” এই কথাগুলি বর্ণনামূলক। অনেক ঔষধেই মল আবদ্ধ হইয়া থাকা এবং বহুক্ষণ ধরিয়া মলত্যাগের চেষ্টা আছে, উহাতে বেশ কিছু সময় লাগে। অনেক প্রকারের উদরাময়ে বহুক্ষণ ধরিয়া, অনেক বারে একটু একটু করিয়া, বেগে পাতলা বা জলবৎ মল নির্গত হয়, কিন্তু এই ঔষধের বিশেষ প্রকৃতিটি লক্ষ্য করিবার মত। ইহাতে সৰ্ব্বদা ঐরূপ হয় না। কিন্তু প্রবলবেগে পাতলা হলদে মল অথবা জল নির্গত হইয়া আসাই ইহার বিশেষ লক্ষণ। উহার সহিত উদরটি অত্যন্ত অনুভূতিযুক্ত থাকে, অত্যন্ত ফাঁপিয়া থাকে, অন্ত্রের মধ্যে অত্যন্ত কলকল করে এবং চিকিৎসক যখন উহার উপর হাত রাখেন, রোগী বলে যে, সে কলকল শব্দ অনুভব করিতেছে, যেন উহা জলে পূর্ণ হইয়া আছে এবং সম্ভবতঃ তাহাই থাকে, কারণ স্কুলান্ত্র ও সরলান্ত্র তরল মলে পূর্ণ হইয়া না থাকিলে ঐরূপ হুড় হুড় করিয়া বেগে মল নির্গমন সম্ভব নহে। ক্রোটন টিগের উদরাময়ে সাধারণতঃ একটি অদ্ভুত ব্যাপার থাকে; উদরের উপরে নাভিস্থানে চাপ দিলে সরলান্ত্রে একপ্রকার যন্ত্রণা, মলত্যাগের বেগ এবং মলত্যাগের সহিত যেন সরলান্ত্র নির্গত হইবে—এরূপ অনুভূতি জন্মে। রোগী পরীক্ষা ব্যাপারে উহাকে অন্ত্রের মধ্য দিয়া নিম্নে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত বেদনা বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। এরূপ উদরাময়ের উপযোগী পথ্য সামান্যমাত্র জল বা সামান্যমাত্র দুধ, উহাতেও সঙ্গে সঙ্গে মলপ্রবৃত্তি জন্মে এবং তাহাকেও আহারের পরক্ষণেই মলত্যাগ করিতে যাইতে হয়। ইহাতে ক্রোটন টিগের উদরাময়ের সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পাইতেছে। শিশু হইলে তাহার অত্যন্ত অবসন্নতা, উদরস্ফীতি; অন্ত্রে অত্যন্ত গড়গড় শব্দ এবং অত্যন্ত শক্তিহীনতা থাকে, আর যেই শিশু এক ঢোকে দুধ খায় বা মাতৃস্তন্য পান করে, অমনি সে হুড়হুড় করিয়া তরল বা থকথকে মলত্যাগ করে।
অপর মূল্যবান লক্ষণসমষ্টি ইহার চক্ষু-লক্ষণগুলি। ইহাতে প্রাদাহিক প্রকৃতির চক্ষু-লক্ষণ আছে এবং চক্ষের চারিদিকে ও চক্ষুর পাতায় উপরে ফোস্কা ও পুঁজবটী আছে। কনীনিকার উপর পুঁজবটী, দানাময় চক্ষের পাতা। চক্ষুর সকল তন্তুর প্রদাহ। ইহাতে চক্ষুর উপতারায় এবং শ্বেতপটলের প্রদাহ আছে। চক্ষুর রক্তবহা নাড়ীগুলি বিস্তৃত হয়, চক্ষু দুইটি লাল এবং কাঁচা গোমাংসের ন্যায় দেখায়। চক্ষুর পাতাগুলি উল্টাইলে উহা যথেষ্ট প্রদাহিত এবং দানাযুক্ত ফুস্কুড়ি ও পুঁজবটী দ্বারা আচ্ছন্ন দেখা যায়। ক্রোটন টিগের চক্ষুরোগগুলির এইপ্রকার প্রাদাহিক অবস্থার সহিত সাধারণতঃই একপ্রকার বিশেষ অনুভূতি বর্তমান থাকে, মনে হয়, যেন চক্ষু একগাছি দড়ি দ্বারা ভিতর দিকে আকৃষ্ট হইতেছে, যেন চক্ষুর স্নায়ুগুলি চক্ষুদ্বয়কে পশ্চাদ্দিকে মাথার মধ্যে টানিয়া ধরিতেছে। এইরূপ চক্ষুকে পশ্চাদ্দিকে দড়ি দিয়া টানিয়া ধরার অনুভূতি ‘প্যারিস কোয়াড্রিফোলিয়ার’ও একটি বিশেষ লক্ষণ, কিন্তু ‘প্যারিস কোয়াড্রি’র অবস্থাটি পৃথক। খোদাইকর দিগের বা যাহারা সূক্ষ্ম সূচীকাৰ্য্য করে, তাহাদের চক্ষের অতি ব্যবহার হইতে মস্তকের অত্যন্ত স্নায়ুশূলযুক্ত শিরঃপীড়া, সম্ভবতঃ চক্ষের অতি ব্যবহারের জন্যই উহা দেখা দেয়, উহাতে চক্ষের যাতনার সহিত প্রদাহ-লক্ষণ থাকে না, কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উহা মৃদু কামড়ানি ও বেদনার মত হয়। উহাকে তোমরা বাতজনিত বা স্নায়ুশূলজাতীয় বেদনাও বলিতে পার। উহা সহিত চক্ষু যেন ভিতরদিকে মাথার মধ্যে আকৃষ্ট হইতেছে, এরূপ অনুভূতি;—এইপ্রকার স্নায়ুশূল অবস্থায় তোমরা ‘প্যারিস কোয়াড্রি’ ব্যবহার করিবে। কিন্তু যেরূপ প্রাদাহিত অবস্থার কথা আমি বর্ণনা করিয়াছি, তাহার সহিত এরূপ দড়ি দিয়া টানার অনুভূতি থাকিলে ‘ক্রোটন টিগই ঔষধ।
শিশুদের মস্তক-ত্বক কষ্টদায়ক একজিমা, হয় সম্পূর্ণভাবে ফুস্কুড়ির ন্যায়, না হয় অল্পাধিক পুঁজবটীর সহিত মিশ্রিত। ফুস্কুড়িগুলি শুকাইয়া যায় এবং তারপর খোলস উঠিয়া যায় এবং তখন লাল কাঁচা গোমাংসের মত প্রদাহিত এবং স্পর্শকাতরতাযুক্ত উপরিভাগ থাকে। খোলস উঠা যখন প্রায় শেষ হইয়া যায়, তখন একদল নূতন পুঁজবটী এবং ফুস্কুড়ি বাহির হয় এবং যখন একটি স্থান পরিষ্কার হইতে থাকে তখন আর একটি স্থান ফুস্কুড়িযুক্ত হইয়া পড়ে। ইহার পুরাতন। একজিমাটি এইভাবে চলিতে থাকে। সচরাচর উদ্ভেদগুলি চক্ষুর চারিদিকে, শঙ্খস্থানে, মুখমন্ডলে এবং মস্তক-শীর্ষে প্রকাশ পায়। আকৃতি প্রায় ‘সিপিয়া’র একজিমার ন্যায় হয় এবং দুইয়ের মধ্যে প্রায়ই পার্থক্য নির্ণয় করা যায় না। সিপিয়া’তেও ঐরকম পুঁজবটীর সহিত মিশ্রিত ফুস্কুড়ি আছে, রক্তপাত এবং উপরিভাগের কাঁচা গোমাংসভাব, নূতন করিয়া দলে দলে উদ্ভেদ উৎপত্তি আছে। মস্তক-ত্বকের এরূপ কঁচা গোমাংসের ন্যায়, রক্তপাতযুক্ত অবস্থায়, দুগ্ধপীড়কায় অথবা শিশুদিগের উদ্ভেদ ক্রোটন টিগ অপেক্ষা ‘সিপিয়া’ই অধিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। ক্রোটন টিগের অবস্থায় শিশুদের বেগে নির্গমনশীল উদরাময় দেখা দেয়, উহা সামান্য গোলযোগ বা অজীর্ণ হইলেই উপস্থিত হয়; উহা ঔষধটির নির্বাচনে একটি বিশিষ্ট পরিচালক লক্ষণ। যখন দুই দল লক্ষণ মস্তক-ত্বক লক্ষণ এবং উদরাময় লক্ষণ একসঙ্গে হয়, তখন তোমাদিগের কদাচিৎ ভুল হইবে। তোমরা আরও দেখিতে পাইবে যে, উদরাময় যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহা হইলে মস্তকলক্ষণ ক্রমেই ভাল হইতেছে এবং তোমাদের মনে হইবে যে, রোগীর মস্তক-ত্বক লক্ষণ আরোগ্য হইতে চলিয়াছে, কিন্তু যেই উদরাময় কম পড়িবে অমনি একদল নূতন উদ্ভেদ প্রকাশ পাইয়া বসিবে। যদি উদরাময় পুরাতন আকার ধারণ করে তাহা হইলে বাহ্যিক উদ্ভেদগুলি অদৃশ্য হইবে, আর যদি উদরাময়ের উন্নতি হয়, তাহা হইলে বাহ্যিক উদ্ভেদগুলি খারাপ হইয়া পড়িবে। মনে হয় এইরূপ ধাতুতে একটি নিঃসরণ রাস্তা খোলা থাকা প্রয়োজন। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীই অভ্যন্তরস্থ চৰ্ম্ম এবং বাহিরের চৰ্ম্ম উহার আবরণ, আর এই ঔষধটি ঐ দুইয়ের একটিতে, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে বা উহার আবরণে আত্মপ্রকাশ করে।
উহাতে স্তন্যপান সম্বন্ধে আর একদল লক্ষণের বিকাশ আছে, তাহা তোমাদের মনে রাখা চাই। আঁতুড় অবস্থার পর সবকিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় চলিতেছে, এরূপভাবে মাতা কিছুদিন কাটাইতে পারেন, কিন্তু হঠাৎ একটি বা দুইটি স্তন্যগ্রন্থিতে যন্ত্রণা উপস্থিত হইলে, আবার সেই একগাছি দড়ি দ্বারা পশ্চাদ্দিকে টানিয়া ধরার ন্যায় অনুভূতি দেখা দিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, যেন একগাছি দড়ি স্তনবৃন্তের পশ্চাদ্ভাগে সংলগ্ন থাকিয়া পিছন দিকে আকর্ষণ করিতেছে, একপ্রকার তীব্র, আকর্ষণবৎ, সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা, কোন কোন ক্ষেত্রে উহা মাতাকে দিবারাত্র মেঝের উপর চলিয়া বেড়াইতে বাধ্য করে। একটি সামান্য ব্যাপার হইলেও, ক্রোটন টিগ সম্বন্ধে ইহা জানিয়া রাখিবার মত একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লক্ষণ। আমরা ঐ দড়ি টানিয়া ধরার ন্যায় লক্ষণ চক্ষুতে ও স্তনে দেখিতে পাই এবং অনেকটা প্লাম্বামে’র ন্যায় নাভিদেশে চাপ পড়িলে কতকটা দড়ি দিয়া টানিয়া ধরার মত হইয়া উপস্থিত হইতে দেখিতে পাই। এইরূপ কতকগুলি ব্যাপার একত্রে মিলিত থাকায়, তোমরা উহাকে এই ঔষধের একটি প্রকৃতিগত লক্ষণ বলিয়া বুঝিতে ও মনে রাখিতে পারিবে। আমি একবার স্তনবৃন্ত হইতে দড়ি দিয়া টানার ন্যায় যন্ত্রণাদায়ক আকর্ষণ হইতে একটি স্ত্রীলোককে আরোগ্য করিয়াছিলাম। আমি তাঁহাকে মেঝের উপর দিয়া চলিয়া বেড়াইতে দেখিয়াছিলাম এবং তাহার যে খুব তীব্র যন্ত্রণা হইতেছে, তাহাও বুঝিতে পারিয়াছিলাম; কারণ সময়ে সময়ে উহাতে তাঁহার চক্ষে জল আসিতেছিল। তিনি কয়েক রাত্রি ধরিয়া উহা সহ্য করিতেছিলেন; ইহা দ্বারা বুঝা যায় যে, যন্ত্রণা দীর্ঘকালস্থায়ী এবং অত্যন্ত ক্লেশকর হইলেও, ক্রোটন টিগ তাহা আরোগ্য করিতে পারে। স্তনটিতে পুলটিস দেওয়া হইয়াছিল, উহার উপরে উষ্ণ বাহ্যিক প্রয়োগ করা হইয়াছিল, কিন্তু উহাতে উপশম হয় নাই, একথাটিও মনে রাখিবার উপযুক্ত।
শিশু-কলেরায় আমরা সাধারণতঃ বমন লক্ষণ পাইয়া থাকি, ক্রোটন টিগে উহা সাধারণ ব্যাপার নয়, যদিও ইহাতে অল্প কিছু বমন থাকিতেও পারে। সুতরাং যে-সকল শিশু কলেরার রোগীর বমন অপেক্ষা তরল মলই বেশী প্রয়োজনীয় লক্ষণ, তাহাদের পক্ষে ক্রোটন টিগ ঔষধ হইতে পারে। একটি লক্ষণের কথা জানা গিয়াছে এবং উহা বিশেষ মূল্যবান। অত্যন্ত বমি বমিভাবের সহিত দৃষ্টিলোপ ও শিরোঘূর্ণন, উহা জলপানে বর্ধিত হয়, তৎসহ অন্ত্র হইতে পুনঃপুনঃ হলদেটে সবুজবর্ণ জলবৎ মলস্রাব হয়, অত্যন্ত বমনেচ্ছার সহিত মুখে অনেকখানি করিয়া জল উঠে। কিন্তু মনে রাখিতে হইবে, অত্যন্ত বমনেচ্ছার অর্থ অত্যন্ত বমন নহে। এই বমনেচ্ছা অনেকটা ইপিকাকের বমনেচ্ছার ন্যায়, কিন্তু ইপিকাকে আমরা ক্রোটন টিগের ন্যায় মলত্যাগ পাই না, উহাতে কেবলমাত্র সামান্য বেগে নির্গত অল্প মল, প্রতি মিনিটে কোঁথানির সহিত বেগে, একটু মল পাই।
এই ঔষধ সম্বন্ধে আর একটি বিবেচনা করিবার বিষয় ইহার রাসে’র সহিত সম্বন্ধ। ইহা রাসে’র একটি প্রতিবিষ। ফোস্কাকার উদ্ভেদে ক্রোটন টিগ ‘রাস জাতীয় ঔষধসমূহের (বিশেষতঃ রাস টক্সে’র) সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত এনাকার্ডিয়াম’, ‘সিপিয়া’, ‘এনাগেলিস। ক্রোটন টিগের উদ্ভেদগুলি খুব সচরাচর জননযন্ত্রাদিকে বাছিয়া লয়। রাস’ও তাহাই করে, এবং যখন রাস’ বিষাক্ততার জননযন্ত্রেই উদ্ভেদগুলির প্রধান আবাসস্থান হয়, তখন ক্রোটন টিগ উহার প্রতিবিধান করে। আবার যখন উদ্ভেদগুলি চক্ষের ও মস্তক-তৃকের উপরে থাকে তখনও ক্রোটন টিগ প্রতিবিষের কাজ করে। কিন্তু লক্ষণগুলি হাতের চেটোয় সীমাবদ্ধ থাকিলে ক্রোটন টিগ ঔষধ নহে। ক্রোটন টিগ জননেন্দ্রিয়ের উপর যাহা করে ‘এনাগেলিস’ হাতের চেটোর উপর ঠিক তাহাই করে। ক্রোটন টিগের উদ্ভেদে কিছুটা জ্বালা আছে, কিন্তু উহা রাসে’র ন্যায় ভয়ঙ্কর নহে। রাসে’র উদ্ভেদে যে-জ্বালাকর যন্ত্রণা দেখা যায়, তাহা প্রায় আগুনের ন্যায়। উহা বায়ু লাগিলে বাড়ে এবং অঙ্গটি যতদূর সহ্য করা যায়, তত বেশী গরম জলে ডুবাইলে উপশমিত হয়। যেসকল লোকের এইরূপ রাস’জ্ঞাপক উদ্ভেদ থাকে, তাহারা চুলকানি ও জ্বালার উপশমের জন্য হাতটিকে গরম জলে ঝলসাইয়া লওয়ার কথা বলে। ক্রোটন টিগেও এরূপ আছে, কিন্তু সাধারণতঃ উহা এতই বেদনাযুক্ত থাকে যে, সে উহা স্পর্শ করিতে পারে না। যখন উদ্ভেদগুলি এরূপ মৃদু প্রকৃতির হয় যে, উহাতে হাত দেওয়া চলে, তখন আমরা দেখি যে, সামান্য রগড়াতেই চুলকানির উপশম হয়। একথা সত্য যে, যে-সকল ঔষধে চুলকাইলে উপশম হয়, তাহাদের বেশীর ভাগই চুলকাইলে উপশমযুক্ত অন্য ঔষধের প্রতিবিষ হইয়া থাকে। উহারা যত বেশী সদৃশ হয় ততই ভাল, কিন্তু যখন ঔষধগুলির সাধারণ লক্ষণগুলি মাত্র সদৃশ হয়, তখনও তাহারা প্রতিবিষ হয় এবং সাধারণ লক্ষণগুলি সদৃশ হইলেই তাহারা রোগ আরোগ্য করে। আবার ইহাও সত্য যে, ঔষধগুলি সাধারণ লক্ষণের দিক হইতে সদৃশ না হইলেও, বিশেষ স্থানীয় দিক হইতে সদৃশ হইতে পারে, তখন উহাদের দ্বারা স্থানীয় লক্ষণগুলি দূর হইতে পারে, কিন্তু রোগটি চলিতেই থাকিবে। এক্ষেত্রে, ঔষধটি রোগটিকে আরোগ্য করিবার মত সদৃশ নহে, কিন্তু উহা কতকগুলি লক্ষণ মাত্র দূর করিতে পারে। যেরূপ ঔষধ-ব্যবস্থায় রোগীর প্রকৃতির পরিবর্তন সাধন করিয়া, মাত্র রোগের লক্ষণ বিকাশের পরিবর্তন ঘটায়, তাহা অত্যন্ত হীন ঔষধ-ব্যবস্থা। এইভাবে মূর্খের মত, ঔষধ ব্যবস্থা করা হইলে চিকিৎসককে একদল লক্ষণের জন্য একটি ঔষধ খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে, এবং আর একদল লক্ষণের জন্য আর একটি ঔষধ বাছিয়া লইতে হইবে এবং ইতিমধ্যে রোগী পূৰ্ব্বাপেক্ষা আরও খারাপ হইয়া পড়িবে। ঔষধ যদি সাধারণ লক্ষণের দিক হইতে সদৃশ হয়, তাহা হইলে সামান্য বাহ্যিক লক্ষণ ততবেশী প্রয়োজনীয় নহে।
লিঙ্গমুন্ডে ও অন্ডকোষে হাজাকর চুলকানি।” জননেন্দ্রিয়ের উপর ফোস্কাকার উদ্ভেদ ও পুঁজবটীর জন্য ইহা একটি ঔষধ। এই বিষয়ে ইহা ‘পেট্রোলিয়ামের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত। পেট্রোলিয়ামে’ জননাঙ্গে সূক্ষ্ম ফোস্কাকার, উদ্ভেদ এবং দানা দানা উঁচু উঁচু উদ্ভেদ আছে এবং তাহার সহিত লাল পীড়কা মিশ্রিত থাকে, উহাতে অত্যন্ত চুলকায়, চুলকাইতে চুলকাইতে জ্বালা উপস্থিত হয় এবং তারপর রক্তপাত হইয়া চুলকানির শান্তি হয়।
(Croton-Kroton, a tick, which the seeds are supposed to resemble)
অপর নাম – ক্রোটন অয়েল (Croton oil)
বাংলায় – জয়পাল – কনকফল
ইউফরবিয়েসী জাতীয় ক্রোটন টি গলিয়াম নাম বৃক্ক ভারতবর্ষ, সিংহল ও এশিয়ার অন্যান্য স্থানে জন্মে। এর বীজ থেকে তেল বের করে মূল অরিষ্ট তৈরী হয়।
ক্রোটন টিগের – মূলকথা
১। হলদে রংয়ের জলের মত পাতলা মল, মল বন্দুকের গুলির মত সবেগে বেরিয়ে আসে, সমস্তটাই একবারে বের হয়। সামান্য আহার বা পান করার পর বৃদ্ধি।
২। সন্তানকে স্তন্য দান কালে স্তনবৃন্ত থেকে স্কন্ধাস্থি পৰ্য্যন্ত অসহ্য বেদনা।
৩। একজিমা, বিশেষতঃ অণ্ডকোষে, অত্যন্ত চুলকায় কিন্তু এত স্পর্শদ্বেষ ও টাটানি থাকে যে রোগী চুলকাতে পারে না।
ক্রোটন-টিগ একটি আলোচনা।
১। ক্রোটন টিগলিয়াম প্রবল বিরেচক ঔষধ। যখন কোন ক্ষেত্রে বিবেচন ক্রিয়া অপরিহার্য্য হয়ে উঠে এক অ্যালোপ্যাথরা তাদের হাতের সব উপায় নিঃশেষ করে ফেলেন তখন ক্রোটন টিগলিয়াম তাদের কাছে জাহাজের শেষ দাগাবার মত সৰ্ব্ববৃহৎ কমান” অর্থাৎ ইহাই তাদের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী বিরেচক ঔষধ। তখন যদি সদৃশ বিধান নীতি সত্য না হয় তাহলে ক্রোটন টিগেও উদরাময় আরোগ্য করতে সম্পূর্ণ বিফল হওয়া উচিত কিন্তু সদৃশ বিধান সত্য এবং সেই সত্য পুনঃপুনঃ প্রমাণিত হওয়া সত্তেও ভালো হেমিওপ্যাথিকে অসত্য বলেন ও আগ্রহী করেন।
পডোফাইলাম, অ্যালো, ক্রোটন টিগ এরা প্রত্যেকেই বিশেষ রকমের উদরাময় উৎপন্ন করে এবং তা আরোগ্যও করে। অন্য রকমের উদরাময় আরোগ্য করতে পারে না। ক্রোটন টিগের পরিচালক লক্ষণগুলি হল –
ক) হরিদ্রা বর্ণের জলের মত মল।
খ) মল সহসা গুলির ন্যায় নির্গত হয়, একেবারে সমস্ত মল বের হয়ে যায়।
গ) সামান্য পানে বা আহারে বাড়ে।
এই তিনটি ক্রোটন টিগের পরিচালক লক্ষণ এবং এই লক্ষণ তিনটি সমবেত হলে ক্রোটনটিগ অন্যান্য ঔষধাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এর প্রথম লক্ষণটি এপিস, ক্যালকেরিয়া অষ্টিয়াম, চায়না, গ্র্যাটিওলা, হাওসায়ামাস, নেট্রাম সালফ ও থুজায় দেখতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়র্টি পাওয়া যায় জ্যাট্রোফা, গ্র্যাটিওলা, পডোফাইলাম ও থুজায় এবং দৃষ্টি পাওয়া যায় আর্জ্জেন্টাম নাই এবং আর্সেনিক অ্যালবামে।
পার্থক্য-
ক্যালকেরিয়া জ্ঞাপক ধাতুতে ক্যালকেরিয়া অষ্ট্রিয়াম এবং দৈহিক জৈব তরল পদার্থের অপচয় জনিত দুর্বল রোগীদের পক্ষে চায় উপযোগী; এবং অন্যান্য সবগুলি ঔষধেরই প্রবল সুস্পষ্ট লক্ষণ আছে যা তাদেরকে ক্রোটন থেকে পৃথক করে দেয়। স্থানাভাবে তাদেরকে এখানে দিতে পারলাম না। অ্যালোই মল ত্যাগের আগে পেট গড়গড় শব্দ হয়। ক্রোটনে অন্ত্রে জলের ছলছল করার মত শব্দ থাকে। দুটি ঔষধেই আহারে বা পানের পর বৃদ্ধি লক্ষণ আছে। সুতরাং উদর মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার জন্য আমাদের অন্যান্য লক্ষণের সন্ধান করতে হবে। এই ঔষধে আর একটি লক্ষণ বারবার পরীক্ষিত হয়েছে -“তীব্র বেদনা, স্তন্যদান করার সময় বেদনা মায়ের স্তনবৃন্ত থেকে ঐ দিকের স্কন্ধাস্থি পৰ্যন্ত ধাবিত হয়।”
* এই লক্ষণ দ্বারা পরিচালিত হয়ে বহু রমণীর স্তন প্রদাহ আমি আরোগ্য করেছি।
২। ক্রোটন টিগ অণ্ডকোষের একজিমার আরোগ্য করে। ঐক্ষেত্রে উদ্ভেদগুলি অত্যন্ত চুলকায়। উহাতে এই স্পর্শাদ্বেষ থাকে যে রোগী আঙ্গুল দিয়ে চুলকাতে পারে না। ইহাই এর প্রধান ব্যবহার লক্ষণ।