দাম্ভিক ও সহজে নতিস্বীকার করবেনা এমন ব্যক্তি। |
ঠান্ডা ও স্যাঁৎসেঁতে স্থানে অসুস্থ। |
ভিজা মাটি বা জলীয় আবহাওয়ায় উদরাময়। |
স্যাঁৎসেঁতে স্থানে শুয়ে থাকার ফলে অসুস্থ। |
হঠাৎ গরম হতে ঠান্ডা আবহাওয়ার পরিবর্তনে রোগ। |
শরীরে উত্তাপ লাগলে রোগের উপশম অনুভূত হয়। |
ঋতুস্রাবের পূর্বে শরীরে আমবাত দেখা যায়। |
ঠান্ডা লেগে হঠাৎ ঘাম বন্ধ হয়ে শোথ ও অন্যান্য অসুস্থতা। |
উপযোগিতা — গ্ল্যান্ডের অসুখে ভোগে, সহজেই সর্দিকাশিতে ভোগে, অস্থিরতা ও সহজেই উত্তেজিত হয় এমন লোকের পক্ষে উপযোগী ।
সর্দি হয়ে বাতরোগ বা চর্মরোগ হয়। ঠান্ডা, ভেজা বর্ষাকালের জলহাওয়া গায়ে লেগে বা হঠাৎ আবহাওয়া ঠান্ডা থেকে গরম হয়ে উঠলে (ব্রায়ো), রোগলক্ষণ দেখা দেয় বা বেড়ে যায়।
ঠান্ডা লেগে ঘাম বসে গিয়ে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হতে স্রাব বেড়ে যায় (যেমন সর্দিকাশি, চোখে পিঁচুটি বা আমাশয় ইত্যাদি)।
যারা ঠান্ডা মেঝেতে বা দুগ্ধপ্রকল্পে বাস করে বা কাজ করে তাদের অসুখে উপযোগী (এরানিয়া, আর্স, নেট-সালফ)।
মানসিক বিশৃঙ্খলা, মনের ভাব প্রকাশ করতে উপযুক্ত শব্দ খুঁজে পায় না ।
গায়ের চামড়া কোমল, ঠান্ডা অসহ্য, চর্মোদ্ভেদ বিশেষ করে আমবাত হওয়ার প্রবণতা থাকে, যতবার-ই তার সর্দি হয় ও গায়ে ঠান্ডা লাগায় ততবারই ঐ চর্মোদ্ভেদ দেখা দেয়।
কাঁপুনী দিয়ে জ্বর, বাত ও স্কারলেট জ্বর হয়ে সারা দেহে ভয়ঙ্কর শোথরোগ বা ফুলে যায়।
ঘাম বন্ধ হয়ে, চর্মোদ্ভেদ চাপা পড়ে বা ঠান্ডা লেগে সর্বাঙ্গীন সাধারণ শোথ হলে ব্যবহার্য ।
উদরাময় — ভিজে জায়গায় থেকে ঠান্ডা লেগে, ভেজা কুয়াসা পূর্ণ আবহাওয়ায়, গরম আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়ে ঠান্ডা হলে দেখা দেয় (ব্রায়ো)। যুবকদের বা উঠতি বয়সের বালকদের সর্দি হয়ে প্রস্রাব কমে যাওয়া প্রস্রাব দুধের মত সাদা, ঠান্ডা জলে খালি পায়ে হাটার ফলে ঐরূপ প্রস্রাব; অসারে স্রাব হয়।
ঋতুস্রাবের আগে গায়ে উদ্ভেদ দেখা দেয় (কোনি) [ঋতুস্রাব বেশী হলে উদ্ভেদ বার হয় = বেল, গ্রাফাই] ।
সর্বাঙ্গে আমবাত বার হয়, জ্বর থাকে না, চুলকানি থাকে, চুলকালে জ্বালা করে, গরমে বাড়ে ঠান্ডায় কমে ।
মাথার চামড়ায়, মুখে, কপালে, টেম্পলে, (কানের লাতির ঠিক ওপরে), চিবুকে ঘন বাদামী হলদে রঙের মামড়ি পড়ে-মামড়ির ধারগুলো লালচে, চুলকালে রক্ত বার হয় ।
মুখে, হাতের উল্টো পিঠে, হাতের আঙুলে বড়, মসৃণ, মাংসল আঁচিল দেখা যায় (থুজা) ।
সম্বন্ধ — ব্যারাইটা-কার্ব ও কেলি-সালফের অনুপূরক ।এসেটিক-এ্যাসিড, বেল ও ল্যাকের সাথে শত্রু সম্বন্ধ। এদের আগে বা পরে ব্যবহার সমীচিন নয় ।
ক্যালকেরিয়া, ব্রায়ো, লাইকো, রাস-ট, সিপিয়ার পর ভাল খাটে ।
সমগুণ – লালাস্রাব, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ব্রঙ্কাইটিস, উদরাময় আবহাওয়ার পরিবর্তনে অসুস্থ হওয়া ও রাতে ব্যথা বেদনা বেড়ে যাওয়া লক্ষণে মার্ক এর সদৃশ ।
কেলি-সালফ এর সদৃশ কারণ এ ওষুধ রাসায়নিক সদৃশ।
পারদের কুফল বা অপব্যবহারে এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়।
বৃদ্ধি — সাধারণভাবে ঠান্ডায়, ঠান্ডা বাতাসে, ঠান্ডা ভেজা জলহাওয়ায়, ঋতুস্রাবে, চর্মোদ্ভেদ ও ঘাম বন্ধ হলে রোগ লক্ষণ বেড়ে যায় ।
উপশম – হাটাচলায় (ফেরাম, রাস-ট)।
শক্তি — ৬, ৩০, ২০০ ।
গ্রীষ্মের শেষভাগে, যখন দিনের বেলায় গরম ও রাত্রে ঠান্ডা থাকে এই জাতীয় আবহাওয়া, এই ঔষধের কাজের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ এবং ভিজে, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় যে সকল ঔষধ কাজ করে এটি ঐগুলির মধ্যে একটি, আর্দ্র জলবায়ুতে ভিজার পরে ঠান্ডা লাগা, বিশেষ করে উদরাময়ে ভালো কাজ করে। চামড়া, গ্রন্থিসমূহ ও পাকাশয় তন্ত্রের, উপর এই ঔষধটির বিশেষ কাজ আছে, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী থেকে প্রচুর স্রাব অথচ চামড়া নিষ্ক্রিয় থাকে। ভিজে আর্দ্র জলবায়ুতে বাতজনিত কষ্টসমূহ এবং কষ্ট আবহাওয়ায় শীতল পরিবর্তন বৃদ্ধি এবং ঘুরে বেড়ালে কষ্টের কিছুটা উপশম হয়। ভিজে, স্যাঁতসেতে মেজের উপর থেকে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের উপসর্গে। বরফের মত ঠান্ডা। একাঙ্গীন আক্ষেপ তৎসহ বাকরোধ। একাঙ্গীন পক্ষাঘাত। রক্তসঞ্চয়জনিত কারনে মাথার যন্ত্রনা, তৎসহ স্নায়ুশূল ও নাসিকা শুষ্ক। রোগী ভিজে স্যাঁতসেঁতে মেজের উপর থাকে বা কাজ করে। (নেট্রাম সালফ)। মাসিক ঋতুস্রাবের সময় হাতে, বাহুতে ও মুখমন্ডল উদ্ভেদ সমূহ।
মাথা – মানসিক বিভ্রান্তি। মাথার পিছনের অংশে বেদনা, বেদনা ঘাড় থেকে উপরের দিকে উঠে। বাক্যালাপে মাথার যন্ত্রনার উপশম হয়। যে সব জিনিষ রোগী চায়, তাই সে প্রত্যাখ্যান করে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় মাথার পিছনের অংশে শীতবোধ, ভারীবোধ ও কন্কন করে। মাথার চামড়ায় দাদ। ছেকা দেওয়ার ন্যায় মাথা, পুরু বাদামী রঙের মামড়ি, আঁচড়ালে রক্ত আসে, মাথার ভিতর কনকন করে।
নাক — শুষ্ক সর্দি। নাক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। ঠান্ডা বৃষ্টিতে নাক বন্ধ হয়ে যায়। গাঢ়, হলুদ বর্ণের শ্লেষ্মা, রক্তাক্ত মামড়ী। প্রচুর সর্দি, সর্বদা নাক গরম রাখতে চায়, সামান্য ঠান্ডা বাতাসে নাকবন্ধ হয়ে যায়। সদ্যজাত শিশুর সর্দি।
চোখ – প্রতিবার ঠান্ডা লাগার সময় চোখ আক্রান্ত হয়। গাঢ় হলুদবর্ণের স্রাব; চোখের পাতায় দানা-দানা উদ্ভেদ দেখা যায়। হাই-ফিভার; প্রচুর, জলের মত স্রাব, মুক্ত বাতাসে বৃদ্ধি।
কান – কানের বেদনা, কানের ভিতর ভোঁ-ভোঁ করে, সুঁচ ফোটার মত বেদনা, এবং কর্ণমূলগ্রন্থির স্ফীতি। মধ্য কর্ণের প্রদাহ (মার্ক ডাল; ক্যালিমিউর)।
মুখমন্ডল — গালে ছিড়ে যাবার মত বেদনা, বেদনা কান, চক্ষুকোটর ও চোয়াল পর্যন্ত প্রসারিত হয়, বেদনা শুরু হবার আগে আক্রান্ত অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়, তৎসহ কুকুরের ন্যায় ক্ষুধা থাকে। গালে ও মুখমন্ডলে আর্দ্র উদ্ভেদ সমূহ।
মুখগহ্বর — লালা চটচটে ও সাবানের মত। শুষ্ক, খসখসে জিহ্বা, গলা খসখসে, চেঁচে ফেলার মত, ভিজে আবহাওয়ায় ঠান্ডা লাগার পরে। ঠোঁটের উপর ঠান্ডা লেগে ক্ষত। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল; সামান্য ঠান্ডা লাগলে বৃদ্ধি।
পাকস্থলী — সাদা, চটচটে শ্লেষ্মা বমন। খাদ্যে বিতৃষ্ণা। ঠান্ডা জলপানের জ্বালাকর পিপাসা। গলা বুক জ্বালা। মলবেগের সঙ্গে বমি বমিভাব। বমির সময় শীতবোধ।
উদর – ঠান্ডা লেগে শূলবেদনা। নাভী প্রদেশের চারিদিকে বেদনা। নাভির চারিদিকে কেটে ফেলার মত বেদনা। কুঁচকি স্থানের গ্রন্থিজ স্ফীতি (মার্কিউরিয়াম)
মল – সবুজ, জলের মত, পিচ্ছিল, রক্তযুক্ত, শ্লেষ্মা, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, যখন হঠাৎ করে আবহাওয়া ঠান্ডা হয়ে যায়; ভিজে স্যাঁতসেতে, ঠান্ডা আবহাওয়া ও উদ্ভেদ বসে যাওয়া।
প্রস্রাব — ঠান্ডা লাগলেই প্রস্রাব করতে বাধ্য হয়। কষ্টকর প্রস্রাব। ঠান্ডা লাগার ফলে প্রস্রাব থলির প্রদাহ। প্রস্রাব গাঢ়, শ্লেষ্মা যুক্ত, পুঁজের মত তলানি যুক্ত, ঠান্ডা জলের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটার ফলে মূত্র রোধ।
স্ত্রীরোগ — ঠান্ডা অথবা ভিজে আবহাওয়ায় মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ঋতুস্রাব দেখা দেবার পূর্বে, চামড়ায় একপ্রকার উক্তে দেখা যায় অথবা যৌন উত্তেজনা দেখা যায়। বাধক বেদনা, তৎসহ সমগ্র শরীরে ফুস্কুড়ি বেরিয়ে থাকে; স্তন্যগ্রন্থিতে রক্তাধিক্য এবং টাটানি, অল্পতেই আঘাত লাগে। ঠান্ডায় অনুভূতিপ্রবণ। শ্বাস-প্রশ্বাস – কাশি ঠান্ডা, ভিজে আবহাওয়ায় বৃদ্ধি, তৎসহ প্রচুর শ্লেষ্মাস্রাব, কণ্ঠনলীর ভিতর সুড়সুড় করে। কাশি, স্বরভঙ্গ আক্ষেপিক। হুপিং কাশি তৎসহ প্রচুর শ্লেষ্মা নিঃসরণ। শীতকালে শুষ্ক, বিরক্তিকর কাশি। হাঁপানী তৎসহ শ্বাসকষ্ট। তরল, ঘড়ঘড়ে কাশি; ভিজে আবহাওয়ায় বৃদ্ধি। বহু সময় ধরে কাশির পরে তবে শ্লেষ্মা উঠে। শারীরিক পরিশ্রমের পরে কাশি।
পিঠ – ঘাড়ের আড়ষ্টতা। কোমরের বেদনা, অনেকক্ষণ ধরে ঝুঁকে থাকার পরে যেরূপ বেদনা হয় সেই জাতীয় বেদনা। ঘাড় ও কাঁধের আড়ষ্টতা ও খঞ্জতা, ঠান্ডা লাগার অথবা আর্দ্রতার পরে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ — পক্ষাঘাতঃ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত, পা বরফের মত ঠান্ডা হাতের উপর আঁচিল। পর্যায়ক্রমে বাত ও উদরাময়। পায়ের টিবিয়া অস্থিতে বেদনা। তরুন চর্মোদ্ভেদের পরে বাতজনিত লক্ষন সমূহের উদ্ভব।
চামড়া – গ্রন্থির প্রদাহ। চুলকানি, সর্বদা ঠান্ডা, আর্দ্র আবহাওয়ায় বৃদ্ধি। হার্পিস জুস্টার, পোড়ানারাঙ্গা। ঠান্ডা লেগে গ্রন্থির স্ফীতি ও কঠিনতা। ফোস্কার ন্যায় উদ্ভেদ। অনুভুতি প্রবন, রক্তস্রাব যুক্ত ক্ষত সমূহ। ছোট-ছোট ফোঁড়া। লাল-লাল ছোপ,আমবাত, ঠান্ডা লাগার পরে অথবা অম্ল হবার পরে দেখা দেয়। মুখমন্ডল, যৌনাঙ্গ, হাতে প্রভৃতিস্থানে আর্দ্র উদ্ভেদ সমূহ। আঁচিল, বড়ো বড়ো, মসৃন, মুখমন্ডলেও হাতের তালুতে। সর্বাঙ্গীন শোথ। পুরু, বাদামী হলুদ বর্ণের মামড়ি, আঁচড়ালে রক্ত বার হয়।
জ্বর — সারা শরীরের শুষ্ক, জ্বালাকর, উত্তাপ। সন্ধ্যার দিকে শীতবোধ, বিশেষ করে, পিঠের দিকে। বরফের মত ঠান্ডা, তৎসহ বেদনা। শুষ্ক উত্তাপ ও চামড়ায় জ্বালাকর অনুভূতি। শীতবোধ তৎসহ পিপাসা।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি, রাত্রে; সাধারণভাবে ঠান্ডায়, ভিজে, বৃষ্টিযুক্ত আবহাওয়ায়।
উপশম, ঘরে বেড়ালে, বাহ্যিক উষ্ণতায়।
সম্বন্ধ – দোষঘ্ন-ক্যাম্ফর, কিউপ্রাম।
পরিপূরক – ব্যারাইটা কার্ব।
প্রতিবন্ধক – বেলেডোনা, ল্যাকেসিস।
তুলনীয় — পিমপিনেলো- (বাইবারনেল)-শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ঠান্ডায় অনুভূতি প্রবন, মাথার পিছনের অংশে ও ঘাড়ে ঠান্ডা অনুভূতি ও বেদনা। সারা শরীর দুর্বল; মাথায় ভারীবোধ ও তন্দ্রালুতা; কোমরে বেদনা ও ঘাড় আড়ষ্ট; ঘাড় থেকে কাঁধ পর্যন্ত বেদনা; শীতবোধ।
রাসটক্স, সিমিসিফিউগা; ক্যল্কেরিয়া কার্ব, পালসেটিলা; ব্রায়োনিয়া; নেট্রাম সালফ।
শক্তি — ২য় থেকে ৩০ শক্তি।
মনে হয়, এই ঔষধটি বিশেষভাবে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীকেই আক্রমণ করে। ইহাতে তরুণ ও পুরাতন উভয়প্রকার শ্লেষ্মাস্রাব স্থাপন করিবার ও আরোগ্য করিবার প্রবণতা আছে।
ডালকামারা রোগী প্রত্যেকবার আবহাওয়ার পরিবর্তনে গরম হইতে ঠান্ডায়, শুষ্ক হইতে ভিজায় এবং ঘৰ্ম্মকালে অকস্মাৎ শরীর ঠান্ডা হওয়ায়, রোগাক্রান্ত হয়। সে একটানা শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাল থাকে, ঠান্ডায় ও ভিজায় তাহার সকল অবস্থার উপচয় হয়। সে সন্ধ্যাকালে এবং রাত্রে এবং বিশামকালে বৃদ্ধিযুক্ত হয়।
ডালকামারা পাকস্থলী, অন্ত্রাদি, নাসিকা, চক্ষু ও কর্ণের সর্দি উৎপন্ন করে এবং চৰ্ম্মের উদ্ভেদযুক্ত প্রদাহের সৃষ্টি করে। যদি তোমরা এই সকল রোগের কোনটির বিশেষ লক্ষণগুলির আলোচনা কর, তাহা হইলে তোমরা দেখিয়া বিস্মিত হইবে যে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে ইহার রোগীর ধাতুগত অবস্থা কত বিচলিত হয়।
গ্রীষ্মের শেষে যখন দিবাভাগ গরম এবং রাত্রিকাল ঠান্ডা, তখনকার উদরাময়ে, পরিবর্তনশীল উদরাময়ে, শিশুদিগের উদরাময়ে ইহা একটি আশ্চর্য্যভাবে উপযোগী ঔষধ। মনে হয়, রোগীর কোনরূপ হজমশক্তি থাকে না, হরিদ্রাবর্ণ পিচ্ছিল মল, হরিদ্রাভ-সবুজবৰ্ণ মল, তৎসহ অজীর্ণ ভুক্তবস্তু, পুনঃপুনঃ মলবেগ, মলের মধ্যে রক্ত এবং সম্পূর্ণভাবে এক থোকা আম; ইহা সুস্পষ্ট সর্দিজ অবস্থা নির্দেশ করে। এই অবস্থা একবার বাড়িতে একবার কমিতে থাকে, সাধারণ ঔষধে উপশম হয়, কখন কখন ‘পালসেটিলায় উপশম হয়, কারণ ‘পালসেটিলা’ লক্ষণের প্রাধান্য থাকে বলিয়া মনে হয়, আবার কখন কখন আর্নিকা’তেও ইহার উপশম হয়। কিন্তু যতবারই শিশুর ঠান্ডা লাগে, ততবারই উহা ফিরিয়া আসে এবং শীঘ্রই চিকিৎসকের উপলব্ধি হয় যে, তিনি লক্ষণসমষ্টির উপযুক্ত ঔষধটি ধরিতে পারেন নাই। প্রায়ই ইহা একটি বিরক্তিকর অবস্থা, কারণ দুই-তিনবার আক্রমণ উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত লক্ষণগুলি বুঝিতে পারা যায় না। রোগাক্রমণ যে ঠান্ডা লাগায় উপস্থিত হইতেছে, আবিষ্কার করা সহজ নয়।
প্রত্যেক বৎসর স্ত্রীলোকেরা, গ্রীষ্ম ঋতুর পর শিশুদিগের পাহাড় হইতে নামাইয়া আনেন এবং আমরাও কয়েকটি ডালকামারা রোগী পাই। এ যে কিরূপ অবস্থা তাহা জানিবার জন্য পাহাড়ে থাকার প্রয়োজন। এই সময়ে তুমি যদি উত্তর দিকের অথবা পশ্চিম দিকের পাহাড়ে যাও, তাহা হইলে দেখিবে যে দিনের বেলা সূর্যের কিরণ খুব প্রখরভাবে নামিয়া আসে কিন্তু সূর্যাস্তের পর যদি তুমি বাহির হইয়া বরাবর হটিতে থাক, একটি শীতল বায়ুপ্রবাহ নামিয়া আসিবে এবং . তোমার হাড় পর্যন্ত ঠান্ডা করিয়া দিবে। এই অবস্থা শিশুকে পীড়িত করে, দিনের মধ্যভাগ এত গরম থাকে যে শিশুকে বাহিরে লইয়া যাওয়া যায় না, সেইজন্য তাহাকে সন্ধ্যাকালে গাড়ী করিয়া বাহিরে লইয়া যাওয়া হয়; দিনের বেলায় সে বাড়ীর মধ্যে অত্যুত্তপ্ত হইয়া থাকে এবং তারপর এই সন্ধ্যার বায়ুপ্রবাহ লাগিয়া যায়। ঠিক এইরূপ অবস্থা হইতে যে সকল রোগাবস্থার উৎপত্তি হয়, ডালকামারা তাহাতে উপযোগী। যে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি সূৰ্য্যোত্তাপে বাহিরে যায় এবং রাত্রে ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহ লাগাইয়া আসে—অর্থাৎ গ্রীষ্মের শেষে বর্ষা নামিলে এবং শীতের আগমনে যেরূপ হইয়া থাকে; যেরূপ উত্তপ্ত বায়ু ও ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহের সংমিশ্রণ ঘটে, তাহাতে তাহারাও পীড়িত হইয়া পড়ে।
কতকগুলি লোকের এরূপ জীবিকা; যে তাহারা বাস্তবিকই ডালকামারার অবস্থায় স্থাপিত। আমাদের আইসক্রিম ওয়ালা, বরফ লইয়া কাজ করে এরূপ লোক; ঠান্ডা ঘরে কাজ করা লোকের কথা ধর; ঠান্ডা ঘরে তাহাদিগকে বরফ লইয়া কাজ করিতে হয়; গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া উত্তপ্ত থাকে, তাহাদিগকে বাহিরে যাইতে এবং কিছু উত্তপ্ত হইতেই হয় এবং তারপর আবার তাহাদের ঠান্ডা ঘরে ফিরিয়া গিয়া বরফ লইয়া কাজ করিতে হয়। আমি এ সব ব্যাপার দেখিয়াছি এবং এইসব লোককে পৰ্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাইয়াছি। এই সকল লোক সময়ে সময়ে অন্ত্রাদির রোগ, সর্দি রোগ কিন্তু সাধারণতঃ উদরাময় রোগের অধীন হয়। তাহাদের কাজ থামিতে পারে না কারণ উহাই তাহাদের জীবিকার উপায়। লক্ষণ মিলিলে ডালকামারা ঐরূপ পুরাতন উদরাময় আরোগ্য করে। লক্ষণ মিলিলে আর্সেনিকাম’ও এরূপ রোগীদের পক্ষে উপযোগী হইতে পারে, কিন্তু সময়ে সময়ে লক্ষণগুলি ডালকামারার সহিতই মিলিয়া যায়, কারণ ঔষধটির প্রকৃতিই এইরূপ-ঠান্ডা ভিজা স্থান হইতে ঠান্ডা লাগা; ঘাম লোপ পাওয়া; গরম আবহাওয়া হইতে বরফের ঘরে, বরফের ন্যায় ঠান্ডা ঘরে; ঠান্ডা ঘরে হাওয়া। এখানকার মত জলবায়ুতে অতি পরিশ্রমে, অত্যুত্তপ্ত হওয়ায় এবং তারপর পোষাক খুলিয়া ফেলিয়া ঠান্ডা লাগায় ও ঘর্মলোপ হওয়ায় যেরূপ রোগ উপস্থিত হয়, হয়ত জ্বরও হইতে পারে, হাড়ের মধ্যে কনকনানি, কনকনানির সহিত কম্পন, পেশীসমূহের মধ্যে কম্পন, এবং জ্বর যত চলিতে থাকে, তাহার অবস্থাও কষ্টকর হয়, কিছু স্মরণে রাখিতে পারে না, সে কি বলিতে যাইতেছিল ভুলিয়া যায়, যে কথাটি দ্বারা সাধারণতঃ তাহার মনোভাব ব্যক্ত হইতে পারে তাহা ভুলিয়া যায় এবং সে একপ্রকার মূঢ় অবস্থায়, একরূপ, বিশৃঙ্খল অবস্থায় উপস্থিত হয়। যেরূপ ঠান্ডায় ঐরূপ মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন মন্থর হয়, তৎসহ কম্পন, হাড়ের ভিতর পর্যন্ত ঠান্ডা লাগার মত হয়, ইহা সেইরূপ ঠান্ডায় উপযোগী।
ডালকামারা বাতে পূর্ণ, বাতের যন্ত্রণা, কনকনানি, সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঘেঁলাইয়া যাওয়ার মত যাতনায় পূর্ণ সন্ধিগুলি প্রদাহিত হয়, লাল হইয়া উঠে, স্পর্শকাতর হয়, ফুলিয়া উঠে। ইহা, ঘৰ্মলোপ পাওয়ায়, উচ্চ উত্তাপ হইতে নিম্ন উত্তাপে পরিবর্তনহেতু অথবা ঠান্ডা ভিজা আবহাওয়ার জন্য যেরূপ প্রদাহযুক্ত বাত হয় তাহাতে উপযোগী। সন্ধ্যাকালে, রাত্রে এবং বিশ্রামে বৃদ্ধি।
তারপর হইতে বহু পুরাতন রোগ আছে। চক্ষুর সর্দিজ অবস্থা, পুঁজের ন্যায় স্রাব, ঘন, হলদে স্রাব, চক্ষুপাতায় দানাদানা, যতবার সর্দি লাগে ততবারই চক্ষু লাল হইয়া উঠে; রোগী বলে, যতবারই ঠান্ডা লাগে উহা চক্ষে বসে।” রোগী প্রায়ই প্রশ্ন করে,—“ডাক্তার, কেন এরূপ হয়; যতবারই আমার ঠান্ডা লাগে ততবারই উহা আমার চক্ষে বসে? যদি আমি ঠান্ডা আবহাওয়ায় যাই, অথবা উত্তপ্ত হাওয়ার পর আমার কোট খুলিয়া ফেলি তাহা হইলেই আমাকে পীড়িত হইতে হয়। যদি রাত্রে ঠান্ডা পড়ে এবং সে গায়ের কাপড় ফেলিয়া দেয়, তাহা হইলে তাহার ঠান্ডা লাগে, অথবা যদি ঠান্ডা বৃষ্টি হয়, তাহা হইলেও তাহার ঠান্ডা লাগে এবং তারপর তাহার চক্ষুরোগ দেখা দেয়। এইরূপ চক্ষু ডালকামারা দ্বারা স্থায়ীভাবে আরোগ্য হয়। চক্ষু সম্বন্ধে উহা একটি সাধারণ সর্দিজ অবস্থা কিন্তু যেভাবে উহা উপস্থিত হয়, তাহাই বিশেষ প্রয়োজনীয় বিষয়। রোগীর প্রকৃতিই এইরূপ যে ঠান্ডা লাগিলেই তাহার চক্ষুরোগ উপস্থিত হয়। এরূপ অবস্থা আরও ঔষধে আছে, কিন্তু উহা ঔষধের একটি বিশেষ প্রকৃতি।
ডালকামারায় রক্তাক্ত মামড়ীবিশিষ্ট নাকের সর্দিও আছে। সর্বক্ষণ ঘন হলদে শ্লেষ্মা ঝরিতে থাকে। যে-সকল শিশুর ও বালক বালিকার নাক সাটিয়া ধরা আছে, তাহারা সর্বদাই ঠান্ডা আবহাওয়ায় খারাপ হয়। রোগীরা বলে- “ডাক্তার, ঠান্ডা ভিজা আবহাওয়ায় আমি নাক দিয়া নিঃশ্বাস লইতে পারিনা, আমার নাক কুঁজিয়া যায়।” অথবা বলে, “আমাকে মুখ হাঁ করিয়া ঘুমাইতে হয়।” যে-সকল সর্দিতে রোগীর ঠান্ডা বৃষ্টিপাতের সময় নাক পুঁজিয়া যায়, ডালকামারা তাহাদের পক্ষে একটি বিশেষ উপযোগী ঔষধ।
ইহা সুস্পষ্টভাবে একটি শরঙ্কালের ঔষধ। ডালকামারা রোগীরা গ্রীষ্মকাল খুব স্বচ্ছন্দে কাটায়, তাহাদের সর্দিজ অবস্থা অনেক পরিমাণে কমিয়া যায়; দিন গরম থাকে, রাত্রিও গরম থাকে, তাপের এই সমতা, তাহাদের পক্ষে উপযোগী হয়, কিন্তু যেই রাত্রি ঠান্ডা হইয়া পড়ে এবং ঠান্ডা বৃষ্টি ফিরিয়া আসে; তাহাদের বাত ও সর্দিজ অবস্থার বৃদ্ধি হয়। এই ঔষধ আমাদিগের জননীগণের দ্বারা অনেকদিন যাবৎ ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে। তাহারা ডালকামারা দিয়া মলম প্রস্তুত করেন। যে-সকল পল্লী অঞ্চলে ডালকামারা জন্মে, তোমরা দেখিবে যে, সেখানকার বৃদ্ধ মহিলারা উহা সংগ্রহ করিয়া ক্ষতের মলম তৈয়ারী করিয়া থাকেন। আরক বা প্রলেপ অথবা অন্য যে-কোন রকমেই হউক, উহা যন্ত্রণাদায়ক ক্ষতের উপরে বাহ্যপ্রয়োগ করিলে যে কিরূপ আরামদায়ক হয়, তাহা বিস্ময়কর। কিন্তু ইহা নিশ্চিতই আরও ভাল ঔষধ, যখন ধাতুগত লক্ষণ অনুসারে আভ্যন্তরিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। ইহা ক্ষত জন্মায়, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে ক্ষত জন্মাইবার প্রবণতা সৃষ্টি করে এবং ঐ ক্ষত গলিত ক্ষতে পরিণত হয়। সময়ে সময়ে উহা যেন ইন্দ্রবিদ্ধার উদ্ভেদ ব্যতীত আর কিছুই নহে, এরূপ ভাবে আরম্ভ হয়, কিন্তু উহা বিস্তৃত হইতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত হলদে পুঁজ জন্মে এবং যেরূপ দানাবিশিষ্ট হওয়া উচিত, সেরূপ হয় না, একপ্রকার ক্ষয়কর অবস্থা দেখা দেয় এবং ক্ষতের উপরিভাগ আরোগ্য হয় না। প্রধানতঃ হাঁটুর নিম্নের বৃহৎ অস্থিতে ক্ষতযুক্ত স্থান দেখা যায়, উহা অস্থিবেষ্ট পর্যন্ত ও হাড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, ফলে অস্থিপচন, অস্থিক্ষয় উৎপন্ন হয়; সুতরাং আমরা যে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ও চৰ্ম্মের রোগ পাইলাম, তাহা প্রথমে ফুস্কুড়ির ন্যায় হয়, তারপর ঐ ফুস্কুড়ি ফাটিয়া যায় এবং ক্ষয় হইতে থাকে। ইহা বিশেষভাবে স্পর্শকাতর, রক্তস্রাবী ক্ষতের পক্ষে উপযোগী, উহাতে কৃত্রিম দানা জন্মে এবং পচনশীল ক্ষতে পরিণত হয়। একথা সাধারণের জানা নাই, যাহারা এই ঔষধটিকে লক্ষ্য করিয়াছেন, ইহা তাঁহাদিগের অভিজ্ঞতার বিষয়; আবার, আরও একটি বিস্ময়ের বিষয় এই যে, “আর্সেনিকাম, যাহার কথা আমি দুই একবার উল্লেখ করিয়াছি, তাহাতেও এইরূপ অবস্থা আছে। ক্ষয়কর ক্ষত, পচনশীল ক্ষতের পক্ষে আর্সেনিকাম বিস্তারশীল ঘায়ের, বিস্তারশীল ক্ষতের এবং বিশেষভাবে বাগি চিরিয়া দেওয়ায় সকল ঔষধের অগ্রণী। যে ক্ষত উৎপন্ন হয়, কিন্তু আরোগ্য হয় না তাহার পক্ষে আর্সেনিকাম’ আদর্শ ঔষধ।
শরীরের উপর ছড়ান উদ্ভেদ সৃষ্টি করার প্রবণতা এই ঔষধের আর একটি লক্ষণ। ইহা একটি অদ্ভুত উদ্ভেদ প্রকাশক ঔষধ; ফোস্কা, মামড়ী, শুষ্ক ফাটা মামড়ী, ভিজা মামড়ী, ইন্দ্রবিদ্ধা উৎপন্ন করে। ডালকামারা যে উদ্ভেদ উৎপন্ন করে, তাহা চৰ্মদল রোগের এত সদৃশ যে, উহা ঐ অবস্থার অর্থাৎ দলবদ্ধ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোড়ার পক্ষে বিশেষ উপযোগী; ইহা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোড়া উৎপন্ন করে এবং ফোড়াগুলি ছড়াইতে থাকে। গ্রন্থিসমূহের বৃদ্ধি ও কঠিনতা। মস্তক-ত্বকে উদ্ভেদ, উহা দুগ্ধপীড়কার অত্যন্ত সদৃশ দেখায়, উহাতে ডালকামারাকে বিশেষ উপযোগী হইতে দেখা গিয়াছে। অত্যন্ত ক্ষততা, চুলকানি, চুলকাইলে চুলকানির নিবৃত্তি হয় না; যে-পর্যন্ত রক্তপাত ও হাজা উৎপন্ন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত চুলকানি চলিতে থাকে। মুখমন্ডলের উপর, কপালের উপর, নাকের সর্বত্র, বিশেষতঃ গলের উপর যে-সকল উদ্ভেদ উৎপন্ন হয় এবং মামড়ীতে ঢাকিয়া যায়; শিশুদের পামা। মাত্র কয়েক সপ্তাহ বয়স্ক শিশুদের মস্তক-ত্বকে এইরূপ উদ্ভেদ উৎপন্ন হইলে, যে-সকল ঔষধের প্রয়োজন হয়, ডালকামারা তাহাদের অন্যতম। অন্যান্য ঔষধগুলির যেকোনটির ন্যায়, ইহাও সচরাচর প্রযোজ্য হয়। সিপিয়া’, ‘আর্সেনিকাম’, ‘গ্রাফাইটিস, ডালকামারা, পেট্রোলিয়াম’, ‘সালফার এবং ক্যাল্কেরিয়া প্রায় সমভাবেই প্রযোজ্য হয়, কিন্তু এইগুলির মধ্যে অন্ততঃ এই প্রকার আবহাওয়ায়, আমার মনে হয় ‘সিপিয়া’ই সম্ভবতঃ বেশী নির্দিষ্ট হয়।
এই সর্দিজ অবস্থা, এই বাত-লক্ষণ, এই চর্মের উপর উদ্ভেদ, ইহার ধাতুগত অবস্থার ন্যায়, বৃদ্ধি-লক্ষণযুক্ত হইয়া থাকে। লক্ষণগুলি যাহাই হউক না কেন, ভিজা আবহাওয়ায় ইহার ধাতুগত অবস্থা খারাপ হইবেই।
“ভিজা ঠান্ডা আবহাওয়ায় সর্দিজ ও বাতজনিত শিরঃপীড়া।” সর্দি যখন প্রধান রোগ হয় তখন উহা যেভাবে চলে, শিরঃপীড়া যখন প্রধান রোগ হয় তখন উহা ভিন্ন প্রণালীতে চলিতে থাকে। দুই ভাবে উহা চলিতে থাকে। কতকগুলি ডালকামারা রোগীর ভিজা ঠান্ডা আবহাওয়ায় সর্দি লাগিলে হাঁচি আরম্ভ হয় এবং নাক ঝাঁড়িতে থাকে এবং শীঘ্রই প্রচুর, ঘন, হলদে শ্লেষ্মাস্রাব হইতে থাকে। অপরপক্ষে, ডালকামারায় প্রথম হইতেই শুষ্ক সর্দি আছে এবং ঝরা সর্দি আসে দ্বিতীয় অবস্থায়। যাহারা ডালকামারা জ্ঞাপক শিরঃপীড়ায় আক্রান্ত হয়, তাহাদের শুষ্ক সর্দি থাকে; যখনই তাহার ঠান্ডা লাগে, স্বাভাবিক সর্দিস্রাবের পরিবর্তে, সে প্রথমেই হাঁচিতে আরম্ভ করে এবং তারপর বায়ু পথগুলিতে শুষ্কতা অনুভব করিতে থাকে; সাধারণ প্রকারের ঝরা সর্দি উপস্থিত হইলে, তাহার উপশম হইতে পারি, কিন্তু তাহাকে অপেক্ষা করিতে হয়, কারণ সঙ্গে সঙ্গেই স্নায়ুশূল, ঘাড়ের পশ্চাদ্ভাগে যন্ত্রণা এবং পরিশেষে সারা মাথায় যন্ত্রণা উপস্থিত হয়। রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া, তৎসহ স্নায়ুশূল ও নাসিকার শুষ্কতা। প্রত্যেক বারের ঠান্ডা, ভিজা আবহাওয়াতেই শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। সর্দি সব সময় মনোযোগ দিবার মত প্রবল থাকে না। ডালকামারার শিরঃপীড়া অত্যন্ত গুরুতর, উহার সহিত ভীষণ যন্ত্রণা থাকে, সে ঐ শিরঃপীড়া হইতে পরিত্রাণ পাইবার আশায় ডাক্তারের কাছে যায়। যেই শ্লেষ্মাস্রাব আরম্ভ হয়, অমনি তাহার শিরঃপীড়ারও উপশম হয়। সুতরাং এই সর্দিজ শিরঃপীড়া, যাহা প্রত্যেকবার ভিজা ঠান্ডার আগমনে, অত্যুত্তপ্ত হওয়ায়, অত্যুত্তপ্ত হইয়া ঠান্ডা বাতাস লাগাইলে অথবা অত্যন্ত গরম জামা পরিয়া অত্যুত্তপ্ত হওয়ার পর জামা কাপড় খুলিয়া ফেলিলে উপস্থিত হয়, তাহাও ডালকামারার অধিকারভুক্ত।
যে-প্রকারের উদ্ভেদ খুব সম্ভবতঃ ডালকামারা সদৃশ হইয়া থাকে, তাহা দদ্রু ও ইন্দ্রবিদ্ধা। উহা মুখমন্ডলে ও মস্তক-ত্বকের উপর জন্মে। শিশুদিগের সময়ে সময়ে চুলের মধ্যে দদ্রু জন্মে। ডালকামারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই চুলের মধ্যের দন্দ্র আরোগ্য করে।
ডালকামারা শিশুর অতি সহজেই কর্ণশূল দেখা দেয়।
“সর্দি-শুষ্ক, সঞ্চালনে উপশমিত, বিশ্রামকালে বৰ্দ্ধিত, সামান্য উন্মুক্ত হওয়ায় প্রত্যাবৃত্ত এবং ঠান্ডা বাতাসে উপচয়যুক্ত হয়। কোন কোন সর্দিতে গরম ঘরে থাকা সহ্য হয় না, আবার অপর কতকগুলিতে গরম ঘর চায়। ডালকামারার সর্দি বাহিরে খোলা বাতাসে গেলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং সঞ্চালনে উপশমিত হয়। নাক্স ভমিকা’র সর্দি খোলা বাতাসে ভাল থাকে। রোগী নাকের মধ্যে টনটন্ করার ন্যায় যাতনা অনুভব করে। নাক্স ভমিকা’র রোগী সাধারণতঃ গরম চায়, গরম বাতাস চায়, গরম ঘরে থাকিতে চায়, কিন্তু সর্দিতে ঠিক বিপরীত অবস্থা, সে খোলা বাতাসে সঞ্চালন চায়, সে খোলা বাতাস আকাক্ষা করে, কারণ উহাতেই তাহার কষ্টদায়ক অনুভূতির উপশম হয়। গরম ঘরে তাহার নাকে সুড়সুড়ির অনুভূতি থাকে এবং নাক হইতে দিবারাত্র ফোটা ফোটা সর্দি ঝরে। নাক্স ভমিকা’র সর্দি গৃহ মধ্যে থাকিলে খারাপ হয়, রাত্রিকালে খারাপ হয় এবং গরম বিছানায় খারাপ হয়, সেই জন্য সকল নিঃস্রাব বালিশের উপর গড়াইয়া পড়ে। ডালকামারায় সর্দি বাড়ীতে থাকায়; ও গরমে বেশী তরল হয় এবং ঠান্ডা ঘরে ও ঠান্ডা বাতাসে কম তরল হয়। ডালকামারার সর্দিতে, রোগী যদি ঠান্ডা ঘরে যায়, তাহা হইলে তাহার নাকের হাড়ে যন্ত্রণা আরম্ভ হয়, সে হাচিতে থাকে এবং তাহার নাক হইতে জল ঝরিতে থাকে। কিন্তু ঠিক ঐরূপ অবস্থায় নাক্স ভমিকা’র রোগী উপশম পায়। এলিয়াম সেপা’র গরম ঘরে খারাপ হয়; নাক্স ভমিকা’র ন্যায় ঠান্ডা খোলা বাতাসে উপশম হয়। সুতরাং আমরা দেখিতেছি যে, এই ব্যাপারে বিশেষ লক্ষণগুলি গ্রহণ করা এবং প্রত্যেক রোগীকে স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
বর্ষার শেষের দিকে, ২০শে আগষ্টের কাছাকাছি, তোমরা আর একটি অবস্থা পাইবে। লোকে ইহাকে প্রতিশ্যায় লক্ষণ জ্বর (Hay fever) বলে। প্রত্যেক বৎসরই যখন রাত্রি শীতল হইতে থাকে, আবহাওয়া আর্দ্র ও শীতল হয় এবং বৃষ্টি পড়ে, রোগীর নাসিকা আবদ্ধ হইয়া যায়, অবিরত হাঁচি হইতে থাকে এবং সে নাক গরম রাখিতে চায়। আমি এইরূপ রোগীদিগকে, সময়ে সময়ে যাতনা, চক্ষুর সর্দিজ অবস্থা এবং নাসিকার অবরোধের উপশম পাইবার জন্য গরম ঘরে, মুখের ও নাকের উপর গরম জলে নিংড়ান কাপড় ঢাকা দিয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছি। উত্তাপে তাহার নাক বুজিয়া যাওয়ার উপশম হয়। এই সকল রোগীরা সময় সময় নাকের উপর কাপড় চাপা দিয়াও নিঃশ্বাস লইতে পারে, কিন্তু যদি তাহারা রাতের হাওয়ায় বাহির হয় অথবা ঠান্ডা স্থানে যায় আর যদি তখন, বিশেষতঃ ভিজে বৃষ্টিপাত থাকে; তাহা হইলে তাহাদের কষ্ট বাড়িয়া উঠে। প্রতিশ্যায় লক্ষণ জ্বরের অপর রোগীরা দিবাভাগে কষ্ট পায়, এবং তাহারা যত ঠান্ডা খুঁজিয়া পায়, তত ঠান্ডা স্থানে যায়, এমনকি ঠান্ডা স্থান পাইবার জন্য পাহাড়ে পর্যন্ত যাইতে বাধ্য হয়।
‘নাক ও চোখ দিয়া প্রচুর জলবৎ স্রাব, খোলা বাতাসে বৃদ্ধি।” “আবদ্ধ ঘরে ও প্রাতে জাগরিত হইলে উপশম” ইত্যাদি। ডালকামারা রোগী সদ্য কাটা ঘাস এবং শুষ্ক হইতেছে, এরূপ আগাছায় এত অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে যে, তাহাকে ঐরূপ স্থান হইতে চলিয়া যাইতে হয়। প্রতিশ্যায় লক্ষণ জ্বরের জন্য প্রধানতঃ আমাদিগকে তখন সব ঔষধ খুঁজিতে হইবে, যাহাদের রোগ লক্ষণ বর্ষাকালে বাড়ে। প্রতিশ্যায় লক্ষণ জ্বরের অনুরূপ আরও কয়েক প্রকার অবস্থা আছে, যথা জুন মাসে আগত মুখ লাল হওয়া সর্দি। অন্যান্য কতকগুলি অবস্থা আছে, যাহা বসন্তকালে আসে, সময়ে সময়ে ন্যাজা’ ও ‘ল্যাকেসিস দ্বারা আরোগ্য হয়। সুতরাং আমাদিগকে লক্ষ্য করিতে হইবে, উহা বৎসরের মধ্যে কোন ঋতু, দিনের মধ্যে কোন সময়, বৃদ্ধি দিনে কি রাত্রে,—ভিজা ও শুষ্ক কালের ঔষধগুলি অথবা গরম ও ঠান্ডা কালের ঔষধগুলি। আমাদিগকে অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখিয়া ঔষধগুলি পড়িতে হইবে।
ডালকামারার রোগী সচরাচর দুর্বল থাকে, তাহার সর্দি স্রাব বায়ুনলীগুলিতে অর্থাৎ শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীতে, কেন্দ্রীভূত হইবার প্রবণতা থাকে। ডালকামারা দ্বারা উপযুক্ত সময়ে আরোগ্য হইতে পারিত, এরূপ বহু প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তরুণ যক্ষ্মারোগে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, আর তোমরা দেখিবে যে, এই শ্রেণীর রোগীদের খুব সচরাচর প্রত্যেকবারের ঠান্ডা ভিজে আবহাওয়াতেই রোগ-লক্ষণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এইরূপ ব্যক্তিরা সোজা ডালকামারার অধিকারে প্রবেশ করে। তাহারা দক্ষিণ অঞ্চলে, যে-স্থলে বরাবরই গরম আবহাওয়া থাকে সেখানে গেলে ভাল থাকে। ডালকামারার রোগী রুগ্ন রোগী, তরুণ যক্ষ্মারোগ হওয়ার আশঙ্কাযুক্ত, বিবর্ণ মুখ রুগ্ন, হলদে এবং মলিন। ইহাতে বুঝা যায় যে, ঔষধটি জীবনের গভীরে প্রবেশ করে, এরূপ অবস্থার সৃষ্টি করে, যাহা রুগ্ন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায় অর্থাৎ যাহারা পুরাতনভাবে রুগ্ন, যাহাদের জীবনীশক্তি এত বিশৃঙ্খল হইয়াছে, যে দেহকে মেরামত করিবার মত অবস্থা আর নাই।
গলাও রোগের অংশ গ্রহণ করে। এই সকল লোক প্রত্যেকবার ভিজা ঠান্ডা আবহাওয়ার সময়, অত্যন্ত উত্তপ্ত হওয়ায়, গাত্রবস্ত্র খুলিয়া ফেলায়, ঠান্ডা স্থানে যাওয়ায় গল বেদনা বিশিষ্ট হইয়া টি পড়ে। ডালকামারা রোগী বলে, “দেখুন, আমি বুঝিতেছি যে, আমায় ঠিক রোগ ধরিবে, আমার এখন ঠান্ডা লাগিয়াছে, আমি গলার স্বরভঙ্গ অনুভব করিতেছি।” গলবেদনা উপস্থিত হয়, গলা শ্লেষ্মায়, হলদে আঠার মত শ্লেষ্মায় পূর্ণ হইয়া যায়, টনসিলদ্বয় প্রদাহিত হয়, এমনকি গলক্ষত পর্যন্ত উপস্থিত হয়। অথবা উহা একইভাবে সমগ্র গলাটিকে আক্রমণকালে, গলা লাল, প্রাহিত। এবং সময়ে সময়ে শ্লেষ্মায় পূর্ণ হয়; রাত্রে গলা ঘন, হলদে, আঠাল শ্লেষ্মায় পূর্ণ হইয়া যায়, উহা খুকখক করিয়া কাশিলে, অনেকখানি করিয়া উঠিয়া আসে। এই সর্দি প্রথমে গলায় ও নাকে বসে, অতি খারাপ রকমের নাসিকার পশ্চারন্ধ্রে সর্দি উপস্থিত হয় এবং পরিশেষে সমগ্র শ্বাসযন্ত্রের সর্দিজ প্রদাহ উপস্থিত হয়। তাহার যেরূপ সর্দিই হউক, আর উহা যেখানেই হউক, প্রত্যেকবার ঠান্ডা লাগিলেই উহা বাড়ে। যদি উহা নাকে থাকে, তাহা হইলে নাসিকা লক্ষণের বৃদ্ধি হয়। যদি উহা বুকে থাকে তাহা হইলে ঐ অঙ্গগুলির উপচয় হয়। ক্রমাগতই সর্দি হইতে থাকে। প্রত্যেক অভিজ্ঞ চিকিৎসকই নিশ্চয় এরূপ কতকগুলি রোগী দেখিয়াছেন, যাহাদের ক্রমাগত সর্দিলাগার পশ্চাতে যে ধাতুগত অবস্থা থাকে, তাহাতে প্রবেশ করিতে অক্ষমতার জন্য, তিনি কিছুদিন যাবৎ অবস্থাটি আরোগ্য করিতে অক্ষম হইয়া পড়েন। সেইজন্য কিছুদিন যাবৎ হতবুদ্ধি। হইয়া তিনি তখনকার মত আক্রমণের উপযোগী ঔষধ দেন এবং উহার উপশম করেন। উদাহরণস্বরূপ, সাময়িক আক্রমণটি বেলেডোনা বা ব্রায়োনিয়া, ফেরাম ফস বা ‘আর্সেনিকাম’ প্রভৃতির সদৃশ মনে হইতে পারে, এবং চিকিৎসক রোগীর অভ্যন্তরের ধাতুগত অবস্থার দিকে নজর না দিয়া, ঐ ঔষধগুলি দ্বারাই তরুণ আক্রমণটির চিকিৎসা করেন।
ডালকামারায় আরোগ্য হয়, এরূপ এক প্রকারের তরুণ ব্রাইটাখ্য পীড়া আছে। আমরা ঔষধটির প্রকৃতি সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছি, তাহা হইতেই সম্ভবতঃ তোমরা অনুমান করিতে পারিবে। যে, আরক্ত জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর, অথবা পরিণাম ফল খারাপ হয়, এরূপ যে-কোন তরুণ রোগের পরবর্তী ব্রাইটাখ্য রোগের রোগীর যখন ঠান্ডায় অনাবৃত থাকিলে অতি শীঘ্র সর্দি লাগে, অথবা যখন অকস্মাৎ আবহাওয়া বদলাইয়া গিয়া ভিজা ঠান্ডা পড়ে, তখন রোগীর পায়ের পাতা দুইটি ফুলিতে আরম্ভ করে, মূত্রে অন্ডলালা দেখা দেয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মোমের মত হয়, মুখমন্ডল মোমবর্ণ ও রুগ্ন হইয়া পড়ে এবং অবিরত মূত্রবেগ হইতে থাকে, তখন অন্যান্য ধাতুগত লক্ষণ থাকিলে ডালকামারা উপযোগী হয়।
মূত্রস্থলীর সর্দিতে, মূত্রের সহিত প্রচুর শ্লেষ্মা নির্গত হয় অথবা শ্লেষ্মামিশ্রিত পুঁজ নির্গত হয়; মূত্র জমিলে এক প্রকার ঘন পুঁজের ন্যায়, হলদেটে সাদা তলানি পড়ে; এবং অবিরাম মূত্রবেগ থাকে; প্রত্যেকবার সামান্য ঠান্ডা লাগিলেই মূত্র রক্তময় হইয়া উঠে; মূত্রত্যাগের বার বাড়িয়া যায়; মূত্র উপদাহকর হয়; মূত্রস্থলীর সর্দি অগ্নিশিখার ন্যায় দ্রুত বাড়িয়া উঠে; সব লক্ষণই ভিজা ঠান্ডা আবহাওয়ায়, ঠান্ডা লাগায় বাড়িয়া উঠে; রোগী গরমে উপশম বোধ করে। সুতরাং তোমরা দেখিতেছ যে, মূত্রপিন্ডের সর্দিজ অবস্থাই হউক অথবা মূত্রস্থলীর সর্দিই হউক অথবা আমাশয়ের আক্রমণই হউক অথবা আকস্মিক উদরাময়ের আক্রমণই হউক, প্রত্যেকবার আবহাওয়ার ঠান্ডায় পরিবর্তনে, রোগলক্ষণের বৃদ্ধি উপস্থিত হয়।
ডালকামারার আর একটি লক্ষণ আছে, উহা অন্য একদল লক্ষণের মধ্যে সময়ে সময়ে প্রকাশিত হইয়া উঠে। তোমরা অনেকদিন ধরিয়া খোজা খুঁজি করার পর, রোগী বলিবে, “ডাক্তার, যদি আমার ঠান্ডা লাগে, তাহা হইলে আমার খুব তাড়াতাড়ি মূত্রত্যাগ করিতে যাইতে হয়; যদি আমি ঠান্ডা স্থানে যাই, আমাকে তাড়াতাড়ি মলত্যাগ ও মূত্রত্যাগ করিতে যাইতে হয়। সুতরাং আমরা দেখিতেছি যে, রোগী শীতল হইলে লক্ষণগুলি আসে এবং সে উত্তপ্ত থাকিলে ভাল থাকে। গ্রীষ্মকালে ভাল থাকে, কিন্তু শীতকালে খারাপ হয়—এরূপ যে-কোন প্রকার মূত্রাশয়ের সর্দ্দি।
বিরক্তিকর শুষ্ক কাশি, উহা শীতকালের “ঠান্ডাজনিত কাশি; গ্রীষ্মকালে চলিয়া যায় এবং শীতকালে ফিরিয়া আসে। ‘সোরিণামে’ও শীতকালীন শুষ্ক বিরক্তিকর কাশি আছে। “আর্সেনিকামে” শীতকালীন কাশি আছে।
“ঋতুর পূর্বে মুখের উপর উদ্ভেদ প্রকাশ পায়।”“জননেন্দ্রিয়ের অসাধারণ উত্তেজনার সহিত, ঋতুর অগ্রদূত স্বরূপ ইন্দ্রবিদ্ধার ন্যায় উদ্ভেদ।” ইহার “শীতকালীন ক্ষতগুলি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। রোগীর ওষ্ঠের উপর এবং জননাঙ্গের উপর, একপ্রকার “শীতকালীন ক্ষত দেখা দেয়। যতবার ঠান্ডা লাগে ততবারই স্ত্রীলোকের ভগৌষ্ঠের উপর ইন্দ্রবিদ্ধা, পুরুষের লিঙ্গাবরকত্বকে ইন্দ্রবিদ্ধা। “ঠান্ডা ভিজা আবহাওয়ায় সর্দিজ রোগসমূহ।” “স্তনদ্বয় স্ফীত, শক্ত ক্ষততাযুক্ত ও বেদনান্বিত।”“স্তনগ্রন্থিগুলি ঠান্ডা লাগার ফলে স্ফীত, সক্রিয়, বেদনাশূন্য ও চুলকানিযুক্ত মনে হয় ঠান্ডা উহাদিগকে আশ্রয় করিয়াছে।”(ঠান্ডা লাগায় বাতজনিত পৃষ্ঠের খঞ্জতা ও আড়ষ্টতা, সঞ্চালনে উপশম। বিশ্রামকালে কটিদেশে আকৃষ্টবৎ যন্ত্রণা, নিম্নাঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। প্রত্যেকবার ঠান্ডায় উন্মুক্ত থাকায় গ্রীবাস্তম্ভ। ঠান্ডায় উন্মুক্ত থাকার পর সামান্য জ্বরের সহিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর, বাতজনিত যন্ত্রণা, সঞ্চালনে উপশম, রাত্রে বা সন্ধ্যায় বৃদ্ধি। সর্বাঙ্গে ক্ষতবৎ, থেঁৎলানবৎ অনুভূতি। হাত, হাতের আঙ্গুলে ও মুখের উপর আঁচিল।