ইরিসিপেলাস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও ঔষধ

ইরিসিপেলাস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

ইরিসিপেলাস কি? | What is Erysipelas?

ইরিসিপেলাস হলো ত্বকের উপরিভাগের স্তরের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা ত্বকের ভিতরের লিম্ফ্যাটিক ভেসেলস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যা ত্বকের উপরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। যারফলে ত্বকের উপরে এক ধরণের কোমল, উজ্জ্বল লাল বর্ণের ফুস্কুড়ি বের হয়। এটি শরীরের যেকোনো অংশেই হতে পারে। তবে সাধারণত মুখমণ্ডল ও পায়ে হতে দেখা যায়। এটি সেলুলাইটিসের একটি রূপ এবং কখনো কখনো জটিল আকার ধারণ করে। ইরিসিপেলাস রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।  

ইরিসিপেলাস সাধারণত স্ট্রেপ্টোকক্কাস বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া ফলে সৃষ্টি হয়, যা গ্রুপ A, B হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাই নামেও পরিচিত। যারফলে ত্বকে কোনোকিছু দিয়ে আঁচড়ানো বা পোকামাকড়ের কামড় থেকে শুরু হতে পারে। এটি সেলুলাইটিসের চেয়ে বেশি সারফেসিয়াল অর্থাৎ ত্বকের উপরি প্রান্তে বেশি হয়।Erysipelas শব্দটি গ্রীক (erysípelas) থেকে এসেছে, যার অর্থ লাল চামড়া।

প্রাণীদের মধ্যে, Erysipelas হল একটি রোগ যা “Erysipelothrix” “Rhusiopathiae” ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়। প্রাণীদের মধ্যে সৃষ্ট রোগটিকে “ডায়মন্ড স্কিন ডিজিজ বলা হয়” যা বিশেষ করে শূকরদের মধ্যে দেখা যায়। যা হার্টের ভাল্ব এবং ত্বককে আক্রমণ করে। “Erysipelothrix rhusiopathiae” মানুষকেও সংক্রামিত করতে পারে, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে সংক্রমণটি “Erysipeloid” নামে পরিচিত।

ইরিসিপেলাসের লক্ষণসমূহ: | Symptoms of Erysipelas:

লক্ষণগুলি প্রায়ই হঠাৎ দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের জ্বর, কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, ক্লান্তিবোধ, মাথাব্যথা ও বমি হতে পারে এবং প্রাথমিক সংক্রমণের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সাধারণত অসুস্থ হতে পারে। ত্বকের লালভাবটি দ্রুত বিস্তৃত হয় ও উঁচু প্রান্তে পরিনত হয়। তখন এটি বেশ ফোলা দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানটি উত্তপ্ত এবং স্পর্শ করলে কোমল বোধ হয়, অনেকটা কমলার খোসার মতো হতে পারে, তার সহিত তীব্র ব্যথা হতে পারে। সংক্রমণ আরো গুরুতর হলে ত্বকের নেক্রোসিস (মৃত্যু) সহ vesicles ফোসকা এবং পেটিচিয়া (ছোট বেগুনি বা লাল দাগ) হতে পারে। লিম্ফনোড ফুলে যেতে পারে এবং লিম্ফেডেমা হতে পারে। মাঝে মাঝে লিম্ফনোড পর্যন্ত বিস্তৃত একটি লাল রেখা দেখা যায়।

ইরিসিপেলাস আক্রান্তের স্থান: | Location of Erysipelas infection:

মুখমণ্ডল, বাহু, আঙ্গুল, পা এবং পায়ের আঙ্গুল সহ ত্বকের যেকোনো অংশে সংক্রমণ ঘটতে পারে, তবে কখনো কখনো নাভি ও লিম্ফোডিমার স্থানগুলিও আক্রান্ত হয়। শরীরের চর্বিযুক্ত টিস্যু, মুখমণ্ডল ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলি, বিশেষ করে চোখ, কান এবং গালের আশেপাশের অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়। হাত-পা বারবার সংক্রমিত হওয়ার ফলে ক্রনিক লিম্ফোডিমা হতে পারে।

ইরিসিপেলাস রোগ হওয়ার কারণসমূহ কি? | What are the causes of Erysipelas?

ইরিসিপেলাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রেপ্টোকক্কাস বিষাক্ত ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে যা গ্রুপ A, B হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাই নামেও পরিচিত। কখনো কখনো গ্রুপ C বা G স্ট্রেপ্টোকক্কাই এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াসের কারণেও ইরিসিপেলাস হতে পারে তবে সেটা খুবই কম। Streptococcus agalactiae- এর কারণে নবজাতকরা Erysipelas- এ আক্রান্ত হতে পারে। যা গ্রুপ B স্ট্রেপ্টোকক্কাস বা GBS নামেও পরিচিত। এই সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া সামান্য আঘাতের ফলে, মানুষ, পোকামাকড় বা পশুর কামড়ের ফলে, অস্ত্রোপচারের ফলে, আলসার, আগুনে পোড়া এবং ঘর্ষণের মাধ্যমেও ত্বকে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া এটি অন্তর্নিহিত একজিমা Eczima বা Athlete’s foot (টিনিয়া পেডিস) ও নাক বা কানের ছিদ্রের স্ট্রেপ্টোকক্কাই ব্যাকটেরিয়া থেকেও উদ্ভূত হতে পারে। যদি ইরিসিপেলাস স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার কারণে না হয়ে এক্সোটক্সিনের কারণে হয় তাহলে রোগটি নাসোফ্যারিনেক্সে হতে পারে।

সেলুলাইটিস ও ইরিসিপেলাসের মধ্যে পার্থক্য কি? | What is the difference between cellulitis and Erysipelas?

তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য দ্বারা ইরিসিপেলাসকে সেলুলাইটিস থেকে আলাদা করা যায়। ১. অগ্রবর্তী কিনারা, ২. বর্ডার, ৩. উজ্জ্বল লালভাব। সেলুলাইটিসে লালভাব তেমনটা থাকে না এবং কিনারা তুলনামূলকভাবে অস্পষ্ট। Erysipelas সাধারণত subcutaneous টিস্যুকে প্রভাবিত করে না, পুঁজ নির্গত করে না। ইরিসিপেলাস থেকে শুধুমাত্র সিরাম বা সিরাস তরল নির্গত হয়।

 

ইরিসিপেলাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিসমূহ কি কি? | What are the risks of being infected with Erysipelas?

  • আর্টেরিওভেনাস ফিস্টুলা অর্থাৎ ইনজেকশন ও সেলাইন দেয়ার জন্য ফিস্টুলা করণ
  • দীর্ঘস্থায়ী ত্বকের রোগ যেমন সোরিয়াসিস, অ্যাথলিটস্ ফুট, একজিমা ইত্যাদি
  • সেফিনাস ভেইনের (Saphenous Vein) উত্তেজনা
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি ঘটায় এমন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV)
  • মদ্যপানের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি হলে
  • নবজাতকদের নাভি ও টিকার স্থানে আঘাত লাগার ফলে।
  • রক্ত ​​সঞ্চালনে সমস্যা
  • পায়ে আলসার
  • লিম্ফ্যাটিক শোথ
  • লিম্ফ্যাটিক বাধা
  • লিম্ফোডিমা
  • নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সংক্রমণ
  • Nephrotic সিন্ড্রোম
  • গর্ভাবস্থা
  • ইরিসিপেলাসের পূর্ববর্তী স্থান
  • আঘাতমূলক ক্ষত
  • শিরার অপ্রতুলতা বা শিরার রোগ ইত্যাদি

রেপার্টরি রুব্রিক ও তার ঔষধ:

রুব্রিক ERYSIPELAS, INFANTS:  (9)
অর্থ ইনফ্যান্ট শিশুর বিসর্প
ঔষধ 1 Sulph, 1 Lyc, 2 Ars, 1 Bell, 2 Puls, 1 Bry, 1 Lach, 2 Graph, 2 Rhus-t,

যে কোনো জটিল ও কঠিন রোগের সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পেতে এখানে ক্লিক করুন

সকল পদ্ধতির চিকিৎসা পেতে ও যে কোনো রোগের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে এখানে ক্লিক করুন