জেলসেমিয়াম GELSEMIUM SEMPERVIRENS [Gels]

স্থির হয়ে চুপচাপ থাকতে চায়, শরীর ও মনের জড়তা ও অবসাদ, মাথাঘোরা, তন্দ্রা ও কম্পন।
কার সাথে কথা বলতে বা কেউ তার কাছে থাকুক তা পছন্দ করে না।
ভয়, দুখঃ, খারাপ বা উত্তেজনাপুর্ন সংবাদ শুনে ও উত্তেজনার ফলে উদরাময়।
নড়াচড়া না করলে হ্রদপিন্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে এমন ভয়।
চোখের উপরের পাতা ভারী অনুভূতি ও চোখ মেলে থাকতে কষ্ট।
জিহ্বা কাঁপে ও অতি কষ্টে জিহ্বা বের করতে পারে।
নীচের চোয়াল আপনা আপনি নড়তে থাকে।

উপযোগিতা যারা সহজেই উত্তেজিত হয় (স্নায়বিক), হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত হন, সেই সব স্ত্রী, যুবক ও শিশুদের ক্ষেত্রে উপযোগী (ক্রোকাস, ইগ্নে)।

দেহের পেশীর পূর্ণ শিথিলতা ও অবসন্নতা-সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সাহায্যকারী স্নায়ুর (Motor Nerve) পক্ষাঘাত।

যে সব মহিলা পুরুষ কৃত্রিম মৈথুনে অভ্যস্ত (কেলি-ফস) তাদের স্নায়বিক অসুখে ব্যবহার্য ও যারা সহজেই উত্তেজিত ও খিটখিটে প্রকৃতি তাদের পক্ষে প্রযোজ্য ।

ভয় পেয়ে তার কুফল, ভয়, উত্তেজনাপূর্ণ সংবাদ ও হঠাৎ কোন কারণে মনের আবেগ উপস্থিত হওয়ার কুফল হতে রোগ হলে (ইগ্নে) এ ওষুধ প্রযোজ্য। (আনন্দদায়ক) কোন সংবাদ হতে উত্তেজনায় অসুখ হলে—কফিয়া) মৃত্যুভয় (আর্স); সাহসের একান্ত অভাব ।

উদরাময় কোন অসাধারণ, অনব্যস্ত কাৰ্যে অংশ নিতে হবে এই পূর্ব অনুভূতি হতে; গির্জা (ধর্মস্থানে) সিনেমা থিয়েটার যাওয়ার আগের মুহূর্তে, আগে হতে নির্দিষ্ট ব্যবস্থানুযায়ী কারো সাথে দেখা করতে যাওয়ার আগে উদরাময় দেখা দেয়। মঞ্চভীতি, লোকজনের সামনে উপস্থিত হতে স্নায়বিক ভীতি (আর্জ-নাই)।

সূর্যের তাপে বা গরমের দিনে (গ্রীষ্মে) সমস্ত দেহে অবসন্নতা। জিব হাত পা সারাদেহে দুর্বলতা ও কাঁপতে থাকে। চুপ করে থাকতে চায়, একা থাকতে চায়, কথা বলতে বা কেউ কাছে থাকুক চায় না, এমনকি যদি কাছে চুপ করেও থাকে তবুও পছন্দ করে না (ইগ্নে)।

মাথাঘোরা মাথাঘোরা ভাব মাথার পেছনদিক হতে এগোতে থাকে (সাইলি)। সাথে একটি বস্তুকে দুটি করে দেখা, ক্ষীণ দৃষ্টি, দৃষ্টি লোপ হয় ও নড়াচড়া করতে গেলে মাতালের মত টলতে থাকে। শিশুর বিছানা হতে পড়ে যাওয়ার ভয়-খাট আকড়ে ধরে যাত্রীকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে.(বোরাক্স, স্যানিকি)। মাথা যন্ত্রণা শুরুর আগে চোখে অন্ধকার দেখে (কেলি-বাই) প্রচুর প্রস্রাব হলে মাথা যন্ত্রণা কমে যায়। পেশী ক্রিয়াগত সামঞ্জস্যের অভাব, সঠিকভাবে পেশী সঞ্চালন হয় না ইচ্ছামত পেশী চালনা করতে পারে না।

মাথা যন্ত্রণা ঘাড়ের হাড়ে (Cervical spine) শুরু হয়ে মাথার উপরে বাড়তে থাকে, কপাল ও চোখের মনিতে ফেটে যাওয়ার মত ব্যথা (ঐরূপ মাথাযন্ত্রণা একইভাবে শুরু হয় কিন্তু মাথার একদিক আক্রমণ করে সাইলি)। মানসিক পরিশ্রমে, ধূমপানে, সূর্যের তাপে, মাথা নিচু করে শুয়ে থাকলে মাথাযন্ত্রণা বেড়ে যায়।

চোখের উপর দিয়ে মাথার চারদিকে যেন ফিতা দিয়ে বাধা আছে এরকম অনুভূতি (এসি-কার্ব, সালফ); মাথার উপরে চামড়ায় ছোয়া লাগলে ঘা হওয়ার মত ব্যথা থাকে।

মনে ভয়- যদি নড়াচড়া না করতে থাকে তবে হয়ত হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে। (নড়াচড়া করলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে এই ভীতি ডিজিটা)।

বার্দ্ধক্যে নাড়ী ধীরগতি হয়ে যায়।

চোখের পাতায় ভারবোধ—চোখ খুলে রাখতে পারে না (কষ্টি, গ্রাফাই, সিপিয়া)।

জ্বর শীত অবস্থায় পিপাসা থাকে না। শিরদাড়াতে শীত অনুভূত হয়, স্যাক্রাম হতে মাথার পেছনদিক (Occiput) অবধি ঢেউয়ের মত পিঠের উপর দিয়ে ওঠানামা করতে থাকে।

সম্বন্ধ টাইফয়েড হতে পারে এই আশঙ্কায় ব্যাপটিসিয়ার সাথে, কুইনাইন প্রয়োগে কম্পহীন সবিরাম জ্বরে ইপি-র সাথে তুলনীয় ।

বৃদ্ধি ভেজা হাওয়ায়, ঝড়বৃষ্টির আগে, মানসিক আবেগ বা উত্তেজনায়, দুঃসংবাদ শুনে, ধূমপান করলে, নিজের রোগ সম্বন্ধে চিন্তাভাবনায়, নিজের ক্ষতি অন্যের মুখে শুনলে বেড়ে যায় ।

শক্তি ১x, ৩x, ৬, ৩০, ২০০ ।

এই ঔষধটির মূল কাজ স্নায়ুতন্ত্রের উপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ফলতঃ গতিবিষয়ক কাজ করে যেসকল স্নায়ু তাদের পক্ষাঘাত উৎপন্ন করে। সার্বিক দুর্বলতা। মাথাঘোরা, তন্দ্রালুতা, ফুর্তিহীণতা এবং কম্পন। নাড়ীর গতি মন্থর, ক্লান্তি কর অনুভূতি, মানসিক উদাসীনতা। চোখ, গলা, বুক, কণ্ঠনলী, রন্ধ্রসংকোচক পেশী, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রভৃতি পেশী গুচ্ছের পক্ষাঘাত। পেশীর দুর্বলতা। সম্পূর্ণ শিথিলতা ও দুর্বলতা। পেশী সমূহের কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব। সূর্যের উত্তাপ লাগার ফলে সর্বাঙ্গীন অবসাদ। ঠান্ডা ও আদ্রর্তায় বহু উপসর্গের উৎপত্তি। শিশুরা পড়ে যাবে বলে ভীতিগ্রস্ত, হঠাৎ করে ধাত্রী অথবা দোলনা জড়িয়ে ধরে। রক্তসংবহনের শিথিলতা। সিগারেট প্রস্তুতকারকদের নানা প্রকারের স্নায়বিক উপসর্গ। ইনফ্লুয়েঞ্জা। হাম। পেলেগ্রা।

মন চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে, একাকী থাকতে চায়, নিস্তেজ, অবশভাব, উদাসীনতা। সমগ্র বোধশক্তি যেন অবসাদ গ্রস্ত। নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে উদাসীনতা। কিছুমাত্র ভয় বোধ থাকে না। ঘুম আসার সময় প্রলাপ বকে। মানসিক উত্তেজনা, ভয় প্রভৃতি থেকে শারীরিক উপসর্গসমূহ। ভীতি, ভয়, উত্তেজনা সৃষ্টিকারক সংবাদ সমূহের কুফল। রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের ভয়। শিশু চমকিয়ে উঠে এবং ধাত্রীকে জড়িয়ে ধরে, এবং কেঁদে উঠে যেন পড়ে যাবে।(বোরাক্স)।

মাথা মাথা ঘোরা, মাথার পিছনের অংশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে। মাথার ভারী বোধ; মাথার চারিপাশে শক্ত করে কষে বাঁধার মত অনুভূতি এবং মাথার পিছনের অংশে বেদনা। মৃদু, ভারীবোধের ন্যায় বেদনা তৎসহ চোখের পাতায় ভার বোধ; থেঁৎলিয়ে যাবার মত অনুভূতি; চাপ দিলে ও শুয়ে থেকে মাথার উঁচুতে তুলে ধরলে উপশম। রগে বেদনা, বেদনা কান এবং নাকের পাখা ও চিবুক পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মাথার যন্ত্রনা, তৎসহ ঘাড় ও কাঁধের পেশীর টাটানি। মাথার যন্ত্রনা শুরু হবার আগে অন্ধত্ব প্রাপ্তি; প্রচুর প্রস্রাবে উপশম। মাথার চামড়া স্পর্শকাতর। ঘুমের মধ্যে প্রলাপ বকে। মাথা বালিশ থেকে উপরে উঠিয়ে রাখতে চায়।

চোখ চোখের পাতা পড়ে থাকে; চোখের পাতাগুলি ভারী বলে মনে হয়; রোগীকে খুব কষ্ট করে ঐ খুলতে হয়। দৃষ্টি দ্বিত। চোখের পেশীর বিকলতা। এমনকি সঠিকভাবে চশমার ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও, চোখের ঝাপসা দৃষ্টি ও অস্বাচ্ছন্দ থেকে যায়। দৃষ্টি ঝাপসা, যেন ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে দেখছে (সাইক্লামেন; ফসফরাস)। অস্পষ্ট দৃষ্টি, চোখের তারা বিস্ফারিত ও আলোকে অনুভূতিহীনতা। চক্ষুকোটরে স্নায়ুশূল, তৎসহ চোখের পেশীসমূহের সঙ্কোচন ও নর্তন। চক্ষুকোটরের পিছনের অংশে থেঁৎলিয়ে যাবার মত বেদনা। চোখের একদিকের তারা বিস্ফারিত ও অপরদিকের তারা সঙ্কুচিত। গভীর প্রদাহ, তৎসহ চোখের কাঁচ অংশের ঝাপসাভাব। রক্তাম্বুস্রাবযুক্ত প্রদাহ। এলবুমিনিউরিয়া থেকে উৎপন্ন রেটিনাইটিস। রেটিনার বিচ্যুতি, গ্লকোমা। হিস্টিরিয়া থেকে উৎপন্ন ক্ষীণ দৃষ্টি।

নাক হাঁচি, নাকের গোড়ার অংশে পূর্ণতার অনুভূতি। নাকের পর্দার শুষ্কতা। নাসিকা ভেদকঅস্থির স্ফীতি। জলের মত হাজাকর স্রাব। তরুন সর্দি, তৎসহ মৃদু মাথার বেদনা ও জ্বর।

মুখমন্ডল উত্তপ্ত, থমথমে, রক্তিমাভ, হতবুদ্ধির মত। (ব্যাপ্টিসিয়া; ওপিয়াম)। মুখমন্ডলের স্নায়ুশূল। মুখের উপর কালোবর্ণের ছায়া তৎসহ মাথাঘোরা ও অস্পষ্ট দৃষ্টি। মুখমন্ডলের পেশীর সঙ্কোচন, বিশেষ করে মুখগহ্বরের চারিপাশের পেশীর। চিবুকের কম্পন। নিচের চোয়াল ঝুলে পড়ে।

মুখগহ্বর পচা আস্বাদ ও শ্বাস-প্রশ্বাসে পচা গন্ধ। জিহ্বা অসাড়, পুরু, লেপযুক্ত, হলুদবর্ণ, কম্পন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

গলা ঢোক গেলাকষ্টকর, বিশেষ করে গরম খাদ্যবস্তু। তালুর কোমল অংশে ও নাস্কি-গলবিলীয় অংশে চুলকানি ও সুড় সুড় কর অনুভূতি। স্টারনো-ক্লিডো-ম্যাসটয়েড পেশী ও কর্নমূল গ্রন্থির পিছনের অংশে বেদনা। টনসিলের স্ফীতি। গলা কর্কশ বলে মনে হয়, জ্বালা করে। ডিফথিরিয়া পরবর্তী পক্ষাঘাত। টনসিলের প্রদাহ। কানের ভিতর তীক্ষ্ণ তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। গলার ভিতর একটি পিন্ড থাকার মত অনুভূতি, যা কিছুতেই গিলতে পারে না। স্বরলোপ। ঢোক গেলার জন্য কানে বেদনা। হিপার, নাক্স। কষ্টকর ঢোক গেলা। গলা থেকে কান পর্যন্ত বেদনা।

পাকস্থলী জেলসেমিয়ামের রোগীর সাধারণতঃ কোন পিপাসা থাকে না। হিক্কা; সন্ধ্যায় বৃদ্ধি। পাকস্থলীর উপরের অংশে দুর্বলতা ও শূন্যতাবোধ অথবা ভারী বোঝা থাকার মত অনুভূতি।

মল মানসিক আবেগজনিত উত্তেজনা, ভীতি, এবং দুঃসংবাদ থেকে উদরাময়। (ফসফোরিক অ্যাসিড)। বেদনাহীন মল অথবা অসাড়ে মলত্যাগ। ক্রিমের মত রঙ যুক্ত মল (ক্যাল্কেরিয়া), সবুজ চাপাতার ন্যায় রঙ। সরলান্ত্র ও মলদ্বাররোধক পেশীর আংশিক পক্ষাঘাত।

প্রস্রাব প্রচুর, স্বচ্ছ, জলের মত তৎসহ শীতবোধ ও কাঁপুনী। কষ্টকর প্রস্রাব। প্রস্রাব থলির আংশিক পক্ষাঘাত; থেমে থেমে প্রস্রাবের ধারা। (ক্লিমেটিস)। প্রস্রাব রোধ।

স্ত্রীরোগ জরায়ুর মুখ শক্ত (বেলেডোনা), যোনিপথের আক্ষেপ। কৃত্রিম প্রস্রাব বেদনা; বেদনা পিঠ থেকে উপরের দিকে উঠে। বাধক বেদনা, তৎসহ স্রাব অল্প; ঋতুস্রাব দেরি করে দেখা দেয়। বেদনা পিঠ ও হিপ জয়েন্ট স্থানে প্রসারিত হয়। ঋতুকালে স্বরভঙ্গ ও গলঃক্ষত। জরায়ু যেন নিংড়ান হচ্ছে, এই জাতীয় অনুভূতি। (ক্যামোমিলা, নাক্সভমিকা, আষ্টিল্যাগো)।

পুরুষের রোগ লিঙ্গোদ্রেক ছাড়াই বীর্যপাত। যৌনাঙ্গ শীতল ও শিথিল। (ফসফোরিক অ্যাসিড)। অন্ডকোষে অবিরাম ঘর্মস্রাব। গনোরিয়া রোগের প্রথমাবস্থা; স্রাব অল্প, স্রাব থেকে হাজা হবার প্রবণতা; সামান্য বেদনা, কিন্তু প্রচুর উত্তাপ; লিঙ্গমুন্ডে হুলফোটার মত বেদনা।

শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র সমূহ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মন্থর তৎসহ প্রচন্ড দুর্বলতা। বুকের উপর ভারবোধ। কাশি শুষ্ক তৎসহ, বুকে টাটানি এবং তরল সর্দি। শ্বাসনলীর দ্বারে আক্ষেপ। স্বরবঙ্গ; অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুত গতি, ফুসফুসও মধ্যচ্ছদা পেশীর আক্ষেপ।

হৃদপিন্ড অবিরাম নড়াচড়া করার প্রয়োজন এই জাতীয় অনুভূতি, নচেৎ হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে হয় নাড়ীমন্থর (ডিজিট্যালিস; ক্যালমিয়া; এপোসাইনাম ক্যান।)। হৃদকস্প; নাড়ী কোমল, দুর্বল, পূর্ণ ও প্রবহমান। চুপচাপ থাকলে নাড়ীর গতিমন্থর, কিন্তু নড়াচড়া করলে নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধ বয়েসে নাড়ীর গতি মন্থর, দুর্বল।

পিঠ মৃদু এবং ভারীবোধযুক্ত বেদনা। সমগ্র পেশীতন্ত্রের শিথিলতা। অবসন্নতা; পেশীসমূহে থেঁৎলিয়ে যাবার মত অনুভূতি। অতি সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তিবোধ। ঘাড়ের বেদনা, বিশেষতঃ ষ্টারনো-ক্লিডো পেশীর উপরের অংশে। কোমর ও ত্রিকাস্থিস্থানে মৃদু, কনকনানীর মত বেদনা, বেদনা উপরের দিকে প্রসারিত হয়। পিঠ, হিপ জয়েন্টের, ও নিম্নাঙ্গের পেশীসমূহের বেদনা, বেদনা বিশেষ করে গভীর স্থানে হয়ে থাকে।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ – পেশীসমূহকে নিয়ন করার ক্ষমতারলোপ। বাহর অগ্রভাগের পেশীসমূহের খিলধরা। পেশাগত কারনে খিলধরা। লেখকের খিলধরা। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে র অতিরিক্ত কম্পন ও দুর্বলতা। হিষ্টিরিয়া রোগীর মত আক্ষেপ। সামান্য পরিশ্রমের পরে , ক্লান্তিবোধ।

ঘুম কিছুতেই সম্পূর্ণভাবে ঘুমাতে পারে না। ঘুম আসার সময়ে প্রলাপ। পরিশ্রমের পরে অনিদ্রা; চিন্তা সংযত না হওয়ায় অনিদ্রা; ধূমপানে অনিদ্রা। হাইতোলা। স্নায়বিক উত্তেজনা থেকে অনিদ্রা। (কফিয়া)।  জ্বর রোগীর এত কাঁপুনী হয় যে, সে চায় কেউ তাকে চেপে ধরুক। নাড়ী মন্থর, পূর্ণ, কোমল, চাপদিলে ডেবে যায়। পিঠের উপরও নীচের দিকে শীতবোধ। উত্তাপ ও ঘমাবস্থা, দীর্ঘস্থায়ী ও ক্লান্তিকর। ডাম্ এইগিউ (Dumb ague) তৎ পেশী সমূহের প্রচন্ড টাটানি, প্রচন্ড দুর্বলতা এবং তীব্র মাথার বেদনা। স্নায়বিক শীতবোধ। পিত্তাধিক্যযুক্ত অল্প বিরাম জ্বর, তৎসহ অচৈতন্য অবস্থা, মাথাঘোরা ও মূর্চ্ছা, তৃষ্ণাহীন, দুর্বলতা। শীতবোধ শিরদাঁড়ার ভিতর অনুভূত হয় তৎসহ তৃষ্ণাহীণতা; শীতবোধ তরঙ্গের মত প্রবাহিত হয়। ত্রিকাস্থি থেকে মাথার পিছনের অংশ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।

চামড়া উত্তপ্ত, শুষ্ক, চুলকায়, হামের মত উদ্ভেদযুক্ত। ইরিসিপেলাস। হাম, সর্দির লক্ষণ সমূহ এই ঔষধটি উদ্ভেদ বাইরে প্রকাশ করার কাজে সাহায্য করে। ছড়িয়ে পড়ে, তৎসহ কালশিরার মত ছোপ সমূহ। স্কারলেট জ্বর সহ অচৈতন্য অবস্থা এবং মুখমন্ডল রক্তিমাভ।

কমাবাড়াবৃদ্ধি আর্দ্র আবহাওয়া, কুয়াশা, বজ্রপাতের পূর্বে, আবেগ অথবা উত্তেজনা, দুঃসংবাদ, ধূমপান, রোগের কথা চিন্তা করলে; সকাল ১০টায়।

উপশম সামনের দিকে ঝুঁকলে, প্রচুর প্রস্রাবের পরে, মুক্ত বাতাসে, অবিরাম নড়াচড়ায়, উত্তেজক বস্তুতে।

সম্বন্ধ তুলনীয় ইগ্নেশিয়া (সিগারেট প্রস্তুত কারকদের পাকাশয়িক উপসর্গ), ব্যাপটিশিয়া, ইপিকাক, একোনাইট, বেলেডোনা, সিমিসিফিউগা, ম্যাগফস (জেলসেমিয়ামের মধ্যে কিছু ম্যাগফস পাওয়া যায়।)

কিউলেক্স – (নাক থেকে সর্দিস্রাব তৎসহ মাথাঘোরা তৎসহ কানগুলির ভিতর পূর্ণতার অনুভূতি।

দোষঘ্ন – চায়না; কফিয়া; ডিজিট্যালিস। যে সকল ক্ষেত্রে জেলসেমিয়াম উপযোগী, সেই সকল ক্ষেত্রসমূহে সুরাসার ঘটিত উত্তেজক ঔষধের দ্বারা উপসর্গ সমূহের উপশম হয়।

শক্তি অরিষ্ট থেকে ৩০ শক্তি; ১ম থেকে ৩য় শক্তি প্রায়ই ব্যবহার হয়।

যদি তোমরা মিনোসোটা, মেসাচুসেটস এবং কানাডা প্রভৃতি তীব্রতা বিশিষ্ট জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলের আবহাওয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ কর, তাহা হইলে দেখিবে যে, সেখানকার শীত এত তীব্র যে, লোকেরা উন্মুক্ত থাকিলে অতি দ্রুত এবং ভীষণভাবে শয্যাগত হইয়া পড়ে। এইভাবে বল’ ও ‘একোনের’ রোগগুলি উপস্থিত হয়। কিন্তু জেলসিমিয়ামের রোগ ঐরূপ কারণে অথবা ঐভাবে আসে না। ইহার রোগ আরও অজ্ঞাতসারে আসে এবং যথেষ্ট ধীরতার সহিত প্রকাশ পায়। জেলসের সর্দি ঠান্ডায় উন্মুক্ত থাকার কয়েকদিন পরে প্রকাশ পায়, কিন্তু একোনে’র সর্দি ঠান্ডা লাগার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই উপস্থিত হইয়া থাকে। একোনে’র শিশু শুষ্ক ঠান্ডা। আবহাওয়ায় দিবাভাগে উন্মুক্ত থাকিলে, মধ্যরাত্রির পূর্বেই কুপ রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলে রোগাক্রমণ খুব ধীরগতি। লোকগুলির ন্যায় তাহাদের যন্ত্রগুলিও ধীরে কাজ করে, এবং তাহাদের প্রতিক্রিয়াও ধীরে হয়। তাহাদের ভীষণ ঠান্ডা লাগা হেতু সর্দি হয় না, কিন্তু অত্যুত্তপ্ত হওয়ায় সর্দি হয়। সুতরাং তাহাদের সর্দি এবং জ্বর দুষ্ট ম্যালেরিয়া প্রকৃতির হয়; তাহাদের রক্ত সঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া হয়, রক্তসঞ্চয়জনিত রোগ হয়, তাহারা হঠাৎ শয্যাশায়ী হইয়া পড়ে। না, যখন আমরা জলবায়ুর কথা ভাবি, লোেকদের প্রকৃতির কথা ভাবি এবং ঔষধের গতির বিষয় চিন্তা করি, আমরা দেখি যে, জেলস গরম আবহাওয়ার ঔষধ এবং একোন’ ঠান্ডা আবহাওয়ার ঔষধ। উত্তর অঞ্চলের কতকগুলি তরুণ রোগ ‘একোনাইট’ সদৃশ হয়, আর উষ্ণ আবহাওয়ার অনুরূপ রোগসকলের লক্ষণ জেলসদৃশ হয়। অল্প শীতবিশিষ্ট অঞ্চলের সর্দি ও জ্বরে সম্ভবতঃ এই ঔষধ লাগিবে আর তীব্র শীতবিশিষ্ট অঞ্চলের সর্দি ও জ্বরে সম্ভবতঃ ‘বেল’ এবং একোন’ লাগিবে। অবশ্য একথাও সত্য যে, একোনো উত্তপ্ত আবহাওয়া জনিত রোগ, গরম আবহাওয়ায় জ্বর ও আমাশয় আছে, কিন্তু ঐগুলি শীতকালীন রোগ হইতে পৃথক।

জেলস অধিকাংশ ক্ষেত্রে তরুণ রোগেই ব্যবহৃত হইয়াছে। দীর্ঘস্থায়ী তরুণ রোগে এবং পুরাতন রোগগুলির সদৃশ রোগে ইহা বিশেষ উপযোগী, কিন্তু পুরাতন ধাতুদোষের ইহা ঔষধ নহে। ইহা প্রারম্ভে মন্থরভাববিশিষ্ট হইলেও একটি স্বল্পক্রিয় ঔষধ। এই বিষয়ে ইহা ব্রায়োনিয়ার ন্যায়। ব্রায়ো’র রোগগুলি ধীরে ধীরে উপস্থিত হয়, আর সেইজন্য দক্ষিণ অঞ্চলের আবহাওয়ার। যে-জ্বর দেখা দেয়, তাহার পক্ষে উপযোগী, কিন্তু ইহাতেও আকস্মিক তীব্র রোগ আছে, অবশ্য ‘বেলে আমরা যে-পরিমাণ দেখিতে পাই ততটা নহে।

জেলসের রোগগুলি বিশেষভাবে রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির। মস্তিষ্কে অতি রক্তসঞ্চয়, মস্তকে ও মেরুমজ্জায় রক্তের প্রধান। হাত-পা শীতল হয় এবং মাথা ও পৃষ্ঠ গরম হয়। লক্ষণগুলি প্রধানতঃ, মস্তিষ্ক ও মেরুমজ্জার মধ্য দিয়া প্রকাশ পায়। মস্তিষ্করোগের সংস্রবে, হস্ত-পদাদির আক্ষেপ, হস্তাঙ্গুলির ও পদাঙ্গগুলির শীতলতা, সময়ে সময়ে হাঁটু পর্যন্ত পা বরফের ন্যায় শীতল হয়, আর মাথা উত্তপ্ত ও মুখমন্ডল বেগুনিবর্ণ হয়। রক্তসঞ্চয়ের সময় মুখমন্ডল বেগুনি ও চিত্রবিচিত্র হয়। চক্ষুর শিরাগুলি রক্তপূর্ণ হয়, চক্ষু-তারকা বিস্তৃত হয় (সময়ে সময়ে সঙ্কুচিত হয়), চক্ষুতে স্পষ্ট রক্তসঞ্চয় হয়, তৎসহ অশ্রুস্রাব এবং স্পন্দন থাকে। রোগী হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে, এবং প্রলাপের ন্যায় কথা বলে, অসংলগ্ন কথা বলে, বোকার ন্যায় হইয়া পড়ে, বিস্মৃতিপরায়ণ হয়। এরূপ অবস্থা সবিরাম জ্বরে দেখা যায়, কিন্তু ঐ জ্বর বৃদ্ধি পাইয়া ক্ৰমশঃ রক্তসঞ্চয় ও শীতযুক্ত হইয়া পড়ে। অত্যন্ত শীতলতা, মেরুদন্ডের নিম্নাংশ হইতে মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত উঠিতে থাকে পৃষ্ঠের উপর যেন বরফ ঘষা হইতেছে, এরূপ ভীষণ কম্পন উপস্থিত হয় । যন্ত্রণাও উপরদিকে পৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হইতে থাকে। হস্ত-পদাদির শীতলতা, অত্যন্ত ঘোর লাল চেহারা মনের হতবুদ্ধিভাব, চকচকে চক্ষু এবং বিস্তৃত চক্ষু-তারকার সহিত, ঘাড় পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়, ঘাড়ের পশ্চাদ্দিকের পেশীগুলি আড়ষ্ট হইয়া পড়ে, সুতরাং সে ঘাড় সোজা করিতে পারে না এবং পৃষ্ঠের উপর দিয়া ভীষণ যন্ত্রণা এবং মেরুদন্ডে শীতলতা বোধ করে। এই অবস্থা। মস্তিষ্ক-মেরুদন্ড ঝিল্লী-প্রদাহের (cerebro-spinal meningitis) কথা মনে আনিয়া দেয়। মস্তিষ্কের তলদেশে এবং ঘাড়ের পশ্চাদ্ভাগে বেদনা। এইরূপ অবস্থার সহিত উত্তপ্ত চৰ্ম্ম, প্রবল গাত্রতাপ এবং হস্ত-পদাদির শীতলতা বৰ্তমান থাকে। সময়ে সময়ে রোগটি ভীষণ শীত করিয়া উপস্থিত হয়। সবিরাম জ্বরে এরূপ লক্ষণসকল বর্তমান থাকিলে, ইহা পড়িয়া দেখিবার মত একটি মূল্যবান ঔষধ; আর কয়েক দিনের মধ্যেই জিহ্বা লেপাবৃত হইতে আরম্ভ করে, বমনেচ্ছা উপস্থিত হয়, উহা পিত্ত বমনে নিবৃত্ত হয় এবং জ্বরের বিচ্ছেদ হওয়ার পরিবর্তে আবেশের পর আবেশে জ্বরটি একটানা জ্বরে পরিবর্তিত হয়, তৎসহ অপরাহ্নে জ্বরের বৃদ্ধি হইতে থাকে। কার্যতঃ শীত প্রায় চলিয়া যায়, কিন্তু এমন একটি অবস্থার উদ্ভব হয়, যাহা টাইফয়েড সদৃশ,—জিহ্বা লেপাবৃত থাকে, তত বেশী তৃষ্ণা থাকে না, সুস্পষ্ট মস্তক-লক্ষণ, মনের হতবুদ্ধিভাব বর্তমান থাকে। যদি অনেকদিন এইরূপ চলিতে থাকে, প্রলাপ ও টাইফয়েডের সকল লক্ষণই উপস্থিত হয় এবং জ্বরটি সম্পূর্ণভাবে সবিরাম হইতে একটানা জ্বরে। পরিবর্তিত হইবে। অপরাহ্নে আগমনশীল, উচ্চ গাত্ৰতাপবিশিষ্ট, রক্তসঞ্চয়জনিত শীতযুক্ত জ্বরে, শীতের আংশিক নিবৃত্তি হইয়া জ্বরটি একজ্বর হইয়া দাঁড়াইলে জেলস একটি মূল্যবান ঔষধ। আবার শিশু ও বালকদিগের শীতবিহীন অপরাহ্নকালীন জ্বরেরও ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ। তোমরা দেখিবে যে, ম্যালেরিয়া প্রপীড়িত অঞ্চলে শিশুদের একজ্বর হওয়া এবং বয়স্কদের সবিরাম জ্বর হওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। তোমরা প্রায়ই দেখিবে যে, একটি শিশু বা বালক স্পষ্ট শীতে কাঁপিতেছে, কিন্তু তাহারা প্রায়ই স্বল্পবিরাম জ্বরের দিকে যাইবে, বৈকালিক জ্বর প্রাতঃকালের দিকে কমিয়া যাইবে এবং পরদিন অপরাহ্নে আবার জ্বর আসিবে। জেলস দেওয়া হইলে শিশুটি ব্রায়োনিয়া’র যেরূপ হয়, তদ্রুপ স্থিরভাবে শুইয়া থাকিবে, কিন্তু মাথায় অধিক রক্তসঞ্চয় থাকিবে এবং ব্রায়ো’র ন্যায় মুখমন্ডল গাঢ় লাল বা কৃষ্ণাভ দেখাইবে।

এই ঔষধের জ্বরের মধ্যে, মেরুদন্ডঝিল্লী-প্রদাহে, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়ে, সবিরাম জ্বরে, অথবা স্বল্পবিরাম জ্বর একটানা জুরে পরিবর্তিত হইলে, এমনকি সর্দি লাগিয়া রোগী হাঁচিতে থাকিলে এবং মুখমন্ডল উত্তপ্ত ও চক্ষু লাল হইলে সৰ্ব্বত্র একটি বিশেষ লক্ষণ থাকে, যথাসমস্ত দেহে এবং সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে একপ্রকার অত্যন্ত ভার ও ক্লান্তিবোধ। মাথা এত শ্রান্ত ও এত ভারি হইয়া উঠে যে, সে বালিশ হইতে মাথা তুলিতে পারে না এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিও ঠিক ঐরূপই ভারি থাকে। ব্রায়ো’র রোগী স্থির হইয়া থাকে কারণ পড়িলে তাহার ব্যথা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তাহার সঞ্চালনে অপ্রবৃত্তি থাকে, কারণ সে জানে যে, নড়িলে কষ্ট বাড়িবে।

রোগীর হৃৎপিন্ড ক্ষীণ এবং নাড়ী ক্ষীণ, কোমল ও অনিয়মিত হয়। জ্বরের সময় বুক ধড়ফড় না করে। বুক ধড়ফড় করার সহিত নাড়ীর দুর্বলতা ও অনিয়মিততা। হৃৎপিন্ডস্থানে দুর্বলতা ও শূন্যতার অনুভূতি এবং এই দুর্বলতা ও শূন্যতাবোধ ইগ্নেশিয়া’ ও ‘সিপিয়া’র ন্যায় বামবক্ষের সমুদয় নিম্নভাগ এবং আড়াআড়িভাবে পাকস্থলীতে আক্রমণ করিয়া, একপ্রকার ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি করে। জেলসের মধ্যে ইহা একটি হিষ্টিরিয়া-লক্ষণ এবং ইহাতে স্নায়বিক ক্ষুধা এবং বামটান ভাব আছে।

‘ডিজিটেলিস’, ‘ক্যাক্টাস’ এবং ‘সিপিয়া’র ন্যায় হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত স্নায়বিক রোগ আছে। ‘সিপিয়া’কে ক্যাক্টাসে’র ন্যায় হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত রোগের বড় ঔষধ বলিয়া জানা নাই, কিন্তু উহা হৃৎপিন্ডের বহু রোগীকে আরোগ্য করিয়াছে। সিপিয়া’ হৃদন্তর্বেষ্টৌস (endocarditis) রোগ আরোগ্য করিয়াছে এবং যে-ঔষধ হৃদন্তর্বেষ্টৌস রোগ আয়ত্ত করে এবং উহাকে সমূলে বিনষ্ট করে, তাহা নিশ্চয়ই গভীরক্রিয় ঔষধ। সে মনে করে যদি সে নাড়িতে নিবৃত্ত হয়, তাহা হইলে হৃৎস্পন্দনও থামিয়া যাইবে।

শিরঃপীড়া রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির হয়। মস্তকের পশ্চাদ্দিকেই সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী যন্ত্রণা হয় এবং সময়ে সময়ে উহা হাতুড়ি মারার ন্যায় বোধ হয়। প্রত্যেকটি স্পন্দনে মাথার খুলির তলদেশে হাতুড়ির আঘাতের ন্যায় অনুভূত হয়। এই শিরঃপীড়া এত ভীষণ হয় যে, রোগী উঠিয়া দাঁড়াইতে পারে না, কিন্তু যন্ত্রণায় পক্ষাঘাতিকবৎ হইয়া সম্পূর্ণ অবসন্নভাবে শুইয়া থাকে। মস্তকের পশ্চাদ্দিকের আর এক প্রকার শিরঃপীড়া আছে, উহাতে রোগীকে হাঁটিতে বা মাথা চলিতে বাধ্য করে। সাধারণতঃ দুইপার্শ্বে বালিশ দিয়া মাথা সম্পূর্ণ স্থির রাখিয়া শুইয়া থাকিলে উপশম হয়। মুখমন্ডল আরক্তিম ও কৃষ্ণাভ হয় এবং রোগী হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে। শিরঃপীড়া কিছুক্ষণ ধরিয়া চলিতে থাকার পর, মনে হয় যেন সমস্ত মাথাটাই রক্তসঞ্চয় অবস্থায় চলিয়া গিয়াছে, এরূপ এক প্রকার ভীষণ যন্ত্রণা হয় যে, তাহা বর্ণনা করা যায় না, রোগী তার লক্ষণগুলি বলিবার ক্ষমতা কম হারাইয়া ফেলে এবং হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে, চক্ষু চকে, চক্ষুতারকাদ্বয় বিস্তৃত, মুখমন্ডল চিত্রবিচিত্র এবং হস্ত-পদ শীতল হইয়া, পার্শ্বে বালিশ দিয়া শুইয়া থাকে। জেলসে বমনেচ্ছাযুক্ত এবং বমনে বৃদ্ধিবিশিষ্ট, শঙ্খস্থানে ও চক্ষুর উপরে আর এক প্রকার স্নায়ুশূল প্রকৃতির শিরঃপীড়া আছে। প্রচুর পরিমাণে মূত্রত্যাগ করিলে শিরঃপীড়ার উপশম হয় অর্থাৎ যে-মূত্ৰ পূৰ্ব্বে স্বল্প ছিল, তাহা মুক্তভাবে বাহির হইতে থাকিলে শিরঃপীড়ার নিবৃত্তি হয়।

অত্যন্ত স্নায়বিক উত্তেজনা থাকে। ভয় হইতে, কোনরূপ বিপদ আপদে জড়াইয়া পড়িলে, এ ভয়-সংযুক্ত মানসিক সম্মাতে, ভয়জড়িত আকস্মিক বিস্ময় হইতে রোগ জন্মে। যুদ্ধে যাইতেছে, এরূপ সৈন্যের অনিচ্ছায় মলত্যাগ হয়, ভয় ও ভয়জড়িত বিস্ময় হইতে অনিচ্ছায় মল, মূত্রস্রাব হয়। কোনরূপ বিস্ময়ে অভিভূত হইলে, সে মূৰ্ছাকল্প, দুৰ্বল ও অবসন্ন হইয়া পড়ে এবং বিরুদ্ধ। অবস্থার প্রতিবিধান করিতে অক্ষম হইয়া পড়ে। তাহার বুক ধড়ফড় করে। ইহা আর্জেন্ট নাইট্রিক’ সদৃশ। আর্জ নাই’তে এরূপ অদ্ভুত অবস্থা আছে যে, যাত্রা গানে যাইবার জন্য পোষাক পরিবার সময় তাহার অকস্মাৎ উদরাময় দেখা দেয়, উহাতে একপ্রকার আকস্মিক অবসন্নতা আসে এবং তাহাকে পোষাক পরা শেষ করিবার পূর্বেই কয়েকবার মলত্যাগ করিতে যাইতে হয়। যাহাদিগকে শ্রোতমন্ডলীর সম্মুখে বাহির হইতে হইবে, তাহারা হঠাৎ উদরাময়ের আক্রমণের জন্য আটকাইয়া পড়ে। মহিলা যে-সকল বন্ধুর সহিত সাক্ষাৎ হইলে উত্তেজিত হইবার সম্ভাবনা আছে বলিয়া মনে করেন, তাহাদের সহিত সাক্ষাতের উপক্রমে উদরাময়গ্ৰস্তা। হইয়া পড়েন। সম্ভাবনাতেই উদরাময় দেখা দেয়। আর্জ নাই’য়ের অবস্থা এইরূপ। এই ঔষধ দুইটি পরস্পর এত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত যে, অনেক সময় মনে হয় যে, একটি অপরটির কাৰ্য্যও করিতে পারে।

তারপর, আমরা দ্বারাবরক সঙ্কোচক পেশীগুলির পক্ষাঘাতিক অবস্থা দেখিতে পাই, এবং সেইজন্য জ্বরাবস্থায় অসাড়ে মলমূত্র নির্গত হইয়া যায়। অঙ্গাদির প্রান্তভাগের এবং হাতের পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা থাকে। পক্ষাঘাতিক অবস্থায়, মেরুদন্ড বরাবর এবং পৃষ্ঠের পেশীগুলিতে কনকনানি থাকে, টানিয়া ধরার মত, পৃষ্ঠের পেশীগুলিতে খালধরার ন্যায় এবং বাম স্কন্ধাস্থিরত নিম্নে কামড়ানির ন্যায় যাতনা থাকে।

দৃষ্টিশক্তির নানারূপ গোলযোগ আছে; দ্বিত্ব-দৃষ্টি, দৃষ্টির অপরিচ্ছন্নতা, যেন চক্ষুর সম্মুখে পাতলা জালি রহিয়াছে—এরূপ দর্শন, দৃষ্টিশক্তির বিপৰ্যয় এবং অন্ধতা। এই সকল লক্ষণ আসে—জ্বরের শীতের সময়, সবমন শিরঃপীড়া এবং রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়ার উপস্থিতিকালে।

অনেক কিছুই দেখিতে পাই; দৃষ্টিক্ষেত্রে কাল কাল দাগে পূর্ণ দেখায়, অথবা ধূমে পূর্ণ দেখায়, অথবা নানাবর্ণের ছোট ছোট তরঙ্গে পূর্ণ দেখায়। ইহা চক্ষুর এবং চক্ষুর পাতার সকল তন্তুর প্রদাহে উপযোগী। চক্ষুগোলকদ্বয় ব্যবহার কালে এদিক-ওদিক নড়িতে থাকে। ইহার একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ চক্ষুর পাতা ঝুলিয়া পড়া, বা অক্ষিপুট পতন, উহা ইহার পক্ষাঘাতিক প্রকৃতির নিদর্শন। পেশীগুলি শিথিল হইয়া যায় এবং উহারা চক্ষুর পাতাকে ধরিয়া রাখিতে পারে না। সে স্থিরদৃষ্টি দেখিতে থাকিলেই পাতাগুলি বন্ধ হইয়া যায়, উহা সোজাসুজি চক্ষুর উপর ঝুলিয়া পড়ে।

রোগী সাধারণতঃ তুষাহীন থাকে এবং যদি তুষ্ণা থাকে, তাহা হইলে উহা একটি ব্যতিক্রম। ইহার প্রচুর অবসন্নকর ঘৰ্ম্ম আছে এবং উহা সঞ্চালনে বৃদ্ধি পায় অথবা সঞ্চালন অসম্ভব বলিয়া মনে হয়। মনে হয় যে, সে নড়িতে অক্ষম, সে এত দুৰ্বল যে, নড়িতে পারে না, আর এই লক্ষণটি ইহার সকল রোগের মধ্যেই বর্তমান থাকে। সময়ে সময়ে ইহা সর্দিরোগের ঔষধ, সর্দির সহিত হাঁচি, নাক হইতে জল গড়ান, হাত-পায়ের শীতলতা থাকে, রোগটি তারপর গলায় নামিয়া যায় এবং গলবেদনা উৎপন্ন করে, তৎসহ আরক্ততা, স্ফীতি, টনসিলদ্বয়ের বৃদ্ধি, উত্তপ্ত মস্তক এবং রক্তসঞ্চয়যুক্ত মুখমন্ডল থাকে। অন্যান্য জ্বরাবস্থার ন্যায়, ইহাতেও হস্ত পদাদির ভারি বোধ থাকে। আরক্ত মুখমন্ডল, হস্তপদাদিতে ভারি বোধ এবং গলবেদনা দিন দিন একটু একটু করিয়া খারাপ হইয়া, গলার গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করে,—তখন তোমাকে জেলসের নিকট লইয়া আসিবে, বিশেষতঃ যদি সর্বাঙ্গে পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা থাকে এবং যদি রোগের প্রসারের সহিত খাদ্য এবং পানীয় নাকের মধ্য দিয়া উঠিয়া আসিতে আরম্ভ করে। গলাধঃকরণের পেশীগুলির পক্ষাঘাতের জন্যই এরূপ হয়। জিহ্বাও পক্ষাঘাতিক হয় এবং সুশৃঙ্খলভাবে উহারই কাৰ্য্য করিতে পারে না। সময়ে সময়ে পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা এত বেশী স্পষ্ট থাকে না যে, উহাকেই উপস্থিত লক্ষণগুলির কারণ বলিয়া মনে করা যাইতে পারে, কিন্তু পেশীগুলির ক্রিয়ার অসামঞ্জস্য উপস্থিত হয় এবং রোগী অকুশল হইয়া পড়ে। সে একটা জিনিষ ধরিতে যায়, কিন্তু আর একটি জিনিষ ধরিয়া ফেলে। যখন সে ধরিয়াই ফেলে, তখন তাহার হাত দুৰ্বল বোধ হয়। সে অকুশল, অগোছাল এবং তাহার পেশীগুলি এটা-সেটা করিতে থাকে, যাহা আদেশ করা হয় নাই, এরূপ কিছু করে। প্রবল উত্তেজনার সময় এবং তারপর কম্পনশীল অসামঞ্জস্য এবং আংশিক পক্ষাঘাত লক্ষিত হয়, এবং এই অবস্থা জ্বরের সহিতও দেখা দেয় এবং তারপরও কিছু দিন পর্যন্ত থাকিয়া যায়। যে-সকল পক্ষাঘাতরোগ জ্বরের সহিত আরম্ভ হয়, ইহা তাহাতে উপযোগী। শরীরের সর্বত্র স্নায়ুগুলিতে ছিন্নকর যন্ত্রণা অনুভূত হয়, এবং মনে হয়, যেন উহা একপ্রকার প্রাদাহিক অবস্থার জন্যই ঘটিয়া থাকে। ছিন্নকর বেদনা এবং তৎসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অতিশয় দুর্বলতাযুক্ত সায়েটিকা বাতরোগ ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। সময়ে সময়ে অনুভূতির বিলোপও দেখিতে পাওয়া যায়, নাকের ডগার, কানের, জিহ্বার, হস্তাঙ্গুলির, হাতের, পায়ের অসাড়তা, চৰ্ম্মের যেখানে-সেখানে অসাড়তা।

রোগীর সর্বাঙ্গীণ অবস্থা যেরূপ, পুরুষদিগের জননেন্দ্রিয়ের অবস্থাও তদ্রুপ হয়। শুক্র ফোঁটা ফোঁটা পড়িতে থাকে। ধ্বজভঙ্গ দেখা দেয়, সঙ্গম কাৰ্য্য সম্পাদন করিবার কোনরূপ ক্ষমতা ও থাকে না, জননযন্ত্র শিথিল হইয়া পড়ে।

নিদ্রা অত্যন্ত বাধাপ্রাপ্ত হয়। সে নিদ্রা যাইতে পারে না, প্রত্যেক প্রকার উত্তেজনা তাহাকে র জাগাইয়া রাখে। কিন্তু সুস্পষ্ট জ্বর অবস্থায় তাহার গভীর নিদ্রা বা আচ্ছন্ন নিদ্রা হয়। রক্তসঞ্চয়ের সময় যখন সে এইরূপ আচ্ছন্ন নিদ্রার মধ্যে থাকে, তখন তাহার স্নায়বিক উত্তেজনাও থাকে, সে জাগিয়া চিন্তা করিতে থাকে, কিন্তু বিশেষ কোন বিষয় সম্বন্ধে চিন্তা করিতে পারে না, কারণ তাহার মন সুশৃঙ্খলভাবে কাৰ্য্য করে না।

জরায়ুর বা ডিম্বকোষ, পাকস্থলী, ফুসফুস বা সরলান্ত্র, যে-কোন যন্ত্রের প্রদাহে জেলসের লক্ষণগুলি বর্তমান থাকিতে পারে। ইহাতে যন্ত্রসমূহে রক্তসঞ্চয় আছে, কিন্তু ইহাতে প্রবল প্রকারের প্রদাহও আছে। প্রদাহের মধ্যে এমন কিছু থাকে না, যাহাতে জেলস নির্দেশ করে আর প্রদাহ বৰ্তমান আছে বলিয়াই জেলস দেওয়াও উচিত নহে, কিন্তু যখন মানসিক লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে, প্রলাপ, আরক্ত মুখমন্ডল, মস্তকে রক্তের প্রধাবন, হস্ত-পদাদির শীতলতা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভারি বোধ, অনুভূতির বিশৃঙ্খলা, দ্বারাবরক পেশীগুলির পক্ষাঘাত বৰ্ত্তমান থাকে, তখন শরীরের যে-কোন যন্ত্রের প্রদাহের জন্য জেলস ভাল কাজ করে। অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং তীব্র, দ্রুত বর্ধনশীল ইরিসিপ্লাস রোগে যখন মনে হয় যে, কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যু হইবে, তখন সমস্ত লক্ষণ মিলিলে, জেলস, যদিও উহা পরীক্ষাকালে ইরিসিপ্লাস উৎপন্ন করে নাই, তবুও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রোগের প্রসার নিবারণ করিবে এবং রোগীও দ্রুত আরোগ্যের পথে অগ্রসর হইবে। অনেক ক্ষেত্রে, যখন ইরিসিপ্লাস মুখমন্ডল এবং মস্তক-ত্বকে বিস্তার লাভ করিয়াছে এবং সাঙ্ঘাতিক হইয়া উঠিয়া জেলস-জ্ঞাপক কৃষ্ণাভ-লালবর্ণ ধারণ করিয়াছে, এবং আমি পূৰ্ব্বে যে লক্ষণগুলির কথা বলিয়াছি, তাহা সাধারণভাবে মিলিয়াছে, তখন জেলস ইরিসিপ্লাস রোগটিকে আয়ত্ত করিয়া, তাহাকে আরোগ্য করিয়াছে। যদি আমরা ভালভাবে মেটিরিয়া মেডিকাকে আয়ত্ত করিতে পারি, তাহা হইলে কোন একটি ঔষধ পরীক্ষাকালে বিশেষ প্রকার প্রদাহ উৎপন্ন করিয়াছিল কিনা, তাহা দেখিবার জন্য অপেক্ষা করিব না, কিন্তু রোগীটির অবস্থার বিষয়ই বিবেচনা করিব।

[ইহা দুরকমের – জেলসিমিয়াম সেম্পারভাইরেন্স (Gelsemium sempervirenens) ও জেলসিমিয়াম নিটিডাম (Gelsemium nitidum); এদের কাজ একই রকমের।]

অপর নাম – ইয়োলো জেসমিন (Yellow Jessamine)

উডবাইন (Woodbine)

লোগনিয়েন্সী জাতীয় এই পরমসুন্দর লতিকাটি মার্কিন খণ্ডে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। বসন্তের প্রারম্ভে কুসুমিত হলে এর সুমধুর সৌরভে বায়ু আমোদিত হয়। উজ্জ্বল পীতবর্ণের পুষ্প, মনোহর সৌরভ ও নিবিড় ছায়া নিমিত্ত পুষ্পোদানে এই লতা রোপিত হয়ে থাকে। জেলসিমিয়ামের মূলের ছাল বিষাক্ত।

বিগত আমেরিকাযুদ্ধে মাদক স্বরূপ ওপিয়ামের পরিবর্তে এই লতা ব্যবহৃত হয়েছিল। এর সরস মূল থেকেই মূল অরিষ্ট তৈরী হয়।

জেলসিমিয়ামের মূলকথা

১। গতিশক্তির প্রায় সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতসহ সমগ্র পেশী মণ্ডলের সম্পূর্ণ শিথিলতা ও অবসন্নতা। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে, পেশী সমূহ ইচ্ছাধীন থাকতে চায় না।

২। নড়বার চেষ্টা করলে হাত বা নিম্নাঙ্গ কাপে; স্থির হয়ে শুয়ে থাকতে হয়।

৩। মানসিক শক্তিগুলির প্রখরতা থাকে না, রোগী চিন্তা করতে পারে না, নিষ্প্রভ ও আরক্ত মুখমণ্ডল সহকারে নিদ্রালুতা।

৪। মানসিক সঙ্ঘাতে বিচলিত; উত্তেজনা বা মানসিক আবেগের (emotion) প্রবণতা; উহার ফলে উদরাময় জন্মে।

৫। মাথার তলদেশে (at base), ক্লান্তি ও অবসন্নকর শিরঃপীড়া; রোগী মাথা উঁচু করে রাখতে চায়, সময়ে সময়ে প্রভূত মূত্রস্রাব; মাথা যন্ত্রণার উপশম হয়।

৬। ঝাপসা দৃষ্টি, চক্ষুতারকার প্রসারতা, দ্বিত্ব দৃষ্টি (double sight) ও মাতালের ন্যায় অনুভূতি বা মত্তনুভব সহকারে শিরঃঘূর্ণন।

৭। স্নায়বীয় শীত (nervous chill), প্রবল কম্পন কিন্তু গায়ে শীতলতার অনুভূতি থাকে না।

৮। রোগী স্থিরভাবে থাকতে চায়, সে এত দুর্বলতা অনুভব করে যে নড়তে চড়তে চায় না।

৯। প্রধানতঃ স্বল্পবিরাম জ্বরে বালক-বালিকাদের পড়ে যাওয়ার ভয় হয়, তাই তারা ধাত্রীকে জড়িয়ে ধরে বা খাটের পাশ (crib) শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।

১০। বৃদ্ধদের মৃদু ও দুৰ্ব্বল নাড়ী।

১১। চোখের পাতায় অত্যন্ত ভারবোধ; ঐগুলি খুলে রাখতে পারে না।

১২। ভয় হয় ক্রমাগত না নড়লে চড়লে হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

১৩। অবসন্নতা সহকারে সর্বাঙ্গীন পেশী সমূহের গভীর দেশে বেদনা (বিশেষ করে সর্দি জ্বরে)।

জেলসিমিয়াম – পরিক্রমা

১। সমগ্র স্নায়ুমণ্ডলে এই ঔষধের মুখ্য ক্রিয়াদর্শে। এই ঔষধটি প্রধানতঃ সামগ্রিক ভাবে পেশী মণ্ডলকে আক্রমণ করে। এর সর্বপ্রধান লক্ষণ সমগ্র পেশী মণ্ডলের শিথিলতা ও অবসন্নতা সহকারে গতি বিধায়ক শক্তির প্রায় সম্যক পক্ষাঘাত। সাধারণতঃ স্নায়ু সমূহের ধারণা গুলিকে (impression) বহন করবার অক্ষমতা বশতঃই পেশীর এই অবসন্নতা জন্মে, তাই আমরা জেলসিমিয়ামে দেখতে পাই পেশী সমূহ ইচ্ছানুসারে কাজ করে না।

এই অবস্থা ক্রমেক্রমে উপস্থিত হয়। প্রথম লক্ষণটি থাকে সৰ্বাঙ্গীন অবসাদ বা এক প্রকার ক্লান্তির অনুভূতি। সে এত দুৰ্বল হয়ে পড়ে যে শুয়ে থাকতে চায় (পিক্রিক অ্যাসিড) এবং তার ঘুম ঘুম ভাব প্রকাশ পায়, নাড়ী দুর্বল ও ধীর গতি হয় কিন্তু সামান্য নড়াচড়াতেই উহার বেগ বাড়ে। তারপর যদি সে চলতে চায় তাহলে তার হাত-পা কাপে; যদি সে ঐগুলিকে তুলিতে চেষ্টা করে তাহলেও ঐগুলি কাপেজিভ বের করতে চেষ্টা করলে জিভ কাপে।

এই সবই জন্মে তার বাহ্যিক ও মানসিক (objective & subjective) দুর্বলতার জন্য। যদি আমাকে একটি মাত্র বিশেষণ দ্বারা এর চরিত্রগত লক্ষণ বর্ণনা করতে হয় তাহলে আমি একে কম্পনের ঔষধ বলব।

কখন কখন এই কম্পন এতই প্রবল হয় যে রোগী প্রকৃতই ঠক ঠক করে কাপে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাহ্যিক বা আভ্যন্তরিক কোন প্রকার শীতানুভব থাকে না। এই দুর্বলতা বৃদ্ধি পেয়ে সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত উপস্থিত হতে পারে, তখন যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় তা হল :

চোখের পাতা ঝুলে পড়ে [(drops) সিপিয়া, কষ্টিকাম]; চোখ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। হাতের আঙ্গুলগুলিতে বশ থাকে না। এজন্য পিয়ানো বাজানোর সময় আঙ্গুলগুলি ঠিক ঘাটের উপর পড়ে না। হাঁটতে চেষ্টা করলে পা-গুলি ঠিক মত ফেলতে পারে না; এসকল সত্তেও ইন্দ্রিয় জ্ঞান পরিষ্কার থাকে। কেবল অল্প অল্প তন্দ্রালুতা ছাড়া ওর অন্য কোন প্রকার বৈলক্ষণ্য দেখতে পাওয়া যায় না। রোগী যা করতে চায় তা সে সম্পূর্ণ রূপে জানে ও বুঝতে পারে। কিন্তু তার করার শক্তি থাকে না।

* জেলসিমিয়ামে শরীরের নানাস্থানে স্নায়ুশূল জন্মাতে পারে এবং তাতে সর্বাঙ্গে অবিরাম মন্দ মন্দ কামড়ানি (মাইয়েলজিয়া) থাকে। উহা সহসা এরূপ তীব্র চিড়িকমারার মত হয় যে, রোগী হঠাৎ চমকে উঠে (starting)। এ থেকে আবার রোগীর আক্ষেপ ও মূৰ্ছাও উৎপন্ন হতে পারে। তবে কিন্তু এই সকলের সঙ্গে জেলসিমিয়ামের চরিত্রগত লক্ষণ — অবসন্নতা থাকেই। যেমন মুখমণ্ডলের স্নায়ুশূলের দুৰ্ব্বলতা বশতঃ চোখের পাতা ঝুলে পড়ে। এই জন্যই আমরা বার বার বলি জেলসিমিয়াম একটি স্নায়ুরই ঔষধ।

স্নায়ুমণ্ডলই জেলসিমিয়ামের ক্রিয়ার প্রধান কেন্দ্রস্থল। উপরোক্ত ক্রিয়াগুলি যেমন স্নায়ুমণ্ডলে দেখা যায়; সেইরূপ কতকগুলি এর স্থানিক ব্যবহার সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল যাদের সঙ্গে সবসময় অল্পবিস্তর স্নায়বিক । লক্ষণগুলি বর্তমান থাকে।

ক) মনের উপর এর অবসাদের শক্তির ক্রিয়া প্রকাশ পায় এবং তা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি প্রকাশ করে।

“জেলসিমিয়ামের রোগী নিশ্চেষ্ট, নিদ্রালু ও নড়চড়তে ভয় করে। মানসিক শক্তিগুলির প্রখরতা থাকে না, পরিস্কার ভাবে চিন্তা করতে বা দৃঢ় ভাবে মনঃসংযোগ করতে পারে না; চুপ করে থাকতে চায়; কথা বলতে চায় না, কেউ কাছে থাকুক তা চায় না (এমনকি ঐ ব্যক্তি যদি চুপ করেও থাকে)।”

মনের এই অবস্থার সঙ্গে পূৰ্ব্ববর্ণিত সর্বাঙ্গীন অবসন্নতার সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য থাকে। মনের এই অবস্থা সময়ে সময়ে কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত থাকে ও তার পরিবর্তে একপ্রকার উত্তেজনার ভাব প্রকাশ পায় (পৰ্য্যায়ক্রমে)।

* কিন্তু ইহা এই ঔষধের পরিচালক বিশেষ লক্ষণ নয় এবং প্রকৃত ক্রিয়ার ফলও নয়। কেবল প্রতিক্রিয়া মাত্র। নিদ্রালুতা বা সুপ্তি যেমন ওপিয়ামের বৈধক্রিয়াজনিত বিশেষ লক্ষণ এবং নিদ্রাহীনতা উহার প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ, ইহাও সেইরকম। উত্তেজিত অবস্থার প্রশমিত করবার জন্য বা আক্ষেপ বা খিচুঁনি দমন করবার জন্য অধিক মাত্রায় এই দুটি ঔষধের কোন একটি ব্যবহার করে; উহার বিষক্রিয়া দ্বারা পেশীমণ্ডলের অবসাদ বা পক্ষাঘাত উৎপন্ন করা আমার মনে হয় অ্যান্টিপ্যাথি (বিষম-নীতি) কোন ক্রমেই প্রকৃত আরোগ্যকর নীতি (সমমত নীতি) নহে।

খ) স্নায়ুসমূহের এক প্রকার বিশেষ অতিরিক্ত অনুভূতি সম্পন্ন অবস্থা আছে যা এই ঔষধ দ্বারা দমন করা যায়।

“আকস্মিক উত্তেজনা, ভয়, দুঃসংবাদ বা অসাধারণ পরীক্ষার (ardeal) পূৰ্বাভাষ প্রভৃতি মানসিক উপদ্রবের অতিরিক্ত অনুভূতিতে জেলসিমিয়াম উপকারী। তবে এই সব মানসিক উপদ্রবে কারো কারো উদরাময় জন্মে। অনেকেরই এই রকম হয়ে থাকে আর সেক্ষেত্রে কেবল জেলসিমিয়াম ব্যবহারেই কেবলমাত্র উদরাময় নয়, সমগ্র অস্বাভাবিক অবস্থাটিই আরোগ্য হয়ে যায়। এইরূপ অবস্থায় শুধু ৩০ শক্তিতেই নয় এর চেয়ে উচ্চতর শক্তিতেও ইহার উপকার দর্শে।
গ) জেলসিমিয়ামের সাধারণ ক্রিয়া থেকেই সহজে অনুমিত হয় যে এই ঔষধটি সুস্পষ্টভাবে জ্ঞানকেন্দ্রে (sensorium) ও মস্তিষ্কে এর সুনিশ্চিত ক্রিয়া প্রকাশ করে। আর সেই প্রভাবে চক্ষু তারকার বিস্তৃতি, দ্বিত্বদৃষ্টি, ও মত্ততানুভাব

অর্থাৎ মাতালদের মত অবস্থা দেখতে পাই; মাথা ঘোরা, ও তার সঙ্গে ঝাপসা দৃষ্টি বর্তমান থাকে।

ঘ) এখানে জেলসিয়ামে একটি প্রকৃত লক্ষণ প্রকাশ পায়; যা এই ঔষধ ছাড়া অন্য কোন ঔষধে সুস্পষ্ট রূপে দেখা যায় না। তাহল – “শিশু চমকে উঠে ও চীৎকার করে ধাত্রীকে জড়িয়ে ধরে, যেন সে পড়ে যাবে এইরকম ভয় পায়।”

ইহা বোরাক্সের মধ্যেও দেখা যায় তবে পার্থক্য হল এই যে – বোরাক্সের কেবল দোলনায় শোয়ানোর সময় অথবা নিম্নভুমুখী গতিতেই শিশু এইরকম ভয় পায়।

শিরঃপীড়া

জেলসিমিয়ামের বিশেষ চরিত্রগত শিরঃপীড়া দেখা যায় মস্তিষ্কের তলদেশে (at the base of the brain)।

রোগী উঁচু বালিশের উপর মাথা রেখে সম্পূর্ণ স্থির ভাবে শুয়ে থাকতে চায়। মানসিক পরিশ্রমে, তামাক খেলে, মাথা নীচু করে শুলে ও সূর্যের উত্তাপে মাথা যন্ত্রণা বাড়ে (গ্লোনয়েন, ল্যাকেসিস, লাইসিন, নেট্রামকাৰ্ব্ব); উত্তেজক পানীয় সেবনে ও চাপে মাথা যন্ত্রণা সাময়িক ভাবে কমে।

এই প্রকার শিরঃপীড়া প্রায়ই রাত্রি জাগরণে ও সুরাপানাদি অত্যাচারের ফলে হতে দেখা যায়। কখন কখন আমরা অপ্ৰবল (Passive) রক্ত সঞ্চয়জনিত কারণেও একপ্রকার শিরঃপীড়া হতে দেখি, তখন বেদনা মাথার পিছন দিকে আরম্ভ হয়ে সমগ্র মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে যে যে কারণে অন্যসব মাথা যন্ত্রণা বা স্নায়বীয় মাথাযন্ত্রণা বাড়ে, ইহাও সে সকল কারণে বাড়তে দেখা যায়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় চরিত্রগত লক্ষণটি হল – শিরঃপীড়া প্রভূত মূত্রস্রাবে উপশমিত হয়।

তুলনা

ল্যাকডিফ্লোরেটাসেও প্রভূত মূত্রস্রাব আছে কিন্তু উহা সাধারণতঃ সবমন শিরঃপীড়ায় উপযোগী; তাছাড়া উহাতে মূত্রস্রাবে জেলসিমিয়ামের মত এত সুস্পষ্টভাবে মাথাযন্ত্রণার উপশম হতে দেখা যায় না।

জেলসিমিয়ামে সবমন শিরঃপীড়া আছে তবে ওর আগে দৃষ্টিহীনতা প্রকাশ পায়, কিন্তু যেই মাথা বেদনা শুরু হয় সেই দৃষ্টিহীনতা অন্তর্হিত হয়। এই ঔষধের সকল শিরঃপীড়া বেদনায় স্যাঙ্গুনেরিয়া, আইরিস ভাসিকলার ও ল্যাক-ডিফ্লোরেটমের মত অধিক বিবমিষা (nausea) ও বমন থাকে না, কিন্তু জেলসিমিয়ামের বিশেষ লক্ষণ স্বরূপ দুৰ্বলতা ও কম্পন থাকে।

. জ্বর

জেলসিমিয়াম জ্বরেরও ঔষধ। বিশেষ করে শিশুদের স্বল্পবিরাম জ্বরে ইহা উপযোগী। জ্বর কখনও একোনাইট বা বেলেডোনা মত প্রবল হয় না, কিন্তু উহা মৃদ্য প্রকৃতির হয়ে থাকে।“এই জ্বরে শিশুর ঘুম ঘুম ভাব, বা শিশু তন্দ্রাবিষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, নড়তে চড়তে চায় না বা নড়লে চড়লেও দুৰ্ব্বলতা বশতঃ বেশী নড়াচড়া করতে পারে না।”

পার্থক্য

একজন লেখক বলেছে যে জেলসিমিয়াম; একোনাইট ও ভিরেট্রাম। ভিবিডিব মধ্যবর্তী ঔষধ। কিন্তু আমি (ডাঃ ন্যাশ) একে বেলেডোনা ও ব্যাপ্টিসিয়ার মধ্যবর্তী ঔষধ বলে মনে করি। কারণ ব্যাপ্টিসিয়ার ন্যায় এতে অবসন্নতা আছে বটে কিন্তু টাইফয়েড নির্দেশক জিহ্বা ও অন্যান্য লক্ষণ সেরূপ সুস্পষ্ট নয়। মলিন আরক্ত মুখমণ্ডল ও হতবুদ্ধিবৎ একপ্রকার মুখাকৃতি উভয় ঔষধেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাপ্টিসিয়ায় ইন্দ্রিয় জ্ঞানের কেন্দ্রস্থান (sensorium) হয় আরো বেশী আক্রান্ত, এইজন্য রোগী জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। তাছড়া ব্যাপ্টিসিয়ার মত দুর্গন্ধ ঘৰ্ম, মল বা মূত্র জেলসিমিয়ামে থাকে না। বেলেডোনার মত এতে মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয় আছে চক্ষু তারকার বিস্তৃতিও থাকে কিন্তু জেলসিমিয়ামের উহাদের এত প্রাণল্য থাকে না এবং বেলেডোনার মত রোগী তীব্র প্রলাপও বকে না।

জেলসিমিয়াম সবিরাম জ্বরে সেরূপ উপযোগী ঔষধ নয়, কিন্তু ইহা স্নায়বিক শীতের একটি সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ।

জেলসিমিয়ামের শীত কটি থেকে মস্তিষ্কের পশ্চাদ্দেশ পৰ্য্যন্ত পিঠের উপর ও নীচ দিয়ে ক্রমাগত তরঙ্গের মত চলাচল করে; স্কন্ধাদিদ্বয়ের মধ্যস্থানে শীত আরম্ভ হয় – ক্যাপ্সিকাম, সিপিয়া; কটিদেশে শীত আরম্ভ – ইউপেটোরিয়াম পার্ক ও নেট্রাম মিউর, পৃষ্ঠদেশে শীত আরম্ভ – ইউপেটোরিয়াম পার্ফ, ল্যাকেসিস।

* রোগীর শীতের সঙ্গে কখন কখন অত্যন্ত কাঁপুনি ও দাঁত ঠক ঠক করে কাঁপুনি থাকে কিন্তু বাহ্যিকভাবে রোগীর কোন শীতলতা বোধ থাকে না। “রোগী এত কাঁপে যে তাকে চেপে ধরতে বলে।”

এইরকম শীত প্রায়ই হিষ্টিরিয়া ও হৃৎপিণ্ডের (যান্ত্রিক) রোগে দেখা যায়। রোগী স্থির হয়ে থাকলে জেলসিমিয়ামের রোগীর নাড়ী ধীরে চলে, কিন্তু নড়লে চড়লে উহার বেগ অত্যন্ত বেড়ে যায়।

** বৃদ্ধ বয়সে ধীর  দুৰ্ব্বল নাড়ীর জন্য জেলসিমিয়াম অপেক্ষা আর অন্য কোন ঔষধ ব্যবহৃত হয় না। টাইফয়েড জ্বরের পূর্ববর্তী স্নায়বিক অবসন্নতায় জেলসিমিয়ামের মত আর কোন ঔষধ নেই। তাছাড়া আমার ধারণা বহু ক্ষেত্রেই এই ঔষধ ব্যবহারে টাইফয়েড রোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।

Gels : Gelsemium Sempervirens
Weakness (mental, emotional, physical), paresis, gradual paralysis.Cowardice, an inability to face challenge. Stage fright.Nervous diarrhoea, trembling, weakness, urgent urination.

Thirstless.

Feels heart will stop beating, causing him to jump up, fears heart will stop unless he stays in motion.


COMMON NAME:

Yellow Jasmine


FAMILY:

Loganiaceae


A/F:

-Depressing emotions

-Fright, Anxiety, Anger

-Bad news

-Anticipation- going to church, examination, public platform

-Self abuse; masturbation

-Heat of sun

-Damp weather, warm or cold

-Thunderstorm

-Alcohol

-Haircut

-Mechanical injuries


MODALITIES:

< Emotions

< Dread

< Ordeals

< Surprise

< When thinking of ailment

< Bad news

< Excitement

< Bending forward

< Humid weather

< Spring

< Foggy weather

< Heat of sun

< Thunderstorm

< Dentition

< Tobacco smoking

< 10 a.m.

< Mental effort

> Profuse urination

> Sweating

> Shaking

> Alcoholic drinks

> Stimulants

> Continued motion

> Reclining with head high


MIND:

-Dullness of mental faculties; with languor, listless and inability to fix attention.

-Drowsy dazed.

-Doesn’t wish to speak or have anyone near her, even if the person be silent.

-Desires to be left alone.

-Nervous dread of appearing in public.

-Anticipation of any unusual ordeal, like preparing of church, exam, etc. brings on complaints. Utter lack of courage. Nervousness.

-Fearful (diarrhoea) and all complaints thereafter.

-Fear of -falling

-ordeals

-death

-pain

-losing self control

-that heart will stop beating unless on the move.

-Stage fright. Helps acutely the terror before performance.

-Susceptible to mental disturbances such as sudden excitement or emotion, any bad news or fright.

-Delirious sleep; half waking and incoherent talk.

-Great depression of spirits. Wants to throw himself from a height. Wants to commit suicide.

-Apathetic regarding his illness.

-Answers slowly. Inability to concentrate.

-Exhilaration, can recall things long forgotten.

-Vanishing of thoughts on mental exertion.

-Child starts and grasps the nurse from fear of falling [Bor].

-People who give up their work; unable to face it longer.

-Cowardice. Timid.

-Sadness with inability to cry. Depression.

-Dullness; Dizziness; Drowsiness, Trembling.


GUIDING INDICATIONS:

-Aching; Tiredness; Heaviness, Weakness and soreness in the muscles (Phys).

-Catarrh of mucous membranes causing watery discharges.

-Paralysis of various groups of muscles about the eyes, throat, chest, larynx, sphincter, extremities, etc.

-Tremors or twitching of single muscles, face, chin, tongue, etc.

-Muscular weakness with complete relaxation and prostration.

-Lack of muscle coordination, muscles to obey will.

-Affects circulation which becomes sluggish causing passive arterial and venous congestion and sense of heaviness and fullness in different organs- heart; liver etc > profuse urination.

-Patient has a flushed, dusky, red face and sleepy look and a ” worn-out” expression on face (Bapt; Gels).

-General depression from heat of sun, or summer.

-Sticky perspiration all over the body.

-Complaints lingering since the time of influenza.

-Thirstless or little thirst.

-Weakness tremendous, unable to move, great prostration of vital forces.

-Trembling is so great, that patient wants to be held because he shakes so.

-Trembling of tongue, hands, legs.

-Rigidity and stiffness with cramp-like pains in muscles; during menses.

-Neuralgias of various parts with loss of control and pains which are most deep seated. Sore, bruised feeling all over especially the limbs.

-Head-Headache beginning in occiput or neck, radiating to forehead (Sil).

-Sensation of an band around head [Carb-ac; Plat; Sulph].

– Dull, heavy headache with heaviness of eyelids.

– Pain in head with soreness of neck muscles.

– Headache preceded by blindness (Kali-bi; Lac-d) >profuse urination < sun, lying with head low, mental exertion.

– Congestive stage of meningitis with pain at back of head and neck with dilated pupils.

-Vertigo-With blurring of vision; lack of muscular steadiness < Walking < Sudden movement of head.

-Eyes-Visual symptoms like drooping, diplopia from weakness.

-Heavy, can hardly open them. Drooping [Caust; Graph].

-Dim vision; pupils dilated.

-Diplopia from weakness of extra ocular muscles during headache.

-Slow accommodation of vision.

-Detached retina [from injury or myopia].

-Blindness before headaches.

-Face-Besotted face [Bapt, Op].

-Drunken appearance.

-Hot heavy flushed face.

-Mouth-Tongue trembling paralysed.

-Thick speech as if drunk.

-Thick yellow coating of tongue.

-Throat-Sore throat during menses.

-Loss of voice from fright.

-Paralysis of throat. Post diphtheric paralysis [Caust; Diph].

-Paralytic dysphagia after cerebral apoplexy.

-Aphonia.

-G.I.T.-Usually thirstless, but thirst with sweat.

-Diarrhoea from emotional excitement or fright or bad news [Ph-ac].

-Diarrhoea, cream coloured [Calc], tea green.

-Painless diarrhoea in nervous individuals.

-Partial paralysis of rectum and sphincter.

-Prolapse of rectum after labour.

-Respiratory system-Sneezing with fullness at root of nose.

-Watery, excoriating discharge.

-Sensation of hot water flowing through nose.

-Sneezing < morning.

-Catarrh associated with inflamed throat.

-Acute nasal catarrh; great disposition to take cold.

-Urinary system-Urine profuse, clear, watery.

-Partial paralysis of bladder, flow intermittent (Clem).

-Retention of urine.

-Incontinence from excitement.

-Loss of bladder power in old persons or following diphtheria.

-Male genitalia-Profound weakness and relaxation of genitals.

-Spermatorrhoea without erections.

-Cold relaxed genitals [Ph-ac].

-Sexual power exhausted but slightest caress causes emission.

-Female genitalia-Dysmenorrhoea with pain to back and hips.

-Pains insufficient with os widely dilated, complete atony.

-C.N.S.-Coma, Apoplexy; subarachnoid haemorrhages.

-C.V.S.-Sensation as if heart would stop beating if not be in motion.

-Slow pulse.

-Pulse soft; weak, full and flowing.

-Back-Chills running up and down the back.

-Dull heavy pains in lumbar or sacral region.

-Pains under scapula, neck muscles.

-Extremities-Loss of power of muscular control [Alum; Aster].

-Trembling and weakness of all limbs.

-Fatigue after slightest exercise.

-Limbs heavy with knees weak. Tottering gait. Paraplegia. Locomotor ataxia [Phys].

-Inability to walk, tottering and falling when closing eyes [Arg-n; Alum].

-Paralysis [Acon, Arg-n, Caust, Cocc, Con, Cup, Dulc, Merc, Kalm, Nat-m, Nux-v, Phos, Plb, Rhus-t, Sulph, Zinc].

-Sleep-Sleepless from anticipation or excitement or smoking.

-Sleepless from nervous irritation [Coff].

-Fever-Eruptive fevers, especially measles, with catarrh symptoms.

-Fever with prostration, stupor, thirstlessness.

-Dullness, dizziness, drowsy, trembling.

-Does not want to move in fever.

-Chills- in back going up an down.

-Could tell when chill was about to return as incontinence of urine would set in.

-In fever, wants to be held, he shakes so.

-Chill and languor, and aching, mixed with heat or alternating with heat.

-Heat with drowsiness.

-Perspiration not profuse.

-In Typhoid fevers, with dark, red face and besotted appearance.

-Measles with catarrhal symptoms, aids in bringing out eruptions.


KEYNOTES:

1. General depression from heat of summer.

2. Nervous individual, with dread of appearing in public.

3. Anticipatory diarrhoea while preparing for exams, etc.

4. Fear heart will stop beating unless he moves.

5. Headache preceded by blindness > profuse urination.

6. Chills running up and down back.

7. Child starts and grasps the nurse, screams as if afraid of falling.

-Aphonia, sore throat during menses.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Symptoms of gradual onset.

2. Dullness, dizziness, drowsy, trembling.

3. Catarrhal complaints.

4. Paralysis with complete prostration, relaxation.

5. Thirstlessness.

6. Anticipatory complaints.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Indicated in people whose complaints come on from anticipation and depressing emotions.

-Especially useful in paralysis and neuralgias of various kinds, associated with dullness, dizziness, drowsiness, trembling and weakness.

-Useful in muscular incoordination and prostration.

-Thirstlessness accompanies most complaints.


CLINICAL:

1. Gelsemium in drop doses, repeated hourly, causes rapid and permanent relief in the body- Dr. Douglas.

2. For angina pectoris, depending upon fatty degeneration of heart, Gelsemium [and Belladonna] are good palliatives- Dr. Hempel.

3. For preventive of sunstroke- Dr. C.G. Raue.

4. Earache during menopause is almost always relieved by Gelsemium -Dr.Dorothy Shepherd.

5. Gelsemium lX is the best remedy for insomnia with no bad effects- Dr.Cuthbert.

6. Anxiety, Chronic fatigue syndrome, Diarrhoea, Diplopia, Fever, Hayfever, Headache, Influenza, Insomnia, Laryngitis, Migraine, Multiple sclerosis, Myasthenia gravis, Paralysis, Tremor, Vertigo.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Follows Well : Bapt, Ip.

Compare : Bell, Bor, Bry, Caulo, Caust, Cocc, Con, Cur, Ferr-p, Hyper, Ol-an, Phos, Verat.

Similar : Bell, Caulo, Caust, Cocc, Con, Ferr-p, Ol-an, Quill, Verat.

Antidoted By : Atro, Cinch, Coff, Dig, Nux-m, Op.

It Antidotes : Mag-p.

Duration Of Action : 30 Days.

✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *