হিংসুক, সন্দেহ প্রবণ, বিড়বিড় করে বকে, কাল্পনিক দৃশ্য দেখে, তাকে কেহ বিষ প্রয়োগ করবে এজন্য ভয়, স্বামি বা স্ত্রীর চরিত্রে সন্দেহ, উচ্চ স্বরে হাঁসে, কাল্পনিক অত্যাচারের অভিযোগ করে, মনে করে সে নিজের বাড়িতে নেই, বিছানা খোঁটে। |
কামোন্মাদ, নির্লজ্জতা, কাপড় খুলে শরীরের গোপন স্থান দেখায়, জননাঙ্গে বার বার হাত দেয়, অশ্লীল গান গায়। |
উত্তেজনা প্রবন খিটখিটে ও অতিরিক্ত নিদ্রা। |
শরীরের পেশীসমুহের খিচুঁনি ও ঝাঁকুনি। |
অসাড়ে মল, মূত্র ত্যাগ। |
অত্যন্ত পিপাসা কিন্তু পানি পান করতে অনিহা। |
দেহে রক্তের আধিক্য সহজেই উত্তেজিত হয়। স্নায়বিক প্রকৃতি হিষ্টিরিয়া গ্রস্ত তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী। তড়কা — শিশুদের ভয় পেয়ে বা অন্ত্রে ক্রিমি হতে ব্যথা অস্বস্তি (সিনা) হয়ে; মহিলাদের প্রসবের সময় সূতিকা ক্ষেত্রে তড়কা হলে ব্যবহার্য। আহারের পর শিশু বমি করে। হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে ও তারপরই অচেতন হয়ে পড়ে এরূপ ক্ষেত্রে ব্যবহার্য ।
মস্তিষ্কের ক্রিয়া বেশী হয়ে রোগ কিন্তু প্রদাহ থাকে না; হিষ্টিরিয়া বা তুল বকা, মাতালের মত বক বক করতে থাকে; অস্থিরতার সাথে ভুলবকা-বিছানা হতে লাফ দিয়ে উঠে পালাতে চায় । অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলে, মনে করে যেন সে সঠিক স্থানে নেই। আজগুবি কথাবার্তা বলে কিন্তু কোন অভাব অভিযোগের কথা বলে না।
প্রলাপে হায়োস্-এর স্থানে বেল ও ষ্ট্রামো-র মাঝামাঝি। বেল এর সারাক্ষণ ধরে মাথায় রক্তজমাভাব ও স্ক্রামো-র প্রচন্ড রাগ ও উন্মত্ততা হায়োসে থাকে না।
হাত পায়ে খিঁচুনি—জ্ঞান থাকে না। অস্থিরতা অনেক বেশী। চোখ হতে পায়ের আঙ্গুল অবধি প্রতিটি পেশী নাচতে থাকে। (ঐরূপ নাচতে থাকে কিন্তু জ্ঞান থাকে- নাক্স-ভ)।
ভয় — একা থাকতে, বিষাক্ত হবার, কোন কিছু বা কেউ তাকে কামড়াবে, কিছু বিক্রি করে দেবে, কিছু খেতে বা পান করতে ভয়, কিছু দিলে সেটা নিতে ভয়। তার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এই সন্দেহ করে ।
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তার কুফল সাথে ঈর্ষা, রোগ, আবোল তাবোল বকা বা সবকিছুতেই হাসতে থাকা এরপর প্রায়ই সন্ন্যাস রোগ হতে দেখা যায়।
অত্যন্ত নির্লজ্জতা, গায়ে কাপড় রাখে না, কাপড় চোপড় খুলে ফেলে দেয় । যৌনাঙ্গ বার করে দেখায়, অশ্লীল গান করে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকে ও বিড়বিড় করে বকে।
কাশি — শুষ্ক কাশি, রাতে শুরু হয়, কাশিতে শরীর ঝেঁকে ওঠে, কাশি শুলে বাড়ে উঠে বসলে কম হয় (ড্রসেরা) রাতে কাশি বাড়ে, খাবার খেলে, পান করলে, কথা বললে, গান করলে বেড়ে যায় (ড্রসেরা, ফস)
[শুলে কমে—ম্যাঙ্গানাম-এসো]
বৈষয়িক, গোলযোগে, প্রায়ই যদিও কাল্পনিক, খিটখিটে, উত্তেজিত লোকদের ভীষণ অদ্রিরোগে ব্যবহার্য ।
মূত্রথলীর পক্ষাঘাত, প্রসবের পর মূত্রবন্ধ বা অসাড়ে হয়, প্রসূতি মহিলাদের প্রস্রাবের কোন ইচ্ছাই থাকে না। (আর্ণিকা, ওপি) ।
জ্বর — নিউমোনিয়া, স্কারলেট জ্বর, শীঘ্র টাইফয়েড আকার ধারণ করে, চৈতন্য কেন্দ্র যেন আচ্ছন্ন এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে, উড়ন্ত কিছু ধরতে হাত বাড়ায়, বিছানা খুটতে থাকে, দাঁতে ছেলা পড়ে, জিব শুকনো, অসাড়। অসাড়ে মল-মূত্র ত্যাগ করে। স্নায়ুর অসুখে হাত পা নড়াতে থাকে।
সম্বন্ধ – বেল, স্ক্রামো ও ভিরেট্রাম তুলনীয়। কামোন্মত্ততা হায়োস প্রয়োগে ব্যথা হলে অনেক সময় ফস্ দিলে সেরে যায়।
মাতালদের মুখ দিয়ে রক্ত ওঠায় নাক্স-ভ ও ওপিয়ামের সাথে তুলনীয়।
সন্ন্যাস রোগে বধিরতায় বেল এর পর হায়োস্ ভাল খাটে।
বৃদ্ধি – রাতে, ঋতুস্রাবের সময়, মানসিক চাপে, ঈষা হলে, দুঃখজনক প্রেমে, শুয়ে থাকলে ।
শক্তি — ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি ।
এই ঔষধটি স্নায়ুতন্ত্রকে প্রচন্ডভাবে বিপর্যস্ত করে। মনে হয় যেন কোন নারকীয় শক্তি মস্তিষ্ককে অভিভূত করে রেখেছে ও মস্তিষ্কের কাজে বাধার সৃষ্টি করছে। এটি ঝগড়া প্রিয় ও অশ্লীলতা জ্ঞাপক উন্মত্ততার একটি সুস্পষ্ট ছবি। নানা প্রকার কাজ, অঙ্গ-ভঙ্গী ও কথাবার্তায় অভদ্র ও নির্লজ্জ আচরন করার প্রবণতা। প্রচন্ড বাচাল এবং নিজের স্ত্রীদেহকে অথবা যৌনাঙ্গ অনাবৃত রাখার প্রবণতা। হিংসুটে, বিষ খাইয়ে দেবে এই জাতীয় ভীতি, প্রভৃতি। এই ঔষধের লক্ষণগুলি স্নায়বিক উত্তেজনা ও দুর্বলতা প্রকাশ করে; এই কারনে টাইফয়েড ও অন্যান্য প্রকার সংক্রামক রোগ তৎসহ উন্মীলিত ক্ষেত্রে অচৈতন্য অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। সকম্প দুর্বলতা ও কন্ডরার নর্তন। বিড়বিড় করে প্রলাপবকা। সাধারণতঃ পেশীর নর্তন, আক্ষেপিক উপসর্গসমূহ, তৎসহ প্রলাপ। মস্তিষ্কের অপ্রদাহিক উপসর্গ। বিষ দুষ্ঠ পাকাশয়িক প্রদাহ।
মন — প্রচন্ড সন্দেহ প্রবন। বাচাল, অশ্লীল, কামুকপ্রবন, শরীরে আচ্ছাদন রাখে না, হিংসুটে, বোকা। প্রচন্ড প্রফুল্লতা; সকল বিষয়ে থাকার প্রবণতা। প্রলাপবকা, তৎসহ দৌড়ে পালাবার প্রবৃত্তি। বিড়বিড় করে প্রলাপ বকা; অবিরাম হাত বাড়িয়ে কল্পিত কোন বস্তু ধরার চেষ্টা, গভীর অচৈতন্য অবস্থা।
মাথা – হাল্কা ও বিভ্রান্তিকর অনুভূতি, মাদকাসক্তের ন্যায় মাথা ঘোরা। মস্তিষ্কের শিথিল, স্থানান্তরিত হবার মত অনুভূতি। মস্তিষ্কের প্রদাহ তৎসহ অচৈতন্য অবস্থা; মাথা এদিক ওদিক নাড়াতে থাকা।
চোখ – চোখের তারা বিস্ফারিত, চকচক করে, স্থির। চোখ খোলা, কিন্তু কোন কিছুতেই দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে না। নিচের দিকে দৃষ্টি এবং স্থির। ট্যারা দৃষ্টি। চোখের পাতার আক্ষেপের সঙ্গে বন্ধ অবস্থা। দ্বিত দৃষ্টি। দৃষ্টবস্তুর কিনারাগুলি রঙীন দেখায়।
মুখগহ্বর – জিহ্বা শুষ্ক, লাল, ফাটা, আড়ষ্টও নড়াচড়া করতে পারে না। জিহ্বা বার করতে কষ্ট হয়; কথা জড়িয়ে যায়। মুখ গহুর ফেনা। দাঁতগুলি, দন্তমলে পূর্ণ। নিম্নচোয়ালে ঝুলে পড়ে।
গলা — হুল ফোটার মত শুষ্কাবস্থা, সঙ্কোচন। কিছুতেই তরলবস্তু গিলতে পারে না। আলজিহ্বা লম্বা হয়ে যায়।
পাকস্থলী – হিক্কা, শূন্য ঢেকুর, তিতো আস্বাদ, বমি বমি ভাব, তৎসহ মাথা ঘোরা। বমি, তৎসহ আক্ষেপ, রক্তবমন তীব্র খিলধরা, বমির পরে উপশম পাকস্থলীতে জ্বালাবোধ, পেটের উপরের অংশ স্পর্শকাতর। উত্তেজক খাবার খাওয়ার কুফল সমূহ।
উদর – শূলবেদনা, যেন মনে হয় পেট ফেটে যাবে। প্রসারন। শূলবেদনা, তৎসহ বমি, ঢেকুর উঠা, হিক্কা, চিৎকার। পেট ফাঁপা। পেটের উপর লাল ছোপ।
মল – উদরাময়, শূলবেদনার মতবেদনা; অসাড়ে মলত্যাগ, মানসিক উত্তেজনা অথবা ঘুমের মধ্যে বৃদ্ধি। প্রসূতি অবস্থায় উদরাময়। অসাড়ে মলত্যাগ।
প্রস্রাব – অসাড়ে প্রস্রাব। প্রস্রাব থলির পক্ষাঘাত। প্রস্রাব করার কোন বেগ থাকে না। (কষ্টিকাম)।
পুরুষের রোগ – ধবজঙ্গ। কামুক প্রবন, নিজের (পুং) শরীরে আচ্ছাদন রাখে না। জ্বরের সময় যৌনাঙ্গ নিয়ে খেলা করে।
স্ত্রীরোগ – ঋতুস্রাবের আগে, হিষ্টিরিয়ার মত আক্ষেপ। কামেচ্ছা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত। ঋতুচলাকালে আক্ষেপিক নড়াচড়া, প্রচুর প্রস্রাব ও ঘাম। প্রসবান্তি স্রাবের চাপা পড়া। গর্ভাবস্থায় স্ত্রীলোকের আক্ষেপ। প্রসবান্তিক উন্মাত অবস্থা।
বুক – শ্বাসরূদ্ধকর তড়কা। আক্ষেপ, এর ফলে রোগী সামনের দিকে মোচড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়। রাত্রে শুষ্ক, আক্ষেপিক কাশি শুয়ে পড়লে বৃদ্ধি; বসে থাকলে উপশম। গলার ভিতর চুলকানি থেকে কাশি। যেন আলজিহ্বা অনেকটা বড়ো হবার মত অবস্তা। কাশির সঙ্গে রক্ত উঠে।
অঙ্গ-প্রতঙ্গ – বিছানার চাদর খুঁটতে থাকা; হাতদুটি নিয়ে খেলা করে। কোন কল্পিত বস্তু করার জন্য হাতদুটি বাড়িয়ে দেয়। মৃগীর আক্রমন, গভীর ঘুমের মাধ্যমে আক্রমন কালের সমাপ্তি হয়। আক্ষেপ ও খেঁচনি। পায়ের ডিমে ও পায়ের আঙ্গুলের খিলধরা শিশু ঘুম থেকে না জেগে কাঁদেও ফোঁপাতে থাকে।
ঘুম – মারাত্মক ধরনের অনিদ্রা। গভীর ঘুম তৎসহ আক্ষেপ। ভয় পেয়ে চমকিয়ে উঠে। উম্মীলিত ক্ষেত্রে অচৈতন্য অবস্থা।
স্নায়ুসমূহ – প্রচন্ড অস্থিরতা, প্রতিটি পেশীর নর্তন; কিছু আচ্ছাদন রাখতে চায় না।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – রাত্রে, ঋতুকালে, আহারের পরে, শুয়ে পড়লে।
উপশম – সামনের দিকে ঝুঁকলে।
সম্বন্ধ-দোষঘ্ন – বেলেডোনা; ক্যাম্ফর।
তুলনীয় – বেলেডোনা, ষ্ট্রামোনিয়াম; এগারিকাস; জেলসেমিয়াম।
হায়োসায়েমাস হাইডোব্রোম- স্কোপোল্যামাইন হাইড্রোব্রোমাইড- একাঙ্গীন পক্ষাঘাত। সকম্প স্কোলোরাসিস। অনিদ্রা ও স্নায়বিক উত্তেজনা। ক্ষয় রোগে শুষ্ক কাশি। শরীরের ভিতরে উৎপন্ন অথবা বাইরে প্রযোজ্য কোন শক্তিশালী বিষক্রিয়ার লক্ষনের অনুরূপ প্রভাবযুক্ত। ইউরিমিয়া ও স্নায়ুর তরুন রোগাবস্থা। পতনাবস্থার একটি ঔষধবিশেষ। ৩য় ও ৪র্থ দশমিক বিচুর্ণ। বস্তুগত মাত্রায়(১-২০০ গ্রেন) উন্মাদ ও নর্তন; অনিদ্রা।
স্কোপোলা – থায়োসায়েমাসের সঙ্গে রাসায়নিক দিক থেকে সর্ম্পূকযুক্ত। (প্রফুল্লতা, প্রলাপ, অনিদ্রা; বিছানা থেকে উঠে চলে যাবার চেষ্টা; বিড়াল দেখে, কল্পিত চুল খোঁটে, কল্পিত আগুনের হাত গরম করে প্রভৃতি)।
শক্তি – ৬ষ্ট থেকে ২০০ শক্তি।
হায়োসায়ামাস আক্ষেপ, পেশীসঙ্কোচন, কম্পন, থরথর করা এবং পেশীগুলিতে ঝাঁকি দিয়া উঠায় পূর্ণ। বলিষ্ঠ লোকদিগের আক্ষেপ খুব ভীষণতার সহিত উপস্থিত হয়। এরূপ আক্ষেপ সমগ্র শরীরপ্রণালীকে আক্রমণ করে, রোগীকে অচৈতন্য করিয়া ফেলে এবং রাত্রিকালে উপস্থিত হয়। ঋতুকালে স্ত্রীলোকদিগের আক্ষেপ সমগ্র শরীর প্রণালীকে আক্রমণ করে, পেশীগুলির সামান্য আক্ষেপ, বিশেষ স্থানের পেশীগুলির আকুঞ্চন। সামান্য প্রকারের উৎক্ষেপ ও পেশীসঙ্কোচন। দুষ্ট প্রকৃতির রোগে উহা শেষোক্ত প্রকার অর্থাৎ পেশী উৎক্ষেপ ও পেশীসঙ্কোচনের আকার গ্রহণ করে। দুষ্ট প্রকৃতির টাইফয়েড অবস্থায় অত্যন্ত অবসন্নতার সহিত পেশীসঙ্কোচন দেখা দেয়। যদি তাহার উপলব্ধি করিবার মত জ্ঞান থাকে, তাহা হইলে সে উহা। নিজে বুঝিতে পারে, কিন্তু অপর ললাকে উহা দেখিতে পায়। উহা স্নায়ুমন্ডলীর অত্যধিক অবসন্নতার সাক্ষ্য। সে বিছানা হইতে গড়াইয়া পড়ে, পেশীগুলিতে ঝাঁকি দিয়া উঠে। সমস্ত পেশীগুলি কাঁপিতে ও থরথর করিতে থাকে, সমগ্র শারীরবিধানে অবিরত স্নায়ুক্রিয়ার বর্ধিত অবস্থা চলিতে থাকে। ইহা একপ্রকার উত্তেজনা ও উপদাহিতা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি আক্ষেপিকভাবে ঝাঁকি দিয়া উঠে; সুতরাং অঙ্গগুলি নানাভাবে সঞ্চালিত হইতে থাকে, আপনা আপনি সঞ্চালিত হইতে থাকে। কোরিয়া রোগের ন্যায় অঙ্গ-সঞ্চালন। কিন্তু কোণাকুণিভাবে বাহু সঞ্চালন এবং শয্যাবস্ত্র খোটা থাকিবেই। বিকারের মধ্যে কোন কিছু ধরিবার ন্যায় চেষ্টা করে। তারপর, প্রলাপ। ও উত্তেজনাবিশিষ্ট একটানা জ্বরই হউক, অথবা মন ও পেশীক্রিয়ার উপদাহিতাযুক্ত উন্মাদ রোগই হউক, ক্রমশঃ দুর্বলতা বাড়িতে থাকে; উত্তেজনাপ্রবণতা এবং ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা। অবশেষে রোগী সম্পূর্ণ অবসন্ন হইয়া পড়ে, সে শয্যা হইতে নিম্নদিকে গড়াইয়া পড়িতে থাকে এবং তারপর চোয়াল ঝুলিয়া পড়ে। সুতরাং ইহার বিশেষ লক্ষণ–পেশী-উৎক্ষেপ, কম্পন ও থরথর করার সংমিশ্রণ এবং দুর্বলতা ও পেশীসমূহের আক্ষেপিক ক্রিয়া। শিশুরা আক্ষেপগ্রস্ত হয়। “হঠাৎ চিৎকার করিয়া আক্ষেপযুক্ত হইয়া মাটিতে পড়িয়া যায়। প্রধানতঃ ভয় হইতে শিশুদের আক্ষেপ আহারের পর আক্ষেপ।” শিশু আহারের পর পীড়িত হয়, বমি করে এবং আক্ষেপগ্রস্ত হয়। বিকট চিৎকার করিয়া অজ্ঞান হইয়া পড়ে। আগেকার পুস্তকগুলিতে যাহাকে ক্রিমিজনিত আক্ষেপ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছে, তদ্রুপ আক্ষেপবিশিষ্ট হয়। মাতা সন্তানপ্রসবের অল্পক্ষণ পরেই আক্ষেপগ্রস্ত হইয়া পড়েন; ইহাকে সূতিকাক্ষেপ বলা হয়। “নিদ্রার মধ্যে আক্ষেপ। প্রসবকালে শ্বাসরোধভাব এবং আক্ষেপ। পদাঙ্গুলিগুলিতে আক্ষেপিকভাবে খাল ধরিয়া যায়।”
হায়োসায়ামামের সর্বাপেক্ষা বড় অংশ উহার মানসিক অবস্থা। সে কথা বলিতে থাকে, মৃদু প্রকারের প্রলাপ বকে, নানা কল্পনা করে, অলীক কল্পনা করে, ভূত-প্রেত দেখে; জাগাইয়া দিলেও কথা বলিয়া চলে, প্রলাপের ন্যায় বকিতে থাকে এবং অবশেষে অঘোর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়ে। রোগের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এইরূপ চলতে থাকে। সে ঘুমের মধ্যেও কথা বলিতে থাকে, ঘুমের মধ্যে চিৎকার করিয়া উঠে; কিন্তু কথা বলিয়া চলা, বিড়বিড় করা, আপন মনে। বিড়বিড় করা চলিতেই থাকে। তারপর, তাহার জাগরণের কাল আসে, উহার মধ্যেও সে প্রলাপ বকে, অবাস্তব কল্পনা করে, অলীক দর্শন করে, সবকিছুই একসঙ্গে মিশিয়া যায়। একসময়ে সে অবাস্তব দর্শন করিতেছে এবং পরমুহর্তেই অলীক কল্পনায় ডুবিয়া আছে। ইহার অর্থ,—সে কোন সময়ে অবাস্তব দর্শন করে, উহা সত্য বলিয়া মনে হয়, এবং তারপর ঐ অবাস্তব দর্শন ভ্রান্ত। বিশ্বাসে পরিণত হয়। তারপর, সে জানে যে, সে যাহা দেখিতেছে তাহা ঠিক তদ্রুপ নহে এবং তখন ঐ দর্শনও ভ্রমজ্ঞানে পরিণত হয়। কিন্তু সে সর্বদাই অবাস্তব দর্শন করে। সে নানারূপ জিনিষ দেখে, অবাস্তব দর্শনের মধ্যে অবিশ্বাস্য জিনিষ দেখে। সে লোকজন সম্বন্ধে, নিজের সম্বন্ধে নানা কল্পনা করে এবং সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হইয়া পড়ে। সন্দেহবাতিক তরুণ রোগের আগাগোড়া থাকে, ইহা উন্মাদরোগের বাতিকের মধ্যে থাকে। সে সন্দেহ করে যে, তাহার স্ত্রী তাহাকে বিষ খাওয়াইতে চেষ্টা করিতেছে, তাহার স্ত্রী ব্যভিচারিণী হইয়াছে। সকলকেই সন্দেহ করে। “ঔষধ খাইতে অস্বীকার করে, কারণ সে ভাবে যে, উহাতে বিষ মিশান হইয়াছে।” “সে কল্পনা করে যে কেহ তাহাকে অনুসরণই করিতেছে, সকলেই তাহার বিরুদ্ধে চলিয়া গিয়াছে, তাহার বন্ধুগণ আর তাহার বন্ধু নাই। সে কল্পিত ব্যক্তির সহিত কথা বলিতে থাকে।” যেন সে নিজের সাথে কথা বলিতেছে, এরূপভাবে কথা বলে, কিন্তু বাস্তবিক সে কল্পনা করে, যেন কেহ তাহার পার্শ্বে বসিয়া আছে এবং সে তাহারই সহিত কথা বলিতেছে। সময়ে সময়ে সে মৃত ব্যক্তির সহিত কথা বলে, যাহারা পরলোকগত হইয়াছে, তাহাদের সহিত অতীত ঘটনাগুলির আলোচনা করে। মৃত ভগ্নী, স্ত্রী বা স্বামীকে ডাকে এবং ঐ লোক যেন উপস্থিত রহিয়াছে, এরূপভাবে তাহার সহিত কথোপকথন আরম্ভ করে।
হায়োসায়ামাসের এইরূপ অদ্ভুত মানসিক অবস্থায় আর একটি খেয়াল আছে। হয়ত দেওয়ালে একখানি অদ্ভুত রকমের কাগজ আছে, সে শুইয়া উহার দিকে চাহিয়া থাকিবে এবং যদি সে ঐ ছবির মূর্তিগুলিকে মনে মনে সারিবদ্ধ করিয়া সাজাইতে পারে তাহা হইলে সারাদিন ও সারারাত্রি সে উহা লইয়াই ব্যস্ত থাকিবে, এবং যাহাতে সে ঐগুলিকে সারিবদ্ধ করিতে পারে, সেইজন্য ঐস্থানে একটি আলোক চাহিবে; যদি সে নিদ্রা যায়, ঐগুলির কথাই স্বপ্ন দেখিবে, জাগিয়া উঠিয়া আবার উহাই করিতে থাকিবে, সেই একই ধারণা চলিতে থাকিবে। সময়ে সময়ে সে কল্পনা করিবে যে, ঐ জিনিষগুলি, পোকা, ক্ষতিকারক কীট, ইঁদুর, বিড়াল, নেংটি ইঁদুর এবং শিশুরা যেমন তাহাদের খেলায় মালগাড়ীতে জিনিষপত্র লইয়া যায়, সেও ঠিক শিশুরই ন্যায়, ঐগুলি লইয়া মাতিয়া থাকিবে। মন এইভাবে কাজ করিতে থাকে, দুইটি রোগীর অবস্থা একরূপ হয় না, হয়ত তুমি যেরূপ বলা হইল, ঠিক তেমন ব্যাপারটি দেখিতে পাইবে না, কিন্তু তুমি এইরূপ কোন কিছু লইয়া তাহাকে মাতিয়া থাকিতে দেখিবে, জিনিষটি হইবে অদ্ভুত এবং হাস্যকর। একজন রোগী একসারি ছারপোকাকে দেওয়ালের উপর দিয়া চলিতে দেখিয়াছিল, সে ঐগুলিকে সূতা দিয়া বাধিতে আরম্ভ করিয়াছিল এবং শেষটিকে আটক করিতে পারে নাই বলিয়া রাগিয়া উঠিতেছিল। হায়োসায়ামাসে তাহার যথেষ্ট উপকার হইয়াছিল। তোমরা ঠিক এই কথাগুলি পাঠ্যপুস্তকে পাইবে না, কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে যাহা আছে, আমি তাহার অনুরূপ কিছু বলিয়া তোমাদিগকে বুঝাইয়া দিতেছি। ক্ষণে ক্ষণে তাহার মনোভাবের পরিবর্তন হয়। এক মিনিট সে হয়ত চিৎকার করিতে লাগিল, পরের মিনিটেই সে বিকারে ও উত্তেজনায় গালাগালি দিতে থাকিলে, আবার তারপরেই আচ্ছন্ন নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িল। অবশেষে টাইফয়েড অবস্থায়, রোগ কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর, সে গভীর আচ্ছন্ন নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িয়া থাকে। রোগের প্রথম দিকে, তাহাকে জাগাইতে পারা যায় এবং সে সঠিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়, মনে। হয় তুমি যাহা বলিতেছ, সে তাহা বুঝিতে পারিতেছে, কিন্তু যে-মুহূর্তে সে শেষ প্রশ্নটির উত্তর দিবে, অমনি সে আবার ঘুমাইয়া পড়িবে। তারপর তুমি হয়ত আবার তাহাকে নাড়া দিয়া জাগাইয়া তুলিতে পার, এবং তাহাকে আর একটি প্রশ্ন করিতে পার, কিন্তু সে উহার উত্তর দিয়াই আবার গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িবে। টাইফয়েড জ্বরের প্রলাপ ক্রমশঃ আরও প্রগাঢ়, ক্রমশঃ আরও মৃদু, ক্রমশঃ আরও বিড়বিড় করা হয় এবং শেষে সে সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চলিয়া যায়, উহা হইতে তাহাকে আর জাগান যায় না; সেই সময়ে সে ঐ অবস্থায় দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ পড়িয়া থাকে এবং ক্রমশঃ আরও শীর্ণতাপ্রাপ্ত হইতে থাকে; এই ঔষধ প্রযুক্ত না হইলে ঐরূপ প্রগাঢ় নিদ্রার মধ্যেই থাকিয়া যায়। সে পড়িয়া থাকিয়া শয্যাবস্ত্র খুঁটে এবং বিড়বিড় করে। এমনকি যখন সে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় থাকে, এবং যাহা কিছু ঘটিত থাকে তাহার কিছুই স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারে না, তখনও সে মৃদু অঙ্গসঞ্চালন করে, বিড়বিড় করে, আপনা আপনি কথা বলে, এবং থাকিয়া থাকিয়া একবার বিকট চিৎকার করিয়া উঠে। আঙ্গুলে কিছু না। থাকিলেও, যেন কিছু রহিয়াছে, এরূপভাবে আঙ্গুল খুঁটিতে থাকে। ঠিক ঐ একইভাবে বিছানা খুঁটিতে থাকে। সে তাহার রাত্রের পোষাক খুঁটিতে থাকে, অযথা তাহার আঙ্গুল দিয়া যাহা পায় তাহাই খুঁটিতে থাকে। অথবা শূন্যে কিছু ধরিতে চেষ্টা করে, এমন করে, যেন সে মাছ ধরিতেছে। যে-পৰ্য্যন্ত না প্রগাঢ় সংজ্ঞাহীন অবস্থা আসে, এবং সে মৃতের ন্যায় পড়িয়া থাকে, সেই পৰ্য্যন্ত মৃদু প্রলাপ চলিতে থাকে। উন্মত্ত অবস্থায় সময়ে সময়ে প্রলাপ কতকটা প্রচন্ড ভাব ধারণ করে, কিন্তু উহা খুব কমই হয়। তাহার প্রলাপ বেশীর ভাগই মৃদু প্রকৃতির, সে কথা কহিতে থাকে, আবোল তাবোল বকিতে থাকে, স্থিরভাবে এক কোণে বসিয়া থাকে, হড়বড় করিয়া বকিতে থাকে অথবা শুইয়া থাকে বা ঘুরিয়া বেড়ায়। “সাধারণ কাজগুলি, সাধারণ কৰ্ত্তব্যগুলি করিতে প্রবৃত্ত হয়। অর্থাৎ গৃহিণী হইলে, তিনি ঘুম হইতে উঠিয়া, যে-সকল কার্য্য করিতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাহাই করিতে থাকিবেন, পিপা নিৰ্মাতা হইলে পিপা প্রস্তুত করিতে থাকিবেন এবং ঐ ব্যবসায়ের অন্তর্গত সাধারণ কাৰ্য্যগুলি করিতে চাহিবেন। মনে মনে তাঁহার দৈনন্দিন কাজগুলি চালাইয়া যাইবেন, ঐ সম্বন্ধে কথা বলিতে থাকিবেন এবং নিজেকে ঐসব কার্যে নিযুক্ত রাখিবেন–সুতরাং ইহা একপ্রকার কর্মব্যস্ততাবিশিষ্ট উন্মত্ততা। আবার, প্রলাপও কর্মব্যস্ততাবিশিষ্ট উন্মাদনার প্রকৃতি ধারণ করিতে পারে।
এইবার ঐ উন্মত্ততার সাধারণ প্রকৃতির তারতম্য সম্বন্ধে তোমাদিগের কিছু ধারণা জন্মাইবার জন্য, ষ্ট্র্যামো ও ‘বেলে’র সহিত ইহার তুলনা করিতে হইবে। তোমরা ‘বেল’ সম্বন্ধে বক্তৃতায় শুনিয়াছ যে, উহা প্রচন্ড, উহার জ্বর অত্যন্ত প্রবল। উহাতে অত্যধিক উত্তেজনা থাকে। যখন আমরা ষ্ট্র্যামোতে পৌঁছিব, তোমরা দেখিবে যে, উহার প্রলাপ, উহার উন্মত্ততাও “প্রবল” কথাটির দ্বারাই ব্যক্ত করা হইয়াছে। এই তিনটি ঔষধ এত ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত যে, উহাদিগকে একটি শ্রেণীভুক্ত করিলেই অবস্থাটি বুঝা যাইবে। হায়োসায়ামাসের মানসিক অবস্থার কথা সম্বন্ধে বিবেচনা করিবার সময় দেখা যাইবে যে, ইহার উন্মত্ততার মধ্যে কদাচিৎ বেশী জ্বর থাকে। সময়ে সময়ে ইহাতে দুষ্ট প্রকৃতির জ্বর থাকে, কিন্তু যখন জ্বরের সংস্রবে হায়োসায়ামের কথা চিন্তা করা যায়, তখন জ্বরের প্রাবল্য নিম্নলিখিত পর্যায়ের হইবে—প্রথমে ‘বেল, তারপর ‘ষ্ট্র্যামো, তারপর হায়োসায়ামাস। এক্ষণে, ‘বেল’, তাহার মানসিক অবস্থায় অত্যন্ত উদ্ধত থাকে। ষ্ট্র্যামো অত্যন্ত প্রচন্ড, কর্মঠ, খুন করিবার মত প্রচন্ড, জ্বরে সাধারণতঃ মাঝামাঝি রকমের উত্তপ্ত থাকে। হায়োসায়ামাসে উন্মত্ততার সাথে মৃদু প্রকৃতির জ্বর থাকে, খুব বেশী নহে, সময়ে সময়ে আদৌ জ্বর থাকে না। যখন কেহ উহাদের প্রলাপের প্রচন্ডতা এবং উন্মত্ততাসূচক কাৰ্যকলাপের কথা বিবেচনা করে, তখন পৰ্য্যায়টি বদলাইয়া যায়। ব্যবহারের প্রচন্ডতার দিক হইতে পর্যায় হইবে—প্রথমে ষ্ট্র্যামো, তারপর ‘বেল, তারপর হায়োসায়ামাস। সুতরাং তোমরা দেখিতেছ যে, যে-সকল ঔষধ ইহার অতিশয় সদৃশ বলিয়া মনে হয়, তাহাদের তালিকাতে ইহার স্থান সর্বনিম্নে। ইহা মৃদু প্রকৃতির ঔষধ, কিন্তু উপরেরগুলি অধিকতর ক্রিয়াশীল। হায়োসায়ামাস উন্মাদ মৃদু প্রকৃতির। উহা প্রচন্ড হয় না। অর্থাৎ রোগী যদি কখনও খুনের প্রবৃত্তিযুক্ত হয়, তাহা হইলেও সম্ভবতঃ ঐ প্রবৃত্তি হইবে আত্মহত্যার। সময়ে সময়ে রোগী কথা কহিবে এবং আবোল-তাবোল বকিবে, আবার সময়ে সময়ে বসিয়া থাকিবে ও কিছুই বলিবে না। নিদ্রিতই হউক আর জাগ্রতই হউক, সে কল্পনায় পূর্ণ থাকিবে এবং অবাস্তব দর্শন করিবে।” যে-সকল স্ত্রীলোক অস্বাভাবিকভাবে ধর্মপরায়ণ, তাহাদের মনে ধৰ্ম্মভাবের উদয় হইবে । তাঁহারা অলীক কল্পনায় মনে করেন যে, পাপের ফলে তাহাদের করুণা পাইবার দিনটি হারাইয়া ফেলিয়াছেন। তাঁহারা ভয়ানক কিছু করিয়া ফেলিয়াছেন। “তাহার মনে হয়, যেন তিনি খুন করিয়াছেন, ভয়ানক কিছু করিয়াছেন। তিনি ঈশ্বরের বাণীতে যে প্রতিশ্রুতির কথা পড়িয়াছেন, তাহা নিজের পক্ষে বিশ্বাস করিতে পারেন না।” তিনি বলিবেন, “উহা আমার উদ্দেশ্যে নহে, উহা আমার পক্ষে খাটিবে না, উহা অন্য লোকের উদ্দেশ্যে বলা হইয়াছে।”
সে মনে করে, যেন ভুল স্থানে রহিয়াছে। মনে করে, সে যেন বাড়ীতে নাই। যে-সকল জিনিষ বর্তমান নাই, অথবা বর্তমান থাকা সম্ভব নয়, তাহাদিগকে দেখে ভয় করে, যেন সে একা পড়িয়া আছে। বিষের ভয় করে, সর্পাঘাতের ভয় করে।” এই অবস্থাগুলি কখন কখন ভয় হইতে, ভয় বলিতে যাহা বুঝায়, তাহা হইতে উপস্থিত হইলে বাস্তবিক পূর্বে যেরূপ সন্দেহের কথা বলা হইয়াছে, তাহা হইতে উপস্থিত হয়; সে সন্দেহ করে বা ভয় করে যে, ঐ ব্যাপারগুলি ঘটিবে এবং সেইজন্যই সে সবকিছুতেই সন্দিগ্ধ থাকে।
উন্মত্ততার এবং জ্বরের প্রলাপের মধ্যে এই ঔষধের আগাগোড়া আর একটি ব্যাপার থাকে—উহা জলের ভয়, জলস্রোতের ভয়। জলের ভয় লক্ষণটি সুস্পষ্ট থাকার জন্য জলাতঙ্ক নাম দেওয়া হইয়াছে, উহাতে যেরূপ জলের ভয় থাকে, কতকগুলি ঔষধেও তদ্রুপ জলের ভয় আছে। “প্রবহমান জলের শব্দ শুনিলে আতঙ্ক, জলের ভয়।” এই লক্ষণ ‘বেল’, ‘হায়োসায়ামাস, ক্যান্থারিসে এবং নোসোড ঔষধ হাইড্রোফেবিনামে অবশ্যই আছে। ষ্ট্র্যামোতেও জলের ভয় আছে। “স্ট্রামো’তে জলের মত দেখিতে যাহা কিছু, যথা চকচকে। জিনিষ, আগুন, আর্সিতে ভয় আছে। যে-সকল জিনিষের সহিত তরল পদার্থের কোনরূপ সাদৃশ্য আছে তাহাতেই ভয় আছে এবং সেইজন্য তরল পদার্থের শব্দেও ভয় আছে। ‘হাইড্রোফেবিনাম’ “প্রবহমান জলের শব্দে অনিচ্ছায় মূত্রপাত হওয়া আরোগ্য করিয়াছে; প্রবহমান জলের শব্দ শুনিয়া অনিচ্ছায় মল নির্গমন আরোগ্য করিয়াছে।” ঐ লক্ষণ বর্তমান থাকায় একটি পুরাতন উদরাময়ের রোগী উহাতে আরোগ্য হইয়াছিল। হায়োসায়ামাস “কল্পিত প্রশ্নের হঠাৎ সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়।” কল্পনা করে, যেন কেহ তাহাকে একটি প্রশ্ন করিয়াছে এবং সে উহার উত্তর দেয়; এইজন্য তুমি টাইফয়েড রোগীকে যাহা জিজ্ঞাসা কর নাই, এরূপ প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখিবে। সে কল্পনা করে যে ঘরের মধ্যে লোক রহিয়াছে এবং তাহাকে প্রশ্ন করিতেছে। তুমি কিছুই শুনিতে পাইবে না, কিন্তু সে উত্তর করিবে; তখন সে প্রলাপে থাকে বা উন্মত্ত থাকে। “সে আপন মনে বিড়বিড় করিয়া অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলিতে থাকে। অকস্মাৎ চিৎকার করিয়া উঠে।
তাহার আর একপ্রকার প্রলাপ আছে, উহার দুইটি অবস্থা। সে উলঙ্গ হইতে চায়, কাপড়চোপড় খুলিয়া ফেলিতে চায়, এবং ইহা বিশ্লেষণ করিয়া দেখিতে হইবে। প্রথমে তুমি হয়ত ইহা বুঝিতে পারিবে না। হায়োসায়ামাসে শরীরের সর্বত্র চৰ্ম্মে এরূপ অত্যনুভূতিযুক্ত স্নায়ুসমূহ থাকে যে, সে চৰ্ম্মের উপর কাপড়-চোপড়ের স্পর্শ সহ্য করিতে পারে না, এবং সেইজন্য সে উহা ফেলিয়া দেয়। উহা উন্মাদনার মধ্যে এবং সময়ে সময়ে বিকারের মধ্যে ঘটে, এবং সে বুঝিতে পারে না যে, সে তাহার গাত্রকে উলঙ্গ করিতেছে। তাহাকে সম্পূর্ণভাবে নির্লজ্জ দেখায়, কিন্তু সে তাহার নির্লজ্জতার কথা আদৌ চিন্তা করে না, সে বুঝিতেই পারে না যে, সে অস্বাভাবিক কিছু করিতেছে, কিন্তু সে তাহার চর্মের অত্যনুভূতির জন্যই ঐরূপ করে।
ইহার উন্মাদনার মধ্যে আগাগোড়া অপর একটি অবস্থা আছে। উহা কামোন্মত্ততা এবং সময়ে সময়ে উহা ভীষণ হইয়া উঠে। এত ভীষণ হয় যে, বৃদ্ধ ডাক্তার ব্যতীত অপর কেহই। উহার ভীতিজনক অবস্থার এবং ঘরের মধ্যে যাহারা থাকে তাহাদের উপর উহার ফলে যে ভয়ঙ্কর ক্রিয়া হয়, তৎসম্বন্ধে ধারণা করিতে পারে না। একজন স্ত্রীলোক, বধু বা কন্যা তাহার কামোন্মত্ততা এইভাবে প্রকাশ করে যে-কেহই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে, সে তাহাকে তাহার জননেন্দ্রিয় উন্মুক্ত করিয়া দেখায়। এই ভয়ানক কামোন্মত্তার মধ্যে এরূপও দেখা গিয়াছে যে, ডাক্তার যেই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন, অমনি সে তাহার কাপড়-চোপড় বগলে পুরিয়া তাহার জননেন্দ্রিয় উন্মুক্ত করিয়া ফেলিল।
“অত্যন্ত সঙ্গমপ্রবৃত্তি এবং কামোন্মত্ততা। অশ্লীল ব্যাপারসমূহ। মল, মূত্র এবং গোবরের উদাহরণ দিয়া কথা বলে।” এইরূপ উন্মাদনা এবং প্রলাপের মধ্যে অনুরূপ সবকিছুই প্রকাশ পাইবে—অথচ ইহা পীড়া মাত্র।
“সে প্রচন্ড হইয়া, লোকজনকে মারিতে থাকে। আঘাত করে এবং কামড়ায়। অবিরত গান করে এবং তাড়াতাড়ি কথা বলে। কাম বাতিকের সহিত বিদ্বেষভাব। কামবিষয়ক উন্মাদনা। কুৎসিত গান করে। গ্রীষ্মকালে শয্যায় উলঙ্গ হইয়া শয়ন করে বা একখানি চামড়া জড়াইয়া শুইয়া থাকে।” সে ইহা শীতের জন্য করে না, কিন্তু একপ্রকার খেয়ালের জন্য করে। কোন যুবতী হয়ত কোন যুবকের উপর তাহার বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছিল। কিন্তু এখন সে বুঝিয়াছে যে, যুবকটি সর্বতোভাবে তাহার অযোগ্য। এইরূপ হতাশ প্রেমের ফলে এই সকল রোগ উপস্থিত হইতে পারে। ইহাতে সে উন্মত্ত হইয়া পড়ে এবং তাহার পূর্বোক্ত যে-কোন অবস্থা দেখা দিতে পারে।
যে-সকল রোগী একজ্বর, আক্ষেপ বা উন্মাদরোগ হইতে আরোগ্যলাভ করিয়াছে, তাহাদের চক্ষুর, চক্ষুর পেশীসমূহের পক্ষাঘাত উপস্থিত হইতে পারে। “দৃষ্টিশক্তির গোলযোগ। দূরদৃষ্টি। কতকগুলি পেশীর টান টানভাব, অপরগুলির পক্ষাঘাত। টেরা দৃষ্টি। এই অবস্থায় ইহা খুব সচরাচর প্রযোজ্য ঔষধগুলির অন্যতম। যে-টেরা দৃষ্টি মস্তিষ্করোগ হইতে আসে, তাহা এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য হওয়া উচিত।
হায়োসায়ামাসের জ্বরে যথেষ্ট মস্তিষ্কের উপদ্রব থাকে, এবং তারপর চক্ষুর পেশীর দুর্বলতা, চক্ষুর উপদ্রব, কনীনিকায় রক্তসঞ্চয়, দৃষ্টিশক্তির বিশৃঙ্খলার প্রবণতা থাকিয়া যায়। “দৃষ্টির অস্পষ্টতা। নিশান্ধতা। চক্ষুর বিকৃত আকৃতি। চক্ষুর সরল পেশীগুলির আক্ষেপিক ক্রিয়া। “চক্ষু-তারকাদ্বয় বিস্তৃত এবং আলোকে অনুভূতিহীন।” সময়ে সময়ে চক্ষু-তারকা সঙ্কুচিত থাকে, কিন্তু এইরূপ দুষ্ট প্রকৃতির অজ্ঞানকর টাইফয়েডরোগে উহা সম্ভবতঃ বিস্তৃতই থাকিবে। তারপর ঐরূপ দুষ্ট প্রকৃতির রোগ হইতে আরোগ্যলাভের পর, চক্ষু-পত্রের কম্পন, চক্ষুর পাতায় ঝাঁকি দিয়া উঠা, চক্ষুর পেশীতে ঝাঁকি দিয়া উঠা রহিয়া যায়, এইজন্য চক্ষুগোলক দুইটি অস্থির থাকে। চক্ষুগোলকের বিভিন্ন পেশীর সামান্য আক্ষেপেও উহারা নড়িতে থাকে। এই সকল হয় জ্বরের সঙ্গে, না হয় জ্বরের পরে উপস্থিত হয়। শিশু হয়ত আক্ষেপযুক্ত হইল, অথবা নির্দিষ্ট সময়ে তাহার আক্ষেপ দেখা দিতে লাগিল, হয়ত এক সপ্তাহ বা দশ দিনের মধ্যে তাহার পনের বা পঞ্চাশবার আক্ষেপ হইল, তারপর হয়ত ঐ আক্ষেপ ‘বেল’ বা ‘কুপ্রাম’ অথবা অপর কতকগুলি ঔষধের একটি দ্বারা নিবারিত হইল, কিন্তু তারপর চক্ষুর রোগ, টেরাদৃষ্টি, এবং দৃষ্টির গোলযোগ উপস্থিত হইতে পারে। “দৃষ্ট বস্তু যেন লাফাইতে থাকে।” পড়িবার সময় অক্ষরগুলি লাফায়। এই ঔষধের আগাগোড়া, নানাস্থানে, বিশেষতঃ ইহার কাশিতে, ইহার পাকস্থলীর গোলযোগে, ইহার উদরোগে,—আক্ষেপিক প্রকৃতির উপসর্গ, নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে আগত উপসর্গ এবং আবেশে আবেশে আগত স্নায়বিক প্রকৃতির উপসর্গ দেখিতে পাওয়া যায়।
মুখে অনেকগুলি লক্ষণ প্রকাশ পায়। মুখ অত্যন্ত শুষ্ক, “শুষ্ক চামড়ার ন্যায় শুষ্ক।” শুষ্কতার জন্য জিহ্বায় জুতার চামড়ার ন্যায় স্বাদ হয়। সময়ে সময়ে রোগী বলে, “আমার জিহ্বা এত শুষ্ক হইয়া গিয়াছে যে, মুখের মধ্যে খড়খড় করিতেছে।” মুখের, গলার, নাকের, যেখানেই শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আছে, সেইখানেই অত্যন্ত শুষ্কতা। দুষ্ট প্রকৃতির টাইফয়েড জ্বরে জিহ্বা শুষ্ক, ফাঁটা ফাঁটা, লালবর্ণ, এবং উহা হইতে রক্তপাত হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহে, তৃতীয় সপ্তাহ পড়িবার মুখে দাতগুলি কাল রক্তে আচ্ছন্ন হইয়া যায়, ওষ্ঠদ্বয় ফাটিয়া রক্ত পড়ে। “জিহ্বা ফাটিয়া রক্ত পড়ে। রোগীসংজ্ঞাহীন, তবে অনেক নাড়ানাড়ি করিয়া ও পুনঃপুনঃ ডাকিয়া তাহাকে জাগাইয়া তোলা যায়।” তখন সে কম্পান্বিত জিহ্বা বাহির করে, উহা রক্তাবৃত, ফাটা এবং শুষ্ক । দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরে “দাঁতের উপর দন্তমল জন্মে।” জিহ্বা বাহির করিতে চেষ্টা করিলে “মুখমন্ডলের পেশীগুলি, উৎক্ষিপ্ত হয়।” উহা ল্যাকেসিসের জিহ্বার ন্যায় কাপে, অত্যন্ত শুষ্কতার জন্য দাঁতে আঁটকাইয়া যায়, চোয়াল শিথিল হইয়া ঝুলিয়া পড়ে, মুখ বিস্তৃতভাবে হাঁ হইয়া থাকে। সমস্ত মুখটি শুষ্ক ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। কখন কখন জ্বরের মধ্যে দাঁতিলাগার ন্যায় চোয়াল বন্ধ হইয়া যায় এবং অতিকষ্টে উহাকে খোলা যায়। দাঁতগুলি চাপিয়া দাঁতে দাঁতে আটকাইয়া যায়।” দাঁতের মধ্যে দপদপকর যাতনা। দাঁতের মধ্যে ঝাঁকি দিয়া উঠা, দপদপ করা, ছিন্নকর যন্ত্রণা। দাঁতে দন্তমল জমা।” তারপর এইরূপ দুষ্ট প্রকৃতির জ্বরে সে নিদ্রার মধ্যে দাঁত কড়মড় করে। আক্ষেপকালে অথবা দুইবার আক্ষেপের মধ্যে, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়কালে শিশুরাও রাত্রে এবং ঐরূপ অঘোর নিদ্রার মধ্যে দাঁত কড়মড় করে। পাঠ্যপুস্তকে বলা হইয়াছে, “জিহ্বা লালবর্ণ, বাদামিবর্ণ, শুষ্ক, ফাটা, কঠিন। দেখিতে শুষ্ক চামড়ার মত। জিহ্বা ইচ্ছাকে অনুসরণ করে না। জিহ্বা নাড়াইতে কষ্ট হয়, উহা আড়ষ্ট এবং অতিকষ্টে বাহির করা যায়। কথা বলিবার সময় জিহ্বার কামড় লাগে।” জিহ্বা পক্ষাঘাগ্রস্ত হয়। “কথা বলিতে পারে না, অস্পষ্টভাবে কথা উচ্চারণ করে। কথা বিকৃত হয়। অতিকষ্টে কথা বলে।” গলায় ও জিহ্বার পেশীগুলি, যাহারা আমাদিগকে গিলিতে সাহায্য করে, এবং গলনলী ও কণ্ঠনলীর পেশীগুলি শক্ত ও পক্ষাঘাতিক হইয়া পড়ে, এইজন্য গিলিতে কষ্ট হয়। “গলাধঃকরণ করা খাদ্য নাকে উঠিয়া আসে।” তরল পদার্থ নাক দিয়া বাহির হইয়া পড়ে অথবা শ্বাসনলীতে প্রবেশ করে। “জল দেখিলে অথবা প্রবহমান জলের শব্দ শুনিলে অথবা জল গিলিতে চেষ্টা করিলে, গলনলীর আক্ষেপিক আকুঞ্চন উৎপন্ন হয়।”
অতঃপর, এই ঔষধের আর একটি মূল্যবান বিষয় ইহার পাকস্থলী এবং উদর-লক্ষণ। বমন। জলের ভয়। অদম্য তৃষ্ণা, কিন্তু জলে বিতৃষ্ণা, যেন ঐ বিতৃষ্ণা পাকস্থলী হইতে আসে, জল সম্বন্ধে মানসিক ভয়। পাকস্থলী স্ফীত। পাকস্থলীতে অত্যন্ত বেদনা। মুখে যেমন শুষ্কতা থাকে, পাকস্থলীতেও ড্রপ শুষ্কতা থাকিবে, কারণ ঐ লক্ষণটি বরাবরই থাকে। পাকস্থলীর মধ্যে জ্বালা-ও চিড়িক মারিয়া উঠা, আর যখন প্রদাহ না থাকে, তখন রক্তবমন হইতে থাকে। সূচীবিদ্ধবৎ যাতনা, শূলবৎ যাতনা, উদরস্ফীতি। সমগ্র উদরটির স্ফীতি। “উদর অদ্ভুতভাবে ফীত, প্রায় ফাটিয়া যাওয়ার মত।” ঢাকের ন্যায় মনে হয়, বায়ুস্ফীতি। “অত্যন্ত ক্ষততাবোধ, ক্ষততাবোধের জন্য পেটে হাতে দেওয়া যায় না। নাড়াচাড়া করা যায় না; অতিকষ্টে, অতি ধীরে ধীরে এবং অত্যন্ত সতর্কতার সহিত পাশ ফিরাইতে হয়। উদরের মধ্যে কাটিয়া ফেলার ন্যায় যাতনা।” দুষ্ট প্রকৃতির টাইফয়েড জ্বরে, অত্যন্ত পেট ফাপাসহ, উদরমধ্যস্থ সকল যন্ত্রের প্রদাহ। টাইফয়েড জ্বরে যেরূপ দেখা যায়, পেটের উপর সেইরূপ দাগ দাগ চিহ্ন।
তারপর উদরাময়, দুষ্ট প্রকৃতির একটানা জ্বরে যেরূপ দেখা যায়, তদ্রপ উদরাময় দেখা দেয়। “অন্ত্র হইতে রক্তপাত, উদরের পিয়ারাখ্য গ্রন্থিতে (Peyer’s gland) ক্ষত এবং হলদে থকথকে, আটাগোলার ন্যায় মল। টাইফয়েড যেরূপ থকথকে মল থাকে, হায়োসায়ামাসের মলও সেইরূপ লেইয়ের ন্যায় ঘনত্ববিশিষ্ট মল থাকে। আবার জলের ন্যায়, ভীষণ দুর্গন্ধ, রক্তময় তরল মল। অধিকাংশ সময়েই মল এবং মলনির্গমন যন্ত্রণাহীন থাকে। “অন্ত্র হইতে যন্ত্রণাহীন স্রাব। জলবৎ শ্লেষ্মা, সময়ে সময়ে গন্ধহীন, কিন্তু সাধারণতঃ অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকে।” তারপর ইহার আর একটি লক্ষণ, রোগীর মল নির্গমনের কোন অনুভূতি থাকে না। উহা অসাড়ে নির্গত হয় । মল এবং মূত্র দুই-ই রোগীর অজ্ঞাতসারে নির্গত হয়। মল জলের মত, রক্তাক্ত অথবা থকথকে। হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা নারী বা বালিকা, যাহাদের উদরাময় ও রক্তময় মলের আক্রমণ হয়। জরায়ুর শিথিলতার সহিত সংশ্লিষ্ট অন্ত্রাদির শিথিলতা। “গর্ভাবস্থায় উদরাময়।” প্রসবের পরবর্তী মূত্রাবরোধে কষ্টিকামই বাধা নিয়মের ঔষধ। রাসে’র ন্যায় কষ্টিকাম’ পেশীর ও যন্ত্রাদির উপর চোট পড়ার কুফলের একটি প্রধান ঔষধ, এবং স্ত্রীলোকেরা সন্তান নির্গমনের যেরূপ প্রবল চেষ্টা করিতে বাধ্য হন, তাহাতে অনেক ক্ষেত্রেই বস্তিপ্রদেশের পেশীগুলি-শ্রান্ত, শিথিলিত এবং পক্ষাঘাতিক হইয়া পড়ে।
তারপর, পূর্বে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা প্রকৃতই কোন একটি বিশেষ স্থানের অবস্থা নয়, উহা সাধারণ অবস্থা, উহা ভীষণ সঙ্গমপ্রবৃত্তি। যে কুমারীদের সঙ্গমেচ্ছা ছিল না, তাহাদের ভীষণ সঙ্গমেচ্ছা। ঐ অবস্থাটি কেবলমাত্র মস্তিষ্কের প্রদাহের সময় উপস্থিত হয়।
ঠান্ডা লাগার প্রসব বেদনার ন্যায় যন্ত্রণা।” ঠান্ডাটি জরায়ুতে স্থান পরিগ্রহ করে এবং ফলে কষ্টকর ঋতুস্রাব উপস্থিত হয়। হায়োসায়ামাসে নানারূপ খালধরা আছে, হাতের আঙ্গুলে ও পায়ের আঙ্গুলে খালধরা, যেখানে সেখানে পেশীর খালধরা, ক্ষণিক পক্ষাঘাত ইত্যাদি। ইহা ঋতুলোপ করিয়াছে। ঋতুকাল, গর্ভকাল এবং প্রসবকালে নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়, উহার সবই হিষ্টিরিয়া প্রকৃতির। পেশীসঙ্কোচন, কাশি, কোষ্ঠবদ্ধতা, উদরাময় ইত্যাদি সবকিছুই হিষ্টিরিয়া প্রকৃতির। “সূতিকাক্ষেপ, আক্ষেপ আরম্ভ হওয়ার সময় ভীষণ ঝাঁকি দিতে থাকে। গর্ভস্রাবের পর উজ্জ্বল লাল রক্তস্রাব। মূত্রস্থলীর আধেয় নির্গত করিবার কোন চেষ্টা থাকে না।
তারপর, আসিতেছে স্বর, কণ্ঠনলী, শ্বাসক্রিয়া ও কাশি। কণ্ঠনলীর আকুঞ্চন। কণ্ঠনলী এবং বায়ুপথগুলিতে যথেষ্ট শ্লেষ্মা থাকায় বাক্য এবং স্বর কর্কশ হয়। শুষ্ক ও প্রাহিত গলার সহিত স্বরভঙ্গ। কথা বলা কষ্টকর হয়। হিষ্টিরিয়াজনিত স্বরনাশ। হায়োসায়ামাস এবং ভিরেট্রাম এই ঔষধ দুইটি আরোগ্য করে এবং স্নায়বিক প্রকৃতি হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত স্ত্রীলোকদিগকে অধিকতর বোধশক্তিবিশিষ্ট করে।
“বুকের আক্ষেপের জন্য কষ্টদায়ক আক্ষেপিক কাশি। স্পষ্ট বেদম হইয়া পড়া, বুকে ঘড়ঘড়ানি।” হিষ্টিরিয়াজনিত কাশি। অনুভূতি প্রধানা স্ত্রীলোকদিগের মেরুদন্ডের উত্তেজনাসহ নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে আগত আবেশযুক্ত কাশি, উহা উত্তেজনা হইতে উপস্থিত হয়। এইরূপ রোগী দিনের বেলায়, রাত্রে বা যে-কোন সময়ে শুইয়া পড়িলে, কণ্ঠনলীর আকুঞ্চন, কণ্ঠনলীর আক্ষেপ, গলরোধ, মুখরোধ ও বমনের সহিত আক্ষেপিক কাশি উপস্থিত হইবে। “মুখমন্ডলের আরক্ততা ও শ্বাসরোধ।” মেরুদন্ডের রোগে ঐ কাশি শুষ্ক, খকখকে ও গলরোধকর হয়। “কণ্ঠনলীতে সুড়সুড় করে, শুষ্ক, খকখকে, আক্ষেপিক কাশি, শুইলে বৃদ্ধি, উঠিয়া বসিলে উপশম, রাত্রে, পানাহারের পর, কথা বলিলে এবং গান করিলে বৃদ্ধি। শুষ্ক, আক্ষেপিক এবং দীর্ঘস্থায়ী কাশি।” কিন্তু ইহার চরিত্রগত কাশি শুষ্ক, যন্ত্রণাদায়ক, উত্যক্তকর এবং শয়নে বৃদ্ধিযুক্ত হয়। এই সকল যুবতী স্ত্রীলোকদিগের এবং কুমারীদের পিকচক্ষু অস্থি হইতে মস্তিষ্ক পর্যন্ত মেরুদন্ডের স্থানে বেদনা থাকে, তাহাদের ঐ বেদনাযুক্ত স্থানগুলি চেয়ারে হেলান দিয়া বসিলে আত্মপ্রকাশ করে। ইহাদের কণ্ঠনলীতে সামান্য ঠান্ডা লাগিলে অথবা সময়ে সময়ে সম্পূর্ণভাবে স্নায়বিক কারণে ঐরূপ হয়। যাহাদের মেরুদন্ডের বক্রতা আছে, সময়ে সময়ে তাহাদের মেরুদন্ডের উপদাহ ও মেরুদন্ড রোগজনিত কাশি। “কাশির সময় কণ্ঠনলীর আক্ষেপ। কাশি মধ্যরাত্রের পর বৃদ্ধিযুক্ত হয়। রোগীকে নিদ্রা হইতে জাগাইয়া তুলে। ঠান্ডা বাতাসে, আহার ও পান করায় কাশি। হামের পরবর্তী কাশি। ভয়ানক আক্ষেপিক কাশি।” কাশি অত্যন্ত অবসন্নকর। সময়ে সময়ে রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত ঘর্মাবৃত ও অবসন্ন হইয়া না পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাশি; রোগী সামান্য উপশম পাওয়ার জন্য সম্মুখদিকে ঝুঁকিয়া থাকে এবং অবসন্ন না হওয়া পর্যন্ত কাশিতে থাকে। বুকের পেশীসমূহের আক্ষেপ। ঘাড়ের এক পার্শ্বের পেশীসমূহের আকুঞ্চন। আক্ষেপসংযুক্ত মেরুমজ্জা-প্রদাহ।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা। পেশীসমূহের আক্ষেপ। অস্বাভাবিক সঙ্কোচন। হাতের ও পায়ের পেশীগুলি মাঝে মাঝেই ঝাঁকি দিয়া উঠে।
অনেক রোগ নিদ্রার সময় উপস্থিত হয়। এইরূপ স্নায়বিক রোগীর পক্ষে নিদ্রা একটি মহা ক্লেশকর অবস্থা। সময়ে সময়ে নিদ্রাহীনতাও দেখা যায়। আবার প্রগাঢ় নিদ্রা। “নিদ্রাহীন অথবা অবিরত নিদ্রা।” জাগরিতই থাকুক আর নিদ্রিতই থাকুক, বিড়বিড় করা চালিতে থাকে। “দীর্ঘকাল স্থায়ী অনিদ্রা। কামবিষয়ক স্বপ্ন। চিৎ হইয়া শুইয়া থাকিতে থাকিতে সে হঠাৎ উঠিয়া বসে, তারপর আবার শুইয়া পড়ে।” ইহার অর্থ এই যে, রোগী ঘুম হইতে জাগিয়া উঠে, চারিদিকে দেখে, সে যে ভয়ানক-ব্যাপারের স্বপ্ন দেখিতেছিল তাহা ভাবিয়া বিস্মিত হয়, স্বপ্ন তাহার নিকটে বাস্তব বলিয়া বোধ হয়। সে সব দিকে তাকাইয়া দেখে এবং তাহার স্বপ্নদৃষ্ট কোন কিছুই দেখিতে পায় না, তখন সে আবার শুইয়া পড়ে এবং ঘুমাইয়া যায়। সে সারারাত্রি ধরিয়া ঐরূপ করিতে থাকে। সে ভয় পাইয়া চমকাইয়া উঠে। ঘুমের মধ্যে তাহার দেহে ঝাঁকি দিয়া উঠে এবং সে চিৎকার করিয়া উঠে। দাঁত কড়মড় করে। ঘুমের মধ্যে হাসে। এই ঔষধের মধ্যে এত বেশী মস্তিষ্কের উপদ্রব আছে যে, আমরা ইহার নিদ্রার মধ্যে স্বপ্ন দেখা এবং ভয় পাওয়া, নানারূপ উপসর্গ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ঝাঁকি দিয়া উঠা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কম্পন আশা করিতে পারি।
ইহার জ্বরমাত্রেই দুষ্ট প্রকৃতির জ্বর, একটানা জ্বর, টাইফয়েড জ্বর।
[Hyoscyamus – hus, hyos, a hog; Kyamos, a bean, Hyoscyamus, or Hogbean, “because it does or does not poison’swine-an open question” (Millspaugh); henbane, because it is supposed to be fatal to fowls]
অপর নাম- ব্ল্যাক হেনবেন (Black Henbane),
হগবিন (Hogbean)
সোলানেসী জাতীয় এই উদ্ভিদ ইউরোপে বেণী জন্মে। এর পাতা ও ডাল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী হয়। এতে যে উপক্ষার পাওয়া যায় তার নাম হাইওসায়ামিন।
হাইওসায়ামাসের মূলকথা-
১। স্ট্রামোনিয়াম ও বেলেডোনার প্রলাপের মত একবার প্রচণ্ড প্রলাপ, অন্যবার ওপিয়ামের মত সংজ্ঞাহীনতাসহ মৃদু প্রলাপ; মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে।
২। শূন্যে কাল্পনিক ভাসমান লোমণ্ডচ্ছ (flocks) ধরবার চেষ্টা করে, বিছানার চাদর ও বালিশ প্রভৃতি খেটে; টেনডনের আক্ষেপিক স্পন্দন দেখা যায়।
৩। কাশি-ক্রমাগত কাশি, বিশেষ করে বৃদ্ধদের কাশি শুলে বাড়ে, উঠে বসলে উপশম হয়।
৪। কেউ বিষ খাইয়ে মারবে এমন ভয়, নানা প্রকারের কাল্পনিক ভয়ে ভীত, যে সকল ব্যক্তি বা বস্তু নেই; তাদের দেখে; নির্বোধের মত হাসে।
৫। শরীরের সমগ্র পেশীর স্পন্দন, স্প্যাজম বা আক্ষেপ ও তড়কা বা খিঁচুনি।
৬। উন্মাদ, প্রায়ই কামোন্মাদে পরিণত হয়-রোগী উলঙ্গ হয়, জননাঙ্গ দেখায়, অশ্লীন গান করে ও অশ্লীল কথাবার্তা বলে।
৭। কেউ তাকে বিষ খাইয়ে মারবে এরূপ ভয়, সন্দেহ ও ইর্ষাপরায়ণ।
৮। সৰ্ব্বদাই ঘরের চারদিকের বস্তুগুলির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে, নিজের কথা ভুলে যায় (জ্বরে), চোখের তারা প্রসারিত, অনুভবশক্তি থাকে না, ছেটবস্তুও বড় দেখায়।
৯। দাঁতের উপর ময়লা (sordes) উৎপন্ন হয়, বা দাঁতে দাঁত ঘষে।
১০। জ্বরে ইহা রাসটাক্সের সঙ্গে পৰ্য্যায়ক্রমে ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়।
হাইওসায়ামাস একটি আলোচনা –
১। প্রলাপ-
হাইওসায়ামাস বেলেডোনার মতই প্রলাপের ঔষধ বটে, কিন্তু এর প্রলাপ একবার প্রবল ও একবার মৃদু এইভাবে উপস্থিত হয়। বেলেডোনায় প্রচন্ড প্রলাপেরই প্রাধান্য থাকে, কচিৎ মৃদু প্রলাপ জন্মে। হাইওসায়মাসে যদু প্রলাপেরই (stupid muttering form) প্রাধান্য থাকে। কখন কখনও প্রলাপ প্রকাশ পায়, হইওসায়ামাসের প্রলাপ বেলেডোনার বিপরীত।
পার্থক্য-
ক) বেলেডোনার রোগী মুখমণ্ডল লাল, হাইওসায়ামাসের রোগীর মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে ও বসা।
খ) হাইওসায়ামাসের রোগীর দুৰ্বলতা থাকে এবং এই দুৰ্বলতা ক্রমে ক্রমে বাড়ে। এই দুৰ্বলতা বশতঃই তার প্রচণ্ড প্রলাপের আবেগ বেশীক্ষণ থাকে না। বেলেডোনা বা স্ট্রামোনিয়ামে এত বেশী দুর্বলতা দেখা যায় না।
গ) হাইওসায়ামাসের রোগীর প্রলাপ প্রচণ্ড আকারে আরম্ভ হয়, কিন্তু ক্রমে ক্রমে কমে আসে ও অনেকক্ষণ পরে পরে দেখা দেয়।
তবে এর মৃদু প্রলাপ চলতে চলতে এমন অবস্থায় আসে যে, বোগী সম্পূর্ণভাবে সংজ্ঞাহীন ও অচৈতন্য হয়ে পড়ে। কখন কখন এমন অচৈতন্য হয়ে পড়ে যে, রোগীকে হাইওসামাল দিতে হবে কি ওপিয়াম দিতে হবে, তা ঠিক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
টাইফয়েড জ্বর
বোগীর খুব তাড়াতাড়ি টাইফয়েড়ের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়। জিভ শুকনো ও ভারী। মস্তিষ্ক এত আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে, রোগীকে জাগিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেয়, কিন্তু পরক্ষণেই আবার অচৈতন্য হয়ে পড়ে বা গভীর সুপ্তিতে অভিভূত হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় চোখ বিস্তৃতভাবে খোলা থাকতেও পারে। রোগী চারদিকে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকে, কিন্তু কল্পিত ভাসমান লোমণ্ডচ্ছ (flocks) ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। সে ঐদিকে হাত বাড়িয়ে ঐগুলি ধরতে চায়; নিজের বিছানার চাদর খোঁটে, অস্পষ্টভাবে বিড় বিড় করে বকে বা কয়েক ঘণ্টা একেবারেই চুপ করে থাকে; দাঁতগুলি ময়লায় (sordes) ভর্তি, নীচের চোয়াল ঝুলে পড়ে; অনিচ্ছায় বা অসাড়ে মলমূত্র নিঃসৃত হয়। এইভাবে আস্তে আস্তে শরীর ও মনের সম্পূর্ণ অবসন্নতার ছবি ফুটে উঠে।
সাধারণতঃ টাইফয়েড জ্বরে ও টাইফয়েড নিউমোনিয়ায়, স্কার্লেটিনায় ও অন্যান্য রোগে সচরাচর হাইওসামাসের এইরকম মূর্তি দেখা যায়। তবে হাইওসায়ামাস আশ্চৰ্য্য ঔষধ বটে, কিন্তু বেলেডোনার মত এর অধিকার বিস্তীর্ণ নয়।
৩। উন্মাদ রোগ-
হাইওসায়ামাস যে কেবল পূর্বোক্ত তরুণ রোগেই একটি প্রধান ঔষধ, তা নয়। ইহা পুরাতন উন্মাদরোগেও অত্যন্ত উপকারী। তরুণ প্রলাপ যদি স্থায়ী আকার ধারণ করে, তবে তাকে উন্মাদ রোগ (mania) বলে, আর এতে হাইওসায়ামাস ও একটি নির্ভরযোগ্য ঔষধ। উন্মাদরোগে বেলেডোনা অপেক্ষা হাইওসায়ামাস বেশী কাজ করে। আবার কোন তরুণ রোগের পরে যদি উন্মাদ জন্মে, তাহলেও হাইওসায়ামাস একটি প্রধান ঔষধ বলে পরিগণিত হয়। যখনই রোগীর অতিশয় সন্দিগ্ধতা থাকে, তাকে বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে সে ঔষধ খেতে চায় না অথবা সে মনে করে যে তার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে; সে অন্যান্যকে ইর্ষা করে প্রথম ইর্ষাবশতঃ তার রোগ উৎপন্ন হয়, তাহলে হাইওসায়ামাস প্রযোজ্য। এগুলি হইওসায়ামাসের বিশেষ লক্ষণ। এগুলি ছাড়া হাইওসায়ামাসের উন্মাদরোগ আবার কামোন্মাদের আকার ধারণ করতে পারে। তখন রোগী উলঙ্গ হয়, জননাঙ্গ প্রদর্শন করে,অশ্লীল কথা বলে ও অশ্লীল গান করে। এইপ্রকার উন্মাদে অন্যান্য ঔষধ অপেক্ষা হইওসায়ামাসহ শ্রেষ্ঠ।
এই ঔষধের তরুণ প্রলাপ লক্ষণের ন্যায় এর উন্মাদেও রোগীর কখনও প্রচণ্ডতা ও কখনও মৃদুতা দেখা যায়। এক এক সময়ে রোগিণীর এতই মৃদুতা ও ভীরুতা জন্মায় যে, সে লুকিয়ে থাকে। আবার সে এতই প্রচণ্ড হয়ে উঠে যে,তার কাছে যে যায় তাকেই আক্রমণ করে, মারে, আঁচড়ায় ও আঘাত করতে চায়।
হাইওসায়ামাসের উন্মাদ রোগী সাধারণতঃ দুৰ্ব্বল। এইজন্য বার্ধক্যের দুৰ্ব্বলতা বশতঃ যে উন্মাদ জন্মায় তাতে ইহা বিশেষ উপযোগী। তবে লক্ষণ দ্বারা নির্দেশিত হলে সকল বয়সের উন্মাদেই ইহা উপকারী।
৪। হাইওসায়ামাসের স্নায়বিক ক্রিয়া যে কেবলমাত্র মস্তিষ্কেই দেখা যায়, তা নয়। ইহা সমগ্র শরীরের স্নায়ুমণ্ডলের উপর কাজ করে।
এইচ. এন. গ্যারেন্সী বলেন—’পায়ের আঙুল থেকে চোখ পৰ্য্যন্ত অর্থাৎ শরীরের প্রত্যেকটি পেশীর স্পন্দন হাইওসায়ামাসের লক্ষণ।”মৃগীর জন্যই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক; আক্ষেপ বা কনভালশান রোগে হাইওসায়ামাস ব্যবহারের ইহা একটি প্রধান লক্ষণ।
এর আক্ষেপ নাক্সভমিকা বা স্ট্রিকনিয়ার আক্ষেপের মত টনিক স্প্যাজম নয়, ক্লনিক স্প্যাজম অর্থাৎ উহা অনেকক্ষণ থাকে না, খুব তাড়াতাড়ি শিথিল হয়ে যায়।
সিকিউটা ভিরোসার মত ইহা আবার তত প্ৰবল নয়, সৰ্বাঙ্গীন স্পন্দনই এর প্রকৃতিগত লক্ষণ। এই জন্যই টাইফয়েড সাবসান্টাস টেণ্ডিনাম বা টাইফয়েড জ্বরের টেনডন সমূহের স্পন্দনে হাইওসায়ামাস ব্যবহৃত হয়।
৫। কাশি—
শুলে বাড়ে, কিন্তু উঠে বসলে উপশম হয়, এইরকম একপ্রকার শুকনো কাশিতে হাইওসায়ামাস উপকারী। এক্ষেত্রে ঔষধটি বৃদ্ধদের বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া নিউমোনিয়ায় এর উপযোগিতার কথা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। আমি (ডাঃ ন্যাশ) মনে করি, ইহা টাইফয়েড আকারের নিউমোনিয়া রোগেও সৰ্ব্বপ্রধান ঔষধ এবং সেই জন্যই আমি জোর গলায় বলতে চাই যে, ইহা অন্ততঃ আমার হাতে অনেক অলৌকিক কাজ করেছে।
৬। টাইফয়েড আকারের স্কার্লেটিনাতেও হাইওসায়ামাস অতিশয় উপকারী এবং ইহা রাসটাক্সের অনুপুরক।
(ডা. ন্যাশ)
আমি এই দুটিকে কোথাও পৰ্য্যায়ক্রমে ব্যবহার করি না। তবে যদি মস্তিষ্কের অবসাদ ও প্রলাপ রাসটাক্সের ক্ষমতার বাইরে যায়, তাহলে আমি দু-একদিন রাসটাক্স বন্ধ রাখি ও হাইওসায়ামাস দিই। পরে রোগীর অবস্থার উন্নতি হলে ও রাসটাক্সের প্রয়োজন হলে আবার রাসটাক্স দিই, এতে রোগী সেরে যায়। কেবলমাত্র এইরকম পৰ্য্যায় ক্রমিক ঔষধ প্রয়োগ দোষে আমি দোষী। তবে জ্বরে হ্যানিম্যান যেরূপ ব্রায়োনিয়া ও রাসটাক্স পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করেছিলেন, এখানেও সেই রকমই ঘটে।