ইগ্নেসিয়া অ্যামেরা IGNATIA AMARA [Ign]

শোক, মানসিক আঘাত ও আশাভঙ্গের জন্য রোগ।
ক্ষনে ক্ষনে মেজাজের পরিবর্তন ঘটে, হাসাহাসি করছে আবার পর মূহুর্তেই বিষন্নভাব, দুঃখ, রাগ বা অভিমান মনের ভিতর চেপে রাখে, নির্জনে থাকতে চায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ও ফোঁপিয়ে কাঁদে, সহজে ভয় পায়, ডাঃ হেরিং বলেন ইগ্নেসিয়া রোগী দুঃখিত থাকতেই ভালোবাসে।
অদ্ভুত বিপরীত লক্ষণ সমুহ দেখা যায় যেমন- জ্বরে শীতের সময় তৃষ্ণা কিন্তু উত্তাপের সময় পিপাসা নেই, শক্ত দ্রব্য খেলে গলা ব্যথার উপশম, যখন গম্ভীর হওয়া উচিত তখন হাসি।
পাকস্থলি খালি খালি অনুভূতি, দীর্ঘশ্বাস নিলে উপশম।

উপযোগিতা – স্নায়বিক রোগীদের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী। সহজেই উত্তেজিত হন, অত্যনুভূতিযুক্ত, এরূপ মহিলাদের ক্ষেত্রে উপযোগী। চুল কাল, রঙ ময়লা কিন্তু মন খুব নরম, সবকিছু বোঝেন তাড়াতাড়ি ও কাজকর্ম তাড়াতাড়ি করেন এমন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । গৌরবর্ণা, নমনীয়, একটুতেই চোখে জল, কাজকর্ম ধীরে ধীরে করে ও কি করবে ঠিক করে উঠতে পারে না—এই সব লক্ষণ বিশিষ্ট পালসেটিলার সম্পূর্ণ বিপরীত হল ইগ্নেসিয়া ।

সবকিছুতেই অত্যন্ত অসঙ্গতি দেখা যায়- কানে গর্জনধ্বনি অথচ গান বাজনায় সেই অবস্থার উপশম, অর্শের যন্ত্রণা চলাফেরায় কম থাকে। গলায় ব্যথা কিছু গিললে কম থাকে পাকস্থলীতে খালিখালি বোধ কিন্তু আহারে তার উপশম নাই, কাশি—যতই কাশে ততই কাশি বেড়ে যায়। পথ চলতে চলতে থেমে গেলে কাশি শুরু হয় (এষ্টাকাস্-ফ্লেব); দুঃখ অথচ হাসিতে ফেটে পড়ে, ধ্বজভঙ্গ কিন্তু সঙ্গমের ইচ্ছা হয়। জ্বরে শীত ভাবের সময় পিপাসা কিন্তু উত্তাপ এর সময় পিপাসা হয় না, বিশ্রামের সময় মুখের রঙ পালটে যায়।

অতিদ্রুত, অবিশ্বাস্য অল্প সময়ের মধ্যে মানসিক অবস্থা পাল্টে যায়— আনন্দ হতে দুঃখ, হাসি পাল্টে গিয়ে কান্না হতে থাকে (কফিয়া, ক্রোকাস, নাক্স-ম); খামখেয়ালী মনের ভাব ।

বহুদিন ধরে দুঃখ চাপ থেকে মানসিক ও দৈহিক উভয়ভাবে অবসন্ন তাদের পক্ষে উপযোগী। অনিচ্ছায় দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে (ল্যাকে সাথে পাকস্থলীর ভেতর একপ্রকার শূন্যতাবোধ থাকে শরীরে দুর্বলতা বোধ আহারে কিন্তু ঐ বোধের উপশম হয় না (হাইড্রাষ্টিস, সিপিয়া)।

রাগ, শোক বা প্রেমে ব্যর্থতার কুফলে (ক্যাল্ক-ফস, হায়োস) ব্যবহৃত হয়; কল্পনায় নানা কষ্টের কথা একা বসে চিন্তা করে থাকে।

একা একা থাকতে চায় ।

সূক্ষ্ম, অনুভূতি, থাকে, তীক্ষ্ণ বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন এমন রোগীতে ব্যবহার হয় ।

অস্থির, অধৈর্য, কোন কাজের উদ্দেশ্য থাকে না, ঝগড়াটে, এমন রোগীতে প্রযোজ্য ।

মনে আনন্দ থাকলে অপূর্ব ব্যবহার করে কিন্তু সামান্য উত্তেজনায় বিব্রত বোধ করে, সহজেই অপমানিত বোধ করে ।

সামান্য দোষ ধরলে বা প্রতিবাদ করলে রাগ হয়ে যায় ও নিজমনে গজরাতে থাকে ।

শিশুকে বকাঝকা করলে, সামান্য মারধোর করলে বা জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে বা ঘুমের মধ্যে তড়কা হয়, হাত পা খিঁচতে থাকে ।

দুঃসংবাদের কুফলে, বহুদিনের জমা অসন্তোষ হতে বিরক্তি বা রাগ, মনের কষ্ট চেপে রেখে, লজ্জাজনক ঘটনা বা মনে বা দেহে কোন অত্যাচার-এর ঘটনার কুফলে রোগ হলে (ষ্ট্যাফি) এ ওষুধে সারিয়ে দেয় ।

মাথাযন্ত্রণা — যেন মাথার পাশ (Side) দিয়ে একটা পেরেক ঢোকানো হচ্ছে এরকম অনুভূতি ঐ পাশে চেপে শুলে যন্ত্রণা কমে যায় (কফিয়া, নাক্স, থুজা) ।

তামাকের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, ধূমপানে বা বিড়ি সিগারেটের ধোয়ায় মাথা যন্ত্রণা শুরু হয় বা বেড়ে যায়, কথা বলার সময় বা কিছু চিবালে গালে কামড় লাগে। আহারের সময় মুখে কোন ছোট স্থানে ঘাম বার হতে থাকে।

ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না। (কফিয়া, ক্যামো)।

কোষ্ঠবদ্ধতা – গাড়ীতে চড়ে, যেন অন্ত্রে পক্ষাঘাত হয়েছে, সাথে, অত্যন্ত পায়খানার বেগ—ওপর পেটে বেশী অনুভব হয় (ভিরেট্রাম) ঐ সাথে অত্যন্ত পেটে বেদনা, পায়খানায় যেতে ভয় পায়। মহিলাদের কোষ্ঠবদ্ধতা, যারা অত্যধিক কফি পান করেন।

মলত্যাগের সময় অল্প কোঁথ দিলে, সামনের দিকে ঝুঁকলে বা ভারী জিনিষ তুললে মলদ্বার দিয়ে রেক্টাম বার হয়ে পড়ে (এসি-নাই, পড়ো, রুটা); মল তরল থাকলে ঐ বেশি হয় ।

অর্শরোগ – প্রতিবার মলত্যাগের সময় রেক্টাম বার হয়ে পড়ে, হাত দিলে ঠেলে ঢোকাতে হয় । তীব্র উঁচ ফোটানো ব্যথা রেক্টাম হতে ওপরদিকে এগিয়ে যায় (এসি-নাই); ঐ ব্যথা মলত্যাগের পর কয়েক ঘন্টা যাবৎ হতে থাকে (র‌্যাটানহিয়া, সালফ) ।

রোগী ঘুমিয়ে পড়লে দেহের কোন একটা বিশেষ অঙ্গ বা সারাদেহ লাফিয়ে ওঠে, ঝাঁকি দিয়ে ওঠে এমনকি খিঁচতেও থাকে ।

দেহে কোন ছোট্ট বৃত্তাকার স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে ।

জ্বর – শীত অবস্থায় মুখ লাল (ফেরাম) হয়ে যায় শীতভাবের সাথে পিপাসা কেবলমাত্র শীতাবস্থায় পিপাসা হয়; বাইরে থেকে তাপ লাগলে উপশম। তাপ অবস্থায় কোন পিপাসা থাকে না। গায়ে ঢাকা দিলে তাপাবস্থা বেড়ে যায় (ঢাকা দিলে কমে নাক্স-ভ) ।

রোগ – এর কষ্টগুলো ঠিক একই সময়ে ফিরে ফিরে আসে ।

রক্তপ্রধান ও পিত্ত প্রাবল্য পুরুষ রোগীতে নাক্স-ভ এর যে সম্বন্ধ। মহিলাদের ক্ষেত্রে ইগ্নের সেই সম্বন্ধ, উত্তর আমেরিকায় নাক্স-ভ এর রোগী থেকে ইগ্নেসিয়ার রোগী সংখ্যা বেশী হেরিং ।

সম্বন্ধ — কফিয়া, নাক্স-ভ, ট্যাবাকাম এর সাথে শত্রু সম্বন্ধ। ইগ্নেসিয়া অপব্যবহারের কুফল পালস্ দূর করে ।

বৃদ্ধি – তামাক হতে, কফি খেলে, ব্রান্ডিমদ খেলে, ছোঁয়া লাগলে, নড়াচড়ায়, তীব্র গন্ধে, মানসিক আবেগ বা দুঃখে রোগ লক্ষণ বাড়ে ।

উপশম – ‍উত্তাপে, জোরে চাপলে (চায়না), গিলে ফেললে, হেঁটে বেড়ালে ।

শক্তি – নিম্ন হতে উচ্চশক্তি ০/১ হতে ০/৩০ ।

[Haemorrheids = অর্শ-মলদ্বার ও রেক্টাম (Anorectum) সংলগ্ন রক্তবাহী শিরা সমূহে (venous plexus) শিরাগুলো চাপে বেড়ে যায় ও জড়িয়ে গিয়ে দলামত পাকিয়ে যায়। অর্শ দু-প্রকার—বাহ্যিক (External)-মলদ্বার ও রেক্টামের বাইরের শিরাগুলো আক্রান্ত হয়। অভ্যন্তরীণ (Internal)-মলদ্বার ও রেক্টামের ভেতর শিরাগুলো আক্রান্ত হয় ।

চিকিৎসা – লক্ষণের প্রাবল্যের উপর নির্ভর করে। অর্শ কতদূর বিস্তৃত তার উপর নির্ভর করে না । বহুক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা পরিবর্তন ও মল নরম হবার জন্য কিছু ব্যবহারে মলত্যাগে কোঁথানি নিবৃত্ত করলেই উপশম হয়। অর্শের তরুণ আক্রমণ ও তরুণ প্রদাহ কমে না যাওয়া পর্যন্ত অস্ত্র চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না । তরুণ প্রদাহের পর সময় পাওয়া গেলে বহুক্ষেত্রে ঐ স্থানের টিস্যু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে ।

শ্রেণী বিভাগ— (A) H. Eternal—মলদ্বার-এর মিউকাস মেমব্রেন ও সংলগ্ন চামড়ার শিরাগুলো চাপে বেড়ে যায়, বাইরে বেরিয়ে আসে।

(B) H. Interant- রেক্টামের শেষভাগ যেখানে মলদ্বার (Anus)-এর সংযোগস্থল সেখানে শিরাগুলো আক্রান্ত হয় ।

(c) H. Prolapsed- আভ্যন্তরীণ অর্শ মলদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে ।

(D) H. Strangulated- আভ্যন্তরীণ অর্শ বাইরে বের হয়ে মলদ্বারের চাপে আটকে থাকে ও আক্রান্ত শিরায় রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

অর্শ হতে রক্ত বার হলে ব্লিডিং পাইলস্ ও রক্ত বার না হলে ব্লাইন্ড পাইলস, বা অন্ধবলি বলে ।

এই ঔষধটি সাময়িক সময়ের জন্য শরীরের সকল ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি প্রবনতার বৃদ্ধি ঘটায় ও ক্ষনিক সঙ্কোচন প্রবনতার সৃষ্টি করে। মানসিক দিক থেকে আবেগপূর্ণ অবস্থা প্রাধান্য লাভ করে এবং এর ফলে বিভিন্নকাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এই কারণে হিস্টিরিয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি প্রধান ঔষধ। এটি বিশেষ করে স্নায়বিক প্রবনতার ব্যক্তির ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী অনুভূতি প্রবন স্ত্রীলোক, সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে, গায়ের রঙ কালো, নরম প্রকৃতি। খুব দ্রুত বুঝতে সক্ষম এবং কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে যাদের স্ফুর্তির অভাব হয় না। দ্রুত পরিবর্তনশীল শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, অবস্থাগুলি পরস্পরের বিপরীত ধর্মী। এই ঔষধের ভিতর ব্যাপক বৈষম্য দেখা যায়। সতর্ক, স্নায়বিক, শঙ্কাগ্রস্ত, শক্ত, ও কম্পমান রোগী, যা মানসিক বা শারীরিক কোন তরুন রোগে কষ্ট পায়, এবং কফি পান করার পরে সকল অবস্থার বৃদ্ধি হয়। এই ঔষধের লক্ষনগুলির বাহ্যিক ও পরিবর্তনশীল চরিত্র খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। শোকও উদ্বেগের কুফল সমূহ। কিছুতেই তামাক সহ্য করতে পারে না। সামান্য স্থানেও গোলাকার অংশে বেদনা। (অক্সালিক অ্যাসিড)। প্লেগ। হিক্কা ও হিস্টিরিয়া গ্রস্ত বমন।

মন — পরিবর্তনশীল মানসিক অবস্থা; অন্তদর্শী; চুপচাপ কোন বিষয়ে চিন্তা করে। বিষাদগ্রস্ত, দুঃখিত, ক্রন্দনশীল। আলাপ করতে চায় না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও ফোঁপাতে থাকে। মানসিক আঘাত, শোক ও নৈরাশ্যজনক ঘটনার কুফল।

মাথা – মাথার ভিতর ফাঁপা ও ভারী বলে মনে হয়। সামনের দিকে ঝুঁকলে বৃদ্ধি। মাথার একদিক থেকে পেরেক ঠুকে বার করা হচ্ছে এই জাতীয় অনুভূতিযুক্ত বেদনা। নাকের গোড়ায় খিলধরার মত বেদনা। রাগ ও শোকের পরে রক্তাধিক্যজনিত মাথার বেদনা; ধূমপানের পরে অথবা তামাকে গন্ধে বৃদ্ধি। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে থাকে।

চোখ – চোখের দৃষ্টির ক্ষীণতা তৎসহ চোখের পাতায় আক্ষেপ এবং চোখের চারিপাশে স্নায়ুশূল। (নেট্রামমিউর) চোখের সামনে আঁকা-বাঁকা আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখে থাকে।

মুখমন্ডল — মুখমন্ডল ও ঠোঁটের পেশী সমূহের নর্তন। বিশ্রামের সময় মুখমন্ডলের রঙের পরিবর্তন হয়।

মুখগহ্বর টক আস্বাদ। গালের ভিতরের অংশ সহজেই কামড়ে ফেলে। মুখগহ্বর সর্বদা লালায় পূর্ণ থাকে। দাঁতের বেদনা; কফিপানের পরেও ধূমপানের পরে বৃদ্ধি।

গলা – গলার ভিতর একটি পিন্ড থাকার মত অনুভূতি, যা কিছুতেই গিলতে পারে না। শ্বাসবন্ধ হবার প্রবণতা, হিস্টিরিয়া রোগে গলার ভিতর পিন্ডের ন্যায় কিছু থাকার অনুভূতি। গলঃক্ষত, যে সময় কিছু গেলা যায় না, সেই সময় গলার ভিতর সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা; শক্ত কিছু খাবার পরে উপশম। দুইবার ঢোক গেলার মধ্যবর্তী সময়ে গলার ভিতরে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা কান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। (হিপার)। টনসিল দুটি প্রদাহিত, স্ফীতি, তৎসহ ক্ষুদ্র ক্ষত সমূহ; ফলিকিউল্যার টনসিলাইটিস।

পাকস্থলী – টক ঢেকুর। পাকস্থলীর ভিতর শূন্যবোধ; প্রচুর বায়ুসঞ্চয়; হিক্কা। পাকস্থলীর ভিতর খিলধরা, সামান্য সংস্পর্শে বৃদ্ধি। সাধারণ খাদ্যে বিতৃষ্ণা; নানা প্রকারের, হজম হয় না এই জাতীয় খাদ্যের প্রতি স্পৃহা। অম্লজাতীয় খাদ্যের প্রতিস্পৃহা। পাকস্থলীর ভিতর শূন্যতার অনুভূতি, গভীর শ্বাস নিলে উপশম।

উদর – অন্ত্রের ভিতর গড়গড় শব্দ। পেটের উপরের অংশে দুর্বলতার অনুভূতি। পেটের ভিতর দপদপানি (এলো, স্যাঙ্গুইনেরিয়া)। পেটের উভয়দিকে মোচড়ানোর মত শূলবেদনা।

সরলান্ত্র – সরলান্ত্রের উপরের অংশে চুলকানি ও সূচবিদ্ধবৎ বেদনা। স্থানচ্যুতি। কষ্টকর মলত্যাগ; মলত্যাগের পরে মলদ্বারে বেদনাদায়ক সঙ্কোচন। কাশির সময় অর্শবলীতে। সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। ভয় পেয়ে উদরাময়। মলদ্বারে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা, যা সরলান্ত্রের গভীর স্থান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। রক্তস্রাবও বেদনা; নরম মলে বৃদ্ধি। ভিতর থেকে বাইরের তীক্ষ্ণযন্ত্রের সাহায্যে চাপ দেবার ন্যায় অনুভূতি।

প্রস্রাব – প্রচুর, জলের (ফসফোরিক অ্যাসিড)।

শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ –  শুষ্ক, আক্ষেপিক কাশি, যা দ্রুত আঘাত করে চলতে থাকে। গলকোষের আক্ষেপ (ক্যাল্কেরিয়া)। প্রতিবর্ত কাশি। কাশির সঙ্গে সঙ্গে কাশির ইচ্ছার বৃদ্ধি। প্রচুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শূন্য আক্ষেপিক কাশি, সন্ধ্যায় বৃদ্ধি, সামান্য শ্লেষ্মা উঠে, কাশির পরে বায়ূনলীতে বেদনা থেকে যায়।

স্ত্রীরোগ — মাসিক ঋতুস্রাব কালো, নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে, প্রচুর, অথবা অল্প পরিমানে স্রাব। ঋতুকালে প্রচন্ড দুর্বলতা, তৎসহ পাকস্থলী ও উদরে আক্ষেপিক বেদনা। যৌন প্রবৃত্তি শূন্য স্ত্রীলোক। শোকের পরে মাসিক ঋতুস্রাবের চাপা পড়া।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ঝাঁকুনি। গোড়ালির কন্ডরায় ও পায়ের ডিমে বেদনা। পায়ের তলায় ক্ষতের ন্যায় বেদনা।

ঘুম – ঘুম খুবই পাতলা। ঘুমাতে যাবার সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ঝাঁকনি, শোক, উদ্বেগ থেকে উদ্ভুত অনিদ্রা, তৎসহ বাহুর চুলকানি ও তীব্র হাইতোলা। স্বপ্ন দীর্ঘসময় ধরে চলে; এতে রোগী কষ্ট পায়।

জ্বর — শীতবোধ, তৎসহ পিপাসা; বাহ্যিক উত্তাপে শীতবোধ কমে না। জ্বরের সময়, চুলকানি; সমগ্র শরীরে আমবাত।

চামড়া – চুলকানি, আমবাত। বাতাস সহ্য হয় না। হাজা, বিশেষতঃ যোনিদেশে ও মুখগহ্বরে।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি, সকালে, মুক্ত বাতাসে, আহারের পরে, কফিপানে, ধূমপানে, তরল বস্তুতে, বাহ্যিক উষ্ণতায়।

উপশম — আহারের সময়, শরীরের অবস্থানের পরিবর্তনে।

সম্বন্ধ — তুলনীয়—জিঙ্কাম, ক্যালিফস, সিপিয়া, সিম-সফিউগা।

প্যানাসিয়া আরভেনসিন- পুয়োর ম্যান মার্কারী-(পাকস্থলী প্রদেশের উপরে অনুভূতি প্রবণতা তৎসহ ক্ষুধা কিন্তু খাদ্যে বিতৃষ্ণা)।

পরিপূরক – নেট্রাম মিউর।

বিরুদ্ধভাবাপন্ন – কফিয়া, নাক্স, ট্যাবেকাম।

দোষঘ্ন – পালসেটিলা, ক্যামোমিলা, ককিউলাস।

শক্তি — ৬ষ্ঠ থেকে ২০০ শক্তি।

ইগ্নেশিয়া প্রায়ই কাজে লাগে এবং অনুভূতিপ্রবণ, ক্ষীণকায়া স্ত্রীলোকদিগের এবং শিশুদের ও হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা স্ত্রীলোকদের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী হয়। তোমরা সাধারণভাবে হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা স্ত্রীলোকদিগকে ইগ্নেশিয়া দিয়া আরোগ্য করিতে পারিবে না, কিন্তু যে-স্ত্রীলোকেরা শান্ত, অনুভূতিবিশিষ্টা, সূক্ষ্মতন্তুযুক্তা, মার্জিত প্রকৃতির, উচ্চশিক্ষিতা, অতিশ্ৰমাবসন্ন, তাহাদের স্নায়বিক উপদ্রবসকল যখন হিষ্টিরিয়াসদৃশ লক্ষণে পৰ্য্যবসিত হয়, তখন তোমরা তাহাদের স্নায়বিক উদ্ৰবগুলি ইগ্নেশিয়া দিয়া আরোগ্য করিতে পারিবে। হিষ্টিরিয়া ধাতুদোষ এরূপ একটি ব্যাপার যে, উহা অদ্ভুত এবং বুঝিতে পারা শক্ত। কিন্তু কোন স্ত্রীলোক অতিমাবসন্ন, অত্যুত্তেজিত এবং মনের অত্যন্ত আবেগসম্পন্ন হইয়া এমন অনেক কিছু করিতে পারেন, যাহার কারণ তিনি নিজেই দেখাইতে পারিবেন না। তিনি এরূপ ব্যবহার করিবেন, যেন উত্তেজনাবশে তিনি পাগল হইয়া পড়িয়াছেন। তিনি যাহা করিবেন তাহার জন্য অনুতপ্ত হইবেন, কিন্তু প্রকৃত হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তারা এরূপ অবস্থায় আনন্দিত হইয়া থাকেন। উহার মধ্যে যত বেশী নির্বুদ্ধিতাই থাকুক না কেন, তিনি এরূপ ভাব দেখান, যেন তিনি ঐজন্য গর্বিত বোধ করিতেছেন। কিন্তু যাহারা ইহাদিগকে অজ্ঞাতসারে অনুকরণ করেন, আমাদিগকে তাহাদের জন্য চেষ্টা করিতে হয়। যাহারা ঐরূপ চেষ্টা করেন, তাহারা ভাল ফলই পান।

কোন স্ত্রীলোকের বাড়ীতে হয়ত ঝগড়া হইয়াছে। তিনি উহাতে উত্যক্ত হইয়া পড়িয়াছেন এবং উত্তেজিত হইয়া পড়িয়াছেন, এখন তাহার খাল ধরিতে লাগিল, তিনি কাঁপিতে থাকিলেন, থরথর করিতে থাকিলেন। শিরঃপীড়াগ্রস্ত হইয়া শুইয়া পড়িলেন। অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। ইগ্নেশিয়া তাঁহার ঔষধ হইবে। যখন তিনি অত্যন্ত মনোকষ্ট পান, অপরিতৃপ্ত ভালবাসার মধ্যে থাকেন, তখনও ইগ্নেশিয়া দেয়। একজন স্নায়বিক অনুভূতিপ্রবণা কুমারী দেখিলেন যে, তিনি তাঁহার ভালবাসা অপাত্রে ন্যস্ত করিয়াছেন, যুবকটি তাহাকে নিরাশ করিয়াছে, তাহার ক্রন্দনের আবেগে শিরঃপীড়া দেখা দিলে, তিনি কাঁপিতে লাগিলেন, স্নায়বিক ও নিদ্রাহীন হইয়া পড়িলেন, ইগ্নেশিয়া তাহাকে দার্শনিক ভাবাপন্ন এবং সুমতিযুক্ত করিবে। কোন স্ত্রীলোক হয়ত তাহা সন্তান  বা স্বামীকে হারাইলেন। তিনি একজন অনুভূতিপ্রবণা এবং ক্ষীণাঙ্গী স্ত্রীলোক এবং তিনি মনোদুঃখ ভোগ করিতে থাকিলেন। তাঁহার শিরঃপীড়া দেখা দিল, তিনি কাপিতে লাগিলেন, উত্তেজিত হইলেন, কাঁদিতে লাগিলেন, নিদ্রাহীন হইয়া পড়িলেন, নিজেকে সংযত রাখিতে পারিলেন না। যথেষ্ট চেষ্টা করা সত্ত্বেও দুঃখ তাহাকে ছিন্নভিন্ন করিয়া ফেলিল। তিনি তাহার মনের আবেগ এবং উত্তেজনা দমন করিতে অক্ষম হইয়া পড়িলেন। ইগ্নেশিয়া তাহাকে শান্ত করিবে এবং তাহার বর্তমান দুঃখসময়টি পার হইতে সাহায্য করিবে। যে-সকল ক্ষেত্রে ঐরূপ দুঃখজাত অবস্থাটি ঘুরিয়া ঘুরিয়া আসে, রোগী ঐ সম্বন্ধে চিন্তা করেন এবং অবস্থাটি পুনঃ পুনঃ দেখা দিতে থাকে, তখন ‘নেট্রাম মিউর’ রোগটির পরিসমাপ্তি করিবে। উহা তাঁহার স্নায়ুগুলিকে সবল করিবে। তাঁহাকে তাহার দুঃখ সহ্য করিতে সাহায্য করিবে। ইহা স্কুলে, বিজ্ঞান আলোচনায়, সঙ্গীতে, কলাবিদ্যায় অতিপরিশ্রান্ত স্ত্রীলোকদিগের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী। অবশ্য অনুভূতিপ্রবণা বালিকাদের পক্ষেই সঙ্গীত, চিত্রবিদ্যা প্রভৃতি কলাবিদ্যাকে গ্রহণ করাই স্বাভাবিক। কাহারও কন্যা হয়ত বহু বৎসর ধরিয়া প্যারিসে নিবিষ্টভাবে সঙ্গীত আলোচনা করিয়া বাড়ী ফিরিল। সে কোন কাৰ্য্য করিতে অক্ষম হইয়া পড়িল। তাহার সর্বাঙ্গ যেন ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইতে লাগিল। প্রত্যেকটি শব্দই তাহাকে বিচলিত করিতে লাগিল। সে অনেক রাত্রি ধরিয়া ঘুমাইতে পারিল না। উত্তেজনা, নিদ্রাহীনতা, কম্পন, উৎক্ষেপ, পেশীগুলিতে খালধরা দেখা দিল, সে প্রত্যেকটি উত্তেজনায় প্রত্যেকটি বিরক্তিকর কথায় কাঁদিতে লাগিল। ইগ্নেশিয়া তাহার আশ্চৰ্য্যরূপ শক্তিবৃদ্ধি করিবে। অনেক ক্ষেত্রে ইহা রোগীকে সম্পূর্ণ আরোগ্য করিবে। কিন্তু এই সকল অত্যনুভূতিযুক্তা। বালিকাদের রোগ পুরাতন আকার ধারণ করিলে প্রায়ই নেট্রাম মিউর প্রয়োজন হয়। উহা ইগ্নেশিয়ায় স্বাভাবিক ক্রনিক। যখন উপসর্গগুলি ঘুরিয়া ঘুরিয়া আসিতে থাকে, তখন ইগ্নেশিয়া এমন একস্থানে উপস্থিত হয় যে, উহাতে আর কাজ হয় না।

আর একটি অবস্থা আছে, যেখানে ইগ্নেশিয়া ও নেট্রাম মিউর খুব কাছাকাছি যায়। একটি অত্যনুভূতিযুক্তা, অতিশ্রান্ত বালিকা, সঙ্গীতে, কলাবিদ্যা, বা বিদ্যালয়ে অতিক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছেন এবং নিজের অনুরাগ আয়ত্তে রাখিতে পারিতেছেন না। তাহার অনুরাগ এমন একটি লোকের প্রতি পড়িল যে, তিনি তাহাকে ঘৃণা করিতে লাগিলেন। হয়ত, ইহা একটি অদ্ভুত ব্যাপার; হয়ত লোকে ইহা বুঝিতে পারিবে না। কোন অনুভূতিবিশিষ্টা কুমারী, তাঁহার মাতা ছাড়া আর কাহাকেও জানিতে না দিলেও, হয়ত একটি বিবাহিত লোকের প্রেমে পড়িলেন। তিনি অনেক রাত্রি জাগিয়া জাগিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। তিনি হয়ত মাতাকে বলিবেন, “মা, কেন আমি ঐরূপ কাৰ্য্য করিলাম, আমি যে ঐ লোকটিকে মন হইতে তাড়াইতে পারিতেছি না।” অন্য সময়ে হয়ত লোকটি তাহার স্বস্থানচ্যুত হইতে পারে এবং বালিকাটি হয়ত বুদ্ধিমতীর মত তাহার সংস্রব ত্যাগ করিতে পারেন, কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি তাহার কথাই ভাবিবেন। যদি ব্যাপারটি খুব তরুণ হয়, তাহা হইলে ইগ্নেশিয়া বালিকাটির মনের সামঞ্জস্য আনিয়া দিবে। যদি তাহা না হয়, পরবর্তী ঔষধস্বরূপ ‘নেট্রাম মিউর’ কাজে আসিবে। আমরা যতটা মনে করি, মানুষের মনকে তাহার অর্ধেকও বুঝিতে পারি না। আমরা উহার বহির্বিকাশগুলিই দেখি, এবং ঐসকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারগুলি ঔষধগুলির ক্রিয়াক্ষেত্রের অন্তর্গত হয়। যে-লোক মেটিরিয়া মেডিকা জানেন, তিনি উহা সর্বপ্রকারে প্রয়োগ করেন এবং উহার মধ্যে যাহা সদৃশ থাকে, তাহা দেখিতে পান।

ইগ্নেশিয়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের থরথর কম্পন আছে। স্নায়বীয় কম্পনশীল উত্তেজনা। “হঠাৎ দৈহিক দুর্বলতা আসিয়া পড়ে; হিষ্টিরিয়াসদৃশ দুর্বলতা এবং মূৰ্ছার আবেশ। বেশী লোকজনের মধ্যে থাকিলে মূৰ্ছা।” অশ্রুপূর্ণ, স্নায়বিক, বিষন্ন বশ্য, অনুভূতিপ্রবণ মনবিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষেই ইহা বিশেষভাবে উপযোগী। ঝাঁকি দিয়া উঠা ও অস্বাভাবিক পেশী সঙ্কোচন। আক্ষেপকালীন অস্বাভাবিক পেশীসঙ্কোচন।” শাস্তি পাওয়ার পর শিশুরা ঘুমের মধ্যে আক্ষেপযুক্ত হয়। “শিশুদিগের দন্তোসমকালের প্রথম দিকে আক্ষেপ। ভয় হইতে শিশুদিগের আক্ষেপ।” শিশু শীতল ও বিবর্ণ হয় এবং ‘সিনা’র ন্যায় স্থিরভাবে একদৃষ্টে চাহিয়া থাকে। “সংজ্ঞাহীনতার সহিত আক্ষেপ। প্রবল আক্ষেপ। ধনুষ্টঙ্কারের ন্যায় আক্ষেপ। ভয় পাওয়ার পর ধনুষ্টঙ্কার। মনের আবেশবশতঃ তান্ডব নৰ্ত্তন রোগ। ভয় পাওয়া বা কোন দুঃখের ব্যাপারের পর আক্ষেপ।” কোরিয়া রোগগ্ৰস্তা বালিকা। মনের আবেগ হইতে অপর বা অপস্মারসদৃশ রোগ। পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা। “অত্যন্ত মানসিক আবেগ।” “রোগী শুশ্রুষা করা, রাত্রিজাগরণের ফলে আক্ষেপ।” সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতের ন্যায় এক বাহু অসাড় হইয়া যায়, যেন উহা মস্তিষ্কের রক্তস্রাবের ফলে উপস্থিত হইয়াছে। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই উহা চলিয়া যায় এবং বাহুটি পূর্বের ন্যায় সুস্থ হইয়া চলিয়া যায় এবং বাহুটি পূর্বের ন্যায় সুস্থ হইয়া উঠে। ইহা একপ্রকার হিষ্টিরিয়াজনিত পক্ষাঘাত। “এক বা অপর বাহুর অসাড়তা। বাহুতে ঝিনঝিন করা ও কাঁটা ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা।”

ইগ্নেশিয়া বিস্ময়কর ব্যাপারে পূর্ণ। যদি তোমাদের রোগ সম্বন্ধে ভাল জ্ঞান থাকে, যদি তোমরা নিদানশাস্ত্রবর্ণিত অবস্থাগুলি এবং উহার লক্ষণগুলি ভালভাবে আয়ত্ত করিয়া থাক, তাহা হইলেই তোমরা বলিতে পারিবে যে, তোমাদের বিস্মিত হওয়া উচিত কিনা। তোমরা তখন বলিতে পারিবে, বিশেষ রোগের কোন্ লক্ষণটি স্বাভাবিক এবং সাধারণতঃ দেখিতে পাওয়া যায়। তোমরা ইগ্নেশিয়ার ক্ষেত্রে যাহা অস্বাভাবিক ও আশাতীত, তাহাই দেখিতে পাইবে। উত্তাপ, আরক্ততা, দপদপানি এবং দুর্বলতা বৰ্তমান আছে, এরূপ একটি অঙ্গ দেখিলে, উহা অত্যন্ত বেদনান্বিত বুঝিয়া তোমরা নিশ্চয়ই উহাতে সাবধানে হাঁত দিবে। সাধারণতঃ উহা যে ব্যথিত থাকিবে, এরূপ আশা করিবার সম্পূর্ণ অধিকার তোমাদের আছে। কিন্তু তোমরা দেখিলে যে, (ইগ্নেশিয়ার ক্ষেত্রে) উহা ব্যথিত নহে, বরং জোরে চাপ দিলে উপশম হয়। ইহা কি বিস্ময়কর নহে? তোমরা গলার ভিতর দেখিলে। উহা স্ফীতিযুক্ত, প্রদাহিত এবং লালবর্ণ। রোগী গলক্ষত এবং যন্ত্রণার অভিযোগ করিল। স্বভাবতঃ তোমরা আঘাত লাগিবার ভয়ে জিহ্বা চাপিয়া ধরার যন্ত্র দিয়া উহা চাপিয়া ধরিবে না। শক্ত দ্রব্য গিলিতে যাওয়া যে কষ্টকর হইবে, তোমাদের পক্ষে তাহা মনে করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু ঐ বেদনা থাকার কালেই, তোমরা (ইগ্নেশিয়া) রোগীকে জিজ্ঞাসা কর; সে বলিবে, “বেদনাটি দেখা দেয়, যখন আমি কোন শক্ত জিনিষ গিলিতে থাকি না।” ঐ বেদনা কোন শক্ত জিনিষ গিলিলে, চাপ পাইলে উপশমিত হয়। অন্য সকল সময়েই বেদনাটি থাকে।

মনের দিক হইতে, রোগী এমন অনেক কিছুই করে যাহার ব্যাখ্যা করা যায় না এবং যাহা সম্পূর্ণ আশাতিরিক্ত। মনে হয়, যেন তাহার কার্য্যের কোন নিয়ম নাই, কোন সামঞ্জস্য নাই, কোন মানসিক শৃঙ্খলা নাই, কোনরূপ বিচারবুদ্ধি নাই। যাহা আশা করা যায়, তাহার ঠিক বিপরীতটিই দেখা যায়। রোগী ব্যথিত পার্শ্বে চাপিয়া শুইলেই ভাল বোধ করে। উহাতে বেদনা বাড়ার পরিবর্তে উপশমিত হয়। মাথার পার্শ্বে একটি পেরেকবিদ্ধ হইতেছে, এরূপ যন্ত্রণা।” উহার উপর চাপ দিয়া শুইলে, অথবা ঐস্থানে চাপ দিলে, যেটুকু সম্ভব স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়, এবং ঐরূপ করিলে যন্ত্রণাটি দূর হয়।

রোগী পাকস্থলী ও অজীর্ণতা সম্বন্ধেও ঐ অদ্ভুত ভাববিশিষ্ট। কোন না কোন দিন, তুমি এমন একটি অদ্ভুত রোগী পাইবে, যিনি পাকস্থলীতে যাহা কিছু গ্রহণ করেন, তাহাই বমিত হইয়া যায়, আর তুমি তখন তাহাকে নিশ্চয়ই কিছু লঘু খাদ্য, একটু সেঁকা পাউরুটি ও দুধ এবং যথাসম্ভব হাল্কা খাদ্য খাইয়া পরীক্ষা করিতে বলিবে, কারণ তিনি অনেক দিন ধরিয়া বমি করিতেছেন এবং পাঁচজনের ভয় হইয়াছে যে, তিনি হয়ত না খাইয়াই মরিয়া যাইবেন। তুমি এটা পরীক্ষা করিলে ওটা পরীক্ষা করিলে, কিন্তু তিনি কিছুই ধারণ করিতে পারিলেন না। অবশেষে তিনি হয়ত বলিলেন, “আমি যদি কিছু কপির ফালি এবং কিছু পেঁয়াজ কুচা খাইতে পারিতাম, তাহা হইলে আমি হয়ত সারিয়া উঠিতে পারিতাম।” ইহাও একপ্রকার হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত পাকস্থলী; আর রোগী কিছু কুচান বাঁধাকপি ও কিছু পিয়াজকাটা খাইতে আরম্ভ করিল এবং সেই সময় হইতে ভাল থাকিল। যে-সকল অদ্ভুত জিনিষ, সাধারণতঃ হজম করা কঠিন, তাহাই বমনেচ্ছাকে বাড়াইয়া দেওয়ার পরিবর্তে, উহাকে উপশমিত করে। কিন্তু দুধ ও সেঁকা পাউরুটি এবং অন্যান্য হাল্কা খাদ্য এবং উষ্ণ জিনিষ, যেগুলি সচরাচর খাইতে দেওয়া হয়, তাহাতেই পাকস্থলীর উপদ্রব আনে এবং বমনেচ্ছা বাড়াইয়া দেয়। ঠান্ডা খাদ্য আকাক্ষা করে এবং ঠান্ডা খাদ্যই হজম হয়, কিন্তু উষ্ণ খাদ্য উপসর্গজনক হয় এবং অজীর্ণতা উৎপাদন করে।

কাশিতেও ঐ একই প্রকার অবস্থা দেখা যায়। গলার মধ্যে একপ্রকার উপদাহ দেখা দেয় এবং সেইজন্যই লোকে কাশে। লোকে কাশে, কণ্ঠনলীতে, গলায় খুসখুস করার জন্য, উপদাহের জন্য, সুড়সুড় করার জন্য এবং পূর্ণতাবোধের জন্য, সে কিছু তুলিয়া ফেলিতে চায় এবং তাহাতে কাশির উপশম হয়। কিন্তু যখন ইগ্নেশিয়ার রোগীর কণ্ঠনলীতে ও কণ্ঠে উপদাহ উপস্থিত হয়, তোমরা আবার সেই আশাতিরিক্ত ব্যাপার পাইবে, কারণ সে যতই কাশে, তাহার কাশিবার উপদাহ ততই বাড়িতে থাকে, এবং উপদাহ এত বেশী হয় এবং কাশিও এত বেশী হয় যে, তাহার আক্ষেপ উপস্থিত হয়। একটি ইগ্নেশিয়ার রোগী সম্বন্ধে জানা গিয়াছে যে, তিনি যতই কাশিতেন, তাহার কাশিবার উপদাহ ততই বাড়িতে থাকিত, এবং তিনি ঘৰ্ম্মে সিক্ত হইয়া পড়িতেন। তিনি নৈশ পরিচ্ছদ ভিজাইয়া, মুখরোধবিশিষ্ট হইয়া এবং কাশিতে কাশিতে ও উকি তুলিতে, ঘৰ্ম্মে আবৃত হইয়া বিছানায় বসিয়া থাকিতেন। তুমি যখন এইরূপ রোগীর শয্যাপার্শ্বে আহত হইবে, তখন অপেক্ষা করিও না। কাশির সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলিবার মত সময়টুকুও তিনি কাশি চাপিয়া রাখিতে পারিবেন না, তুমি কেবলমাত্র দেখিবে যে, কাশি আরও বাড়িয়া উঠিতেছে; ইগ্নেশিয়া উহা সঙ্গে সঙ্গেই থামাইয়া দিবে। কোন কারণ না থাকিলেও, কণ্ঠনলীর একপ্রকার আক্ষেপিক অবস্থা উপস্থিত হইবে। সামান্য একটু বিরক্তি, সামান্য মানসিক উপদ্রব, অথবা একটু ভয়, মনঃকষ্ট অথবা দুঃখে একটি যুবতী অনুভূতিপ্রবণা স্ত্রীলোক বাড়ী আসিয়া শয্যাগত হইয়া পড়িবেন এবং তাহার কণ্ঠনলীতে আক্ষেপ হইতে থাকিবে। উহা আবেশে আবেশে আগত কণ্ঠনলীর আক্ষেপ, উহা শব্দ সারা বাড়ীময় শোনা যাইবে। ইগ্নেশিয়া উহা সঙ্গে সঙ্গেই থামাইয়া দিবে (জেলসিমিয়াম’, ‘মস্কাস’)।

সকলপ্রকার স্নায়বিক রোগ এবং উপসর্গ ঋতুকালে উপস্থিত হয়। মন সর্বদাই ব্যস্ত এবং উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। আর কেহই যেন তাহার মত দ্রুত কাজ করিতে পারে না। স্মৃতিশক্তি বিশ্বাসযোগ্য থাকে না। মন খন্ডে খন্ডে ভাঙ্গিয়া পড়ে। ইহা একপ্রকার মানসিক বিশৃঙ্খলা। যেসকল বিষয় উৎকৃষ্টভাবে মনে প্রবেশ করিয়াছে, তাহাও আর শ্ৰেণীবদ্ধ করিতে পারে না। সে তাহার সঙ্গীত, উহার নিয়মগুলি এবং কলা-কৌশল মনে আনিতে পারে না। সবকিছুই যেন লোপ পাইয়াছে এবং সে একটি গোলমেলে অবস্থায় উপনীত হইয়াছে। সে জীর্ণশীর্ণ, এবং স্নায়বিক ব্যক্তিকে পরিণত হয়।

তারপর নানা কল্পনা, স্পষ্ট কল্পনাসকল উপস্থিত হয়, উহা একপ্রকার প্রলাপের ন্যায়। জ্বর থাকে না, শীত থাকে না। উহা ঠিক উত্তেজনার পরেই উপস্থিত হয়। তাহার মানসিক আবেগের কিছু গোলমাল হওয়ায় সে বাড়ী আসিয়া এরূপ অবস্থাযুক্ত হইয়া পড়ে যে, চোখে দেখিলে উহাকে জ্বরে যেরূপ প্রলাপ হয়, তদ্রুপ প্রলাপ বলিয়া মনে হইবে। কিন্তু ভালভাবে পরীক্ষা করিলে দেখা যাইবে যে, উহা প্রলাপ নহে। উহা সাময়িক হিষ্টিরিয়াসদৃশ উত্তেজনা, উহাতে মানসিক সামঞ্জস্য নষ্ট হইয়া যায় এবং সে নানা বিষয় সম্বন্ধে কথা বলিতে থাকে। সে সবকিছুই বিভিন্ন ধরনে দেখে। ইহা হিষ্টিরিয়াসদৃশ উন্মাদনা, কারণ বিশ্রাম লওয়ার পর অথবা পরদিন সবকিছুই চলিয়া যায়। কিন্তু একবার আরম্ভ হইলে, ঐরূপ আবেশ ঘন ঘন উপস্থিত হইতে থাকে, সে ক্রমে আরও সহজে উহার বশ্য হইয়া পড়িতে থাকে এবং যদি ঔষধ দিয়া আরোগ্য করা না হয়, সে পাগল ও স্থায়ীভাবে মনঃপীড়াগ্রস্ত হইয়া পড়ে, তখন, কারণ ও ফলস্বরূপ, উত্তেজনা, দুঃখ, উন্মাদনা প্রভৃতি সবকিছুই একত্র মিশ্রিত হইয়া যায়। এই অবস্থা প্রথমে ঋতুকালে উপস্থিত হয়, তারপর উহা অন্য সময়ে আসে, অবশেষে উহা প্রত্যেকটি সামান্য উপদ্রবে উপস্থিত হয়। যখনই সে ঝগড়া করে বা কেহ তাহার প্রতিবাদ করে, তখনই উপস্থিত হয়। “সে একা থাকিতে চায় এবং তাহার জীবনে যে-সকল অসামঞ্জস্য উপস্থিত হইয়াছে, তৎসম্বন্ধে চিন্তা করে। বসিয়া থাকে এবং ফোপাইয়া ফোপাইয়া কাঁদে। সময়ে সময়ে সে। একগুয়ে হইয়া পড়ে আবার আবোল-তাবোল বকে, বেশী কথা বলে, আপনমনে কথা বলে।

সামান্যক্ষণ পরে সে এমন অবস্থায় আসে যে, মূৰ্ছাগত হইতে বা ভয় দেখান অঙ্গভঙ্গি করিতে, তাহার আনন্দ হয়। স্বাভাবিক হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা এই অবস্থা লইয়াই জন্মে এবং ইগ্নেশিয়া দ্বারা তাহার উপকার হয় না। কিন্তু এই অবস্থা যখন পূর্ববর্ণিত কারণগুলি হইতে উপস্থিত হয়, তখন ইগ্নেশিয়া বিশেষ উপকার করে। ইহা ঘনিষ্ঠভাবে হায়োসায়ামাসে’র কাছাকাছি ঔষধ। “ক্রমাগত ভয়ের ভাব, অথবা কোন কিছু ঘটিবে—এরূপ আশঙ্কা।”

এই সকল মানসিক অবস্থার সহিত তাহার পাকস্থলীতে ও উদরে একপ্রকার শূন্যতার অনুভূতি থাকে। শূন্যতা এবং কম্পন। “নিরাশ প্রেমের পর মেরুদন্ড সংক্রান্ত লক্ষণের সহিত বিষাদভাব।” “খুব নিকট কোন লোককে বা জিনিষকে হারানর অত্যধিক মনোদুঃখ”। লিখিবার সময় হস্ত-পদের কম্পন তাহাকে অত্যন্ত উত্যক্ত করে। তুচ্ছ জিনিষে ভয়।” সে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, কোনরূপ কাৰ্য্য গ্রহণ করিতে পারে না, এমনকি বন্ধুকে একখানি চিঠি লিখিতে পারে না।

ইগ্নেশিয়ার রোগী এরূপ নয় যে, সে নির্বোধ অথবা অলস-মন অথবা জড়প্রকৃতি, কিন্তু সে এমন রোগী যে, অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছে, অতিরিক্ত কাজ করায় বা অতিরিক্ত উত্তেজনায় ঐরূপ হইয়া পড়িয়াছে। যদি রোগী শারীরিক দুর্বলতাবিশিষ্ট হয়, তাহা হইলে বর্তমান সমাজব্যবস্থা সম্বন্ধীয় উত্তেজনায় ঐরূপ হয়। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা এরূপ যে, উহা হিষ্টিরিয়াসদৃশ মানসিক অবস্থা সৃষ্টি করিবার অনুকূল। আদর্শ সামাজিক ভাবাপন্ন মন এরূপ যে, উহাকে সর্বদাই গোলযোগবিশিষ্ট বলা যাইতে পারে। সে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, কিন্তু উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকগুলি ঔষধে এই অবস্থা আছে,—মনকে কেন্দ্রীভূত করিবার শক্তির অভাব, উহা ঠিক তাহাই,—একপ্রকার অদ্ভুত মনঃসংযোগ করিবার অক্ষমতা। এই ঔষধটির আগাগোড়া আশঙ্কা, ভয়, উদ্বেগ ও ক্রন্দন আছে। “অনুভূতিপ্রবণ মনোভাব, অত্যন্ত তীব্র অনুভূতিপ্রবণতা।” “অতি পরিশ্রান্ত, ভয়ানক পরিশ্রান্ত।”

ইগ্নেশিয়ার আর একটি জিনিষ আছে। “সে মনে করে; যেন সে কৰ্তব্য কৰ্ম্মে অবহেলা করিয়াছে।” ইহা খুব বেশী ‘পালস’, ‘হেলিবোরাস’, ‘হায়োস’ সদৃশ, কেবলমাত্র ‘অরাম বিশ্বাস করে যে, সে কোন গুরুতর অন্যায় কাজ করিয়াছে। “সে মনে করে যে, সে কোন কর্তব্য কার্যে অবহেলা করিয়াছে।” ঐ সম্বন্ধে চিন্তা করে। “কোন বড় শোকের ব্যাপারের পর বিষাদভাব।”

ইহাতে নানারূপ শিরঃপীড়া আছে এবং উহাদের সবগুলিই রক্তসঞ্চয় প্রকৃতির ও চাপ দেওয়ার ন্যায় শিরঃপীড়া, অথবা ছিন্নকর শিরঃপীড়া অথবা যেন মাথার পার্শ্বে বা শঙ্খস্থানে একটি পেরেক বিদ্ধ হইতেছে, এরূপ শিরঃপীড়া, উহার উপর চাপিয়া শুইলে উপশমিত হয়। সর্বপ্রকার শিরঃপীড়াই উত্তাপে উপশমিত হয়। রোগী সাধারণভাবে উত্তাপে উপশমিত ও ঠান্ডায় উপচয়যুক্ত হয়। পাকস্থলীতে ঠান্ডা জিনিষ চায়, কিন্তু বাহ্যিকভাবে গরম জিনিষ চায়। ঝাঁকি দিয়া উঠার ন্যায় শিরঃপীড়া, দপদপকর শিরঃপীড়া, রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া। স্নায়বিক ও অনুভূতিপ্রবণ মনবিশিষ্ট ব্যক্তির শিরঃপীড়া। যাহাদের স্নায়ুপ্রণালী উদ্বেগ, দুঃখ ও মানসিক পরিশ্রমে অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে। “অত্যন্ত কফিপান, অত্যন্ত ধূমপান, ধূম আঘ্রাণ করায়, তামাক সেবন অথবা মদ্যপানহেতু শিরঃপীড়া।” নিবিষ্টভাবে কোন কাজ করায় শিরঃপীড়া। “শিরঃপীড়া উত্তাপে ও বিশ্রামে উপশমিত হয়, ঠান্ডা বায়ুপ্রবাহে এবং হঠাৎ মাথা ঘুরাইলে খারাপ হয়, মলত্যাগের জন্য বেগ দিলে, ঝাঁকি লাগিলে অথবা তাড়াতাড়ি করিলে বা উত্তেজনায় খারাপ হয়।” উপর দিকে তাকাইলে, চক্ষু নাড়াইলে, বাড়িয়া যায়। গোলমালে, আলোকে বাড়িয়া যায়। “মস্তকের পশ্চাদ্দিকে যন্ত্রণা, ঠান্ডায় বৃদ্ধি, বাহ্য উত্তাপে উপশম। আহারকালে শিরঃপীড়া কম থাকে, কিন্তু পরক্ষণেই উহা আবার বাড়িয়া উঠে।

“দৃষ্টিশক্তির গোলযোগ। সবকিছু আঁকা-বাঁকা দেখে। দৃষ্টিশক্তির বিশৃঙ্খলা।” চক্ষু দুইটি অত্যন্ত স্নায়বিক। “বিদাহী অশ্রুস্রাব, ক্রন্দন।”

মুখমন্ডল বিকৃত, আক্ষেপবিশিষ্ট, বিবর্ণ এবং রুগ্ন। মুখমন্ডলে যন্ত্রণা। “মুখমন্ডলে ভীষণ বিদীর্ণকর, ছিন্নকর যন্ত্রণা।” কথাটি আমি এইভাবে বলিব, আমি যেরূপ পূর্বে বলিয়াছি, ঐরূপ একটি সঙ্গীতশিক্ষায় অতিশ্রান্ত বালিকা প্যারিস হইতে বাড়ীতে আসিলে, তাহার মুখমন্ডলে কনকনানি, মুখমন্ডলে বেদনা অথবা অন্য কোনপ্রকার হিষ্টিরিয়াজনিত যন্ত্রণা উপস্থিত হইতে পারে। উহাদের কেহ কেহ তীব্র শিরঃপীড়াগ্রস্ত হইবে, অপর কাহারও কাহারও মানসিক লক্ষণ এবং মনের গোলযোগ দেখা দিবে, আবার কয়েক জনের হয়ত হিষ্টিরিয়াসদৃশ লক্ষণ বিকাশ হইবে। দীর্ঘকালস্থায়ী, উত্তেজনা। অতিরিক্ত সঙ্গীতচর্চা। হাঁ হাঁ, অপর কতকগুলি বালিকার কষ্টকর ঋতুস্রাব, ডিম্বকোষে বেদনা, হিষ্টিরিয়াসদৃশ অবস্থা, জরায়ুর স্থানচ্যুতি, যোনি ও সরলান্ত্রের বহিনির্গমনহেতু একেবারে অকর্মণ্য হইয়া পড়িবে। “মলদ্বার ও যোনিদ্বার হইতে ছিন্নকর, তীরবৎ বেদনা উপরদিকে, নাভিস্থলের দিকে বিস্তৃত হইতে থাকিবে।”

এই ঔষধের আগাগোড়া অদ্ভুত বিপরীতভাবে পূর্ণ। কোন একটি প্রশ্ন উপস্থাপিত হইলে এইরূপ অনুভূতিপ্রবণ স্ত্রীলোকেরা যে কি মনে করিবেন, তাহা অনুমান করা তোমাদের পক্ষে অসম্ভব। তাহারা যে বিচারবুদ্ধিযুক্ত অথবা যৌক্তিকতাসম্পন্ন হইবেন, তোমরা এরূপ আশা করিতে পার না। তাহাদের সম্বন্ধে যতদূর সম্ভব কম কথা বলাই ভাল হইবে। রোগীর সম্বন্ধে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করিও না, শুধু শুনিয়া যাইও, বিজ্ঞভাব দেখাইও, এবং ঔষধ ব্যবস্থা করিয়া তোমার ব্যাগটি লইয়া বাড়ী চলিয়া যাইও। কারণ যাহা কিছুই বলিবে, স্ত্রীলোকটি হয়ত তাহাই বিকৃত করিয়া লইবেন। তাহাকে সন্তুষ্ট করিবার মত কোন কথাই তুমি বলিতে পারিবে না। ও যখন তোমরা আশা করিবে না, তখন তৃষ্ণা। যদি তাহার জ্বর হয়, শীতের সময় পিপাসা, কিন্তু জ্বরের সময় পিপাসা থাকিবে না। ইহা সবিরাম জ্বরে উপযোগী। উত্তেজনাপ্রবণ স্নায়বিক প্রকৃতির শিশু ও স্ত্রীলোকদিগের সবিরাম জ্বর।

অপর নাম- সেন্ট ইগ্নেসিস বিন (Bean of St. Ignatius)

স্ট্রিকনস ইগ্নেসিয়া (Strychnos Ignatia)

ইহা লোগেনিয়েলী জাতীয় একপ্রকার বৃক্ষারোহী গুল্ম। ইহা স্ট্রীকনিয়াস নাক্সভমিকার মত এশিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণপূৰ্ব্ব উপকূলস্থিত দ্বীপে জন্মায়। এরা যদিও একজাতীয় তবুও ইগ্নেসিয়ায় চেয়ে বেশী স্ট্রিকনিন নাক্স ভমিকাতে থাকে।

ইগ্নেসিয়ার – মূলকথা

১। পরস্পর বিরোধী লক্ষণ সমূহের বা লক্ষণের অসতি সংযুক্ত রোগ সমূহের ঔষধ। যেমন-মাথার বেদনা-বেদনাযুক্ত পাশে চেপে শুলে মাথা বেদনা ভাল থাকে; আহারেও খিদের উপশম হয় না, গলা-বেদনা, কিন্তু কিছু গলাধঃকরণকরলে কেনার উপশম হয়। জ্বরের শীতাবস্থায় পিপাসা, মুখমন্ডল লাল।

২। শোক বা বিমর্ষ, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, চিত্তবৃত্তির বা মনের পরিবর্তন শীলতা বা খামখেয়ালি প্রকৃতি।

৩। উত্তেজনা বা অবসাদর মানসিক আবেশ, ও ভয় থেকে উৎপন্ন স্পন্দন, বা খেচুঁনি বা আক্ষেপ।

৪। পাকস্থলীতে যেন কিছু নেই এইরকম শূণ্যতা বোধ, আহারেও উহার উপশম হয় না।

৫। মলদ্বার সংক্রান্ত রোগে, যেমন অর্শে, সরলান্ত্র বহির্গমনে, মলত্যাগের পর বেদনায় ও ক্ষত অনুভবে, বিশেষ করে এই বেদনা তীরবেগে পেটের দিকে ধাবিত হলে ইগ্নেসিয়া উপযোগী।

৬। ইগ্নেসিয়া আবেগ প্রবণা হিস্টিরিয়াগ্ৰস্তাদের পক্ষে উপযোগী।

৭। হ্রাসবৃদ্ধি-

বৃদ্ধি — অতি সামান্য স্পর্শে, ধূমপান ও কফিপানে।

উপশম – বেদনাযুক্ত পাশে চেপে শুলে, শক্ত চাপে, প্রভৃত জলের মত মূত্রস্রাবে।

৮। শুকনো,আক্ষেপিক কাশি- কাশলে এই কাশির উপশম হয় না, যত কাশতে থাকে ততই কাশির উদ্রেক হয়।

৯। বেদনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানে সীমাবদ্ধ, তাতে অতিরিক্ত অনুভূতি (কফিয়া, হিপার)।

১০। অধিকাংশ স্থানেই ইগ্নেসিয়া সকাল বেলা ব্যবহার করা উচিত।

১১। নাক্স ভমিকা যেমন পিত্তপ্রধান পুরুষের ঔষধ, ইগ্নেসিয়া তেমনি পিত্তপ্রধানা স্ত্রীলোকের ঔষধ।

ইগ্নেসিয়া — পরিক্রমা

মানসিক লক্ষণ-

স্নায়বীয় রোগে যে সকল ঔষধ ব্যবহৃত হয় অথবা যাদের স্নায়বিক ঔষধ বা নার্ভাস রেমিডিজ বলে, ইগ্নেসিয়া তাদের একটি।

একোনাইট, ক্যামোমিলা, নাক্স ভমিকা ও অন্যান্য অনেকগুলি ঔষধ যেমন মানসিক লক্ষণের প্রাধন্য অনুসারে ব্যবহৃত হয়, ইগ্নেসিয়ার ও সেরকম কতকগুলি বিশেষ মানসিক লক্ষণ আছে, আর সেই লক্ষণ গুলির প্রাধান্য অনুসারেই ইগ্নেসিয়া ব্যবহৃত হয়।

ইগ্নেসিয়াতে উপরোক্ত ঔষধ গুলির মত ইন্দ্রিয় জ্ঞানের অতিশয় উত্তেজনা দেখতে পাওয়া যায়। তবে এতে অতি সুস্পষ্ট বিমর্ষতা ও নীরব-বিলাপ প্রবণতা  বর্তমান থাকে, যা অন্যান্য ঔষধে দেখা যায় না। তাছাড়া যদি কেউ গভীর শোক রুদ্ধ হেতু কোন অসুখে ভোগেন ও ঘন ঘন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলেন, তাছাড়া শোক চেপে বা গোপন করে রাখতে চায় বা অপরের কাছে প্রকাশ করতে না চায় তবে তিনিই প্রকৃত পক্ষে ইগ্নেসিয়ার রোগী। তিনি তার দুঃখ নিয়ে একলা থাকতে চান, অনেকক্ষণ দীর্ঘ  নিশ্বাস ত্যাগ করে এবং তাঁকে অতিশয় দুৰ্বল দেখায়। তিনি পাকস্থলীর দুৰ্বলতার কথা বলেন, পাকস্থলীতে তার দুর্বলতা, অবসন্নতা ও সম্পূর্ণ শূণ্যতা অনুভূত হয়।

ইগ্নেসিয়ায় আর একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা হল—রেগিণীর চিত্তবৃত্তির পরিবর্তনশীলতা (changeable mood) বা পরিবর্তনশীল মনোভাব।

এই লক্ষণে কোন ঔষধই ইগ্নেসিয়ার সমকক্ষ নহে। এই লক্ষণ একোনাইট, কফিয়া, নাক্স মস্কাটা এবং আরও কয়েকটি ঔষধে আছে কিন্তু ইগ্নেসিয়ায় সর্বাধিক পরিমানে বিদ্যমান। আর এই জন্যই ইগ্নেসিয়া হিস্টিরিয়া রোগের চিকিৎসায় সর্বোৎকৃষ্ট।

এক্ষেত্রে রোগিণী কখনও আমোদ-প্রমোদ ও হাসি ঠাট্টায় কাটায়। আবার পরক্ষণেই সম্পূর্ণ এর বিপরীত, অত্যন্ত বিমর্ষ ও কাঁদে। এই রকম মানসিক অবস্থা পৰ্য্যায় ক্রমে দেখা যায় এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল।

আবার, সময়ে সময়ে ইগ্নেসিয়ায় আমরা পাই অধীরতা, কলহপ্রিয়তাও রাগ বা কোপনতা, তবে ক্যামোমিলার মত তত বেশী নয়। ইগ্নেসিয়ার রোগী সহজে ভয় পায়, সুতরাং একোনাইট, ওপিয়াম, ও ভেরেট্রাম অ্যালবামের মত ভয় পাওয়ার মন্দফলে ইগ্নেসিয়াও ব্যবহৃত হতে পারে।

সংক্ষেপে ইগ্নেসিয়াকে চিত্তবৃত্তির বা মনোভাবের (mood)প্রধান ঔষধ বলা যেতে পারে।

২। মানসিক লক্ষণ ছাড়াও ইগ্নেসিয়া একটি শ্রেষ্ঠ স্নায়বিক ঔষধ। নাক্স ভমিকার মত মেরুদণ্ডের উপর এর সুনিশ্চিত ক্রিয়া দেখা যায়। এর দ্বারা মোটর ও সেনসারী উভয় প্রকার স্নায়ুই আক্রান্ত হয়। তাছাড়া ইহা আক্ষেপ বা তড়কার সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ। বিশেষ করে ভয় পেয়ে, শিশুদের শাস্তি দানের পর অথবা – অন্যান্য যেকোন প্রবল মানসিক আবেগের ফলে যে সকল আক্ষেপিক রোগ উৎপন্ন হয় তাতে ইগ্নেসিয়া উপযোগী।

রোগী বিবরণী –

সূতিকাক্ষেপের একটি রোগিণীর অন্যান্য ঔষধে কোন উপকার না হওয়ায় চিকিৎসক রোগিণীকে পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য করেন যে রোগিণী কয়েকবার উপরি উপরি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলার পর আক্ষেপ মুক্ত হন। এক্ষেত্রে তিনি রোগিণীর সম্প্রতি কোন মানসিক কষ্ট হয়েছে কিনা খোজ করে জানতে পারেন যে, কয়েক সপ্তাহ আগে তার মা মারা গেছে এবং তার জন্য তিনি অতিশয় বিলাপ করেছিলেন। সুতরাং ডাক্তার বাবু তাকে ৩০ শক্তির ইগ্নেসিয়া ব্যবস্থা করেন, এবং ঐ ঔষধেই রোগিণী সত্বর আরোগ্য লাভ করেন।

৩। প্রকৃত আক্ষেপ ছাড়া সৰ্ব্বশরীরে স্পন্দন (twitchings) ইগ্নেসিরায় সুস্পষ্ট লক্ষণ। এইজন্য কোরিয়া রোগেও ইহা অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ। বিশেষতঃ যদি,শোক প্রভৃতি মানসিক কারনে অথবা দাঁত উঠা বা কৃমির প্রতিক্ষিপ্ত উপদাহে অর্থাৎ রিফ্লেক্স ইরিটেশানে রোগের উৎপত্তি হয় তাহলে ইহা বিশেষ ভাবে ফলপ্রদ। এছাড়া এই স্পন্দনলক্ষণে একমাত্র জিঙ্কাম মেটালিকাম ইগ্নেসিয়ার প্রায় সমকক্ষ। অবশ্য অ্যাগারিকাস, হাইওসায়ামাস, কুপ্ৰাম মেট, প্রভৃতিও এর কাছাকাছি আছে, কেউ কেউ অবশ্য এদের সমকক্ষ মনে করেন। ভেরেট্রাম ভিরিডিও ভাল ভাবে জানা গেলে, এই রকম ক্ষেত্রে উচ্চাসন দেওয়া যেতে পারে।

* সময়ে সময়ে পক্ষাঘাতেও ইগ্নেসিয়ার ব্যবহার হয়ে থাকে। সাধারনতঃ হিস্টিরিয়াজনিত পক্ষাঘাতেই ইহা ফলপ্রদ। একোনাইট, ক্যামোমিলা ও কফিয়ার ন্যায় ইগ্নেসিয়ায়ও বেদনায় অতিরিক্ত অনুভূতি থাকে।

৪। মাথা বেদনা-

স্নায়বীয়, বিশেষতঃ হিস্টি রিয়াগ্রস্ত স্নায়বীয় রোগীদের মাথাযন্ত্রনায় ইগ্নেসিয়া একটি প্রধান ঔষধ।

বিশেষকরে স্নায়বীয় পুরুষদের মাথা যন্ত্রণায় নাক্স ভমিকা যেমন উপযোগী, ইগ্নেসিয়া সেই রকম স্ত্রীলোকেদের মাথা বেদনায় শ্রেষ্ঠ ঔষধ। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে হিস্টিরিয়া সংক্রান্ত স্নায়বীয় মাথাযন্ত্রণা সাধারণতঃ মাথার একপাশে হয়। এছাড়া ইগ্নেসিয়া যে মাথা বেদনার একটি সার্থক ঔষধ তা নিম্নলিখিত কথা গুলি দ্বারা প্রকাশ করা যায় মাথা বেদনায় মনে হয় যেন একটি পেরেক বাইরের দিক থেকে পোতা হচ্ছে, বেদনার দিকে শুলে বেদনার উপশম হয়।

এই রকম মাথা বেদনা সাধারণতঃঅতিশয় স্নায়বীয় ও অনুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, শোক কিংবা মানসিক পরিশ্রমে দুৰ্বল হয়ে পড়ে তাদের মধ্যে দেখা যায়।

* নিয়ত পরিবর্তনশীলতা ও পরস্পর বিরোধী লক্ষণ সমূহ ইগ্নেসিয়ার প্রকৃতি গত লক্ষণ। এরা অন্যত্র যেমন প্রকাশিত হয় এক্ষেত্রেও সেইরকম প্রকাশিত হতে দেখা যায়। মাথায় বেদনায় যে কেবল স্থান পরিবর্তিত হয় তা নয়, কখনও কখনও বেদনা সালফিউরিক অ্যাসিডের মত ক্রমে ক্রমে উপস্থিত হয়ে, সাহস কমে যায়। আবার কখনও বা বেলেডোনার মত উহা হঠাৎ প্রকাশ পায় ও তেমনি হঠাৎ চলে যায়।

* একোনাইট, জেলসিমিয়াম, সাইলিসিয়া, ভেরেট্রাম অ্যালবামের মত ইগ্নেসিয়ায় মাথাবেদনা ও প্রচুর পরিমাণে প্রসাবে উপশমিত হয়। সাধারণতঃ স্নায়বীয় হিস্টিরিয়াযুক্ত রোগিণীদের মাথা বেদনায় প্রায়ই এইরূপলক্ষণ দেখা যায়। (মাথা ধরার সময় প্রচুর প্রস্রাব লক্ষণে-ল্যাক -ডি ফ্লোরেটাম)

সাধারণতঃ কফি খেলে, তামাক সেবনে, নস্যির অত্যধিক ব্যবহারে, তামাকের ধোঁয়া সেবনে, সুরাপানে, গভীর মনঃসংযোগে ও মলত্যাগের কোঁথ দেওয়া প্রভৃতি কারণে মাথা বেদনা বাড়ে। যদিও কখন কখন আহারকালে উহা উপশমিত হতে দেখা যায় কিন্তু অহারের পরেই আবার বেড়ে যায়।

* (সেরিনামের মাথা বেদনার মত ইগ্নেসিয়ার মাথা বেদনার সঙ্গেও সময় সময় খিদে থাকে।) তবে মাথা বেদনার আরও বৃদ্ধি হয় ঠান্ডা বাতাসে, সহসা মাথা ঘোরালে ও নীচু করলে, অবস্থান বদলালে, দৌড়ালে, অনেকক্ষণ উপরের দিকে চেয়ে থাকলে, চোখ নাড়াচড়া করলে, এবং সর্দি ও আলোকে।

উহা উপশম হয় উত্তাপে, বেদনাযুক্ত পাশে চেপে শুলে, মৃদু চাপে, বাহ্যিক উত্তাপে, ও প্রচুর পরিমানে পরিস্কার মূত্রস্রাবে।

৫। গল-লক্ষণসমূহ-

ইগ্নেসিয়ার কয়েকটি প্রধান গল লক্ষণ আছে।

প্রথমতঃ সচরাচর যে লক্ষণটি দেখা যায় তাহল—গ্লোবাস হিষ্টিরিকাস অর্থাৎ যেন একটি গোলার মত বস্তু পাকস্থলী থেকে উঠে গলার ভিতর পর্যন্ত আসছে এবং তাতে রোগিণীর দমবন্ধের মত অবস্থা অনুভূত হয়। রোগিণী উহা গিলে ফলে নিচের দিকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, নামিয়ে দেয় কিন্তু উহা পুনরায় উপস্থিত হয়, এবং এতে অতিশয় কষ্ট হয়। বিশেষ করে রোগিণী যদি শোকাৰ্ত্ত, দুঃখিত নয় ও কাঁদে, বা কাঁদতে চেষ্টা করে তাহলে উহা উপস্থিত হয়। এগুলি প্রকৃত পক্ষে কবলমাত্র স্নায়বিক অনুভূতি মাত্র, বাস্তবিকভাবে এর কোন উপস্থিতি নেই। তবে এই গ্লাবাস হিস্টিরিকাস ইগ্নেসিয়ার প্রধান লক্ষণ।

টনসিল ও ডিপথিরিয়া প্রভৃতি গলায় উৎকট রোগেও ইগ্নেসিয়া আরোগ্যকারী। এই সকল রোগে ইগ্নেসিয়ায় বিশেষ লক্ষণ হল—গলাধঃকরণে উপশম অথবা এখন না গেলা যায় তখন কষ্ট বাড়ে (ক্যাপ্সিকাম)।

মন্তব্য-

সুতরাং আমরা সচরাচর এমন কোন রোগী পাওয়ার আশা করব না যার ক্ষেত্রে ইগ্নেসিয়া উপযোগী। তবে এরকম রোগীও সময় সময় পাওয়া যায় এবং আমাদের বিফল মনোরথ করে বিশেষ করে যখন ঔষধটি আমাদের কাছে থাকে।

তবে যখন এইরকম একটি রোগী এই ঔষধে সেরে যায় নখন যে তৃপ্তি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

ইগ্নিসিয়ার রোগে না গেলায় বৃদ্ধি ছাড়াও কখন কখন তরল পদার্থ গিললে বৃদ্ধি এবং কঠিন পদার্থ গেলায় উপশম হতে দেখা যায়। এই লক্ষণে ল্যাকেসিসের সঙ্গে ইগ্নেসিয়ার সাদৃশ্য ও ব্যাপটিসিয়ায় সঙ্গে বৈপরীত্য দেখা যায়। ব্যাপ্টিসিয়ার রোগী কেবল তরল পদার্থই গিলতে পারে, কঠিন পদার্থ তার গলায় আটকে যায়।

ঔষধের এই সকল সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্য সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত, কারণ এর দ্বারা অনেক সময় সংক্ষেপে ও সহজে প্রকৃত ঔষধের ব্যবস্থা করা যায়।

পূর্বোক্ত পরিচালক লক্ষণগুলি ছাড়াও ইগ্নেসিয়ার আরও কতকগুলি বিশেষ মূল্যবান লক্ষণগুলি হল—

ক) তামাকের ধোঁয়ার উপর অত্যন্ত বিরক্তি। এতে ইগ্নেসিয়ার বহুরোগের বৃদ্ধি ঘটে। এইটি একটি সাধারণ বিশেষ লক্ষণ।

খ) পাকস্থলী গহ্বরে দুৰ্ব্বলতা ও শূণ্যতাবোধ, পাকস্থলীতে কিছু নেই এইরকম অনুভূতি,

ইহাও ইগ্নেসিয়ার একটি বিশেষলক্ষণ। তবে ইগ্নেসিয়ার রোগীর এইক্ষণের সঙ্গে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলার বা দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার প্রবৃত্তি থাকে।

ইগ্নেসিয়ার মত আরো দুটি ঔষধে পাকস্থলীতে শূণ্যতা বোধ আছে। এইদুটি হল-হাইড্রাস্টিস ও সিপিয়া। অন্যান্য লক্ষণগুলি দেখে ওদের পার্থক্য নির্ণয় করতে হবে। ইগ্নেসিয়ার পাকস্থলীর এই দুর্বলতা বোধ কখন কখনও বর্ণনা করা হয়”যেন পাকস্থলী ঢিলে হয়ে ঝুলে পড়েছে এরকম ভাব”।

ইপিকাকেও এরূপ অনুভূতি আছে। কখনও কখনও আমরা হিস্টিরিয়া প্রবণা স্ত্রীলোকেদের মধ্যে পাকস্থলীর শূলবেদনা হতে দেখতে পাই। এক্ষেত্রে সব্বাগ্রে ইগ্নেসিয়ার কথা স্মরণ করতে হবে।

৬। নাক্স ভমিকার মত মলদ্বারে ও সরলান্ত্রেও ইগ্নেসিয়ার নিশ্চিত ক্রিয়া দেখা যায়।

সরলান্ত্র বাইরে বের হয়ে পড়া ইগ্নেসিয়ার লক্ষণ (রুটা)। এতে নাক্সভমিকায় মত পুনঃ পুনঃ মল ত্যাগের প্রবৃত্তি থাকে, কিন্তু মলের পরিবর্তে বা মলের সঙ্গে সরলান্ত্রে বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই রোগীর কোঁথ দিতে, হেঁট হতে কিংবা কিছু তুলতে ভয় পায়, মনে করে এই বুঝি তার সরলা বাইরে বের হয়ে পড়বে।

মলত্যাগের পরে মলদ্বারে এক প্ৰকার সংকোচনবৎ কেন দেখা যায় এবং দু-একঘন্টা স্থায়ী হয়। নাইট্রিক অ্যাসিডেও এই লক্ষণটি আছে। ওতে এই লক্ষণটি কেবল পাতলা পায়খানার পরে প্রকাশ পায়। মলের সঙ্গে সম্বন্ধ ছাড়াও মলদ্বারে একপ্রকার দেনাও ইগ্নেসিয়ার লক্ষণ।

৭। উর্দ্ধদিকে সরলান্ত্রের মধ্য দিয়ে তীক্ষ্ম বেদনার দ্রুতবেগে গমন ইগ্নেসিয়ায় একটি বিশেষ লক্ষণ। ডানহ্যাম আমাদিগকে এই চরিত্রগত লক্ষণটি দান করেছেন। সিপিয়ায় জরায়ুতে এই রকম বেদনা লক্ষণ ইগ্নেসিয়ার এই লক্ষণটি একটি বড় স্বরূপ, এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই সব সত্য বলে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে সুতরাং ইগ্নেসিয়া মলদ্বার ও সরলান্ত্রে পক্ষে একটি প্রয়োজনীয় ঔষধ।।

৮। জ্বর-

ইগ্নেসিয়ার জ্বরের লক্ষণগুলি অদ্ভূত।

সবিরাম জ্বর ছাড়া অন্য কোন রোগ নেই যাতে শক্তিকৃত ঔষধের রোগ আরোগ্য করবার শক্তি খুব ভাল করে দেখানো যেতে পারে। যে পুরাতন রোগ বহু বছর ধরে কুইনাইন দ্বারা চিকিৎসা করেও কোন ফল হয়নি তাতে ২০০ বা আরো উচ্চ শক্তির ঔষধ ব্যবহার করে খুব তাড়াতাড়ি ও স্থায়ী ফল লাভ করা গেছে। ইগ্নেসিয়ার জ্বরে প্রধান প্রধান নির্দেশক লক্ষণগুলি হল।

ক) শীতাবস্থায় পিপাসা, অন্য কোন অবস্থায় পিপাসা নেই।

খ) বাহ্য উত্তাপে শীতের উপশম।

গ) বাহ্য আবরণে উত্তাপের বৃদ্ধি।

ঘ) শীতের সময় মুখমন্ডল লাল। এই চারটি টুলের পায়া তাই আমরা নির্ভয়ে ওদের উপর বসতে পারি।

কেবল শীতাবস্থায় পিপাসা ও অন্যান্য অবস্থায় পিপাসার অভাব অন্য কোন ঔষধে নেই। নাক্স ভমিকা শীত স্টোভের গরমে বা বিছনার গরমে কমে না, বরং গরমের সময় নাক্স ভমিকার রোগীকে গায়ে চাপ দিতে হয়, কারণ গায়ের ঢাকা খুললেই শীত ঘুরে আসে। স্ট্রিকনিয়া উভয় ঔষধের উপক্ষার হলেও রোগী আরোগ্য করার জন্য যখন আমরা এদের (নাক্স ভমিকা ও ইগ্নেসিয়া) প্রয়োগ করি তখন এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়।

 

 

 

রোগী বিবরণী-

শীতলাবস্থায় লাল মুখণ্ডল—এই দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমি একটি দুরারোগ্য রোগীকে আরোগ্য করেছিলাম এবং লাল মুখমণ্ডল লক্ষ্য করার পর আমি আরও লক্ষ্য করি যে বালকটি ছিল স্টোভের পিছনে বিশেষ করে যে স্থানটি সবচেয়ে গরম সেখানে। এক্ষেত্রে ২০০ শক্তি তাকে সত্বর আরোগ্য করে।

ঐ সময়ে একই ম্যালেরিয়া দুষ্ট স্থানের একই পরিবারের অন্যদুটি রোগী ও আরোগ্য হয়েছিল। তবে তাদের একটি ২০০ শক্তির ক্যাপ্সিকামে ও অপরটি ঐ শক্তি ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটামে।’

প্রথমটির শীত আরম্ভ হয়েছি স্কন্ধদ্বয়ের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টির শীত পূৰ্ব্বাহে, শীতের আগে হাড়ে ছিল অত্যন্ত যন্ত্রণা ও শীতের শেষে পিত্তবমন।

মন্তব্য:

আমি জানি না যে এই তিনটি বিষয় আগে উল্লেখ করেছি কিনা। তবে ইহা পুনরুল্লেখ করায় কোন দোষ হবে না, কারণ ইহা আমাদের রোগ, আরোগ্যের শ্রেষ্ঠ বিধানানুসারে শক্তীকৃত ঔষধগুলির বিশেষ বিশেষ ক্ৰমণ্ডলির উদাহরণ। তাই কোন বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি কি এদের অগ্রাহ্য করতে পারেন।

 

 

 

Ign : Ignatia Amara
Hysteria.Acute grief, acute disappointments makes patient bitter and hardened.Depth of sorrow and grief stuck deep within, cannot be surfaced.

Romantic, idealistic, emotional, over sensitive, easily hurt feelings.

Cramping of emotions leads to defensiveness, rude, suspicious, challenging behaviour.

Spasms. Sighing. Choking.


COMMON NAME:

St.Ignatius Bean


A/F:

-Silent grief

-Worry, fear

-Disappointment in love

-Shame, mortification

-Tobacco, coffee, alcohol

-Old spinal injuries


MODALITIES:

< Emotions

< Touch

< Grief [Ph-ac, Nat-m]

< Coffee

< Worry

< Strong odours

< Consolation

< Tobacco

< Chagrin

< Cold open air

< Vexation

< Fright

< After meals

< Stooping

< Walking

< Standing

< Periodical, at same hour

< Sweets

> Alone

> Hard pressure

> Warmth

> Swallowing

> Walking

> Change of position

> Lying of painful side

> While eating

> When travelling


MIND:

-Hysterical remedy.

-Alert, oversensitive and nervous individuals.

-Incredible change of mood, jesting and laughter changing to sadness and tears, or weeping alternating with laughing.

-Highly emotional. Great defensiveness and touchiness.

-Jealousy, suspicious and doubting.

-Quarrelsome, rude. At times indifferent to moods (Sep, Lil-t).

-Ailments from silent grief and disappointment in love.

-Full of suppressed grief, seems to drown by it.

-Brooding over imaginary troubles.

-Consolation aggravates (Nat-m).

-Conversation aggravates.

-Long sighing and sobbing which is aggravated before menses. Takes deep breath for relief.

-Sympathetic.

-Easily frightened persons.

-Fear of robbers at midnight, of birds or chickens.

-Fears he will never sleep again.

-Claustrophobia.

-Desires to be alone. Weeps when alone.

-Faints easily everytime when girls go to church, or who fall in love with married men.

-Music aggravates.

-Fault finding and too sensitive to be reprimanded or scolding aggravates.

-Contradiction aggravates (Anac, Ferr).

-Dreams of water, or of waves breaking over her.


GUIDING INDICATIONS:

-Remedy of great contradictions like:-Roaring in ears > music.

-Piles > when walking.

-Sore throat > when swallowing.

-Empty feeling in stomach not > by eating.

-Spasmodic laughter from grief.

-Cough < the more he coughs < standing still.

-Increased sexual desire with impotence.

-Headaches > stooping > lying on painful side.

-Thirst during chill. Red face during chill. No thirst in fever.

-Colour changes in face when at rest.

-Great hysterical remedy (Asaf, Mosch, Val, Cocc, Nux-m).

-Hypersensitive to all external impressions, touch, pain, noise, odour, etc.

-Spasmodic effects, often violent, with rigidity, twitching and tremors (Croc, Agar, Zinc).

-Epilepsy from fright.

-Single parts affected.

-Sensation of lump in parts.

-Pains in small circumscribed spots (Ox-ac, Kali-bi), associated with nervous shuddering; change their locality; come gradually, go suddenly, or come and go suddenly.

-Cannot stand smoking or tobacco smoke in any form.

-Head-Headache over a small spot that can be covered with the tip of finger.

-Sensation as if a nail had been driven through skull.

-Headache > profuse urination (Acon, Gels, Kalm, Sang, Sil, Verat) > stooping > lying on painful side.

-Alopecia after grief.

-Hirsuitism.

-Face-Redness and heat of one cheek alternating with paleness [Cham].

-Sweats on face on a small spot while eating.

-Perspiration only on the face, perspires first on face or upper lip.

-Colour changes in face when at rest.

-Mouth-Toothache < in between acts of eating < lying down.

-Bites inside of cheeks when chewing.

-Throat-Sore throat > when swallowing.

-Globus hystericus, lump rising from stomach in throat, choking sensation

-Follicular tonsillitis.

-G.I.T.-Empty feeling in stomach not > by eating.

-Singing in stomach > taking a deep breath.

-Patient vomits simple food, but retains things such as cabbage, onions, indigestible things.

-Hiccough.

-Craving for cheese, fruits.

-Aversion for fruits.

-Constipation with excessive urging, more in upper abdomen, with great pain and flatulence.

-Pain shoots up the rectum.

-Rectal spasms, cramps, fissure, haemorrhoids, prolapse.

-Haemorrhoids with prolapse, with every loose stool.

-Pain in rectum remaining hours after stool (Aesc, Aloe, Mur-ac, Rat, Sulph).

-Pressure as of a sharp instrument in rectum from within outward.

-Respiratory system-Choking sensation in throat. Takes deep breath to get relief.

-Laryngeal stridulus that can be heard all over house.

-Cough worse the more he coughs < standing still.

-Female genitalia-Menses irregular, black, suppressed from grief.

-Male genitalia-Sexual desire with impotency.

-Back-Spasms after grief.

-Fevers-Quotidian, tertian, quartan type of malaria.

-Thirst during chill. Red face during chill.

-No thirst in fever.

-Febrile coldness > by external warmth.


KEYNOTES:

1. Deep sighing – takes deep breath for amelioration.

2. Contradiction remedy -(Pain in ears > music. Piles > walking. Haemorrhoids and prolapsus ani with loose stool. Sore throat > when swallowing. Empty feeling in stomach not > eating. Spasmodic laughter from grief. Thirst and red face during chill. No thirst in fever).

3. Spasmodic effects of single parts.

4. Pain in small spots covered by finger.

5. Cannot stand tobacco in any form.

6. Headache > profuse urination.

7. Sweats on a small spot on face while eating.

8. Constipation with urge in upper abdomen.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Mentally and physically exhausted by grief.

2. Changeability of symptoms. Contradictory symptoms.

3. Involuntary sighing.

4. Headache as if a nail was driven out through the side > lying on painful side > profuse urination.

5. Cannot bear tobacco in any form.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Produces hyperaesthesia of all senses, and tendency to produce clonic spasms.

-Adapted to individuals with nervous temperament, who are alert, nervous, rigid and apprehensive.

-Patients who have silent grief or disappointment in love.

-Great remedy for contradiction.

-Spasmodic effects.

-Hysteria.


CLINICAL:

-Alopecia, Asthma, Bulimia, Chorea, Chronic fatigue syndrome, Cough, Depression, Encephalitis, Globus hystericus, Hirsuitism, Hysteria, Lumbago, Migraine, Obesity, Rectal cramp, Rectal fissure, Rectal prolapse, Spasms, Tics.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Follows Well : Ars, Bell, Calc, Cinc, Lyc, Nux-v, Puls, Rhus-t, Sep, Sulph, Zinc.

Inimical : Coff, Tab.

Compare : Acon, Agar, Anac, Apis, Ars, Asaf, Asar, Bell, Caust, Cham, Cimic, Cina, Cocc, Coll, Coloc, Croc, Cupr, Gels, Glon, Hyos, Ip, Lach, Lyc, Mag-c, Mag-m, Mosch, Nat-m, Nux-m, Nux-v, Op, Ph-ac, Phos, Plat, Plb, Podo, Puls, Sep, Sil, Stann, Stram, Sulph, Tarent, Teucr, Valer, Verat.

Antidoted By : Arn, Camph, Cham, Cocc, Coff, Puls.

It Antidotes : Selen, Zinc.

Duration Of Action : 9 Days.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *