জিহ্বার গোড়ার দিকে সাদা বা ছাই বর্ণের ময়লা। |
সাদা বা ছাই বর্ণের গাঢ় আঠালো বা আঁশ যুক্ত স্রাব। |
শরীরের চামড়া হতে সাদা ময়দার মত খোসা উঠে। |
রোগী ভাবে সে অবশ্যই অনাহারে মরবে। |
যদিও ঔষধটি পরীক্ষিত হয় নি, কিন্তু ডাঃ সুসলার কর্তৃক এই ঔষধের পরিচয় পাবার পরে দেখা যায় যে, এই ঔষধের রোগ, আরোগ্য করার ক্ষমতা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সর্দিজ উপসর্গসমূহ, নাতি-প্রবন প্রদাহিত অবস্থা, সৌত্রিক তন্তুসমূহের জমা হয়, এবং গ্রন্থিজ স্ফীতির ক্ষেত্রে এই ঔষধটি নিশ্চিত মূল্যবান বলে বিবেচিত হয়। জিহ্বার গোড়ার দিক সাদা অথবা ধূসর বর্ণের প্রলেপযুক্ত, এবং গাঢ়, সাদা বর্ণের শ্লেষ্মা। এইগুলি এই ঔষধের বিশেষ পথ প্রদর্শক লক্ষণ বিশেষ।
মাথা – রোগী কল্পনা করে তাকে অবশ্যই অনাহারে থাকতে হবে। মাথার যন্ত্রনা তৎসহ বমি। মাথার চামড়ায় সাদা মামড়ী। খুস্কি।
চোখ – সাদা শেম্মা, পুঁজযুক্ত মামড়ী। উপর-উপর ক্ষতসমূহ। চোখের পাতা দানাসমূহ। কণীনিকার অস্বচ্ছতা।
কান – মধ্যবর্ণের পুরাতন, সর্দিজ অবস্থা। কানের চারিপাশের গ্রন্থিসমূহের স্ফীতি। কানের ভিতর কামড়ানি ও শব্দসমূহ। ম্যাসটয়েড অস্থি আক্রান্ত হবার অবস্থা। কানের বাইরের দিকে প্রচুর রসক্ষরণ।
নাক — সর্দি; শ্লেষ্মা সাদা ও গাঢ়। গলবিলের ছাদ এঁটে ধরা মামড়ীতে ঢাকা থাকে। সর্দিতে নাকবন্ধ। নাক থেকে রক্তস্রাব (আর্নিকা; ব্রায়োনিয়া)।
মুখমন্ডল – গাল স্ফীত ও বেদনাপূর্ণ।
মুখগহ্বর – মুখের ভিতরে সাদা ঘা; মুখের ভিতরে ক্ষতসমূহ মুখ গহ্বরের ভিতরে সাদা ক্ষতসমূহ। চোয়াল ও ঘাড়ের চারিপাশের গ্রন্থিসমূহের স্ফীতি। জিহ্বা ধূসর শ্বেতবর্ণের লেপযুক্ত, শুষ্ক অথবা পিচ্ছিল।
গলা — ফলিকিউল্যার টনসিলাইটিস। টনসিল দুটি প্রদাহিত; এতবড়ো হয়ে যায় যে, শ্বাসনিতে কষ্ট হয়। ধূসরবর্ণের, ছোপযুক্ত অথবা গলা ও টনসিলে ছোপসমূহ। গলবিলের ছাদে এঁটে ধরে থাকার মত মামড়ী। কর্ননলের প্রদাহ ও ঐ স্থান থেকে স্রাব নিঃসরণ।
পাকস্থলী – চর্বিযুক্ত অথবা মশলাদার খাবার, খাওয়ার পরে বদহজম। সাদা, অস্বচ্ছ। শ্লেষ্মা বমন; মুখের ভিতরে জল জমতে থাকে। পাকস্থলীর বেদনা, তৎসহ কোষ্ঠকাঠিণ্য। রাক্ষুসে ক্ষুধা; জলপান করলে ক্ষুধা চলে যায়।
উদর – উদর স্পর্শকাতর ও উদরে স্ফীতি। পেট ফাঁপা সূতার মত ক্রিমি, এই ক্রিমির জন্যে মলদ্বার চুলকায়।
মল — কোষ্ঠকাঠিন্য, হাল্কা বর্ণের মল। চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে উদরাময়, কাদার মত রঙ বিশিষ্ট, সাদা, অথবা পিচ্ছিল মল। আমাশয়; প্রচুর মলত্যাগ, তৎসহ মল পিচ্ছিল। অর্শ; রক্তস্রাব;রক্ত কাল ও গাঢ়; ফিব্রিন যুক্ত, জমাট বাঁধা।
স্ত্রীরোগ — মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে অথবা অবরূদ্ধ অথবা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে হয়; প্রচুর স্রাব; কালোজমাট বাঁধা, অথবা চটচটে, কালো রক্ত, অনেকটা আলকাতরার মত দেখতে (প্ল্যাটিনা)। প্রদরস্রাব; সাদা দুধের মত স্রাব, অনুত্তেজক, হাজাকর নয়। সকালের দিকে বমিবমিভাব, তৎসহ সাদা শ্লেষ্মাবমন। স্তনগ্রন্থির ভিতর থোকা-থোকা জমাট, যা টিপলে নরম বলে মনে হয় এবং ঐ থোকা গুলি স্পর্শকাতর।
শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ — কণ্ঠস্বরের লোপ; স্বরভঙ্গ। হাঁপানি, তৎসহ পাকাশয়িক গোলযোগ; শ্লেষ্মা সাদা এবং কেশে তুলে ফেলা খুবই কষ্ঠকর, জোরে শব্দ কর কাশি, মনে হয় কাশির ধমক যেন পাকস্থলী থেকে উঠে আসছে; ছোট-ছোট কাশির ধমক, তরুন ও আক্ষেপিক কাশি, অনেকটা হুপিং কাশির মত। শ্লেষ্মা গাঢ় ও সাদাবর্ণের। বায়ুনলীর ভিতর থাকা গাঢ়, চটচটে শ্লেষ্মার ভিতর দিয়ে যখন বাতাস যায় তখন ঘড়ঘড় শব্দ হয়; শ্লেষ্মা কেশে তুলে ফেলা কষ্টকর।
পিঠ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ — বাতজ জ্বর; হাঁটুসন্ধির চারিধারের স্ফীতি ও রস সঞ্চয়। বাতজ বেদনা, কেবলমাত্র নড়াচড়ার সময় অনুভূতি হয়, অথবা এই এই সময়ে ঐ বেদনা বৃদ্ধি পায়। রাত্রিকালীন বাতজ বেদনা; বিছানার গরমে বৃদ্ধি; কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত বেদনা বিদ্যুতের মত দ্রুত প্রসারিত হয়; রোগী বিছানা থেকে উঠে পড়তে বাধ্য হয় এবং বসে থাকে। লেখার সময় হাতগুলি আড়ষ্ট হয়ে আসে।
চামড়া – ব্রন, লাল উদ্ভেদসমূহ এবং একজিমা, তৎসহ ফোস্কাসমূহ, ফোস্কাগুলি আঁশসমূহ। (আর্সেনিক) । বার্সাইটিস।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – মশলাযুক্ত খাদ্যবস্তু, চর্বিজাতীয় বস্তু, নড়াচড়ায়।
সম্বন্ধ-তুলনীয় – বেলেডোনার পরে সর্দিজ প্রদাহ ও শারীরিক যন্ত্রসমূহের বিবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্যালি মিউর ভালো কাজ করে। কিনো (কানে পুঁজ তৎসহ-ডানকানে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা); ব্রায়োনিয়া; মার্কিউরিয়াস; পালসেটিলা, সালফার।
শক্তি – ৩য় থেকে ১২ শক্তি।
যে সকল চর্মরোগে জ্বালাকর অনুভূতি থাকে সেই সকল ক্ষেত্রে এই ঔষধের বাহ্যিক প্রয়োগ চলে।
অপর নাম ক্লোরাইড অফ পটাশ (Chloride of Potassium)
ইহা তথাকথিত বায়োকেমিক ঔষধগুলির একটি, বা শুসলারের বারোটি টিসু রেমিডির একটি যেগুলি দ্বারা মানব শরীরের যাবতীয় রোগ আরোগ্য করার দাবী করেন ইহা যথেষ্ট পরীক্ষিত না হওয়ায় এর প্রকৃত গুনের অর্ধেকও জানা যায়নি। এর ৩য় ক্রমশক্তি থেকে ৩০ তম ক্রম শক্তি পর্যন্ত চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয়ে গেছে যে ইহা একটি মূল্যবান ঔষধ।
১। প্রদাহের দ্বিতীয় অবস্থায় বা কোন স্থান থেকে রসক্ষরণ হতে থাকলে ইহা অতি উত্তম কাজ করে। যত দূর জানা গেছে এতে কেলি হাইওয়েডের মত বিপদ ঘটে না। যদি একে কেলি হাইওয়েডের মত স্থূল মাত্রায় ব্যবহার করা হত তাহলে আমরা যা জানি তার চেয়েও অনেক বেশী অপকার হওয়ার সম্ভবনা ছিল। আমি দেখেছি যে তরুণ বাত রোগের পরবর্তী সন্ধির বিবৰ্ধনে মাঝে মাঝে অন্য ঔষধ দীর্ঘকাল বিফল হওয়ার পরে এই ঔষধের ক্রিয়ায় পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে, কিন্তু আমি একে ব্যবহারের জন্য এমন কোন প্রকৃতিগত লক্ষণ জানি না যা দ্বারা একে অন্য ঔষধের বদলে ব্যবহার করব।
২। টনসিলের প্রদাহে একোনাইট, বেলেডোনা বা ফেরাম ফস দ্বারা তরুণ প্রাদাহিক অবস্থা বোধ হলে কেলি মিউরের দরকার হয়। আমি একে ইউস্টেচিয়ান টিউবের প্রদাহে ও এর অবরোধের জন্য বধিরতার অত্যন্ত ফলপ্রদ হতে দেখেছি। একে আমি ৩য় বা ৬ষ্ঠ ক্রমে ব্যবহার করতে আরম্ভ করে ছিলাম কিন্তু পরে ২৪ ক্রমের দ্বারা অনেক বেশী উপকার পেয়েছি। তাছাড়া অনেকগুলি দুরারোগ্য পুরাতন বধিরতা যেগুলি এই ঔষধ আগে ব্যবহৃত হলেও আরোগ্য হতে পারত তা কিন্তু অন্য ঔষধে সারেনি।
এই প্রসঙ্গে মারকিউরিয়াস ডালসিস-এর উল্লেখ করা যেতে পারে কারণ মার্কারি জাতীয় ঔষধগুলির সম্বন্ধে লিখবার সময় ই উল্লেখ করা হয়নি। ইহাও ইউস্টেচিয়ান টিউবের পীড়ার একটি ঔষধ। অবশ্য এক্ষেত্রে পারদের অন্যান্য লক্ষণগুলিও পাওয়ার দরকার। আর তাহলেই দুটি ঔষধের মধ্যে একটিকে মনোনীত করা যাবে।
কেলি মিউর সম্ভবতঃ এর পরীক্ষা অপেক্ষা রুগ্নদেহী রোগীতে ব্যবহারের জন্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কাজে আসবে। একে তাই হেরিং বলতেন “আগে পাছা বের করে প্রসূত ঔষধ”। তবে এটি সম্ভব হলেও ইহা কিন্তু ঠিক বা স্বাভাবিক নহে।