হেলান দিলে বা চিত হয়ে শয়ন করলে সৃতিশক্তি ও মানসিক দক্ষতার উন্নতি হয়। |
স্নায়ুশূলের, আক্রমনের সময় বা পরে আক্রান্ত স্থানটি অসাড় হয়। |
ব্যথা চলে বেড়ায়, ব্যথা সাধারনত উপরের দিক হতে নীচের দিকে নামে, ব্যথার সহিত অসাড়তা, কখন কখন ব্যথা ঘার হতে মাথা ও মুখমন্ডলে বিস্তৃত হয়, চলাফেরা করলে ব্যথা বৃদ্ধি। |
নড়লে চড়লে মাথা ঘোরে। |
অল্প পরিশ্রম করলেই শ্বাসকষ্ট হয় (হ্রদরোগজনিত)। |
উপযোগিতা — নার্ভ-এর তরুণ ব্যথা, বাতযন্ত্রণা, গিটবাত জনিত অসুখে বিশেষত বাত ব্যাধিতে বা গিটবাতের উপসর্গে যখন হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে উপযোগী।
বাতব্যাধি হতে যে হৃৎপিন্ডের অসুখ হয়েছে বা হৃৎপিন্ডের অসুখ বাত রোগের সাথে পাল্টা পাল্টিভাবে প্রকাশ পায় সেক্ষেত্রে উপযোগী ।
যন্ত্রণা লক্ষণ — বিঁধে যাওয়া মত, ছুচালো কিছু বেঁধার মত, চেপে ধরার মত, তীর বেঁধা মত যা দেহের নীচের দিকে এগিয়ে যায় (ক্যাকটাস) (উপরদিকে ঠেলে ওঠে = লিডাম; ঐ সাথে বা ব্যথার পরে আক্রান্ত অঙ্গ অবশ অসাড় হয়ে যায় (একোন, ক্যামো, প্ল্যাটিনা)।
ডান চোখে ও চোখের গর্তে তীব্র ছুঁচফোটানো ব্যথা বা চোখে ঐরূপ— (স্পাইজে) । চোখের পেশীগুলো যেন শক্ত হয়ে যায়, চোখে ব্যথা—ঐ ব্যথা চোখ ঘুরালে বেড়ে যায় (স্পাইজে); ব্যথা সূর্য ওঠার সাথে সাথে বাড়ে, সূর্যাস্তের সাথে সাথে কমে (নেট-মি)।
বাত — ভীষণ যন্ত্রণা, হঠাৎ হঠাৎ স্থান পাল্টায়, এক সন্ধি হতে অন্য সন্ধি, যায়, সন্ধিস্থান গরম লাল হয়ে ফুলে যায় সামান্য নড়াচড়ায় যন্ত্রণা বেড়ে যায় ।
মাথা ঘোরা — সামনে ঝুঁকলে বা নীচের দিকে তাকালে মাথাঘোরা (স্পাইজে)।
নাড়ী দুর্বল হাতে অনুভব করা কঠিন (মিনিটে 35 থেকে 40 বার); মুখ ফ্যাকাসে ও হাত পা ঠান্ডা ।
সম্বন্ধ – বাতব্যাধি ও গিটবাতে লিডাম, পডো, স্পাইজের সদৃশ । হৃদরোগে স্পাইজেলিয়ার পর-এ ওষুধ ভাল ফল দেয় ।
শক্তি , ৩, ৬, ৩০ ।
এটি বাত রোগের একটি ঔষধ বিশেষ। বেদনা দ্রুতস্থান পরিবর্তন করে। বমি-বমিভাব ও ধীর গতির নাড়ী এই ঔষধের উপসর্গের সঙ্গে বর্তমান থাকে। হৃদপিন্ডের উপর সুস্পষ্ট কাজও আছে। সামান্য মাত্রায়, এটি হৃদস্পন্দনের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে; অধিক মাত্রায় এটি হৃদপিন্ডের কাজকে সংযত রাখে। স্নায়ুশূল, বেদনা তীর বেগে নীচের দিকে নেমে, তৎসহ অসাড়তা। লোকোমোটর অ্যাটেক্সিয়া রোগে তীব্র বেদনার অনুভূতি। বহুকালস্থায়ী এবং অবিরাম চলতে থাকা জ্বর, তৎসহ পেট ফাঁপা। পক্ষাঘাতের ন্যায় অনুভূতি এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাণী, প্রায় প্রতিটি উপসর্গের সঙ্গে বর্তমান থাকে। প্রস্রাবে অ্যালবিউমিনের উপস্থিতি।
মাথা — মাথাঘোরা; সামনের দিকে ঝুঁকলে বৃদ্ধি। মস্তিষ্কের বিভ্রান্তি। মাথার সামনের ও রগের দিকে বেদনা, এবং বেদনা মাথা থেকে ঘাড় ও দাঁত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়; হৃদপিন্ডের গোলযোগ থেকে রোগের উৎপত্তি।
চোখ – দৃষ্টিশক্তির কমে যাওয়ায়। চোখ ঘোরাবার সময়ে টেনে ধরার ন্যায়, আড়ষ্টতার ন্যায় অনুভূতি। কনিনীকার বাতজ প্রদাহ। স্কোলেরাইটিস, চোখের নড়াচড়ায় বেদনার বৃদ্ধি।
মুখমন্ডল — স্নায়ুশূল, ডানদিকে বৃদ্ধি। জিহ্বার সূঁচ ফোটার মত বেদনা। চোয়াল ও মুখমন্ডলের অস্থিতে সূচীবিদ্ধবৎ ও ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা।
পাকস্থলী – পাকস্থলীর উপরের অংশে উষ্ণতার ও সামান্য জ্বালার অনুভূতি। বমিবমিভাব; বমি। পাকস্থলীর উপরের অংশে বেদনা; সামনের দিকে ঝুঁকলে বৃদ্ধি; খাড়াভাবে বসে থাকলে উপশম। পিত্তের গোলযোগ জনিত কারণে উপসর্গসমূহ, তৎসহ বমিবমিভাব, মাথা ঘোরা ও মাথার বেদনা। মনে হয় যেন পাকস্থলীর উপরের অংশের নিচে কিছু দিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রস্রাব সংক্রান্ত যন্ত্রসমূহ-বারেবারে প্রস্রাব, তৎসহ কোমর প্রদেশে তীক্ষ বেদনা। স্কারলেট জ্বরের পরে নেফ্রাইটিস রোগ। হৃদপিন্ড-দুর্বল, ধীরগতি বিশিষ্টনাড়ী। (ডিজিট্যালিস; এপোসাইমক্যান)।বুক ধড়ফড় তৎসহউদ্বেগ। হৃদকম্প, সামনের দিকে ঝুঁকলে বৃদ্ধি। বাতজনিত রোগ যখন হৃদপিন্ডে স্থানান্তরিত হয়। নাড়ীর গতি স্বাভাবিক অবস্থার থেকে অনেক বেশি, তৎসহ বেদনা। (থাইরয়ডিনাম)। তামাক সেবনের কুফল থেকে হৃদপিন্ডের উপসর্গ সমূহ। শ্বাসকষ্ট এবং পাকাশয়ের উপরের অংশ থেকে হৃদপিন্ডে ধাক্কা মারার মত অনুভূত। তীক্ষ বেদনার ফলে শ্বাসরোধ হয়ে আসে। বুকের ভিতর দিয়ে হৃদপিন্ডের উপরের অংশ থেকে স্কন্ধাস্থি পর্যন্ত তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। নাড়ীর গতি দ্রুত। হৃদপিন্ডেরক্রিয়া কম্পনের মত, দ্রুত ও দেখতে পাওয়া যায়। হৃদপিন্ডের চারিধারে থেকে থেকে বেদনা বোধ।
স্ত্রীরোগ — মাসিক ধাতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে অথবা অবরুদ্ধ, তৎসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, পিঠে ও ঊরুস্থানের ভিতরের দিকে বেদনা। ঋতুস্রাবের পরে প্রদরস্রাব।
পিঠ — ঘাড় থেকে বেদনা নীচের দিকে বাহু পর্যন্ত নামে; পিঠের উপরের অংশের নিটি কশেরুকার স্থান থেকে বেদনা স্কন্ধাস্থি পর্যন্ত প্রসারিত হয়। বেদনা পিঠের নিচের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, মনে হয় যেন পিঠে ফেটে যাবে; কশেরুকার কোন-কোন অংশে জমে থাকা বেদনা। কাঁধের ভিতর দিয়ে বেদনা। কোমরের বেদনা, স্নায়বিক কারণে বেদনা।
অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ – কাঁধের ত্রিকোন পেশীর বাত রোগ, বিশেষকরে ডানদিকের। নিতম্ব স্থানে বেদনা, বেদনা হাঁটু ও পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রসারিত হয়। বেদনা অঙ্গগুলির অধিকাংশ স্থানেই হয়ে থাকে অথবা বাহুসন্ধিতে এবং দ্রুত চলাচল করে। দুর্বলতা, অসাড়তা, খোঁচামারার মত বেদনা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এবং শীতলতার অনুভূতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। আর স্নায়ু বরাবর বেদনা, বেদনা তর্জনীর উপর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। সন্ধিস্থান লালচে, উত্তপ্ত, স্ফীত। বাম বাহুতে সুড়সুড়ি ও অসাড়তা।
ঘুম — নিদ্রাহীনতা, খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে।
কমা–বাড়া–বৃদ্ধি – সামনের দিকে ঝুঁকলে (ক্যালিকার্বের বিপরীত); নীচের দিকে তাকালে; নড়াচড়ায়, মুক্ত বাতাসে।
সম্বন্ধ–তুলনীয় — ক্যালমিয়া (বাতজ কারণে স্নায়বিক মাথার যন্ত্রনায় খুব ভালো কাজ করে)।
স্পাইজেলিয়া ; পালসেটিলা।
পরিপুরক – বেঞ্জায়িক অ্যাসিড।
শক্তি – অরিষ্ট, থেকে ৬ষ্ঠ শক্তি।
যে-লক্ষণগুলি ধরিয়া এই ঔষধটির প্রয়োগ হয়, তাহা প্রধানতঃ পেশীতে, কন্ডরায়, সন্ধিস্থানে, স্নায়ুপথ বরাবর এবং বাতপ্রকৃতির রোগে আত্মপ্রকাশ করে। যন্ত্রণা স্থান পরিবর্তন করে ঘুরিয়া বেড়ায়, সঞ্চরণশীল যন্ত্রণা এবং সঞ্চালনে উহার বৃদ্ধি। তীব্র বেদনা কেন্দ্রস্থল হইতে হস্ত-পদাদির দিকে বিস্তৃত হয়, সঞ্চরণশীল বেদনা নীচের দিকে নামিতে থাকে, বাহুর উপর দিয়া নীচের দিকে যায়, পিঠ হইতে নীচের দিকে যায়, পা বহিয়া নীচের দিকে যায়। স্কন্ধ হইতে হস্তাঙ্গুলিতে যায়, নিতম্বদেশ হইতে পদাঙ্গুলি পৰ্য্যন্ত যায়। এই যন্ত্রণা সময়ে সময়ে বিদ্যুতের ন্যায় তীরবেগে যায়, আবার স্নায়ু বরাবর, সায়েটিক স্নায়ু বরাবর, জঙ্ঘাস্নায়ু বরাবর পায়ের ডিম পৰ্য্যন্ত ছিড়িয়া ফেলার ন্যায় অগ্রসর হয়। বাতগ্রস্ত ধাতুতে ঐ যন্ত্রণা মৃদু, ছিন্নকর, পিষিতে থাকার ন্যায়, চাপনের ন্যায় হইয়া থাকে, সঞ্চালনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং নিম্নাঙ্গ হইতে ঊর্ধ্বাঙ্গের দিকে উঠিতে থাকে। সঞ্চালনে যন্ত্রণা উপস্থিত হয় অথবা বর্তমান থাকিলে বর্ধিত হয়। মাথার যন্ত্রণা খুব গুরুতর হয়। উহা সচরাচর ঘাড়ের পশ্চাতে বা মাথার পশ্চাদ্ভাগে আরম্ভ হয় এবং মাথার শিখরদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। মাথার সম্মুখভাগেও যন্ত্রণা হয়, ঐ যন্ত্রণা এক বা দুই চক্ষুর উপর উপস্থিত হয়, উহা ছিন্নকর স্নায়ুশূলের ন্যায় যন্ত্রণা, উত্তাপে ও সঞ্চালনে বর্ধিত হয়।
যন্ত্রণা সূর্যের সঙ্গে আসে, সূর্যের সঙ্গে যায় অর্থাৎ উহা প্রাতে সূৰ্য্য উঠিলে আরম্ভ হয় এবং মধ্যাহ্ন পৰ্যন্ত বাড়িয়া চলে, তারপর ক্রমশঃ কমিতে থাকে এবং সূর্যাস্তের সময় অদৃশ্য হয়। নড়িতে-চড়িতে থাকিলে, এমনকি বসিয়া থাকিলেও, সে মানসিক কাৰ্য্য করিতে অক্ষম হইয়া পড়ে, কিন্তু যখন চিৎ হইয়া সম্পূর্ণ স্থিরভাবে শুইয়া থাকে, কোনরূপ অঙ্গচালনা করে না তখন মন ভালভাবে এবং পরিষ্কারভাবে কাৰ্য্য করে, কিন্তু সামান্যমাত্র সঞ্চালনে, এমনকি হাতখানি নাড়িলে, তাহার শিরোঘূর্ণন এবং মানসিক বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হয়। নড়িতে গেলে সে বিচলিত হইয়া পড়ে, অকর্মণ্য হইয়া পড়ে। আবার যন্ত্রণা রাত্রের প্রথমার্ধেও বর্ধিত হইতে পারে।
এই সকল লক্ষণের সহিত বাত হইতে উৎপন্ন হৃৎপিন্ডের রোগ থাকে। যে-পৰ্য্যন্ত না যান্ত্রিক রোগ, এমনকি হৃৎপিন্ডের এবং হৃৎকপাটিকার অতিবৃদ্ধি উপস্থিত হয়, সেই পৰ্যন্ত অবস্থাটির বৃদ্ধি পাইতে থাকে। এই ঔষধটি ঐরূপ অবস্থা আরোগ্য করিয়াছে। হৃৎস্পন্দন বামপার্শ্বে শুইলে অত্যন্ত প্রবল হয়, চিৎ হইয়া শুইয়া থাকিলে উপশমিত হয়, সময়ে সময়ে সোজা হইয়া বসিয়া থাকিলে উপশমিত হয়, সম্মুখদিকে অবনত হইলে বর্ধিত হয়। একমাত্র এই লক্ষণগুলিতেই এই ঔষধটি উপশম দিবার পক্ষে বিশেষ উপযোগী হইয়া থাকে। যে-সকল বাতরোগীর অভ্যন্তরে সিফিলিস থাকে, অর্থাৎ সিফিলিসজাত বাতরোগ, ক্রমশঃ অগ্রসর হইয়া শেষ পর্যন্ত হৃৎপিন্ডকে আক্রমণ করিলে এবং হৃৎকপাটিকাগুলিকে পুরু করিয়া তুলিলে ইহা উপযোগী হয়। হৃৎপিন্ডের ভিতর দিয়া তীরবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, বুকে যন্ত্রণা, সবিরাম নাড়ী, নাড়ীর স্পন্দন যখন তখন উল্লম্ফনশীল হইয়া উঠে। হয় ধমনীপ্রণালী, নচেৎ শিরাপ্রণালী অথবা হৃৎকপাটিকাগুলি অথবা দুই-ই আক্রান্ত হইতে পারে। যে-কোন প্রকারের পরিশ্রমে শ্বাসকৃচ্ছ্বতা, হৃৎপিন্ডসংক্রান্ত শ্বাসকৃচ্ছ্রতা। তুমি ঐরূপ রোগের জন্য এই ঔষধটি ব্যবহার করিতে পার। ইহা সিফিলিসজাত পুরাতন বাতরোগের তলদেশ পর্যন্ত প্রবেশ করে এবং সিফিলিসের পরিণামে উৎপন্ন বহু হৃৎরোগ ইহা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। যদি যন্ত্রণা একস্থান হইতে অন্যস্থানে সঞ্চরণ করে, যদি উহা উধ্বদিক হইতে নিম্নদিকে যায়, যদি উহা স্কন্ধ হইতে নীচে হস্তাঙ্গুলির দিকে অথবা নিতম্বদেশ হইতে পায়ের পাতার দিকে, অথবা মেরুদন্ড বহিয়া নিম্নদিকে যায়, তাহা হইলে তোমরা এই ঔষধটির প্রয়োগে বিশেষভাবে পরিচালিত হইবে। ইহা পুরাতন গণোরিয়াজাত বাতরোগীর পক্ষে লক্ষণ মিলিলে উপযোগী।
সামান্য সঞ্চালনে, সামান্যমাত্র চেষ্টায় বা পরিশ্রমে শিরোঘূর্ণন উপস্থিত হয় এবং উহা রক্তসঞ্চালনের গোলযোগ হইতেই হইয়া থাকে। হৃৎপিন্ড সামান্যমাত্র পরিশ্রমেও এতই অনুভূতিপ্রবণ থাকে যে, সামান্য সঞ্চালনেও মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালনের গোলযোগ উপস্থিত হয়। “অৰ্ধশায়িত অবস্থায় মানসিক বৃত্তিগুলি এবং স্মৃতিশক্তি অবিকৃত থাকে, কিন্তু নড়িতে চেষ্টা করিলেই শিরোঘূর্ণন উপস্থিত হয়।” রোগী যদি জোর করিয়া নড়িতে চেষ্টা করে, তাহা হইলে বমি-বমিভাব ও বমন উপস্থিত হয়। ইহাতে হৃৎস্পন্দন আছে, ঐ স্পন্দনে সমস্ত দেহ কাপিতে থাকে, উহা অতি প্রবল এবং দূর হইতে কানে শুনা যায় । সে বামপার্শ্বে শুইতে পারে না। চিনি চাচু ইহা হৃদরোগের সহিত সংশ্লিষ্ট, পুনঃপুনঃ সঙ্টিত পুরাতন শিরঃপীড়ায় উপযোগী। শিরঃপীড়া প্রত্যহ সূর্যোদয়ে উপস্থিত হয়, কিন্তু যদি দিনটি মেঘলা থাকে, তাহা হইলে উহা আসে না। সূর্যের আলোকে, সূৰ্য্যকিরণের বর্ধনশীল দীপ্তিতে তাহার রোগলক্ষণের বৃদ্ধি হয়।
এইসবের সহিত আবার আবেশে আবেশে আগত যন্ত্রণা আছে, উহা রাত্রিকালে উপস্থিত হয়। অস্থিবেদনা, পায়ের বৃহৎ অস্থিতে যেন অস্থিবেষ্ট ছিড়িয়া ফেলিতেছে, এরূপ যন্ত্রণা, ঐ বেদনা রাত্রিকালে উপস্থিত হয়, রাত্রির প্রথমার্ধে উপস্থিত হয়। সিফিলিসের যন্ত্রণা যে রাত্রিকালে বাড়ে তাহা বিশেষভাবে জানা আছে। ইহা এন্টি-সোরিক, এন্টি-সাইকোটিক এবং এন্টিসিফিলিটিক, সুতরাং লক্ষণ মিলিলে এই ত্রিদোষের যে-কোনটি সম্বন্ধে ইহা নির্বাচিত হইতে পারে। মস্তিষ্কবেষ্টে যন্ত্রণা, শরীরের উপরিভাগের নিকটবর্তী হাড়গুলিতে যন্ত্রণা। রাত্রিকালে শুইলে যন্ত্রণা গুরুতর হয় এবং সারারাত্রি চলিতে থাকে। এই রাত্রিকালীন বৃদ্ধি সিফিলিস দোষনাশক ঔষধগুলির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত থাকে। ইহা হিপার ও ‘মার্কিউরিয়াসে’ আছে; কিন্তু সিফিলিস বা সিফিলিস ধাতুদোষ অথবা সিফিলিসজাত রোগে উহা যত স্পষ্টভাবে প্রকাশিত দেখা যায়—ঔষধগুলির কোনটির মধ্যেই তত স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। সিফিলিসে বৃদ্ধি-লক্ষণ সূর্যাস্তের সাথে সাথেই উপস্থিত হয়। ইহা মানুষের পক্ষে রাত্রিকালে ক্ষতি করে এমন একটি শক্র। সাইকোসিস ধাতুদোষের অনেক উপদ্ৰব দিনের সহিত সম্বন্ধযুক্ত, ইহার যন্ত্রণা সূর্যোদয় হইতে সূৰ্যাস্ত পর্যন্ত হইয়া থাকে। ঔষধগুলির মধ্যেও ঐরূপ অদ্ভুত খেয়ালিভাব আছে। আমরা যেরূপভাবে মানব চরিত্র অধ্যয়ন করি, ঔষধগুলিকে সেইভাবেই পড়িতে হইবে। অনেকগুলি ঔষধই খেয়ালিভাবাপন্ন এবং ঐ খেয়ালি, অদ্ভুত এবং আশ্চৰ্য্য বিষয়গুলি জানিবার পরে আমরা ঔষধটির প্রকৃতি নির্দেশ করিতে পারি। যখন আমরা ঐ বিশেষত্বগুলি জানিতে পারি, তখনই বুঝি যে, ঔষধটি কিরূপ অবস্থায় সর্বোৎকৃষ্টভাবে কাৰ্য্য করিবে।
মূত্রপিন্ডের রোগ আছে। সকল যন্ত্রই, বিশেষতঃ হৃৎপিন্ডের ও মূত্রপিন্ড পরস্পর সম্বন্ধবিশিষ্ট। মূত্রপিন্ড যখন ভাল কাজ করে না, তখন প্রায়ই হৃদপিন্ডের উপদ্রব উপস্থিত হয়। সকলপ্রকার ব্রাইটাখ্য রোগের সহিত সবসময়েই হৃদপিন্ডের গোলযোগ থাকে। অন্ডলালা মূত্রের সহিত শ্বাসকষ্ট এবং কষ্টকর হৃদক্রিয়া থাকে। ইহাতে শ্বাসকষ্টের উপশম দিবে। আবার, মূত্রপিন্ড রোগের সহিত নানাপ্রকার চক্ষুরোগ, দৃষ্টিসংক্রান্ত ক্লেশ থাকে এবং উহাতেও এই ঔষধটি বিশেষভাবে উপযোগী হয়। গর্ভকালীন দৃষ্টিশক্তির গোলযোগবিশিষ্ট ব্রাইটাখ্য রোগে প্রায়ই ইহার প্রয়োজন হয়। গর্ভকালে মূত্রপিন্ডের রোগ এবং এলবুমেনযুক্ত মূত্ররোগে চক্ষুর যন্ত্রণা, সূচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর যন্ত্রণায় ক্যালমিয়ার প্রয়োজন হয়। এই ঔষধটি স্নায়ুশূলে উপযোগী, চক্ষের স্নায়ুশূল, মুখমন্ডরের স্নায়ুশূল, মুখমন্ডলে তীব্র ছিন্নকর যন্ত্রণা। সময়ে সময়ে উহা রাত্রিকালে বৃদ্ধিযুক্ত হয়, আবার সময়ে সময়ে দিবাভাগেও বাড়ে। দিবাভাগের বৃদ্ধি সূর্যোদয়ে উপস্থিত হয়, সূর্যাস্তে চলিয়া যায়। রাত্রিকালীন বৃদ্ধি শুইলেই আরম্ভ হয়। হৃৎপিন্ডের বাতের সহিত “মুখভাবের উৎকণ্ঠাপূর্ণ অভিব্যক্তি”। “শিরোঘূর্ণনের সহিত মুখমন্ডলে উত্তাপের ঝলক।”
ইন্দ্রবিদ্ধাসদৃশ উদ্ভেদের বিলোপের পর, যে-স্থানে উদ্ভেদটি ছিল সেইস্থানে যে-সকল স্নায়ু রক্তরসাদি যোগান দেয়, তাহাদের ভীষণ স্নায়ুশূল, তীরবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর যাতনা। যখন কটিদদ্র, দাদ, শীতল ক্ষত বা পৃথক পৃথক্ ফুস্কুড়ির ন্যায় উদ্ভেদ অদৃশ্য হয়, তখন ঐস্থানে কোন আঘাতাদি লাগায়, বিসদৃশ চিকিৎসার ফলে অথবা ঠান্ডা লাগায় তীব্র স্নায়ুশূল উপস্থিত হয় এবং পুনরায় উদ্ভেদ প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলিতে থাকে। লক্ষণ মিলিলে অথবা যখন সমগ্র রোগটির সহিত ঔষধটির সাদৃশ্য থাকে, তখন এই ঔষধটি উপযোগী হয়। যখন এই ঔষধটি সর্বাপেক্ষা উপযোগী হয়, তখন যন্ত্রণাটি থাকে সূচীবিদ্ধবৎ এবং ছিন্নকর, অত্যন্ত তীব্র, সময়ে সময়ে কাটিতে থাকার মত, তীরবিদ্ধ হওয়ার মত। যন্ত্রণাটি একটি স্নায়ুকে আক্রমণ করে এবং অনেক মিনিট ধরিয়া ঐস্থানেই থাকিয়া যায়, উহা ভীষণভাবে আসে, অকস্মাৎ আসে এবং অকস্মাৎ ছাড়িয়া যায়। হাতে পায়েও ঐ একই রকমের, যেন স্নায়ুগুলিকে চিমটাইয়া ধরিতেছে অথবা টুকরা টুকরা করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিতেছে, এরূপ যন্ত্রণা উপস্থিত হয়। রোগী বলে, “এই যন্ত্রণাটি চলিয়া গেল!” আবার খুব শীঘ্রই তোমরা দেখিবে যে, রোগীর মুখমন্ডল ভীষণ যন্ত্রণাব্যঞ্জক হইয়া উঠিল। আবার যন্ত্রণাটি ঐস্থানে আসে, সে একটি পেশীও নাড়াইতে পারে না এবং আবার বলিয়া উঠে, “ঐ চলিয়া গেল!” বেদনাটি কয়েক মিনিটের জন্য অথবা সময়ে সময়ে কয়েক ঘন্টার জন্য ছাড়িয়া যায়।
হৃদপিন্ডেরও অনেকগুলি লক্ষণ আছে, উহাদিগকে জানা প্রয়োজন। “হৃদপিন্ডের মধ্যে পতপত করা, হৃদস্পন্দন।” “শুইয়া পড়ার পর গলা পর্যন্ত হৃদস্পন্দন, সর্বাঙ্গে কম্পন।” অত্যন্ত ধীর নাড়ী। আমার একটি রোগীর, একটি উপদংশগ্রস্ত পুরাতন রোগীর কথা মনে পড়ে, তাহাকে পাঁচজনে বলিয়াছিল যে, তাহার হৃদকপাটিকা এতই খারাপভাবে আক্রান্ত হইয়াছে যে, যদি সে কখনও জোরে নড়াচড়া করে, তাহা হইলে সে মরিয়া যাইবে । হৃদকপ্রাটিকার যতপ্রকার শব্দ হওয়া সম্ভব, তাহার সেইরূপ সকলপ্রকার শব্দই হইত। সে দীর্ঘদিন ধরিয়া ভুগিতেছিল এবং অধিকমাত্রায় বহুবার মার্কারি’ সেবন করিয়াছিল, তাহার সিফিলিসজাত অবস্থা যথেষ্ট পরিমাণে চাপা পড়িয়াছিল এবং অবশেষে সকল উপসর্গই হৃদপিন্ডকে আশ্রয় করিয়াছিল। কয়েক মাসের মধ্যে ক্যালমিয়া তাহার সর্বপ্রকার শ্বাসকষ্ট এবং হৃদস্পন্দন দূর করিয়াছিল; লক্ষণগুলি স্পষ্টভাবে ফিরিয়া আসিতে দুই বৎসর কাটিয়া গিয়াছিল; এবং তারপর পুনরায় ঔষধ প্রয়োগে তাহার সুস্থ অবস্থা দেখা দিয়াছিল, সুতরাং তাহার আর ঔষধের আবশ্যক হয় নাই। ইহা হইতে বুঝা যায় যে, ক্যামিয়া কিরূপ দীর্ঘক্রিয় ঔষধ, উহা কত দীর্ঘকাল কাজ করিতে পারে এবং কিরূপ অদ্ভুত পরিবর্তন সাধন করিতে পারে। এইরূপ ক্রিয়া করিবার জন্য, ঔষধের জীবনের গভীরে প্রবেশ করিবার শক্তি থাকা চাই।
“হৃদপিন্ডপ্রদেশে সঞ্চরণশীল বাতের বেদনা।” “গ্রন্থির বাত বাহ্যপ্রয়োগ দ্বারা চিকিৎসিত হইলে এবং হৃদপিন্ডের লক্ষণ দেখা দিলে প্রযোজ্য।” নিম্নঙ্গ হইতে ঊর্ধ্বাঙ্গের দিকে সঞ্চরণ করে, এরূপ বাত। সচরাচর তোমরা, এইরূপ অবস্থা দেখিতে পাইবে। যে সকল মালিশ-প্রিয় লোকেরা তীব্র মালিশ এবং তাহার ফলে প্রচুর আকর্ষণী শক্তি লইয়া রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়ায়, তাহাদের জানুসন্ধি হইতে বাত প্রায়ই সরিয়া যায় এবং যখন ঐরূপ হয়, তখন প্রায়ই হৃদপিন্ডটি কষ্টভোগকারী যন্ত্র হইয়া পড়ে। এইরূপ অবস্থায় ক্যালমিয়া, অরম’, ব্রায়োনিয়া’, ‘রাস টক্স, লিডাম’, ‘ক্যাল্কেরিয়া এবং এব্রোটেনাম এবং সময়ে সময়ে ক্যাক্টাস’ হৃদপিন্ডের ঐ প্রকার রোগের উপযোগী ঔষধ বলিয়া প্রমাণিত হয়। এই প্রকারে বাতরোগ তাড়াইয়া দেওয়া হয়, উহাদিগকে আরোগ্য না করিয়া স্থান পরিবর্তন করান হয়। সাধারণ লোকে বুঝে না যে, কেবলমাত্র লক্ষণগুলিকে দূর করার বিপদ কি? যখনই কোন রোগ আরোগ্যনীতির বিপরীতভাবে সরাইয়া দেওয়া হয়, তখনই উহা মনুষ্যদেহের কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ হৃদপিন্ড বা মস্তিষ্ককে আক্রমণ করে। মালিশ করা একটি সাজ্জাতিক জিনিষ । যদি তোমাদিগকে কেহ মিনতি করিয়া জিজ্ঞাসা করে, “ডাক্তার, এই জিনিষটি মালিশ করিলে আমার কি অনিষ্ট হইবে?” তোমরা উত্তর দিও, “যদি মালিশ করিলে তোমার লক্ষণগুলির পরিবর্তন না ঘটে, তাহা হইলে কোন অনিষ্ট হইবে না ।” মালিশে যে-পরিমাণে লক্ষণগুলি কমিয়া যায় বা উপশমিত হয়, উহাতে ঠিক সেই পরিমাণে রোগীর ক্ষতি হয়, কারণ উহা দ্বারা সমগ্র বিধানপ্রণালী দুর্বল হইতে থাকে। এমন অনেক ক্ষেত্রে আছে, যাহাতে মালিশ উপকারী কিন্তু বাতে নহে। পক্ষাঘাতিক পেশীর পক্ষে উহা একপ্রকার উপকারী পরিশ্রম, কারণ ঐ ক্ষেত্রে উহা রোগীর নিজের ও তাহার পেশীর পরিশ্রমের কাজ করে। কিন্তু বেদনা কমানর জন্য মালিশের ব্যবহার চলিতে পারে না। উহাতে যত আরাম হয়, রোগীরও ততই ক্ষতি হয়। ফসফরাসে’র রোগীর মালিশ করিলে যেরূপ আশ্চৰ্য্য উপশম পায়, তাহা দেখিলে তোমরা বিস্মিত হইবে। কিন্তু ফসফরাসের রোগী অপেক্ষা জীবনীশক্তি সম্বন্ধে এবং আভ্যন্তরিক বিধান সম্বন্ধে অধিকতর দুর্বল হওয়ার প্রবণতাযুক্ত লোক আর নাই। সে উত্তেজনাপ্রবণ, দুর্বল রোগী এবং সেইজন্য ঘর্ষণ করিলে ভাল বোধ করে এবং উহা চায়, কিন্তু যদি তাহার হাঁটুর বাত থাকে এবং হাঁটুর মালিশ করা হয়, তাহা হইলে বাত হৃদপিন্ডে চলিয়া যাইতে পারে। ফসের রোগী মালিশ করা ভালবাসে, কারণ মালিশে তাহার লক্ষণগুলি উপশম হয়; সে চুম্বক শক্তিযুক্ত হইতে ভালবাসে।
“সকল অঙ্গেরই ক্লান্তি, সকলপ্রকার পরিশ্রম এড়াইয়া চলে।” “স্নায়ুশূলের সহিত দুর্বলতা একটি সাধারণ লক্ষণ।” এই দুর্বলতা এমন একটি লক্ষণ, যাহা তোমরা অনেক কিছু হইতেই পাইতে পার। যখন গুরুতর যন্ত্রণা শারীরবিধানকে দুর্বল করিয়া ফেলে, তখন হৃদরোগেরও আশঙ্কা দেখা দেয়। হিপারে আমরা সর্বাঙ্গীণ দুর্বলতা, সূতিকা অবস্থার পর বা যন্ত্রণার পর দীর্ঘকাল স্থায়ী দুর্বলতা দেখি, কিন্তু ঐরূপ দুর্বলতার সহিত, যন্ত্রণাটি আক্রান্ত অঙ্গ ছাড়িয়া হৃদপিন্ডে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগী সম্পূর্ণভাবে অবসন্ন এবং বরাবর শ্রান্ত থাকে।
পাঠ্যপুস্তকে ইহার প্রতিবিষ হিসাবে কেবলমাত্র ‘একোনাইট’ ও ‘বেলেডোনার নাম করা হইয়াছে। স্পাইজেলিয়া’ এই ঔষধটির পর খুব ভাল খাটে এবং ইহার প্রতিবিষও বটে। “বেঞ্জয়িক এসিড’ ইহার একটি স্বাভাবিক অনুপূরক ঔষধ। ক্যাল্কেরিয়া’, ‘লিথি কাৰ্ব্ব, ‘লাইকো’, ‘নেট্রাম মিউর’ এবং ‘পালস’–এই ঔষধগুলি ইহার সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত এবং তুলনা করিয়া দেখার যোগ্য।
* অপর নাম – আমেরিকান বা ব্রড–লিভিড লরেল (American or Broad-Leaved Laurel)
মাউন্টেন লরেল (Mountain Laurel) ইহা ইরিকেসী জাতীয় উদ্ভিদ। এর সরস পাতা থেকে মূলঅরিস্ট তৈরী হয়।
১। হৃৎরোগ।
ক্যালমিয়ার প্রথমেই বলে রাখি, ইহা কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতে স্পাইজিলিয়ার অনুরূপ এবং ডাঃ হেরিং বলেছেন হৃৎপিণ্ডের রোগে পাইজিলিয়ার পর ক্যালমিয়া ভাল খাটে।
* পার্থক্য
উভয় ঔষধের মুখমণ্ডলে তীব্র স্নায়ুশূল বেদনা আছে কিন্তু ক্যালমিয়া উহা প্রায়ই ডানদিকে এবং স্পাইজিলিয়া বাঁদিকে হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রেই চাখে বেদনা আছে এবং চোখ ঘোরালে কষ্ট বাড়ে কিন্তু ক্যালমিয়ায় একপ্রকার আড়স্ট ভাব (sense of stiffness) আছে (বাসটাক্স, নেট্টামমিউর, পাইজিলিয়ার); মনে হয় চক্ষুগোলক যেন চক্ষুকোঠরের চেয়ে বড় এরূপ বেদনা ভাব থাকে। ক্যালমিয়া ও স্পাইজিলিয়া উভয় ঔষধই হৃৎপিণ্ডের উপর ক্রিয়া। বিশেষ করে বাতজনিত হৃৎপিণ্ডের উপদ্রবেই এরা ব্যবহৃত হয়। এই দুটি ঔষধেই প্রবল, দৃশ্যমান ও বিশৃঙ্খল হৃৎক্রিয়া জন্মে তবে স্পাইজিলিয়াতে উহা পরিবর্তনীয় ভাবে বিদ্যমান থাকে, ক্যালমিয়াতে কিন্তু কখন কখন ডিজিটেলিসের মত নাড়ীর গতি অতিশয় ধীর গতিতে চলে।
২। বাত
ক্যালমিয়ার বাত ক্যাকটাসের মত উপর থেকে নীচের দিকে যায়। (লিডামে নীচের দিক উপরে ওঠে) আর এর বেদনা সহসা স্থান পরিবর্তন করে। আমরা যদি কোন স্থান পরিবর্তনশীল বাতের চিকিৎসা করতে যাই তাহলে রোগীর হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে হলে আমরা পালসেটিলার পূর্বে ক্যালমিয়াই ব্যবস্থা করব। অবশ্য এক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণও বিবেচনা করতে হবে। ক্যালমিয়ার বেদনা প্রায়ই উপর থেকে নীচের দিকে বাঁ-হাত পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয় (রাসটাক্স)।
৩। স্নায়ুবেদনা
ক্যালমিয়ার স্নায়বিক লক্ষণে স্পাইজিলিয়ার লক্ষণের সঙ্গে বেশী মিল নেই। তবে উভয় ঔষধেই উহারা মুখমণ্ডলে অবস্থিত থাকে এবং অতি প্রবল হয়ে দেখা দেয়। আক্রমণের পাশ ও সময় বিভিন্ন। ক্যালমিয়ার বেদনা স্পাইজিলিয়ার বেদনার মত প্রায় কখনই সারা মাথা জুড়ে থাকে না। হেরিং বলেছে “স্নায়ুশূলে দুৰ্ব্বলতাই ক্যালমিয়ার সর্বাঙ্গীন লক্ষণ”। ক্যালমিয়ার স্নায়ুশূলে প্রায় আক্রান্ত স্থানে অবশতা (অসাড়তা) (numbness) থাকে। এই লক্ষণে ইহা একোনাইট, ক্যামোমিলা, ন্যাফালিয়াম ও প্লাটিনার সদৃশ।
মন্তব্য :
একই প্রদেশে বা একই যন্ত্রের সঙ্গে যে সব ঔষধ সম্বন্ধ যুক্ত তাদের লক্ষণগুলি পাঠ করলে, ও সাদৃশ্য ও বৈশাদৃশ্য ভালরূপে নিরূপণ করতে পারলেই হোমিওপ্যাথি ঔষধের প্রকৃত ও দক্ষ ব্যবস্থাপক হওয়া যায়। অন্য কোন পরিশ্রমেই এত ভাল ফল হয় না।