ল্যাক ক্যানাইনাম LAC-CANINUM [Lac-c]

অত্যন্ত সংবেদনশীল ও আত্মমর্যাদার অভাব, রক্ত গরম।
দৃঢ় ধারণা বা কল্পনার বশীভূত হয়ে ভয়।
রোগের পার্শ্ব পরিবর্তন করার প্রবনতা।
সাপের ভয়, কল্পনায় সাপ দেখে, পিঠে সাপ আছে এরকম মনে হয়।
নাকটা যেন নিজের নয় এরুপ মনে হয়।
একদিন সকালে আবার পরের দিন বিকালে বৃদ্ধি।
লবন, কড়া খাদ্য ও গরম পানীয়ের প্রতি আগ্রহ।

উপযোগিতা – স্নায়বিক, অস্থির ও অত্যন্ত অনুভূতিসম্পন্ন প্রকৃতির। রোগীতে এ ওষুধ উপযোগী ।

রোগ লক্ষণ পরিবর্তিত হয় — ব্যথা যন্ত্রণা এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে সরে সরে বেড়ায় (কেলি-বাই, পালস); রোগলক্ষণ কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন বাদে বাদে একদিক হতে অন্যদিকে সরে বেড়ায় ।

ভীষণ ভুলোমন, অন্যমনস্ক—দোকানে জিনিষ কিনে দোকানেই ফেলে চলে আসে (এগ্নাস, এ্যানাকার্ডি, কষ্টি, নেট-মি) ।

লিখতে গেলে অযথা বেশী লেখে, প্রয়োজনীয় কথাটি বাদ পড়ে যায়— লিখতে গেলে শেষ শব্দটি বা অনেক শব্দ বাদ পড়ে যায়—পড়াশোনায় মনোসংযোগ করতে পারে না ভীষণ নার্ভাস (স্নায়ুদৌর্বল্য হেতু) (বোভিষ্টা, গ্র্যাফা, ল্যাকে, নেট-কা, সিপিয়া]।

আশাশূন্য, হতাশ-মনে করে তার রোগ সারবে না, মনে করে কোন জীবিত বন্ধু নেই, বেঁচে থাকা অর্থহীন, যে কোন মুহূর্তে কেঁদে ওঠে (এ্যাকটিয়া রেসি, অরামমেট, ক্যাল্কে-কা, ল্যাকে)।

শিশুরোগী, খিটখিটে, সব সময়ই চেঁচায় ও কাঁদে বিশেষতঃ রাতের দিকে (জ্যালাপা, নাক্স-ভ, সোরিন)। ভয় — একা থাকতে ভয়, (কেলি-কা), মরে যাবে এই ভয় (আর্স); পাগল হয়ে যাবে এই ভয় (লিলি-টি); সিঁড়ি হতে নীচে পড়ে যাবার ভয় (বোরাক্স)।

বহুদিন থেকেই হতাশাগ্রস্ত চারিদিকেই যেন অন্ধকার, এত অন্ধকার যেন আর নেই এতটাই আশা শূন্য (লাইকো, পাল) ।

সামান্য উত্তেজনায় রেগে যায়, অভিশাপ দিতে থাকে, দিব্যি (শপথ) কাটে (লিলি-টি, এসি-নাই)—অত্যন্ত কুৎসিত আচরণ দেখে ঘৃণা হয় ।

সর্দি – সাদা, ঘন শ্লেষ্মা বার হয় ।

সর্দিতে এক নাক বন্ধ অন্যটি হতে শ্লেষ্মাস্রাব হয়—পাল্টাপাল্টি করে এই অবস্থা এক নাক হতে অন্য নাকে হয়—স্রাবে হেজে যায়, নাক ও ঠোঁটে ঘা হয় (অরাম, সিপা) ।

ডিপথেরিয়া ও টনসিলাইটিস হলে লক্ষণগুলো অবিরত দিক পরিবর্তন করে । গলায় ঘা ও কাশি ঋতুস্রাবের সাথে সাথে শুরু হয় ও কমে যায়—গলায় হলদে ও সাদা রঙের আবরণ পড়ে, ব্যথা কান অবধি ধেয়ে যায় । গলা — বাইরে থেকেও ছোয়া লাগান যায় না (ল্যাকে); শূন্য গলাধঃকরণে ব্যথা বাড়ে (ইগ্নে), বারে বারে ঢোক গিলতে চায়। ঢোক গিলতে কষ্ট হয় প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে (মার্ক); গলার ব্যথা কান অবধি ধেয়ে যায় (হিপার, কেলি-বাই); বাঁদিকে রোগের শুরু (ল্যাকে)। ডিপথেরিয়া রোগে গলায় জমা পর্দা, সিফিলিস হতে ঘা ও অন্যান্য ঘায়ের আকৃতি উজ্জ্বল ও চকচকে।

ক্ষিধে খুব বেশী যথেষ্ট খেয়েও তৃপ্তি হয় না, আহারের আগেও যেমন ক্ষুধার্ত, আহারের পরও ততটাই ক্ষুধার্তবোধ (ক্যাস্কা, ক্যাল্কে, সিনা, লাইকো, ষ্টন্সিয়া) ।

ওপর পেটে খালি খালি বোধ পাকস্থলীতে মূর্চ্ছাবোধ ।

ঋতুস্রাব –  নির্দিষ্ট সময়ের আগে, পরিমাণে প্রচুর-উজ্জ্বল লাল, আঠালো, দড়ির মত, রক্ত দমকে দমকে বার হয় (ঘন, কালচে দড়ির মত = ক্রোকাস) । ঋতুর আগে ও ঐ সময় স্তন দুটো ফোলে, যন্ত্রণা হয়, ছোঁয়া যায় না (কোনি)। যোনিপথে বায়ু বার হয় (ব্রোমি, লাইকো, নাক্স-ভ, স্যাঙ্গুনে) ।

স্তন – প্রদাহিত, যন্ত্রণা হয়—সামান্য ঝাঁকি লাগলে ও সন্ধ্যার দিকে ব্যথা বাড়ে-সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে বা নীচে নামতে গেলে হাত দিয়ে শক্ত করে স্তন দুটো চেপে ধরতে হয় (ব্রায়ো)। স্তনের দুধ শুকিয়ে দিতে যেকোন ক্ষেত্রে এ ওষুধ উপযোগী-(আসাফো) [স্তনের দুধ ফিরিয়ে আনতে বা বাড়িয়ে দিতে = ল্যাক-ডি]।

শুয়ে থাকলে মনে হয় যেন শ্বাসবন্ধ হয়ে যাবে—উঠে বসতে বা হেঁটে বেড়াতে বাধ্য হয় (এমন-কা, গ্রিন্ডেলিয়া, ল্যাকে)।

কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই স্তন দানের সময় স্তনের দুধ লোপ পেলে এ ওষুধ উপযোগী (আসাফো)। বা কাতে শুলে প্রচন্ড বুক ধড়ফড় করে ডান কাতে ফিরে শুলে বুক ধড় ফড়ানি কমে যায় (ট্যাবাকা)।

ছোঁয়া লেগে, বসলে বা হাঁটার সময় জননেন্দ্রিয়ে সামান্য ঘষা লাগলেই কামো উত্তেজনা হয় (সিনামোন, কফি, মিউরেক্স, প্ল্যাটি-না)। হাঁটার সময় মনে হয় বাতাসে ভর দিয়ে হাঁটছে, শুলে মনে হয় দেহ যেন বিছানা ছুঁতে পারছে না (আসারাম)।

পিঠে ব্যথা—তীব্র, অসহ্য, স্যাক্লামের ওপরদিকে আড়াআড়িভাবে ডান নিতম্ব ও ডান সায়াটিক নার্ভ অবধি ব্যথা বেড়ে যায়—ঐ ব্যথা বিশ্রামে ও প্রথম সঞ্চালনে বেড়ে যায় (রাস-ট) সম্পূর্ণ মেরুদন্ডে মস্তিষ্ক হতে ককসিক্স অবধি ব্যথা, ছোয়া লাগান বা চাপ দেওয়া যায় না (চিনি-সা, ফস, জিঙ্কাম)।

সম্বন্ধ — এপিস, কোনি, মিউরেক্স, ল্যাকে, কেলি-বা, পালস্, সিপিয়া ও সালফ-এর সদৃশ। একমাত্রাতেই ভাল কাজ করে ।

সম্ভবতঃ মেটেরিয়া মেডিকাতে অন্য কোন ওষুধ নেই যা গলার লক্ষণ সম্বন্ধে এরকম মূল্যবান রোগনির্দেশ করেছে বা ভালভাবে পড়লে এর চেয়েও উৎকৃষ্ট ফল পাওয়া যাবে ।

ল্যাকেসিস-এর মত এই ওষুধের ব্যবহার কালে কুসংস্কার ও অজ্ঞতার জন্য বাধার সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু এর অপূর্ব রোগ নিরাময়কারী শক্তি ধীরে ধীরে এই বাধা দূর করেছে। প্রাচীনকালে ডঃ ডায়োস্কোরাইড, প্রিনী সেক্সটাস প্রমুখ ।

ডাক্তারগণ ব্যবহার করেছেন ও পরে নিউইয়র্ক শহরের ডঃ রেইজিগ এর পূর্ণ ব্যবহার করেন । ডঃ বেয়ার্ড, ডঃ রেইজিগ সর্বপ্রথম এই ওষুধ শক্তিকৃত করেন ।

শক্তি ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি, ০/১ হতে ০/৩০ শক্তি ।

এই ঔষধটি কয়েক প্রকারের গলক্ষত, ডিথিরিয়া এবং বাত রোগের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে যথেষ্ট মূল্যবান। পাশাপাশি ঔষধটি দুর্বল জীবনীশক্তি বিশিষ্ট, জ্বর বিহীণ রোগে নির্দেশিত হয়। এই ঔষধের একটি সিদ্ধিপ্রদ লক্ষণ হল, স্থান পরিবর্তনশীল বেদনা ও পর্যায়ক্রমে রোগ শরীরের একদিক থেকে অপর দিকে স্থান পরিবর্তন করে। রোগী মনে হয় সে যেন

বাতাসের মধ্যে হাঁটাচলা করছে অথবা শোবার সময় মনে হয় যেন সে বিছানা স্পর্শ করে নেই। প্রচন্ড দুর্বলতা। নাকে পচাক্ষত। যে সকল স্ত্রীলোক শিশুকে কোন কারণে স্তনের দুধ পান করাতে পারে না, তাদের স্তনের দুধ শুকিয়ে ফেলতে এই ঔষধটি নিঃসন্দেহে কার্যকরী হয়ে থাকে। প্রচন্ড দুর্বলতা ও অবসন্নতা। প্রতিদিন সকালে থেকে-থেকে অবসন্নভাব প্রকাশ পায়। স্তন গ্রন্থির প্রদাহ।

মন – অত্যন্ত বিস্মৃতি প্রবণ ; লেখার সময়, ভুল হয়ে যায়,

হতাশা ; রোগী মনে করে তার রোগ দুরারোগ্য। প্রচন্ড রাগের প্রকাশ। সাপসমূহ দেখে। রোগী মনে করে তার জীবনের সামান্য সার্থকতা নেই।

মাথা – বাতাসে হাঁটা-চলা করা বা ভেসে বেড়ানোর মত অনুভূতি (ষ্টিকটা)। বেদনা প্রথমে শরীরের একদিকে প্রকাশ পায়। তারপর অপরদিকে। দৃষ্টি ঝাপসা, বমি বমিভাব, ও বমি, এই গুলি মাথার যন্ত্রণার চূড়ান্ত অবস্থার প্রকাশ পায়। মাথার পিছনের অংশে বেদনা, তৎসহ তীর বিদ্ধবৎ বেদনা কপাল পর্যন্ত প্রসারিত হয়। মনে হয় যেন মস্তিষ্ক পর্যায়ক্রমে সঙ্কুচিত ও শিথিল হচ্ছে। কানের ভিতরে শব্দ সমূহ। কণ্ঠস্বর কানের ভিতরে প্রতিধবনিত হয়।

নাক সর্দি নাকের একদিক বন্ধ হয়ে যায়, অপরদিক খোলা থাকে। নাসা পক্ষ ও মুখের কোনে ফাটা সমূহ, নাকের অস্থিগুলির উপর চাপ দিলে টাটানি ব্যথা হয়। রক্ত মিশ্রিত পুঁজস্রাব।

মুখগহুর — জিহ্বা সাদালেপ যুক্ত তৎসহ জিহ্বার কিনারাগুলি উজ্জ্বল লালবর্ণ যুক্ত; প্রচুর লালাস্রাব। ডিথিরিয়াতে লাল পড়ে। আহারের সময় চোয়ালের ভিতরে কটু শব্দ হয়। (নাইট্রিক অ্যাসিড; রাসটক্স)। মিষ্টিজাতীয় বস্তু খাবার পরে মুখের পচা আস্বাদ বেড়ে যায়।

গলা স্পর্শকাতর। ঢোক গেলা বেদনাপূর্ণ; বেদনা কান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। গলক্ষত; ও কাশি, তৎসহ মাসিক ঋতুস্রাব। টনসিলাইটিস ও ডিফথিরিয়া রোগের লক্ষণগুলি বারে বারে একদিক থেকে অপরদিকে স্থান পরিবর্তন করে। গলার ভিতরে যেসকল বস্তু জমা হয় তা উজ্জ্বল ও চকচকে, মুক্তের মত সাদা অথবা খাঁটি সাদা চিনা মাটির মত দেখতে। ঘাড় ও জিহ্বার আড়ষ্টতা। গলায় জ্বালাকর হাজার ন্যায় অনুভূতি। গলার ভিতর সুড়সুড়ি এবং এর ফলে অবিরাম কাশি হয়; গলক্ষত, ঋতুস্রাবের শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত বর্তমান থাকে।

স্ত্রীরোগ – মাসিক ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে, প্রচুর, গলগল করে স্রাব হয়। স্তন গ্রন্থির স্ফীতি; ঋতুস্রাবের পূর্বে বেদনাপূর্ণ। (ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, কোনিয়াম; পালসেটিলা) এবং ঋতুস্রাব দেখা দেবার পরে উপশম। স্তনগ্রন্থির প্রদাহ। সামান্য ঝাঁকুনিতে বৃদ্ধি। স্তনের দুধ শুকাতে সাহায্য করে। পেটের উপরের অংশে খালিবোধ। যৌনাঙ্গ সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পিঠের বেদনা; মেরুদন্ড স্পর্শ বা চাপে অত্যন্ত অনুভূতি প্রবন। স্তনে দুধের আধিক্য।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ডানদিকের সায়েটিকা। পাগুলি অসাড় ও আড়ষ্ট বলে মনে হয়, পায়ের পাতায় খিলধরা। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ও পিঠে বাতজনিত কারণে বেদনা, বেদনা একদিক থেকে অপর দিকে যায়। বাহু থেকে হাতের আঙুলগুলি পর্যন্ত বেদনা। হাতের তালু ও পায়ের তলায় জ্বালা।

ঘুম সাপের স্বপ্ন দেখে।

কমাবাড়াবৃদ্ধি, একদিন সকালে এবং পরের দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধি।

উপশম ঠান্ডায়, ঠান্ডা পানীয়ে।।

সম্বন্ধ-তুলনীয় – ল্যাকেসিস; কোনিয়াম; ল্যাকফেলিনাম ক্যাটসমিল্ক (চোখের পাতার স্নায়ুশূল; চোখের উপসর্গ সমূহ, আলোকাতঙ্ক, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা; বেদনাদায়ক ঋতুস্রাব);

ল্যাক ভ্যাকসিনাম—কাউমিল্ক-(মাথার বেদনা, বাতের বেদনা, কোষ্ঠকাঠিণ্য);

ল্যাক ভ্যাসিনাম কোয়্যাগুলেটাম-দই-(গভাবস্থায় বমি-বমিভাব);

ল্যাটিস ভ্যাসিনি ফ্লোক ক্রীম-(ডিথিরিয়া, প্রদরস্রাব, অতিরজো, বেদনাপূর্ণ ঢোক গেলা); ল্যাকটিক অ্যাসিড।

শক্তি ৩০ থেকে উচ্চতর শক্তি সমূহ।

এই ঔষধটির ব্যবহার ডঃ রিসিগের দ্বারা আরম্ভ হইয়াছিল এবং রিসিগের পর বেয়ার্ড ইহার ব্যবহার করেন। বেয়ার্ডের মৃত্যুর পর ডাঃ ডায়ার আমাকে ৩০ ক্ৰমের একটি শিশি দিয়াছিলেন এবং তাহা হইতেই প্রধানতঃ ভিন্ন ভিন্ন ক্রমগুলি প্রস্তুত হইয়াছে।

সকল প্রকার দুগ্ধকেই শক্তীকৃত করা উচিত, উহারা আমাদের উৎকৃষ্টতম ঔষধ, কারণ উহারা প্রাণীদেহ হইতে উৎপন্ন এবং প্রাণীগণের প্রথম জীবনের খাদ্য, সুতরাং উহারা আমাদের আভ্যন্তরিক দৈহিক প্রকৃতির প্রারম্ভিক অবস্থার সদৃশ। যদি আমরা বানরীর, গরুর, ঘোটকীর এবং মানবীর দুগ্ধের সম্পূর্ণ পরীক্ষালক্ষণগুলি পাইতাম, তাহা হইলে উহারা খুব মূল্যবান হইত। ল্যাক ডিফ্লোরেটাম’ উৎকৃষ্ট কাৰ্য্য করিয়াছে, আর এই ঔষধটির কাৰ্যও তদনুরূপ। ল্যাক ক্যানিনাম যদিও কতকগুলি আশ্চৰ্য্যকর আরোগ্য করিয়াছে তথাপি এখনও উহা প্রারম্ভিক অবস্থাতেই আছে, ইহার অনেকগুলি লক্ষণই সন্দেহপূর্ণ এবং তাহাদিগকে বিশ্বাসজনক প্রথায় আনিতে এখনও এক শতাব্দী সময় লাগিবে। কেহ কেহ মনে করিতে পারেন যে, যেহেতু দুগ্ধ শিশুদের খাদ্য, সেইজন্য উহার ঔষধি মূল্য নাই, কিন্তু যে-ব্যক্তি দুগ্ধ খাইয়া পীড়িত হন, তিনি যেন শক্তীকৃত আকারে ইহা সেবন করেন এবং ফলাফল সম্বন্ধে সংবাদ দেন। যে-সকল পরীক্ষাকারী দুগ্ধ পছন্দ করেন না, তাহারা শক্তীকৃত আকারে ইহা সেবন করিলে কয়েক দিয়ার মধ্যেই পীড়িত হইবেন এবং তাহাদিগের বহুসংখ্যক লক্ষণ প্রকাশিত হইবে।

এই ঔষধটি স্নায়বিক লক্ষণে পূর্ণ, যদিও নিশ্চয়ই ইহা দ্বারা টিসুসমূহেরও পরিবর্তন ঘটে। ইহা গভীরক্রিয় এবং দীর্ঘক্রিয়; পরীক্ষাকারীরা পরীক্ষার পর অনেক বৎসর যাবৎ ইহার লক্ষণগুলি অনুভব করিয়াছিলেন। মানসিক লক্ষণগুলি দীর্ঘস্থায়ী এবং কষ্টদায়ক হয়। ইহা দ্বারা বৰ্দ্ধিত গ্রন্থি আরোগ্য হইয়াছে। ইহা ক্ষতগুলিকে খুব লালবর্ণ করে এবং ঐরূপ ক্ষত আরোগ্যও করিয়াছে। ক্ষততাপ্রাপ্ত স্থানগুলির উপরিভাগ শুষ্ক, জ্বলজ্বলে দেখায়, যেন ঐ স্থানটি উপত্বক দ্বারা আবৃত থাকে। ইহাকে কুচিকিৎসিত ডিপথেরিয়ার পরবর্তীরোগ সমূহে, পক্ষাঘাতে, এবং ডিপথেরিয়ার সময় হইতে আরম্ভ হইয়াছে, এরূপ অন্যান্য রোগে একটি মূল্যবান ঔষধ। ইহার লক্ষণগুলির অধিকাংশই স্নায়ুপ্রণালী সম্বন্ধীয়। একপ্রকার অত্যনুভূতিযুক্ত অবস্থা বর্তমান থাকে, চর্মের ও অন্যান্য অঙ্গের অত্যধিক স্পর্শচেতনা। ইহা স্ত্রীলোকদিগকে ভয়ানকভাবে হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত করে। এবং নানাপ্রকার, দৃশ্যতঃ অসম্ভব লক্ষণের সৃষ্টি করে। উদাহরণ, যথা—কোন স্ত্রীলোক হয়ত অনেকদিন যাবৎ আঙ্গুলগুলি ফাক ফাক করিয়া শয্যাশায়ী থাকিতে পারেন; যদি আঙ্গুলগুলির পরস্পর ঠেকাঠেকি হয়, তাহা হইলেই একেবারে ক্ষেপিয়া উঠেন। আঙ্গুলগুলিতে জোরে চাপ দিলে কোন বৃদ্ধি লক্ষণ দেখা দেয় না কিন্তু সামান্য স্পর্শেই তিনি বিকট চিৎকার করিয়া উঠেন। এই অবস্থা ল্যাক ক্যানিনাম ও ল্যাকেসিস’ ব্যতীত আরোগ্য করা কঠিন। ল্যাকেসিস’ও এইরূপ অবস্থা উৎপন্ন করিয়াছে। উভয় ঔষধের উদরে এত অনুভবাধিক্য থাকে যে, আচ্ছাদন বস্ত্রের স্পর্শও সহ্য হয় না।

আর একপ্রকার অদ্ভুত অবস্থা ইহার অদ্ভুত শিরোঘূর্ণন, এই অবস্থায় চলিবার সময়ে তাহার মনে হয়, যেন তিনি শূন্যের মাঝখানে ভাসিতেছেন অথবা শুইয়া থাকিলে মনে হয়, যেন তিনি শয্যার উপরে নাই। অন্যান্য ঔষধেও এই লক্ষণ আছে। ভাসিয়া বেড়ান, শয্যা স্পর্শ না করা, অথবা ডুবিয়া যাওয়ার অনুভূতি ‘ল্যাকেসিসে আছে। হাঁটিয়া যাওয়ার সময় গড়াইয়া চলার অনুভূতি ‘এসেরাম ইউরোপিয়ামের একটি প্রবল লক্ষণ।

রোগগুলি কি প্রকারের অথবা কতটা গুরুত্ববিশিষ্ট তাহাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু উহারা পার্শ্ব পরিবর্তন করে। বাত প্রথমে একটি পায়ের গোড়ালিতে দেখা দেয়, তারপর উহা অপর পায়ের গোড়ালিতে সরিয়া যায়, আবার পুনরায় প্রথমটিতে ফিরিয়া আসে। হাঁটুতে, নিতম্বদেশে বা স্কন্ধেও বাত থাকিলে উহা ঐরূপ পার্শ্ব পরিবর্তন করে। শিরঃপীড়া ও স্নায়ুশূলে ঐ একই ব্যাপার হয়। সঞ্চরণশীল বিসর্পরোগ প্রথমে একপার্শ্ব তারপর অপর পার্শ্ব আক্রমণ করে। ডিম্বকোষদ্বয়ের প্রদাহ ও স্নায়ুশূলেও এই একই প্রকার পার্শ্ব পরিবর্তনশীলতা দেখা যায়। গলবেদনা পৰ্য্যায়ক্রমে একটির পর একটি পার্শ্ব অথবা টনসিলকে আক্রমণ করে। এই প্রকারের রোগী এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য হইয়াছে। রোগটি ডানিদিকে আরম্ভ হইয়া বামপার্শ্বে গিয়াছিল এবং লাইকো’ ব্যর্থ হইয়াছিল, কিন্তু তারপর উহা ডানদিকে ফিরিয়া আসিলে পৰ্য্যায়ক্রমতা লক্ষ্য করা গেল এবং এই ঔষধটিরও প্রয়োজন হইল। অতি অল্পসংখ্যক ঔষধেই এইরূপ পার্শ্ব পরিবর্তনশীলতা আছে।

পরীক্ষাকারীদের মাত্র দুই একজনের কতকগুলি লক্ষণ দেখা দিয়াছিল এবং সেইজন্য সেগুলি বিশ্বাসযোগ্য নহে, কারণ এই ঔষধটি কল্পনাপ্রবণতা এবং ইন্দ্রিয়জ্ঞান এতই বাড়াইয়া দেয় যে, পরীক্ষাকারীদের পক্ষে কতকগুলি লক্ষণ কল্পনা করিয়া লওয়াও সম্ভব ছিল এবং সেইজন্য ঐগুলি অনুমান সাপেক্ষ। রোগী নানারূপ কল্পনায় পূর্ণ থাকে এবং নানা কষ্টকর ও দুঃখজনক চিন্তা উপস্থিত হয়। মানসিক কার্যক্ষেত্রেও লক্ষণগুলি ভ্রমণশীল থাকে, ভ্রমণশীল ও পরিবর্তনশীল অবস্থা দেখা দেয়। তিনি চিন্তাগুলিকে একত্রিত করিতে পারেন না। তিনি সবকিছুই আরম্ভ করিবার সঙ্গে সঙ্গেই ছাড়িয়া দেন, একপ্রকার অব্যবস্থিতচিত্ততা, ইহা বহুসংখ্যক ঔষধেই দেখা যায়। তাহার মনে এরূপ ধারণা জন্মে যে, তিনি যাহা বলিতেছেন, তাহার সবকিছুই কথিতরূপ নহে, মনে করেন তিনি যাহা বলিতেছেন, তাহার সবই মিথ্যা, যেন যাহা কিছু ঘটিতেছে তাহার মধ্যে কোন যথার্থতা নাই। এই বিষয়ে ইহা কতকটা এলুমিনা’ সদৃশ, উহাতে রোগী মনে করে যে, সে নিজে নহে, যেন অপর কেহই সবকিছু বলিতেছে, ব্যাপারগুলির যথার্থতা সম্বন্ধে অনুভূতির অভাব।

যখনই কোন লক্ষণ উপস্থিত হয়, তিনি মনে করেন যে, উহা একটি স্থায়ী রোগ, তাহার কোন ভয়ানক রোগ উপস্থিত হইয়াছে, এরূপ ভয় ও উৎকণ্ঠা, তাঁহার যেন পুঁজোৎপত্তি হইতেছে অথবা তিনি বিরক্তিকর অবস্থায় আছেন, এরূপ অবান্তর কল্পনা; তিনি যেন সর্পদ্বারা উৎপীড়িত হইতেছেন, এরূপ খেয়াল। মনের দৃষ্টির সম্মুখে সবসময়েই সর্প নহে, কিন্তু ভীতিজনক দৃশ্যগুলি উপস্থিত হয়, এবং তাহার মনে হয়, যেন ঐ বস্তুগুলি বাস্তব হইয়া উঠিবে এবং তাহার চক্ষুর সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করিবে। ইহা ল্যাকেসিস’সদৃশ অবস্থা, ল্যাকেসিসে’ রোগীর মনে হয় যে, বায়ু মন্ডল উডডীয়মান ভূতে পূর্ণ রহিয়াছে, যদিও তিনি তাহাদিগকে দেখিতে পাইতেছেন না।

তাহার মনে হয় যে, তিনি অপর কোন ব্যক্তির নাকটি পরিয়া আছেন। কল্পনা করেন যে, তিনি যেন তিনি নন, তাঁহার জিনিসপত্র তাহার নিজের নহে। কল্পনা করেন, যে, তিনি মাকড়সা, সর্প এবং অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণীসকল দেখিতেছেন। তিনি একাকী থাকিতে পারেন না। ল্যাকেসিসে’ রোগী একা থাকিতে ও তাহার অদ্ভুত কল্পনা লইয়া মাতিয়া থাকিতে চান এবং একা থাকিলে, তাহার মনে হয়, তিনি যেন জানালা দিয়া বাহির হইয়া তৃণাচ্ছাদিত সমতলের উপর ভাসিয়া বেড়াইতেছেন, কিন্তু এমন সময়ে একটি শব্দ হইলে, তিনি বাস্তবে ফিরিয়া আসেন। ইহা উন্মাদনা বা বিকারের পূর্ববর্তী অবস্থা।

যদিও রোগিণীর এইরূপ নানাপ্রকার অনুভূতি থাকে, তথাপি তিনি সারাদিন তাহার কাজকর্ম লইয়া ব্যস্ত থাকেন এবং নিজে না বলিলে উহা কেহই বুঝিতে পারে না। পুরাতন ধরনের বিমর্ষতা, সমস্তই যেন অত্যন্ত অন্ধকারময়, উত্তেজনাপ্রবণ, কুৎসিত এবং ঘৃণার যোগ্য। তাহার যথেষ্ট শিরোঘূর্ণন থাকে, কিন্তু উহা জ্ঞানকেন্দ্রের একটি লক্ষণ, সুতরাং অত্যন্ত মার্জিত ভাবের, উহা সাধারণ প্রকারের মাথাচালা বা মাথাঘোরা নয় অথবা সবকিছুই ঘুরিতেছে, এরূপ অনুভূতিও নয়, ইহাতে সমগ্র দেহ আক্রান্ত হয়, মনে হয় যেন তিনি সাঁতার কাটিতেছেন অথবা ভূতের ন্যায় শূন্যে ভাসিতেছেন।

শিরঃপীড়া ভীষণ এবং প্রধানতঃ সম্মুখভাগে থাকে, কিন্তু ইহাতে মস্তকের পশ্চাদ্দিকের শিরঃপীড়াও আছে। শীতল বাতাসে গাড়ীঘোড়া চড়িলে চক্ষুর উপরে শিরঃপীড়া, গরম ঘরে উপশমিত হয়। চক্ষুগোলক উপরদিকে ঘুরাইলে এবং চক্ষু দুইটি দ্বারা সূক্ষ্ম কাজ করিলে, মাথার সম্মুখের ও পশ্চাদ্দিকের, উভয় প্রকার শিরঃপীড়াই বর্ধিত হয়। দিবাভাগে মাথার যন্ত্রণা, প্রথমে একপার্শ্বে, তারপর অপর পার্শ্বে, যে-কোন পার্শ্বই প্রথমে আক্রান্ত হইতে পারে। মুখমন্ডলে বা চক্ষে যন্ত্রণা পৰ্য্যায়ক্রমে পার্শ্ব পরিবর্তন করে, যন্ত্রণা অসহ্য, খোলা বাতাসে গেলে উপশমিত হয়। বাতের লক্ষণগুলি ঠান্ডায় এবং ঠান্ডা বাহ্য প্রয়োগে উপশমিত হয়, সুতরাং ইহা ‘পালস’ ও ‘লিডামে’র সমশ্রেণীভুক্ত হইয়া পড়ে। কোন কোন শিরঃপীড়া উষ্ণতায় উপশমিত হয় বলিয়া লিখিত আছে।

অনুভূতিপ্রবণতা একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ, আলোকে ও শব্দে অনুভূতিপ্রবণ। পড়িবার সময় পাতাটি স্পষ্ট বোধ হয় না। তিনি অন্ধকারে নানারূপ মুখ দেখিতে পান। তাঁহার দৃষ্টিপথে অথবা কল্পনায় নানাপ্রকার বৃদ্ধি, কষ্টব্যঞ্জক, বিকৃত, বিরক্তিকর মুখসকল উপস্থিত হয়। তিনি দেখেন, যেন কৃষ্ণবর্ণ ভয়ঙ্কর মুখসকল উপস্থিত হইতেছে, তিনি ঐগুলি দ্বারা উৎপীড়িত বোধ করেন। ইহা দৃষ্টিসংক্রান্ত লক্ষণ নহে, কিন্তু একপ্রকার মানসিক অবস্থা।

সকল শব্দই যেন দূর হইতে আসিতেছে, এরূপ বোধ হয়। ডিপথেরিয়ার সহিত গলার পক্ষাঘাত। তরল পদার্থ পান করিবার সময় নাক দিয়া বাহির হইয়া আসে। গলক্ষত ও হাঁচির সহিত সর্দি। অবরুদ্ধ নাসিকা, ঘন সাদা শ্লেষ্মাস্রাব। মুখমন্ডলের কনকনানি। মুখমন্ডলের যন্ত্রণা পরিশ্রম করিলে বাড়ে, গরম বাহ্য প্রয়োগে উপশমিত হয়, কিন্তু ক্ষততার উপশম কেবলমাত্র শীতল বাহ্য প্রয়োগে হইয়া থাকে।

মুখের পচা গন্ধ একটি বিশেষ লক্ষণ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী এবং দাতগুলি একপ্রকার কতকটা দুধের ন্যায় আঁশের মত, রূপার ন্যায় চকৰ্চকে পদার্থে লেপাবৃত থাকে। গলায় জমাট পশমের ন্যায় নিঃস্রাব, ছাইয়ের মত ধূসরবর্ণ, অথবা রূপার মত চকচকে পদার্থ সঞ্চিত হয়। যে-প্রকার ডিপথেরিয়া রোগে রোগীর গলার পার্শ্বদ্বয় পর্যায়ক্রমে আক্রান্ত হয়, তাহাতে ইহা ব্যবহৃত হইয়াছে এবং ইহা ডিপথেরিয়ার পরবর্তী পক্ষাঘাতও আরোগ্য করিয়াছে। গলার যন্ত্রণা বামকর্ণের দিকে ঠেলিয়া যায়। যন্ত্রণা পৰ্য্যায়ক্রমে, বিপরীত পার্শ্বগুলিকে আক্রমণ করিতে থাকে। শীতল বা উষ্ণ পানীয় পানে গলার উপশম হয় এবং শূন্য গলাধঃকরণে বৃদ্ধি হয়। ইহা ক্যালি বাইক্রমের ন্যায় গলার উজ্জ্বল, চকচকে লাল আকৃতিতেই প্রায়শঃ প্রযোজ্য হয়। ডিপথেরিয়ার ঝিল্লীগুলিও রূপার ন্যায় সাদা থাকে। ল্যাক ক্যানিনাম প্রথমে ডান টনসিল এবং তারপর বাম টনসিলে তালির ন্যায় পর্দাযুক্ত এবং অত্যন্ত পৰ্য্যায়ক্রম বিশিষ্ট রোগীদিগকে আরোগ্য করিয়াছে। কৃত্রিম ঝিল্লীযুক্ত ক্রুপ কাশি। যেখানেই শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আছে, সেইখানেই স্রাব নির্গত হইয়া একপ্রকার ধূসরবর্ণ আঁশের মত, জিহ্বার ক্লেদের ন্যায় লেপ জন্মে। আমি একবার ল্যাক ক্যানিনাম দিয়া একটি পুরাতন রোগীকে আরোগ্য করিয়াছিলাম, তাহার সমগ্র মুখমন্ডল একপ্রকার সাদা লেপে আবৃত ছিল কিন্তু প্রদাহ বা ক্ষত ছিল না, একপ্রকার দৃশ্যমান রসপ্রসেক অবস্থা সৰ্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল। এমনকি উহা জিহ্বার তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল। উহা দেখিতে সাদা রূপার মত ছিল, মনে হইতেছিল যে, একমুখ কার্বলিক এসিড গিলিয়া ঐরূপ অবস্থা দেখা গিয়াছে, মুখ এত স্পর্শকাতর ছিল যে, সে দুধ ব্যতীত আর কিছুই গলাধঃকরণ করিতে পারিত না।

উদরটিও যন্ত্রণায় পূর্ণ থাকে। বস্তিপ্রদেশে চাপনবৎ বেদনা, বাম কুঁচকি স্থানে তীব্র যন্ত্রণা।। অবিরত মূত্রত্যাগপ্রবৃত্তি। উপদাহযুক্ত মূত্রস্থলী।

স্ত্রী-জননেন্দ্রিয়ে অনেকগুলি লক্ষণ পাওয়া যায়। ডান ডিম্বকোষপ্রদেশে তীব্র যন্ত্রণা, উজ্জ্বল লাল রক্তপ্রবাহ দেখা দিলে উপশমিত হয়,–এই লক্ষণটিও কতকটা ল্যাকেসিস’ সদৃশ। এই যন্ত্রণাও পার্শ্ব পরিবর্তন করে। জিঙ্কে’ও ডিম্বকোষে যন্ত্রণা আছে, উহাও রক্তস্রাবে উপশমিত হয়, রোগিণী ঋতুস্রাব হইতে থাকার সময় ছাড়া আর কখনও সুস্থবোধ করেন না। “জিঙ্কে রোগিণী অন্যসকল সময়ে হিষ্টিরিয়াগ্রস্তা, কিন্তু ঋতুকালে সুস্থ থাকেন। ল্যাক ক্যানিমের নিঃস্রাবসৃষ্টির আর একটি উদাহরণ উহার ঝিল্লীপাতযুক্ত কষ্টরজঃ। গলবেদনা ঋতুস্রাবের আরম্ভ হইতে শেষ পর্যন্ত বর্তমান থাকে। ম্যাগ কাৰ্ব্বে’ এইরূপ গলবেদনা ঋতুর পূর্বে দেখা দেয়, ক্যাল্কেরিয়া কাৰ্বে ঋতুকালে বেদনাযুক্ত গলদেশ আরোগ্য করিয়াছে।

যোনিপথ দিয়া বাষ্প নির্গত হয়। মূত্রস্থলীতে শ্লেষ্মা ও অন্যান্য পদার্থ গাজিয়া উঠিয়া মূত্রত্যাগকালে বাষ্প নির্গত হওয়া একমাত্র ‘সার্সা’তেই দেখা যায়, উহাতে মূত্র উচ্চশব্দে নির্গত হয়। কোন শিশুর পক্ষে মূত্রত্যাগকালে বায়ু নির্গত হওয়া কিছু অসাধারণ ব্যাপার নহে, মূত্র গলগল শব্দ করিয়া নির্গত হয়, এই অবস্থা ‘সার্সা দ্বারা আরোগ্য হইবে।

স্তনদেশে নানারূপ যন্ত্রণা, মনে হয় যেন স্তন দুইটি পাকিয়া উঠিবে। কোন মাতা যদি তাহার সন্তানকে হারাইয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহার স্তনদুগ্ধ শুষ্ক করিয়া দেওয়ার আবশ্যক হয়; এই উদ্দেশ্যে ল্যাক ক্যানিনাম এবং ‘পালস’ সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ঔষধ। উহাদিগের দ্বারা দ্রুত দুধ শুকাইয়া যায়। ল্যাক ক্যানিনাম রোগিণী কল্পনাবিলাসী এবং বেদনা ও পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে অত্যনুভূতিযুক্তা, অত্যনুভূতিপ্রবণা, স্পর্শাসহ ভাবযুক্তা। পালস’ ‘পালস’-জ্ঞাপক ধাতুতে প্রয়োজন হয়। নিম্নাঙ্গগুলির স্ফীতিবিশিষ্ট বাতরোগ, প্রধানতঃ যখন উহা পৰ্য্যায়ক্রমে অঙ্গগুলিকে আক্রমণ করিতে থাকে, সঞ্চালনে ও উত্তাপে বৃদ্ধি; ঠান্ডায় উপশমিত হয়। অঙ্গাদিতে আঘাত পাওয়ার ন্যায় বেদনা। সন্ধিগুলির বাতজনিত স্ফীতি।

 

 

 

অপর নাম — বিচস মিল্ক (Bitches Milk)

কুকুরের দুধ থেকে প্রস্তুত ঔষধ।

ল্যাক ক্যানাইনামের — মূলকথা

১। প্রাদাহিক পীড়া; প্রদাহের রোগ লক্ষণগুলি একপাশ থেকে অন্য পাশে, পিছন থেকে সামনের দিকে আড়াআড়িভাবে পরিভ্রমণ করে (বিশেষ করে বাত ও গলক্ষত প্রভৃতিতে এরূপ দেখা যায়)।

২। প্রতি ঋতুস্রাবকালে স্তন ও গলনালী টাটায় বা ক্ষতবৎ বেদনা থাকে।

৩। স্তন প্রদাহ; শুনে অত্যন্ত টাটানি ও স্পর্শদ্বেষ, কোনরূপ ঝাঁকুনি সহ্য হয় না, সিড়ি দিয়ে নামবার সময় বা পা ফেলে চলবার সময় স্তন দু’টিকে উঁচু করে তুলে ধরতে হয়।

ল্যাক ক্যানাইনাম — পর্যালোচনা

ল্যাক কানাইনাম কুকুরের দুধ থেকে প্রস্তুত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। এক সময়ে এই ঔষধটিকে আমার ঔষধ তালিকার স্থান দিতে চাইনি। কারণ আমি মনে করতাম যে, চিকিৎসা কাৰ্যে কুকুরের দুধকে একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধরূপে চালান লজ্জার বিষয়। কিন্তু তারপর এর অনুকূলে বহু প্রমাণ সংগৃহিত হতে দেখে আমি আমার চিকিৎসার প্রথম দিকে স্থির করেছিলাম যে, “সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখব এবং যা ভাল, তাই গ্রহণ করব।” সুতরাং আমি একে পরীক্ষা করে দেখতে মনস্থ করি এবং আমার প্রথম পরীক্ষা হয় একটি প্রাদাহিক বাতরোগে, যা দুসপ্তাহ ধরে আমার সমস্ত চেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দিয়েছিল।

রোগী বিবরণী –

(১) রোগীর বেদনা এক সন্ধি থেকে অন্য সন্ধিতে চলে বেড়াত, কিন্তু পালসেটিলা সম্পূর্ণভাবে বিফল হয়েছিল। কিছুকাল পরে আমি লক্ষ্য করি যে, উহা যে কেবল এক সন্ধি থেকে অন্য সন্ধিতে চলে বেড়ায় শুধু তাই নয়, আড়াআড়ি ভাবে চলে; একদিন ডান হাঁটুতে পরের দিন বাঁ হাঁটুতে, দু’একদিন থাকে; তারপর আবার বাঁ হাঁটুতে ও পরে আবার ডান হাঁটুতে ফিরে আসে। ল্যাকক্যানাইম খুব তাড়াতাড়ি একে আরোগ্য করেছিল।

(২) কিছুকাল পরে আমি একটি উৎকৃষ্ট স্কার্লেটিনার রোগী পাই। এই রোগীর গলা ফুলে গিয়েছিল এবং বেদনার সঙ্গে এত বেশী অস্থিরতা ছিল যে, সে সৰ্ব্বদাই এপাশ-ওপাশ করছিল; এজন্য আমি মনে করেছিলাম যে, রাসটাক্স নিশ্চয়ই উপযোগী ঔষধ; কিন্তু উহা তাকে উপশম দিতে পারেনি। তারপর আমি লক্ষ্য করি যে, গলা ব্যথা ও অঙ্গবেদনা পৰ্য্যায়ক্রমে পার্শ্ব পরিবর্তন করে। এতে মামার এই ঔষধটির কথা মনে আসে এবং উহা দেওয়ায় দ্রুত উপশম হয়। উভয়ক্ষেত্রেই আমি সি. এম শক্তি ব্যবহার করেছিলাম।

(৩) টনসিলাইটিস —

একই বাড়ীতে ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের দুজনের টনসিলাইটিস হয়। এদের একজনের জন্য আমাকে এবং অন্যজনের চিকিৎসার জন্য একজন সুদক্ষ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসককে ডাকা হয়। কোন রোগীটি আগে আরোগ্য হয় এবং টনসিল না পেকে আরোগ্য হয়, তার প্রতি সকলেরই দৃষ্টি ছিল। ওরা উভয়েই খুব খারাপ অবস্থার রোগী ছিল। দু’জনেরই রোগ ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়ে চলেছিল। আমার রোগীর ফুলা একদিকে আরম্ভ হয়েছিল, পরের দিন অন্যর দিকটি আরো খারাপভাবে ফুলেছিল। সেজন্য আমি বলেছিলাম যে, প্রথম দিকেরটি যখন আজ ভাল আছে, তখন শেষের দিকেরটিও কাল ভাল হবে কিন্তু হয়। প্রথম দিকেরটি আবার খারাপ হয়ে পড়ে। রোগী গিলতে পারেনা, খাদ্যপানীয় নাক দিয়ে বের হয়ে আসে। বহু চেষ্টায়ও দম আটকানো ভাবের পর অনেক কষ্টে রোগীকে এক চামচ ঔষধ খাওয়ানো সম্ভব হয়। আমি এক্ষেত্রে আর ইতস্ততঃ না করে দুপুরবেলা ল্যাক ক্যানাইনাম সি. এম দিই। সন্ধ্যার সময় গিয়ে দেখি রোগিণী ঝিনুকের ঝোল খাচ্ছে। পরিস্কার কথা বলতে পারছে; যদিও সকালের দিকে একটি কথা বলতে পারেনি। আর একদিনেই সে ভাল হয়ে যায়, কেবল কিছুটা দুর্বলতা ছিল।

অন্য রোগীটির কিন্তু টনসিল পেকে গিয়েছিল এবং ভাল হতে আরো এক সপ্তাহের বেশী সময় লেগেছিল। অতএব হোমিওপ্যাথির পক্ষে ইহা আর একটি জয়লাভ।

** আমি ভ্রমণশীল বেদনার এই পৰ্য্যায়ক্রমিক পার্শ্বপরিবর্তন পুনঃ পুনঃ পরীক্ষণ করে, অন্যান্য ঔষধের নির্ভরযোগ্য কোন লক্ষণ না পেলে ল্যাক ক্যানাইনামকেই ব্যবহার করি।

আমি এই ঔষধটির আরোগ্যকর শক্তির সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে একে হেমিওপ্যাথির নীতি অনুসারে পরীক্ষা করতে মনস্থ করি। আমি মাল গুদামের তিনজন কেরানীকে ২ ঘণ্টা ছাড়া  ছাড়া ২০০ (বিটি) একটি করে বড়ি (৩৫ নং) খেতে দিই। তারা প্রথমে রাজী হয়নি; কিন্তু পরে বুঝিয়ে বলায় তারা রাজী হয়। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষিত যুবক হেসে বলেছিল নেকড়ে বাঘের দুধে রমিওলাস ও রেমাস যখন মরেনি, তখন তারাও এতে মরবে না।

ফল হয় এই যে, তিনদিনের মধ্যে তাদের গলায় ব্যথা হয়। পূৰ্বোল্লিখিত যুবকটির উভয় টনসিলই বুড়ো আঙ্গুলের নখের ন্যায় বর্ধিত হয় ও তালিযুক্ত (pathches) হয়। অন্য যুবকটি ভয় পেয়ে পরীক্ষা চালাতে দেয়নি। তৃতীয় পরীক্ষাকারী ছিলেন একজন যুবতী; তার গলাব্যথার পরে এক সপ্তাহেরও বেশী কাল বুকে অল্প অল্প বেদনার সঙ্গে উৎকট কাশি হয়েছিল।

* আমি ল্যাক ক্যানাইনামকে স্তন প্রদাহে একটি খুব উপযোগী ঔষধ হতে দেখেছি। প্রধান নির্দেশক লক্ষণ স্তনে অতিশয় স্পর্শকাত্মতা ও টাটানি, এর জন্য রোগী বিছনায় সামান্য ঝাঁকানি বা মাটিতে পা ফেলা সহ্য করতে পারে না। আবার যদি ঋতুকালে স্তন ও গলার ব্যথা করে, তাহলেও ল্যাক ক্যানাইনাম উপযোগী। বিশেষতঃ ঋতুস্রাব যদি ধীরে ধীরে নির্গত না হয়ে হুড় হুড় করে বা দমকে দমকে প্রবাহিত হয়, তাহলে ল্যাক ক্যানাইনাম উপযোগী।

Lac-c : Lac Caninum
Symptoms alternate sides. Glistening parts. Oversensitiveness to touch.Dries up milk.


COMMON NAME:

Bitch’s milk.


FAMILY:

MAMMALIA


A/F:

-Result of fall


MODALITIES:

< Touch

< Jar

< After sleep

< During menses

< Cold air / wind / drafts

< Morning of one day & Evening of next

> Open air

> Cold drinks


MIND:

-For nervous, restless, highly sensitive organisms.

-Very forgetful and absent minded, makes purchases and walks away without them.

-Who cannot concentrate the mind to read or study, in writing uses too many words, or not the right ones. Omits final letters in a word.

-Who are despondent, hopeless, think their disease is incurable, have not a friend living. Nothing worth living for. Could weep at any moment. Chronic blues.

Everything seems dark.

-Fears to be alone, of dying, becoming insane, falling down, of snakes.

-Who are disposed to attacks of rage – cursing, swearing at slightest provocation.

-Gross, irritable child, abuses and screams all times especially at night.

-Hysteria – feels snakes were on her back. Feels as if walking in air.


GUIDING INDICATIONS:

-Highly sensitive to touch, especially the sexual organs are excited from touch, pressure, or friction by walking. Oversensitiveness, cannot touch one part of body to other, must keep fingers apart.

-Symptoms alternate sides, from right to left, and then back again or reverse especially diphtheria, tonsillitis, and in pains.

-It dries up milk in woman who cannot breast feed the baby (Asaf).

-Sore throats and cough are apt to begin and end with menstruation.

-Throat sensitive to touch internally < empty swallowing, on swallowing pains extend to ears, begins on left side, then change side > cold drinks (morning).

-Shining, glazed appearance (patches of china whiteness) of diphtheria deposit.

-Faintness in stomach – sinking at epigastrium. Very hungry, as hungry after eating as before.

-Menses too early, profuse, flow in gushes, bright red, stringing. Breast swollen, painful before and during menses.

-Discharge of flatus from vagina.

-Breasts inflamed painful < towards evening, must hold them firmly when going up and down stairs (Bry.)

-Violent palpitations < lying on left side > turning on right.

-Backache, suprasacral region – right sided sciatica < rest < first motion (Rhus-t).

-Pain at base of coccyx. Very sensitive to touch or pressure.

-Dreams of snakes, of urinating.

-Craves milk, but aversion to liquids, warm drinks, whiskey, spicy, salt.

-Heat and sensitivity of feet, uncovers the feet.

-Sleep on back with one leg drawn up, so the foot rests on opposite knee.


KEYNOTES:

1. Changeability of sides (R) to (L) back again or reverse.

2. Hypersensitivity, cannot bear slightest touch especially of sexual organs. Cannot bear one part of body to touch another.

3. Very forgetful and absentminded makes purchases and walks away without taking them.

4. Hopeless, despondent.


NUCLEUS OF REMEDY:

-Suited to nervous, very restless and highly sensitive persons.

-Erratic sensation as to sides, symptoms change from side to side every few hours or days (Kali-bi, Puls, Cub).

-Oversensitiveness.

-Silvery shiny deposits.

-Dreams, delusions, imaginations.

-Foetidness.

-Exudative tendency.


CONFIRMATORY SYMPTOMS:

1. Symptoms constantly flying from one part to another.

2. Hypersensitiveness of parts -cannot bear one part of her body to touch another, must keep her fingers apart.

3. If Diphtheria be in the neighbourhood, as a prophylactic give Lac Can, one dose for three nights in succession.


REMEDY RELATIONSHIPS:

Compare : Anac, Bov, Caust, Con, Dulc, Graph, Hep, Lac-ac, Lac-f, Lach, Lac-v, Lac-v-c, Lac-v-f, Lyc, Nat-c, Nat-m, Nux-v, Sep, Staph.

Similar : Acon, Amb, Am-c, Am-m, Anac, Apis, Arum-t, Asar, Aur, Bell, Bov, Bry, Calc, Calc-acet, Carbo-an, Caust, Cinch, Coff, Con, Cur, Dig, Dulc, Eup-per, Gels, Gnaph, Graph, Grin, Hep, Ign, Iod, Iris, Kali-bi, Kali-c, Lac-d, Lach, Lyc, Merc, Merc-i, Murx, Nat-c, Nat-m, Nit-ac, Nux-v, Op, Pall, Paull, Petr, Phos, Phyt, Plat, Psor, Rhus-t, Ruta, Sang, Sep, Sil, Spig, Staph, Stram, Sulph, Tell, Thuj, Zinc.


✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *