ক্ষুধার অনুভূতি যেন মেরুদণ্ড থেকে হয়। |
বাম স্তনের নিচে গজাল বা বল থাকার অনুভূতি। |
হৃৎপিণ্ড যেন একটি সূতার মধ্যে ঝুলে আছে, কেহ যেন হৃৎপিণ্ডে চেপে ধরে আবার ছেড়ে দেয় এমন অনুভূতি, হৃৎপিণ্ডের বেদনার সাথে ডানবাহু অসাড় অনুভূতি। |
বিমর্ষ ও খিটখিটে মেজাজ, সব কাজই তাড়াতাড়ি করতে চায়। |
জননাঙ্গ যেন যোনিপথ দিয়ে নিচের দিকে নামছে এরুপ অনুভূতি। |
পর্যায়ক্রমে হ্রদপিন্ডে ও জরায়ু বা ডিম্বাধারের ব্যথা। |
দেহের বা দিক প্রধানতঃ আক্রান্ত হয় (ল্যাকে, থুজা) । ডিম্বকোষ বা জরায়ুটিত রোগে রোগীনি নিজের মুক্তি সম্বন্ধে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়েন (লাইকো, সালফার, ভিরেট্রাম)-সান্ত্বনায় ঐ অবস্থা বেড়ে মাথার উপর দিকে কেবল যেন করতে থাকে, যেন পাগল হয়ে যাবে-চিন্তাশক্তি গোলমাল হয়ে যায়।
অত্যন্ত মানসিক অবসাদনা কেঁদে থাকতে পারে না, মানসিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল, ভীত, বেশী কান্নাকাটি করতে থাকে—তার সম্বন্ধে কোন কিছু করা হলে সেই সম্বন্ধে সে অত্যন্ত উদাসীন থাকে ।
নিজের রোগ বিষয়ে উদ্বিগ্ন দেহের কোন যন্ত্র অকেজো হল না তো! এই ভয়ে ভীত হয়। এ লক্ষণ স্ত্রী পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
অভিশাপ দিতে থাকে, মারধোর করতে চায়, অশ্লীল কথাবার্তা বলে (এ্যানাকার্ডি, ল্যাক-ক্যা); জরায়ুর উত্তেজনার সাথে পাল্টা পাল্টিভাবে এসব হতে থাকে।
কোন কিছুতেই মন নেই তবুও স্থির হয়ে বসতে পারে না—আবার অস্থির তবুও নড়তে বা হাটাচলা করতে চায় না—যৌন ইচ্ছা চেপে রাখতে কিছু না কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রাখে ।
কিছু করতে চায়, তাড়াহুড়ো করে, যদিও কোনও উচ্চাশা নেই । কোনো উদ্দেশ্য নেই অথচ সবকিছুতেই তাড়াহুড়ো ভাব (আর্জ-না)।
ভয় – একা থাকতে ভয়, পাগল হয়ে যেতে পারে এই ভয়, হৃদ রোগের ভয় রোগটি যেন সারবে না এই ভয়, যেন বিপদ আসন্ন বা কোন রোগ হবে এই ভয় ।
মাথা যন্ত্রণা ও মানসিক উপসর্গ জরায়ুর উত্তেজনা বা জরায়ুচ্যুতির উপর নির্ভর করে । ঋতুস্রাবের অনিয়মিততা ও হৃৎপিন্ডের উত্তেজনাবশতঃ মাথার যন্ত্রণা ও মানসিক উপসর্গ দেখা দিলে ব্যবহার্য।
উচুনীচু জমিতে হাঁটতে পারে না ।
ব্যথায় যন্ত্রণা ছোট বিন্দুর মত স্থানে ও অবিরত স্থান পরিবর্তন করে (কেলি-বা)।
অনবরত প্রস্রাবের বেগ হয়, প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখলে বুকে যেন রক্ত জমে গেছে এই অনুভূতি হয় । তলপেটে ও বস্তিদেশে (Pelvis) যেন ভারী কিছু নেমে আসছে এই অনুভূতি, যেন সমস্ত যন্ত্র বার হয়ে পড়বে (ল্যাক-ক্যা, মিউরেক্স, সিপিয়া) যোনি হাত দিয়ে চেপে রাখলে ঐ অনুভূতি আরও বেড়ে যায়—সাথে বুক ধড়ফড় কর ।
ঋতুস্রাব – নির্দিষ্ট সময়ের আগে হয়, অল্প হয়, স্রাব কালচে, দুর্গন্ধযুক্ত, চলাফেরার সময় শুধুমাত্র স্রাব হয়। হাঁটা বন্ধ করলেই স্রাবও বন্ধ হয়, (কষ্টি) [শুলে স্রাব হয় = ক্রিয়ো, ম্যাগ-কা] হৃৎপিন্ড যেন সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরেছে এই অনুভূতি (ক্যাক্টাস); মনে হয় দেহের সব রক্ত যেন হৃৎপিন্ডে জমা হয়েছে মনে হয় এখুনি ফেটে যাবে সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না ।
সারাদেহ লাফাতে থাকে । নাড়ীগুলো যেন ভরাট ও বড় হয়ে গেছে মনে হয় নাড়ী ফেটে রক্ত বার হয়ে পড়বে (ইস্কিউলাস)।
বুক ধড়ফড় করে, বুক যেন লাফায়, হৎপিন্ড যেন অচেতন, হৃৎপিন্ডের সামনের অংশে যেন ব্যস্ততা, উদ্বিগ্নতা, রাতে বুকের বাঁদিকে তীব্র যন্ত্রণা হয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে । নাড়ী অনিয়মিত হাত পা ঠান্ডা হাতে পায়ে ঠান্ডা ঘাম—ঐ অবস্থা আহারের পর ও যে কোন দিকে শুলে বেড়ে যায় (বাদিকে— ল্যাকে) ।
দ্রুত হৃদস্পন্দন — মিনিটে ১৫০ হতে ১৭০ বার, রেক্টামে চাপ মত অনুভূতি থেকে অবিরত মলমূত্র ত্যাগের ইচ্ছা, (সাথে রেক্টাম বার হয়ে আসে) । ডিম্বকোষ, জরায়ু ও বস্তিদেশের টিস্যুগুলোর দুর্বলতা ও ক্রিয়াহীনতায় জরায়ু সামনের দিকে ঘুরে আসে, পেছনে ঘুরে যায় ও পেছন দিকে সরে যায় (হেলোনিয়াস, সিপিয়া) । প্রসবের পর সেরে উঠতে বহু সময় লাগে ঐ সাথে রেকটামের নিষ্ক্রিয়তা সহ সর্বদা কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে ।
সম্বন্ধ—এ্যাকটিয়া রেসি, এগারি, ক্যাকটাস, হেলোনিয়াস, মিউরেক্স, নেটু-ফস, প্ল্যাটি না, সিপিয়া, স্পাইজে, টেরাক্সে তুলনীয় ওষুধ ।
শক্তি—৩০, ২০০ ।
বস্তিকোটরের যন্ত্রাদির উপর এই ঔষধের শক্তিশালী কাজের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে, ঔষধের লক্ষণাবলীর মধ্যে এবং জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের রোগ থেকে উৎপন্নবহু প্রতিবর্ত অবস্থার উপরেও এই ঔষধটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। বিশেষভাবে প্রায়ই অবিবাহিত স্ত্রীলোকের রোগের ক্ষেত্রে ঔষধটি নির্দেশিত হয়। হৃদপিন্ডের উপর কাজ সুস্পষ্ট। ছোট ছোট স্থানে বেদনা (অক্সালিক অ্যাসিড) বাতজ সন্ধিপ্রদাহ।
মন — নিজের (স্ত্রী) মুক্তি সম্পর্কে হতাশ। সান্ত্বনায় কষ্টের বৃদ্ধি। মানসিক ক্ষুর্তির অবসাদ। অবিরাম কাঁদার ইচ্ছা। উদ্বিগ্ন; কোন যান্ত্রিক অথবা কোন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হবে এই জাতীয় ভয়। অভিশাপ দেবার, আঘাত করার, অশ্লীল বিষয়ে চিন্তা করার স্পৃহা। লক্ষ্যহীণ, অস্থির স্বভাব; সর্বদা ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়।
মাথা — উত্তপ্ত, নিস্তেজ, ভারীবোধ। উষ্ণ ঘরের ভিতরে মূচ্ছা। মাথার ভিতর প্রচন্ড উত্তেজনা।
চোখ — অক্ষিপটের অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণতা। বেদনা চোখ থেকে মাথার পিছনের অংশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়; এবং দৃষ্টি অস্বচ্ছ। চোখের দুর্বল পেশী সমূহের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। (আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম)। মায়োপিক অ্যাস্টিগমিয়া।
পাকস্থলী – পেটে বায়ুসঞ্চয়; বমিবমিভাব, তৎসহ পাকস্থলীতে একটি পিন্ড থাকার মত অনুভূতি। ক্ষুধার্ত মাংস খাবার অদম্য স্পৃহা। তৃষ্ণার্ত, বারেবারে এবং অনেকটা করে জল পান করে এবং কষ্টকর লক্ষণ প্রকাশের আগে পিপাসা।
উদর – পেটে টাটানি ব্যথা, স্ফীত; পেটের ভিতরে কাঁপুনির মত অনুভূতি। সরলান্ত্র ও মলদ্বারের নীচের দিকে ও পিছনের দিকে চাপবোধ দাঁড়িয়ে থাকলে বৃদ্ধি, মুক্ত বাতাসে ভ্রমনে উপশম। পেটের নিম্নাংশে কিছু ঠেলে বেরিয়ে যাবার মত অনুভূতি।
প্রস্রাব সম্পর্কিত যন্ত্রসমূহ — বারে বারে বেগ। প্রস্রাব দুধের মত, অল্প ও উত্তপ্ত।
মল — অবিরাম মলত্যাগের বেগ, সরলান্ত্রের চাপের থেকে এই বেগের উদ্ভব। দাঁড়িয়ে থাকলে বৃদ্ধি। মলদ্বারের নীচের অংশে চাপবোধ। খুব সকালে দ্রুত মলত্যাগের বেগ। আমাশয়; শ্লেষ্মা ও রক্তমিশ্রিত, তৎসহ কোঁথ, বিশেষ করে রক্তপ্রধান ও স্নায়বিক স্ত্রীলোকেদের রজোনিবৃত্তিকালে।
হৃদপিন্ড – মনে হয় যেন হৃদপিন্ডটি একটি সাঁড়াশী দিয়ে চেপে ধরা রয়েছে (ক্যাক্টাস)। হৃদপিন্ড ফেটে যাবার মত পূর্ণ বলে মনে হয়। সমগ্র শরীরের স্পন্দন। হৃদকম্প; অনিয়মিত নাড়ী, অত্যন্ত দ্রুত। হৃদপিন্ডস্থানে বেদনা, তৎসহ বুকের ভিতরে বোঝা থাকার মত অনুভূতি। হৃদপিন্ডের চারিপাশে শীতল অনুভূতি। জনবহুল ও উত্তপ্ত ঘরে শ্বাসরোধের ন্যায় অবস্থা। হৃদল তৎসহ ডানবাহুতে বেদনা।
* স্ত্রীরোগ — ঋতুস্রাব নির্দিষ্ট সময়ের আগে, অল্প, কালচে, জমাট বাঁধা, দূর্গন্ধযুক্ত; কেবলমাত্র ঘুরে বেড়াবার সময়ে স্রাব হয়। নীচের দিকে কিছু ঠেলে বেরিয়ে যাবার মত অনুভূতি তৎসহ দ্রুত মলত্যাগের বেগ, মনে হয় যেন সমস্ত যন্ত্রগুলি বেরিয়ে আসবে। বিশ্রামকালে সবকিছুশান্ত থাকে। সিপি; ল্যাকক্যান; বেলেডোনা)। জরায়ু রক্তাধিক্য, স্থানচ্যুতি, এবং জরায়ুর ঘুরে যাওয়া। অবিরাম জননেন্দ্রিয়ের বাইরের অংশ চেপে ধরে থাকার স্পৃহা। ডিম্বাশয় স্থানে বেদনা এবং বেদনা নীচের দিকে উরুস্থানে পর্যন্ত প্রসারিত হয়। হাজাকর; বাদামী বর্ণের প্রদরস্রাব; ভগৌষ্টে হুল ফোটার মত বেদনা। যৌনইচ্ছা জেগে উঠে। জরায়ুস্থানে ফোলার মত অনুভূতি। জরায়ুর সামান্য বিবৃদ্ধি। জননেন্দ্রিয়ের বাইরের অংশে চুলকানি।
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ — অসমান জমির উপরে কিছুতেই হাঁটতে পারেনা। পিঠে ও মেরুদন্ডের বেদনা, তৎসহ কম্পন, কিন্তু প্রায়ই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নীচের দিকে ঠেলা মারার মত চরিত্র যুক্ত হয়। আঙ্গুল গুলিতে কিছু ফোঁটার মত বেদনা। ডানদিকের বাহু ও নিতস্বস্থানে বেদনা। পাদুটির বেদনা; কিছুতেই পাদুটি স্থির করে রাখতে পারে না। পায়ের গোড়ালিতে বেদনা। হাতের তালু ও পায়ের তলায় জ্বালা।
ঘুম — অতৃপ্তিকর, তৎসহ বিরক্তিকর স্বল্পসমূহ। কিছুতেই ঘুম আসে না, তৎসহ মাথার ভিতরে উত্তেজনা।
জ্বর — বিকালের দিকে প্রচন্ড তাপ ও ক্লান্তিরোধ, তৎসহ সমগ্র শরীরে দপদপকর অনুভূতি।
কমা-বাড়া বৃদ্ধি – সান্ত্বনায়, গরম ঘরে।
উপশম – মুক্ত বাতাসে।
সম্বন্ধ-তুলনীয় – ক্যাক্টাস; হেলোনিয়াস; * মিউরেক্স, সিপিয়া; প্ল্যাটিনা; প্যালেডিয়াম।
দোষঘ্ন — হেলোনিয়াস।
শক্তি – দেখা গেছে যে, মধ্য ও উচ্চতর শক্তি ভালো কাজ করে। এই ঔষধের রোগ, আরোগ্যের ক্ষমতা কোন কোন সময়ে ধীরে প্রকাশ পায়।
যতদূর পরীক্ষা হইয়াছে, তাহাতে লিলিয়াম টিগ্রিনাম স্ত্রীলোকদিগের রোগেই উপযোগী বলিয়া মনে হইয়াছে। হিষ্টিরিয়াপ্রবণা স্ত্রীলোকদিগের, যাহারা জরায়ুর রোগে ভুগেন, হৃৎপিন্ডরোগে এবং নানারূপ স্নায়বিক উপসর্গে কষ্ট পান, ইহা প্রধানতঃ তাঁহাদের পক্ষেই উপযোগী। যে-স্ত্রীলোক অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণা, নানারূপ অলীক ধারণা, উন্মাদনা, ধর্মসংক্রান্ত বিষাদ এবং কল্পনায় পূর্ণ থাকেন এবং তাহার সহিত যাহার হৃৎরোগ ও জরায়ুভ্রংশ থাকে, ইহা তাহার পক্ষে উপযোগী। এইরূপ অবস্থাগুলিও পৰ্য্যায়ক্রমে চলিতে থাকে, যখন মানসিক লক্ষণগুলি খুব স্পষ্ট হয়; তখন শারীরিক লক্ষণগুলি উপশমিত হয়। জরায়ুভ্রংশের সহিত যে “নিম্নাভিমুখী ঠেলামারা” যাতনার অনুভূতি থাকে মনে হয়, তাহা পাকস্থলীপ্রদেশ হইতে সময়ে সময়ে গলা হইতে আসিতেছে। নিম্নাভিমুখী আকর্ষণের অনুভূতি, যেন ভিতরের সবগুলি যন্ত্রই ঠেলিয়া বাহির হইয়া আসিতেছে। এইরূপ অত্যধিক শিথিলতার অবস্থার সহিত, তাহার অত্যন্ত অস্থিরতা এবং তদুপরি অতি স্পষ্ট হৃদস্পন্দন থাকে। তিনি কেবলমাত্র চিৎ হইয়া শুইতে পারেন এবং কোন পার্শ্বে শুইলেই বৃদ্ধি-লক্ষণ দেখা দেয়। প্রত্যেকটি মনের আবেগে, হৃৎপিন্ডের মধ্যে ফড়ফড় করে, হৃৎপিন্ডসংক্রান্ত লক্ষণ এবং জরায়ুসংক্রান্ত লক্ষণ চক্রাকারে ঘুরিতে থাকে বা পৰ্য্যায়ক্রমে উপস্থিত হয় এবং উহারাই প্রধান লক্ষণের স্থান গ্রহণ করে।
তিনি কদাচিৎ কাহাকেও মিষ্টকথা বলিতে পারেন। তাহাকে সদয়ভাবে কিছু বলিলেও তিনি খিটখিট করিয়া উঠেন। তিনি এত বদরাগী থাকেন যে, বন্ধুরা তাহাকে শান্ত করিতে পারে না। এমনকি সান্ত্বনা দিলেও তাঁহার রাগ বাড়িয়া উঠে। তাঁহার সহিত কথা বলিলে তিনি চটিয়া ওঠেন। তিনি রাত্রে জাগিয়া শুইয়া থাকেন এবং তাহার কাল্পনিক ধর্মবিষয়ক ধারণা অথবা ধর্মবিষয়ক বিষাদভাবে উৎপীড়িত হন এবং ধর্ম সম্বন্ধে, তাহার উন্মত্ত ধারণাগুলি এবং জীবনযাপনপ্রণালী সম্বন্ধে তাহার অযৌক্তিক, অসঙ্গত ও অলীক ধারণাগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করিতে থাকেন। প্রত্যেক বিষয় সম্বন্ধে তাহার অন্যায় ধারণা থাকে। তিনি সবকিছু সম্বন্ধেই ভুল ধারণা করেন এবং সব বিষয়ই উল্টা দেখেন। তাহাকে সন্তুষ্ট করা অসাধ্য। তারপর এই অবস্থার সহিত একপ্রকার জননাঙ্গ সম্বন্ধীয় উত্তেজনা, কামোন্মাদনা, তীব্র সঙ্গমলিলা বর্তমান থাকে, তাহার আক্ষেপ ও হৃদস্পন্দন হইতে থাকে, ঘর্ম দেখা দেয়, থাকিয়া থাকিয়া অবসন্নতা উপস্থিত হয়। তিনি একাকী বসিয়া থাকেন এবং নানারূপ কল্পিত বিপদ সম্বন্ধে চিন্তা করেন এবং তাহার সহিত কথা বলিলে খিটখিট করিয়া উঠেন। “ধারণাগুলি পরিষ্কার থাকে না, এবং যদি তিনি তাহার ইচ্ছাশক্তির চালনা করেন, তাহা হইলে ঐগুলি আরও খারাপ হইয়া পড়ে। “লিখিতে ও কথা বলিতে ভুল করেন, মনকে কোন বিষয়ে দৃঢ়ভাবে নিযুক্ত করিতে পারেন না, তাহার নিজের মুক্তি সম্বন্ধে চিন্তাক্লিষ্ট থাকেন।”
রোগিণী তাহার এই অবর্ণনীয় অনুভূতিকে বর্ণনা করিয়া বলেন যে, তাহার মাথার মধ্যে একপ্রকার ‘পাগলা ভাব আছে যেন তাহার ধারণাগুলি ছড়াইয়া আছে এবং তিনি যতই যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করতে চেষ্টা করেন, ততই যুক্তিশূন্য হইয়া পড়েন। তিনি কোন বিষয়ে যত বেশী চিন্তা করিতে চেষ্টা করেন, সম্ভবতঃ ততই উহা মনে আনিতে পারেন না। কিন্তু মন অন্য বিষয়ে নিযুক্ত করিলে উহা আবার মনে পড়ে। এই ঔষধে অতিশ্রমজীর্ণ এবং স্নায়বিক প্রকৃতি স্ত্রীলোকদিগের অতিরিক্ত সঙ্গম ও অত্যন্ত কামবিষয়ক উত্তেজনা হইতে নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়—উহাতে মানসিক বিশৃঙ্খলা ও তৎসহ হৃদস্পন্দন দেখা দেয়।
পাঠ্যপুস্তকে বলা হইয়াছে, “অমনোযোগী, উদ্যমহীন, কিন্তু তথাপি চুপ করিয়া থাকিতে পারে না।” রোগিণী চুপ করিয়া বসিয়া অতীত বিষয়গুলি সম্বন্ধে চিন্তা ও আলোচনা করিতে থাকিবেন, কিন্তু কেহ কিছু বলিলেই লাফাইয়া উঠিবেন, এবং তাড়াতাড়ি ও উত্তেজিতভাবে চলিতে থাকিবেন এবং কোন কারণ ব্যতীতই দরজাটি ঝন্ঝন্ করিয়া বন্ধ করিয়া দিবেন। বাড়ীর লোকেরা বা কোন বন্ধু মিষ্ট কথা কহিলেও তিনি প্রচন্ড হইয়া উঠিবেন। এই ঔষধজ বৃদ্ধির একজন রোগিণী আমাকে বলিয়াছিলেন—“রাস্তা দিয়া গাড়ী চড়িয়া যাইবার সময় কোন লোক আমার সহিত কথা কহিয়াছিল, তখন আমি এতই উন্মত্ত হইয়া পড়িলাম যে, তাঁহার মাথার উপর কিছু ছুড়িয়া দিতে ইচ্ছা করিতেছিল।” তিনি হয়ত তাহার নিজের সম্বন্ধে কিছু চিন্তা করিতেছিলেন এবং উহাতে বাধা পাইতে চাহেন নাই। ইহা একপ্রকার মেজাজের ভয়ানক অবস্থা, ভয়ঙ্কর উত্তেজনাপ্রবণতা, সামঞ্জস্যশক্তির অভাব। তিনি বলিবেন, “আমার মনে হয় যে, আমার সহিত কথা বলিলে অথবা আমাকে বিরক্ত করিলে আমার রাগ হইবেই।” বন্ধুগণের সংস্পর্শে আসিলে, তাঁহার মনোভাব এইরূপ হয়। সংস্পর্শে তাঁহার আলস্যভাব ও স্থিরভাব বিচলিত হইয়া উঠে বলিয়া মনে হয়। এই ঔষধটিতে কতকগুলি অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। পাঠ্যপুস্তকে যে-সকল অনুভূতির কথা বর্ণনা করা হইয়াছে, তাহা এতই অনিশ্চিত এবং বিভিন্ন। প্রকৃতির যে, তোমরা লক্ষ্য করিতে পারিবে, ঐগুলি পরীক্ষাকারীরা যাহা অনুভব করিয়াছিলেন, তাহাই বর্ণনা করিবার চেষ্টা মাত্র। ঐ অনুভূতিগুলি অসংখ্য এবং অবর্ণনীয়।
এইরূপ রোগিণী প্রায়ই গরম রক্তবিশিষ্টা হইয়া থাকেন। তিনি পালসেটিলার রোগিণীর ন্যায় উষ্ণ রক্তবিশিষ্টা, ঠান্ডা ঘরে থাকিতে চাহেন, এবং যে-সময়ে হাঁটিলে তাহার জরায়ুভ্রংশ বাড়িয়া উঠে যেই সময় ব্যতীত, অন্য সব সময়ে খোলা বাতাসে ঘুরিতে চাহেন। খোলা বাতাসে বেড়াইলে তাহার মস্তক-লক্ষণের উপশম হয়; খোলা বাতাসে হাটিলে উপশম শিরঃপীড়া এবং অধিকাংশ রোগ-লক্ষণই ঠান্ডায় অথবা ঠান্ডা ঘরে উপশমিত হয় এবং গরম ঘরে বর্ধিত হয়। গরম ঘরে শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। জনাকীর্ণ ঘরে, থিয়েটারে, চার্চে রোগিণী, এপিস, ‘আইওডিন’, ‘ক্যালি আইয়ড’, ‘লাইকো’ এবং ‘পালসের ন্যায় শ্বাসরোধভাবযুক্ত হন।
মাথার পশ্চাদ্ভাগ হইতে একপ্রকার উন্মত্তকর অনুভূতি মস্তক-শীর্ষ পর্যন্ত উঠে। উহা যে কি, তাহা যিনি অনুভব করেন, একমাত্র তিনিই বর্ণনা করিতে পারেন। সময়ে সময়ে উহাকে ঝিনঝিন। করার ন্যায় অথবা বিদ্যুতাঘাতের ন্যায় বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। একপ্রকার মৃদু ঝিনঝিনি। মাথার পশ্চাদ্ভাগে দেখা দিয়া মস্তকশীর্ষ পর্যন্ত উঠে এবং উহার সহিত শিরোঘূর্ণন সংযুক্ত থাকে। যখন তুমি ঐ ধারণাটিকে বদলাইতে চেষ্টা করিবে, তখন রোগীর মনে আর কোন ভাবই প্রবেশ করিতে পারিবে না। এই সকল ব্যাপার তোমাদিগকে প্রায়ই রোগীশয্যা হইতে সংগ্রহ করিতে হইবে, তাহাদিগের সম্বন্ধে চিন্তা কর, তাহা হইলেই একটা ধারণা জন্মিবে। কপালের উপর যন্ত্রণা খুব স্পষ্ট হইয়া থাকে এবং ঐরূপ যাতনার সহিত দৃষ্টিশক্তির গোলযোগ উপস্থিত হয়, দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়, ঘরটি অন্ধকার বোধ হয় অথবা চক্ষু দুইটিতে দৃষ্টিবস্তু ধরা পড়ে না।
দৃষ্টিশক্তির স্নায়বিক বিশৃঙ্খলা, আলোকাতঙ্ক, চক্ষের পাতা দুইটির আক্ষেপিক সঙ্কোচন, চক্ষুগোলকের উৎক্ষেপ চক্ষুর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, চক্ষুপত্র, চক্ষুতারকা, চক্ষুর শ্বেতমন্ডলের প্রদাহ। প্রায়ই মস্তকরোগের সহিত চক্ষু দুইটি ভিতর দিকে ঢুকিয়া যায়, একমুখী টেরা দৃষ্টি উপস্থিত হয়, কপালের যন্ত্রণায় মূৰ্ছা সম্ভাবনা দেখা দেয়। উল্লিখিত ব্যাপারগুলি হইতে বুঝা যায় যে, লিলিয়াম টিগের রোগিণী কিরূপ অত্যনুভূতিযুক্ত, অত্যন্ত স্নায়বিক ও হিষ্টিরিয়া ধাতুগ্ৰস্তা। এইসকল ব্যাপারগুলি সাধারণতঃ যেরূপ রোগিণীতে দেখা যায় তাঁহারা অত্যন্ত স্নায়বিক প্রকৃতির, হৃদপিন্ডে ধড়ফড় শব্দযুক্ত, মেরুদন্ড দিয়া নিম্নভিমুখী যন্ত্রণাযুক্ত এবং অল্প-বিস্তর জরায়ুচ্যুতিবিশিষ্ট এবং নীচের দিকে ঠেলামারা যন্ত্রণাবিশিষ্ট হন। যখন একটি অবস্থা বর্তমান থাকে, তখন সাধারণতঃ অপরটি অনুপস্থিত থাকে, উহারা পৰ্য্যায়ক্রমে দেখা দেয়, কিন্তু উহারা সমস্তই বর্তমান থাকে।
“দক্ষিণ শ্ৰেণীদেশে যন্ত্রণার সহিত যেন তিনি পাগল হইয়া পড়িবেন, মস্তকের মধ্যে এরূপ এক অনুভূতি।” পরীক্ষাকারীরা নিম্নের ভাষাটি পছন্দ করিয়াছিলেন, “মাথার মধ্যে একপ্রকার পাগল করা অনুভূতি, যে তিনি পাগল হইয়া যাইবেন।” এই মস্তিষ্কবিকৃতির অনুভূতি একপ্রকার মানসিক বিশৃঙ্খলা, যেন তিনি মনকে কেন্দ্রীভূত করিতে সম্পূর্ণ অক্ষম হইয়া পড়িয়াছেন। রোগীদিগের মস্তিষ্কবিকৃতির অনুভূতি দ্বারা এই কথাই বুঝান হইয়াছে। সময়ে সময়ে ইহা একপ্রকার শিরোঘূর্ণন যেন সবকিছুই চক্রাকারে ঘুরিতেছে অথবা যেন তিনি তাঁহার মনকে হারাইয়া ফেলিতেছেন। তারপর ইহাই আবার কপালের উপর ভীষণ ছিন্নকর শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়, উহাকে কপালের উপর পাগলকরা শিরঃপীড়া বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। এমন শিরঃপীড়া যাহাতে মানসিক গোলযোগ উপস্থিত হয়, মনে হয় যেন মনটি উন্মত্ত হইয়া গিয়াছে।
উদর, মল, মূত্র, এবং জননেন্দ্রিয়, আমাদিগকে এই ঔষধটি প্রয়োগের একটি বিশেষ ক্ষেত্র আনিয়া দেয়। উদরের সবকিছু যন্ত্রাদি পাকস্থলী হইতে নিম্নভিমুখে আকৃষ্ট হইতেছে বলিয়া বোধ হয়। রোগিণী তাহার উদরটিকে, ঝুলিয়া পড়া উদরটিকে উঁচু করিয়া তুলিয়া ধরিতে চাহেন। মনে হয় যেন বস্তিকোটরের যন্ত্রাদি বাহির হইয়া পড়িবে। রোগিণী শুইয়া থাকেন এবং একটি “T” আকৃতি ব্যান্ডেজ পরিতে চাহেন। দুই পা হইতে চাপ দিয়া উদরটিকে উঁচু করিয়া ধরিয়া রাখিতে চাহেন। ইহা একপ্রকার দুর্বলতার অথবা বস্তিগহ্বরে একপ্রকার আবেগের অনুভূতি, যেন সবকিছুই যোনিপথ দিয়া বহির্জগতে বাহির হইয়া পড়িবে।
এই ঔষধে খুব তাগিদযুক্ত উদরাময় আছে, উহা প্রাতে রোগীকে শয্যা হইতে তাড়াইয়া বাহির করে এবং তাহাকে অত্যন্ত তাড়াতাড়ি করিতে হয়। তোমরা ইহাকে সালফারে’র সহিত গোলমাল করিয়া ফেলিতে পার, কারণ লিলিয়াম টিগেও মাথায় খুব উত্তাপবোধ, পাকস্থলীতে শূন্যতাবোধ এবং হাতের তালু ও পায়ের তলায় যথেষ্ট জ্বালা আছে। ইহাতে একপ্রকার আমাশয় আছে, তোমরা তাহার সহিত ‘মার্ক করে’র আমাশয়ের পার্থক্য কদাচিৎ বুঝিতে পারিবে, কারণ উহাতেও যথেষ্ট কোথানি, আম ও রক্ত থাকে। মার্ক করে’র ন্যায় উহাতেও মল কেবলমাত্র রক্তাক্ত আমবিশিষ্ট হয়, অত্যন্ত কুন্থন থাকে এবং মলদ্বারে জ্বালা থাকে। আমি যেরূপ বর্ণনা করিয়াছি, সেইরূপ স্নায়বিক প্রকৃতির রোগীদিগের পুরাতন রোগের সাময়িক তরুণ বিকাশ স্বরূপ আমাশয় দেখা দিলে ইহা বিশেষভাবে উপযোগী হইয়া থাকে। মনে করিও না যে, এই রোগিণীকে স্নায়বিক বলা হইয়াছে বলিয়া তিনি দুর্বল অথবা খর্বকায় অথবা শীর্ণ, কারণ ইহা যেসকল রোগিণীর শিরাগুলি পুষ্ট, যাহারা দৃশ্যতঃ রক্তপ্রধান, রক্তাধিক্যযুক্ত, মাংসল ও গোলগাল, এবং স্নায়বিক প্রকৃতি এবং বিশেষভাবে যদি ঋতুলোপকালে উপস্থিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাদের পক্ষেই উপযোগী। যে-সকল স্ত্রীলোক বস্তিদেশ ও উদরের শিথিলতাযুক্ত এবং পূর্ববর্ণিতরূপ উত্তেজনাপ্রবণ এবং স্নায়বিক ধাতুযুক্ত বলিয়া হৃদস্পন্দন ও হৃদপিন্ডে ফড়ফড় শব্দের জন্য কষ্ট পান, তাহাদের প্রতিবার ঠান্ডায় পুনঃ পুনঃ আগত আমাশয়ের আক্রমণ। এইরূপ ছবির মধ্যে তোমরা ‘মার্ক কর’কে দেখিতে পাইবে না। যদি ব্যাপারটি কেবলমাত্র আমাশয়ই হইত, তাহা হইলে আমি বলিতে পারিতাম না যে, উহা কোন ঔষধটি জ্ঞাপক। এইরূপ সকল প্রকার আমাশয়ের বিকাশ “গাইডিং সিম্পটমস” পুস্তকে ছাড় পড়িয়া গিয়াছে, কিন্তু আমি উহাদিগকে পুনঃ পুনঃ যথার্থ বলিয়া প্রমাণিত হইতে দেখিয়াছি। আবার ইহাতে অত্যন্ত দুর্দম্য প্রকৃতির এবং কষ্টদায়ক কোষ্ঠবদ্ধতাও আছে।
ইহাতে মূত্রস্থলী ও সরলান্ত্রের কুন্থন আছে। মূত্রত্যাগকালে এবং মলত্যাগে বেগ দেওয়া বিরক্তিকর হইয়া উঠে, অনেকক্ষণ ধরিয়া বসিয়া কোথ দিতে হয়, বহুক্ষণ কোথ দেওয়ার পরেও মল নির্গত হয় না। যেন সরলান্ত্রে একটি গোলা রহিয়াছে, এরূপ অনুভূতির সহিত ঘন ঘন মলবেগ। যখন জরায়ুর তলদেশ সরলান্ত্রের দিকে বাঁকিয়া যায়, তখন সরলান্ত্র যেন মলে পূর্ণ আছে, এরূপ অনুভূতি জন্মে, এবং তাহার ফলে মলত্যাগপ্রবৃত্তি উপস্থিত হয়; রোগিণী বসিয়া বেগ দিতে থাকে, এবং মূত্রস্থলী ও সরলান্ত্রের কুন্থন অসহ্য হইয়া পড়ে। অবিরত মলবেগ, কিন্তু সরলান্ত্রে কিছুই মল থাকে না। তোমরা জানিয়া আশ্চর্য্য হইবে, এইরূপ লক্ষণ পাইয়া ঔষধটি দেওয়া হইলে, অত্যল্পকালের মধ্যে রোগিণীর সকল কষ্টের উপশম হয়। কিন্তু তোমরা জিজ্ঞাসা করিতে পার যে, ঐ ঔষধে জরায়ুটিকে কি পুনরায় ঠিক স্থানে লইয়া যাইবে? দেখ, ঔষধটি প্রয়োগের পর, রোগিণী তাহার সকল যন্ত্রণার উপশম পাইবেন এবং আর ঐরূপ অস্বচ্ছন্দ অবস্থা অনুভব করিবেন না। অন্ত্রশুদ্ধি নিয়মিত হইবে, মূত্রত্যাগের কষ্ট দূর হইবে এবং রোগিণী ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যযুক্ত হইবেন এবং তারপর জরায়ুটিকেও যথাস্থানে দেখিতে পাওয়া যাইবে।
“সরলান্ত্রে চাপবোধের সহিত অবিরত মলত্যাগপ্রবৃত্তি। লিলিয়াম টিগ অতি দুর্দম্য বহিনির্গত জ্বালাকর অর্শবলি আরোগ্য করিয়াছে। “প্রসবের পর অর্শ, স্পর্শে অত্যনুভূতিযুক্ত, মলত্যাগের পর আবেগ যেন সবকিছুই যোনিপথ দিয়া বাহির হইয়া পড়িবে। ইহার অর্থ এরূপ নহে যে, প্রসবের পর যে-অর্শই উপস্থিত হইবে, তাহাতেই আমরা এই ঔষধটি প্রয়োগ করিব, কিন্তু উহা পূর্ববর্ণিত ধাতুগত অবস্থায় অর্শকে আরোগ্য করিয়াছে, কেবলমাত্র অর্শ নয়, শিথিলতাপ্রাপ্ত জরায়ু ও যোনিকেও আরোগ্য করিয়াছে।
উদরের টিসুসমূহের একপ্রকার পক্ষাঘাতিক শিথিলতা বর্তমান থাকে। আমি অন্যান্য অঙ্গের সংস্রবে প্রসঙ্গতঃ জরায়ু-লক্ষণগুলিও বর্ণনা করিয়াছি। “ঋতুরক্ত অল্প কেবলমাত্র চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইবার সময়েই রক্ত প্রবাহিত হয়।” ইহাতে তোমাদিগকে ‘পালসের কথা মনে করিয়া দিবে, কারণ ঋতুরক্ত এত অল্প; আবার ‘পালসে’র রোগিণীও অনুরূপ স্নায়বিক প্রকৃতির হইয়া থাকেন। ‘পালসে স্বল্প ঋতুরক্তস্রাব আছে, কিন্তু উহার উপশম খোলা বাতাসে। উহাতেও বস্তিদেশে নীচের দিকে ঠেলামারা যাতনা আছে, যদিও তাহা এই ঔষধের ন্যায় সর্বক্ষণস্থায়ী ও এতদূর তীব্রতাযুক্ত নহে। কিন্তু এই ঔষধে ‘পালস’ হইতে স্বতন্ত্র অনেক কিছুই আছে।
তারপর হৃদপিন্ডসংক্রান্ত লক্ষণগুলি আসিতেছে। “মনে হয় যে হৃদপিন্ডটিকে মুঠা করিয়া ধরা হইতেছে, অথবা পাকসাঁড়াশীতে কঠিন ভাবে পেষণ করা হইতেছে, যেন জোর করিয়া চাপিয়া ধরা হইতেছে।” “হৃদপিন্ডের আকুঞ্চনকর যাতনা।” “নিৰ্ম্মল বাতাসে শীতার্ত, কিন্তু শিরোঘূর্ণন উপশমিত হয়।”
পৃষ্ঠে, মেরুদন্ড বরাবর নিম্নাভিমুখে বেদনা, মেরুদন্ডের উপদাহ ও অত্যনুভূতি, তৎসহ কম্পন। ইহা ঘনিষ্ঠভাবে ‘প্ল্যাটিনা’র সমতুল্য ঔষধ।
অপর নাম টাইগার লিলি (Tiger Lily)
লিলিয়াম লিলিয়েসী জাতীয় উদ্ভিদ। ইহা চীন ও জাপান দেশে জন্মে। এর ফুল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী করা হয়।
লিলিয়ামের মূলকথা
১। যোনিদ্বারে অতিশয় নিম্নমুখী চাপানুভব (bearing down), যেন বস্তি গহ্বরের বস্তুণ্ডলি যোনিদ্বার দিয়ে বাইরে বের হয়ে পড়বে। হাত দিয়ে চেপে খলে বা বসে পড়লে উহা কমে (সিপিয়ায় রোগী হাঁটুর উপর হাঁটু রেখে চেপে বসে)।
২। জরায়ু রোগ সহকারে হৃৎপিন্ডে সংকোচন বোধ (constriction)।
৩। জরায়ুর স্থানচ্যুতি ও কুন্থন সস্কারে বার বার মল ও মূত্র ত্যাগের প্রবৃত্তি।
৪। মুক্তিলাভে রোগিনীর সন্দেহ ও তারজন্য যন্ত্রনার অনুভূতি বা উৎকণ্ঠিতা হয়ে থাকে।
৫। উদাসীন বা জড়বং নিশ্চল, কিন্তু চুপ করে বসে থাকতে পারেনা, অস্থির তবুও হেঁটে বেড়াতে চায় না,ব্যস্তসমতভাব, কিছু না কিছু করতে চায় অথচ উদ্দেশ্যহীন কোন উচ্চাকাঙ্খা নেই। অবশ্যকরণীয় কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করতে পারে না বা করতে অপারগ।
৬। মানসিক অবসাদ বা ঘূৰ্ত্তিহীনতা,কাদার প্রবৃত্তি খাদ্যে অনিচ্ছ রোগিণীর জন্য যা কিছু করা হোক না কেন, সে সম্বন্ধে সে উদাসীন।
লিলিয়াম টিগ – একটি আলোচনা
১। ইউটেরাস বা জরায়ু যন্ত্রে ক্রিয়ার জন্য যে সকল ঔষধের সিপিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত লিলিয়াম টিগ তাদের একটি।
হাত দিয়ে চেপে না রাখলে, অথবা বসে না থাকলে বস্তি গহ্বরের আধেয়বস্তুগুলি যোনিপথে বাইরে বেরিয়ে পড়বে—এইরূপ অনুভূতি লক্ষণে সিপিয়াও লিলিয়াম টিগ ঔষধ দুটির অনেকটা সাদৃশ্য আছে। তাছাড়া জরায়ুর স্থানচ্যুতিতে লিলিয়ামেরমত ফলপ্রদ আর কোন ঔষধ নেই। জরায়ু প্রদেশে নিরন্তর নিম্নমুখী চাপবোধের অনুভূতির সঙ্গে লিলিয়ামে আর এক রকমের অনুভূতি থাকে। মনে হয় যেন সমগ্র বস্তিগহূরের যন্ত্রসমূহ, এমনকি সমগ্র পেটের আধেয় বস্তু সমূহ (contents) এবং বুক ও কাধও যেন নীচের দিকে যোনি অভিমুখে আকর্ষিত হচ্ছে।
২। পার্থক্য —(সিপিয়ার সঙ্গে) |
ক) সব সময় লিলিয়াম ও সিপিয়ার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা সহজ নয় তবে সম্ভবতঃ সিপিয়া অধিক পুরাতন রোগিণীদের পক্ষে উপযোগী।
লিলিয়ামের রোগিণীর- রোগের অত্যাধিক তীব্রতা,বেদনা ও যন্ত্রনা থাকে তবে যদি সিপিয়ার ধাতুবিকৃতি (cachexia) সুস্পষ্টথাকে,তবে সিপিয়াই উপযোগী।
খ) লিলিয়ামে অধিকতর মূত্র সম্বন্ধীয় উপদাহ ও ঘন ঘন মূত্র ত্যাগের প্রবৃত্তি থাকে।কখন কখনও উহা এতই বেশী থাকে যে উহা ক্যান্থারিসের কথা মনে করিয়ে দেয়।
আবার মূত্র লক্ষণের সঙ্গে মলদ্বারের উপদাহ (rectal iriation) ও যন্ত্রনাও বর্তমান থাকে। এতে মার্ক কর, ক্যাপ্সিকাম বা নাক্স ভমিকার কথা মনে পড়ে।
৩। হৃৎপিণ্ড :
লিলিয়ামের জরায়ু লক্ষণের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের কতকগুলি তীব্ৰ লক্ষণ দেখা যায়।
এতে একপ্রকার তীব্র বেদনা তার সঙ্গে প্রবল হৃৎস্পন্দন (fluttering) বা হৃৎপিন্ডের অধিক সঞ্চালন দেখা যায়। এতে সুস্পষ্টভাবে ক্যাকটাসের প্রধান হৃৎপিন্ড লক্ষণের মত হৃৎলক্ষণ-হৃৎপিণ্ডটি যেন একটি লোহার পাত দিয়ে চেপে ধরছে এরূপ অনুভূতি হতে দেখা যায়।
এই লক্ষণটি এবং তার সঙ্গে আরো কতকগুলি হৃৎপিণ্ড লক্ষণ থাকলে লিলিয়াম যেখানে নির্দিষ্ট কখন সেখানে ভূলক্রমে ক্যাকটাস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আবার এর উল্টেভাবে ক্যাকটাসের স্থানে লিলিয়ামও ব্যবহৃত হয়। কারণ লিলিয়ামের জরায়ু লক্ষণ সময়ে সময়ে এরকম প্রচ্ছন্ন থাকে যে ঐগুলি উপেক্ষিত হয়ে হৃৎপিন্ডের লক্ষণই প্রাধান্য পায়। মনে হয় এই সকল হৃৎপিন্ড, মূত্রযন্ত্র ও সরলা লক্ষণসম্ভবতঃ প্রতিক্ষিপ্ত (‘বা রিফ্লেক্স লক্ষণ) প্রকৃতপক্ষে মূলরোগ জরায়ু ও উহার আনুসঙ্গিকযন্ত্রে কেন্দ্রীভূত থকে।
৪। মনেও লিলিয়ামে সুস্পষ্ট ক্রিয়া দেখা যায়। এখানে পালসেটিলার ও ক্রন্দনশীলতা বর্তমান থাকে। ভেরেট্টাম অ্যালবাম, সালফার ও লাইকোপোডিয়ামের মত মুক্তিলাভে সন্দেহ এবং অলঙ্ঘনীয় কর্তব্য বা অবশ্য করণীয় কাজের সম্বন্ধে তাড়া অনুভব করে কিন্তু সে উহা সম্পূর্ণ করতে অসমর্থ হয়।
(আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম দ্রষ্টব্য)