OPIUM ওপিয়াম

কঠিন রোগে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে রোগী আচ্ছন্ন ও অচৈতন্য হয়ে পড়ে থাকে।
ব্যথা ছাড়া রোগের অভিযোগ, শারীরিক প্রতিক্রিয়ার অভাব, ঔষধের যথাযথ ক্রিয়া হয়না।
কোষ্ঠবদ্ধতার সহিত শক্ত গোলাকার কালো বলের মত মল।
ভয় পাওয়ার পরে ভয় থেকে যায়।
ঘুমাতে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, শরীর ঝাঁকি দিয়ে আবার শ্বাসক্রিয়া শুরু করে।
নাক ডাকা, অসম ও গড়গড় শব্দ যুক্ত শ্বাসক্রিয়া।

উপযোগিতা — বিশেষভাবে শিশু ও বৃদ্ধদের অসুখে উপযোগী। প্রথম শৈশব (শিশুদের) ও দ্বিতীয় শৈশব (বৃদ্ধাবস্থায়) এর অসুখ (ব্যারা-কার্ব, মিলিফো) উপযোগী। শিশু ও বৃদ্ধ যাদের পাতলা চুল, শিথিল মাংসপেশী ও দৈহিক উত্তেজনা থাকে না এরূপ লোকেদের পক্ষে উপযোগী। ওষুধ সহজে ক্রিয়া করতে পারে না—জৈব প্রতিক্রিয়ার অভাব, ওষুধ সুচিন্তিতভাবে নির্বাচিত হয়েও কাজ করতে পারে না। (কার্ব-ভে, ভ্যালেরি)।

রোগের উপসর্গ — কোন রকম অনুভূতি থাকে না ও আংশিক বা সম্পূর্ণ রূপে পক্ষাঘাত অবস্থা—রোগের কারণ-ভয় পেয়ে, ভয় পাওয়ার কুফল ও বহুদিন আগে ভয় পেয়েছে কিন্তু এখনও সেই ভীতি কাটেনি (একোন, হায়স) এইরকম, কয়লার ধোয়া নাকে গিয়ে, মদ্যপায়ীদের অসুখে উপযোগী। সব রোগ লক্ষণের সাথে গভীর নিদ্রা। ব্যথা বেদনা অনুভব হয় না, রোগী কোন কষ্টে অভিযোগ করে না বা কষ্টের জন্য কিছু করতে বলে। খিচুনি—শিশুদের অপরিচিত কেউ আসলে, মা ভয় পেয়ে শিশুকে স্তনদান করলে ঐ শিশুদের (হায়োস)। [মায়ের কোন কারণে রাগ হয়ে শিশুকে স্তনদান করলে খিচুনি-ক্যামমা, নাক্স-ভ], কান্নাকাটির পর খিচুনী হলে ব্যবহার্য। খিচুনীর সময় চোখ অর্ধেক খোলা ও চোখ উল্টে যায়।

হাত পায়ে খিচুনীর আগে ও পরে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে (এপিস, হেলিবোর), শ্বাস নিতে ও ছাড়তে গভীর ঘড়ঘড় শব্দ হয়।

প্রলাপ – সারাক্ষণ বকবক করে, চোখ বড় বড় মুখ লাল ও মুখ ফোলে বা অচেতন অবস্থা চোখ চকচকে, অর্ধেক খোলা, মুখ ফ্যাকাসে, নিদ্রায় আচ্ছন্ন অথচ জ্ঞান থাকে।

মনে করে সে যেন বাড়ীতে নেই (ব্রায়ো), অনবরত এইরকম মনে ভাবে। ঘুমের মধ্যে বিছানার কাপড় খোঁটে (জেগে ঐ রকম = বেল, হায়স) ।

মাতালের মত বকবক করে—রোগা, শুকিয়ে গেছে এমন বৃদ্ধ যাদের মুখ • ফোলে, আচ্ছন্নভাব, চোখ জ্বালা করে, চোখে গরম ভাব, শুকনো ভাব, ঐস্থানে জোর শব্দে নাক ডাকে—এসব লক্ষণে উপযোগী।

ঘুম — গভীর ঘুম, অচৈতন্যের মত ঐসাথে শ্বাস প্রশ্বাসে ঘড়ঘড় শব্দ, মুখ লাল, চোখ আধ বোজা ও আরক্ত, চামড়ায় গরম ঘাম বার হতে থাকে, খিচুনীর পর গভীর ঘুম।

ঘুমঘুম ভাব কিন্তু ঘুমাতে পারে না (বেল, ক্যামো), নিদ্রাহীনতা অথচ শ্রবণশক্তি বাড়ে, ঘড়ির টিকটিক শব্দ ও মোরগের কোঁকর কো তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়।

ঘুমিয়ে পড়লে শ্বাসকষ্ট হয় গ্রিন্ডেলিয়া, ল্যাকে। বিছানা এত গরম মনে হয় যে সে শুতে পারে না বিছানা শক্ত মনে হয় (আর্নিকা, ব্রায়ো, পাইরো); ঠান্ডাস্থান খোঁজার জন্য নড়াচড়া করে, গায়ের ঢাকা খুলে ফেলতে বাধ্য হয় ।

পরিপাক যন্ত্রের অক্ষমতা, অন্ত্রের পেরিসটালটিক গতি বিপরীত ভাবে হয় বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে অন্ত্রের পথ যেন বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে হয়।

কোষ্ঠবদ্ধতা — শিশুদের, মোটাসোটা, নম্র, বিনয়ী মহিলাদের গ্রাফাই; অন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা বা পক্ষাঘাত কারণে মলত্যাগের কোন ইচ্ছা থাকে না, সীসক বিষাক্ততায় কোষ্ঠকাঠিন্য। মল শক্ত, গোল কাল কাল বলের মত (চেলিডো, প্লাম্বাম, থুজা)-মলত্যাগের সময় মল কিছুটা বার হয়ে আবার ভেতরে ঢুকে যায় (সাইলি, থুজা)

মল — অসাড়ে হয়—বিশেষতঃ ভয় পেলে (জেল), মল কাল, দুর্গন্ধ মলদ্বারের সঙ্কোচক পেশীর পক্ষাঘাত হয়ে ঐরূপ মল লক্ষণে ব্যবহার্য ।

মূত্র – প্রস্রাব যেন আটকে গেছে অথচ মূত্রথলী ভর্তি। প্রসবের পর বা অধিক তামাক সেবন করে মূত্র বন্ধ, মায়ের বা স্তনদায়ী ধাত্রীর রোগ হয়ে শিশু ঐ দুধ পান করে প্রস্রাব বন্ধ হয়, জ্বর হয়ে বা তরুণ কোন রোগ হয়ে, মূত্রথলীর পক্ষাঘাত বা মূত্রথলীর সঙ্কোচক পেশীতে পক্ষাঘাত হয়ে প্রস্রাব বন্ধ হলে প্রযোজ্য।

(ট্র্যামোনিয়মে প্রস্রাব বন্ধ আছে কিন্তু ওপিয়ামে কিডনী হতে প্রস্রাব হয়ে মূত্রথলীতে জমা হয় অথচ মূত্রথলী পূর্ণ হয়ে গেছে রোগী তা বুঝতে পারে)।

ওপিয়াম অন্ত্রকে এতই নিষ্ক্রিয় করে ফেলে যে অত্যন্ত শক্তিশালী বিরেচকও (Purgative) কিছু করতে পারে না = হেরিং।

বেশী মাত্রায় ওপিয়ামের ব্যবহারে দীর্ঘস্থায়ী উদরাময় লক্ষণে শক্তিকৃত ‘ওপিয়াম ব্যবহার্য = লিপি। তরুণ চর্মোদ্ভেদ হঠাৎ লোপ পেয়ে মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতে তড়কা হলে (জিঙ্কাম) এ ওষুধ উপযোগী।

শিশুদের পুঁয়ে পাওয়া–চামড়া কুঁচকে যায়, ভাজ পড়ে দেখে মনে হয় যেন কোন শুকিয়ে যাওয়া, ছোট হয়ে যাওয়া বৃদ্ধ (এব্রোট)।

সম্বন্ধ – ওপিয়াম বিষমাত্রায় প্রয়োগ হলে উগ্ৰ কফি, নাক্স-ভ, কেলি পারমাঙ্গানেট দিতে হয় ও রোগীকে অনবরত নড়াচড়া করতে হয়। সদৃশ লক্ষণ শক্তীকৃত ওপিয়াম আফিং বিষাক্ততার কুফল নষ্ট করে।  তুলনীয়—এপিস, বেল, হায়াস, ষ্ট্র্যামো ও জিঙ্কাম।

বৃদ্ধি – ঘুমের সময় ও ঘুমের পর (এপিস, ল্যাকে)। ঘাম হতে থাকলে, গরমে, উত্তেজক দ্রব্যে।

উপশম – ঠান্ডায়, অবিরত হাঁটাচলায়।

শক্তি—৩০, ২০০, ০/১ হতে ০/৩০ শক্তি।

হ্যানিম্যান বলেছেন যে, অন্য যে কোন প্রকার ঔষধের থেকে ওপিয়ামের ক্রিয়া নির্ধারণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। যে সকল লক্ষণ সমূহের উপর ওপিয়ামের কাজ দেখতে পাওয়া যায় তা হল, বায়ুমন্ডলের অনুভূতিহীণতা, অবসন্নতা, নিদ্রালুতা, বিহুলতা, বেদনা শূণ্যতা এবং স্পর্শজ্ঞান শূণ্যতা, সববাঙ্গীন শিথিলতা ও জীবণীশক্তির প্রতিক্রিয়া হীণতা প্রভৃতি লক্ষণগুলি হল এই ঔষধের প্রধান লক্ষণ এবং ঔষধটি হোমিওপ্যাথিক মতানুসারে প্রয়োগ করার সময় এই লক্ষণগুলির উপরই নির্ভর করা হয়। সকল উপসর্গের বৈশিষ্ট্য হল, গভীর নিদ্রা। উপসর্গ গুলি বেদনাশূণ্য এবং লক্ষণগুলির সঙ্গে আরো সংশ্লিষ্ট থাকে গভীর জড়বৎ নিদ্রা, নাক ডাকা সহ গভীর নিদ্রা। চামড়া ঘামে পূর্ণ। কালো, মেহ গিনি কাঠের মত বর্ণযুক্ত মুখমন্ডল। মস্তিষ্কে রস নিঃসরণ হেতু সন্ন্যাস রোগ শিরা গুলির রক্তাধিক্য। যে সকল ক্ষেত্রে কোন ঔষধের কাজ করার জন্য শরীরের যে অনুভূতি থাকা প্রয়োজন তা থাকে না, ঐ জাতীয় ক্ষেত্রে ওপিয়াম প্রয়োগ করা হলে শরীরের অনুভূতি ক্ষমতা ফিরে আসে। শরীর উত্তপ্ত হলে লক্ষণগুলি ফিরে আসে ও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। ওপিয়াম শরীরের ঐচ্ছিকগতি কমিয়ে দেয়, চোখের তারা গুলিকে সঙ্কুচিত করে, উচ্চস্তরের মেধাশক্তিকে অবসাদ গ্রস্ত করে, আত্ম সংযমের অভ্যাস কমিয়ে দেয়, মনঃ সংযোগের ক্ষমতা ও বিচার বুদ্ধির ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ; কল্পনা শক্তি বাড়িয়ে তোলে, শরীরের সকল স্রাব নিঃসরণ অবরুদ্ধ করে কেবল মাত্র ঘাম ব্যতীত ঔষধ কাজ করার জন্য শরীরের যে সামান্য অনুভূতি শক্তির থাকা প্রয়োজন সেটুকুর অভাব দেখা দিলে। যে সকল রোগ ভীতি থেকে সৃষ্টি হয়।

মন – রোগী কিছুই চায়না। চেতনার সম্পূর্ণ লোপ ; সন্ন্যাস রোগের মত অবস্থা। ভীতি পূর্ণ কল্পনাসমূহ, দুঃসাহসিক, উৎফুল্ল, উজ্জ্বল, নিজের কষ্ট বুঝতে বা বলতে অক্ষম। সে মনে করে সে। বাড়ীতে নেই। প্রলাপযুক্ত কথাবার্তা, তৎসহ চোখ দুটি বিস্ফারিত ।

মাথা — মাথাঘোরা বৃদ্ধি ব্যক্তিদের মাথার ভিতরে হাল্কা বোধ। নিস্তেজ, ভারবোধ, জড়। প্রলাপ, ভয় পাবার পরে মাথা ঘোরা। মাথার পিছনের অংশে বেদনা ;ঐ স্থানে প্রচন্ড ভারীবোধ। (জেল)। ফেটে যাবার মত অনুভূতি। সম্পূর্ণ অনুভূতিশক্তিহীণতা;কোন কিছু বুঝতে পারে না। মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত।

চোখ – অর্ধনিমীলিত চোখ, প্রসারিত; চোখের তারাগুলি অনুভূতি হীণ, সঙ্কুচিত। চোখের পাতার পতনাবস্থা, (জেলস ; কষ্টিকাম)। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা, চোখ দুটি চঞ্চকে।

মুখমন্ডল – লাল, থম্‌থমে, স্ফীতি, কালচে, রসে পরিপূর্ণ, উত্তপ্ত। অনেকটা মাতালদের মত মুখমন্ডল, হতবুদ্ধিকর (ব্যাপ্টিসিয়া ; ল্যাকেসিস)। মুখমন্ডলের, পেশী সমূহের আক্ষেপিক স্পন্দন, বিশষ করে মুখগহ্বরের কোন গুলির। মুখমন্ডলের শিরাগুলি প্রসারিত। নিম্ন চোয়াল ঝুলে পড়ে। মুখমন্ডলের বিকৃত অবস্থা।

মুখগহ্বর – শুষ্ক জিহ্বা কালচে, পক্ষাঘাত গ্রস্ত, রক্ত মিশ্রিত ফেনা। প্রচুর পিপাসা। ঠোট দুটি সামনের দিকে ঠেলে আসে। কথা উচ্চারণ করা ও ঢোক গেলা কষ্টকর।

পাকস্থলী – বমি তৎসহ শূলবেদনা ও তড়কা। মল যুক্ত বমন। হার্ণিয়া বা অন্তবৃদ্ধি, যে ক্ষেত্রে বেরিয়ে আসা অস্ত্র হাত দিয়ে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ক্ষুধার্ত ; আহার করার কোন স্পৃহা থাকে না।

উদর – শক্ত, স্ফীত ও বায়ুতে পূর্ণ। সীসা জনিত শূল বেদনা। শূল বেদনার সময়, মল বেগ উপস্থিত হয় ও শক্তমল নির্গমন হয়।

মল – দুর্দমনীয় কোষ্ঠকাঠিণ্য ; মলত্যাগ করার কোন প্রকার ইচ্ছা থাকেনা। মল গোলাকার, শক্ত,কালচে বর্ণের মত। মল বেরিয়ে আসার সময় পুনরায় ভিতরে ঢুকে যায় (থুজা; সাইলিসিয়া) । ক্ষুদ্রান্ত্রে মলের আক্ষেপিক অবরোধ। অসাড়ে মলত্যাগ, কালো, দুর্গন্ধ যুক্ত ও ফেনা মিশ্রিত। সরলাস্ত্রে তীব্র বেদনা, মনে হয় যেন সরলা চেপে পৃথক করা হচ্ছে।

প্রস্রাব – ধীরে শুরু হয় মূত্রধারা ক্ষীণ। বাধাপ্রাপ্ত অথবা অসাড়ে প্রস্রাব ভয় পাবার পরে। প্রস্রাব থলির ক্ষমতার লোপ পাওয়া অথবা অনুভূতি শক্তিহীণতা।

স্ত্রীরোগ — ভয় পাওয়া থেকে বাধাপ্রাপ্ত ঋতুস্রাব। প্রসব বেদনার লোপ পাওয়া তৎসহ অচৈতণ্য অবস্থা ও নর্তন। প্রসবান্তিক আক্ষেপ, নিদ্রালুতা অথবা দুটি আক্ষেপ কালের মধ্যবর্তী সময়ে অচৈতন্য অবস্থা। ভয় পাওয়া থেকে অবসন্ন গৰ্ভস্রাব ও অবরুদ্ধ প্রসবান্তিক স্রাব, তৎসহ গভীর নিদ্রা। জরায়ুতে প্রসব বেদনার মত তীব্র বেদনা, তৎসহ মলবেগ।

শ্বাস যন্ত্র সমূহ – নিদ্রা যাবার সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়; ঐ অবস্থায় জোর করে শ্বাস-প্রশ্বাস শুরু করলে আবার তা চালু হয় (গ্রিন্ডিলিয়া)। স্বরভঙ্গ। গভীর নাক ডাকা ; ঘড় ঘড় শব্দ যুক্ত গভীর শ্বাস প্রশ্বাস। কষ্টকর, থেমে – থেমে, গভীর, অসম প্রকৃতির শ্বাস-প্রশ্বাস। বুকের ভিতরে গরম বোধ ;হৃদপিন্ডের চারিপাশে জ্বলন। কাশি, তৎসহ শ্বাসকষ্ট ও মুখমন্ডল নীলচে তৎসহ রক্ত যুক্ত শ্লেষ্মা।

ঘুম — প্রচন্ড নিদ্রালুতা (জেলস ; নাক্স মস্ক্যাটা)। গভীর এবং সংজ্ঞাহীন নিদ্রা। সম্পূর্ণ অচৈতণ্য অবস্থা। ঘুমিয়ে পড়লে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় (গ্রিভেলিয়া)। চোখ খোলা অথচ অচৈতণ্য অবস্থা। বিছানা খুঁটতে থাকে। প্রচন্ড নিদ্রালুতা, কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারে না। দূর স্থানের শব্দ, মোরগের ডাক প্রভৃতি রোগীকে জাগিয়ে রাকে। শিশু স্বপ্নে বিড়াল, কুকুর, কাল মূর্তিসকল দেখে থাকে। বিছানা এত গরম বলে মনে হয়, যার ফলে রোগী তার উপর শুতে পারে সুখদায়ক অবাস্তব ও অবৈধ প্রেমজনিত স্বপ্ন সমূহ। কম্পন সহ শীতবোধ ; এরপরে গরম বোধ, তৎসহ ঘুম ও ঘাম হয়। কেবলমাত্র উত্তপ্ত অবস্থায় পিপাসা।

জ্বর – নাড়ী পূর্ণ ও মন্থর। উত্তাপ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। উষ্ণ ঘাম। জ্বর, তৎসহ যে সকল বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লক্ষণ সমূহ থাকে তা হল, অচৈতণ্য অবস্থা, নাক ডাকা সহ গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্পন্দন, প্রচুর পিপাসা এবং নিদ্রালুতা। তাপমাত্রা সামান্য তৎসহ অচৈতণ্য অবস্থা প্রাপ্তির প্রবণতা।

পিঠ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – ধনুষ্টঙ্কারের মত দেহ পিছন দিকে বেঁকে যায়। ঘাড়ের শিরার স্ফীতি। বেদনাহীন পক্ষাঘাত (ওলিয়্যান্ডার)। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্পন্দন। অসাড়তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এরূপভাবে ঝাঁকুনি দেয়, যেন মনে হয় সঙ্কোচনী পেশী সমূহ অতিরিক্ত কাজ করছে। তড়কা ; আলোর চমকানিতে বৃদ্ধি ;অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শীতলতা।

চামড়া — উষ্ণ ও স্যাঁৎসেঁতে ঘাম। অবিরাম গায়ের চাপা খুলে ফেলতে চায়। সারা শরীরে গরম ঘাম হয় কেবলমাত্র নিম্নাঙ্গ ব্যতীত।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি – গরমে, ঘুমের মধ্যে ও ঘুমের পরে (এপিস; ল্যাকেসিস)।

উপশম — ঠান্ডা বস্তুতে, অবিরাম হাঁটাচলায়

সম্বন্ধ-তুলনীয় — এপিস; বেলেডোনা ; জেলস ; নাক্স মস্ক্যাটা; মফিনাম (বেদনায় অত্যন্ত অনুভূতি প্রবণ; স্পন্দন ; পেট ফাঁপা ; প্রচন্ড চুল কানি; কোডিন – (শুষ্ক, বিরক্তিকর, অবিরাম কাশি ;পেশী সমূহের স্পন্দন, বিশেষকরে চোখের পাতার পেশী সমূহের)।

দোষঘ্ন — ওপিয়াম বিষক্রিয়ার তরুণ অবস্থা। এই ঔষধটির প্রতিষেধখ হল এট্রোপিন ও কালো কফি। পুরাতন ওপিয়াম বিষক্রিয়া। ইপিকাক; নাক্স ; প্যাসিফ্লোরা ; আফিংএর নেশা দূর । করতে বাবারিস উপযোগী।

শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি এবং ২০০ শক্তি। অহোমিওপ্যাথিক প্রস্তুতি ও ব্যবহার সমূহ তীব্র বেদনা, অনিদ্রা, অন্ত্রাবরক ঝিল্লী প্রদাহে সাময়িক উপশম দায়ক হিসাবে কাজ করে এবং অতিরিক্ত উদরাময় প্রভৃতি রোধ করে।

পিয়াম (ক্রুন্ড) – ঘোষিত প্রয়োজনীয় মাত্রা হল, ১ গ্রেণ।

ওপিয়ামের আশ্চৰ্য্য প্রকৃতির মধ্যে এক বিশেষ শ্রেণীর রোগ আছে, তাহাতে সুস্পষ্ট যন্ত্রণাশূন্যতা, ক্রিয়াহীনতা এবং জড়তা থাকে। অনেক পরীক্ষাকারী সামান্যমাত্র মাত্রায় ইহা সেবন করার পর, জড়তা বোধ করিয়াছিলেন, চতুর্দিকস্থ ব্যাপার উপলব্ধি করিতে এবং অনুভব করিতে অক্ষম হইয়া পড়িয়াছিলেন এবং ব্যাপারগুলির প্রকৃতি বুঝিবার এবং ঐ সম্বন্ধে বিচার করিবার শক্তি হারাইয়াছিলেন। দৃষ্টি, স্বাদ, স্পর্শ সম্বন্ধে ভ্রান্তি, তিনি যে অবস্থায় আছেন। তৎসম্বন্ধে ভ্রান্তি, তাঁহার আত্মোপলব্ধি সম্বন্ধে ভ্রান্তি, সমস্ত ইন্দ্রিয়শক্তির অত্যন্ত ভ্রান্তির সহিত বিকৃত অবস্থা।

ইহার সর্বাঙ্গীণ প্রকৃতিগত লক্ষণ যন্ত্রণাহীনতা, কিন্তু কখন কখন উহার বিপরীত অবস্থাও দেখা যায়, তখন সামান্যমাত্র মাত্রায় ওপিয়াম সেবনে যন্ত্রণা, নিদ্রাহীনতা; অস্বস্তি, স্নায়বিক উত্তেজনা উৎপন্ন করে; ইহা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেরূপ হয় তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা। অধিকাংশ রোগীরই কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে কিন্তু কোন কোন রোগীতে আমাশয় ও কুন্থন দেখা যায়। রোগী নিদ্রাতুর থাকে, আবার সময়ে সময়ে এই ঔষধটির প্রকৃতিতে নিদ্রাহীন রাত্রি, উৎকণ্ঠা, শব্দে অত্যনুভূতি দেখা যায়, সেইজন্য সে বলে যে, সে দেওয়ালের উপর মাছি চলার শব্দ শুনিতে পাইতেছে, বহু দূরের গির্জার ঘন্টাবাদন শব্দ শুনিতে পাইতেছে।

সাধারণতঃ মনে করা হয় যে, এই দুই বিপরীত অবস্থার একটি মুখ্য এবং অপরটি গৌণ। একথা যথার্থ, কারণ যাহাদের জড়তা ও যন্ত্রণাশূন্যতা প্রকাশ পায়, তাহারাই পরে বর্ধিত অনুভূতিপ্রবণতা, উৎকণ্ঠা এবং উপদাহিতার অবস্থায় চলিয়া যায়, আবার যাহাদের প্রথমে বর্ধিত অনুভূতিপ্রবণতা থাকে তাহারাই পরে জড় অবস্থায় উপস্থিত হয়। কতকগুলি অত্যনুভূতিযুক্ত। পরীক্ষাকারীরা একমাত্রা ঔষধ গ্রহণের এক ঘন্টার মধ্যে মস্তিষ্কের তলদেশ-সংক্রান্ত শিরঃপীড়ায় আক্রান্ত হয়, ফলে তাহারা বালিশ হইতে মাথা তুলিতে পারে না, উহারা পক্ষাঘাতিকবৎ হইয়া পড়ে, যন্ত্রণা তাহাদিগকে শয্যাশায়ী করিয়া ফেলে। কিন্তু অধিকাংশ পরীক্ষাকারীরই অধিক মাত্রায় ঔষধ গ্রহণ না করা পর্যন্ত এরূপ হয় না। ইহা মুখ্য কি গৌণ ক্রিয়া তাহা লইয়া অনেক তর্কবিতর্ক হইয়াছে। বস্তুতঃ যাহা একজনের পক্ষে ক্রিয়া, তাহাই আর একজনের পক্ষে প্রতিক্রিয়া; কিন্তু সবই যখন ঐ একই ঔষধের ফল তখন যেরূপ ফলই আসুক না কেন তাহাই ঔষধটির লক্ষণ।

ইহার জড়তা এবং যন্ত্রণাশুন্যতা সর্বাপেক্ষা আশ্চর্য লক্ষণ । উপযুক্তভাবে নির্বাচিত ঔষধে প্রতিক্রিয়ার অভাব এই ক্রিয়াহীনতার মধ্যে প্রকাশিত হয়। এস্থলে ইহা ‘সালফারের প্রতিযোগী। রোগীটিকে পরীক্ষা করিয়া তুমি হয়ত অনেকগুলি ওপিয়াম-জ্ঞাপক লক্ষণ পাইলে এবং এইভাবে পরিচালিত হইয়া ওপিয়াম প্রয়োগ করিলে, তখন দেখিবে যে শারীরবিধানের জড়তা চলিয়া গিয়া, প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে।

ক্ষতসকল সম্পূর্ণ যন্ত্রণাবিহীন, উহাতে মাংসাঙ্কুর উৎপন্ন হয় না, খাইয়া যায় না, বিস্তৃত হয় , ক্ষতে স্পর্শকাতরতা থাকা উচিত কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ অসাড় ও অনুভূতিশূন্য। অনেক ক্ষেত্রে ওপিয়াম আরোগ্য করিবে। কোন অঙ্গ অত্যন্ত প্রদাহযুক্ত হইলেও তাহাতে অনুভূতিশূন্যতা।

পক্ষাঘাতিক অবস্থা, অথবা অর্ধপক্ষাঘাত, আংশিক পক্ষাঘাত, ক্রিয়াহীনতা, মন্থরতা। এইরূপ অবস্থা অন্ত্রাদিতে দৈখা যায়, ফলে উহাতে কোন নড়াচড়া থাকে না, সরলান্ত্র গোলগাল কঠিন কাল বলের ন্যায় মলে পূর্ণ থাকে, উহা আঙ্গুল দিয়া বা চামচে দিয়া টানিয়া বাহির করিতে হয়। কোনরূপ ক্রিয়া থাকে না, মলত্যাগে বেগ দিবার শক্তি থাকে না।

মূত্রস্থলীরও ঐ একই অবস্থা। উদর পেশীগুলিতে চাপ দিবার ক্ষমতা থাকে না, সে মূত্রত্যাগে বেগ দিতে পারে না। মূত্রাবরোধ, বেগ উৎপাদনকারী পেশীগুলির আংশিক পক্ষাঘাত।

পান করিবার সময় মনে হয় যেন অন্ননালীটি ক্রিয়াহীন হইয়া পড়িয়াছে, তরল পদার্থনামিয়া যায় না কিন্তু নাকের মধ্য দিয়া বাহির হইয়া পড়ে; ইহা একপ্রকারের আংশিক পক্ষাঘাত; তরল পদার্থ ভুল পথে নামে এবং নাক দিয়া বাহির হইয়া আসে।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ও পেশীগুলির দুর্বলতা দুর্বলতা ও পক্ষাঘাত।

অনেক সময়ে একপ্রকার শান্ত অবস্থা থাকে। তিনি একাকী থাকিতে চান। তাহার গাত্রতাপ হয়ত ১০৫– ১০৬ ডিগ্রী । দেহ উত্তপ্ত ঘৰ্ম্মে ঝলসাইয়া যাইতেছে, নাড়ী দ্রুত হইয়া পড়িয়াছে, তিনি হয়ত প্রলাপ বকিতেছেন, কিন্তু তিনি বলিবেন যে, তিনি পীড়িত নহেন। তুমি তাহাকে জিজ্ঞাসা কর যে তিনি কেমন আছেন, তিনি বলিবেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও সুখী আছেন, কোন যন্ত্রণা বা কামড়ানি নাই; কিছুই চাহেন না এবং কোন উপসর্গও নাই। কিন্তু শুশ্রষাকারিণী তোমাকে বলিবেন যে তিনি কোন মল বা মূত্রত্যাগ করেন নাই। মুখমন্ডল হতবুদ্ধির ন্যায়, ফুলাফুলা ও বেগুনিবর্ণ দেখাইবে, চক্ষুদ্বয় কাচপ্রভ, চক্ষুতারা দুইটি সঙ্কুচিত। মস্তিষ্ক বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। আবার হয়ত মানসিক লক্ষণগুলিই স্পষ্ট থাকে । এবং দৈহিক লক্ষণগুলি সেরূপ প্রকাশিত থাকে না, রোগীর মানসিক গোলযোগ, প্রলাপ, বাচালতা উপস্থিত হয়; কিন্তু এরূপ অবস্থা বিরল; সাধারণতঃ রোগীকে কেবলমাত্র জাগাইয়া তুলিলে কথা বলে এবং সে আচ্ছন্ন নিদ্রায় পড়িয়া থাকে, কিছুই বলে না, কিছুই করে না। কখন কখন মনের প্রফুল্লভাবের সহিত প্রলাপও দেখিতে পাওয়া যায়।

পাকস্থলীতে অস্বাভাবিক উত্তাপ, নিমগ্নতা, শূন্যতা, ক্ষুধার অনুভূতি থাকে কিন্তু আহারে ঐ ভাবের উপশম হয় না। সে পেট পুরিয়া খায় কিন্তু ঐ মূৰ্ছাভাবটি থাকিয়াই যায়। খাদ্য পাকস্থলীতে গিয়া টক হইয়া উঠে এবং বমিত হইয়া যায়। সে আর খাদ্য গ্রহণ করিতে পারে। তাহার দেহ শীতল ঘৰ্ম্মে আবৃত হইয়া পড়ে, অত্যন্ত অবসন্নতা, বমনবেগ, উকি উঠা ও বমন চলিতে থাকে। ওপিয়াম বা মর্ফিনাম দেওয়ার পরবর্তী বমননাদ্বেগ ও বমন একটি কষ্টদায়ক লক্ষণ। ইহা একপ্রকার দীর্ঘকাল স্থায়ী বমন ও বমিবমি ভাব। সে পাকস্থলীতে কিছুই গ্রহণ করতে পারে না। এবং বমনও কিছুতেই থামে না। কিন্তু হোমিওপ্যাথ ক্যামোমিলা’র ব্যবহার জানেন এবং একটি মাত্রাতেই সঙ্গে সঙ্গে আশ্চৰ্য্য উপশম দেয় এবং ঐ মারাত্মক নিমগ্নতা ও বমনেচ্ছা দূর করে।

রোগী-গৃহে কোনরূপ অসংস্কৃত ওপিয়ামের ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। অবশ্য একথা স্বীকার্য যে সময়ে সময়ে অস্ত্রচিকিৎসায় ঐরূপ কিছু প্রয়োজন হইতে পারে এবং আমরা ঐ বিষয় লইয়া অস্ত্রচিকিৎসকের সহিত বিবাদ করিব না। কিন্তু রোগাধিকারে এবং রোগীর পক্ষে উহার প্রয়োজন নাই। উহা দ্বারা কোন উপকার হয় না এবং পরিণামে অনিষ্ট করে; উহা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খুঁজিয়া বাহির করার বাধা দেয়। ইহা লক্ষণগুলিকে প্রচ্ছন্ন রাখে, রোগীকে খারাপ করিয়া দেয় এবং তোমরাও অনেকদিন যাবৎ কিছুই করিতে পার না ।

ওপিয়ামের খুব অপব্যবহার হইয়াছে এবং উহার সম্বন্ধে অনেক কথা জানাও গিয়াছে কিন্তু ঐরূপ অপব্যবহারে ঔষধটির পরীক্ষায় বিশেষ কোন সাহায্য পাওয়া যায় নাই, কারণ ঐরূপভাবে স্বতন্ত্রীকরণের উপযুক্ত লক্ষণ পাওয়া যায় না। অধিক মাত্রায় স্কুলক্রিয়া পাওয়া যায় এবং ঐভাবে যে লক্ষণগুলি পাওয়া যায় তাহাও সময়ে সময়ে উপযোগী হয়;—উদাহরণস্বরূপ মস্তিষ্কের সন্ন্যাসরোগ, উহার সহিত নাসাধ্বনিবিশিষ্ট শ্বাসক্রিয়া, চোয়াল ঝুঁলিয়া পড়া, চক্ষুতারকা বিস্তৃত বা সঙ্কুচিত হইয়া পড়া, সাধারণতঃ শেষেরটি, মুখমন্ডল চিত্রবিচিত্র, বেগুনিবর্ণ বা উত্তপ্ত, উত্তপ্ত ঘৰ্ম্ম এবং একপার্শ্বিক পক্ষাঘাত সে পক্ষাঘাতিক হইয়া থাকুক, অথবা আফিং খাইয়া থাকুক, অথবা পড়িয়া যাইয়া আঘাত পাইয়া থাকুক, অথবা বোতলের (মদের) আশ্রয় লইয়া থাকুক, এইরূপ একটি রোগী দেখিলে তোমরা বিস্মিত হইয়া পড়িবে এবং প্রভেদ নির্ণয় করিবার জন্য রোগীটিকে পরীক্ষা করিবে । ইহা একটি যান্ত্রিক রোগ, মস্তিষ্কের উপর রক্তের চাপ। একমাত্র উহা দ্বারাই সম্ভবতঃ রোগীর মৃত্যু হইবে না কিন্তু পরে ঐ রক্তের চাপটির চারিদিকে প্রাদাহিক ক্রিয়া আরম্ভ হইবে। ওপিয়াম মস্তিষ্কের দিকে রক্তকে ধাবিত করে এবং হোমিওপ্যাথি মতে দেওয়া হইলে উহা নিবারণ করে এবং ছয় ঘন্টার মধ্যেই রোগী সজ্ঞান হইয়া উঠে, তাহার চর্ম শীতল হয়, মুখের বর্ণ স্বাভাবিক হয়, নাড়ী স্বাভাবিক হয়। সুতরাং আমরা ওপিয়ামের স্কুলক্রিয়ারও উপযোগিতা দেখিতেছি, উহা আমাদিগকে সন্ন্যাসরোগের একটি চিত্র দেয়।

স্নায়বিক শিরঃপীড়া, মস্তকের পশ্চাৎদিকে আরম্ভ হয় এবং সমগ্র মুখমন্ডলের উপর বিস্তৃত হইয়া পড়ে; প্রাতে অধিক খারাপ হয়। সে মনে করে যেন তাহার মাথা, মস্তিষ্কের তলদেশের দারুণ কনকনানির জন্য বালিশের সহিত সাটিয়া যাইতেছে। ইহা স্ত্রীলোকদিগের মধ্যেই সাধারণতঃ দেখা যায়, ইহা একপ্রকার কৃত্রিম রক্তপূর্ণতা; উত্তেজনাজনক অবস্থা, গর্ভকাল বা ঋতুকাল ধরিয়া চলে, এরূপ একপ্রকার শিরঃপীড়া। রোগিণী উঠিয়া বসেন এবং পুনরায় শুইতে অক্ষম হইয়া পড়েন। যন্ত্রণা প্রাতে আরম্ভ হয় এবং উহা এতই তীব্র হয় যে, তিনি নড়িতে পারেন , চক্ষের পলক ফেলিতে পারেন না, মাথা ঘুরাইতে পারেন না, সামান্য ঝাকি অথবা ঘড়ির টিকটিক শব্দও সহ্য করিতে পারেন না, মুখমন্ডল চিত্রবিচিত্র, বেগুনিবর্ণ নীল হইয়া পড়ে, চক্ষু কোটরগত হয়। তাহার নিকট হইতে লক্ষণ পাওয়া কঠিন হইয়া পড়ে। ওপিয়াম সঙ্গে সঙ্গেই উপশম দিবে।

কিন্তু ইহার অধিকাংশ রোগই যন্ত্রণাহীন।

ইহার রোগীর চেহারা মাতালের মত হয়, মূঢ়ের মত মুখশ্রী, মূঢ়ের ন্যায় মুখভাবের সহিত জ্বর। মদ্যতায়, তাহার সহিত ভীষণ উল্কণ্ঠা, বমন, রক্তসঞ্চয়জনিত শিরঃপীড়া, চক্ষুতারা সঙ্কুচিত; মদ্যপানের পর তীব্র শিরঃপীড়া অবসন্নতা বিছানা ছাড়িয়া উঠিতে পারে না, ভুল বকে। অধিকাংশ রোগে অচৈতন্য নিদ্রা বর্তমান থাকে, সন্ন্যাসরোগের ন্যায় অচৈতন্য হইয়া পড়িয়া থাকে, তাহাকে জাগান যায় না।

পিয়ামের রোগী আক্ষেপে পূর্ণ থাকে। রোগী অনাবৃত হইতে চায়, ঠান্ডা বাতাস চায়, খোলা বাতাস চায়। ঘর যদি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়, তাহা হইলে আক্ষেপ দেখা দেয়। পশ্চাৎবক্রতাযুক্ত আক্ষেপ, মাথা পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হয়, মস্তিষ্ক-মেরুমজ্জাপ্রদাহ। মস্তিষ্ক মেরুমজ্জাপ্রদাহের রোগীতে আমরা দেখিব যে আক্ষেপ উপস্থিত হইতেছে, পশ্চাৎবক্রতা দেখা দিতেছে, মাথা পশ্চাদ্দিকে আকৃষ্ট হইয়াছে, রোগী আচ্ছাদনবস্ত্র লাথি মারিয়া ফেলিয়া দিতেছে, ঠান্ডা ঘরে থাকিতে চাহিতেছে, চর্ম লাল, মুখমন্ডল লাল ও চিত্রবিচিত্র হইয়া পড়িয়াছে, চক্ষুতারা সঙ্কুচিত হইয়াছে। এইরূপ অবস্থায় মাতা যদি আক্ষেপের উপশম জন্য শিশুকে গরম জলের টবে বসান, তাহা হইলে শিশু অজ্ঞান ও মূতের ন্যায় শীতল হইয়া পড়িবে। যদি তোমাদিগকে এরূপ রোগী দেখিতে ডাকা হয়, নিশ্চিতই ওপিয়াম প্রয়োগ করিবে এবং বারঘন্টার মধ্যেই রোগীকে সুস্থ হইতে দেখিয়া বিস্মিত হইবে। ইহা এক্ষেত্রে ‘এপিসে’র সহিত প্রতিযোগিতা করে। প্রসবান্তিক আক্ষেপ।

এইরূপ ধাতুতে এক বিশেষ প্রকারের মানসিক অবস্থা দেখা যায়। ভয় পাওয়া ও তাহার কুফল। ওপিয়ামের রোগী অত্যন্ত বিমূঢ়ভাববিশিষ্ট না হইলে, চমকাইয়া উঠার ন্যায় জাগিয়া উঠে, অত্যন্ত ভীত ও উৎকণ্ঠিত চেহারা লইয়া জাগিয়া উঠে। পুরাতন আফিমসেবীরা উৎকণ্ঠা ও ভয়ে অভিভূত থাকে। যদি একটি কুকুর সহসা তাহার দিকে লাফাইয়া পড়ে, তাহা হইলে সে আক্ষেপগ্রস্ত হইয়া পড়িবে, উদরাময় দেখা দিবে, কোন না কোন রকমের মূর্চ্ছাগ্রস্ত হইবে এবং তাহার ঐ ভয় চলিয়া যাইতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ কাটিয়া যাইবে। ভয়ের ভাবটি থাকিয়া গেলে ভয় হইতে পীড়া, অথবা ভয়ের ধারণাটি থাকিয়া গিয়াছে অথবা ভয়ের কারণটি যেন চক্ষুর সম্মুখে দেখিতে পাইতেছে এরূপ অবস্থায় পীড়া। একজন গর্ভবতী স্ত্রীলোক ভয় পাইলেন, গর্ভস্রাব আসন্ন হইয়া পড়িল, ভয়ের জিনিষটি অবিরত তাহার চক্ষুর সম্মুখে আবির্ভূত হইতে লাগিল, এরূপ অবস্থা। ভয় পাওয়ার সময় হইতে মৃগীরোগ, মৃগীর আক্রমণ উপস্থিত হইবার পূর্বে ঐ ভয়ের জিনিষটি চক্ষুর সম্মুখে ভাসিয়া উঠে এবং ভয়ের আতঙ্কটি থাকিয়া যায়। হিষ্টিরিয়ার আক্রমণ; অথবা দৈহিক অভিঘাত, তৎসহ উদরাময়, এবং সময়ে সময়ে কোষ্ঠবদ্ধতা; উহার ফলে মূত্রাবরোধ অথবা ঋতুস্রাবের প্রত্যাবর্তন, আবার উহার ফলে কয়েক মাস যাবৎ ঋতুস্রাব বন্ধ হইয়া থাকিতে পারে। এই সকল অবস্থায় অত্যন্ত ভয় থাকে এবং রোগী ভয়ের বস্তুটি চক্ষর সম্মখে দেখে।

ওপিয়ামের পরীক্ষাকারী ঔষধের ক্ষমতাধীন অবস্থা হইতে মুক্ত হওয়ার সময়, ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তিসকল, কাল কাল আকৃতিসকল, শয়তান, আগুন, ভূতের স্বপ্ন, কেহ তাহাকে বহন করিয়া লইয়া যাইতেছে এরূপ, অথবা হত্যা সম্বন্ধে স্বপ্ন দেখে। মনে করে যেন তাহার অঙ্গাদি স্ফীত হইতেছে এবং সে ফাটিয়া যাইবে ।

আবার এই ঔষধ সেবনের পর প্রথম কয়েক ঘন্টা শারীরিক সুস্থ থাকার অনুভূতি, অত্যন্ত আনন্দভাব, আত্মবিশ্বাসের অবস্থাও থাকিতে দেখা যায়। সুতরাং আকস্মিক আনন্দ, ক্রোধ, লজ্জা এবং আকস্মিক ভয় হইতে পীড়াতেও ইহা উপযোগী। কফিয়া’তেও এইরূপ পরমানন্দের অবস্থা আছে। ওপিয়াম ও কফিয়া’ পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত এবং একে অপরের প্রতিবিষ।

আফিমসেবীরা, হুইস্কিপানকারীদের ন্যায় ধাতুগতভাবে মিথ্যাবাদী। তাহাদের বিবেক বলিয়া কিছু থাকে না।

“শব্দে, আলোকে, সামান্য মাত্র গন্ধে অত্যন্ত ইন্দ্রিয়জ্ঞান।” “শিরঃপীড়ার সহিত তন্দ্রাভাব, ঐ তন্দ্রাভাব প্রায় আচ্ছন্ন নিদ্রার সদৃশ।” “পুঁয়ে-পাওয়া শিশুর চৰ্ম্ম কুঞ্চিত হইয়া যায় এবং তাহাকে একটি ক্ষুদ্রকায় শুষ্ক বৃদ্ধের মত দেখায়, আচ্ছন্ন নিদ্রা।”

সীসক বিষাক্ততার পুরাতন রোগিগণ। ওপিয়ামের অপব্যবহারের পরবর্তী উদরাময় পালসেটিলা আরোগ্য করে।

অপর নাম হোয়াইট পপি (White Poppy)

বাংলায়-আফিং,

পেপেভার সোমনিফেরাম (Papever Somniferum)

ওপিয়াম পেপেভেরিসি জাতীয় পেপেভার সোমনিফেরাম নামক জাতীয়, উদ্ভিদের শুষ্ক নির্যাস। সাধারণ নিয়মানুসারে এর অরিষ্ট বা বিচূর্ণ তৈরী হয়।

 

 

ওপিয়ামের মূলকথা

১। অস্বাভাবিক বেদনাশূন্যতা।

২। ঔষধ গ্রহণ শক্তির অভাব, কম্পন, জীবনীশক্তির প্রতিক্রিয়ার অভাব (Lack of vital reaction), নীতি জ্ঞানহীন আবরণ, এত বড় – মিথ্যাবাদী দুনিয়ায় দুটি মিলে না (জগতের সৰ্ব্বাপেক্ষা জঘন্য মিথ্যাবাদী)। ৩। অন্ত্রের পেরিস্ট্যাটিক ক্রিয়ার (peristaltic action) বৈপরীত্য, সেই হেতু মল বমন।

৪। আতঙ্ক বা ভয়, কিছুতেই ভয় পাওয়ার পর ভয়টি দূর হয় না।

৫। ঘুমে চক্ষু ভেঙ্গে আসে, কিন্তু ঘুমতে পারে না। যে সকল শব্দ সাধারণতঃ শুনা যায় না বা কেউ শুনতে পায় না, তা ওপিয়ামের রোগী শুনতে পায়।

৬। ঘর্ম সহকারে অতিশয় উত্তপ্ত চর্ম; প্রভৃত ঘর্ম্মস্রাব।

৭। প্রগাঢ় সুপ্তি (stupor); মলিন আরক্ত মুখমণ্ডল, নাকের ঘড় ঘড় শব্দ সংযুক্ত নিঃশ্বাস।

৮। বিছানা এত গরম মনে করে যে, রোগী ওতে শুতে পারে না; শীতল স্থান পাওয়ার খোঁজে বার বার নাড়াচাড়া করে, গাত্রবস্ত্র ফেলে দেয়।

ওপিয়াম – একটি আলোচনা-

ওপিয়াম সৰ্ব্বাপেক্ষা অপব্যবহৃত ঔষধ, কারণ সকল চিকিৎসা তন্ত্রেই একে সদাসর্বদাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃত হোমিওপ্যাথ এর অপব্যবহার করেন না। কিন্তু এই চিকিৎসা তন্ত্রের অনেকে যারা নিজেদেরকে হোমিওপ্যাথ বলেন, তারাও এর অপব্যবহার করে থাকেন। যেমন একজন হোমিওপ্যাথিক কলেজের শিক্ষক বেদনার শান্তি ও নিদ্রা জন্মানোর জন্য মাদক মাত্রায় এর ব্যবহার করে থাকেন। আমি এইখানে বলতে চাই যে, হোমিওপ্যাথ ওপিয়াম বা উহার কোন উপক্ষার যদি এইভাবে বা এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি নিজে নিশ্চয়ই তার কাজ বুঝেন না। সুতরাং তার উচিত মেটেরিয়া মেডিকা ও হ্যানিম্যানের নির্দিষ্ট প্রয়োগবিধি আবার ভালভাবে অধ্যয়ন করা; অন্যথায় মত বদলে অ্যালোপ্যাথিকে আশ্রয় করা (যেখানে তারা আরোগ্য নীতি কিছু আছে বলে দাবী করতে পারেন না)।

প্রথমতঃ ওপিয়াম মাদক মাত্রায় নিদ্রা জন্মায় না, কিন্তু আচ্ছন্নতা আসে এবং এতে রোগীর বেদনা সম্বন্ধে অচেতনতা এনে রোগীকে তার বেদনার নিবৃত্তি করে দেয়। কত রোগীর রোগ এইরকম চিকিৎসায় প্রচ্ছন্ন থাকে কিন্তু ভিতরে ভিতরে এত দূর বাড়ে যে, তার আর আরাগ্যের সম্ভাবনা থাকে না। জ্বর, বেদনা ও অন্যান্য লক্ষণ সমূহ রোগের ভাষা এবং উহাদের দ্বারাই বোগ বলে অসুবিধাটি কোথায় এবং কিভাবে উহার আরোগ্যের জন্য পরিচালিত হতে হবে। প্রকৃত আরোগ্যকর ঔষধ প্রায়ই ওপিয়াম অপেক্ষা দ্রুত বেদনার উপশম করে এবং যে অবস্থার উপর বেদনাটি নির্ভরশীল, সেই অবস্থাটি আবোগ্য করে বেদনার শান্তি জন্মায়। কিন্তু যেখানে খুব তাড়াতাড়ি কেনার উপশম হয় না, সেখানে আরোগ্যকর ঔষধটির ক্রিয়াও প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিছুক্ষণ যন্ত্রণা ভোগ করাই ভাল। ওপিয়াম খেয়ে চাপা দেওয়া ঠিক নয়, কারণ যে সকল ব্যক্তি মফিন খাওয়া রূপ ব্যাধিতে কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের শতকরা নিরানব্বই জনই প্রথমে তাদের চিকিৎসকের উপদেশেই “বেদনাশক্তি, বিশ্রাম ও নিদ্রার জন্য মর্কিন ধরেছিলেন। কিন্তু এখন তারা ওপিয়াম সেবনে চির অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

* এই নেশা বা আচ্ছন্নতাই হোমিওপ্যাথিক মতে, এই ঔষধটি ব্যবহারের প্রধান চরিত্রগত লক্ষণ। আর কোন ঔষধেই এইরকম প্রগাঢ় আচ্ছন্ন নিদ্রা জন্মে না। মেটেরিয়া মেডিকায় উহা এইভাবে বর্ণিত হয়েছে – “বিমূঢ়, সংজ্ঞাহীন, নিদ্রাচ্ছন্ন, তৎসহ গলার ঘড় ঘড় শব্দ, নাক ডাকা সহ সশব্দ শ্বাসক্রিয়া।” তারপর ফোলা ফোলা লাল মুখমণ্ডল, চক্ষু বক্তবর্ণ এবং অর্ধেক খোলা, ত্বক গরম ঘামে আবৃত। এখন এই অবস্থা প্রকৃত পক্ষে কিছুই নয়, কেবলমাত্র মস্তিষ্কের বা মস্তকের নাড়ীসমূহের এরূপ পূর্ণতা যে ওদের চাপে যে সকল স্নায়ু শ্বাসক্রিয়া পরিচালিত করে ও নীচের চোয়াল স্কুলে পড়তে দেয় না (বাস্তবিক ঝুলে পড়ে), ও ঘৰ্ম্মস্রাবী গ্রন্থিগুলিকে অবরুদ্ধ রাখে তাদের পক্ষাঘাত বা অর্ধ পক্ষাঘাত। এই অবস্থা বহুররাগে দেখা যেতে পারে। যেমন টাইফয়েড জ্বরে; সেখানে রোগী সম্পূর্ণভাবে অজ্ঞান এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়েন। আলো, স্পর্শ, শব্দ অথবা অন্য কিছুতেই প্রতিক্রিয়া থাকে না। কেবল মাত্র সুনির্দিষ্ট ঔষধ ওপিয়াম ক্রিয়া করে।

নিউমোনিয়াতেও ঐরকম হয়, এবং সেখানে ওপিয়াম হোমিওপ্যাথদের হাতে কাজ করে। কিন্তু অ্যালোপ্যাথদের মত বৃহৎ মাত্রায় বেদনা নিবারণ ও নিদ্রা উৎপাদনের জন্য একে দেওয়া হলে হতভাগ্য রোগীকে চির বিশ্রামের স্থানে চলে যেতে হত।

অন্য বহুবিধ রোগেও,বস্তুতঃ যে কোন রোগে পূর্বোক্ত লক্ষণগুলি বর্তমান থাকলে, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি ওপিয়াম হয় রোগীকে আরোগ্য করবে, নচেৎ এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তী ঔষধ দ্বারা সম্পূর্ণ আরোগ্য হবে।

* অন্যান্য ঔষধও এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে, যেমন -টাইফয়েডে ল্যাকেসিস ও হাইওসায়ামাস। এই দুটি ঔষধ টাইফয়েড নিউমোনিয়াতেও উপযোগী। সময়ে সময়ে এই দুটির একটিকে বেছে নিতে হয়। সন্ন্যাস রোগে ওপিয়ামের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বোগের ন্যায় সমস্ত লক্ষণসমষ্টি দেখে ঔষধটি মনোনয়ন করতে হবে।

২। ওপিয়াম দ্বারা বেদনা দূর হয়, অর্থাৎ ওপিয়াম শরীরযন্ত্রের বেদনানুভব করবার ক্ষমতা লোপ করে দেয় ইহাও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ওপিয়াম ব্যবহারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ওপিয়ামে কেবল যে সম্পূর্ণভাবে বেদনার অনুভূতিই চলে যায়, তা নয়। রোগীর ঔষধ গ্রহণ করার শক্তিও চলে যায়। আমরা জানি, নির্দিষ্ট কোন ঔষধে কাজ না হলে সালফার দিতে হয়। এখন বলা যায় যে, জীবনীশক্তির প্রতিক্রিয়া না থাকলে ওপিয়াম দেওয়া আবশ্যক। যদি প্রতিক্রিয়ার অভাবের কারণে কোনরূপ সোরা দোষ হয়, তাহলে সালফার সৰ্ব্বোকৃষ্ট ঔষধ। কিন্তু এক্ষেত্রে সব লক্ষণগুলি দেখেই ব্যবস্থা করতে হবে। সালফারে কোন ফল না হলে সোরিনাম উপযোগী।

জীবনীশক্তির অত্যধিক ক্ষীণতাবশতঃ যদি প্রতিক্রিয়ার অভাব দেখা দেয়, তাই প্রতিক্রিয়া জাগাতে লরোসিয়েসাস উপযোগী। এতে প্রতিক্রিয়া শক্তি জেগে উঠে।

কিন্তু ধরা বাঁধা বা গতানুগতিক নিয়মে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করা নিন্দনীয়। লক্ষণানুসারে যা ঠিক উপযোগী, তাহাই ব্যবস্থা করা বিধেয়।

৩। অন্ত্রের কোনরূপ নড়াচড়ার চেষ্টা থাকে না। মল অন্ত্রের কুণ্ডলীর মধ্যে জমে থাকে এবং শক্ত কাল কাল গোল আকার ধারণ করে। উহাকে : জোলাপ বা এনিমা দ্বারা বের করতে হয়। তারপর মূত্রযন্ত্রেও ঐ রকম ক্রিয়া প্রকাশ পায়। মূত্রাশয়ের মূলদেশের পক্ষাঘাত হেতু মূত্র নির্গত হয় না। মূত্রাশয় প্রাচীরের অনুভূতি কমে যাওয়ায় রোগী প্রস্রাব করতে পারে না অথবা তৎ বিপরীত চরম অবস্থায় মূত্রাশয় মুখাশ্রয়ী পেশীর পক্ষাঘাতের জন্য অনিচ্ছায় মুত্র ও মল নির্গত হয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ওপিয়াম বোধশূন্যতা ও আংশিক বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত জন্মায়। অন্যান্য বিষয়ে সমতা থাকলে হোমিওপ্যাথি মতে উহা ব্যবহারেই উপকার হয়।

এখন আমরা ওপিয়ামের পূবর্ণিত অবস্থার ঠিক বিপরীত আর একপ্রকার অবস্থাও দেখতে পাই। এক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, তা হল – “রোগী প্রলাপী, চক্ষু বিস্তৃতভাবে খোলা, মুখমণ্ডল চকচকে, লাল ও স্ফীত।” “সতেজ কল্পনা, মনের উল্লাস ভাব।” স্নায়বিক, সহজে উত্তেজিত হয়, সহজে ভয় পায়। পেশীসমূহের উৎক্ষেপ ও স্পন্দন; মাথা, বাহু ও হাতের কম্পন, সঙ্কোচক পেশীসমূহের উৎক্ষেপ এমনকি আক্ষেপ। নিদ্রাহীনতা (সিমিসিফিউগা, কফিয়া) সহ শ্রবণশক্তির প্রখরতা, বহুদূরের ঘড়ির শব্দ ও মোরগের ডাক তাকে জাগিয়ে রাখে।

এইগুলি ওপিয়ামের প্রতিক্রিয়াজাত বা গৌণ লক্ষণ।

মন্তব্য: ঘড়ির দোলকের ন্যায় প্রকৃতির দোলকটিকে যেন উহার স্বাভাবিক লম্ব অবস্থান থেকে সম্পূর্ণভাবে একদিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন প্রকৃতি এই অপকারের প্রতিকার করবার উদ্দেশ্যে দোলকের মাধ্যাকর্ষণ নিয়মের মত এরূপ জোরে পিছনের দিকে টান দিচ্ছে যে, দোলকটি যে কেবলমাত্র তার স্বাভাবিক লম্ব অবস্থায় ফিরে আসছে তা নয়; অপরদিকে শেষপর্যন্ত দুলে যাচ্ছে। এখন যদি প্রকৃতিকে তার ইচ্ছামত কাজ করতে দেওয়া হয়, তাহলে দোলকটি ইতস্ততঃ ক্রমাগত দুলতে থাকবে, যে পর্যন্ত না উহার স্বাভাবিক স্থানটি ফিরে পায় এবং স্বাভাবিক নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়।

এটা অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, প্রথম শ্রেণীর লক্ষণগুলি ঔষধক্রিয়ার লক্ষণ (মুখ্য) আর দ্বিতীয় শ্রেণীর লক্ষণগুলি ঔষধের ক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রকৃতির স্বাভাবিক চেষ্টা বা প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ। সুতরাং ঐরূপ উত্তেজনা, ক্রোধপ্রবণতা, আক্ষেপ প্রভৃতি, ঔষধের হোমিওপ্যাথিক ক্রিয়ার অধীনে আসে না; যদি উহার পূর্বে তন্দ্রাভাব, সুপ্তি, অনুভূতিশূন্যতা প্রভৃতি বর্তমান থাকে। এইরকম ক্ষেত্র ঘড়া অন্যত্র ওপিয়াম হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হবে না এবং উহার সম্পূর্ণ লক্ষণ সাদৃশ্যও দেখতে পাওয়া যাবে না। এই কারণেই হোমিওপ্যাথ ওপিয়াম দ্বারা ক্ষুদ্রমাত্রায় তার নিদ্রাহীন রোগীকে স্বাভাবিক নিদ্রা এনে দিতে পারেন, আর অ্যালোপ্যাথগণ তাদের রোগীকে অধিক মাত্রা দ্বারা জোর করে আচ্ছন্নতায় বশীভূত করে ফেলেন। প্রথমটি আরোগ্যকর এবং অপরটি বিষক্রিয়াজনিত ফল।

✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *