সকল লক্ষণ শীতকালে ও বজ্রঝড়ের পূর্বে এবং পরে বৃদ্ধি, গ্রীষ্মকালে চর্মরোগের উপশম। |
মনে করে মৃত্যু নিকটে সেজন্য প্রস্তুতি নেয়। |
ঘুমের ভিতর অথবা বিকারের সময় রোগী মনে করে তার সাথে অন্য কেউ শুয়ে আছে। |
শুধু দিনের বেলা ডাইরিয়া ও রাতে কাশি। |
রাক্ষুসে ক্ষুধা, উদরাময়ের পর, স্নায়বিক ও মেরুদন্ডের অসুস্থতায় এরূপ ক্ষুধা লাগে। |
স্মৃতিশক্তি দুর্বল, চেনা রাস্তা ভুল হয়। |
উপযোগিতা – যাদের চামড়া ও চুল পাতলা, খিটখিটে ও ঝগড়াটে (নাক্স-ভ) একটুতেই সহজেই অপমানিত বোধ করে, (ইগ্নে, মেডো), সবকিছুতেই রেগে যায় এমন লোকেদের অসুখে উপযোগী।
গাড়ীতে চড়লে, রেলগাড়ীতে চড়ে বা জাহাজে চড়লে অসুস্থ হয় (ককু, স্যানিকি) তাদের পক্ষে উপযোগী।
বজ্রবিদ্যুতসহ ঝড়বৃষ্টির আগে ও সময়ে রোগ লক্ষণ বেড়ে যায় (নে-কা, ফস, সোরিন)।
রোগলক্ষণ হঠাৎ আসে হঠাৎ যায় (বেল, ম্যাগ-ফস)। প্লাটিনা ও ষ্ট্যানাম এর বিপরীত।
বিকার বা ঘুমের মধ্যে মনে করে যেন একটি পা দুটো হয়ে গেছে, একই বিছানায় যেন অন্য আরেকজন তার পাশে শুয়ে আছে, (প্রসূতি) মনে করে যেন দুটো সন্তান তার পাশে শুয়ে আছে (ভ্যালেরি)।
মাথাঘোরা — বিছানায় উঠে বসলে (ব্রায়ো), মাথার পেছনদিকে, যেন মাতাল হয়ে গেছে, সমুদ্র ভ্রমণ থেকে যেমন অসুস্থতা হয় সেই রকম অনুভূতি (ককু)।
মাথা যন্ত্রণা — মাথার পেছনটা যেন সীসার মত ভারী মনে হয়, চাপ দেওয়া মত ব্যথা, দপদপানি ব্যথা, মাথার ভেতরে সবকিছু যেন জীবন্ত, অবশভাব, থেৎলানো ব্যথা, মাথাটা যেন কাঠের তৈরী—এসব লক্ষণে প্রযোজ্য ।
পেট ব্যথা — গর্ভবস্থায় হয়— চাপ দেওয়া মত, টেনে ধরামত যন্ত্রণা পাকস্থলী যখন খালি থাকে তখন পেট ব্যথা হয়— অনবরত খেতে থাকলে পেট ব্যথা কমে যায় (এনাকার্ডি, চেলিডো, এলিয়াম-সিপা)।
উদরাময় – হলদে, জলের মত, তোড়ে বার হয়, বাঁধাকপি বা টক ফল খেয়ে, গর্ভাবস্থায়, ঝোড়ো আবহাওয়ায় উদরাময়—যখনই হয় দিনের বেলায় হয়। চর্মদেহে অবস্থানের চামড়ায় বেদনা হয়, ছোঁয়া লাগান যায় না, যে কোন কাপড় চোপড়েই ব্যথা করে–সামান্য আঘাতেই পেকে গিয়ে পুঁজ হয়। (হিপার)
হাতের পাতার চামড়া খসখসে, ফাটা ফাটা, আঙ্গুলের ডগা ফাটাফাটা ও খসখসে- শীতকাল এলেই ঐরূপ হয় পায়ের পাতার চামড়া ফেটে যন্ত্রণা হয়, পায়ের পাতায় দুর্গন্ধ ঘাম বার হয় (গ্র্যাফা, স্যানিকি, সাইলি)।
হার্পিস — জননেন্দ্রিয়ে হয়ে পেরিনিয়ম ও উরু পর্যন্ত বেড়ে যায়। পেরিনিয়ম = Perineum = মলদ্বার ও যৌনেন্দ্রিয়ের মাঝে যে অংশ। হার্পিস-চুলকায় লাল হয়ে যায়, চামড়া ফেটে যায়। খসখসে হয়ে রক্ত বার হয়। হার্পিস শুকনো বা ভেজা রসযুক্ত—এসব লক্ষণে প্রযোজ্য ।
হাতের তালু ও পায়ের তলায় গরম ভাব ও জ্বালা করে (স্যাঙ্গুইনে, সাল)
যৌন ইন্দ্রিয়ের বাইরের চারপাশে, স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই ঘামে ভিজে যায় ।
শীতের দিনে ঠান্ডা লেগে হাতে পায়ে প্রদাহ হয়ে ফুলে যায় তাতে যন্ত্রণা হয়, চুলকায়, হাতের চামড়া ফাটে—ঐ শীতে বৃদ্ধি। শয্যাক্ষত হলে এসব লক্ষণে ব্যবহার্য। হৃৎপিন্ডের পাশে ঠান্ডা অনুভূতি (কার্ব-এনি, কেলি-মি, নেট-মি)।
সম্বন্ধ – সীসা হতে বিষাক্ততায় বিষণ্ণ পেট্রোলিয়াম। চর্মলক্ষণ শীতের দিনে বাড়ে, গরমকালে কমে যায় (এলুমি), এর চর্মলক্ষণ চাপা পড়ে উদরাময় হয় ।
বৃদ্ধি- গাড়ীতে চড়লে (ককু, স্যানিকি), ঝড়বৃষ্টির সময়, শীতকালে (এলুমিনা)।
শক্তি– ১২, ৩০, ২০০, ০/১ হতে ০/৩০ শক্তি ।
গন্ডমালা ধাতুদোষ, বিশেষ করে কালো রঙের ব্যক্তি, যারা খুব সহজেই শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহ, পাকাশয়ের অম্ল ও চর্মের উদ্ভেদ জাতীয় উপসর্গ সমূহে কষ্ট পায়। এই ঔষধের চর্মের লক্ষণগুলি খুবই সুস্পষ্ট, ঘর্মগ্রন্থি ও তৈল গ্রন্থিৰ উপর কাজ করে। শীতকালে রোগগুলি বৃদ্ধি পায়। মোটরগাড়ী, জাহাজ প্রভৃতিতে চড়ার পরে রোগ সমূহ দেখা দেয়;দীর্ঘদিনে পাকাশয়িক ও ফুসফুসের পীড়াসমূহ, পুরাতন উদরাময়। দীর্ঘদিনের উপসর্গ সমূল্পে পরে মানসিক লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় যথা ভীতি, বিরক্তি প্রভৃতি। তরুণী স্ত্রীলোকেদের হরিৎ পাণ্ডুরোগ, তৎসহ পাকস্থলীর ক্ষত থাকতে পারে অথবা নাও থাকতে পারে।
মন – মানসিক আবেগ থেকে রোগ লক্ষনের সুস্পষ্ট বৃদ্ধি। রাস্তায় চলার সময়ে রোগী পথ হারিয়ে ফেলে। রোগী মনে করে তার নিজের দুটি সত্তা রয়েছে অথবা যেন কেউ তার পাশে শুয়ে রয়েছে। রোগী মনে করে মৃত্যু নিকটবর্তী এবং এই রোগী দ্রুততার সঙ্গে তার সমস্ত কাজকর্ম শেষ করতে চায়। খিটখিটে, সহজেই বিরক্ত হয়, সকল কাজেই বিরক্তি। স্ফুর্তিহীণ, তৎসহ ক্ষীণদৃষ্টি।
মাথা — অত্যন্ত অনুভূতিযুক্ত, রোগীর মনে হয় তার মাথার উপর দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে চলেছে। অসাড়তার অনুভূতি, যেন কাঠ দিয়ে তৈরী, মাথার পিছনের অংশে ভারীবোধ, সীসার ন্যায় ভারী, (ওপিয়াম)। উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরে মাথা ঘোরা মাথার পিছনের অংশে বেশী অনুভূতি হয়, অনেকটা মাতালের ন্যায় অথবা সামুদ্রিক অসুস্থতার মত অবস্থা হয়। মাথার চামড়ার উপরে আর্দ্র উদ্ভেদ সমূহ; পিঠে এবং কানগুলিতে বেশী হয়। মাথার চামড়া স্পর্শকাতর, এর পরে অসাড়তা দেখা দেয়। মাথার বেদনা, রোগী দুইদিকের রগ ধরে থাকে উপসমের জন্য;কাশির সময় মাথায় ধাক্কা লেগে মাথার বেদনা, এই ক্ষেত্রে ৩০ শক্তি প্রযোজ্য।
চোখ – চোখের পাতার চুলগুলি পড়ে যায়। দৃষ্টি অস্বচ্ছ:দূরের বস্তু ভালো দেখে চশমা ছাড়া ছোট ছোট অক্ষরগুলি পড়তে পারে না; অশ্রস্রাবী গ্রন্থি থেকে শ্লেষ্ম নিঃসরণ। চোখের কোন গুলি ফাটা। চোখের চারিপাশ শুষ্ক ও মামড়ী যুক্ত।
কান — শব্দ অসহ্য, বিশেষ করে যখন বহুলোক এক সঙ্গে কাজ করে। কানের ভিতরে ও কানের মধ্যে একজিমা, ছাল উঠা প্রভৃতি তৎসহতীব্র চুলকানি। আক্রান্ত অংশ স্পর্শকাতর।কানের ছিদ্রে ফাটা। শুষ্ক সর্দি, তৎসহ বধিরতা ও কানের ভিতরে শব্দ। কানের ভিতরে ঘন্টা ধবনি ও কটকট শব্দ হয় কর্ণনলির পুরাতন প্রদাহ। কানে শোনার ক্ষমতা কমে যায়।
নাক – নাসারন্ধ্র ক্ষতযুক্ত, ফাটাযুক্ত, জ্বালা করে; নাকের অগ্রভাগ চুলকায়। নাক থেকে রক্ত পড়ে। নাকে পচাক্ষত তৎসহ মামড়ী পড়ে এবং শ্লেষ্মা পুঁজযুক্ত স্রাব।
মুখমণ্ডল – শুষ্ক, সংকীর্ণতার অনুভূতি, মনে হয় যেন অ্যালবিউমিন দিয়ে ঢাকা বয়েছে।
পাকস্থলী— গলা বুক জ্বালা, উত্তপ্ত, তীব্র টকগন্ধযুক্ত ঢেকুর। উদর স্ফীতি। পাকস্থলীর ভিতরে প্রচণ্ড শূন্যতার অনুভূতি। চর্বিজাতীয় খাদ্য ও মাংসে তীব্র বিরক্তি, বাঁধাকপি খেলে বৃদ্ধি।
মলত্যাগের পরেই, ক্ষুধার্ত। বমিবমিভাব, তৎসহ মুখগহ্বরে জল জমা হয়। পাকস্থলী যখন খালি থাকে, সেই সময় পাকস্থলীর ভিতরে শূল বেদনা; অবিরাম আহারে উপশম (এনাকার্ডিয়াম; সিপিয়া)। প্রচন্ড ক্ষুধা। রাত্রে ঘুম থেকে উঠে পড়ে এবং আহার করতে বাধ্য হয় (সারিনাম)। রসুনের গন্ধ।
উদর – কেবলমাত্র দিনের বেলায় উদরাময়, জলের মত, হুস হুস করে মল বের হয়ে থাকে এবং মলদ্বারে চুলকায়। বাঁধাকপি খাবার পরে উদরাময়, তৎসহ পাকস্থলীর ভিতরে শূন্যতার অনুভূতি।
পুরুষের রোগ – মূলাধারের দাদের ন্যায় উদ্ভেদ। প্রস্টেটগ্রন্থি প্রদাহিত ও স্ফীত। প্রস্রাবলীর ভিতরে জ্বালা।
স্ত্রীরোগ – মাসিক ঋতুস্রাবের পূর্বে, মাথার ভিতরে দপদপ কর অনুভূতি (ক্রিয়োজোট)। প্রদরস্রাব প্রচুর, অ্যালবিউমিনের মত (এলুমিনা, বোরাক্স, বোভিষ্টা, ক্যাল্কেরিয়া ফস)। জননেন্দ্রিয় হাজাযুক্ত ও আর্দ্র। আর্দ্রতার অনুভূতি (ইউপেটোরিয়াম পাপিউরিয়াম)। চুলকানি ও স্তনের বোঁটার উপরে ঘামাচির মত উদ্ভেদ।
শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রসমূহ স্বরঙ্গ (কার্বভেজ), কষ্টিকাম, ফসফরাস)। শুষ্ক কাশি ও রাত্রে বুকের উপরে চাপবোধ। কাশির ফলে মাথার যন্ত্রনা দেখা দেয়। বুকের ভিতর চাপবোধ। ঠাণ্ডা বাতাসে বৃদ্ধি। রাত্রে শুষ্ক কাশি, কাশি বুকের নাভীর স্থান থেকে উঠে আসে। মুংড়ি কাশি ও কণ্ঠনলীর ডিফথিরিয়া।
হৃদপিন্ড – শীতলতার অনুভূতি (কার্বো এনিম্যালিস, নেট্রাম মিউর)। মূচ্ছা তৎসহ হঠাৎ উত্তেজনা, উত্তাপ ও হৃদকম্প।
পিঠ – ঘাড়ের গ্রীবাদেশে বেদনা, আড়ষ্টও বেদনাপূর্ণ। কোমর প্রদেশের দুর্বলতা। চঞ্চু অস্থি স্থান বেদনাপূর্ণ।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – মচকিয়ে যাওয়ার পুরাতন। বগলে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম। হাঁটুদুটি আড়ষ্ট। হাতের আঙ্গুলের ডগা প্রতিবার শীতকালে খসখসে হয় ও ফেটে যায়। হাঁটুর ভিতরে মচকিয়ে যাবার মত অনুভূতি। সন্ধিস্থান সমূহে কক শব্দ হয়।
চামড়া — রাত্রে চুলকানি। শীতস্ফোটক, আর্দ্র, চুলকায় ও জ্বালাকরে। শয্যা-ক্ষত। চামড়া শুষ্ক, সঙ্কুচিত, অত্যন্ত অনুভূতি প্রবন, খসখসে ও ফাটাসমূহ, চামড়ার মত। হার্পিস। সামান্য আঁচড় লাগলেই চামড়ায় পুঁজোৎপত্তি (হিপার)। ছালউঠা। হাতগুলির সোরিয়্যাসিস। পুরু, সবুজবর্ণের মামড়ি, জ্বালাকর ও চুলকায়; লালচে ভাব, হাজার, ফাটা স্থান থেকে সহজেই রক্তপাত হয়। একজিমা। চামড়ার ফাটাসমূহ শীতকালে বৃদ্ধি পায়।
জ্বর — শীতভাব, এর পরে ঘাম দেখা দেয়। আগুনের হল্কা বেরিয়ে থাকে, বিশেষ করে মুখমন্ডলও মাথা থেকে, রাত্রে বৃদ্ধি। পায়ের পাতায় ও বগলে ঘাম।
কমা-বাড়া-বৃদ্ধি-ভিজে-আর্দ্র আবহাওয়া, বজ্রপাতসহ ঝড়-বৃষ্টির আগে ও পরে, মোটর গাড়ীতে ডুলে, নিষ্ক্রিয়গতিতে, শীতকালে, আহারে, মানসিক উদ্বেগে।
উপশম – উষ্ণ বাতাসে, মাথা উঁচু করে রেখে শুলে, শুষ্ক আবহাওয়ায়।
সম্বন্ধ – তুলনীয়—কার্বোভেজ, গ্রাফাইটিস, সালফার, ফসফরাস।
পরিপূরক—সিপিয়া।
দোষঘ্ন – নাক্সভমিকা, ককিউলাস।
শক্তি—৩য় থেকে ৩০ শক্তি এবং উচ্চতর। স্থূল মাত্রায় তুলনায় ভালো কাজ করে।
ইহা আমাদের অপব্যবহারিত ঔষধগুলির অন্যতম। ইহা বাতে, থেঁৎলাইয়া যাওয়ায় এবং সকলপ্রকার রোগে বাহ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়; উহাতে যে উপশম হইয়া থাকে তাহা বিপরীতভাবে উপদাহ সৃষ্টি করিয়া চৰ্ম্মের উপরিভাগে রোগটিকে স্থাপিত করার ফল এবং উহা ঔষধটির হোমিওপ্যাথিক ক্রিয়া নহে। তৈল খনিকেন্দ্রে অসংস্কৃত পেট্রোলিয়াম মানুষ ও পশু দুইয়ের জন্যই সর্বহর’ ঔষধরূপে ব্যবহৃত হয়।
ইহা বিপরীত উপদাহের সৃষ্টি করে এবং চর্মের উপর টার্পেন্টাইনে’র ন্যায় উপদাহ, উদ্ভেদ ও উপসর্গের সৃষ্টি করে। পরীক্ষাকারীর মধ্যে পেট্রোলিয়াম যে সকল ব্যাপার উৎপাদন করে তাহাদের মধ্যে প্রাথমিকগুলি হইল, মনের একপ্রকার বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং শিরোঘূর্ণন, তাহার মাথা টলমল করে এবং সেইজন্য সে রাস্তায় পথ হারাইয়া ফেলে। তাহার অদ্ভুত অদ্ভুত কল্পনা উপস্থিত হয়, কেহ বৰ্তমান না থাকিলেও মনে হয়, কেহ যেন তাহার নিকটে রহিয়াছে, মনে হয় যেন, বায়ুমন্ডল অদ্ভুত অদ্ভুত আকৃতিতে পূর্ণ রহিয়াছে, যেন তাহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি দ্বিগুণিত হইয়া গিয়াছে, যেন তাহার সহিত তাহার শয্যায় আর একজন লোক রহিয়াছে। এইরূপ লক্ষণ জ্বর অবস্থায় দেখা যায়। সন্তান প্রসবের পর স্ত্রীলোক কল্পনা করেন যে, তাহার নিকট শয্যায় আর একটি শিশু রহিয়াছে; তিনি ভাবিয়া বিস্মিত হন যে, কেমন করিয়া দুইটি সন্তানের তত্ত্বাবধান করিবেন। এই ধারণাগুলি নানাপ্রকার রোগে দেখা যায় এবং ইহা বহুবার প্রমাণিতও হইয়াছে। টাইফয়েড জ্বরে, দুষ্টপ্রকৃতির পীড়ায়, অনেকপ্রকার উদরাময়ে, ঠিক জাগিয়া উঠিবার পরেই তাহার মনের গোলযোগ উপস্থিত হয়। তিনি যেন স্বপ্ন দেখেন, তাহার মনে হয় যেন তিনি দুইজন বা ততোধিক হইয়া পড়িয়াছেন এবং এই ধারণা যতক্ষণ তিনি অর্ধচেতন অবস্থায় থাকেন। ততক্ষণ পর্যন্ত থাকিয়া যায়। তিনি ঐ অবস্থায় কোন মীমাংসায় পৌছিতে পারেন কিন্তু তাহাকে জাগাইয়া সংজ্ঞাযুক্ত করিলে, তিনি সত্য উপলব্ধি করিয়া ঐ ভাবকে দূর করিতে পারেন, কিন্তু অর্ধ-সংজ্ঞাযুক্ত হইলে উহা আবার ফিরিয়া আসে। এই ভাব তাহাকে দিবারাত্র বিরক্ত করিতে থাকে।
চৰ্ম্মলক্ষণ। শরীরের উপরিভাগের লক্ষণগুলি চিত্তাকর্ষক। ফুস্কুড়ি জন্মাইবার ইন্দ্রবিদ্ধার ন্যায় ফুস্কুড়ি, ফুস্কুড়ি ছাড়া ছাড়া থাকে এবং ফুস্কুড়িগুলির যথেষ্ট আদ্রর্তার সহিত পুরু হলদে মামড়ি বিশিষ্ট করার প্রবণতা থাকে। ফুস্কুড়িগুলি শীঘ্র শীঘ্র ফাটিয়া যায়। সময়ে সময়ে ফুস্কুড়িগুলি মামড়ি সৃষ্টি করে না কিন্তু শীঘ্র ফাটিয়া যায় এবং উহার নিম্নে ক্ষত জন্মে, ঐ ক্ষত গলিত ক্ষতে পরিণত হয়;—এই অবস্থা হস্তগুলি, অন্ডকোষ, মুখমন্ডল ও মস্তক-ত্বকে ঘটিয়া থাকে। ঘাড়ের পশ্চাৎদিকে, ফুস্কুড়ির ন্যায় উদ্ভেদ উৎপাদন করিবার বিশেষ প্রবণতা থাকে। ব্রণ, পুঁজবটী, ফোস্কাকার, শুষ্ক, ময়দার ন্যায় পদার্থযুক্ত উদ্ভেদ কিন্তু সাধারণতঃ আর্দ্র উদ্ভেদ, উদ্ভেদগুলি ভিতরদিকে বিস্তৃত হয়। ইহা পুরাতন উদ্ভেদগুলির দাগের উপর নূতন উদ্ভেদ সৃষ্টি করে এবং পুরাতন উদ্ভেদের তলদেশ বর্ধনশীলভাবে কঠিনতা-প্রাপ্ত হইতে থাকে। যখন মামড়িগুলি শুষ্ক হইয়া যায়, তখন উহা কঠিনতা-প্রাপ্ত হয়; এই কঠিনতা ক্ষতের প্রান্তদেশেই ঘটিয়া থাকে এবং প্রান্তগুলির চারিদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মন্ডলের সৃষ্টি হয়। কঠিনতা-প্রাপ্ত স্থান ফাটিয়া যায়, উহা হইতে রক্তপাত হয় এবং ঐগুলি বেগুনিবর্ণ দেখায়। নোনালাগা ঘায়ে এবং হাতের চারিদিকের ফাটায় ইহা ব্যবহার করিও। হস্তাঙ্গুলির ডগার চারদিকে ও হাতের উল্টা পিঠে ফাটা থাকিলে ইহা উপযোগী হয়। চৰ্ম্ম খসখসে, উঁচুনীচু, খোলস উঠা, ফাটা, রক্তপাতযুক্ত; টিসুগুলি কঠিনতা-প্রাপ্ত হইয়া যায় হাতের তালুতে ও নখে সময়ে সময়ে এইরূপ ঘটে। টিসুগুলি ক্ষতপ্রাপ্ত হয় এবং ক্ষত খাইয়া যাইতে ও বিস্তৃত হইতে থাকে। সকল প্রকার উদ্ভেদই ভীষণভাবে চুলকায়। যে পৰ্য্যন্ত সে আঁচড়াইয়া ছাল তুলিয়া না ফেলে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে স্থির থাকিতে পারে না, তারপর অঙ্গটি আর্দ্র, রক্তাক্ত, হাজাযুক্ত ও প্রদাহিত হইয়া উঠে। দৃশ্যতঃ কোনরূপ উদ্ভেদ না থাকিলেও চুলকানি থাকে। যে পর্যন্ত না রসক্ষরণ হয়, সে পর্যন্ত সে চুলকাইতে থাকে, তারপর চর্ম হইতে রক্তপাত হয় এবং স্থানটিও ঠান্ডা হইয়া যায়। (এই কথা দ্বারা আমি এখানে বলিতেছি যে, স্থানে স্থানে শীতলতা বোধ এই ঔষধটির একটি লক্ষণ। স্থানে স্থানে শীতলতা, পাকস্থলীতে, উদরে, জরায়ুতে শীতলতা, দুই স্কন্ধাস্থির মধ্যবর্তী কোন একটি স্থানে শীতলতা, হৃৎপিন্ডে শীতলতা, যেন হৃৎপিন্ডটি শীতল হইয়া গিয়াছে, এরূপ অনুভূতি)। নানারকমের একজিমা। মস্তকতুকে একজিমা, বিশেষভাবে মাথার পশ্চাৎদিকে। মুখের চারদিকে ইন্দ্রবিদ্ধা সদৃশ উদ্ভেদ (নেট্রাম মিউর’)। জননেন্দ্রিয়ের, ওষ্ঠের, মুখমন্ডলের উদ্ভেদ স্থানগুলিতে তালির ন্যায় মামড়ি জন্মে এবং প্রচুর রসক্ষরণ হয়।
শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির অথবা অন্তঃত্বকের উপর ছোট ছোট তালির আকারের ক্ষত, ঐগুলির চারিদিক কঠিনতা-প্রাপ্ত হয়, সেইজন্য পেট্রোলিয়াম সিফিলিসের ক্ষতেও উপযোগী। গলার ভিতর তালির মত ক্ষত, মুখের ভিতর তালির মত উপক্ষত। সকল স্থানের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীরই প্রদাহ হয়, উহা হইতে প্রথমে জলের ন্যায় এবং শেষে ঘন হলদে স্রাব নির্গত হয়। নাসিকার। অভ্যন্তরস্থ শৈঙ্ঘান তুকের স্ফীতির জন্য নাসিকা অবরুদ্ধ হইয়া যায়। নাসিকার পুরাতন সর্দি, মামড়িজমা, ঘন হলদে স্রাব, নাক হইতে দুর্গন্ধ। নাসিকা, নাসিকার পশ্চাত্রব্ধ ও গলকোষ পুরু হইয়া যায় এবং ঐসকল স্থানে ঘন শ্লেষ্ম জমে, বিশেষতঃ প্রাতঃকালে। কণ্ঠনালী আক্রান্ত হয়, এবং স্বর নাশ হয়; উদ্ৰবটি বক্ষ পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হয়, ফলে সর্দিজ অবস্থার সহিত কাশি জন্মে। রোগী প্রধানতঃ রাত্রেই কাশে এবং বক্ষে ক্ষততা ও যন্ত্রণার সহিত শীর্ণতাপ্রাপ্ত হইতে থাকে। প্রচুর গয়ের উঠার সহিত পৰ্য্যায়ক্রমে শুষ্ক খকখকে কাশি এবং বক্ষের চারিদিকে শুকাইয়া যাওয়া। এই ঔষধের একটি আশ্চর্য লক্ষণ এই যে, কাশি রাত্রিকালে বাড়ে এবং উদরাময় দিবাভাগে বাড়ে পাকস্থলী ও অন্ত্রাদির সর্দি। সরলান্ত্রের সর্দি, মলের সহিত প্রচুর আম। দিবাভাগে উদরাময়, উহা রাত্রিকালে রোগী যখন স্থির ও বিশ্রামযুক্ত থাকে তখন উপশমিত হয়। তাহার খাইলেই যন্ত্রণা হয় কিন্তু তাহার কামড়াইতে থাকার ন্যায় একপ্রকার ক্ষুধা থাকে, উহা তাহাকে খাইতে বাধ্য করে (ল্যাকে’, ‘গ্রাফাই’)। মলত্যাগের পর শূন্যতাবোধযুক্ত ক্ষুধা, উহা তাহাকে খাইতে বাধ্য করে। উদরাময়ের সহিত অবিরত ক্ষুধা থাকে, কিন্তু তবুও খাইলেই যন্ত্রণা হয়, শীর্ণতা, চর্মের উপর উদ্ভেদ, হাতের আঙ্গুলগুলি এবড়ো-থেবড়ো, উহারা কখনই পরিষ্কার দেখায় না, সে উহাদিগকে ধুইতেও পারে না, কারণ তাহাতে উহাদিগের ফাটা উৎপন্ন হয়।
মূত্রস্থলী ও মূত্রনালীর সর্দি। পুরাতন সর্দিজ স্রাব। পুরাতন গনোরিয়া। অন্তঃত্বকের চুলকানি,-একটি সাধারণ লক্ষণ এবং গনোরিয়ায় মূত্রনালীর পশ্চাৎ অর্ধের চুলকানির সহিত, স্রাব একটি বিশেষ লক্ষণ। ইহাতে তাহাকে পাগল করিয়া তুলে, সারারাত্রি জাগাইয়া রাখে। সে চুলকানির উপশম জন্য জননেন্দ্রিয় ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী স্থান ঘর্ষণ করিতে ও হাত দিয়া টিপিতে থাকে। গনোরিয়ার স্রাব সাদা অথবা হলদে হয়। গনোরিয়ায় মূত্রের শেষ বিন্দুটি যেন রহিয়া গেল এরূপ অনুভূতি থাকিলে ইহা উপযোগী। আরও, গণোরিয়ার প্রথম অবস্থায়, চুলকানি কষ্টদায়ক হইলে উপযোগী।
সর্বাঙ্গে, বিশেষতঃ সন্ধিগুলিতে, ক্ষততা ও থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। সঞ্চালনে সন্ধিগুলিতে বাতুজ যন্ত্রণা, স্পর্শকাতরতা, থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। ইহা থেঁৎলাইয়া যাওয়ায় ‘আর্ণিকা’র সদৃশ।
পেট্রোলিয়াম মাথার পশ্চাৎভাগের দুর্দম্য শিরঃপীড়ায় উপযোগী। দুর্গন্ধ পদঘর্ম এবং মাথার পশ্চাৎ দিকে কিছুদিন বাদে বাদে শিরঃপীড়ায় “সাইলিশিয়া” একটি বাঁধা ধরা ঔষধ। পেট্রোলিয়ামেও দুর্গন্ধ পদঘর্ম আছে, সর্বাঙ্গে, বিশেষ করিয়া বগলে অতিশয় দুর্গন্ধ ঘর্ম আছে, ঐ গন্ধ এতই ঝাঝাল যে রোগীর ঘরে প্রবেশ করিলেই উহা জানিতে পারা যায়। যন্ত্রণা সচরাচর মস্তকের পশ্চাৎ দিকে থাকে কিন্তু যখন উহা খুব গুরুতর হয় তখন উপরদিকে মস্তক শীর্ষ দিয়া কপাল ও চক্ষু পর্যন্ত বিস্তৃত হইয়া পড়ে (সাইলিশিয়াতেও ঐ অবস্থা আছে)। পেট্রোলিয়াম অঙ্গারজাতীয় পদার্থ কার্ব ভেজ’ ও ‘গ্রাফাইটিসের সহিত যত ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত, ‘সাইলেশিয়ার সহিত তত ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত নহে, এবং সকল অঙ্গার জাতীয় পদার্থই মাথার পশ্চাৎ ভাগকে আক্রমণ করে। “ক্ষণিক দৃষ্টিলোপের সহিত মাথার পশ্চাৎ ভাগ হইতে মাথার উপর দিয়া কপাল ও চক্ষু পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত যন্ত্রণা, উহাতে রোগী আড়ষ্ট হইয়া পড়ে, সংজ্ঞা হারায়।” “মাথার পশ্চাৎ দিকে সীমাবদ্ধ স্থানে যন্ত্রণা, মাথা নাড়াইলে বৃদ্ধি।” এই ঔষধে কার্বভেজে’র বিপরীত লক্ষণ, যথা- ইন্দ্রিয়বৃত্তিগুলির অর্থাৎ শ্রবণ, স্পর্শে ও গন্ধে অত্যনুভূতি আছে।
পেট্রোলিয়াম-জ্ঞাপক ধাতুতে বিশেষ বিশেষ নির্দিষ্ট সময়ে এক প্রকার অদ্ভুত শিরোঘূর্ণন উৎপন্ন হয়, জাহাজের উপর, গাড়ী চড়িলে অথবা মোটরকারে চড়িলে উহা দেখা দেয়। ইহা গাড়ী চড়িলে বা ঐরূপ সঞ্চালনে যে সমুদ্রপীড়ার ন্যায় সবরকম শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়, তাহার পক্ষে উপযোগী। সমুদ্রপীড়া এমন একটি রোগ, যাহা আমরা সদা সর্বদা দেখিতে পাইনা, তথাপি ধাতুগতভাবে চিকিৎসা করা হইলে অধিকাংশ লোককেই এরূপ সুভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় যে গাড়ী বা মোটরকারে চড়ার ন্যায় সাধারণ অবস্থায় আর তাহারা কষ্ট পাইবে না। উপরোক্ত অবস্থা অনেকাংশেই সামঞ্জস্যের অভাব হইতে সৃষ্টি হয়, উহা দৃষ্টিসংক্রান্ত রোগ, উদাহরণ স্বরূপ ঢেউগুলি যখন জাহাজের পশ্চাৎ দিকের প্রান্ত হইতে সরিয়া যাইতে থাকে তখন তাহার দিকে দৃষ্টি সন্নিবেশিত করিলে, অথবা কোন চলমান বস্তুর দিকে চাহিয়া থাকিলে ঐ অবস্থা উপস্থিত হইয়া থাকে, এই জন্য রোগীকে অন্ধকার ঘরের মধ্যে রাখিলে তাহার উপশম হয়। পূর্বোক্তরূপ শিরোঘূর্ণনের সহিত মস্তকের পশ্চাৎ দিকের শিরঃপীড়া, পাকস্থলীতে সবকিছু চলিয়া গিয়াছে এরূপ ক্ষুধাবোধ ও যন্ত্রণা, যাহাতে সে খাইতে বাধ্য হয়, তাহা পেট্রোলিয়াম দ্বারা প্রকাশিত হইবে। আমি যে সাধারণ প্রকারের সমুদ্র-পীড়া দেখিয়াছি তাহা এইরূপ —ভয়ঙ্কর মারাত্মক বমিবমি ভাব, অত্যন্ত বিবর্ণতা, দেহের শীতলতা, প্রচুর ঘৰ্ম্ম, অবসন্নতা, পাখার বাতাস করিলে, খোলা বাতাসে, চক্ষু মুদ্রিত করিলে, অন্ধকারে স্থির হইয়া থাকিলে উপশমিত হয় এবং উত্তাপে বৰ্দ্ধিত হয়। এরূপ রোগীদিগের জন্য সাধারণতঃ ‘টেবেকাম’ই ঔষধ।
পেট্রোলিয়ামে অনেক প্রকার দৃষ্টির গোলযোগ আছে কিন্তু চক্ষু-দুইটির সর্দিজ অবস্থাই বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ফুস্কুড়ির উৎপত্তি, ক্ষতপ্রাপ্তি, প্রদাহ, আরক্ততা ও প্রচুর স্রাব; চক্ষুপত্রের দানাময় অবস্থা, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলির পুরুত্তাপ্রাপ্তি, চক্ষু পাতায় ফাটা, চক্ষুর কোণগুলিতে ফাটার সহিত অত্যন্ত চুলকানি। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর সর্বপ্রকার রক্তসঞ্চয়ে চুলকানি বর্তমান থাকে, ইউষ্টেচিয়ান নলেও ঐরূপ থাকে। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি পুরু হইয়া যায় এবং ফলে বধিরতা আসে। ইহা একপ্রকার সর্দিজ অবস্থা, এবং ইহার সহিত কর্ণনালীর মধ্যে যথেষ্ট চুলকানি সংযুক্ত থাকে কিন্তু রোগী কোনমতেই ঐ স্থান স্পর্শ করিতে পারে না, কারণ চুলকানিটি থাকে কানের গভীর অংশে। সে কান ঘষিতে থাকে, কানের মধ্যেও আঁচড়াইতে চেষ্টা করে কিন্তু ঐস্থান স্পর্শ করিতে পারে না। গলকোষে চুলকানি, কানের বহিস্থ নালীতে চুলকানি; কর্ণস্রাব।
দেহের গ্রন্থিগুলির কঠিনতাপ্রাপ্তি ও প্রদাহ। কর্ণরোগে কর্ণমূল গ্রন্থিগুলি স্ফীত হয়, চোয়ালের রোগে চোয়ালের নিম্নবর্তী এবং জিহ্বার নিম্নবর্তী গ্রন্থিগুলি আক্রান্ত হইয়া পড়ে। উহারা কঠিন হয় এবং ঐরূপই থাকিয়া যায়। মুখমন্ডল বিবর্ণ হলদে বর্ণ এবং রুগ্ন। “সারাদিন বমনেচ্ছা ও বমনোদ্বেগ।”
পৃষ্ঠের আড়ষ্টতা। আসন হইতে উঠিলে পৃষ্ঠে যন্ত্রণা।
উত্তাপ ও জ্বালা । চৰ্ম্ম স্থানে স্থানে উত্তপ্ত, তাহার সহিত স্থানে স্থানে শীতলতা। হাতের তালুর ও পায়ের তলার জ্বালা ও চুলকানি, মুখমন্ডল ও মস্তকত্বকে জ্বালা। সচরাচর জ্বালা ও চুলকানি একত্রে থাকে, যে অঙ্গে জ্বালা করে, তাহাই চুলকায়। পায়ের পাতা দুইটি জ্বালা করে এবং ঐস্থানে শীতে জমিয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি হয়। শীতস্ফোট, চুলকায়, জ্বালা করে, বেগুনি হইয়া যায়। যে অঙ্গগুলি, বরফাহত হয়, তাহাতে বহু বৎসর পরে চুলকানি, জ্বালা, ও হুলবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা হয় এবং স্থানটি লাল ও উত্তপ্ত হইয়া উঠে। জ্বালা ও চুলকানি হইতে রোগী বলিতে পারে কখন শীত স্ফোটকগুলি গলিয়া যাইবে। পেট্রোলিয়াম তুষারাহত অঙ্গগুলির চুলকানি ও জ্বালা আরোগ্য করে কিন্তু উহা এগারিকাসের ন্যায় ততটা স্পষ্টভাবে নহে। পায়ের আঙ্গুলগুলির উপরিভাগের ন্যায়, যে সকল স্থানে হাড়ের উপরিস্থ টিসুগুলি পাতলা থাকে, তথায় আক্রমণটি হইলে ‘এগারিকাস’ অন্যান্য সকল ঔষধের অগ্রবর্তী হয়।
আংশিক পক্ষাঘাতের ন্যায় অবস্থা, বিশেষতঃ বামপার্শ্বের। পেশীসমূহের দুর্বলতা, নিম্নাঙ্গগুলির দুর্বলতা, বিশেষতঃ বামপার্শ্বের।
শরীরের উপরিস্থ উদ্ভেদ ও কঠিনতাপ্রাপ্তি গ্রাফাইটিসে’র ন্যায় কিন্তু পেট্রোলিয়ামের রসক্ষরণ পাতলা এবং জলের ন্যায়, এবং গ্রাফাইটিসে উহা আঠার মত, মধুর মত, চটচটে ও সান্দ্র। তোমরা উভয় ঔষধেই হাতের আঙ্গুলগুলির কঠিনতাপ্রাপ্তি ও ফাটা এবং চৰ্ম্মের ফাটা পাইবে কিন্তু শিংয়ের ন্যায় আঁচিলের উৎপত্তি এবং নখ উঁচু হইয়া উঠা কেবলমাত্র ‘গ্যাফাইটিসের মধ্যেই দেখা যায়।
পুরুষ বা স্ত্রী উভয়েরই জননেন্দ্রিয়ের উপর একজিমায় ইহার ব্যবহারে আশ্চর্য্য ফল হয় এবং ইহা রাস টক্সে’র সমক্ষ ঔষধ। অন্ডকোষ, লিঙ্গ, জরায়ুগ্রীবার উপর উদ্ভেদ। রাস’ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জননেন্দ্রিয়ের চর্মে ভীষণ প্রদাহ উৎপন্ন করে, ঐ প্রদাহ ইরিসিপ্লাসের ন্যায়, পুঁটিগুটি হইয়া উঠে, ফুস্কুড়ি জন্মে, বড় বড় স্বচ্ছ ফোস্কা জন্মে। পেট্রোলিয়ামে ছোট ছোট ফুস্কুড়ি উৎপন্ন হয়, উহাতে চুলকায়, হুলবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা হয় এবং জ্বালা করে। ইন্দ্রবিদ্ধার ন্যায় উদ্ভেদ, উহা ইরিসিপ্লাস সদৃশ হইয়া উঠে। পেট্রোলিয়াম ও রাস’ অন্ডকোষ ও জননেন্দ্রিয়ের উদ্ভেদের জন্য সচরাচর ব্যবহৃত ঔষধ। অন্ডকোষের উপর ইন্দ্রবিদ্ধাসদৃশ চুলকানি, আরক্ততা ও আর্দ্রতা, চর্ম ফাটিয়া যায়, খসখসে হয়, এবং রক্তস্রাবযুক্ত হয়, উহা জননেন্দ্রিয় ও মলদ্বার মধ্যবর্তীস্থানে। দুঃসাধ্য শুষ্ক উদ্ভেদ।” “স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই বাহ্য জননেন্দ্রিয়ের উপর ঘৰ্ম্ম ও আর্দ্রতা।”
আঁইসের ন্যায় মামড়িযুক্ত স্তনবৃন্ত, সাদা ভূষির ন্যায় আঁইস, চুলকায়, সর্বদা খোলস উঠে। যদি স্ত্রীলোকটি ভগ্নস্বাস্থ্য হন তাহা হইলে স্তনবৃন্তদ্বয় প্রদাহিত এবং কাপড়ের স্পর্শে অত্যনুভূতিবিশিষ্ট হয়।
‘ফস’ ও ‘রডো’র ন্যায় আবহাওয়ার পরিবর্তনে অত্যনুভূতিযুক্ত, ঝড় বৃষ্টির পূর্বে বৃদ্ধি। অনেক সময়ে বায়ু ও ঠান্ডায় অত্যনুভূতিবিশিষ্ট থাকে। কৃশ, শীর্ণতাপ্রাপ্ত, যক্ষ্মাসম্ভব রোগী। উদ্ভেদগুলি আপনিই অদৃশ হয় বা লোপ পায়। হাত পা জ্বালা করে, হাত পা বিছানার বাহিরে রাখিতে চায়। হাত পা জ্বালা করে বলিয়া সালফার’ কিন্তু পায়ে ঘর্ম হয় বলিয়া ‘সাইলিশিয়া সম্বন্ধে কৃতনিশ্চয় হইও না। বিশেষ একটি অঙ্গে ঘাম হওয়া। তালির আকারের দলবদ্ধ উদ্ভেদ। তালিতালি স্থানে চুলকানি। স্থানে স্থানে শীতলতা। রোগ একটি মাত্র অঙ্গে প্রকাশ পায়। পায়ের পাতার ও বগলের দুর্গন্ধ একটি শ্রেষ্ঠ পরিচায়ক লক্ষণ। অনেক প্রকারের আশ্চর্য অনুভূতি থাকে, ঐগুলি অদ্ভুত, লক্ষ্য করার মত। চৰ্ম্মলক্ষণগুলি মনোযোগের সহিত পাঠ করিবে এবং গ্র্যাফাইটিস’ ও ‘সালফারের সহিত তুলনা করিবে।
অপর নাম – বুক অয়েল (Rock-oil)
পেট্রোলিয়াম এক প্রকার খনিজ তৈল। এই তেলের এক ভাগ নিরানব্বই ভাগ অ্যালকোহলে দ্রবীভূত করে দ্বিতীয় ক্রম তৈরী করা হয়।
- পেট্রোলিয়ামের – মূলকথা
১। একজিমা – মাথার ত্বকে, কানের পিছনে, অণ্ডকোষে, মলদ্বারে, হাতে, পায়ের পাতায়, পা হাত ফাটায়
ও রক্ত পড়ায় ইহা উপযোগী সবকিছুরই বৃদ্ধি শীতকালে; উপশম গরমকালে।
২। উদরাময়, তার পূৰ্ব্বে উদরশূল; কেবলমাত্র দিবাভাগে উপস্থিত হয়।
৩। শিরঃপীড়া অথবা মাথার পিছনদিকে সীসার ন্যায় ভারবোধ, সময় সময় বমি বমি ভাব বা বমন।
বৃদ্ধি সঞ্চালনে, যথা নোকা বা গাড়াতে চড়লে।
- পেট্রোলিয়াম — পর্যালোচনা
১। পেট্রোলিয়াম হোমিওপ্যাথির অন্যতম অত্যুৎকৃষ্ট এন্টিসেরিক অর্থাৎ সোরাদোষ নাশক, ঔষধ। এর দ্বারা যে সকল উদ্ভেদের উৎপত্তি ও আরোগ্য নয়, গ্রাফাইটিসের সঙ্গে তার আকারগত সৌসাদৃশ্য আছে। এই সকল উদ্ভেদ, মাথার ত্বকে, কানের পিছনে, অণ্ডকোষে, স্ত্রী জননাঙ্গে, হাতে, পায়ে ও জঙ্ঘাদি প্রভৃতি শরীরের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রকাশিত হয়।
এই ঔষধের একটি অতি বিশেষ পরিচালক লক্ষণ আছে, যা এই ঔষধটিবে বিশেষভাবে নির্দেশ করে।
লক্ষণটি হল – “উদ্ভেদগুলি শীতকালে বৃদ্ধি পায়” (অ্যালো, এলমিনা, সোরিনাম)। অন্য কোন ঔষধেই এই লক্ষণটি এত সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় না।
শীতকালে হাত ফাটে ও উহা থেকে রক্তপাত হয়, উহার সৰ্ব্বত্র একজিমায় ভরে যায়; গ্রীষ্মকালে উহা আরোগ্য প্রাপ্ত হয়।
রোগী বিবরণী –
আমি একটি ২০ বছর স্থায়ী পায়ের নিম্নদিকের একজিমা রোগীর সব সময়েই শীতকালে বাড়ে দেখে ২০০ শক্তির এক মাত্রা পেট্রোলিয়াম ব্যবস্থা করি। তাতেই রোগী সেরে যায়।
আমি ঐ একইভাবে হাতের ফাটাও আরোগ্য করেছি।
কোন এক সময়ে আমি একটি দুরারোগ্য উদরাময়ের রোগী পেয়েছিলাম। কিন্তু যখনই জানা গেল যে, তার হাতে শীতকালীন একজিমা আছে তখনই তার ঐ উপদ্রব পেট্রোলিয়াম ২০০ দ্বারা আরোগ্য করতে পেরেছিলাম।
২। শীতকালে যে সকল আর্দ্র শীত-স্ফোটক (chilblains) জন্মে (এগারিকাস) এবং তা চুলকায় ও জ্বালা করে পেট্রোলিয়াম দ্বারা তা আরোগ্য প্রাপ্ত হয়।
৩। পেট্রোলিয়ামে হিপার সালফিউরিসের ন্যায় একটি লক্ষণ আছে, যথা সামান্য আচড় লাগা বা ছাল উঠা স্থান পেকে যায়। আমরা জানি হিপার সালফেরও শীতকালে বা ঠাণ্ডা বাতাসে বৃদ্ধি আছে।
৪। পেট্রোলিয়ামে মাথার পিছনের দিকের শিরঃপীড়া আছে। এক্ষেতে মাথা সীসার ন্যায় ভায়ি (heaviness) বোধ হয় ও মাথার পিছন দিকের মা ঘোরা থাকে।
৫। এছাড়া পেট্রোলিয়াম আমাদের সমুদ্র পীড়ার একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এক্ষেত্রে উহা ককিউলাসের অনুরূপ।
৬। আর একটি অদ্ভুত লক্ষণ পেট্রোলিয়ামে দেখা যায়, তা হল সন্ধিসমূহের পটপট (কড় মড়) শব্দ। এই লক্ষণটি কষ্টিকামেও আছে। পুরাতন বাতে, বিশেষত এই লক্ষণটি বর্তমান থাকলে উভয় ঔষধই উপকারী।
৭। পেট্রোলিয়াম, চেলিডোনিয়াম ও এনাকার্ডিামের মত আহারে পাকস্থলীর বেদনা উপশমিত হয়। তাছাড়া যে উদরাময় বা আমাশয় দিনের বেলায় বাড়ে, তাতে পেট্রোলিয়াম উপযোগী।
পেট্রোলিয়াম, সালফার, গ্রাফাইটিস, কষ্টিকাম ও লাইকোপোডিয়ামের মত প্রধান প্রধান এন্টিসোরিক ঔষধগুলির সমগোত্রীয়।