গ্লান্ড আক্রান্ত হয়, গ্লান্ড বড়, পাথরের মত শক্ত ও বেদনা যুক্ত হয়, বিশেষ করে স্তন আক্রান্ত হয়। |
খাদ্যনালীর খতের কারণে গরম তরল পান করতে পারেনা। |
ব্যথা বিদ্যুৎ তরঙ্গের মত দ্রুত এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলে যায়, তীর বা গুলী বিদ্ধ হওয়ার মত ব্যথা, সকল ব্যথা রাতে ও নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। |
আঁশ বা ছিন্ন অংশ যুক্ত স্রাব। |
হাত দিয়ে চাপলে ( স্তনের বেদনা ) মালিস করলে বা ঘষলে উপশম, বাম পাশে শুলে, উপুর হয়ে বা পেট চেপে শুলে উপশম। |
উপযোগিতা – বাত কষ্টে ভোগে, ফাইব্রাস তন্তু হাড়ের বেষ্টনীর তন্তু সকলে বাতকষ্ট পারদদোষ বা সিফিলিস দোষ থেকে হয় এমন লোকেদের পক্ষে উপযোগী।
দেহ শুকনো, মুখ-চোখ, চামড়া হলদেটে, চর্বি ঝরে যায় এমন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
দারুণ ক্লান্তি ও অত্যন্ত অবসন্নতা।
ফাইটো, ব্রায়ো্ ও রাস-ট এর মধ্যবর্তী স্থান গ্রহণ করে যখন এ দুটি ওষুধ পারত পক্ষে নির্দিষ্ট হয়েও কাজ করে না সেই ক্ষেত্রে এ ওষুধ প্রয়োগে রোগ সেরে যায়।
ডিপথেরিয়া, গণোরিয়া, পারদ বা সিফিলিস দোষজ বাতরোগ ও স্নায়ুর যন্ত্রণা হতে থাকে তখন এ ভাল কাজ করে।
ব্যথাবেদনা — বিদ্যুতের মত ধেয়ে যায়, তীর বেঁধার মত, বর্শা ফুটে যাওয়া মত যন্ত্রণা। যন্ত্রণা দ্রুতগতিতে স্থান পরিবর্তন করে (ল্যাক-ক্যা, পালস), যন্ত্রণা নড়াচড়া ও রাতে বাড়ে ।
জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ অনীহা-ভাবে নিশ্চিতভাবে সে মারা যাবে ।
মাথাঘোরা – বিছানা হতে মাথা তুললে মূৰ্ছাভাব আসে ব্রায়ো। তীব্র মাথাযন্ত্রণা ও পিঠেবেদনা সারা শরীরে খঞ্জভাব, টাটানি ব্যথা, থেলে যাওয়া মত ব্যথা থেকে অনবরত নড়াচড়া করতে থাকে কিন্তু ঐ নড়াচড়ায় যন্ত্রণা বেড়ে যায় (ল্যাক-ক্যা, মার্ক) নিড়াচড়ায় উপশম=রাস-ট
শিশুদের দাঁত ওঠার সময় অনবরত দাঁতে দাঁত বা মাড়ীতে মাড়ী দিয়ে চাপতে থাকে (পড়ো)।
গলায় ঘা – তাতে কালচে লাল রঙ, আলজিব বাড়ে, ফোলে, একদম প্রায় স্বচ্ছ কেলি-বাই, রাস-ট দেখায়।
ডিপথিরিয়া — কিছু গিলতে গেলে ব্যথা গলা থেকে কান অবধি ধেয়ে যায়, গিলতে গেলে জিবের গোড়ায় অত্যন্ত ব্যথা করে, গলায় শুকনো ভাব যেন জ্বলন্ত কয়লা বা গরম ইস্ত্রির মত জ্বালা হতে থাকে গিলতে কষ্ট হয় ঐ সাথে হাতদুটো কাঁপতে থাকে। গলায় যেন দলামত কি একটা আটকে আছে এ থেকে অনবরত ঢোক গিলতে থাকে। টনসিল, আলজিব ও গলার পেছন দিকটায় ছাইরঙের পর্দা পড়ে গরম কিছু খেতে পারে না (ল্যাকে)।
ডিপথেরিয়া ও স্কারলেট জ্বরের পরবর্তী ক্যারোটিভ ধমনী ও সাবম্যাক্সিলারী (চোয়ালের নীচে) গ্র্যান্ডগুলো শক্ত হয়ে যায়। স্তনে শক্ত, যন্ত্রণাপূর্ণ চাকা চাকা গুটলিমত হয়। স্তনদুটোয় খুব তাড়াতাড়ি শক্ত হয়ে থাকার প্রবণতা জন্মায়, স্তন ভারী পাথরের মত শক্ত ও যন্ত্রণা হয়। বিশেষতঃ যখন পুঁজ হবার সম্ভাবনা থাকে, শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় স্তনের বোঁটা থেকে যন্ত্রণা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে (যন্ত্রণা স্তনের বোটা থেকে পেছন দিকে যায় = ক্রোটন টিগ; যদি জরায়ু পর্যন্ত ব্যথা যায় = পাল, সাইলি)। স্তনে ফোড়া হয়, নালী ঘা হয়, মুখ বার হয়, ভয়ঙ্কর দাতা থেকে পাতলা, কলতানির মত, দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ঝরতে থাকে দেখলে মৃণা হয়। আক্রান্ত স্তন ফোলে, সারেও না বা পুঁজও হয় না, স্তনের চারপাশে বেগুনি কালিমা পড়ে, স্তন পুরাণ পনিরের মত শক্ত হয় ব্রোয়ো্, ল্যাক-ক্যা, ফেলাড্রিনাম।
স্তনের বোঁটাতে ছোঁয়া লাগান যায় না, টাটানি ব্যথা, বোটা ফাটাফাটা (গ্রাফাই), স্তন্যদানে ভীষণ যন্ত্রণা হয় ঐ যন্ত্রণা সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ ওষুধ প্রয়োগে পুঁজ হওয়া রোধ করে (হিপার, ল্যাকে, মার্ক, সাইলি)।
বৃদ্ধি – বৃষ্টি হলে, ভেজা ঠান্ডা স্যাৎসেতে জল হাওয়া লেগে।
তুলনীয়—কেলি-আয়োড এর সমগুণ।
শক্তি — ৬, ৩০, ২০০, ১এম। বহুবছরের পুরাতন কুলক্ষণযুক্ত স্তনের টিউমার পূর্ণিমার পরে অমাবস্যার প্রাক্কালে একমাত্রা সি. এম. শক্তি দিয়ে সারিয়েছি = ন্যাশ।
ফাইটোলক্কার পথপ্রদর্শক সার্বিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণগুলি হল, কনকনানি, টাটানি ব্যথা, অস্থিরতা ও অবসন্নতা। এটি বিশেষ করে গ্রন্থিজ রোগের একটি ঔষধ বিশেষ। গ্রন্থিজ স্ফীতি তৎসহ উত্তাপ ও প্রদাহ। সৌত্রিক ও অস্থিময় তন্তুর উপর এই ঔষধটির শক্তিশালী কাজ আছে; পেশী বেষ্টনকারী পাতলা তন্তু বা ফাটা ও পেশীর উপর কাজ আছে; ক্ষতস্থান জোড়া লাগায় যেসকল তন্তু বা ফাইব্রাস টিসুর উপরেও কাজ আছে। সিফিলিসজনিত কারনে অস্থির বেদনা; পুরাতন বাত রোগ। গলক্ষত, গলকোষে ফোঁড়া ও ডিথিরিয়া। ধনুষ্টঙ্কার ও শরীরের বক্রতা। শারীরিক ওজনের হ্রাস পাওয়া দাঁত উঠা বাধাপ্রাপ্ত।
মন – নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ভদ্রতা জ্ঞানের অভাব, পারিপার্শ্বিক বস্তু সম্পর্কে অবজ্ঞার মনোভাব। জীবনে হতাশ।
মাথা – উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরে। মস্তিষ্কে টাটানি ব্যথার অনুভূতি। মাথার কপাল অংশ থেকে মাথার পিছন পর্যন্ত বেদনার অনুভূতি। রগের উপর ও চোখদুটির উপরে চাপবোধ। মাথার চামড়ার বাতরোগ; প্রতিবার বৃষ্টির সময় বেদনা দেখা দেয়। মাথার চামড়ার উপর আঁশযুক্ত উদ্ভেদ।
চোখ – চোখের ভিতরে হুলফোটানোর মত বেদনা। চোখের পাতার নীচে বালুর জমা থাকার মত অনুভূতি। চোখের ভিতরের কোমলাস্থির কিনারা সমূহে উত্তাপের অনুভূতি। অশ্রুস্রাবী কোষে নলীখা (ফুরিক অ্যাসিড)। প্রচুর অশ্রস্রাব, স্রাব উত্তপ্ত।
নাক – সর্দি; নাকের একদিকের ছিদ্র ও নাকের পিছনের অংশ থেকে শ্লেষ্মা স্রাব।
মুখগহ্বর – দাঁত উঠছে এই জাতীয় শিশুদের, দাঁতে দাঁতে কামড়াবার প্রবণতা। দাঁতগুলির চাপা অবস্থা নীচের ঠোঁটটির নীচের দিকে টানভাব ঠোঁট দুটি ভিতরের দিকে ঢুকে থাকে; চোয়ালগুলি দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে; চিবুকে বুক্কাস্থির দিকে টানাভাব। জিহ্বার অগ্রভাগ লালচে, খসখসে ও ঝলসে যাবার মত অনুভূতি মুখগহ্বর থেকে রক্তস্রাব, মুখগহ্বরের একদিকে ফোস্কাসমূহ, জিহ্বা মানচিত্রের মত, দাঁতের ছাপযুক্ত ফাটাসমূহ, তৎসহ কেন্দ্রস্থলের নীচের দিকে হলুদ বর্ণের ছোপ। প্রচুর দড়ির মত লালা স্রাব।
গলা – কালচে লাল ও নীলচে লালবর্ণ। জিহ্বার গোড়ার দিকে তীব্র বেদনা; তালুর কোমল অংশেও টনসিল দ্বয়ের স্ফীতি। গলার ভিতরে মন্ডের মত দলা থাকার মত অনুভূতি। (বেলেডোনা; ল্যাকেসিস)। গলায় খসখসে, সংকীর্ণতার ও উত্তাপের অনুভূতি। টনসিল দ্বয়ের স্ফীতি, বিশেষ করে ডানদিকের টনসিলের কালচে-লাল দেখতে। ঢোক গেলার সময়,কানের ভিতরে তীরবিদ্ধবৎ বেদনা। কৃত্রিম ঝিল্লীর উদ্ভব, ধূসর, সাদাবর্ণের, রসযুক্ত পুরু, চটচটে হলুদবর্ণের শ্লেষ্মা, বের করতে কষ্ট হয়। গরম কোনকিছু গিলতে পানে না ল্যাকেসিস)। কর্ণমূলগ্রন্থিতে টানভাব ও চাপবোধ। গলায় ক্ষত ও ডিথিরিয়া;গলার ভিতরে অত্যন্ত উত্তাপের অনুভূতি; জিহ্বার গোড়ায় বেদনা, বেদনা কান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। আলজিহ্ববৃহৎ, শোথযুক্ত, গলকোষে ফোঁড়া; টনসিলদ্বয় ও গলকোষের স্ফীতি, তৎসহ জ্বালাকর বেদনা; কিছুতেই ঢোক গিলতে পারে না, এমনকি জল পর্যন্ত। মাম্প; ছোট ছোট গুটি যুক্ত গলবিল প্রদাহ।
উদর – পেটের ডানদিকের উপরের অংশে টাটানি ব্যথা যুক্ত স্থান। পেটের পেশীর বাতরোগ। নাভিস্থানে শূলবেদনা। জ্বালাকর, মোচড়ানবৎ বেদনা। পেটের উপরের অংশে থেকে সারা পেটে থেঁৎলিয়ে যাবার মত অনুভূতি। বৃদ্ধদের কোষ্ঠকাঠিণ্য এবং তৎসহদুর্বল হৃদপিন্ড। সরলান্ত্র থেকে রক্তস্রাব।
প্রস্রাব – অল্প, বাধাপ্রাপ্ত, তৎসহ বৃক্ক প্রদেশে বেদনা। বৃক্কের প্রদাহ।
স্ত্রীরোগ — স্তন প্রদাহ। স্তনদ্বয় অত্যন্ত শক্ত ও অতি অনুভূতি প্রবন। স্তনের অর্বুদ তৎসহ বগলের গ্রন্থির স্ফীতি। স্তনের ক্যান্সার বা কর্কট রোগ। স্তন শক্ত, বেদনাপূর্ণ ও বেগুনি আভাযুক্ত। স্তনগ্রন্থির ফোঁড়া। শিশুকে স্তনের দুধ দেবার সময়, বেদনা স্তনের বোঁটা থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। স্তনের বোঁটার চারিদিকে ফাটাসমূহ ও ছোট ছোট ক্ষত সমূহ। স্তনের উপদাহ, মাসিক ঋতু স্রাবের আগে ও ঋতু স্রাবের সময়। স্তন থেকে অতিরিক্ত দুগ্ধস্রাব (ক্যাল্কেরিয়া কার্ব)। মাসিক ঋতুস্রাব প্রচুর ও বারে বারে স্রাব দেখা দেয়। ডানদিকের ডিম্বাশয়ের স্নায়ুশূল।
পুরুষের রোগ – অন্তদ্বয়ের বেদনাপূর্ণ কঠিণতা। মূলাধার থেকে পুরুষাঙ্গ পর্যন্ত তীরবিদ্ধবৎ বেদনা।
হৃদপিন্ড – রোগীর মনে হয় হৃদপিন্ডটি গলার কাছে লাফিয়ে আসছে (পডোফইলাম)। পর্যায়ক্রমে হৃদপিন্ড স্থানে বেদনা ও ডান বাহুতে বেদনা।
শ্বাসযন্ত্র সমূহ — স্বরলোপ। কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস; শুষ্ক খুকখুকে, সুড়সুড়কর কাশি; রাত্রে বৃদ্ধি (মেন্থা, বেলেডোনা)। বুকের ভিতরে কঙ্কণে বেদনা, বুক্কাস্থির মাঝ বরাবর দিয়ে বেদনার শুরু; তৎসহ কাশি। নিচের পাঁজরার অস্থির মধ্যবর্তী অংশে বাতরোগ।
পিঠ – কোমর প্রদেশে কল্কনে বেদনা; বেদনা উপর ও নীচের দিকের মেরুদন্ড হয়ে ত্রিকাস্থি পর্যন্ত উঠা নামা করে। বৃক্কস্থানের দুর্বলতা ও মৃদু বেদনা। পিঠের আড়ষ্টতা, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেও বর্ষন স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – ডানদিকের কাঁধে তীরবিদ্ধবৎ বেদনা, তৎসহ আড়ষ্টতা ও বাহুগুলি উপরের দিকে তুলতে পারে না। বাতজ বেদনা; সকালে বৃদ্ধি। বেদনা বিদ্যুতের মত দ্রুত চলাচল করে, তীরবিদ্ধবৎ, ছুরি দিয়ে কাটার মত, দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে (পালসেটিলা; ক্যালিবাই)। উরুস্থানের নীচের অংশে বেদনা। সিফিলিস জনিত সায়েটিকা। গোড়ালির কনকণানি; পা উপর দিকে তুলে ধরলে বেদনার উপশম। অবচেতন করার মত বেদনা। পা দুটির বেদনা, রোগী পা উপরের দিকে তুলতে ভয় পায়। পায়ের পাতা ফোলা; পায়ের গোড়ালির ও পাতায় বেদনা। পায়ের আঙ্গুলের স্নায়ুশূল।
জ্বর — উচ্চতর জ্বর। পর্যায়ক্রমে শীতবোধ ও প্রচন্ড অবসন্নতা।
চামড়া — চুলকানি, শুষ্ক, কোঁচকানো, ফ্যাকাশে। পুঁজ ও জলযুক্ত ফুস্কুড়িসমূহ। চামড়া রোগের প্রথমাবস্থায় খুবই উপযোগী ফোঁড়া হবার প্রবণতা যুক্ত এবং যখন পচা অংশ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। আঁশযুক্ত উদ্ভেদসমূহ। সিফিলিস জনিত উদ্ভেদসমূহ। গ্রন্থি সমূহের স্ফীতি ও কঠিণতা। যৌনরোগজনিত রোগী। স্কারলেটিনার মত উদ্ভেদ সমূহ। আঁচিল ওঁ জডুল সমূহ।
কমাবাড়া-বৃদ্ধি, আবহাওয়ার বৈদ্যুতিক অবস্থার পরিবর্তনে। ভিজে থাকার প্রভাব, বৃষ্টিতে ভিজলে, ভিজে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায়, রাত্রে, নড়াচড়ায়, ডানদিকে।
উপশম — উষ্ণতা, শুষ্ক আবহাওয়ায় ও বিশ্রামে।
সম্বন্ধ-তুলনীয়—ফাইটোলক্কার অরিষ্ট (নালার ক্ষেত্রে ও স্থুলকারের চিকিৎসায়); ব্রায়োনিয়া; রাসটক্স; ক্যালি হাইড্রো, মার্কসল, স্যাঙ্গুইনেরিয়া, অরামট্রাইফাইলাম।
শত্রুভাবাপন্ন – মারকিউরিয়াস।
দোষঘ্ন – দুধ ও লবন; বেলেডোনা, মেজেরিয়াম।
শক্তি – অরিষ্ট থেকে ৩য়শক্তি। স্তনের প্রদাহে বাহ্যিকভাবে।
ইহা একটি খুব অসম্পূর্ণভাবে পরীক্ষিত ঔষধ এবং ইহাকে মাত্র আংশিকভাবেই উপস্থাপিত করা যাইতে পারে। মানসিক লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয় নাই কিন্তু তথাপি ঔষধটিতে কতকগুলি আশ্চৰ্য্য লক্ষণ আছে।
তোমরা এই ঔষধটর ‘মার্কারি’র সহিত সাদৃশ্য দেখিতে পাইবে এবং ইহা মার্কারির একটি পুরাতন ক্ষততাযুক্ত থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অবস্থা, যেস্থলে অস্থির উপরের চর্ম পাতলা সেইস্থলের অস্থিবেষ্টের ক্ষততা, দীর্ঘাস্থি ও সন্ধিগুলির ক্ষততা, পেশীসমূহের ক্ষততা, টানিয়া ধরার মত, খালধরার মত যন্ত্রণা, পৃষ্ঠের পেশীগুলিতে আকর্ষণবোধ, পৃষ্ঠবেদনা, রাত্রিকালে বৃদ্ধি, শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি। রোগী মার্কারি’র ন্যায় এই সকল উপসর্গে ঠান্ডা আর্দ্র আবহাওয়ায় কষ্ট পায়। ক্ষতপ্রবণতা, সুতরাং ইহার সিফিলিসেও উপযোগিতা আছে, অনেক দিনের, পুরাতন সিফিলিসজাত ক্ষত, রোগীর লালাস্রাব করান হইয়াছে, ‘মার্কারি ঘর্ষণ করা হইয়াছে, সে মার্কারিতে পরিপূরিত হইয়া পড়িয়াছে, কিন্তু আর এখন উহাতে উপশম হয় না এরূপ অবস্থা। গলার মধ্যে ক্ষত, চর্মের উপর ক্ষত, যে কোন স্থানের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর উপর ক্ষত।
আক্ষেপযুক্ত অবস্থা পেশীগুলি টানিয়া ধরে, উহা ভীষণ আক্ষেপে পরিণত হইতে পারে; পশ্চাত্বক্রতাবিশিষ্ট আক্ষেপ, সময়ে সময়ে গ্রীবাদেশ আক্রান্ত হয়, মাথা পেছনদিকে বাঁকিয়া যায়, পেশীগুলি আক্ষিপ্ত হইতে, ঝাঁকি দিতে থাকে।
ফাইটোলেক্কা গ্রন্থির ঔষধ। গ্রন্থিগুলি প্রদাহিত এবং কঠিন হয়; ইহাতে গলক্ষত উৎপন্ন। হয়, তৎসহ ঘাড়ের গ্রন্থিগুলি প্রদাহিত হয়, বিশেষভাবে চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিগুলি ও কর্ণমূলগ্রন্থিগুলি প্রদাহিত হয়। ঘন, দুচ্ছেদ্য শ্লেষ্মা সঞ্চয়ের সহিত গলার প্রদাহ, টনসিলদ্বয়ের প্রদাহ। ইরিসিপ্লাসের ন্যায় দুষ্টপ্রকৃতির প্রদাহ।
লক্ষণগুলি রাত্রিকালে, ঠান্ডা দিনে, ঠান্ডা গৃহে এবং শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধিযুক্ত হয়, সুতরাং ঠান্ডা ও গরমের মধ্যে একরূপ বিসম্বাদ।
মনে হয় যেন ঔষধটির ক্রিয়া স্তনগ্রন্থিগুলিতে কেন্দ্রীভূত। প্রত্যেকবার ঠান্ডা ও আর্দ্রতার আবেশ উপস্থিত হইলেই, স্তনে ক্ষততা উৎপন্ন হয় এবং ডেলাডেলা জন্মে। তাঁহার ঠান্ডা লাগিলেই, স্তনের ক্ষততা জন্মে; ঋতুকালে স্তনদ্বয় ক্ষততাযুক্ত হয়; একজন স্তন্যদাত্রী স্ত্রীলোক ঠান্ডায় উন্মুক্ত হইলে, তাহার স্তন প্রদাহিত হয়, দুগ্ধ মোটা মোটা হইয়া যায়, জমাট বাঁধিয়া যায়। ইহা পরীক্ষায় প্রকাশিত হইয়াছে, কারণ গরুর দুধ ঘন হইয়া গেলে এবং দুধের থলি ডেলার মত হইয়া গেলে এবং ঐ অবস্থা গুরু বৃষ্টিতে দাঁড়াইয়া থাকার ফলে উপস্থিত হইলে, গো-পালকেরা ফাইটোলেক্কা গাছের মূল যথেষ্ট পরিমাণেই ব্যবহার করিয়া থাকে।
প্রায় যে কোন রকম উত্তেজনাই স্তনগ্রন্থিতে কেন্দ্রীভূত হয়; ভয় পাইলে বা কোন দুর্ঘটনা ঘটিলে, স্তনে ডেলার সৃষ্টি হয়, যন্ত্রণা, উত্তাপ, স্ফীতি, ফুলাভাব, এমন কি ভীষণ প্রদাহ ও পুঁজোৎপত্তি উপস্থিত হয়। মেটিরিয়া মেডিকার আর কোন ঔষধের ক্রিয়াই স্তনগ্রন্থিতে এত বেশী কেন্দ্রীভূত হয় না। মার্কারি’র ক্রিয়াও অনুরূপ; রোগীর ঠান্ডা লাগিলেই গ্রন্থিগুলি ক্ষততাযুক্ত হয়। যদি কোন স্তন্যদাত্রী স্ত্রীলোকের প্রত্যেক প্রকারের অনাচারেই স্তনগ্রন্থিগুলি ব্যথাযুক্ত হইয়া ওঠে, তাহাকে ফাইটোলেক্কা দিবে। যদি কোন মাতা বলেন যে, তাঁহার স্তনে দুধ নাই কিম্বা দুধ খুব অল্প ঘন ও অস্বাস্থ্যকর হইয়া গিয়াছে, অথবা স্তনদুগ্ধ খুব শীঘ্র শীঘ্র শুকাইয়া গিয়াছে, তাহা হইলে যদি কোন বিপরীত লক্ষণ না থাকে, ফাইটোলোই ধাতুদোষ সংশোধক ঔষধ হইবে। কোন রোগিণীর রক্তময় জলের মত একপ্রকার স্রাব, সন্তানকে দুধ ছাড়ার পাঁচ বৎসর পর পৰ্য্যন্ত থাকিয়া গিয়াছিল, উহা ফাইটোলেক্কা দ্বারা আরোগ্য হইয়াছিল। স্তনদ্বয় এত ক্ষততাযুক্ত থাকে যে, তিনি যখন সন্তানকে স্তন্যপান করাইতে থাকেন, তখন তাঁহার পৃষ্ঠ ও অঙ্গাদি দিয়া নিম্নদিকে বিস্তারশীল সর্বাঙ্গীণ যন্ত্রণায় আক্ষেপের মত হয়।
ডিপথেরিয়া। কোন কোন সময়ে বহুব্যাপক রোগে গলায় অত্যন্ত স্ফীতি হয়, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলি, কর্ণমূলগ্রন্থি ও চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিগুলি ফুলিয়া উঠে, হাড়ের মধ্যে কনকন করে, মুখ হইতে দুর্গন্ধ ছাড়ে, জিহ্বায় পুরু লেপ জন্মে, পৃষ্ঠে অত্যন্ত কনকনানি, নাসিকা হইতে রক্তপাত এবং পেশীসমূহে অত্যন্ত ক্ষততা জন্মে, উহাতে ফাইটোলেক্কা উপযোগী। ইহা মার্কিউরিয়াসে’র সদৃশ এবং ডিপথেরিয়ায় এই দুইটি ঔষধ ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধবিশিষ্ট। সময়ে সময়ে ডিপথেরিয়ায় আমরা কেবলমাত্র দুর্গন্ধ, লেপাবৃত জিহ্বা, নিঃস্রাব নির্গমন, গ্রন্থিস্ফীতি এবং গ্রীবাস্তম্ভ পাই। উহা ‘মার্কিউরিয়াস’ বা মার্কারি’ ঘটিত কোন একটি ঔষধের ন্যায় দেখায়।
প্রোটো-আইওডায়েড ডানপার্শ্বের ঔষধ, প্রদাহ হয় ঐ স্থানেই থাকিয়া যায়, নচেৎ বামদিকে বিস্তৃত হয়। বিন আইওডায়েড’ বামপার্শ্ব হইতে ডানপার্শ্বে যায়। মার্ক সায়ানাইডে’ পুরু, সবুজ ঝিল্লীপাত হয়, ঐ ঝিল্লী নাক হইতে গলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ফাইটোলেক্কাতে আমরা মার্কারি’র ন্যায় অনেক লক্ষণ পাই।
ইহা মাথার খুলির উপরের এবং হাঁটুর নিম্নের বৃহৎ অস্থির সিফিলিসজাত গন্ড আরোগ্য করিয়াছে।
বহু প্রকার উদ্ভেদ, আঁইস উঠা উদ্ভেদ, খুসকি উঠা উদ্ভেদ, সোরিয়েসিস।” “দদ্রু।” ক্ষৌর কুন্ড।” “দেহের উপর পীড়কা, হাম, দেহের উপর আরক্তজ্বরের ন্যায় উদ্ভেদ।” ইহাতে যে আরক্ত জ্বর আরোগ্য হয়, তাহা বিস্ময়কর নহে, কারণ ইহার লালবর্ণ পীড়া, গলবেদনা এবং গ্রন্থির আক্রান্ত অবস্থা আছে।
ইহার দূষিত উৎপত্তির সৃষ্টি, বিশেষতঃ স্তনের দূষিত উৎপত্তি বিলম্বিত করিবার ক্ষমতা আছে; গ্রন্থিজ অর্বুদ যাহা শক্ত ও ক্যান্সারসদৃশ হইয়া উঠে। যতদিন পর্যন্ত এই ঔষধটি জানা ছিল না, ততদিন পর্যন্ত স্তনগ্রন্থির পুরাতন ক্ষতকলঙ্কের জন্য একটি মাত্র ঔষধই ছিল। কোন স্ত্রীলোক হয়ত অনেক বৎসর পূর্বে আঁতুড়ে ছিলেন, তাহার ঐ সময় স্তনে ফোড়া হইয়াছিল, উহাতে পুলটিস দেওয়া হইয়াছিল এবং অস্ত্রোপচার করা হইয়াছিল, এবং তারপর একটি ক্ষতকলঙ্ক রহিয়া গিয়াছিল। তারপর এইবার বর্তমান আঁতুড় অবস্থায়, তাহার আবার রোগ হইল, পুরাতন ক্ষতকলঙ্ক প্রদাহিত হইয়া উঠিল, ক্ষত উৎপন্ন হইয়া স্তন্যগ্রন্থিগুলি খাইয়া যাইতে লাগিল, স্তন্যনালীগুলি সরিয়া জড়াইয়া যাইতে লাগিল, প্রদাহ প্রদাহ অত্যন্ত প্রবল হইয়া দপদপ করিতে লাগিল, যন্ত্রণা হইতে লাগিল, দুগ্ধ রক্তাক্ত হইয়া উঠিল। “গ্যাফাইটিস’ এই অবস্থার জন্য পূর্বেকার একমাত্র বাঁধাধরা ঔষধ ছিল কিন্তু ফাইটোলেক্কা আরও ভাল ঔষধ এবং সাধারণ আনুষঙ্গিক লক্ষণগুলির পক্ষে আরও বেশী ক্ষেত্রে উপযোগী হয়। প্রসবের পর প্রদাহিত স্তনে যে সকল লক্ষণ সাধারণতঃ দেখা যায়, তাহা-পৃষ্ঠে কনকনানি ও অস্থিবেদনা, জ্বর ও কম্প। ফাইটোলেক্কায় এইগুলি আছে এবং রোগের প্রকৃতির সহিতও মিলিয়া যায়। গ্রাফাইটিসের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। যদি প্রবল জ্বর, মস্তকে রক্তসঞ্চয়, রগের শিরা দুইটির দপদপানি, অত্যন্ত আরক্ততা এবং ঐ আরক্ততা স্তনবৃন্ত হইতে বিস্তৃত হওয়া থাকে, তাহা হইলে ‘বেলেডোনাই। ঔষধ হইবে । যখন সমগ্র গ্রন্থিটি পাথরের ন্যায় ভারি ও কঠিন হয় এবং রোগী সঞ্চালনে ও স্পর্শে অনুভূতিবিশিষ্ট হয়, তখন ব্রায়োনিয়া দিবে। সাধারণ লক্ষণগুলি মিলিলে মার্কারি’ দিবে। যদি পুঁজোৎপত্তি নিবারণ অসম্ভব হয়, তাহা হইলে ‘হিপার এবং সাইলিসিয়া’ দিবে, বিশেষভাবে যদি রোগী একমাত্র উত্তাপেই উপশম পায়। যখন অত্যন্ত যন্ত্রণা ও ক্ষততা, উপদাহিতা এবং উত্তাপে উপশম থাকে তখন ‘হিপার’ পুঁজোৎপত্তি পরিমিত করিবে এবং যন্ত্রণা ব্যতীত স্থানটি ফাটাইয়া দিবে।
নাকের অস্থির ধ্বংসপ্রাপ্তির সহিত, অত্যন্ত কষ্টদায়ক, দীর্ঘকালস্থায়ী, দুরারোগ্য পুরাতন সর্দি। “নাক সম্পূর্ণভাবে বুজিয়া যায়, গাড়ীঘোড়ায় চড়িলে মুখ দিয়া নিশ্বাস লইতে বাধ্য হয়।” “সর্দি এবং কাশি, তৎসহ চক্ষের আরক্ততা এবং অশ্রুস্রাব; আলোকাতঙ্ক, চক্ষের মধ্যে বালিপড়ার ন্যায় অনুভূতি, ক্ষততাবোধ এবং জ্বালা।” “সিফিলিসজাত পুতিনস্য, তাহার সহিত রক্তাক্ত ক্ষতের রসানির ন্যায় নিঃস্রাব ও অস্থিপীড়া।” “নাকের গুটিকা রোগ এবং নাকের ক্যান্সার।”
ইহা কতকটা গ্রাফাইটিস’-সদৃশ, কারণ ইহাতেও ঐরূপ ফাটা জন্মে, তাহাতে প্রদাহ উপস্থিত হয় এবং কঠিনতা প্রাপ্তি ও উদ্ভেদ জন্মে। যে স্থলে রক্তসঞ্চালন ক্ষীণ থাকে, সেখানে ইহা কঠিনতা উৎপন্ন করিবার প্রবণতা আছে।
“মুখমন্ডল বসা, বিবর্ণ, কুঞ্চিত, চক্ষের চারিদিকে নীলবর্ণ, চৰ্ম্ম হলদেটে, নীলাভ এবং যন্ত্রণাব্যঞ্জক দেখায়।” “রাত্রিকালে মুখমন্ডলের এবং মস্তকের হাড়ে যন্ত্রণা।” “বাম কর্ণের চারদিকে এবং মুখমন্ডলের পার্শ্বে ইরিসিপ্লাসের ন্যায় স্ফীতি,—ঐ স্থান হইতে স্ফীতি মস্তকত্বকে যায়, এবং অত্যন্ত যন্ত্রণাপূর্ণ হয়।” “ওষ্ঠদ্বয় উলটান এবং কঠিন। ধনুষ্টঙ্কার।” “ওষ্ঠের উপর ক্ষত।” “কর্ণমূল ও চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিগুলির স্ফীতি।” “জিহ্বার পশ্চাঙ্গ পুরু লেপাবৃত, হলদে লেপাবৃত এবং শুষ্ক।” ইহা সকল তরুণ রোগেই দেখা যায় এবং মার্কারি’-সদৃশ লক্ষণ। ফাইটোলেক্কার “ইলেকট্রিক স্কুলের চিকিৎসকগণের মধ্যে সুনাম আছে এবং তাহাদের দ্বারা লব্ধ ফল হইতে আমরা হোমিওপ্যাথিক মতে ইহার কার্যকারিতার আভাস পাই। সিনসিনেটী প্রদেশে, তাঁহারা এক গ্লাস জলে ৩ ফোটা এই ঔষধ দিয়া মুখের ভিতরের ক্ষতের জন্য ব্যবহার করিতেন। ইহা তাহাদিগের বাঁধাধরা ঔষধ ছিল এবং তাহারা কতকগুলি হোমিওপ্যাথিক আরোগ্যও করিয়াছিলেন। বড় বড় ক্ষতবিশিষ্ট মুখ।” লক্ষণ মিলিলে, সিফিলিসজাত ক্ষতে ফাইটোলো একটি আরোগ্যকর ঔষধ হয়।
“গাইডিং সিম্পটমস” পুস্তকে কয়েক পাতা জুড়িয়া ইহা গলা, ডিপথেরিয়া, গলক্ষত, গ্রন্থিপ্রদাহ, রাত্রিকালীন বৃদ্ধিযুক্ত অস্থিবেদনা, গলাধঃকরণে কষ্টের কঠিন অবস্থা, টনসিলে বেদনা, টনসিল বৃদ্ধি, টনসিল হইতে গলিত মাংস নির্গত হওয়া সম্বন্ধে হোমিওপ্যাথিক আরোগ্যের কথা লিখিত হইয়াছে । সিফিলিস এবং পারদ দোষজাত গলক্ষত। গলক্ষত প্রায়ই উষ্ণ পানীয়ে বর্ধিত হয়, রোগী শীতল জিনিষ চাহে, এবং রাত্রে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এখানে একটি সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হইতেছে “ডিপথেরিয়া, সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হইতেছে =-“ডিপথেরিয়া, উঠিয়া বসিতে গেলে বমি বমি ভাব এবং শিরোঘূর্ণন, মাথার সম্মুখ দিকে শিরঃপীড়া, যন্ত্রণা গলা হইতে কর্ণ পর্যন্ত ধাবিত হয়, যন্ত্রণা গিলিতে গেলে বেশী অনুভূত হয়, মুখমন্ডল আরক্তিম, জিহ্বা অত্যন্ত লেপাবৃত, বহির্নির্গত, পশ্চাৎভাগ পুরুলেপাবৃত, ডগা অগ্নির ন্যায় লাল, দুর্গন্ধ, পচাগন্ধ নিশ্বাস, বমন, গলাধঃকরণে কষ্ট, টনসিলদ্বয় স্ফীত, ঝিল্লী দ্বারা আবৃত; তিন চারটি তালির আকার ক্ষতযুক্ত, টনসিল, আলজিভ, এবং গলার পশ্চাৎভাগ ছাইরঙের নিঃস্রাবে আবৃত। জিহ্বানির্গত করিতে গেলে জিহ্বামূলে যন্ত্রণা।”
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পুরাতন গেঁটেবাত ও বাত; তরুণ বাত দীর্ঘস্থায়ী হইলে, রাত্রে বর্ধিত হইলে, শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধিযুক্ত হইলে, গরম বাহ্যিক প্রয়োগে বর্ধিত হইলে উপযোগী। গেঁটেবাতযুক্ত বাতরোগ, সিফিলিসদুষ্ট রোগী, বেদনা যেন হাড়ের মধ্যে রহিয়াছে এরূপ অনুভূতি। “নিতম্বদেশে তীব্ৰ কৰ্ত্তনবৎ যন্ত্রণা, টানিয়া ধরা, পা দুইটি আকৃষ্ট হয়, মেঝে স্পর্শ করিতে পারে না।” “সিফিলিস ও গনোরিয়া জাত সায়েটিকা প্রভৃতি।” “পায়ের উপর ক্ষত ও ঢিবলি।”
এক শ্রেণীর চিকিৎসকের ‘পডোফাইলাম’কে ‘উদ্ভিজ্জ মার্কারি’ বলিয়াছেন। ফাইটোলোকেই উদ্ভিজ্জ মার্কারি’ বলা উচিত; কারণ ইহা মার্কারি’ সদৃশ লক্ষণগুলিতে পূর্ণ।
অপর নাম – পোকউইড (Pokeweed)
ইহা ফাইটোলাক্কাসী জাতীয় উদ্ভিদ। এর মূল, পাতা ও ফল থেকে মূল অরিষ্ট তৈরী হয়।
ফাইটোলাক্কার – মূলকথা
১। টনসিল লাল, স্ফীত, ওর উপর সাদা সাদা দাগ। ঐগুলি সময়ে সময়ে জুড়ে গিয়ে তালির মত আকার ধারণ করে। বেদনা কান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়; মাথায়, পিঠে, অঙ্গ প্রত্যঙ্গে কামড়ানো ও থেৎলে যাওয়ার মত টাটানো ব্যথা; নড়াচড়ায় বাড়ে; তবুও কিন্তু বোগী কামড়ানো ব্যথা ও ক্ষততা রোধের জন্য নড়াচড়া করতে বাধ্য হয়।
২। দাঁত উঠবার সময় দাঁত ও মাঢ়ী একত্রে করে কামড়াবার দুর্ণিবার
প্রবৃত্তি।
৩। স্তনদ্বয় অত্যন্ত শক্ত, স্ফীত, গরম ও ব্যথাযুক্ত; শিশু দুধ খাওয়ার সময় বেদনা, এই বেদনা সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।
ফাইটোলাক্কা – একটি আলোচনা
১। ফাইটোলাক্কা গলাব্যথার (sore-throat) একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ এবং এর প্রয়োগ লক্ষণ ও পরিষ্কার।
সাধারণতঃ গলার প্রদাহ, টনসিলদ্বয়ে স্ফীত ও প্রথমে অতিশয় আবতা (লাল হয়ে উঠে, ও পরে সাদা দাগ প্রকাশিত হয় এবং প্রশমিত না হলে অবিলম্বে ঐগুলি প্ৰারিত ও সমবেত দুয়ে ডিপথিরিয়ার ন্যায় তালি তালি (patches) ঝিল্লীর উৎপত্তি করে। এবং সেখান থেকে তীক্ষ্ম বেদনা এক বা উভয় কানে সম্প্রসারিত হয়। এইগুলি গলার স্থানিক লক্ষণ।
এর সব্বাঙ্গিন লক্ষণগুলি হল –
“পেটের ও মাথার দারুণ বেদনা, সর্ব্বশরীরে টাটানো ও খেলানো বোধ হয়। এতে রোগী কাতর শব্দ করে।” রাসটক্সের মত তার নড়াচড়া করতে ইচ্ছা যায় কিন্তু নড়লে টাটানো ও থেঁৎলানো ব্যথা অত্যন্ত বাড়ে। রোগী অবসন্ন হয়ে পড়ে। উঠে বসলে ব্রায়োনিয়ার ন্যায় মাথা ঘোরে ও মুচ্ছর মত হয়। প্রবল জ্বর থাকে কারণ নাড়ী অত্যন্ত দ্রুত হয়, কিন্তু আর্নিকার ন্যায় উপ মাথায় ও মুখমণ্ডলে বেশী থাকে, হাত-পা ঠাণ্ডা মনে হয়।
এই লক্ষণগুলি থাকলে বোগ টনসিল প্রদাহ হোক, ডিপথিবিয়াই হোক আর স্কার্লেটিনাই হোক তাতে কিছু যায় আসে না; বহুল অভিজ্ঞতা ও রোগী দেহে আমার নিজের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে ফাইটোলাক্কা একটি মূল্যবান ঔষধ।
এক্ষেত্রে ফাইটোলাক্কার মূল অরিষ্ট ২০ ফোঁটা মাত্রায় দেওয়ার দরকার নেই, যেমন কেউ কেউ উপদেশ দেন হোমিওপ্যাথিক শক্তিকৃত মাত্রাতেই অন্যান্য ঔষধের ন্যায়ই ইহা উপকারী। আমি এই ঔষধ দিয়ে ফলিকিউলার ফেরিঞ্জাইটিসে, বিশেষতঃ বক্তৃতাকারীদের, অতি বক্তৃতাবশতঃ স্বর ভেঙ্গে গেলে, গলায় কোন গরম বস্তু থাকার ন্যায় জ্বালা থাকলে যথেষ্ট উপকার পেয়েছি। এই রকম গলক্ষত রোগে এটি উচ্চশক্তিতে খুব উপকারী।
২। “দাঁত ও মাঢ়ী একত্র করে কামড়াবার দুর্নিবার প্রবৃত্তি” — এই ঔষধের একটি বিশেষ লক্ষণ।
এই লক্ষণের উপর নির্ভর করে দন্তোদগকালীন বহু রোগে আমি যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছি।
রোগী বিবরণী –
আমি একটি রোগী পেয়েছিলাম সে নিউইয়র্ক থেকে গ্রামে এসেছিল এবং তা সে অনেকদিন যাবৎ এন্টারোকোলাইটিস, (entero-colitis) বোগে ভুগছিল। তার চিকিৎসকগণ বলেছিলেন যে শহর ত গ করে পল্লীগ্রামে না গেলে শিশুটি বাঁচবে না। তাই তাকে গ্রামে আনা হয়েছিল। কিন্তু গ্রামের বায়ু সেবনে ও পথ্যের পরিবর্তনেও তার কোন উপকার হয়নি। সে দিন দিন অতিশয় রোগা হয়ে পড়ছিল, তার ঘনঘন ঘোরাল বাদামী রংয়ের তরল মল ও তার “সঙ্গে ঐ একরকম রংয়ের শেওলার ন্যায় পদার্থ কিংবা আম মিশ্রিত ছিল। নানা বুকরে ঔষধ দেওয়া পরেও কোন উপকার হয়নি। কিন্তু আমি দেখতে পাই যে শিশুটি তার মাঢ়ীতে মাটীতে কামড়াতে চায় এবং যা মুখের কাছে পায় তাই কামড়ায়। তাছাড়া তার মা বলেন যে যতদিন রোগে ভুগছে তাকে ততদিন ধরেই এরূপ করতে দেখা যাচ্ছে। আমি সঙ্গে . সঙ্গে ফাইটোলাক্কা ব্যবস্থা করি ও ওতে তার লক্ষণগুলি আস্তে আস্তে উপশমিত হয় এবং দ্রুত রোগ আরোগ্য হয়।
এছাড়া আমি অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই লক্ষণটি পরীক্ষা করে দেখেছি।
৩। ফাইটোলাক্কা স্তনপ্রদাহের একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এতে স্তন অত্যন্ত শক্ত, অত্যন্ত স্ফীত, গরম ও বেদনান্বিত হয়। যখন সন্তান দুধ পান করে তখন বেদনা সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে, সঙ্গে জ্বর থাকে, মাথায় ও পিঠে অত্যন্ত বেদনা থাকে এবং যদি রোগীর অবস্থা খারাপ হয় ও উহা দ্রুত নিবারিত না হয় তাহলে পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
* সাধারণতঃ যখন শিশু স্তন্য পান করে তখনই বেদনা ৰা দেহে ছড়িয়ে
এই রোগে ব্রায়োনিয়া ও ফাইটোলাক্কা পরস্পরের অনুপূরক। তাই এই দুটির একটিকে বেছে নিতে হয়।
* স্তনস্ফীতির প্রায় সর্বক্ষেত্রেই যখন দুগ্ধ জ্বরে স্তন স্ফীত হয়ে উঠে এবং প্রসবের পর প্রথমবার স্তনপ্রদাহ দেখা দেয় তখন এইদুটির একটি না একটি দ্বারা উপকৃত হয়। যদি পূঁজ জন্মায় ও ঐ সঙ্গে বৃহৎ নলী বিশিষ্ট হাঁ করা লাল ব্যথাযুক্ত। ও প্রদাহিত ক্ষত থাকে এবং তা থেকে জ্বলে মত দুর্গন্ধ স্রাব বের হয় তাহলে ফাইটোলাক্কা উপযোগী। এমনকি অনেক সময় হিপার সালফ ও সাইলিসিয়া অপেক্ষা অনেক তাড়াতাড়ি এতে উপকার ধর্শে। তবে এই রোগে আরও কতকগুলি ঔষধের সঙ্গে ফাইটোলাকাকে তুলনা করে ব্যবহার কতে হয়। যথা –
ক) শিশুকে স্তন্যদান করার সময় কেনা পিঠের মধ্য দিকে ধাবিত হয় – ইহা ক্রোটন টিগলিয়ামের লক্ষণ (সাইলিসিয়া, পালস)।
খ) স্তন্যদানের অন্তবর্তী সময়ে অর্থাৎ দুবার স্তন্যপনের মধ্যবর্তীকালে দুগ্ধবাহিনালীর মঞ্চ দিয়ে বেদনায় বিস্তৃতি ফেলেন্ড্রিয়ামের লক্ষণ।
গ) স্তনের অত্যধিক পূর্ণতা ও ঔ এ বেদুনামুক্ত বা স্পর্শীদ্বেষযুক্ত (soreness) হয় যে স্তনের ভারে রোগিণীর কষ্ট হয়, সে উহা অত দিয়ে তুলে রাখতে চায় এবং যৎসামান্য ঝাঁকনি (least jar) থেকে দুরে থাকে – ল্যাক ক্যানাইমের লক্ষণ।
তবে এই রোগে একোনাইট, এপিস ও বেলেডোনার কথাও ভুললে চলবে না। এদের পূর্বোক্ত ঔষধের ন্যায় সুনির্দিষ্ট প্রয়োগ লক্ষণ আছে (আরো ক্যাস্টর ইকোরাম দ্রষ্টব্য)।
৩।স্তনের অর্ব্বুদ (Breast tumour)
আমি অমাবস্যার সময় মাসে একবার ফাইটোলাক্কা সি. এম দিয়ে অনেকগুলি স্তনের সন্দেহজনক ঢেলা (suspicious lumps) বা অর্বুদ (tumours in breast) আরোগ্য করেছি।
তবে চন্দ্রের সঙ্গে এর কি সম্বন্ধ আছে তা আমি জানি না। এইভাবে গলগণ্ড রোগেও ঔষধ ব্যবহার করে আরোগ্য করেছি (তবে তা ফাহটোলা দ্বাৱা নয়)। এক্ষেত্রে আমি ডাঃ জারের উপদেশ অনুসারেই এইভাবে ঔষধ প্রয়োগের পন্থা অবলম্বন করেছিলাম। তবে কতকগুলি রোগ যে চন্দ্রের তিথি বিশেষে বৃদ্ধি পায় এবং কতকগুলি ঔষধ যে ঐ সময়ে ভাল কাজ করে তা আমি জানি।
৪। সায়াটিকা –
আর্নিকার বিষয় লিখবার সময় ফাইটোলাক্কার যে থেঁৎলে যাওয়া ও টাটানি ব্যথার (bruised sore feeling) কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলাম কখন কখন সায়াটিকা রোগেও সুস্পষ্টভাবে বর্তমান থাকে এবং ফাইটোলাক্কা উহার একটি সফল ঔষধ। এক্ষেত্রে * ফাইটোলাক্কার চরিত্রগত লক্ষণ হল এই যে বেদনাক্রান্ত অঙ্গের বাইরের দিক দিয়ে কেনা সঞ্চারিত হয়।
* সায়েটিকা এমন একটি রোগ যে এতে অ্যালোপ্যাথির বেদনা-নিবারক ঔষধ অপেক্ষা (মালিস ইত্যাদি) হোমিওপ্যাথি ঔষধ অধিক কার্যকরী।
৫। অস্থিবেষ্টের রাতে বেদনা, বিশেষ করে আদ্ৰকালে বাড়লে সময়ে সময়ে ফাইটোলাক্কা উপযোগী। তবে অস্থিবেষ্টে (periosteum), গ্রন্থি ও হাড়ের উপর ফাইটোলাক্কার সঙ্গে কেলিহাইড্রো আয়োডিকামের ক্রিয়ার সাদৃশ্য আছে। এক্ষেত্রে অবশ্য লক্ষণের সাদৃশ্য অনুসারে এই দুটির একটি বেছে নিতে হবে। তাছাড়া এরা পরস্পরের অনুপূরক অর্থাৎ একটির পর আর একটি খাটে ও উপকার করে। ডাঃ অ্যালেন বলেন যে ফাইটোলাক্কা, রাসটাক্স ও ব্রায়োনিয়ার মধ্যপথবৰ্ত্তী এবং যখন রাসটাক্স ও ব্রায়োনিয়া ঔষধ দুটিতে উপকার না হয় তখন এটি ব্যবয়ে এবং ব্যবহারে সুন্দর উপকার দর্শে।
জানতে হবে –
ইহা একটি আশ্চর্যের বিষয় এই যে প্রায় প্রত্যেকটি রাসায়নিক ঔষধেরই । একটি করে অতি ঘনিষ্ঠ সমগুণ সম্পন্ন ও সমগুণ সম্পর্কযুক্ত উদ্ভিজ্জ ঔষধ আছে। যেমন –
ক) কেলি হাইড্রো আয়োডিকাম ও ফাইটোলাক্কা।
খ) অ্যালোজ ও সালফার।
গ) অ্যালিয়াম সেপা ও ফসফরাস।
ঘ) ক্যামোমিলা ও ম্যাগ্নেসিয়া কাৰ্ব্ব।
ঙ) চায়না ও ফেরাম।
চ) বেলেডোনা ও ক্যালকেরিয়া অষ্টিয়াম।
ছ) ইপিকাক ও কুপ্ৰাম মেট।
জ) ব্রায়োনিয়া ও অ্যালুমিনা।
ঝ) মেজেরিয়াম ও মারকিউরিয়াস।
ঞ) পালসেটিলা ও কেলি সালফ।
(একথা হেরিং আগেই উল্লেখ করেছে)