PSORINUM সোরিনাম

মন বিমর্ষ, নিরাসাপূর্ন, ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হয়, আরোগ্যে হতাসা।
শরীরে অসহ্য চুলকানি, বিছানার গরমে বৃদ্ধি, চুলকাতে চুলকাতে রক্ত বের হয়।
শিশুরা সারারাত ছটফটানি ও কান্না করে কিন্তু সারাদিন ভালো থাকে।
রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বের দিন সুস্থ ও ক্ষুধার্ত মনে হয়, মধ্য রাতে ক্ষুধা লাগে।
শরীরের সকল স্রাব হতে পচা গন্ধ আসে, প্রচুর ঘাম হলে রোগ কষ্টের উপশম।
ঠাণ্ডা বাতাস অসহ্য, গরম কালেও মাথায় গরম টুপি বা মাফলার পরে।
শ্বাসকষ্ট হলে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকলে উপশম।

.

উপযোগিতা — সোরিক ধাতুর লোকেদের পক্ষে উপযোগিতা বেশী। ক্রনিক লক্ষণে যখন ওষুধ ভালভাবে নির্বাচিত হয়েও উপশম দিতে পারে বা স্থায়ীভাবে সেরে ওঠে না (তরুণ লক্ষণে = সালফার) সেইক্ষেত্রে ও সালফার নির্দিষ্ট হয়ে প্রয়োগ করলেও উপশম দেয় না সেইক্ষেত্রে উপযোগী। মারাত্মক তরুণ উপসর্গের জৈব প্রতিক্রিয়ার অভাব খিদে হতে পায় না।

শিশুরোগী — ফ্যাকাসে, রোগাপাতলা হাল্কা চেহারা, দুর্বল, অসুস্থ শিশু দিনরাত কোনসময় ঘুমায় না—খিটখিটে মেজাজ, কাঁদে, বিরক্ত করে ।(জ্যালাপা)

আবার সারাদিন খেলাধুলা করে কিন্তু রাতে অস্থির; বিরক্তিকর ও ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে (লাইকোর বিপরীত)। অত্যন্ত দুর্বলতা, শরীর, যেন ক্ষয়ে যাচ্ছে এই অবস্থা জৈব তরলের অপচয় হলে, তরুণ রোগের পরবর্তী দুর্বলতা অবশিষ্ট থাকে, কোনরকম যান্ত্রিক রোগ বা কোন সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই হয়ে থাকে।

দেহে দুর্গন্ধ হাড়ে—এমনকি স্নানের পরেও দুর্গন্ধ থেকে যায়।

শরীরে ব্যথা যন্ত্রণা– সহজেই (হাত পা) মুচকে গিয়ে চোট আঘাত লাগে। ঠান্ডা বাতাস বা জলহাওয়ার পরিবর্তন সহ্য হয় না, অত্যন্ত গরমের দিনেও লোমের টুপি, ওভারকোট বা গরম শীল পরে থাকে।  ঝোড়ো বাতাসে অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণতা, বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টির সময় ও কয়েকদিন আগে থেকে অস্থির হয়ে পড়ে (ফস)-গায়ের চামড়ায় শুকনো চলকা ওঠা উদ্ভেদ গরমের দিনে সেরে যায়। শীতকালে আবার হতে থাকে। চর্মরোগ চাপা পড়ে বা অন্য কোন চুলকানি রোগে সালফার দিয়ে বিফল হলে ব্যবহার্য। সামান্য মানসিক উত্তেজনায় চুলকানি সাংঘাতিক ভাবে বেড়ে যায়, রোগ আক্রমণের ঠিক আগের দিন অস্বাভাবিকভাবে আনন্দিত থাকে।

অতিমাত্রায় সোরাদোষদুষ্ট রোগী নার্ভাস, অস্থির ও সহজেই চমকে ওঠে।

সমস্ত স্রাব—উদরাময়, শ্বেতপ্রদর, ঋতুস্রাব, ঘাম সবেতেই মাংস পচা দুর্গন্ধ ছাড়ে, উদ্বেগ-সবেতেই ভয়—অমঙ্গল আশঙ্কা করে। ‘ ধার্মিক বিষাদোন্মত্ততা, ভীষণ হতাশা, দুঃখিত—আত্মহত্যার চিন্তা, নিজের মুক্তি সম্বন্ধে (মেলিলো) ও রোগ আরোগ্য সম্বন্ধে হতাশা।

হতাশ ভয় হয় যেন মরে যাবে, ব্যবসায়ে ব্যর্থতা আসে, রোগের বৃদ্ধি অবস্থায় নিজের ও আশেপাশে সকলের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে ও নিজে হতাশ হয়ে পড়ে।

মাথা যন্ত্রণা — ঐ শুরুর আগে চোখের সামনে আলোর বিন্দুর মত চিকচিক করে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে বা চোখ অন্ধকার দেখে (ল্যাক-ডি, কেলি-বাই), কালো কালো বিন্দুর মত কালো কালো গোল আংটির মত দেখে।

মাথা যন্ত্রণা – যন্ত্রণায় সর্বদাই ক্ষুধার্ত, খেলে উপশম হয় (এনাকার্ডি, কেলি-ফ) চর্মরোগ চাপা পড়ে বা ঋতুস্রাব চাপা পড়ে হয়। নাক হতে রক্তবার হলে মাথাযন্ত্রণা কমে (মেলিলো)।

চুল — শুকনো, চকচকে নয়, সহজেই জটা বাধে, জড়িয়ে যায় (লাইকো) চুলে উকুন হয় (ব্যারা-কা, সার্সা, টিউবার)। মাথার চামড়া—শুকনো, খুসকি হয় বা ভেজা ভেজা আঠামত, গন্ধ ছাড়ে উদ্ভেদ হয়ে পুঁজ জন্মে তা থেকে চটচটে দুর্গন্ধযুক্ত রস ঝরতে থাকে, গ্র্যাফা, মেজেরি)। আলোর দিকে একেবারেই তাকাতে পারে না ঐ সাথে চোখের পাতা ফেলে চোখ খুলতে পারে না বালিশে মুখ লুকিয়ে শুয়ে থাকে।

কান – কানের উপর ও পেছনে রসে ভেজা মামড়ি পড়ে টাটানি ব্যথা হয়, তা থেকে চটচটে দুর্গন্ধযুক্ত রস ঝরতে থাকে (গ্রাফাই)।

কানপাকে পাতলা, কলতানির মত, অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাংসের মত রস পড়ে। বহুদিনের কানপাকা রোগ—হামজ্বরের বা স্কারলেট জ্বরের পরে কানপাকা লক্ষণে ব্যবহার্য।

ব্রন – সব ধরনের সাধারণ ব্রন, গোলাপী রঙের ব্রন ঋতুকালে বাড়ে, কফি ফেলে, চর্বিযুক্ত খাদ্যে, চিনিযুক্ত খাবারে, মাংস খেলে বেড়ে যায় যখন অন্য কোন সুনির্বাচিত ওষুধ প্রয়োগে সারে না বা শুধু সামান্য কমে তখন সোরিনাম প্রয়োগ করলে সেরে যায়। মাঝরাতে (ঘুম ভেঙে) ক্ষুধার্ত হয়, তখন কিছু না কিছু অবশ্যই খেতে হয় (সিনা, সালফ) ঢেকুর উঠলে পঁচা ডিমের গন্ধ ছাড়ে (আর্নিকা, এ-টার্ট, গ্র্যাফাই)।

কুইনসি (Quinsy) — টনসিল পেকে ঘা হয়, টনসিল অত্যন্ত ফোলে, গিলতে যন্ত্রণা হয়, কষ্ট হয়, জ্বালা করে যেন পুড়ে গেছে, কেটে ফেলামত, ছিড়ে ফেলা মত যন্ত্রণা, কিছু গিলতে গেলে তীব্র যন্ত্রণা কান অবধি বেড়ে যায় (উপরোক্ত লক্ষণ অথচ ব্যথা নেই—ব্যারা-কার্ব), প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ যুক্ত লালা বের হয়। গলায় চটচটে শ্লেষ্মা জন্মে অবিরত গলা খেঁকারি দিতে বাধ্য হয়। সোরিনাম শুধুমাত্র তরুণ আক্রমণ সারায় না ঐরকম বার বার হবার প্রবণতাও দূর করে।

খক খক করে কেশে মটর দানার মত, পনিরের মত শ্লেম্মা বার করে। শ্লেম্মা বিস্বাদ ও পচা মাংসের মত গন্ধ (কেলি-মি)। উদরাময়—হঠাৎ বেগ আসে, বেগ চেপে রাখতে পারে না (এলো, সাল), মল জলের মত, ঘন বাদামী রঙের, দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাংসের গন্ধ ছাড়ে, অসাড়ে মলত্যাগ উদরাময় রাত একটা হতে চারটার মধ্যে বেড়ে যায়। তরুণ রোগের পর, শিশুদের দাঁত ওঠার সময় ও যখন আবহাওয়ায় পরিবর্তন হয় তখন দেখা দেয়।

কোষ্ঠবদ্ধতা — দুর্দম্য কোষ্ঠবদ্ধতা সাথে পিঠে ব্যথা। রেকটামের নিষ্ক্রিয়তা থেকে হয়। যখন সালফার দিয়েও কোষ্ঠবদ্ধতা সারে না তখন প্রযোজ্য।

বিছানায় প্রস্রাব – মূত্রনালীর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে, পূর্ণিমার সময়, বংশগত একজিমার ইতিহাস থাকে এমন দুর্দম্য কোষ্ঠবদ্ধতায় এ ওষুধ প্রযোজ্য। বহুবছর যাবং গণোরিয়া স্রাব চাপা পড়ে নি বা সারিয়ে ওঠাও সম্ভব হয়নি এমন ক্ষেত্রে এবং সুনির্বাচিত ওষুধ প্রয়োগেও ব্যর্থ হলে সোরিনাম যোজ্য।

শ্বেতপ্রদর – বড় বড় চাপ বাধা দলা দলা মত অসহনীয় গন্ধ ছাড়ে, স্যাক্রাম অস্থিতে তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে, দুর্বলতা, রজোনিবৃত্তিকালে প্রদরস্রাব হলে প্রযোজ্য।

গর্ভাবস্থায় – দুর্দম্য বমি, গর্ভের ভ্রণ যেন দ্রুত নড়াচড়া করছে—যখন অন্য সুনির্বাচিত ওষুধে বমি কমে না তখন ব্যবহার্য। এই ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর সোরা দোষ আরোগ্য করে। তরুণ রোগের পর বেশী পরিমাণে ঘাম বার হয়, ঘাম হলে সব কষ্ট উপশম হয় (ক্যালাডি, নেট-মি)।

হাঁপানি — শ্বাসকষ্ট, খোলা হাওয়ায় বাড়ে, উঠে বসলে বাড়ে, (লরোসি), শুয়ে থাকলেও হাত পা ছড়িয়ে শুলে কষ্ট কমে (আর্স-এর বিপরীত), হাঁপানির কষ্টে হতাশ হয়ে পড়ে মনে করে এই কষ্টে মারা যাবে।

প্রতিবার শীতকালে কাশি ফিরে আসে।

হে-ফিভার – প্রতি বছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট মাসের একই দিনে শুরু হয়, হাঁপানির, সোরা দোষ ও একজিমার ইতিহাস এমন রোগীদের ক্ষেত্রে। গ্রীষ্মের আক্রমণ ও প্রতিরোধ ও সোরাদোষ নির্মূল করার জন্য আগের শীতে রোগীর চিকিৎসা করা দরকার। কাশি, চুলকানি বা একজিমা চাপা পড়ে, পুরাণ কাশি, বহু বছর হচ্ছে এমন কাশি সকালে ঘুম থেকে উঠলেও সন্ধ্যায় শুলে বেড়ে যায় (ফস, টিউমার) এমন লক্ষণে উপযোগী শ্লেষ্মা সবুজ হলদে বা লবণাক্ত, পুঁজের মত শ্লেষ্মা ওঠার আগে বহু সময় ধরে কাশতে হয়।

চর্ম – চর্মরোগ হবার দারুণ প্রবণতা (সাল) ঐগুলো সহজেই পেকে ওঠে (হিপার), শুকনো, নিস্ক্রিয় চর্মরোগ, কদাচিৎ ঘাম হয়! রোগীকে নোংরা দেখায় মনে হয় রোগী কখনও স্নান করেনি। চামড়া রুক্ষ বা তেল-তেলে, যেন তেলে স্নান করেছে এমন লক্ষণেও সালফার বা জিঙ্ক ঘটিত ওষুধ দিয়ে চর্মরোগ চাপা পড়েছে এই লক্ষণে ও সোরিনামে রোগ সারে।

অসহ্য চুলকানি বা চোর ডাকাতের ভীতিপূর্ণ স্বপ্ন দেখে ন্দ্রিাশূন্য হয়ে পড়ে (নেট-মি), চুলকানি লক্ষণে বা সোরা ধাতুর লক্ষণে সোরিনাম দেওয়া উচিৎ নয়। অন্যান্য ওষুধের মত সঠিক লক্ষণ সমগ্রে রোগীর ব্যক্তিগত চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োগ করলে এর আশ্চর্যজনক কাজ দেখতে পাওয়া যায়।

সম্বন্ধ – অনুপূরক, সালফার ও টিউবারকুলিনাম, এরপরে এলুমি, বোরাক্স, হিপার, সলফ, টিউবার ভাল কাজ দেয়।

গর্ভাবস্থায় ল্যাক – এসিডের পর ভাল খাটে, ডিম্বাশয়ে আঘাত লাগলে আর্নিকার পর খাটে, স্তনের ক্যান্সারে সোরিনামের পর সালফার ভাল খাটে। ডিম্বাশয়ে আঘাত লাগলে আর্নিকার পর ভালো খাটে, স্তনের ক্যান্সারে সোরিনামের পর সালফার ভাল খাটে।

বিশুদ্ধ স্বর্ণ বা অত্যন্ত নোংরা যা হতেই প্রস্তুত হোক না কেন আমরা এর (হোমিওপ্যাথিক ওষুধের) মূল্যবান আরোগ্য শক্তির জন্য কৃতজ্ঞ থাকব। এর উৎপত্তি সম্বন্ধে আগ্রহ বা অনুসন্ধান করব না—Dr. Bell.

শক্তি – উচ্চশক্তি, বা ০/১ হতে ০/৩০ শক্তি। বারে বারে প্রয়োগ করলে ক্ষতি হয়—বোরিক।

তথাকথিত সোরা ঋতুদোষের যাবতীয় লক্ষণসমূহ এই ঔষধ আরোগ্য করতে সক্ষম। এটি একটি শীতল ঔষধ বিশেষ;এই ঔষধের রোগীসর্বদা মাথাটি গরম রাখতে চায়, এমন কি গ্রীষ্মকালে রোগী গরম কাপড়-জামা চায়। ঠান্ডায় অতিরিক্ত অনুভূতি প্রবণ। দুর্বলতা, এটি কোন যান্ত্রিক রোগের উপর নির্ভর করে না, বিশেষ করে কোন তরুণ রোগের পরে কিছুটা দুর্বলতা থেকে যায়। প্রতিক্রিয়া শক্তির অভাব। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিকলতা;যে ক্ষেত্রে সুনির্বাচিত ঔষধ কাজ করতে ব্যর্থ হয়, সেই ক্ষেত্রে এটি উপযুক্ত। গন্ডমালা দোষযুক্ত রোগী। সর্বপ্রকার স্রাবে একজাতীয় দূর্গন্ধ পাওয়া যায়। প্রচুর ঘাম। হৃদপিন্ডের দুর্বলতা। চামড়ার লক্ষণসমূহ অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। প্রায়ই ঠান্ডা লাগা ধাতের ক্ষেত্রে এই ঔষধ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরীকরে। হাঁটা-চলার সময়ে সহজেই ঘাম হয়। বংশগত সিফিলিস ও সিফিলিসের শেষাবস্থা। দূর্গন্ধযুক্ত স্রাব সমূহ।

মন — নৈরাশ্য; আরোগ্য সম্পর্কে হতাশ। বিষন্নতা, গভীর ও স্থায়ী;ধর্মপ্রাণ। আত্মহত্যা করার প্রবনতা। .

মাথা – রাত্রে মাথায় বেদনাসহ ঘুম থেকে জেগে উঠে, মাথায় ঘুষি মারার মত বেদনা। পুরাতন মাথার যন্ত্রনা; রোগাক্রমণকালে ক্ষুধার্ত, তৎসহ মাথাঘোরা। হাতুড়ি দিয়ে ঘা মারার মত বেদনা; মস্তিষ্ক বৃহৎ বলে মনে হয়; আবহাওয়ার পরিবর্তনে বৃদ্ধি। মাথার পিছনের অংশে মৃদু, চাপবোধযুক্ত বেদনা। মাথার চামড়ায় আর্দ্র উদ্ভেদসমূহ মাথার চুল জটাযুক্ত। চুল শুষ্ক।

চোখ – চোখ জুড়ে যায়। চোখের পাতার প্রদাহ। পুরাতন চক্ষু প্রদাহ, যা বারে বারে-দেখা দেয়। চোখের পাতার কিনারাগুলি লালচে। চোখের স্রাব হাজাকর।

মুখগহ্বর – মুখের দুই কোনে ফাটা, যা সহজে ভালো হয় না। জিহ্বা, মাঢ়ী ক্ষতযুক্ত দুর্গন্ধযুক্ত। চটচটে শ্লেষ্মা, যা তালুর কোমল অংশে জড়িয়ে যায়।

নাক – শুষ্ক, সর্দি, তৎসহ নাক বন্ধ হওয়া। পুরাতন সর্দিনাকের পিছনের অংশ থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে সর্দি ঝরে। বয়ঃ ব্রণ।

কান — হাজাযুক্ত, লালচে, কানের চারিপাশে রস ঝরে এইরূপ মামড়ীযুক্ত। কানের পিছনের অংশে টাটানি ব্যথা। রগগুলি থেকে শুরু করে কানের উপর দিয়ে গাল পর্যন্ত হার্পিস। কানের চারিপাশে দুর্গন্ধযুক্ত রসনিঃসরণশীল একজিমা। অসহ্য চুলকানি; পুরাতন কানের পুঁজ। কানগুলি থেকে অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত পুঁজস্রাব, স্রব বাদামীবর্ণের।

মুখমন্ডল – উপরের ঠোঁটের স্ফীতি। ফ্যাকাশে, দুর্বল। মুখমন্ডলে আর্দ্র উদ্ভেদসমূহ। রোগগ্রস্তের ন্যায় মুখমন্ডলে।

গলা — দুইদিকের টনসিলের ব্যাপক স্ফীতি; বেদনাপূর্ণ ঢোক গেলা, তৎসহ কানের ভিতরে বেদনা। প্রচুর, দুর্গন্ধযুক্ত লালাস্রাব,গলায় চটচটে শ্লেষ্ম। বারে বারে পুঁজযুক্ত টনসিল প্রদাহ। এই ঔষধ পুঁজযুক্ত টনসিল প্রদাহের প্রবণতা নাশ করে। পনীরের মত দেখতে ও মটরাকৃতি ছোট ছোট গোলাকার পদার্থ গলা খাঁকার দিলে বেরিয়ে আসে, তৎসহ বিরক্তিকর গন্ধও আস্বাদ।

পাকস্থলী — পচা ডিমের মত গন্ধযুক্ত ঢেকুর। সর্বদা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত; রাত্রির মধ্যভাগে অবশ্যই কিছু আহার করতে বাধ্য হয়। বমি বমিভাব, গর্ভাবস্থায় বমন। আহারের পরে পেটে বেদনা!

মল – শ্লেষ্মাযুক্ত, রক্তমিশ্রিত, অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত, কালচে তরল। শক্ত, কষ্টকর মলত্যাগ তৎসহ সরলান্ত্র থেকে রক্ত আসে এবং জ্বালাকর অর্শ। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিণ্য। ফ্যাকাশে, রোগগ্রস্ত, গন্ডমালা ধাতুদোষযুক্ত শিশু।

স্ত্রীরোগ – প্রদর স্রাব দূর্গন্ধযুক্ত, মন্ডের মত, তৎসহ তীব্র পিঠের বেদনা ও দুর্বলতা। স্তনগ্রন্থি স্ফীতি ও বেদনাপূর্ণ ফুস্কুড়ি থেকে ক্ষয় কর রস নিঃসরণ, এবং তা থেকে স্তন্য গ্রন্থিতে জ্বালাকরে ও হেজে যায়।

শ্বাসযন্ত্র সমূহ – হাঁপানী, তৎসহ শ্বাসকষ্ট; বসে থাকলে বেশী হয়;শুয়ে পড়লে এবং শোবার সময় বাহুগুলি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে রাখলে উপশম। শুষ্ক, কঠিনকাশি, তৎসহবুকের ভিতরে প্রচন্ড দুর্বলতা। বৃক্কাস্থির নিম্নাংশে ক্ষতের ন্যায় অনুভূতি। বুকের ভিতরে বেদনা;শুয়ে পড়লে উপশম। কাশি প্রতিবার শীতকালে ফিরে আসে, মূলতঃ উদ্ভেদ চাপা পড়ার ফলে কাশি দেখা দেয়। হে ফিভার প্রতিবছর অনিয়মিতভাবে ফিরে আসে।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ – সন্ধিগুলির দুর্বলতা, যেন মনে হয় ঐ গুলি পরস্পরের সঙ্গে আটকিয়ে থাকবে । হাতের আঙ্গুলগুলির নখের চারিপাশে উঙ্গে সমূহ। দূর্গন্ধযুক্ত পায়ের ঘাম।

চামড়া – চামড়া মলিন;অপরিষ্কার। শুষ্ক, অনুজ্জ্বল, খসখসে চুল। অসহ্য চুলকানি। মাথার চামড়ায় ও সন্ধিস্থানের ভাঁজে হার্পেটিক জাতীয় উদ্ভেদসমূহ তৎসহ চুলকানি; বিছানার গরমে বৃদ্ধি। গ্রন্থিসমূহের বিবৃদ্ধি। সিবেশাস গ্রন্থি থেকে প্রচুর পরিমানে সাব নির্গত হয়; তেল তেলে চামড়া। নিষ্ক্রিয় ক্ষতসমূহ, খুব ধীরে ধীরে আরোগ্য হয়। কানের পিছনে একজিমা। সারা শরীরের মামড়ীযুক্ত উদ্ভেদ সমূহ। হাতের আঙ্গুলগুলির নখের নিকটে পুজ যুক্ত উদ্ভেদ সমূহ।

জ্বর — প্রচুর উত্তাপ, দূর্গন্ধযুক্ত ঘাম;রাত্রিকালীন ঘাম।

ঘুম – অসহ্য চুলকানির কারণে নিদ্রাহীণতা। সহজেই চমকিয়ে উঠে।

কমা-বাড়া-বৃদ্ধি কফি; সোরিনাম রোগী যতদিন কফি খায় ততদিন তার কোন উন্নতি হবেনা। আবহাওয়ার পরিবর্তনে, উত্তপ্ত সূর্যালোকে, ঠান্ডায় বৃদ্ধি। সামান্য ঠান্ডা লাগালে বা ঠান্ডা বায়ু প্রবাহে।

উপশম — উত্তাপে, গরম জামা কাপড়ে, এমনকি গ্রীষ্মকালে।

সম্বন্ধ-পরিপূরক—সালফার।

তুলনীয়—পেডিকিউলাস—সোরা দোষযুক্ত শিশু। হাত, পায়ের পাতা ও ঘাড়ের পিছনে উদ্ভেদসমূহ। চুলকানি;পেলেগ্রা। পড়াশুনা ও কাজে অস্বাভাবিক দ্রুত। পেডিকিউলাস টাইফয়েড ও ট্রেনচজ্বর ছড়িয়ে থাকে;প্রতিক্রিয়ার অভাবে তুলনীয় ক্যাল্কেরিয়া ও নেট্রাম আর্স।

শক্তি— ২০০ এবং উচ্চতর শক্তি সমূহ। কিছুতে বারে বারে পূনঃ প্রয়োগ করা উচিত নয়। সোরিনামের কাজ প্রকাশ পেতে মোটামুটি নয় দিন সময় লাগে এবং এমনকি একমাত্রা ঔষধ ও অন্যান্য অন্তনিহিত লক্ষণগুলিকে প্রকাশ করে দিতে পারে এবং ঐ লক্ষণগুলি তখন কয়েকসপ্তাহ ধরে চলে।

সোরিনাম ‘সালফারে’র সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধযুক্ত। রোগী স্নান করিতে ভয় পায়। শরীরের উপরের চৰ্ম্ম, বিশেষতঃ মুখমন্ডলের চর্ম ভালভাবে ধোওয়া হইলে ময়লা দেখায়। যেন ময়লা দ্বারা আবৃত রহিয়াছে এরূপ অপরিষ্কার, কলঙ্কপড়া এবং মলিন দেখায়। চৰ্ম্ম খসখসে, অসমান, সহজেই ফাটিয়া যায়; ফাটা                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                      হইতে রক্ত পড়ে, উহা খসখসে এবং আঁসের ন্যায় মামড়িবিশিষ্ট হয় । সে উহাকে ধুইয়া পরিষ্কার করিতে পারে না। হাতে চৰ্ম্ম খসখসে হয়, সহজেই ছাল উঠে, পুরু ও মামড়িবিশিষ্ট হয়, সহজেই ফাটিয়া যায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আইসের ন্যায় উদ্ভেদ আচ্ছন্ন হইয়া যায়, মনে হয় যেন কতদিন ধোওয়া হয় নাই, তাহার হাত সর্বদাই ময়লা দেখায়। চর্মের অনেকগুলি রোগ স্নান করায় খারাপ হয়, শয্যার উত্তাপে খারাপ হয়। গরম হইলে চৰ্ম্ম চুলকায়, পশমের পোষাক পরিলে চুলকায়। শয্যায় উত্তপ্ত হইলে চুলকাইতে থাকে, সে চুলকাইতে চুলকাইতে ছাল উঠাইয়া ফেলে, তারপর ঐ স্থানে মামড়ি পড়ে। আরোগ্য হইয়া গেলেও স্থানটি চুলকাইতে থাকে এবং তখনও তাহাকে চুলকাইতে হয়। পা ও বাহুদ্বয় চুলকাইতে চুলকাইতে ছাল উঠা ও মামড়িযুক্ত হয়। শয্যার উত্তাপে, কোনরূপ উদ্ভেদ না থাকিলেও, ভয়ানক চুলকাইতে থাকে। চৰ্ম্ম অস্বাস্থ্যকর, ময়লা ও কাল দেখায়, কৈশিকা রক্তাধার এবং বর্ধিত শিরা দ্বারা আচ্ছন থাকে। উদ্ভেদ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে এইরূপ হয় চুলকাইতে চুলকাইতে মামড়ি পড়ে, তারপর উদ্ভেদ বাহির হয়। ব্রণ, পুঁজবটী, মামড়ি, ফোড়া, ফুস্কুড়ি এবং উদ্ভেদগুলি হইতে একপ্রকার জলের ন্যায় রসানি ক্ষরিত হয়। উদ্ভেদ কিছুকাল যাবৎ চলিবার পর, মামড়ি ও ফুস্কুড়িগুলি মিলিয় যায় এবং চৰ্ম্ম পুরুত প্রাপ্ত ও কঠিন হইয়া পড়ে এবং তখন পুরাতন মামড়িগুলির নিম্নে নূতন একদল উদ্ভেদ জন্মে, হাজাভাব, চুলকানি, চিনচিন করা, পোকাহাঁটার ন্যায় অনুভূতি, রক্তপাত দেখা দেয়। হ মস্তকতুকে এবং মুখমন্ডলে একজিমা, মামড়িতে মস্তকতৃক ঢাকিয়া, ফেলে, চুল উঠিয়া যায়, রসানি দ্বারা মামড়িগুলি উঁচু হইয়া উঠে এবং নূতন একদল ফুস্কুড়ি প্রকাশিত হইয়া পড়ে। স্থানটি কাঁচা গোমাংসের ন্যায় দেখায়, এবং উহা চিনচিন করিতে থাকে, সেইজন্য ঐ স্থান হইতে সে হাত সরাইতে পারে না। রাত্রিকালে বৃদ্ধি, শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি, উষ্ণ বাহ্যপ্রয়োগে বৃদ্ধি; যাহা কিছু ঐ স্থানে বায়ু লাগা প্রতিরোধ করে তাহাতেই বৃদ্ধি ঠান্ডা বাতাসে উপশম, এবং গায়ে কাপড় দেওয়ায় বৃদ্ধি। ইহা সোরিনাম-জ্ঞাপক সাধারণ লক্ষণের বিপরীত, কারণ সাধারণ অবস্থা খোলা বাতাসেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তাহার খোলা বাতাসে বিতৃষ্ণা থাকে। উদ্ভেদ চলিতে থাকে, বিস্তৃত হইতে থাকে এবং প্রকৃত চৰ্ম্ম উন্নত, পুরু এবং কঠিন হইয়া পড়ে, তাহার সহিত বর্ধিত শিরাচ্ছন্নতা ও আরক্ততা থাকে। রসানি দুর্গন্ধ, গলিত মাংসের ন্যায় দুর্গন্ধ; নির্গমনশীল স্রাবে ন্যাক্কারজনক গন্ধ।

সোরিনামের মধ্যে দুর্গন্ধ চরিত্রগত লক্ষণরূপে এরূপভাবে আগাগোড়া বর্তমান থাকে যে উহা এখানেই উল্লেখ করা উচিত। পচা গন্ধ, পচাগন্ধ নিঃশ্বাস, চৰ্ম্ম হইতে নির্গত স্রাব গলিত মাংসের ন্যায় দুর্গন্ধ; মল, উদরাময়ের মল, গ্রীষ্মকালীন অতিসারের মল, শিশু কলেরার মল এত দুর্গন্ধ যে সেই গন্ধ সারা বাড়ীটিতে ছড়াইয়া পড়ে, ঘর্ম দুর্গন্ধ, প্রদরস্রাব জঘন্যভাবে দুর্গন্ধ, উদ্গার যেন সে কড়াসিদ্ধ ডিম খাইয়াছিল কিন্তু ডিমগুলি ছিল পচা, এবং অন্যেও ঐরূপ গন্ধ পায়; মলের, অধঃবায়ুর, উদারের গন্ধ পচা ডিমের ন্যায়। এই ঔষধটি সেই লোকেরই প্রয়োজন হয়, যাহাকে দেখিতে বিশ্রী, যাহার গন্ধ বিশ্রী।

চৰ্ম্ম ক্রমশঃ পুরু হইতে থাকে, এবং রক্তপাত হয়, এবং উদ্ভেদগুলি অন্যান্য অঙ্গে বিস্তৃত হয়। ওষ্ঠের উপর, জননেন্দ্রিয়ের উপর উদ্ভেদ; অত্যন্ত দুর্গন্ধ; মলদ্বারের চারিদিকে ক্ষততা ও হাজাভাব, যোনি-ওষ্ঠে ক্ষত এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধ, দুই পায়ের উপর, দীর্ঘাস্থিদ্বয়ের উপর ক্ষত, হাতের পৃষ্ঠে, পায়ের পাতার উপরপিঠে ক্ষত, কানের পশ্চাতে ও কানের উপর ক্ষত, মস্তকত্বকে, গন্ডাস্থির উপর, নাসাপক্ষের উপর ক্ষত, মস্তকত্বকে গন্ডাস্থির উপর, নাসাপক্ষের উপর, নাকের উপর একং চক্ষুর পাতার উপর ক্ষত । চৰ্ম্ম চর্বি মাখনের ন্যায় উদ্ভেদের সহিত নাক, মুখ, ওষ্ঠ ও চক্ষুর শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি লাল হইয়া উঠে। চক্ষুর পাতা পুরু হইয়া যায়, বাহির দিকে উল্টাইয়া যায় এবং অক্ষিপুট-বিপৰ্য্যাস রোগের ন্যায় দেখায়, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীগুলি দানা দানা বিশিষ্ট ও কঠিন হইয়া পড়ে, সেইজন্য ঐগুলি উপাস্থির ন্যায় দেখায়, তৎসহ আরক্ততা ও ক্ষততাপ্রাপ্তি থাকে। কনীনিকায় ক্ষত, অশ্রুপাত, পক্ষগুলি খসিয়া পড়ার সহিত চক্ষের পাতা বহির্দিকে উল্টাইয়া যাওয়া। তাহাকে লাল লাল চক্ষু, উদেযুক্ত মুখমন্ডল; ঘন হলদে স্রাবযুক্ত লাল, চর্মের সহিত ভয়ঙ্কর দেখায়। প্রথম অবস্থায় স্রাব সাদাটে পাতলা কিম্বা সাদাটে ঘন রসানির মত থাকে। পুরাতন উদ্ভেদগুলির ক্ষেত্রে মামড়ির তলার ক্ষত জন্মে এবং ঘন, হলদে পুজের ন্যায় স্রাব হয়। চক্ষু ও নাক হইতে সবুজেটে হলদে স্রাব হয়। নাক হইতে ভয়ানক দুর্গন্ধ স্রাব, নাক হইতে শিরিষের ন্যায় স্রাব, মার্ক’, ‘সাইলি’,ক্যাল্ক ফস’ ও ‘হিপারে’র স্রাবের ন্যায় দুর্গন্ধ। চক্ষুর মধ্যে দুর্গন্ধ, পুঁজসঞ্চয়।

ঘন হলদে স্রাবযুক্ত সর্দি। সর্বদাই ঠান্ডা লাগে। সর্দিতে নাক কিছুকাল যাবৎ শুষ্ক থাকে এবং কিছুকাল যাবৎ সর্দি গড়াইতে থাকে। তাহাকে সর্বদাই রুমাল ব্যবহার করিতে হয়, সর্বক্ষণ নাক ঝাড়িতে হয়। সর্দির প্রথম দিকে সে সর্বদাই নাক ঝাড়িতে থাকে, কিন্তু কোনরূপ স্রাব নির্গত হয় না বা সে উপশম পায় না। এ অবস্থাটি এতই স্পষ্ট থাকে যে কেহ কেহ উহাকে সদালগ্ন ঔষধিগন্ধজ্বর মনে করিয়াছেন; উহ্য সম্বৎসর থাকে এবং বর্ষাকালে পাকে। এই অবস্থা ঔষধিগন্ধজ্বরের সহিত ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত; বর্ষাকালে নাক বুজিয়া যায়, চক্ষু ও নাকের সর্দিজ অবস্থা। ঔষধিগন্ধজ্বর এমন একটি রোগ যাহার ঔষধ নির্ণয় করা কঠিন। ইহা দুষ্ট প্রকৃতির ধাতুগত অবস্থা এবং ঐ ধাতুগত অবস্থা দূর হইলেই ঔষধিগন্ধজ্বরেরও নিবৃত্তি হয়। ইহা সোরাদোষের এক প্রকার বিকাশ এবং বৎসরে একবার করিয়া প্রশমিত হয় এবং ইহার চিকিৎসার জন্য সেরাধাতুদোষই দূর করা প্রয়োজন। কয়েক বৎসরে অধিকাংশ রোগীকেই পরিবর্তিত করা যায় কিন্তু এক বৎসরে নহে, সুতরাং নিরাশ হইও না। সর্দিজ অবস্থায়, ঔষধিগন্ধজ্বরের আরম্ভ প্রায়ই কোন অচিকিৎসিত দুষ্ট প্রকৃতির জ্বর হইতে হইয়া থাকে।

সোরিনামের রোগী নিজেই একটি দুর্বলতাবিশিষ্ট ব্যক্তি। অল্প পথ হাঁটার পরই সে বাড়ী ফিরিতে চায়। সে খোলা বাতাসে খারাপ থাকে। সে খোলা বাতাসে নিঃশ্বাস লইতে পারে না, দাঁড়াইয়া থাকার সময় নিঃশ্বাস লইতে পারে না, সে যাহাতে নিঃশ্বাস লইতে পারে, সেইজন্য বাড়ী যাইয়া শুইয়া পড়িতে চায়। সে যখন নিশ্বাস ফেলিবার সুবিধার জন্য বাড়ী গিয়া শুইয়া পড়িতে চায় তখন হাঁপানি ও হৃৎপিন্ডসংক্রান্ত শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয়। সাধারণতঃ এইরূপ অবস্থায় উঠিয়া বসিলে এবং খোলা বাতাসে উপশম হয়। কিন্তু সোরিনামে সেরূপ হয় না, সে গরম স্থান, শুইয়া পড়া ও একাকা থাকা চায়।

সোরিনামের সকল দৈহিক ক্রিয়া

ধীরভাববিশিষ্ট, ইহা এক প্রকার পক্ষাঘাতসদৃশ দুর্বলতা। সে জ্বরের পর সারিয়া উঠে না, তাহার পরিপাকক্রিয়া ধীর, মল স্বাভাবিক থাকে কিন্তু উহা নির্গত করিতে প্রবল চেষ্টার প্রয়োজন হয়, মূত্রস্থলী মূত্রে পূর্ণ থাকে অথচ উহা ধীরে ধীরে নির্গত হয়। এবং সে মনে করে যে কিছুটা বাকি রহিয়া গেল, সে কখনও একেবারে মলত্যাগ ও মূত্রত্যাগ শেষ করিতে পারে না, তাহাকে কয়েকবার করিয়া যাইতে হয়। যদিও মল নরম থাকে এবং সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক থাকে, তথাপি একবার বসিয়া উহা নির্গত করা যায় না।

সোরাদোষগ্রস্ত একটি রোগী টাইফয়েড জুরে শয্যাগত হইল, টাইফয়েড জ্বরটি নিবারিত হইল, অথবা নিজ গতিতে শেষ হইয়া গেল এবং এমন তাহার সহজ আরোগ্যলাভের অবস্থা । জ্বর চলিয়া গিয়াছে কিন্তু রোগীর কিছুই ক্ষুধা নাই, সে স্বাস্থ্যলাভ করিতেছে না, সে শুইয়া থাকিতে চায়, নড়াচাড়া চায় না, বসিয়া থাকিলে তাহার খারাপ লাগে, সে চিৎ হইয়া শুইয়া থাকে, তাহার শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর হয়, সে শুইয়া তাহার হাত দুইটি দেহের নিকট হইতে সরাইয়া শয্যার উপর ছড়াইয়া দেয়, এরূপ করিলে তাহার শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয় এবং বুক ভালভাবে ওঠাপড়া করে, সে অত্যন্ত ক্লান্ত, অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ে,একমাত্রা সোরিনাম প্রতিক্রিয়া উৎপাদন করিবে, তাহার ঘৰ্ম্ম থামাইবে, তাহার ক্ষুধা বাড়াইবে, সে ভালভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস লইতে পারিবে।

সোরিনাম-জ্ঞাপক লক্ষণগুলির জটিলতা এমন একটি অবস্থা যে তাহাতে ঔষধ দ্বারা মাত্র অল্পদিনের জন্যই উন্নতি ঘটাইতে পারা যায় এবং তারপর লক্ষণগুলি বদলাইয়া যায় এবং আর একটি ঔষধ নির্বাচনের প্রয়োজন হয়। ইহা ক্ষীণ প্রতিক্রিয়াজ্ঞাপক অবস্থা।

মানসিক লক্ষণগুলির যথেষ্ট বিশিষ্টতা আছে। দুঃখিত, আশাহীনতা, সে তাহার মাথার উপরকার মেঘের মধ্য দিয়া কোন আলোকই প্রবেশ করিতে দেখে না। তাহার চারিদিকে সবকিছুই অন্ধকার বোধ হয়। সে মনে করে তাহার ব্যবসায় ব্যর্থ হইতে চলিয়াছে, যেন তাহার দরিদ্র-নিবাসে যাইবার মত অবস্থা হইয়াছে, যেন সে পাপ করিয়া তাহার করুণা পাওয়ার দিনটি হারাইয়া ফেলিয়াছে। দিনের বেলা ইহা তাহার এক প্রকার স্থির ধারণা এবং রাত্রিকালেও সে এই বিষয়ে স্বপ্ন দেখে। অভিভূতকারী বিমর্ষতা, অবসন্নতা,—সে তাহার পরিবারবর্গের মধ্যে আনন্দ পায় না, মনে করে এ সমস্ত তাহার জন্য নহে। তাহার ব্যবসা হয়ত বর্ধনশীল কিন্তু তথাপি সে মনে করে যে তাহাকে দরিদ্র-নিবাসে যাইতে হইবে। তাহার কোনরূপ আনন্দ বা লাভের উপলব্ধি হয় না। অত্যন্ত উত্তেজনাপ্রবণ, একাকী থাকিতে চায়। সে স্নান করিতে চায় না। উৎকণ্ঠায় পূর্ণ, এমনকি আত্মহত্যা করিতে চায়। যদি পীড়িত হয়, তাহা হইলে আরোগ্য সম্বন্ধে হতাশ হইয়া পড়ে।

উদ্ভেদ না থাকিলেও সে রাত্রিকালে ক্রমাগত চুলকানিতে অস্থির হইয়া পড়ে। যদি সে আচ্ছাদন ফেলিয়া দেয়, তাহা হইলে সে শীতার্ত হয়, যদি সে চাপা দেয় তাহা হইলে চুলকাইতে থাকে। সে ঠান্ডায় অনুভূতিবিশিষ্ট থাকে অথচ উত্তাপে চৰ্ম্মলক্ষণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। চিনচিন করা, চুলকানি, সুড়সুড়ি, সারা দেহের উপর পিপড়াহাটার ন্যায়, পোকাহাঁটার ন্যায় অনুভূতি।

যে সকল ভগ্নস্বাস্থ্য লোক খোলা বাতাসে গেলেই শিরোঘূর্ণনবিশিষ্ট হয়, প্রধানতঃ তাহাদের পক্ষে উপযোগী; তাহাদের মাথা টলমল করে তাহারা বাড়ী যাইয়া শুইয়া পড়িতে চায়, ভয় হয় বুঝি তাহাদের দম বন্ধ হইয়া যাইবে।

দীর্ঘকালস্থায়ী, পুরাতন, নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে আগত শিরঃপীড়া, তাহার সহিত ক্ষুধা; সময়ে সময়ে শিরঃপীড়ায় সারাক্ষণ ক্ষুধা থাকে, রাত্রিকালে তাহাকে উঠিয়া কিছু খাইতে হয়। সময়ে সময়ে শিরঃপীড়া আহারে উপশমিত হয়। যদি সে একবেলা না খায়, তাহা হইলে তাহার শিরঃপীড়া দেখা দেয়। মাথায় ভীষণ রক্তোচ্ছ্বাস, মুখমন্ডল উত্তপ্ত, চুলগুলি ঘৰ্ম্মে সিক্ত, তৎসহ ক্ষুধা। এক, দুই বা তিন সপ্তাহ বাদে বাদে পুনঃপুনঃ উপস্থিতিবিশিষ্ট শিরঃপীড়া। যতবার মাথার উপর দিয়া বাতাস বহিয়া যায়, ততবারই সর্দি শুকাইয়া যায় এবং শিরঃপীড়া উপস্থিত হয় । ঠান্ডা লাগিলেই হয় সর্দি, না হয় শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। শিরঃপীড়া ভীষণ, দপদপূকর, ছোট হাতুড়ি দিয়া আঘাত করার ন্যায়, মুখমন্ডল লাল, মাথা উত্তপ্ত, রক্তসঞ্চয়যুক্ত, সময়ে সময়ে ঘৰ্ম্মযুক্ত। যে সকল লোকের শীতকালে শুষ্ক কাশি হয় তাহাদের ক্ষুধাবিশিষ্ট শিরঃপীড়া। শুষ্ক, বিরক্তিকর, কষ্টদায়ক কাশি কিন্তু কোন গয়ের উঠে না। যদি তাহার কাশির নিবৃত্তি হয়, তাহা হইলে নির্দিষ্ট কাল ব্যবধানে শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়। এইভাবে রোগগুলি পৰ্যায়ক্রমে উপস্থিত হইতে থাকে। শিরপীড়া চলিয়া যায় এবং কাশি দেখা দেয় অথবা শীতকালে শিরঃপীড়ার সহিত পৰ্য্যায়ক্রমে উদ্ভেদ প্রকাশিত হয়।

মস্তকত্বক শীতল, সে গ্রীষ্মকালেও লোমের টুপি পরে, মাথা অনাবৃত করিলেই খারাপ হয়। (সাইলি), চুল কাটিলে খারাপ হয় (বেল, ‘গ্লোন’, ‘সিপিয়া); হিপরে ও ঠান্ডায় খারাপ হয়।

শীতকালে নোনালাগা ঘা, সোরিয়েসিস জন্মে। শুষ্ক শীতল আবহাওয়ায়, শুষ্ক আর্দ্র আবহাওয়ায়, বাসন ধুইলে নোনালাগা ঘা বাড়িয়া উঠে।

“চুল শুষ্ক ঔজ্জ্বল্যহীন, সহজেই জট পাকাইয়া যায়, সহজেই আঠা হইয়া যায়, ক্রমাগত চিরুনিদ্বারা আঁচড়াইতে হয়।”

পুরাতন দুর্গন্ধ কর্ণস্রাব, কান হইতে ঘন, পুঁজের ন্যায়, দুর্গন্ধ, হলদে নিঃস্রাব নির্গত হয়, পচা মাংসের ন্যায় গন্ধ বাহির হয়, ক্রমাগত স্রাব হইতে থাকে, কানের উপরে ও পশ্চাতে উদ্ভেদ জন্মে। আরক্ত জ্বরের পরিণামে কর্ণস্রাব, মধ্যকর্ণে ফোড়া, মধ্যকর্ণ প্রদাহ, কর্ণের পর্দা ফাটিয়া যায়, ঐরূপ ফোড়া হইতে দীর্ঘকাল পুঁজস্রাব, দুর্গন্ধ স্রাব । “কানে পুঁজ, তৎসহ শিরঃপীড়া, পাতলা, রসানির ন্যায়, অতিদুর্গন্ধ, পচামাংসের ন্যায় গন্ধযুক্ত স্রাব, ভয়ানক দুর্গন্ধ, পুঁজের ন্যায়, বাদামি বর্ণ, বাম কর্ণ হইতে প্রায় চার বৎসর ধরিয়া কর্ণস্রাব। কর্ণ-পুঁজের সহিত জলবৎ দুর্গন্ধ উদরাময়। কানের ভিতর মামড়ি এবং কানের পশ্চাতে আর্দ্র মামড়ি।

দন্তরোগ, রিগাখ্য পীড়া (Rigg’s disease) দাঁতগুলি আলগা হইয়া যায়, মাড়ি ছাড়িয়া যায়, মাড়ি স্পঞ্জের ন্যায়, সহজেই রক্ত পড়ে, আর্দ্র, নীলবর্ণ হয়, দাঁতগুলি পড়িয়া যায়, জিহ্বার উপর ও মুখের মধ্যে ক্ষত, শৈশবকালে যেরূপ ক্ষত দেখা যায় সেইরূপ ক্ষত, উপক্ষত জাড়িঘা, বড় বড় ক্ষতযুক্ত মুখক্ষত, গলক্ষত, গলায় পুরাতন ক্ষত। আলজিভের পুরাতন ভাবের পুরুতাপ্রাপ্তি ও দীর্ঘ হইয়া যাওয়া। টনসিলদ্বয়ের স্ফীতি, কর্ণমূলগ্রন্থি, চোয়ালের নিম্নবর্তী গ্রন্থিগুলির বৃদ্ধি । ঐগুলি শক্ত হইয়া উঠে এবং স্পর্শকাতর হয়, ঠান্ডালাগার স্ফীতি। ঘাড়ের গ্রন্থিগুলি ক্ষততাযুক্ত।

পুরাতন উদররোগের সহিত মলসংক্রান্ত নানা গোলযোগ । তাহাকে নরম মল নির্গত করিতেও বেগ দিতে হয় (‘নাক্স মস’, ‘এলুমিনা’)। পুরাতন উদরাময়, অত্যন্ত-দুর্গন্ধ, দিবারাত্র ঘন ঘন মলত্যাগ (সালফারের অসদৃশ, যদিও অন্যান্য বিষয়ে উহার সহিত যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে)। স্বাভাবিক মলত্যাগ করিতেও তাহাকে কয়েকবার যাইতে হয়।

পুরাতন বমন, পাকস্থলীর ক্ষত, উহার সহিত সচরাচর পাকস্থলীর ফাপ থাকে। সবসময়েই টক ঢেকুর, টক পাকস্থলী। রক্তবমন এবং রক্তাক্ত মল । ইহা কিছু আশ্চৰ্য্য নহে, কারণ সোরিনামে রক্তস্রাবের, বিশেষতঃ, জরায়ু হইতে রক্তস্রাবের প্রবণতা আছে। ঋতুসম্বন্ধীয় নানাপ্রকার গোলযোগ বিশেষতঃ দীর্ঘকালস্থায়ী ঋতুস্রাব। কোন স্ত্রীলোকের হয়ত গর্ভস্রাব হইয়াছে, গর্ভফুল নির্গত হইয়া গিয়াছে, কিন্তু কয়েক দিন অন্তর অন্তর সামান্য টাটকা উজ্জ্বল লাল রক্ত নির্গত হইতে লাগিল, চাপ চাপ রক্ত নির্গত হইতে লাগিল, অথবা কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ যাবৎ, সামান্য উজ্জ্বল লাল রক্ত ক্ষরিত হইতে লাগিল, যেই তিনি উঠিয়া দাঁড়ান, অমনি রক্তপ্রবাহ নূতন করিয়া উপস্থিত হইতে লাগিল, স্থায়ী আরোগ্য হওয়ার কোন প্রবণতাই দেখা দিল না। দুইটি ঔষধ এরূপ অবস্থায় উপযোগী হয়, তাহারা সালফার ও সোরিনাম। স্পষ্ট শিথিলতা ও জরায়ুর অসম্পূর্ণ পশ্চাদপসরণের অবস্থা। জরায়ু উহার স্বাভাবিক আকারে ফিরিয়া যায় না এবং সেজন্য রক্তস্রাবের প্রবণতা দেখা দেয়, একপ্রকার নিশ্চেষ্টভাব।

“নরম মলও কষ্টে নির্গত হয়।”—এই কথাটি ভুলিও না। দুদ্দম্ কোষ্ঠবদ্ধতা। মলদ্বার হইতে রক্তস্রাব। শিশুকলেরা; প্রায়ই প্রথম অবস্থায় মল অত্যন্ত দুর্গন্ধ, পিচ্ছিল এবং অজীর্ণপদার্থ যুক্ত থাকে, বমন এবং দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা উপস্থিত হয়, সম্পূর্ণ শিশুটির গাত্র হইতে দুর্গন্ধ ছাড়িতে থাকে; শিশু অপরিচ্ছন্ন, নাকটি ভিতরে ঢোকা (এন্টিম ক্রুড’), মুখমন্ডল বসিয়া যাওয়া। সোরিনাম প্রতিক্রিয়া উৎপাদন করে ও আরোগ্য করে অথবা শিশুটিকে এরূপ অবস্থায় লইয়া আসে যে, একটি সাধারণ ঔষধেই আরোগ্যক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। ইহা ‘হিপারে’র ন্যায় টক গন্ধ নহে, ধোয়ান সত্ত্বেও শিশুর গায়ে টক গন্ধ বাহির হইতে থাকে, ঘোলের ন্যায় গন্ধ, শিশুর মলত্যাগ পাত্র, মূত্র, মল ও ঘর্ম হইতে টক গন্ধ ছাড়ে। ইহা ‘হিপারের একটি প্রবল সাধারণ লক্ষণ। কিন্তু সোরিনামের মলে পচা ডিমের ন্যায় গন্ধ, আবার উদার ও অধঃবায়ু হইতেও ঐরূপ, গন্ধ বাহির হয়। মলের দুর্গন্ধ অতি ভীষণ কিন্তু ব্যাপ্টিশিয়া’র মলের মত ঝঝাল নয়; ব্যাপ্টিশিয়া’র মল ঘন এবং কাদার ন্যায় কিন্তু সোরিনামের মল জলের ন্যায় বাদামিবর্ণ, বেগে নির্গমনশীল এবং রক্তাক্তও হইতে পারে । পুরাতন উদরাময়, খুব প্রাতে দ্রুত মলত্যাগ করিতে ছুটিতে হয়। অধঃবায়ু উত্তপ্ত, মলদ্বারে জ্বালার সৃষ্টি করে, পচা ডিমের ন্যায় গন্ধ ছাড়ে (আর্নিকা’, ‘ষ্ট্যাফিস)। রাত্রিকালে অনিচ্ছায় মলত্যাগ (চায়না’য় রাত্রিকালে ও আহারের পর প্রচুর, কাল জলের ন্যায় মলত্যাগ হয়)। সোরিনামে আমরা সালফারে’র মলত্যাগ করিতে দ্রুত ছোটা, ওলিয়েন্ডার’ ও ‘এলো’র উদরবায়ু এবং এলুমিনা’, ‘চায়না’ ও ‘নাক্স মস্কেটার নরম মলত্যাগ করিতেও কষ্ট হওয়া দেখিতে পাই।

কতকগুলি সোরিনাম রোগীর অবসন্নভাব থাকে, জননেন্দ্রিয়ের অবসন্নভাব। স্ত্রীলোকের পক্ষে সঙ্গমক্রিয়ায় অপ্রবৃত্তি থাকা কিছু আসাধারণ ব্যাপার নহে, কিন্তু পুরুষেও সঙ্গমে অপ্রবৃত্তি রোগের অধীন হওয়া একটি অসাধারণ ব্যাপার। কিন্তু তাহা হইলেও আমরা পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের মধ্যেই প্রকৃত সঙ্গমকার্য্যের অপ্রবৃত্তি অথবা সঙ্গমক্রিয়ার আনন্দ না পাওয়ার অবস্থা পাইতে পারি। যে সঙ্গমক্রিয়া সম্পন্ন করিতে পারে, তাহার লিঙ্গোদ্রেক করিতে কোন অসুবিধা হয় না; সুতরাং ইহা ধ্বজভঙ্গ নহে, কিন্তু তাহার কিছুই আনন্দ হয় না ধ্বজভঙ্গ অবস্থা ইহার পরে আসে। “লিঙ্গোদ্রেক হয় না, জননেন্দ্রিয় শিথিল ও নিষ্ক্রিয় থাকে।” “সঙ্গম-কার্যে অপ্রবৃত্তি, ধ্বজভঙ্গ”, “সঙ্গমকালে রেতঃপাত হয় না।” “মূত্রত্যাগের পর্বে প্রষ্টেটগ্রন্থিরস ক্ষরিত হয়।”

পুরাতন লালামেহ, স্রাব যন্ত্রণাহীন, মূত্রত্যাগকালে শেষ বিন্দুটি থাকিয়া যাওয়ার অনুভূতি, জননেন্দ্রিয় শিথিল ও ঠান্ডা, সুনির্বাচিত ঔষধ দেওয়ার পরেও একবিন্দু সাদা বা হলদে পুঁজ নির্গত হয় (সিপিয়া’, ‘সালফার’, ‘এলুমিনা’, সোরিনাম)। যদি জননেন্দ্রিয়ে অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ থাকে, তাহা হইলে সোরিনামের স্থান সবকয়টি ঔষধেরই উপরে। যদি গন্ধটি ন্যক্কারজনক ও মিষ্ট প্রকৃতির হয়, লিঙ্গাবরক তৃক গুটাইলে আঁচিল বাহির হইয়া পড়ে, ধৌত করিলেও যদি ঐ মিষ্টগন্ধ ছাড়ে, তাহা হইলে থুজা উপযোগী হইবে ।

সোরিনাম হৃৎপিন্ডের নানাপ্রকার রোগ আরোগ্য করে। সামান্য পরিশ্রমে হৃৎস্পন্দন, শুইলে ভাল থাকে। সূচীবিদ্ধবৎ যন্ত্রণা, শুইলে উপশম। হৃৎপিন্ডের উভয় পার্শ্বে বায়ুচলাচল শব্দ। মাইট্রাল কপাটিকা হইতে বুদবুদ শব্দ। বাতজ হৃৎবেষ্টপ্রদাহ। সর্বাঙ্গীণ দুর্বলতা, কৃষ্ণাভ মুখমন্ডল, হতবুদ্ধির ন্যায় দৃষ্টির সহিত হৃৎপিন্ডসংক্রান্ত লক্ষণসমূহ। দুর্বল, অনিয়মিত দ্রুত নাড়ী।

কিন্তু হ্রাসবৃদ্ধি লক্ষণগুলি মনে রাখিবে। খোলা বাতাসে বৃদ্ধি, উঠিয়া বসিলে বৃদ্ধি, লিখিবার টেবিলে বসিলে বৃদ্ধি, শুইয়া থাকিতে চায়, শুইয়া পড়িয়া বক্ষ ও শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রগুলিকে বিশ্রাম দিতে চায়। হাঁপানির ন্যায় শ্বাসকৃতা, শুইয়া পড়িলে উপশমিত হয়, বাহু দুইটিকে যতই দেহের নিকটে আনা যায়, ততই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এরূপ লক্ষণ খুব অল্পসংখ্যক ঔষধেই পাওয়া যায় এবং সোরিনামের ন্যায় অন্য কোন ঔষধেই এত স্পষ্ট থাকে না।

জ্বরের অবস্থা । সবিরাম জ্বর, পৈত্তিক জ্বর, ঠান্ডা হইতে জ্বর। রোগী এত উত্তপ্ত থাকে যে, আচ্ছাদন-বস্ত্রের নীচে হাত দুইটি যেন বাষ্পের ভিতর রহিয়াছে বলিয়া অনুভূত হয়, এবং কেহ তাহার গায়ে হাত দিলে এ উত্তাপের জন্য হাত সরাইয়া লইতে বাধ্য হয়। উহা ‘বেলেডোনা’র ন্যায় শুষ্ক উত্তাপ না হইলেও প্রবল উত্তাপ। উহা বাষ্পের মত। সকল প্রকার জ্বরে সে সিদ্ধ হইতে থাকার ন্যায় ঘামে আবৃত থাকে। মাথার এবং দেহ উত্তপ্ত আচ্ছাদনবস্ত্রের নীচে উত্তপ্ত বায়ু বা বাষ্প থাকার অনুভূতি (ওপিয়ামে’ উহা আছে কিন্তু উহা মাথায় ভীষণ রক্তসঞ্চয়ের জন্য হয়, উহা একপ্রকার সন্ন্যাস রোগের ন্যায় অবস্থা)। সবিরাম জ্বরে সে কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাসের সহিত রাস্তাতেই রোগাক্রান্ত হয়। সে তখন বাড়ী যাইতে চায়, সে দুর্বল ও অবসন্ন হইয়া পড়ে, হামাগুড়ি দিয়া উপর তলার সিঁড়ি বাহিয়া উঠিতে বাধ্য হয়। শীত তত স্পষ্ট থাকে না কিন্তু প্রবল উত্তাপ থাকে এবং প্রচুর ঘর্ম হয়। সে প্রায় আচ্ছন্ন নিদ্রার মধ্যে থাকে, কুয়াশাচ্ছন্নের ন্যায় থাকে, হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না; মুখমন্ডল লাল, ফুলাফুলা এবং চিত্রবিচিত্র হইয়া পড়ে। প্রচুর ঘর্ম হয়, সামান্যমাত্র নড়াচূড়ায় ঠান্ডা, আঠা আঠা ঘাম হইতে থাকে। ভগ্ন স্বাস্থ্য, দুর্বল অবস্থার ইহা আর একটি রূপ। টাইফয়েড জ্বরের পর, সে বিছানার পাশ ফিরিলে, সামান্যমাত্র পরিশ্রম করিলে ঘামিতে থাকে এবং ঐ ঘর্ম শীতল থাকে। প্রচুর নৈশ ঘর্ম। যক্ষ্মারোগে নৈশ ঘর্ম হইতে থাকে, তাহার আচ্ছাদনবস্ত্রের নীচে, ঐরূপ প্রচুর উত্তাপ, প্রচুর উত্তপ্ত | ঘৰ্ম্ম হইতে থাকে, তাহার মানসিক অবস্থা হতবুদ্ধির ন্যায় হয়।”

পুঁয়ে পাওয়া,—চৰ্ম্ম কুঁচকাইয়া যায়, চৰ্ম্ম মলিন, উহা ধুইলেও পরিষ্কার হয় না। অন্ত্রাদি হইতে দুর্গন্ধ স্রাব, অত্যন্ত শীর্ণ হইয়া পড়া; উপরকার লোমগুলি বাড়িয়া উঠে, একপ্রকার সূক্ষ্ম কণার

ন্যায় দেখায় (নিট্রাম মিউর, সোরিন, সালফ, ক্যাল্ক’); গাত্র ধৌত করিলেও ভীষণ দুর্গন্ধ দূর হয় না, রাক্ষুসে ক্ষুধা কিন্তু তথাপি শীর্ণ হইতে থাকে। দুর্গন্ধ হইতেই চিকিৎসক সোরিনামের বিষয় চিন্তা করতে পাররেন।

একপ্রকার নোসোড (Nosode)। ইহা সোরা সিকা (Psora Sica) নামক একপ্রকার স্ক্যাবিসসের পূজ (Scabies vesicle) থেকে তৈরী হয়। ডাঃ হেরিং প্রথম এই ঔষধ আবিস্কার করেন।

সোরিনামের — মূলকথা

১। অতিশয় দুঃখিত, আশাশুন্য ও বিমর্ষ, নিবৃতিশয় ভগ্নোৎসাহ বা ফুত্তিহীনতা।

২। অত্যন্ত দুর্বলতা; সামান্য নড়লে চড়লেই ঘর্ম স্রাব, রোগী না নড়েচড়ে শুয়ে থাকতে চায়।

৩। চর্মের উপর শুষ্ক বা আর্দ্র উদ্ভেদ; অথবা শল্কযুক্ত (scaly) ও পার্চ্চমেন্টের মত শুষ্কচৰ্ম্ম। মলিন, অপরিমার্জিত বা নোংরা, পরিস্কার করা অসম্ভব বা ধুলেও পরিস্কার হয় না।

৪। চর্মে অত্যন্ত চুলকানি; শয্যার উত্তাপে বাড়ে।

৫। সকল প্রকার স্রাবে ও নিঃসৃত বায়ুতে অত্যধিক দুর্গন্ধ।

৬। ঠাণ্ডা হাওয়া সহ্য করতে পারে না; গ্রীষ্মকালেও পালকের (লোমের) টুপী পরে থাকে।

৭। হ্রাসবৃদ্ধি – শীতল বায়ুতে, বিছানার গরমে (চুলকানি); উঠে বসলে বা নড়লে চড়লে বৃদ্ধি। হাত দেহের কাছে আনলে, বিছানার শয়নে (এমন কি শাসকষ্টেও), গরম কাপড় জড়ালে বা আবৃত হলেও সোরা দোষের বাহ্য প্রকাশে উপশম হয়।

৮। জৈব তরল পদার্থের অপচয় জনিত দুর্বলতা। তরুণ রোগের পরেও কোন রকম যান্ত্রিক বিকৃতি বা দৃশ্যমান কারণ ব্যতীত দুর্বলতা ও অবসাদ।

৯। প্রতি শীতেই কাশি ও শুষ্ক শযুক্ত উদ্ভেদের (scaly eruptions প্রত্যাবৃত্তি বা প্রকাশ।

১০। তালুমূল প্রদাহের (quiensy) প্রবণতার মূলোচ্ছেদ করার জন্য ইহা উপযোগী।

সোরিনাম – একটি আলোচনা

সোরিনাম এক প্রকার রোগজ ঔষধ বা নোসড (nosode)। রোগজ ঔষধগুলি হোমিওপ্যাথিক মতে শক্তিকৃত হয়ে ব্যবহৃত হলে অনেক অদ্ভুত আরোগ্য ক্রয়া সাধন করে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে শক্তীকৃত হলে উহাদের এমনই পরিবর্তন জন্মে যে, যে রোগ থেকে এই সকল ঔষধ উৎপন্ন হয় সেই সকল রোগে উহারা সদৃশ মতে ক্রিয়া করে থাকে। যে ব্যক্তির রোগ থেকে ঔষধ সংগৃহীত হয় তার সেই রোগ অপেক্ষা অন্যান্য ব্যক্তির তদ্রপ রোগেই এর বিশেষ উপকারিতা প্রকাশ পায়।

আমি এই সকল তথাকথিত রোগজ ঔষধ বা নোসড (nosode) সম্বন্ধে। অল্পবিস্তর পরীক্ষা করেছি। তবে ডাঃ সোয়ান এগুলিকে খুব বিস্তৃতভাবে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু আমি কখনই ঐ সকল ঔষধকে সোরা দোষঃ বোগে বিশেষ ভাবে কাজ করতে দেখিনি, তবে অন্যান্য অবস্থায় সুন্দর কাজ করতে দেখেছি, বিশেষ করে সে সকল ব্যক্তির পূর্বে গণোরিয়া, সিফিলিস বা সোরা দোষের ইতিহাস থাকে তাদের ক্ষেত্রে ইহা কার্যকরী। আমি খোস পাঁচড়ার অনুরূপ পীড়া সোরিনাম দ্বারা, এবং আমাদের প্রচলিত ঔষধ দ্বারা আবোগ্য হয় নি এইরূপ দুরারোগ্য বাত বোগ মেডোরিনাম দ্বারা, এবং দীর্ঘকাল স্থায়ী মেরুদণ্ডের কেজিরোগ সিফিলিনাম দ্বারা আরোগ্য করেছি, যদিও এই রোগীদের মধ্যে । একজনেরও খোস পাচড়া, গনোরিয়া বা সিফিলিসের ইতিহাস ছিল না। অন্যান্য অনেকের অভিজ্ঞতাও এরূপ ভিন্নরূপ বলে মনে হয়। তবে আমি কেবল আমার নিজের মতটিই বললাম।

প্রত্যেক নোসোডই মুখে খেলে যেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় তেমনি টীকা দিলে ও ঐ লক্ষণগুলিই প্রকাশিত হয় তা সোরিনাম পরীক্ষায় ইহা উত্তম রূপে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি কেন নোসোত্রে পরীক্ষা লব্ধ লক্ষণগুলি ধাতুগত লক্ষণ বলে গণ্য হবে না, যদি ও মৌমাছির হুল ফুটানোর পরে অথবা ক্যান্থারিসের দ্বারা উৎপন্ন ফোস্কা বা বিভিন্ন জাতের রাস দ্বারা বাহ্যিক বিষক্রিয়ার ফলে যে সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পায় সেগুলি যদি সৰ্বাঙ্গীন ধাতু গত লক্ষণ বলে পরিগণিত হতে পারে তাহলে নোসডের বীজ দ্বারা টীকা করণে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় তা ঔষধের ধাতুগত লক্ষণ বলে পরিগণিত হবে না কেন? তাছাড়া যদি অতি উচ্চক্রমে রাসটাক্স প্রযুক্ত হলে রাসটাক্সের বিষাক্ততা দূরীভূত হয়। তবে সিফিলিনাম বা সিফিলিস বা উপদংশ রোগ কেন আবোগ্য করবে না? কিন্তু একথার উত্তর দেবে কে?

নোসডগুলি যেমন রোগ আরোগ্য করতে পারে তেমনি বিষাক্ততারও সৃষ্টি করতে পারে। সোরিনামের পরীক্ষা লব্ধ ফল থেকেও ইহা প্রমাণিত হয়। সোরিনামের পরীক্ষা লক্ষণে দেখা যায় যে এর বিষের প্রধান ক্রিয়া ও আরোগ্য শক্তি দেখা যায় চৰ্ম্মে। তাছাড়া এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন রোগজ পদার্থ যে রোগ থেকে উৎপন্ন হয় সূক্ষ্ম শক্তিতে আবার সেই রোগ আরোগ্য হয়ে যায়।

সোরিনামের সঙ্গে খোস-পাচড়ার পুরাতন ঔষধ সালফারের বহু সাদৃশ্য আছে এবং চর্মরোগে উহারা একটির পর অন্যটি ভাল খাটে অর্থাৎ অনুপূরক রূপে ব্যবহৃত হয়।

সোরিনামের প্রধান প্রধান চৰ্ম্ম লক্ষণগুলি হল –

ক) শরীর গরম হলে চুলকানি।

খ) বিছানার গরমে চুলকানি অসহ্য হয়ে উঠে (মার্কসল)।

গ) চুলকানি; যে পর্যন্ত না রক্ত বের হয়ে পড়ে যে পৰ্য্যন্ত চুলকানি।

ঘ) হাতের আঙ্গুলের গলিতে ও সন্ধিস্থানের বাঁকে বাঁকে (bends of joints) চুলকানি (সিপিয়া)।

৬) শুকনো আঁশের মত উঞ্জে; গ্রীষ্মকালে মিলিয়ে যায় ও শীতকালে ফিরে আসে।

চ) পুণঃপুণঃ উদ্ভেদের প্রকাশ।

ছ) চর্ম নোংবা অপরিচ্ছন্ন আকৃতি, দেখলে মনে হয় যে রোগী কখন গা ধোয়নি; স্নান করার পরেও গা থেকে দুর্গন্ধ ছাড়ে। এই রকম আরো বহু লক্ষণ আছে যা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারত কিন্তু এগুলি থেকেই বুঝা যায় সোরিনাম চর্ম রোগে একটি অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং ইহা উদ্ভিজ্জ, খনিজ ও জীবজ ঔষধগুলি হোমিওপ্যাথিক বিধিমতে যেরূপ উপকারী সেই রকম ভাবে উপকারী।

২। সোরিনাম চাপাপড়া চর্মোদ্ভেদের কুফলেও বিশেষভাবে উপযোগী। এই সকল স্থানে অন্যান্য সোরাদোষঘ্ন ঔষধ বিফল হলেও সোরিনামের কথা কখনও ভুললে চলবে না। আমেরিকার সাইরাকিউজের ডাঃ হলি চর্মের আকৃতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে এক বৃদ্ধাস্ত্রীলোকের খুব খারাপ ও বহু কাল স্থায়ী শোথ রোগ আশ্চৰ্য্য রূপে আরোগ্য করেছিলেন তিনি এক্ষেত্রে সিঙ্কের ৪২ এম শক্তির একমাত্রা, শুকনো জিভে উপর দেওয়ায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র রোগটি সেরে গিয়েছিল। এখন আমরা পরীক্ষা করলে দেখতে পাব এই ঔষধটির সঙ্গে গ্রাফাইটিসের অনেক বিষয়ে মিল আছে।

মনের দিক থেকে — “চিত্তর অতিশয় অবসন্নতা সোরিনামের লক্ষণ।” অতিশয় নৈরাশ্য; রোগীর নিজের জীবন ও তার কাছে যারা থাকে তাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলে।”

টাইফয়েড প্রভৃতি তরুণ রোগের পরে মনের এরূপ অবস্থায় সোরিনাম বিশেষ উপকারী।

আমরা গ্রাফাইটিস সম্বন্ধে লিখবার সময় উল্লেখ করেছি যে এই দুটি ঔষধেরই “মল ঘোরাল বাদামী বর্ণে জলের মত ও অতিশয় দুর্গন্ধ যুক্ত”। ইহা সাধারণতঃ খারাপ অবস্থার শিশু কলেরা ও দীর্ঘস্থায়ী উদরাময়ে দেখা যায়। কিন্তু উহাদের মধ্যে একটি মূল্যবান পার্থক্য হল –

* গ্রাফাইটিসের উদ্ভেদের নিসৃতরস আঠার মত কিন্তু সোরিনামে উহার তত প্রাধান্য থাকে না।

৩। সোরিনাম তরুণ রোগের আরোগ্যম্মুখ অবস্থায় দুর্বলতার জন্য একটি বিশেষ উপযোগী ঔষধ। অতি সামান্য শারীরিক পরিশ্রমে রোগীর প্রচুর ঘাম হয়। যদিও তার ত্বক সাধারণতঃ শুষ্ক, ও নিষ্ক্রিয় হয় ও কদাচিৎ ঘামে। এখানেও আবার মলের লক্ষণের ন্যায় সোরিনাম ও চায়নার মধ্যে একটিকে মনোনয়ন করতে হয়। বুক্ত, “পুঁজ প্রভৃতি তরল পদার্থের নিঃসরণ বশতঃ দুর্বলতা দেখা গেলে চায়না এবং বর্তমান বোগের পূর্বে বা ভোগকালে চুলকানিযুক্ত উদ্ভেদ বা তার প্রবণতা থাকলে সোরিনাম উপযোগী।

* মলের দুর্গন্ধ সম্বন্ধে লিখবার সময় আমি একটি কথা ভুলে গেছি। সর্বপ্রকার স্রাব, যথা উদরাময়, প্রদর স্রাব, রজঃস্রাব, ঘর্ম প্রভৃতিতে পচা মাংসের মত গন্ধ থাকে। এমনকি বারবার স্নান করা সত্ত্বেও শরীরে দুর্গন্ধ থাকে।

৪। সোরিনামের রোগীর ঠাণ্ডা বাতাসে অথবা ধাতু পরিবর্তন সহ্য হয় না (হিপার) অত্যন্ত গরমকালেও সে লোমের টুপি, ওভারকোট ও শাল প্রভৃতি গরম কাপড় পরতে চায়।

৫। তরুণ রোগ বহু বছর পূর্বে অসম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হলে বা চাপ পড়ায় যে সকল পুরাতন বোগ জন্মে তাতে সোরিনাম উপযোগী (কার্বোভেজ)।

আমি সকলকেই একখানা অ্যালনের “কি নোটস” কিনতে পরামর্শ দিই। কারণ ওতে নোসডগুলি সুন্দরভাবে দেওয়া আছে, সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে সোরিনাম পরীক্ষিত হওয়ায় উহা বিভিন্ন গুরুতর রোগের একটি শক্তিশালী ঔষধ। অনুরূপভাবে অন্যান্য নোসডগুলিও নিঃসন্দেহে মূল্যবান ঔষধ। তবে সেগুলি সোরিনামের মত ভাল ভাবে বুঝা দরকার।

(ন্যাশ)

✅ আমাদের সফল চিকিৎসার প্রমাণ দেখুন।

(ডান পার্শের মেনুতে রোগের নাম লিখে সার্চ করুন)

[videogallery id=”Success of Homeopathy”]

.
.

About The Author

D.H.M.S (Dhaka), M.M (BMEB) Consultant Homoeopathic physician Researcher, books author and speaker Owner of HD Homeo Sadan  CEO of HD Health Lecturer: Ashulia Homeopathic Medical College

Related posts

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *